০৩. কয়েকটি প্রধান প্রধান গ্রামের বিবরণ

কয়েকটি প্রধান প্রধান গ্রামের বিবরণ

পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিম-বাঙলার গ্রাম লইয়াই আরম্ভ করা যাক। ঔদুম্বরিক বিষয়ের বপ্যঘোষবাট গ্রামের কথা আগেই বলিয়াছি। মল্লসরুল লিপিতে কয়েকটি বাটক-পাটক এবং অগ্রহার গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যাইতেছে। নয়পালের ইর্দা লিপিতে বৃহৎ-ছত্তিব্যগ্লা নামে এক গ্রামের উল্লেখ আছে; এই গ্রাম ছিল বর্ধমান ভুক্তির দণ্ডভুক্তিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত। বৃহৎ-ছত্তিব্যগ্লা নাম দেখিয়া মনে হয়, ক্ষুদ্রছত্তিবান্না গ্রামও একটি ছিল। ছত্তিবগ্ন বাঁকুড়া জেলার চণ্ডীদাসম্মুতি-বিজড়িত ছাতনা কিংবা সুবৰ্ণরেখা নদী তীরবর্তী ছাতনা গ্রাম হওয়া অসম্ভব নয়। ভোজবৰ্মার বেলাব লিপিতে উত্তর রাঢ়ের অন্তর্গত সিদ্ধল গ্রামের উল্লেখ আছে; ভট্ট ভবদেবের প্রশস্তিতে এই গ্রামকে আর্যাবর্তের ভূষণ, সমস্ত গ্রামের অগ্রগণ্য এবং রাঢ়লক্ষ্মীর অলংকার বলিয়া বৰ্ণনা করা হইয়াছে। প্রাচীন সিদ্ধল গ্রাম এবং বর্তমান বীরভূম জেলার লাভপুর থানার অন্তর্গত সিদ্ধল গ্রাম এক এবং অভিন্ন, এ-বিষয়ে সন্দেহ করিবার কারণ নাই। পূর্বোক্ত লিপিতেই ইঙ্গিত করা হইয়াছে যে সাবর্ণগোত্রীয় বেদবিদ ব্ৰাহ্মণদের আবাসস্থল বলিয়া এই গ্রামের একটা বিশেষ মর্যাদা ছিল। উত্তরাঢ়মণ্ডলের স্বল্পদক্ষিণবীথির অন্তর্গত বাল্লহিটুঠা নামে আর একটি গ্রামের ভৌগোলিক বিন্যাসের একটু বিস্তৃততর খবর পাওয়া যাইতেছে বল্লালসেনের নৈহাটি লিপিতে। বাল্লহিটুঠা বর্তমান নৈহাটির ৬ মাইল পশ্চিমে বালুটিয়া গ্রাম। এই বাল্লিহিটুঠ গ্রামের চতুঃসীমা এই ভাবে দেওয়া হইয়াছে : ১. খণ্ডয়িল্লা (বর্তমান খাড়ালিয়া) গ্রামের উত্তর দিক দিয়া যে সিঙ্গটিয়া নদী প্রবহমানা তাহার উত্তরে; নাড়িচা গ্রামের উত্তর দিক দিয়া এরই সিঙ্গটিয়া প্রবহমানা, তাহারও উত্তর-পশ্চিমে; ২. অম্বয়িল্লা (বর্তমান অম্বল গ্রাম) গ্রামের পশ্চিম বাহিয়া এই একই নদী প্রবহমানা, তাহার পশ্চিমে; ৩. কুড়ুম্বমাির দক্ষিণ সীমালির দক্ষিণে; কুড়ম্বমাির পশ্চিমে পশ্চিমাভিমুখী সীমালিরও দক্ষিণে; আউহাগডিয়ার দক্ষিণ গোপথেরও দক্ষিণে; এই আউহাগডিয়ার উত্তর দিকে আর একটি গোপথ, এই গোপথ হইতে একটি সীমালি সোজা পশ্চিম অভিমুখী হইয়া সুরকোণাগডিয়াকিয়ের উত্তর সীমালিতে গিয়া মিশিয়াছে, তাহারও দক্ষিণে; ৪. নাডিনা গ্রামের পূর্ব সীমালির পূর্বে; জলসোখী গ্রামের (বর্তমান মুর্শিদাবাদে ঐ নামীয় গ্রাম) পূর্ব গোপথেরও কতকটা পূর্বে; মোলাড়ন্তী (বর্তমান মুড়ুন্দি) গ্রামে পূর্বদিকে সিঙ্গটীয়া নদী পর্যন্ত যে গোপথ, তাহারও কথঞ্চিৎ পূর্বদিকে। খাণ্ডয়িল্লা (খান্ডুলিয়া), অম্বয়িল্লা (অম্বলগ্রাম), জেলাসোথী (বর্তমানেও ঐ নাম), মোেলাড়ন্তী (মুড়ুন্দি) এবং বাল্লহিটুঠা (বালুটিয়া) গ্রাম তাহাদের প্রাচীন নামস্মৃতি লইয়া এখনও বিদ্যমান; ইহাদের বর্তমান সংস্থান হইতে প্রাচীন বাঙলার গ্রাম-সংস্থানের কতকটা আভাস পাওয়া যায়। লক্ষ্মণসেনের গোবিন্দপুর পট্টোলীতে বিডডােরশাসন নামে আর একটি গ্রামের পরিচয় পাইতেছি; এই গ্রাম বর্ধমানভুক্তির পশ্চিমখাটিকাভুক্ত বেতডডচতুরকের (হাওড়া জেলার বর্তমান বেতড়) অন্তর্গত। বিডডাশাসন গ্রামের পূর্বার্ধ সীমা স্পর্শ করিয়া জাহ্নবী নদী (বর্তমান হুগলী নদী) প্রবহমানা; দক্ষিণে লেংঘদেব মণ্ডপী (শিবলিঙ্গ মন্দির?); পশ্চিমে একটি ডালিম্বক্ষেত্র সীমা; উত্তরে ধর্মনগর সীমা। এই রাজারই শক্তিপুর শাসনে আরও কতকগুলি গ্রামের পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। উত্তররাঢ়ের কঙ্কগ্রামভুক্তির (বর্তমান কাকজোল অঞ্চল) মধুগিরিমণ্ডলের (বর্তমান মহুয়াগঢ়ি, কাকজোলের ২২ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে) কুন্তীনগর-প্রতিবদ্ধ (বর্তমান কুন্ধীর, মহুয়াগঢ়ি হইতে ২০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে, বীরভূম জেলার রামপুরহাট থানায়), দক্ষিণ-বীথীর অন্তর্গত কুমারপুর চতুরক। মোর বা বর্তমান ময়ূরাক্ষী নদীর ৩২ মাইল উত্তরে মৌরেশ্বর থানার অন্তর্গত কুমারপুর গ্রাম এখনও বিদ্যমান। যাহাই হউক। এই চতুরকের অন্তর্গত পাঁচটি পাটকের উল্লেখ শক্তিপুর শাসনে আছে, যথা বারহকোণা, বাল্লিহিটা, নিমা, রাঘবহট্ট এবং ডামরবড়াবদ্ধ বিজহারপুর পাটক। বারহকোণা সিউড়ি থানার বারকুণ্ডা (মোর নদীর আধ মাইল উত্তরে), বা মৌরেশ্বর থানার বারণ (মোর নদীর উত্তরে), অথবা মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার পাচগুপীর সন্নিকটে বারকোনার সঙ্গে এক এবং অভিন্ন বলিয়া বিভিন্ন পণ্ডিতেরা মত প্ৰকাশ করিয়াছেন। নিমা এবং বাল্লিহিটা যথাক্রমে বর্তমান নিমা এবং বলুটি (মৌরেশ্বর থানা) গ্রামের সঙ্গে এক এবং অভিন্ন বলিয়া প্রস্তাবিত হইয়াছে। বারকুণ্ডা, বারণ, নিমা এবং বলুটি প্রত্যেকটি গ্রামই বর্তমানে মোর নদীর উত্তরে; অথচ শক্তিপুর শাসনে ইহারা এই নদীর দক্ষিণে বলিয়া উক্ত হইয়াছে। হইতে পারে ময়ূরাক্ষী-মোর প্রবাহপথ পরিবর্তন করিয়া পুরাতন গ্রাম ধ্বংস করিয়া দিয়াছিল, কিন্তু পুরাতন নামগুলি বিলুপ্ত করিতে পারে নাই; পরে ঐ নামগুলি আশ্রয় করিয়া নূতন গ্রামের পত্তন হইয়াছে। যাহাই হউক, শক্তিপুর শাসনে দেখিতেছি, বাহরকোণা, বাল্লিহিটা, নিমা এবং রাঘবহট্ট এই চারিটি গ্রাম একত্র সংলগ্ন, এবং এক সঙ্গে একই চতুঃসীমার মধ্যে উল্লিখিত ও বর্ণিত হইয়াছে। এই চারিটি গ্রামের (চতুরকের?) পূর্বদিকে অপরাজোলী (পশ্চিম খাল?) সমেত মালিকুণ্ডা (গ্রামের) ভূমি; দক্ষিণে ব্ৰহ্মস্থল অন্তর্গত ভাগড়ীখণ্ডের ভূমি; পশ্চিমে আচ্ছমা গোপথ; উত্তরে মোর, নদী সীমা। বিজহারপুর পাটকের পশ্চিমে লাঙ্গলজোলী (লাঙ্গল-খাল?); উত্তরে পরজণ গোপথ; দক্ষিণে বিপ্রবদ্ধজোলী; পূর্বে চাকুলিয়া-জোলী। আর একটি গ্রামের উল্লেখ করিয়াই পশ্চিম-বাঙলার গ্রাম-বর্ণনা শেষ করা যাইতে পারে। ভূরিসৃষ্টি গ্রামের কথা আগেই বলিয়াছি। কৃষ্ণমিশ্রের প্রবোধচন্দ্ৰোদয় নাটকেও রাঢ়দেশান্তৰ্গত ভূরিশ্রেষ্ঠিকা নামে সুপ্ৰসিদ্ধ গ্রামের উল্লেখ আছে (একাদশ শতক)। হুগলী জেলার দামোদর নদের দক্ষিণ তীরে এই গ্রাম আজও ভুরসুট নামে পরিচিত; সমস্ত মধ্যযুগ ধরিয়া এই গ্রাম ব্ৰাহ্মণ্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি বড় কেন্দ্র ছিল। অষ্টাদশ শতকের বাঙলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায় ভুরসুটের জমিদার নরেন্দ্র রায়ের পুত্র ছিলেন। অন্নদামঙ্গলে আছে :

ভূরিশিতে ভূপতি নরেন্দ্র রায় সুত।
কৃষ্ণচন্দ্ৰ পাশে রবে হয়ে রাজচ্যুত ৷

ভারতচন্দ্রের সত্যপীরের কথায়ও এই গ্রামের উল্লেখ আছে। মুসলমান ঐতিহাসিকেরা এই গ্রামকে ভোসট বলিয়া জানিতেন।

 

পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গ

পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গের কয়েকটি গ্রামের একটু পরিচয় এইবার লওয়া যাইতে পারে। ষষ্ঠ শতকের বৈন্যগুপ্তের গুণাইঘর লিপিতে উত্তরমণ্ডলভুক্ত কন্তেড়দক গ্রামের একটু বিবরণ পাওয়া যাইতেছে। এই গ্রামের ভৌগোলিক সংস্থান আগেই কতকটা উল্লেখ করা হইয়াছে। গ্রামটি মহাযানিক অবৈবর্তিক ভিক্ষুসংঘের একটি বড় কেন্দ্র ছিল এবং অন্তত দুইটি বৌদ্ধ-বিহারও ছিল এই গ্রামে। তাহা ছাড়া প্ৰদ্যুন্নেশ্বরের একটি মন্দিরও ছিল। গ্রামটির অবস্থিতি যে নিম্নশায়ী জলাভূমিতে এই সম্বন্ধে লিপিগত সংবাদ কোনও সংশয়ই রাখে না। বিহারটির চতুঃসীমায় নৌযোগ, নৌখাট, নৌযোগখাট, বিলাল (বিল), খাল এবং হজিকখিলভূমিই তাহার প্রমাণ। নৌযোগ, নৌখট ইত্যাদির উল্লেখ হইতে মনে হয়, ছোট বড় নৌকা ইত্যাদির বৃহৎ আশ্রয়ও ছিল এই গ্রামে। গঞ্জ বা বন্দর ছিল বলিয়াই হয়তো এই সব নৌযোগ, নৌখট ইত্যাদি গড়িয়া উঠিয়াছিল। বর্তমান ত্রিপুরার ভাটি অঞ্চলে তোহা কিছু অসম্ভবও নয়। এই শতকেই ফরিদপুরের কোটালিপাড়া অঞ্চলে কয়েকটি গ্রামের পরিচয় পাওয়া যাইতেছে গোপচন্দ্ৰ-ধর্মাদিত্য-সমাচার দেবের পট্টোলীগুলিতে। বারকমণ্ডলের একটি গ্রামে বহু ভূমি পতিত পড়িয়াছিল; নিম্নভূমিও ছিল প্রচুর, এবং সেখানে বন্য জন্তুরা চরিয়া বেড়াইত; সেই ভূমি হইতে রাজকোষে কোনও অর্থাগম হইত না। কাজেই রাজা যখন.সেই ভূমি কর্মকার্যের জন্য বিক্রয় করিলেন তখন তাহার অর্থলাভ ও পুণ্যসঞ্চয় দুইই হইল। বিক্ৰীত ভূমির পূর্বদিকে ছিল একটি পিশাচৗধুষিত পার্কটি বা পাকুড় গাছ; দক্ষিণে বিদ্যাধর জ্যোটিকা (বিদ্যাধর খাল); পশ্চিমে চন্দ্ৰবৰ্মণকোটের একটি কোণ; উত্তরে গোপেন্দ্রচারক গ্ৰাম। বারকমণ্ডলের আর একটি গ্রামে বিক্ৰীত ভূমির চতুঃসীমায় পাইতেছি, পূর্বে হিমসেনের ভূমি; দক্ষিণে তিনটি ঘাট এবং অপর একজনের শাসনদত্তভূমি; পশ্চিমে পূর্বোক্ত তিনটি ঘাটে যাইবার পথ এবং শিলাকুণ্ড; উত্তরে নাবাতক্ষেণী এবং হিমসেনের ভূমি। নাবাতক্ষেণীর উল্লেখ দেখিয়া অনুমান হয়। এই গ্রামেও একটি গঞ্জ বা বন্দর ছিল। এই মণ্ডলেরই আর একটি গ্রামের বিক্ৰীত ভূমিসীমায় পাইতেছি একটি গোযান চলাচলের পথ, পাকুড় গাছ এবং একটি নৌদণ্ডক। তদানীন্তন কোটালিপাড়া অঞ্চলের গ্রামগুলি যে নৌগামী ব্যাবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধ কেন্দ্র ছিল, নৌদণ্ডক, নাবাতক্ষেণী, নৌযোগ, নৌখট প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার তাহার আংশিক প্রমাণ। অষ্টম শতকে ঢাকা অঞ্চলের (ঢাকা শহর হইতে ৩০ মাইল, শীতললক্ষ্যার অদূরে, আস্রফপুর গ্রাম) কয়েকটি গ্রামের পরিচয় পাইতেছি দেবখড়েগির আস্রফপুর লিপি দুইটিতে। এই অঞ্চলের একটি বা একাধিক গ্রামের বিভিন্ন পাটকে (পাড়ায়) চারিটি বৌদ্ধবিহার ও বিহারিক (ছোট বিহার) ছিল। এবং ইহাদের আচার্য ছিল বন্দ্য সংঘমিত্র। সংঘমিত্রের শিষ্যবর্গের মধ্যে শালিবািদক ছিলেন। অন্যতম। বিভিন্ন পাটকের বিভিন্ন কৃষক ও গৃহস্থদের অধিকার হইতে ভূমি বিচ্ছিন্ন করিয়া লইয়া (ইতাদের মধ্যে অন্যান্য অনেকের সঙ্গে রানী শ্ৰীপ্ৰভাবতী, শুভংসুক নামে একটি মহিলা, বন্দ্য জ্ঞানমতি নামে একজন বৌদ্ধ আচার্য (?) এবং শ্ৰীউদীর্ণখড়গ নামে রাজপরিবারের (?) একজন মাননীয় ব্যক্তিও আছেন)। পূর্বোক্ত চারিটি বিহার-বিহারিকের অধিকারে দান করা হইয়াছিল, আচার্য সংঘমিত্রের তত্ত্বাবধানে। বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মপ্রতিষ্ঠান, গঞ্জ, বন্দর, নৌকা-যাতায়াত পথ ইত্যাদি লইয়া ফরিদপুর ঢাকা-ত্রিপুরার পূর্বোক্ত গ্রামাঞ্চলগুলিতে সমৃদ্ধ জনপূর্ণ বসতি ছিল। এরূপ অনুমান অযৌক্তিক নয়।

ধর্মপালের খালিমপুর লিপিতে ব্যাঘ্ৰতটীমণ্ডলের মহন্তাপ্রকাশ-বিষয়ের অন্তর্গত ক্ৰৌঞ্চশ্বভ্র গ্রামের সীমা-পরিচয় প্রসঙ্গে এই গ্রাম ও অন্য আরও তিনটি গ্রামের কিছু কিছু পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। ক্ৰৌঞ্চশ্বভ্রাগ্রামের ‘পশ্চিমে গঙ্গিনিকা, উত্তরে কাদম্বরী অর্থাৎ সরস্বতীর দেউল (দেবকুলিকা) ও খেজুর গাছ। পূর্বোত্তরে রাজপুত্র দেবটকৃত আলি, এই আলি বীজপূরকে (টাবা লেবুর বাগান?)। গিয়া প্রবিষ্ট হইয়াছে। পূর্বদিকে বিকটকৃত আলি, তাহা খািটক-যানিকাতে (খালে) গিয়া প্রবেশ করিয়াছে; তাহার পর জম্বু-যানিক (যে-খালের দুই ধারে বা তাপী লেবুর গাছ?) আক্রমণ করিয়া তাহার পাশ দিয়া জম্বুযানক পর্যন্ত গিয়াছে। তথা হইতে নিঃসৃত হইয়া পুণ্যারামবিন্ধাৰ্দ্ধস্রোতিক পর্যন্ত গিয়াছে। তথা হইতে নিঃসৃত হইয়া, নলচৰ্মটের উত্তর সীমা পর্যন্ত গিয়াছে। নলচৰ্মটের দক্ষিণে নামুণ্ডি-কায়িকা-হইতে খণ্ডমুণ্ডমুখ পর্যন্ত, সেখান হইতে বেদস্যবিন্ধিকা, তাহার পর রোহিতবাটী-পিণ্ডারবিটি-জোটিকা (খােল)-সীমা, উক্তারযোটের দক্ষিণ এবং গ্রামবিন্ধের দক্ষিণ পর্যন্ত দেবিক সীমাবিটি ধর্ময়োজ্যোটিকা (খাল)। এই প্রকার মাঢ়াশাল্মিলী নামক গ্রাম (তুলনীয়, নিধনপুর লিপির ময়ুরশাল্মলী)। তাহার উত্তরেও গঙ্গিনিকার সীমা; তাহার পূর্বে অর্দ্ধস্রোতিকার সহিত মিলিত হইয়া আম্রযানকোলার্দ্ধ-যানিকা (আম্রকাননবতী খাল?) পর্যন্ত গিয়াছে। তাহার দক্ষিণে কালিকাশ্বত্র; তথা হইতেও নিঃসৃত (বর্তমান, গাঙ্গিনা) গিয়া প্রবিষ্ট হইয়াছে। পালিতকের সীমা দক্ষিণে কাণদ্বীপিকা, পূর্বে কোঠিয়া স্রোত, উত্তরে গঙ্গিনিকা, পশ্চিমে জেনন্দায়িকা। এই গ্রামের শেষ সীমায় পর্যকর্মকৃষ্ট্ৰীপ স্থলীঙ্কট-বিষয়ের অধীন আস্ৰষণ্ডিকা-মণ্ডলের অন্তর্গত গো-পিপ্পলী গ্রামের সীমা, পূর্বে উড়গ্রামমণ্ডলের (উড্রাগ্রাম কি সেই গ্রাম যে-গ্রামে ওড়ি বা ওড়িশাবাসীদের বসতি ছিল বেশি?) সীমায় অবস্থিত গোপথ। উপরোক্ত ব্যাঘ্রতটীমণ্ডল, যে দক্ষিণ-বঙ্গের ব্যাঘ্ৰ্যাধুষিত নিম্নশায়ী বনময় জনপদ, এ-সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ কম। সমুদ্রতীরবর্তী নিম্নভূমি বলিয়াই এইসব গ্রামাঞ্চলে গঙ্গিনিকা, যানিকা, স্রোত, স্রোতিকা, জোটিকা, খাটিকা, দ্বীপ, দ্বীপিকা প্রভৃতির এত প্রাদুর্ভাব। বিশ্বরূপসেনের একটি লিপিতে বঙ্গের নাব্যভাগে রামসিদ্ধিপাটক নামে একটি গ্রামের উল্লেখ আছে; এই গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমে বরাহকুণ্ড, পূর্বে দেওহারের দেবভোগ-সীমা; দক্ষিণে বঙ্গলবাড়া নামক গ্রামের ভূমি; পশ্চিমে একটি নদী; উত্তরে একই নদী। এই নাব্যভাগেই বিনয়তিলক নামে আর একটি গ্রাম ছিল; এই গ্রামের পূর্বে সমুদ্র; দক্ষিণে প্ৰণুল্লাভূমি; পশ্চিমে একটি বাধা (জাঙ্গলসীমা); উত্তরে স্বীয় শাসনসীমা। নাব্য জনপদ-ভাগটাই ছিল নৌচলাচল-নির্ভর আর এই গ্রাম একেবারে ছিল সমুদ্রশায়ী। কেশবসেনের ইদিলপুর লিপিতে বিক্রমপুর ভাগের অন্তর্গত তালপাড়া পাটক নামে আর একটি গ্রামের খবর পাওয়া যাইতেছে। এই গ্রামের পূর্বে শত্রকাদ্বি গ্রাম; দক্ষিণে শঙ্করপাশা (পাশা-অন্ত্য গ্রাম-নাম তো বরিশাল-ফরিদপুর অঞ্চলে সুপ্রচুর) এবং গোবিন্দকেলি নামে দুইটি গ্রাম, পশ্চিমে শংকর গ্রাম, উত্তরে বাংগুলীবিত্ত-গ্ৰাম। বিশ্বরূপসেনের মদনপাড়া লিপিতে পিঞ্জোকাস্টি এবং কন্দপশংকর নামে দুইটি গ্রামের উল্লেখ আছে। পিঞ্জোকাস্টি বর্তমান ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়া পরগণার পিঞ্জারি গ্রাম। যাহা হউক, পিঞ্জোকাস্টি গ্রামের পূর্বদিকে আঠপাগ গ্রামের বাধ (জাঙ্গলভূ); দক্ষিণে বারট্রয়ীপাড়া (বারুইপাড়া?); পশ্চিমে উঞ্চোকাস্টি গ্রাম; উত্তরে বীরকাটি গ্রামের বাঁধ (কাস্টি, কাটি-বর্তমান কাটি; তুলনীয়, বরিশাল-ফরিদপুর, অঞ্চলের ঝালকাটি, কলসকাটি, লক্ষ্মণকাটি ইত্যাদি)। এই রাজারই সাহিত্য-পরিষদ লিপিতে বিক্রমপুর ভাগের লাউহণ্ডা। চতুরকের অন্তর্গত দেউলহস্তি গ্রামের বর্ণনা প্রসঙ্গে দেখিতেছি, এই গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিমে রাজহতা নদী। শ্ৰীমৎ ডোম্মনপালের সুন্দরবন লিপিতে পূর্বখাটিকার অন্তর্গত ধামহিথা নামে একটি গ্রামের সংক্ষিপ্ত পরিচয় একটু পাইতেছি; এই গ্রামের বাহিরে বোধ হয় একটি বৌদ্ধবিহার ছিল (রত্নত্ৰয়বহিঃ)। লক্ষ্মণসেনের আনুলিয়া লিপির মাথরণ্ডিয়া নামে আর একটি গ্রামের অবস্থিতি ছিল ব্যাঘ্ৰতটীতে; এই গ্রামে একটি বটবৃক্ষ এবং একটি জলপিল্লের (জলময় নিম্নভূমি?) উল্লেখ আছে। ইহারই সংলগ্ন ছিল আর দুইটি গ্রাম; শান্তিগোপী এবং মালামঞ্চবটী। বাঙলার পূর্ব-দক্ষিণতম প্রান্তের চাটিগ্রাম আনুমানিক দশম শতক হইতেই একটি সমৃদ্ধ ও মর্যাদাসম্পন্ন গ্রাম ছিল বলিয়া মনে হইতেছে। তিব্বতী বৌদ্ধপুরাণ মতে, চাটিগ্রাম বৌদ্ধ তান্ত্রিক গুরু তিল-যোগীর জন্মভূমি ছিল (দশম শতক)। এই গ্রামে পণ্ডিত বিহার নামে সুবৃহৎ একটি বৌদ্ধবিহার ছিল এবং বিহারে বসিয়া বৌদ্ধ-আচার্যরা সমবেত বিরুদ্ধবাদী পণ্ডিতদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করিতেন। এই চাটিগ্রামই কিছুদিন পরে মধ্যযুগে পূর্ব-বাঙলার বৃহত্তম সামুদ্রিক বাণিজ্যের বন্দর-নগরে পরিণত হইয়াছিল চট্টগ্রাম নাম লইয়া। রাজা গোবিন্দকেশবদেবের ভাটেরা লিপিতে একসঙ্গে ২৮টি গ্রামের উল্লেখ আছে; ভট্টপাটক গ্রামের শিবমন্দিরের পরিচালনার জন্য এই ২৮টি গ্রামে ২৯৬টি বাড়ি (ঘর?) এবং ৩৭৫ হল জমি দান করা হইয়াছিল। ভট্টপাটক বর্তমান ভাটেরা গ্রাম, কুলাউড়া-শ্ৰীহট্ট রেলপথের ধারেই। বাকী ২৮টি গ্রামের নাম প্রায় অবিকৃত ভাবে এখনও ভাটেরার আশেপাশে বিদ্যমান। এই গ্রামগুলি হইতে প্রায় ৯০০ শত বৎসরের পূর্বেকার গ্রাম-বিন্যাসের চেহারা এখনও কতকটা অনুমান করা চলে।

 

উত্তরবঙ্গ

দামোদরপুরে প্রাপ্ত গুপ্ত আমলের একটি লিপিতে (৩ নং) পলাশবৃন্দক নামে একটি স্থানের উল্লেখ আছে; এই স্থান হইতেই ভূমি বিক্রয়ের রাজকীয় আদেশ নিঃসৃত হইয়াছিল। পলাশবৃন্দক যে একটি গ্রাম, এই ইঙ্গিত লিপিতেই পাওয়া যায়। দিনাজপুর শহরের ষোল মাইলের মধ্যে পলাশবাড়ি নামে দুইটি গ্রাম এখনও বিদ্যমান, পলাশডাঙ্গা নামে আর একটি গ্রামও আছে দিনাজপুর শহরের ১১ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে। এই তিনটি গ্রামই দামোদরপুরের খুব সন্নিকটে। গুপ্ত আমলের পলাশবৃন্দক বোধ হয় খুব বড় গ্রাম ছিল এবং ইহা যে একাধিক ‘পলাশ-পূর্বনাম গ্রামের সমষ্টি ছিল তাহা ‘বৃন্দক’ শব্দের ব্যবহার হইতেও অনুমেয়। রেনেলের নকশায়ও (১৭৬৪-৭৬) দেখিতেছি, পলাশবাড়ী বেশ বড় ও মর্যাদাসম্পন্ন স্থান। এই লিপিতেই চণ্ডীগ্রাম নামে আর একটি গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যাইতেছে। গুপ্ত আমলের লিপিগুলিতে অনেক গ্রামের উল্লেখ আছে; তন্মধ্যে স্বচ্ছন্দপাটক, সাতুবনাশ্ৰমক, হিমবচ্ছিখরাবস্থিত ডোঙ্গাগ্রাম, বায়িগ্রাম (বর্তমান বৈগ্রাম, বগুড়া জেলা), পুরাণবৃন্দিকহরি, পৃষ্ঠিমপেট্টিক, গোষাটপুঞ্জক, নিত্বগোহালী, পলাশাট্ট, বট-গোহালী প্রভৃতি গ্রাম উল্লেখযোগ্য। এই গ্রামগুলি প্রায় সবই দিনাজপুর-রাজশাহী-বগুড়া জেলার অন্তর্গত। বায়িগ্রাম যে একাধিক গ্রামখণ্ডের সমষ্টি ছিল তাহা তো আগেই বলিয়াছি। শ্ৰীগোহালী এবং ত্ৰিবৃত এই গ্রামের অন্তৰ্গত ছিল। দামোদরপুরের ১৪ মাইল উত্তরে বৃন্দকুড়ি নামে একটি গ্রাম এখনও বিদ্যমান; এই গ্রাম হয়তো পুরাণবৃন্দিকহরির স্মৃতি বহন করিতেছে। নিত্বগোহালী গ্রাম মূল নাগিরট্টমণ্ডলের (অর্থাৎ, মণ্ডল-শাসনাধিষ্ঠানের) সংলগ্ন ছিল, পাহাড়পুর লিপিতেই এইরূপ ইঙ্গিত আছে। পৃষ্ঠিমপেট্টিক, গোষাটপুঞ্জক এবং পলাশষ্ট্র গ্রাম ছিল নাগিরট্টমণ্ডলান্তৰ্গত। দক্ষিণাংশকবীথীর অন্তর্গত। বটগোহালী পাহাড়পুরের সংলগ্ন গোয়ালভিটা গ্রাম হওয়া অসম্ভব নয়। মুঙ্গের জেলার নন্দপুর গ্রামে প্রাপ্ত একটি লিপিতে অম্বিল গ্রামাগ্রহার নামে একটি অগ্রহার গ্রামের উল্লেখ পাইতেছি। এই গ্রামে বিষয়পতি ছত্ৰমহের অধিষ্ঠান-অধিকরণের অবস্থিতি হইতে গ্রামটির আয়তন ও মর্যাদা অনুমান করা কঠিন নয়। শাসনাধিষ্ঠানরূপে কোনও কোনও গ্রাম যে বিশেষ মর্যাদা লাভ করিয়া আয়তনে ও গুরুত্বে বাড়িয়া উঠিত, এ-সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ কম। অম্বিলগ্রামাগ্রহারের মতো পলাশবৃন্দকও ছিল এই রকম একটি গ্রাম; এই গ্রাম হইতে রাজকীয় শাসনের নির্গতি দেখিয়া এই অনুমান করা চলে যে, পশালবৃন্দকেও শাসনাধিষ্ঠানের একটি কেন্দ্র ছিল।

প্রথম মহীপালের বাণগড় লিপিতে কোটীবর্ষ-বিষয়ের গোকলিক-মণ্ডলের অন্তর্গত কুরটুপল্লিকা গ্রামের উল্লেখ পাইতেছি। এই গ্রামের একটি অংশের নাম ছিল চুটপল্লিকা (অর্থাৎ ছোটপল্লী বা ছোটপাড়া)। দ্রাবিড়ী চুটি শব্দের অর্থই তো ছোট। তৃতীয় বিগ্রহপালের আমগাছি লিপিতে কোটীবৰ্ষ-বিষয়ান্তর্গত ব্ৰাহ্মণীগ্ৰামমণ্ডল নামে একটি মণ্ডলের উল্লেখ আছে; ব্ৰাহ্মণীগ্রামই সম্ভবত মণ্ডলের শাসনাধিষ্ঠান ছিল এবং সেইহেতু ঐ গ্রামকে আশ্রয় করিয়াই মণ্ডলটির নামকরণ হইয়াছিল। বিষমপুর নামক স্থানের দণ্ডত্ৰহেশ্বরের মন্দির এই মণ্ডলের অন্তর্গত ছিল। লক্ষ্মণসেনের মাধ্যাইনগর লিপিতে পুণ্ড্রবর্ধন-ভুক্তিবদ্ধ বরেন্দ্রীর অন্তর্গত কান্তাপুর-আবৃত্তিতে দাপনিয়া পাটক নামে এক গ্রামের উল্লেখ আছে; এই গ্রামের নিকটেই রাবণসরসী নামে একটি দীঘির উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। এই লিপি-প্রদত্ত ভূমির পূর্বে চড়সপালা-পাটকের পশ্চিম সীমা; দক্ষিণে গায়নগরের উত্তরাংশ; পশ্চিমে গুণ্ডাস্থিরা-পাটকের পূর্বাংশ; উত্তরে গুন্তী-দাপনিয়ার দক্ষিণাংশ। এই রাজারই তৰ্পণদীঘি শাসন বরেন্দ্রীর অন্তর্গত বেলহিষ্ঠী গ্রামের পূর্বসীমায় বৌদ্ধবিহারসীমাজ্ঞাপক একটি বাঁধ; দক্ষিণ সীমায় নিচড়হার পুষ্করিণী; পশ্চিমে নন্দিহরিপাকুণ্ডী গ্রাম ও মোল্লাণ-খাড়ী নামে খাল। কামরূপরাজ জয়পালের সময়ের (একাদশ শতক) সিলিমপুর লিপিতে বালগ্রাম নামে আর একটি গ্রাম সম্বন্ধে বলা হইয়াছে যে, পুণ্ড্রদেশান্তর্গত এই গ্রাম বরেন্দ্রীর অলঙ্কার স্বরূপ ছিল (বরেন্দ্রীমণ্ডনং গ্রাম) এবং এই গ্রাম ও তর্কারির মধ্যে সকটি নদীর ব্যবধান ছিল (সকাটীব্যবধানবান)। তর্কারি ব্রাহ্মণ ও করণদের খুব বড় কেন্দ্র ছিল, তর্কারি-তর্কারিকা-তর্কার-টক্কার-টকারীর উল্লেখ সমসাময়িক অনেক লিপিতেই পাওয়া যায়। সন্দেহ নাই যে, এই গ্রাম সমসাময়িক কালে বাঙলায় এবং বাঙলার বাহিরে একাধিক কারণে প্রসিদ্ধিলাভ করিয়াছিল। এই গ্রামের অবস্থিতি-নির্দেশ লইয়া পণ্ডিতমহলে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে কিন্তু ইহা যে প্রাচীন বরেন্দ্রীর অন্তর্গত, এ সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ কম। বিশ্বরূপসেনের মদনপাড়া লিপি এবং কেশবসেনের ইদিলপুর লিপি দুইই নিৰ্গত হইয়াছিল “ফল্পগ্রাম পরিসর সমাবাসিত-শ্ৰীমজ্জয়স্কন্ধাবারাৎ।” লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর লিপিও নির্গত হইয়াছিল। ধার্যগ্রাম জয়স্কন্ধাবার হইতে। ফন্মগ্রাম ও ধার্যগ্রামে জয়স্কন্ধাবার স্থাপনার ইঙ্গিত হইতে এই অনুমান স্বাভাবিক যে, সমসাময়িক কালের সেনারাষ্ট্রে এই গ্রাম দুইটির বিশেষ একটা মর্যাদা ও গুরুত্ব ছিল, নহিলে মহারাজের জয়স্কন্ধাবার গ্রামে স্থাপিত হইতে পারিত না; অন্তত জয়স্কন্ধাবার স্থাপনের পর তো গুরুত্ব ও মর্যাদা নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কোনও কোনও গ্রামে যে শাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হইত। তাহার কতকটা যুক্তিসিদ্ধ অনুমান তো ব্ৰাহ্মণীগ্ৰামমণ্ডল হইতেই পাওয়া যায়। সেন আমলের শেষের পর্বে কোনও কোনও গ্রাম জয়স্কন্ধাবারের মর্যাদাও লাভ করিয়াছে, দেখিতেছি।