শ্রেণিবিভাজন ও বহমান ক্ষুধা
দেখা গেল, কর্মকাণ্ডের যুগে সংহিতাব্রাহ্মাণে সকল দেবতার কাছে বিভিন্ন ভাষায় খাদ্যের জন্যে বহু প্রার্থনা আছে; পরিসংখ্যানগত ভাবে দেখলে অন্য কোনও কাম্য বস্তুর জন্যেই অত প্রার্থনা নেই। অতএব খাদ্যাভাব তখনকার সমাজের একটি স্থায়ী ও ব্যাপক অবস্থা। আবার জ্ঞানকাণ্ডে আরণ্যক উপনিষদের যুগেও অসংখ্য ভাবে সেই একই প্রার্থনা উচ্চারিত; কখনও তত্ত্বকথার পরিপ্রেক্ষিতে কখনও সরাসরি উপদেশে, কখনও-বা উপাখ্যান বা কাহিনির মাধ্যমে। জ্ঞানকাণ্ডের যুগে অন্নের মহিমা এতবার এত বিচিত্র ভাবে ঘোষিত হওয়াতে কতকটা বিস্ময় আসে, এবং এর থেকে একটি সিদ্ধান্ত প্রতিপন্ন হয়: দেশে খাদ্যের অভাব ছিল। যে পুরোহিত যজ্ঞে গান গায়, সেই উদগীতার শাস্ত্র যে ছন্দোগ্য উপনিষদ, তাতে এত সংখ্যায় খাদ্যের জন্যে প্রার্থনা? সামগানে শ্ৰীত হয়ে দেবতা খাদ্য দেবেন? কিন্তু উষস্তি চাক্রায়ণ বলেন সামগানের মন্ত্রে দেবতাদের উদ্দেশ্যে স্তব ও প্রার্থনা নিবেদিত হয় এবং যথার্থ বোদ্ধা সামগায়ক জানেন সেই উদ্দিষ্ট দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন অন্ন, যে-অন্ন ব্রহ্মের স্বরূপ। অতএব যজ্ঞের গান শুধু গানই নয়, দেবতাকে স্বরূপে বুঝে তার উপাসনাই যথার্থ গায়কের কর্তব্য। স্বরূপে বুঝে তার কাছে প্রার্থনা করলে তিনি সে প্রার্থনা পূরণ করেন, এমন বিশ্বাস ছিল। ছিল বলেই শাদা কুকুরটিকে অন্য কুকুররা বলে, ‘আমরা ক্ষুধার্ত, তুমি সামগান গেয়ে আমাদের জন্যে খাদ্যসংস্থান কর।’ এবং পরে যজ্ঞের অনুকারী যে বহিস্পবিমান স্তোত্র গাওয়ার অনুষ্ঠান কুকুররামিলে করে, তারও পশ্চাতে প্রচ্ছন্ন ছিল ওই বিশ্বাস: যথাযথ ভাবে অনুষ্ঠান, করলে গানের প্রার্থনা–অন্নভিক্ষা–দেবতাদের কাছে পৌঁছয়। খাদ্যের জন্যে আর্তি কত গভীর ও মর্মান্তিক হলে বুভুক্ষু কুকুরদের দিয়েও যজ্ঞের একটি অংশের অনুকরণ করা হয়, তাদের প্রার্থনা শুনেও দেবতারা তাদের খাদ্য দেবেন। এই বিশ্বাসে। অতএব সাধারণ অতি পরিচিত যে ছবিটি থেকে যায় তা হল দেশে প্রায়-সার্বত্রিক এক অন্নাভাব। হয়তো কোনও কোনও অঞ্চলে কোনও কোনও যুগে খাদ্যের মোটামুটি সচ্ছলতা ছিল, কিন্তু সাধারণ ছবিটায় খাবারের অসংকুলান পরিষ্কার দেখা যায়।
‘অন্ন’ কথাটির অর্থ যা খাওয়া যায়, অর্থাৎ খাদ্য। কিন্তু অর্থ সংকোচনের নীতিতে অনেক আগেই অন্ন মানে ‘ভাত’ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এখনও শব্দটি ওই অর্থই বহন করে। ‘কেউ কেউ ধানের ব্যাপক ব্যবহারকে জমির শস্যবহন ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে, এবং এক জায়গায় বিপুলসংখ্যক লোকের সমাবেশকে সম্ভব করে তোলার সঙ্গে এক করে দেখেছেন।’(১)
ধানের চাষ নানা কারণে বেড়ে যায়; বিভিন্ন ধরনের ধান ছিল, তার মধ্যে অনেকগুলো বিভিন্ন ঋতুতে ফলত, চাষটাও সহজ ছিল এবং আর্যবর্ত থেকে দক্ষিণাত্য পর্যন্ত সর্বত্রই ধানের চল ছিল। ধানকে ‘ধন’ মনে করা হত। তাই ‘ধন’ থেকে এর প্রতিশব্দ ‘ধান্য’ বুৎপন্ন হয়েছিল। ধান থেকে সরাসরি ভাত রাধাও সহজতম পাক প্রক্রিয়া, কাজেই ক্ষুধিত জনসাধারণের ক্ষুন্নিবৃত্তির একটা সহজ উপায় ছিল ধানচাষ, এবং তা খুব ব্যাপক হারেই হত। তবু ক্ষুধার সঙ্গে খাদ্যের যে সমান্তরাল দূরত্ব সেটা রয়েই গেল। আভুক্তের পাত্রে প্রয়োজন মতো খাদ্য জোগানের কোনও পাকা ব্যবস্থাই হল না। রয়ে গেল অভাব, গরিব সারা বছরই অভুক্ত বা অর্ধভুক্ত থাকত; যে-বছর উদ্ধৃত্ত ফসল ফলত তা গিয়ে জমা হত ধনীর ভাণ্ডারে বা তার পণ্যসম্ভারে।
বৈদিক যুগের প্রথম পর্বে যে-উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল তাতে কাঠের ফলা-যুক্ত লাঙল দিয়ে যে-চাষ হত তার গতি ছিল ধীর, অনেক সময় নিয়ে ও অনেক পরিশ্রমে সামান্য জমি চাষ হত, সেই অনুপাতে ফসলের পরিমাণও কম ছিল। তা ছাড়া ছিল ঈতির আতঙ্ক এবং খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি, পঙ্গপাল, শস্যনাশক কীট, ইদুর, শস্যের ব্যাধি, সৈন্যদের আক্রমণ ইত্যাদি নানা কারণে বোনা ফসল সব সময়ে খাবারে উঠতে পেত না। এ ছাড়াও যে-বছর ভাল ফসল হত তখনো সে-ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। সিন্ধু সভ্যতার যুগে যা ছিল, তা আর্যদের প্রথম পর্যায়ে ছিল না। মহেঞ্জোদারো, হরপ্লাতে ও লোঠালে আশ্চর্য উন্নত প্রণালীতে নির্মিত বিরাট আয়তনের শস্য-সংরক্ষণ-ভাণ্ডার পাওয়া গেছে। লোঠালের কাছে তৈরি শস্যভাণ্ডার, যেটা সম্ভবত আগুনে পুড়ে গিয়েছিল, সেটা তো খুব মজবুত ভাবেই তৈরি ছিল। ভারতবর্ষের ইতিহাসে আধুনিক যুগের পূর্বে কখনওই এত বেশি পরিমাণে শস্য এমন ভাবে সংক্ষরণের ব্যবস্থা ছিল না।’(২)
এ হল মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা ও লোঠালের কথা— সিন্ধুসভ্যতার যুগ, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের খবর। আর্যরা আসবার পর যাযাবরত্ব ত্যাগ করে স্থিতিশীল কৃষিজীবী হয়ে যখন তারা আর্যাবর্তে বসবাস করতে শুরু করল তখনও তারা রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় সিন্ধুসভ্যতার সার্বিক সুনিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার শৃঙ্খলা অর্জন করে উঠতে পারেনি। লোহার ফলার লাঙলে অল্প পরিশ্রমে বেশি ফসল ফলাত, মাংস, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার এবং ওই ফসলের থেকে রুটি ওইসব খেত। সুবৃষ্টি হলে ভাল ফসল হত, হয়তো তখন সাধারণ লোকেরও খাবার জুটত। কিন্তু স্থিতিশীল হয়ে গ্রামীণ সভ্যতায় যখন তারা স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে তখন তাদের সমাজব্যবস্থা–অর্থাৎ কৌম (clan) ও গোষ্ঠী (tribe) ভেঙে বৃহৎ ‘কুল’ অর্থাৎ এক বাড়িতে কয়েক প্রজন্মের একত্র বসবাস চালু হয়েছে।
একই সঙ্গে অনেকগুলি কুল একত্রে একটি গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে। প্রাগার্য সভ্যতায় গ্রাম ছিল, শহরও ছিল। আগন্তুকরা এসে প্রথমটায় সে সমাজব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে তোলে। কয়েক শতক পরে স্থায়ী কৃষিজীবী সমাজে বাস করতে শুরু করার পরে লাঙলের চাষের সময়ে গোষ্ঠী কৌম ভেঙে ‘কুল’ স্থাপিত হলে অনেকগুলি কুল গ্রামে বসবাস করতে থাকে। সচরাচর গ্রামগুলি স্বনির্ভর ছিল এবং আয়তনে বেশ বড় থাকায় ধীরে ধীরে রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে গ্রামগুলিই একক বলে পরিগণিত হয়। ‘লাঙলের চাষে খাদ্যের জোগান অনেক বেড়ে যায় এবং অনেক বেশি নিয়মিতও হয়ে যায়। এর অর্থ একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীই নয়, কিন্তু (এমন এক জনগোষ্ঠী যারা) বৃহত্তর এককে (গ্রাম) বাস করতে লাগল।’(৩)
ততদিনে এই ধরনের বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারই সমাজের একক হিসেবে গ্রাহ্য হয়েছে। শাসনব্যবস্থা জনসাধারণের সব রকম অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক বিপদের প্রতিকার করবার মতো সুসংগঠিত বা সুনিয়ন্ত্রিত ছিল না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল যখন কমে যেত, তেমন সব অজন্মার বছরে, বা কোনও দৈবদুর্বপাকে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে, মানুষের ভাগ্যে দুর্ভিক্ষ ও ব্যাপক অনাহারই ঘটত। হয়তো দু-চারটি ভাগ্যবান পরিবারের কোনও সঞ্চয় থাকলে সে দুর্বৎসরটা কোনও মতে অতিক্রম করতে পারত। কিন্তু প্রত্নখননে মহেঞ্জোদারো। হরপ্পা ও লেঠালের পরে বহু শতাব্দী পর্যন্ত পাথরের বা ইটের তৈরি কোনও রকম শস্যসংরক্ষণ ভাণ্ডার প্রত্নখননে পাওয়া যায়নি। প্রথমত, উৎপাদন ছিল স্বল্প, দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহুবার সেই স্বল্প উৎপাদনও বিনষ্ট হয়ে যেত। তৃতীয়ত, তেমন কোনও শক্তিমান, সুসংহত কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র ছিল না। যা প্রজাসাধারণের জন্যে ফসলের দুর্বৎসর ঠেকাবার জন্য অগ্রিম চিন্তা করে কোনও প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিতে পারত। আর্যরা পোড়া ইটের ব্যবহার শেখে অনেক পরে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠশতক নাগাদ। পাথরের স্থাপত্য সে যুগে পাওয়া যায় না; কাঠের ভাণ্ডগৃহ পোকায়, জলে, আগুনে নষ্ট হয়ে যেত, কাজেই মজবুত কোনও শস্যভাণ্ডারের নজির নেই। ফলে অনেকটা ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থাই চলত, সংগ্রহ সঞ্চায়ের পরিকল্পনাও ছিল না, ব্যবস্থাও ছিল না। চতুর্থত, জল, কীট, বাতাসের আদ্রতা থেকে ফসলকে অবিকৃত অবস্থায় রক্ষণ করার উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক অর্থাৎ রাসায়নিক জ্ঞান তখন ছিল না, ফলে নদীবহুল দেশে বর্ষার আদ্রতা ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে ফসলকে বাঁচাবার উপযুক্ত প্ৰায়োগিক বিজ্ঞান একেবারেই ছিল না। তাই সঞ্চিত ফসলও দীর্ঘকাল ভাণ্ডারে থাকলে সম্পূর্ণ ভাবে খাবার অযোগ্য হয়ে উঠত। এর অর্থ প্রাকৃতিক যে কোনও দুর্যোেগ মানেই দুৰ্ভিক্ষ, ব্যাপক অনাহার। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতক থেকে লোহার লাঙলের ফলার ব্যবহারে স্বল্পতর পরিশ্রমে বহুলতর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হল। যেহেতু সংরক্ষণের ব্যবস্থা তখনও অনুপস্থিত, তাই এই বাড়তি ফসলের দু-তিনটি গতি হত। প্রথমত, খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতক থেকে সমাজে শ্রেণিবিভাগ অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবেই উপস্থিত, তাই কিছু ধনিক শ্রেণির লোকের ব্যক্তিগত ভূসম্পত্তি, পশুসম্পত্তি যেমন বেশি ছিল, তেমনই ফসলের বেশি অংশ তাদেরই হাতে আসত। ফলে শস্যের অসম বণ্টন অনিবাৰ্য ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ গরিব মানুষের ভাগ্যে সামান্যই জুটত, চাষি মজুর পেটভাতায় কাজ করত এবং দুর্বৎসরে তাতেও টান পড়ত। বেশি উৎপাদনে ধনী লাভবান হয়েছিল তিন ভাবে। প্রথমত, তাদের কখনও খাদ্যাভাবে ভুগতে হত না; দ্বিতীয়ত, উদ্ধৃত্তি খাদ্যের কিছু অংশ দিয়ে তারা অভুক্ত মানুষদের, কারখানার মজুর বা বাড়ির দাসদাসী হিসেবে নিযুক্ত করে রাখতে পারত; আর তৃতীয়ত, উদ্ধৃত্তি ফসল ও কারিগরির শিল্পবস্তু নিয়ে বাণিজ্য করতে পারত। অতএব লোহার ফলার লাঙলে যে বাড়তি ফসল উৎপন্ন হচ্ছিল, তার ভাগ দরিদ্রসাধারণের মধ্যে এসে পৌঁছত না, তাই খাদ্যাভাব ব্যাপক ভাবেই থেকে গেল সমাজে।
খাদ্যাভাব কত আতঙ্কের হলে খাদ্যকে ব্রহ্মা বলতে হয়? ব্রহ্মা সাধারণ দেবমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত নন, ইনি পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ নন, ক্লীবলিঙ্গ; অর্থাৎ দেব বা দেবী নয়, তাদের ঊর্ধ্বের্ব একটি শক্তি। নানা দর্শনপ্রস্থানে তিনি নানা ভাবে স্রষ্টা, পালক ও সংহারকর্তা। অর্থাৎ ব্রহ্মের ঊর্ধ্বে কোনও শক্তি নেই, সমস্ত দেবমণ্ডলী ও বিশ্বচরাচর তাঁর সৃষ্ট ও তাঁর অধীন। এই শ্রেষ্ঠ সর্বশক্তিমান দিব্যপ্রকাশ যে ব্রহ্মা তাকেই অন্নের সঙ্গে অভিন্ন বা একাত্ম বলে বর্ণনা করা হয়েছে বারেবারে, যেন অন্নের মর্যাদা ওই অতুলনীয় মহিমা পায়। কর্মকাণ্ডের যজ্ঞে অন্যান্য দেবদেবীদের কাছে যথাবিহিত স্তোত্র গান ও হাব্য দিয়ে অন্ন প্রার্থনা করা হত, তখন বিরাজ’ ছন্দকে অন্নস্বরূপ বলা হচ্ছিল; বিভিন্ন দেবদেবীকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছিল, তিনিই প্রকৃষ্ট অন্নদাতা।’ স্বভাবতই মনে হয়, এ প্রক্রিয়াতেও ইষ্টলাভ হচ্ছিল না, ক্ষুধার অনুপাতে খাদ্য জুটছিল না। তার পর উন্নততর কৃৎকৌশলে চাষে যখন উৎপাদন বাড়ল তখনও মানুব দেখছিল ফসল বেশি জন্মানের কোনও সুবিধা তাদের পাতে পৌঁছাচ্ছে না। যজ্ঞের দেবতারা যাদের অনুগ্রহ করেছিলেন, তারা সংখ্যালঘু, নতুন প্রণালীর চাষেও তাদেরই লাভ হল, উৎপাদক জনসাধারণের বুভুক্ষণ, অপুষ্টি, অনটন আগের মতোই রইল। এ বার, নতুন পর্যায়ে, অন্ন দেবতাদের ছড়িয়ে উঠল, এ বার সে স্বয়ং ব্রহ্মস্বরূপ হয়ে উঠল, ‘যে অন্নকে ব্রহ্মা বলে জানে, তার কখনও অন্নভােব হয় না।’ বলা বাহুল্য, এ সব নির্দেশের মধ্যে সমাজের পক্ষে হিতকর একটি দিক আছে, তা হল মানুষ যেন অন্নকে সম্রামের চোখে দেখে, অপচয় না। করে, যত্ন করে তার সংরক্ষণ ও সংবর্ধন করে। এতে ধনী ও দরিদ্র উভয়েরই লাভ; অন্ন যত্নে সুরক্ষিত হয়। তবে কিছু চক্ষুষ্মান মানুষ নিশ্চয়ই লক্ষ করছিল যে যজ্ঞে দেবতাদের কাছে যথেষ্ট আবেদন-নিবেদনেও যেমন খাদ্যে অম্বিষ্ট প্রাচুর্য মেলেনি, তেমনই এখন জ্ঞানকাণ্ডের যুগে অন্নকে ব্রহ্মা বলে মনে করাতেও সে প্রাচুর্য পাওয়া গেল না। এটা যে ঘটেছিল তার প্রমাণ যজ্ঞ-অবিশ্বাসী বেশ কিছু মানুষের যজ্ঞে অনীহা দেখা গেল। এদের মধ্যে যাঁরা বেশি বুদ্ধিমান বা যোগ্যতার তারা বেদ ও যজ্ঞের বিরোধী কিছু ধর্মপ্রস্থান প্রবর্তন করলেন এবং যজ্ঞে বীতস্পৃহ আরও অনেক লোক তাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। এরা দেখলেন, যাঁরা বহু আড়ম্বরে, বহু পশু বধ করে, যজ্ঞ সম্পাদন করেন তাদের চেয়ে অরণ্যচারী এই সব অবৈদিক সম্প্রদায়ের লোকেরা যে বেশি কষ্টে আছেন তা নয়। এ সব প্রস্থানের অধিকাংশই জ্ঞানকাণ্ডের সমকালীন, কাজেই সমাজে যারা যজ্ঞ করে অন্নকে ব্রহ্মা জ্ঞান করছেন তাঁদের মধ্যে যারা ইতর সাধারণ অর্থাৎ যাদের জমি, পশু, ইত্যাদি সম্পত্তি নেই, যারা ক্ষেতে চাষি, কারখানায় মজুর তাদের ভাগে অন্ন কিছু বেশি পড়ছে না। অতএব অত হাঙ্গামা করে যজ্ঞ করেও যেমন তাদের ক্ষুধা মেটেনি, তেমনি অন্নকে ব্রহ্মজ্ঞান করবার দুরূহ মননাপ্রক্রিয়ার কসরৎ করতে পারলেও তাদের অন্নাভাব মিটাল না। এ সব সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকেই ভিক্ষাজীবী, যেমন বৌদ্ধ ও জৈনরা। অন্যদেরও অনেকে ভিক্ষা ও অরণ্যে ফলমূল সংগ্রহ করে। প্ৰাণ ধারণ করতেন। ভিক্ষার অন্নও অনিশ্চিত, খরা, অজন্মায় দুর্ভিক্ষে ভিক্ষা মিলত না। যজ্ঞ যারা করত। তারাও যেমন পর্যাপ্ত অন্ন পেত না, যারা অন্নকে ব্রহ্মা জ্ঞান করতে চেষ্টা করত বা করতে পারত। তাদেরও তেমনই অন্নসংস্থান অনিশ্চিতই ছিল।
ভিখারি, অন্তত প্রাচীনকালে, সব দেশেই ছিল। তবে এ দেশে সুপ্রাচীন কাল থেকেই অন্নভিক্ষা নানা ধরনের শাস্ত্রের সমর্থন পেয়েছিল। আশ্রমধর্মে ব্রহ্মচারী পর্যান্নে পালিত এবং সে ভিক্ষণ করে খেত, এবং ভিক্ষান্ন আচার্যের বাড়িতেও আনত। যতি বা সন্ন্যাস আশ্রমে, মানুষ ফলমূল সংগ্রহ বা ভিক্ষা করে। জৈন সন্ন্যাসীও ভিক্ষা করত। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর ভিক্ষার কথা জাতক’ ও অন্য সব বৌদ্ধ গ্রন্থে বহু বিস্তুত কাহিনির মধ্যেও পাওয়া যায়। অন্যান্য নানা সম্প্রদায়ের কথা, বিশেষত বুদ্ধ বোধিলাভ করার পূর্বে যে সব সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে আসেন তাদের কথাও পাওয়া যায়। এরা ছিলেন ভ্ৰাম্যমাণ সন্ন্যাসী সম্প্রদায়, অতএব এঁদের ভিক্ষাক্সে এবং সংগৃহীত ফলমূলেই ক্ষুধানিবারণ করতে হত।
পরাশরের ‘ভিক্ষুসূত্র’ গ্রন্থ এবং অন্যান্য অনেক দার্শনিক ও ধর্মীয় প্রস্থানেও ভিক্ষার নির্দেশ দেওয়া আছে। অগোঁহী’ বা ‘অনিকেত’। মানুষ সমাজে এক ধরনের সম্মান পেতেন। এঁরা যেহেতু নিজের বাড়িতে রান্না করতেন না, তাই পরের বাড়িতে ভিক্ষা করেই দিনপাত করতেন। অনেক ধরনের পাপের প্রায়শ্চিত্তেও ঘুরে ঘুরে ভিক্ষণ করে খাওয়ার বিধান ছিল। কোনও কোনও ব্রতেও ভিক্ষণ করার বিধান ছিল। কাজেই সমাজে গৃহীর পাশাপাশি ভিক্ষাজীবীর জন্যেও একটা ব্যবস্থা ছিল। তীর্থযাত্রী ভিক্ষণ করেই খেতেন, বহু তীর্থস্থানেও অন্নসত্র থাকত। কাজেই বহু ক্ষুধিত মানুষ ভিক্ষায় পাওয়া খাদ্যে জীবনধারণও করতেন। ভিক্ষণ পাওয়ার জন্যে সমাজে বেশ কিছু গৃহীর প্রয়োজন ছিল, যাঁরা ভিক্ষণ দেবেন। অর্থাৎ এই সব সংসারী লোকেদের–বৌদ্ধ সাহিত্যে যাঁদের প্রধানত ‘গহপতি’ (গৃহপতি = গৃহী) বলা হয়েছেবাড়িতে রান্না হত, এবং সে রান্নাটা শুধু বাড়ির লোকজনদের পরিমাপে নয়, কিছু বাড়তিও থাকত। দৈবাৎ এসে-পড়া অতিথি বা বুভুক্ষু ভিখারিকে বা নিয়মিত ভিক্ষার্থী সন্ন্যাসীকে তারই থেকে ভিক্ষা দেওয়া হত। ভিক্ষা দেওয়া, বিশেষত অন্নদান, তাই বরাবর সব শাস্ত্ৰেই পুণ্য কাজ। অর্থাৎ রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এমন কখনওই ছিল না যাতে রাষ্ট্র থেকে ক্ষুধিতের ক্ষুধা নিবারণের দায় বহন করা হবে। তাই যার জমি নেই, যে ভাগচাষি সামান্য জমিতে মজুর খাটে, সে দুর্বৎসরে খাদ্য পেত না, বাধ্য হত। ভিক্ষা করতে। তাই পেশাদার ভিক্ষুক ছাড়াও বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজের শ্রম বিক্রি করেও খিদে মিন্টত না বহু তথাকথিত ‘নিম্নবর্গের’ মানুষের।
পণ্ডিত আই বি হর্নার বৌদ্ধ ও জৈন ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে বলেন, ‘…এগুলির (এর) উদ্ভব একটু অদ্ভুত ধরনের–প্রতিষ্ঠানিক ভাবে ভারতের মাটির থেকে পৃথক, জনগণের মানসিক গঠনের কাছে বিজাতীয়। ধর্ম সম্বন্ধে এদের বিশেষ অধিকার থাকলেও শুধু মহাবীর ও গৌতমের অনুগামীরাই নিজেদের ভিক্ষু সম্প্রদায়ে সংগঠিত করেছিল।’(৪)
ফরাসি পণ্ডিত লুই দুমঁ বলেছেন, গৃহী ও ভিক্ষুর মধ্যে সম্পর্কে গৃহীর দিক থেকে ভিক্ষু যেন ঈর্ষার পাত্র ছিল। শুধু যে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ এর হেতু ছিল তাই নয়, সমাজ সে উৎকর্ষ স্বীকার করল। সেই ধরনের স্বীকৃতি দিয়ে, যাতে ভিক্ষুক উৎপাদন বা নিজের গ্রাসাচ্ছাদন অর্জন করবার দায় থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি পায়। বৈদিক যুগে এ অধিকার ছিল পুরোহিত ও আচার্যের, এ যুগের শেষার্ধে এ অধিকার ছিল রাজার এবং সৈন্যদের ও কিছু রাজকর্মচারীরও। ফলে যে মানুষগুলি কোনও না কোনও ভাবে পরিশ্রম করে অন্নবস্ত্রের সংস্থান করত, নিজেদের এবং ওই পরোপজীবী গোষ্ঠীরও, তারা বুদ্ধিজীবী, মোক্ষার্থী বা নির্বাণকামীর কাছে ক্রমে ক্রমে হীন বলে পরিগণিত হল। অন্যান্য কোনও কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যেও ভিক্ষান্নে দিনপাত করবার বিধান ছিল, কিন্তু বৌদ্ধদের মধ্যে এটি একটি সর্বত্র-আচরিত প্রতিষ্ঠানিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ‘বৌদ্ধ সন্ন্যাসে উৎপাদক কৃষিকর্ম নিষিদ্ধ ছিল, এমনকী নিজের জন্যে রান্না করাও তাদের শ্রমণদের পক্ষে (বারণ ছিল), শ্রম হিসেবে শ্রমের কোনও মূল্য ছিল না, এবং এই নিষেধের অর্থ হল খাদ্য, বস্ত্র এবং আশ্রয়ের জন্যে ব্যবহারিক জীবনে গৃহীর ওপরে শ্রমণের সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা।’(৫)
খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে যখন বহু বিভিন্ন প্রস্থানের মধ্যেই মধুকরী, ভিক্ষাটন, অনিকেতত্ব এবং শ্রমণত্ব স্বীকৃতি পেল, তখন স্বভাবতই এই সব প্রস্থানের পূর্বশর্তই ছিল সমাজের বৃহত্তর অংশ গৃহী থাকবে, সব রকম সন্ন্যাসীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীর জন্য অন্নদানকে পুণ্যকর্মবলে মনে করবে। তাই তখনকার সব প্রস্থানের ধর্মগ্রন্থেই সন্ন্যাসী সম্পর্কে একটা সন্ত্রম উদ্রিক্ত করার চেষ্টা আছে এবং ভিক্ষুকে অন্নভিক্ষা দেওয়াকে পুণ্য অর্জনের উপায় বলে স্বীকার করা হয়েছে। তা হলে গৃহীর ওপরে একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি হল: পরিবারবর্গের অন্নসংস্থান করা ছাড়াও ধর্মপ্রস্থানের নির্দেশে বা অন্য কোনও কারণে যারা নিজেরা উৎপাদনের কোনও কাজে লিপ্ত থাকবে না বলেই ভিক্ষার দ্বারা অন্নসংগ্রহ করবে: তারা প্ৰাথী হয়ে এলে তাদের অন্নদান করতে হত। ঋগ্বেদে যারা স্বার্থপরের মতো নিজের অন্ন নিজেরাই খায়, অন্নোর ভাগ দেয় না। তাদের নিন্দ করা হয়েছে। কিন্তু ঋগ্বেদ সেই অর্থে নীতিনির্দেশক গ্রন্থ নয়; তাই তখন গৃহী ইচ্ছে করলে অন্নপ্রার্থীকে যে বিমুখ করতে পারত তার নানা নিদর্শন ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে দেখেছি। কিন্তু তার তিন চারশো বছর পরে ভিক্ষু, ব্রহ্মচারী, পর্যটক, প্ৰায়শ্চিত্তকারী বা ব্রতধারীর জন্যে সমাজ একটা ভিন্ন ব্যবস্থা করল। তখন পাশাপাশি দুটি সম্প্রদায়— গৃহী ও ভিক্ষু-একই সঙ্গে সমাজে বিরাজ করছে। ধনীরা চিরদিনই ধনের বিজ্ঞাপন হিসেবে কিছু পরগাছার মতো আশ্রিত, নিষ্কমা মানুষকে অন্নদান করত আবার খেয়াল খুশি মতো প্রার্থীকে প্রত্যাখানও করত। কিন্তু ওই দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি শ্রমবিমুখ, উৎপাদনবিমুখ অংশ যখন আহারের জন্যে সম্পূর্ণভাবে গৃহীর ওপরে নির্ভরশীল, তখন সন্ন্যাসীকে ভিক্ষা দেওয়াকে পুণ্যকর্ম বলে প্রচার না করলে তারা খেতে পাবে না, বাঁচতে পারবে না। তাই ধৰ্মবোধের মধ্যেই ভিক্ষুকে অন্নদান অনুপ্রবিষ্ট হল। বৌদ্ধ গ্রন্থে, বিশেষ ‘জাতকগুলিতে এই মর্মে বহু কাহিনি আছে। রামায়ণ মহাভারত কিছু পরের সংকলন হলেও এগুলি রচনার সূত্রপাত খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ-পঞ্চম শতকে এগুলিতেও দেখি ভিক্ষাদান পুণ্যকর্ম। কাজেই সমাজে একটা সংহত মূল্যবোধে ভিক্ষু ও সন্ন্যাসী সম্মানের আসনে স্থান পেল এবং কতকটা অধিকার হিসেবেই পর্যান্নে গ্ৰাসাচ্ছাদনের অধিকারী হল।
এই সমাজে যখন উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় কম, অথবা বেশি হলেও তা বণিকের কাছে পণ্যরূপে সঞ্চিত হয়, যখন নানা আগন্তুক উৎপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে শস্য বিনষ্ট হয়, যখন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় কৃৎকৌশল জানা নেই, এ বিষয়ে অপরিহার্য রাসায়নিক বিদ্যাও আয়ত্ত নয়–এই সমাজে ক্ষুধার তুলনায় খাদ্য অপ্রতুল। সাধারণ মানুষ তা বোঝে এবং যজ্ঞে, প্রার্থনায়, কৃষিকর্মেনিরন্তর খাদ্যের প্রাচুর্যের সন্ধান করে ফেরে, কারণ ক্ষুধা ও খাদ্যের মধ্যে সমান্তরাল ব্যবধানটা রয়েই গেছে।
রাষ্ট্রব্যবস্থাতেও এমন কোনও বিধান ছিল না যে উৎপন্ন শস্যের একটা অংশ মজুত রেখে অকালে, দুর্ভিক্ষে দুঃস্থ প্রজাদের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে। এটা অনেক শতক পরে ধীরে ধীরে আসে এবং কখনওই পুরোপুরি কার্যকরী হয়নি। ফলে এ দেশে বেদের সময় থেকেই খাদ্যাভােব ব্যাপক ভাবে বর্তমান ছিল, অর্থাৎ ‘সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং, ইত্যাদি ইচ্ছাপূরক স্বপ্নের প্রকাশমাত্র। বৈদিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটিয়েছে, দেশে ফসল বেশি হলেও তার ভাগ পায়নি, কম হলে তো অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হয়েছে, না হলে মৃত্যু এসেছে ‘অশনায়াপিপাসের চেহারায়। সে দিন যজ্ঞে যে সব দেবতাকে মাখা খুঁড়ে মিনতি জানিয়ে ক্ষুধিত মানুষ বিফল হয়েছে তাদেরই উত্তরপুরুষরা আজ সরকারের পায়ে মাথা খুঁড়ে আবেদন-নিবেদন করে বিফল-মনোরথ হয়ে উপোস করছে।
(১) Some have identified the wide-spread use of rice as a mechanism to raise the carrying capacities and to allow the agglomeration of large concentrations of population in a single place Alchin, The Archeology of Early Historic South Asia, p. 66
(২) Granaries or grain storage of surprising sophistication and size have been found at Mahenodaro, Harapa and Lothal. (At othal) The vanished granary probably destroyed by fire … Never in Indian history till recent times are grain stored on this scale. KT Achaya, Technology of food, p. 459
(৩) ‘Plough agriculture greatly increased the food supply and made it more regular This meant not only a far greater population but one that lived together in greater units Kosambi, An Introduction to the Study of Ancient Indian History p 14
(৪) ‘…were strange growths, constitutionally alien to the soil of India and foreign to the mentality of peoplus in spite of their genius for religion, only the followers of Mahavra and Gotama formed themselves into communities of alms people. B Horner 1930 Women Under Primitive Buddhismo Lay Women and Alimshromen. London p. xxiii
(৫)‘. . Buddhist monasticism denied productive agricultural work to its members, work as suchg was not valued, and its negation meant the monks, complete matcral dependence on the laity for the provision of food, clothing and shelter S J Tambah. ‘The Renouncers individuality and ommunity’ in Way of life: king. Householder: Renouncer (ed) TN Madan, Vikas. 1982, p 306
সংক্ষিপ্ত গ্রন্থপঞ্জি
অথর্ব বেদ সংহিতা
ঋগ্বেদ সংহিতা
তৈত্তিরীয় সংহিতা
ঐতরেয় ব্রাহ্মণ
ছন্দোগ্য ব্রাহ্মণ
জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ
তাণ্ড্যমহাব্রাহ্মণ
তৈত্তিরীয় ব্ৰাহ্মণ
শতপথ ব্রাহ্মণ
ঐতরেয় উপনিষদ
ছান্দোগ্য উপনিষদ
মাণ্ডুক্য উপনিষদ
মুণ্ডক উপনিষদ
Allchin, R 1995 The Archaeology of Early Historic South Asia OUP
Bandyopadhyaya N C 1945 Econonic Life and Progress in incent India, Calcutta
Basu, J 1969 india of the Age of the Brahmanas, Calcutta
Bose. A N 196l Social and Rural Economy of Northern India circa 600 B (-200 AD, Calcutta
Buch, M A 1979 Economic Life in Ancient India (2 vols). Allahabad
Chattopadhyaya, DP 1986, 1991 History of Science and Technology in Ancient India (2 vols) Calcutta
Claessen NJ M & Kirk, PS 1978, hear Early State, The Hague
Earle, T 1991 Chiefdoms Power. Economy and laeology. CUP
Horner, B 930, Women and Primitive Buddhism. Lay Women and Alnussonnen, London
lyenger P T S 1932, Life un Ancient India N Delhi
Khare R S 1976, The Hindu Hearth and Horne, Carolina
Khare, RS 1976, The Hindu System of Managing Foods, Simla
Kosambi, D D 956, introduction to the Study of Ancient Indian listory, Bombay.
Prakash, O 1961, Food and Drunk in Ancient India, Delhi.
Rau, W 1957, Staat und Qusellschaft in alter Indien nach dem Brahmanen Texten dargestallt, Wiesbaden
Renfrew, A C & Shennan S (ed) 1982 Ranking Resource and Exchange, OUP
Sengupta, P 1950, Everyday Life in Ancient India, OUP
Sharma, R S 980, ilmultan feodalisin. Ni Delhi
Sharma, R S 1983, Matertal Culture and Civilicatton in Antctent India OUP
Thakur, V K 932 irbanitation in Ancient India, N Delhi
Wittfogel. K A 1957. Ortental Despotism A (*omperative Studio of Total Povrer Yale Univ Press
Hesiod Works and Days Loch edn
Pritchard J B Ancient Nedar Easterra l’èxits, Princeton Univ Press
Achaya K. T. ‘Technology of Food’ in fist of technology in india (ed) A K Bag
Ganguli, R ‘Famine in Ancient India ARORl 5, 1933-34
G o de, P K ‘Indian Dietetics Use of Fried (Grants’ ANNUR vo 29
Mahapatra, G ‘Meat and Drink in Indian Cultural Tradition’ WSC Wien, SP (8), 1990
Pandeya, L. P ‘Famines in Ancient India Quarterly of the India Internatiunal Centre, 12 (2) June, 985
Russell, J. C. ‘The Population of Ancient india A Tentative Pattern’ J of Indian I list, 1973
Shendgc., M. Floods and the l)ecline of the indus Civilization’ ABORI, 1990 ।
Tamhiah, S J ‘The Renouncers individuality and Community in T N Madan (ed) lay of Life King flouseholder and Renouncer Vikas 982
Leave a Reply