০৪. অসি বাঞ্চতটা পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিলো

অসি বাঞ্চতটা পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিলো

অসি বাঞ্চতটা পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিলো, আমি দশ হাজার দিয়েছিলাম; এখন ওই বহিনফাকার বাঞ্চতটা আমার পেছনে ঘোরে, ওর চাকুরিটা আর নেই; আমি পঞ্চাশ লাখ চেয়েছি, ও বিশ লাখ দিতে চায়। হারামজাদার চাকুরিটা ফিরিয়ে দেবো, যদি পঞ্চাশ লাখ দেয়; মাদারচোতটা দেবে, বাঞ্চতটা কয়েক বছরে কয়েক কোটি জমিয়েছে; উত্তরায় বাড়ি করেছে। দু-নম্বর বউয়ের নামে।

ওর দুই নম্বর বউট না কি টিকবে না, সে এখন একটা ঋণখেলাপির সঙ্গে ঘুমোতে ব্যাংকক যায়, উত্তরায় ঘুমিয়ে সে সুখ পায় না।

কাজ হয়েছিলো; একদিনের জন্যে আমরা মেইন পার্টির মহীয়সী লিডারেসের কথায় শান্তির কবুতর, পায়রা, ঘুঘু, চিল, শকুন, বাজ, কাক–যাই বলি না কেনো–হয়েছিলাম। আমরা দলে দলে শান্তির কবুতর, পায়রা, ঘুঘু, চিল, শকুন, বাজ, কাকরা অস্থিরভাবে আকাশে উড়ছিলাম।

একরাত, একদিন; ওটা আমাদের জন্যে সামান্য সময় ছিলো না, ছিলো হাজার বছরের সমান, এতো দীর্ঘ সময় ধরে শান্তিতে থাকা আর শাস্তিতে রাখা কতোটা কঠিন, ওই সময় আমরা ছাড়া আর কেউ বোঝে নি। শান্তি বড়োই ভারি ব্যাপার, যখন আমাদের ভেতরে বিজয়ের পবিত্র অগ্নিশিখা দাউদাউ করছিলো, তখন শান্তি দোজগের শান্তির মতো লাগছিলো।

পত্রিকাগুলো পরদিন আমাদের প্রশংসায় মেতে উঠেছিলো।

মেইন পাটির সঙ্গে আমরা ল্যান্ডস্লাইড করলেও নিজেদের শান্ত রেখেছি, অর্থাৎ মেইন পার্টির খিলজিরা শান্ত ঠাণ্ডা রয়েছে; এমনকি বিজয়োৎসবও করি নি, গণতন্ত্র একেই বলে। আমাদের মতো মহৎ আর কে? আমরা একরাতে একদিন মহত্ত্ব অর্জন করি, কৃতিত্বের বড়ো ভাগটাই মেইন পার্টির খিলজিরা নেয়, আমাদের হিশেবের মধ্যেই আনে না; কিন্তু আমরা যে মেইন পার্টির আসল ফোর্স, তারা তা বোঝে নি। তবে খিলজিরা ও আমরা বুঝতে পারি কতো দীর্ঘ হতে পারে একটি রাত ও একটি দিন, তা একশো বছরের সমান; তবে আমাদের সামনে তখন সহস্র ও একরাত, তার থেকেও বেশি।

প্ৰশংসাধন্য হওয়ার পর আমাদের আর কেউ নিন্দা করতে পারে নি; নিন্দা করার সাহস পায় নি। আমরা তখন শান্তিশৃঙ্খলার ফেরেশতা, আমাদের আগুনের ডানা থেকে ঝলকে ঝলকে শান্তি ঝ’রে পড়ছিলো।

কিন্তু বিজয়ের পর একরাত ও একদিন নিক্রিয় থাকা, শান্তিতে থাকা, শান্তিতে রাখা, আমাদের জন্যে হৃদয়বিদারক ছিলো। শাদি হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা ছহবত করতে পারছিলাম না, যদিও সব কিছু ছিলো টানটান। টানটান জিনিশ নিয়ে একরাত একদিন কাটানোর কষ্ট আমরা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।

তার পর দিন থেকে মেইন পার্টির নিষ্ঠাপরায়ণ, প্রচণ্ড, তীব্ৰ, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণাৰ্ত, দয়ালু, জনসেবক, মেধাবী, রাজপথের যোদ্ধা, কুয়ৎশীল নেতাকমীদের সঙ্গে আমরা জিহাদির দেশ জুড়ে শান্তির ঝড় বইয়ে দিয়েছিলাম।

ওটার নাম দিয়েছিলাম। আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’, সোভানাল্লা।

দেশ এমন শান্তির ঠাণ্ডা অগ্নি আগে কখনো দেখে নি, সোভানাল্লা।

আমরা, জিহাদিরা ও মেইন পার্টির ইখতিয়ারউদ্দিন বিন বখতিয়ার খিলজিরা, মিলেমিশে কাজ করেছি, তখন দেশ আমাদের পায়ের নিচে, আমাদের আগুনের নিচে, আমাদের পিস্তলের নিচে, এবং সবচেয়ে যেটি শক্তিমান ও উদ্ধত পিস্তল–দেশ তখন আমাদের দীর্ঘ দৃঢ় উদ্যত শিশ্নের ছায়ার নিচে, সোনার বাঙলাকে আমার তখন আসল সোনার বাঙলা ক’রে তোলার জন্যে উত্তেজিত। আমাদের শিশ্ন বারবার দৃঢ় হচ্ছিলো, হুর ও উর্বশীদের জন্যে ব্যাকুল হচ্ছিলো; কিন্তু আমরা গণতন্ত্র মেনে নিয়েছিলাম–এক রাত ও একদিন।

জিহাদি ও খিলজি, এবং জিহাদি ও খিলজিতে ভাগ হয়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ি, সন্ধ্যার একটু পরেই।

আমি মালাউন পছন্দ করি, মহান আল্লাতালাই আমাকে এই অপূর্ব রুচিটি দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লা; ওদের গন্ধ আমার পছন্দ, ওদের ঠোঁট আমার পছন্দ; আমি বেছে নিই মালাউন পাড়াগুলো, এবং আমাকে দেয়া হয় মালাউন পাড়াগুলো, তবে সবগুলো নয়। আমার প্ৰিয় দোস্ত, বিখ্যাত খিলজি, মেইন পার্টির ছৈয়দ ছব্দর আলি বন্টু,–তার পছন্দ দুটিই, একই সঙ্গে মালাউন আর আগের মেইন পার্টির দালালদের পাড়াগুলো; সে মনে করে সব কিছু তার তলোয়ার ও শিশ্নের নিচে। এটাকে সে বাস্তবায়িত করেছে, ক’রে চলছে, তবে তার কপালে যে কী আছে, তা রাহমানির রাহিমই জানেন।

আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ দিয়ে মালাউন ও মালাউনদের দালালদের শান্ত শীতল নীরব নিথর করতে বেরিয়ে পড়ি।

আমাদের জিহাদিদের আগুন লাগাতে হয় না, আমরা ঘরে ঘরে ঢুকি, ওরা কাঁপতে থাকে; আমরা বেশি কিছু চাই না–একবারের জন্যে খুনটুন করার দরকার ছিলো না, দরকার ছিলো চিরকালের জন্যে খুন করা।

আমার দুই নম্বর, জিহাদি মোঃ হাফিজুদ্দিন, তালেবান হওয়ার জন্যে যে একবার আফগানিস্থানে গিয়েছিলো, সে বলেছিলো, ‘হুজুর, গোটা পঞ্চাশেক মালাউন ফালাই দিতে হইব।‘

আমি বলেছিলাম, ‘গোটা পঞ্চাশেক ফেলে কী হবে?’

জিহাদি মোঃ মুস্তাকিম জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘তাইলে হুজুর, কয়ড়া ফালামু?’

আমি বলেছিলাম, ‘দুটি বা দশটি নয়, সবগুলোকেই ফেলে দিতে হবে।’

ওরা ভয় পেয়ে আর্তনাদ করে উঠেছিলো, ‘হুজুর, সবগুলিরে। ফালামু?’

ওরা যে আর্তনাদ করতে পারে, এটা আমাকে বিস্মিত করেছিলো; ওদের মুখ দেখে আমার কখনো মনে হয় নি। ওরা এমন শব্দ করতে পারে। ওদের অশ্রুনালিতে কোনো অশ্রু আছে বলেও আমার মনে হয় নি।

আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, সবগুলোকে।’

ওরা বলেছিলো, ‘এক রাইতে সবগুলিরে। ফালাইতে পারুম?’

আমি বলেছিলাম, ‘এক রাত কেনো, আমাদের সহস্র রাত হয়েছে।’

ওরা এবার শান্ত হয়, বলে, ‘তাইলে ফালাইতে কষ্ট অইব না।’

আমি বলেছিলাম, কীভাবে ফেলবে?

ওরা বলছিলো, ‘হুজুর, খালি চাক্কু মারুম শিনার বাঁও দিকে, আর হলকুম দুই ভাগ কইর‍্যা ফালামু।’

আমি বলেছিলাম, ‘চাক্কু মেরে ফেলতে হবে না, তাতে ঘরবাড়ি নোংরা হবে, লাশের গন্ধ বেরোবে, একবারে খুনের থেকে ওদের চিরকালের জন্যে খুন করতে হবে, যাতে ওরা দেশে না থাকে, আর থাকলেও যেনো না থাকে।’

ওরা ব্যগ্র হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘সেইডা কেমনে করুম, হুজুর?’

আমি বলেছিলাম, ‘হাত দিয়ে দ্যাখো তোমাদের দুই রানের মাঝখানে কী আছে? কী ঝুলছে।‘

তারা হাত দিয়ে দৃঢ় দণ্ড অনুভব করে শরম পায়; সেটি ঝুলছিলো না, দাঁড়িয়ে ছিলো কুতুবমিনারের মতো।

আমি জিজ্ঞেস করি, ‘কী আছে ওখানে?’

ওরা বলে, ‘হুজুর, আমাগো লিঙ্গ।’

আমি বলি, ‘ওটি লিঙ্গ নয়, পিস্তল, এম-১৬। ওইটা খোদার দেয়া পিস্তল, এম-১৬। ওইটা চালাতে হবে – মালাউন মেয়েগুলোর পেটে মমিন মুছলমান ঢুকিয়ে দিতে হবে, জিহাদের এইটাই নিয়ম। আর মালাউনদের ঘরভরা সোনাদানা, কলসিভরা টাকা, ওইগুলো নিয়ে আসতে হবে।’

ওরা আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিলো, ‘আল্লাহু আকবর, নারায়ে তকবির।’

আমি জানতাম ওদের পিস্তল ও এম-১৬ দৃঢ় ও সদাসক্রিয়, কিন্তু জিহাদিদের পিস্তল ও এম-১৬ যে এতো দৃঢ়, ও সদাপ্রস্তুত, এবং পৌনপুনিক কুয়ৎসম্পন্ন – অটোমেটিক, একটা আমার জানা ছিলো না। মালাউনপল্লীতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মালাউনরা বুঝতে পারে আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ ছড়াতে এসেছি। তারা একবারও চিৎকার করে না, অতো ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া ছাড়া আর কিছু সম্ভব ছিলো না; কেউ হাতে একটি সরকি বা দাও নিয়েও আসে না, তারা জমে গিয়ে বাঁচতে চায়; তারা আমাদের ঠাণ্ডা শান্তির আগুনে নিঃশব্দে পুড়ে যেতে থাকে। আমাদের হাতে অবশ্য লোহার পিস্তল, চাইনিজ রাইফেল ছিলো, এম-১৬ ছিলো; ওগুলো হাতে না থাকলে চামড়ার পিস্তল কেউ ব্যবহার করতে দেয় না।

আমার জিহাদিরা ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়, ওদের মাথায় একটু ঘিলু কম, ওরা যতোটা কাজ করে, তারচেয়ে বেশি গোলমাল করে, যদিও গোলমালেও বেশ কাজ হয়; আমি ওদের নিরস্ত করি। আমি ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ পছন্দ করি; দাউদাউ করার দরকার না হ’লে দাউদাউ করে শক্তি খরচ করতে চাই না।

বাহুর শক্তি খরচের কিছু নাই, কিছু অতিশয় মূল্যবান ধাতু খরচ করতে হবে। ধাতু ক্ষয় করবো মালাউনদের জন্যে এটা আমাদের দয়া, এক বিন্দু ধাতু প্রচুর সুখাদ্যের ফল, বহু পুষ্টিতে এক বিন্দু ধাতু উৎপন্ন হয়, তা বড়োই পবিত্র, বড়োই সৃষ্টিশীল। সে-মহান জিনিশ আমরা ওদের দান করবো, এটা আমাদের মেহেরবানি, এর জন্যে ওদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কিন্তু ইহুদি ও মালাউনরা কবে কৃতজ্ঞ থেকেছে, শুকরিয়া জানিয়েছে?

সীতারামপুর গ্রামটিকে আমরা প্ৰথম বেছে নিই।

এই নামটা কেনো যেনো আমার পছন্দ হয়, হয়তো ওই সীতা মেয়েটির জন্যে, মেয়েটিকে আমার প্রথম থেকেই পছন্দ। ওকে আমার খুব সেক্সি মনে হয়েছিলো, যখন ওর জন্মের গল্পটি প্রথম পড়েছিলাম। সে খুবই সেক্সি, একটি বইতে পড়েছিলাম, সে আসলে যোনির সিম্বল, আর রাম হচ্ছে শিশ্নের সিম্বল; তাই যোনি ও শিশ্নের গ্রামটিকেই আমি প্রথম বেছে নিই। প্রতিটি পাড়াকে আমরা ঘিরে ফেলি, যাতে কেউ পুকুরেও লাফ দিয়ে না পড়তে পারে, জঙ্গলে গিয়ে লুকোতে না পারে, পায়খানায় গিয়ে বসে থাকতে না পারে, এমনকি গলায় দড়িও দিতে না পারে। জিহাদিরা অতন্দ্র প্রহরী।

প্রতিটি পাড়ায় গেলেই প্রথম জরাজীর্ণ বুড়োর বেরিয়ে আসে।

আমরা জানতাম তারাই আসবে, আমরা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুবতীরা বুকের কাপড় খুলে পাছা দুলিয়ে নাচতে নাচতে স্বাগতম জানানোর জন্যে আসবে না। তবে তাদের আসতে হবে, এটা তারাও জানে, তাদের পিতারাও জানে, ভাইয়েরা জানে, আর ভাঙাচোরা পতিদেবতারাও জানে। এটাও জানে দেবতার ওপরও দেবতা আছে; একদল দেবতার পরে আরেকদল দেবতা আসে, আকাশে আসে মাটিতেও আসে। তারা কি জানে না। আমরা নতুন দেবতা হয়ে দেখা দিয়েছি? আমাদের পুজো করা তাদের কর্তব্য? নতুন দেবতারা সব সময়ই একটু ক্রুদ্ধ হয়, আমরাও বেশ ক্রুদ্ধ; তবে আমাদের মেইন পার্টির খিলজিদের মতো অতো ক্রুদ্ধ নই, আমি হ’তে দিই না, আমরা এখনো মেইন পার্টি হই নি। ওরা পাঁচ বছর রক্ত খেতে পারে নি, এখন তাদের তাড়াতাড়ি গলাভরে রক্ত খাওয়া দরকার; আমরাও খাবো, এবং খাচ্ছি, তবে মেইন পার্টির খিলজিদের একটু বেশি খেতে দেবো, যাতে তারা অল্প সময়েই রক্তপায়ী আর নারীখোর বলে খ্যাতি অর্জন করে। তাদের খ্যাতিতে এখন দুনিয়া আহ্লাদিত ও উদ্বিগ্ন।

আমি কৌশল পছন্দ করি, কৌশল হচ্ছে আমার কাছে মালাউন যুবতীদের মতো, তাদের গন্ধের মতো, তাদের ঠোঁটের মতো।

অবশ্য আমি কৌশল শিখি আমাদের পাক ধর্মের ইতিহাস পড়ে; ওই সব কৌশলে আমি মুগ্ধ হই, হোলি টেরারে ওগুলো অতুলনীয়। কৌশল ছাড়া সফল হওয়া যায় না; সন্ধি করতে হয়, সময় বুঝে সন্ধি ভেঙে ফেলতে হয়; সময় বুঝে করুণাময় হ’তে হয়, সময় বুঝে হ’তে হয় বাঘ, একটু রক্ত খেতে হয়।

আমি বলি, ‘আপনারা কেমন আছেন?’

তারা বলে, ‘আল্লার দয়ায় ভালো আছি, হুজুর।’

আমি বলি, ‘আল্লার রহমতে আপনারা ভালো থাকেন, তাই আমরা চাই, আল্লাতালাও তাই চান। আপনাদের ভালো রাখার জন্যেই আমরা এসেছি।’

তারা বলে, ‘হুজুর, আপনের দয়া।’

আমি বলি, ‘আপনারা কি রকম আগুন পছন্দ করেন? ঠাণ্ডা না গরম?’

খুব ভয় পায় ওরা, এতো ভয় পায় যে ওদের মুখে ভয়ের চিহ্ন দেখাতেও ভয় পায়; কারো মুখে ভয় দেখলে আমি পুলক বোধ করি।

তারা বলে, ‘হুজুর, আপনের কতা বুজতে পারতেছি না, একটু বুজাই বলেন। ঠাণ্ডা আগুন আবার কেমুন?’

আমি বলি, ‘ঠাণ্ডা আগুন শীতল, নিঃশব্দ, কেউ বুঝবে না যে পুড়ে গেছে, পুড়ে যাওয়ার পরও আগের মতোই সুন্দর দেখাবে।’

তারা কথা বলে না, ঠাণ্ডা আগুনে পুড়তে থাকে।

আমি বলি, ‘আমার জিহাদিরা এসেছে একটু বিজয় উৎসব করার জন্যে, বিজয়ের পর উৎসব করার নিয়ম আছে, আপনারা জানেন, তাদের একটু উৎসব করতে দিন।‘

তারা বলে, ‘হা, জয়ের পর ত উৎসব করতেই অয়। তাইলে আমরা বাইদ্যকরগো লইয়া আহি।‘

আমি বলি, বাদ্যকর লাগবে না, জিহাদিরা একটু উৎসব করবে, একটু দোল যাত্রা আর ঝুলন পূর্ণিমা করবে, বাধাটাধা দিয়েন না, তাহলে পাঁচ দশটা লাশ পড়বে, আর আপনাদের মেয়েদের জিহাদিরা ধর্ষণ করেছে, এটা জানাজানি হ’লে আপনারা মুখ দেখাতে পারবেন না।’

তারা বলে, ‘হুজুর, আমাগো মাফ করেন, আমাগো ট্যাকপিয়সা যা আছে লইয়া যান, খালি আমাগো মাইয়াগুলিরে। মাফ করেন।’

আমি বলি, ‘জিহাদিরা ধর্ষণ করবে না, জেনা করা হারাম, তারা বিছমিল্লা বলে একটু ছহবত করবে, তাতে গুনাহ হবে না।’

তারা কাঁদতেও ভুলে যায়, পায়ে পড়তেও ভুলে যায়। তারা তাদের টাকা পয়সা সোনারুপো এনে জড়ো করে আমাদের সামনে, জিহাদিরাও খুঁজে বের করে নানা বিস্ময়কর স্থান থেকে। মালাউনগুলো জিনিশপত্ৰ লুকোতেও দক্ষ, তাই আমরা হই দক্ষতার; হয়তো ওরা মেয়েদের নরম ফাঁকে ফাঁকে আর নিজেদের পাছায়ও জিনিশপত্র লুকিয়ে রেখেছে। তাই প্রতিটি গর্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

আমি তাজ্জব হই জিহাদিদের পিস্তলের শক্তি দেখে।

তারা একের পর এক পিস্তল চালাতে থাকে।

বাপমায়ের সামনেই, কেউ কেউ মেয়ের পর মাকে, মায়ের পর মেয়েকে পরখ করে; আমরা কোনো তাণ্ডব করি না, আমার জিহাদিরা পাড়ায় পাড়ায় ঠাণ্ডাক্স আগুনের মতো জ্বলতে থাকে, ঠাণ্ডা আগুনের মতো আর কোনো আগুন নেই, ওই আগুন ছাই করে, কিন্তু পোড়ে না, তার শিখা দেখা যায় না। পাড়ায় কোনো তাণ্ডবের শব্দ ওঠে না, বরং একটু বেশি নিঃশব্দ হয়। ঠাণ্ডা আগুনে তারা জ’মে যায়, তাই নিঃশব্দ হওয়াই ছিলো স্বাভাবিক।

একটু অসুবিধা হয়ে যায় আমার দশ জিহাদিকে নিয়ে।

কিন্তু তারা জিহাদি, পাক বিজয়োৎসব করতে এসেছে, আমি বাধা দিই না; আমার ইতিহাসের নানা অধ্যায় মনে পড়ে, একে আমি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ব’লেই গণ্য করি; এবং এক্সএক্সএক্স দেখতে দেখতে ইতিহাসকে রিওয়াইন্ড ও রিপ্লে করতে আমার বেশ লাগে। আমার দশ জিহাদি ইতিহাস রিপ্লে করতে চায়, আমি বাধা দিয়ে ওদের বিজয়ের আনন্দ মাটি করতে পারি না।

ওদের দশজনেরই পছন্দ হয় দশ বছরের একটি বালিকাকে, ঠিক ছোটো এক সুচিত্রা সেনকে; ওরা একসঙ্গে তার ওপরে বাঁপিয়ে পড়তে চায়। ওরা অবশ্য সুচিত্রা সেনকে দেখে নি, দেখেছে মাধুরী দিকষিতকে, তাই একটু বেশি উত্তেজিত হয়; আমি দেখি এক বালিকা সুচিত্রাকে, বালিকাটি তরুণী সুচিত্রা সেন হ’লে ‘অগ্নিপরীক্ষা’র শেষ দৃশ্যের উত্তমের মতো আমিই জড়িয়ে ধরতাম। সুচিত্রা সেনকে বাল্যকাল থেকেই আমি পছন্দ করি, তবে তার ওপর চড়ার স্বপ্ন আমি কখনো দেখি নি, শুধু বুকে লেণ্টে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘষার গ্ৰীবায় একটু ঠোঁট রাখার স্বপ্ন দেখেছি।

মেয়েটির বাবা আর মা আমার পায়ে এসে পড়ে; বলে, ‘হুজুর, দশজন জিহাদি মাইয়াডার উপুর একলগে ঝাপাই পরছে।’

আমি বলি, কীভাবে ওরা করলে আপনারা খুশি হন?’

মেয়েটির মা বলে, ‘হুজুর, আমার মাইয়াডার মাত্র দশ বছর, আর অহনও রক্ত দেহা দেয় নাই, ও নাবালিকা, হুজুর।’

আমি বলি,’ রক্তের দরকার নেই, রক্ত আমরা অনেক দেখেছি।‘

মেয়েটির মা পায়ে পড়ে বলে, ‘মাইয়াডা মইর‍্যা যাইব, হুজুর।’

আমি বলি, ‘তাহলে জিহাদিরা কীভাবে উৎসব করবো?’

মেয়েটির মা বলে, ‘হুজুর, আমার মাইয়াডা কচি, আপনেরা একজন একজন কইর‍্যা যান, একলগে যাইয়েন না, হুজুর।‘

আমি জিহাদিদের লাইন করে দাঁড় করাই, বলি, জিহাদিরা, তোমরা একজন একজন করে যাও, বেশি সময় নিও না।’

লাইনের প্রথম জিহাদি মোঃ আল জমিরুদিনের বাড়িতে দুটি বিবি আছে, সে এক প্ৰচণ্ড শক্ত পুরুষ, তার পুরুষাঙ্গ হয়তো পিস্তলের থেকেও প্ৰচণ্ড। সে নিজেই মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটি দণ্ডায়মান পুরুষাঙ্গ। তার ভাগ্য ভালো, লাইনে সে প্ৰথম, সেই প্রথম ঢোকে। ঢোকার কিছুক্ষণ পর মেয়েটির একটি চিৎকার শুনতে পাই, মনে হয় মেয়েটির ভেতরে হয়তো একটি কামান ঢুকেছে।

সে অভিজ্ঞ পুরুষ, তার বের হতে একটু সময় লাগে।

হয়তো সে সুযোগ বুঝে দুটি চান্স নেয়, কিন্তু আমি কী করতে পারি? তিনটি চান্স নিলেও আমার করার কিছু ছিলো না; জিহাদকে আমি বাধা দিতে পারি না।

তারপর একের পর এক জিহাদিরা ঢুকতে ও বেরোতে থাকে, বুঝতে পারি আগে থেকেই তারা টানটান ছিলো, ক্ষরণে সময় লাগে নি। মেয়েটির আর কোনো চিৎকার শুনি নি। মেয়েটি খুবই লক্ষ্মী।

শুধু আমার পায়ের নিচে বসে কাদছিলো মেয়েটির মা আর বাবা।

একরাতে হয় না, রাতের পর রাত আমরা ঠাণ্ডা আগুনে শীতল করতে থাকি মালাউন পাড়াগুলো।

আমার জিহাদিদের ছহবতের শক্তি আমাকে মুগ্ধ করে, অজস্র হুর কেনো দরকার। আমি রাতের পর রাত বুঝতে পারি। আমার মেইন পাটির নেতা বিখ্যাত খিলজি ছৈয়দ ছব্দর আলি বন্টু ঠাণ্ডা আগুনকে গরম আগুনে পরিণত করে, কিন্তু আমি অকাজে গরম হতে চাই না। যা চাই, তা পেলে গরম হওয়ার কী দরকার? আমার জিহাদিরা মালাউন পাড়ায়ই হুর লাভ করে, গফুরুর রাহিম এতো হুর যে জিহাদিদের জন্যে পাঠিয়েছিলেন, তা আমি ভাবতে পারি নি। মালাউনপাড়াগুলো নানা রকম হুরের পল্লী, ওগুলো হুরস্বর্গ। যারা আল্লার কাজ করে, আল্লা তাদের তৌফিক দান করেন; কিন্তু এতো তৌফিক দেবেন, ভাবি নি।

জিহাদিরা ছহবতের পর ছহবত করতে থাকে, কিন্তু একটু টু শব্দও করে না মালাউন হুরগুলো; ওরা জানে জিহাদির সঙ্গে তারা পারবে না। মাঝখান থেকে তাদের ক্ষতি হবে, মুখ দেখাতে পারবে না। এই হুরিগুলো কি সবাই পিল খেয়ে আমার জন্যে প্রস্তুত ছিলো?

টাকা পয়সা সোনারুপায় আমাদের বস্তা ভ’রে ওঠে। এটাই আসল দরকার। আমি অবাক হই হুণ্ডি করে টাকা পাঠানোর পরও ওদের ঘরে এতো টাকা? ঠিক ইহুদিদের মতো, আর কিছু ছিলো না, টাকা ছিলো।

জিহাদি মোঃ হাফিজুদ্দিন এক অপূর্ব প্রস্তাব নিয়ে আসে আমার কাছে।

সে বলে, ‘হুজুর, মালাউন ছহবতে ত গুনাহ্ নাই।’

আমি বলি, ‘না।‘

সে বলে, ‘হুজুর, আমার দিলে একটা খায়েশ আইছে।’

আমি বলি, ‘কী খায়েশ, মোঃ ফাফিজুদ্দিন?’

সে বলে, ‘আমার খায়েশ চাইর বিবির লগে একসঙ্গে ছহবত করুম।’

সে একটি ঘরে মা, দুই মেয়ে, ও এক নববধুকে পেয়েছে; তাদের ঘরে আটকে রেখে এসেছে আমার দোয়া নেয়ার জন্যে। বিজয়ের ওই অপূর্ব সময়ে বাধা দেয়া অমানবিকতা হতো, আমি বাধা দিই না।

আমি বলি, ‘তোমার খায়েশ তুমি পূর্ণ করো, খায়েশ পূর্ণ না হ’লে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তোমার এখন সুস্থ থাকা দরকার।’

তার বডিগার্ডরা তাকে পাহারা দেয়, সে একের পর এক মা, দুই মেয়ে, ও নববধুর সঙ্গে ছহবত করে–খায়েশ পূর্ণ করে, ঘণ্টা দুয়েক সময় নেয়, চারজনের জন্যে ১২০ মিনিট বেশি সময় নয়, হয়তো পরম সুখ পেয়ে সে রিপ্লে করে, যেমন এক্সএক্সএক্সের সময় করে; যখন সে বেরিয়ে আসে দেখি সে নওজোয়ান হয়ে গেছে; তবে ওই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দেখি বাপটি ও মরদ ছেলেটি গলায় দড়ি দিয়ে আমগাছের ডালে ঝুলছে।

কেউ যদি আমগাছের ডালে ঝুলে সুখ পেতে চায়, তাহলে তার সুখে আমি বাধা দিতে পারি না; সকল প্ৰাণীর সুখে আমি বিশ্বাস করি।

পরে মা, দুই মেয়ে, ও নববধুটি আমগাছের ডালে বুলেছিলো শুনেছিলাম; তা ঝুলুক, শ্রাবণের ঝোলনে ঝোলার অভ্যাস ওদের আছে; শ্যামের সঙ্গে ঝুলে যদি ওরা পুলকিত হয়, আমি কী করতে পারি?

ছহবত আমারও দরকার, কিন্তু জিহাদিদের মতো, মোঃ হাফিজুদিনের মতো, যাকে তাকে ঘরের মেজেতে চিৎ ক’রে ফেলে দাপাদাপি করে টানাটানি ক’রে ছহবত আমাকে মানায় না।

আমার তেমন রুচিও নেই; আর আমি যদি জিহাদিদের মতো যাকে তাকে ছহবত করি, তাহলে তারা আমাকে মানবে না; আমি নেতা, নেতার মতোই আমার ছহবত করতে হবে। এতে কোনো গুনাহ নেই; আমি জামাঈ জিহাদে যোগ দেয়ার পর অনেক কিতাব পড়েছি, যুদ্ধের পর গনিমতের মাল কীভাবে ভোগ করতে হয়, তা আমি জানি।

এখন সেই মহান যুগও নেই যে মিসর বা সীতারামপুর থেকে কেউ আমাকে একটি দুটি রূপসী দাসী পাঠাবে; তাই আমার রীতিতেই আমি কাজ করি।

গোটাদশোক উৰ্বশী আমার পছন্দ হয়। শ্ৰী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাহেবের একটি কবিতা পড়ার পর নিহ মাতা নহ কন্যাদের জন্যে আমার স্বপ্ন জেগে উঠেছিলো; চিত্ত আত্মহারা হয়েছিলো, রক্তধারা কেঁপেছিলো, আমি তো পুরুষ।

আমি ওদের দিকে জিহাদিদের হাত বাড়াতে দিই না; এবং তাদের পিতাদের আমি একটি বিশেষ বরকত দিই। উর্বশীদের পিতা হওয়ার জন্যে বিশেষ বরকত তাদের প্রাপ্য, কৃতিত্বের জন্যে সকলেরই বরকত প্ৰাপ্য।

একেকটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি; ঠোঁট দেখি, মোটা ঠোঁট আমার পছন্দ; জিভ দেখি, মোটা ধারালো চ্যাপ্টটা খসখসে জিভা আমার পছন্দ; স্তন দেখি, মাঝারি স্তন আমার পছন্দ, পানিভরা ব্লাডারের মতো স্তন আমি সহ্য করতে পারি না; উরু দেখি, সরু মাংসল উরু, আমার পছন্দ।

আমার মনে হয় আমি মহারাজ মধ্যযুগের ক্রীতদাসীদের হাঠে গেছি, বেছে বেছে ক্রীতদাসী কিনছিং আমার অবশ্য পয়সা লাগবে না। আমি তাদের দয়াই করি: আমার মেইন পার্টির খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু বা আমার দুই নম্বর জিহাদি তা করে না, তাতে একটু গোলমাল হয়। কিন্তু গোলমাল আমাদের জন্যে গানের মতো, আমরা যে-গোলমালই করি না কেনো, সেটা গিয়ে পড়ে। আমাদের আগের মেইন পার্টির ঘাড়ের ওপর।

আমার মেইন পার্টির খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু ও তার দলের অসামান্য কৃতিত্বের উপাখ্যান এখানে আমি বলতে চাই না, সেটা খুবই দীর্ঘ ও মহৎ। জিহাদি না হয়েও যে সে ও তারা এতোটা জিহাদ করতে পারে, তাতে আমি বিস্মিত হই। সে পছন্দ করে প্রথমে গুলি করতে, তারপর আগুন লাগাতে, তারপর লুঠ করতে, তারপর ছহবত করতে; এবং তার আদর্শ অন্যান্য খিলজিরাও মেনে চলে। আগের মেইন পাটি বা মালাউনদের দালালদের শিকার করতে সে পছন্দ করে; শিকারে তারা আমাদেরও ছাড়িয়ে যায়। খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু ও অন্যান্য খিলজির কাহিনী এখন পুবেপশ্চিমে অনেকেরই জানা। তবে আমাদের লিডাররা মনে করেন, টেলিভিশনে, মঞ্চে, গলা ফাটিয়ে বলেন, ওগুলো অপপ্রচার, প্রপাগ্যান্ডা, আসলে ওগুলো আগের মেইন পার্টির শেখদেরই কাজ। আমাদের লিডাররা সত্যের সেবক।

হোসেনপুরে আগে দুর্ধর্ষ শেখ ছিলো আগের মেইন পার্টির কুদরত মোল্লা।

সে চেয়ারম্যান ছিলো, এবং সব ছিলো; আসি তার পা ধরে সালাম করতো, ইউএনও তাকে ‘স্যার’ বলতো, সে থুতু খেতে বললে ইউএনও আর অসি থুতু চাটার জন্যে কামড়াকামড়ি করতো। কিন্তু এখন কোথায় সেই কুদরত মোল্লা? কেউ চিরকাল থাকে না, এটাই ইতিহাসের কৃতঘ্নতা।

খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু প্ৰথম তার বাড়িতে আগুন লাগায়, তার গুণ্ডা ছেলে দুটির লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়, বউটাকে পুড়ে মারে, কুদরত মোল্লাকে অবশ্য পাওয়া যায় নি, কিন্তু পাওয়া যায় তার একটি কিশোরী ও একটি যুবতী মেয়েকে; তাদের সে একা ছহবত করে নি, একশো জন মিলে ছহবত করে, পরে তাদের বিলে ফেলে দেয়। একটুকু দয়া সে করেছে, বিলে ফেলে দিয়েছে; ছহবতের পর পুড়িয়েও ফেলতে পারতো।

খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু মেইন পার্টির, ব্যাটা একটু গাধাও, কোনো ট্যাক্ট জানে না; একদিন বুঝতে পারবে ট্যাক্ট ছাড়া কাজ করলে কী ফল পেতে হয়। আমি ট্যাক্ট শিখেছি ইতিহাস থেকে, ও শেখে নি।

আমার কষ্ট হয় খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টুর জন্যে; ও হয়তো একদিন অন্য কোনো খিলজির হাতেই শেষ হয়ে যাবে; ও অন্য খিলজিদের কিছু দেয় না, ও জানে না। শুধু যোনিতে পেট ভরে না, টাকাও লাগে। টাকাগুলো সবই ছব্দর আলি ঘরে তুলছিলো, আর তার খিলজিরা ধাতু খরচ করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলো; টাকা ছাড়া যে ধাতু উৎপন্ন হয় না, এটা সে বুঝতে পারে নি; সে ধর্মের কোনো বই পড়ে নি:–শুনেছি। এর মাঝেই তার একটি চোখ ওপড়ানো হয়ে গেছে, খিলজিরাই উপড়িয়েছে, যদিও নাম দেয়া হচ্ছে শেখদের।

আমার পছন্দের উর্বশীরা কুমারী।

আসলে তারা সেই কাজ করেছে কি না জানি না, মালাউনগুলো কি না করে পারে? এটাই তো ওদের প্ৰিয় খেলা। তবে বিয়ে হয় নি, আর সতীচ্ছদের ও বিছানায় রক্তপাতের প্রতিও আমার মোহ নেই; আমি তো সতীচ্ছদ ভাতে মেখে খাবো না, আর অনেক রক্ত আমি দেখেছি, একটুখানি পর্দা ছেড়া রক্ত দেখার জন্যে আমার কোনো সাধ নেই। দেহখানি, স্তনগুচ্ছ, আর মুখখানি সুন্দর হ’লেই হয়, আমি যোনি নিয়ে সতীচ্ছদ নিয়ে মাথা ঘামাই না; আমার মাথার ঘাম পায়ে ফেলার অজস্র কর্মকাণ্ড রয়েছে।

তাদের পিতারা মাথা নিচু ক’রে থাকে, এটা অভিনব কিছু নয়। নিচু মাথাই আমি পছন্দ করি, এতে আমি আমার মহিমা পরিমাপ করতে পারি। নিজের সামনে অন্যের নিচু মাথা দেখলে আমার মাথাটি আকাশে ঠেকে।

পিতাদের বলি, ‘আপনাদের জানমাল আমার হেফাজতে, আপনাদের একটুও ক্ষতি কেউ করতে পারবে না, আপনাদের টাকা পয়সাও নেবো না।’

তারা এসে পায়ে পড়ে, বলে, ‘হুজুর।’

আমি একেকজনের জন্যে একেকটি দিন ঠিক ক’রে দিই।

কমলাকলি, মৃণাল, মাধুরীলতা, দ্ৰৌপদী, সুবৰ্ণলেখা, রাজলক্ষ্মী, মায়ারাণী, চম্পাবতী, মঞ্জরাণী ধরনের নাম তাদের; তাদের দেখার সময়ই আমি সুগন্ধ পাই, তারা জিনিশ খুবই ভালো, সোভানাল্লা। মঞ্জরাণীটা আবার এমএ পাশ, শুনেছি চাকুরির নামে শহরে খানকিগিরি করে, চাকুরিও করে, এতে আমি দোষ দেখি না একটু বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা সবারই থাকা দরকার; একটা এমএ পাশ জিনিশ চাখার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের, ওইটিকেই আমি প্ৰথম অপয়েন্টমেন্ট দিই। কিন্তু দেখি পাশ হ’লেই জিনিশ ভালো হয় না।

পিতাদের বলি, ফজরের আগেই একেকজনকে আমার গোলাপ-ই-সাহারায়, পৌঁছে দিতে হবে, কেউ জানবে না। সম্ভবত আরব্যরজনীর অমর কাহিনী আমার মাথায় তখন কাজ করছিলো, তবে ফজরে গর্দান নেয়ার বা রাতে শাহেরজাদির গল্প শোনার কোনা ইচ্ছে আমার ছিলো না; কাজ না করে রাতভর যে গল্প শোনে সে অবশ্যই সন্ট্রপিড, আর এটা গল্প শোনার যুগ নয়, আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময় বাদশারা গল্প শুনতো, এখন গল্প সৃষ্টি করে, ভিডিওতে তা অক্ষয় ক’রে রাখে; আমি অবশ্য পর্নোভিনেতা হতে চাই না।

উর্বশীদের পিতা হওয়ার জন্যে তারা আমার কাছে থেকে বিশেষ সুবিধা পায়, দু-একটি গ্রাম তাদের আমি দান করতে পারি না, তবে তাদের টাকা পয়সা নিই না, বাড়িঘর জমি দখল করি না; এটা তাদের প্রাপ্য; এজন্যে তাদের আমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকার কথা।

তবে ইহুদি ও মালাউনরা কবে কৃতজ্ঞ থেকেছে, ওরা মোনাফেক।

ওই মালাউন উর্বশীগুলো আমাকে অপছন্দ করে নি।

আমি তাদের সুখ দিয়েছি, জিহাদিদের মতো আমি পুরোপুরি বর্বর বেদুয়িন হয়ে উঠতে পারি নি, তারাও আমাকে সুখ দিয়েছে; তাদের ঘরবাড়িগুলো আমি বঁচিয়েছি। ঘরবাড়ি বড়ো, না দেহের একটু ছোট্ট জায়গা বড়ো? আমি অবশ্য একটু ছোটো জমিতে, এককাঠা জমিতে, চাষ করতে পছন্দ করি না। আমি চাষ করি। সারা দেহজমি ভ’রে, এটা তারা পছন্দ করে, সোভানাল্লা। ছেলেবেলায় দেখেছি বাবা যখন জমি চাষ করাতো, একবারেই পুরো জমি চাষ করাতো; আমারও সেটা ভালো লাগতো, একপাশ চাষ ক’রে বাকিটা ফেলে রাখা বাবা সহ্য করতে পারতো না, আমিও পারতাম না।

আমার একটি প্রিয় অভ্যাস হচ্ছে ছহবতের পর তাদের কিছু উপহার দেয়া।

আমার মধ্যে একটি আরব্যরজনীর হারুনর রশিদ বাস করে।

যদি এখন সোনার দিনার আশরাফির চল থাকতো, তাহলে আমি ছহবতের পর তাদের অমৃতনির্ঝর সোনার খনিতে কয়েকটি দিনার আশরফি ঢুকিয়ে দিতাম উপহার হিশেবে, যাতে আমাকে তারা চিরকাল মনে রাখে; স্তনে দুটি স্বর্ণমুদ্রা গেঁথে দিতাম, যাতে ওখানে আমি চিরকাল থাকি। এখন যা চলে, তা ঢোকানো যায় না; তাই আমি তাদের কয়েক হাজার করে দিই, তারা খুশি হয়।

ওরা অনেকেই এক সঙ্গে কয়েক হাজার দেখে নি।

আমি কিছু সোনার হার, আংটি, লকেটও কিনে রেখেছি; যারা আমাকে বেশি সুখ দেয়, বেহশতের স্বাদ দেয়ম তাদের খনিতে আমি ধীরেধীরে দামি সোনার হার, আংটি, লকেট ঢুকিয়ে দিই, ফ্র্যাংক হ্যারিস নামে এক অতিশয় মহাপুরুষের অকপট আত্মজীবনী পড়ে আমি এটি শিখেছিলাম, তাদের টেনে বের করতে বলি; তারা টেনে বের ক’রে সুখে তা গলায় আঙুলে পরে।

তাই আমি ঠিক ধর্ষণ, বলাৎকার, বা জেনা করি না, পেয়ার করি, প্ৰেম করি; যেমন দিল্লির বাদশারা, বাগদাতের সুলতানরা, তুরস্কের সুলতানরা করতো; হয়তো তাদের থেকে একটু বেশি রাজকীয়ভাবেই করি, যদিও আমার রাজত্ব ও দিনার নেই, কিন্তু আমি প্ৰেমকলা শিখেছি। বাৎস্যায়নের থেকেও ভালো। আমার সঙ্গে যারাই ঘুমিয়েছে, আমার সাম্যবাদ সর্বাহারার যুগের পর, তারা সবাই তা স্বীকার করেছে, আবার আসতে চেয়েছে।

বিজয়ের পর আমাদেরও উৎসব আছে, প্ৰাপ্য আছে।

আমাদের প্রাপ্য উর্বশী, রম্ভা, আর উর্বশী-রুম্ভার থেকেও যা সুন্দরী ও সেক্সি ও সেক্সাইটিং, মেরেলিন ও সুচিত্রার সংমিশ্রণ, সেই অজর অমর টাকা, যাতে খোজাও দিনরাত রতিতে মত্ত থাকতে পারে, খোজারও সর্বাঙ্গে অজস্র দৃঢ় শিশ্ন বিকশিত হয়, সেই চিরকামবেদনময়ী, অনন্তযৌবনা, কামদেবী, যার আছে অজস্র পীনোন্নত স্তন ও মধুময় যোনি, ও প্রশস্ত নিতম্ব–টাকা, সোনারুপো, যা ৭০ বিলিয়ন ছওয়াবের থেকেও আকর্ষণীয়; একদিন পাবো বাড়িঘর, যাতে আমরা পবিত্ৰ গাৰ্হস্থ্য জীবন যাপন করবো, ধর্মকর্ম করবো, মক্কা-মনোয়ারায় যাবো। টাকার মতো শাহেরজাদি আর হয় না; সে সহস্র একরােত নয়, লক্ষ লক্ষ দিনরাত ভরে চাঞ্চল্যকর গল্প বলে; তার গল্প চলে ঢাকা থেকে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, মুম্বাই, সোনারগাঁও, শেরাটনে।

ঠাণ্ডা আগুন এখনো আমরা থামিয়ে দিই নি, ঠাণ্ডা আগুনের থেকে গরম আগুন আর নেই; এর মাঝে ওরা অনেকেই ওদের আপনি দেশে চলে গেছে, কিন্তু ঠাণ্ডা আগুনে পোড়া দাগ কোনো দিন। সারবে না।

আমার মদিনাতুন্নবি এলাকার অনেককেই খবর দেয়া হয়েছে।

কাশিনাথপুরের শ্ৰীধর দাস এসেছিলো পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে। এক সময় এই টাকা পেলে আমি পাগল হয়ে যেতাম, মজনু হয়ে যেতাম, এখন এগুলোকে মনে হয় ভিক্ষুকের ভাঙা থালের ওপর পড়ে থাকা কয়েকটি কানা পয়সা। তার ওপর থুতু ছিটোতে ইচ্ছে করে, ছিটাই।

শ্রীধর বলেছিলো, ‘এই ট্যাকাডা নেন, হুজুর, আমার মায়াডারে নষ্ট কইরেন না, আমার মাইয়াডা ফুলের মতন।’

এটা বেশ অদ্ভুত, মালাউনরা সবাই তাদের মেয়েদের ফুলের সঙ্গে তুলনা করে। ব্যাটারা ধর্ম ও বিজ্ঞান কিছুই জানে না; ফুল যে গাছের যোনি ও শিশ্ন, এটা ওরা জানে না; আমি জানি; তাই ফুলই তো আমি পছন্দ করি। আমি ওকে এসব বোঝাতে যাই নি, কোনো দরকার নেই; আমার যা দরকার, তা পেলেই আমি তৃপ্ত:–কয়েকটি সুন্দর সুগন্ধি রঙিন তীব্ৰ পুষ্প।

আমি বলেছিলাম, ‘দ্যাখ, ফুলই তা আমি পছন্দ করি, ফুলের সুগন্ধ নেয়ার কথা আমাদের ধর্মে আছে, তোমাদের মালাউন কবিই তা অনুবাদ করেছে–যদি জোটে দুইটি পয়সা ফুল কিনো হে অনুরাগী।’

শ্ৰীধর বলেছিলো, ‘আমার মাইয়াডারে আপনে নষ্ট কইরেন না, হুজুর, ট্যাকাডা নেন, আমারে বাঁচান।‘

আমি বলেছি, ‘একরােত থাকলে সে নষ্ট হবে না, ফুল আমি নষ্ট করি না, ফুলের সুগন্ধ নিই, আর মালাউন ফুল আমার পছন্দ, তোমাকে কথা দিচ্ছি। কেউ জানবে না, তোমার মেয়েটা নষ্ট হবে না, পরে হয়তো সেই আমার কাছে বারবার আসতে চাইবে, নইলে সবাই জানবে, তোমার মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেছে।‘

শ্ৰীধর বলেছিলো, ‘তাইলে আর পঞ্চাশ হাজার দেই হুজুর, মাইয়াডারে ক্ষেমা কইর‍্যা দ্যান, অরে ইন্ডিয়া পাডাই দিমুনে।’

আমি বলেছি, ‘তিন লাখ, আর এক রাত লাগবে শ্ৰীধর, তোমার মেয়েকে আমি ধর্ম শিখাবো, বিছমিল্লা ব’লে ছহবত করবো, কোনো ক্ষতি হবে না, চাইলে তোমার মেয়েটাকে মুছলমানও বানিয়ে দিতে পারি; কালই লাগবে, নইলে মেয়েটাকে তুমি বিলে পাবে, তখন আমি একলা করবো না। আর তুমি কি মনে করো ইন্ডিয়ায় আমার থেকে ভালো পুষ্পানুরাগী আছে?’

শ্ৰীধর বলেছিলো, ‘হুজুর, আপনের পায়ে পড়ি।’

কিন্তু শ্ৰীধর ও তার মেয়ে দুৰ্গা আত্মহত্যা করে আমার বেশ ক্ষতি করে, আর থানার অসি আর দারোগাগুলোর উপকার করে যায়।

ওই বাঞ্চতের পুত্রের আর তার পাছাভারি চিকন কোমরের মেয়েটির বিষ ওয়ার কি দরকার ছিলো; বিষ কি আমার খৎনাকরা হুজুরের থেকে উত্তম? মালাউনদের বিশ্বাস করা অসম্ভব, আর করবো না। দুর্গার ওপর অসিটারও চোখ পড়েছিলো, কয়েকবার শ্ৰীধরের বাড়িতেও গেছে; কিন্তু তার গোটা পাঁচেক চাকরানি আছে, আর সপ্তাহে সপ্তাহে নতুন নতুন চাকরানি আসে, সে কচি মেয়েদের থেকে কচি টাকার ওপর চড়তেই বেশি পছন্দ করে; তার কোনো ক্ষতি হয় নি, লাখ দুয়েক সে আদায় ক’রে নিয়েছে, ক্ষতি হয়েছে আমার।

তাই অসিটিকে একটু দেখিয়ে দিতে হয়েছে, জামাঈ জিহাদে ইছলামের হুজুরকে ছেড়ে সে কীভাবে দু-লাখ হজম করে? এখন সে আমার পিছে পিছে ঘুরছে, চাকুরটিও নেই; পঞ্চাশ লাখ ছাড়া ওর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *