৫ঘ. গীতিসংগ্রহ – পুর্বরাগ

গীতিসংগ্রহ পুর্বরাগ

২৯৮

তাল-লোভা

অ, প্ৰাণ বিশাখে ললিতে গো কহগো মরে।।ধু।।
মোহন বাঁশি কে বাজায় ওগো সখী কালিন্দির তীরে।।চি।।
কেমনে চিনিল বাঁশি অভাগিনীরে।
রাধা বইলে বাজায় বাঁশি গো সুমধুর স্বরে।।১।।
পঞ্জর ঝর ঝর গো মর রহিতে নারি ঘরে।
মন হইয়াছে চাতাকিনী গো সখী উড়তে সাধ করে।২।।
কোন জাতি কেমন যুবতী, কথায় বাস করে
রাধারমণ ভনে বাশের বাঁশি গো সখী পুর নব জলধরে।।৩।।

রা/৬৬

২৯৯

অবলার কুলমান সই গো কেমনে রাখি।।
সময় না জানিয়ে বাঁশি বাজায় কালশশী
এগো নামকুল সবই দিলাম আর কি আছে বাকি।।
যখন শ্যামে বাজায় বাঁশি তখন আমি রহি বসি
শাশুড়ি ননদী ঘরে বাইর হইতে না পারি।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
বিধি যদি পাখা দিত উইড়ে যাইতাম আমি।।

সুখ/৮

৩০০

অবলার মনোরি অনল গো সখী
নিবাইলে নিবে নারে।।
প্ৰেমশেল পশিলে গো বুক বাইরে আসে না।
যতই টানি ততই বিন্ধে কাটা খসাইলে খসে নারে।।
শাশুড়ী ননদী গো বৈরী সদায় দেয় গঞ্জনা
যারে দেখবার সাধ ছিল গো সখী
তারে দেখতে মানা রে।
গুসাই রাধারমণ গো বলেন পিরিাতের নিশানা।।
যার লাগি দুষি হইলাম
আমি তারে তো পাইলাম না।

তী/২৬

৩০১

অয়রে শ্যামচন্দের বাঁশি, আকুল কইল মোরে।
দেওয়ানা কইল মোরে রে ডাকাইত বাঁশির সুরে।
বাঁশি ধরি মাইল টান উড়িল যুবতীর প্রাণরে।
শ্যামরূপ পানে চাইয়া থাকি রে নয়ন ভাইরা দেখি রে
জুড়াব দুই আঁখি রে।।
আমি যাইমু জলের ছলে তুমি যাইবায় কদম তলে রে।
কদম তলে হইব দেখা, শ্যাম, তোমার আমার একা রে
কহিব দুঃখের কথা রে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে বাঁশির জ্বালায় অঙ্গ জ্বলে রে
পিরিত কইরে ছাইড়া গেল অন্তর আমার ঝুরে রে।

শ্যা/৬

৩০২

অসময়ে বাঁশি বাজাই আকুল কইলায় মোরে প্রাণ বন্ধুয়ারে
আকুল কইলায় মোরে।।ধু।।
মনপ্ৰাণ হরিয়া নিলো তোমার বাঁশির সুরে–।
তোমার বাঁশি তুমি বাজাও সহিতে না পরি।
হাতের কাজ পালাই থইয়া, ছাড়ি ঘর বাড়ী।
সপ্ত সুরের বাঁশি তোমার সপ্ত রন্ধে বাজে–
বাঁশির সুরে প্রাণ বিদুরে মন বসে না কাজে রে।
কদম ডালে বসিয়া তুমি বাজাও মোহন বাঁশি
মরণকালে প্ৰাণ বন্ধুয়া দেখা দিও আসি।।

গো (৮৯), য/১৩৪

৩০৩

অসময়ে শ্যাম বাঁশিতে দিল টান, নিল প্ৰাণ
নিলগি রাধার কুলমান।
কাঁচা চুলায় ভিজা লাকড়ি চূড়াইছি জ্বাল
ওগো জ্বলের চোটে বাসন ফুটে ভাঙিয়া হইল চারিখান
ও গো বাঁশির সুরে বেভোর হইয়া করিয়াছি লবণ টান।
শাক শুকতা ভাজাবাড়া করিয়াছি পাক
শাশুড়ী মায় খাইলে পরে করিবা বাখান
ননদীয়ে খইলে পরে তুলিয়া দিবা খোটাকান।
বাইবে রাধারমণ বলে… (অসম্পূর্ণ)।

নৃ/৯

১৬২

আদরে বাজায়গো বাঁশি রসিক বন্ধুয়া
কাঙ্খের কলসী সোতে নিল থাকি কান শোনাইয়া।।ধু।।
হাঁটুজলে বাঁশির সুরে রইলাম অবশ হইয়া
মন রইলো বাঁশি সুরে কলসী গেল ভাইয়া–।
বাঁশির সুরে আকুল কইলে কলসী গেল ভাসিয়া
শাশুড়ী–ননদী গঞ্জে বার্তা শুনি আইয়া
ভাবিয়া রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
জগতে কলঙ্কী অইলাম বন্ধের প্রেমিক অইয়া।

গো (৮৬)

৩০৫

আমায় আকুল করিল, আমায় পাগল করিল
শ্যাম বাঁকা নয়নে।
নয়ন বাঁকা ভঙ্গী বাঁকা আর যে অলকারেখা
আর বাঁকা সুবিয়াছে কুন্তল, শ্রবণে কি হেরিলাম
কালশশী কি সন্ধানে বাজায় বাঁশি
আমারে করিল পাগল বাঁশির গানে।
ভাইবে রাধারমণ বলে, কেন আইলে জলে গো।
সাধে সাধে হইলে পাগল শ্যামদরশনে।।

হা (৪), গো আ (৯২)

পাঠান্তর : অলকারেখা > অলকরেখা, হেরিলাম > শুনিলাম

৩০৬

আমার অবশ কৈল প্ৰাণ গো শুনিয়া বংশীধ্বনি।।ধু।।
আমি জল সিচিয়া জলে গেলাম গো না শুইনে শাশুড়ীর বাণী
আমার বাদী হইল কালননদী।।চি।।
কে কে যাবে জল আনিতে তোরা আয় গো সজনী
এগো বিনাসুতে গেতে মালা গো আমি সাজাইব হৃদয়মণি
আমার অবলার পরানী।।১।।
অঙ্গ আমার বারবার দংশিয়াছে ফণী
জাতিকুলমান সবই গেল গো সবে বলে অপমানি
কুলনাশা বাঁশির ধ্বনি।।১।।
অঙ্গ আমার বারবার দংশিয়াছে ফণী
জাতিকুলমান সবই গেল গো সবে বলে অপমানি
কুলনাশা বাঁশির ধ্বনি।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো সজনী
তরা আমায় নিয়ে ব্রজ চল হেরকরাঙা চরণখানি
কৃষ্ণপ্রেমের কাঙালিনী।।৩।।

রা/১১৫

৩০৭

আমার একি হইল জ্বালা
দেইখে আইলাম শ্যাম চিকন কালা
এগো আমি দেইখে আইলাম কেলি কদমতলা।
কুক্ষ্ণে গিয়াছিলাম জলে কালিন্দ্রির যমুনার জলে
এগো আমার রইয়া রইয়া উঠে মদন জ্বালা
শুইয়া থাকি স্বপ্নে দেখি প্ৰাণ বন্ধুয়ার কোলে বসি
এগো আমার গলে কদম মালা।।
ভবিয়ে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আমি আর কত সই কুলের কুলবালা।

সর্ব/১০

আমার গৃহ কর্ম না লয় মনে।
ঐ কালার বাঁশির গানে।
বাঁশি বাজায় চিকন কালায় বসিয়া কদম্ব তলায়।
শুধু মুখে বলে রাধা। রাধা বাঁশির রব শুনিয়ে পাগলিনী।
কে কে যাবে আয়রে জলে এই কালার বাঁশির গানে।
সখী গো যখন আমি রানতে বসি তখন কালায় বাজায় বাঁশি।
আমি ধুয়ার ছলে বইসে কান্দি ননদী কয় কান্দছ কেনে।
সখী গো ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আমার গৃহকর্ম না লয় মনে, চলগো সবে যাইগো জলে।

করু/১০, রবি/১

পাঠান্তর : বাঁশি বাজায় … কান্দছ কেনে > সখীগে যখন কালায় বাজায় বাঁশি/আমি তখন রানতে বসি/ধুমার ছলে কান্দতে আছি/ননদী কয় কান্দছ কেনে।।
সব সখীগণ লইয়া সঙ্গে/জল ভরিতে গেলাম রঙ্গে/তখন কালা কদমতলে। কালার রূপ দেখিয়া ভূইলে রইলাম / কার বা কলসী কেবা আনে।

৩০৯

আমার জ্বালা পুড়া কত প্ৰাণে সয় প্ৰাণ বন্ধুরে
তোর লাগি জীবন কইলাম ক্ষয়।।ধু।।
বন্ধুরে তোমারে ভালবাসি এ দুনিয়ায় হইলাম দোষী
পাড়ার লোকে কত মন্দ কয়–তোমারে দেখিব বলে
ঘরের জল বাইরে ফেলে জলে যাব মনে আশা হয়।
বন্ধুরে কলসী যখন লই কাখে শ্বশুড়ী ননদী দেখে
তারা বলে কৈ যাও অসময়।
শ্বশুড়ী ননদী ঘরে সদায় যন্ত্রণা করে
কাল স্বামীর দেখায় কত ভয়।
বন্ধু রে—ভাইবে রাধারমণ বলে না জানিয়া প্ৰেম করিলে
নয়ন জলে বুক ভাসাঁইতে হয়।
জানিয়া যে জন প্ৰেম করে–ডুবিয়া আনল সাগরে
দূরে দিছে কাল সুয়ামীর ভয়।

গো (১০৯)

৩১০

আমার দুই নয়নে ঝরে গো বারি
যার জন্য কান্দিয়া মরি।
চিকন কালায় বাজায় বাঁশি কদম্বতলে
ওরে মনে লয় তার সঙ্গে যাইতাম
কুলমান ত্যাজ্য করি।
সরম হইতে মরম ভালো
নবীন বন্ধুয়ার সনে কুলমান গেল
তার তুষানলে জ্বলছে হিয়া ঘরে না বঞ্চিতে পারি।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে
লাগিয়াছে পিরিতে লেঠা কদম্বতলে
ও তার জলের ঘাটে কদমতলে
বস্ত্রহারা বংশীধারী।

য/ ৭

৩১১

আমার প্রাণ নিলগো মুরলী বাজাইয়া
শ্যামের বাঁশি ডাকে জয়রাধা বলিয়া।।ধু।।
বাঁশিতে ভরিয়া মধু আকুল কৈলায় কুলবধূ
বন্ধে বাজায় বাঁশি নিকুঞ্জে বসিয়া।
প্ৰাণ কান্দে সই শ্যামচন্দের লাগিয়া।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
শ্যামে বাজায় বাঁশি নিগুঢ়ে বসিয়া।

গো (৮২)

৩১২

আমি কাতরে করি রে মানা বাঁশি বাঁশি আজ বাইজোনা।।ধু।।
মোহন মধুর স্বরের বাঁশি চিত্তে ধৈৰ্য মানে না।।চি।।
শুষ্ক তনু শূন্য অন্তর এর মাঝে কি মধুর স্বর
করলে কারত যত ব্রজাঙ্গনা
বুঝি অবলা বধিবার লাগিরে বাঁশি বিধাতার সৃজনা।।১।।
যেন কুমারের পণি অন্তরে দহে আগুনি
বাঁশির ধ্বনি বিষম যন্ত্ৰণা।
আমি ঘরের বাহির হইতে নারি রে বাঁশি
ঘরে শুরু গঞ্জনা।২।।
বাঁশিরে তর ধন্য ধন্য করিয়াছিলে যতই পূন্য
কৃষ্ণ বিনে কবুত থাকো না
এ চরণ অভিলাষী রে বাঁশি রাধারমণের বাসনা।।

রা/৭৮

৩১৩

আমি কি করি উপায় গো সখী শ্যামরায়।।ধু।।
বাঁশির সাতে প্ৰাণনাথে প্ৰাণ লইয়া যায়।।চি।।
যাক যাক প্ৰাণসখী কেমনে বন্ধু রে দেখি গো
মনে লয় উড়িয়া যাই পাখা নাহি পাই গো
যে বনে বন্ধুয়া আছে চল সব যাই তার কাছে
মন গিয়াছে সেই পথে গৃহে থাকা হইল দায়।।২।।
যেই সারা সেই তার যোগোযোগে অবতার গো
শ্যামের সনে হবে দেখা রাধারমণ গায় গো।।৩।।

রা/৮৮

৩১৪

আমি কি হেরিলাম গো, শ্যাম কালিয়া রূপে আমায় পাগল করিল।
কিক্ষেণে গো গিয়াছিলাম, বিজলী ছটকে রূপ নয়নে হেরিলাম
আমায় অঙ্গুলি হেলাইয়া শ্যামে কি বলিল গো।
যদি আমি হইতাম পাখি উড়িয়া গিয়া শ্যামরূপ দেখি
দারুণ বিধিয়ে বুঝি পাখা আমায় নাহি দিল গো।
ভাইবে রাধারমণ বলে রূপ হেরিলাম তরুমুলে গো
এবার আমার মনের দুঃখ মনেতে রহিল গো।

সুহা/৬

৩১৫

আমি কেন গেলাম জলে গো সখী কেন গেলাম জলে।
ভরা কলসী লইয়া শ্যামকে হারাইয়া আমি যাইতে নারি গৃহে।।
কদম্বের ডালে ত্ৰিভঙ্গের বেশে কালায় আমায় দেখে মুস্কি হাসে।
বরা কলসীর জল, ঢালিয়া ফালাও ভূমিতল, আমার মনে লয়
গো আবার যাইতাম জলে।
ভাবিয়া রাধারমণ কয় কিবা প্ৰাণী জলে রায় এগো কালা
আমার গলার গো মালা।

কি/১১

৩১৬

আমি কেন গেলাম জলের ঘাটে জল আনতে গো প্রাণসজনী।
কি আচানক রূপের ছটক গো ও যেমন … সৌদামিনী।।
নামারূপ বাঁশির গানে দরদী পরাণে সেই অঙ্গ পরশা হইলে
ও সখী, কি হইবে না জানি
তিন পুরুষে হয় না রতি একা হইলেম প্রাণী
আমি কারে ভজি করে ত্যেজি গো ও বিশখে
বল গো সখী প্ৰাণ সজনী।
নব অনুরাগের ভরে হইলেম উম্মাদিনী
তিন পুরুষ নয় এক পুরুষ হয়
ও সখী বলিতেছে রাধারমণী।

য/৮

৩১৭

আমি কোন সুখে আজ গিয়াছিলাম সুরধনীর কুলে
রূপের কিরণ রূপের হিরণ লাগল আমার গলে।
খারি ভরা ফুলের কলি ফুটল ঝাকে ঝাকে
সেইনা ফুলে মালা গাঁথি দিতাম বন্দের গলে।।
বাটা ভরা চুয়াচন্দন দিতাম বন্ধের অঙ্গে
প্ৰেমখেলা খেলিতাম দোহে মনোরঙ্গে
ভাইবে রাধারমণ বলে রূপের ছটায় নয়ন জলে
ও রূপ যায় না ধরা ধরিবারে গেলে।।
গো (৯৩), হা (৪২-৪৩)

পাঠান্তর : কোন সুখে > সুখ কেনে (সুক্ষণে?)

৩১৮

আমি দেইখে আইলাম তারে গো।
জলের ঘাটে নবীন শ্যামরায়
ও তারে দেখলে নয়ন পাশরো না যায়।।
কদম্ব ডালেতে বসি প্ৰাণবন্দে বাজায় বাঁশি।
ও তার বাঁশির সুরে নিল কুলমান গো।
তনুবিদ্যা বিন্দুরেখা প্ৰাণ বন্ধুরে আনি দেখা
ও আমার অঙ্গদিনী সুদেবী কোথায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আমার নয়ন জলে বুক ভাসিয়া যায়।

গো (৭৮)

৩১৯

আমি রাঙা পদে বিকাইলাম রে বন্ধ ঐ রাঙা চারণে।
বন্ধু রে তোমার আমার সরল পিরিতি
পাড়ার লোকে জানলে হবে রে দুৰ্গতি
গোপনে করিও পিরিত রে বন্ধু লোকে যেন না। শুনে।
ভাইবে রাধারমণ বলে তোমার আমার সরল পিরিত
থাকে যেন গোপনে গো।
থাকিতে যেন ভুলিওনারে বন্ধ মইলে যেন না পাশারে।

নমি/১৮

৩২০

আমি রূপ হেরিলাম গো আমার মনপ্ৰাণ সব দিলাম গো।।ধু।।
সখী গো–সুরধনীর ঐ ঘাটে গৌরায় নারী ধরার
ফান পাতিয়াছে গো।
এগো যে যাইবায় ফান্দে ঠেকাবায় দায়ে ঠেকাবায় গো।
সখী গো যাইছ না তোরা সুরধনী মোর মত হইছ না
কলঙ্কিনী গো
এগো–কুলমান তোরা থাকো নিজ ঘরে গো।
–সখী গো–বলে অধীন রাধারমণে
প্ৰাণে কি আর ধৈৰ্য মানে গো–
এগো মনে লয় প্ৰাণ ত্যাজ্য করে তার সঙ্গে যাই গো।

গো (৭৯)

৩২১

আয়গো সখী কে কে যাবে কদম্ব তলায়
ডালে বৈসে চিকনকালা মুরারী বাজায়।।ধু।।
যে শুনে বাঁশির গান থাকে না তার কুলমান
নাম শুনে দৌড়ে চলে গাছের তলায়।
বন্ধের গলে দিয়ে মালা পড়ে থাক চরণ তলা
কত রঙ্গে করে খেলা দেখলে বুঝা যায়।
উপরে গাছের মূল শিকড়ে ধরিয়াছে ফুল
সেই গাছে বন্ধের বাসা আদম পুরায়।
রাধারমণ প্রেমে মরা ধরাধরি নেও গো তোরা
ধরি তোরা ফেলে আসো শ্যামবন্ধের রাঙ্গা পায়।

গো (৯১)

৩২২

আয় বা’ নিলাজে কালা’ রে,–
কালা, কোন ঘাটে ভরিতাম গঙ্গার জল।
আর তোমার বাঁশির সুরে
সেই ঘাটে ইংরেজের কাল রে–
ওয়রে, কল চাপিয়া দেও গঙ্গার জল।।
আর তোমার বাঁশির সুরে
ভাটিয়াল নদী উজান ধরে।
ওয়রে, ঘৃত-লনী না লয় আমার মন।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে
আছইন কালা কদমতলে।
ওয়রে, কুলমান লজ্জা–ডরে
থাকো নিলাজ কালা রে।।

শ্রী/৩২৩

৩২৩

আর আমি যাব না সইগো কালিন্দীর জলে
নন্দের সুন্দর মদনমোহন বাঁশি বাজায় কদমতলে।
একদিন জলের ঘাটে কালায় মোরে ধরলো হাতে, প্রাণসজনী
নিষেধ বাধা নাহি মানে লম্ফ দিয়া ধরল গলে।
পথের মাঝে বাকাকুরি দেখে আইল কালন,নদী, প্রাণসজনী,
আমার নিদাগেতে দাগ লাগাইলো বসন লইয়া উঠলো ডালে।
ভাইবে রাধারমণ বলে শোনগো তোমরা সকলে
জলে গেলে মান থাকে না। আর কেউ যাইও না জলে।।

হা ২৭ (৩৯), গো (২৮৯)

পাঠান্তর : গো আঃ কালায় মোরে > লম্ফ দিয়া
লম্প দিয়া ধরল গলে > চিপা দিয়া ধরে গলে
দেখে আইল…প্রাণসজনী > ননদীর নজরে পড়ি
বসন লইয়া > বসন নিয়া
শোনগো তোমরা সকলে > শোন গো রাই তোরা সকলে।

৩২৪

আর জ্বালা দিও না বাঁশি আর জ্বালা দিও না আমারে
জনম দুক্ষিনী রাধা জানি কি জান না রে?
কাঁচা বাঁশের বাঁশিরে বাঁশি করুল রসের আগা
কেমনে বদন ঢাকা কতই দুক্ষ মনে
শিংরা ফলের কাটার মত বিন্দিল পরাণে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে গো মনেতে ভাবিয়া
এগো সারা জনম গেল আমার কান্দিয়া কান্দিয়া।

হা/৬ (৪), গো (১৮৭)

পাঠান্তর : করুল > করুশ, বিন্দিল > বিন্দিছে ভাবিয়া… গো-> শ্ৰীরাধারমণ বলে, সারা জনম > এগো সারা জনম > এগো সারা জনম

৩২৫

আর দাঁড়াব কত রে শ্যাম আর দাঁড়াবা কত
এগো জল লইয়া ঘরে যাইতে পন্থে প্ৰমাদ পাত রে।
শাশুড়ী ননদী ঘরে কারে ডরাই কত
এগো ঘরে গেলে হেলায় ঘুচায়
কাল সাপিনীর মতো
ভাইবে রাধারমণ বলে বেলা হইল গত
এগো ছাড় পন্থ লজ্জাবারণ করারে শ্যাম রাধা-কান্ত।

নমি/৬

৩২৬

তাল-লোভা

আর বাইজ নারে বন্ধের বাঁশি রে।।ধু।।
তোমার মধুর স্বরে রহিতে পারি না ঘরে বাঁশি রে।
আমরা কামিনীর মন উন্মাদিনী করে রে।।১।।
থাকি গুরু গঞ্জনায় ননদিনী মন্দ কহে সদায় বাঁশি রে
আমার জাতিকুল লাজভয় নিলে হরে রে।।২।।
কহে শ্ৰীরাধারমণ কেন করে জ্বালাতন বাঁশি রে
নিতে হইলে নেয়। সঙ্গে করে রে।।৩।।

রা/৬৩, রা/৮১

৩২৭

আর শুন শুন শুন মর্ম দিয়া–
কালায় প্ৰাণ নিল মুররী বাজাইয়া।।
গিরে রইতে নারি বাঁশির রব শুনিয়া।।
আর কদম্বেরি তলে বসি–
কালায় নাম ধরিয়া বাজায় বাঁশি।
গিরে রইতে নারি বাঁশির রব শুনিয়া।।
আর ঘরে গুরুজন বয়রী–
আমি ফুকারিয়া না কান্দতে পারি।
আমি কতোই রইমু পরার অধীন হইয়া।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
মনে মনে ভাবে কেনে :
ওরে, আসব তোমার প্রাণ-বন্ধু
নিকুঞ্জে আসিয়া।

শ্রী/৩৩০

৩২৮

উদাস বাঁশি বাজল কোন বনে গো প্ৰাণ ললিতে।
বাঁশির স্বরে কান্দে প্ৰাণ ধরাইতে না পারি মোর চিত্তে।
বাঁশি বাজায় শ্যামরায় শুনলে আমার প্রাণ যায়
আয় গো আয় আয় গো আয় আর পারি না গৃহে রহিতে
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে গো
জাতকুলমান সব দিয়াছি ঐ কালার পিরিতে।

র/১৩৫

৩২৯

এগো সই কি দেখিলাম চাইয়া–
ও মন চলে না গৃহে যাইতে প্ৰাণ বন্ধরে থইয়া।
সুরধুনী তীরে গেলাম কাকে কলসী লইয়া–
রূপ পানে চাইতে চাইতে কলসী গেল ভাইয়া।
সোনার বান্ধা মোহন বাঁশি প্ৰেমে বান্ধা হিয়া–
নাম ধরে বাজায় বাঁশি তমাল ডালে বইয়া।
ভাইবে রাধারমণ মনেতে ভাবিয়া–
নিবাইল মনের অনল কে দিল জ্বালাইয়া।

হা/৩৩ (২) গো আর (২১৫)

পাঠান্তর : মন চলে > ও মন চলে না, কাঙ্কে কলঙ্কী”> কলসী কাখে, রূপ পানে > রূপের পানে, কে দিল > বাঁশি দেয়

৩৩০

এমন সুন্দর শ্যামল বনবেহারী।
তারে হদিয়ে রাখিয়ে সদায় গো হেরি।।
সকল সখীর সঙ্গে আইলাম। জল ভরি
আঁখির ঠারে আমায় বলে মালা দেও প্যারী।
কদম ডালে বইসে কালায় বাজায় বাঁশরী
কত যুবত নারীর মনপ্ৰাণ নিল গো হরি।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন সহচরী
কালার প্রেমের এতো জ্বালা আগে তো না জানি।

সর্ব/৮

৩৩১

ঐকি শুনা যায় গো বিধুমুখী রাই।।ধু।।
বাঁশির সাতে প্ৰাণনাথে প্ৰাণ লইয়া যায় গো।।চি।।
যমুনার ঐ কুলে বসি পুলিবনে বাজায় বাঁশি।
মনে লয় দেখিয়া আসি পাই কি নাহি পাই গো।।১।।
মনের সুখে আনিব জল কৈ সে আমার কদমতলা
পাইলে রে তারে রাখব। ধৈরে যাই কি নাই যাই গো।।২।।
সকল সখীর সঙ্গে যমুনায় চলিলা রঙ্গে
প্ৰেমাতরঙ্গে রসরঙ্গে রাধারমণ গায়।।৩।।

রা/৯১

৩৩২

তাল-লোভা

ঐনি কালিয়ার বাঁশির ধ্বনি গো সজনী।।ধু।।
কি জানি কি সন্ধানে হরিয়া লয় পরানী।।চি।।
বাঁশি নয় গো সুধানিধি তারে কেমনে গড়িল বিধি
শ্যামের বাঁশির মাঝে আছে কি মোহিনী গো।।১।।
বাঁশিতে ভরিয়া মধু ঘরের বাহির কৈরে গো কুলবধূ
মনপ্ৰাণ লইয়া করে টানাটানি।।২।।
শ্ৰীরাধারমণের বাঁশি বাঁশির কাছে গেলে বাঁচে প্ৰাণী
মন্দ বলৌক লোকে ককৌক কানাকগনি।।৩।।

রা/৫৪

৩৩৩

ঐনি যমুনা পুলিন বল গো অ’ সখীগণ ।।ধু।।
শুনি কোন বনে মুরলী আলাপন গো ।।চি।।
বিকসিত তরুতলা কি মনোহর পল্লবপাতা গো
সুগন্ধে নাসা করে আকর্ষণ গো।।১।।
কথা রে কদম্বতরু মনবাঞ্ছা কল্পতরু
বংশী নাটের গুরু করাও দরশন গে।।২।।
মুরলী মধুর স্বরে আমার মনপ্ৰাণ নিল হরে
আর কি ধৈৰ্য ধরে শ্ৰীরাধারমণ গো।।৩।।

রা/৮৬

৩৩৪

ঐ বাজে কুলনাশার বাঁশি নিরলে বসি গো।।ধু।।
বাঁশি শুনিয়া শ্রবণে মন কইলা উদাসী গো।।চি।।
প্ৰাণসই সখী গো অবলা কুলের কুলটা
উন্মাদিনী বাঁশির মিঠা জলের ছলে চল গো প্ৰেয়সী।।১।।
শীতিল কদম্ব মূলে ডাকে বাঁশি রাধা বৈলে
চল সবে শ্যামকে হেরে আসি গো।২।।
প্ৰাণসই সখী গো ছাই দিয়াছি মানের মুখে
যে বলেীক সেন বলেীক লোকে
বাঁশী মোরে করিয়াছে পিপাসী।।৩।।
মনপ্ৰাণ গিয়াছে যার কাছে সে বিনে কি প্ৰাণ
বাঁচে রাধারমণ বলে কৃষ্ণ অভিলাষী।।৪।।

রা/৮০

৩৩৫

ঐ বাজে প্ৰাণবন্ধের বাঁশি জয় রাধা বলে
কলসী নিয়া আয় গো সখী কে যাবে যমুনার জলে।
অগুরু চন্দন চুয়া কাটরায় লিও ভরিয়া
দিবা কালার অঙ্গেতে ছিটাইয়া।
দেখিব কালার রূপ দাঁড়াইয়া কদম্ব মূলে।
কলসী রাখিয়া কুলে মালা গাথি বনফুলে
ঐ মোহনমালা গাথি দিক প্রাণবন্ধুয়ার গলে।
শুনি বাঁশি মন উদাসী ধৈৰ্য নাহি মানে
আমায় নিয়ে চলে গো ত্বরা। যমুনার জলে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
কুলবধূর কুল মজাইল কলসী ভাসিয়া গেল জলে।

গো (২৯০), হা (৩৯)

৩৩৬

ঐ বাজে মোহনবাঁশি শুন নি শ্রবণে
বাঁশির রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুধামৃত করে বরিষণে।।ধু।।
যোগী ঋষির যোগভঙ্গ বাঁশির সুতানে
যমুনা উজান বহে শ্যামের বাঁশির সনে।।১।।
ললিতাবিশাখা চলে কে যাবে মর সনে
কদম্বে কি বংশী বটে কি যমুনা পুলিনে।।২।।
আর তা ঘরে রাইতে নারি বাঁশির আকর্ষণে
বংশী নাটে মন উচাটন কহে শ্ৰীরাধারমণে।।।৩।।

রা/৬৮

৩৩৭

তাল–খেমটা

ঐ যমুনার ঘাটে কদম্ব কি বংশী বটে, সই।।ধু।।
মুরলী মধুর নাটে প্ৰাণ চমকি উঠে।।চি।।
কুলবধূর কুলবিশি কলঙ্ক রটে।।১।।
উগাড়ে অমিয়া রাশি পরতন্ত্র শ্যামের বাঁশি, সই
বাঁশির সুরে মন উদাসী প্ৰাণ নাই ঘটে।।২।।
বাজায় বাঁশি কালশশী কিবা কিবা কিবা নিশি সই,
মনে লয় তার হইতেম দাসী, রাধারমণ রটে।।৩।।

রা/৭৭

৩৩৮

পুর্বরাগ

ঐ শুনি গো মোহন বাঁশি বাজায় শ্যামরায়।।ধু।।
মনোচোরায় বাজায় বাঁশি গৃহে থাকা দায়।।চি।।
বাজিও না রে শ্যামের বাঁশি বারে বারে নিষেধ করি
শাশুড়ীননদী ঘরে বাহির হওয়া দায়।।১।।
বাঁশিতে ভরিয়া মধু মজাইলা কুলবধূ
কুলনাশা কালিয়ার বাঁশি রে কুল মজায়।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
চল সজনী ছলের ছলে সপিতাম পায়।।৩।।

আশা /, নমি/৭

পাঠান্তর : মনোচোরায় > শ্যামনগরে, মজাইলে > আকুল করল;
কুলনাশা… মজায় > কুলনাশা বাঁশির স্বরে কুলমান মজায়; প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে > চল সখী যমুনার জলে; চল সজনী… পায় > জলে গেলে হবে দেখা শ্যামনগর কানাই।

৩৩৯

তাল–খয়রা

ঐ শুনো বংশী ঘাটে বংশীনাটে শ্যামনটবর সই।।ধু।।
শুনি বংশীধ্বনি কুলকামিনী আমরা উন্মাদিনীর মত হই।।চি।।
কি দিয়ে সৃজিল বিধি এমন অমিয়া নিধি
মনপ্ৰাণ হরিয়া নিল বলবুদ্ধি
উন্মদিনীর মতো আমি আর কেমনে গৃহে রই।।১।।
তরা যে যাবে জলে চল যাই কুতূহলে মন উদাসী
শ্যামের বাঁশি লাগিল কানে
প্ৰাণ লইয়া মর টান দিয়াছে আমি বাঁশির জ্বালা কত সই।।২।।
শুনগো বিশাখা কি যায় প্রাণ রাখা
অন্তরে গরল বাঁশি অমৃত ঢাকা।
শ্ৰীরাধারমণে ভণে বাঁশির কাছে গেলে প্ৰাণ বাঁচে সই।।।৩।।

রা/৫১

৩৪০

ঐ শোনো সখী বন্ধের বাঁশি বাজল গো রাধা বলে
কলসী নিয়ে আয় গো তোরা কে যাবে যমুনার জলে।।
সখী গো আগর চন্দন চুয়া কাটরায় লও ভরিয়া
দিব চন্দন শ্যাম অঙেগী ছিটাইয়া ছিটাইয়া
দুটি নয়ন ভরি হেরব এরূপ দাঁড়াইয়া কদম্বমূলে
সখী গো কলসী রাখিয়া কোলে বনফুলে মালা গাঁথি
দিব মালা প্ৰাণবন্ধুয়ার গলে
রাধারমণ বলে শুন গো সখীগণ বাইরো শ্ৰীকৃষ্ণ বলে।।

কি/৯

৩৪১

(কৃষ্ণের পূর্বরাগ)

ও আর পাসর মা যায় গো তারে
পাসর না যায়–
একদিন দেখইয়াছি যারে।।
আর কেওরের পিন্দন লালনীলা
কেওরের পিন্দন শাড়ী।
আমার শ্ৰীমতী রাধিকার পিন্দন–
কৃষ্ণ-পীতাম্বরী গো
আর ভাইবে রাধারমণ বলে
শুনো গো সকলে;–
এগো, মইলাম মইলাম, আমি মাইলাম,
বন্ধু থাকউক সুখেতে।

শ্রী/১৬৬

৩৪২

ও কোন বনে গো কোন বনে মুরারী ধ্বনি শোনা যায়
কোন বনে বাজে বাঁশি ত্বরা করে জেনে আয়।
দুতী যেয়ে কর গো মানা অসময়ে সে যেন বাঁশি বাজায় না
তার বাঁশির সুরে বিন্দাবনে কুলবধূর কুল যে যায়।
কোন গুণের গুণী আইল ধরতে গেলে ধরা না যায়
ধরতে পারলে সাপটি ধরি ভাসবে প্ৰেম যমুনায়
সব সখী চলে আয় দরশনের সময় যে যায়
কদমডালে বাজায় বাঁশি গোসাঁই রাধারমণ গায়।

গো (২৯১), তী/৯৯, গা (১৮)
পাঠান্তর : তী : কোন … আয় > ভাণ্ডিল বনে কি বংশী বটে জাইনে আয় যেয়ে > যাইয়ে, অসময়ে সে যেন > অসময়ে রসরাজে যেন তার > শ্যামের সুরে > স্বরে, কুল যে যায় > কুল মজায়… ধরতে . যায় > ধরতে গেলে পাইনা নাগাল সে কোন দেশে বায় সব … আয় > ললিতা বিশাখা তোরা আয়, দরশনের > শ্যাম দর্শনের, যে যায় > গাইয়া যায়।

৩৪৩

ওগো শ্যামরূপ নয়নে হেরিয়া
রূপে মন ভুলিয়া রইল গো আমার জলে রূপ দেখিয়া।
কুখনে জল ভরতে গেলাম কাঁখে কলসী লইয়া।
যমুনার স্রোতে নিল গো আমার কলসী ভাসাইয়া–
হস্ত বাঁকা পদ বাঁকা বাঁকা মুখের হাসি
তা আনে অধিক বাঁকা হস্তের মোহন বাঁশি
কলসী ভরিয়া রাধা থইল কদমতলে
কদম ফুল বাঁদিয়া রাধা নিরখিয়া চায়
ঠাকুর কৃষ্ণের শ্ৰীচরণ জলে দেখা যায়
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
কুল গেল কলঙ্ক রইল জগৎ জুড়িয়া।।

ক. মায়ী/১৩

৩৪৪

ও প্ৰাণসই শুন সজনী শ্যামের বাঁশি বাজল কই
এগো কৰ্ণমূলে প্রবেশিয়া দংশিল আমারে গো সাই–
শুকনা বাঁশের বাঁশি ফুকারিছে মধুর হাসি
এগো সই বাঁশি ভুজঙ্গ হইয়া দংশিল আমারে
রাধারমণ বলে এগো রাই বাঁশির কোনা দুষ নাই
নাটের গুরু শ্যাম কালিয়া সে বড় উতল গো সই।।

শা/৭

৩৪৫

ও বা রসিক কালাচান কি জন্যেতে রাধা বলি
বাঁশিতে দেও শান।।ধ।।

বাঁশির সুরে কুলবধূর আকুল অয় পরান
কাজ ফেলিয়া বাঁশি শুনতে পাতিয়া থাকি কান।
কান পাতিয়া থাকিতে বন্ধু সময়ে পড়ে টান
কাজ দেরী হইলে শাশুড়ীর বাক্যবাণ
সে জন্য করিবে মান বন্ধু কালাচান
রাধা বলি তান ধরিয়া করিও না অপমান।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে রসিক কালাচান
রাধা বলি বাঁশির মাঝে আর দিও না শান।

গো (৮০)

৩৪৬

ও বাঁশিরে শ্যাম চান্দের বাঁশি, বাঁশি করিলায় উদাসী
অষ্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশি তরল বাঁশের আগা
কে তোরে শিখাইল বাঁশি আমার নামটি রাধা
যখন বন্দে বাজায় বাঁশি আমি রান্দি
বাঁশিটি বাজায় বন্ধু বইয়া কদমডালে
লিলুয়া বাতাসে বাঁশি রাধা রাধা বলে।
ভাইবে রাধারমণ বলে তোরা শুন গো প্ৰাণসখী
আমার নয়ন গলে প্ৰাণ বন্ধুরে একবার আন গো সখী।।

করু / ১১

৩৪৭

ও রূপ লাগিল নয়নে বন্ধু বিনে প্ৰাণ বাঁচে না না না না না
ঘরে আছে কুলবধূ মুখে নাহি সব মধু
কি মধু খাওয়াইলে জানি না।।
কি রতি কি বল মতি বন্ধু বিনে নাই সে গতি
জ্বলন্ত অনল নিবে না।।
হৃদয় পিঞ্জিরায় পাখি হৃদয়ে বান্ধিয়া রাখি
ছুটিলে পাখি ধরা দিবে না।
ভাইবে রাধারমণ বলে দেখা গো তোমরা সকলে
বিষম কালি ধুইলে ছুটে না।

করু/১৫

৩৪৮

ওরে সঙ্কটে বাঁশি বাজায় গো শ্ৰীকান্তে।
এগো রাধা রাধা রাধা নাম ধরি
শুনতে পাইলাম বাঁশি বাজায় গো শ্ৰীকান্তে
বাঁশির আর একে তো গো জ্বালা আর জ্বালায় বসন্তে
আর মন হইয়াছে উন্মাদিনী ভাবিতে চিন্তিতে।।
আর শ্যামকলঙ্কী নামটি আমার বাকি নাই কেউ জানতে
ওগো বলীউক বলীউক লোকে মন্দ ছাড়ব না প্ৰাণান্তে।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে ভাবিয়া মনেতে
ওরে জীতে না পুরিলে আশা পুরে যদি অন্তে।

শ্রী/৯২, হা (৪), গো (৮০)/(১৯৮)

৩৪৯

ও শ্যাম কালিয়া আর আমারে জ্বালাইওনা বাঁশিটি বাজাইয়া।।ধু।।
তুমি যখন বাজাও বাঁশি কদম ডালে বইয়া
প্ৰাণ আমার উচাটন করে কর্ণে সুর প্রবেশিয়া।
হাতের কাম কারিয়া পড়ে বাঁশির স্বর শুনিয়া
নিকামা দেখি নন্দে কয় কি শূনো দাঁড়াইয়া
কি বলি তখন আমি না পাই তুকাইয়া
তখন নন্দে গালি দেয় মা বাপ তুলিয়া
নন্দের গালি শুনিয়া না শুনি থাকি নীরব হইয়া
বাঁশির সুরে নন্দের গালি যায়গি তলাইয়া।
ভাবে বুঝে নন্দে আমার কয় কথা ঘুরাইয়া
‘লাংগের টান’ টানো বুজি ‘হাইর’ ভাত খাইয়া
তে কেনে যাও না চলি লাংগের লগ ধরিয়া
ডাটা অইয়া উবাই কি লাভ হাইর কাম পালাইয়া।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শ্যামরে কালিয়া
আর দিও না জ্বালা মোরে রাধা সুর বাজাইয়া।।

গো/ (১১৮)

৩৫০

ও শ্যাম তোরে করি মানা তুমি–মোহন বাঁশি আর বাজাইও না।।ধু।।
বন্ধু রে সাঞ্জা কালো বাজাও বাঁশি গোপীর মন কর উদাসী
ওরে শ্যাম কালিয়া সোনা;
তুমি পুরুষ কুলে জন্ম নিয়া নারীর বেদন জান না।
বন্ধুরে রাত্র না নিশাকালে বাজাও বাঁশি রাধা বলে
অভাগিনীর প্রাণে সহে না– ঘুমের ঘোরে চমকিয়া উঠি–
কান্দিয়া ভিজাইয়া ফুল বিছানা।
বন্ধুরে হীন রাধারমণ বলে আজিকু যমুনার জলে
দেখা দিও কালিয়া সোনা,
দেখা যদি নাহি দেও এ প্ৰাণ আর রাখবো না।

গো (১৪২)

৩৫১

কই গো মাধবীলতা বল গো ললিতে
বন্ধু কোন বনে চড়াইয়াছে ধেনুগণ গো ললিতে
কদমতলে করছে আলাপ পদের পরে পদ থইয়া।
কদম্বে জুলান দিয়া বুদ্ধে বাজায় বাঁশি
রাধারে বিনাইয়া।
ভাইবে রাধারমণ বলে ভাবিয়া যাইও আপন মনে গো
বন্ধু আসিবা পরে জলের লাগিয়া গো ললিতে।

ক.ময়ী/১২

৩৫২
কঠিন শ্যামের বাঁশিরে, ঘরের বার কইলে বাঁশি আমারে।।ধু।।
সঙ্গে করি নেও রে বাঁশি দাসী বানাই আমারে,
সহে না বিচ্ছেদ জ্বালা আর দিও না আমারে।
এমন দরদি নাই বুক চিরি দেখাব কারে,
তোর যন্ত্রণায় ঘর ছাড়িয়া হইলাম জঙ্গলবাসীরে।
কোথায় গেলে পাব তারে ভাবি বসি নিরলে,
একবার যদি পাইতাম শ্যামে মজিয়া রাইতাম চরণে
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শুন গো তোরা সকলে,
পাইতাম যদি শ্যামের বাঁশি মজিয়া রাইতাম চরণে।

আহো (৪) শ্রী/৯১, গো (১৫৬), হা (৩৩) সুধী-১২
পাঠান্তর : শ্ৰী : দরদি > দইরদী, গো আঃ বার > বাহির

৩৫৩

তাল-লোভা

কথায় বাঁশি মন উদাসী কোন নাগরে নিল মনপ্রাণ হরে।।ধু।।
কি মোহিনী জানে বাঁশি রাইতে না দেয় ঘরে ।।চি।।
শুনিয়া বাঁশির ধ্বনি হল প্রাণশূন্য তনুখানি
আছে কোন কামিনী ধর্য ধরে।
যেন বংশী বরাশির মত মীনাকর্ষণ করে।।১।।
গৃহকর্ম না লয় মনে পাগলিনী বাঁশির গানে
যেন জল বিনে মন উচাটন করে
বাঁশি শ্রুতি মনে করে আশা, অঙ্গা দাহ করে।।২।।
যে অধরে বংশী মনে লয় গো পাইলে তারে
রাখতেম হৃদয় ভরে হৃদয় মাকারে
শ্ৰী রাধারমণের আশা শ্ৰীমুখ নেহারে।।৩।।

রা/৭১

৩৫৪

কদমতলে কে বাজায় মুরারী গো সজনী
কদমতলে কে বাজায় মুররী।।ধু।।
মোহন সুরে বাজায় বাঁশি শুনতে মধুর তানা
প্ৰেমভাবে ভাবিক হইল বাঁশি হয় আপনা।
তরল বাঁশের বাঁশি মধুর স্বরে বাজে
শুনিতে অন্তর কাপে মন চলে না কাজে।
দিন রজনী ঝুরিয়া মারি বাঁশির জ্বালায়
বাধা নিষেধ না মানিয়া মোর নামে বাজায়
ভাইবে রাধারমণ বলে রসিক সুজন
ভাবের বাঁশি বাজাও সবে জগৎ মোহন।

গো (৯৭)

৩৫৫

কদমতলে কে বাঁশি বাজায় গো ঐ শোনা যায়।
এগো শ্যামের বাঁশির ধ্বনি শুনিয়ে গৃহে থাকা হইল দায়।
শুন গো ললিতে সই তোমারে নিরলে কই গো
এগো চল যাই গো জলের ছলে যমুনায়
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জলে গো
চরণ বিনে অধীনী পাগলিনী প্ৰায় গো।

আশা/৬

৩৫৬

কদমতলে বংশীধারী,
ও নাগরী, জলের ছাইলে দেখবে তায়–
চল সজ নী, যাবায় নি গো যমুনায়।
প্ৰাণসই, সখী গো, আমার বন্ধুয়া বিনে
দরদ না মানে প্রাণে গো।
হৃৎ-কমলে জ্বলছে আনল–
আনলে জল দিলে আর নিভে না গো।।
প্ৰাণসই সখী গো, আমারে পরতিঙ্গি করি
ধরিয়া রাখছে বন্ধের হাতে গো।
যখন টানে তখন প্ৰাণে মানে না গো।।
প্ৰাণসই সখী গো, ভাইবে রাধারমণ বলে–
প্রেম জানো না তোমরা সবে গো।
মনের দুখ আর বলমু কারে,
আমার বন্ধ বিনে কেও জানে না গো।।

শ্ৰী/১০৩

৩৫৭

কদম্ব ডালেতে বইয়া কি সুন্দর বাজায় গো বাঁশি।
বাঁশি সুরে হরিয়া নেয় পরানী।।
চল নাগরী লাও গাগরী চল সবে তরাই করি
… বন্ধু দরশনে।।
ব্রজপুরে ঘরে ঘরে যত…করে যাইও নাগো
বন্ধ দরশনে।।
বেশভূষা চাই না বলে মানের ভয় রাখিনা
আমি যদি…লাগাল পাই–কলসী ভাসাই গো জলে
প্ৰাণ বন্ধুরে লই গো কোলে
প্ৰাণ বন্ধু রে ছাড়ব না প্ৰাণ গেলে।
শুনি এগো ব্ৰজ মাইয়া প্ৰেম করিও মানুষ চাইয়া
লাউল প্রেমে রমণী বুরাই মইল।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জলে
শীতল হয় না জল চন্দন দিলে।

সুহা/১৯

৩৫৮

কাঁখে বারি, প্রাণে মরি, গৃহে যাইবার সময় যায়
পন্থ ছাড়ারে শ্যাম রায়।
বন্ধুরে! তোমার কারণ, সব সখীগণ, আইলাম যমুনায়
জলে আসি হৈলাম দোষী, তার উচিত ফল দেখাইলায়।
বন্ধুরে! ঘরের জ্বালা কাল ননদী, তার জালায় প্ৰাণ যায়
লোকের মধ্যে কলঙ্কিনী কৈলে আমায়।
বন্ধুরে একা কুঞ্জে শুইয়া থাকি, তার জ্বালায় প্ৰাণ যায়
রমণ বলে, শিয়ান হইলে, বুঝবে কথা ইশারায়।
বন্ধুরে! রাজপন্থে কাপড় ধরা, ধরবার উচিত নয়।
নবীন শাড়ি ফাড়া গেলে বিষম জ্বালা ঘটাইবায়।
বন্ধরে! ইন্দ্ররমণ রাধা বলে, ভাবি তনু যায়
আমার সমান দোষী বুঝি ত্ৰিজগতে নাইরে।

য/২৬

৩৫৯

কানু রে গুণমণি শ্ৰীবৃন্দাবনে শুনি মুরারীর ধ্বনি।।ধু।।
বিরহ বেদন তনু হাতেতে মোহন বেণু
ললিত ত্ৰিভঙ্গা শ্যামরায় তরুতলে দাঁড়াইয়া
রাধা বলি মুরারী বাজায়।।
কেউ ছিল রন্ধনে কেউ ছিল দুধ আউটনে
কেউ পরে সীমান্তে সিন্দুর
কেউ পরে রত্নহার কেউ পরে অলংকার
কেউর শোভে চারণে নেপুর।
সাজিয়া সকল সখী হইয়া কদমতলা মুখী
তালে তালে কদমতলায় যায়
শ্ৰী রাধারমণ বলে যাও সখী সব চলে
নয়ন ভরি দেখো শ্যামরায়।

গো (১১০)

৩৬০

কালরূপ হেরিয়া এমনি হইলাম গো সখী
আগেতে না জানি
কুক্ষণে জল ভারতে গেলাম সুরধনীর তীরে।
ভঙ্গী করে দাঁড়াইয়াছে শ্যাম তরুয়া কদম্বতলে
দুই নয়ন বাধিয়া রাখি কদম্বের তলে
জল লইয়া গৃহে যাইতে চরণ নাহি চলে
ভাইবে রাধারমণ বলে শুনগো ধনী রাই
শীঘ্ৰ করি গৃহে যাও আর তো সময় নাই।।

করু / ১৬

৩৬১

কালরূপে হেরিলাম গো সই কদম্ব মুলে।।ধু।।
ঐ রূপ জলেরই ছিলে ঐ রূপ বিজলী খেলে,
আমরা তো যাবনা গো সেই ফিরিয়া গোকুলে;
কালমেঘে দেখি মেঘের নাথ নামিয়াছেন ওই জলে।
ঐ রূপ জলেরই ছলে—ঐ রূপ গহিনে খেলে,
শ্যামের মাথায় মোহন চূড়া বামে গো হিলে;
যে দিকে ফিরাই আঙ্খি সে দিকে নয়ন গো ভুলে
সখী চল—সকলে, যাই যমুনারই জলে,
দাঁড়াইয়াছে শ্যাম গো চান্দ ত্ৰিভঙ্গ হইয়ে;
শ্যামের লাগি মুই অভাগি প্ৰাণ ত্যজিমু ঐ জলে।
বলে বাউল রমণে, ঐ রূপ লাগল নয়নে,
কেমনে রহিব গৃহে শ্যাম চান্দ বিনে;
মনে লয় গৌর রূপ গাঁথিয়া রাখি আপন গলে।

আহে। (৪), হা (৩০)

৩৬২

কালায় মরে করিয়াছে ডাকাতি গো শুন গো সখী
কালায় দেহের মাঝে সিদ বসাইয়া জ্বালায় প্রেমের বাতি গো।।
যখনকালায় বাজায় বাঁশি (আমি) গৃহে থাকি কেমন করি
কালায় জাতকুলমান সবই নিল, নাম রইল কলঙ্কী।।
বনপোড়া হরিণের মতো কালায় মরে করচে এত
আমার বুক চিরিয়া দেখাই করে কেহ নাই দরদী।।
ভাইবে রাধারমণ বলে, কৃষ্ণচরণ পদকমলে
আমার অন্তিমকালে যুগলচরণ হেইরে যেন মরি।।

রা/১৩৪, গো (১৯৩) হা/১০০; অস
পাঠান্তর : গো আ : মরে > ঘরে কালায়… বাতিগো > হৃদয়ের মাঝে ছেলে বসাইয়া জ্বালায় প্রেমের বাতি, যখন…কেমন করি > যখন কালায় বাঁশি বাজায় তখন গৃহে থাকা হয় দায়, কালায়…কলঙ্ক > আমার > মনপ্রাণ হরি নিল করিলো কলঙ্কী, বনপোড়া.. দরদী > কৃষ্ণচরণ পদকমলে > শ্ৰীগুরুর পদকমলে, আমার… মারি > অন্তিমকালে শ্ৰীচরণে পাই যেন গো আমি।
হা : দেহের … বসাইয়া > হৃদের মাঝে হৃদ বসাইয়া।

৩৬৩

কালায় রাধাকে ভাবিয়া মনে বাজায় বাঁশি নিদুবনে।।ধু।।
ডাকে মনোসাধে আয় গৌ রাধে তোর লাগি মোর কাঁদে প্রাণে,
সখি গো যখন থাকি গৃহকাজে
বাজায় বাঁশি রাধা বৈলে।।
কালার বাঁশির গানে উদাসিনী
গৃহে থাকি আকুল প্ৰাণে।।
সখীগো ভাইবে রাধারমণ বলে
প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে।।
এগো ললিতে কালার বাঁশির স্বরে উন্মাদিনী
মনপ্ৰাণ সহিতে টানে।

আশা/৩

৩৬৪

কালার পিরতে সই গো সকল অঙ্গ জ্বলে
শীতল হয় না জল চন্দন দিলে।
হস্তে ঝারি কাঁখে কলসী, লও গো তারা শীঘ্ৰ করি।
প্রাণবন্ধু দেখিবার ছলে, কলসী ভাসাইয়া জলে।।
প্রাণবন্ধু লও গো কুলে, প্ৰাণবন্ধুরে ছাড়মুনা প্ৰাণ গেলে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে, প্ৰেম করিও না সখীর সনে
পাড়ার লোকে মোরে মন্দ বলে।

য/১৪৩

৩৬৫

কাহারে মরম কহিব রে শ্যামের বাঁশি যে দুঃখ আমার অন্তরে।।ধু।।
যেমন মেঘের আশে চান্তর্কিনীর হৃদয় বিদুরে রে।। চি৷।
বাঁশিরে নিবিড় কুটিরে রে বৈসে থাকি মনপাখি দুই আঁখি ঝুরে
যেমন পিঞ্জিরায় পাখির মত উড়িতে না পারিরে।।১।।
বাঁশিরে শ্রবণে শয়নে রে সম্মিলন নয়নে নয়ন কামশরে
মনপ্ৰাণ হরিয়া নিল কালিন্দ্রির তীরে রে।২।।
বাঁশিরে শ্ৰী রাধারমণের এই কথা মনের ব্যথা কহিনা কাহারে
আপন সাধে ঠেইকাছি ফান্দে আমি কি দোষ দিমু করে রে।।৩।।

রা/৮৪, য/১৪৪

পাঠান্তর : যেমন মেঘের আশে … বিদুরেরে > পিপাসায় চাতকিনীর বিদরে পরানী; মনপ্ৰাণ > ধনপ্রাণ, কালিন্দীর তীরে রে > কালিন্দ্রির তীরে /পয়লই রাগ অনুদিন বাঢ়িল,আনল হিয়ার মাঝে/ জ্বলছে আনল জল দিলে নিবে নারে।

৩৬৬

কি আচানক সৈন্ন্যাসী একজন গো
আমি তার নাম জানি না।
নয়ন বাঁকা ভঙ্গী বাঁকা
কি আচানক যায় গো দেখা
মাঝে মাঝে শ্যামল বরণ গো।।
হাতে লোটা মাথে জটা
কপালে তিলকের রেখা
চিনিতে না পারি বলে রাধারমণ।

রা/১৬০

৩৬৭

কি করে অন্তরে আমার প্রাণ বিশাখে।।ধু।।
চিত্রপটে রহিল আখি মারি মন দুঃখে।।চি।।
রূপ দেখে হইল যন্ত্রণা
আগে জানলে এমন পট দেখন্তেম না, কর গো মন্ত্রণা।।
সে বিনে আর প্রাণ বাঁচে না জাইগে রইল বুকেতে।।১।।
দেখেছি অবধি হিনে মনপ্ৰাণ সহিতে টানে কি যাদু জানে
অগো আমায় নিয়ে যাও বলে নাম ধরিয়ে ডাকে।।২।।
শ্ৰী রাধারমণের দুঃখ কহিতে বিন্দরে বক্ষ এ বড় কৌতুকে
কাজ কি কুলে শ্যামকে পাইলে মন্দ বলৌক গো লোকে।

রা/৪৯

৩৬৮

কি কাজ করিলাম চাইয়া, গো সই।
মন চলে না গৃহে যাইতে প্ৰাণবন্ধুরে থইয়া।
সোনার বান্ধাইল বাঁশি রূপার বান্ধা হিয়া
কোন বনে বাজাও বাঁশি প্ৰাণ নিল হরিয়া।
মনোসাধে প্ৰেম করিয়া মরিলাম ঝুরিয়া।
এমন নিষ্ঠুর বন্ধু না চাইল ফিরিয়া।।
আগে যদি জানতাম যাইবার রে ছাড়িয়া
তবে কেন করতাম পিরিত বিনা দড়াইয়া।।
রাধারমণ বাউলে বলে মনেতে ভাবিয়া।।
মনে লয় তার সঙ্গে যাইতাম কুলমান তেজিয়া।

গো (৯০৮), আহো/(২৩), সুখী/১৩, শ্ৰী/৯৫

পাঠান্তর : শ্ৰী /৯৫ : কি কাজ করিলাম চাইয়া > ওর কি কাজ কইলাম চাইয়া, রূপার বান্দা > রাপার বান্ধা কেনে।

৩৬৯

কি দিয়া সুধিমুপ্ৰেম ঋণগো রাই আমার সে ধন নাই।
তোমারই কারণে গোষ্টি গোচারণে গহন কাননে যাই
মনেতে সাধন করি শুন গো কিশোরী বাঁশিতে তোমার গুণ গাই
রাধা প্রেমাধীনী আমি সে প্ৰেমারিণী ঠেকিয়াছি বিষম দায়,
দানপত্র নাম লিখি আর কি আছে দিব বা-কি
প্ৰাণ দিয়ে ঋণ মুক্তি চাই।
তোমার কারণে করে বাঁশি ধারণে ত্ৰিভঙ্গ হইয়ে দাঁড়াই
বলে রাধারমনে মনের অকিঞ্চনে অন্তিমেতে চরণ যেন পাই।

গো ৫৬ (৬৫) (২২৮)
পাঠান্তর : আমি কি দিয়া শুধিতাম প্ৰেমঋণ গো রাই আমার সে ধন নাই/ আমি তোমারি কারণে গোষ্ঠ গোচারণে গহন কাননে যাই/ শুনগো কিশোরী বাঁশিতে তব গান গাই/রাধারমণ বলে গো ধনী আমি তার ঋণী ঠেকিয়াছি বিষম দায়/ দাসখতে নামটি লিখি আর কি ধন আছে বাকি আমি প্ৰাণ দিয়ে ঋণমুক্তি চাই।

৩৭০

কি বলমু কলিয়া রূপের কথা, গো সজনী,
কি বলামু কালিয়া রূপের কথা
আমি এথা মারি লাজে, কি যন্ত্রণা পথের মাঝে–
ও আমি জানি না-সে পন্থে চিকনকলা।
সব না সখীর সঙ্গে যমুনাতে গেলাম রঙ্গ
ও আমার ভাসিয়া তনু হইল উলের সুতা।
গো সজনী, কি বলমু কালিয়া রূপের কথা।
ভাইবে রাধারমণ বলে, ভাবিয়ো না রাই নিরানন্দে
ও আমার সব দুখ হৃদয়েতে গাঁথা
গো সজনী কি বলামু কলিয়া রূপের কথা।।

শ্রী/১০১

৩৭১

কি রূপ দেখছি নি সজনী সই জলে।।ধু।।
এগো নন্দের সুন্দর চিকন কালা থাকে তরুমুলে।।চি।।
সজনী হাতে বাঁশি মাথে চূড়া ময়ূরপুচ্ছ হিলে
যেন মালতীর মালা শ্যাম অঙ্গে দোলে।।১।।
সজনী কুক্ষণে জল ভরিতে গেলাম যমুনার কিনারে
এতো হাসি হাসি কয় গো কথা মন ভুলাইবার ছিলো।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুনগো সকলে
আমার সব দুঃখ পাশরিমু শ্যামদরশনে।।৩।।

রা/১১৪

৩৭২

কি রূপ হেরিয়া অইলাম কদমতলে।।ধু।।
আর গো শ্যামের মৃদু হাসি বদন কমলে।।চি।।
যাইতে যমুনার জলে শ্যামকালা জলে মিলে
কালরূপ হেরিয়া নয়ন আমার ভুলে।।১।।
ত্ৰিভঙ্গের ভঙিগামা বাঁকা চূড়ার উপর ময়ূর পাখা
কত মধু মালতীর মালা দিয়াছি গলে।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
সখী বঞ্চিত করিও নাকে তোমরা সকলে।।

করু/৬

৩৭৩

কিরুপ হেরিনু পরানসই
সাধ করে তারে হৃদয়ে থুই।।
রূপের চটকে উন্মাদিনী হই
গৃহেতে পাগলী কেমনে রই
সেরূপ সজনী পাব গো কই
রূপের কারণে কলহীকী হই।।
শ্ৰী রাধারমণ আমার বই
শ্যামল রূপের তুলনা কই।

য/ ২৮

৩৭৪

কি শুনি মধুর ধ্বনি গো সখী কি শুনি মধুর ধ্বনি।।ধু।।
কোন না নাগারে ধরিয়া অধরে এমন অমৃত নাম।।
শুনি বেণুগান যোগী ছাড়ে ধ্যান মৌন ছাড়ে ঋষিমুনি
বাঁশি বেড়াজাল যুবতীর কাল বাঁশিয়ে হরল প্ৰাণি।
একেত অবলা তাহে কুলবালা ভালমন্দ নাহি জানি
গৃহেতে আমার কালসৰ্পকার শাশুড়ী ও ননদিনী।
এ জাতি যৌবন সিপি নু জীবন পরান বন্দুয়া মানি
বাঁশিয়ে উদাসী হইতে শ্ৰীরাধারমণ বাণী।

য/২৯

৩৭৫

তাল-লোভা

কি হেরিলাম গো রূপে ডুবিল নয়ন।।ধু।।
কি আচানক রূপমাধুরী এমন দেখি নাই কখন।।চি।।
অন্তরে বিন্দিল রূপ, ভেঙ্গে সত্য কহ স্বরূপ, এ কি অপরূপ
কেহ নাই তার অনুরূপ এ তিন ভুবন।।১।।
চূড়ার উপরে পাখির পাখা কি দেখালে অ বিশখা—
পটেতে লেখা অঙ্গে ত্ৰিভঙ্গ বাকা মুরলী বদন।।২।।
চটকে ধামিনী আভা পীতাম্বরে কতই শোভা কি মনোলোভা
হৃদয়ে জাগে রাত্ৰি দিবা কহে শ্ৰী রাধারমণ।

রা/৪৮

৩৭৬

কি হেরিলাম রূপলাবণ্য শ্যামরূপ মনোহরা।
চাইলে নয়ন ফিরে না। শ্যামের বাকী নয়ন তারা।।
ব্ৰজপুরে রসের মানুষ দেখছো নি গো তোরা
শ্যামের কটিতে ঘুঙুর চরণে নুপুর শিরে শোভে মোহনচূড়া।
হাটিতে যাইতে খসিয়া পড়ে সুধামৃত ধারা
সেই সুধা পান করে ব্রজের ভাগ্যবতী যারা।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো ধনী তোরা
আমি যার লাগি উদাসী হইলাম সে কোন দিল না ধরা।

রা/১৩১

কুক্ষণে প্ৰাণ সজনী গেলাম কদমতলা
সে অবধি আমার মন হইয়াছে উতলা।।ধু।।
ভঙ্গী করি দাঁড়াইয়াছে বন্ধু চিকন কালা
ধড়া মোহন বাঁশি গলে বনমালা।।
শয়নে স্বপনে দেখি বন্ধু চিকন কালা
মুনিরও বে মন ইলে আমরা তো অবলা।
হস্তে করি মাথে লইলাম শ্যাম কলঙ্কের ডালা
রাধারমণ বলে রাধা হইয়াছে উতলা।

গো (২৬৭)

কুখনে গো গিয়াছিলাম জলের লাগিয়া
আমি নিষেধ না মানিয়া, সখী গো।।
শ্যামলবরণ রূপে মন নিল হরিয়া
কি বলব তার রূপের কথা শুন মন দিয়া।।
বিজলী চটকের মতো রহিয়াছে দাঁড়াইয়া
আমার কইতে বাঁধে হিয়া, সখীগো।।
আবার আমি যাব জলে আগাম জল ফেলিয়া
দাসী হইয়া সঙ্গে যাব কুলমান ত্যেজিয়া।।
আমি না আসিব ফিরিয়া, সখী গো।
ভাইবে রাধারমণ বলে কানু রে কালিয়া।।
জল ভরিয়া গৃহে আইলাম শূন্য দেহ লইয়া
আমার প্রাণটি বান্ধা থইয়া।

হী/২, সুহা/১০, গো (৯৪), হা (২২)

পাঠান্তর : সুহা : কুখনে গো > আমি কিক্ষেণে, আমি নিষেধ না মানিয়া >xx আমার কইতে ফাটে হিয়া > শূন্য দেহ লইয়া > প্ৰাণটি বান্ধা দিয়া গো (৯৪)/ হা (২২) : সুহা/১০ এর অনুরূপ।

৩৭৯

কুঞ্জে না রহিও রাধা কুঞ্জে না রহিও
নয়ানের সাধ মিটিলে তবে তুমি যাইও।।ধু।।
যমুনার জলে যাইতে পথ যাইতে আধা
কদমতলে বাঁশি বাজাই শ্যামে দিলা বাধা
শ্যামের দিকে চাইয়া আঠুতে উষ্টা লাগি পাও
গাগরী ভাঙ্গিয়া গেল শ্বশুড়ীর গালি খাও।
শ্বশুড়ী ননদীর গালি কানে বজ্ৰ জ্বালা–
ভাইবে রাধারমণ বলে শ্যাম পাইলে ভালা।

গো (২৬৮)

৩৮০

কুঞ্জের মাঝে কে গো রাধে কে গো রাধে
ললিতায় বলে রাধার বন্ধু আসিয়াছে।।
আধো মাথায় মোহনচূড়া আধ মাথায় বেণী
শ্যামের চূড়ায় করে ঝিলমিল ঝিলমিল বেণীয়ে ধরে ফণী।।
আধা গলায় চন্দ্ৰহার আধো গলায় মালা
অর্ধ অঙ্গ গৌর বরণ অর্থ অঙ্গ কালা।।
আধো মুখে মোহন বাঁশি আধো মুখে হাসি
রমণ বলে হৈতাম আমি শ্ৰীচরণের দাসী।।

আছ/১

৩৮১

কুলমান আর যায় না রাখা — বাঁশি যে ডাকে রাধা-রাধা।।ধু।।
সখী গো— কোন বনে বাজায়লো বাঁশি গোপীর মন করে উদাসী–
ধৈর্য ধরি রইতে পারি না আমি বন্ধু বন্ধু বলে বসে থাকি নিরালা।
খী গো–ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰাণ নিলো গো বাঁশির স্বরে
গৃহে আর রইতে পারি না; বাঁশির দোষ নয় লো সুখী
কর্ম দোষে এই জ্বালা।

গো (২৫৫)

৩৮২

কুলের বাহির ও মুররী করিয়াছ আমারে
কুল গেল মান গেল না পাইলাম তোমারে।।
নিরলে শ্যাম পাইলে বুঝাই কইও তারে
আমি ও কুলটা আইছি সে যেন ভুলে না মোরে।
প্রভাতকালে কোকিলায় কুহু কুহু করে
শ্যামচাঁদ বাজায় বাঁশি রাধার নামটি ধরে।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰাণ ছটফট করে
কেগো দূতী ধরি দিতে পারবে শ্যামবন্ধুয়া রে।।

গো (১৯২), হা ২ (১)

পাঠান্তর : (১) মুররী কুল গেল… তোমারে > মুরারী > আমিষে.× × প্রভাতকালে… শ্যামবন্ধুয়া রে প্রভাতকালে কাল কোকিলায় প্রতিধ্বনি করে / সখী রে মাঝে কয়ে বাঁশি ভাইবে দেয় বাঁশি সবাকারে / গুপ্তপুরে আজ ব্ৰজপুরে / সখী রে বিপদে পড়িয়া ডাকি কোথায় গো বৃন্দাদুতী, এ বিপদে রক্ষা করে / ভাইবে রাধারমণ বলে চিন্তামণির চিন্তা যাবে দূরে।

৩৮৩

কৃষ্ণ কোথায় পাই গো বল গো সখী
কোন দেশেতে যাই।।
কৃষ্ণ প্রেমে উন্মদিনী নগরে বেড়াই
শ্যাম প্রেমেতে কাঙালিনী রাই।।
ছিল আশা দিল দাগা আর প্ৰেমে কাজ নাই
বিচিত্র পালঙ্ক পাতি শইয়া নিদ্রা যাই।।
শইলে স্বপন দেখি শ্যাম লইয়া বেড়াই গো
ভাইবে রাধা রমণ বলে শুন গো ধনী রাই–
পাইলে শ্যামকে ধরব গলে ছাড়া ছাড়ি নাই।

সুহা/১৩, হা/৪৩, গো (১২২)

৩৮৪

কে তুমি কদম্বমূলে পরিচয় কেন বল না
বাঁশিটি বাজাইয়া পাগলিনী আর কইরো না।।
নিতি নিতি বাজায় বাঁশি উড়াইয়া নেয় প্ৰাণী
কাকুতি মিনতি করি। রাধা বইলে আর ডাইকো না।।
পন্থ ছাড় ছাড় বলি আমরা সব কুলনারী
শিরেতে কলঙ্ক ডালি লোকে দেয়ারে গঞ্জনা।
শাশুড়ী ননদী ঘরে থাকি আমি কেমন করে
শ্ৰীরাধারমণ বলে এই পথে আর যাইও না।।

সৰ্ব্ব/ ১১

৩৮৫

কেন রাধা বলে বাজায় শ্যামের বাঁশরী দিবানিশি।
এগো বাঁশির স্বরে গৃহে থাকা দায় হইল প্ৰাণ প্ৰেয়সী।।
যখন রন্ধনশালায় বসি তখন কালায় বাজায় বাঁশি।
আমি বাঁশির স্বরে ধুমার ছলে কান্দি।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো তোমরা সকলে
এগো জীবন কালার প্ৰেমে বান্ধা আছে শ্ৰীমতী কিশোরী।।

শ্ৰীশ/ ৮

৩৮৬

কেনে আইলাম জলে গো সই কেনে আইলাম জলে
না হেরিলাম শ্যামরূপ কদম্বের তলে গো।।ধু।।
সাঞ্জাবালা জল ফেলিয়া চলি আইলাম জলে
দেখব বলি শ্যামরূপ কদম্বের তলে গো
বিধি আইল বামগো না জানি কোন কলে
নিতাইর শ্যাম আইজ নাই। কদমতলে গো
ভাইবে রাধারমণ বলে শ্যামে মোরে ছলে
কও গুরু শ্যামের দেখা পাইমু কোন কলে গো।

গো (২৬৯)

৩৮৭

কে বাজাইয়া যায় গো সখী,
কে বাজাইয়া যায়।
এগো, ডাক দিয়া জিজ্ঞাসা করে–
কি ধন নিত চায় গো।।
আর কাঞ্চা বাঁশের বাঁশিগুলি
তলোয়ার বাঁশের আগা।
এগো নাম ধরিয়া ডাকে বাঁশিয়ে
কলঙ্কিনী রাধা গো।।
আর যেই না ঝাড়ের বাঁশিগুলি
ও তার ঝাড়ের লাগাল পাই–
এগো, জড়ে-পড়ে, উগড়িয়া
সাগরে ভাসাই গো।।
ভাইবে রাধারমণ বলে–
বাঁশি কে বাজায়।
এগো বাঁশির রব শুনি
বাজায় চিকন কালায়।।

শ্রী/৯৭

৩৮৮

কে যাবে গো আয় সখী দির সমীর বনে।।ধু।।
মনোচোরা প্ৰাণের হরি যাবে। যমুনা পুলিনে।। চি।।
সঙ্কেত মুররীর ধ্বনি শ্যাম জানে আর আমি জানি
হইয়ে উন্মাদিনী নৈলে যাব একাকিনী শ্যাম দরশনে।।১।।
পাখা নাইলে প্ৰাণপাখি ঘুরতেছ। পিঞ্জিরায় থাকি
আমার মনকে বুঝাইয়া রাখি সে যে প্ৰবোধ না মানে।।২।।
কাল হইল কালিয়ার বাঁশি কুলবধূর প্রাণ বিশি লাগাইয়া রাশি
রাধারমণ বলে অভিলাষী ঐ রাঙা চারণে।।৩।।

রা/১১৬

৩৮৯

কে যাবে শ্যাম দরশনে আয় গো সজনী।।ধু।।
পুলিন বনে বংশীর ধ্বনি সজনী গো মনে অনুমানি।।চি।।
শ্যাম দরশনের দায় যদি প্ৰাণ যায় জনম সফল গনি
কি করে ছার কুল না হাসে শুকুল লাজ ভয় নাহি মানি।।
শ্যাম নব অনুরাগে সজনীগো হইলেম উদাসিনী।।১।।
শ্যামপিরিতের মরা না যায় ধর্য ধরা বিরহে ব্যাকুল প্ৰাণী
বাঁশি হইল কাল ঘটাইল জঞ্জাল করিল গো পাগলিনী
আশা পথে চাতাকিনী সজনীগো কাঙালিনী।।২।।
এই ব্ৰজ মাঝে রমণী সমাজে হইলে হব কলঙ্কিনী
বিরহ বেদনা পরাণে সহে না বিনে শ্যাম চিন্তামণি
শ্ৰী রাধারমণে ভনে সজনীগো আমায় নেয় সঙ্গিনী।।৩।।

রা/ ৫৪

৩৯০

তাল–লোভা

কে যাবে শ্যাম দর্শনেতে আ সজনী।।ধু।।
মোহন মধুর স্বরে হইয়াছি গো উন্মাদিনী।।চি।।
ললতা বিশাখা চল সকল সঙ্গিনী
না গেলে না হবে জলে। নইলে যাব একাকিনী।।১।।
কিবা যাদু জানে বাঁশি কি মন্ত্র মোহিনী
মনপ্ৰাণ সহিতে টানে করিয়াছে উন্মাদিনী।২।।
বংশী বটে বংশীধ্বনি মনে অনুমানি
শ্ৰীরাধারমণের আশা হেরিতে শ্যাম চিন্তামণি।।।৩।।

রা/৬১

৩৯১

কোথা গো প্ৰাণসহ শোনা সখী রসরাজের কথা
বেলা অবসানকালে অইলাম গো কালিন্দ্রির জলে
নাগরও দাঁড়াইয়াছে তথা।।
কদম্বডালেতে বসি বাজায় শ্যামে মোহন বাঁশি
ভ্ৰমরা ভ্ৰমরী গুণ গায়।
নবরঙের নবযুকূল মালতী কুসুম চাম্পা ফুল
ঝরিয়া পড়িল রাঙা পায়।
নাগর বড় দুরাচার লাজ ভয় নাহি তার
অসময়ে বাঁশিতে দেয় গো টান।
আমরা গোপের নারী মনে অনুমান করি
কোন কালায় হরিয়া নেয় গো প্ৰাণ।।
কালিন্দীর জল কালা আর কালা মন্দের ভালা
দুয়ো কালায় এক সঙ্গে ভাষে গান।
ভাইবে রাধারমণ বলে আইলায় গো কালিন্দ্রির জলে
যাচিয়া যৌবন কর দান।।

রা/১৬৪

৩৯২

কোন বনে বসিয়া ধনী মনোচোরায় বাঁশি বায়
ও ললিতে যা গো তারা জাইনে আয়।
কাতরে করি গো মানা বাঁশি তুমি আর বাজাইও না
সহে না অবলার প্ৰাণে জালায় অঙ্গ জুলিয়া যায়।।
শুনিয়া কালার বাঁশি মন-হইয়াছে উন্মাদিনী
চিত্তে করে উচাটন গৃহে থাকা হইল দায়।।
ভাইবে রাধারমণ বলে কে যাবে। যমুনার জলে
বিনামূল্যে বিকাইব শ্যামের রাঙা পায়।

আশা / ৫

৩৯৩

কোন বনে বাজিল শ্যামের বাঁশি গো উদাসিনী কৈল গো মোরে
শ্যাম নিরুপম বংশী ভুজঙ্গ অবলার বধিবার তরে।।ধু।।
যারে দংশে কালফণী নাই মানে উঝাগুণী
অবলার প্রাণ কি ধৈৰ্য ধরে।
অগাধ সমুদ্রে মীন নাহি দুক্ষ বেদন আনন্দে বিহার করে,
কালিয়া বিবরে বংশী বেড়া জালে ভূখনায় তুলিয়া মারে।
বাঁশি জানে কি মোহিনী হরিয়া নেয় গো প্ৰাণী
মনপ্ৰাণ আজি কি করে;
চল চল সব সখী বনে যাইয়া শ্যাম দেখি
কহে রাধারমণ কাতরে গো।।

আহো /৩৫, হা/১৪, গো (১৬৮), তী / ১৭

পাঠান্তর : হা/কালফণী > কালশশী। গো/বিবরে > চিত্তরে; শুখানায় > ডাঙ্গায়।

৩৯৪

কোন বনে বাজে গো বাঁশি আন তারে দেখি,
বনে থাকে ধেনু রাখে রাখালিয়ার মতি।।
এমন লুকি দিল গো কালায় স্বপনে না দেখি।
যখন কালায় বাজায় বাঁশি তখন আমি রান্ধি বসি।।
ভিজা কাঠ চুলায় বসে কান্দি মরি।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
পীরিত করিয়া গেল, অন্তরে যে ঝুরি।।

হা ১২ (১০), গো (২৪৫)

পাঠান্তর গো : ভিজা কষ্ট… মারি > আকুল করে কালার বাঁশি ভিজা কাষ্ঠ চুলায় ঠাসি / ধুমা উঠে ঘর ভরি তার দুহারে কান্দি বসি; ভাইবে রাধারমণ… ঝুরি > ভাবিয়া রাধারমণ বলে কান্দি বসি ধুয়ার ছলে /কান্দনের নাই পারাপার, কান্দি কান্দি কুল বিশি।

৩৯৫

কোন বনে বাজে বাঁশি টের না পাই
রাধা বলে বাজে বাঁশি কি করি উপায়।।
কৰ্ণ পাতি শুন সজনী কি মোহিনী তায়
গৃহকর্মে নাহি মন উন্মাদিনী প্ৰায়।।
অশন বসন ভূষণ রন্ধনে যাই
ধুমার ছলে বৈসে কান্দি বন্ধুরে নি পাই।।
যে অধরে ধরে বাঁশি লাগ নাহি পাই–
জল বিনে চাতকী যে মারি পিপাসায়।।
জীবন মরণ সমান কৃষ্ণ নাহি পায়
কৃষ্ণার্পিত প্ৰাণ শ্ৰী রাধারমণ গায়।।

য/৩৩

৩৯৬

চলগো সখী জল আনিতে
গিয়ে যমুনায় জলের ছায়ায় কদম্ব তলায় প্রেম খেলিতে।।ধু।।
আমি প্রেমেরই পিয়াসী কঁখে নিয়ে কলসী হইলাম রওয়ানা জল ভরিতে।
আমার মনেরই আশা বন্ধের ভালবাসা খেলিতে পাশা কালারই সাথে।
এমন পাষাণো মারিয়া প্ৰেমবাণো ভুলিয়া রইলো কার কুঞ্জেতে।
আমার যৌবন হল শেষ প্ৰাণবন্ধু বিদেশ ঝাপ দিবো এখন যমুনার জলেতে।
আমার মরণকালে তোরা সবে মিলে যমুনারই জলে যাইও আমার সাথে।
আমার জিয়ান—মরণ কয় রাধারমণ সকলই অসার পাইলাম না তপস্যা করিতে।

গো (২৬৩২)

৩৯৭

চল গো সব সহচরী জল আনিতে যাই
শীতল গহিন যমুনায়।।ধু।।
শীতল কালিন্দী তীরে মোহন মধুর স্বরে
বাজায় বাঁশি শ্যামনগরে তারে হেরে জুড়াইব কায়।।১।।
বিশখা পটেতে লেখি নিল মনপ্রাণ আঁখি
দেহমাত্র ছিল বাকি তারে রাখা হইল বিষম দায়।।২।।
ডালে বৈসে বাজায় বেণু তারে দেখলে শীতল তনু
তারে না দেখিলে প্ৰাণ যায়।।৩।।
কাখে কুম্ভ হস্তে ঝারি চলিলা ব্ৰজনাগরী
শ্যাম অনুরাগ ধরি রাধারমণ গায়।।৪।।

রা/৯২

৩৯৮

চল সখী বন্ধু দেখতে যাই গে কদমতলায়
আড়ে আড়ে শ্যাম নাগারে আমার পানে চায়।
বাঁশির সুরে পাগলিনী করছে বাহির রাই রঙ্গিনী
আদর করিয়া ডাকে আয় গো সখী কদমতলায়।
বাঁশির নামে কালাসাপিনী দংশিল অবলার প্রাণী
রমণীর মন যায় না রাখা মুনির মনই হরে।
ভাইবে রাধারমণ বলে আয় সখী যমুনার জলে
জলের ছলে পাবে দেখা বংশীধারী শ্যামরায়।

গোঁ (৯৩), হা (২৩)

পাঠান্তর : আয় সখী… শ্যামরায় > কে যাইবে যমুনার জলে/ জলের ঘাটে হইবে দেখা প্রাণ বন্ধুয়ার সনে।

৩৯৯

জন্মের মত দিয়া ফাঁকি উড়ে গেল রাধাপাখী।।ধু।।
সুবল রে–কলসী লইয়া কাঁখে আড় নয়নে ঘোমটা টেনে
জল আনতে যায় বিধুমুখী
আশার আশে আর কত দিন পন্থপানে চেয়ে থাকি।
সুবল রে–লোকেরে না মুখ দেখাবো যমুনাতে প্ৰাণ তেজিবো
রাখবো না আর এ ছাড় জীবন।
পাখীর লাগি কানতে কানতে দেহ মাত্র আছে বাকী।
সুবল রে–ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
সে জ্বালা না যায় সহন দরশন না হইল
কেমনে প্ৰাণ বুঝাইয়া রাখি।

গো (১৪১)

৪০০

জল আনিতে দেইখে আইলাম গো সকি গৌরবরণ বাঁকা।
এগো কি কুক্ষেণে শ্যামের সনে হইল আমার দেখা।।
হস্তে শ্যামের মোহন বাঁশি গো শিরি মোহন চুরা
এগো কাঁচা সোনা বিল মিল বিলমিল
তনু খানি মাখা।।
মনপ্ৰাণ নিল শ্যামে গো শুধু দেহামাত্র একা
এগো মনভোলানো রূপটি আমার
হৃদয় মাঝে আঁকা।।
উপায় বল ও সজনী গৃহে দায় হইয়াছে থাকা
এগো পাখির মতন উইড়া যাইতাম থাকত যদি পাখা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে তারা শুন রে প্রাণের সখা
এগো নিশাকালে শ্যামের সনে হইব তোমার দেখা।।

আশা / ৮

৪০১

জলধারা দেও গো সখী মাথে
কর্মদোষে পাইলাম না গো শ্ৰী জগন্নাথে।
জলের ছলে কলসী কাখে গেলাম যমুনাতে
একা পাইয়াও পাইলাম না গো আপন কর্ম দোষেতে
জল ঢালিয়া আবার গেলাম যমুনারই ঘাটতে
চউখে দেখি প্ৰাণনাথে পাই না হাতের কাছেতে।
পাইয়া তারে পাইলাম না গো আপন করম দোষেতে
কপাল দোষে অইছি দোষী ঠাটা পাইলো মাথাতে।
ভাইবে রাধারমণ বলে আঘাত করি মাথাতে
পাইয়া বন্ধু পাইলাম না গো আপন করম দোষেতে।

গো (২৪৯), হা (৭)

পাঠান্তর : কর্মদোষে..যমুনাতে > × ×, যমুনারই ঘাটতে > বন্ধু পাইবার আশে; চউখে … কাছোতে > × ×, কপাল দোষে।…মাতাতে > × ×, আঘাত করি মাথাতে > থাকো জলের ঘাটে, পাইয়া বন্ধু…দোষেতে আমার তোমার দেখা হবে রাত্র নিশা। কালে।

৪০২

জলধারা দেও মাথে গো সখী জলধারা দেও মাথে।
জল ডালিয়া জলে গেলাম গো সখী বন্ধু পাইবার আশে
কালনাগে ছুপ মারিয়াছে বিষ উইঠাছে মাথে।
রঙ্গ গেল রূপ গেল গো সখী গেল মুখের হাসি
সোনার অঙ্গা মলিন হইল বয়সে দিল ভাটি।
ভাইবা রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
এগো মনের আগুন জ্বলছে দ্বিগুণ জল দিলে কি নিবে।

শ্রীশ/৬

৪০৩

জল ভর কমলিনী জলে দিয়া ঢেউ, গো
শ্ৰীনন্দের নন্দন কালা কদম্বেরি তলে গো।।
শুনহে শ্যাম বংশীধারী করি রে বিনতি
তুমি হাওরে রাধার গঙ্গাজল আমি কলসী ভরি।
কলসী লইয়া জলে নামলা গঙ্গার জলে
সখীর সঙ্গে মনোরীঙ্গে কাল জল ভরে
কলসী ভরিয়া রাধে থইলা কদমতলে
কলসীর ভিতরে বাঁশি রাধা রাধা বোলে।
শুইন্যা ধ্বনি রাই রঙ্গিনী–চতুর্দিকে চায় গো
চল চল গৃহে চল রাধারমণ বলে।

ন/১০

৪০৪

জলে কি নিবাইতে পারে প্ৰেম অনল যার অন্তরে।
এগো জল দিলে দ্বিগুণ জ্বলে শীতল হয় না গঙ্গাজলে।।
বন পোড়ে সকলে দেখে মনের আগুন কেউ না দেখে
বিনা কাঠে জ্বলছে আগুন আমার রিদের মাঝে
ভাইবে রাধারমণ বলে আমার মনের অনলা কেউ না দেখে
আমি হইয়াছি পিরিাতের মরা অন্যে কি জানিতে পারে।।

কি / ৪

৪০৫

জলে গেছিলাম একেলা
একলা পাইয়া শ্যাম বন্ধে খেলিয়াছে রসের খেলা।
একলা পাইয়া শ্যাম বন্ধে করছে উলা মেলা
বহুরসের খেলা খেলছে শ্যাম চিকন-কালা
জল আনতে কলসী কাঙ্খে গেছিলাম অবলা
কুলবধূ মানছে না গো কুল নাশিছে নন্দের কালা।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শোনা গো সব অবলা
কেউ যাইছ না জলের ঘাটে কুল নাশিবো নন্দের কালা।।

গো (২৯৯)

৪০৬

তাল–লোভা

জলের ঘাটে কে যাবে গো আয়
কাননে বসি ঐ কি শুনি মধুর ধ্বনি শুনা যায়।।ধু।।
বিষম বাঁশির কথা কহন না যায়।।চি।।
কালার বাঁশি কুলনাশি মনপ্ৰাণ করছে উদাসী
মনে লয় তার হই গো দাসী–না দেখি উপায়।
বাঁশি বরাশির মত ফুটিল হিয়ায়।।১।।
অবলা কুলের কুলুটা উন্মাদিনী বাঁশির মিঠা
যে শুনে তার লাগে লেঠা গৃহে থাকা দায়।
ঘরে বাদী কালননদী কয় মন্দ সদায়।।২।।
শ্ৰী রাধারমণের গাথা বাঁশির কথা হৃদয় গাথা
মনে বড় পাই ব্যথা কৈতে না জুয়ায়।
দারুণ বাঁশির জ্বালা সহন না যায়।।৩।।

রা/৫৯

জলধামালি

জলের ঘাটেতে বসি ঠার দিয়া কুল মজাইছে
ওগো একুল ওকুল দুকুল গোল
পারবিনে কুল রাখিতে।
শ্যামের নয়ন বাঁকা যৌবন যায় না গো রাখা
আড় নয়নে চায় গো কালায়
পারবি না কুল রাখিতে।
শ্যামের চূড়াটি মাথে শ্যামের বাঁশিটি হাতে
বাঁশি নাগো প্রেমের ফাঁসি লাগল।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো সকলে
এক পিরিতে তিন জন বাঁধা
শুনিছ নি কেউ জগতে।।

নিধু/২

৪০৮

জলের ঘাটে দেইখে আইলাম
শ্যাম চিকন কালিয়া।।
চূড়ার উপ্‌রে ময়ূর পাখা
বামে দিছে হেলাইয়া।
নিতি নিতি দেও খোটা
কালিয়া সোনা বলিয়া।।
দেখছি অনে লাগছে মনে
পরশিতে পারি না।
এমন সুন্দর তনু
কে দিছে গো গড়িয়া।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে
থাক ধৈৰ্য ধরিয়া।
বন্ধু যদি আপন হয় গো
আসবে ঘুরিয়া ফিরিয়া।।

শ্রীশ/৯

৪০৯
জলের ঘাটে দেখিয়া আইলাম কি সুন্দর শ্যামরায়
শ্যামরায় ভমরা গো ঘুরিয়া ঘুরিয়া মধু খায়।
নিতি নিতি ফুল বাগানে ভমর আসে মধু খায়
আয় গো ললিতা সখী আবার দেখি শ্যামরায়।
মুখে হাসি হাতে বাঁশি বাজায় বাঁশি শ্যামরায়
চান বদনে প্রেমের রেখা আয় গো ফিরি দেখে আয়।
ভাইবে রাধারমণ পাইলাম না রে হায়রে হায়–
পাইতাম যদি বন্ধুয়ারে–রাখতাম হৃদয় পিঞ্জিরায়।

গৌ (২১৬), হা (৪৪)

পাঠান্তর : আইলাম > আইলেম, ভমরাগো >ভনরায়; দেখি শ্যামরায় > জলে ঘুরিয়া আয়; প্রেমের রেখা…আয় বাজায় বাঁশি মধুর মধুর শোনা যায়; বন্ধুয়ারে-> শ্যামের বাঁশি।

৪১০

জীবন থাকিতে গো পিরিতে আর মন দিও না।।ধু।।
ও তোর পদে ধরি বিনয় করি গো, ওহে গো, ললিতা সখী
আমি কাতরে করি গো মানা।
ঘরে বারে হইলাম দোষী, কিবা দিবা কিবা নিশি
চিন্তিতেছি বিরলে বসিয়া;
আমার ভেবে তনু হইল সারা গো, কান্দাশূন্য দিন যাবে না।
মন প্ৰাণ দিয়ে বান্ধা, পাইবে লোকের নিন্দা,
রাখবে জীবন শেলেতে বিন্ধিয়া,
তোর নিত্যই প্রেমের একাদশী গো, দ্বাদশীর আর নাই পারণা
রাধারমণ চান্দের প্রাণ, হয় না কেন সমনধামান,
পাপ প্রেমের তার কি বাখান;
আমার যায় না কেন সে যেখানে গো, প্ৰাণে আর ধৈর্য মানে না।

আহো/১৯, হা (৩৫), গো (১৫৭)

পাঠান্তর : গো : ও হেগো…আমি > বিন্দিয়া > × ×, বান্ধিয়া, আয় > × ×, সমনধামান > সমানসমান।

৪১১

ডাকিও না রে শ্যামের বাঁশি আমার ঘরে বাদী গুরুজনা
বারে বারে অবলারে আর জ্বালা দিও না।
থাকিয়া থাকিয়া ডাকিয়া বাঁশি কেন দেও রে যন্ত্রণা
জানিয়া কি জান না বাঁশি বাঁশি আর জ্বালা দিও না।
নিরলে নিরতে পাইলে করমু বাঁশি আলোচনা
থাকিয়া থাকিয়া ডাকিয়া মোরে দেরায় কত লাঞ্ছনা।
তোমার ডাকের জ্বালায় চঞ্চল সদায় চিত্ত না
শ্বাশুড়ী ননদী বাদী করে কতই গঞ্জনা ।
কুলমান সব নিলায় ডাকিয়া পরাধীনা
তোমার পদে দাসী হইতে পন্থ খুঁজি পাই না।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে তোমায়া করি মানা
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ডাকিয়া আর দিও না।

গো (১৬৪)

৪১২

ঢেউ দিও না কথা রাখা রূপ দেখি জলের ছায়ায় সই গো
জলের ভিতরে শ্যামরায়।।ধু।।
সই গো–অষ্ট-সখী লইয়া গো রাধে জল ভরিতে যায়
কলসীতে দেখতে পায়।
সই গো–কদম ডালে বইসে গো বন্ধে বাঁশিটি বাজায়
সেই অবধি হইলগো ব্যাধি শয়নে স্বপনে দেখা যায়।
সই গো রূপের পাগল হইচে যারা–রূপেতে মিশিতে চায়
শ্যাম বিচ্ছেদের জ্বালা তোর সদায় জ্বালায় পোড়ায় ।
সই গো–ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰাণ রাখা হইল দায়
ভাবিক বিনে ঐ রূপ কেউ না দেখিতে পায় ।

গো (৭১) (৮১)

৪১৩

ঢেউ দিয়ো না, ঢেউ দিয়ো না ঢেউ দিয়ো না জলে–
গো সই ঢেউ দিয়ো না জলে।।
আর ঘুম তনে উঠিয়া রাধে
কলসী পানে চায়।
কলসীতে নাই রে জল,
যমুনায় চলে থিরে।।
আর কসলী ভরিয়া রাধে
থাইল কদমতলে;–
কদমফুল ঝরিয়া পড়ে কলসীর মাঝারে।।
আর শাশুড়ী বলে গো বধু
এতে দিরং কেনে?
ওরে জলে গেলে পাড়ার লোকে
পথ দেয় না মোরে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে,
শুনো গো সকলে,
পঙ্খ নয় উড়িয়া যাইতাম
ফিরিয়া জলের ঘাটে।।

শ্রী/৯১

৪১৪

তরুতলে বাঁশি কে বাজায় গো সখী জানিয়ে আয়।
বাঁশির রব শুনিয়ে গৃহে থাকা দায়।
জানিয়ে আয় গো সহচরী কেবা নাম ধরিয়া বাজায়
বাঁশি গো আমার চিত্তচোরা কালা কি বা আয়।
কাচা বেণু বাশের বাঁশি কালায় বাজায় দিবানিশি
এগো আমার কুলবধূর কুল মজাইতে চায়।
অষ্ট আঙুল বাঁশের বাঁশি বাঁশির স্বরে মন উদাসী
কালার বাঁশির সুরে রাধা জলে যায় গো।
ভাইবে রাধারমণ বলে তারা কে কে যাবি জলের ছলে
এগো কদমতলে বাঁশি কে বাজায়।।

ন/২১

৪১৫

তরুমুলে শ্যামরূপ হেরিলাম তরুমুলে।
নবীন মেঘেতে যেন সৌদামিনী জ্বলে।।
শিরে চূড়া শিখিপাখা কি আচানক যায় গো দেখা
দাঁড়াইল ত্ৰিভঙ্গ বাঁকা বনমালা গলে।।
শ্যামরূপের নাই তুলনা ভুবনমন্ডলে।।
শ্যামরূপে নিল আঁখি মন হইয়াছে চাতক পাখি
আমার প্রাণ কন্দে থাকি থাকি রাধারমণ বলে।

রা/১৩২, গো (২১৬), হা (৩১)

পাঠান্তর গো: নবীন মেঘেতে যমুনার জলে; শিরে চূড়া… গলে শ্যামরূপের … হেরি কি সুন্দর মাধুরমা কেমন সুন্দর বদন চন্দ্ৰিমা; মন … পাখি বাইর হইল প্ৰাণ / তবুন ধরিতে পারি। সবে যায় নানা ছলে; আমার … বলে ভাইর রাধারমণবলে কি জানি কি কপালো/ লেখছে বিধি রূঢ় মনে যে আগুনে হিয়া জ্বলে।

হা : মন. পাখি…ছাড়িয়া গেল শ্যামশুকপাখি; রাধারমণ বলে > গোসাই রমণ বলে।

৪১৬

তুই মোরে করিলে উদাসী সোনার বরণ হইল কালো
তোমোয় ভালবাসি সোনা বন্ধুরে –। ধুয়া
তোমার প্রেমে পশি হারাইলাম ধনজন পাড়াপ্রতিবেশী
তোমার কারণে আমি হইয়াছি উদাসী–
পথের ভিখারী আমি সকল বিশি।
ছাড়াইতে চাইলে প্রেমে ধরে মোরে ঠাসি
রাধারমণ বাউল হইল ঘরবার নাশী।

গো (২৪১)

৪১৭

তুমি নি রমণীর মনচোরা রে বন্ধু সুনার চান।
তুমি ধন তুমি প্ৰাণ তুমি আমার সে জীবন
তুমি আমার নয়নের মণি রে বন্ধু সুনার চান।
কলসী ভাসাইয়া জলে ও প্রাণবন্ধুরে লইলাম কোলে।
যাউক যাউক কুলমান তোমায় যদি পাই, সুনার চান।
সুনার সুতে সুত বলিয়া বরাশির কলে টুপ গাথিয়া
লুকাই লুকাই নিলায় রাধার প্রাণ রে বন্ধু সুনার চান।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে প্ৰেম করিও না শঠের সনে
প্ৰেম করিয়া হইলাম জিতেমারা, রে সুনার চান।

আশা /১১

৪১৮

তুমি বন্ধু রসিক সুজন তোমায় পাইবার আশে ঘুরিতেছি বনে বন।।ধুয়া
মাজে মাঝে উকি দিয়া আমার মন নেও হরিয়া
সব কিছুত তুমি বুঝো বুঝি না নি আমার মন।
তোমার প্ৰেমরসের বাণী কেবল লোকের মুখে শুনি
এ জগতে আর কেউরে না দেখিরে তোমার মতন।
তোমারে পাইবার লাগি মনে দঢ়ো আশা রাখি
তুমি থাকো দিয়া লুকি পাইলাম না তোমার চরণ।
পুরিল না মনের আশা আমি পাপী কর্মনাশা
পুরিবনি আমার আশা থাকিতে এ ছার জীবন।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে দিন যায় মোর অবহেলে
কামরসে মগ্ন হয়ে নাশ কইলাম মানব জীবন।।

গো (২৩৬)

৪১৯

তোমার বাঁশির সুরে উদাসীন বানাইলায় মোরে রে;
এগো, বাঁশির সুরে করিয়াছে পাগল রে–
আরে ও প্ৰাণনাথ তোমার বদলে দিয়া যাও বাঁশি।।
আর তোমার বাঁশির সুরে উদাসী করিলা মোরে রে;
এগো, বন্ধের জ্বালায় আইলাম পাগলিনী রে–
আরে ও প্ৰাণনাথ, তোমার বদল দিয়া যাও বাঁশি।।
আর শ্ৰীকৃষ্ণ মথুরায় যাইতে বিদায় মাঙ্গইন রাইয়ার কাছে রে;
এগো নারী অইয়া কেমনে দেই বিদায় রে–
আরে ও প্ৰাণনাথ, তোমার বদলে দিয়া যাও বাঁশি।।
আর তোমার বাঁশির সুরে ভাটিয়াল নদী উজান ধরে রে;
ও আমি যৌবত নারী, কেমন রই পাসরি রে–
আরে ও প্ৰাণনাথ, তোমার বদলে দিয়া যাও বাঁশি।
আর আমি তো অভাগীর নারী, বন্ধের জ্বালায় কলঙ্কিনী রে;
এগো, বন্ধের জ্বালায় অইলাম অভাগিনী ও–
আরে ও প্ৰাণনাথ, তোমার বদলে দিয়া যাও বাঁশি।।
কিবা মোরে বাঁশি দেও রে; এগো বাঁশির সুরে কইল যে পাগল রে–
আরে ও প্ৰাণনাথ, তোমার বদলে দিয়া যাও বাঁশি।।
কিবা মোরে সঙ্গে নেও কিবা মোরে বাঁশি দেও রে;
ওরে, তোমার সঙ্গে বানাই নিবায় দাসী রে–
আরে ও প্ৰাণনাথ, তোমার বদলে দিয়া যাও বাঁশি।।
আরে ভাইবে রাধারমণ বলে, বাঁশি না অয় লইছে মনে রে;
এগো বাঁশির সুর দি কত পাগল বানাও রে–
আরে ও প্ৰাণনাথ, তোমার বদল দিয়া যাও বাঁশি।।

শ্রী/২৫৭

৪২০

তোর লাগি মোর প্রাণ কান্দে রে বিদেশী বন্ধু
তোর লাগি মোর প্রাণ কান্দে রে।। ধু
আশা দিয়া তুইলা গাছে নীচে বসি রং চাইলে
আমারে কান্দাইলায় বন্ধু তোমার কান্দন পিছে।
কাচা চুলা ভিজা লাকরি বন্ধু বিষম বাদী
চুলার তবে জ্বাল হাটগাঁইয়া ধুমার ছলে কান্দি।
আজব নদীর বিজয়পুরে নৌকা মোর বান্দা
বিনা হাওয়ায় নাও ডুবিল আমার কপাল মান্দা
ভাবিয়া রাধারমণ বলে ঠেকিয়া রইলাম মায়াজালে
তোমার কঠিন হৃদয় নাই মমতা বলবে সয়ালে।

গো/১০৫

৪২১

তোরা ঐ শুনিনি গো শ্যামকালিয়া
বাঁশির স্বরে আমায় ডাকে।
বাঁশি আমায় ডাকে, আমায় ডাকে আমায় ডাকে গো
যখন আমি রানতে বসি কালায় তখন বাজায় বাঁশি
আমার রন্ধনেতে মন মজে না কি হইল গো।
ক্ষুধা নিদ্ৰা না লয় গো মনে প্ৰাণ কান্দে রাত্ৰিদিনে
কে যে জলের ঘাটে কি সন্ধানে বাঁশি বাজায় গো।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
কৃষ্ণ দরশনে যাইতে আমায় নিও গো।

রা/১৪০

তোরা কে যাবে সই যমুনা নীরে
শুনে বাশি মন উদাসী চিত্তে কি ধর্য ধরে।।ধু।।
সেত বসে নিরলে সই গো কদম্ব মূলে
মনপ্ৰাণ হরিয়া নিল সুমধুর স্বরে
মনে লয় তার সঙ্গে যাইতে আর রহিতে না পারি ঘরে।।১।।
বাঁশি কি মন্ত্র জানে ধ্বনি যে শুনে কানে
সে কি ঘরে রইতে পারে ধর্ষ ধরে।
বাঁশির জ্বালা সইতে নারি যেন আগুনে দাহন করে।।২।।
সব সঙ্গিনী সনে চল শ্যাম দরশনে
মোহন বাঁশির স্বরে উচাটন করে
শ্ৰীরাধারমণের আশা আমায় নেয় সঙ্গে করে।।৩।।।

রা/৭২

৪২৩

তোরা শুনগো ললিতা সই গহন কাননে
বাঁশি বাজে কই–
এগো অসময়ে বাজায় বাঁশি হয় গো আমি
এত জ্বালা কত সই।
শুইনে মুরারীর ধ্বনি আমার উড়িয়া যায় প্রাণী
নিরলে বসিয়া বঙ্গে বাজায় বাঁশি কই
এগো বাঁশির স্বরে রাইরে নারি হয় গো
আমি কেমনে স্বগৃহে রই।।
ত্বরা লও গো ঘাঘুরি আমার সহে না দেরী
জলের ঘাটে একাকিনী ডুবিয়ে মরি।
এগো বাঁশির স্বরে প্রাণ বাঁচে না হয় গো
আমার মন করে উচাটন।
ভাবিয়া রমণ বলে শুন গো সকলে
জলে গেলে প্ৰেমডোরে বানব গো তরারে।

ন-৫

৪২৪

তোরে করি গো মানা জলের ঘাটে এগো সখী একেলা যাইও না
কলিযুগের বধু তোমরা নিষেধ কিছু মান না।
চেপ্টা ডুরি কাপড় পিন্দি জলের ঘাটে যাইও না
জলের ঘাটে চিকনকলা সেখানে মান রবে না।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্রেমের বিষম যন্ত্রণা
ছপাই কাপড়ে দাগ লাগিলে ধাইলে তো দাগ ছাড়ে না।

গো (১৩৮)

৪২৫

ত্বরাই কইরে যাও প্ৰাণ সখীগো
যাও দুতি বৃন্দাবনে বন্ধুরে আনিতে গো
বিচ্ছেদ জ্বালা প্রবল হইল গো
বন্ধু আনিয়া দেখাইয়া মিলাইয়া প্ৰাণ রাখো গো।।
বৃন্দাবনে কত কণ্টক আছে গো
কেমনে আসিব বন্ধু অন্ধকার নিশি গো।
ভাইবে রাধারমণ বলে গো
আমার প্রতি প্ৰাণ বন্ধের দয়া নি আছে গো।

রা/১৩৯

৪২৬

দিবস রজনী গো আমি কেমনে গৃহে থাকি
শ্যামল বরণ অলক নয়ন পালকেতে দেখি।
শুইলে স্বপনে দেখি ও তার নাম লইতে থাকি
এগো চমকিয়া চমকিয়া উঠে ঐ পরান পাখী।
তৈলের ভাণ্ড হস্তে লাইয়ে এগো বেভোর হইয়ে থাকি
এগো দুধের মাঝে লবণ দিয়ে পাগল হইয়ে মাখি
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো সজনী
এগো কৃষ্ণশ্যাম বিচ্ছেদের জ্বালার আর কতদিন বাকী।

য/১৫৪, কিরণ/৭

পাঠান্তর : বরণ > শ্যাম নয়ন; এগো চমকিয়া … পাখি পাইতাম > যদি প্ৰাণ বন্ধুরে রিদের মাঝে রাখি; তৈলের. থাকি > তৈলের ভাণ্ডে ঘূত আনি আমি সাজাইয়া রাখি; এগো কৃষ্ণ শ্যাম বিচ্ছেদের … বাকী > আইসব বলে চলে গেলে আমায় দিয়া ফাঁকি।।

৪২৭

দেইখে আইলাম তারে ত্ৰিভঙ্গ ভঙ্গিমা রূপ
দাঁড়ায় কদমতলে।
মস্তকেতে মোহনচূড়া বামে হেলিয়া পড়ে—
গলায় শোভে ফুলমালা যেন বিদ্যুৎ জ্বলে।
হাতে তার মোহনবাঁশি বাজে শ্ৰীরাধা বলে
পরণে তার নীল ধড়া দাঁড়াইয়াছে কদমতলে।
ভাইবে রাধারমণ বলে শোন গো ধনি সকলে
আয়গো তোরা সবে মিলে দেখবে শ্যাম কদমতলে।

গো (২১৭), হা (৩৯)

পাঠান্তর : হা/৩৯ : মস্তকেতে > শ্যামের মস্তকেতে; পরণে… কদমানতলে”>শ্যামের পরণে সোভিয়াছে নীলাম্বরী শারি গো পরনে উড়িয়া উড়িয়া পড়ে / শ্যামের পদেতে শোভিয়াছে পঞ্চকাঠি খাড়া গো ঝুনুর ঝুনুর করে। ভাইবে … কদমতলে > x x

৪২৮

দেইখে আইলাম শ্যামরূপ শতদল কমলে
আমি রূপ দেখিয়া ভুইলে রইলাম চাহিয়া গো সজনী।
হাতে চান্দ কপালে চাঁদ আমার চাঁদের উপরে কতই চাঁদ
আমার চাঁদের গলে কে দিল চাঁদের মালা গো সজনী।
নাম বাঁকা ভঙ্গী বাঁকা শ্যামের চূড়ার উপর ময়ূরপাখা
ও দেখো নীলুয়া বাতাসে চূড়া হিলে গো সজনী।
ভঙ্গি বাঁকা কদমতলায় বনফুলের মালা গলায় গো
ও আমার অর্মাখিটারে ফুলের মালা যাবে গো সজনী।
বাইবে রাধারমণ বলে আমি রূপ দেখিয়া আইলাম গৃহে
ওই রূপ চমকে চমকে ওঠে। মনে গো সজনী।

নৃ/৫

৪২৯

নবীন নীরদ শ্যাম লাগল নয়নে গো
নিরুপম রূপমাধুরী পীত বসনে।
মনোহর নটাবর ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমে
শিরে শিখিপাখা শোভে বংশীবদনে।
নয়নে লাগল রূপ হানল পরানে
পাসরা না যায় রূপ শয়নে স্বপনে।
নয়নে নয়নে দেখা হইল যেদিনে
সে অবধি প্ৰেমাকুরে শ্ৰী রাধারমণে।

য/৬৩৪

৪৩০

নয়ন ঠারে ঠারে গো ঐ যে রূপবাণে
এগো কুক্ষণে হইল গো দেখা নয়নে নয়নে।
কালরূপ দেখিয়া হইলাম পাগল, মন আমার টলে
কালরূপ পাগল করল ফিরি বনে বনে
কালরূপে যে ভুলি না কভু জীয়নে মরণে।

সুখ/৪

৪৩১

নয়ন ঠারে হেরো গো
সখী আখি ঠারে হের
নয়নে লাগাইয়া রূপ গোপনে রাখিও গো।।
যদি চাও কুলমনের ভয় যাইও না তার ধার।
কিবা হারও কুলমান কিবা প্ৰাণে মর গো।।
ভাইবে রাধারমণ বলে রূপ আছে
আর এই রূপ সামান্য নয় চিনিয়া সাধন কর গো।।

রা/১৪৫

৪৩২

নিদাগেতে দাগ লাগাইল, প্ৰাণবন্ধু কালিয়ায়
প্ৰেমজ্বালায় প্রাণী যায়।।ধু।।
হাটিয়া যাইতে পাড়ার লোকে সদায় মন্দ গাইয়া যায়
এগো লোকের নিন্দন পুষ্প চন্দন অলঙ্কার পরেছি গায়।
কদম ডালে বসিয়া বন্ধে বাঁশিটি বাজাঁইয়া চায়
বাঁশির সুরে প্রাণ হরে উদাসিনী কইল আমায়।
জল ভরিতা গেলা রাধে সোনার নেপুর রাঙা পায়
সৰ্প হইয়া কালিয়ার বাঁশি দংশিল রাধার গায়।
সৰ্পের বিষ ঝরিতে নামে প্রেমের বিষ উজান বায়
ওঝা বৈদ্যের নাইগো সাধ্য ঝারিয়া বিষ নামাইতে পায়।
জল ভরাতে যত সখী ব্ৰজপুরে তারা যায়
আচানক শব্দ শুনায় ত্রিপুন্নিতে বাঁশি বায়।
মানকুল যৌবন জীবন সপিয়াছি তার পায়
দেখিলে জীবন ধরে আমার না দেখিলে প্ৰাণ যায়।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে প্রেম করাত বিষম দায়
মনে লয় ভ্রমরা হইয়ে উড়িয়া বসি বন্ধের গায়।

আহো (১৫), শ্রী/১৬৪, হা (৩৫), গো (২৭৮), ঐ (৭), সুধী ১৩

পাঠান্তর : শ্ৰী : হাটিয়া আটিয়া, পরেছি > পইরাছি, নামে > লামে, নামাইতে > লামাইতে, আচানক. ত্রিপুন্নিতে > এগো গুনগুনাগুন শব্দ শুনে ত্রিপুন্যিতে, ভ্ৰমরা > ভিমরা
গো/৭ : জলভরিতা… বন্ধের গায়>বিন্ধু আমার হংস রূপে জলেতে ভাসিয়া যায়/আলগা থাকি কালনাগে ছুব মারিল রাঙা পায়/সপের বিষ ঝরিতে নামে, প্রেমের বিষে উজান বায়/ উঝা-বৈদ্যের নাইরে সাধ্য ঝারিয়া সে বিষ লামায়। /এক উঝায় নাড়ে চাড়ে আর উঝায় চায়/ব্বাড়িতে না লামে বিষ ফিরিয়া উজান বায় /ভাইবে রাধারমণ বলে এখন আমার কি উপায়/বিষে অঙ্গ করবার প্রাণ রাখা হইল দায়।

৪৩৩

পহিলহি রাগ  নয়নের কোণে
কালা সে নয়ান তারা
নয়নে নয়নে বাণ বরিষণে
হয়েছি পিরিতে মরা।।
কালার পিরিতে ভাবিতে চিন্তিতে
এ তনু হইল সারা
না জানিয়ে রীতি করিয়ে পিরিতি
একূল উকুল হারা।।
এ জাতি যৌবন কুলশীলধন
রেখে দুনয়ান পারা
পিরিতে সাগরে ডুবিয়া রহিলু
জীবন থাকিতে মরা।।
জানিয়ে সুহৃদ বাড়াইলে রিদ
না জানি পুরুষ ধারা
পাষান সমান পুরুষ কঠিন
অবলা করিল মারা।।
অবলা কমল রসে টলমল
জানিয়ে রসিক যারা
শ্ৰীরাধারমণ করে নিবেদন
কালা সে রূপের ভারা।

য/৬৯

২১৮

পিরিতি করিলো কলঙ্কিনী গো সজনী সই
পিরিতে করিলে কলঙ্কিনী আনি ঘরের বধু বাইরে আইলাম
সারমর্ম না জানি।।ধু।।
ঘরের বধু বারে আনলো দিয়া প্রলোভনী
পিরিতে এমন কলঙ্ক আগে তো না জানি।।
ঘরের বাইর করিয়া মোরে ঠগায় গুণোমণি
ঘর ছাড়াইয়া বারে আনি কইলো বিবাগিনী
কুল ছাড়িলাম আখিঠারে প্ৰেম বিলাইবো জানি
প্ৰেম দিল না প্ৰেম ছাড়াইলো কইলো কলঙ্কিনী।
এমন করিবো মোরে আগে তো না জানি
মান ছাড়াইয়া পলাই গেলো করিয়া অপমানী।
এখন আমি কোথায় যাই নিলয়ে না জানি
আগে না জানিলাম অতো করবো বিনোবানী।
আগে যদি জনিতাম ঘটাইবো লারাজানি
আমি তো না বাইরে আইতাম দেখিয়া ঠাওরানী।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে অইলাম। কলঙ্কিনী
ঘরে বারে ঠাই নাই গঞ্জে ননদিনী।

গো (১১৭)

৪৩৫

পিারিতি করি শ্যাম-কালাচান্দে
ঠেকাই গেল ফান্দে;
লাঞ্ছনা ঘটাইল সোনা বন্ধে।।
সই গো, এ ঘরে শাশুড়ী বয়রী
ফুকারিতে নাই পারি;
প্ৰাণি কান্দে ‘জয় হৃদয়’ বলি’।
এগো, ঘরে জ্বালা, বাইরে জ্বালা–
আর জ্বালা দেয় নন্দে।।
সই গো, একে তো অবুলা বালা,
মাথে গো, কলঞ্চের ভালা–
বুক ভিজাইয়া যায় দুই নয়ানের জলে।
ভাইবে রাধারমণ বলে, কাজ নাই কুলমানে।।

শ্রী/১১২

৪৩৬

পিরিতে মোর কুল নিলায়, গো ধনি,
না জানি ডুব দিলাম গো।।
ধনি গো, এগেনা-বেগেন ধনি–
পর কি আপন।
আপনা জানি কইলাম পিরিত গো
ও ধনি, ডুবিবার কারণ গো
ধনি গো, আমি নারী এ যৈবতী
যৈবান রাখা দায়।
কেমনে সঁপিতাম যৈবন গো
ও ধনি, শ্যামের রাঙা পায় গো।।
ধনি গো, ভাইবে রাধারমণ বলে–
হইয়া পাগল :
স্ত্রীর কাছে বান্ধিয়া রাখছে গো
ও ধনি, গৃহস্থের ছগুগল।

শ্ৰী ১১০

৪৩৭

পিরিতে মোর প্রাণ নিল গো ধনি না–জানি ডুব দিলাম গো
পিরিতে মোর প্রাণ নিল গো।।ধু।।
সখীগো মুই গেলাম যমুনার জলে কলসী ভরিবার ছলে
নদীর কুলে আনাজােনা সদায় লোকে দেখে গো।
সখী গো–পিরিত ওতন পিরিত রতন পিরিত গলার হার
পিরিত করি যে জন মরে সাফাইল জনম তার গো।
সখীগো–ভাবিয়া রাধারমণ বলে পিরিত করি যে জন মরে
একুল অকুল দুইকুল তার আনন্দে বিহার গো।

গো/৯৯

৪৩৮

প্ৰাণ নিল গো প্ৰাণসজনী মুরলী বাজাইয়া মধুর স্বরে
বাঁশির সনে মনপ্ৰাণ নিল উদাসীন কই রে
তথায় বিপিনবিহারী বিপিনে বিহারে

ত্বরাই করে কত বেশ শীঘ্র যাই জল ভরিবারে
ভাইবে রাধারমণ বলে শীঘ্ৰ যাই গো জলে
কইমু গো মরম কথা বিধি যদি মিলায় তারে।।

সুখ/৯

৪৩৯

প্রাণসই বাজে বাঁশি কোন কাননে।।ধু।।
শ্যামের বাঁশি কুলবিশি কি মধুর পর্শিল কানে।।চি।।
পুলিনে কি জলের ঘাটে কদম্বে কি বংশী বটে
সুমধুর বংশীনাটে শুনি শ্ৰবণে।।
আমার মন হইয়াছে উন্মাদিনী প্ৰাণে কি আর ধর্য মানে।।১।।
নতুন বাঁশের নতুন বাঁশি নতুন বয়সে কালশশী
নতুন নতুন বাজায় বাঁশি বিষম সন্ধানে।।
আমি আর তো ঘরে রইতে নারি। আমায় নিয়ে চল শ্যাম যেখানে।।২।।
শুন গো সজনী সই তোমাতে মরম কই–মনে হয় তার
দাসী হইয়ে রই চরণে
শ্ৰী রাধারমণের আশা পূর্ণ হবে কত দিনে।।

রা/৫৯

৪৪০

প্ৰাণসখীগো কাল জল আনিতে কোন গেছিলাম
আমি জলে গিয়া বন্ধুরে না পাইলাম।।
রাইয়ার মাথায় চিকন চুল দেখতে লাগে নানান ফুল
সে ফুলের গন্ধে যেমন মন হইল ব্যাকুল।।
আসিল নাগর বন্ধু উথলিল প্রেমাসিন্ধু
আমার জলের ঘাটে গেল কুলমান।।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঠেইকাছি রাই কালার প্রেমে
যেমন নতুন যৌবন করলায় দান
তেমনি জড়াইল বাহু দিয়া বাঁশি তুলে তান

খা/২

৪৪১

প্ৰাণসখীরে ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে।।
বংশী বাজায় কে রে সখী বংশী বাজায় কে
এগো নাম ধরিয়া বাজায় বাঁশি তারে আনিয়া দে।
অষ্ট আঙ্গুলে বাঁশের বাঁশি ঘর কোঠাকোঠা
এগো নাম ধরিয়া বাজায় বাঁশি কলঙ্কিনী রাধা।।
কোন ঝাড়ের বাঁশি ঝড়ের লাগাল পাই
জড়েপেড়ে উগারিয়া সায়রে ভাসাই।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন ধনী রাই
জলে গেলে হইব দেখা ঠাকুর কানাই।।

রা/১৬৩, গো (৮৩)

পাঠান্তর এগো..: কানাই > মাথার বেণীবদল দিব তারে আনিয়া দে,/ বংশী নয় গো কালভুজঙ্গ বংশী, লরাধারী / এমন নির্লজ্জ বাঁশি তরলবাঁশের আগা / কেমনে জানিয়াছ বাঁশি আমার নাম রাধা / রাধা রাধা বলে বাঁশি বাঁশী আমার কুলবিশি/ দারুণ বাঁশির সুরে মাইল জাতিকুল / ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো সখী সকলে / বাঁশের বংশ করমু বিনাশ যে কোনো কৌশলে।

৪৪২

প্ৰাণসখী গো–পরার লাগি কন্দে আমার মন
পরার লাগি পরকাল হারাইলাম গোসাই
আমি পাইলাম নাগো পরার মন।।ধু।।
যাইতে যমুনার জলে দেখিলাম কদম্বতলে বাঁশরী হাতে গো সই,
ও তার বাঁশির সুরে উন্মদিনী ঠিক থাকে না দুই নয়ন।
যখন আমি রাধতে বসি তখন কালায় বাজায় বাঁশি
আমি রাধতে গিয়ে কঁদিতে বসি হলদি দিতে দেই লবণ।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে জীবন কালে নাই মিলে ঐ কালার মিলন,
আমি ধৈৰ্য ধরে থাকবো গো মইলে যেনো পাই দরশন।।

গো (২৭১)

৪৪৩

তাল-খেমটা

প্ৰাণ সজনী আইজ কি শুনি মধুর ধ্বনি কানন বনে।ধু
রাধা বৈলে বাজল বাঁশি শ্যামের বাঁশি কি মোহিনী জানে। চি
চল চল প্ৰাণ সই গো যমুনা পুলিনে
নয়ন ভরি হেরাব হরি এই সাধ মনে
শ্যামের বাঁশির ধ্বনি উন্মাদিনী শুনে
শুনি গৃহে থাকি বল কেমনে।।১।।
কে যাবে কে যাবে সই শ্যাম দরশনে
অধৰ্য হইয়াছে প্ৰাণ ধৰ্য না মানে
মনে লয় উড়িয়া যাই বিধি পাখা না দিল কেনে।।২।।
শ্যাম অনুরাগে রাই রঙ্গিনী সঙ্গিনীর সনে
গজেন্দ্ৰ গমনে ধনি কদম্ব কাননে।
কাখে কুম্ভ হস্তে ঝারি কহে শ্ৰী রাধারমণে।।৩।।

রা/৮৩

৪৪৪

প্রাণসজনী আমরা হইলাম কৃষ্ণ কলঙ্কিনী
আদর্শনে প্ৰাণ বাঁচে না হইলাম পাগলিনী
কি গুণ জানে নন্দের কালা আমরা না জানি
দেহ থইয়া মন নিলো প্ৰাণ লইয়া টানাটানি।
জীবন সংশয় সখী দংশিল নাগিনী
সরল প্রেমে গরল কইলো এমন আগে না জানি
ভাইবে রাধা রমণ বলে মনে অনুমানি
তোরা সবে পাইলে কৃষ্ণ আমায় নে সঙ্গিনী।

গো (২৪৮), গা (২৯), তী/২২

পাঠান্তর : হা : কলঙ্কিনী > কাঙালিনী; দেহ > শুধু দেহ > গরলকৈল >দাগ দিল; পাইলে > পাইলায়।
তী: কলঙ্কিনী > কাঙালিনী; দেহ > সুধা দেহ; দংশিল> ডিংশিল; নাগিনী > নাগুনি; গরল কৈল > দাগ দিল; ভাইবে রাধারমণ বলে গোসাঁই > রাধারমণ বলাইন গো, তোরা সবে … কৃষ্ণ > তুমরা সভে পাইলায় কৃষ্ণ গো।

৪৪৫

তাল-লোভা

প্ৰাণ সজনী কি শুনি মধুর সুতান হেরিয়া নিল মনপ্ৰাণ।।ধু।।
সখী রে কি মধুর পশিল কানে অধৰ্য হইয়াছে প্ৰাণ বাঁশির গানে
বাঁশি অন্তরে প্রবেশির মতো প্রাণ লইয়া মর দিল টান।।১।।
বংশী বরশির মতো প্ৰাণ লইয়া মর দিল টান।।১।।
সখী বিষামৃত একত্রে মিলন মন্দ মন্দ সুতানে করছে দাহন
বাঁশির ধ্বনি উন্মাদিনী না যায় রাখা কুলমান।।২।।
সখী রে বাঁশির ধ্বনি বিষম লেঠা অবলা কুলের কুলটা
শ্যামের বাঁশি বেরাজাল কুলবধূর হইল কাল
শ্ৰীরাধারমণে ভনে শ্যামকে পাইলে দিতাম যৌবন দান।।৩।।

রা/৫৭

৪৪৬

তাল–লোভা

প্রাণসজনী শুননি মুরলী গো সৈ গহিন বনে।।ধু।।
রবী শুনে অধৰ্য মন প্ৰাণ করে উচাটনে।।চি।।
শুনে ধ্বনি উন্মাদিনী দাসী হইবার মনে
ত্বরায় সখী দেখাও দেখি সেই যে তেজিব পরাণে।।১।।
নারী বিনে নারীর বেদন অন্য কি তায় জানে
হিয়ার মাঝে জ্বলছে অনল তারা করে নিবারণ।।২।।
শাশুড়ি ননদী পতির থাকিয়ে গঞ্জনে
যেন পিঞ্জিরায় রাখি কহে শ্ৰী রাধারমণে।।

রা/৬৭

৪৪৭

প্ৰাণে বাচি না গো সখী প্ৰাণে বাচিনা
শ্যাম কালিয়ার প্ৰেম জ্বালা সইতে পারি না।।ধু।।
কি জ্বালা দিয়াছে মোরে ঘরে রাইতে পারি না।
দেখা দিয়ে শ্যাম কালা হিয়ার আগুন নিবায় না।
তার প্রেমের এই ধারা জ্বলে পুড়ে হইলাম। সারা
বাকী নাই এক জারা তোমরাতো দেখা না।
সকলি হইল শক্ৰ আমার বলতে কেউ রইলো না।
তবুও কঠিন শ্যামে ফিরি একবার চাইলে না।
যেদিকে চাই তারে দেখি সে কি আমায় দেখে না।
রাধারমণ সহায় শূন্য আশ্রয় কোথায় পায় না।

গো ১৭৮

৪৪৮
প্ৰাণে মারি সহচরী, আমার উপায় কি বল।
অবলা সরলা কুলের কুলবালা প্ৰেম করিয়া জ্বালা হইল।
পরার রমণী পরার পরাধিনী পরার লাগিয়া প্ৰাণ গেল
কুলের গৌরব করে যারা কুল লইয়া থাক তোরা–
কুল ধইয়া জল খাইও
কুলের মাথায় দিয়ে ছাই যদি কৃষ্ণের নাগাল পাই
শ্ৰীচরণের দাসী হয়ে রব।
বন্ধু যাবার আগে আমায় কিযে বলেছিল বক্ষ আবরিনু জলে
আপনি কাদিয়া আমারে কাদাইয়া যাবার আগে
প্ৰবোদিয়া গেল।
ভাইবে রাধারমণ বলে আমার অন্তিমকালে
প্ৰাণ থাকিতে দেখা দিও
তোমার চরণ বিনে অন্য আশা নাহি মনে
হৃদয় মাঝে উদয় হইও।

রা/১৩৭

৪৪৯

প্ৰেম কইরে প্রাণ কান্দাইলায় আমার গো–
ওয় গো বিনোদিনী।।
আর এক ঘরে শইয়ে থাকি,
ও আমি শাইলে স্বপন দেখি গো।
ওয়া রে, শাইলে স্বপন দেখি
তোমার চান্দ মুখ গো
আর তোমার কথা মনে হইলে
আমার বুক ভাসিয়া যায় নয়নজলে গো।
ওয়া রে, বুক ভাসিয়া যায় নয়ন জলে–
করি কি উপায় গো।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
ভাবিয়ো না রই মনে :
ওরে, আইসব তোমার প্রাণ বন্ধুয়া–
ভাবিছ কি আর মনে গো।।

শ্রী/৩৪৩

৪৫০

তাল–খেমটা

প্ৰেয়সী ওই শোনা যায় গো বাঁশি।।ধু।।
নাম ধরিয়া বাজায় গো বাঁশি কিবা দিবা কিনা নিশি।।চি।।
অমিয়া বরিষণ করে রাশি কুলনাশি
প্ৰাণ লইয়া মর টান দিয়াছে লাগিয়াছে বরশি।।১।।
নবঘন বারি বিনে চাতকিনী চাতকিনী পিপাসী
আর ধৈর্য ধরিতে নারি করিয়াছে উদাসী।।২।।
সাধ করে সঙ্গে গো যাইতাম হইয়ে শ্যামের দাসী
শ্ৰী রাধারমণে ভণে কৃষ্ণ অভিলাষী।

রা/৫৩

বন্ধু আয় আয়রে আয় এমন সোনার যৌবন বৃথা গইয়া যায়।।ধু।।
তোমার লাগিয়া বন্ধু সদায় হিয়া ঝুরে
কলসী ভাসাইয়া নিলে নয়নের নীরেরে।
কান্দিয়া নয়ন গেল দুঃখে গেল হাসি
কুল মান সব গেল দেহাতে মিশিয়া
জীবন ফুরাইয়া গেল না জুড়াইয়া হিয়া রে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে আসো যদি মইলে
শ্মশানে দুই ফোটা পানি দিও মনে চাইলে রে।।

গো (১৮৪)

৪৫২

বন্ধু নিদারুণ শ্যাম তোমারে পাইবার লাগি কান্দি জনম গয়াইলাম।।ধু।।
তুমি আমার নয়নমণি তুমি অনুপম
তোমার দেখা পাইবার লাগি কত স্থানে ধুড়িলাম
সাগরে নগরে ধুড়ি বৃথা সময় কাটাইলাম
দিবানিশি ঘুরি ফিরি তোমার দেখা না পাইলাম।
পাইলাম নারে তোমার দেখা তুমি আমার বাম
আমি মইলে তুমি দোষী নিশ্চয় জানিও কইলাম।
তোমার প্রেমে প্রেমিক হইয়া শ্ৰীপুত্র ছাড়লাম
বন্ধু বন্ধু বন্ধু বলি উদাসী হইয়া ভরমিলাম
ভাবিয়া রাধারমণ বলে তুমি বন্ধু শ্যাম
যুগে যুগে কতয় পাইলো আমি না পাইলাম।।

গো (২৩৮)

৪৫৩

বন্ধু নি রে শ্যাম কালাসোনা
দয়া নি রাখিবায় মোরো অধম জানিয়া।।
ঘরে বাদী বাইরে বাদী বাদী সৰ্ব্বজনা
মুই অভাগীর আর লক্ষ্য নাই তুমি সে আপনা।।
বন্ধু তুমি আমার আমি রে তোমার এই মনের বাসনা
প্ৰাণ থাকিতে প্ৰাণ ছাড়িয়া দিমুনা দিমুনা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
যাউক জাতি নাই সে খতি ছাড়মুনা ছাড়মুনা।

তী/৩৩

৪৫৪

বন্ধু বাঁকা শ্যাম রায়,
অভাগীর অন্তরে প্রাণনাথে কি জ্বালা দিলায়।
আইলায় না রে সোনা বন্ধু
রইলায় কোথায়
মিছামিছি প্ৰেম বাড়াইয়া
আমারে মাইলায়।।
ধেনুর সনে গোচারণে
কদম্ব তলায়।
বাঁশিটি বাজাইয়া বন্ধে
দ্বিগুণ জ্বালায়।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে–
পিরিতি বিষম দায়।
পর কি আপনা হইব।
খুড়াত বুঝা যায়।।

শ্ৰী ১১৬

৪৫৫

বন্ধু বিনোদ শ্যাম রায়
তোমার সঙ্গে দেখা হইল প্ৰথম যমুনায়
সেই অবধি আমার প্রাণ কাড়িয়া নিলায়।
পিরিতি করিয়া বন্ধু বাড়াইলায় দুৰ্গতি
ভেবে রাধারমণ বলে রে মনেতে ভাবিয়া
আমি ঘরে বসত না করিতাম। আমি থাকতাম কদমতলায়

শা/১১

৪৫৬

বন্ধুর বাঁশি মন উদাসী করিলো আমারে
নাম ধরিয়া বাজে বাঁশি ঘরের দুয়ারে।।ধু।।
মজিয়া বাঁশির গানে চাইয়া রইলাম বাঁশির পানে
বাজে বাঁশি রাধা বলে যমুনার পারে।
বাঁশির জ্বালায় জ্বইলা মরিকার কাছে না কইতে পারি
সুখের ঘরে দুঃখের অনল কে দিল মোরে।
বাঁশির তানে যত মধু শুনে যত ভক্ত সাধু
কানের কাছে মধুর বাণী সদায় গুণগুণ করে।
সোনার চান্দের মোহন বাঁশি বারণ নাই তার দিবানিশি
রাধারমণ তার ঐ আঁশি দিবা রাত্ৰি সদায় ঝুরে।

গো (৯০)

৪৫৭

বন্ধের বাঁশী মন উদাসী করিল আমারে
নামি ধরিয়া বাজে বাঁশি ঘরের দুয়ারে।।
যখন বন্ধে বাজায় বাঁশী তখন আমি রানতে বসি
কিসের রান্ধা কিসের বাড়া পরানী যে ঝুরে
শ্বাশুড়ী ননদী ঘরে যাইতে নারি বাইরে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে বাঁশীর সুরে হিয়া জ্বলে
কি ফলে পাইমু তারে দয়াল গুরু শিখাও মোরে।

গো (২৪৯), হা (৬)

পাঠান্তর : হা/করিল > কইল; পরানী যে ঝুরে > বইসে যে থাকি; শ্বশুড়ী… বাইরে > মজিয়ে বাঁশির সুরে বইসে থাকি রাত্ৰিদিনে। যার বাঁশি তারে ডাকে রজনী বনে; ভাবিয়া… মোরে > ভাইবে রাধারমণ বলে, প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে/বন্ধের হাতের করণের বাঁশি খনখনি করে।

৪৫৮

বল গো বল গো সই কোন বা দেশে যাই।
কোনবা দেশে গেলে পাইমু শ্যামনগর কানাই।
আরত চাইনা প্ৰাণবন্ধেরে হৃদে দিলাম ঠাঁই
বন্ধে দিল আশা ভাঙ্গল বাসা এমন প্রেমের কাজ নাই।।
বিচিত্র পালঙ্কের মাঝে শুইয়া নিদ্রা যাই—
শুইলে স্বপন দেখি শ্যাম লইয়া বেড়াই।।
নিতি নিতি ফুলের মালা জলেতে ভাসাই।
আইল না প্ৰাণবন্ধু কার গলে পরাই।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শোন গো ধনি রাই।
পাইলে শ্যামরে ধরব গলে ছাড়াছড়ি নাই।।

হা :(২), গো (১৯৫)

পাঠান্তর : গো বল গো… সই > বল সই; কোন বা দেশে > কোন দেশে; শ্যাম নাগরকানাই> নাগর কানাই; আরতি চাইনা >আপন জানি; প্ৰাণ বন্ধোরে > প্ৰাণ বন্ধে; হৃদে > হৃদয়ে; বন্ধে দিল আশা > দিল আশা; প্রেমের কাজ > প্রেমের কার্য; শ্যাম লইয়া > শ্যামনগরে; আইল না প্রাণবন্ধু-> আইল না পরানের বন্ধু; শ্যামরে > শ্যাম।

৪৫৯

বল বন্ধু তুমি নি আমার রে ওহেরে হৃদয় রতন।।ধু।।
শ্ৰীচরণে হাইতাম দাসী মুই কামিনী অভিলাষী
অন্তিমকালে মম বাঞ্ছা করিও পূরণ।।
মনের মানুষ পাইবার আশে ডুব দিয়াছি প্রেম সায়রে।
সুধা ভাবি গরল খাইয়াছি আমার মনের আশা পুরল না রে।
ওহে রে হৃদয় রতন
কেবল কানু কলঙ্কিনী নাম জগতে হইল প্রচারণ।।
ঘরে বাদী কাল ননদী গঞ্জনা দেয় নিরবধি
মনের মানুষ কেমনে পাশরি।
ও তার গঞ্জনাতে ভয় রাখি না ওহে রে হদয় রতন
তোর নামটি লাইলে হয়। ভয় নিবারণ।।
যোগী-ঋষি না পায় ধ্যানে সে পদ আমি পাব কোন সন্ধানে
কেবলমাত্র ভরসা মনে।
পতিতপাবন নাম শুনিয়াছি রে ওহে রে হৃদয় রতন
কহে ভক্তিশূন্য রাধারমণ।

আ হো (২১), গো (৬৯)/২২৯, হা (৮) সরো/২

৪৬০

তাল লোভা

বাইজ নারে আর শ্যামের বাঁশি মধুর স্বরে আর বাইজ না রে।।ধু।।
কুলবতী যুবতীর প্রাণ ধৈর্যন্য কি ধরে।।চি।।
অবলা কুলকামিনী বাঁশির ধ্বনি শুনে উন্মাদিনী।
যেন বারি বিনে চাতকিনী পিপাসায় মরে।।১।।
আর গুরুজনা বৈরী বাঁশি ডাকে নাম ধরি
কুল ভয় লাজে মারি রাইতে নারি ঘরে।।২।।
শ্ৰী রাধারমণের বাণী শ্যামের বাঁশি রে তোর কঠিন প্ৰাণী
করলে রাধা কলঙ্কিনী গকুল নগরে।।৩।।

রা/৭৫

৪৬১

বাঁকা রূপে নয়নে হেরিয়াছে, মন রইল বিদেশীর মনে
শুধু দেহ থইয়া।
কুক্ষণে জল ভরতে গো গেলাম তরুতল দিয়া।।
রূপ পানে চাইতে চাইতে কলসী নিয়া জলে ভাসাইয়া
কি কর কি কর গো সখী কি কর বসিয়া।।
ঘরের বাদী কাল ননদী রইছে আড় নয়নে চাইয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
যার দাসী তার সঙ্গে গেল সই গো কুলমান ত্যাগিয়া।

সুখ/৬

৪৬২

বাজায় বাঁশি কদমতলে নিগুড়ে ঘনাইয়া
মনে লয় সঙ্গে যাই ঘর সংসার ছাড়িয়া।
দিবানিশি বাজায় বাঁশি নানান সুর ধরিয়া
মনে লয় দৌড় দিগি আনতাম বাঁশি কাড়িয়া;
নানান সুরে বাজে বাঁশি মন করে উদাসী
কি লাভ আয়রে বন্ধু আমারে নাসিয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
যাইমু বন্ধের সঙ্গে ঘর সংসার ছাড়িয়া।

গো (২৯৪)

৪৬৩

বারে বারে অবলারে জ্বালাইওনা বাঁশি তোমারে করি রে মানা।
তুমি নাম ধরিয়া সদায় ডাক আমার ঘরে আছে গুরুজনা।।
আমার শাশুড়ী ননদী ঘরে সদায় রে করে ঘোষণা।
তুমি জাইনে কি জানো না বাঁশি ভূ আমি পরার ঘরে পরাধীনা।।
তুমি বাঁশিতে পুরিয়া মধু আকুল কর কুলবধূ তুমি জাইনে জানো না।
ভাইবে রাধা রমণ বলে নিরলে পাইলে আমি তারে বলব দুঃখ
হৃদয় খুলে পুরাব মনের বাসনা।।

সী/২

৪৬৪

বাঁশি কে বাজায় কে বাজায় ঐ ঘাটৈতে শোনা যায়
চল গো ললিতা যমুনায়।।ধু।।
জল ভরতি যাইন গো রাধে ও সই কৃষ্ণের ঐ নদীয়ায়
এগো সাপিনী বাদিনী হইয়ে দংশিলে রাধার গায়
সাপের বিষ খাইয়ে রাধে পত্র লিখে মথুরায়
মইলাম মাইলাম এগো সখী শ্যাম কালিয়ার ভঙ্গিমায়।
সাপের বিষ ঝারিতে নামে প্রেমের বিষ উজান বায়
নাভী ধরি বলছে উঝা এ বিষ তো সাপের নায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্রেম করা তো বিষম দায়
এখন ইন্দ্ৰমণি চন্দ্ৰমণি ঠেকছে শ্যামের লাঞ্ছনায়।।

গো (৮৪)

৪৬৫

বাঁশি বাজল বিপিনে, প্ৰাণে শান্তনা মানে বাঁশির গানে
এগো কেনে বিপিনে বাজায় বাঁশি বসিয়ে নিরলে
বাঁশি না গো কালভুজঙ্গ দংশিল আমার অঙ্গ
এমন বিষে অঙ্গ জর জর বাচিমু কেমনে গো
ভাইবে রাধারমণ বলে শ্যাম জ্বালায় অঙ্গ জ্বলে
এগো তোমার সবে বারণ করা বন্ধুরে।।

ব/১

৪৬৬

বাঁশি বিনয় করি তোরে–

নাম ধরিয়া ডাকিয়ো না অবুলা রাধারে।।
বাঁশি রে, আমিও অবুলা নারী
দুঃখ পাই অন্তরে।
তবু কেনে নিষ্ঠুর বাঁশি–
বাঁশি যন্ত্রণা দেও মোরে।।
বাঁশি রে, শইলে স্বপন দেখি
বন্ধু লইছি কোলে।
জাগিয়া না পাইলাম তারে
কাল নিদ্রা গেল ছুটে।
গাঁথিয়া যতনে–
প্ৰাণ বন্ধু আসিবে বলি
ও সে না আসিল কুঞ্জে।।
বাঁশি রে, ভাইবে রাধারমণ বলে,
মিন্‌নতি চরণে : জী’তে না পূরিল আশা
মইলে যেন পুরে।।

শ্রী ৩৩১

৪৬৭

বাঁশিয়ে নিহল বকুল মান গো সখী
সখী ঐ শুন গো শ্যামের বাঁশির গান
বাঁশির সুরে কুলবধূর উড়াইল পরান।
রসরাজ নাম মিঠা লাগে হৃদয় মাঝে বাণ মিঠা
এই মিলনবাঁশি কে করিল নিৰ্মাণ গো।
কি অপরাধ করিলাম আমি বাঁশি রে বৃন্দাবনে
সদাই রাধা রাধা বইলে বাঁশিতে দিল টান।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো ধনি রাই
বাঁশি কালভুজঙ্গ হইয়া প্ৰাণটি লইয়া যায়

সুহা/১৮

৪৬৮

তাল-লোভা

বাঁশির গানে জীবন সংশয় গৃহে ইয়ইতে পারি না
আমার উড়ে গেছে। মনপাখী।।ধু।।
চিত্রপটে বাংশীনাটে ঘাটে কি দেখাদেখি
কৃষ্ণ দরশন বিনে এ জীবনের আশা কি।।১।।
মনের সহ প্ৰাণ গেলে আর শূন্য দেহে থাকে কি
ইন্দ্ৰিয়গণ কেহ নয় আপনি এখন আমার উপায় কি।।২।।
আয় কে যাবে শ্যাম দর্শনে নৈলে যাব একাকী
শ্ৰীরাধারমণে ভণে শ্যাম হেরতে জুড়াই আঁখি।।।৩।।

রা/৫০

৪৬৯

বাঁশির ধ্বনি কৰ্ণে বর্তনি গৃহে রইতে পারি না আর
মধুর মধুর মধুর ধ্বনি মধুর মধুর যায় শুনা
শোনো নাম ধরিয়া ডাকে বাঁশি রাধার নামটি কল্পনা
সখীগণ করে মন মানা সহে না আর যাতনা
মনে লয় সখী সই তেয়াগিব গৃহ …
আমি যাইতে নারি যাইতে নারি বিষম হইল যন্ত্রণা
ভাইবে রাধারমণ বলে পাইলে চরণ ছাড়ব না
সেই চরণে হাইতাম দাসী মনে ছিল বাসনা।

৪৭০

বাঁশি রে নিরলে কুটিরে বৈসে মন পাখি কুইরে দুই আংখি।
বাঁশির মরম কেইবরে শ্যামের বাঁশি যে দুঃখ আমার অন্তরে
আপন স্বাদে ঠেকছি কান্দে কি দোষ দিমু পরেরে।
বাঁশির নয়নে শ্রবণে সন্মিলন নয়নে নয়নে কামদহন
পিঞ্জিরার পাখীর মত উঠিতে না পারিরে।
শ্ৰী রাধারমণে বলে ওই কথা মনের ব্যথা বইলমুকার কাছে।

য/১৬১/(ও)

৪৭১

বাঁশিরে শ্যামচাঁদের বাঁশি সকলি নাশিলে
নাম ধরিয়া ডাকি বাঁশি বিপদ ঘটাইলে।
ঘরের গুরুজনা রে বাঁশি মোরে মন্দ বলে
মন্দ বলে খুটা দেয় শ্বশুর ননদ সকলে।
ফুকারি কান্দিতে নারি পাড়ায় মন্দ বলে
গুমরি গুমরি মনে প্রেমের আগুন জ্বলে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে মনেতে বিরহ জ্বলে
মইলে নি পাইমু, তোমায় সুরধনীর কুলে।।

গো (২৪৯), হা (৪১)

পাঠান্তর : হা ভাবিয়া… কুলে > ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া/দুঃখে দুঃখে জনম গেল মইলে নি দুঃখ যাবে রে।

৪৭২

বাঁশি বাজে কোন বনে গো সজনী ঐ শোনা যায়।
শুনিয়া বাঁশির ধ্বনি আমার গৃহে থাকা হইল দায়।
শুনিয়া বাঁশির ধ্বনি যমুনা উজান
যোগী ঋষির জপ ভাঙে। আমি করি কি উপায়।
বাঁশিতে ভরিয়া মধু বেড়ায় শ্যামরায়।
মরমে ফুটিয়া রইল বুঝি ফুলের কাঁটার প্রায়
ভাবিয়া রাধারমণ বলে বাঁশি নয় গো কাল
অবলা বধিতে বাঁশি ছিল বুঝি কালের প্রায়।।

সর্ব/৯

৪৭৩

বিশখে কি রূপ দেখালে চিত্রপটে।।ধু।।
পট দেখিয়ে মন ভুলিল আবার কে গো বংশী নাটে।। চি।।
কেগো কৃষ্ণ কে গো পটে কে গো বংশী নাটে
তিনেই সমান মন উচাটন প্ৰাণি আমার নাই গো ঘটে।।১।।
ভিন পুরুষে রতি নারী বিষম সঙ্কটে
এমন জীবন হইতে মরণ ভাল যদি কলঙ্ক রটে।।২।।
রাধারমণ ভণে বিনোদিনী বলি নিষ্কবটে
ভিন পুরুষ নয় শ্যামচিন্তামণি হের যাইয়ে জলের ঘাটে।।।৩।।

রা/৪৭

৪৭৪

বুকে রইল গো পিরিতের শেল কেউ দেখে না,
কেউ দেখে না, কেউ দেখে না বাহিরেতে আসে না গো।
তুষের অনলের মত আমার অঙ্গ জ্বলি যায়,
জল দিলে নিবে না অগ্নি কি দিয়া নিবাই।
নিবে না নিবে না অগ্নি সহে না অন্তরে,
সেই অগ্নি নিবিতে পারে শ্যামের দরশনে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে অন্তরে বেদন,
না হইল মোর কপালে শ্যাম সঙ্গে মিলন।

আ হো ৪২ (২৩), গো (২২৫) হ (৩৬)

পাঠান্তর : গো : তুষের … যায় > তুষের অনলের মতো অঙ্গ জ্বলি যায়।

৪৭৫

বৃন্দাবনে যত সখী হীরার কলসী দেখি
সবে যায় যমুনার ঘাটে শ্যামচন্দে বাজায় বাঁশি
শাশুড়ীর ঘরে থাকি মন আমার সদায় উদাসী।
ননদীরে বলে বধু কদমতলে কত মধু
বল গো–আমারে।
কি বলি ভেবে না পাই ননদীর গালি খাই
বাঁশি হইল আমার কুল বিশি।
মন আমার উদাস করি বাজায় বাঁশি নাম ধরি
এতে মোর কুল বিশি শাশুড়ী বলে মোরে
কেনে ডাকে নাম ধরে থাকি যে বসি।
ভাইবে রাধারমণ বলে বাঁশির স্বরে পরান জ্বলে
বাঁশি মোরে করিল উদাসী
উদাসী করিল। আর না ঘরে না বাহার
না কুলে না বিশি।

গো (২৫৩)

৪৭৬

বৃন্দাবনের যত সখী হীরার কলসী দেখি
এখন যায় তারা সরোবরের ঘাটে গো সখী।।
কই গো শ্যামে বাজায় বাঁশি শাশুড়ীর ঘরে থাকি
ননদীর জ্বালায় মারি এখন সাইমু কত জ্বালা গো সখী।।
ননদীয়ে বলাইন বধু কদমতলে কিসের মধু
এখন কদমতলে নন্দের চিকন কালা গো সখী।।
পদের উপর পদ খুঁইয়া কদম্বে হেলান দিয়া
এখন বাজায় বাঁশি জয়রাধা বলিয়া গো সখী।।
কোন ঘাটে ভরিতাম। জল সব সখীর মন চঞ্চল
এখন ভরাইন জল শানের বান্ধাইল ঘাটে গো সখী।।
কলসী ভরিয়া রাধে তুলিয়া লইয়া মাঝার কাঙ্কে
এখন ধীরে ধীরে চলছে। রাজপথে গো সখী
গোসাই রাধারমণ বলে শোন গো শ্ৰীমতী রাধে
এখন তোমার প্ৰেমে বান্ধা চিরকাল গো সখী।

হা (৪২)/৪১

ভরতে গেলাম যমুনাতে শীতল গঙ্গা জল গো
রূপ নেহরি প্রাণসজনী মন করিল চঞ্চল
নন্দের সুন্দর চিকন কালা জানে নানা কল
কাদা করি চিকন কালা ঘাট করিল। পিছল
আলগা থাকিয়া কালায় হাসে খলখল
বারে বারে আখির ঠারে দেখায় কদমতল
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শুন গো ধ্বনি রাই
কুলবধূর কুল মজাইল লম্পট কানাই।।

নমি/১৪

৪৭৮

ভাইস্যে নিল কুলমান
ঐ শুনো গো মধুর বাঁশির গান।।
রাধা রাধা রাধা বৈলে বাঁশি দিল টান।
অন্তর জ্বলে মিঠা লাগে রিদায় ভেদি বাণ।।
বিষামৃতে মিলন বাঁশি কে কৈল নির্মাণ
কি অপরাধ কইরা আছি বাঁশির নিখমান।।
আমায় নিয়ে ব্রজে চল বাঁশির যেই স্থান
ভাইবে রাধারমণ একি বিষম দায়
রাধা রাধা রাধা বৈলে বাঁশি কে বাজায়।।

ক. মি/১

৪৭৯

ভুবনমোহন শ্যামরূপ গো সখী দেখিতে সুন্দর
ঝলমল করে রূপ অতি মনোহর।।ধু।।
কদমতলে খেলা করে ষোল সখী খাড়া থাকে
চান্দমুখে চাইয়া।
রবি শশী জিনি রূপ দেখিতে উজ্জ্বল
মোহিত হইয়া দেখে ষোল সখীর দল।
কপালে তিক্ৰলাক চান্দা জিনি তারাগণে
চিকুর জিনিয়া ছটা পড়িছে গগনে।
হীন রাধারমণ কয় নাগর রসিয়া
ভুলাইলো কুলবধূ মুরলী বাজাইয়া।।

গো (২১০), হা (৪০) হা/৪০

৪৮০
মধুর ধ্বনি শুনা যায় বাঁশি বাজায় শ্যামরায়
বাঁশির ধ্বনি উন্মাদিনী হইলাম পাগলিনী প্ৰায়।।ধু।।
রব শুনা যায় রূপ দেখি না বংশী ধ্বনি যায় গো শুনা
মেঘে বটে কি শ্যাম জানি না মেঘে বংশী বাজায়।।
দিবসে আন্দারী হল মন প্ৰাণ হইল চঞ্চল
কেমনে ভরিব জল মনে মনে ভাবি তায়।।
ঐ বুঝি গো প্ৰাণ বিশখা বংশী বটে
যায় তারে দেখা
কাল ত্ৰিভঙ্গ বাঁকা শ্ৰীরাধারমণ গায়।

রা/৯৩

৪৮১

মধুর মধুর স্বরে ডেকেছে আমারে গো কদমতলে
কত আদরে কইরে মধুর স্বরে ডাকে রাধে আয় কদমতলে
তার নয়ন বাঁকা ভঙ্গী বাঁকা গো চূড়ার উপর ময়ূর পাখা গো
কত রমণীর মন করছে হরিণ মণির মনোহরা গো
ভাইবে রাধারমণ বলে কে কে যাবে জল আনিতে
জলে গেলে হইবে দেখা প্ৰাণ বন্ধুয়ার সনে।।

প্ৰমো/১

৪৮২

মধুর মুরলী ধ্বনি কৰ্ণে লাগিয়াছে।।ধু।।
ধ্বনি শুনে উম্মাদিনী আমায় উন্মাদিনী করিয়াছে।।চি।।
কি অমৃতে বাঁশির মাঝে প্রবেশিল হিয়ার মাঝে
মনে লয় যাই গো কাছে কলমানের ভয় কি আছে।।১।।
গৃহকর্ম না লয় মনে পাগলিনী বাঁশির গানে
আর ধৈৰ্য মানে না প্ৰাণে বিষম সঙ্কট ঘটিয়াছে।।২।।
নতুন বাঁশের নতুন বাঁশি নতুন বয়সের কালাশশী
মনে লয় তার হইতেম দাসী রাধারমণ বলিয়াছে।।৩।।

রা/৭০

৪৮৩

তাল–লোভা

মন উদাসী বন্ধের বাঁশি বাজে গো বাজে।। ধু।।
কদম্বকাননে বাঁশি বাজায় বাঁশি রসরাজে।।চি।।
বাঁশির সমান নাই গো মধু বাঁশি উগরয়ে প্ৰেম সিন্ধু
মজাইছে কুলবধূ কতই মধু বাঁশির মাঝে।।
বিধুমুখে মধুর হাসি উদাসী করিয়াছে মনে লয়। তার সঙ্গে যাইতাম
গৃহকাজে মন না। সাজে।।১।।
কি দিয়ে সৃজিল বিধি এমন অমিয়া নিধি
হরিয়া নিল বলবুদ্ধি প্ৰাণ উচাটন দেহের মাঝে
বাঁশি নয় গো কালভুজঙ্গে অঙ্গে দংশিয়াছে
আমি বাঁশির জ্বালা সইতে নারি কহিতে নারি লাজে।।২।।
যে অধরে বংশী ধরে মনে লয় পাইতে তারে
যত্ন করি রাখতেম ভাইরে রসরাজকে হিয়ার মাঝে
বলে রসের কাঙালি রাধারমণ রসরাজকে পাই নে খুজে।।৩।।

রা/৬৫

৪৮৪

মনচুরা শ্যাম বাদী হল
আমার উপায় কি গো বলো
আমার দেহ থইয়া প্ৰাণ নিল
মনপ্ৰাণ হরিয়া নিল।।
গিয়াছিলাম জল আনিতে
শ্যাম দাঁড়ায় কদমতলে
শ্যামের রূপ হেরিয়ে
যুবতীর প্রাণভ্রমরা উড়িয়ে গেল।।
বিজুলী চটকের মতো
যমুনার কুল আলো হইল
শ্যামের কটাক্ষ নয়নের গুণে
অবলারে প্ৰাণে মাইল।।
ভাইবে রাধারমণ বলে
বেজাতি ভোজঙ্গে চলে
এগো রসরাজ বৈদ্য না হইলে
ঝাইরে বিষ কে করবে ভাল।।

আছ/৩

৪৮৫

তাল–লোভা

মনপ্ৰাণ সকলি হরিলে শ্যামের বাঁশি।
মধুর স্বরে আর বাইজ না।।ধু।।
কুলবতী যুবতীর প্রাণ ধৈরয মানে না।।চি।।
বাঁশি রে কুল ভয় লাজ রে গেল দূরে
গৃহে যাইতে আর পারি না।
আমার হিয়ার মাঝে জ্বলছে আগুন
নিবাইলে নিবে না।।১।।
আমি রে অবলা সরলা রে কুলবালা
ঘরে পতি গুরু গঞ্জনা।
বাঁশি অবলা বধিতে তুমি
বিধাতার সৃজনা।।২।।
বাঁশি রে শ্রবণে নয়নে যে সম্মিলন
অনুক্ষণ হয় উচাটনা।
মনে লয় তার হইতেম দাসী
রাধারমণের বাসনা।।৩।।

৪৮৬
মনের মানুষ এ দেশেতে নাই প্ৰাণসখী বল গো মোরে
কারে দেখি প্ৰাণ জুড়াই।।ধু।।
কার কাছে কই মন বেদনা এমন সুহৃদ কেউ নাই
জলে যাইতে হরির মানা ঘরে বসি কাল কটাই।
হাটিয়া যাইতে আছাড় খাইয়া বুকের মাঝে দুঃখ পাই
কার কাছে কই মনোদুঃখ এমন বান্ধব জুড়ি না পাই।
হাটি যাইতে পাড়ার লোকে আমার মন্দ যায় রে গাই
এমন আমি পাই না করে যারে কইয়া বুক জুড়াই।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শুন গো ধনী রাই
আমি ঝাপ দিমু যমুনার জলে এদেশে দরদী নাই।

৪৮৭

মানা করি রাই রঙ্গিনী আর যমুনায় যাইও না–
কালো রূপ লাগিয়ে অঙ্গে হেমাঙ্গী রবে না।।ধু।।
হেরিবারে সদায় যারে করগো রাই ভাবনা–
সে যে তোমার কুলের কালি তারে কি রাই জানো না।
ঘরে বাদী নানদিনী বারে পরিজিনা–
ছাড়ো ধ্বনি রাই কামিনী কালার প্রেমে বাসনা।
ভাইবে রাধারমণ বলে–ছাড়া বিষম যন্ত্রণা
প্রেমের আঠা বিষম লেঠা ছাড়াইলে তো ছাড়া না।

গো (২৬৬)

৪৮৮

মোহনমুরালী কোন বনে বাজিল।।
শ্রবণ সুরঞ্জিত বংশী নামামৃত
পশু পাখি পুলকিত যুবতীর মন মোহিল।।
বংশীবাদন মুরলী সুবাঁধন
আর ধৈর্য না মনে প্ৰাণে মন পাখি মোর উড়িল।।
শ্যামের বাঁশি দুকূল নাশা
রাখে না কুল মানের আশা
সদা বাড়ে প্ৰেম পিপাসা
রাধারমণ … (অসম্পূর্ণ)

য/৮৮

৪৮৯

তাল–খেমতা

যমুনা পুলিনে শ্যাম নাগরি ত্ৰিভঙ্গ।।ধু।।।
মুরলী মধুর স্বরে মোহিল অনঙ্গ।।চি।।
কি অমৃত বাঁশির গান কৰ্ণে লাগিয়াছে
যেন জালে বন্দী মীনের উপায় কি আছে
প্ৰাণ করে উচাটন মন হইল বিহঙ্গ।।১।।
আয় ললিতে আয় বিশখে শ্যাম হেরিতে যাই
যায় যাবে কুল ক্ষেতি নাই শ্যামকে যদি পাই
নয়ন চাঁদে ফাঁদ পাতিয়ে ধরিব কুরঙ্গ।।২।।
যে নাগারে ধরে বাঁশি চল যাই তার কাছে
রব শুনে মনপ্ৰাণ কান্দে এমন কে আছে
রাধারমণ ভনে বাঁশির গানে যোগীর যোগ ভঙ্গ।।৩।

রা/৭৪

৪৯০

তাল-লোভা

যমুনার জলে সখী গো তারা নে আমারে।
বাঁশি বাজায় কোন নাগারে।।ধু।।
অধ্য প্ৰাণ আর রইতে নারি ঘরে।।চি।।
আমার প্রাণ কেমন করে
মোহন মুরলী ধ্বনি বিধিল অন্তরে
মধুর স্বরে গান করে।।১।।
বাঁশি কতই ছন্দি করে
বাশির গুণ কি শ্যামের গুণ কে বইলাবে আমারে।
বাঁশির স্বরে প্রাণ হরিয়া নেয়
ধরা টলমল করে।। ২।।
মনির মৌন ভঙ্গ করে
অধীরে ধরে বাঁশি পাই যদি তারে
জন্মের মত প্ৰাণ সপিব
রাধারমণ বিনয় করে।।। ৩।।

রা/৬৪

৪৯১

যাবে নি গো এগো সখী ধীর সমীর বনে
মনে করি প্রাণের হরি যমুনা পুলিনে।
সঙ্কেতে মুরলীর ধ্বনি নইলে যাব একাকিনী
শ্যামের সনে।
পাখা নাই যে কিসের পাখি
ঝুইরতেছে পিঞ্জিরায় থাকি
আর কত বুঝাইয়া রাখি
পাখি প্রবোধ না মানে।
কাল হইল কালিয়ার বাঁশি
কুলবধূর কুলবিশি লাইগ্‌ল বরশি
ঐ চরণের অভিলাষী কহে শ্ৰীরাধারমণে।

য/৮৯

৪৯২

যারে দেখলে পাগল হয় মন তারে কেমনে পাশবির
বল বল গো সই উপায় কি করি।।ধু।।
আঙ্খির উপরে নিন্দের বাসা তার উপরে ঢেউ
রাধার সনে কানুর পিরিত আর জানে না কেউ
বিরখের উপর লতাপাতা তার উপরে ফুল
তার উপরে চমকে অভমর মজাইয়া জাত কুল।
কালিয়া রসের বন্ধু দেখতে লাগে ভালা
কোন্‌ সইয়ে আটকাই রাখি আমারে দেয় জ্বালা।
বনের মাকে আগুন জ্বলে সয়ালের লোক দেখে।
মনের মাকে আগুন জ্বলে তারে নাই সে দেখে।
চক্ষে না দেখে কেউ কইলে না বুঝে
নিরপরাধ রাধার মাঝে কলঙ্কিনী পায় খুঁজে।
নিজের বেদন সবাই বুঝে পরের বেদন না।
গকুলে সুহৃদ পাই না যার ঠাই করি ;আ’।

‘আ’ করি না আউয়ার ভরে কি অনে কি কইবো
একেতে অমাত্র পরিচারি কলঙ্ক রটাইবো
ভাবিয়া রাধারমণ বলে আমার উপায় নাই
বন্ধের লাগি বাউল আইয়া গকুলে বেড়াই।।

গো (১৬৬)

৪৯৩

যে গুণে তুষিব শ্যামের মন আর আমার সে গুণ নাই।
বৃন্দাবনে শ্যামের কারণ বনে বনে ঘুরিয়া বেড়াই।
জাতি-কুল-মান-যৌবন দিয়ে মন নাহি পাই।।
রূপ-গুণ-যশ প্ৰেম রঙ্গরস মন প্ৰাণ
সপিয়া হইলেম কাঙালিনী
লোকে কানাকানি কইরে বলে আমায় কলঙ্কিনী রাই।
সুখদুঃখ যত ত্যাগি সারা কইরাছি শ্যামরায়
রাধারমণ করে আকিঞ্চন অন্তে যেন পাই।।

সুখ / ১ ১

৪৯৪

রসিকে আমারে পাইয়া গো ডাকাতি করিল
বস্ত্ৰ থইয়া কলসী লইয়া নামিলাম গঙ্গার জলে
বস্ত্ৰ নিল চিকন কালায় কলসী নিল সুতে
আগের সখী যেমন তেমন পাছের সখী কালা
মাঝের সখী দাতে মিশি আখি ঠারে নিল।।
ভাইবে রাধারমণ বলে নদীর কুলে বইয়া
কুল গেল কলঙ্ক রইল জগৎ ভরিয়া।।

সুখ/২২

৪৯৫

রসের দয়রদী শ্যামরায়,
আমি কাঙালিনী তোমার পানে চাই।।
আর রূপ দেখি ঝলমলি
প্ৰাণি আমার নিলায় হরি
ওরে চাতবিচনী হইয়ে আমি
সে রূপ ধরিতে চাই।।
আর দূরে থাকি দেখা ভালো
নিকটে মিশিয়া রইয়ো।
ওয় রে, ভিন্‌ বাসিয়ো না অবুলারে
চরণতলে দিয়ো ঠাই।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে
প্ৰেম করি কালিয়ার সনে
ওয় রে, গোপীর মতন উদাসিনী
আমারে বানাইত চায়।।

শ্রী/৩২২

রাধা বইলে আর ডাকিও না।
ওরে কে তোরে শিখাইল বাঁশি
নতুন প্রেমের আলোচনা ।।
ডাকিও নারে শ্যামের বাঁশি
কুলবধূর কুলবিশি
লাগাইয়া প্ৰেমে রাশি
হেঁচকা টানে প্ৰাণ বাঁচে না।।
অষ্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশি
বাজায় শ্যাম দিবা নিশি
কি সাধনে ওরে বাঁশি।
দিবানিশি জপনা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে
শ্রীরাইর পদকমলে
ওরে প্ৰেম করে ছাইড়া গেল
আমার কইরে যাদুটুনা ।।

আশা/১

৪৯৭

রাখে গো তোর প্ৰেমখমণে ঋণী হইয়ে আছি গো
তোমার সুদ সহিতে শুধু করিব যদি প্ৰাণে বাঁচি।
শুধিতে মধুর প্ৰেমখণ হয়েছি দুদিনের অধীন
কত দিনে আমি তোমার প্রেমের অভিলাষী।।
অঙ্গে শোভে নামাবলি কাধে শোভে ভিক্ষার ঝলি
লইব করঙ্গ হাতে সাজিব যোগিনী
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো তোমরা সকলে
এগো মরণ সময় নাম শুনাইও দুই কৰ্ণমূলে।

সুখ,/ ২৮

৪৯৮

রূপ দেইখে মন ভুলে ভুলিলে না ভোলা যায়
সোনার অঙ্গ মলিন আমার হইল গো চিন্তায়
তারা বল সখীগণ চিন্তা কেমনে হয় কারণ
চিন্তা রোগের ওষুধ কই
করো অন্বেষণ, তুরাই করিয়ে আন
ঔষধ নিহিলে প্ৰাণী যায়
একদিন জলের ছায় কি রূপ দেখলাম হায়
পুর্ণিমার চন্দ্ৰ যেন প্ৰবেশিল গায়
সেই অবধি আমার নিত্য ধরে চিত্ত সর্বদায়
রাধারমণ বলে আমার মরণ কালে
কৃষ্ণ নামটি লেইখা কপালে আমার
বিমল চন্দন তুলসী দিয়া পুজিব রাধার রাঙা পায়।

রা/১৬৫, তু:/ গো (২১৩)

৪৯৯

রূপ দেখিলাম জলের ঘাটে ভুলাইলে না ভুলা যায়
সোনার অঙ্গ মলিন আমার হইল গো চিন্তায়।।ধু।।
একদিন জলের ছায়ায় রূপ দেখিলাম নদীয়ায়
পূর্ণিমারো চন্দ্ৰ যেমন ঝলক মারে সারা গায়।
দেখা মাত্র সার হইল কাঞ্চা ভিড়া হইল দায়
আমায় ছেড়ে প্ৰাণবন্ধু ভুলিয়া রইলো মথুরায়।
সব সখী মিলিয়া বাস রোগ বারণের চিস্তনায় —
প্ৰেম রোগের ওষধ সইগো–কোন বাজারে পাওয়া যায়
সব করিও না নাশ গো তোরা অন্তর জলে যন্ত্রণায়
বৈদ্য আনি দেখাও গো তোরা নইলে আমার প্রাণীই যায়
ভাবিয়ে রাধারমণ বলে প্ৰেম জ্বালায় প্ৰাণই যায়
বন্ধের কাছে নেও গো মোরে ধরি তোদের রাঙ্গা পায়।

গো (২১৩), তুঃ রা/১৬৫

৫০০

রূপে নয়ন নিল গো, শ্যাম কালিয়ার রূপে নয়ন নিল গো।।ধু।।
কুক্ষণে জল ভারতে গেলাম বিজলি চটকের মতো নয়নে হেরলাম
আমায় অঙ্গুলি হিলাইয়া শ্যামে কি কহিল গো।।চি।।
মনে ছিল বড় আশা জন্মাবধি রূপ হেরিলাম যায় না পিপাসা
কাল ননদী বিষমবাদী সঙ্গে ছিল গো।।১।।
মনে লয় উড়িয়া যাইতাম সেরূপ নয়নে হেরতাম
পাখা দিতে বিধি কেন বাদী হইল।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঐ রূপ যেন হেরি অন্তিমকালে
মনের আশা মনে রইল।।।৩।।

করু/২

৫০১

ললিতে, জলে গিয়াছিলাম একেলা–
ডাকছে নাগরি শ্যাম-কালা।।
আর পদের উপর পদ থইয়া
বাজায় কদম-তলা
ওয়রে, দেখছি অনে লাইছে মনে–
মন হইয়াছে চঞ্চলা।।
আর কি মহিমা জানে সই গো–
নন্দের চিকন-কালা।
আঙ্খির ঠারে শ্যাম-নাগরে
দিত চায় ফুলের মালা।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে
কি হইল যন্ত্রণা :
বৈকণ্ঠ বলে, জলের ঘাটে
আর যাইয়ো না একেলা।

শ্রী/৩২৮

৫০২

তাল–লোভা

শুন গো সই ঐ বাজে গো বাঁশি।।ধু।।
মনপ্ৰাণ সহিতে টানে লাগাইয়া বরাশি।।চি।।
অমিয় বরষণা করে গো নিরলেতে বসি।।
যে নাগরে বাজায় বাঁশি হইতেম চাই তার দাসী।।১।।
কি মন্ত্র মোহিনী জানো গো বাঁশি কুলবিশি
বারি বিনে চাতাকিনী হইয়াছে পিপাসী।।২।।
মোহন মধুর স্বরে গো হইয়াছে উদাসী
শ্ৰীরাধারমণে বলে কৃষ্ণে অভিলাষী।।৩।।

রা/৬০

৫০৩

তাল–লোভা

শুন মনোচোরের বাঁশি করিরে মানা
মোহন মধুর স্বরে রে বাঁশি আর বেইজনা।।ধু।।
শাশুড়ী-ননদী বৈরী গুরু গঞ্জনা।।চি।।
জ্বালার উপর জ্বালা রে বাঁশি পরানে সহে না।।১।।
কঠিন হৃদয় বাঁশি লাজ-ভয় রাখ না
অবলা বধিবার লাগিরে বাঁশি বিধাতার সৃজনা।।২।।
যার হাতে পড় বাঁশি করে তার সাধনা
শ্ৰী রাধারমণে ভনেরে বাঁশি আর বাইজনা।।৩।।

রা/৭৯

৫০৪

শুনরে বন্ধুয়ার বাঁশি মধুর স্বরে বেইজনা বেইজো না।।ধু।।
অবলা বধিতে বিধাতার সৃজনা।।চি।।
যখন শুরুর কাছে বসি তোমি নাম ধরিয়া ডাকো বাঁশি
যেন জাননাহে বাঁশি নারীর বেদনা।।
কাল নাগিনী ননদিনীর জ্বালায় বঁচি না।।১।।
একে তা অবলা নারী কুলভয় লাজে মরি
আর জ্বালাইও না রে বাঁশি আর জ্বালাইও না।।
হিয়ার মাঝে জ্বলছে অনল নিবাইলে নিবে না।।২।।
দিবানিশি হিয়ার মাঝে প্রেমের অনল জ্বলতে আছে
ধৈর্য মানে নারে বাঁশি ধৈৰ্য মানে না
শ্ৰীরাধারমণের আশা নিরাশা কৈর না।।৩।।

রা/৬৯

৫০৫

শুন শুন ওরে বাঁশি অবলার কুলবিশি
শুন বাঁশি মিনতি আমার।।
তোমার মধুর ধ্বনি মন প্ৰাণ উন্মাদিনী
বাঁশি না বাজিও আর।
ঘরে গুরুজন বৈরী তুমি ডাক নাম ধরি
লাজ ভয় নাহিক তোমার।।
এই তো ব্ৰজনগরে কেবা না পিরিতি করে
কেবা কাকে ডাকে নাম ধরি কার
প্রথম রন্ধ্রের গানে মধুর পরশিল কানে
গৃহকর্ম মনে নাহি আর।।
দ্বিতীয় রন্ধ্রের গানে তনুমন সদা টানে
কেবা পারে ধৈর্য ধরিবার।।
তৃতীয় রন্ধ্রের গানে ঋষি মুনি ভঙ্গ ধ্যানে
কুল নাহি গৃহে থাকা ভার।।
পঞ্চম রন্ধ্রের গানে উন্মাদিনী কৈরে
ঘটাইলে কলঙ্ক রাধার।।
ষষ্ঠ রন্ধের গানে যমুনা বহে উজানে
গৃহে থাকে শক্তি আছে কার।।
সপ্তম রন্ধ্রের গানে গলিত করে পাষাণে
শ্ৰী রাধারমণে কয় জীবন হইল সংশয়
বাঁশি তুমি না বাজিও আর।।

য/১১৭

৫০৬

শুনি বংশী প্ৰাণসজনী কদম্বে কি বংশী বটে।।ধু।।
আত্মা ইন্দ্ৰিয় মনাকর্ষণ করে প্রাণী আমার নাই গো ঘটে।।চি।।
মোহন মধুর স্বরে মন প্ৰাণ উচাটন করে।।
আর রহিতে না পারি ঘরে পড়িয়া কি বিষম সঙ্কটে।।১।।
কালার বাঁশি হইল কাল বাঁশিয়ে ঘটাল জঞ্জাল।।
চলাচল সকলে আমায় নিয়ে চল জলের ঘাটে।।২।।
ধৈরজ না মানে প্ৰাণে উন্মাদিনী বাঁশির গানে
শ্ৰীরাধারমণে ভনে চল যাই শ্যামের নিকটে।।৩।।

রা/৮২

৫০৭

শুনিয়া মুররী ধ্বনি আইলাম যমুনায়
কোথায় রহিয়াছ বন্ধু দেখা দেও আমায়।।
শ্যাম বিচ্ছেদের এত জালা করি কি উপায়
ছদ্মবেশে ছায়ারদীপে দেও দেখা আমায়।।
শাশুড়ী ননদী ঘরে সদায় জ্বালায়
তারো সাথে পরিপূর্ণ তুমি সে দিলায়।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুনগো ধনি রাই
ঐ দেখো গো মনোচোরা কদম্বডাল বায়।।

কিরণ/৮

৫০৮

তাল–লোভা

শুনিয়া মোহন বাঁশি যমুনা পুলিনে আসি
না পুরিল-মনের দুরাশা।
বনভূমি হইল কাল কালো মেঘে আচ্ছাদিল
কথা বন্ধু না পাই তার দিশা।।২।।
কদম্ব্ব কি বংশী বটে মনে লয় আছে নিকটে
শ্যাম বন্ধে লাগে মর নাসা।।৩।।
জলের ছলনা করি পথে নি বন্ধুরে হেরি
আজ ভালে না পুরিল আশা।৪।।
কলসে ভরিয়া জল শির্ঘে সখী গৃহে চলে
আশা পথে হইলাম নিরাশা।।৫।।
শ্রীরাধারমণে কহে মোর মনে হেন লয়ে
নয় সে কাল কুলনাশা।। ৬।।

রা/৯৪, য/১৬৫

৫০৯

শোনা গো পরান সই তোমারে মরম কই
বাঁশি মোরে করিল উদাসী,
কি ধ্বনি পশিল কানে সে অবধি মোর মনে
উচাটন দিবস রজনী
হেন লয় মোর মনে বাঁশি কোন যাদু জানে
গৃহ কর্ম না লয়ে মনে,
এমন দরদী নাই কহিব কাহার ঠাই
বেদনা বুঝিবে কোন জনে।
কুলমান সব গেল গোকুলে কলঙ্ক রইল
পাড়ার লোকে বলে মন্দ
নাম ধরি ডাকে বাঁশি শোনি হাসে প্রতিবেশী
ননদীয়ে সদা করে দ্বন্দ্ব।
কহি গো তোদের ঠাই বল লো আমি কোথা যাই
ব্রজে থাকা হবে না আমার
ভাবিয়া রাধারমণ বলে দিবানিশি হিয়া জ্বলে
অস্থি চর্ম হইয়াছে সার।।

হা/১০ (৬), গো (৯৬)

৫১০

খেমটা

শ্যামকে দেখিবি যদি আয় গো
শ্যামের বাঁশির ধ্বনি শুনা যায়।।ধু।।
বাঁশির ধ্বনি শুনে উন্মাদিনী
আমি মারি পিপাসায়।।চি।।
বাঁশি প্ৰাণ লইয়া মর টান দিয়াছে
ধৈর্য ধরা নাহি যায়।
শ্ৰীরাধারমণ শ্যামের আশায়
আমার সঙ্গেতে নি নিবায়।।

রা/৫৫

৫১১

শ্যাম জানি কই রইল গো
শ্যামরূপে মন নিল প্ৰাণ নিল
নিল কোন সন্ধানে গো।
শ্ৰীকৃষ্ণ বিচ্ছেদে আনল জ্বলিয়া উঠিল।
প্ৰেম সায়রে মাঝে বন্ধে ডুবাইয়া মারিল
রূপপানে চাইতে চাইতে রূপ নিহারলু
বিজলী চটকের মতো দেখাদি লুকাইল
ভাইবে রাধারমণ বলে কি হইল কি হইল
একবার আইন্যা দেখাও শ্যামরে
প্ৰাণী গেল প্ৰাণ গেল।

নিধু/ ১

৫১২

শ্যামনটবর বংশী কে যাবে নেইহারিতে।।ধু।।
চল সখী কে যাবে যমুনায় জল আনিতে।।চি।।
উন্মত্ত রথের সারথি মদমত্ত ছয়টি হাতে।।
কৈরে সংহতি যুবতি যায় জল আনিতে
আঁখির ঠারে ভরব বারি রাখব হৃদয় কলসীতে।।১।।
মনতুলসী ভাবের চন্দন জ্ঞানপুষ্প করিয়া অৰ্পণ
শ্ৰীচরণে কৈরে সমার্পণ
যার জলে স্নান করাব মুছব চরণ কেশেতে।।২।।
ইন্দ্রমণি বাণের স্বরে বিন্দিল শ্যাম নটবরে কালিন্দ্রির তীর
নিবিড়ে পাই যদি তারে প্ৰেমলতায় বেন্দে তারে
রাধারমণ রইল আই আশাতে।।৩।।

রা/১১৮

৫১৩

শ্যাম না কি বাজায় মোহন বাঁশি গো সখী
ঐ শোনা যায় কদমতলায় সখী।।ধু।।
শ্যামের বাঁশি কুল বিশি বাজে থাকি থাকি
জয় রাধা জয় রাধা বলে করছে ডাকাডাকি
শুনি ধ্বনি উন্মাদিনী কেমনে করে থাকি।
মন গিয়াছে বন্ধের কাছে কেমন করে রাখি।
ভাইবে রাধারমণ বলে সখী সব আও গোচলে,
কদমতলে বন্ধের সনে অইবো দেখাদেখি।

গো (৯৮)

৫১৪

শ্যাম বন্ধুরে এ নাম ধরিয়া বাঁশি বাজাইও নারে।
নাম ধরি বাজাও বাঁশি বসি কদম ডালে
কলঙ্কী করিলে মোরে গোকুল নগরে।
বাঁশিটি না বাজাও রে নন্দে মোরে সদায় ঝারে
কলঙ্কী করিলে মোরে এই ব্ৰজপুরে।
ব্রজপুরে যত নারী চায় যে নয়ন আড় করি
সদায় ঘোষে রাধা কলঙ্কিনীরে।
ভাইবে রাধারমণ বলে নেও আমারে তোমার দলে
নইলে প্ৰাণে বধ মোরে কলঙ্কী রাখিও না রে।

গো ১৪৭ (২০১)

৫১৫

শ্যাম বিনে চাতকী হই, আমি নাম শুনে পাগলী হই,
বন্ধের নাম শুনাও গো প্ৰাণ সই।।ধু।।
চাতক রইল মেঘের আশে,
তেমনি মত রইলাম গো আমি শ্যামচন্দের আশে,
মনের দুঃখ কার ঠাই কই, আমি হৃদয়ের কথা কার ঠাই কই।
তমাল ডালে বাজাও হে বেণু
তমাল ডালে লাগছে গো রাধার শ্যামপদের রেণু,
তমাল ডালে আমার গলে একত্রে বান্ধিয়া থই।
ভাবিয়া শ্ৰী রাধারমণ বলে,
পড়িয়া গো রহিলাম শ্যামের যুগলচরণ তলে,
শ্যামের দেখা পাব বলে আমি আকাশ পথে চাইয়া রই।

আহো/৩২, শ্রী/১০৮,  হা (১৫), গো (২০১)

পাঠান্তর : শ্ৰী মনের দুঃখ > ও আমার দুঃখ, ভাবিয়া শ্ৰীরাধারমণ বলে>আর ভাইবে রাধারমণ বলে, আকাশ পথে > আশা পথ।
হা : শুনাও গো > শুন গো; আকাশপথে > আশাপথে। গো; তেমনি মত… চাইয়া রই > আমি রইলাম বন্ধের আশে / মনে থাকে মনের কথা /কার ঠাঁই মনের দুঃখ কাঁই/ গহিন বনে চরাও ধেনু /তমাল ডালে বাজাও বেণু/ তমাল ডালে পদরেণু / গলে গলে একত্র থই/ ভাইবে রাধারমণ বলে /আশায় থাকি পাব বলে /চরণ দেখা পাব বলে /আশয় পন্থ চাইয়া রই।

৫১৬

শ্যাম রাজ পন্থের মাঝে
দাঁড়াইয়া রহিয়াছে কিবা কাজে।।
অবলার সঙ্গ রঙ্গ তোমার নি সাজে।
রাস্তা দাও রাধারমণ রাস্তা ছাড়ি কর গমন
আমরা যাই নিজ নিজ কাজে।।
পন্থের মধ্যে বাঁকা ঝুরি আমরা পড়ি লাজে।
গগনে আর বেলা নাই জল লইয়া গৃহে যাই
ঘরে গুরুজনা বৈরী আছে।।
সকলে ঘোষণা করে লোকের সমাজে
কাকে ধরি প্ৰাণে মরি
ধরিও না শ্যাম বিনয় করি
ধরিও না শ্যাম মনের মাঝে
রাধারমণ বলে ঠেকছ আজি ছাড়ব না সহজে।।

শা/৩

৫১৭

শ্যামরূপ আমার নয়নে লাগিল ভুলিতে পারি না
পন্থপানে চাইয়া থাকি বন্ধু বিনে কেউ দেখি না।
যাইতে যমুনার জলে বাঁশি বাজায় কদমতলে
হাসি হাসি বাজায় বাঁশি গৃহে যাইতে প্ৰাণ চলে না।
কারিগরে কোন বা কলে গড়ছে রূপ এমন কলে দে
খলে যায় মন ভুলে ত্রিভঙ্গ কালিয়া সোনা।
ভাইবে রাধারমণ বলে পিরিতে দুৰ্দশা মিলে
পিরিত ধরি রাখতে পারলে একে লাভ তিনদুনা।

গো ২১৬ (২৫১), হা (২৫), তা/৩৫

পাঠান্তর /হা/ : ভুলিতে পারি না > পাশরিতে আর পারিনা; প্ৰাণ বলে না >মন চাহে না; কারিগরে…. মন ভুলে>না জানি কোন কারিগরে গড়িয়াছে রূপ দেখলে মন ভুলে/ এগো তার গলে শোভে বনমালা; পিরিত… তিনদুনা > এই পিরিতের এই রীতি এই দশা ঘটিল রে। পিরীত করিয়া ছাড়িয়া গেল, এমন পিরীত আর করিও না।
তী : যাইতে কদমতলে > গিয়াছিলাম জলের ঘাটে, আমায় দেখিয়া বাজায় বাঁশি এই কদমতলে; হাসি হাসি > নাম ধরিয়া; কারিগরে. মন ভুলে > না জানি কোন কারিগরে গড়িয়াছে রূপ গঠন, দেখলে মন ভুলে ও তার গলে শোভে বনমালা। পিরীতে . তিনদুনা > এই পিরাতের ঐ রীতি এই দশা ঘটে, পিরিত করিয়া ছাড়িয়া গেলা, এমন পিরিত আর হইল না।

৫১৮

শ্যামরূপ নয়নে হেরিয়া
ও রূপে নয়ন হরে নিল গো আমার শুধু দেই থইয়া।।
কুক্ষণে জল ভরতে গো গেলাম একাকিনী হইয়া
যমুনারই স্রোত নিল গো আমার কলসী ভাসাইয়া।।
গৃহে যাইবার না লয় মনে মারি গো ঝুরিয়া।
ঘরের বাদী কালননদী গো থাকে আড়নয়নে চাইয়া
ভাবিয়া রাধারমণ বলে গো মনেতে ভাবিয়া
কুল গেল কলঙ্ক রইল জগৎ জুড়িয়া।।

সর্ব /৬, করু/২০

পাঠান্তর : করু : শ্যাম রূপ > ও বাঁকা রূপ; ও রূপে … দেহ থইয়া > মন নিল শ্যাম নটবরে আমার প্রাণ নিল হরিয়া; কুক্ষণে > কি ক্ষণে ভরতে > আনতে, যমুনারই স্রোত.. আমার > ও রূপপানে চাইতে নিল স্রোতে।

৫১৯

শ্যামরূপ হেইরে আইলাম গো, ওগো প্ৰাণে মরিগো ঝুরিয়া।।
কুক্ষেণে জল ভারতে গেলাম নিষেধ না মানিয়া গো।।
একে তা অবলা বালা বাড়ে দ্বিগুণ জ্বালা।।
জলে গেলে দ্বিগুণ জ্বলে নিষেধ না মানিয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে, প্ৰেম জ্বালায় অঙ্গ জ্বলে।।
আমি কুক্ষেণে গো গিয়াছিলাম জলের লাগিয়া।।

য (হু)/১৬৬

৫২০

শ্যামরূপ হেরিয়া আইলাম যমুনারই জলে
কতই রঙ্গে শ্যাম দাড়াইয়াছে খেইড় কদমতলে।
রাঙাপদে সোনার নুপুর রুনুঝানু বাজে
কর্ণের কুণ্ডল করে গো ঝলমল, বাঁশিতে রাধা বলে।।
কাঁচা পিরিত কইরো না শ্যাম কালিয়ার সনে
কলির পিরিত প্রেমের আঠা ছাড়ব না প্ৰাণ গেলে।
ভাইবে রাধারমণ বলে ভাবিও না রাই মনে
শ্যাম কলঙ্কী হইছি আমি সকলে সে জানে।

সর্ব/৭

৫২১

শ্যামরূপ হেরিয়া আমার প্রাণ কান্দেগো কি হইল বলিয়া।।ধু।।
অয়গো গৃহে রইতে নারি ধৈর্য গো ধরিয়া।।চি।।
যখন যাই যমুনার জলে গো শ্যামরূপ হেরিবার ছলে
ও কাল ননদিনী গো থাকে গো ছাপাইয়া।।১।।
আমরা তো অবলা নারী আমরা কান্দিয়া পোষাই রাজনী
ও প্ৰাণ চমকিয়া ওঠে গো প্ৰাণবন্ধের লাগিয়া।।২।।
ভাইবে রাধারমণ গো বলে আমার প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আমার জনম গেল গো কান্দিয়া কান্দিয়া।।৩।।

রা/১১৩

৫২২

শ্যাম রূপ হেরিয়া গো, ওগো প্ৰাণে না মানিয়া ঝুরিয়া।
কেন গৃহের বাইর হইলাম নিষেধ না মানিয়া গো।।
কাঁখেতে কলসি লাইয়ে কুক্ষেণে গো গিয়াছিলাম জলের লাগিয়া।
শুধু দেহ লইয়ে ফিরে আইলাম প্ৰাণটি বান্ধা থইয়া।।
চাইয়া রইলাম রূপ পানে পঞ্চে পঞ্চ মিশাইয়া।।
যৌবন টানে…………..
রাধারমণ বলে মন প্রাণ রাখি কি করিয়া গো
ওগো প্ৰাণে মরি গো ঝুরিয়া। ।

য/ ১৬৩৭

৫২৩

শ্যামরূপ হেরিয়া গো প্ৰাণে মরি গো ঝুরিয়া
কেনে আইলাম জলের ঘাটে নিষেধ না মানিয়া গো।।ধু।।
একে তা অবলা নারী দেখো গো আসিয়া
জলের ঘাটে গেলাম গো সখী আনা জল পালাইয়া।।
শাশুড়ী ননদী বৈরী খাইলো গো জ্বালাইয়া
জলের ঘাটে পাইয়া গো সখী বন্ধে না দিলো আছাড়িয়া।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে তোরা দেখগো আসিয়া
দুই নয়নের জলে আমার বুক তা যায়। ভাসিয়া।

গো ১৮৯ (২৭২)

৫২৪

শ্যামরূপে নিয়ন হইরে নিল গো।
ভুলিতে পারি না আমার কি জ্বালা হইল গো।
যাইতে যমুনার জলে দেখা হইল কদমতলে
আড়ে আড়ে শ্যাম নাগরে চায় গো।
নয়ন নিল রূপ বাণে কৰ্ণ নিল বাঁশির বাণে
বিষে অঙ্গ জরজর পুড়িয়া হইলাম ছাঁই গো।
গোসাই রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
মনের মানুষ বিনে আমার কে করিবে ভালো গো।

তী/৩৬, গো (৯৫), হা (২৭)

পাঠান্তর : গো শ্যামরূপে … হইল গো > শ্যামরূপে নয়নে নয়নে লাগিল ভুলিতে না পারি রূপ কি জ্বালা হইল; দেখা হইল > বংশীধ্বনি; আড়ে… যায় গো-> হাসি হাসি বাজায় বাঁশি আমার পানে চাইয়া; নয়ন নিল…ছাই গো-> কৰ্ণ নিল বাঁশীর টানে, নয়ন নিল রূপবাণে শ্যামরূপ ভুজঙ্গ হইয়া দংশিল হৃদয় কোণে,/ সে বিষের এমন জ্বালা অবশ্য হইলাম অবলা / জ্বালা বিষম জ্বালায় প্ৰাণ আমার অবশ্য হইল; গোসাঁই ভাইবে কে করিবে ভালো গো >কে দেবে সবল করিয়া।
হা : তী/৩৬-এর অনুরূপ

৫২৫

শ্যামরূপের নাই তুলনা।।
ও শ্যামরূপে আমার নয়ন নিল বুঝাইলে মন বুঝে না।।
নবীন ও ত্ৰিভঙ্গবাঁকা চূড়ার উপর ময়ূরপাখা
সে যে হইলে হাইলে নাইচে নাইচে কদমতলে করে আনাযানা।।
করেতে মোহনবাঁশি মৃদু মুখে মধুর হাসি
সে যে লাগাইয়া প্রেমের ফাঁসি হেচকা টানে প্ৰাণ বাঁচে না।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো তোমরা সকলে
এগো অধৈৰ্য এই প্ৰেমানলে বুঝাইলে মন বুঝে না।।

আশা/৯

৫২৬

শ্যামের বংশীরে এ নাম ধরিয়া মধুর স্বরে
আর বাজিও না রে।।
বাঁশি রে তুই একি করলে আমার কুলধৰ্ম নষ্ট করলে
দোষী করলে এ গোকুলে জানে সকলে
বাঁশি নিষেধ দিলে নিষেধ বাধা মানে নারে।।
শাশুড়ী ননদী ঘরে লাঞ্ছনা দেয় সদায় মোরে
দোষী করলে ঘরে বাইরে এ ব্ৰজপুরে
কলঙ্কিনীর কলঙ্কী নাম গেলনা রে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে
বাঁশির দোষ নাই কোনো কালে
যার হাতে থাকে বাঁশী তার কথা বলে
আরে রসিক বিনে রসের বাঁশি বুঝে না রে।

হা / ১৯ (১৭)

৫২৭

শ্যামের বাঁশি ঐ শুন বাজিল বনে ধ্বনি শুনে রহি কেমনে।।ধু।।
মন হইয়াছে উন্মাদিনী প্ৰাণে কি আর ধৈর্য মানে।।চি।।
বিষম বাঁশির কথা ঘরের বাহিরে নেয়। মুড়ায় গো মাথা
ব্যথায় হৃদয় দহিছে আগুনে।।
আমি ফুকারি কান্দিতে নারি আমার মন সহিতে টানে।।১।।
বাঁশি করল প্ৰাণান্ত আমার জ্ঞান বুদ্ধি হইল ভ্ৰান্ত গো
প্ৰাণ শান্ত হয় ন তার বিনে।
আমি বাঁশির জালা সহিতে নারি তারে ধরি বল কি সন্ধানে।।২।।
বাঁশির স্বরে আখি ঝুরে আমার মন নিল আইল না ফিরে
কি করে ভয় লাজ কুলমানে।
শ্ৰীরাধারমণের আশা আমায় নিয়ে চল শ্যাম যেখানে।।।৩।।

রা/৭৩

৫২৮

শ্যামের বাঁশি ঐ শুনা যায়
পাগল করিলায় রে কঠিন শ্যামরায়।
মনোচোরা মোহন বাঁশি রে গৃহে থাকা হইল দায়
দিবানিশি জালায় বাঁশি রে আমি হইয়াছি পাগলের প্রায়।
জান না কালশশী আমি গুরুজনার কাছে বসি রে
আমার মনপ্ৰাণ সবই দিলাম রে বাঁশি প্ৰাণ সপিলাম রাঙা পায়।
বাজায় বাঁশি নানান ছলে নারীবধের ভয় নাই মনে
দিবানিশি বাজাও বাঁশি হইয়াছি পাগলের প্রায়।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে অসময়ে বাঁশির গানে
রাধার মন হইরে নিল সময় থাকিতে করা উপায়।।

নমি/১৩

৫২৯

শ্যামের বাঁশি বাজিল বিপিনে।।ধু।।
বাঁশির ধ্বনি উন্মাদিনী প্ৰাণে কি আর ধৈর্য মানে।।চি।।
যে নাগারে বাজায় বাঁশি মনে লয় তার হইতেম দাসী
গোকুল মজাইল শ্যামের বাঁশির গানে
বাঁশির তানে শূন্যে তনু প্ৰাণ থাকে কেমনে।।১।।
বাঁশির মধু কতই মধু ঘরের বাহির কৈরে নেয় কুলবধূ
শ্যামের বাঁশি কি মোহিনী জানে
কেয়া ফুলের কাঁটার মতো বিন্দিল পরাণে।।২।।
কেমন গো সই বংশীধারী কেমন তার রূপ মাধুরী
সাধ করে হেরিতে নয়নে
কি আমৃত বাজায় বাঁশি কহে শ্ৰী রাধারমণে।।৩।।

রা/৫২

৫৩০

শ্যামের বাঁশি মন উদাসী কি মধুর বাজিল কানে
প্ৰাণসই বাজল বাঁশি গহিন কাননে।
নুতন বাঁশের বাঁশি নুতন বয়সের কালশশী
নূতন নূতন বাজাও বাঁশি বিষম সন্ধানে।।
আমার মন হইয়াছে উন্মাদিনী প্ৰাণে
কি আর ধৈর্য মানে।।
পুলিনে যমুনা ঘাটে
কদম্ব কি বংশীবটে
প্ৰাণে কি আর ধৈৰ্য মানে শ্রবণে
শ্ৰী রাধারমণের কথা পূর্ণ হবে কত দিনে।।

গো (৭৭)

৫৩১

শ্যামের বাঁশি মন উদাসী কি মধুর শোনাইল কানে
বাজিলো বাঁশি গহিন কাননে।।ধু।।
যমুনা পুলিন ঘাটে বদনাভারে বংশী বটে
বাজিলো বাঁশি জলের ঘাটে বিষম সংকটে;
আমার মন হইয়াছে উন্মাদিনী আর কি প্ৰাণে ধৈৰ্য মানে
নূতন বাঁশের বাঁশি নুতন বয়সের কালশশী
নুতন সুরে বাজায় বাঁশী গহিন কাননে;
আমার মন চলে না গৃহে যাইতে লয়ে চলো শ্যাম যেখানে।
শোন গো ললিতা সই তোমার মরম কই
মনে লয় হাইতাম দাসী ঐ রাঙ্গা চরণে;
গোসাই শ্ৰী রাধারমণের আশা পুর্ণ হবে কত দিনে।

গো (২৭০)

৫৩২

শ্যামের বাঁশিয়ে কি করিত পারে সজনী
কদম্ব ডালেতে বসি ঠাকুর কৃষ্ণে বাজায় বাঁশি
বাঁশির সুরে রইতে না দেয় ঘরে গো সজনী
কলসীতে নাই গো জল এ কি হল অসম্ভব
একাকিনী যাব আমি জলে গো সজনী
ছোটমুটি রাস্তাকিনি হাঁটিতে না পারে ধনী
শ্যাম অঙ্গে লাগিয়া গেল ধাক্কা গো সজনী
ভাইবে রাধারমণ বলে বাঁশির জ্বালায় অঙ্গ জ্বলে
কুল গেলে হইব দেখা শ্যাম কালিয়ার সনে গো সজনী।

নৃ/১০

৫৩৩

শ্যামের বাঁশিরে ঘরের বাহির করলে আমারে
যে যন্ত্রণা বনে যাওয়া গৃহে থাকা না লয় মনে।।
যথায় তথায় যাও রে বাঁশি সঙ্গে নিয়ে আমারে
পায় ধরি বিনয় করি লাঞ্ছনা দিয়ো না মোরে।
ভেবে রাধারমণ বলে শুনগো ললিতে
পাইতাম যদি শ্যামের বাঁশি ভাসাইতাম যমুনার জলে।
যে দুঃখ দিয়াছ বাঁশি আমার অন্তরে
এমন বান্ধব নাই যে গো দেখাব করে
মনে রইল দেখাব মইলে।

শ্রী (৩৭৮)

৫৩৪

শ্যামের বাঁশিরে শ্যাম নাগর কালিয়া
কুলবধূর কুল মজাইলায় বাঁশরি বাজাইয়া।
প্ৰথম পিরিাতের কালে আইলায় নিতি নিতি
এখন বুঝি শুরু কইলায় দুইপারি ডাকাতি।
আর কতকাল রাখতাম পিরিত লোকে বৈরী আইয়া।
শুকশারী পিরিত করে। তমার ডালে বইয়া
মনে লয় উড়িয়া যাইতাম বনের পাখী অইয়া।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
মনে লয় সঙ্গে যাইব কুলমান খাইয়া।

গো ১৭৩ (২৫২), হা (৫)

৫৩৫

শ্যামের মুরলী বাজিল একি মধুর স্বরে গো
শ্যামের বাঁশি কুলবিনাশিনী রইতে না দেয় ঘরে গো।
কি মধুর পশিল কানে কুলমান সহিতে টানে
বাঁশি কি মোহিনী জানে ধরয়ে অধরে গো।
এমন তো শুনি নাই কখন বিষামূত এমন মিলন
বাঁশি কালভুজঙ্গ যেমন দংশিল আমারে গো।
জলে কি কালিন্দী তটে কদম্ব কি বংশী বটে
বাজল বাঁশি জলের ঘাটে ধীর সমীরে গো
ভেবে রাধারমণ বলে শীঘ্ৰ চল যমুনার জল
ওগো রসরাজ বৈদ্য না হইলে অঙ্গ কে করিবে শীতল।

য/১২১

৫৩৬

শ্ৰীদাম তুই জানিয়া আয় রে ভাই
কি সুখেতে আছে আমার কমলিনী রাই।।ধু।।
আশা ছিল মোর মনে আসিবে বনেতে রাই
আসলে রূপ হেরিব নিরলে;
সে আশে বঞ্চিত হইলাম আমি কোথা গেলে তারে পাই।
শ্ৰীদাম সকাল চল মোরে করিস না ছল
শীঘ্ৰ যা রাই আছে সেখানে, বিনয়ে তোরে বলি
শীঘ্ৰ যারে গুণের ভাই।
সব কুঞ্জে বিচারি চাই তবু তার দেখা না পাই
কোন কুঞ্জে রহিল ছাপিয়া
শীঘ্ৰ আইসে বল শুনি প্ৰাণে শান্তি পাই।
রাধারমণ বলে ভাই তুই বিনে দোসর নাই
শীঘ্র যা আর করিস না দেরী শীঘ্র ফিরি আসি বল
শুনি প্ৰাণে স্বস্তি পাই।

গো (২৪৮)

৫৩৭

সই গো, বলিয়া দে আমায়–
দিবা নিশি ঝুরিয়া মারি কালিয়া সোনার দায়।।
কলসী লইয়া গো রাধে
যেই দিগেতে চায়–
সোনা বন্ধের গায়।।
কদমডালে বইয়া গো বন্ধে
বাঁশিটি বাজায়–
কদমফুল ঝরিয়া পড়ে
সোনা বন্ধের গায়।
ভাইবে রাধারমণ গো বলে–
মইলাম পরার দায়
এগো, পর কি আপনা হয়
ছাল্লাত বুঝা যায়।।

শ্রী/১১১

৫৩৮

সখী আমার কি জ্বালা গো হইল।
কৃষ্ণ প্রেমে অঙ্গ দহিল।।ধু।।
প্ৰাণ সাঁই সরল প্ৰেমে দাগ দিল।।চি।।
প্রেম কর গো ব্ৰজ মাইয়া প্রেম কর মানুষ চাইয়া
প্ৰাণ সাঁই আখির টানে মন হরিয়া নিল।।১।।
প্ৰেম করে হইলাম কুলটা লোকে মোরে দেয় খুটা
প্ৰাণ সই। এই পিরিতে মন মজিল।।২।।
প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে ভাইবে রাধারমণ বলে
প্ৰাণ সই জীবন থেকে মরণ ভাল।।৩।।

রা/১৫১

৫৩৯

সখী আমি আগে জানি না : প্রেম করা যে এই লাঞ্ছনা।
ওগো প্ৰেম করে যে হইলাম গো দোষী লোকের মুখে ঘোষণা।।
শাশুড়ী ননদী গো হেথা হেলায় খোচায় তোড়া গো কথা
আমি যে অবলা নারী কিছু প্ৰমাণিতে পারি না।
নারীর যৌবন চুনের গো ফোটা গেল যৌবন রইল খোটা
নারীর যৌবনে জোয়ার ভাটা গেলে যৌবন আর পাবে না।
ভেবে রাধারমণ বলে প্ৰেম কইরা না তোমরা সকলে
ওগো প্ৰেম করিয়া দ্বিগুণ জ্বালা মইলে জ্বালা যাবে না।।

শ্যা/১০

৫৪০

সখী বল গো উপায়।।ধু।।
এ বাজে কুলনাশীর বাঁশি গৃহে থাকা হইল দায়।।চি।।
বাঁশি কি অমিয়া নিধি সৃজিল কি বিধাতায়
মন প্ৰাণ হরিয়া নিল কুল রাখা হইল দায়।।১।।
ঘরের বাহির হইতে নারি থাকি গুরু গঞ্জনায়
বাঁশির জ্বালা সইতে নারি প্রাণি কণ্ঠাগত৷ প্ৰায়।।২।।
কেন গো সে কালাচান্দে নাম ধরে বাঁশি বায়
শ্রীরাধারমণে ভণে তার তো সরম ভরম নাই।।৩।।

রা/৬২

৫৪১

সখী যমুনা পুলিনে গো যাবে নি শ্যাম দরশনে।।ধু।।
মন হইয়াছে উন্মাদিনী গো মধুর মুরলীর গানে। চি।।
বারি ছাড়া চাতকিনী যেন বনপোড়া হরিণী
তেমনি মতো দন্ধে পরাণি।।
বাঁশির ধ্বনি শুনে উন্মাদিনী গো, অগো বিশখা
মন প্ৰাণ সহিতে টানে।।১।।
কাল হইল কালিয়ার বাঁশি, বাঁশি হইল কুলবিশি
বাঁশি মোরে করিল দুষী।।
মনে লয় তার হইতেম দাসী গো অগো বিশখা সখী
নিয়ে চল শ্যাম যেখানে।।২।।
বাজায় বাঁশি কালশশী উগরায়ে অমিয়া রাশি
কিবা দিবা কিবা নিশি
আমি কৃষ্ণ প্রেমের অভিলাষী গো অগো বিশখা সখী
কহে শ্ৰী রাধারমণে।।।৩।।

রা/৭৬

৫৪২

সখী করি কি উপায় কলঙ্কিনী হইলাম ভবে
না পাইলাম শ্যামরায়।
ঘর সংসার সবই ছিল পরবাসী তার দায়
জীবন যৌবন গেল এখন করি কি উপায়।
তার সনে করি সম্বন্ধ গোকুলের লোক বলে মন্দ
ভাইবন্ধু সবই পর এখন আমার কেউ নয়।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে ঠেকিলাম উল্টা কলে
সব খুয়াইলাম প্ৰেম চালে তবু না পাইলাম তায়।।

গো ১৬৯ (২৪২)

৫৪৩

সখী চল গো সুরধনী জলের ছলে দেখিয়া আসি কৃষ্ণ গুণমণি।
কদমতলে বসি কৃষ্ণ বাজায় মোহিনী
আমারে করিল পাগল কৰ্ণে পশি ধ্বনি।
মুরলী বাজাইয়া বন্ধে কইলো আকুলিনী
ঘরবার করি আমি নিন্দে ননদিনী।
শ্বশুড়ী ননদী নিন্দে আর যত গোপিনী।
আমি তার পিরিতে পাগল কুল কলঙ্কিনী
ভাবিয়া রাধারমণ বলে চল গো সুরধনী
না পাইলে চিকনকলা তেজিমু পরাণি।

গো/২৮৩

৫৪৪

দশকুশি-খেমটা

সখী চল চল যমুনার জলে।।ধু।।
আমার না গেলে না হবে জলে, গ,।।চি।।
চিত্রে নে বিচিত্ৰঝারি চম্পকলতায় নেও গো পুরি
রঙ্গদেবী সদেবী মিলে।।১।।
ইন্দুরে খায়নি তুলসী চন্দন ভঙ্গবিদ্যায় কুসুম চয়ন
কৃষ্ণকেলি কদম্বেরি মুলে।।২।।
চল গো বিশাখা সখী ললিতাকে আনো ডাকি
শ্যামের বাঁশি ডাকে রাধা বইলে।।৩।।
বাঁশি কি মোহিনী জানে মনপ্ৰাণ সহিতে টানে
আজি বড় ঠেইকাছি বেকলে।।৪।।
শুনিয়া বাঁশির ধ্বনি চলো রাধা বিনোদিনী

উন্মাদিনী শ্ৰীরাধারমণ বলে।।৫।।

রা/৯০

৫৪৫

সখী ললিতা বিশখা শ্ৰীকৃষ্ণ বিহনে প্ৰাণ দায় হইল রাখা।।ধু।।
সখী গো–এমন শানে বাজায় বাঁশি দায় হয়। ঘরে থাকা
ঘরের বাইর হইয়া বন্ধের নাহি পাই দেখা।
সখী গো–ভাইবে রাধারমণ বলে শুনগো বিশাখা–
কইও আমার কথা শ্যামের সনে হইলে দেখা।।

গো (১৫১)

৫৪৬

সখী শুন গো ললিতে
পরান আমার উচাটন গো কালার বাঁশির সুরেতে।।
গহিন বনে বাজায় বাঁশি আমি তখন ঘরেতে
ঘরের কামে মন বসে না কালার বাঁশির সুরেতে।।
এমন সুরে বাজায় বাঁশি আঙ্গুল দিয়া বিন্দেতে
রাধা বলি আকুল করে কালার বাঁশির সুরেতে।।
ঘরের কাজে মন বসে না গঞ্জে হড়ি নন্দেতে
গঞ্জনা পশে না কানে কালার বাঁশির সুরেতে।।
ভাবিয়া রাধারমণ বসে তরি সখী কোন কালে
ঘরের মন বাইরে গেছে কালার বাঁশির সুরেতে।।

গো (১৭০)

৫৪৭

সখী হেরো রাধার বন্ধুয়ায় অগুরু চন্দন মাখা সোনার নেপুর পায়।।ধু।।
ভালে তিলক কানে কুস্তল চূড়া তার মাথায়
ত্ৰিভঙ্গ হইয়া শ্যাম মুরলী বাজায়।
শুনিয়া বাঁশির গীত মনপ্ৰাণ উল্লসিত রাধার মন দিবা নিশি
কদমতলে ধায়।
যমুনা কিনারে ভাল সিনানেতে রাধা গেলা জলে ছিটা দিলা শ্যামে
শ্ৰীরাধিকার গায়।
গাছের উপরে লতারে লতার উপরে ফুল
শ্যামের পীরিতে রাধার গেল জাতিকুল।
ভাইবে রাধারমণ বলে কি করিব জাতকুলে
জাতকুল গিয়া যদি শ্যামের রাঙ্গা চরণ পায়।

গো (২১১)

৫৪৮

সজনী গো নুতন প্রেম বাড়াইয়া নিল প্ৰাণি।
মুগা দিয়া সুত বলিয়া তেলচুরাদি টোপ গাথিয়া গো
আমায় লোভাইয়া লোভাইয়া নিল প্ৰাণি গো
পিরিতি করিলাম ভাল, উধান মাধান সন্ধ্যাকাল
আমি হেইচ্চা দিলাম নিশ্চয় গঙ্গাজল।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আমি পিরিত কইরে হইলাম জিতে মরা।

সুখ /২৩

৫৪৯

সজনী বল গো তোরা বাঁশি বাজায় কে
বাঁশির সুরে আকুল কইলো তারে চিনাই দে।।ধু।।
যখন বন্ধে বাজায় বাঁশি তখন আমি রান্ধি
বাঁশর স্বরে মন বাউলা ধুমার ছলে কান্দি
বাঁশিরে নিল মন গো সই বাজোইয়া নিলো প্ৰাণ
চাউল কইয়া ভাত রান্ধিলাম দিয়া বাক্‌রা ধান গো সই।
চুয়া চন্দন দিয়া রান্‌লাম রাখি সরষের তেল
বেগুন থেইয়া ব্যঞ্জন রানলাম দিয়া পাকনা বেল।
ভুঞ্জন করিতা সইগো আসিলা সুয়ামী
পাত রাখিয়া মাটিত ভাত বাড়িয়া দিলাম আমি গো সই।
বিরধো শ্বশুর আইলা তেল দেওগো বধূ
ভাজা সর্ষের তেল থইয়া আনিয়া দিলাম মধু।
দেবর আসিয়া কইন্‌ দেওগো দিদি জাঠা
কি অইতে কি হুনিয়া আনিয়া দিলাম পাটা।
আরি বাড়ীর প’রি আইলা দিতাম করি সাদা
ধুতরা পাতা দিতে কইন বাউলা কেনে দাদা।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে বাঁশি জালায় এই
এমন কেউ কয়না আমি বান্ধব আনিয়া দেই।

গো (১৬৩)

৫৫০

সন্ধ্যাকালে বাজাও বাঁশি আর কি সময় নাইরে
কালিয়ার সোনা গৃহকর্ম রাখি বাঁশি শুনতে পারি না।।ধু।।
অসময়ে বাজাও বাঁশি সময় চিনো না
দিন শেষে কার্যের ফাঁকে শুনতে পারি না।
শুনতে না পারি বাঁশি কাজেতে মন বসে না
শ্বাশুরী ননদী ঘুংরায় দেখিয়া আনমনা।
বাউল রাধারমণ বলে করি রে বন্ধু মানা
অসময়ে বাঁশি বাজায় দ্বিগুণ জ্বালায় জ্বালিও না।

গো (৮৬)

৫৫১

হেইরে আইলাম শ্যামরূপ যমুনা পুলিনে।
দাঁড়াইয়াছে শ্যামবন্ধে কদম্ব হেলানে।
আমার শ্যামের মোহন চূড়া বামে হেলাইয়া পড়ে
চরণে সোনার নুপুর রুনুকুনু করে বাজে।
নাসিকায় তিলক শ্যামের বনমালা গলে
হস্তে শ্যামের মোহন বাঁশি রাধা রাধা বলে
জল লইয়া গৃহে যাইতে দাড়ায় রাজপন্থে
নারীর যৌবন লুটে নিলা কুলমান সহিতে
ভাইবে রাধারমণ বলে মানের কি ভয় আছে
কুলমান সব দান দিয়াছি তার চরণে।

কিরণ/ ১

৫৫২

আর কি আমার আছে গো বাকি।
চটকে প্ৰাণ আটকে রাইখে উড়িয়া গেছে প্ৰাণ পাখী।
শ্ৰীকৃষ্ণ রূপের মাধুরী তার তুলনা দিব কি!
তার নাম লইলে হয় প্রেমের উদয়, তারে বা দোষ দিব কি?
বিশখা গো চিত্র পটে মন মজাইলে স্বরূপ দেইখে
শ্যামের বাঁশি হইল কুল বিশি, করিল গো কলঙ্কী।
যা হইবার ত হইয়া গেছে, এখন ভাবলে হবে কি?
গোসাঁই রাধারমণ বলে প্ৰাণ দিয়া গো শ্যাম রাখি।

য/১১

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *