০৯. দানস্তুতি

দানস্তুতি

অন্য যে ধরনের সূক্ত বা সূক্তাংশ ঋগ্বেদে অধিক সংখ্যায় পাওয়া যায়, তা দানস্তুতি। এই শব্দটি বৃহদেবতা গ্রন্থে প্রথম উল্লিখিত হয়েছে। অতএব বৃহদেবতা রচিত হওয়ার পূর্বেই দানস্তুতিগুলি বহুপরিচিত হয়ে ছিল ; এটা সহজেই বোঝা যায়। ম্যাকডোনেলের মতে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত ‘অনুক্রমনী’ গ্ৰন্থ দানস্তুতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে–“দাজ্ঞাঞ্চ দানস্ততয়ঃ (২ : ২৩)”। অর্থাৎ রাজাদের দানের স্তুতি এগুলি প্রকৃতপক্ষে নামটি অসার্থক, কেননা এই সব সূক্ত সরাসরি দানকর্মকে প্রশংসা করে না ; বরং তার স্তুতির লক্ষ্য প্ৰাচীনকালের সেই সব দাতা রাজাদের দান, যাঁরা তাদের যজ্ঞ-নির্বাহক পুরোহিতদের পর্যাপ্ত দক্ষিণা দিতেন। সমসাময়িক পৃষ্ঠপোষকরা যাতে পূর্বসূরিদের দৃষ্টান্ত অনুদরণ করতে প্ররোচিত হন, এই জন্য প্রাচীনকালে প্রদত্ত দানসামগ্ৰীর আনুপুঙ্খিক ও ঐতিহাসিক বিবরণ এই সব দানস্তুতিতে রয়েছে। কোন দান-স্তুতিই স্বয়ংসম্পূর্ণ সূক্ত নয় ; কোন দেবতার মহিমা বিবৃত করার জন্য প্রচলিত প্রার্থনা ও প্রশস্তিসহ রচিত একটি সাধারণ সূক্তের পরিপূরক রূপে এই শ্রেণীর কয়েকটি ঋক এই সূক্তগুলিতে সংযোজিত হয়েছে। কোন এক নির্দিষ্ট বিন্দুতে এই জাতীয় সূক্ত আকস্মিকভাবে প্রাচীন কালের কোন সম্পৎশালী দাতার বদান্যতার প্রশংসায় মুখর হয়ে উঠে। অনিবাৰ্যভাবেই এই সব সূক্তের দানস্তুতি অংশটি সাহিত্যের বিচারে নিম্নমানের ও দীন, স্পষ্টতই এই অংশের রচয়িতাও ভিন্ন। সন্দেহ নেই যে, এই ধরনের শ্লোক আপন শক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না অথচ পুর্বদাতাদের দানের প্রশংসা সমকালীন রাজাকে অনুরূপ দানে ও দক্ষিণায় অনুপ্রেরিত করবে বলেই পাঠক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বাধ্য হয়েই তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত কোন সূক্তে সংলগ্ন করে রাখতে হত।