একজন হরিণীর গল্প

ভূয়োদর্শী গাছগাছড়ার খোঁজে ঢুকেছি জঙ্গলে
কতবার অনাপন পথে শোলা-হ্যাটে বিশুদ্ধ শিশির জমে,
বুটে লেপ্টে থাকে খড়কুটো অবসাদে
কখনো ঘুমিয়ে পড়ি লতাগুল্ম ছাওয়া
ঝোপের আড়ালে, স্বপ্নে দেখি,
হাত মুঠোয় নাচে বিশল্যকরণী, আর নয় অসম্ভব
হৃদয়ের বিষণ্ন ক্ষতের নিরাময়। অকস্মাৎ একটি পতঙ্গভূক
গাছ গঙ্গা ফড়িং-এর অস্থির যৌবন শুষে নেয়।

জঙ্গলের পথে যেতে যেতে একজন তরঙ্গিত
হরিণীকে দেখে
চমকে উঠেছিলাম। অন্য কিছু চোখে পড়েছিল
কিনা আজ আর মনে নেই, শুধু তার
বিদ্যুচ্চমকের মতো রূপ, চোখের মণির গহনতা আঁকা
হয়ে গিয়েছিল বুকে। কিছুতেই তাকে
বিস্মৃতির খাদে ঠেলে দিয়ে ফেলে দিতে
পারিনি এখনো, কত সূর্যাস্তের রূপ মুছে গেল!
একজন হরিণীর কথা ভাবি নিজের ভেতরে
ডুব দিয়ে, বহুক্ষণ এক-একা আছি,
চোখে ঘুম নেই এক ফোটা। শুধু সেই হরিণীর
স্মৃতি চোখ হয়ে চেয়ে থাকে। কস্তুরীর ঘ্রাণে ছুটে
গিয়েছিল, পড়েছে জটিল ফাঁদে। তাকে ঘিরে সব
বাঘসিঙ্গি উৎসবের
আওয়াজ তুলবে সমস্বরে, তারপর মাংস তার
খুবলে খুবলে খাবে, রেণুগুলো ওড়াবে হাওয়ায়।
আমি হরিণীকে সেই ফাঁদ থেকে দূরে
বহুদূরে সরিয়ে নেবার
চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নিজের নির্জনতায় ফিরে
এসেছি, কেননা যতবার
খুলেছি বন্ধন তার ততবারই মাতালের মতো
আবার গিয়েছে ছুটে ফাঁদের নিকটে
নানা ছুঁতো ধরে,
নিজের মাথায় তার ভাঙ্গুক আকাশ, চেয়েছিল।
ভূয়োদর্শী গাছগাছড়ার খোঁজ মেলেনি এখনো। কায়ক্লেশে
ঘুরে ফিরি হরিণীকে একবার দেখার আশায়
তাকে ডেকে আনবার ভাষা
অহঙ্কারী
বট পাকুড়ের পাহাড়, বিনীত ঝর্ণাতলা, পাকদণ্ডী,
নিকট প্রার্থনা করি গলা পেতে। কী জানি কিসের
যোগে আজ কেবলি উপচে পড়ে ওষ্ঠ থেকে
ভুল ভাষা, ভুল প্রতিধ্বনি ঘোরে গহন জঙ্গলে।

জঙ্গলে যে গল্প শুরু হয়েছিল তা শেষ হবার
আগেই কেমন খাপছাড়া
পূর্ণচ্ছেদ হয়ে যাবে? একটি ঘটনা
থেকে অন্য কোনো ঘটনার জট খোলা কী কঠিন।
এ নিয়ে আক্ষেপ নেই তিলমাত্র। ইচ্ছে হয়
আকাশ ফাটিয়ে হেসে উঠি,
তবু কেন চোখে জলছাপ
জেগে ওঠে বার বার, শূন্যতা শোনায় হাহাকার?