০৫. দেবকাহিনী

দেবকাহিনী

বৈদিকসমাজের ধর্মীয় চেতনার শুরুত্বপূর্ণ স্তর যে সব দেবকাহিনীতে প্ৰতিফলিত হয়েছে, সেসব ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে প্রথম ও শেষবারের মতো বিধিবদ্ধ হয়েছিল। এইগুলিই ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যের প্রাণ, যার মধ্যে তৎকালীন ধর্মীয় জীবনেব। সর্বাধিক গুরুত্বপূৰ্ণ বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ বিস্তারিত ও জটিল যজ্ঞানুষ্ঠানের যৌক্তিকতা দেৰ্শিত হয়েছিল এবং কালক্রমে তা-ই একটি সামগ্রিক সাহিত্যের রূপ পরিগ্রহ করে। দেবকাহিনীগুলিকে ছ’টি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা যায়; (১) ধর্মতত্ত্বমূলক–এতে দেবতাদের উৎস, স্বভাব, কার্যকলাপ, সম্পর্ক ও বীরত্ব বিষয়ক কাহিনী বিবৃত হয়েছে। (২) আনুষ্ঠানিক–এজাতীয় প্রত্নকথায় আনুষ্ঠানিক কর্ম, ক্রিয়াকাণ্ডের কাল, পদ্ধতি, স্থান, বিধিনির্দেশ-পরিমাণ, সংখ্যা ইত্যাদি কাহিনীর রূপকে ব্যাখ্যাত হয়েছে। (৩) সামাজিক ও নৈতিক–এতে প্ৰচলিত সামাজিক বিশ্বাস, নিয়ম, সংস্কাব ও কার্যকলাপের যৌক্তিকতা কাহিনীর মাধ্যমে প্ৰদৰ্শিত হয়েছে। (৪) সৃষ্টিতত্ত্বমূলক ও হেতুসন্ধানী– এ জাতীয় কাহিনীতে বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড, পৃথিবী বা কিছু কিছু গৌণ সৃষ্টির উৎস আলোচিত হয়। (৫) নৈসৰ্গিক–এতে প্ৰাকৃতিক উপাদানগুলির স্বরূপ ও প্রকৃতি দেবকাহিনীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। (৬) আধ্যাত্মিক–এখানে মানুষ ও বিশ্বজগতের মধ্যে বিদ্যমান প্রকৃত ও আদর্শ সম্পর্কের উপরে আলোকপাত করা হয়।

ধর্মতত্ত্বমূলক কাহিনীগুলি সমগ্ৰ সমাজের সামূহিক উত্তরাধিকারূপে আমাদের কাছে প্ৰতীয়মান হয়। ভারতবর্ষে আর্যদের আগমনের কিছুকাল পরে ধর্মতত্ত্ববিদ পণ্ডিতেরা এজাতীয় কাহিনীকে বিস্তৃত রূপ দিয়েছিলেন। যজ্ঞানুষ্ঠান ক্রমশ জটিলতর হওয়ার ফলে এদের যৌক্তিকতা প্ৰদৰ্শন ও অনুমোদনের জন্য নূতনতর দেবকথার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। অবশ্য আনুষ্ঠানিক কারণ ছাড়াও, এসব দেবকথা দেবতাদের সম্পর্কেও আলোকসম্পাত করে। বহু ক্ষেত্রেই এগুলির মধ্যে আমরা দেবতাদের প্রকৃত পরিচয় বিষয়ে তথ্য পাই। একটি বহুপ্রচলিত দেবকথার রুদ্র কর্তৃক প্রজাপতির দেহভেদ বর্ণিত হয়েছে : প্ৰজাপতি স্বীয় কন্যার প্রতি কামনাসক্ত হয়েছিলেন বলে রুদ্ৰ প্ৰজাপতিকে আঘাত করতে সম্মত হয়েছিলেন পশুদের উপর একাধিপত্যের বিনিময়ে। কোনো প্ৰাগ্বৈদিক রুদ্রের সঙ্গে পশুজগতের সম্পর্ক সম্ভবত আৰ্যদের ভারত আগমন অপেক্ষা প্রাচীনতর সিন্ধু উপত্যকার প্রত্ন পশুপতি শিবের সঙ্গে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রুদ্রদেবের সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়েই আৰ্যদের নূতন এই দেবকাহিনীটি উদ্ভাবন করতে হয়েছিল, যেহেতু তা’ না হলে সম্পূর্ণত আৰ্যদেবরূপে পশুপতির প্রতিষ্ঠা হওয়া অসম্ভব ছিল।

সমগ্ৰ ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে বারবার প্রজাপতিকে প্রাণশক্তির সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে। এমনকি শেষপর্যন্ত তিনি নবজাত বর্ধিষ্ণু শিশুর প্রতিকল্প হয়ে ওঠেন। প্রাণশক্তিরূপে তিনি উর্বরতা ও সৃষ্টির সঙ্গে সম্পূক্ত এবং তার প্রধান শক্র হল মৃত্যু। জীবন, বৃদ্ধি ও আয়ুর পরিপোষকরূপে প্ৰজাপতি ধ্বংসকারী শক্তির সঙ্গে কঠোর সংগ্রামে নিরত হয়ে সমস্ত জীবজগতের, বিশেষত মানুষের সমর্থক এক মহান দেবতায় পরিণত হয়েছেন। প্ৰজাপতির মৃত্যু-বিরোধিতা বিষয়ে বহুপ্রচলিত একটি দেবকাহিনীতে বহু দেবতার অঙ্গহানি বিবৃত হয়েছে। অবেস্তায় সৃজনশীল আহুর মজদা ও ধ্বংসাত্মক অঙ্গ মৈনু্যর মধ্যে যে দ্বন্দ্বের বিবরণ রয়েছে, তাই প্ৰজাপতি ও মৃত্যুর সংগ্রামে প্রতিফলিত; সম্ভবত, একই ভাববস্তু পরবর্তীকালে দেবাসুরের প্রতীকী সংগ্রামে পর্যবসিত হয়েছিল। বহু দেবকাহিনীতে প্ৰজাপতি বিশ্বস্রষ্টা প্ৰতীকী সংগ্রামে পৰ্যবসিত হয়েছিল। বহু দেবকাহিনীতে প্ৰজাপতি বিশ্বস্রষ্টা দেবতাররূপে বৰ্ণিত হয়েছেন; সকল প্ৰাণীকেই তিনি পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করেন। বৈদিক জনসাধারণ কৃষিকার্যে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হওয়ার পরে বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড সৃষ্টি এবং জন্মপ্রক্রিয়া, উর্বরতা ও প্রাচুর্যের সঙ্গে আরও স্পষ্টভাবে সম্পর্কিত একজন দেবতার প্রয়োজন তাদের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল : ফলে, প্ৰজাপতি ক্রমশ প্রতিষ্ঠা লাভ করলেন। এই দেবতাকে প্রচলিত উপাসনা পদ্ধতি অর্থাৎ যজ্ঞের সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয়েছে; কালক্রমে তিনি যজ্ঞের সঙ্গে একাত্ম্য লাভ করেছেন। তেমনি বেদের সঙ্গেও প্ৰজাপতির সম্পর্কের উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

বৈদিক দেবতারা ক্রমশ তিনটি স্পষ্ট ভাগে বিন্যস্ত হয়েছেন : ব্রাহ্মণ যুগের শেষ পর্যায়ে যাস্ক এই শ্রেণীবিন্যাস নিরুক্ত গ্রন্থে গ্রহণ করেছিলেন। দ্যুলোকবাসী, অন্তরিক্ষবাসী ও পৃথিবীবাসী (দ্যুস্থান, অন্তরিক্ষস্থান ও ভূস্থান) দেবতা। একটি প্ৰত্নকথায় পরম দেবতাত্রয়ীর উৎখান যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তাতেও এই বিভাজন স্পষ্ট। অনুষ্ঠানবিষয়ক তত্ত্ববিদ্যা যজ্ঞানুষ্ঠানের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্যে নানারকম দেবকাহিনী উদ্ভাবন করেছে; একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অর্থে এগুলি হ’ল প্ৰাথমিক পর্যায়ের, অর্থাৎ সবচেয়ে মৌলিক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন, শতপথ ব্ৰাহ্মণের একটি কাহিনী (৩ : ৯ : ৪ : ২) এখানে সোমযাগে সোমসবনকে বৃত্রহত্যার প্রতীকী উপস্থাপনা রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। ঐ ব্রাহ্মণে এ জাতীয় বহু কাহিনীর সন্ধান পাওয়া যায়; তেমনি গোপথ ব্ৰাহ্মণে নিগূঢ় রহস্যপূর্ণ মধুবিদ্যাবিষয়ক দেবকথাটিকেও এয়। অন্যতম দৃষ্টান্তরূপে উল্লেখ করা যায়।

যে প্লাবনে সারা সৃষ্টি বিধ্বস্ত হয়েছিল, শতপথ ব্ৰাহ্মণের সেই মহাপ্লাবন বিষয়ক বিখ্যাত কাহিনীটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মনু তাঁর রক্ষিত একটি মৎস্যের সাহায্যে সে প্লাবন থেকে রক্ষা পান ও পুনর্বার বিশ্বসৃষ্টি করেন যজ্ঞের সাহায্যে। যজ্ঞের সৃষ্টিকারী ভূমিকা এ কাহিনীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঐ ব্রাহ্মণে উর্বশীর বিরহে কাতর পুরদরবার সঙ্গে গন্ধৰ্বদের কথোপকথনে যজ্ঞের উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে; এই প্ৰত্নকথার উৎস ইন্দো-হিত্তীয় পর্যায়ে–পণ্ডিতরা এমন অনুমান করেছেন। একে আমরা প্ৰাচীনতম উৎসজাত কথাগুলির মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী অভিব্যক্তির অন্যতম বলে গণ্য করতে পারি। সম্ভবত, এই কাহিনীটির সবচেয়ে প্রাচীন এবং সেই সঙ্গে বিপরীতপ্রান্তীয় প্রকাশ রয়েছে, ব্যাবিলনীয় মহাকাব্য ‘এপিক অব গিলগামেশ’-এর অন্তর্গত দেবী নের্‌গাল-এর সঙ্গে মর্ত্য নায়ক গিলগামেশের প্রণয় আখ্যানে। যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দেবতা ও মানুষকে প্রণয়ীযুগলরূপে উপস্থাপিত করে বহু শিল্পসুষমাময় ও গীতিকবিতার লাবণ্যযুক্ত কাহিনী গড়ে উঠেছে। ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে অবশ্য দেবকাহিনীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট যজ্ঞানুষ্ঠান, উপকরণ ও অর্ঘ্য নিবেদনের পদ্ধতির পবিত্রতায় মণ্ডিত করা হয়েছে।

বিভিন্ন দৃষ্টান্ত বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারি যে, সমস্ত কিছুর মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় বক্তব্যই সমর্থিত হচ্ছে : দেবতারা মহাকালের পরিপ্রেক্ষিতে যে সব অনুষ্ঠান সমাধা করেছিলেন, মানুষের যজ্ঞানুষ্ঠানে প্রকৃতপক্ষে সীমিত সময়ের পরিসরে তারই পুনরায়োজন সূচিত হয়। মানবিক জগতে যজ্ঞের বিভিন্ন অনুপুঙ্খগুলির তাৎপর্য কোনো প্রত্নপৌরাণিক কাৰ্য বা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুধাবনীয়, যেহেতু তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার মাধ্যমে সাম্প্রতিক কালের অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়। অবশ্যপালনীয় কর্তব্যরূপে যজ্ঞীয় অনুপুঙ্খাসমূহের সুনিয়ন্ত্রিত পরিসর নির্দিষ্ট হয়ে যায়। সংকটপূৰ্ণ অবস্থার তাগিদেই বিশেষ বিশেষ যজ্ঞানুষ্ঠান বিহিত হ’ত; ঘটনাপ্রবাহ যখন প্রতিকুল, দেবকাহিনী তখন বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহাকালের সূচনালগ্নে প্রত্যাবর্তন করে সমাজে নুতনভাবে শুদ্ধতার প্রবর্তন শুরু করে এবং নুতন সৃষ্টির সূত্রপাত ঘটায়। প্রখ্যাত গবেষক মিৰ্চা এলিয়াদের মতে, প্রাচীন দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজজীবনের সংস্কার সম্ভব নয়; উৎসে প্রত্যাবর্তন করেই শুধুমাত্র জীবনকে নুতনভাবে সৃষ্টি করা যায়।

কোনো কোনো দেবকাহিনীতে প্ৰচলিত সামাজিক রীতিনীতির যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। যেমন সরল বিবৃতির মাধ্যমে যজ্ঞনির্বাহী পুরোহিতদের দক্ষিণারূপে স্বর্ণদানের গুরুত্বকে শতপথ ও জৈমিনীয় উপণিষদ ব্রাহ্মণে স্পষ্ট করা হয়েছে। শতপথে প্রাপ্ত বাক ও সোমসংক্রান্ত প্ৰত্নকথাটিও আকর্ষণীয়। ব্রাহ্মণ সাহিত্যে স্পষ্টতই জাতিভেদ প্ৰথা সমাজে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত, কারণ এখানে দেবতাদের মধ্যেও জাতিভেদের প্রতিকল্প সন্ধান আমরা লক্ষ্য করি। জৈমিনীয় উপনিষদ ব্রাহ্মণে বিশ্বেদেবাঞ্চকে বৈশ্য বলা হয়েছে। নিষাদদের পঞ্চম জাতিরূপে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে ঐ ব্রাহ্মণেই দেবলোকে তার সমর্থন খোজা হয়েছে। আবার শতপথে সোমকে ক্ষত্র, অন্যান্য ওষধিকে বৈশ্য বা দুগ্ধকে ক্ষত্র ও মদ্যকে বৈশ্যরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। তখনকার সমাজে চিকিৎসকদের যে অবজ্ঞা করা হত, তা অশ্মীদের সোমপানে অধিকার নিষেধ সংক্রান্ত শতপথ ব্ৰাহ্মণের বিভিন্ন কাহিনীতে প্ৰতিফলিত হয়েছে। সোমপানে সব দেবতার অবিসংবাদিত অধিকার, চিকিৎসক বলে অশ্মীদের তার থেকে বঞ্চিত করার কাহিনীতে চিকিৎসকদের সম্বন্ধে সমাজের মনোভাব প্ৰতিফলিত।

তৎকালীন সমাজে নারীর অবস্থান বেশ কয়েকটি কাহিনীতে অভিব্যক্তি। বিশেষত, ঐতরেয় ব্রাহ্মণের একটিতে (৩ : ২৩) পুরুষের বহুবিবাহ প্রথার যৌক্তিকতা প্ৰদৰ্শন প্রসঙ্গে নারীর বহুবিবাহ রীতির নিন্দা করা হয়েছে।

বিভিন্ন ঋতুর মধ্যে স্পষ্ট ভেদরেখা নির্ণয় প্রসঙ্গে গোপথ ব্ৰাহ্মণের উত্তরভাগে দৃষ্টান্তরূপে বলা হয়েছে যে, দেবতারা একে অপরের বাড়িতে বাস করেন না। সম্ভবত, এতে সমাজের সেই পৰ্যায় আভাসিত হয়েছে। যখন সংযুক্ত পিতৃতান্ত্রিক ‘কুল’ বা বৃহৎ পরিবারগুলি ভেঙে যাচ্ছিল। ঐ ব্রাহ্মণের পূর্বভাগে বেদাভ্যাসরত ব্ৰহ্মচারীকে ভিক্ষাদানের সমর্থনে একটি প্রত্নকথা। কথিত হয়েছে। একই গ্রন্থে নৃত্যগীত থেকে ব্ৰাহ্মণকে নিবৃত্ত করার ইচ্ছা প্রকাশিত হওয়ার মধ্যে সে বিষয়ে সামাজিক রক্ষণশীল মনোভাবকে লক্ষ্য করা যায়। ঐতরেয় ব্ৰাহ্মণের একটি কাহিনীতে যৌতুক প্ৰথা প্রতীকীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

কিছু কিছু দেবকাহিনীতে বিভিন্ন নৈসৰ্গিক পরিবর্তন ব্যাখ্যাত হয়েছে। সেই সঙ্গে লক্ষণীয় যে, ব্রাহ্মণসাহিত্যে দেবীদের তুলনামূলকভাবে নুতন আবির্ভাব ঘটেছে; তবে, তারা এখনো নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিত্ব অর্জন করেন নি, এখনো শুধুই প্ৰখ্যাত দেবতাদের স্ত্রী ব’লেই পরিচিত। তাদের অবস্থান মোটামুটিভাবে পরস্পরের মধ্যে পরিবর্তনযোগ্য, এবং মাতা পৃথিবীর মধ্যে তাঁদের সমন্বয় লাভের প্রবণতা চোখে পড়ে।

এই কাহিনীগুলি বিশ্লেষণ করলে ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়। একই কাহিনীর নানা বিভিন্ন রােপ বিভিন্ন ব্ৰাহ্মণে, কখনো বা একই ব্ৰাহ্মণের বিভিন্ন অংশে পাওয়া যায়। তাই জল অগ্নির মাতা ও অগ্নি তার গর্ভ রূপে কথিত হয়েছেন। বস্তুত দেবকাহিনীগুলির প্রকৃত রূপ অপেক্ষা সেগুলির প্রসঙ্গ ও পশ্চাৎপট। অনেকসময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি কাহিনীই কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে যথাযথ বলে বিবেচিত হয়। তবে যে যুক্তিতে উপযুক্ত প্রসঙ্গের সঙ্গে প্রত্নকথার সম্পর্ক নিগীত হয়, তাতে আসলে কোনো যুক্তিই নেই। যে জনগোষ্ঠী অল্পকাল পূর্বে কৃষি ব্যবস্থাকে গ্ৰহণ করেছে, তার সর্বাধিক উদ্বেগের কারণ ছিল নিয়মিত খাদ্য সরবরাহের আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি। বহু কাহিনীর সূচনায় প্রজাপতি খাদ্য অন্বেষণ করছেন, এমন কথা আছে। উদ্বিগ্ন প্রজাপতি শেষপর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানকে ধ্যানের মধ্যে দর্শন করেন ও সেই অনুষ্ঠানের সাহায্যে খাদ্যলাভ করেন। ফলত, এই অনুষ্ঠানই পরবর্তী কালে খাদ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতিলাভের জন্যে জনগোষ্ঠীর নিকট একটি নির্দিষ্ট যজ্ঞের প্রতিকল্প হয়ে ওঠে। আমরা যদি তৎকালীন বহুধাবিপন্ন জীবনের নানা আতঙ্ক, আশঙ্কা, নিরাপত্তার অভাববোধের নানাবিধ কারণের কথা বিবেচনা করি, তাহলে তাদের এই নিরস্তর উদ্বেগ যুক্তিযুক্ত ব’লেই মনে হয়; যেহেতু মৃত্যু মানবজাতির একমাত্র চিরন্তন অপরাজিত শত্ৰু, তাই এসব কাহিনীর দ্বারা মৃত্যুকে পৌরাণিক কল্পনার স্তরে জয় করে মানুষ নিজের জীবনের আশাকে পুনরুজ্জীবিত করত এবং নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জীবনের ওপর বিশ্বাসকে নুতনভাবে সৃষ্টি করত।

সর্বাধিক প্রচলিত দেবকাহিনী হ’ল দেবাসুর যুদ্ধ; একটি বিশেষ অর্থে তা ব্ৰাহ্মণসাহিত্যের সব দেবকাহিনীর কেন্দ্ৰস্থলে থেকে সব মৌলিক প্রকরণকে আমাদের নিকট উপস্থাপিত করেছে। এই প্রকরণে পৃথক সাহিত্যবৰ্গ রূপে ব্ৰাহ্মণের বিশিষ্ট চরিত্রও প্রতিফলিত। প্রাসঙ্গিক অনুপুঙ্খগুলি বাদ দিলে প্ৰত্নকথার মৌল কাঠামোকে এভাবে বিবৃত কৱা যায় : (ক) কোনো কিছু পালিয়ে যায়, হারিয়ে যায়, ভেঙে যায় বা কোনো ব্যক্তি বা প্রয়োজনীয় বস্তুর অভাব অনুভূত হয়; (খ) দেবগণ প্রাচীনতর অনুষ্ঠান পালনের চেষ্টা করেন; (গ) সেসব ব্যর্থ হয়; (ঘ) দেবগণ প্ৰজাপতির নিকট ধাবিত হন; (ঙ) প্রজাপতি একটি নুতন যজ্ঞীয় অনুষ্ঠান বা তার ক্ষুদ্র কোনো অনুপুঙ্খের নির্দেশ দিয়ে সেটিকে পালন করার জন্যে দেবতাদের আদেশ করেন; (চ) দেবতারা এই নতুন যজ্ঞানুষ্ঠান করেন এবং (ছ) কাঙ্খিত ফল লাভ করেন। সাধারণত এর দ্বারাই ঘটে দানবশক্তির পরাজয়। এধরনের দেবকাহিনীর প্রকৃত উদ্দেশ্য হ’ল নুতন কোনো যজ্ঞীয় অনুষ্ঠানের প্রবর্তন, তাই অন্যান্য প্রাচীনতর পদ্ধতির ব্যর্থতার অজুহাত আবিস্কৃত হয়। শেষ পর্যন্ত নুতন কোনো অনুষ্ঠানের অন্তর্নিহিত শক্তির উপরই গুরুত্ব আরোপ করা হয়, যার দ্বারা অতীতে দেবতাদের ইউসিদ্ধি হয়েছিল ব’লেই ভবিষ্যতে যার কার্যকরী ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত হয়।

অবেস্তায় কল্যাণপ্ৰসু দেবশক্তিকে ‘অসুর’ এবং দানবদের ‘দএব’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, দএব ও অসুরদের (আহুর মাজদা স্বয়ং যাদের প্রধান) মধ্যে কঠিন সংগ্রাম হয়েছিল। [ যশট ১৪ : ৫৫ ]। দএবদের কোনো ধর্মীয় অভিজ্ঞতা নেই বলে তারা অসত্য অনুসরণকারীরূপে নিন্দিত। অজ্ঞতাবশত দএবগণ পবিত্র অগ্নিতে ভুল ইন্ধন প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ ভুল ভাবে অনুষ্ঠান সমাধা করত। বৈদিক প্রত্নপুরাণে ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে অসুরদের প্রতি অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়। ব্রাহ্মণ সাহিত্যের প্রত্নকথাগুলির মধ্যে দেবাসুরের যুদ্ধই প্রধান—তবে অবেস্তায় যারা দএব, ব্ৰাহ্মণে তারাই অসুর বলে পরিগণিত (অর্থাৎ অবেস্তার অসুর বিপবীতমুখী প্রতিক্রিয়ায় বৈদিক সাহিত্যে দেবতায় পরিণত হয়েছে)। স্পষ্টতই প্ৰাগাৰ্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আর্যদের দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধ দেবকাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে; কেননা প্ৰাগাৰ্যদের বংশে ঐতিহাসিক সংগ্রামগুলিতে জয়লাভ করার কয়েক শতাব্দী পরে ব্ৰাহ্মণ সাহিত্য রচিত হয়েছিল। তখন এই সংগ্রামকে অন্য নৈতিক স্তরে উত্তোরণ করিয়ে ভাল ও মন্দ, সত্য ও অসত্যের সংগ্রামরূপে চিহ্নিত করা কঠিন ছিল না। জয়ীপক্ষ সর্বদাই কল্যাণের প্রতিভূ এবং পরাজিত পক্ষ অনিবাৰ্যভাবে অমঙ্গলের প্রতিনিধিরূপে চিত্রিত হয়ে থাকে, তাই আৰ্যরা দেবতায় ও প্ৰাগাৰ্যরা অসুরে পরিণত হ’ল। আরো কিছুকাল পরে এই সংগ্রামকে যখন নৈতিক তাৎপর্যেমণ্ডিত করা হ’ল, তখন এটা হয়ে উঠল। সত্য ও অসত্যের দ্বন্দ্ব। এই দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম সুব্যক্ত দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। শতপথ ব্ৰাহ্মণে (৯ : ৫ : ১৩-১৬)।

কখনো কখনো একটি প্রাচীন প্রত্নপৌরাণিক বৈপরীত্যমূলক তুলনা দেখতে পাই আলোকশক্তির প্রতিভূ ও বিজয়ী আর্যদের সুদূর প্রতিকল্প আদিত্যবর্গের দেবগোষ্ঠী এবং প্রাচীন অগ্নি উপাসক পুরোহিত অঙ্গিরাদের মধ্যে। অগ্নির সঙ্গে রাত্রির স্বাভাবিক সম্পর্ক এবং অঙ্গিরায় সঙ্গে জাদুশক্তির সম্বন্ধ। লঘু ঐতিহ্যের সঙ্গে বৃহৎ ঐতিহ্যের সম্পর্ক যেহেতু প্রতিষ্ঠিত তাই লোকায়ত ধর্মের সঙ্গে তার নিবিড় সংযোগই সম্ভবত ঐ বৈপরীত্যের ভিত্তি রচনা করেছে। দেবতা ও দানবের মতো আদিত্য এবং অঙ্গিরা-উভয়েই প্ৰজাপতির সন্তান; হয়তো বা সীেরাদেব ও পাতালের অধিষ্ঠাতা দেবতার দ্বান্দ্বিক অবস্থােনই তাদের বৈপরীত্যের মূলে।

শতপথের একটি প্রত্নকথা অনুযায়ী বাক দানবনিধনের শক্তি অর্জন করে একটি যজ্ঞে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন; সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ক্রমশ মনুর পত্নীতে ও তারপর যজ্ঞীয় উপকরণগুলিতে বাক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ভিন্ন স্তরে বাক যে অমঙ্গলজনকশক্তি ধ্বংস করতে করতে অবশেষে যজ্ঞানুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পূক্ত হয়ে উঠেছিলেন তা লক্ষণীয়। বাকের মাধ্যমে শাব্দিক অভিব্যক্তির গৌরবায়ণের সঙ্গে সঙ্গে যজ্ঞানুষ্ঠানের অর্থবোধের জন্যে জ্ঞানের উপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপিত হতে থাকে। বার বার বলা হয়েছে যে, যজ্ঞানুষ্ঠানের প্রকৃত সুফল সম্পূর্ণত সেই ব্যক্তি লাভ করেন যিনি যজ্ঞের ক্রিয়াকাণ্ডের তাৎপৰ্য সম্যক অবগত আছেন। বিভিন্ন ঐন্দ্ৰজালিক অনুষ্ঠানের প্রশংসা, যজ্ঞীয় গীতির যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ত-বর্ধমান আনুষ্ঠানিক অনুপুঙ্খগুলির বিশুদ্ধ প্রয়োগ–এই সমস্তকেই একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করতে হবে। স্পষ্টতই এর পশ্চাতে কোনো তাৎপৰ্যপূর্ণ সামাজিক পরিস্থিতি আছে। এই পরিস্থিতি হ’ল নিৰ্ম্মফল যজ্ঞানুষ্ঠানের অতিপ্রয়োগের বিষম প্রতিক্রিয়া, তার সংশোধনের জন্যে অস্থায়ী প্রচেষ্টা এবং যজ্ঞধর্মেরই আয়ুষ্কাল দীর্ঘায়িত করার শেষ প্ৰচেষ্টা। কিন্তু এটা আবার ব্রাহ্মণসাহিত্যের অন্তিম অংশের চিত্তাকর্ষক বৈশিষ্ট্য। উচ্চারিত শব্দে নতুন গৌরব যুক্ত হওয়ায় বহু প্ৰত্নকথায় বাকএর প্রধান ভূমিকা স্পষ্ট। তবে সংহিতায় বাক-এর সর্বশক্তিমান অস্তিত্ব ব্রাহ্মণে বজায় থাকে নি; শতপথের একটি দেবকাহিনীতে বাক ও মনের দ্বন্দ্বে বাক-এর পরাজয় এবং প্রজাপতির প্রতি অভিশাপ বৰ্ণিত হয়েছে। ব্ৰাহ্মণে যজ্ঞানুষ্ঠাণের গুরুত্ব যেহেতু সর্বাত্মক, যজ্ঞভাবনা ও যজ্ঞকর্মের প্রেরয়িতা মনের নিকট বাক তাই নিম্প্রভ ও কার্যত অধীন হয়ে পড়েছে।

ব্ৰাহ্মণ সাহিত্য দীর্ঘকাল ধরে অর্থাৎ সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে ৫০০ বা ৪০০ পর্যন্ত রচিত হয়েছিল। ব্ৰাহ্মণসাহিত্যে যজ্ঞানুষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান জটিলতা ও বিস্তার এবং অনুষ্ঠান ও দেবতাদের সংখ্যাবৃদ্ধি প্রতিফলিত হয়েছে; তবে সৃষ্টিশীল পর্যায়ের শেষদিকে এই সাহিত্যে নিশ্চিতভাবে দেখা যাচ্ছে দেবকাহিনীগুলি ক্ৰমে প্রত্নপুরাণে লোকায়ত হয়ে উঠছে এবং ধীরে ধীরে একটি একেশ্বরবাদী প্রবণতাও পরিস্ফুট হচ্ছে। এমনকি অদ্বৈতবাদী ভাবনার সূত্রপাতও তখনই লক্ষ্য করা যায়। কিছু কিছু অংশে আমরা স্রষ্টা, রক্ষাকর্তা ও বিনাশকারী রূপে ত্রয়ী দেবতা অর্থাৎ ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্রের উত্থানের সূচনা লক্ষ্য করি। তারা কিছুকাল পর্যন্ত কেন্দ্ৰবিন্দুতে অবস্থান করলেও সকলের ওপরে প্রজাপতি সেই ভাবমূর্তি বিরাজ করেছে যা মূলত ব্ৰাহ্মণযুগেরই সৃষ্টি। আমরা আর বৃহস্পতি, ব্ৰহ্মা, পুরুষ বা ব্ৰহ্মণস্পতির কথা তত বেশি শুনতে পাই না, যত শুনি প্ৰজাপতির কথা, কেননা প্ৰজাপতিই এখন উদীয়মান ও বর্ধমান দেবতা। তিনি স্রষ্টা ও রক্ষাকর্তাররূপে মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করেন এবং তার উপাসকদের জন্যে শান্তি, প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির নিশ্চিত আশ্বাস দেন। এই সময়েই দেবতাদের সংখ্যা কমানোর জন্যে একটি সচেতন প্ৰয়াসের সূচনা হয় এবং গণদেবতাগুলির মধ্যে এই সংক্ষেপীকরণের চেষ্টাও লক্ষ্য করা যায়। প্ৰজাপতিই এখন আমাদের সকল মনোযোগ আকর্ষণ করেন, কেননা এই যুগেই কৃষিকাৰ্য, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য এবং বিবিধ কারুশিল্পের আবিষ্কার ও বিস্তার ঘটে। সম্ভবত এই সময়েই ক্ষুদ্র কুটীরশিল্পগুলি সংগঠিত হয়ে সঙ্ঘ নির্মাণ করে, অন্যদিকে আর্যদের রাজ্য ক্রমশ বিস্তার লাভ করার ফলে পর্বত ও অরণ্যবাসী প্ৰাগাৰ্য জনগোষ্ঠীগুলি তাদের অধীন হয়। সে সময়ে তাই শস্যভূমিতে, পশুশালায় ও গৃহে প্রাচুর্য, নূতনতর প্ৰজন্ম ও উর্বরতার প্রয়োজন বিশেষভাবে অনুভূত হয়েছিল। বর্ধিত উৎপাদন যেহেতু আবশ্যক ছিল, উর্বরতা ও বৃদ্ধির অধিষ্ঠাতারূপে কোনো উপযুক্ত দেবতার সৃষ্টি তাই অনিবাৰ্য হয়ে উঠল; তৎকালীন শ্রেষ্ঠ ধর্মচৰ্যা অর্থাৎ যজ্ঞের সঙ্গে অভিন্ন ও একাত্ম হয়েই প্ৰজাপতি দেবকুলে গৌরবের উচ্চশিখরে আরোহন করলেন। বস্তুত, ব্রাহ্মণসাহিত্যে বারবার প্রজাপতি ও বিষ্ণুকে যজ্ঞের সঙ্গে একাত্মীভূত বলে বর্ণনা করা হয়েছে; তবে, মহিমান্বিত অবস্থানে উপনীত হতে বিষ্ণুর আরও কয়েক শতাব্দী লেগে গিয়েছিল। তাণ্ড্যমহাব্ৰাহ্মণের কয়েকটি দেবকাহিনীতে আভাসিত হয়েছে যে, খাদ্যের ব্যবস্থাপনা করেই প্ৰজাপতি তার গৌরবজনক আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। পূর্বোক্ত যুগের প্রধান দেবতা ইন্দ্ৰ এখন নানা কাহিনীতে প্ৰজাপতির কৃপাপ্রার্থীএই তথ্যটি এযুগে বিশেষ তাৎপৰ্যপূর্ণ।

ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে আলোচিত যজ্ঞানুষ্ঠান যেহেতু মূলগতভাবে দেবকাহিনী ও ঐন্দ্ৰজালিক অতীন্দ্ৰিয়বাদের সঙ্গে সম্পূক্ত, তাই একমাত্র নির্দিষ্ট প্রসঙ্গেই তার বিশ্লেষণ সম্ভব; কেননা পৃথক অনুষ্ঠানের নিজস্ব কোনো তাৎপর্য নেই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অনুপুঙ্খাগুলি সতর্কভাবে ব্যাখ্যা করলেই আমরা এই মন্তব্যের যথার্থতা অনুধাবন করতে পারব।