৫ক. গীতিসংগ্রহ – প্রার্থনা

৫ক. গীতিসংগ্রহ – প্রার্থনা


অকৈতব কৃষ্ণনামে আমার মন মজিল কই
আমার মন মজিল কইগো, আমার মন মজিল কই।
লোকের কাছে করি বড়াই, আমার মত প্রেমিক আর নাই
প্রেমিক জানিলে গোঁসাই, ঐ নাম আমি কত লই।
সর্ব অঙ্গে তিলক করে, নামের মালা গলে পরে
আমার অন্তরে বলে না হরি, তুলসীর তলে পড়ে রই।
ভেবে রাধারমণ বলে, মন রে তুই রইলে ভুলে,
আমি যে নাম নিয়ে আইলাম ভাবে
সেই নাম আমার রইল কই।

য/ ১৩২, সুখ/৫৩ ৷৷

পাঠান্তর : প্রেমিক জানিলে >আমি প্রেমিক জানলে >আমার রইল কই> আমি ছৈলাম কৈ?


লোভা
অজ্ঞান মন, কৃষ্ণ ভক্তিরসে কোন ভুবলে না।।ধু।।
কেন দেখে শুনে কেন মজলে না। চি।
কৃষ্ণভক্তি সুধাময় ব্ৰজবাসী যে জানয়
প্ৰহ্লাদ আদি উদ্ধব নারদ নারদাদি যে ভক্তি বাঞ্ছয়
সুদুর্লভ কৃষ্ণভক্তি তায় কেন মন মজলে না।।১।।
কৃষ্ণ রসময়, ও মন মরিলে জিলে হয়
নিষ্কৈতবের সাধনভজন রিপুর বশে নয়।
ইন্দ্ৰিয়জিতের সাধন ভজন আজু হবে না।।২।।
শ্ৰী রাধারমণ কয় সাক্ষী আছে অগ্নিকুণ্ডে প্ৰহ্লাদ মহাশয়
যার হইয়াছে কৃঞ্চ ভক্তি তার কি আছে ভাবনা।।৩।।

রা/১৬


অজ্ঞান মন, গুরু কি ধন চিনিলায় না—
পাতল স্বভাব গেল না।।
আর রূপ দেখিয়া হইয়াছে পাগল
গুণের পাগল হইলায় না।
ওয়রে, কুল পাথরে সাঁতার দিয়া
সাধন সিদ্ধি কইলায় না।।
আর একটি নদীর দুইটি ধারা
বাইতে পাইলায় না।
ওয়রে, হৃদয় পিঞ্জিরার পাখী
ঘুরিয়া-ঘুরিয়া আইল না।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
নাই হইলে প্ৰাণ বাঁচের না–
ওয়রে, কাজের কাজী না হইলে
ততস্তর মন্তরে ধরের না।।

শ্রী/৩১৫


অজ্ঞান মন রে তুমি রহিয়াছ ভুলিয়া ।।ধু।।
লাভ করিতে আইলায় ভবে মহাজনের ধন লইয়া,
লাভে মূলে সব খোয়াইলায় কামিনীর সঙ্গ পাইয়া।
অমূল্য মানিক, আইলায় সঙ্গেতে লইয়া,
বেভুলে হারাইলায় তারে সংসারে মজিয়া।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে নদীর কুলে বইয়া,
যে ভাইয়ে জানিছে হিসাব যাইব পার হইয়া।

আহো ২, শ্ৰী/২২, হা (৩৪) গো আ (২১) সুধী/১১


অরে পাষাণ মন রে জনমে হরির নাম ভেইল না।।ধু।।
ঐ হারির নাম লইলেরে শমনের ভয় আর রবে না।।চি৷।
যখন ছিলে মার উদরে মহামায়ায় দামোদরে
মহামায়ার মায়ায় পড়ে গুরু কি ধন চিনলায় না।।১।।
মহামায়ার ছলে কেন রে মন ভুইলে রলে
এ দেহা প্ৰাণান্ত হলে ঘৃণায় কেহ ছবে না।।২।।
ধন যত সব রবে পড়ি সিন্দুকে সব রবে পড়ি
মইলে নিবে কড়ার কড়ি আম্রকাষ্ঠ দুইচার খানা।।৩।।
তীক্ষ্ণ আনল দিবে জুইলে তার মাঝে পালাইয়ে
যতসব মায়া চাইলে সম্পর্ক কিছুই রবে না।।৪।।
যে নামে কাল শঙ্কা যাবে তারে কোন ভেইলাছারে
মিছে পরাবাসে করতে আছ কালব্যাপনা।।৫।।
কালগত যবে হবে দারাসুত কোথায় রবে
ভাইবে রাধারমণ বলে সঙ্গের সঙ্গী কোয় হবে না।

রা/৯৬


আমার মন রে এবার ভাবে কেন না আসিলে
গুরুর পদে রতি না হইলো মতি তুমি ধইরাছ কুরীতি মনরো।
আসিয়া মনুষ্য কুলে কেন মনে রইলায় ভুইলে
তুমি ভাবেতে আসিয়া গুরু না ভজিয়া তুমি পথে মজিলায়।।
গুরুর চরম অমূল্যধন চিনলায় না রে অজ্ঞান মন
গুরু কেমন ধন করলায় না’রে যতন তুমি হেলায় হারাইলায় রতন।।
তুমি রইলায় ঘুমের ঘোরে চোর হামাইল তোমার ঘরে
তোমার শ্ৰীপুত্ৰধান কেহনিয় আপন কেবল নিশার স্বপন।।
দেখিয়া মাকাল ফলে কেন মন রইলায় ভূইলে
ভাইবে রাধারমণ করে নিবেদন তোমরা থাইক সচেতন।।

সুখ/৫০


আমার মরণকালে কৰ্ণে শুনাইও কৃষ্ণনাম ললিতে গো
কৰ্ণে শুনাইও কৃষ্ণ নাম।।ধু।।
হাতে বাঁশি মাথে চুড়া কটি তটে পীত ধড়া–
মনোচোরা হয় শ্যামরায়।
হায় কৃষ্ণ (২) বলে প্ৰাণ যায় আমার দেহ ছেড়ে
আমার মরণকালে দেখাইও শ্যাম।
যমুনার কিনারে নিয়ে গঙ্গ জল মৃত্তিকা দিয়ে
আমার অঙ্গে লিখিও কৃষ্ণনাম।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আমি পরকালে পাই যেন কৃষ্ণনাম।

গো আ ২০৮ (১৬৯)


আমারে করগো উদ্ধার, আমি অধম দুরাচার।
কত পাপের ভরা লাইছি। মাথে, হইয়াছি দ্বিগুণ ভার।।
সোনা থইয়ে, দস্তা লইয়ে, করিতেছি রঙ্গের কারবার।
কত ইরামন মাণিক্য থৈয়া, রাংচায় মন মজিল আমার।
ভাইবে রাধারমণ বলে, আমি ভুলিয়ে রইলাম মায়াজালে।
আমার মত পাপী বুঝি ত্ৰিজগতে নাই গো আর।।

য/ ১৩৭


আমি কেন আইলাম গো বাজারের ভাও না জাইনে।
কিসের লাগি ভাবে গো আইলাম
কি করতে কি করিলাম
আমি সাধনের ধন অসাধনে হারা হইলাম
পুঞ্জিপাটা যতই গো ছিল সকলি হরিয়া নিল গো
আমি না জাইনে ডাকাইতের ঘাটে নাও বান্ধিলাম
গো ভাইবে রাধারমণ বলে আমার মানব জীবন যায় বিফলে গো
আমি না জাইনে রাংচার দরে সোনা দিলাম গো।

রা/১০৮

১০
আমি জন্মিয়া কেন মাইলাম না গুরুর চরণ সাধন হইল না।।ধু।।
জননী উদরে যখন উলটা পদে ছিলায় রে মন
সে কথাটি মনে পড়ে না;
তখন বলে আইল করতে সাধন আজি শমন বান্ধব না?
যখন আমায় ভাবে দিলে কি শিখিলে মোর কপালে
জন্মাবধি লক্ষ্য গেল না;
ভাইবে রাধারমণ বলে জন্ম গেল বিফলে
গুরুভাবে ভক্তি কইলাম না।

গো আ (৬)

১১
আমি ডাকছি কাতরে
উদয় হাওরে দীনবন্ধু হৃদয় মন্দিরে
তোমার ভক্তের সঙ্গে প্রেম তরঙ্গে
তোমার পানেরই ভরা পাইয়া না পাই কুল কিনারা
ভবনদীর বিষম পাড়ি নাই। তরণী নাই কান্ডারী
ভাই রে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
ভাই রে নিধিরামের এ বাসনা রইল শ্যামের চরণ তলে।

যা / ৯

১২
আমি তোমায় ডাকি গুরু হে গুরু
ডাক দিলে ডাক শুনো না।
সাধন ভজন কিছুই জানি না।
গুরু গুরু আমি তোমার অধম ভক্ত
লোহা হতে অধিক শক্ত
আগুন দিলে লোহা গলে
গুরু আমার মন তো গলে না।
ভাই রে রাধারমণ বলে ভাবে আইলাম অকারণে
আমার মনের এই বাসনা, গুরু রাঙাচরণ ছাড়ব না।

রা/১৩৩

১৩
আমি পাইয়া কুমতিসঙ্গ মনমতিসঙ্গ সদায় পুড়ে
ও তারে করলে বারণ হয় না সারণ
সদায় থাকে রাগের ঘরে
আর গেল না মন কামের বিকার
হইল না রে ধানের সঞ্চার
আমি রিপু বশে মত্ত হইয়ে পাইড়েছি চৌরাশি ফেরে।
সুমতির সঙ্গ হইলাম। ব্ৰজগোপী ভাবে মন মজল না।
আমি পঞ্চারসে রসিক পাইয়ে তার সঙ্গে প্ৰেম হইল না রে।
খাটলাম রে ভূতের বেগার
কামিনী ডাকাতে রে মন লুটিল ভাণ্ডার।
ও রাধারমণ বলে অবুঝ মনরো আমার ভ্ৰান্তিদোষ গেলনা রে।

গো আ (৬)

১৪
আরে ও পাগোলার মন রে,
আইজ আনন্দে হরির গুণ গাও ॥
আয় ঊর্ধ্ববাহু, হেট মাথে,
যখন ছিলায় মাতৃ-গৰ্ভে–
এখন ভূমিতে পড়িয়া মাটি খাও।।
আর নয়ন দুইটি রত্ন ভরা,
তোমার চরণ দুইটি রথের ঘোড়া;
তোমার হস্ত দুইটি গুরুর সেবা দাও।।
ভাইবে রাধারমণ বলে–মনরে তুই রইলে ভুইলে
একবার ‘হরি’ বইলে ব্ৰজে চইলে যাও।

শ্রী/৩১৬

১৫
আহা, চুরের ঘাটে নাও লাগাইয়া ভাবিছ কি রে মন।
ঐ নাও যতনে অতি গোপন সাধ রে অমূল্যধন।
হীরা মন মাণিক্য দিয়া দিলাম ভোরা চালাইয়া
গোনাবাছা কমতি হইলে কি দিয়ে বুঝাইমু মহাজন।
আর দেখলাম দেশের এই দুর্দশা ঘরের ঘরে চোরের বাসা
এগো সে চুরায় কি যাদু জানে ঘুমের মানুষ করছে অচেতন।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
এগো গোনাবাছা কমতি হইলে কি দিয়ে বুঝাইমু মহাজন।

শ্যা / ৩

১৬
ইলিশামাছ কি বিলে তাহকে কাঠাল কি কিলাইলে পাকে
মধু কি হয় বলার চাকে মধু থাকে মধুর চাকে।
বিন্দু করি জমায় পোকে মধু কি হয় বলার চাকে
আছে একাল চাকে।
ভাইবে রাধারমণ বলে *বিপিন রে তুই কি কাজ কৈলে
ধান তুই বাইন করিলে শাইল ক্ষেতে আমন দিলে
আর কি বীচের নাগাল পাবে।

গো অ (১৬১),শ্ৰী ১৬১
* শ্ৰী /১৬১-তে গানটি বিপিনের নামে রয়েছে একটি বড়ো গানের শেষাংশ রূপে। বিপিনচন্দ্র রাধারমণের একমাত্র দীর্ঘজীবী পুত্ৰ।

১৭
একবার উচ্চৈস্বরে হরি বোল মাধ্যই রে
এমন দিন আর হবে না
শুনছি কত শুনার শুনা মানব জীবন আর হবে না
নব নব জনম পেয়ে রহিয়াছ ভুলিয়া।
নামে শিলা জলে ভাসে ভবব্যাধির ভয় নিকাশে
প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ডে প্ৰাণে মরল না।।
আসিয়া ভবের বাজারে লোহা কিনলাম সোনার দরে
শ্ৰী রাধারমণের আশা পূর্ণ হইল না।

রা/১২৯

১৮
একি বিপদ হইল গো হরিনামটি লাইবার আমার সময় নাই।
ঘোর বিপদে পড়িয়া ডাকি হরি তোমার দয়া নাই।।
ভাই বন্ধু যত ছিল সময় দেখিয়া পলাইল
চতুর্দিকে সব বিদেশী আপন দেশের কেহ নাই।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
যখন যমের চরে বাধিয়া নিব তখন দিবে। কার দোহাই।।

নৃ/২

১৯
এবার হইল রে বন্ধু তোর মনে যা ছিল
তোমার আমার যত কথা–সবই বৃথা হল।।ধু।।
তুমি রাজা রাজ্য তোমার তুমি অধিকারী
তুমি ধনী তুমি মানী আমি হই ভিখারী।
আগম নিগম শাস্ত্ৰ বেদে লীলা খেলা–
মোরে দিয়া সাজাইলায় পঞ্চভূতের মেলা।
তোমার ইচ্ছা প্ৰতিবাদী কেবা বলো হইলো
তোমার লাগি দীনহীনের কলঙ্ক রহিলো।
ভাবিয়া চিন্তিয়া আমার অঙ্গ হইল কালো
এ ভব সংসার হইতে মরণ ছিলো ভালো।
ভাবিয়া শ্ৰীরাধারমণ সদায় আকুলিত মন
শেষ কালের উপায় কি সই বলো।

গো অ ২১ (২০) / যা / ১৩৮

২০
এ মানুষে সেই মানুষ আছে ভেবে দেখো মন
হৃদেরে চক্ষু খুইলে করো তারে আকিঞ্চন।।ধু।।
চিনিয়া গুরুর পদ করা রে সেবন
তাহা হইলে খুলিবে চক্ষু দেখবে রূপ জগৎ মোহন।
হেলায় হেলায় কাল কাটাইলে না হবে দরশন
শ্ৰী রাধারমণের আশা — রইবে অপূরণ।

গো, অ ১৮ (১৭)

২১
ঐ নাম লও জীব মুখে রে রাধা গোবিন্দ নাম বল।।ধু।।
রাধাগোবিন্দ নাম জয় রাধা শ্ৰী রাধার নাম লইও রে।।চি।।
জগাই মাধ্যই তারা দুভাই মহাপাপী ছিল
কৃষ্ণনামে মর্ম জাইনে বৈষ্ণব হইল রে।।১।।
হস্তে পদে বেঁধে প্ৰহাদে অগ্নিতে ফেলিল
কৃষ্ণভক্ত জাইনে ব্ৰহ্মায় টান দিয়া কোলে লইল রে।।২।।
নারদ আমি দিবানিশি বীণা-তে নাম নিল
কাশী ছেড়ে ভুলানাথ শ্মশানবাসী হইল রে।।৩।।
ভাইবে রাধারমণ বলে দিন বিফলে গেল
মনিষ্য দুর্লভ জন্ম আর নি হবে বল।।।৪।।

রা/১১৯ শ্রীশ/১১

পাঠান্তর : ঐ নাম লও জীব মুখেরে > বল, বদন ভরিয়ে। কৃষ্ণভক্ত > হরিভক্ত।
ভাইবে…গেল > গোসাঁই রাধারমণ বলে শুন রে অজ্ঞান মন।

২২
ও আমি সদায় থাকি রিপুর মাঝে —
মন ভালো নায়, বলুম করে।।
ইমান থাকলে আল্লা মিলে–
কাম করলে পয়সা মিলে।
এগো, যা কিছু কামাইলাম ধন–
সব খোয়াইলাম ঘাটের কুলে।।
ভালো মানুষের আত ধোওয়াইলে
একদিন কাম আয় নিদান কালে।
এগো, কমিন্দর লগে দুস্তি কইলে–
মুখ পোড়া যায় বিনা গুইনে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে,
প্ৰেম করো না ছাইলার সনে।
এগো, ছাইলার আতে কথা দিলে
মাও বলিয়া আসব কোলে।।

শ্রী/৪৪

২৩
ও গুরুর পদে মনপ্ৰাণ দিলাম নারে
কৰ্ণ দিলাম নাম শ্রবণে চিত্ত দিলাম নারে।।
মাতৃগর্ভে যে যন্ত্রণা মন রে করলায় গুরু আরাধনা
ভূমিতে পড়িয়া মন রে সবই পাসর না।।
শিশুকালে মায়ের কোলে বাল্যকাল গেল হেলে
যৌবনকালে গেল কামিনীর কাম রসে।।
ভাইরে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
চরণ পাব পাব বলিয়া দিন তো গেল গইয়া।

নৃ/৭

২৪
ওগো দরদী নাই এ সংসারে
আমি এক হইয়া আসিলাম এ ভব সংসারে।।
আত্মীয় বন্ধু যতই ছিল সবা রহিল দূরে
সকলে মন্ত্রণা করে ডুবাইতে আমারে।।
দেশবেশ যতই ছিল সবে ভিন্ন বাসে
এমন দরদী নাই, থাকি কার আশে।।
রাধারমণ বাউল বলে ঝুরে দুই নয়নে
যথায় বন্ধু তথায় যাইমু ছাই দিয়া কুল মানে।।

আহে /৫ (২) শ্ৰী ১২৯ গো আ (৩০) হা (৩৩)

পাঠান্তর : শ্ৰী : ওগো > আমার; এ সংসারে > জগতে। হইয়া সংসারে > ভাবি এ সংসারে; দেশবেশ > দেশখেল গো আঃ–আমি একা আসিলাম > একা আমি ভাসিলাম দেশবেশ > দেশ খেশ হা–আসিলাম … সংসারে > ভাসিলাম এ ভবাসাগরে

২৫
ও মন জ্বালাও গুরু জ্ঞানের বাতি
অজ্ঞানকে দেও আহুতি, ভব বন্ধন হবে মুক্তি
করা ভক্তি সাধনা
ও মন! শ্ৰী রাধারমণের আশা, শ্ৰী গুরুচরণ ভরসা
গুরু কৃষ্ণরূপে রে মন তাইকি জানি না।।

য/১৪২

২৬
ও মন থাকো রে সাবধানে রং মহল লুট করি নেয়
রিপু ছয় জনে।।ধু।।
ভক্তির কপাট দিয়ে তায় মূল রাখো গোপনে
ঘর চোরেতে যুক্তি করে বেড়ায় ধনের সন্ধানে।
সাবধানে রাখিবে ধন কেও যেন না জানে।
শক্ৰ বিনে মিত্ৰ নাই জানিবে আপনে।
ভিতরেতে ছয়জন শত্রু বাইরে শক্ৰ অগণা
তিরি পুত্র কেউ তো নয়রে তোমার আপনা।
ভাইবে রাধারমণ বলে তুমি আছ কি মনে
মূল নাশিয়া বিনাশিব ঘরের শক্ৰ ছয়জনে।

গো আ ১১৭ (২৪৯)

২৭
ওরে ও রসিক সুজন নাইয়া ভবাসাগর পাড়ি দেও রে
বেলা যায় গইয়া।।ধু।।
বেলা গেলে বিপদ হবে পন্থ আন্ধারিয়া–
আগে ভাগে পাড়ি ধরো মাঝি মাল্লা বুঝাইয়া।
আসিতে আসিয়াছিলে বোপারের মূল লইয়া
লোকসান গিয়া কত রাইছে দেখাচ্ছে নি তলাইয়া
সাবধানে চালাইও তাঁরী বাদাম তুলিয়া–
কাম কুম্ভীর পথে মাঝে রইছে ওৎ পাতিয়া
সময় চিনিয়া পাড়ি ধরিয়া যাইবে পার হইয়া
অসময়ে পাড়ি ধরলে মরিবে ডুবিয়া
ছয় জনে ডাকাতি করি নিবে মালা লুটিয়া
সে সময় দিশা পাবে না ভাবিয়া চিন্তিয়া।
সময় থাকতে চলো মন ভাবিয়া চিন্তিয়া।
না ভাবিলে মারা যাবে বিপাকে ঠেকিয়া
সহায়কারী নাহি পাবে সুরসার করিয়া।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে গুরু দিশা হইয়া
আমারে তরাইয়া লইও অধম জানিয়া।

গো আ ২৮ (৩৩)

২৮
ওরে কঠিন পাষাণ মন ডাকার মত ডাকলেও পরে
পাইবে তার দরশন।।ধু।।
কাম কামিনী মায়ারসে রইলে তুমি হইয়া মগন
আসছ ভাবে যাইতে হবে মরণকে করা স্মরণ।
কামের বশে রঙ্গে রসে দিন কাটে অলসের বসে
রিপুর বশে অবশেষে হারাবে তোমার জীবন।
নিরঞ্জন নিরাকারে হ্যািদ মন্দির করা সাধন
সাধনায় সিদ্ধি হইলে পাইবে তার দরশন।
সাধন করা সহজ নয়। সাধন করা মরণ পণ
সাধনায় সিদ্ধি চাইলে সারা করো গুরুর চরণ।
কহে হীন রাধারমণ সাধন কর নিরঞ্জন
সাধনায় সিদ্ধি হলে সফল মানব জীবন।

গো আ ৪৫ (৫৪)

২৯
ওরে মন কুপথে না যাইও
ঘরে বসি হরিনাম নিরবধি লইও।
অরণ্য জঙ্গলার মাঝে বানাইয়াছি ঘর
ভাই নাই বান্ধব নাই কে লাইব খবর।
অকুল সমুদ্রমাঝে ভাসিয়া ফিরে পেনা
কতদিনে দয়াল গুরু লওয়াইবায় কিনারা।
ভাইবে রাধারমণ বলে নদীর কুলে বইয়া
পার হইমু পার হইমু বাইলে দিন তা যায় গইয়া।

চি/১। তী/১৩

পাঠান্তর : ওরে মন… লাইও < সুচেতনে মন একবার হরি বলরে।

৩০
কংসের পিরিতে দিন গেলো সজনী লো
কংসের পিরিতে দিন গেলো।।ধু।।
গুরু ধরে নাম জপো নাম শুনতে মধু
নামের মহিমা আছে ভরিয়া সয়ালো।
সয়ালে পর চার আছে সেই নাম ভালো
লইতে লইতে নাম অন্ধকার হবে আলো।
নামের গুণে ত্ৰাণ পাবে সংকটের কালো
দয়াল করতার নাম সব হইতে ভালো।
ভাইবে রাধারমণ বলে নাম জপা ভালো
শুদ্ধ মনে জাপালে নাম আঁধার হবে আলো।!

গো আ ১০৫ (১৩১)

৩১
কলির জীবনে ভাবনা কিরে মন
হরে কৃষ্ণ নাম যার হৃদয়ে গাথা।
ছয় রিপুর সনে যোগ মিলাইয়ে
দয়াল গুরুর চরণে মুড়াইও মাথা।
আশাবৃক্ষ রোপণ কৈরে বৃক্ষ প্ৰেমফল ধরিবে বৈলে
বৃক্ষে প্ৰেমফল ধরিত যদি দিনে দিনে বাড়িতো তরু গো লতা
ভাইবে রাধারমণ বলে যে ধইরাছে গুরুর পদে।
যে ধইরাছে গুরুর পদে
তার জীওন মরণ সমান গো কথা।

সুখ/৫৪

৩২
কাঙালি জানিয়া পার কর
দয়ালগুরু, জগতে উদ্ধারো।
আকাশেতে থাকো গুরু পাতালেতে ধরো
আমি বুঝিতে না পারি তোমার মহিমা অপারো।
সাপ হইয়া দংশ গুরু উঝা হইয়া ঝাড়ো।
রমণী হইয়া গুরু পুরুষের মন হরো
ভাইবে রাধারমণ বলে অসার সংসারো
তুমি জগতে তরাইলায় গুরু আমি রইলাম পারো।

মা গো-১, গো আ (৭০), য ১৭৫

পাঠান্তর : গো আ–পাতালেতে ধরে > পাতালেতে খেলো; রমণী. পুরুষের > পুরুষ হইয়া গুরু রমণীর; তুমি … রইলাম পারো-> সকলেরে তরাইলায় গুরু আমারে পার করো।

৩৩
কামিনীর কাম সাগরে মন তুমি নিমগন
কি জবাব দিবায় রে তুমি সামনে আসিলে শমন।।ধু।।
কখন সাধু কখন চোর কখন ভূতের চেলা
দিন যামিনী ভূতের বেগার মন করে উতলা।
কখন পানি কখন আগুন কাম সাগরের মেলা
বেদবেদান্তে আদেশ মানা সদায় কর অবহেলা।
যে জন সুজন হয় নাই তার ভাবনা
কুজনের কুপয়া মিশে ঘটে শেষে লাঞ্ছনা।
কুকাজে দিবস গত সূকাজে নাই আনাগোনা
দিবা শেষে কি গতিরে চিন্তিয়া কুলতো পাই না।
দিন গেলে ফিরে নারে–দিনে দিনে জীবন শেষ
কুকামেতে দিন গেলো পাপ বিনে নাই পুণ্যের লেশ
পাপের ভরা ভারিয়া নিলে ঠেকিবে রে শেষ কালে
মূল তোমার নাশ হইবে মহাজনের হিসাবকালে
ভাইবে রাধারমণ বলে দিন গেলো হেলায়
অন্তিম কালে দয়া বিনা নাই দেখিরে কোন উপায়।

গো আ/ ৩২ (৩৭)

৩৪
কার পানে চাইয়া রে মনা
কার পানে চাইয়া
সঞ্ঝাকালে ঘোর জঙ্গলে কান্দরে
রে বিয়াকুল হইয়া।
না লইলায় গুরুদীক্ষা, আগে
করলায় বিয়া
এমন সুন্দর নারী কার ঠাইন
বড় বাড়ী বড় ঘর ভাই বড় কইলায়
অ্যাশা
সেই আশা ভাইঙ্গা নিব নদীর
কুলে বাসা
রাধারমণ বলে নদীর
কুলে বইয়া
পার হইমু পার হইমু করি দিন ত
যায় মোর গাইয়া।

য/ ১.৪৬, সুখ / ৪৯

৩৫
কালারে মুই তোরে চিনলাম না
তুই যে অনাথের বন্ধু তার অই যত কারখানা।।ধু।।“
তুই কালা অনাথের বন্ধু পার কর ভব সিন্ধু
না বুঝিলাম এক বিন্দু, তোর যত ছলনা।
তুই কালায় করিলে ভক্তি পাপী তাপী পায় মুক্তি
তোর সনে করিলে চুক্তি শেষ কালের ভয় থাকে না
ভাবিয়া রাধারমণ বলে কোন পথে তোরে মিলে
কান্দি জনম গায়াইলে পাই না তোর ঠিকানা।

গো আ /১৬৫ (২৩৯)

৩৬
কৃষ্ণ নাম ব্ৰহ্মা সনাতন দিবা নিশি করা রে ভাবন।।ধু।।
এক অক্ষরী নামের তরী দুই অক্ষরী জিনিষ ভরি
নামের নৌকা করবে সাজন ডাকাইতেরই ভয় আছেরে মন
লুইটে নিবো সবই ধন।
নিতাই চাঁদের হাটে যাইয়ে প্ৰেমধন বোঝাই করিয়ে
মালের কোঠায় চাপি দেও রে মন
সাবধানে চালাইও তরী মারা না যাইবায় কখন।
রমণ গোসাইরা ঐ বাসনা শ্যাম জ্বালায় প্ৰাণ বাঁচে না।
প্ৰেম জ্বালায় জুলিয়াছে অন্তর
হরি বলে ব্রজে চল যাইবায় বৃন্দাবন।

গো আ ৫৭ (৬৭)

৩৭
কৃষ্ণ নামে আমার মন কেন মজেনা
স্বভাব দোষ আর গেল না। ধু ।
নিষেধ বাধা নাহি মানে প্রবল হইল। ছয়জনা। চি।
ছয় দিকে ছয় জনায় টানে নিষেধ মানে না।
আমায় অকুলে ডুবাইয়ে মোরল কুলকিনারা পাইলাম না।।১।।
হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ করা উপাসনা।
হরেকৃষ্ণ নাম লইলে ভবা যন্ত্রণা রবে না।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন রে। আমার মনা
গুরুর পদে না হইল রতি রইলাম কেন, মরলাম না।। ৩।।

রা/১৩৬, গো আ (১২৭)

পাঠান্তর : নিষেধ বাধা…ছয় জনা > অকুলে ডুবাইয়া মোরল কুল কিনারা পাইলাম না; ছয় জনায় টানে > ছয়জনে; আমায় অকুলে … পাইলাম না। গুরুর পদে… মরলাম না > গুরুপদে না হইল ভক্তি রইলাম কেনে মাইলাম না।

৩৮
কোন ভাবে আইলামরে নিতাই
চৈতন্যের হাটে মাইরা খাইলাম রে।
রঙ্গে আইলাম রঙ্গে গেলাম
রঙ্গে ভুইলা রইলাম।
রঙ্গে রঙ্গে মহাজনের
তবিল ভাঙ্গিয়া খাইলাম।
উল্টা আইলাম উল্টা গেলাম
উল্টা কলে রইলাম।
উল্টা কলে চাবি দিয়া
তালা না খুলিলাম।
এক সমুদ্রের তিনটি ধারা
তারে না চিনিলাম।
গঙ্গার জল তাজ্য করে
কু-জল খাইয়া মাইলাম।
গোসাঁই রাধারমণ বলে এইবার এইবার
দুর্লভ মনুষ্য জনম না হইব আর।

য/৩৪

৩৯

গুরু আমার উপায় বল না, জন্মাবধি কৰ্মপোড়া আমি একজনা
(আমার) দুঃখে দুঃখে জনম গেল, সুখ বুঝি আর দিলায় না।
শিশুকালে মৈরা গেল মা, গৰ্ভে থইয়া পিতা মৈল চক্ষে দেখলাম না।
গুরু কে করিবে লালন পালন কে করিবে তুলনা।।
গিয়াছিলাম ভবের বাজারে ছয় চুরায় যুক্তি কৈরে বানল আমারে
চোরায় চুরি করে খালাস পাইল, আমায় দিল জেলখানা।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
গুরুর চরণ পাব প্ৰাণ জুড়াব এই আশা মোর পুরল না।

সুখ/৪২, গো আ (১৪)

পাঠান্তর : গর্ভে থাইয়া > পেটে থাকতে; বানল আমারে > বেধে নিল মোরে; চোরায় চুরি…জেলখানা > তারা যুক্তি করে বেধে নিয়ে দিল আমায় জেলখানা, গুরুর চরণ … পুরল না > গুরুর চরণ পাইলে প্ৰাণ জুড়ায় সেদিন আমার হইল না।

৪০
গুরু একবার ফিরি চাও অধম জানিয়া গুরু সাধন শিখাও
সাধন শিখিবার লাগি ধরেছি তোমার পাও
অন্ধকারে আছি গুরু আলোক দেখাও
অন্ধকারে থাকি আমি ধরছি তোমার পাও
সংকট বিপদে আছি আমারে তরাও
ভাবিয়া রাধারমণ বলে গুরু ফিরিয়া চাও
ডুবছে আমার সাধন তরী নিজগুণে ভাসাও

গো আ/৪১ (৪৪)

৪১
গুরু ও দয়ালগুরু আমি ঘোর অন্ধকার দেখি।
গুরুর বাড়ি ফুল বাগিচা শিষ্যের বাড়ি কলি
গুরুয়ে দিলা মহামন্ত্র যুগে যুগে তরি।
গুরু যাইন নাওয়ে নাওয়ে শিষ্য যাইন তড়ে
খেওয়ার কড়ি নাই মোর সঙ্গে জামিন দিতাম কারে।
ভাইবে রাধারমণ বলে নদীর কুলে বইয়া
পারৈমু পারৈমু করি দিনত গেল গইয়া।

গো আ ১২, ঐ/২৪

পাঠান্তর : গো আ ২৪ — গুরু ও দয়ালু গুরু > ভণিতার পূর্বে যোগ করতে হবে অকুল সমুদ্র মাঝে শুক পাখির বাসা। ঝলকে উড়ে ঝলকে পড়ে আজব তামেশা।

৪২
গুরু কও মোরে সার শিক্ষা দেও মন্ত্র মোরে
যে মন্ত্রে ভব পার।
এই সেই বলি মোরে ঘুরাইওনা আর
দীক্ষা নিছি শিক্ষা দেও যেই মন্ত্র সার
দক্ষ গুরু জানিয়াই ধরিয়াছি পদ সার
অপার ভাব পারাবার।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে গুরু পরম সার
কৃপা করি পুরাও গুরু বাসনা আমার

গো আ/৩৯ (৪৩)

৪৩
গুরু তুমি কারবারের রাজা ষোলজনে মারে মজা
বসে বসে হিসাব কষি বইলাম শুধু ভূতের বোঝা।
দোকানে নাই মাল আমদানী বসে শুধু হিসাব টানি
নিজে করি বিকি কিনি নিকাশে দেখি ঋণের বোঝা।
কর্মচারী যে ৬ ৪ জানা তারা কেই কথা শোনে না
মেনেজার অতিশয় সোজা তোমার তহবিল তুমি নেও
নইলে বনধ করা দরজা–।
বিনয় করে কৈ চরণে যা লয় কর তোমার মনে
উচিত দিও মোরে সাজা নইলে খালাস কর–
রাধারমণ কয় সোজা।

গো আ/৪৬, হা (৩৮)

পাঠান্তর : কর্মচারী … তুমি নেও > কর্মচারী যে ছয়জনা তারা কেউ কথা শোনে না / ম্যানেজারী অতি নয়। সোজা। তোমার তহবিল তুমি সমঝো; বিনয় …সোজা > বিনয় করে কই চরণে–যা লয় তোমার মনে উচিত দেও মোরে সাজা/ নইলে তুমি খালাস কর রমণ তোমার ভিটার প্রজা।

৪৪
গুরুধন ভবাৰ্ণবে আমার জাগা কৈ—
নিজের জ্বালায় প্ৰাণ বাঁচেনা পরার জ্বালা কেমনে সই।।ধু।।
সাধ করে আনিলাম দুধ হইয়া গেলো দই
হাত বাড়াইয়া মাখন তুলে আমি মাথে লই।
মথুরার হাটে গেলু করিতে বেপার
শ্ৰী রাধারমণের কপাল মন্দ লাভ হইল না খেতি বই।

গো আ / (৩)

৪৫
গুরু না মানিলাম গো সখী আমি কি দিয়া
করিতাম গৈা বেপার।
বেপারিয়ে বেপার করে, গুরু আমার কান্দা মাত্র
হইল সার।।ধুয়া।।
ভাঙ্গা নায়ে জাঙ্গা দিয়ে মস্তুল কইলাম সার,
রাধার নামে বাদাম দিয়ে রে মন যাইতাম নিতাইর প্রেমবাজার
প্রেম বাজারের খরিদ বিক্রী কেবল হরিমান সার,
রমণের নাই টাকা কড়ি রে মন নাইসে রে ধনের ভাণ্ডার।

আহো/৩১, হা/(১৫), গো আ/(২৩), তী /১১ (অসম্পূর্ণ)

পাঠান্তর : গো আ/২৩ : নিতাইর প্ৰেমবাজারের পর যোগ হবে–প্ৰেমবাজারের খরিদ বিক্রি কেবল হরিনাম সার / রাধা নামে বাদাম দিয়া যাইতাম প্রোমবাজার ।

৪৬
গুরু নির্ধনের ধন অধম জানি শিক্ষা দেও
পিরিতি পরম রতন
পিরিতি শিখিলে মিলে পন্থের চলন
সেই পথে চলিলে মিলে প্রিয়া দরশন
প্রিয়া দরশন লাগি আকুলিত মন
তব পদাশ্রয়ী আমি শিখিতে প্ৰেম সাধন
প্ৰেম সাধন কঠিন বটে বলহেঁ যত সুধীজন
সাধনে সাফল্য হলে স-সার জীবন
পিরিতের অভিলাষে আশ্রিত তোমার চরণ
শিক্ষা দিয়া দীক্ষা দিয়া তারাও শ্ৰীরাধারমণ।

গো আ / ৪০ (৪৪)

৪৭
গুরুপদ পদরাবৃন্দে মনভুজঙ্গ মজনারে
সুধামাখা গুরু নামে ভবক্ষুধা যাবে দূরে।।ধু।।
জয়গুরু জয়গুরু বাইলে ডাকো তারে প্রাণ খুইলে
গুরু বিনে কেহ নাইরে ভবাৰ্ণাবে যে নিস্তারে।
ব্ৰহ্মপদ তুচ্ছ করে দয়াল গুরু এনেছে যে
জীবের তরে কেন্দে ফিরে
প্রেম বিলায় যারে তারে।
মজ সবে গুরু নামে তারি কাজে তারি নামে
তারি কাজে তারি প্রেমে তারি পদে শরণা নিয়ে
প্রেমানন্দে ভাস না রে।
কেন ভুলে আছে তারে সেত পাছে পাছে ফিরে
হেন ধান রাখি দুরে কি সুখে হায় মাজেছে রে।
রাধারমণ চিন্তা করে মন গুরু, ভজনা করে
শেষ কালে ঠেকিবে যে রে
তখন উপায় কি হবে রে।

গো আ/ ১৪ (১৩)

৪৮
গুরুভক্তি নাই যার অন্তরে
মহাপাপী দুরাচার সে নরাধম পশুর সমান রে।
মানুষ হইলে কি হয় মানুষের কাজ যদি না করে
আহার নিদ্ৰা মৈথুনাদি পশুরে দিয়াছেন বিধি
তারা সব নিরবধি বিধানে সব কাৰ্য করে।
শুধু জ্ঞানের জন্য মানুষ জন্ম নিলাম সংসারে।
ভাইবে রাধারমণ কয় শাস্ত্ৰ বিদ্যা জ্ঞানের বিষয়
যদি জ্ঞান না হয় মনে সেই জ্ঞানের ফল কিছু নাইরে।

রা/১০৫

৪৯
গুরু, ভজন হইল না রে অজ্ঞান মন ভাবে আসা যাওয়া হইল।
গুরুতে হয় নিষ্ঠারিতি বৈষ্ণবেতে না হয় মতি।
মন রে কি হবে আমার গতি রে
আমার আশায় আশায় দিন রে গেল।
শ্ৰীচৈতন্যকৃপা করে দিলেন একখানা নামের তরী রে মন
তরী বাইতে পারে রসিক জনায় রে মন মন রে
রমণের তরী শুকনায় রৈল।
কৰ্ণস্থানে মন্ত্র দিয়ে গুরু বসিয়াছেন নিত্য প্রেমের ধামে রে
ঐ রূপ নেহার করে সাধু জনায় রে মন
আমার ভাগ্যে নাই বা হৈল।

সুখ /৪০

৫০
গুরুর চরণ অমূল্যধন সারা করিবে কবে
বন্ধু কে আর ভবে।
ছাড়া মন ভবের আশা এ সবই রং তামাশা
ভাঙিবে সুখের বাসা শূন্যে পড়ে রবে।
টাকা পয়সা দালান কোটা সঙ্গেতে না যাবে।
ধুলায় যাবে গড়াগড়ি আশা না পুরিবে।
ছাড় মন খুঁটিনাটি এসব ময়লা ঘাঁটি
গুরুর চরণ করা সাধন হিংসা নিন্দা যাবে
অনিত্যকে নিত্য দেহে যখন দেখিবে
গুরু শুদ্ধ মতি তখনে জানিবে।
ভাইবে রাধারমণ বলে শ্ৰীগুরুর পদ কমলে
ইহজন্ম গেলে বিফলে কেন আইলে ভবে।
আমি বহু জন্মের অপরাধী দয়নি করিবে।

য/৩৬

৫১
গুরু শ্ৰী কৃষ্ণ চৈতন্য দয়াময়–
সঙ্কীর্তনের শিরোমণি পতিত পাবন সবে কয়।
ঘোর কলির জীব তরাইতে যদি নদীয়ায় হইল উদয়
আমি সাধনহীনকে না তারাইলে দয়াময় নাম কিসে রয়।
নিজ কৃপা গুণে যদি দেহ মোরে পদাশ্ৰয়
আমায় পাপী জাইনে ঘৃণা করলে নামেতে কলঙ্ক রয়।
নাহি মম শ্রদ্ধা ভক্তি শ্ৰীরাধারমণে কয়
গুরু সকলের প্রতি সদয় হৃদয় আমাকে হইলে নিদয়।

য/৩৭

৫২
গুরু শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্য পতিত পাবন নাম শুনি
দাঁড়াইয়ে রয়েছি দয়ালগুরু পার করবা নি।
তুমি জগৎগুরু কল্পতরু আগমে নিগমে শুনি
প্রতিজ্ঞা তোমার পাতকী উদ্ধার করিতে অবনী।
ধন্য নবদ্বীপ ধাম ধন্য সুরন্ধনী
আমার নাহিক প্ৰেমধন অতি অভাজন
সাধন ভজন না জানি।।
নাহি নামে রুচি পাতকী অশুচি
পাছে কি হবে না জানি
তোমার পতিত পাবন নামের গুণে
অধম জেনে দয়া হবে নি।
নাহি সাধুসঙ্গ কৃষ্ণকথারঙ্গ
বিফলে যায় গো দিন যামিনী
তবু মনের আশা সদায় পিপাসা
শ্ৰীচরণ দুখানি।।
শ্ৰী রাধারমণে ভনে কাঙালি পানে
ফিরিয়া চাইবায় নি।

য/৩৬

৫৩
চল র মন সাধুর বাজারে সাধুর সংগতি কইলে
পাইবে শ্যাম বন্ধুরে।।ধু।।
হেলায় হেলায় জনম গেল হিসাব দিন ফুরিয়ে এল
বেলা তো ডুবিয়া গেল। আমি রইলাম ভবের ঘোরে।
যার গলে প্রেমের হার গুরুপদে মতি তার
গুরুর কৃপা হলে পরে সে যাইবে সহজে তরে।
চিনরে মন গুরুধন দিন কটালে অকারণ
গুরু বিনে নিদান কালে কে সুধাইবে তোরে।
ভাইবে রাধারমণ বলে দিন গেল রে অবহেলে।
গুরুপদে মতি আমার একদিনও হইল নারে।

গো আ/৩৬ (৪১)

৫৪
চিন্তা জ্বরের ঔষধ কোথায় পাই চিন্ডিয়া চিন্ডিয়া জনম গেল
চিন্তা রোগের ঔষধ নাই।। ধু।।
চিন্তা জ্বরে পাইলা যারে কুচিন্তাতে যার ধরে
নিচিন্তে কি সে রইতে পারে তার প্রাণে বাচাঁবার উপায় নাই।
কাম চিন্তায় মত্ত হইয়া দিন বিফলে গেল গইয়া–
মায়া জালে বন্দী হইয়া দিন তা আমার বইয়া গয়াই।
চিন্তা জ্বরে পাইল যাদের বৈদ্যে না সারাতে পারে।
প্ৰেম চিন্তায় পাইলো যারে মিছা রে তার দুনিয়াই।
প্ৰাণ বন্ধুয়া যদি আইতো মনের চিন্তা চলিয়া যাইতো।
আমাকে আকে পাইতো আমি কি ভব মায়া চাই।
ভাইবে রাধারমণ বলে চিন্তায় জীবন গোল চলে
মনের চিন্তা যাবে চলে যদি বন্ধের দেখা পাই।

গো আ / ২৩ (৩১)

৫৫
চুপ করে আছিস মন কিবা শক্তিবলে
হরি বলে এখন তুমি ভেসে যাও প্ৰেম সলিলে।।ধু।।
অন্তরেতে ঘুণ ধরেছে পাক ধরেছে সব চুলে
দাঁতগুলি সব খসে গেছে মাংসপেশী গেছে ঝুলে।
শিয়ারে তোর যম বসায় নিজেরে ধরে এককালে
তখন তোর বিষয় বৈভব থাকবে কে তে আগুলে
ভয়ে সারা দৃষ্টিহারা ভাসবে রে নয়ন সলিলে
হায় তখন বাকহারা যেতে হবে সব ফেলে।
গায়ে দিলে নুতন বসন দগ্ধ করবে অনলে
বিষয় বৈভব রবে পড়ে ভাইবে রাধারমণ বলে।

গো আ/৬২ (৭২)

৫৬
জুড়াতে প্ৰাণের জ্বালা ডাকি তোমায় মহাপ্ৰাণে
প্ৰাণে ব্যথা প্ৰাণ পথে ডাকি শুনো নাকি মহাপ্ৰাণ।।ধু।।
প্ৰাণের কথা প্ৰাণে প্ৰাণে বুঝে কি সে আর প্রাণ বিনে
তাই সে আমি প্ৰাণের সনে মিশাতে চাই আমার প্রাণ।
শ্ৰীরাধারমণের গান শুনো নাকি মহাপ্ৰাণ
প্ৰাণে করে আনচান কেমনে জুড়াই প্ৰাণ।

গো আ/১৯ (২০)

৫৭
ডাকার মত ডাকরে মন দীনদয়াল বন্ধু বলে
ডাকার মত ডাকতে পারলে মুক্তি পাবে অবহেলে।। ধু।।
কাপট্য ছাড়ি যে জন ডাকে ভাসি নয়ন জলে
দয়াময় দীনবন্ধু আসন পাতে হৃৎকমলে।
দীনহীন সমস্তৃণ যে জন হবে ধরাতালে
সেই জন অনায়াসে আসন পাবে চরণ তলে।
নাম জপে ধ্রুব প্ৰহাদ আদি কালের দুই ছেলে
ডাকার মত ডাকিয়া তারা তারিয়া গেল অবহেলে।
ভাইবে রাধারমণ বলে মন মজনা ভুলে
ভুলে মগ্ন হলে মন সব ডুবিবে। অগাধ সলিলে।

গো আ / ১৩৩

৫৮
ডুব দে রে বাউলের মন ভাব সাগরে ডুব দেরে তুই
জন্ম মরণ করি পণ্য–।।ধু।।
শক্তভাবে দৃঢ় চিত্তে প্ৰাণ করি সমর্পণ
ভাবের ভাবিক হইলে পাইবে তার দরশন।
চর্ম চক্ষে যায় না দেখা সদায় সাক্ষাতে সেজন
মনে মনে খুজলে তারে দেখা পাবে মনে মন
ভাবে মগ্ন হয়ে তুমি সর্বদায় করা হে চিন্তন
চিন্তায় চিন্তায় দিন কাটাইলে পাইবে তার দরশন।
ভবের মায়া ছাড়ি ভাবো ভবনদী পার হওয়ার কথা
বিপাকে ঠেকবে মন ভাবো যুন্দিরে অন্যকথা।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে দিন গোলারে অকারণ
মিছা মায়ায় দিন কাটাইয়া মরণ কালে বিড়ম্বন।

গো আ/ (৩৬)

৫৯
তারে দেখলে হয়রে প্রাণ শীতল
বদন ভাইক্টের হরি হরি বল।
আমার সঙ্গে নিবার ধন কিছু নাই রে
হরি নাম পথের সম্বল।
আমার ভাঙ্গা তরুণী ভয়ে কাঁপিছে
পরিণি রে আমি সাঁতার না জানি
না জানি কোন ভবাসাগরে আমার দেহতরী হৈল তল।
নায়ের মাঝি ছয় জনা এরা কৈরে কুমন্ত্রণা
এখন জানে না
আমি কারে দেখিয়া প্রাণ জুড়াব রে
আমি কারে করি পারের বল।
আমার আয়ু হইল শেষ
আমি চলছি আপনি দেশ বা গুরু ছাড়িয়া বিদেশ
যে দেশে নাই জন্ম মৃত্যু রে
আমায় সেই দেশে নিয়ে চল।
ভাইবে রাধারমণ বলে আমায় মিলিয়া সকলে
তোমরা কর্ণে দিও নাম রে মুখে দিও গঙ্গা জল।

সুকু / ১

৬০
তোমার পাদপদ্মে মজিয়ে থাকি হরি হে আমার এই বাসনা
আমি বাঞ্ছা করি তোমায় হেরি বংশীধারী কাল সোনা।
মন চোরা রাখালের বেশে আমার হৃদয় মাঝে দাড়াও এসে
আমার দেহ হউক কদমতলা অশ্রুধারা হউক যমুনা।
বাজাইয়া মোহন বাঁশি একবার ব্রজের খেলা খেলো আসি
আমার দেহ হউক ব্রজের ধুলা প্ৰাণ হউক ব্ৰজাঙ্গনা।
শ্যাম কলঙ্কের অলংকারে রমণ চাহে সাজিবারে
আমি ধর্ম অর্থ মুক্তি ছেড়ে করব তোমার নাম সাধনা।

গো আ (৫৯)

৬১
তোর লাগি ঝুরে দুই নয়নে প্ৰাণবন্ধু
দাসের প্রতি আছে নি তোর মনে।।ধু।।
কি দোষের দোষী আমি তব পদে হইলাম দোষী
কিঞ্চিৎ মাত্র দয়া নাই তোর মনে।
তোমার লাগি দিবানিশি নিরলে ঝুরি গো বসি৷
তোমার লাগি শান্তি নাই মোর মনে।
আমি করি তোমার আশা তুমি কৈর নৈরাশা
আমারে উদাসী কৈলায় কেনে
ভাইবে রাধারমণ বলে ঠেকিয়াছি বরির কলে
ছাড়া পাই না টানছে সুতে বসি নিরজনে।

গো আ / ১১৮। (১৪৮)

৬২
তোর সনে নাই লেনা দেনা যেজন প্রেমের ভাও জানে না।।ধু।।
কানা চোরায় কৈলে চুরি ঘর থইয়া শিং বারে দেয়
মিছামিছি কাটে মাটি চোরের বাটে মাল টানে না।
কুমারীয়ার পাইলের মাটি মাটি হয় না পরিপাটি–
কাচা মাটিয়ে রং ধরে না পোড়া দিলে হয় সোনা।
দধি দুধ খাইলে পরে লেবু দেখতে ভয় করে
হাজার যত্ন করলে পরে চুকাতে মিষ্টি হয় না।
ভাইবে রাধারমণ বলে মিছা ভাবে আইলাম কেনে
মিছা ভাবে আসি আমি গুরুর নামে মন চলে না।

গো আ /৮ (৬)

৬৩
ত্ৰাহিমাং শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্য দয়ালু হে
অকুল ভব সাগরে ডুবিয়া মরিলু হে।
বিফল মানব দেহ তোমা না ভজিলু হে
মোহোবশে আত্মরসে তোমা পাশরিললু হে।
সাধুসঙ্গ গুরু সেবা কিছু না করিলু হে
না হইল নামে রুচি নাম না জপিলু হে।
পতিত পাবেন গৌরা পুরানে শুনিলু হে।
শ্ৰী রাধারমণ-কেন অকুলে ভাসিলু হে।

য/৫৬

৬৪
দয়াল গুরু বিনে বন্ধু কেহ নাইরে সংসারে
বিপদ ভঞ্জন মধুসূদন নামটি মূলাধার রে।
মন রে তোর পায়ে ধরি চানবদনে বল হরি রে
ও তোর সাধনের ধন হইল চুরি কার বায় রইলায় চাইয়া রে।
ভাই বন্ধু পরিবার কেঅ তো সঙ্গে যাবে না আর রে।
মরিলে মমতা নাইরে কইরা গিরের বার রে।
স্ত্রী হইল পায়ের বেড়ি পুত্র হইল কাল রে
ছাড়াইতে না পারি এই ভবের জঞ্জাল রে।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানবজীবন যায় বিফলে রে
শমনতরী ঘাটে বাধা নিকটে নিদান রে।

সুহা/১৬, গো আ/(১৩৪), হা/(২৭), তী/৮

পাঠান্ডর : গো আ : দয়াল বিনে বন্ধু কেহ নাই। এ সংসারে। দয়াল, বন্ধু কৃপা সিন্ধু বিপদ ভঞ্জন মূলাধার। ভাই বন্ধ পরিবার কেবা সঙ্গে যায় কার। মরিলে মমতা নাই ত্বরায় করে ঘরের বায়। মনেতে মিনতি করি চানবদনে বল হরি। সাধনের ধন হইল চুরি কার পানেতে চাই আর। ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে / ঘাঠে বান্ধ শমন তরী নাই আশা তরিবার।

৬৫
দয়াল গুরু সংসারে আমার কি লাভ বাঁচিয়া
অতি সাধের মানব জনম বিফলে যায় গইয়া।।ধু।।
হিংসা নিন্দা বৈভব ছাড়ো কামক্ৰোধ মায়া–
বদন ভরে হরিবল কি কাম বাঁচিয়া।
নিতি নিতি জিও মরো ঘুমেতে পড়িয়া
তেমনি যাইবায় তোমায় ভাই বন্ধু ছাড়িয়া।
ভাইবে রাধারমণ বলে নদীর কুলে বইয়া
পারৈমু পারৈমু করি দিন তো যায় গইয়া।

গো আ/১৫ (১৫)

৬৬
দয়াল শ্যামরে আমার তুমি দয়া না করিলে আর ভরসা কার?
পাপী তাপী জনে শ্যাম তুমি দয়া করো
তোমার দয়ার ভরসা করে সয়াল সংসার।
পাপী জনে চায়াবা দয়া পাইতে উদ্ধার।
পাপীরে করিলে দয়া দয়াল নামটি সার
তা না হইলে দয়াল বলে কে চাইবো দয়া আর
দয়াল রে দয়াল বলে সয়াল সংসার
দয়ালের দয়া থাকলে দয়া দয়াল নাম অসার
ভাবিয়া রাধারমণ বলে দয়াল শ্যামরে আমার
তুমি যদি চাওনা মোরে আর ভরসা করি?

গো আ ১০৪ (১৩০)

৬৭
দয়াল হরি তুমি বিনে জীবের দুক আর কে বুঝিবে।।ধু।।
হরি দীনবন্ধু কৃপা সিন্ধু বিন্দু দানে কি শুকাবে।।চি।।
আমার যাওয়া যাদের সঙ্গে পথে দিল ভঙ্গ সবে
জীর্ণ তরী তুফান ভারী ঘুরবে ফিরি ভবাণীবে।।১।।
না জানি সাঁতার নাই কর্ণধার অগাধ জলে মারি ডুবে।।২।।
জীব সংশয় বিপদ সময় রাতুল চরণ দিতে হবে।
করলে বঞ্চন শ্ৰীরাধারমণ দয়াল হরি নামেতে কলঙ্ক রবে।।৩।।

রা/৪৫-৯৫

৬৮
দয়াল হরির দয়া বিনে ভববন্ধন কে ঘুচাবে।।ধু।।
হরি জগবন্ধু করুণা সিন্ধু আমায় নি করুণা হবে।।চি।।
মায়া মোহে বিমোহিত শ্ৰীপুত্ৰ সমাজে ডুবে
অষ্ট পাশের বন্ধন বিধির কলম খণ্ডন আর কে করিবে।।১।।
আত্মা দেহেন্দ্ৰিয় যত সবই গেল স্বাৰ্থ লোভে
হরি করলে দয়া এখন বল মানব জনম আর কি দিবে।।২।।
হরি অন্তর্যামী ভক্ত শ্ৰেষ্ঠ গুরুরূপে ভবাৰ্ণবে
না মানি সাধন রাধারমণ ব্ৰেথা আসা যাওয়া ভাবে।।৩।।

রা/৪৪

৬৯
দিন ত গেল রে মানা ভাই অবুঝারে বুঝাইতে।।ধু।।
সারাদিন কর হাতের কাম
সন্ধ্যা হইলে লইও শ্ৰী গুরুর নাম
নামটি লাইও রে পরম যতনে রে।
লাভ করিতে বাণিজ্যে আইলাম
লাভ না কইরে তরী রাইখেছিলাম
তরী মাইল রে লিলুয়া বাতাসে রে।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
জনম গেল কামিনী রাইয়ের কুলেরে।

রা/১০৯, সুখ / ৫১

পাঠান্তর : সুখ / ৫১৪ দিনত গেলারে > সাধের জনম সারাদিন … কাম> সারাদিন করি। কাম; লাভ করিতে . রাইখেছিলাম > প্ৰথমে বাণিজ্যে গেলা/কুলে না পাইয়া তয়ী অকুলে ভাসাইল/ তরী খাইলো রে লিলুয়া বাতাসে।

৭০
দুর্লভ মানব দেহ আর কি হবে জানি না
চৈতন্য হইয়া রে মন গুরু ভজ না।
ও মন, ধর্মগুরু কর্মগুরু দীক্ষাগুরু শিক্ষাগুরু
গুরু কল্পতরুরে মন তাই কি জান না।
ও মন জ্বালাও গুরুজনের বাতি
অজ্ঞানেরে দেও আহুতি
ভব বন্ধন হরে মুক্তি কর ভক্তি সাধনা।
ও মন শ্ৰী রাধারমণের আশা শ্ৰীগুরু চরণ ভরসা।
গুরু কৃষ্ণ রূপের মন তাই কি জান না।

য/৫৮

৭১
ধরা রে অবোধ মন উপদেশ ধর
অসৎ সঙ্গ পরিহরি সাধু সঙ্গ কর।
লোভে কার সাধু সঙ্গে শ্ৰীকৃষ্ণ ভজন
কৃষ্ণ নামে কর রুচি আসক্তি প্রচুর
ভজনে অনর্থ নাশ নিষ্ঠার উদগম
ভাবের আবেশ হইলে জন্মে প্ৰেমাকুর
প্ৰেমাঙ্কুর হইলে সাত্তিকের উদয়
চিন্তা জাগরণ দ্বেষ মলিনাঙগ জয়
কৃষ্ণ প্রেমের অদ্ভুত চরিত্র বাখানি
প্ৰলাপ বাধিরুন্মাদ মোহমৃত্যু গনি।
এই দশ দশা যার অঙ্গের ভূষণ
তার অনুসঙ্গ চাহে শ্ৰী রাধারমণ।

য/৬১

৭২
ধরা রে মন আমার বচন সাধু সঙ্গে কর বাস
কামক্ৰোধ লোভ, মোহামদম্ভ সকলি হইবে নাশ
নিষ্কৈতবে প্ৰেম জ্যাম্বুনদ হেম দেহতরী হইলে নাশ
শান্ত দাস্য সখ্য বাৎসল্য মুখ্য মধুরে তাহার আশ
সাধিলে অটল ধরে প্ৰেম ফল হইলে গুরুর দাস
একান্ত হইয়ে সাধন করিলে পূরিবে মনের আশ।
না জানি সাধন না জানি ভজন কহিয়ে রমণ দাস।

য/৬২

৭৩
নদীর তরঙ্গ দেখে কেমনে পার হবে রে
দিবানিশি কান্দি রে নদীর কুলে বইয়া।
ভাইরে ভাই লাভ করিতে আইলাম ভাবে ষোলো আনা লইয়া
আমার ধনসম্পত্তি লুইটে নিল ডাকাইতে লাগ পাইয়া।
ভাই রে শুধুই মায়া পাশে বদ্ধ হইলাম বিদেশে আসিয়া–
এদেশে দরদী নাই রে দেখা না ডাকিয়া।
ভাইরে ভাই পিছা নায়ের মাঝি ভাল তারা যায় রে বাইয়া
বালিচুরে ঠোঁইকা রইলাম আমার ভাঙ্গা তরী লইয়া।
ভাই রে ভাই ভাইবে রাধারমণ বলে নদীর কুলে বইয়া
পার হাইমু পার হইমু বলে দিন তো যায় গইয়া।

সুখ / ৫২

৭৪
নাইয়া রে আমি নদীর কূল পাইলাম না
কালামেঘে সাজ কইরাছে পরান যে আর মানে না
কিনারা ভিড়াইয়া যাইও নাও যেন ডুবে না
ঢাকার শহর রং বাজারে রঙের বেচাকেনা
মদনগঞ্জের মাজন মোরা ঐ ঘাটে যাইও না রে
ভাইবে রাধারমণ বলে এই পারে বসিয়া রে
তুমি সকলেরে তরাইলায় গুরু
আমার দিন যে গেল গইয়া।

শ্যা /৪/১৭৬

পাঠান্তর : নাইয়ারে. পাইলাম না > পাড়ি ধররে সুজন নাইয়া নদীর কুল পাইলাম না/ সন্ধানে চালাইও তরী বেঙ্গু হইও না; মদনগঞ্জের … যাইওনারে > মদনগঞ্জের মোজন মারা / সৈই ঘাটে যাও না বা নাইয়া; ভাইবে … তুমি সকলোরে তরাইলয়ে > গোঁসাই রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া / পার হইমু পার হইমু করি।

৭৫
নাম গাইয়ে নইদে এল রে প্ৰেমধন লইয়া
কে নিবেরে ওই হরিনাম সময় যায় গইয়া
গুরুর বাক্য হদে রাইখ হইল ধরিও সামলাইয়া
গুরুবাদী ছয়জন রিপু মাল নিব লুটিয়া
নিক্তির কঁটা ঠিক রাখিও মন, ওজন কিন্তু না ছাড়িয়া
দয়াল গুরু। যদি করইন কৃপা নিবা উদ্ধারিয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে গো মনেতে ভাবিয়া
এগো আপন দুষে খাইছি মারা হিসাব না জানিয়া।

কি/৫

৭৬
নামে অনুরাগ যার, সে জানিয়াছে সারাসার
নামে রুচি জিতেন্দ্ৰিয়, অপার * হে বেপার।।ধু।।
যার বসতি গৌড় দেশে, ভক্তি রসে সেই যে ভাসে
কৃষ্ণলীলামৃত রসে, সৎসঙ্গে করছে বেহার।
ঐ রসের রসিক যারা, কৃষ্ণ সুখের সুখী তারা।
হিংসা নিদ্ৰা কৈতবা ছাড়া নিত্য ভাবের ব্যবহার।
প্ৰভু রঘুনাথ প্ৰেম কারিগর, রসের নদী বহে নিরস্তর।
রাধারমণ প্রেমের কাতর, ডুইবে না পাই কিনারা।

য/১৫৬

৭৭
পতিত পাবন নাম শুনিয়া, দাঁড়াইয়া রহিয়াছি কুলে।
দয়াল গুরু পার কর দীন হীন কাঙ্গালে।
আমার নাই পয়সা না জানি সাঁতার,
আমারে নেও নায়ে তুলে।
ভবের ঘাটে দিচ্ছ খেওয়া, আপন হাতে ধরছ বৈঠা,
পার করা দয়াল গুরু দিন গেল হেলে।
আমার মন মাঝি হইয়াছে বেভুল ডুবাইতে চায় নীলমণিরে।
দেখিয়া ভবের তরঙ্গ প্ৰাণ ত হইয়াছে ভঙ্গ
ধরা অঙ্গ শীতল কর সাধ রাখি মনে;
গোসাঁই শ্ৰী রাধারমণের আশা ঐ রাঙ্গা চরণ তলে।

আহো/ (১০০, গো আ/ (১৩৫) হা/(২০)

পাঠান্তর : গো আ : ডুবাইতে… রাঙ্গাচরণ তলে > নাশ হইল বিভব অতুল /এখন আর দেখিনা কুল/তাই ডাকি দয়াল বলে / দয়া করি নেও মোরে / ঠিকিয়াছি ভাব সায় রে / শ্ৰী রাধারমণের আশা ঐ শ্ৰীচরণ তলে। হাঃ ধর অঙ্গ > বীর অঙ্গ, সাধ রাখি> সখী রাখি।

৭৮
পাষাণ মন তোর গইয়া যায় রে দিন।
আইতে একদিন যাইতে একদিন আর কত দিন বাকি রে।
তুমার দেশে যাইবার মনে নাই রে।।ধু।।
সত্য করি ভবে অইলাম রে মনরো গুরু ভজিবারে
মিছামায়ায় বদ্ধ হইয়া পাশরিলায় তারে।
সমুদ্রমছন কইলাম মানিক পাইবার আশে
আমি ডুব দিয়া মানিক পাইলাম না। আপনকর্ম দুষে।
বটবৃক্ষের তলে গেলাম ছায়া পাইবার আশে
পত্ৰ ভেদি রৌদ্র লাগে আপনকর্ম দুষে।
ভাইবে রাধারমণ বলে রে মনেতে ভাবিয়া
পার হইমু পার হইমু বলে মোর দিন তো যায় গইয়া।

রা/১০৩

৭৯
পিরিত করলে কি কেউ ছাড়ে গো যতনে রাখিও তারে
পিরিতি পিঞ্জিরার পাখী ছুটলে কি আর মিলে,
ফুল চন্দন তুলসী দিয়া রাখিও যতনে।
রমণচন্দে বলে সখা কি ভাবিছ মনেতে,
কর্মদোষে মজল না মন শ্যাম বন্ধের পিরিতে।

আহো/১৪ (৭), হা/(৩৭), গো আ/(১৩), ঐ/(১৯৩)

৮০
প্ৰেম প্রেম রাধারা ভক্তি সাধ্য সার
যে প্রেমেতে বান্ধা কৃষ্ণ রসময়।।ধু।।
ব্ৰহ্মা শিব আদি ভাবে নিরবধি
মুনি ঋষির ধ্যানগম্য নয়।। চি।।
ভক্তি নদী লাইয়ে প্ৰেম পারাবার
বিপরীত রীতি সে দেশের বাজার।
চোর না হইলে কি চোরের সঙ্গে দেখা হয়।
ভব পারিবারে যে জন ডুবেছে
প্ৰেম সিন্ধু পার সেই সে গিয়াছে
সংসারের সুখ দুঃখ ভুগিয়াছি
কৃষ্ণ রক্ষন পানে কৃষ্ণ সুখময়।
সাধু প্ৰেম ভক্তি গোপ গোপিকার
কৈল প্রেম যশোদার বন্ধন স্বীকার
কোন প্ৰেমেতে হরি নন্দের বাধা রয়।
সখ্য ভাবে সখা স্কন্ধে আরোহণ
প্রেমের কারণে উচিছষ্ট ভক্ষণ
কোন প্ৰেমে শ্ৰী রাধার চরণ সাধন
তবু প্ৰেমে ঋণী রাধারমণ কয়।

য/৭১

৮১
প্ৰেম বিলাতে যাবে যদি মন, রাধারানীর কল গাড়ীতে।
ত্বরিতে কর আরোহণ।
শমনের ভয় রবে নারে পাবে নিত্য ধন।।
উত্তম বসন পরে চৌষট্টি অলঙ্কারে, আনন্দ দূরবীন
শিরে সাজিয়ে করারে গমন।
মন তুই কাম গঞ্জের প্ৰেম দুয়ারে পাবি রে স্টেশন।
রূপ কেয়ানী বসে তাতে, দিচ্ছে টিকেট লোকের হাতে।
কাটা কামানির ওজন
মন তুই পাকা একমন না হইলে যাইতে নিবারণ।
ভেবে রাধারমণ বলে, মদন সিং কনষ্টবলে
গ্রেপ্তার করতে চায় এখন।
প্ৰভু রঘুনাথ হাকিম না হলে, কে করবে বারণ।

য (ন) ১৫৯

৮২
প্রেমের হাটে যাবে যদি মন সাঙ্গ করি ভবের খেলা
আর নাই বেলা; চলরে এখন।।ধু।।
লইয়ে জীৰ্ণ তরী তুফান ভারী পার করে একজন।। চি।।
সে হাটের খেয়ানি মাইয়া বিন মাসুলে দিচ্ছে খেওয়া
হাওয়ার মনে আসা যাওয়া মোহনীর না করে স্পৰ্শন
নাইয়ে হেলে মাঝির মন হরে জন্মমৃত্যু আবরণ
পারের সময় নিশাকালে ত্রিপুনী তরঙ্গ খেলে
জলোতে অনল জ্বলে সদা না হয় নিবারণ
চটকে দামিনীর মত কহে শ্ৰীরাধারমণ।

যা / ১৬০ তী / ৫

৮৩
বন্ধু আমার প্রাণনাথ বন্ধুরে
সত্য করি বলরে বন্ধু আমার
মাথায় তুলি হাত রে।
মরা কাষ্ঠের তরীরে বন্ধু ভাসাইলাম সাগরে
নিজ হাতে বৈঠা বাইয়া দয়াল কর পার রে।
যথায় তথায় যাও রে বন্ধু আমায় রাখিও মনে
মোর মাথা খাও রে বন্ধু যদি ছাড়িয়া যাও আমারে।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
তোমার দীন ইন মরিয়া গেলে কে ডাকিব তোমারে।

আছ/ ২

৮৪
বন্ধু বিনে এ জগতে কে আছে মোর আপনা
সময় থাকতে–তারে চিনলাম না।।ধু।।
সখী গো–যৌবনের উজান কালে
ভুলে রইলাম মায়া জালে
সময় থাকতে চিনলাম না।
সখী গো যা হইবার হইয়া গেছে খেমা চাই বন্ধের কাছে
মরণ সময় বন্ধের দেখা রমণ গোসাইর মন বাসনা।

গো আ (২)

৮৫
বিনয় কর মন বলি তোমায় শেষের ভাবো রে মন
দিন তা বৃথা যায়।।ধু।।
যখন আসি ধরবে যমে তখন করবে কি উপায়
হা হুতাশে প্ৰাণ যাবে বলবে তখন হায় রে হায়
কুকর্মেতে মজে রইলে সদা রইলে কুআশায়
সেরা জনম বিফলে যায় শেষে ঠেকবে বিষম দায়।
কি বলিয়া আইলে ভাবে কি কাজেতে জীবন যায়
কুব্জার বকুপরামর্শে কুকগজেতে দিনটি যায়
ভাইবে রাধারমণ বলে ধরি গুরুর রাঙ্গা পায়
অকুলে ডুবিছি আমি বঁচাও মোরে নিজ কৃপায়।

গো/(৭১)

৮৬
বুঝি কোন কর্মফলে এলে রে মন ভূমণ্ডলে,
কত সাধে জন্ম পাইয়ে ছিলে এমন দুর্লভ জন্ম যায় বিফলে।।ধু।।
মন রে এই প্ৰতিজ্ঞা ছিল পুর্বে, ভজবে কৃষ্ণ এসে ভবে।
এখন নাইরে স্মরণ ভবের ভাবে, স্ত্রীপুত্র সম্পদে ভুইলে
মন রে শ্ৰীগুরু কৃষ্ণ বৈষ্ণবেতে তিন রূপে এক বিশ্বাসেতে।
শুদ্ধকরণ রূপের ভজন সাধন বিনে আর কি মিলে।
মন রে মহাজনের যেই মত তাতে হ’রে অনুগত।
মন হইলে না মনের মত, শ্ৰীরাধারমণ বলে।

যা / ৭৪

৮৭
বুঝে না অবুঝ মন কি হইল প্ৰমাদ
দিবানিশি শুনতে চায় কংসের সংবাদ।।ধু।।
কুজারাণী কাল নাগিনী গোয়ালিনী সনে
দিন রজনী গায়াইল টপকা বাজা গানে।
বারে বারে নিষেধ করি প্ৰবোধও না মানে
দণ্ডেক তিষ্ঠেক না ঘরে দৌড়ে হেচক টানে
কাম কামিনী মদন বাণে তারে নেয় টানে
সকল সন্ধ্যায় থাকে তাহদের সনে।
টান হেচড়া কত করি ষড় রিপু সনে
জিনিতে না পারি আমি তা সবের রণে
রাধা বাউল বলে ভাবি আপন মনে
এই ভাবে চলি মুক্তি পাইবে কেমনে।

গো আ/১৯৬ (২৮৫)

৮৮
বৃথা জনম গেলোতে রে ভাই বৃথা জনম গেলো
হারিয়া বন্ধের নাম পড়িলাম জঞ্জালে।।ধু।।
শিখিয়া আসিলাম নাম বন্ধুয়ার নিকটে
ভুলি গেলাম শ্যাম নাম জগতের দাপটে।
শ্ৰীগুরুর নিকটে গেলে সেই নাম মিলে
রাধারমণ যাইতে না পারে রাধার জঞ্জালে।

গো আ/৫ (৪)

৮৯
ভবনদীর ঢেউ দেখিয়া দাঁড়াইয়া রহিয়াছি কূলে
দয়াল গুরু পার করা দীন হীন কাঙ্গালে।।ধু।।
দিছো খেওয়া ভবের হাটে আপন হস্তে মারছে বৈঠে
পার করি দেও নিজ কপটে অবহেলাতে;
আমার মন হইয়াছে বেদিশা
ঠিক করে হাল ধরলো না রে
দেখিয়া ভবের তরঙ্গগো কম্পিত হইয়াছে অঙ্গ
রিপু সনে করি রঙেগ দিন গেল হেলে;
আমার নাই কড়ি, নাই জানি সাঁতার
আমায় নেও নায়ে তুলে।
নাহি জানি অস্তুতি ভক্তি কি হবে আমার গতি
শ্ৰী পদে না দিলাম ভক্তি দিন গেলো হেলে
রাধারমণের মনের বাঞ্ছা–রই গো রাঙ্গা চরণ তলে।

গো আ/১(১)

৯০
ভব সমুদ্র পাড়ি দিতে মন হরি নামের নৌকা ধরো
হরি নামের নৌকা ধরে শ্ৰীগুরু কান্ডারী করো।।ধু।।
অন্য চিন্তা ত্যজ্য করে। সদায় হরি চিন্তা করো
এক দিশাতে নামটি জপো করিও না মন হরে তরো
ছয় চোরাতে চুরি করে সন্ধান করি তারে ধরো
অনায়াসে পার হবিরে চোর যদি ধরিতায় পারো
শয়নে স্বপনে মনো হরিনাম জপনা করো
শ্ৰীগুরুর হইলে কৃপা পাপেরে খন্ডাইতে পারো।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে বৃথা জন্ম এ সংসারো
হরি বিনা নাই কান্ডারী হরি চিন্তা সদায় করো।

গো আ / ১০৬ (১৩২)

৯১
ভবে নাইরে আপনজন সারা জনম ঘুরি ফিরি
পাইলাম নারে মনের মতন।।ধু।।
বাপ বলে ঋণ শোধো আমার কি সময় এখন
তোমারে পুষিয়া আমি সব খুয়াইছি মূলধন।
দিন গেল তাদের সেবায় শেষের সঙ্গী নাই একজন।
তিরি বলে পোষতে হবে নাইলে দেও ছাড়ি বন্ধন
পুত্র বলে সাধিয়া আনলে মুই কিজানি বাপধন।
কন্যা বলে আমার ভাগে চলে আমার ভরণ পোষণ
তোমারে কেমন চাই আমি পরার রন্ধন।
সব হাতড়াইয়া এই শিক্ষা লাভ করিয়াছি এ ভুবন
অন্তিম কালে খেয়া ঘাটে ঠেকিবো রে রাধারমণ।

গো আ/২৯ (৩৪)

৯২
ভবে মানব জন্ম আর হবে না হরি নামামৃত পান কর্লে না।।ধু।।
নামামৃত পান কলে রে মন ভাবে জন্ম মরণ হবে না।।চি।।
নামই পরম ধর্ম নামই পরম তপ, নাম যাগযজ্ঞ সাধনা।
নামের তত্ত্ব জাইনে মত্ত হইলে রে মন গৌর নিতাই দুভাই দেখ না।
শ্ৰীহরি শ্রবণমঙ্গল ঐ নামে মহাদেব পাগল পথের সম্বল
নাম বিনে আর দেখি না।
ভবরোগের মহৌষধি রে মন হরি নামে বিরাম দিও না।।
শ্যাম হইতে তার নামটি বড় নামে বিশ্বাস রাইখ দৃঢ়
ঘুচে যাবে ভাববন্ধনা।
শ্ৰীরাধারমণে ভণে রে মন হরি নামে রুচি হইল না।

য/৭৯

৯৩
ভবের খেলায় হেলায় দিন যায়।
না হইল সাধন, গুরুর চরণ, পাছে মন কি হবে উপায়।।ধু।।
গুরু শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্য রূপে সাধু…… প্ৰায়।।চি।।
মায়া মোহ জলধি, যে নীরে ডুবলে হারায় জ্ঞানবুদ্ধি
তাপত্ৰয়ে নিরবধি তাঁটবেণী দ্রমায় তোল
মনুষ্য দুর্লভ জন্ম বিফলে ধরায়।
কাম ক্ৰোধ লোভ আদি, রিপু, ইন্দ্ৰিয় ভজন বাদী
গুরুবাক্য মহৌষধি রেখে হৃদয়ে সদায়।
মনরে ভাব বন্ধন, হবে মোচন, শ্ৰীগুরুর কৃপায়।
ধনজন সব, স্ত্রী পুত্ৰ ধন রঙগু তামাসা কিছু সঙ্গে নাহি যায়।
রাধারমণে ভণে, রঘুনাথের ভাজ রাঙ্গা পায়।

য/৮০

৯৪
মন ঐ গুরু পদে ধরে তারে চিন, মন,
তোর রঙ্গে রসে যাবে না দিন।
বিলাতের কর্তা জিনি মন হাইবি স্বাধীন
মন রে হবিগঞ্জ নবিগঞ্জ কলিকাতা তেলিগঞ্জ রে
আশুগঞ্জের লাইনের ভিতরে মন আমার ঘোরাবি কত দিন।
রাস্তায় রাস্তায় থাম গজিয়ে তার বসিয়ে রে
তারে চিনিয়ে দেব ঠুকারে মন, দিনের খবর পাবে দিন
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জন্ম যায় বিফলে
গুরুর চরণ পাবে বলে রে মন আশায় আশায় গেল দিন।।

ক/১৮

৯৫
মন চল রে দেশে যাই বিদেশ আসি শুইয়া দিলাম রে কাল কাটাইয়া।।ধু।।
দেশের মায়া গেলে ভুলিয়া বিদেশে রইলে পড়িয়া রে
লাভ ক্ষতি না দেখলে চাইয়া হিসাব করি দেখা চাই।
লইয়া আসলে ষোল্প আনা লাভ কইলে না খরচ দুনা
তার উপরে হইল দেনা আসলের ত খবর নাই।
কাম ক্ৰোধ মোহ মায়া এসব তো কেবল ছায়া
ভাবি দেখরে মন বেহায়া কখন আছে কখন নাই।
যখন তুমি দেশে যাবে কে তোমার সঙ্গী হবে
স্ত্রী-পুত্ৰ কেও না যাবে শেষে সম্বল কর তাই।
সঙ্গের সাখী হবে যিনি তাহারে লও রে চিনি
শাস্ত্ৰে বেদে সবখানে ঐ কথা দেখতে পাই।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে দিন গেল মোর অবহেলে
কোন ঘড়ি যে যাব চলে তার তো কোনো নিশ্চয় নাই।

গো আ /৪৪/৫২

৯৬
মন চোরা তুই হরি আছো সদায় আমার সনে
দিশা পাই না কেমনে ধরি মন চোরা তুই হরি।।ধু।।
তোমার চিন্তায় বিয়াকুল আমি সদায় তোমায় চিন্তে
তবু দেখা পাই না তোমার উপায় কি করি।
বেভুল হয়ে তোমায় দেখি–মনে খুশী হইয়া —
বেভুলে হাত দিয়া ধরি–হুসে দেখি খালি।
নিশি জেগে পড়ি যাবে কাল ঘুমের ঘোরে।
তখন দেখি কাছে আমার করো তুমি ঘুরাঘুরি।
এমনি ভাবে দিন রজনী করো লুকোচুরি–
ধরতে গেলে না দেও ধরা দুরেতে যাও সরি।
কাছে আসো দুরে সরো কত ভঙ্গী ধরি
আমি তোমার প্রেমের মরা প্ৰেমাগুণে জ্বলিয়া মরি।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে উপায় সখী কি করি
দিন রজনী বুরিয়া ঝুরিয়া–না পাইলাম দয়াল হরি।

গো আ/২৫ (২৯)

৯৭
মন তুমি কি রসে ভুলিয়াছ মিছা ভবের মাঝে কেবা
মিছা আশা করিয়াছ।।ধু।।
ঐ দেহ আপনি জানি যতন করিয়াছ
তুমি বা কার কে তোমার তোমার খবর নি করিয়াছ।
ভাই বন্ধু আপনি জানি যতন করিয়াছ।
যাইবার কালে সঙ্গের সখী করে করিয়াছ
ব্রজের জীবন রাধারমণ মনে যে ভাবিয়াছ
ব্ৰজনন্দের জীবন তরী কি রসে ডুবাইয়াছ।

গো আ/৭ )৫), ঐ/১৬ (১৬)

পাঠান্তর / গো আী ১৬/(১৬)–
মন তুমি >রে মন, মিছা ভবের … করিয়াছ > অসার সংসারে আশা ভরসা করিয়াছ।
ব্ৰজের…রসে ডুবাইয়াছ > ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া / ব্ৰহ্মানন্দের দেহতরী শুকনায় ভাসাইয়াছ।

৯৮
মন তুমি সেই ভাবনা করা কখন খাচা পড়বে খালি
ভাঙ্গব না তোর ঘুমের ঘোর।
কোনদিন পাখী পালিয়ে যাবে জানা তো নাই তোর
সময় থাকতে ওরে মনা ভাঙাগ রে তোর ঘুমের ঘোর।
বাজে মাল মসলায় খাচায় গড়ছে কারিগর
সিদ কাটিয়া কোনদিন খাচা প্ৰবেশিবে পাখীচোর।
সিদ কাটিয়া প্ৰবেশিলে বিপদ বিষম হবে তোর
তাই বলিরে অবুঝ মনা সময় থাকতে পাড়ি ধর।
রাধারমণ বাউল বলে জীবন গেল ঘুমের ঘোরে
অসাবধান হইয়া খাচায় সিদ কাটি পশিল চোর।।

গো আ/৫০ (৫৮)

৯৯
মন তুমি হরি বলবে কোনকালে, বাল্য আর যৌবন তুমি রসরঙ্গে কাটাইলে।।ধু।।
পরের জমি লয়ে তুমি সবলোককে ঠকাইলে
নানারকম ভেক ধরিয়া অসার জনম কাটাইলে।
যত্ব করে রত্ব দিয়ে পাপের ভরা কিনিলে
খাল কাটিয়া ঘরের মাঝে কুমীর আনি ঢুকাইলে।
না জেনে তত্ত্ব খুড়ে গর্ত কাল ভুজঙগ ধরিলে
অপারে ছলিতে গিয়ে নিজে ছলে পড়িলে।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঠেকাছি বিষম জঞ্জালে।
লাভে আসি মুল হারাইয়া নরকগতি শেষকালে।

গো আ/৪৬ (৫৫)

১০০
মন তোর মত বোকা চাষী ত্ৰিজগতে আর দেখি না
দেহের জমি পতিত রইলো চাষাবাদ তো করলি না।।ধু।।
যমের তশীল্‌দার এসে করবে তশীল্‌ ধরে কষে
মাল গুজারী করবি কিসে সে ভাবনা তো ভাবলে না
ছয়টা ষাড় থাকতে তোর জমি আবাদ করলে না।
নীলাম উঠিলে জম রদের উপায় দেখি না।
কি দশা হবে শেষে সব নাশিলে আলসে বসে
দেহ যখন পড়বে ধসে উপায় কি তার বল না
ভাইবে রাধারমণ বলে আলসে জীবন যাপো না
জমিদারের খাজনার কড়ি সময় থাকতে খোঁজ না।

গো আ/৪৮ (৫৩)

১০১
মন পাখী বলি তোরে বল বল কৃষ্ণ কৃষ্ণও হরে হরে।।ধু।।
মন রে–লাভ করিতে আইলাম আমি ঐ ভবের বাজারে–
লাভে মূলে সব হারাইলাম লোহা কিনলাম সোনার দরে?
মন রে–হস্তপদে বন্ধন ছিল জননীর জঠরে
বন্ধন মোচন কে করিল কে আনিল এ সংসারে?
মন রে–ভাইবে রাধারমণ বলে জনম গেলো হেলে
চৌরাশি যোনি ভ্ৰমণ করে জনম মুনিষ্যি কুলে।

গো আ/ ১৭ (১৬)

১০২
মন রে পামর তুমি যে লোক জাননা
অনিত্য সংসারে …বিষয় বাসনা
কাম ক্ৰোধ লোভ মোহ রিপু ছয়জনা
আত্মসুখে হয়ে মত্ত শ্ৰীপদ ভাবো না
দেবের দুর্লভ জন্ম বিফল দেখ না
দারুণ যমে দিন দিন করে গণনা
ভবরোগের মহৌষধি হরিসাধনা
শ্ৰীরাধারমণের মন হরিভজনা।

য/৮৪

১০৩
মনের আনন্দে ব্রজধামে চল রে ভাই হরি হরি বল।।ধু।।
শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্যনাম পথেরি সম্বল রে
হৃদয়-পিঞ্জিরার পাখি রাধাকৃষ্ণ বল ভাই রে
মনপাখি উড়ে গেলে সকলি আন্ধাইর রে।
যোগীঋষি শিব সন্ন্যাসী ঐ নাম জপে নিরবধিরে
নামে ভইজে কালী শৰ্ম্মশানবাসী নামেতে পাগল রে।
হরি নামের দিয়ে ডেঙ্কা পার হবে ভাব খেওয়া
হরিনাম যে তরণী নৌকা শ্ৰী রাধারমণ গায়রে।

রা/১৪৪, রা/১৬২

১০৪
মিছা ভাবের খেলায় রঙ্গ তামাশায় হেলায় দিন গেল রে মন।।ধু।।
উত্তারিতে ভবনদী পথের করেছি, কি আয়োজন (চি)
এ ধানে কররে যতন স্ত্রীপুত্র ধন দালান কোঠা
টাকা পয়সা যত মিছে অ্যায়োজন।
কে দেখেছ সঙ্গে নিতে, মন রে সূচীর অগ্ৰে এক কণ।।
মিছা জীবন যৌবন গেলে ফিরে আসে নি কখন।
পোষা পাখী উড়ে গেলে পড়ে রবে শুধু তন।।
যে দেশে সে পাখীর বাসা, সে দেশে যাবার আছে কি ধন
হরিনাম নাম নিত্য কর হরি সংকীর্তন।
সাধনের ধন চিন্তামণি ব্রজের মদন মোহন।
শ্ৰীরাধারমণ ভনে হরি নামের মালা কর ধারণ।

য/৮৬

১০৫
মুখে হরেকৃষ্ণ হরি বল মনপাখি।।ধু।।
গনার দিন ফুরাইয়া আইল ও ময়না
আর কত দিন বাকি।।চি।।
সুনার বানাইয়া পাখি রূপের দুইটি আঁখি
হরি নামের পাখা দিলাম, ওরে ও ময়না,
একবার উড় দেখি।।১।।
সুনার পিঞ্জিরায় পাখি যতন করিয়া রাখি
জিঞ্জিল কাইটে উড়ে গেলায় রে, ময়না,
একবার ফির দেখি।।২।।
গোসাই রাধারমণ বলে আমায় দিল ফাঁকি
মনের পাখি বনে গেলায় রে, ও ময়না,
আর নি তারে দেখি।।৩।।

তী //১০য/১০৭

পাঠান্তর : ১০৭ : মুখে > × × ও ময়না > × × সুনার বানাইয়া… আঁখি
সোনার বাসায় পাখি রূপার দুইটি আঁখি সুনার পিঞ্জিরায় দেখি > × ×
মনের পাখি … ও ময়না > মনের পাখি বনে গেল।

১০৬
মুর্শিদ বলি নৌকা ছাড়ো তুফান দেখি ভয় করিও না
মুর্শিদ নামে ভাসলো তরী অকুলে ডুবিবে না।।ধু।।
নদীর নাম কামিনী সাগর লাফে লাফে উঠছে লহর
কত ধনীর ভরা খাইছে মারা পড়িয়া নদীর বিষম বানে।
মণিপুরে মাঝি চাইরজনা নাওয়ে মাঝি আর ছয় জনা
আসিছে কামের তুফান সাবধান সাবধান হইল ছাড়িও না।
ভাইবে রাধারমণ বলে অজ্ঞান মন তুই রইলে ভুলে
যেই মুর্শিদ কান্ডারী সে তরী কখনও ডুবে না।

গো আ /৩ (২)

১০৭
মোরে কাঙ্গাল জানিয়া পার কর দয়াল গুরুজী
মোরে ক্যাঙ্গাল জানিয়া পার করো।।ধু।।
বানাইয়া রংমাল ঘর অঙেগ অঙ্গে জোড়া
নব কোঠায় জ্বলছে বাত্তি ষোলজন পারা।
লাভ করিতে আইলাম ভাবে লইয়া সাউদের ধন
পড়িয়া কামিনীর ফেরে হারাইলাম রতন।
কত কত সাধুজনা গাঙেগ বাইয়া যায়
রঙের নিশান পাল টানাইয়া–প্রেমের বৈঠা বায়।
সৰ্প হইয়া দংশো গুরু উকা হইয়া ঝাড়ো–
মরিলে জিয়া ইতায় পারো যদি দয়া ধরো।
কহে হীন রাধারমণ অঙ্গ ঝর বার
ভবার্ণব তারিয়া যাইতে কিঞ্চিত দয়া ধরো।

গো আ /(৬৩)

১০৮
যায় যায় সুদিন দিনে দিনে দিন হইল শ্ৰীগুরু কৃষ্ণ পদাশ্রয় (ধু)
নাম চিন্তামণি তারিতে তরণী কলি তমাঘোর পার হইতে যদি হয়।
বিদ্যাবুদ্ধি ধন জন আর রূপ গুণ কুল সব তুষের ভাণ্ডার।
চক্ষু কৰ্ণ আদি ইন্দ্ৰিয় সবার কৃষ্ণ ভজনবাদী হইল রিপু ছয়।
মুখে মাত্ৰ বলি আমি ওই কৃষ্ণের দাস।
চিত্তে নাই কৃষ্ণ নামের গন্ধ বাতাস।
নারীপুত্র রসে করি গৃহে বাস
স্বপনেও স্মরণ না হয়।
অর্মাখির পলকে নাহিক ভরসা।
তবু মনে মনে করা কতই আশা
মনের দুরাশা সকলই দুৰ্দশা
নিবামা হইয়ে ভজ রসময়।
প্ৰভু রঘুকহেন শুন শ্ৰী রাধারমণ
ভারত ভুবনে এলে এ কারণ
কতই সাধনে মানব জনম
তবে হইল না। এবার পথের পরিচয়।।

য/৯২

১০৯
যার কূল নিলে কূল পাইতে পারি আমি তার কূলে গেলাম। কৈ।।ধু।।
আমি রইলেম আমার কুলে রে, তার কুলের কারণ হইল কৈ ।।চি।।
মোহ জলধি মাঝে তিন মন ডুবে রয়েছে।
আমি ছুটতে নারি, বন্ধন ভাবি, কালসাপে বেড়ে রয়েছে।
যদি মিলে ধন্বন্তরি, তার চরণ ধরিয়ে স্মরণ লই
তার হদকমলে সজল উজ্জ্বল কমল ফুটিয়াছে।
রসিক জানে রসের মর্ম, তার রসে ডুবে দেখলেম কৈ।
যে নদীর কুলে গিয়াছে, বিশ্বাসের তরী বাড়িয়াছে
শ্ৰীরদপনগরের বিষম পাড়ি সেই যে সাধিয়াছে
রাধারমণ বলে রে তার কুলে যাওয়ার পান্থ কই।

য/৯৩

১১০
যার লাগি হইলাম বৈরাগী ভেক ধরিয়া জনম গেল
হইলাম না তার অনুরাগী।।ধু।।
হাতে লইয়া গামছা লোটা কপালে দি তিলক ফোটা
সার হইল হাটাউটা দিন কাটাইলাম লইয়া মাগী।
মাগীর মোহে মগ্ন হইয়া মূল নাম বিস্মরিয়া
দিন কটাইলাম চাইয়া চইয়া বৃথারে সংসারের লাগি।
দিন গেল কামকেলিতে মাল নিল ছয় ডাকাইতে
দিশা পাইনা লেখাইতে দারোগার কুদামের লাগি।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে দিন গেলো রে মায়ার ছলে
খেয়া ঘাটে ঠেকবে কলে ভেকের বৈরাগী।

গো আ /৩৪ (৩৯)

১১১
রইলাম গুরু অকুল সায়রে প্রভু নিরঞ্জন হায় হায়রে।।ধু।।
ছয় ভাই বাণিজ্যে গোলা আসল ভাঙ্গিয়া খাইলা।
মহাজন জিজ্ঞাসিলে কি দিতা উত্তর।
উনুর ঝুনুর শব্দ করে কেমনে চোরা হামাইলো ঘরে।
ছিড়িল নায়ের পাড়া মাঝি হইল কর্ণ ছাড়া
চড়িনদারে মারিল পরানে।
ভাইবে রাধারমণ বলে শ্ৰীগুরুর চরণ তলে
ভবনদী কেমনে দিতাম পাড়ি।

গো আ/১৩ (১২)

১১২
রঙ্গে রঙ্গে আর কতদিন চালাইবায় তরণী বানাইয়া
নাইয়া নৌকা লাগাও বন্ধের ঘাটে।।ধু।।
নুতন বরিষার জল ঘাটে বা বেঘাটে
সামনে চালাইলায় তরী না চাইলায় ফিরিয়া
দিন গেল বেলা নাই বিপদ নিকটে।
রাগ ভাঙ্গা তরীখানি বাইনে বাইনে টুটে
সকালে কিনারা লও ভয়ে প্রাণ ফাটে
রমণী ভরসা লতার মূলে যাইবে কেটে।
মহাজনের নৌকাখানি মহাজনের মাল
মহাজনের লাইবো হিসাব ঠেকাবায় পরকাল
ওরে রাধারমণ মূলধন হারা সংকট নিকটে।

গো আ/১১ (১০)

১১৩
ললিতলাবণ্যরূপে দেখা দাও হে বংশীধারী
আমায় এম্নিভাবে মুগ্ধ করে স্বপ্নে যেন না পারি।
ওহে ত্ৰিভঙ্গ বাঁকা গলে ত্ৰিবলী রেখা
আমার হদয় মাঝে থাকুক আঁকা
মদন মোহন রূপ মাধুরী।।
যেমন মেঘের কোলে সৌদামিনী খেলে
তেমনি হৃদ-আকাশে শ্যামের কোলে নৃত্য কর রাই কিশোরী।
আমার মানবিহঙ্গ সদায় করে রঙ্গ
রসরঙ্গে শ্যাম এভাঙ্গের অপাঙ্গে নিজ অঙ্গ হেরি।
ওহে রাধারমণ হলদে করা রমণ
রমণের মন করো রমণ
সদা যেন এ রিসে সাঁতারি।

য/৯৯

১১৪
শুধু ভক্তি করলে কি হবে রে সরল ভাব নাই তোর মনে
সোনার পিঞ্জিরার গো মাঝে কাকের বাচ্চা পালন করে।
চতুর পাশে আড় করিল জাত বুঝি তার গেল না রে।
সিং কাইটে চোর সামাইল ঘরের মানুষ যায় পলাইয়ে।
কাঙ্গালের ধান কাঞ্চাসোনা পাইড়ে রবে অন্ধকারে।।
গোসাই রাধারমণ বলে মানুষ জন্ম যায় বিফলে।
ব্ৰহ্মানন্দ কয় দয়াল গুরু সঙ্গে করে নে আমারে।

আছ / ৮

১১৫
শুন ওরে মন বলি রে তোরে
হরি হরি বল বদন ভরে
মন রে ভূমাপনা বলিছ যারে
দেখিনি আপনা এ সংসারে।
আসিলে শমন নিবেরে ধরে
শ্ৰী পুত্ৰ বান্ধব রহিবে পড়ে।
ধনে আর মানে কুলে কি করে
সকলি সমান যমের পুরে।
যে তনু যতন করা সাদরে
অনলে পুড়িয়ে কি ভাসিবে নীরে।
হরি হরি বল ও রসনারে
শ্ৰী রাধারমণ পড়িল ফেরে।

য/১১১

১১৬
শুনরে পাষাণ মন আর কত দিন রবে তুই ঘুমে অচেতন।।ধু।।
তুমি মনে মনে ভাবিছ কি তোমার হবে না মরণ।।চি।।
দুই দিন চাইর দিন ভবের খেলা রে পরার সনে উলামেলারে
যাইবার কালে চিনবায় মজা বুঝবায়রে তখন।।
বসত করা খাপুর দেশে মন রে ঘুম দিয়াছ কোন সাহসে রে
মন রে জাইগে দেখি তার চুরে নিল মহাজনের ধন।।
ভাইবে রাধারমণ বলে আমার মৃত্যুানবজীবন যায় বিফলেরে
মন রে ব্ৰহ্মানন্দ কয় মোর কপালে ঘটল বিড়ম্বন।।

রা / ১০৪

১১৭
শুনহে মনভাই তুই বড় গোয়ার
অমৃত ছাড়িয়া বিষ করবে আহার।
সুধামৃত হরিনাম জগতের সার
কুমতি সঙ্গ দোষে সকলি অসার।।
দুর্লভ মানব জন্ম না হইবে আর
শ্ৰীহরি সম্বল ভবাসিন্ধু তরিবার।।
হরিনাম চিন্তি মনে জপ অনিবার
শ্ৰীরাধারমণে ভণে হরি নাম সার।

য / ১১৬

১১৮
শ্যাম বন্ধুয়াও দেখা দেও অধম জানিয়া
আমি খাপ ধরি বসিয়া রৈছি পন্থপানে চাইয়া।।ধু।।
সাধন ভজন জানিনা আমি আছি বোকা হইয়া
তুমি আসিয়া করবায় দয়া এই ভরসা লইয়া।
আইজ অইবায় কাইল আইবায় মনেতে করিয়া
দৃঢ় ভাবে আছি আমি ভরসা করিয়া।
তুমি যদি নাই আসো অপার। দয়া করিয়া
আমার মত ঘোর পাপীরে কে নিবে তরাইয়া
ভাবিয়া রাধারমণ বলে বন্ধু বিনোদিয়া
দয়া করি আইসো বন্ধু অধম জানিয়া।

গো আ ১৩৩ (১৭২)

১১৯
শ্ৰী গুরু বিনে এ তিন ভুবনে জীবনে মরণে আর কেহ নাই।
গুরু আদিমূল মূলে হাইও না ভুল মূল ধরিয়া কেন ডাকো না ভাই
গুরু দিলে পাই, খাবাইলে সে খাই।।
বাঁচাইলে সে বাচি নাইলে মরি
সৰ্বেশ্বর পরম ঈশ্বর গুরু
হরিহর জগতের গোসাই।।
সত্য যুগে হরি ত্ৰেতাতে রাম ধনুকধারী
দ্বাপরেতে ব্ৰজে শ্ৰীনন্দের কানাই।।
কলিতে গৌরাঙ্গ ভক্তগণ সঙ্গ লইয়া নিতাই
গুরু কর্ণধার ও ভাব পারাবার
তারিতে ভাবে আর কেউ নাই।
শ্ৰীরাধারমণ কয় শ্ৰীগুরু আশ্রয়
আর শমনের ভয় নাই।

যা/১২৫

১২০
শ্ৰীহরিনামের তরী পার করিবে গো ভবাসিন্ধু রে মন
মন রে তুই যাবি যদি নিতাইরা নায়।।ধু।।
কায় বাক্য এক করিয়ে ধরা যাইয়ে গুরুর পায়।
দয়াল গুরু যদি কৃপা করে দক্ষিণ কৰ্ণে নাম শুনায়।।১।।
শ্ৰবণ কীর্তন স্মরণ মনন নামে রুচি সর্বদায়
ছাপান্ন দণ্ড রাত্রে দিনেরে হরিনামের তরীর বিরাম নাই।।২।।
শ্রদ্ধাপালে প্ৰেমৰ বাতাসে হরি নামের সারি গায়
শ্ৰী রাধারমণে ভনেরে ভবাসিন্ধু পারের সময় যায়।।৩।।

রা/৩৭

১২১
সদায় পিঞ্জরে বসে রাধাকৃষ্ণ ভাবো না।
যেই নাম তুমি বল আমি শুনি, আমি বলি নাম তুমি শুন না।
ষোল নাম বত্ৰিশ অক্ষরে, আটাইশ অক্ষর দেও না ছেড়ে।
রাধাকৃষ্ণ নাম চাইর অক্ষরে, সাধু জপে নাম অন্যে জানে না।
সেই হরি নাম নিতে জীবে, আনন্দ বাড়িবে চিতে।
মনের কৈতব জ্বালা যাবে দূরে
নিরানন্দের গন্ধ দেহায় রবে না।
ভেইবে রাধারমণ বলে, মানব জনম যায় বিফলে
আমার মনের আশা রইল মনে
মন মিলে, মনের মানুষ মিলে না।

য/১৬৯

১২২
সন্ধ্যাকালে ডাকি বসি খেওয়া ঘাটে গাঙ্গের কূল
পার কইরো দয়াল গুরু তাতে যেন না হয়। ভুল।।ধু।।
ভাও জানে না মন বেথুয়া কেমনে দিতাম ভাবে পাড়ি
পাইনা কুল দিশামূল।
মায়ারূপী তিরিপুত্ৰ সামনে সাক্ষাৎ কাল
ছয়জনায় যুক্তি করি ডুবাইতে চায় লাভ মূল
ভাসিছি অকূল সায়রে উদ্ধার কর মোরে
অধম কাঙ্গাল জানি এতে যেনো না হয়।
ভুল শুদ্ধ আমার কিছুই নয় কর্ম চিন্তা সবই ভুল।
দয়া বিনে আশা নাই পাইবো যে চরণ ধূল।
তুমি না। ওরাইলে মোরে ক্ষমা করি সর্ব ভুল
গাঙ্গের ঘাটে পড়ি মরমু পারে হবে গণ্ডগোল।
পুণ্য ছাড়া পাপের ভরা তল্লাসীতে পড়বে ধরা
মিলবে অনেক মাল বিঝাড়া লাগবে তখন হুলুস্থূল।
তুমি হর্তা তুমি কর্তা শেষ তুমি আদিমূল।
তুমি না তরাইলে মোরে কেও দিবে না চরণ ধূল
ভাবিয়া রাধারমণ বলে মন কেনে করিলাম ভুল
পাপ থইয়া পুণ্য করলে হইত নি কোনো গন্ডগোল।

গো আ ২৪ (২৬)

১২৩
সুখময় ডাকিছে তোমারে রে প্ৰেমানন্দ
সুখময় ডাকিছে তোমারে।।ধু।।
লাউ ডপকী যত ছিল সকলই কামিনীয়ে নিলো রে
আমার আদরীরে নিল ডাকাইত চোরায়
উত্তর পাইয়া বড়বাবু বাড়ীতে নিয়া কইলো কাবুরে
ও আমার মান রাখিয়া (নাম ধরিয়া?) কইলো অপমান
নালিশ কইলাম আদালতে আপীল গেল হাইকোটেতে
ও আমার বিচারেতে ডিগ্রী না হইল রে।
বাউল রাধারমণ বলে ডিগ্রি যদি নাহি মিলে
আমার শেষ কলেতে হইব কি উপায়।

গো আ ২৩ (২৬)

১২৪
হবে নি রে আর মানব জনম দেখা না ভাবিয়া
চৌরাশি লক্ষ জুনী ভ্ৰমণ করিয়া।।
কতনা তপস্যা করি মানব জনম পাইয়া
পূর্বকথা পাশরিলাম ভূমিষ্ঠ হইয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
হেলায় হেলায় দিন কটাইলাম গুরু না ভজিয়া।।

সুখ/৪৮

১২৫
হরি গুণাগুণ কৃষ্ণ গুণাগুণ রাধা গুণাগুণ গাও হে।
সদায় আনন্দ রাখিও মনে।।
রাধারানীর প্রেমবাজারে রসের দোকান খোলা রে
কেউ বেচে কেউ কেনে কেউ দর করিয়া যায় রে।
জল উজান বাতাস উজান সাবধানে নাও বাইও রে
সামনে আছে সাধুর দোকান কিছু কিনিয়া লও রে।
ভাইবে রাধারমণ বলে লাভ করিতে আইলামী ভাবে
মুল হারাইবায় চাইও রে।

কিরণ/২

১২৬
হরিনাম কর সার।।ধু।।
একবার মনের খেদে হরি বল। মনপাখি আমার।।চি।।
ভবের হাটে আইস যাওয়া ঠেকাবায় রে একবার।
সময়ে বেইল থাকিতে দেও রে পাড়ি সময় নাই রে আর।।১।।
ভাইবে রাধারমণ বলে অসার সংসার
দয়াল গুরু বিনে ভবাৰ্ণাবে বন্ধু নাইরে আর।।২।।

রা / ১০৭

১২৭
হরিনাম কৈরছি সার ধবার ধারি না শমন তোমার
হরি নামের মালা গাইথে পর গলে রত্নহার।
আর কেউরির ঋণী নয় ঋণ কেবল শ্ৰী রাধার
করাঙ্গ কপিন পৈরে শুধৰাব রাধার ঋণের ধার।
ভাইবে রাধারমণ বলে অসার সংসার
মনুষ্য দুর্লভ জনম না হইব পুনর্বার।

সুখ /৪৬

১২৮
হরিনাম চিন্তামণি কৃষ্ণ চৈতন্য রসমাধুরী। ধু—
অগাধ জল ভবনদী তাহে মন পার হবে যদি
নামের মন্ত্র নিরবধি জাপ রে বন্দন ভরি।
হরি নামের পাতায় মন দৃষ্টি রাখো অনুক্ষণ
সর্বসময়ে চালু রাখা রে নামের তরি।
নাম মন্ত্র পাইতে পারো শ্ৰীগুরু কান্ডারী ধরো
দশজনকে দিও দাড়ে ছয়জন রাখিও গুণারী।
সুবাতাসে শ্ৰদ্ধা পালে আসক্তি হৃদ মস্তুলে
পঞ্চারশি বন্দ করি নিত্যানন্দ চালায় তরী।
বিশ্বাসকে রাখো পারাদার ধিয়ানকে দেও জল সিচিবার–
চিত্তকে দিয়া রসের ভাণ্ডার–প্ৰেম লগানে লাগাও ডুরি।
ভেবে কয় রাধারমণ ও রূপে সেরূপ মিলন
করে হরি নামের সাধন মিলবো রে অটল বিহারী।

গো আ ১০১ (১২৪)

১২৯
হরি বল রে অজ্ঞান মন, দিন যায় শুন মন বলি রে তোমায়
মনুষ্য দুর্লভ জনম গেলে নি আর পাওয়া যায়? ধু–
মন রে ভাইবন্ধু দারাসুত রং বাজারে রং তামাসায়
সঙ্গের সাখী কেউ হবে না। যাইতে হবে একলায়।
ভবপাড়ি দিতে পারো শ্ৰী গুরু কান্ডারী নায়
অনুকুল বাতাসে তরী লাগাইছে কিনারায়।
চৈতন্য থাকিতে মন একবার ভাবে সে জনায়
সাকারেতে বিরাজিত আধারে আলোক দেখা যায়।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে কি করিলাম হায়রে হয়
না ভজিলাম গুরুর চরণ ঠেকালাম অকুল দরিয়ায়।

গো আ ১০১ (১২৪)

১৩০
হরি বলে ছাড়ো নৌকা তুফান দেখে ভয় করিও না
হরির নামে বোঝাইলে শমনের ভয় রবে না।
মণিপুরের দাড়ি ছয়জনা নৌকায় আছে আটজনা
আসিছে কলঙ্কী তুফান সাবধান মাল ছাড়িও না।
নদীর নাম কামনা-সাগর লাফে লাফে উঠে ঝড়
কত ধনীর ভরা খাইছে মারা নদীর এই ঘোর তুফানে
ভাইবে রাধারমণ বলে মন নৌকা ছাড়ো হরি বলে
হরি নামের ভরা নৌকার ডুবিবার ভয় থাকে না।

গো আ (৪৯); হা (২৭)

পাঠান্তর : হা (২৭)
আসিছে কলঙ্কী তুফান >আনিয়াছে কালিনী তুফান; মাল > হাল ভরা > ঘড়া মন নৌকা ছাড়ো হরি বলে… ভয় থাকে না> মনরে তুই রাইলি বসে, যে নায়ের কান্ডারী নিতাই সে তরী কখনো ডুবে না।

অপর রূপান্তর : গো আ (৪)

১৩১
হরি বলে ডাক মন রসনা।।ধু।।
ঐ নাম করলে স্মরণ হয় নিবারণ এ ভব যন্ত্রণা। চি।
দেখ হারির নামের গুণে প্রহ্লাদ না মাইল আগুনে
প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ডে স্থান পাইয়াছে প্ৰাণে তো মরল না।।১।।
হরি হরি হরি বলে শুদ্ধ গঙ্গার জলে
নামে পাষাণ গলিতো পারে মন আমার গলে না।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঠেকালাম ভবের মায়াজালে।
দয়াল গুরু যদি কৃপা করে পুরায় মনের বাসনা।।৩।।

রা / ১৩o…

১৩২
হরির নাম কর সার, ওরে বদন ভরে বলা হরি, মন পাখী আমার।
ভাই বন্ধু স্ত্রীপুত্র সকলি অসার।
আইতে এক যাইতে এক সঙ্গী নাই আমার।
ভবের ঘাটে আইস যাওয়া, ঠেকাবায় রে একবার।
বেইল থাকিতে দেওরে পাড়ি, সময় নাইরে আর।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে সকলই অসার।
দয়াল গুরু বিনে ভবাৰ্ণাবে বন্ধু নাই আমার।

রা/১০৭, য/১৭১

১৩৩
হরির নাম বিনে আর সকলি অসার দেখিস
না মন ভাইবে (ধু)।
হরি নামে যারা বান্ধিয়াছে ভারা যাচ্ছে তারা
পাল টাঙ্গায়ে (চি)
নাম চিন্তামণি, তরিতে অবনী আছে বান্ধা যে হৃদয়ে।
নামের ভরা ভরি, গাইয়ে নামের সারি যাচ্ছে
বাইয়ে রসিক নাইয়ে।
নামামৃত যার রসে আসিয়া থাকে
যারা মকর হইয়ে
জাহ্নবী সলিলে খেলি কৌতুহলে শুগড়ির
জলে রায় ছাপাইয়ে
পূৰ্ণানন্দ ধাম রাধাকৃষ্ণ নাম জপ মন রসনা রে
শ্ৰীরাধারমণ করবে গমন নামের বৈঠা হাতে নিয়ে।

য/১০৪

১৩৪
হরি হইয়ে কেন বলা হরি, তোমার ভাব কিছু বুঝিতে
না পরিবে, গউর চান্দ
কেন বলা হরি।
ব্ৰজলীলা সাঙ্গ কৈরে, গউর, চান্দ কেন আইলে
নৈদা পুরে, তুমি কি অভাবে হৈলায় দণ্ড ধারীরে।
গউরচান, হরি হইয়ে কেন বলা হরি।
মুখে বলে রা রা, গোরার দুই নয়ানে বহে ধারা
গৌরার বুকে ভেইসে যায় দুই নয়ানের জলে রে।
গৌরচান, হরি হইয়ে কেন বলা হরি।
ভেবে রাধারমণ বলে, গৌরচান পইড়ে আছি ভ্ৰান্তিমূলে
ভ্ৰান্ত চেতন কইরে সঙ্গে নেও আমারে রে গহুর চান
হরি হয়ে কোন বলা হরি।

রা/১৫৯, য/১৭৩

১৩৫
হরি হরি বলে ডাকরে মন রসনা
হরি নাম বিনা তোমার উপায় গতি দেখি না। ধু–
মায়ের উদরে যখন উর্ধ্বপদে ছিলে তখন
বলে এলে করবে সাধনা সেকথা কি মনে পড়ে না।
রোগে শোকে ধরে যখন নাম জপোত অনুক্ষণ
কাজ সারিলে বেহুস মন নামটি মুখে আসে না।
যখন ভুগো অনাহারে তখন ডাকো পরানভরে
আহার করে ঘুমের ঘোরে তার কথা ভাবো না।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে ভুগবে শেষে যন্ত্রণা–
ভোগে ভোগে কাল কটাইলা লয়ে শঠের মন্ত্রণা।

গো আ ৬০ (৭০)

১৩৬
হরে কৃষ্ণ নাম জপ অবিরাম নামে বিরাম দিও না।
নামে বিরাম দিও না, হরিনামে বিরাম দিও না।
গোলোকের ধন নাম সংকীর্তন করে মন সাধনা
সবে বলা হরি প্ৰেমে গড়াপীড়ি এমন দিন আর হবে না।
নাম অমূল্য ধন করা হে যতন, অযতনে রেখা না।
অস্তিমের বল, হরিনাম সম্বল, নিজের সম্বল বান্ধ না
নাম পরম ব্ৰহ্মা, জীবের মোক্ষ ধর্ম, বদন ভরে বল না।
রাধারমণ কয়, নাম নিলে হয়, ত্রিতাপ জ্বালা সান্ত্বনা।

য/ ১৭৪

১৩৭
তাল লোভা
হরেকৃষ্ণ নাম বিনে নিত্যধন নাই সংসারে।।ধু।।
মনরে জীবনযৌবন শ্ৰীপুত্ৰধান
অন্তিমকালে কেহ কারো সঙ্গে যাবে না রে।।চি।।
বিধিভব আদিদেব গন্ধৰ্বদি চরাচরে
মন রে শ্ৰীহরিপদ নিত্যসম্পদ
মুনি ঋষির আগমনিগম বেদ বিচারে।।১।।
হরি শ্রবণ কীৰ্তন স্মরণ মনন নামে বিরাম দিওনা রে
হরিচিত্ত খনি পরশমণি নারদমুনি
দেখেছেন নাম উজ্জ্বল করে।।২।।
নাম নিলে হয় প্রেমের উদয় ত্ৰিতাপজ্বালা যায় দুরে
হরিনামে রতি শুদ্ধভক্তি রাধারমণ কহে কাতরে।।৩।।

রা/৪৬

১৩৮
তাল খেমটা
হরে কৃষ্ণ বলরে ভাই (ধু)
ভাব রোগের মহৌষধি আনিয়াছেন গৌর নিতাই। (চি)
নাম চিন্তামণি কৃষ্ণগুরু বেদগানে পাই
নামে জন্মমৃত্যু কৈরে বারণ অন্তে গোলকধামে যাই।
ব্রহ্মা শিব অনস্তাদি তারা হরি গুণ গায়
নামের তত্ত্ব জাইনে মত্ত হইল গাউর নিতাই দুইটি ভাই।
শ্ৰীরাধারমণে ভনে গুরু বাক্য অনুযাই
ভাব সিন্ধু তরিবারে নাম বিনে আর গতি নাই।

য/১০৫

১৩৯
হরে কৃষ্ণ রাম বলরে মন
হরি নামের সমান নাই অন্য ধন। (ধু) দ
ধনী মানী পার করে না
হরিনাম পতিত পাবন।। চি।।
হরিনাম নিয়ে নারদ বৈরাগী, ঐ নামে মহাদেব যোগী
নামের গুণে অগ্নিকুন্ডে প্ৰভুদের না হয় মরণ।
সুখের সময় সুহৃদ সুজন, শ্ৰীপুত্র বান্ধব রতন
কালের পাশে মিলে শেষে, হরিনাম পতিতপাবন।
ভবাসাগরে রসিক নাইয়ে, নামের অন্তরী চলছে বাইয়ে।
রাধা নামে বাদাম দিয়ে সাইড় গায় রাধারমণ।

য/১০৬

১৪০
হরেকৃষ্ণ হরিনাম লও রে মন দুরাচার
ঐ নাম না লইলে জীবন অসার।।
ঝমকে পানি উঠে নাও তুমি কার ভরসায় বৈঠা বাও রে
তোমার অর্ধেক নৌকা হইয়া গেল তল রে।
যে আছিল মাঝি বেটা সে ফালাইয়া গোল বৈঠা
তোমার ভাইবন্ধু সবাই রইল চাইয়া রে।
যখন আসবে রবির নন্দন তোমার হস্তেপদে করবে বন্ধন রে
মন রে তখন তুমি দিবায় কার দোহাই রে।
উপরে মেঘের ছটা বিষম বিজলী ঠাঠা রে
রাধারমণ বলে হইবায় ভাব পার রে।

রা/১০৬, গো আ (৬৬)
গো আ প্ৰথম চরণ—‘কৃষ্ণ নাম লও রে মন দুরাচার’

১৪১
হরে রাম হরে বলছে মধুর স্বরে
ষোল নাম বত্ৰিশ অক্ষর গুরু দিলা মোরে নিজে কৃপা করে।
এগো লাভেমূলে সব হারাইলাম এ দোষ দিতাম করে।
লাভ করিতে আইলাম আমি ভবের বাজারে
এগো লাভে মূলে সব হারাইলাম এ দোষ দিতাম কারে
ভেবে রাধারমণ বলে এই বাসনা মনে
এগো কৃপা করি দয়ালগুরু তরাই নেও আমারে।

শ্যা/১

১৪২
হারাইল মূল লাভের আশে ভাবে এসে মন রে পাগল।।ধু।।
পরের ধনে হইয়া ধনী এসেছ এ অবনী, মন রে
দিনে দিনে নাই আমদানী সদায় হানি রিপুর বশে
দারা সুত রাজ্য ধন যার জন্যে যায় বৃথায় জীবন, মন রে
যখন আইসে শমন তখন কি কেহ আসবে পাশে
সাঙ্গ করা ভবের খেলা হাতে কর নামের মালা, মন রে
রাধারমণ বলে আর নাই বেলা একলা যাওয়া দূর দেশে।

য/১০৮

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *