৬. জনপ্রবাহ ও বাস্তব সভ্যতা

দ্বিতীয় অধ্যায় । ইতিহাসের গোড়ার কথা
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ –  জনপ্রবাহ ও বাস্তব সভ্যতা

জনপ্রবাহ ও বাস্তব সভ্যতা

সংক্ষেপে জনতত্ত্ব ও ভাষাপ্রসঙ্গ লইয়া বাঙালীর গোড়াপত্তনের কথা বলা হইল। এইবার বাস্তব সভ্যতার উপাদান-উপকরণ এবং তাহার সঙ্গে বাঙালীর ও বাঙলাদেশের সম্বন্ধের একটা দিগদর্শন করিবার চেষ্টা করা যাইতে পারে।

ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ। এই কৃষিই আমাদের প্রধান ধনসম্বল; এবং উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যপাদ পর্যন্ত যে সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারা আমাদের দেশে চলিয়া আসিয়াছে তাহাকে যদি একান্তভাবে কৃষি-সভ্যতা ও সংস্কৃতি আখ্যা দেওয়া যায় তাহা হইলে খুব অন্যায় হয় না। বারিবহুল নদনদীবহুল সমতলপ্রধান বাঙলাদেশে উত্তর ভারতের অন্য প্রদেশাপেক্ষা কৃষির এক সমৃদ্ধতর রূপ দেখা যায়। এই কৃষিকার্য যে অস্ট্রিক ভাষাভাষী আদি-অষ্ট্রেলীয় লোকেরাই আমাদের দেশে প্রচলন করিয়াছিলেন, তাহা অনুমান করিবার কারণ আছে। পুশিলুস্কি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করিয়াছেন যে, ‘লাঙ্গল’ কথাটাই অস্ট্রিকভাষীদের ভাষা হইতে গৃহীত। আনামীয় ভাষায় এই লাঙ্গল শব্দের মূলের অর্থ ‘চাষ করা’ এবং ‘চাষ করিবার যন্ত্র’ দুই বস্তুকেই বুঝায়। খুব প্রাচীনকালেই লাঙ্গল শব্দটি আর্যভাষায় গৃহীত হইয়াছিল। ইহার অর্থ বোধহয় এই যে, আর্যভাষীরা চাষকার্য জানিতেন না এবং সেইহেতু যে যন্ত্রদ্বারা চাষ করা হয় সে যন্ত্রের সঙ্গেও তাঁহাদের পরিচয় ছিল না। এই দুইই তাঁহারা পাইয়াছিলেন মূলত অস্ট্রিকভাষাভাষী লোকদের নিকট হইতে। তীক্ষ্ণমুখ কাষ্ঠদণ্ড যন্ত্রের সাহায্যে প্রধানত যে বস্তুর চাষ এই অস্ট্রিকভাষী লোকেরা করিত তাহা ধান, এবং এই ধানই ছিল তাঁহাদের প্রধান খাদ্যবস্তু। অস্ট্রিকভাষী লোকেদের ভিতর যে কৃষিসভ্যতার পরিচয় পাওয়া যায়, তাহাতে মনে হয়, সমতলভূমিতে ও স্তরে স্তরে পাহাড়ের গা কাটিয়া চাষের ব্যবস্থা করিয়া তাহারা বন্য ধানকে লোকালয়ের কৃষিবস্তু করিয়া লইয়াছিল এবং তাহাই ছিল তাঁহাদের প্রধান উপজীব্য। অস্ট্রিকভাষী লোকদের বিস্তৃতি ভারতবর্ষে যে যে স্থানে ছিল সর্বত্রই এই ধানচাষেরও প্রচলন হইয়াছিল; তবে বারিবহুল নদনদীবহুল সমতলভূমিতেই যে ধান বেশি জন্মাইত, ইহা তো খুবই স্বাভাবিক। সেইজন্যই আসামে, বাঙলাদেশে, ওড়িশায়, দক্ষিণ ভারতের সমুদ্রশায়ী সমতল দেশগুলিতে তাহা প্রসারলাভ করিয়াছিল বেশি; উত্তর ভারতে তত নয়। এখনও তাহাই। পরবর্তী কালে দ্রাবিড়ভাষী দীর্ঘমুণ্ড লোকেরা ভারতবর্ষে যব ও গমচাষের প্রচলন করে এবং যব ও গম উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত হইতে আরম্ভ করিয়া ক্রমশ বিহার পর্যন্ত ছড়াইয়া পড়ে। যব ও গম ধানের মতো তত বারিনির্ভর নয়; উত্তর ভারতে এই দুই বস্তুর চাষের বিস্তৃতি অনেকটা সেই কারণেই। জন-বিস্তৃতি ও জলবায়ুর কারণ দুটি একত্র করিলেই বুঝা যাইবে, উত্তর ভারতের লোকেরা কেন আজ পর্যন্তও সাধারণত রুটিভুক এবং বাঙলা-আসাম-ওড়িশা ও দক্ষিণ ভারতের সমুদ্রশায়ী সমতলভূমির লোকেরা কেন ভাত-ভুক।

ধান ছাড়া অস্ট্রিকভাষী লোকেরা কলা, বেগুন, লাউ, লেবু, পান (বর), নারিকেল, জাম্বুরা (বাতাবি লেবু), কামরাঙ্গা, ডুমুর, হলুদ, সুপারি, ডালিম ইত্যাদিরও চাষ করিত। এই কৃষিদ্রব্যের নামের প্রত্যেকটিই মূলত অষ্ট্রিকগোষ্ঠীর ভাষা হইতে গৃহীত, এবং ইহার প্রত্যেকটিই বাঙালীর প্রিয় খাদ্যবস্তু। এইসব শব্দের সংস্কৃত-প্রাকৃত-অপভ্রংশ ও বাঙলা রূপ লইয়া যে সব সুবিস্তৃত বিচার ও গবেষণা হইয়াছে তাহার মধ্যে ইতিহাসের ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। আমি সেই শব্দতাত্ত্বিক আলোচনার বিস্তৃত পুনরুক্তির অবতারণা এখানে আর করিলাম না। কিন্তু চাষবাসের সঙ্গে ইহাদের সম্বন্ধ ঘনিষ্ঠ হইলেও গো-পালন ইহারা জানিত বলিয়া মনে হয় না। বস্তুত, অস্ট্রিকভাষী লোকদের মধ্যে আজও গো-পালনের প্রচলন কম; যাহাদের মধ্যে আছে তাহারা পরবর্তী কালে আর্যভাষীদের নিকট হইতে তাহা গ্রহণ করিয়াছিল বলিয়া মনে হয়। যতদূর সম্ভব, গো-পালন আর্যভাষীদের সঙ্গে জড়িত।

তবে, তুলার কাপড়ের ব্যবহারও অস্ট্রিকভাষীদের দান ৷ কর্পাস (কার্পাস) শব্দটিই মূলত অষ্টিক। তাঁতী বা তত্ত্ববায়েরা যে প্রাচীন ও বর্তমান বাঙালী সমাজের নিম্নতর স্তরের ইহার মধ্যে কি তাহার কিছুটা কারণ নিহিত? পট (পট্টবস্ত্র, বাঙলা পট্‌, পাট), কর্পট (= পট্টবস্ত্র) এই দুটি শব্দও মূলত অস্ট্রিক ভাষা হইতে গৃহীত। মেড়া বা ভেড়ার সঙ্গে ইহারা পরিচিত ছিল। ভেড়ার লোম কি ইহারা কাজে লাগাইত? ‘কম্বল’ কথাটি কিন্তু মূলত অস্ট্রিক, এবং আমরা যে অর্থে কথাটি ব্যবহার করি, সেই অর্থেই এই ভাষাভাষী লোকেরাও করে।

বুঝা গেল, অস্ট্রিকভাষী আদি অষ্ট্রেলীয়েরা ছিল মূলত কৃষিজীবী। কিন্তু ইহাদের সবারই জীবিকা ছিল কৃষিকার্য, এ কথা বলা যায় না। কতকগুলি শাখা অরণ্যচারীও ছিল। এই অরণ্যচারী নিখাদ ও ভীল, কোল শ্রেণীর শবর, মুণ্ডা, গদব, হো, সাঁওতাল প্রভৃতিরা প্রধানত ছিল পশুশিকারজীবী এবং পশু-শিকারে ধনুর্বাণই ছিল তাঁহাদের প্রধান অস্ত্রোপকরণ। বাণ, ধনু বা ধনুক, পিনাক -এই সব-কটি শব্দই মূলত অস্ট্রিক। ইহারা যে সব পশুপক্ষী শিকার করিত, অনুমান করা। তাঁহাদের মধ্যে হাতি, মেড়া (ভেড়া), কাক, কর্কট (কাঁকড়া) এবং কপোতের (যাহার অর্থ – পায়রাই নয়, যে কোনও পক্ষী) নাম করা যাইতে পারে। গজ, মাতঙ্গ, গণ্ডার (হস্তী অর্থে) এবং কপোত মূলত অস্ট্রিক ভাষা হইতে গৃহীত। অন্যান্য অস্ত্রোপকরণের মধ্যে দা ও করাতের নামোল্লেখ করা যায়; ইহারাও অস্ট্রিকগোষ্ঠীর ভাষালব্ধ বলিয়া শব্দতাত্ত্বিকেরা অনুমান করেন।

গমুদ্রতীরশায়ী দেশ, দ্বীপ ও উপদ্বীপবাসী অষ্ট্রিকভাষী মেলানেশীয়, পলিনেশীয় প্রভৃতি লোকেরা জলপথে যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গুঁড়ি কাঠের একপ্রকার লম্বা ডোঙা (এই কথাটিও অস্ট্রিক) এবং লম্বা লম্বা খণ্ড খণ্ড গুঁড়িকাঠ একত্র করিয়া ভাসমান ভেলার আকারে বড় বড় নৌকা তৈয়ারি করিত, এ তথ্য জনতত্ত্ববিদেরা আবিষ্কার করিয়াছেন। গুঁড়িকাঠের তৈরি ডিঙ্গা, ছোট নৌকা এখনও নদীখালবিলবহুল নিম্ন, পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গে বহুল প্রচলিত। যাহাই হউক, এইসব ডোঙ্গা, ডিঙ্গা ও ভেলায় চড়িয়াই প্রাচীন অস্ট্রিকভাষী লোকেরা নদী ও সমুদ্রপথে যাতায়াত করিত এবং এইভাবেই তাহারা একটা বৃহৎ সামুদ্রিক বাণিজ্যও গড়িয়া তুলিয়ছিল। বস্তুত, বাঙলা তথা ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে অস্ট্রিকভাষী জাতিদের দানের এত প্রাচুর্য দেখিয়াই লেভি সাহেব বলিয়াছিলেন :

We must know whether the legends, the religion and the philosophical thoughts of India do not owe anythingtothis past. India had been too exclusively examined from the Indo-European stand-point. It ought to be remembered that India is a great maritime country… the movement which carried the Indian colonisation (in historical times) towards the Far East was far frominaugurating a new route. Adventurers, traffickers and missionaries profited by the technical progress of navigation and followed under better conditions of comfort and efficiency, the way traced from time immemorial, by the mariners of another race, whom Aryan or Aryanised India despised as savages.

নির্মলকুমার বসু মহাশয় আর-একটি জনগত তথ্যের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গে তাহার উল্লেখ অযৌক্তিক নয়। আসামে, বাঙলাদেশে, ওড়িশায়, দক্ষিণ ভারতের সর্বত্র, গুজরাতে, মহারাষ্ট্রে সকল স্থানেই লোকেরা সাধারণত রান্নার কাজে সরিষা, নারিকেল অথবা তিলতৈল ব্যবহার করিয়া থাকে। সেলাইবিহীন উত্তর ও নিম্নবাস (সাধারণত ধুতি, চাদর, উড়ুনি, উত্তরীয় ইত্যাদি) ব্যবহারই এইসব দেশের জনসাধারণের পরিধেয়। আর, যে পাদুকার ব্যবহার ইহারা করে তাহার পশ্চাদ্ভাগ উন্মুক্ত। বিহারের পশ্চিম প্রান্ত হইতে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত ভূখন্ডের অধিবাসীরা কিন্তু পরিবর্তে ব্যবহার করে ঘৃত বা কোন প্রকার জান্তব চর্বি, সেলাই-করা জামাকাপড় এবং বদ্ধ-গোড়ালি পাদুকা। এই পার্থক্যের মধ্যে জন-পার্থক্যের ইঙ্গিত যে আছে তাহা একেবার উড়াইয়া দেওয়া যায় না, কারণ, জলবায়ুর পার্থক্যদ্বারা ইহার সবটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।

এ পর্যন্ত অস্ট্রিকভাষী আদি-অষ্ট্রেলীয়দের সম্বন্ধে যাহা বলা হইলে তাহা হইতেই বুঝা যাইবে, ইহাদের মধ্যে যে সব শ্রেণী সভ্য তাহারা যে বাস্তব সভ্যতা গড়িয়া তুলিয়ছিল তাহা গ্রামীণ, একান্তভাবে গ্রামকেন্দ্রিক। কৃষিজীবী বলিয়া খাদ্যাভাব ইহাদের মধ্যে বড় একটা ছিল না এবং লোকসমৃদ্ধিও যথেষ্ট ছিল, এ অনুমানও করা যাইতে পারে। বর্তমান অস্ট্রিকভাষী লোকদের সাক্ষ্য যদি প্রামাণিক হয় তাহা হইলে স্বীকার করিতে হয় যে, ইহাদের কোনও কোনও প্রাগ্রসর শাখার সমাজবন্ধন নিজেদের গ্রাম অতিক্রম করিয়াও বিস্তৃত হইত। মুণ্ডাদের মধ্যে কয়েকটি গ্রাম মিলিয়া গ্রামসঙ্ঘের মতো একটা সমাজ বন্ধন এখনও দেখা যায়। শরৎকুমার রায় মহাশয় তো মনে করেন, “পঞ্চায়েত প্রথা সম্ভবত ভারতে প্রথম ইহাদেরই প্রবর্তিত। পঞ্চায়েতকে ইহারা সত্যসত্যই ধর্মাধিকরণ জ্ঞানে মান্য করে। এখনও আদালতে সাক্ষ্য দিবার পূর্বে মুণ্ড সাক্ষী তাহার জাতি-প্রথা অনুসারে পঞ্চের নাম লইয়া এই বলিয়া শপথ করে, ‘সিরমারে-সঙ্গরোঙ্গ ওতেরে পঞ্চ’, অর্থাৎ আকাশে সূর্য-দেবতা পৃথিবীতে পঞ্চায়ত।” তিনি এ কথাও বলেন যে, “ইহাদের মধ্যে কোন কোন জাতির কিংবদন্তী আছে যে, এক সময়ে ভারতে ইহাদের ক্ষুদ্র বা বৃহৎ গণতন্ত্র(?)” রাজ্য ছিল। রাজশক্তির চিহ্নস্বরূপ মুণ্ডা, ওঁরাও প্রভূতি জাতির প্রত্যেক গ্রামসঙ্ঘ ও গ্রামে এখনও বিভিন্ন চিহ্ন-অঙ্কিত পতাকা সযত্নে ও সসম্মানে রক্ষিত হয়। মধ্যপ্রদেশে দ্রাবিড় [ভাষী] পূর্ব গন্দ জাতির শক্তিশালী সমৃদ্ধ রাজ্য আধুনিক কাল পর্যন্ত ছিল। গঙ্গা-যমুনা উপত্যকায় রাজ্যাধিকারের কিংবদন্তী মুণ্ডা প্রভৃতি কয়েকটি জাতির মধ্যে এখনও বর্তমান।”

অস্ট্রিকভাষাভাষী লোকদের বাস্তব সভ্যতার কিছুটা আভাস পাওয়া গেল এবং সে সভ্যতা বাঙলাদেশে কতখানি বিস্তৃতি লাভ করিয়াছিল তাহারও খানিকটা ধারণা ইহার ভিতর পাওয়া গেল। দীর্ঘমুণ্ড দ্রাবিড় ভাষাভাষী লোকদের বাস্তব সভ্যতার উপাদান-উপকরণ আরও প্রচুর। মিশর হইতে আরম্ভ করিয়া ভারতবর্যের উত্তর ও দক্ষিণ পর্যন্ত এক দীৰ্ঘমুণ্ড জন এবং পরবর্তী কালে ভূমধ্যজন সম্পৃক্ত আর এক দীৰ্ঘমুণ্ড নরগোষ্ঠী, এই দুই জনের রক্তধারার সংমিশ্রণে ভারতবর্ষে সিন্ধুনদের উপত্যকা হইতে আরম্ভ করিয়া দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত পর্যন্ত এবং উত্তর ভারতেও প্রায় সর্বত্রই এক বিরাট নরগোষ্ঠী গড়িয়া উঠিয়াছিল। দক্ষিণ ভারতের কোনও কোনও স্থানে, উত্তর ভারতের ২-৪টি স্থানে আকস্মিক আবিষ্কারে, রামায়ণ-মহাভারত -পুরাণকাহিনীতে, কিন্তু বিশেষভাবে হরপ্পা, মহেন্‌-জো-দড়ো এবং নাল প্রভৃতি নিম্ন-সিন্ধু উপত্যকার একাধিক স্থানের প্রাচীনতম ধ্বংসাবশেষের মধ্যে এই নরগোষ্ঠীর বাস্তব সভ্যতার যে চিত্র আমাদের দৃষ্টির সম্মুখে উন্মুক্ত হইয়াছে তাহা আজ সর্বজনবিদিত। সাম্প্রতিক কালে এ সম্বন্ধে আলোচনা-গবেষণাও হইয়াছে প্রচুর। তাহার বিস্তৃত আলোচনার স্থান এখানে নয়, প্রয়োজনও কিছু নাই। তবু এই নরগোষ্ঠীর সভ্যতার উপাদান-উপকরণের মোটামুটি একটু পরিচয় লইলে ভারতবর্ষের এবং সঙ্গে সঙ্গে বাঙলাদেশের সভ্যতার অন্যতম মূল সম্বন্ধে খানিকটা ধারণা করা যাইবে।

নব্যপ্রস্তরযুগের এই দ্রাবিড়ভাষাভাষী লোকেরাই ভারতবর্ষের নাগর-সভ্যতার সৃষ্টিকর্তা। আর্যভাষায় ‘উর’, ‘পুর’, ‘কুট’ প্রভৃতি নগর-জ্ঞাপক যে সব শব্দ আছে সেগুলি প্রায় সবই দ্রাবিড় ভাষা হইতে উদ্ভূত। রামায়ণে স্বর্ণলঙ্কার বিবরণ, মহাভারতে ময়দানবের গল্প, মহেন-জো-দড়ের নগরবিন্যাসের উন্নত ও সমৃদ্ধ রূপ, ভারতের বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ—সমস্তই প্রাক-আর্যভাষী দীর্ঘমুণ্ড দ্রাবিড়ভাষাভাষী নরগোষ্ঠীর নগর-নির্ভর সভ্যতার দিকে ইঙ্গিত করে, এ কথা কতকটা নিঃসংশয়ে অনুমান করা চলে। নগর-নির্ভর সভ্যতা জটিল; এই সভ্যতার উপাদান-উপকরণও বহুল এবং জটিল হইতে বাধ্য। বিচিত্র খনিজ বস্তুর ব্যবহার তাহার অন্যতম প্রমাণ। এই গোষ্ঠীর লোকেরা সোনা, রূপা, সীসা, ব্রোঞ্জ ও টিনের ব্যবহার জানিত; শিলাজতু, নানাপ্রকারের পাথর, জাস্তব হাড়, পোড়ামাটি ও নানাপ্রকার খনিজ ও সামুদ্রিক দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের বিচিত্র প্রয়োজনে অলংকরণে, বিচিত্র রূপে ও রচনায় ব্যবহার করিত। বর্শা, ছুরি, খড়গ, কুঠার, তীর, ধনুক, মুষল, বঁটুল, তরবারি, তীরের ফলা ইত্যাদি ছিল ইহাদের অস্ত্রোপকরণ। পাথরের হলমুখ, চকমকি পাথরের ছুরি ও। কুঠার, নানাপ্রকার ধাতু ও মাটির থালাবাটি ইত্যাদি বিচিত্র রূপের নিত্যব্যবহার্য গৃহোপকরণ, মাটির তৈয়ারি নানাপ্রকারের খেলনা, তামা ও ব্রোঞ্জের দেহসজোপকরণ, খেলার জন্য গুটি ও পাশা ইত্যাদি অসংখ্য, বিভিন্ন ও বিচিত্র উপাদান এই সভ্যতার বৈশিষ্ট্য। গোরুর গাড়িও এই সভ্যতারই দান বলিয়া মনে হয়। সুতাকাটা, কাপড় বোনা তো ইহারা জানিতই। যব ও গম, মাছ, মেষ, শূকর ও কুকুট মাংস ছিল ইহাদের প্রিয় খাদ্যবস্তু; বৃহৎ বৃষ (কুকুদ্বান্‌), গরু, মহিষ, মেষ, হাতি, উট, শূকর, ছাগল, কুক্কুট বা মুরগি, কুকুর ও ঘোড়া (?) ছিল ইহাদের গৃহপালিত জন্তু। ইহাদের বিলাসদ্রব্যের প্রাচুর্য এবং আরাম উপভোগের উপকরণের যে পরিচয়, নানাপ্রকার হস্ত ও কারু শিল্পের যে পরিচয় সিন্ধু উপত্যকার প্রাগৈতিহাসিক ধ্বংসাবশেষে এবং রামায়ণ-মহাভারতের নানা গল্পের মধ্যে পাওয়া যায় তাহাতেও এক সমৃদ্ধনগর-নির্ভর সভ্যতার দিকে ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। তাম্র-প্রস্তরযুগের চিত্রকলার, জ্যামিতিক রেখাঙ্কন এবং অলংকরণের, মাটির পুতুল ও খেলনায় চারুকলার যে রূপের সঙ্গে আমার পরিচিত তাহারও কিছুটা এই দ্রাবিড়ভাষী দীৰ্ঘমুণ্ড নরগোষ্ঠীরই সৃষ্টি, এ কথা মনে করিবারও যথেষ্ট কারণ আছে। ছোটবড় রাস্তা, জলনিঃসরণের প্রণালী, বড়-ছোট একাধিক তলাবিশিষ্ট ইটকাঠের বাড়ি, দুর্গ, সিঁড়ি, খিলানযুক্ত দরজা, জানালা, স্নানাগার, কুপ, জলকুণ্ড, প্রাঙ্গণ, পূজামন্দির, মৃতদেহ-সৎকার-স্থান প্রভৃতি নগরবিন্যাসের যাহা কিছু অত্যাবশ্যক উপাদান, তাম্র-প্রস্তরযুগীয় দীর্ঘমুণ্ড নরগোষ্ঠীর চিত বাস্তব সভ্যতায় তাহার কিছুরই যে অভাব ছিল না হরপ্পা ও মহেন-জো-দড়োর ধ্বংসাবশেষ তাহা প্রমাণ করিয়াছে।

তামা, লোহা, ব্রোঞ্জ, সোনা, কাঠ ইত্যাদির ব্যবহার এবং এ সব বস্তুর সাহায্যে যে কারুশিল্প ইহারা জানিত তাহার একটু পরোক্ষ প্রমাণ ভাষাতত্বের মধ্যেও পাওয়া যায়। বাঙলা কামার (পরবর্তী সংস্কৃত কর্মকার) তো দ্রাবিড় ভাষার ‘কর্মার’ শব্দ হইতেই গৃহীত। চারুশিল্পের সঙ্গে পরিচয়ের প্রমাণ, ‘রূপ’ ও ‘কলা’ এই দুইটি দ্রাবিড় শব্দ। মৃৎপাত্র যে তৈরি করিত তাহার নাম হইতেছে ‘কুলাল’; বানর, গণ্ডার ও ময়ূরের সঙ্গে পরিচয়ের প্রমাণ ‘কপি’, ‘মৰ্কট’, ‘খড়্গ’ (জন্তু অর্থে) ও ‘ময়ূর’ প্রভৃতি দ্রাবিড় ভাষার শব্দ। চালের যে ক’টি শব্দ আছে সংস্কৃত ভাষায়, তাহার মধ্যে অন্তত দুইটি, ‘তণ্ডুল’ ও ‘ব্রীহি’, দ্রাবিড় ভাষা হইতে গৃহীত। লক্ষণীয় ইহাই যে, এই প্রত্যেকটি শব্দই ঋগ্বেদ ও ব্রাহ্মণ হইতে আহৃত। আর্য সভ্যতার প্রথম স্তরের ইতিহাসেই দ্রাবিড় সভ্যতার বাস্তব উপকরণগত এইরূপ অনেক শব্দ ঢুকিয়া পড়িয়াছে। পরবর্তী কালে সংস্কৃতে ও প্রাকৃতে বস্তুবাচক আরও কত অসংখ্য শব্দ যে ঢুকিয়াছে তাহার ইয়ত্তা নাই। এইসব বস্তুর সঙ্গে যদি পূর্ব হইতেই আর্যভাষীদের পরিচয় থাকিত তাহা হইলে হয়তো তাহাদের ভাষায় সেইসব বস্তুর নামও থাকিত; ছিল না বলিয়াই হয়তো এমন ভাষাভাষী লোকদের নিকট হইতে তাহা ধার করিয়া আত্মসাৎ করিয়া লইতে হইয়াছে যাহাদের মধ্যে সেইসব বস্তু ছিল এবং সেইহেতু তাঁহাদের নামও ছিল, এবং যাহাদের সঙ্গে আর্যভাষীদের পাশাপাশি বাস করিতে হইয়াছে, কখনও শত্রুভাবে, কখনও মিত্রভাবে। এইসব বস্তুবাচক অসংখ্য শব্দের ইতিহাসের মধ্যে দ্রাবিড়ভাষাভাষীজনদের উন্নত বাস্তব সভ্যতার ইঙ্গিতও সুস্পষ্ট।

দ্রাবিড়ভাষাভাষী বিভিন্ন দীর্ঘমুণ্ড নরগোষ্ঠীর রক্তপ্রবাহ বাঙলাদেশে কতখানি সঞ্চারিত হইয়াছে বা হয় নাই, তাহার ইঙ্গিত আগেই করা হইয়াছে। কিন্তু তাঁহাদের ভাষা ও বাস্তব সভ্যতার চলমান প্রবাহ যে বাঙলার ভাষা ও সভ্যতার প্রবাহে স্রোতধারা সঞ্চার করিয়াছে, এ সম্বন্ধে সন্দেহ করিবার উপায় নাই। বাঙলাদেশে এই ভাষা প্রভাবের ও সভ্যতার বাহন যতদূর অনুমান করা যায়, দ্রাবিড়ভাষাভাষী লোকেরা নিজেরা ততটা নয় যতটা আর্যভাষীরা নিজেরা। বাঙলাদেশের আর্যীকরণের আগে অ্যালপো-দীনারায় ও আদি নর্ডিক লোকেরা যতটা দ্রাবিড়ভাষীদের ভাষা ও বাস্তব সভ্যতা আত্মসাৎ করিয়াছিল, তাহারই অনেকখানি অংশ আর্যীকরণের সঙ্গে সঙ্গে বাঙলাদেশে সঞ্চারিত হইয়াছিল বলিয়া মনে হয়। তবে, প্রত্যক্ষ স্পর্শ লাগে নাই এমন কথাও জোর দিয়া বলা যায় না। বাঙলা ভাষার কিছু কিছু শব্দ ও পদরচনারীতি এবং ব্যাকরণপদ্ধতিতে যে দ্রাবিড় প্রভাব সুস্পষ্ট তাহা তো আগেই বলা হইয়াছে; বাস্তব সভ্যতায় এই দ্রাবিড়ভাষাভাষী নরগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ প্রভাব এতটা সুস্পষ্ট ও স্বতন্ত্র না হইলেও সাধারণভাবে ইহার অস্তিত্ব অস্বীকার করিবার উপায় নাই। সুস্পষ্ট ও স্বতন্ত্র না হইবার কারণ, আর্যভাষী অ্যালপো-দীনারায় ও আদি-নর্ডিক লোকেরা সেই প্রভাবকে একান্তভাবে আত্মসাৎ করিয়া ফেলিয়াছিল এবং আজ আমরা তাহাকে আর্যভাষী লোকদের সভ্যতার অঙ্গীভূত করিয়াই দেখি। তবু মনে হয়, বাঙালীর টাটকা ও শুকনা মৎস্যাহারে অনুরাগ, মৃৎশিল্প ও অন্যান্য কারুশিল্পে দক্ষতা, চারুশিল্পের অনেক জ্যামিতিক নকশা ও পরিকল্পনা, নগর-সভ্যতার যতটুকু সে পাইয়াছে তাহার অভ্যাস ও বিকাশ, বিলাসোপকরণের অনেক সামগ্ৰী, জলসেচনে উন্নততর চাষের অভ্যাস প্রভৃতি দ্রাবিড়ভাষাভাষী নরগোষ্ঠী প্রবাহেরই ফল। মহেন-জো-দড়োর ও হরপ্পার দীর্ঘমুণ্ড লোকেরা যে মৎস্যাহারী ছিল তাহার প্রমাণ সুবিদিত। বৈদিক আর্যেরা ছিলেন মাংসাহারী; কিন্তু পরবর্তীকালে নানা কারণে, বিশেষত বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর অহিংসাবাদের অভ্যুদয়ে, প্রাণিহত্যা এবং সঙ্গে সঙ্গে মাংসাহারের এবং মৎস্যাহারের প্রতি একটা বিরাগ আর্যভাষাভাষী লোকেদের মধ্যে ছড়াইয়া পড়ে এবং আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দ্রাবিড়ভাষী লোকদের দেশেও তাহা সংক্রামিত হয়। বাঙলাদেশে এই সংস্কৃতির বিস্তার অপেক্ষাকৃত কম হইয়াছিল বলিয়া এ দেশে মৎস্যাহারের প্রতি বিরাগ উৎপাদন ততটা সম্ভব হয় নাই। অবশ্য, এ দেশে নদনদীবহুল জলবায়ু এবং মাছের সহজলভ্যতা এই অনুরাগের আর একটি প্রধান কারণ, এ কথাও অস্বীকার করা যায় না। তাহা ছাড়া, আগে হইতেই অস্ট্রিকভাষাভাষী লোকদের ভিতরও মৎস্যাহারের প্রচলন ছিল বলিয়া মনে হয়।

অ্যালপো-দীনারায় নরগোষ্ঠীর বাস্তব সভ্যতার রূপ যে কী ছিল, তাহা বলিবার কিছু উপায় নাই। নানা কারণে মনে হয়, বৈদিক আর্যভাষীদের ভাষা ও সভ্যতা হইতে তাহার এক পৃথক অস্তিত্ব ছিল। পূর্ব ভারতের অ্যালপো-দীনারায় অবৈদিক আর্যভাষীদিগকে বৈদিক আর্যভাষীরা ঘূণার চক্ষেই দেখিত এবং তাঁহাদের অভিহিত করিত ব্রাত্য বলিয়া। এই ব্রাত্য অবৈদিক আর্যদের ভিতর হইতেই বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উদ্ভব বলিয়া অনুমান করিলে ইতিহাস অসম্মত কিছু বলা হয় না। আর, যেহেতু ইহারাও ছিল আর্যভাষী, সেই হেতু যে নিজেদের ধর্মানশাসনগুলিতে বলিত ‘আর্যসত্য’ তাহাতেও কিছু অন্যায় হয় নাই। “ব্রাত্যষ্টোম” যজ্ঞ করিয়া ইহাদের শুদ্ধিসাধন করিয়া নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করিবার একটা কৌশল বৈদিক আর্যেরা আবিষ্কার করিয়াছিলেন, কিন্তু তৎসত্ত্বেও ইহারা যে (বৈদিক ভাবে ও ধ্যানে, অর্থাৎ বৈদিক ধর্মে) ‘অ-দীক্ষিত’ তাহা বলিতেও ছাড়েন নাই। এই তথ্য হইতে মনে হয়, এই অ্যালপো-দীনারায় অবৈদিক আর্যভাষীদের স্বতন্ত্র একটা বাস্তব সভ্যতার রূপও ছিল; কিন্তু তাহা অনুমান করিবার উপায় আজ কিছু অবশিষ্ট আর নাই।

বৈদিক আর্যভাষীদের বাস্তব সভ্যতা ছিল একান্তই প্রাথমিক স্তরের। খড়, বাঁশ, লতাপাতার স্বল্পকালস্থায়ী কুঁড়েঘরে অথবা পশুচর্মনির্মিত তাবুতে ইহারা বাস করিত; গো-পালন জানিত, পশুমাংস পোড়াইয়া তাহাই আহার করিত এবং দলবদ্ধ হইয়া এক জায়গা হইতে অন্য জায়গায় ঘুরিয়া বেড়াইত। যাযাবরত্ব ত্যাগ করিয়া এ দেশে আসিয়া যথাক্রমে কৃষি অর্থাৎ গ্রাম-সভ্যতা এবং নগর-সভ্যতার সঙ্গে ধীরে ধীরে তাঁহাদের পরিচয় ঘটিল এবং ক্রমে তাহারা দুই সভ্যতাকেই একান্তভাবে আত্মসাৎ করিয়া নিজস্ব এক নূতন সভ্যতা গড়িয়া তুলিল। এই সভ্যতার বাহন হইল আর্যভাষা। এই দুই সভ্যতার সমন্বিত আর্যীকরণই হইল আর্যভাষীদের বিরাট কীর্তি; অথচ বিশ্লেষণ করিলে দেখা যাইবে তাঁহাদের একান্ত নিজস্ব কিছু তাহাতে বিশেষ নাই।

বাঙলাদেশ ও বাঙালীর বাস্তব সভ্যতার রূপ শুধু প্রাচীনকালেই নয়, উনবিংশ শতক পর্যন্ত একান্তভাবেই গ্রামীণ, এ কথা সকলেই স্বীকার করবেন। দ্রাবিড়ভাষাভাষী লোকদের উদ্ভূত নগর-সভ্যতার স্পর্শ বাঙলাদেশে খুব কমই লাগিয়াছে; সেইজন্যই সুদীর্ঘ শতাব্দীর পর শতাব্দী বাঙালীর ইতিহাসে নগরের প্রাধান্য নাই বলিয়াই চলে। উত্তর ভারতে রাজগৃহ, পাটলীপুত্র, সাকেত, শ্রাবস্তী, হস্তিনাপুর, পুরুষপুর, শাকল, অহিচ্ছত্র, কান্যকুব্জ, তক্ষশীলা, উজ্জয়িনী, বিদিশা, কৌশম্বী প্রভৃতি, দক্ষিণ ভারতের অসংখ্য সামুদ্রিক বাণিজ্যের বন্দর, পুর, নগর প্রভৃতি ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে স্থান অধিকার করিয়া আছে, বাঙলাদেশে বাঙলার ইতিহাসে নগর নগরী সে স্থান অধিকার করিয়া নাই। বস্তুত বাঙলাদেশে নগরের সংখ্যা কম এবং বাঙালীর সমাজবিন্যাসে নগরের প্রাধান্যও কম। এ কথা অন্যত্র আরও পরিষ্কার করিয়া বলিবার সুযোগ হইবে; এখানে এইটুকু বলিলেই চলিতে পারে যে, নগর-সভ্যতার স্পর্শ বাঙলাদেশে যে যথেষ্ট লাগে নাই, তাহার কারণ বাঙলাদেশ চিরকালই ভারতের একপ্রান্তে নিজের কৃষি ও গ্রামীণ সভ্যতা লইয়া পড়িয়া থাকিয়াছে। সর্বভারতীয় প্রাণকেন্দ্রের সঙ্গে তাহার যোগ আর্যভাষা ও আর্যসভ্যতা এবং সংস্কৃতিকে অবলম্বন করিয়াই এবং সেই সূত্রে যে দ্রাবিড় ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির যতটুকু প্রবাহম্পর্শ পাইয়াছে, তাহাই বোধহয় তাহার দ্রাবিড়ী উপাদান এবং সে উপাদান তাহার মূল অষ্টিক উপাদানকে একান্তভাবে বিলোপ করিতে পারে নাই। ঐতিহাসিক কালেও দক্ষিণ হইতে নানা সমরাভিযান এবং আদান-প্রদানের ফলে বাঙলাদেশে কিছু কিছু দক্ষিণী দ্রাবিড় প্রভাব আসিয়াছে, সন্দেহ নাই; বাঙলাদেশের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসে তাহার কিছু কিছু পরিচয় পাওয়া যায় ভাষায়, বাস্তব সভ্যতার কিছু কিছু উপাদান-উপকরণে এবং মানস-সংস্কৃতিতে। তাহা স্বতন্ত্র বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইবার স্থান এখানে নয়।