1 of 2

শেষ ইচ্ছে

শেষ ইচ্ছে । নবারুণ ভট্টাচার্য

আমি মরে গেলে
আমি শব্দ দিয়ে যে বাড়িটা তৈরি করেছি
সেটা কান্নায় ভেঙে পড়বে
তাতে অবাক হবার কিছু নেই

বাড়ির আয়না আমাকে মুছে ফেলবে
দেওয়ালে আমার ছবি রাখবে না
দেওয়াল আমার ভালো লাগত না
তখন আকাশ আমার দেওয়াল
তাতে চিমনির ধোঁয়া দিয়ে পাখিরা
আমার নাম লিখবে
অথবা আকাশ তখন আমার লেখার টেবিল
ঠাণ্ডা পেপারওয়েট হবে চাঁদ
কালো ভেলভেটের পিনকুশনে ফোটানো থাকবে তারা

আমাকে মনে করে তোমার
দুঃখ করার কিছু নেই
এই কথাগুলো লেখার সময় আমার হাত কাঁপছে না
কিন্তু যখন প্রথম তোমার হাত ধরেছিলাম
তখন আমার হাত থরথর করে কেঁপেছিল
কিছুটা আবেগে কিছুটা আড়ষ্টতায়

আমার সুন্দরী স্ত্রী আমার প্রেয়সী
আমার স্মৃতি তোমাকে ঘিরে থাকবে
তোমার তাকে আঁকড়ে থাকার কিছু নেই
তুমি নিজের জীবন গড়ে নিও
আমার স্মৃতি তোমার কমরেড
তুমি যদি কাউকে ভালোবাস
তাকে এই স্মৃতিগুলো দিয়ে দিও
তাকে কমরেড করে নিও
অবশ্য আমি সবটা তোমার ওপরে ছেড়ে দিচ্ছি
আমি বিশ্বাস করি তুমি ভুল করবে না

তুমি আমার ছেলেকে
প্রথম অক্ষর শেখাবার সময়ে
ওকে মানুষ, রোদুর আর তারাদের ভালোবাসতে শিখিও
ও অনেক কঠিন কঠিন অঙ্ক করতে পারবে
বিপ্লবের অ্যালজেব্রা ও আমার চেয়ে
অনেক ভালো করে বুঝবে
আমাকে হাঁটতে শেখাবে মিছিলে
পাথুরে জমিতে আর ঘাসে
আমার দোষগুলোর কথা ওকে বোলো
ও যেন আমাকে না বকে
আমার মরে যাওয়াটা কোনো বড় কথা নয়
খুব বেশিদিন আমি বঁচিব না
এটা আমি জানতাম
কিন্তু আমার বিশ্বাস কখনও হটে যায়নি
সমস্ত মৃত্যুকে অতিক্রম করে
সমস্ত অন্ধকার অস্বীকার করে
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হয়েছে
বিপ্লব চিরজীবী হয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *