০২.১৪ ঘটলক্ষ্মীর পূজা

ঘটলক্ষ্মীর পূজা

মনসাদেবীর ক্ষেত্রে যেমন দুই রকমের পূজা (এক, মনসার মূর্তিপূজা এবং আর এক, তাঁহারই চিত্রাঙ্কিত ঘটের পূজা) বাঙলার অন্যান্য দুই একটি দেবীমূর্তির ক্ষেত্রেও তাহাই। আমাদের দেশে লক্ষ্মীর পৃথক মূর্তিপূজা খুব সুপ্রচলিত নয়। বিষ্ণু-নারায়ণের শক্তি হিসাবেই তাঁহার যাহা কিছুই প্রতিপত্তি; অন্তত প্রাচীন বাঙলায় তাহাই ছিল। সাহিত্যে ও শিল্পে নারায়ণের শক্তিরূপিণী এই পৌরাণিক লক্ষ্মীই বন্দিত হইয়াছেন। কিন্তু আমাদের লোকধর্মে লক্ষ্মীর আর একটি পরিচয় আমরা জানি এবং তাঁহার পূজা বাঙালী সমাজে নারীদের মধ্যে বহুল প্রচলিত। এই লক্ষ্মী কৃষিসমাজের মানস-কল্পনার সৃষ্টি; শস্য-প্রাচুয্যের এবং সমৃদ্ধির তিনি দেবী। এই লক্ষ্মীর পূজা ঘটলক্ষ্মী বা ধান্যশীর্ষপূর্ণ চিত্রাঙ্কিত ঘটের পূজা এবং এই পূজারতের সে-সব ব্ৰতকথা এবং যে-সব পৌরাণিক কাহিনী জড়িত তাহা একত্র বিশ্লেষণ করিলে বুঝিতে দেরী হয় না যে, লক্ষ্মীর এই লৌকিক মানস-কল্পনাই ক্রমশ পৌরাণিক লক্ষ্মীতে রূপান্তরিত হইয়াছে, স্তরে স্তরে নানা স্ববিরোধী ধান ও অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়া। কিন্তু তৎসত্ত্বেও কৌম সমাজের ঘটলক্ষ্মীর বা শস্যলক্ষ্মীর বা আদিমতম পূজা বা কল্পনা তাহা বিলুপ্ত হয় নাই। বাঙালী হিন্দুর ঘরে ঘরে নারীসমাজে সে পূজা আজও অব্যাহত। আর শারদীয়া পূর্ণিমাতে কোজাগর-লক্ষ্মীর যে পূজা অনুষ্ঠিত হয় তাহা আদিতে এই কৌম সমাজের পূজা বলিলে অন্যায় হয় না। বস্তুত, দ্বাদশ শতক পর্যন্ত শারদীয়া কোজাগর উৎসবের সঙ্গে লক্ষ্মীদেবীর পূজার কোনও সম্পর্কই ছিল না।