০২.০৯ অম্বুবাচীর পারণ

অম্বুবাচীর পারণ

ভারতবর্ষের সর্বত্রই বৰ্ষাঋতুতে নারীদের মধ্যে বিশেষভাবে বিধবা নারীদের ভিতর অম্বুবাচী নামে এক পারণ পালনের রীতি প্রচলিত। এই পারণের তিন দিন বা সাত দিন তাহারা কোনও অগ্নিপক্ক খাদ্য গ্রহণ করেন না, মাটি খুঁড়েন না, আগুন জ্বলেন না, রন্ধনাদি করেন না, এমন কিছু করেন না। যাহাতে পৃথিবীর, মাতা বসুধার অঙ্গে কোনও আঘাত লাগে। কারণ প্রচলিত বিশ্বাস এই যে এই ক’দিন মাতা বসুধার ঋতুপর্ব এবং যতদিন তিনি ঋতুমতী থাকেন। ততদিন তাহার অঙ্গে কোনও আঘাত লাগে, এমন কিছু করিতে নাই। এই বিশ্বাস এবং অম্বুবাচীর পারণ, আদিম কীেম সমাজের প্রজননশক্তির পূজা এবং তৎসম্পূক্ত ধ্যান-ধারণার সঙ্গে জড়িত।

বাঙালী হিন্দুর ধর্মকর্মানুষ্ঠানের যে-সব স্তরে ও অংশে আদিবাসী কৌম সমাজের অনার্য অব্রাহ্মণ। ধ্যান-ধারণা ও উৎসবানুষ্ঠান এখনও সক্রিয় তাহার মাত্র কয়েকটি ইঙ্গিত এ পর্যন্ত ধরিতে চেষ্টা করিলাম। আর বেশি বলিবার উপায়ও নাই, বর্তমান প্রসঙ্গে প্রয়ােজনও নাই। তবে, এই প্রসঙ্গ শেষ করিবার আগে এমন দুই চারিটি বৌদ্ধ এবং ব্রাহ্মণ্য দেবদেবীর কথা বলিতেই হয় যাহাদের জন্মই হইতেছে এই আদিবাসী কীেম সমাজের ধান, ধারণা এবং অভ্যাস হইতে। এ-প্রসঙ্গে ব্ৰাহ্মণ্য শিব ও শিবলিঙ্গ, দুর্গা, কালী বা করালী, অর্থাৎ মাতৃকাতন্ত্রের দেবী, নারায়ণ-শিলা, গণেশ, ভৈরব, বৌদ্ধ জম্ভিল,হারীতী, একজটা, নৈরাত্মা, ভ্রূকুটি প্রভৃতি দেবদেবীর কথা উল্লেখ করিতেছি না; কারণ, ভারতীয় মূর্তিতত্ত্বের ইতিহাসের সঙ্গে যাহারা পরিচিত তাহারাই জানেন, এই সব এবং আরও অনেক দেবদেবীর ইতিহাস অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে আদিবাসী কৌম-সমাজের বিশ্বাস ও অভ্যাসের সঙ্গে জড়িত। আমি শুধু এমন দুই চারিটি বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য দেবদেবীর কথাই এখানে উল্লেখ করিতেছি। যাহাদের পূজা বিশেষ ভাবে পূর্ব-ভারতেই প্রচলিত এবং যাঁহাদের জন্মেতিহাস সুস্পষ্ট ভাবেই এই কীেম সমাজের ধ্যান, ধারণা ও অভ্যাসগত, অথচ সে-তথ্য সুস্পষ্ট জ্ঞাত ও স্বীকৃত নয়।