০৭. গ্রামীণ ও নগর সভ্যতা এবং সংস্কৃতির প্রকৃতি

গ্রামীণ ও নগর সভ্যতা এবং সংস্কৃতির প্রকৃতি

আগেই বলিয়াছি, নগরগুলি ব্যাবসা-বাণিজ্যলব্ধ ধনের প্রধান সঞ্চয়-কেন্দ্র ছিল; তাহা ছাড়া গৃহশিল্প ও কৃষিলব্ধ ধনের প্রধান বণ্টন-কেন্দ্রও ছিল নগরগুলি। তাহার ফলে সামাজিক ধনের অধিকাংশই কেন্দ্রীকৃত হইত নগরে এবং অল্পসংখ্যক নগরবাসীই সেই ধনের অপেক্ষাকৃত অধিকাংশ ভোগের সুযোগ ও অধিকার লাভ করিত। ইহাই নগরগুলির ঐশ্বর্য, বিলাস ও আড়ম্বরের মূলে। বস্তুত, পাল ও সেন আমলের লিপি ও সমসাময়িক সাহিত্যপাঠে মনে হয়, নগর ও গ্রামের প্রথম এবং প্রধান পার্থক্যই যেন নির্ণীত হইত ঐশ্বর্য বিলাসাড়ম্বরের তারতম্যদ্বারা। রামচরিতে রামাবতীর এবং পবনদূতে বিজয়পুরের বর্ণনায় দেখিতেছি, রাজপথের দুইধারে চলিয়াছে প্রাসাদের শ্রেণী, নগরে সঞ্চিত প্রচুর মণিরত্ন সম্ভার। রাজতরঙ্গিনী-গ্রন্থে পুণ্ড্রবর্ধন নগরের নাগরিকদের ধনৈশ্বর্যের বর্ণনা আছে বাররামা নর্তকী কমলার গল্প প্রসঙ্গে; কিন্তু তাহারও আগে তৃতীয়-চতুর্থ শতকে বাঙলাদেশের নগরগুলি যখন সদাগরী বাণিজ্যলব্ধ ধনে সমৃদ্ধ তখন বাৎস্যায়ন এদেশের নগর ও নগর সভ্যতার কিছু আভাস রাখিয়া গিয়াছেন। বাৎস্যায়নের কামসূত্র সমসাময়িক ভারতীয় নাগর-সভ্যতার ইতিহাস এবং নাগর যুবক-যুবতীদের অনুশীলন-গ্ৰন্থ। তিনি এই নাগর-সভ্যতারই জয়গান করিয়াছেন এবং নাগরাদর্শকেই বিদগ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতির আদর্শ বলিয়া পাঠকের সম্মুখে তুলিয়া ধরিতে চেষ্টা করিয়াছেন, তদানীন্তন শিক্ষা, রুচি ও সংস্কারানুযায়ী। বাঙলাদেশের সমসাময়িক নাগর-সভ্যতা সম্বন্ধেও তাহার কিছু বক্তব্য আছে। গৌড়ের নগরপুষ্ট অবসরসমৃদ্ধ নরনারীদের ক্যামলীলা ও ঐশ্বর্যবিলাসের সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুস্পষ্ট চিত্র তিনি রাখিয়া গিয়াছেন। গৌড় নাগরকেরা যে লম্বা লম্বা নখ রাখিতেন এবং সেই নখে রং লাগাইতেন যুবতীদের মনোহরণ করিবার জন্য, তাহাও বাৎস্যায়ন লিখিয়া যাইতে ভুলেন নাই। গৌড় ও বঙ্গের রাজপ্রাসােদান্তঃপুরের নারীরা প্রাসাদের ব্ৰাহ্মণ, রাজকর্মচারী, ভৃত্য ও দাসদের সঙ্গে কিরূপ লজ্জাকর কামষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইতেন তাহার সাক্ষ্যও বাৎস্যায়ন দিতেছেন। নাগর অভিজাত শ্রেণীর অবসর এবং স্বল্পায়াসলব্ধ ধনপ্রাচুর্য তাহাদিগকে ঐশ্বৰ্য্য-বিলাস এবং ক্যামলীলার চরিতার্থতার একটা বৃহৎ সুযোগ দিতা; বাৎস্যায়নে তাহার আভাস সুস্পষ্ট। অভিজাত গৃহে নর্তকী-বিলাসের ইঙ্গিতও বাৎস্যায়ন দিয়াছেন। কিন্তু শুধুই বাৎস্যায়ন নহেন; কহলন তাহার রাজতরঙ্গিনীতে অষ্টম শতকের পুণ্ড্রবর্ধন-নগরের নর্তকী কমলার কথা বলিতেছেন। কমলা নগরের কোনও মন্দিরের দেবদাসী বা নর্তকী ছিলেন, নৃত্যে-গীতে সুদক্ষা এবং অন্যান্য কলাবিদ্যায় নিপুণ। বস্তুত, বাৎস্যায়ন এই সব নর্তকী ও সভােনারীদের যে-সব কলানিপুণতা থাকা প্রয়োজন বলিয়া বৰ্ণনা করিয়াছেন, কমলার তাহাই ছিল। অভিজাত নাগর যুবকদের মনোরঞ্জন করিয়া কমলা প্রচুর ধনৈশ্বর্যের অধিকারিণী হইয়াছিলেন। সমসাময়িক নাগর অভিজাত সমাজে এই প্রথা কিছু নিন্দনীয় ছিল না। তাহা না হইলে সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিতে এবং ধোয়ী-কবি পবনদূতে যে-ভাষায় নাগর-বাররামাদের স্তুতিবাদ করিয়াছেন তাহা কিছুতেই হয়তো সম্ভব হইত না; বরং ইহাদের বর্ণনা হইতে মনে হয়, নাগর অভিজাত সমাজে নর্তকী, সাভানারী, বাররামা, দেবদাসীরা অপরিহার্য অঙ্গ বলিয়াই বিবেচিত হইতেন। ভট্ট ভবদেবের প্রশস্তি, বিশ্বরূপ ও কেশবসেনের লিপিগুলিতেও ইহাদের উচ্ছসিত স্তুতিবাদের সাক্ষাৎ মেলে। বিজয়সেন (দেওপাড়া লিপি) ও ভট্ট ভবদেব তাহাদের নির্মিত মন্দিরে শত শত দেবদাসী নিযুক্ত করিয়াছিলেন; তাহাদের সৌন্দর্য ও কামাকৰ্ষণ বর্ণনায় প্রশস্তিকারেরা অজস্ৰ স্তুতিবাদ বর্ষণ করিয়াছেন। রামাবতীর নারীদের সম্বন্ধে রামচরিতের কবিও তাহাই করিয়াছেন।

নাগরিক ঐশ্বর্যবিলাসাড়ম্বরের চিত্র এইখানেই শেষ নয়। নানাপ্রকার সূক্ষ্ম বস্ত্ৰ, মণিরত্নখচিত ধাতব অলঙ্কার, স্বর্ণ ও রৌপ্যের তৈজসপত্র, প্রাসাদোপম সৌধাবলী, মন্দির ইত্যাদির বর্ণনায় দশম-একাদশ শতক-পরবর্তী লিপিগুলি এবং সমসাময়িক নাগর-সাহিত্য প্রায় ভারাক্রান্ত। সপ্তম শতকে ইৎসিঙ প্রয়োজন ও ক্ষমতার অতিরিক্ত বৃহৎ সমাজিক ভোজের অপব্যবস্থার কথাও বলিয়াছেন; বাঙলাদেশের গ্রামে নগরে সর্বত্র এই বৃহৎ সামাজিক অপব্যয় আজও অব্যাহত চলিতেছে। বিজয়সেনের দেওপাড়া প্রশস্তিতে একটি অর্থবহ শ্লোক আছে। গ্রাম্য ব্রাহ্মণ মেয়েরা মুক্তা, স্বর্ণ, রৌপ্য, মরকত প্রভৃতি দেখিতে অভ্যস্ত ছিলেন না; কার্পাস-বীজ, শাকপত্র, অলাকৃপাম্প, দাড়িম্ব-বীচি, কুষ্মাণ্ডপুষ্পই তাহাদের অধিকতর পরিচিত। কিন্তু বিজয়সেনের কল্যাণে অনেক ব্ৰাহ্মণ-পরিবার নগরবাসী হইয়াছিলেন এবং বিত্তবানও হইয়াছিলেন। তখন নাগরীরা (নাগরীভিঃ) ব্রাহ্মণীদের মুক্তা, রৌপ্য, স্বর্ণ, মরকত প্রভৃতি চিনিতে শিখাইয়াছিলেন। ইহার মধ্যে কবিজনোচিত অত্যুক্তি আছে সন্দেহ নাই; কিন্তু গ্ৰাম্য নারী এবং নগরের নাগরীদের প্রকৃতি-পার্থক্যের যে-ইঙ্গিত আছে তাহাও লক্ষণীয়।

সদুক্তিকর্ণামৃত-গ্রন্থের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন শ্লোকে গ্রাম্য ও নাগর সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রকৃতি-পার্থক্য খুব সুন্দর ফুটিয়াছে। আপেক্ষিক তুলনার জন্য এই শ্লোকগুলি পর পর উদ্ধার করা যাইতে পারে।

পল্লীগ্রামের লোকেরা নগরবাসিনীদের চালচলন পছন্দ করিতেন না। কবি গোবর্ধনাচার্য বলিতেছেন :

ঋজুনা নিধেহিচরণৌ পরিহর সখি নিখিলনাগারাচারম ৷
ইহ ডাকিনীতি পল্লীপতিঃ কটাক্ষেহপি দণ্ডয়তি ৷।
ওগো সখি, ঋজুভাবে পদক্ষেপ করিয়া চল, নাগরাচার সব পরিত্যাগ করা। কটাক্ষপাত করিলেও গ্রামপতি এখানে ডাকিনী বলিয়া ভৎর্সনা করে।

এই প্রকৃতি-পার্থক্য এখনও কি সত্য নয়? ইহারই সঙ্গে বঙ্গীয় (অর্থাৎ পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গীয়) নগরবাসিনী গৃহস্থ বারাঙ্গনাদের বেশভূষার বর্ণনা উদ্ধার করা যাইতে পারে। জনৈক অজ্ঞাতনামা কবি বলিতেছেন :

বাসঃ সূক্ষ্মং বপূষি ভূজয়োঃ কাঞ্চনী চাঙ্গদীশ্ৰীর
মালাগর্ভঃ সুরভিমসূণৈর্গন্ধ তৈলৈঃ শিখণ্ডঃ।
কৰ্ণোত্তংসে নবশশিকলা নিৰ্মলং তালপত্ৰং
বেশঃ কেষাং ন হরতি মনো, বঙ্গবারাঙ্গনাম ৷।
দেহে সূক্ষ্ম, ভূজবন্ধে সোনার অঙ্গদ, গন্ধতৈলের সুরভিযুক্ত মসৃণ কেশ শিখণ্ড বা চূড়ার মতো করিয়া বাঁধা এবং তোহা মালাগর্ভ (অর্থাৎ ফুলের মালা কেশচূড়ায় জড়ান); কর্ণালতিকায় নবশশিকলার মতো নির্মল তালপাতার অলঙ্কার-বঙ্গবারাঙ্গনাদের এই বেশ কাহার না মন হরণ করে!

অথচ, ইহারই পাশে পাশে জনৈক কবি চন্দ্ৰচন্দ্রের পল্লী-বিলাসিনীদের বর্ণনা লক্ষণীয়–

ভালে কজ্জ্বল বিন্দুরিন্দু কিরণস্পধী  মৃণালাঙ্কুরো
দোৰ্বল্লীষু শলাটুফেনিলফলোত্তংসশাচ কর্ণাতিথিঃ।
ধম্মিল্লস্তিলপল্লবাভিষবণম্বিন্ধঃ স্বভাবাদয়ং
পাস্থান মন্থরয়তনাগর বন্ধুবৰ্গস্য বেশগ্ৰহঃ ॥
কপালে কজ্জ্বলবিন্দু, হস্তে ইন্দুকিরণস্পর্শী শ্বেত পদ্মডাটার বলয়, কৰ্ণে কোমল রীঠাফুলের কর্ণাভরণ, কেশ স্নানস্নিগ্ধ এবং কবরীতে তিলপল্লব নিবদ্ধ–পল্লীবধুদের এই বেশ স্বতঃই পান্তদের গমন মন্থর করিয়া আনে।

কবি শুভঙ্ক বলিতেছেন, নগরে রাজসৌধাবলীর বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণে যুবতীদের ক্রীড়াযুদ্ধে ছিন্নহারের মুক্তাসমূহ বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িতে থাকে। সেখানে ‘বিলাসগৃহে পিঞ্জীরস্থিত শুক’; রাজপ্রাসাদে মূল্যবান প্রস্তরখচিত ফুল, কণ্ঠহার, কর্ণাঙ্গুরী, স্বর্ণখচিত বলয় এবং নুপুর পরিধান করিয়া ভূত্যাঙ্গনারা ঘূরিয়া বেড়ায়; নগর প্রাসাদশিখরে দাঁড়াইয়া নগররাঙ্গনারা নিম্নে রাজপথে চলমান সুদৰ্শন যুবকের উপর কামকটাক্ষ নিক্ষেপ করেন। (সদুক্তিকর্ণামৃত)।

অথচ, অন্যদিকে গ্রাম্যজীবনের একাংশে নিষ্করুণ দারিদ্র্য। কবি বার ও অন্য একজন অজ্ঞাতনামা কবি এই দারিদ্র্যের ছবিও আমাদের জন্য রাখিয়া গিয়াছেন। অন্যত্র এই শ্লোক দুইটি উদ্ধার করা হইয়াছে (রাষ্ট্রবিন্যাস-অধ্যায়ের উপসংহার দ্রষ্টব্য)। জীবনের সেই দিকটায়

“নিরানন্দে দেহ শীর্ণ, পরিধানে জীর্ণবস্ত্র; ক্ষুধায় শিশুদের চক্ষু ও পেট কুক্ষিগত, আকুল হইয়া তাহারা খাদ্য প্রার্থনা করিতেছে। দীনা দুঃস্থ গৃহিণী চক্ষুর জলে আনন ধৌত করিয়া প্রার্থনা করিতেছেন, এক মান তণ্ডুলে যেন তাহাদের একশত দিন চলে।’

আর একটি পরিবারেও একই চিত্ৰ।

“শিশুরা ক্ষুধায় পীড়িত, তাহাদের দেহ শবের মতো শীর্ণ, আত্মীয়-স্বজনেরা মন্দাদর, পুরাতন ভগ্ন জলপাত্রে একফোটা মাত্র জল ধরে; গৃহিণীর পরিধানে শতচ্ছিন্ন বস্ত্ৰ’
(সদুক্তিকর্ণামৃত)।

গ্রাম্য সমৃদ্ধির ছবিও আছে। তেমন দুইটি শ্লোক দেশ-পরিচয় অধ্যায়ে জলবায়ু বর্ণনা-প্রসঙ্গে উদ্ধার করিয়াছি। একটি ছবি এইরূপ :

‘বর্ষায় প্রচুর জল পাইয়া ধান চমৎকার গজাইয়া উঠিয়াছে; গরুগুলি ঘরে ফিরিয়া আসিয়াছে; ইক্ষুর সমৃদ্ধিও দেখা যাইতেছে। অন্য কোনো ভাবনা আর নাই। ঘরে গৃহিণী সারাদিনের শেষে প্রসাধনরতা। বাহিরে আকাশ হইতে জল ঝরিতেছে প্রচুর। গ্ৰাম্য যুবক সুখে নিদ্রা যাইতেছে।‘

অন্য আর একটি ছবি :

‘হেমন্তে কাটা শালি ধান্যে চাষীর গৃহাঙ্গন স্তুপীকৃত; নবজাত শ্যামল যাবান্ধুর ক্ষেত্ৰসীমা ছাড়াইয়া যেন বিস্তৃত; গরু, র্যাড় ও ছাগলগুলি ঘরে ফিরিয়া আসিয়া নূতন খড় খাইয়া তৃপ্তি ও আনন্দ পাইতেছে; গ্রামগুলি ইক্ষুপেষণযন্ত্রের শব্দে মুখর আর নূতন গুড়ের গন্ধে আমোদিত (সদুক্তিকর্ণামৃত)।

বস্তুত, প্রাচীন বাঙলার কৃষিজীবী গ্রাম্য বাঙালী গৃহস্থের পরম এবং চরম কামনাই হইতেছে, ‘বিষয়পতি অর্থাৎ স্থানীয় শাসনকর্তা যেন লোভহীন হন, ধেনুদ্বারা গৃহ যেন পবিত্র হয়, ক্ষেত্রে যেন চাষ হয়, এবং গৃহিণী যেন অতিথিসৎকারে কখনও ক্লান্ত না হন। কবি শুভাঙ্ক পল্লীবাসী ভদ্র গৃহস্থের এই কামনাটি ব্যক্ত করিয়াছেন (সদুক্তিকর্ণামৃত)।

বিষয়পতিরলুদ্ধো ধেনুভির্ধাম পূতং
কতিচিন্দভিমতায়াং সীম্নি সীরা বহন্তি।
শিথিলয়তি চ ভাৰ্যা নাতিথেয়ী সপর্যাম
ইতি সুকৃতমানেন ব্যঞ্জিতং নঃ ফলেন ৷

লক্ষ্মণসেনের সুহৃদ ও সভা-কবি শরণ গ্রাম্যজীবনের আর একটি ছবি রাখিয়া গিয়াছেন; এই ছবিটি উদ্ধার করিয়াই এই অধ্যায় শেষ করা যাইতে পারে। ছবিটি সুন্দর, বস্তুনির্ভর এবং চমৎকার কাব্যচিত্রময়।

এতাস্তা দিবাসাম্ভভাস্করসদৃশ্যে ধাবন্তি পৌরাঙ্গনাঃ
স্কন্ধপ্রস্থলদংশুকাঞ্চলধূতিব্যাসঙ্গবদ্ধান্দরাঃ।
প্রান্তৰ্যাতকৃষীবালাগামভিয়া প্রোৎপুত্যবর্তৃচ্ছিদো
হট্টক্রয্যপদার্থমূল্যকলন বাগ্রাঙ্গুলিগ্রন্থয়ঃ ৷। (সদুক্তিকর্ণামৃত)

এই তো দ্রুত ছুটিয়া চলিয়াছে পৌরাঙ্গনারা; তাহাদের চক্ষু দিবসােন্ত সূর্যের মত (অরুণবর্ণ); দ্রুত গমন হেতু তাঁহাদের স্কন্ধের অঞ্চল বারংবার খসিয়া পড়িতেছে আর বার বার তাহা তুলিয়া দিবার জন্য তাহারা ব্যগ্ৰ। ঘরের চাষী (স্বামী-পুত্ৰ-ভ্রাতারা) প্ৰাতঃকালে বাহির হইয়া গিয়াছে (মাঠের কাজে); তাহাদের (ঘরে) ফিরিয়া আসিবার সময় হইয়াছে ভাবিয়া মেয়েরা লাফাইয়া লাফাইয়া পথ ছেদন করিতেছে (অর্থাৎ সংক্ষেপ করিয়া আনিতেছে), (অথচ সেই অবস্থাতেই) তাহারা হাটে ক্রয়-বিক্রয়ের মূল্য আঙ্গুলো গুণিতে ব্যস্ত।