০৮. সমাজ (ব্রাহ্মণ)

সমাজ (ব্রাহ্মণ)

পৃথক বর্ণরূপে ব্ৰাহ্মণের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে এবং তখনই ব্ৰাহ্মণ রচনার প্রথম পর্যায়ের সূত্রপাত হয়েছে। ঋগ্বেদের একটি মাত্র ঋকে অন্য বর্ণ অপেক্ষা ব্ৰাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষিত হয়েছিল; জাতিভেদপ্ৰথা, অন্তত প্ৰাথমিকভাবে, সমাজের নিঃসংশয় প্রতিষ্ঠা লাভ করার পরই শুধু ঐ মন্ত্র রচিত হওয়া সম্ভব। ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যের সর্বত্র ব্ৰাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্বকে অবিসংবাদী সামাজিক সত্যরূপে ইঙ্গিতে ধ’রে নেওয়া হয়েছে; অবশ্য জনসাধারণের প্রতি তাদের দায়িত্বের আভাসও পরিস্ফুট। ব্ৰাহ্মণ জনসাধারণকে শিক্ষাদান করে তার সামাজিক ঋণ পরিশোধ করে। গোপথ ব্ৰাহ্মণের পূর্বভাগ (২ : ২) বলা হয়েছে যে, ব্ৰাহ্মণের সাতটি অতিরিক্ত গুণ রয়েছে : ব্ৰাহ্মাণ্য মহিমা, খ্যাতি, নিন্দা, ক্ৰোধ, অহংকাব, সৌন্দর্য ও সুঘ্ৰাণ। অধিকাংশ ব্রাহ্মণের বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্ৰাহ্মণকে যে কায়িক শ্রম থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিশেষ সুবিধা প্ৰদান করা হয়েছে, তার পরিবর্তে কিছু কিছু বাধ্যবাধকতাও তাকে মেনে নিতে হয়। যেমন : অধ্যয়ন, শিক্ষাদান ও যজ্ঞীয় অনুষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে মানসিক শ্রমসাধ্য অধ্যবসায়। তবে, স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, সব ব্ৰাহ্মণই পুরোহিত ছিলেন না; বর্ণগত বৃত্তিভেদও কিছু শিথিল, এমন কি কতকটা পরিবর্তনসহ ও সঞ্চরণশীল ছিল। কিন্তু, সাধারণভাবে ব্ৰাহ্মণেরা ছিল অবকাশভোগী শ্রেণী, সমাজে তাদের অবস্থান অপর্যাপ্ত সুবিধাভোগী রূপেই স্বীকৃত ছিল। অবশ্য তখনো পর্যন্ত, অন্ততপক্ষে এ যুগের প্রাথমিক পর্যায়ে, তাদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসিতপূর্ণ বলা যায় না। লোহার লাঙলের ফলা, মুদ্রা, বহির্বাণিজ্য যখন প্রবর্তিত হ’ল এবং সেই সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষুদ্র অথচ প্রভাবশালী রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হ’ল—ঐসব রাজা ব্যয়সাধ্য যজ্ঞানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে সমর্থ হলেন। এমন যজ্ঞানুষ্ঠানগুলি রাজন্য শ্রেণীর সামাজিক প্রতিষ্ঠার প্রতীক হয়ে উঠল; স্বাভাবিকভাবেই অন্যদিকে পুরোহিত শ্রেণী সুপ্রতিষ্ঠিত হ’ল। ধীরে ধীরে এবং সুনিশ্চিতভাবে প্রচুর অর্থ ও সমৃদ্ধি তাদের করায়ত্ত হ’ল।

ব্ৰাহ্মণরা যদিও প্রাথমিকভাবে যজ্ঞের প্রয়োজনেই বর্ষপঞ্জী আবিষ্কার করেছিলেন, তবু একই সঙ্গে তা সামুদ্রিক বাণিজ্যে নিরত ব্যবসায়ী ও কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের পক্ষে বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠেছিল। এই বর্ষপঞ্জী আবিষ্কার করে এবং ইন্দ্ৰজাল ও যজ্ঞানুষ্ঠানের প্রতীকায়ণ সম্পর্কে উন্নততর জ্ঞানের সাহায্যে ব্রাহ্মণেরা ক্রমশ অধ্যাত্মবিদ্যার দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন; তারা বর্ণগতভাবে ক্রমশ অধিকতর সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা অধিকার করে জনসাধারণের সম্ভ্রমভাজন হয়ে উঠলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাচীনতর জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ব্রাহ্মণদের সঙ্গে প্রতিতুলনীয় সম্প্রদায় ছিল। যেমন কেলটিক ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ‘মায়া’ সভ্যতা এবং ইহুদী, মিশরীয় ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতার পুরোহিতবর্গ। প্রাচীন ভারতীয় যাজকতন্ত্রের সঙ্গে ব্যাবিলনীয় পুরোহিত সম্প্রদায়ের সম্ভবত অধিকতর সাদৃশ্য ছিল।

প্রাচীন ভারতীয় সমাজে ‘ভূদেব’-রূপে অভিহিত ব্ৰাহ্মণদের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ছিল, তা ধীরে ধীরে সুস্থিতিযুক্ত ব্ৰাহ্মণ্য সমাজের পুরোহিতরা আত্মস্থ করে নিলেন। এই পুরোহিতরা যেহেতু মূলত দেবতাদের এবং সৃষ্টি প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন, তাই ব্ৰাহ্মণ-তাত্রিক পুরোহিতরা ধর্মীয় রাজাদের সন্ত্রমের আসনটি থেকে অধিকারচ্যুত করে সেই আসনে নিজেরা সমারূঢ় হলেন। পরবর্তী যুগে এই পুরোহিত সম্প্রদায় ক্ৰমে অলক্ষিতভাবে পুরাতন বৈশিষ্ট্যগুলি হারিয়ে ফেলে নূতনতর বৈশিষ্ট্যে অধিষ্ঠিত হলেন। তাদের সমৃদ্ধি, বিলাসিতার অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয় দিনগুলি শেষ হয়ে গেল। এই ঘটনা ঘটার পূর্বে পুরোহিতদের কার্য-পদ্ধতিকে যেভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছিল, তার বাস্তব ভিত্তি বহু পূর্বেই লুপ্ত হয়েছিল। যজ্ঞের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত, জটিলতর, বহুগুণ বধিত ও দীর্ঘায়িত করেই তা সম্ভব হয়ে উঠেছিল। আবার এই সমগ্র প্রক্রিয়াই সম্ভব হয়েছিল ভূমির স্বাভাবিক উর্বরতা এবং মোটামুটিভাবে সুনিশ্চিত শস্য উৎপাদনের ফলে, কেননা একমাত্র এধরনের সামাজিক পরিস্থিতিতেই জনসাধারণের একটি ক্ষুদ্র অংশকে উৎপাদনের শ্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া সম্ভব। বিভিন্ন যজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই বিশ্বাসে ইন্ধন যোগানো হ’ত যে, সৃষ্টির সূচনায় দেবতারা উর্বরতা, শস্য ও প্রাচুর্যকে নিশ্চিত করার প্রয়োজনে যা করেছিলেন, পুরোহিতরা আনুষ্ঠানিকভাবে যজ্ঞক্রিয়ার মাধ্যমে তারই পুনরুষ্ঠান করছেন। এইভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রেও পুরোহিতদের কাল্পনিকভাবে এক তুরীয় আধ্যাত্মিক ভূমিকায় উন্নীত করা হত। দীক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠানে আমরা এর স্পষ্ট প্রমাণ পাচ্ছি।

নির্দিষ্ট পুরোহিতদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিবিধ সামাজিক রীতি দেবকাহিনীর মাধ্যমের উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন-অশ্বমেধ যজ্ঞে পুরোহিতরা হণ্ঠী বা অশ্বে আরোহন করে যজ্ঞভূমিতে উপস্থিত হতেন। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে (৩ : ৮ : ১ : ২) বলা হয়েছে যে, তারা মোট চারটি ভাগে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রবেশ করতেন। যেমন : (১) অধিবৰ্ষ, ব্ৰহ্মা, হােতা ও অগ্রীধ্ন; (২) মৈত্রাবারুণ ও প্রতিপ্ৰস্থতা; (৩) প্রস্তোতা (তারপরই শুরু হত দীক্ষানুষ্ঠান) এবং (৪) ব্রাহ্মাণাস্থংসী, আচ্ছাবাক, নেক্টা, প্রতিহর্তা, গ্রােবষ্টুৎ, পোতা, উন্নেতা ও সুব্ৰহ্মণ্য।

অবেস্তায় যজ্ঞের প্রাচীনতম ইন্দো-ইরাণীয় রূপের অভিব্যক্তিকে মনে রেখে আমরা সহজেই এই সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে পারি যে, ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে প্রতিফলিত পুরোহিতদের কার্যাবলীর দ্রুত বৃদ্ধি বস্তুতপক্ষে ভারতীয় বৈশিষ্ট্যযুক্ত ঘটনা। ‘মহাব্ৰত’ যজ্ঞে উদগাতা নামক সমাবেদীয় পুরোহিতটি গান করতেন। ঋগ্বেদীয় হােতা একটি দোলনায় উঠে সেখান থেকেই ঋতুমন্ত্র আবৃত্তি করতেন। যজুৰ্বেদীয় অধ্বর্যু একটি শিলাখণ্ডের উপর দণ্ডায়মান হয়ে শপথ গ্রহণ করতেন এবং অন্যান্য পুরোহিতরা বিভিন্ন আসনে উপবিষ্ট থাকতেন। এভাবে পুরোহিতদের বিভিন্ন শ্রেণী ও তাদের কার্যাবলীকে পৃথক রাখা হয়। আদিম জাদুচিকিৎসকদের স্তরের বহু অবশেষ এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় : ইন্দ্ৰকে যজ্ঞের আহ্বান করার জন্য মধুর ও উচ্চস্বরে আহ্বানের নির্দেশ, মন্ত্রাদির সাহায্যে ব্যাধি-অধিষ্ঠাতা প্রেতদের বিতাড়নের জন্য চীৎকার ইত্যাদির মধ্যে আদিম ধর্মস্তবটি রয়ে গেছে।

বিভিন্ন পুরোহিতদের কর্তব্য সম্পর্কে প্রত্নপৌরাণিক ব্যাখ্যা কয়েকটি বিশেষ যজ্ঞের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক পুরোহিতের কার্যপদ্ধতি বা অবস্থানের যৌক্তিকতা একটি দেবকাহিনীর মাধ্যমে এমনভাবে ‘প্ৰমাণ’ করা হয়েছ যাতে তাকে অপরিবর্তনীয় ও অপরিহার্য বলেই মনে হয়। আবার, এধরনের প্রত্নকথায় প্ৰযুক্ত আপাত-যুক্তির মৌল বৈশিষ্ট্য থেকে এই সত্য আভাসিত হয়, যে যৌক্তিকতা প্রমাণের ঐ চেষ্টা সমাজের বিলম্বিত যুক্তি অন্মেষণেরই ফল। প্রয়োগ ও প্ৰদৰ্শিত কারণের মধ্যবতী অন্তলীন একটি অসামঞ্জস্য যেহেতু যুক্তির কাঠামোকে দুর্বল করে, তাই যুক্তির অভাব গোপন করার প্রয়োজনে প্রায়ই নিম্নোক্ত ধরনের বিবৃতি দেওয়া হয়েছে : ‘দেবতারা রহস্যময় উক্তি ভালবাসেন’ ! যেমন ঐতরেয় ব্ৰাহ্মণের একটি দীর্ঘায়িত দেবকাহিনীতে (২ : ১ : ২ : ৮) যজ্ঞে প্রদত্ত পশুবলির যৌক্তিকতা প্রদর্শনের চেষ্টা লক্ষ করা যায়।

বহুবার। কথিত হয়েছে যে, বিশেষ কোনো একটি যজ্ঞের অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই দেবতারা স্বর্গে যেতে পেরেছিলেন। এটা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, এই পর্যায়ে পার্থিব সুখী জীবনকে মৃত্যুর পরে স্বৰ্গ পর্যন্ত প্রসারিত করার সচেতন প্ৰচেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, এখানে এই তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে যে, যজ্ঞানুষ্ঠানের পূর্বে দেবতারা পৃথিবীতে বাস করতেন এবং তৃতীয়ত, কোন মানুষকে স্বর্গে পাঠানোও কোনো কোনো যজ্ঞানুষ্ঠানের দ্বারা সম্ভব, লক্ষণীয়, তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে (১ : ৬ : ৫ : ২৭) কথিত হয়েছে যে, বাজপেয় যাগে যজমান ও তার পত্নী একটি মইয়ে ওঠেন–যার দ্বারা তাঁরা প্রতীকীভাবে স্বর্গে যান। শামান বা জাদুপুরোহিত যে অনুষ্ঠানে ‘ভর’-এর মধ্যে স্বৰ্গে আরোহন করতেন, তার সঙ্গে সমগ্র বাজপেয় যাগটির একটি নিবিড় সাদৃশ্য রয়েছে। আবার একই সঙ্গে আমরা অনুষ্ঠানের সচেতন অধ্যায়ীকরণও লক্ষ করি। খাদ্যাখাদ্য বিষয়ক বিধি নিমেষের অর্থে ‘ব্ৰত’ ব্যাপারটি অগ্নিচয়ন সম্পর্কিত একটি আলোচনায় প্রকাশিত হয়েছে। এতে যে আত্মনিগ্রহের ধারণা রয়েছে, তার মধ্যে আমরা তৎকালীন ‘যোগী’ সম্প্রদায়ের প্রভাবের নিদর্শন লক্ষ করি। সম্ভবত, এই সম্প্রদায়টি প্ৰাগাৰ্য বা অবৈদিক আৰ্য জনগোষ্ঠীগুলির।

 

দক্ষিণাকে ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে বারে বারে নানাভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে, যাতে যজমানের পক্ষে দক্ষিণা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। যেমন তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে যে, দক্ষিণ যজমানের অন্ধকার ও অপরিচ্ছন্ন পাপকে বিনষ্ট করে (৩ : ৮ : ৪ : ১৫)। পুরোহিতরা তাদের সমস্ত সময় যজ্ঞবিদ্যাশিক্ষা ও যজ্ঞসাহিত্যে প্রকাশিত তত্ত্ব ও ব্যবহার-বিধি প্রয়োগের জন্যই ব্যয় করতেন; তাই দক্ষিণই ছিল জীবনধারণের একমাত্র অবলম্বন। তৎকালীন জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস ছিল যে, যজ্ঞানুষ্ঠানের মাধ্যমেই তারা প্রাচুর্যও সমৃদ্ধিপূর্ণ জীবনের পক্ষে প্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্ৰী লাভ করতে পারে। পুরোহিতদের কার্যবলীর জন্য তারা সানন্দেই দক্ষিণা দিতে প্ৰস্তুত থাকত। কিন্তু অপৰ্যাপ্ত দানের অনুজ্ঞা যেহেতু তখনই শাস্ত্ৰে দেখা দিয়েছিল, তাই ব্ৰাহ্মণ-সাহিত্যের সর্বত্রই দক্ষিণা সম্বন্ধে ঐ জাতীয় নির্দেশ অভিব্যক্ত হ’ল। বিশেষত, অশ্বমেধ যজ্ঞে দক্ষিণার বৈচিত্র্যে ও প্রাচুর্য এক অকল্পনীয় স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল।

তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে যে অতীন্দ্ৰিয়বাদী প্রবণতা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, তা কঠোপণিষদের নচিকেতা উপাখ্যানে প্রবলতর অভিব্যক্তি লাভ করে। ‘নচিকেতা অগ্নি’। অতীন্দ্ৰিয় মহিমার সঙ্গে সম্পর্কিত; এই অগ্নি প্রজজুলনকারীর জন্য ইহলোক ও পরলোকে সমৃদ্ধি-প্রতিশ্রুতি। তাণ্ড্য মহাব্ৰাহ্মণে যজ্ঞ-বেদীকে দেবতাদের মিলনভূমিরূপে প্ৰশংসা করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্রাহ্মণে যজ্ঞানুষ্ঠানের ছোট ছোট অংশ ও অনুপুঙ্খ উপকরণ, কাৰ্য, পুরোহিত, মন্ত্র বা অন্যান্য উপাদানকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাদের কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যজ্ঞের বিভিন্ন অনুপুঙ্খ যতই প্ৰতীকায়িত তাৎপর্য ও গুরুত্ব অর্জন করতে লাগল, ততই বিভিন্ন ব্যাখ্যার মধ্যে বিতর্ক ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠল। তৎকালীন মানসিকতায় দেবকথা ও যজ্ঞানুষ্ঠান মিলে একত্রে যে যৌগিক সামগ্রিকতাকে পুষ্ট করেছে, তাতে প্ৰতি অনুপুঙ্খই অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য। দেবতাদের কাছ থেকে যজ্ঞের পলায়ন ও নূতন আঙ্গিকের অনুষ্ঠানের দ্বারা পুনরুদ্ধার বিষয়ে বহু দেবকাহিনী বিভিন্ন ব্রাহ্মণে পাওয়া যায়। এ ধরনের কাহিনীতে যজ্ঞ যে বিরল সম্পদরূপে যত্ন, শ্ৰদ্ধা ও সতর্কতার দ্বারা অনুষ্ঠেয়— এই ভাবনাই স্পষ্ট। বৈদিক সমাজের ধর্মীয় চেতনা অনুযায়ী যজ্ঞ ছিল সৃজনধর্মী, নূতন প্রজন্মের জন্মদাতা, সৃষ্টিরক্ষাকারী এবং বিশ্বজগতের মধ্যে সাম্য স্থাপনের একমাত্র উপাদান। খাদ্য, গো-সম্পদ, বিজয়, স্বাস্থ্য, আরোগ্য, দীর্ঘায়ু, সন্তান ও স্বৰ্গলাভ নিশ্চিত করে যজ্ঞই মানুষের সঙ্গে জড়প্রকৃতি, অন্যান্য প্ৰাণী, মানুষ, দেবতা- এমন কি বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডেরও সীেষাম্যযুক্ত সম্পর্ক স্থাপন করে। এভাবে বিশ্বজগতের সর্বোত্তম সৃষ্টিশীল ও সংযোগপ্রবণ তত্ত্বরূপে যজ্ঞ মহিমান্বিত হয়েছে। অনিবাৰ্য স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে সঙ্গে সঙ্গে পুরোহিতরাও গৌরবমণ্ডিত হলেন এবং যজ্ঞের নৈতিক ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা অসামান্য তাৎপর্যযুক্ত হয়ে উঠলো। প্রখ্যাত গবেষক ই. ও. জেমস বলেছেন যে, যজ্ঞের লক্ষ্য চতুর্বির্ধ : উৎসব, শাস্তিস্থাপন, সম্মানসূচক অর্ঘ্য নিবেদন ও আত্মদান। তঁর মতে এসব কটি লক্ষ্যই ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে অভিব্যক্ত হয়েছে। তবে, চতুর্বিািধ লক্ষ্যের মধ্যে ব্ৰাহ্মণে শাস্তিস্থাপন ও সম্মানসূচক অর্ঘ্যনিবেদনের দৃষ্টান্ত সর্বাধিক পাওয়া যায়; উৎসবের বৈশিষ্ট্য নিতান্ত গৌণ ও অস্পষ্টভাবেই দৃষ্টিগোচর হয়। শুধুমাত্র আবণ্যক অংশযুক্ত যজ্ঞানুষ্ঠানের পুনর্বিশ্লেষণে আমরা বাস্তবনিষ্ঠ যজ্ঞের পশ্চাদবতী আধ্যাত্মিক প্রেরণা রূপে আত্মদানের স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত হতে দেখি।

জনসাধারণের ধর্মীয় জীবনে এই সময় নুতন মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে। উপবাস যে ধর্মীয় তাৎপর্য অর্জন করেছে, তার মূলে রয়েছে আত্ব” গ্রহকেন্দ্রিক যোগিসুলভ মূল্যবোধ। সম্পূর্ণ যজ্ঞানুষ্ঠান বিপুলভাবে প্রতীকায়িত হয়েছে; আপাতদৃষ্টিতে যা প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপিত বিবৃতি—তাতে এই মানসিকতা আভাসিত যে, আপাত-অর্থহীন যজ্ঞের দৃশ্যমান অংশের অন্তরালে প্রচ্ছন্ন রয়েছে গভীরতর কোনো সত্য।

ব্ৰাহ্মণ যুগে উত্তর ভারতের সর্বত্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল। প্রত্যেকটি রাজ্যের নিজস্ব শাসক ও রাজসভা ছিল। এদের অধিকাংশই আবার রাজ্যবৃদ্ধি বা আত্মরক্ষার জন্য প্রতিবেশীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হতেন। অতএব, রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনে এবং রাজকোষগুলি পূর্ণ করার জন্য ও পৃষ্ঠপোষক রাজাদের সাধারণ সমৃদ্ধি কামনায় রাজপুরোহিতরা নূতন নূতন যজ্ঞ আবিষ্কার করতেন। অর্বাচীন অনুষ্ঠানগুলির অন্যতম ‘বসোর্ধারা’ হােমকে রাজন্যশ্রেণীর বিশেষ যজ্ঞ রাজসূয় ও রাজপেয়-এর তুলনায় অধিকতর অন্তৰ্গঢ় শক্তিসম্পন্ন বলে মনে করা হত।

যজ্ঞানুষ্ঠানের দুটি মৌলিক ও প্রধান উপাদান অর্থাৎ দেবকাহিনী (ওম্‌ শ্ৰাবয় ও শ্রৌষট্) ও অনুষ্ঠান (যজ, যজামহে) আমরা ব্ৰাহ্মণে ব্যাখ্যাত ও অভিব্যক্ত হতে দেখি। প্রথমোক্ত উপাদানে রয়েছে আবৃত্তি ও গান এবং শেষোক্ত উপাদানে আনুষ্ঠানিক কর্ম। স্মরণাতীত কাল থেকে এই দুটোই আৰ্যদের যজ্ঞভাবনার স্নায়ুকেন্দ্ৰ গঠন করেছে। অসংখ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রতীকীভাবে মানুষের জন্মপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর উপস্থাপিত হয়েছে (তুলনীয় শতপথ ব্ৰাহ্মণ : ১০ : ১ : ১ : ৮)। এমন কি, যজ্ঞীয় উপকরণগুলিও জন্মপ্রক্রিয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিতসহ জোড়ায়-জোড়ায় উল্লিখিত। বস্তুত, বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়ার সার্বিক প্রতীকী তাৎপর্য কৃষিজীবী ও পশুপালক জনগোষ্ঠীর পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু এ-ধরনের সমাজে উৎপাদনশীল শ্রমের জন্য জনশক্তির প্রয়োজন খুব বেশি। সুস্পষ্ট বাস্তব প্রয়োজন দ্বারাই মূল্যবোধ নিয়ন্ত্রিত হয়, আর এই মূল্যবোধ বিভিন্ন প্রত্নকথা ও আনুষ্ঠানিক অনুপুঙ্খের মধ্য দিয়ে আত্মপ্ৰকাশ করে।

বেদীর নানাবিধ আকৃতি বিভিন্ন বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করে, কিংবা প্রতীকী উপস্থাপনা ঘটায়। প্রধান যজ্ঞগুলিতে প্রতীকী আকৃতি, সংখ্যা ইত্যাদি এমনভাবে বিন্যস্ত হয়, যাতে তাদের মধ্যে অতিজাগতিক তাৎপৰ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ছন্দগুলির সঙ্গেও বিশেষ তাৎপর্য যুক্ত করা হয়েছে; বিশেষভাবে সামবেদীয় ব্রাহ্মণসমূহে বহু ছন্দের নিজস্ব নাম আছে। সুর বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে এই সামমন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য অনুমান করা সম্ভব নয়। এগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত রহস্যের একটি বৃহৎ অংশই আমরা বিভিন্ন দেবকাহিনী থেকে অনুমান করতে পারি; এইসব দেবকাহিনীতে এগুলির অতিপ্ৰাকৃত বা পার্থিব গৃঢ় শক্তির কথা বিবৃত হয়েছে। ইষ্টকের সংখ্যা, উপাদান ও নির্মাণপদ্ধতির বহু প্ৰতীকী তাৎপর্য এখানে বিবৃত হয়েছে। যখন একথা স্মরণ করি যে, আর্যগণ প্রাথমিক স্তরে মৃৎকুটীর-নিবাসী এবং পরবর্তীকালে তারা সিন্ধু উপত্যকার অধিবাসীদের কাছ থেকে অগ্নিদগ্ধ ইষ্টক তৈরির কৌশল শিখে নিয়েছিলেন,-কেবলমাত্র তখনই দৃঢ়তা, শক্তি ও স্থায়িত্বের প্রতীকরূপে অগ্নিদগ্ধ ইষ্টকের অর্থ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইষ্টকের নির্দিষ্ট কিছু স্তরের মাঝখানে যজ্ঞ, জীবন ও সূর্যের প্রতীক রূপে একটি ক্ষুদ্র স্বর্ণনির্মিত মনুষ্য স্থাপন করা হত, যাতে নিরাপত্তা ও প্রকৃত স্থায়িত্বের সম্ভাবনা বধিত হতে পারে।

অনুষ্ঠানসংক্রান্ত কিছু কিছু নির্দেশ তৎকালীন সমাজ সম্পর্কে কৌতুহলোদীপক কিছু তথ্য প্রতিফলিত হয়েছে : অগ্নিহোত্র হ’ল গাৰ্হপত্য অগ্নিতে প্ৰতিদিনের অবশ্য করণীয় একটি অনুষ্ঠান। গৃহস্থ যখন বিদেশে যেতেন, মনে মনে তিনি তার গৃহ থেকে দূরবর্তী হতেন না বলে মনে মনেই অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠানটি করতেন শতপথ [ ১১ : ৩ : ১ ]। যেহেতু এই যুগটি ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশের যুগ, তাই গৃহস্থকে হয়তো মাঝে মাঝে বৃত্তিগত প্রয়োজনেই গৃহের বাইরে থাকতে হাত; ফলে অবশ্যপালনীয় প্রাত্যহিক অনুষ্ঠানকে তখন বাধ্য হয়েই অভ্যন্তরীণ ক্রিয়ায় পরিণত করা হল, যাতে আচার-পালনে কোনো ছেদ বা ত্রুটি দেখা না দেয়। এই অভ্যন্তরীকরণ

প্রক্রিয়ার মধ্যেই আরণ্যক ও উপনিষদে অভিব্যক্ত পরবর্তী সাংস্কৃতিক পর্যায়ে অর্থাৎ যজ্ঞানুষ্ঠানের সার্বিক অবমূল্যায়নের স্তরে উপনীত হওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সুচিত হ’ল। যজ্ঞ যখন বাস্তব অনুষ্ঠান ছাড়া মানসিক ক্রিয়াতে বিকল্প লাভ করল, তখন বাস্তব অনুষ্ঠানের অপরিণামিতা স্বভাবতই আর তত দৃঢ় রইল না।

যদিও ব্রাহ্মণসাহিত্য মূলত যজ্ঞনির্ভর, তবু একই সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক জীবন সম্পর্কেও আমরা এর থেকে কিছু কিছু ধারণা গড়ে নিতে পারি। যজ্ঞে খাদ্য ও পানীয়ের কিছু ভূমিকা রয়েছে; আবার, অর্থবাদ অংশে ধর্মীয় ভাষ্যমূলক ও প্ৰতিবাদাত্মক রচনা রয়েছে বলে জীবনযাত্রা, খাদ্য, পানীয়, বিনোদন, ব্যাধি, পরিবার, নারীর অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কেও অনেক প্রাসঙ্গিক মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। মদ্যপান কিংবা গোমাংস ভক্ষণ যে সমাজে নিষিদ্ধ ছিল না, তার প্রমাণ রয়েছে প্ৰাচীনতর। ব্ৰাহ্মণগুলিতে। অবশ্য, পরবর্তী ব্ৰাহ্মণগুলিতে দেখা যায় গোমাংস ভক্ষণ সামাজিক অনুমোদন হারিয়ে ফেলেছে। অনুরূপভাবে ব্রাহ্মণ শ্রেণীর জন্য মদ্যপান তখন নিষিদ্ধ হতে শুরু করেছে। অনুষ্ঠান সম্পর্কিত একটি সহজ দেবকাহিনীতে (শতপথ ৭ : ৫ : ২ : ২) তৎকালীন খাদ্যপরিস্থিতি প্ৰতিফলিত; সম্ভবত, যজ্ঞে অসংখ্য গোহিত্যার ফলে গোসম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হওয়ায় সমাজে একটা উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছিল। এই অপচয় পূরণ করার উদ্দেশ্যে নূতন ধরনের কিছু অনুষ্ঠানও পরিকল্পিত হ’ল।

কৃষিব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার পরে নির্দিষ্ট খাদ্য জোগান সম্পর্কে কতকটা নিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় অনিশ্চিত প্ৰাকৃতিক পরিস্থিতির ফলে ফসল কখনো কখনো অনিশ্চিত হয়ে উঠত। প্রায়ই খাদ্যের জন্য প্রার্থনা , যুক্ত হয়েছে; যজ্ঞে অর্জিত সুফলগুলির মধ্যে যজমানের সর্বাধিক অভীষ্ট এই যে, তিনি খাদ্যের ভোক্তা হতে পারেন এবং ক্ষুধায় যেন কখনো তার মৃত্যু না হয়। ক্ষুধা নিবারণের জন্য চেষ্টার শেষ নেই, কেননা ক্ষুধাই মৃত্যু। এই যুগে ক্ষুধা প্রকৃত শত্রুরূপে গণ্য হয়েছে–যেহেতু জনসাধারণ ক্ষুৎপীড়িত হয়েই পরাজয় বরণ করে। খাদ্যে বিষপ্রয়োগের বিরুদ্ধে উচ্চারিত প্রার্থনাও আমরা লক্ষ্য করি। কখনো কখনো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিংবা পরজন্মে পর্যাপ্ত খাদ্যের প্রতিশ্রুতি সুনিশ্চিত করার জন্যও প্রার্থনা ব্যক্ত হয়েছে। সুতরাং যজ্ঞের প্রধান উদ্দেশ্য হ’ল মৃত্যুরূপী ক্ষুধার নিবারণ। এ-ধরনের প্রার্থনার আত্যন্তিক গভীরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যদি আমরা যাযাবর পশুপালকদের খাদ্যের জন্য তীব্র ও স্থায়ী উৎকণ্ঠার কথা স্মরণ করি; কৃষিকাৰ্য শিক্ষা করে খাদ্য সরবরাহ প্রক্রিয়ার উপর অপেক্ষাকৃত নিশ্চিত নিয়ন্ত্রণ অর্জন করার পূর্বে বহু শতাব্দী ধরে তাদের যৌথ অবচেতনে এই উদ্বেগ নিহিত ছিল।

সঙ্গীত ও নৃত্য ছিল ব্ৰাহ্মণ যুগের প্রধান বিনোদন। বহুবিধ সাঙ্গীতিক উপকরণের উল্লেখ পাওয়া যায় : বাঁশী, বীণা, ঢোল ও দুন্দুভি। তাণ্ড্য মহাব্ৰাহ্মণের একটি অংশে (৩৯ : ৫) রয়েছে : ‘শিল্প তিন ধরনের–নৃত্য, বাদ্য ও গান’। তৈত্তিরীয় ব্ৰাহ্মণে বলা হয়েছে, দুজন ব্রাহ্মণ অশ্বমেধ যজ্ঞে বীণাবাদন করতেন ও গান গাইতেন। অন্যত্র রয়েছে, ব্ৰাহ্মণ দিনে এবং ক্ষত্রিয় রাত্ৰিতে গান করেন; এভাবেই তারা একত্রে রাজ্য রক্ষা করেন। অথচ, তা সত্ত্বেও ব্রাহ্মণসাহিত্যের সূচনাপর্ব থেকেই সঙ্গীতের সম্বন্ধে এক দ্বিধান্বিত মনোভাব লক্ষ্য করা যায়; সমাজে সংগীতজ্ঞদের অবহেলার দৃষ্টিতেই দেখা হত। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের একটি দেবকাহিনী অনুযায়ী (১ : ৩ : ২ : ১৩) ‘দেবতারা ব্ৰহ্মা ও খাদ্য থেকে বর্জনীয় অংশকে পৃথক করেছিলেন, তা-ই যথাক্রমে গাথা নারাশংসী ও সুরায় পরিণত হ’ল। তাই কোনো গায়ক বা মত্ত ব্যক্তির নিকট থেকে জনসাধারণের দান গ্ৰহণ করা উচিত নয়; যদি কেউ গ্ৰহণ করে, সে শুধু বর্জিত অংশই পায়।’ গোপথ ব্ৰাহ্মণের পূর্বভাগে (২ : ২১) বলা হয়েছে, ব্ৰাহ্মণের পক্ষে গান বা নাচে অংশগ্রহণ অনুচিত।