০৭. জ্যোতিষ (বেদাঙ্গসূত্র)

জ্যোতিষ (বেদাঙ্গসূত্র)

বৈদিক যুগে রচিত জ্যোতিষ-সংক্রান্ত কোনো গ্রন্থ আমাদের কাছে এসে পৌঁছয় নি; এ-সম্পর্কে যজুর্বেদ একমাত্র উৎস হিসাবে গণ্য। অবশ্য লগধপ্রণীত জ্যোতিষ বেদাঙ্গ বা বেদাঙ্গ-জ্যোতিষ নামে একটি গ্রন্থ পাওয়া যায়; এর প্রচলিত দুটি পাঠই পদ্যে বিন্যস্ত। ঋগ্বেদীয় পাঠে ছত্রিশটি এবং যজুর্বেদীয় পাঠে তেতাল্লিশটি শ্লোক পাওয়া যায়। উভয় পাঠেই নিন্মোক্ত বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে : উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সময়ে সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থান, পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সঠিক সংশয়, সাতাশটি চান্দ্ৰ আবর্তনের স্থিতি এবং এ-সব গণনার নিয়মাবলী। অবশ্য জ্যোতিবিদ্যা সম্পর্কে এই আগ্রহ তখনো পর্যন্ত বিশুদ্ধ বিদ্যাচর্চার প্রয়াস হয়ে ওঠে নি; যজ্ঞানুষ্ঠানের উপযোগী যথার্থ সময় নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে যজুর্বেদ ও ব্রাহ্মণ সাহিত্যে নক্ষত্রের অবস্থানের উল্লেখ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এগুলির মধ্যে দিয়ে জ্যোতিবিদ্যার ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছিল যা কয়েক শতাব্দী পরে সমৃদ্ধতর অভিব্যক্তি অর্জন করেছিল। এছাড়া কৃষকদের পক্ষে বিশেষ সহায়ক নক্ষত্রের অবস্থান সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার পক্ষে এ শাস্ত্ৰ অত্যন্ত সহায়ক হয়ে উঠেছিল।

প্রাচীন সংস্কৃতিগুলিতে জ্যোতির্বিদ্যার উন্নতি বিশেষ তাৎপর্যবহ হয়ে ওঠে; চীন, ব্যাবিলন ও মিশরে বর্ষপঞ্জী যাজকশ্রেণীর প্রয়োজনীয় উপকরণে পরিণত হয়েছিল কেননা এর সাহায্যে সেসব দেশের মানুষ যজ্ঞানুষ্ঠানের পক্ষে সঠিক সময় নির্দেশ করতে পারত। কৃষকসমাজ একে সাদরে গ্রহণ করেছিল কারণ এর সাহায্যে বৃষ্টিপাত সম্পর্কে যথার্থ ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হল; এতে যাজকশ্রেণীর পুঁথিপত্রের গৌরব আরো বর্ধিত হল এবং আপাত-দুর্বোধ্য কলাশাস্ত্র ও বিজ্ঞানের অনুশীলনের যথার্থতাও প্রমাণিত হলো।