• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৪. পরদিন সকালে

লাইব্রেরি » সত্যজিৎ রায় » ফেলুদা সমগ্র - সত্যজিত রায় » বাদশাহী আংটি (১৯৬৬) » ০৪. পরদিন সকালে

পরদিন সকালে

পরদিন সকালে মনে হল যে শীতটা একটু বেড়েছে, তাই বাবা বললেন গলায় একটা মাফলার জড়িয়ে নিতে। বাবার কপালে ভ্রূকুটি আর একটা অন্যমনস্ক ভাব দেখে বুঝতে পারছিলাম যে উনি খুব ভাবছেন। ধীরুকাকাও কোথায় জানি বেরিয়ে গেছেন—আর কাউকে কিছু বলেও যাননি। কালকের ঘটনার পর থেকেই কেবল বললেন—শ্ৰীবাস্তবকে মুখ দেখাব কী করে? বাবা অবিশ্যি অনেক সাস্তুনা দেবার চেষ্টা করেছিলেন। বিকেল বেলা সন্ন্যাসী সেজে চোর এসে তোমার বাড়ি থেকে আংটি নিয়ে যাবে সেটা তুমি জানবে কী করে। তার চেয়ে তুমি বরং পুলিশে একটা খবর দিয়ে দাও। তুমি তো বলছিলে ইনস্পেক্টর গরগরির সঙ্গে তোমার খুব আলাপ আছে। এও হতে পারে যে ধীরুকাকা হয়তো পুলিশে খবর দিতেই বেরিয়েছেন।

সকালে যখন চা আর জ্যামরুটি খাচ্ছি, তখন বাবা বললেন, ভেবেছিলাম আজ তোদের রেসিডেন্সিটা দেখিয়ে আনব, কিন্তু এখনও মনে হচ্ছে আজকের দিনটা যাক। তোরা দুজনে বরং কোথাও ঘুরে আসিস কাছাকাছির মধ্যে।

কথাটা শুনে আমার একটু হাসিই পেয়ে গেল, কারণ ফেলুদা বলছিল ওর একটু পায়ে হেঁটে শহরটা দেখার ইচ্ছে আছে, আর আমিও মনে মনে ঠিক করেছিলাম ওর সঙ্গে যাব। আমি জানতাম শুধু শহর দেখা ছাড়াও ওর অন্য উদ্দেশ্য আছে। আমি সন্ধেবেলা থেকেই দেখছি ওর চোখের দৃষ্টিট মাঝে মাঝে কেমন জানি তীক্ষ হয়ে উঠছে।

আটটার একটু পরেই আমরা দুজনে বেরিয়ে পড়লাম।

গেটের কাছাকাছি এসে ফেলুদা বলল, তোকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি—বক্‌ বক্‌ করলে বা বেশি প্রশ্ন করলে তোকে ফেরত পাঠিয়ে দেব। বোকা সেজে থাকবি, আর পাশে পাশে হাটবি।

কিন্তু ধীরুকাক যদি পুলিশে খবর দেন?

তাতে কী হল?

ওরা যদি তোমার আগে চোর ধরে ফেলে?

তাতে আর কী? নিজের নামটা চেঞ্জ করে ফেলব।

ধীরুকাকার বাড়িটা যে রাস্তায় সেটার নাম ফ্রেজার রোড। বেশ নির্জন রাস্তাটা। দুদিকে গেট আর বাগান-ওয়ালা বাড়ি, তাতে শুধু যে বাঙালিরা থাকে তা নয়। ফ্লেজার রোডটা গিয়ে পড়েছে ডাপলিং রোডে, লখ্‌নৌতে একটা সুবিধে আছে—রাস্তার নামগুলো বেশ বড় বড় পাথরের ফলকে লেখা থাকে। কলকাতার মতো খুঁজে বার করতে সময় লাগে না।

ডাপ্‌লিং রোডটা যেখানে গিয়ে পার্ক রোডে মিশেছে, সেই মোড়টাতে একটা পানের দোকান দেখে ফেলুদা হেলতে দুলতে সেটার সামনে গিয়ে বলল, মিঠা পান হ্যায়?

মিঠা পান? নেহি, বাবুজি। লেকিন মিঠা মাসাল্লা দেকে বানা দেনে সেকতা।

তাই দিজিয়ে।  তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, বাংলা দেশ ছাড়লেই এই একটা প্রবলেম।

পানটা কিনে মুখে পুরে দিয়ে ফেলুদা বলল, হ্যাঁ ভাই, আমি এ-শহরে নতুন লোক। এখানকার রামকৃষ্ণ মিশনটা কোথায় বলতে পার?

ফেলুদা অবিশ্যি হিন্দিতে প্রশ্ন করছিল, আর লোকটাও হিন্দিতে জবাব দিয়েছিল, কিন্তু আমি বাংলাতেই লিখছি।

দোকানদার বলল, রামকিষণ মিসির?

রামকৃষ্ণ মিশন। শহরে একজন বড় সাধুবাবা এসেছেন, আমি তাঁর খোঁজ করছি। শুনলাম তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে উঠেছেন।

দোকানদার মাথা নেড়ে বিড় বিড় করে কী জানি বলে বিড়ি বাঁধতে আরম্ভ করে দিল। কিন্তু দোকানের পাশেই একটা খাটিয়ায় একটা ইয়াবড় গোঁফওয়ালা লোক একটা পুরনো মরচে ধরা বিস্কুটের টিন বাজিয়ে গান করছিল, সে হঠাৎ ফেলুদাকে জিজ্ঞেস করল, কালো গোঁফদাড়িওয়ালা কালো চশমা পরা সাধু কি? তাই যদি হয় তা হলে তাকে কাল সন্ধেবেলা টাঙ্গার স্ট্যান্ড কোথায় বলে দিয়েছিলাম।

কোথায় টাঙ্গার স্ট্যান্ড?

এখান থেকে পাঁচ মিনিট। ওই দিকে প্রথম চৌমাথাটায় গেলেই সার সার গাড়ি দাঁড়ানো আছে দেখতে পাবেন।

শুক্রিয়া!

শুক্রিয়া কথাটা প্রথম শুনলাম। ফেলুদা বলল ওটা হল উর্দুতে থ্যাঙ্ক ইউ।

টাঙ্গা স্ট্যান্ডে পৌঁছে সাতটা টাঙ্গাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করার পর আট বারের বার সাতান্ন নম্বর গাড়ির গাড়োয়ান বলল যে গতকাল সন্ধ্যায় একজন গেরুয়াপরা দাড়িগোঁফওয়ালা লোক তার গাড়ি ভাড়া করেছিল বটে।

কোথায় নিয়ে গিয়েছিলে সাধুবাবাকে?—ফেলুদা প্রশ্ন করল।

গাড়োয়ান বলল, ইস্টিশান।

স্টেশন?

হাঁ।

কত ভাড়া এখান থেকে?

বারো আনা।

কত টাইম লাগবে পৌঁছুতে?

দশ মিনিটের মতো।

চার আনা বেশি দিলে আট মিনিটে পৌঁছে দেবে?

টিরেন পাকাড়ন হ্যায় কেয়া?

টিরেন বলে টিরেন। বঢ়িয়া টিরেন—বাদশাহী এক্সপ্রেস!

গাড়োয়ান একটু বোকার মতো হেসে বলল, চলিয়ে—আট মিনিটমে পৌঁছা দেঙ্গে!

গাড়ি ছাড়বার পর ফেলুদাকে একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সেই সাধুবাবা কি এখনও বসে আছেন স্টেশনে আংটি নিয়ে?

এটা বলতে ফেলুদা আমার দিকে এমন কট্‌মটু করে চাইল যে আমি একেবারে চুপ মেরে গেলাম।

কিছুক্ষণ যাবার পর ফেলুদা গাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করল, সাধুবাবার সঙ্গে কোনও মালপত্তর ছিল কি?

গাড়োয়ান একটুক্ষণ ভেবে বলল, মনে হয় একটা বাক্স ছিল। তবে, বড় নয়, ছোট।

হুঁ।

স্টেশনে পৌঁছে টিকিট ঘরের লোক, গেটের চেকার, কুলি-টুলি এদের কাউকে জিজ্ঞেস করে কোনও ফল হল না। রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বাঙালি; তিনি বললেন, আপনি কি পবিত্ৰানন্দ ঠাকুরের কথা বলছেন? যিনি দেরাদুনে থাকেন? তিনি তো তিনদিন হল সবে এসেছেন। তাঁর তো এখনও ফিরে যাবার সময় হয়নি। আর তাঁর সঙ্গে তো দেদার সাঙ্গোপাঙ্গ চেলাচামুণ্ডা?

সবশেষে ফার্স্টক্লাস ওয়েটিং রুমের যে দারোয়ান, তাকে জিজ্ঞেস করতে সে বলল একজন গেরুয়াপরা দাড়িওয়ালা, লোক গতকাল সন্ধ্যায় এসেছিল বটে।

ওয়েটিংরুমে বসেছিলেন?

আজ্ঞে না। বসেননি।

তবে?

বাথরুমে ঢুকেছিলেন। হাতে একটা ছোট বাক্স ছিল।

তারপর?

তারপর তো জানি না।

সে কী? বাথরুমে ঢোকার পর তাকে আর দেখোনি?

দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না।

তুমি এখানেই ছিলে তো?

তা তো থাকবই। ডুন এক্সপ্রেস আসছে তখন। ঘরে অনেক লোক যে।

তা হলে হয়তো খেয়াল করেনি। এমনও হতে পারে তো?

তা পারে।

কিন্তু লোকটার হাবভাব দেখে মনে হল যে সে বলতে চায় যে সাধুবাবা বেরোলে সে নিশ্চয়ই দেখতে পেত। কিন্তু তা হলে সে সাধুবাবা গেলেন কোথায়?

স্টেশনে আর বেশিক্ষণ থেকে এ রহস্যের উত্তর পাওয়া যাবে না, তাই আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম।

এখানেও বাইরে টাঙ্গার লাইন, আর তারই একটাতে আমরা উঠে পড়লাম। টাঙ্গা জিনিসটাকে আর অবজ্ঞা করতে পারছিলাম না, কারণ সাতান্ন নম্বরের গাড়োয়ান আমাদের ঠিক সাত মিনিট সাতান্ন সেকেন্ডে স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিল।

এবারেও কিন্তু গাড়ি ছাড়বার পরে আমার মুখ থেকে একটা প্রশ্ন বেরিয়ে পড়ল—

সাধুবাবা বাথরুমে গিয়ে ভ্যানিস করে গেল?

ফেলুদা দাঁতের ফাঁক দিয়ে ছিক্‌ করে খানিকটা পানের পিক রাস্তায় ফেলে দিয়ে বলল, তা হতে পারে। আগেকার দিনে তো সাধুসন্ন্যাসীদের ভ্যানিস-ট্যানিস করার ক্ষমতা ছিল বলে শুনেছি।

বুঝলাম ফেলুদা কথাটা সিরিয়াসলি বলছে না, যদিও ওর মুখ দেখে সেটা বোঝার কোনও উপায় নেই।

স্টেশনের গেট ছাড়িয়ে বড় রাস্তায় পড়তেই একটা ব্যান্ডের আওয়াজ পেলাম। ভোল্পর ভোল্পর ভোঁপুর ভোল্পর.আওয়াজট এগিয়ে আসছে।

তারপর দেখলাম আমাদেরই মতো একটা টাঙ্গা, কিন্তু সেটার গায়ে কাগজের ফুল, বেলুন, ফ্ল্যাগ—এই সব দিয়ে খুব সাজানো হয়েছে। বাজনাটা বাজছে একটা লাউডস্পিকারে, আর একটা রঙিন কাগজের গাধার টুপি পর লোক গাড়ির ভিতর থেকে গোছা গোছা করে কী একটা ছাপানো কাগজ রাস্তার লোকের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে।

ফেলুদা বলল, হিন্দি ফিল্মের বিজ্ঞাপন।

সত্যিই তাই। গাড়িটা আরেকটু কাছে আসতেই রংচঙে ছবি আঁকা বিজ্ঞাপনের বোর্ডটা দেখতে পেলাম। ছবির নাম ‘ডাকু মনসুর।’

হ্যান্ডবিলের দু-একটা আমাদের গাড়ির ভিতর এসে পড়ল, আর ঠিক সেই সময় একটা দলপাকানো সাদা কাগজ বেশ জোরে গাড়ির মধ্যে এসে ফেলুদার বুক পকেটে লেগে গাড়ির মেঝেতে পড়ল।

আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম, লোকটাকে দেখেছি ফেলুদা! কাবলিওয়ালার পোশাক, কিন্তু—

আমার কথা শেষ হল না। ফেলুদা চট করে কাগজটা তুলে নিয়ে একলাফে চলন্ত টাঙ্গ থেকে রাস্তায় নেমে পাই পাই করে যে দিকে লোকটাকে দেখা গিয়েছিল সেইদিকে ছুটে গেল। ভিড়ের মধ্যে কলিশন বাঁচিয়ে একটা মানুষ কত স্পিডে ছুটতে পারে সেটা এই প্রথম দেখলাম।

এর মধ্যে অবিশ্যি টাঙ্গাওয়ালা গাড়ি থামিয়েছে। আমি আর কী করব? অপেক্ষা করে রয়েছি। ব্যান্ডের আওয়াজ ক্রমশ মিলিয়ে আসছে, তবে রাস্তায় কতগুলো বাচ্চা বাচ্চা ছেলে এখনও হ্যান্ডবিল কুড়োচ্ছে। এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে এসে গাড়োয়ানকে ইশারা করে চালানোর হুকুম দিয়ে এক লাফে গাড়িতে উঠে ধপ্র করে সিটে বসে পড়ে ফেলুদা বলল, নতুন জায়গাতে অলিগলিগুলো জানা নেই, তাই বাবাজি রক্ষে পেয়ে গেলেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি লোকটাকে দেখেছিলে?

তুই দেখলি, আর আমি দেখব না?

আমি আর কিছু বললাম না। ফেলুদা লোকটাকে না দেখে থাকলে আমি ওকে বলতাম যে যদিও লোকটার গায়ে কাবলিওয়ালার পোশাক ছিল, কিন্তু অত কম লম্বা কাবলিওয়ালা আমি কখনও দেখিনি।

ফেলুদা এবার পকেট থেকে দল পাকানো কাগজটা খুলে হাত দিয়ে ঘষে সমান করে, চোখের খুব কাছে নিয়ে তার মধ্যে যে লেখাটা ছিল সেটা পড়ে ফেলল। তারপর সেটাকে তিনভাঁজ করে ওর মানিব্যাগের ভিতর নিয়ে নিল লেখাটা যে কী ছিল সেটা আর আমার জিজ্ঞেস করার সাহস হল না।

বাড়ি ফিরে দেখি ধীরুকাকার সঙ্গে শ্রীবাস্তব এসেছেন। শ্রীবাস্তবকে দেখে মনে হল না যে আংটিটা যাওয়াতে তাঁর খুব একটা দুঃখ হয়েছে। তিনি বললেন, উ আংটি ছিল অপয়া। যার কাছে যাবে তারই দুশ্চিন্তা হোবে, বিপদ হোবে, বাড়িতে ডাকু আসবে। আপনি তো লাকি, ধীরুবাবু। ধরুন যদি ডাকু এসে ঝামেলা করত, গোলাগোলি চালাতো?

ধীরুকাকা একটু হেসে বললেন, তা হলে তবু একটা মানে হত। এ যে একেবারে ভাঁওতা দিয়ে বুদ্ধ বানিয়ে জিনিসটা নিয়ে চলে গেল। এটা যেন কিছুতেই হজম করতে পারছি না।

শ্ৰীবাস্তব বললেন, আপনি কেন ভাবছেন ধীরুবারু। আংটি আমার কাছে থাকলেও যেত, আপনার কাছে থাকলেও যেত। আর আপনি যে বলেছিলেন পুলিশে খবর দেবেন—তাও করবেন না। ওতে আপনার বিপদ আরও বেড়ে যাবে। যারা চুরি করল, তারা খেপে গিয়ে ফির আপনাদের উপর হামলা করবে।

ফেলুদা এতক্ষণ একটা সোফায় বসে একটা লাইফ ম্যাগাজিন দেখছিল, এবার সেটাকে বন্ধ করে টেবিলে রেখে দিয়ে হাত দুটোকে সোফার মাথার পিছনে এলিয়ে দিয়ে বলল, মহাবীরবাবু জানেন এ আংটির কথা?

পিয়ারিলালের ছেলে?

হ্যাঁ।

সে তো আমি জানি না ঠিক। মহাবীর ডুন স্কুলে পড়ত, ওখানেই থাকত। তারপর মিলিটারি একাডেমিতে জয়েন করেছিল। তারপর সেটা ছেড়ে দিল, বোম্বাই গিয়ে ফিল্মে অ্যাকটিং শুরু করল।

উনি ফিল্মে নামার ব্যাপারে পিয়ারিলালের মত ছিল?

সে বিষয়ে আমায় কিছু বলেননি পিয়ারিলাল। তবে জানি উনি ছেলেকে খুব ভালবাসতেন।

পিয়ারিলাল মারা যাবার সময় মহাবীর কাছে ছিলেন?

না। বোম্বাই ছিল। খবর পেয়ে এসে গেলো।

ধীরুকাকা বললেন, ফেলুবাবু যে একেবারে পুলিশের মতো জেরা করছ।

বাবা বললেন, ও যে শখের ডিটেকটিভ। ওর ওদিকে বেশ ইয়ে আছে।

শুনে শ্রীবাস্তব খুব অবাক হয়ে ফেলুদার দিকে তাকিয়ে বললেন, বাঃ—ভেরি গুড, ভেরি গুড?

কেবল ধীরুকাকাই যেন একটু ঠাট্টার সুরে বললেন, খোদ ডিটেক্‌টিভের বাড়ি থেকেই মালটা চুরি হল, এইটেই যা আপশোস।

ফেলুদা এ সব কথাবাতায় কোনও মন্তব্য না করে শ্রীবাস্তবকে আরেকটা প্রশ্ন করল, মহাবীরবাবুর ফিল্মে অ্যাকটিং করে ভাল রোজগার হচ্ছে কি?

শ্ৰীবাস্তব বললেন, সেটা ঠিক জানি না। মাত্র দুবছর তো হল?

ওঁর এমনিতে টাকার কোনও অভাব আছে?

নাঃ। কারণ, পিয়ারিলাল ওকেই সম্পত্তি দিয়ে গেছেন। সিনেমাটা ওর শখের ব্যাপার।

হু!—বলে ফেলুদা আবার লাইফটা তুলে নিল।

শ্রীবাস্তব হঠাৎ তাঁর রিস্ট ওয়াচের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই দেখুন, আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমার পেশেন্টের কথাই ভুলে গেছি। আমি চলি।

শ্রীবাস্তবকে তাঁর গাড়িতে পৌঁছে দিতে বাবা আর ধীরুকাকা বাইরে গেলে পর ফেলুদা ম্যাগাজিনটা বন্ধ করে একটা বিরাট হাই তুলে বলল, তোর চাঁদে যেতে ইচ্ছে করে, না মঙ্গল গ্রহে?

আমি বললাম, আমার এখন শুধু একটা জিনিসই ইচ্ছে করছে।

ফেলুদা আমার কথায় কান না দিয়ে বলল, লাইফে চাঁদের সারফেসের ছবি দিয়েছে। দেখে জায়গাটাকে খুব ইন্টারেস্টিং বলে মনে হচ্ছে না। মঙ্গল সম্বন্ধে তবু একটা কৌতুহল হয়।

আমি এবার একেবারে চেয়ার ছেড়ে উঠে বললাম, ফেলুদা আমার কৌতুহল হচ্ছে তোমার ম্যানিব্যাগে যে কাগজটা আছে সেইটি দেখার জন্যে।

ওঃ—ওইটে!

ওটা দেখাবে না বুঝি?

ওটা উর্দুতে লেখা।

তবু দেখি না?

এই দ্যাখ।

ফেলুদা ভাঁজ করা কাগজটা বার করে সেটা দু আঙুলের ফাঁকে ধরে ক্যারামের গুটির মতো করে আমার দিকে ছুড়ে দিল। খুলে দেখি সেটায় লেখা আছে—খুব হুঁশিয়ার?

আমি বললাম, তবে যে বললে উর্দু?

বোকচন্দর—খুব আর হুঁশিয়ার—এই দুটো কথাই যে উর্দু সেটাও বুঝি তোর জানা নেই?

সত্যিই তো! মনে পড়ল একবার বাবা বলেছিলেন—যে-কোনও বাংলা উপন্যাস নিয়ে তার যে-কোনও একটা পাতা খুলে পড়ে দেখো, দেখবে প্রায় অর্ধেক কথা হয় উর্দু, নয় ফারসি, না হয় ইংরাজি—, না হয় পর্তুগিজ, না হয় অন্য কিছু। এ সব কথা বাংলায় এমন চলে গেছে যে, আমরা ভুলে গেছি এগুলো আসলে বাংলা নয়।

আমি লাল অক্ষরে লেখা কথা দুটোর দিকে চেয়ে আছি দেখে প্রায় যেন আমার মনের প্রশ্নটা আন্দাজ করেই ফেলুদা বলল, একটা সাজা পানের ডগা দিয়ে অনেক সময় চুন খয়ের মেশানো লাল রস চুইয়ে পড়ে দেখেছিস? এটা সেই পানের ডগা দিয়ে লাল রস দিয়ে লেখা।

আমি লেখাটা নাকের কাছে আনতেই পানের গন্ধ পেলাম।

কিন্তু কে লিখেছে বলো তো?

জানি না।

লোকটা বাঙালি তো বটেই?

জানি না।

কিন্তু তোমাকে কেন লিখতে যাবে? তুমি তো আর আংটি চুরি করেনি।

ফেলুদা হো হো করে হেসে বলল, হুমকি জিনিসটা কি আর চোরকে দেয় রে বোকা? ওটা দেয় চোরের যে শত্রু তাকে অর্থাৎ ডিটেকটিভকে। তাই এ সব কাজে নামতে হলে ডিটেক্‌টিভের একেবারে প্রাণটি হাতে নিয়ে নামতে হয়।

আমার বুকের ভিতরটা টিপ ঢিপ করে উঠল, আর বুঝতে পারলাম যে গলাটা কেমন জানি শুকিয়ে আসছে। কোনও রকমে ঢোক গিলে বললাম, তা হলে এবার থেকে সত্যিই হুঁশিয়ার হওয়া উচিত।

হুঁশিয়ার হইনি সে কথা তোকে কে বললে?—এই বলে ফেলুদা পকেট থেকে একটা গোল কৌটো বার করে আমার নাকের সামনে ধরল। দেখলাম বাক্সটার ঢাকনায় লেখা রয়েছে—দশংসংস্কারচুর্ণ।

ওটা যে একটা দাঁতের মাজনের নাম সেটা আমি ছেলেবেলা থেকে জানি—কারণ দাদু ওটা ব্যবহার করতেন। তাই আমি একটু অবাক হয়েই বললাম, দাঁতের মাজন দিয়ে কী করে হুঁশিয়ার হবে ফেলুদা।

তোর যেমন বুদ্ধি!—দাঁতের মাজন হতে যাবে কেন?

তবে ওটায় কী আছে?

চোখ দুটো গোল করে গলাটা বাড়িয়ে আর নামিয়ে নিয়ে ফেলুদা বলল, চুর্ণীকৃত ব্ৰহ্মাস্ত্র।

Category: বাদশাহী আংটি (১৯৬৬)
পূর্ববর্তী:
« ০৩. বনবিহারীবাবুর বাড়িতে
পরবর্তী:
০৫. রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑