০৩. রচয়িতা (উপনিষদ)

রচয়িতা (উপনিষদ)

প্রধান উপনিষদগুলির মধ্যে অধিকাংশ যেহেতু সংলাপ-রচনার আঙ্গিকে বিন্যস্ত, তাই কথোপকথনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিকেই রচয়িতারূপে ধ’রে নিতে হয়, কারণ লেখক হিসাবে কেউ স্পষ্টভাবে উল্লিখিত নন। এটি অবশ্যই পদ্ধতি হিসাবে অসন্তোষজনক, কেননা বহু রচনাতে সংলাপমূলক আঙ্গিকের উপস্থিতি নেই— যেমন : ঈশ, শ্বেতাশ্বতর, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য, তৈত্তিরীয় ও ঐতরেয়; তাছাড়া কথোপকথনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকে বাস্তব জগতের অধিবাসী নন, দেবলোক থেকে তঁদের সৃষ্টি, যেমন যম, ইন্দ্ৰ, প্রজাপতি। আমরা রচনা থেকে মোটামুটিভাবে যে তথ্য সর্বজনগ্রাহ্যরূপে গ্ৰহণ করতে পারি, তা হল এই যে, স্ৰষ্টারূপে যাদের নাম উল্লিখিত হয়েছে সাধারণত তারা অকৃত্রিম।

প্ৰতিদ্বন্দ্বী চিন্তাধারা এবং বিভিন্ন প্ৰাচীন বা শ্রদ্ধেয় বিশেজ্ঞদের নাম উল্লিখিত হয়েছে, যাঁদের অবদানেই সম্ভবত নব্য ভাবধারা গড়ে উঠেছিল। তবে, সর্বাধিক বিখ্যাত ব্যক্তির নাম হল যাজ্ঞবল্ক্য, যিনি বৃহদারণ্যকের আধ্যাত্মিক ভাবকেন্দ্র রচনা করা ছাড়াও অন্য একটি ভাবধারার প্রথম প্ৰবক্তা হয়েছিলেন–পরবর্তীকালে যা ‘বেদান্ত’ নামে পরিচিত হ’ল। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নামগুলি হল শাণ্ডিল্য–বিখ্যাত ‘তজ্জলান’ তত্ত্বের প্রবক্তা, দধ্যঙ্‌–মধুবিদ্যার প্রণেতা এবং আরুণি, মনস্তত্ত্ব এবং নাম ও পদার্থতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ। উপনিষদের মতবাদগুলির প্রবক্তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি–তাঁরা অরণ্যেই থাকুন বা গৃহবাসীই হােন বা রাজা জনকের মতো প্ৰাসাদনিবাসী হােন, এই মর্যাদালাভে তাঁদের কোনো বাধা ছিল না।