০২.২ অধ্যক্ষ প্রচার – দ্বিতীয় অধিকরণ (অধ্যায় ১২-২৩)

দ্বাদশ অধ্যায়
৩০শ প্রকরণ-আকরকৰ্ম্মান্তের প্রবৰ্ত্তন

আকরাধাক্ষকে (খনিকাৰ্য্যের অধ্যক্ষকে) শুল্লশাস্ত্র (শাকিলাদি ভূসিরাবিজ্ঞান; অথবা যে শাস্ত্ৰে তাম্রাদি ধাতুকে সুবর্ণাদিতে পরিণত করিবার উপদেশ প্রদত্ত আছে সেই শাস্ত্র), ধাতুশাস্ত্র (অর্থাৎ যে শাস্ত্ৰে নানাপ্রকার ধাত্র শক্তি বাডাইবার উপদেশ বিহিত আছে), রস (রসোপনিযদাখ্যা বিজ্ঞান), পাক (কনকাদি ধাতুর অগ্নিপচন-কৰ্ম্মাদারা উৎকর্মসাধন-জ্ঞান) ও মণিরাগ (মণিসমূহের বৰ্ণভেদোৎপাদন কৰ্ম্ম)—এই সবের জ্ঞানবিজ্ঞান জানিতে হইবে; এবং তাঁহাকে তৎ তৎ শুল্কশাস্ত্ৰাদিতে অভিজ্ঞ লোকদিগকে কাৰ্য্যাৰ্থ সহায়ারূপে লইতে হইবে; অথবা, তাঁহাকে সেই সব দ্রব্যের কাৰ্য্যে নিত্য উদ্যোগী কৰ্ম্মকরগণ দ্বারা ও তৎ তৎ কৰ্ম্মকরণের উপযোগী (খনিত্ৰাদি) উপকরণসমহা দ্বারা যুক্ত হইতে হইবে। (এইরূপ সম্পদে সম্পন্ন) আকরাধ্যক্ষ ভূতপূৰ্ব্ব আকারের কিট (লোহমল), মূষা (সুবর্ণাদি গলাইবার ভাণ্ডাদি), অঙ্গার ও ভস্মরূপ চিহ্ন দেখিয়া, এগুলিকে পরীক্ষা করিবেন; অথবা, তিনি অভূতপূৰ্ব্ব (নূতন) আকর,—ঈহার ভূমি (মুত্তিক), প্রস্তুর ও রসের (জলপারদাদির) ধাতু বা সার প্রকৃতি বিবেচনা করিয়া, ইহার বর্ণ ও গৌরব (গুরুত্র বা ভার) অত্যর্থমাত্রায় বর্তমান থাকা দেখিয়া, এবং ইহার গন্ধ ও রস তীব্রভাবে থাকা লক্ষ্য করিয়া পরীক্ষা করিবেন।

যে পৰ্ব্বতসমূহের উদ্দেশ (বিচয় জন্য) পূৰ্ব্বপরিচিত, সেই পৰ্দাতুসমূহেৰু বিল (ভু-বিবর), গুঙ্গা (দেবখাত বিল), উপত্যকা, লয়ন (শিলাস্কন কুৰ্ম্মলার। নিৰ্ম্মিত গুহা), ও গঢখাতের মধ্যে প্রস্তাদশীল (প্রবহনশীল),–এবং জন্তু, আমি ও তালফল, পকহরিদ্রাভঙ্গ, হরিতাল, মধু, হিন্দলক, পুণ্ডরীক (শ্বেতপদ্ম), শুক ও ময়ুরপক্ষের বর্ণবিশিষ্ট, এবং যাহার পরিসর প্রদেশে সমানবর্ণের জল ও ওষধী লক্ষিত হয় তেমন, চিঙ্কণ (মক্ষণ), বিশদ (পরিস্কার রকমের) ও ভারিক (গুরু) রস (দ্রব) দৃষ্ট হইলে, ইহাকে কাঞ্চনিক (সুবৰ্ণোৎপাদক) রস বলিয়া বুঝিতে হইবে।

যথোক্ত কাঞ্চনিক রস জলে নিক্ষিপ্ত হইলে, তৈলের ন্যায় বিসৰ্পণশীল হয়, এবং ইহা (জলের) পক্ষ ও মল (নীচে) তলাইয়া দেয়, এবং ইহা (শতপলাত্মক) তাম্র ও রূপ্যের উপর (একপল পরিমাণে) নিক্ষিপ্ত হইলে (তৎপরিমিত) সেই দুই ধাতুকে সুবর্ণীকরণে সমর্থ হয়।

উক্ত কাঞ্চনিক রসের সমানরূপবিশিষ্ট কোন রস যদি উগ্র গন্ধ ও উগ্রাস্বদনযুক্ত হয়, তাহা হইলে ইহাকে শিলাজতু নামক দ্রব্যান্তর বুঝিতে হইবে (অর্থাৎ ইহা সুবৰ্ণ নহে)।

সেই-প্রকার ভূমিধাতু ও প্রস্তরধাতুকেও সুবৰ্ণধাতু (অর্থাৎ সুবর্ণের খনি) বলা হইবে, যাহার বর্ণ পীত, তাম্র বা (মিশ্র) তাম্র-পীত, যাহা বিদারিত হইলে (মধ্যে) নীল রেখাযুক্ত হয়, অথবা, মুদগ (মুগ), মাষ, তিলের বর্ণযুক্ত প্রতিভাত হয়, যাহা দধিবিন্দুর মত (দধির সূক্ষ্ম কণার মত) বিন্দুযুক্ত এবং দধিপিণ্ড-সদৃশ স্থূল বিন্দু দ্বারা আকীর্ণ; অথবা, যাহা হরিদ্র, হরীতকী, পদ্মপত্র, শৈবাল, যকৃৎ ও প্লীহার (গুলোর) নির্দোষ (মতান্তরে, অনবদ্য-শব্দটিকে কুকুম-আর্থে ধরা হইয়াছে) বৰ্ণবিশিষ্ট; যাহা ভেদপ্ৰাপ্ত হইলে সূক্ষ্ম বালুকার রেখা, বিন্দু ও স্বস্তিক (ত্রিকোণরূপী রেখাবিশেষ)-সমন্বিত; যাহা গুলিকা বা গুটিকাযুক্ত, দীপ্তিবিশিষ্ট; যাহা তাপিত হইলেও স্ফটিত হয় না, কেবল বহু ফেন ও ধূমধুক্ত হয়; এবং যাহা তাম্র ও রূপ্যে। চুৰ্ণাকারে নিক্ষিপ্ত হইলে তাদ্বোধনে (অর্থাৎ সুবৰ্ণস্বপ্রাপণে)।

সেই খনিজ পদার্থকেই রূপ্যধাতু (অর্থাৎ রূপ্য-জনক ধাতু) বলা হয়, যাহার বর্ণ শঙ্খ, কৰ্পাের, স্ফটিক, নবনীত, (আরণ্য) কপোত, (গ্ৰাম্য) পারাবত, বিমলক (শ্বেতরক্ত মণিবিশেষ), ও ময়ূরের গ্রীবার মত বৰ্ণবিশিষ্ট; (অথবা, যােহ) সস্যক (নীলমণি), গোমেদক, গুড় (পিণ্ডশর্করা) ও মৎস্যণ্ডিকার (শর্করার) মত বুর্ণযুক্ত; (অথবা, যাহা ॥৮ কোবিদার (তাম্রপুষ্প বৃক্ষ), পদ্ম, পাটলী, কলায়, ক্ষৌম ও অতুলী পুষ্পের মত বর্ণসমন্বিত; যাহাতে সীসধাতু মিশ্রিত থাকে; যাহাতে অঞ্জন (সীসকের ন্যায় শুক্লবৰ্ণ ধাতুবিশেষ) মিশ্রিত থাকে; ও যাহা দুৰ্গন্ধযুক্ত, যাহা খণ্ডিত হইলে (বাহিরে) শ্বেতবর্ণ ও (মধ্যে) কৃষ্ণবৰ্ণ (কিংবা, বাহিরে) যাহা কৃষ্ণবর্ণ ও (মধ্যে) শ্বেতবর্ণ, অথবা, (উক্ত সর্বপ্রকার বর্ণযুক্ত হইলেও, যাহা নানাবিধ) রেখা ও বিন্দুদ্ধারা চিত্ৰিত; যাহা মৃদু, (কিন্তু,) যাহা তাপিত হইলেও ক্ষুটিত হয় না, (বরং) বহু ফেন ও ধূমযুক্ত লক্ষিত হয়।

(উক্ত ও বক্ষ্যমাণ) ধাতুসমূহের গুরুত্র (ভার) যতই বন্ধিত হইবে, ততই ইহাদিগের নিজগত সারের বৃদ্ধি বুঝিতে হইবে। যেসব ধাতু (অন্যধাতুমিশ্রণে) অশুদ্ধ বা অনভিব্যক্তি-সত্ত্ব, তাহাদের শোধনপ্রকার বলা হইতেছে, যথা,–তীক্ষ্মমূত্র (মানুষের মুত্র; মতান্তরে, গজাখাদির মূত্র) ও তীক্ষ্ণার (কদলী প্রভৃতির ভস্ম) দ্বারা ধাতুগুলিকে ভাবিত করিতে হইরে; অথবা, সেগুলিকে রাজবৃক্ষ (অন্য নাম শম্পাক), বটবৃক্ষ ও পীলুবৃক্ষের (কঙ্ক), গোপিত্ত, গোরোচনা, মহিষ, গর্দভ ও কারভের (উদ্ভবৎসের) মূত্র ও মলপিণ্ডের সহিত মিশ্ৰিত করিতে হইবে; এবং উক্ত বস্তুসমূহের চুর্ণ, (পরিশোধ্যমান) ধাতুগুলিকে প্রতীবাপকরুণার্থ (অর্থাৎ তাপপ্রয়োগে চুর্ণীকরণ প্রক্রিয়ার জন্য) নিক্ষিপ্ত হইলে, অথবা, ধাতুগুলিকে সেই সব চুর্ণদ্বারা উপলিপ্ত করিলে সেই ধাতুগুলি দ্রব্যান্তরের সংসৰ্গজ দোষ হইতে নিমুক্ত হইয়া, নিজের আসল রূপ প্রকটিত করে, অর্থাৎ শুদ্ধ হয়।

যাব, মাষ, তিল, পলাশ ও পীলুর ভস্ম এবং গোক্ষীর ও ছাগক্ষীরের সহিত কদলীকান্দ ও বজকন্দ (সুরাণকান্দ) মিশ্ৰিত করিয়া যে প্রতীব্যাপ অর্থাৎ তদ্দ্বারা ভাবনা দেওয়া হয়, তাহার ফলে (সুবর্ণ ও রাজতের) মৃদুতা উৎপন্ন হইতে পারে।

মধু মধুক (যষ্টিমধু) ও ছাগীর দুগ্ধ, তৈল, ঘৃত, গুড় ও কিথ (সুরাবীজ) এবং কন্দলী (কচ্ছ-স্থলে উৎপন্ন কাটবিশেষ) এই সব দ্রব্য–একত্র মিশ্রিত করিয়া (তদ্দ্বারা যে কষ্ক প্রস্তুত করা হয়) সেই কল্ক তিন বার নিক্ষিপ্ত হইলে (সুবর্ণাদি) যে কোন ধাতুই শতসহস্র প্রকারে বিভিন্ন হইলেও মৃদু (নরম) হইয়া যায়। ১।৷

গোদান্ত ও গোশঙ্গের চুর্ণ দ্বারা প্রতীবাপ-প্রক্রিয়া প্রযুক্ত হইলে (সুবর্ণাদি ধাতুর) মৃদুতা লুপ্ত হয়। (এই পৰ্য্যন্ত সুবর্ণ ও রৌপ্য সম্বন্ধে প্রকরণ শেষ হইল)।

ভারী, মসৃণ ও মৃদু প্রস্তরধাতু বা ভূমিধাতু তামের উৎপত্তিস্থান বলিয়া বিজ্ঞাত হইতে পারে, এবং এই তাম্রধাতুর বর্ণপিঙ্গল (কপিল), হরিত, (নীল), পাটল (ঈষৎ লাল) ও লাল হইতে পারে।

সীসাধাতুর যোনি (উৎপত্তিস্থান) কাকবর্ণের মত কৃষ্ণ, বা কপোতবর্ণ বা গোরোচনাবৰ্ণ হয়, এবং ইহাতে ধবল রেখা বদ্ধ থাকে ও ইহা দুৰ্গন্ধযুক্ত থাকে।

ত্ৰিপু (শ্বেতসীসা)-ধাতু ঊষরদেশের ন্যায় ঈষৎ-পাণ্ডুবৰ্ণ, অথবা, পঙ্ক ইষ্টকের বর্ণযুক্ত হইয়া থাকে।

যে স্থান কুরুম্ব (অর্থাৎ মন্থণ পাষাণযুক্ত) ও পাণ্ডু-রক্তবর্ণ, অথবা সিন্ধুবার পুষ্পের বর্ণবিশিষ্ট তাহাকে তীক্ষুধাতুর (লৌহধাতুর) উৎপত্তিস্থান বলিয়া জানা যায়।

কাকের অণ্ডসমানবৰ্ণ, অথবা, ভূৰ্জপত্রের বর্ণবিশিষ্ট ধাতুভূমিকে বৈকৃন্তকধাতুত্র উৎপত্তিস্থান বলিয়া জানিতে হইবে। (সাত প্রকার লোহধাতু এই পৰ্য্যন্ত অভিহিত হইল)।

মণিধাতু (মণির উৎপত্তিস্থান) স্বচ্ছ, স্নিগ্ধ, প্রভাযুক্ত, (অগ্নিতে তাপিত হইলে বা টঙ্কাদিদ্বারা প্রহৃত হইলে) শব্দোৎপাদক, অত্যন্ত শীতল, ও অল্পরাগ হইয়া থাকে।

(খনিস্থ) ধাতু হইতে সমূখিত (স্বর্ণাদি) তৎ তৎ ধাতুজাত কৰ্ম্মান্তসমূহে (কারখানাতে) প্রযোজিত করা হইবে।

(রাজকীয় আকরাধ্যক্ষ)। সরকারী (কৰ্ম্মান্তে) নিৰ্ম্মিত (ধাতুজ) ভাণ্ড (বা দ্রব্য) সমূহের ব্যবহার (ক্রয়বিক্রয়-ব্যাপার) একমুখ-ভাবে (অর্থাৎ একস্থানে একচেটিয়া ভাবে) স্থাপন করিবেন, এবং অন্যস্থানে (সেই সব দ্রব্যের কারবার করা হইলে), ভাণ্ডনিৰ্ম্মাণকারী, ক্রয়কারী ও বিক্রয়কারীর উপর দণ্ডবিধানের ব্যবস্থা ও করিবেন।

(খনিজ পদার্থের) অপহরণকারী আকরিকের (আকারে নিযুক্ত কৰ্ম্মকরের উপর অপহৃত দ্রব্যের মূল্যের আটগুণ অর্থদণ্ড দেওয়াইতে হইবে; কিন্তু এই দণ্ড রত্নাপহরণের বেলায় খাটিবে না (কারণ, পরে বলা হইবে যে রত্নাপাহারীর উপর বাধদ ও বিহিত আছে)।

যে কোন (আকরিক বা অনাকরিক) পুরুষ খনিজ দ্রব্য চুরি করিবে, বা রাজার অনুমতি ব্যতিরেকে খনিজ দ্রব্যের ব্যাপার দ্বারা উপজীবিকা অৰ্জন করিবে: তাহাকে ধরিয়া আনিয়া (খনির) কৰ্ম্ম করাইয়া লইতে পারা যাইবে এবং (দেহদণ্ডের পরিবর্তে) যাহার উপর আদি গুরূপ উপকার প্রদশিত হইলেও সে অর্থদণ্ড দিতেৎপারে না, তাহাকে দিয়া ও সেই ভাবে খনির কাৰ্য্য করাইয়া লওয়া যাইতে পারিবে।

যে (রাজকীয়) আকর্যকৰ্ম্ম ব্যয়ভারিক (অর্থাৎ বহুধনব্যয়সাধ্য) ও ক্রিয়াভারিক (অর্থাৎ অনেক লোকের প্রযত্নসাধ্য), সেই কৰ্ম্ম (অন্যের সঙ্গে) ভাগের ব্যবস্থা করিয়া, অথবা, প্রক্ৰিয়ের (আকরন্থ দ্রব্যের রাজদেয় কতক অংশের পরিপণনের) ব্যবস্থা করিয়া, অন্যের হস্তে দিতে পারা যাইবে। আর যে আকর্যকৰ্ম্ম উক্ত ব্যয় ও ক্রিয়াসম্বন্ধে লাঘবিক (অর্থাৎ যাহা করাইতে লঘুব্যয় ও লঘুশ্রমের সম্ভাবনা আছে) তাহা (আকরাধ্যক্ষ সরকার-পক্ষে) স্বয়ং করাইবার ব্যবস্থা করিবেন।

লোহাধ্যক্ষ (অর্থাৎ সুবর্ণ ও রজত ব্যতীত তাম্রাদি অন্য লোহ বা ধাতুর অধ্যক্ষ)। তাম্র, সীসা, ত্রিপু, বৈকুন্তক, আরকুট (পিত্তল), বৃত্ত (ধাতুবিশেষ), কংস (, কঁাসা), ও তাল-এই সব লোহ বা ধাতুর জন্য কৰ্ম্মান্ত (কারখানা), করাইবেন, এবং এই সব লোহজাত ভাণ্ড বা দ্রব্যসমূহের (ক্রয়বিক্রয়ারূপ) ব্যবহার বা ব্যাপারও করাইবেন।

(সম্প্রতি লক্ষণাধ্যক্ষের অর্থাৎ যে অধ্যক্ষ রূপা ও তামার মুদ্রা-নিৰ্ম্মাণকাৰ্য্যের অধ্যক্ষ তাহার ব্যাপার ও ঐরূপ মূদ্রানিৰ্ম্মাণের প্রকার বলা হইতেছে। তিনিই আধুনিক কালের টঙ্কশাল বা টাকশালার অধ্যক্ষ।) রূপনিৰ্ম্মিত রূপ বা মুদ্রার (রূপ = রূপিয়া আধুনিক) ভেদ চারি প্রকার-যথা, পণ (= আনুমানিক আধুনিক টাকা), অৰ্দ্ধপণ (= আধুলী), পাদপণ (= সিকি) ও অষ্টভাগপণ (= দুয়ানি)—এই চারি প্রকার মুদ্রা বা সিক্কা লক্ষণাধ্যক্ষ প্রস্তুত করাইবেন। এবং এই (ষোড়শমাষাত্মক) পণ প্রস্তুত করিতে হইলে, ইহাতে চারি মাষ প্রমাণ তাম, ও তীক্ষ্ণা (লৌহ), ত্রিপু, সীস ও অঞ্জন (রসা&ন) এই চারি প্রকার ধাতুর অন্যতমের একমাষপরিমিত বীজ লইয়। (অবশিষ্ট একাদশ মাষপরিমিত আসল রূপ্যের সহিত মিশাইয়া) পণ-নামক রূপার সিক্কা এবং (উক্ত প্রকারেই) অৰ্দ্ধপণ-নামক, পাদপণ-নামক ও অষ্টভাগপণ-নামক রূপার সিদ্ধাসমূহ নিৰ্ম্মাণ করাইবেন। আবার, (উপরি উক্ত রূপ্য নিৰ্ম্মিত রূপ বা সিক্কাগুলির পাদ বা চতুর্থাংশরূপে ব্যবহারের যোগ্য) (মতান্তরে, পাদপণ-নামক রূপ্যারূপের চতুর্থাংশরূপে ব্যবহারের যোগ্য)। চারি প্রকার তমরূপের অর্থাৎ তাম্রসিদ্ধার কথা বলা হইতেছে। লক্ষণাধ্যক্ষ উক্ত সিক্কাগুলির অথবা উক্ত পাদপদ্ণ-নামক সিদ্ধার চতুর্থাংশমূল্যের মাষক-নামক তাম্ররূপ বা তামসিক্কা প্রস্তুত করাইবেন (ইহাতে ষোলভাগের মধ্যে চারিভাগ রূপা, তীক্ষ্ণাদি ধাতুচতুষ্টয়ের অন্যতমের একভাগ ও বাকি একাদশভাগ তাম থাকিবে), এবং ইহার (অৰ্দ্ধপ্রমাণ-যোগে) অৰ্দ্ধমাষক (চতুর্ভাগপ্রমাণ-যোগে) কাকণী ও (অষ্টভাগপ্রমাণ-যোগে) অৰ্দ্ধকাকণী-নামে পরিচিত তাম্ররূপ বা তামসিকা ও নিৰ্ম্মাণ করাইবেন (সুতরাং মাষক, কাকণী ও অৰ্দ্ধকাকণীর মূল্য আধুনিক কালে প্রচলিত মুদ্রার সিকি, দুয়ানি, আনি ও আধ-আনির মত মুদ্রাও হইতে পারে; কিংবা মতান্তরে, আনি, আধ-আনি, পয়সা ও আধ-পয়সার মত মুদ্রাও হইতে পারে।)।

রূপদৰ্শক (অর্থাৎ সিঙ্কার সারাসারতা-পরীক্ষাকারী রাজপুরুষ) আদান ও প্রদানরূপ ব্যবহারের প্রয়োজনার্থক পাগাযাত্র (অর্থাৎ পণপ্রভৃতি সিক্কার সাধারণ্যে চলতি) নির্দেশ করিবেন এবং কোন পণ (ও অন্যান্য সিকা) রাজকোশে প্রবেশনযোগ্য তাহাও নির্দেশ করিবেন। (রাজকীয় টঙ্কশালায় সাধারণ লোক রূপ্য ও তাম আনিয়া দিয়া তাহা দ্বারা ব্যবহারিক সিকা প্রস্তুত করাইয়া লইতে আসিলে এই রূপদৰ্শক ইহার খরচ বরাদ্দ করিবার সময়ে ‘রূপিক’, ‘ব্যাজী” ও “পরীক্ষিক’ নামক তিন প্রকার কর আদায় করিবেন)। (রূপদৰ্শক) প্রতি ১০০ পণ নিৰ্ম্মাণের জন্য ৮ পণ রূপিক-নামক কররূপে (ইহা কৰ্ম্মকরদিগের ভূতিরূপে গ্রহীতব্য মনে হয়), শতকরা পাঁচ পণ ব্যাজী-নামক কররূপে (ইহা রাজভাগ বলিয়া প্রতীয়মান) ও শতকরা আটভাগ (অর্থাৎ ১২ই পণ, ইহা পরীক্ষকের ভূতি বলিয়া বোদ্ধব্য) পরীক্ষিক-নামক কররূপে স্থাপনা করিবেন। (এই শেষোক্ত অষ্টভাগিক করা যে না দিবে।) তাহার উপর রূপদৰ্শক ২৫ পণ দণ্ড ব্যবস্থা করিতে পারিবেন; কিন্তু, এই দণ্ড, যে ব্যক্তি সিক্কার নিৰ্ম্মাণকারী বা ইহার ক্রিয় ও বিক্রয়কারী ও পরীক্ষক, তাহার উপর প্রবত্তিত হইবে না (মতান্তরে, এই বাক্যটির ব্যাখ্যা এইরূপ-অন্য স্থানে সিকা নিৰ্ম্মিত করাইলে, অপরাধী হইবেন। তৎকৰ্ত্তা, তৎক্রেতা, তদ্বিক্রেতা ও তৎপরীক্ষক এবং তাঁহাদের প্রত্যেকের উপর রূপদৰ্শক। ২৫ পণ দণ্ড বিধান করিতে পারিবেন)।

খনির অধ্যক্ষ শঙ্খ, হীরক, মণি, মুক্তা, প্রবাল ও ক্ষরিদ্রব্যের কৰ্ম্মান্ত (পাটন, ঘর্ষণ, রঞ্জন, খনন শোধন ও উৎপাদনাদির জন্য কারখানা) নিৰ্ম্মাণ করাইবেন ও (উৎপাদ্য পণ্যের) পণনব্যবহারের (ক্রয়বিক্রয়-ব্যাপারের) বন্দোবস্ত করাইবেন।

লবণাধ্যক্ষ, ভাগে অৰ্পিত আকরলভ্য লবণ ও প্রক্রিয় বা পরিপণসৰ্ত্তে লভ্য লবণ পাকযুক্ত। (অর্থাৎ ব্যবহারের যোগ্য হইয়া নিম্পন্ন) হইলে, তাহা যথাকালে সংগ্রহ করিবেনপএবং তিনি লবণবিক্রয়-লব্ধ মূল্য রূপ বা নগদ টাকাকারে এবং ইহার ব্যাজী ও (অর্থাৎ মানব্যাজী পুনর্বার মাপিবার সময়ে দ্রব্যের যে উন্নত হয় তৎপ্রতিকারার্থ যতখানি বেশী লওয়া হয়-যাহাকে আমরা ‘ফাও’ বলি) সংগ্রহ করিবেন।

আগন্তু (অর্থাৎ পরদেশ হইতে আগত) লবণের কারবারীকে (রাজকোশের জন্য মূল্যের) যষ্ঠভাগ দিতে হইবে। এই ভাগ ও (মান ব্যাজীরূপ) বিভাগ (রাজকোশের জন্য) দেওয়া হইলেই আগন্তলবণ ব্যবহারী তাহা বিক্রয় করিতে পারিবে। (সেই ব্যাপারীকে আরও দিতে হইবে মূল্যের) শতকরা পাঁচ পণ ব্যাজী-নামক কর (অষ্টভাগিক?), রূপ-নামক কর, ও শতকরা আট পণ রূপিকনামক কর। (আগন্তু লবণের) ক্রয়কারীকেও (রাজবিহিত) শুল্ক দিতে হইবে, এবং তাঁহাকে রাজপণ্যের (অর্থাৎ লবণাদি যাহা রাজার নিজ দেশে লকণাধ্যক্ষের পরিদর্শনে নিৰ্ম্মিত হয় তাহার) ছেদ বা ক্ষতির অনুরূপ (তৎপুরণার্থক) বৈধরণনামক কারও দিতে হইবে। (রাজপণ্য থাকা সত্ত্বেও)। অন্যস্থানে লবণ ক্রয়কারীকে শতকরা ৬ পণ দণ্ডও দিতে হইবে।

(মাটিপ্রভৃতি সহ) বিমিশ্রিত (দোষযুক্ত) লবণের ব্যবহারী বা ব্যাপারীকে উত্তম সাহস দণ্ড প্রদান করিতে হইবে, এবং যে ব্যক্তি রাজার অনুমতি ব্যতীত লবণের উৎপাদক হয়, তাহাকেও সেইরূপ দণ্ড দিতে হইবে; কিন্তু, বানপ্রস্তুদিগের বেলায় এই নিয়ম খাটিবে না। (অর্থাৎ তাহার রাজানুমতি ব্যতিরেকেও লবণ উৎপাদনা করিয়া নিজ উপযোগে আনিতে পারিবেন)। শ্রোত্ৰিয়, তপস্বী ও বিষ্টিরা (অর্থাৎ রাজপ্রয়োজনমতে যাহাদিগকে হঠাৎ ডাকাইয়া কাজ করাইতে হয় তাহারা) নিজ খাওয়ার জন্য লবণ (বিনা শুল্কে) তৈয়ার করিয়া লইতে পারিবেন। ইহা ছাড়া অন্যান্য (কোষ্ঠাগারাধ্যক্ষ-প্রকরণে উক্ত) লবণবৰ্গ ও ক্ষারবর্গের অন্তর্গত পদার্থের উৎপাদক প্রভৃতিকে শুল্ক দিতে হইবে।

এই প্রকারে (আকরাধ্যক্ষ) মূল্য, বিভাগ, ব্যাজী, পরিঘ (পারীক্ষিক করা?) অত্যয়, শুষ্ক, বৈধরণ, দণ্ড, রূপ (নগদ টাকা, অথবা, শতকরা আটপণাত্মক করা) ও রূপিক এবং নানারূপ খনি হইতে প্ৰাপ্ত দ্বাদশবিধ ধাতু ও (তাহা হইতে উৎপাদিত) পণ্য সংগ্রহ করিবেন ॥ ২-৩।৷

কোশ আকর হইতেই উৎপন্ন হয় এবং কোশ হইতেই দণ্ড বা সেনার উন্নতি ঘটে; কোশভূষিত পৃথিবী (ভূমি) কোশ ও দণ্ডের সাহায্যেই লাভ করা যায়।।৪।।

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষ প্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকাবণে আকর্যকৰ্ম্মান্তের প্রবর্তন-নামক দ্বাদশ অধ্যায় (আদি হইতে ৩৩ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

ত্রয়োদশ অধ্যায়
৩১শ প্রকরণ-অক্ষশালাতে সুবর্ণাধ্যক্ষ

সুবৰ্ণধ্যক্ষ (অর্থাৎ যে প্রধান পুরুষ সুবৰ্ণরাজতান্দির সংশোধন প্রভৃতি কাৰ্য্যের নিরীক্ষণে অধিকারী) সুবর্ণ ও রাজতের (অলঙ্কারাদি ঘটনক্রিয়ার) কারখানার জন্য এমন অক্ষশালা (সুবর্ণাদির সংশোধনাদি কৰ্ম্মের উপযোগী স্থান) নিৰ্ম্মাণ করাইবেন যাহাতে পরস্পর-সম্বন্ধ রহিত গৃহযুক্ত চতুঃশাল থাকিবে এবং যাহা (রক্ষাকাৰ্য্যের সৌকর্ম্যার্থ) একটি মাত্র দ্বার-বিশিষ্ট হইবে। তিনি (সুবৰ্ণধ্যক্ষ)। বিশিখা-মধ্যে (সুবর্ণাদির ব্যবসায়ে বা ব্যাপারের জন্য নির্দ্দিষ্ট রথ্যামধ্যে)। শিল্পবান (অর্থাৎ বক্ষ্যমাণ ক্ষেপণাদি শিল্পকাৰ্য্যে নিপুণ), কুলীন ও বিশ্বাসী সৌবণিককে (স্বর্ণকারকে নিজ অধীন করিয়া) স্থাপিত বা নিযুক্ত করিবেন।

সুবৰ্ণ (পাঁচ প্রকার বর্ণযুক্ত হইয়া) পাঁচ প্রকারের হইতে পারে, যথা— (১) জান্স নদ (ইহা জঙ্গফলের রসসমানবর্ণ এবং ইহা মেরুপর্বত হইতে উদ্ভূত জন্স নদীতে উৎপন্ন), (২) শান্তকুম্ভ (ইহা পদ্মের কিঞ্জিন্ধিসমানবৰ্ণ এবং ইহা শতকুম্ভপৰ্ব্বতে উৎপন্ন), (৩) হাটক (ইহা কুরগুকুসুমবর্ণ এবং ইহা হাটকনামক আকর হইতে উৎপন্ন), (৪) বৈণব (ইহা কণিকারী-পুষ্পবর্ণ এবং ইহা বেণুপৰ্ব্বতে উৎপন্ন ও (৫) শৃঙ্গিগুক্তিজ (ইহা মনঃশিলার বর্ণবিশিষ্ট এবং ইহা শুক্ষিগুক্তি বা সুবৰ্ণভূমিতে উৎপন্ন)। এই (পাঁচ প্রকার) সুবৰ্ণই আবার ত্ৰিবিধ হইতে শোরে–যথা-(১) জাতিরূপ (স্বয়ং। শুদ্ধ অর্থাৎ সুবর্ণরূপেই উৎপন্ন), (২) রসবিদ্ধ (রস বা পারাদযোগে কাঞ্চনীকৃত) ও (৩) আকারোদগত (অশুদ্ধরূপে খনি হইতে প্ৰাপ্য)।

যে সুবৰ্ণ (পদ্মের) কিঞ্জিস্কিবৰ্ণ, মৃদু (নরম), স্নিগ্ধ (মসৃণ বা অরূক্ষ), অনাদি (নাদ বা শব্দরহিত-“অনুনাদি’-পাঠে “দীর্ঘকালব্যাপী নাদশীল”। এইরূপ ব্যাখ্যা) ও ভাস্বর, তাহাই শ্রেষ্ঠ বা উত্তম সুবর্ণ। যাহা লোহিত-পীতবর্ণ তাহা মধ্যম সুবৰ্ণ। (এবং) যাহা লোহিত্যুবর্ণ তাহা অধম বা নিকৃষ্ট সুবৰ্ণ।

(সুবর্ণশোধনের প্রকার বলা হইতেছে-) শ্রেষ্ঠ সুবর্ণসমূহের মধ্যে যে সুবৰ্ণ পাণ্ডুবর্ণ ও শ্বেতবর্ণ তাহাকে অপ্ৰাপক-সংজ্ঞায় আখ্যাত করা হয় (অর্থাৎ এইরূপ সুবৰ্ণ অপদ্রব্যামিশ্রিত থাকায় নিজ স্বরূপ প্ৰাপ্ত না হওয়া পৰ্য্যন্ত ইহার এই অপ্ৰাপ্তক সংজ্ঞা)। যে অপদ্রব্যের জন্য সেই সুবৰ্ণ অপ্ৰাপ্তক বলিয়া গৃহীত, সেই অপদ্রব্যের চারিগুণ সীস ইহাতে ঢালিয়া (সীসক্ষয় না হওয়া পৰ্য্যন্ত) ইহা শোধন করিতে হইবে। এই (সীসমিশ্রণে) যদি সেই সুবৰ্ণ ভিদ্যমান হয় (ফাটিয়া যায়), তাহা হইলে ইহাকে শুল্ক গোময়দ্বারা অগ্নিতে তাপিত করিতে হইবে। আবার যদি সেই সুবৰ্ণ নিজ রূক্ষতার জন্য ফাটিয়া যায়, তাহা হইলে তৈল ও গোময়ে ইহার নিষেচন করিতে হইবে (অর্থাৎ তদ্দ্বারা ভাবনা দিতে হইবে)।

আকর হইতে উদগত সুবর্ণ যদি সীস মিলাইয়া শুদ্ধ করার সময়ে ফাটিয়া যায়, তাহা হইলে ইহাকে পাকা পত্রে পরিণত করিয়া গণ্ডিকাতে (কাষ্ঠফলকে) রাখিয়া (কাষ্ঠীদ্বারা) কুটিত করিতে হইবে; অথবা, ইহাকে কন্দলী (বল্লিবিশেষ), বজ (শ্ৰীবের) ও কন্দের (পদ্মমূলের) কস্ক বা কাথে নিষেচিত করিতে হইবে (অর্থাৎ তাহাতে ভিন্যমানতা দূর করার জন্য ভিজাইয়। রাখিতে হইবে)।

রূপ্য চারি প্রকার, যথা—(১) তুখোদগত (অর্থাৎ তৃথপৰ্বতে উৎপন্ন-ইহার রঙ যুঁইফুলের মত), (২) গৌডিক (অর্থাৎ গৌড়দেশে উৎপন্ন-ইহার রঙ তগরফুলের মত), (৩) কালুক (অর্থাৎ কম্বপৰ্ব্বতে উৎপন্ন) ও (৪) प्रक्तिव्निक (অর্থাৎ চক্রবাল-নামক আকরে উদ্ধৃত, ইহার ও পূৰ্ববত্তী প্রকারের রূপ্যের রঙ কুন্দপুষ্পের মত)। যে রূপ্য শ্বেত, স্নিগ্ধ ও মৃদু (কোমল), তাহাই শ্রেষ্ঠ রূপ্য। ক্ত তিন গুণের বৈপরীত্যে (অর্থাৎ রূপ্য যদি কাল, রূক্ষ ও খরা হয়, তাহা হইলে) রূপ্য স্ফোটনদোষে দূষিত হয়। সেইরূপ দুষ্ট রূপ্য ইহার চতুর্থ ভাগ সীসদ্বারা শোধিত করিতে হয় যে রূপ্যে। বুদবুদের মত বিন্দু উখিত হয় এবং যাহা স্বচ্ছ, রুচি বা চমকযুক্ত ও দধির বর্ণবিশিষ্ট তাহাও শুদ্ধ রূপ্য।

ষোলমাষপ্রমাণাত্মক, স্বভাবশুদ্ধ, হরিদ্র্যাভঙ্গের বর্ণবিশিষ্ট স্বর্ণদ্বারা নিৰ্ম্মিত সুবৰ্ণ-নামক মুদ্রার নাম শুদ্ধ বৰ্ণক। (এই শুদ্ধ বর্ণক ব্যতীত আরও ষোল প্রকার মিশ্র বর্ণক হইতে পারে, যথা-) এই শুদ্ধ বর্ণকে এক কাকণী (এক মাষের চতুর্থাংশ) পরিমিত তাম্র মিশাইয়া, তাহা হইতে তৎপরিমিত শুদ্ধ স্বৰ্ণ কমাইয়া দিলে এবং ক্রমশ: ষোলকাকণী পৰ্য্যন্ত অর্থাৎ চারিমাষ পৰ্য্যন্ত তাম্র মিশ্রণ ও শুদ্ধস্বর্ণপসারণের কাৰ্য্য চালাইয়া আরও ষোল প্রকার (মিশ্র) বর্ণক প্ৰাপ্ত হওয়া যায় (অর্থাৎ আসল সোনার নাম শুদ্ধ বর্ণক ইহা এক প্রকার; ও খাদের সোনার নাম মিশ্র বর্ণক, ইহা ষোল প্রকার; অতএব, মোটের উপর সপ্তদশ প্রকার বর্ণক হইতে পারে।)।

(বর্ণকের পরীক্ষাকল্পে নিকষপাষাণে কষ্টিপাথরে) প্রথমতঃ (শুদ্ধ) সুবর্ণের নিকষ বা ঘর্ষণ রেখাপাত করিয়া, তাহার পরে তাহাতে বৰ্ণিকার (অর্থাৎ খাদ্যদ্বারা অশুদ্ধ স্বর্ণের) রেখাপাত করিতে হইবে। নিকষপাষাণের অনীচ ও অনুচ্চ স্থানে রেখাপাত যদি সমানরাগ-বিশিষ্ট হয়, তাহা হইলে সুবৰ্ণ সুষ্ঠু নিকষিত হইয়াছে, অর্থাৎ নিকষপাষাণে পরীক্ষা ন্যায্য হইয়াছে, বলিয়া গৃহীত হইবে। আর যদি (স্বর্ণবিক্রেতা) নিকষাপ্রস্তরে গাঢ়ভাবে স্বৰ্ণ ঘষে, কিংবা যদি স্বর্ণক্রেতা তাহাতে অগাঢ়ভাবে (ধীরে) স্বর্ণ ঘষে, অথবা যদি (বিক্রেতা বা তৎপক্ষীয় পরীক্ষক) নিজের নখমধ্যে স্থিত কোন গৈরিকের (পীত ধাতুর) চুৰ্ণ স্বর্ণের রেখাপাতে নিক্ষেপ করে-তাহা হইলে এই তিন প্রকার কাৰ্য্যকে উপাধি বা কপটকাৰ্য্য বলিয়া জানিতে হইবে। (ক্রেতার পক্ষে আরও একপ্রকার উপাধি বা ব্যাজের কথা বলা হইতেছে, যথা-) গোমূত্ৰে ভাবিত জাতি হিঙ্গুলক-নামক পদার্থ, বা পুস্পকাসীস-নামক (পীতবর্ণ) হরিতালবিশেষ দ্বারা লিপ্ত হস্তাগ্র স্পর্শ করিলে সুবৰ্ণ শ্বেতবর্ণ(অর্থাৎ হীনবর্ণ) ধারণ করে।

নিকষপাযাণে (স্বর্ণের) রেখারাগ যদি বহুকোসর যুক্ত, স্নিগ্ধ, মৃদু ও দীপ্তিযুক্ত হয়, তাহা হইলে ইহা শ্রেষ্ঠ নিকষরাগ। মুগের বর্ণবিশিষ্ট কালিঙ্গ (অর্থাৎ কলিঙ্গদেশে উৎপন্ন) পাষাণ ও তাপী-পাষাণ (তাপীনায়ী নদীতে উৎপন্ন পাষাণ) শ্রেষ্ঠ নিকষপাষাণ বলিয়া খ্যাত। সমানরাগ গ্রহণে যোগ্য অর্থাৎ সুবর্ণের ঠিক বর্ণকগ্ৰাহী নিকষপাষাণ, বিক্রয়কারী ও ক্রয়কারী উভয়ের অনুকুল হইয়া থাকে। গুজচৰ্ম্মের মত খরশুল্ক হরিতবর্ণযুক্ত নিকষ (অপকৃষ্ট স্বর্ণেরও) রাগোৎকর্ষ প্রদৰ্শন করে, বলিয়া ইহা স্বর্ণবিক্রেতার অনুকূল হইয়া থাকে। আর যে নিকষপাষাণ দৃঢ়, খরা (খরখরে) ও নানাপ্রকার বর্ণবিশিষ্ট, তাহা (উৎকৃষ্ট স্বর্ণেরও) যথাস্থিত রাগ প্রদৰ্শন করে না বলিয়া, ইহা স্বর্ণক্রেতার পক্ষে অনুকুল হইয়া থাকে।

ছিন্ন স্বর্ণখণ্ড যদি চিকণ (স্নিগ্ধ), (অন্তর ও বাহিরে) সমানবৰ্ণ, মসৃণ, মৃদু ও দীপ্তিশীল হয়, তাহা হইলে সেই ছেদ বা খণ্ড শ্রেষ্ঠ বলিয়া জ্ঞেয়।

(স্বর্ণ-খণ্ড অগ্নিতে) তাপিত করিলে যদি ইহা অন্তরে ও বাহিরে সমানবৰ্ণ থাকে, অথবা (তাপনের পূর্বে ও পরে) (পদ্মের) কিন্ত্রকের বর্ণবিশিষ্ট থাকে, কিংবা কুরগুক পুষ্পের বর্ণযুক্ত থাকে, তবে ইহা শ্ৰেষ্ঠ। বলিয়া পরিজ্ঞাত হইবে।

(সুবর্ণাদি ধাতুর) তুলাপরিচ্ছেদের বিধান পৌতবাধ্যক্ষ (তুলামান-পৌতব) প্রকরণে বলা হইবে। (সেই প্রকরণে উক্ত) উপদেশক্রমে রূপ্য ও সুবর্ণের দান ও গ্রহণ বিধেয় হইবে।

যে ব্যক্তি অনাযুক্ত অর্থাৎ অক্ষশালাতে কোন প্রকার কাজ করে না, সে সেখানে যাইতে পারিবে না। (এই নিষেধসত্ত্বেও) কোন (অনাযুক্ত) ব্যক্তি যদি তদাভিমূখে যায়, তাহা হইলে তাহার সর্বস্ব অপহরণ করিয়া লইতে হইবে। অথবা, যদি আয়ুক্ত (অর্থাৎ অক্ষশালায় কাৰ্য্যকারী) ব্যক্তিও রূপ্য ও স্বর্ণ লইয়া সেখানে যায়, তাহা হইলে (তাহার হস্তস্থিত) রূপ্য ও স্বর্ণ দণ্ডরূপে তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইতে পারে। (অক্ষশালাতে প্রবেশকারী ও সেখান হইতে নিষ্ক্রমণকারী) কাঞ্চনকারু (অর্থাৎ রসাদিবেধ দ্বারা অন্যধাতুর স্বর্ণীকরণশিল্পী), পৃষতকারু (সুবর্ণগুলিকাদি সূক্ষ্মশিল্পকারী) ত্রষ্ট কারু (সুবর্ণাদি নিৰ্ম্মিত পট্বপত্ৰাদির শাণপালিস করার কাৰ্য্যে নিপুণ শিল্পী) ও তপনীয়কারুরা (অগ্নিতাপযোগে নানাজাতীয় ভূষণ নিৰ্ম্মাণকারী শিল্পীরা) এবং যাহারা শ্বায়ক (ভস্ত্ৰান্ধায়ক), পরিচারক ও ধূলিধাবক (অথাৎ ধুলিশোধক) তাহারা সকলে তাহাদের বস্ত্র, হস্ত ও (শরীরের) গুহাস্থান পরীক্ষা করাইয়া (সেখানে) প্রবেশ করিবে ও (সেখান হইতে) বাহিরে যাইবে। (কারুপ্রভৃতি) এই সব লোকদিগের সর্বপ্রকার কৰ্ম্মোপকরণ ও অসমাপ্ত (শিল্প–) দ্রব্যসমূহ সেই স্থানেই (অক্ষশালাতেই) থাকিবে (অর্থাৎ বাহিরে আনিতে দেওয়া হইবে না)। কারুরা কাৰ্য্য করার জন্য প্রয়োজনীয় যে সুবৰ্ণ গ্রহণ করিবে, তাহা ও (তাহ। হইতে প্রস্তুত) শিল্পপদার্থ (সুবর্ণাধ্যক্ষের অধীন) করণ (বা লেখক)-গণের মধ্যে (তৎসমক্ষে) তুলাতে ওজন করিয়া (তাহাদের পুস্তকে ওজন লেখাইয়াঁ), কারুপ্রভৃতিকে (সুবর্ণাধ্যক্ষ) দিবেন। প্রতিদিন সায়ংকালে ও* প্ৰাতঃকালে কৰ্ত্ত (সৌবণিক) ও কারায়িতার (সুবৰ্ণাধ্যক্ষের) মুদ্রাদ্বারা চিহ্নিত করিয়া (ভাণ্ডাগারের করণ) তাহা মজুত রাখিবে (ও সেখান হইতে দিবে)।

(স্বর্ণাদির) কৰ্ম্ম তিন প্রকার হইতে পারে, যথা-(১) ক্ষেপণকৰ্ম্ম, (२) গুণকৰ্ম্ম ও (৩) ক্ষুদ্রককৰ্ম্ম। (তন্মধ্যে) কোন আভুষণে কাচাদি মণির সংযোজনকৰ্ম্মের নাম ক্ষেপণকৰ্ম্ম। (স্বর্ণের) সুত্ৰাদিদ্বারা অলঙ্কারাদি গ্রথনের নাম গুণকৰ্ম্ম। (কটকাঙ্গুলীয়কাদি) ঘনকৰ্ম্ম, রন্ধযুক্ত (ভৃঙ্গারাদিনিৰ্ম্মাণ) সুষিরকর্ম ও গুটিকাদিযুক্ত (পত্রভঙ্গাদিরচনা) পৃষতান্দিযুক্ত কৰ্ম্ম—–এই তিন প্রকার কৰ্ম্মের নাম লক্ষুদ্রককৰ্ম্ম।

স্বৰ্ণে কাচাদি মণি সংযোজন করিবার সময়ে মণির পঞ্চম-তলভাগপৰ্য্যন্ত কাঞ্চন অর্পণ করিতে হইবে এবং ইহার দশম ভাগ কটুমান-নামক (মণির চারিদিকে, মণির দৃঢ় বন্ধনের জন্য) সুবৰ্ণপাট্ট দিতে হইবে। (রত্বের আধারাবন্ধকাৰ্য্যে সৌবণিকের স্বর্ণাদির অপহরণ সম্ভাব্য, তদ্বিষয়ে সুবৰ্ণধ্যক্ষের করণীয় নির্দ্দিষ্ট হইতেছে, যথা-) (সেই কাৰ্য্যে) রূপ্যের প্রয়োজন হইলে তাহাতে ইহার এক চতুর্থাংশ তাম্র মিশাইয়া ততটুকু রূপ্য অপহৃত হইতে পারে এবং (সেই কাৰ্য্যে) স্বর্ণের প্রয়োজন হইলে তাহাতেও ইহার এক চতুর্থাংশ রূপ্য মিশাইয়া ততটুকু স্বর্ণ অপহৃত হইতে পারে-অথচ এই কাৰ্য্যদ্বারা রূপ্য ও স্বর্ণ’ শুদ্ধ বলিয়া সংস্কারপ্রাপ্ত হইতে পারে। এই জন্য সুবৰ্ণধ্যক্ষকে এই প্রকার জুয়াচুরি রক্ষা করিতে হইবে।

আবার পৃষতকাচকৰ্ম্মে অর্থাৎ গুটিকামিশ্রকাচকৰ্ম্মে স্বৰ্ণকে (পাঁচ ভাগ করিয়া ইহার) তিন ভাগ পরিভাণ্ডেরী (অর্থাৎ পদ্মাদি আকার নিৰ্ম্মাণের) জন্য এবং দুই ভাগে বাস্তুকের (অর্থাৎ দ্রব্যের আধারাপীঠ বন্ধের) জন্য প্রযোজ্য হইতে পারে। অথবা, (মণিগুলি স্থূল হইলে) স্বর্ণকে (সাত ভাগ করিয়া ইহার) চারিভাগ বাস্তুকের জন্য এবং তিন ভাগ পরিভাণ্ডের জন্য প্রযোজ্য হইতে পারে।

ত্রষ্ট কৰ্ম্ম অর্থাৎ তাম্ররাজতাদিদ্বারা নিৰ্ম্মিত ঘনপত্ৰাদি কৰ্ম্মসম্বন্ধে বলা হইতেছে, (১) তাম্রনিৰ্ম্মিত ভাণ্ডে সমান (অর্থাৎ তাম্রপলতুল্যপালপরিমিত) সুবর্ণপত্র সংযোজিত করা যাইতে পারে। (২) রূপ্যনিৰ্ম্মিত ভাণ্ড যদি ঘন (অর্থাৎ অঙ্গুলীয়ুকাদিরূপ) হয়, অথবা, ঘনসুষির (স্থালীকলসাদিরূপ ঘন অথচ ফাঁপা) হয়, তাহা হইলে ইহাকে রূপ্যের অৰ্দ্ধপরিমিত সুবর্ণদ্বারা অবলিপ্ত বা শ্লেষিত করা যাইতে পারে। (৩) এবং (সেই রূপ্যভাণ্ডের) এক চতুর্থাংশ সুবৰ্ণ লইয়া ইহা বালুক ও হিঙ্গুলকের রস বা চুর্ণের সহিত মিশাইয়া তন্দ্বারা সেই রূপ্যভাণ্ড বাসিত বা ভাবিত করা যাইতে পারে।

(সম্প্রতি তপনীয় কৰ্ম্ম নিরূপিত হইতেছে।) (পদ্মকিঙ্কন্ধাদির) উত্তমবর্ণবিশিষ্ট ও (স্নিগ্ধদীপ্ত) উত্তম রাগবিশিষ্ট শ্রেষ্ঠ তাপনীয় (অর্থাৎ অলঙ্কারাদি নিৰ্ম্মাণের জন্য ঘটনীয় শুদ্ধ কনক), এবং যে সুবৰ্ণ অশুদ্ধ, তাহা সমপরিমিত সীসদ্বারা শোধিত করিয়া, কিংবা ছোট ছোট পত্র করিয়া গোময়ের অগ্নিতে) ইহা দগ্ধ করিয়া, সিন্ধুদেশের স্মৃত্তিকার সহিত উজ্জ্বলিত করিয়া লইলে তাহাও নীল, পীত, শ্বেত, হরিত ও শুকশিশুর বর্ণযুক্ত (অলঙ্কারাদি নিৰ্ম্মাণের) প্রকৃতি বা কারণ হইতে পারে। এই প্রকার সুবর্ণের সম্বন্ধে তীক্ষ্ম-নামক ধাতুও নীলাদিবণসমূহের প্রকৃতি হইতে পারে, কিন্তু, এই তীক্ষ্ম ময়ূরের গ্রীবার মত আভাবিশিষ্ট, ভঙ্গে শুক্ল ৭ চিমিচিমায়িত (অর্থাৎ অত্যন্ত ভাস্বর) হওয়া চাই। ইহাই তপ্ত করিয়া চুৰ্ণীকৃত হইলে, এক কাকণীপরিমিত সেই চূৰ্ণ স্বৰ্ণে প্রক্ষিপ্ত করিলে সেই স্বর্ণে রাগ বা রঙ বাদ্ধত হইবে (অর্থাৎ এইরূপ তীক্ষু রঞ্জকদ্রব্যে পরিণত হইবে)।

অত্যন্ত শুদ্ধ তার বা রজতও উক্ত নীলাদি বর্ণের প্রকৃতি হইতে পারে, কিন্তু, এই রজত নিম্নবণিত উপায়ে শুদ্ধ করিতে হয়, যথা-প্রথমতঃ, ইহাকে অস্থিতুখে (অর্থাৎ অস্থিচূর্ণ মিশ্ৰিত মৃত্তিকাদ্বারা নিৰ্ম্মিত সৃষিাতে বা পাত্রে) চারি বার, সমান সীসমিশ্ৰিত মৃত্তিকাদ্বারা নিৰ্ম্মিত মূষাতে চায় বার, শুষ্ক তুখে (ভট্টস্বামীর মতে, কটুশর্করানিৰ্ম্মিত মূষাতে) চারি বার, কপালে বা শুদ্ধ মৃত্তিকানিৰ্ম্মিত মূষাতে তিন বার এবং গোময়নিৰ্ম্মিত মূষাতে দুই বার-এইভাবে মূষাতে সপ্তদশ বার আবত্তিত করিয়া সৈন্ধবিকার (অর্থাৎ সিন্ধুদেশের লবণযুক্ত মৃত্তিকার) সহিত উজ্জ্বলিত করিলে, ইহা শুদ্ধ হয়। এই শুদ্ধ তার বা রজিতের এক কাকণী সুবৰ্ণে প্রক্ষিপ্ত হইলে, এক কাকণী পরিমিত সুবৰ্ণ সরাইয়া লইতে পারা যায় এবং এইভাবে দুই মাষ (আট কাকণী) পৰ্য্যন্ত এই রূপ্য সুবৰ্ণে প্রক্ষেপ করা যাইতে পারে। তৎপর। ইহাতে রাগাযোগ (অর্থাৎ পূৰ্বোক্ত তীক্ষ্মকাকণীপ্রক্ষেপরাপ কৰ্ম্ম) বিহিত হইতে পারে। তাহা হইলে স্বৰ্ণ সেই শ্বেত তারসদৃশ প্রভাযুক্ত হইতে পারে।

(৩২ ভাগে বিভক্ত সামান্য স্বর্ণ হইতে) তিন ভাগ সরাইয়া নিয়া তাহাতে সেই তিন ভাগ পরিমিত তপনীয় (যথোক্ত প্রকারে শোধিত) স্বৰ্ণ প্রক্ষিপ্ত হইলোঃ তাহা যদি তথ্য অংশ শ্বেত তার রাজতের সহিত আবত্তিত করা হয়, তাহা হইলে সেই স্বর্ণ শ্বেতলোহিত বর্ণযুক্ত হয় (মতান্ত৯ে, ৩২ ভাগে ৩ ভাগ তপনীয় স্বর্ণের সহিত অবশিষ্ট ২৯ ভাগ শ্বেত তার রূপ্য মিশাইয়া আবৰ্ত্তন করিলে সেই স্বর্ণ শ্বেতলোহিতবর্ণ হয়)। (উপরি উক্ত প্রণালীতে শ্বেত তার রজতস্থানে) যদি দ্বাত্রিংশদভাগিক তাম্র মিশ্রিত করা হয়, তাহা হইলে সেই স্বর্ণ পীতবর্ণ হয়। (মতান্তরে, ব্যাখ্যা পূর্ব্ববৎ হইবে অর্থাৎ ৩ ভাগ তপনীয় স্বর্ণের সহিত অবশিষ্ট ২৯ ভাগ তাম্র মিশাইয়া আবর্তন করিলে সেই স্বর্ণ পীতবর্ণ হয়)।

তপনীয় স্বর্ণকে (সৈন্ধবিকা বা সিন্ধুদেশের লবণযুক্ত মৃত্তিকা দ্বারা) উজ্জ্যালিত করিয়া তাহাতে উক্ত তীক্ষ্ণাদি রাগন্দ্রব্যের ঐ ভাগ (মতান্তরে, রাগত্রিভাগ = শোধিত স্বর্ণ ত্ৰিভাগ, অথবা, তাম্রত্রিভাগ) দিতে হইবে। এইরূপ করিলে স্বর্ণের রাগ বা রঙ, পীত হইবে।

শ্বেত তার রজত দুই ভাগ লইয়া তাহাতে এক ভাগ তপনীয় স্বর্ণ আবত্তিত করিলে, সেই স্বর্ণের রাগ মুদেগর রাগের সমান হয়।

কালায়সের অৰ্দ্ধভাগ (পূর্বোক্ত এক তৃতীয়াংশের অৰ্দ্ধভাগ অর্থাৎ স্বর্ণের ষষ্ঠাংশ)-দ্বারা স্বর্ণ অভ্যাক্ত (অনুলিপ্ত) হইলে সেই স্বর্ণ কৃষ্ণবৰ্ণ হয়। পারদের সহিত দ্রবীকৃত কালায়াসদ্বারা দ্বিগুণ অনুলিপ্ত হইলে স্বর্ণ শুকপক্ষীর পক্ষসদৃশ বর্ণযুক্ত হয়। পূর্বোক্ত নীলপীতাদি বর্ণযুক্ত স্বর্ণের কৰ্ম্মারম্ভে রাগবিশেষবিষয়ে (তারতম্য-নির্ণয়ের জন্য) প্রত্যেকের বর্ণক গ্রহণ করা উচিত হইবে (অর্থাৎ নিকাষ পাষাণে রেখাপাতদ্দ্বারা বিচার করিতে হইবে)।

(রঞ্জনার্থে প্রযোজ্য) তীক্ষ ধাতু ও তাম্রের সংস্কার বা শোধনও (ধাতুশোধন\শাস্ত্র হইতে) জানিতে হইবে। অতএব (অর্থাৎ কারুদের অপহরণাশঙ্কায় সুবৰ্ণরাজতান্দির শুদ্ধিপ্রকার জানা আবশ্যক বলিয়া), হীরক, মণি, মুক্তা, প্রবাল ও রূপের (ধাতুনিৰ্ম্মিত টঙ্কাদি মুদ্রার) সম্বন্ধে (তৎ তাৎ আসার বস্তুর প্রক্ষেপদ্বারা সারা বস্তুর পরিবর্তনাদিরূপ) অপহরণ-প্রকারের জ্ঞানও রাখিতে হইবে এবং রূপ্যময় ও সুবৰ্ণময় ভাণ্ড (অলঙ্কারাদি)-নিৰ্ম্মণবিষয়ে বন্ধ (রচনা) ও প্রমাণও (পরিমাণ) বুঝিতে হইবে।

তপনীয় স্বর্ণদ্বারা নিৰ্ম্মিত আভূষণাদির নিম্নবর্ণিত (চতুৰ্দশ) গুণ থাকা চাই, যথা-ইহা সৰ্পর্বত্র একপ্রকার রাগ বা রঙ-বিশিষ্ট হইবে; (ওজন ও বর্ণাদিবিষয়ে) একটি অন্যটির সমান হইবে; ইহার মধ্যে কোন গুটিকা সংযুক্ত থাকিবে না; ইহা স্থির বা বহু দিবস স্থায়ী হওয়ার যোগ্য হওয়া চাই; ইহা উত্তমরূপে পরিষ্কৃত হইয়া চমকদার হইবে; ইহার ছায়া বা কান্তি বাড়াইবার জন্য যেন অধিক ঘাষিত না হয়; ইহার অবয়ব সমানভাবে বিভক্ত থাকিবে; ধারণে ধারণকারীর পক্ষে ইহা সুখকর হইবে; ইহার নিৰ্ম্মাণ পরিষ্কার ও উচ্চশ্রেণীর মত হইবে; ইহা দীপ্তিযুক্ত হইবে; সংস্থান বা আকারবিষয়ে ইহা মধুর হইবে; ইহা (সর্বদিকে) সমান হওয়া চাই; এবং ইহা মন ও নেত্রসম্বন্ধে অভিরাম বা সুন্দর হইবে।।১-২।।

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষপ্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে অক্ষশালাতে সুবৰ্ণধ্যক্ষ-নামক ত্রয়োদশ অধ্যায় (আদি হইতে ৩৪ অধ্যায়।) সমাপ্ত।

.

চতুর্দশ অধ্যায়
৩২শ প্রকরণ-বিশিখা বা বিপণিতে সৌবর্ণিকের ব্যাপার

সৌবণিক (সুবর্ণাদিনিৰ্ম্মিত শিল্পদ্রব্যের কারবারে নিযুক্ত রাজপুরুষ) পুরবাসী ও জনপদবাসীদিগের রূপ্যশিল্প ও স্বর্ণশিল্প শিল্পশালার স্বর্ণকারগণের দ্বারা তৈয়ারী করাইবেন। আবেশনীর (অর্থাৎ শিল্পনিৰ্ম্মাত কারুকরেরা বা কারিগরেরা) সময় (নিৰ্ম্মাণকাল) ও করণীয়শিল্প (কটককুণ্ডলাদি)-সম্বন্ধে (বেতন বা মজুরী প্রভৃতি বিষয়ে সব কথা) নির্দেশ করিয়া কাজ হাতে নিবে; এবং হাতের কাজের গুরুত্র বা অধিকতা থাকিলে সেই অপদেশে বা ছলে নিৰ্ম্মাতব্য বস্তুর নিৰ্ম্মাণসময়ের নির্দেশ ব্যতিরেকেও কাজ গ্রহণ করিতে পারে।

(কিন্তু, কোন কারিগর) যদি পরিভাষিত সময় অতিক্রম করে, অর্থাৎ সেই সময়ের মধ্যে শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করিয়া না দিতে পারে, তাহা হইলে তাহার বেতন বা মজুরী একচতুর্থাংশ কম হইবে এবং সেই (চতুর্ভাগহীন) বেতনের দ্বিগুণ অর্থও তাঁহাকে দণ্ডরূপে দিতে হইবে (অর্থাৎ যদি মজুরী ১০ টাকা হয় তাহা হইলে তাহার দোষের জন্য মজুরী ৭।।০ টাকা হইবে এবং ১৫ টাকা অতিরিক্ত জরিমানাও তাহাকে দিতে হইবে)। যদি সে কাৰ্য্যের অন্যথা করে। (অর্থাৎ কটকস্থলে কেয়ুর প্রস্তুত করে), তাহা হইলে তাহার বেতন বা মজুরী নষ্ট হইবে এবং বেতনের দ্বিগুণ অর্থও তাহাকে দণ্ডরূপে দিতে হইবে।

কারিগরেরা যেরূপ বর্ণের বা বণিকার ও যেরূপ পরিমাণের নিক্লেপ • বা ঘটনীয় রূপ্য ও সুবর্ণ) গ্রহণ করিবে, ঠিক সেইরূপ বর্ণ ও প্রমাণ •রক্ষা করিয়া শিল্পদ্রব্য (গ্রাহককে) বুঝাইয়া দিবে এবং যাহারা সুবর্ণাদির নিক্ষেপক (অর্থাৎ যে পৌরজনপদের অলঙ্কারাদি প্রস্তুত করিতে দিয়াছে), তাহারা কালান্তর ঘটিলেও (অর্থাৎ গ্রহীতা কারিগরের বিদেশাদিগমন বা অকালমরণাদিজনিত বিলম্ব ঘটিলে) যেমন বর্ণ ও যেমন প্রমাণের সুবর্ণাদি দিয়াছিলেন তথাবিধ সুবর্ণাদি ফিরাইয়া নিবেন (অর্থাৎ স্বর্ণকারকে কিংবা তাহার পুত্ৰাদিকে বেতনহানি বা বেতননাশ ও অতিরিক্ত অর্থদণ্ড ভুগিতে হইবে না), কিন্তু যদি তাহারা নিক্ষেপের ক্ষয় ও শীর্ণত ঘটায়, তাহা হইলে তাহাদের উপর সেই দণ্ড বিহিত হইবে।

আবেশনীর (অর্থাৎ স্বর্ণকারুরা) কিভাবে সুবৰ্ণ (স্বর্ণের কিঞ্জিস্কি বর্ণাদি), পুদগল (স্বর্ণাদিনিমিত আভরণ ভৃঙ্গারাদি দ্রব্যের অবয়ব) ও লক্ষণের (স্বর্ণাদিনিৰ্ম্মিত চিহ্নযুক্ত মুদ্রাদির) প্রয়োগ বা ব্যবহারাদি করিয়া থাকে তৎতৎ সর্ববিষয় (সৌবণিক) জানিয়া রাখিবেন (অর্থাৎ আবেশনীরা যাহাতে ছলাদি করিয়া স্বর্ণাদি অপহরণ না করে তজ্জন্য সৌবণিক সব বিষয় জানিয়া রাখিবেন)।

(অশুদ্ধ) স্বর্ণ ও রজত অগ্নিতে তাপিত করা হইলে ষোল মাষাত্মক সুবর্ণে এক কাকণিকপরিমিত অর্থাৎ মাষ চতুর্থাংশপরিমিত স্বর্ণ ক্ষয় হইতে দিতে হইবে (প্রক্ষেপককে-অৰ্থাৎ তাহাকে এক কাকণিকপরিমিত কম স্বর্ণ নিতে হইবে) { এক কাকণীপরিমিত তীক্ষ ধাতু ও দুই কাকণীপরিমিত রূপ্যধাতু রাগ বা রঙ করার জন্য (ষোলমাষাত্মক সুবর্ণে) প্রক্ষিপ্ত হইতে পারে; এই রাগপ্রক্ষেপের (অর্থাৎ তিন কাকণীপরিমাণের) ষষ্ঠভাগ অর্থাৎ অৰ্দ্ধ কাকণী ক্ষয় ধাৰ্য্য হইতে পারে।

কমপক্ষে প্রত্যেক এক মাষ সুবৰ্ণে যদি কারিগর বর্ণহানি ঘটায়, তাহা হইলে তাহার উপর। প্রথম সাহসদণ্ড বিহিত হইবে, প্রমাণ বা পরিমাণের হানি ঘটাইলে তাহাকে মধ্যম সাহস দণ্ড ভোগ করিতে হইবে; এবং তুলাদণ্ড ও প্রতিমান (ওজনের বাট) বিষয়ে ছল করিলে তাহার উপর উত্তম সাহস দণ্ড বিহিত হইবে। ঘটিত দ্রব্যের পরিবর্তনাদির ছল প্রকাশ পাইলেও তাহাকে উত্তম সাহস দণ্ড ভোগ করিতে হইবে।

যে ব্যক্তি সৌবণিকের অজ্ঞাতসারে (সরকারী বিশিখা হইতে) অন্য স্থানে যাইয়া স্বর্ণাদির প্রয়োগ (অলঙ্কারাদি নিৰ্ম্মাণ) করায়, তাহার উপর ১২ পণ দণ্ড বিহিত হইবে, এবং যে কারু তাহা করিবে, তাহাকে ইহার দ্বিগুণ (অর্থাৎ ২৫। পণ।) দণ্ড দিতে হইবে। এই দণ্ড তখনই প্রযুক্ত হইবে-যদি কারায়িতা ধরা পড়ে (অর্থাৎ তখন সে চোর শঙ্কার কলঙ্ক হইতে নিজেকে খালাস করিতে পারিবে)। যদি সেই কারায়িতা তদ্রুপ শঙ্কা হইতে নিজেকে বাঁচাইতে না পারে, তাহা হইলে সে কণ্টকশোধনকারী প্রদেষ্টার নিকট বিচারার্থ নীত হইবে। এইরূপ অপসার (নিষ্কৃতি)-রহিত কারিগরেরও দুই শত পণ অর্থদণ্ড হইবে, অথবা, তাহার পণনসাধনভূত পঞ্চাঙ্গুলির ছেদন করা হইবে।

(সৌবণিক ও স্বর্ণকারুদিগকে) পৌতবাধ্যক্ষের নিকট হইতে তুলাভাণ্ড ও প্রতিমানভাণ্ড (ওজন করার বাট) ক্রয় করিয়া লইতে হইবে। অন্যথা (অর্থাৎ, স্বয়ং। তাহা নিৰ্ম্মাণ করিলে, কিংবা অন্যত্র ক্রয় করিলে) তাহাদিগের ১২ পণ দণ্ড হইবে।

কারু বা শিল্পীর কৰ্ম্ম ছয় প্রকার হইতে পারে, যথা-(১) ঘন (অঙ্গুলীয়কাদি নিৰ্ম্মান), (২) ঘনম্বাযির (ভৃঙ্গারাদি নিৰ্ম্মাণ), (৩) সংযুহা (স্বর্ণাদি নিৰ্ম্মিত স্কুল পত্ৰাদির যোজন), (৪) অবলোপ্য (লঘু পত্রাদির যোজন), (৫) সংঘাত (কাটিসূত্ৰোদি অলঙ্কার, যাহাতে অল্প অল্প করিয়া অংশগুলি যোজন করিতে হয়) ও (৬) বাসিতক (রসাদিদ্বারা যাহা বাসিত বা ভাবিত করা হয়)।

(উপরি উল্লিখিত কৰ্ম্মষডকে) কারুদিগের পাঁচ প্রকার হরণোপায় লক্ষিত হইতে পারে, যথা-(১) তুলা বিষম, (২) অপসারণ, (৩) বিস্রাবণ, (৪) পেটক ও (৫) পিঙ্ক (পরবত্তী সন্দর্ভসমূহে এগুলির নিরূপণ করা হইয়াছে)।

দুষ্ট তুলা বা তুলাবিষম (অর্থাৎ তোলনে জুয়াচুরি করার উপায়ভূত খারাপ তুলা) আট প্রকার হইতে পারে, যথা-(১) সন্ন্যামিনী (অর্থাৎ যে তুলা মৃদু লোহদ্বারা নিৰ্ম্মিত হওয়ায় যথেচ্ছভাবে যে দিকে সে দিকে বুকান যায়), (২) উৎকৗণিকা (অর্থাৎ যে তুলার ভিতরে ছিদ্রমধ্যে পারদাদির চুর্ণ ভরা থাকে), (৩) ভিন্নমস্তকা (অর্থাৎ যে তুলার মস্তক বা অগ্রভাগ ভিন্ন বা রন্ধ যুক্ত এবং যাহা বাতাভিমুখে ধরিলে বাতদ্দ্বারা ঝুকিয়া পড়িতে পারে), (৪) উপকণ্ঠী (অর্থাৎ যে তুলাতে অনেক গ্রন্থি বিদ্যমান আছে), (৫) কুশিক্য (অর্থাৎ যে তুলার শিক্যা, বা তোল্য বস্তু ঝুলাইবার সুত্র অত্যন্ত খারাপ), (৬) সকটুকক্ষ্যা (অর্থাৎ যে তুলার কক্ষ্যা বা তোল্য বস্তু রাখিবার পাত্র বা বাটি খারাপ), (৭) পারিবেঞ্জী (অর্থাৎ যে তুলা কেবল হেলাদোলা করে বা পরিচলনশীল হয়) ও (৮) অয়ন্ধান্তা (অর্থাৎ যে তুলা অয়স্কান্ত লোহনিৰ্ম্মিত হওয়ায় যে-দিকে স্বর্ণাদি থাকিবে সেদিকেই হেলিত হইবে)।

(অসার দ্রব্য প্রক্ষেপ করিয়া সারদ্রব্য সরাইয়া নেওয়ার কৌশলের নাম অপসারণ। সম্প্রতি অপসারণ বর্ণিত হইতেছে)। দুই ভাগ রূপ্য ও এক ভাগ তাম্র মিলাইয়া আবত্তিত করিলে যে অপদ্রব্য প্রস্তুত হইবে ইহার নাম ত্ৰিপুটক। (অপসারণ চারি প্রকার হইতে পারে, যথা—) (১) যদি আকর হইতে (শুদ্ধভাবে) উদগত স্বৰ্ণে ত্রিপুটক মিশাইয়া তাহা সরাইয়া লওয়া হয়, তাহা হইলে এই প্রকার স্বর্ণপহরণকে ত্ৰিপুটুকাপসারিত আখ্যা দেওয়া হয়। (২) কেবলমাত্র শুদ্ধব বা তাম্র মিশাইয়া শুদ্ধস্বর্ণ অপসারণ করার নাম শুরাপসারিত। (৩) তীক্ষ্মলোহ ও রূপ্য সমানভাবে আবৰ্ত্তিত করিলে যে অপদ্রব্য নিৰ্ম্মিত হয় ইহার নাম বেল্পক-এই বেল্লকপ্রক্ষেপপূর্ব্বক স্বর্ণ অপসারণের নাম বেল্পকাপসারিত। (৪) সমানভাগে স্বর্ণের সহিত তাম্র মিশাইয়া তদারা শুদ্ধস্বর্ণ অপসারণের নাম হেমাপসারিত।

উক্ত প্রকার অপসারণের মাৰ্গ বা পথ নিম্নলিখিত দ্রব্যাদির সাহায্যে অবলম্বিত হইতে পারে, অর্থাৎ স্বর্ণকারেরা এই সব দ্রব্যাদির সাহায্যে স্বর্ণাদি অপহরণ করিয়া গ্রাহককে বলিবে-এইরূপ (অশুদ্ধ) সুবৰ্ণই আকর হইতে উদগত হইয়াছিল। দ্রব্যগুলির নাম, যথা—মূকমূষা (অর্থাৎ যে মূষা বা স্বর্ণাদি গালাইবার পাত্র অন্য কোন লুক্কায়িত ধাতুখণ্ডযুক্ত থাকে), পুতিকিট্ট (লোহমল), করাটাকমূখা (কাকমুখসদৃশ কাতনী বা কাঁচি), নালী (নলা), সন্দংশ (সাঁড়াশী), জোঙ্গনী (লোহিকটিকা বা লোহার চিমটা), সুবচ্চিকা (সোরা প্রভৃতি ক্ষারবিশেষ, যাহা স্বর্ণাদি গালাইবার সময়ে তপ্ত স্বৰ্ণে প্রক্ষিপ্ত হয়) ও লবণ। (আরও একটি অপহরণমার্গ বলা হইতেছে)-অথবা পূর্ব্ব হইতে অগ্নিতে প্রচ্ছন্নভাবে রক্ষিত পিণ্ডবালুক (অর্থাৎ দ্রবীভূত রূপ্য ও স্বর্ণসম্পর্কে পিণ্ডীভূত সূক্ষ্ম বালুক) অপহরণে সাহায্য করিতে পারে—স্বৰ্ণকার এইরূপ ব্যাজ করিতে পারে যে, মূষা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে এবং সে এই বলিয়া অগ্নিতে পূর্ব্ব হইতে স্থিত পিণ্ডবালুকা উঠাইয়া দিবে (অর্থাৎ কৌশলে কতক শুদ্ধস্বর্ণ চুরি করিয়া অবশিষ্ট স্বর্ণে পিণ্ডবালুক মিশাইয়া গ্রাহককে ঠকাইতে পারে)।

(আগে নিৰ্ম্মিত দ্রব্যাংশগুলির) পরে সন্ধান করার সময়ে, অথবা প্রচুর পরিমাণে ঘটিত পত্রগুলির পরীক্ষা করার সময়ে, রজতানিৰ্ম্মিত শিল্পদ্রব্য দ্বারা (স্বর্ণনিৰ্ম্মিত ভাণ্ডের) পরিবর্তন বা বিনিময়ের নাম বিভ্ৰাবণ। অথবা, লৌহের আকরসস্তৃত বালুকাদ্বারা স্বর্ণের আকরসস্তৃত পিণ্ডবালুকার পরিবর্তনও অন্যপ্রকার বিস্রাবণ।

পেটক (অর্থাৎ সংশ্লেষ বা পাত মোড়াই করণ) দুই প্রকার হইতে পারে, যথা-(১) গাঢ় বা দৃঢ় ও (২) অভু্যদ্ধাৰ্য্য অর্থাৎ যাহা উঠাইয়া ফেলা যায়, এবং এই দুই প্রকার পেটকাই (পূর্বোক্ত) সংযুহ, অবলোপ্য ও সংঘাত্য কৰ্ম্মে ব্যবহৃত হইতে পারে। কোন সীসনিৰ্ম্মিত শিল্পদ্রব্য স্বর্ণের পাতদ্দ্বারা অবলিপ্ত (মোড়াই) হইলে যদি ইহা মোমম্বারা (দৃঢ়ভাবে) বদ্ধ করা হয়, তাহা হইলে ইহাকে গাঢ়পেটক বলা হয়। (এই প্রকার বন্ধন অষ্টকাদি বা মোমাদি-দ্বারা সংশ্লিষ্ট না থাকিলে) ইহা কেবল উপরিভাগটা ঢাকিয়া রাখে বলিয়া এইরূপ পেটকের নাম অত্যুদ্ধার্ঘ্য (অর্থাৎ যাহা সহজে উঠাইয়া ফেলা যায়) হয়। অবলোপ্য-কৰ্ম্মে ’কেবল একপাশ্বে সুবর্ণপত্র যোজিত হইতে পারে, অথবা উভয়পার্থেও যোজিত হইতে পারে। (কখনও বা অন্য উপায়ে স্বর্ণ অপহৃত হইতে পারে, যথা,) স্বর্ণপত্রসমূহের মধ্যে তাম্র ও রজতানিৰ্ম্মিত পাতও গাভিত করা যায়। সংঘাত্য কৰ্ম্মে তাম্রনিৰ্ম্মত শিল্পদ্রব্য (একপার্থে) স্বর্ণপত্র দ্বারা আচ্ছাদিত করা যাইতে পারে এবং ইহা খুব প্রমার্জন দ্বারা উজ্জ্বলিত করিয়া ইহাকে শোভন পার্শ্বযুক্ত করিয়া দেখাইতে পারা যায়। সেই তামনিৰ্ম্মিত শিল্পদ্রব্যই স্বর্ণনিৰ্ম্মিত পত্রদ্বারা উভয় পার্থে যোজিত ও প্রমৃষ্টি হইতে পারে। (কেবল স্বর্ণপত্রই যোজিত হয় না), তাম্রাপত্র ও রজতপত্রও (কৃষ্ণায়সাদি-নিৰ্ম্মিত আচ্ছাদ্য দ্রব্যের) আচ্ছাদক হইয়া ইহাকে বর্ণকবিশিষ্ট করিতে পারে।

(পেটকের পরীক্ষা নিরূপিত হইতেছে।) উক্ত উভয় রূপ পেটক (গাঢ়পেটক ও আভু্যদ্ধাৰ্য্য পেটক) অগ্নিতে তাপন ও নিকষ-পাষণে ঘর্ষণ দ্বারা, অথবা, শব্দহীন (ছেদন বা আঘাত) ও তীক্ষনূখ। বস্তুর উল্লেখন বা রেখাপাত দ্বারা বুঝিয়া লইতে হইবে। অভু্যদ্ধাৰ্য্য পেটক বদরফলের আম্র রসে বা লবণজলে নিবেশিত করিয়াও পরীক্ষা করা যাইতে পারে। এই পৰ্য্যন্ত পেটক-নামক হরণোপায় ব্যাখ্যাত হইল।

(এখন পাঁচ প্রকার পিঙ্ক ও ইহার পরীক্ষা নিরূপিত হইতেছে।) কোন ঘন ও সুষিরযুক্ত (অলঙ্কার–) ভাণ্ডে সুবর্ণমুৎ ও সুবর্ণমালুক (উভয়ই কোন ধাতুবিশেষ হইবে) এবং হিঙ্গুলকের কন্ধ অগ্নিতে তাপিত করিয়া প্রক্ষিপ্ত হইলে তাহা সেই ভাণ্ডে লাগিয়া থাকে। যে অলঙ্কার-দ্রব্যের বাস্তুক বা পীঠবন্ধ দৃঢ়, তাহাতে পিণ্ডবালুক মিশ্রিত জতু (লাক্ষা) ও গান্ধারের (সিন্দূরের) পঙ্ক অগ্নিতে তাপিত করিয়া প্রক্ষিপ্ত হইলে তাহা সেই দ্রব্যে লাগিয়া থাকে। উক্ত ঘন-সুষিরযুক্ত ও দৃঢ়বস্তুক দ্রব্যের শোধনোপায় হইবে—ইহাকে অগ্নিতে তোম্পন বা আবশ্যক মত তাড়ন (অর্থাৎ মুত্তিকাদিতে চোট দেওয়া)। পৃষিতমণিবন্ধযুক্ত অলঙ্কার-দ্ৰেব্যে, কঠিন শর্করার সহিত মিশ্রিত লবণ অগ্নিজালাতে তপ্ত করিয়া প্রক্ষিপ্ত হইলে ইহা সেই দ্রব্যে লাগিয়া থাকে। ইহার শুদ্ধির উপায় হইবেইহাকে (বন্দরামরসে) কথিত করা অর্থাৎ তাহাতে ফুটাইয়া সিদ্ধ করা। যে সুবৰ্ণাদিনিৰ্ম্মিত শিল্পদ্রব্যের বাস্তুক (পীঠবন্ধ) দ্বিগুণভাবে অবগাঢ় বন্ধনে বদ্ধ, তাহাতে মোমম্বারা অভ্বধাতুর পটল বা পাত জোড়াই করা যায়। সেই নিকৃষ্ট কাচ (অর্থাৎ অভ্র) যাহাতে লুক্কায়িত আছে সেই আভরণ জলে নিমজ্জিত করিলে, ইহার একদেশ ইহাতে ডুবিবে, (কিন্তু কাচযুক্ত অংশ তাঁহাতে ডুবিবে না।)। (অভ্রস্থলে) যদি অন্য (তাম্রাদি ধাতুর) পটল (অলঙ্কারে) ব্যবহৃত হয়, তাহা হইলে (সেই অলঙ্কার) সুচিদ্বারা ভেদ করিয়া পরীক্ষা করিতে হয়। ঘন-সুষির আভরণসম্বন্ধে মণি (কাচমণি প্রভৃতি), রূপ্য বা (অশুদ্ধ) সুবৰ্ণ যোজিত করিয়া, (শুদ্ধসুবর্ণাদির) পিঙ্ক-নামক হরণোপায় অবলম্বিত হইতে পারে। সেইরূপ পিঙ্কের শোধন করিতে হইলে অগ্নিতে তাপন বা তাড়নই শুদ্ধিজ্ঞানের উপায়। এই পৰ্য্যন্ত পিঙ্ক ব্যাখ্যাত হইল।

এই কারণে, (সৌবণিক) হীরক, মণি, মুক্ত ও প্রবাল-এই সব দ্রব্যের জাতি (উৎপত্তিস্থান), রূপ (আকার), বৰ্ণ (রঙ), প্রমাণ (পরিমাণ বা ওজন), তন্নিৰ্ম্মিত আভরণাদি শিল্পদ্রব্য ও লক্ষণ (চিহ্ন) উপলব্ধি করিবেন।

নিৰ্ম্মিত ভাণ্ডের (আভরণাদি শিল্পদ্রব্যের) পরীক্ষাসময়ে ও পুরাতন (জীর্ণ) ভাণ্ডের প্রতিসংস্কার বা নবীকরণসময়ে চারি প্রকার হরণোপায় (অবলম্বন করিয়া শিল্পীরা সুবর্ণাদি চুরি করিতে পারে), যথা-(১) পরিকুট্টন, (২) অবচ্ছেদন, (৩) উল্লেখন ও (৪) পরিমর্দ্দন। (তন্মধ্যে পূর্বোক্ত) পেটক-পরীক্ষার ছলনা করিয়া, পৃষত (ক্ষুদ্র গুটিকা) গুণ (, সুবর্ণসূত্ৰাদি) বা পিটকা (সুবর্ণাদিনিৰ্ম্মিত বাটী বা বাকস প্রভৃতি) হইতে (অল্প বা অধিক অংশ অপহরণ করার উদ্দেশ্যে যদি স্বর্ণকার ভূমিতে) পাতিত করিয়া ফেলে, তাহা হইলে সেই কাৰ্য্যকে পরিকুট্টন বলা হয়। দ্বিগুণভাবে (বহুপত্রপুটদ্বারা) সংঘটিত শিল্পভাণ্ডে (সুবর্ণদ্বারা অনুলিপ্ত), সীসাপত্র প্রক্ষেপ করিয়া, (যদি স্বর্ণকার) (শুদ্ধ সুবৰ্ণাংশের) অভ্যন্তর অবচ্ছিন্ন করিয়া (অর্থাৎ কাটিয়া), লইয়া যায়, তাহা হইলে সেই কাৰ্য্যকে অবচ্ছেদন বলা হয়। ঘননিৰ্ম্মিত দ্রব্যসমূহ (যদি স্বর্ণকার) তীক্ষ্মায়স বা তীক্ষ শস্ত্রদ্বারা উল্লেখন করে বা চাছিয়া নেয়, তাহা হইলে সেই কাৰ্য্যকে উল্লেখন বলা হয়। (আবার) হরিতাল, মাির্স:শিলা ও হিঙ্গুলকের কোন একটির চুর্ণ দ্বারা মিশ্ৰিত, অথবা, কুরুবিন্দ-নামক (প্রস্তরবিশেষের) চুৰ্ণ দ্বারা মিশ্রিত কোন বস্ত্রখণ্ড সংযোজিত করিয়া (যদি সে) তদ্দ্বারা (কোন সুবর্ণাদিনিৰ্ম্মিত আভূষণ) ঘর্ষণ করে, তাহা হইলে সেই কাৰ্য্যের নাম পরিমর্দ্দন বলা হয়। এই পরিমর্দ্দন দ্বারা সুবৰ্ণ ও রজতানিৰ্ম্মিত ভাণ্ড বা শিল্পদ্রব্যসমূহ ক্ষয় প্ৰাপ্ত হয় (অর্থাৎ ইহাদের পরিমাণ ঘাটিয়া যায়)। অথচ এই সব ভাণ্ডসমূহের অন্য কোন প্রকার ভঙ্গাদি দোষ ঘটে না (সুতরাং, অপহরণ উপলব্ধ হওয়া কঠিন হয়)।

সংযুহু অর্থাৎ দৃঢ়পত্রাঘটিত ভাণ্ডসমূহ (পরিকুটুনে) শান্তিত বা ভগ্ন (অবচ্ছেদনে) খণ্ডিত ও (উল্লেখনে) ঘধিত হইলে, সেই সব দ্রব্য হইতে অপহৃত অংশ, তৎসমানজাতীয় দ্রব্যের অবয়বাদির প্রমাণ দ্বারা, অনুমান করিয়া লাইতে হইবে। অবলোপ্য (তনু পত্রঘটিত) দ্রব্যসমূহের যতখানি অংশ উৎপাটিত করা হইয়াছে, ততখানি অংশ উৎপাটিত করিয়া (স্বর্ণকারদ্বারা অপহৃত সুবর্ণাদির) (মান ও ওজন) অনুমান করিয়া লইতে হইবে। অথবা, যে সমস্ত আভূষণাদি (অপদ্রব্যাদির মিশ্বণহেতু) বিরূপ বা রূপান্তরিত হয়, সেগুলির পরীক্ষাও উক্ত রীতিতে করিতে হইবে। এবং সে-গুলিকে বহুবার অগ্নিভে তাপিত করিতে হইবে এবং সে-গুলিকে জলে প্রক্ষেপ করিয়া (চুক্ৰিক বা কুচিদ্বারা) কুট্টন করিতে হইবে (এই প্রকার শোধনদ্বারাই আভুষণগুলির বিরূপতা বা বৈবৰ্ণ দূরীকৃত হইবে)।

(আরও হরণোপায় বলা হইতেছে।) স্বর্ণকারাদিদ্বারা নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বিত হইতেছে দৰ্শন করিলে, (সৌবণিক) সেগুলিকে কাচ বা হরণোপায় বলিয়া জানিবেন, যথা—অবক্ষেপ (অর্থাৎ হস্তলাঘবদ্বারা সারদ্রব্য অপহরণ করিয়া অপদ্রব্য-প্রক্ষেপ), প্রতিমাণ (অর্থাৎ মূল দ্রব্য বদলাইয়া অন্য দ্রব্য রাখা), অগ্নি (অর্থাৎ অগ্নিতে সুবর্ণাদির প্রবেশন), গণ্ডিকা (যে কাষ্ঠাধারে সুবর্ণাদি আহত করা হয়), ভাণ্ডিকা (স্বর্ণন্দ্রব্যের নিষেকাৰ্থ পাত্র বিশেষ), অধিকরণী (লৌহপাত্রবিশেষ যাহাতে স্বর্ণাদি গালাইতে হয়), পিন্থী (ময়ূরবাহ), সূত্র (সুবর্ণ ওজন করার তুলার তন্তু), চেল্প (বস্ত্র), বোল্ল (কথাব্যাজে দ্রষ্টার চিত্তব্যাক্ষেপ জন্মান), শিরঃ (মস্তককগুয়ন), উৎসঙ্গ (অঙ্ক বা অন্যান্য গুহা প্রদেশ), মক্ষিকা (মক্ষিক নিবারণচ্ছলে ধাতুদ্রব্য নিজ অঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা), নিজ শরীরের দিকে দৃষ্টি, দৃতি (ভস্ত্র), জলের শরাব (পাত্রবিশেষ), ও অগ্নিস্থ। বস্তু (অর্থাৎ অগ্নিতে প্রক্ষিপ্ত অপদ্রব্যাদি)। (স্বর্ণকার উক্ত উপায় ও বস্তুগুলির দিকে অধিকতর মনোনিবেশ করিলে সৌবণিক বুঝিবেন যে, সে সুবর্ণাদি হরণের চেষ্টা করিতেছে)।

রজতানিৰ্ম্মিত দ্রব্যসমূহের পাঁচ প্রকার দোষচিহ্ন লক্ষিত হইতে পারে, যথা— ইহা বিস্ত্র (অৰ্থাৎ সীসাদি-সংসর্গে দুৰ্গন্ধযুক্ত), মলিন, কঠোর বা খরস্পর্শ কঠিন (কোমলতা-বিহীন), ও বিবৰ্ণ (অপদ্রব্যমিশ্রণে প্রভাহীন) হইতে পারে।

এই প্রকারে (সৌবণিক) নূতন, জীর্ণ (পুরাতন) ও অপদ্রব্যমিশ্রণে (বিরূপ ভাণ্ডকসমূহ (শিল্পদ্রব্যসমূহ) পরীক্ষা করিবেন এবং (এই সমস্ত দ্রব্যের দোষোৎপাদক স্বর্ণকারাদির উপর) যথানির্দ্দিষ্ট অত্যয় বা অর্থদণ্ডাদি প্রয়োগ করিবেন। ॥১৷৷ কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষপ্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে বিশিখাতে সৌবণিকের ব্যাপার-নামক চতুর্দশ অধ্যায় (আদি হইতে ৩৫ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

পঞ্চদশ অধ্যায়
৩৩শ প্রকরণ-কোষ্ঠাগারাধ্যক্ষ

(কোষ্ঠ বা উদরের পোষণার্থ প্রয়োজনীয় ধান্যাদি পদার্থের নামও কোষ্ঠশব্দদ্বারাই অভিধেয়। সুতরাং সমস্ত খাদ্যদ্রব্য সংগৃহীত হইয়া যে স্থানে রক্ষিত হয় তাহার নাম কোষ্ঠাগার এবং রাজকীয় কোষ্ঠাগারের জন্য যে প্রধান অধিকারী নিযুক্ত থাকেন তাহার নাম কোঠাগারাধ্যক্ষ।) কোষ্ঠাগারাধ্যক্ষ সীতা, রাষ্ট্র, ক্রয়িম, পরিবর্তক, প্ৰামিত্যক, আপমিত্যক, সিংহনিকা, অন্যজাত, ব্যয়প্রত্যায় ও উপস্থান-এই দশ বিষয়ের পূর্ণ উপলব্ধি করিবেন।

(যথাক্রমে উক্ত দশটি বিষয়ই বর্ণিত হইতেছে।) (পরবর্তী সীতাধ্যক্ষপ্রকারণে অভিহিত প্রধান অধিকারী) সীতাধ্যক্ষদ্বারা (কোষ্ঠাগারে) প্রবেশিত সর্বপ্রকার (ধান্যাদি) শস্যজাতের নাম সীতা (অর্থাৎ কৃষিজাত সর্বপ্রকার শস্য কোষ্ঠাগারাধ্যক্ষ ঠিকমত ও অনুনভাবে গ্রহণ করিবেন।)

(কোষ্ঠাগারাধ্যক্ষের রাষ্ট্রোপলব্ধিদ্বারা নিম্নলিখিত পিণ্ডকরাদির যথাযথভাবে সংগ্রহাদি বুঝিতে হইবে।) রাষ্ট্র-শব্দদ্বারা এই দশ প্রকার বস্তু বুঝা যায়, যথা-(১) পিণ্ডকর (অর্থাৎ তৎ তৎ গ্রামাদি হইতে নিয়ত প্ৰাপ্য রাজকীয় করারূপ বস্তুজাত), (২) ষড ভাগ (অর্থাৎ ষষ্ঠভাগ, চতুর্থভাগ ইত্যাদিরূপ তৎ তৎ দেশসিদ্ধ রাজভাগ), (৩) সেনা ভক্ত। (অর্থাৎ সেনার সন্নাহন ও অভিযান-সময়ে প্রজাবৰ্গদ্বারা যথাদেশপ্রসিদ্ধ তৈল-তণ্ডুল-লবণাদি রাজদেয় বস্তুজাত; মতান্তরে, সেনাদিগের প্রাপ্য তৎ তৎ বস্তুজাত হইতে রাজার্থে তাহদিগের দ্বারা দেয় অংশ), (৪) বলি (ষডভাগাতিরিক্ত যথাদেশপ্রসিদ্ধ। দশবন্ধাদি অংশ, যাহার অন্য নাম “ভিক্ষাভক্ত’), (৫) কর (সামন্ত্যাদি হইতে রাজার প্ৰাপ্য করা; মতান্তরে, জল ও বৃক্ষাদি-সম্বন্ধ রাজদেয় অংশ), (৬) উৎসঙ্গ (রাজার পুত্রজন্মাদি উৎসবে প্রজাদিগের বিশেষ অর্থাদি দান), (৭) (উচিত করা হইতে অধিক করসংগ্রহ-যাহা যোগবৃত্তাখ্য অধিকরণে কোশাভিসংহরণ-নামক প্রকরণে উক্ত হইবে), (৮) পারিাহীণিক (চতুষ্পদ জন্তুদ্বারা বিনাশিত শস্যের জন্য বিহিত দণ্ড হইতে লব্ধ ধন), (৯) ঔপায়নিক (রাজাকে উপঢৌকনরূপে প্রদত্ত ধন) ও (১০) কৌষ্ঠেয়ক (রাজার দ্বারা স্থাপিত তড়াগ ও আরামাদিতে উৎপন্ন দ্রব্যজাত)।

ক্রয়িম তিন প্রকার, যথা-(১) ধান্যমূল্য (ধান্যাদি বিক্রয় করিয়া মূল্যরূপে প্ৰাপ্ত হিরণ্যাদি ধন), (২) কোশনিহঁর (রাজকোষ হইতে গৃহীত হিরণ্যাদিদ্বারা ক্রীত ধান্যাদি) ও (৩) প্রয়োগপ্রত্যাদান (সুদের জন্য প্রযুক্ত রাজকীয় ধান্যাদি সুদসহ উজ্জ্বল করিয়া পুনরায় কোষ্ঠাগারে প্রবেশন)।

একপ্রকার শস্যের বিনিময়ে নৃনাধিক অন্যপ্রকার শস্য গ্রহণ করার নাম পরিবর্তক।

(মিত্ৰাদি) অন্য ব্যক্তি হইতে (পুনঃ শোধের ইচ্ছা না করিয়া শস্য যাচনার নাম প্ৰামিত্যক।

পরে সুদসহ শোধ দেওয়া হইবে এইরূপ সৰ্ত্তে অন্য হইতে শস্য যাচনের নাম আপমিত্যক।

যাহারা উপজীবিকার জন্য কুটুককৰ্ম্ম (কুট্টন বা শস্যাদির অবঘাতকাৰ্য্য); রোচককৰ্ম্ম (মুদগমাষাদির বিদালনকাৰ্য্য), সত্ত কৰ্ম্ম (ঘরট্টাদির সাহায্যে ষব্যাদির চূৰ্ণীকরণকাৰ্য্য), শুক্তকৰ্ম্ম (ইক্ষুপ্রভৃতির রস হইতে আসবাদি-সন্ধানকাৰ্য্য) ও পিষ্টকৰ্ম্ম।(আটা প্রভৃতি তৈয়ার করার জন্য গমাদির পোষণকাৰ্য্য) করে, তাহাদিগের নিকট হইতে প্ৰাপ্য রাজদেয়; এবং যে সব চক্ৰী বা তৈলিকেরা (যজ্ঞিয়?) উরভ্র বা মেষ বলি দিয়া তাহা হইতে তৈল নিপীড়ন করিয়া জীবিকা অর্জন করে, তাহাদিগের নিকট হইতে প্ৰাপ্য রাজদেয়; এবং যাহারা ইক্ষুর রস হইতে ক্ষার দ্রব্য (ফাণিত-গুড়-খণ্ডাদি) প্রস্তুত করিয়া জীবিকা নির্বাহ করে, তাহাদিগের নিকট প্ৰাপ্য রাজদেয় অংশের নাম সিংহনিকা (এই স্থলে “সংহনিকা-পাঠ অধিকতর সমীচীন বলিয়া প্রতিভাত হয়)। যে দ্রব্য অন্য লোকে হারাইয়াছে কিংবা ভুলিয়া গিয়াছে তাহা কোষ্ঠাগারে আনীত হইলে ইহাকে অত্যজাতন্তু আয় বলিয়া আখ্যাত করা যায়।

ব্যয়প্রত্যায় (অর্থাৎ কোন কাৰ্য্যের জন্য নিৰ্দ্ধারিত ব্যয় হইতে যদি কিছু অর্থ অবশিষ্ট থাকে, সেই আয়ের নামব্যয়প্রত্যায়) তিন প্রকার হইতে পারে, যথা(১) বিক্ষেপশেষ (অর্থাৎ কোন কাৰ্য্যসাধনের জন্য প্রেরিত সেনাদির প্রয়োজনে ব্যয়িত ধন হইতে অবশিষ্ট ধন), (২) ব্যাধিতশেষ (অর্থাৎ ভৈষজ্যশালার খরচ হইতে অবশিষ্ট ধনী) ও (৩) অন্তরারম্ভশেষ (অর্থাৎ দুর্গপ্ৰাসাদাদির পরিকর্মনিমিত্ত নিৰ্গত ধন হইতে লঘুব্যয়জনিত অবশিষ্ট ধন)।

উপস্থান ছয় প্রকার হইতে পারে, যথা-(১) ভিন্ন তুলা ও মানের (বাটের) ব্যবহার হইতে প্ৰাপ্ত দ্রব্য (অর্থাৎ অধিক তুলা ও মানদ্বারা গ্রহণ করিয়া হীন তুলা ও মানদ্বারা প্রদান করিলে যে লাভ হয় তাহ), (২) হস্তপুরা(অর্থাৎ তোলনের পরও হস্ত পূরণ করিয়া ধান্যাদি গ্রহণ), (৩) উৎকর (ধান্যাদির রাশি হইতে অথবা মান ও গণনার বস্তু হইতে অধিক পরিমাণে বস্তু উঠাইয়া লওয়া), (৪) ব্যাজী (দ্রব্যের ষোড়শভাগাদি যাহা পুনর্বার মানের নূ্যনত পরিহারের জন্য অধিক লওয়া হয়—ফাও লওয়া), (৫) পযু্যসিতা (গত বৎসরের অবশিষ্টাংশ) ও (৬) প্ৰাজ্জিত (স্বনৈপুণ্যে উৎপাদিত পুস্পতাম্বুলাদি দ্রব্য)–এই পৰ্য্যন্ত উদ্দিষ্ট সীতাদি পদার্থের বিবরণ প্রদত্ত হইল।

সম্প্রতি ধান্য, স্নেহ, ক্ষার ও লবণ–এই পদার্থগুলির নিরূপণ করা হইবে।

ধন্যবর্গের বিবরণ সীতাধ্যক্ষ প্রকরণে বলা হইবে। ঘৃত, তৈল, বসা ও মজা-এই চারি প্রকার দ্রব্য স্নেহ-পৰ্য্যায়ভুক্ত। ইক্ষু হইতে উৎপন্ন ফ্রাণিত (রাব), ‘গুড়, মৎস্যণ্ডিকা (গুড় ও খণ্ডশর্করার মধ্যমাবস্থার চিনির নাম) ও খণ্ডশর্করা-এইগুলি ক্ষারবর্গের অন্তৰ্গত।

সৈন্ধব, সামূদ্র (সমূদ্রের জল হইতে প্রস্তুত লবণ), বিড়, যবক্ষার, সৌবর্চ্চল (সুবর্চলাদেশে উদ্ভূত লবণ-বিশেষ; অথবা, সোরাজাতীয় লবণ বিশেষ) ও উদ্ভেদজ (উষারমৃত্তিক হইতে লব্ধ লবণ)-এইগুলি লবণবগের অন্তর্গত।

মধু দুই প্রকার—(১) ক্ষেীন্দ্র (মক্ষিকাদ্বারা সঞ্চিত মধু) ও মাদ্বীকি (অর্থাৎ মুদ্বীীক বা দ্রাক্ষার রস হইতে প্ৰাপ্ত মধু)।

ইক্ষুরস, গুড়, মধু, ফাণিত, জাম্বব (জাগফলের রস) ও পনস (কঁঠালের রস)-এই ছয় প্রকার রসের যে কোন একটিকে মেষশৃঙ্গী (ওষধিবিশেষ) ও পিপ্পলীর কাঞ্জের সহিত মিশ্ৰিত করিয়া এবং সেইটিকে চিদ্ভিট (বল্লীফাল-বিশেষ), উৰ্ব্বারুক (শশারূন্যায়। ফলবিশেখ), ইক্ষুকাণ্ড, আম্রফল ও আমলকের সারের সহিত মিশাইয়া, কিংবা এগুলির কোনটির সহিত না মিশাইয়া শুদ্ধভাবেই রাখিয়া–যে রস একমাস, ছয়মাস বা একবৎসরকাল পৰ্য্যন্ত সেই অবস্থায় রাখিয়া প্রস্তুত করা হয় (এই রস যথাক্রমে অধম, মধ্যম ও উত্তম শ্রেণীর রস বলিয়া খ্যাত হইবে)-তাহা শুক্তিবর্গের অন্তর্গত।

বৃক্ষাম্ল (তেঁতুল), করমর্দ্দ (করৌন্দা, পাণি আমলা), আম্র, বিদল (দাড়িম), আমলক, মাতুলুঙ্গা (ছোলঙ্গ-নামক লেবুবিশেষ), কোল (ছোট বন্দর), বদর (স্থল বদর) সৌবীরক (বদর-বিশেষ), পরূযক (পরূষফল, একপ্রকার অন্ন ফল) প্রভৃতি ফলাম্লবর্গের অন্তৰ্গত।

দধি ও ধান্যাম্ল (কাঞ্চিক) প্রভৃতি (তক্রাদিও ইহার অন্তভুক্ত হইতে পারে) দ্রব্যাম্লবর্গের অন্তৰ্গত।

পিপ্পলী; মরিচ, শৃঙ্গিবের (আদ্রিক বা আদা), অজাজী (জীরা), কিরাততিক্ত (ভূনিম্ব বা চিরাতা), গৌর সর্বপ (সাদা সর্ষপ), কুন্তুম্বরু (ধন্যাক বা ধনিয়া), চোরক (পৃক্কা বা পিড়িঙ্গ), দমনক (দোনা), মরুবক (পিণ্ডীতক বা ময়না কণ্টকিবৃক্ষবিশেষ), শিগ্র কাণ্ড (শজিনা) প্রভৃতি কটুকিবর্গের অন্তর্গত।

শুক মৎস্য, শুষ্ক মাংস, কন্দ (সূরণাদি), মূল (শতমূলী প্রভৃতি), ফল (বাৰ্ত্তাকু প্রভৃতি) ও শাকাদি শাকবর্গের অন্তর্গত।

জনপদবাসীদিগের (দুভিক্ষাদি) আপৎসময়ের জন্য (স্নেহাদি বর্গস্থিত) দ্রব্যসমূহ হইতে অৰ্দ্ধ পরিমাণ রক্ষা করিতে হইবে। (অবশিষ্ট) অৰ্দ্ধ পরিমাণ (রাজমহানসাদিতে) ব্যবহারের জন্য খরচ হইতে পারে। নুতন ফসল উৎপন্ন হইলে পুরাতন দ্রব্যস্থলে নূতন দ্রব্য রাখিতে হইবে (অর্থাৎ পুরাতন দ্রব্য বিনিয়োগে বা ব্যবহারে আনিয়া নূতন দ্রব্যদ্বারা তৎস্থান পূরণ করিতে হইবে)।

ধান্যসমূহ ক্ষুন্ন (অবঘাত প্ৰাপ্ত), ঘুষ্টি (ফলীকৃত), পিষ্ট ও ভৃষ্ট (ভাজ) হইলে এবং আর্দ্র, শুষ্ক ও সিদ্ধ হইলে, ইহাদের ক্ষয় ও বৃদ্ধির ইয়ত্ত (কোষ্ঠাগারাধ্যক্ষ) স্বয়ং প্রত্যক্ষ করিবেন।

কোদ্রাব ও ব্রীহিধান্যের সারা অৰ্দ্ধ-পরিমাণ থাকে। (অর্থাৎ অবশিষ্ট অৰ্দ্ধ ক্ষয় হয়)। শালিধান্যের সার টু অংশ কম অৰ্দ্ধ-পরিমাণ থাকে (মতান্তরে, “অষ্টভাগোনঃ”-পাঠটি “অৰ্দ্ধভাগোনঃ”-পাঠরূপেও ধূত হয়)। বরক-ধান্যের সার ঐ অংশ কম অদ্ধ-পরিমাণ পাওয়া যায়) প্ৰিয়ঙ্গুর (কন্নুর) সার অদ্ধৰ্শ পরিমাণ থাকে, অথবা এই আদ্ধে ই অংশ বৃদ্ধিও হয়। উদারক-ধান্যের প্রসারপরিমাণ সমানই থাকে। যাব ও গোধূমক্ষুেন্ন করা হইলেও ইহন্তর সার সমান পরিমাণেই পাওয়া যায়।

তিল, যব, মুদগ ও মাষ ঘৃষ্ট হইলেও সারসম্বন্ধে সমান পরিমাণই পাওয়া যায়। গোধূম ও সক্তিসমূহের সারা ১/৫ অংশ বৃদ্ধি পায়। খৃষ্ট কলায়ের চমসী বা শ্লষ্মাচুৰ্ণ ১/৮ অংশ কম পাওয়া যায়। মৃদংগ (মুগ) ও মাষের চমসী সার ই অংশ কম হয়। শৈশ্বসমূহের (শৈমজাতীয় দ্রব্যের) চমসী-সার অদ্ধ পরিমাণ পাওয়া যায়। মসুরের চমসী-সারা ঐ অংশ কম হয়।

কাঁচা (গোধূমাদি) ও কুন্মাষ (মুদ্রগমাষাদি) পিষ্ট হইলে পরিমাণে ১.৫ গুণ হয়। যাবাক (অর্থাৎ বিতুষীকৃত যাব।) পিষ্ট হইলে পরিমাণে দ্বিগুণ হয়। পুলাক (অর্থাৎ অন্ধ-সিদ্ধ চাউল) ও পিষ্ট (অর্থাৎ গোধূমাদির চুর্ণ) সিদ্ধ হইলে (অর্থাৎ রান্নায় পক্ক হইলে) দ্বিগুণ পরিমিত হয়।

কোদ্রব, বরক, উদারক ও প্রিয়ঙ্গুর তণ্ডুল হইতে অন্ন রাধা হইলে ইহার | পরিমাণ তিনগুণ হয়; ব্রীহির অন্ন চতুগুণ ও শালিধান্যের অন্ন পাঁচগুণ হয়। (ধান্য কাটিবার সময়ে) তিমিত বা আদ্রীকৃত ব্রীহি প্রভৃতির অন্ন দ্বিগুণ হয় এবং অঙ্কুরিত ব্রীহি প্রভৃতির অন্ন অদ্ধাধিক দ্বিগুণ অর্থাৎ আড়াই-গুণ পরিমিত হয়।

ভৃষ্ট (বা ভাজা) হইলে (ব্রীহি প্রভৃতির) ১/৫ অংশ বৃদ্ধি পায়। কলায় ভৃষ্ট হইলে পরিমাণে দ্বিগুণ হয়। লাজ (খই) ও যাব তৃষ্ট হইলে পরিমাণে দ্বিগুণ হয়।

অতসীবীজ হইতে ১/৪ অংশ তৈল নিৰ্গত হয়। নিম্ব, কুশ, আম, কপিত্থ প্রভৃতির বীজ হইতে ১/৫ অংশ তৈল পাওয়া যায়। তিল, কুসুম্ভ, মধুক ও ইঙ্গুদী হইতে তৈল ১/৪ অংশ পরিমাণে পাওয়া যায়।

পাঁচ পল কার্পাস ও ক্ষৌম হইতে এক পল-পরিমিত সূত্র পাওয়া যায়।

পাঁচ দ্রোণ বা বিশ আঢ়ক শালিধান্য হইতে (আবহননাদি দ্বারা) নিম্পাদিত দ্বাদশ আঢ়ক তণ্ডুলের অন্ন কলভ বা বালহস্তীর খাদ্যার্থ উপযোগী অন্ন হইবে। ব্যাল বা দুষ্ট গজের পক্ষে (পূর্বোক্ত বিশ আঢ়ক হইতে) নিম্পাদিত একাদশ আঢ়ক তণ্ডুলের অন্নই উপযোগী অন্ন হইবে। পূর্বোক্তরূপে নিম্পাদিত দশ আঢ়ক তণ্ডুলের অন্ন ঔপবাহ্য বা রাজবাহা হস্তীর উপযোগী অন্ন হইবে। সেইরূপ বিশ্ব আঢ়ক শালিধান্য হইতে নিম্পাদিত নয়। আঢ়ক তণ্ডুলের অন্ন সান্নাহ বা যুদ্ধকাৰ্য্যে ব্যাপৃত হস্তীর পক্ষে উপযোগী অন্ন হইবে। তদ্রুপভাবে নিম্পাদিত আট আঢ়ক তণ্ডুলের অন্ন পদাতিক সৈন্যের উপযোগী অন্ন হইবে। পূর্বোক্ত রীতিতে নিম্পাদিত সাত আঢ়ক তণ্ডুলের অন্ন মূখ্য ভাটপ্রধানদিগের ভোজনোপযোগী অন্ন হইবে। দেবী বা রাজপত্নী ও কুমার বা রাজপুত্রদিগের জন্য উক্ত প্রকারে নিম্পাদিত ছয় আঢ়ক তণ্ডুলের অন্নই উপযোগী অন্ন হইবে এবং রাজার জন্য সেইভাবে নিম্পাদিত পাঁচ আঢ়ক তণ্ডুলের অন্নই ভোজনোপযোগী অন্ন হইবে। অথবা, রাজার নিজ ভোজনের জন্য বিশ আঢ়ক বা, অশীতি প্রস্থ শালিধান্য হইতে নিম্পাদিত এক প্রন্থ অখণ্ডাবয়ব ও পরিশুদ্ধ তণ্ডুলের অন্নই উপযোগী হইবে।

এক প্রস্থের চতুর্থাংশ সুপ (ডাল প্রভৃতি রসবস্তু), সূপের ১/১৬ অংশ লবণ, সূপের ১/৪ অংশ ঘৃত বা তৈল-ইহাই একজন মধ্যবিত্ত আৰ্য্য পুরুষের ভোজন নির্দ্দিষ্ট হইতে পারে। এক প্রস্থের ষষ্ঠাংশ সূপ ও সূপের ঐ অংশ স্নেহ বা তৈলাদি (লবণের মাত্রা সমানই থাকিবে)-ইহাই একজন অমধ্যবিত্ত আৰ্য্য পুরুষের ভোজনাংশ বলিয়া গৃহীত (অর্থাৎ রাজপরিচারকের এইরূপ বরাদে ভাতা পাইবে)। উক্ত ভোজনাংশের ১/৪ অংশ কম খাদ্য আৰ্য্য স্ত্রীলোকের ভোজনোপযোগী হইবে এবং উক্ত ভোজনাংশের অৰ্দ্ধ পরিমাণ বালকদিগের ভোজনোপযোগী হইবে।

বিশ পল-পরিমিত মাংস (পাকসংস্কারে) গৃহীত হইলে, তাহাতে অৰ্দ্ধ কুড়ুব (অর্থাৎ এক প্রস্থের ১/৮ অংশ) স্নেহদ্রব্য (অর্থাৎ তৈলঘৃতাদি), ১ পল লবণ, (অথবা, লবণের অভাবে) ১ পল (যবক্ষারাদি) ক্ষারযোগ, ২ ধরণ (পৌতবাধ্যক্ষ-প্রকরণে উক্ত পরিমাণ) কটকযোগ (অর্থাৎ পিপ্পলী প্রভৃতি মসলা) এবং ১/২ প্রস্থ (অর্থাৎ ২ কুডুব) দধি দিতে হইবে।

ইহা দ্বারা পরিমাণে অধিক মাংস পাকের জন্য স্নেহাদি লইলে, উক্ত হারেই সে সব ব্যবহার করিতে হইবে-ইহা বুঝিয়া লইতে পারা যায়। শাক পাক করিতে হইলে উক্ত মাংস-সম্বন্ধী যোগই ১.৫ গুণ দিতে হইবে। শুষ্ক শাক (ও মাংস) পাক করিতে হইলেও উক্ত মাংস-পাকের স্নেহাদিযোগ দ্বিগুণ করিতে হইবে।

হস্তী ও অশ্বের বিধা বা প্রাত্যহিক ভোজ্য বস্তুর পরিমাণের বিষয় হস্ত্যধ্যক্ষে ও অশ্বাধ্যক্ষ-প্রকারণে উক্ত হইবে। বলীবদের বিধার পরিমাণ হইবে ১ দ্ৰোণ মাষ ও (১ দ্ৰোণ-পরিমিত) যাবপুলক অর্থাৎ অৰ্দ্ধসিদ্ধ যাব এবং অবশিষ্ট দ্রুব্য অশ্বের সমান দিতে হইবে। তবে বলীবৰ্দের বিধা-সম্বন্ধে অশ্বের ৩বিধা হইতে এই বিশেষ যে, ইহাদিগের জন্য শুষ্ক তিলের কল্ক ১ তুলা বা ১০০ পল, অথবা ১০ আঢ়ক কণাকুণ্ডক (অর্থাৎ ভাঙ্গা তণ্ডুলের কণার সহিত মিশ্রিত ভূসি) দিতে হইবে।

বলীবর্দ্দের জন্য নির্দ্দিষ্ট বিধার দ্বিগুণ বিধা মহিষ ও উষ্ট্রের জন্য ব্যবস্থা করিতে হইবে। খর বা গৰ্দভ, পৃষত (বিন্দুচিত্র মৃগ) ও রোহিত হরিণের জন্য (মাষ বা যাবপুলাকের) অৰ্দ্ধদ্রোণ বা ২ আঢ়ক বিধারূপে দিতে হইবে। এণ ও কুরঙ্গ হরিণের জন্য ১ আঢ়ক উক্ত বিধাই দিতে হইবে। অজ বা ছাগ, এড়ক বা মেষ ও বরাহের জন্য ১/২ আঢ়ক উক্ত বিধা দিতে হইবে; অথবা, ইহাদিগের জন্য কণাকুণ্ডক (ভাঙ্গা তণ্ডুলের সহিত মিশ্রিত ভুসি) উক্ত ১/২ আঢ়কের দ্বিগুণ (অর্থাৎ ১ আঢকের পরিমাণে) দিতে হইবে। কুকুরের জন্য ১ প্রস্থ-পরিমিত ভোজন দিতে হইবে। হংস, ক্ৰৌঞ্চ ও ময়ূরের জন্য ই প্রস্থ অন্ন নির্দ্দিষ্ট। উক্ত জীবজন্তুর অতিরিক্ত মৃগ, পশু, পক্ষী ও ব্যালাদিগের একদিনের ভোজন পরীক্ষা করিয়া ইহাদিগের বিধা অনুমান করিয়া লইয়া নিৰ্দেশ করিতে হইবে।

(পাকাদি কৰ্ম্ম হইতে নিম্পন্ন) অঙ্গার ও তৃব লোহকৰ্ম্মান্ত (লৌহকারের কারখানা) ও (গৃহাদির) ভিত্তি লেপন কাৰ্য্যের জন্য দিতে হইবে। দাস, কৰ্ম্মকর ও সুস্পকারদিগের জন্য তণ্ডুলকণ (তাহাদের খাদ্যার্থে) দিতে হইবে। ইহাদিগকে দিয়া ও যদি অবশিষ্ট কিছু থাকে, তাহা হইলে ইহা সাধারণ ঔদনিক (অন্নপাচক) ও অপূপ-কৰ্ম্মকরদিগকে (পিষ্টকাদি-পাচাকদিগকে) দিতে হইবে। (উক্ত দ্রব্যাদি তৈয়ার করিবার) উপকরণ বলা হইতেছে, যথা-তুলাভাণ্ড, মানভাণ্ড (বা ওজন করার বাট), রোচনী (ডাল প্রভৃতি দলনের যন্ত্র), দৃষৎ (পেষণ-প্রস্তর), মুষল, উলিখল, কুটিকযন্ত্র (ঢেকি), রোচক যন্ত্র (আটা প্রভৃতির পেষণ যন্ত্র-ইহা মনুষ্য, বলীবদ্দৰ্প ও সলিলদ্বারা চালিত হইতে পারে), পত্রিক (কাষ্ঠময় ছুডিকাবিশেষ?), সুৰ্প (প্রস্ফোটন বা কুলা), চালনিকা (চালানী), কণ্ডোলী (বংশদলনিৰ্ম্মিত ভাণ্ড বা ছোট টুকরী), পে টোবা (পিটাইবার যন্ত্র) ও সম্মার্জনী (শোধনী বা ঝাড়ু)।

মাজক (ঝাড়ুদার), আরক্ষক (কোষ্ঠাগারের রক্ষী পুৰুষ), ধারক (তুলাদ্বারা মাপকারী), মায়ক (ধান্যাদির মানকারী), মাপক (মানপরিদর্শক), দায়ক, দাপক (দ্রব্যাদি-দানের পরিদর্শক), শলাকা প্রতিগ্রাহক (ওজন গণনার যষ্টিগ্রহণকারী), দাস ও কৰ্ম্মকরবর্গকে বিষ্টি-সন্ত্রায় অভিহিত করা হয়।

ধান্য রক্ষার স্থান উচ্চে নিবিষ্ট হইবে, (গুড় ফাণিতাদি) ক্ষার দ্রব্যের নিক্ষেপ বা রক্ষণ-স্থান সান্দ্রঘটিত তৃণাদিদ্বারা আচ্ছাদিত হইবে, (তৈল ঘৃতাদি৷) স্নেহদ্রব্যের রক্ষণ-স্থান মৃৎকোষ্ঠ অর্থাৎ মৃন্ময় কুম্ভাদি ও কাষ্ঠকোষ্ঠ (দারুময়) পাত্র হইবে, এবং লবণের নিক্ষেপ-স্থান পৃথিবী বা ভূমি (অথবা পার্থিব ঘটাদি) হইবে ॥ ১।৷

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষপ্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে কোষ্ঠাগারাধ্যক্ষ নামক পঞ্চদশ অধ্যায় (আদি হইতে ৩৬ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

ষোড়শ অধ্যায়
৩৪শ প্রকরণ-পণ্যাধ্যক্ষ

পণ্যাধ্যক্ষকে নানাবিধ স্থলে ও জলে উৎপন্ন এবং স্থলপথ ও জলপথ দিয়া আগত পণ্যসমূহের মধ্যে সারদ্রব্যের ও ফন্তুদ্রব্যের মূল্যতারতম্য এবং কোন পণ্য লোকের বেশী প্রিয় ও কোনটি অপ্ৰিয় সেই বিষয় (অর্থাৎ পণ্যের চাহিদা ইত্যাদি বিষয়) জানিয়া রাখিতে হইবে। সেই প্রকারে তাঁহাকে পণ্যসমূহের বিক্ষেপ (অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত দ্রব্যসমূহের বিস্তার), সংক্ষেপ (বিক্ষিপ্ত দ্রব্যসমূহের একত্রীকরণ:), ক্রয় ও বিক্রয়-প্রয়োগের (অর্থাৎ এই সবের অনুষ্ঠান বা অননুষ্ঠানের) উপযুক্ত কালসম্বন্ধেও সব বিষয় জানিয়া রাখিতে হইবে।

(পণ্যাধ্যক্ষ)। যে পণ্য প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হইবে তাহা একত্র-গত করিয়া ইহার মূল্য চড়াইয়া দিবেন। ইহার সমুচিত মূল্য পাওয়া গেলে (তিনি) পরে ইহার মূল্যভেদ (অর্থাৎ আরোপিত মূল্য হইতে নূনতা)। ঘটাইবেন।

(পণ্যাধ্যক্ষ)। স্বদেশে উৎপন্ন রাজপণ্যসমূহের একমুখ ব্যবহার (অর্থাৎ এক নিয়ত স্থান বা ব্যক্তির মারফতই একচেটিয়া ক্রয়-বিক্রয়) স্থাপিত করিবেন। (তিনি) পরদেশে উৎপন্ন পণ্যসমূহের অনেকমুখ ব্যবহার (অর্থাৎ অনেক স্থান হইতে ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা) স্থাপিত করিবেন এবং তিনি এই উভয়বিধ পণ্য (অর্থাৎ স্বদেশজাত ও পরদেশজাত পণ্য) প্রজাবর্গের প্রতি অনুগ্রহবুদ্ধি রাখিয়া (অর্থাৎ তাহাদিগকে যেন অধিক মূল্যরূপ উপপীড়া সহিতে না হয় এইভাবে) বিক্রয় করাইবার জন্য ব্যবস্থা করিবেন। তিনি ইহাও লক্ষ্য রাখিবেন যে, স্কুল (মোটা) লাভের সম্ভাবনা থাকিলেও যদি সেই জন্য প্রজাবর্গের উপঘাত বা কষ্ট উপস্থিত হয়, তাহা হইলে তাহাকে সেই লাভ বারণ করিতে হইবে। (তিনি) অজস্র বা সহজে প্ৰাপ্য পণ্যসমূহের উপযুক্ত কালে বিক্রয়ের উপরোধ বা বিক্রয়প্রতিষেধ, কিংবা সেগুলির সংকুলদোষ (অর্থাৎ অধিক পরিমাণে জমাকরণ) উৎপাদনা করিবেন না।

বহু লোকদ্বারা বিক্রেতব্য রাজপণ্য বৈদেহক বা বাণিজকেরা ইহার নিৰ্দ্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করিবে। তাহারা যদি সেই সব দ্রব্য নির্দ্দিষ্ট মূল্য হইতে কম মূল্যে বিক্রয় করিয়া ক্ষতি ঘটায়, তাহা হইলে তাহারা ছেদ বা মূল্যহানিরূপ বৈধরণসংজ্ঞক অর্থপূরণ করিয়া দিতে বাধ্য থাকিবে।

বাণিজ্যকগণ হইতে আদেয় রাজকীয় অংশ নিদ্ধারিত হইতেছে, যথাপণ্যসমূহের মানব্যাজী (মানদণ্ডাদিদ্বারা মান বা পরিমাপজনিত ব্যাজী) দ্রব্যের ১/১৬ ভাগ, তুলামান (তোল করার জন্য যে ব্যাজী গ্রহণ করা হয়) দ্রব্যের ব্যাজী ১/২০ ভাগ এবং গণ্যপণ্যের (অর্থাৎ গুবাকাদি যে পণ্য গণিয়া বিক্রয় করা হয়) ব্যাজী ১/১১ ভাগ (কেহ কেহ এই ব্যাজী ক্ৰেতাদিগের প্রাপ্য বলিয়া ব্যাখ্যা করেন)।

(পণ্যাধ্যক্ষ)। পরদেশে জাত পণ্যসমূহ (বিদেশী বাণিজকদিগের প্রতি) অনুগ্রহ প্রদৰ্শন করিয়া (অর্থাৎ অন্তপালাদির উপদ্রব নিবারণ ও ব্যাজী মোক্ষ মঞ্জুর করিয়া) আনাইবেন। এবং যাহারা জলপথবাহক সাৰ্থবাহ বা বণিক, তাহাদিগের প্রতি উত্তরকালের উপযুক্ত পরিহার বা করমোক্ষিণ (তিনি) বিধান করিয়া দিবেন। আগন্তুক বা বিদেশ হইতে আগত ব্যাপারীদিগের অর্থ-বিষয়ে (ঋণ-বিষয়ে) কেহ (রাজদ্বারে) অভিযোগ আনিতে পারিবে না। (অর্থাৎ বিনা অভিযোগে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করিতে হইবে), কিন্তু, যাহারা সেই বিদেশী ব্যাপারীদিগের উপকারসাধক কাৰ্য্যসহযোগী (অর্থাৎ তাহাদিগের ব্যাপারে অংশীদার হইয়া উপকারক) তাহারা (রাজদ্বারে) তাহাদিগের প্রাপ্য অর্থের জন্য অভিযোগ আনিতে পারিবে।

রাজপণ্যের বিক্ৰেতারা একস্থান হইতে আগত বিক্ৰীত পণ্যের মূল্য একটি মাত্র ছিদ্রদ্বারা আচ্ছাদিত কাষ্ঠময় দ্রোণী বা পেটিকাতে নিহিত করিবে। দিনের অষ্টম ভাগে (বিক্রয়ের অবসানে) সেই মূল্য পণ্যাধ্যক্ষের নিকট অৰ্পণ করিবে: এবং বলিবে, “এতখানি মূল বিক্রীত হইয়াছে এবং এতখানি অবশিষ্ট রহিয়াছে।”। তাহারা তুলাভাণ্ড ও মানভাণ্ডও (তুলাদণ্ড ও মাপিবার বাটপ্রভৃতিও) (তাঁহাকে) অৰ্পণ করিবে। এই পৰ্য্যন্ত রাজার নিজদেশে উৎপন্ন পণ্যসমূহের বিক্রয়াদি-বিধি ব্যাখ্যাত হইল।

সম্প্রতি পরদেশে পণ্যাদি বিক্রয়-সম্বন্ধে বিধি ব্যবস্থাপিত হইতেছে। পণ্যাধ্যক্ষ (প্রথমতঃ) স্বপণ্য ও পরপণ্যের মূল্য (তারতম্যসহকারে) বিচার করিয়া বুঝিবেন এবং (তৎপর) তিনি লক্ষ্য করিবেন যে, পরদেশে নিজপণ্যসমূহ ব্যাপারার্থ লইয়া গেলে, সেখানে শুল্ক, বৰ্ত্তনী (সেই দেশের অন্তপালকে দেয় কর), আভিবাহিক (সেই দেশের মাৰ্গতিবাহন-জন্য পুলিশকে দেয় কর), গুল্মদেয় (সেনানিবাসে দেয় করা), তারদেয় (নদীপ্রভৃতি পার হওয়ার জন্য নাবিককে দেয় করা), ভক্ত (কৰ্ম্মকর বলীবর্দাদির ভোজনজন্য খরচ), ও ভাটকের (ভাড়ার) জন্য কত ব্যয় হইবে; এবং সেই সব ব্যয় বাদ দিয়া (পণ্যবিক্রয়দ্বারা) শুদ্ধ লাভ কত টিকিতে পারে। যদি কোন উদয় বা লাভ দৃষ্ট না হয়, তাহা হইলে তিনি বিবেচনা করিবেন যে, নিজ ভাণ্ড (পণ্যদ্রব্য) লাভের প্রতীক্ষায় সেখানে নিয়া জমা রাখা যায় কি না, এবং নিজপণ্যের বদলে পরপণ্য লইয়া তন্দ্বারা লাভ করা যায় কি না। তৎপর (অর্থাৎ লাভের উপলব্ধি হইলে) তিনি সমীক্ষিত লাভের এক-চতুর্থাংশদ্বারা ক্ষেমমার্গ দিয়া (অর্থাৎ

চৌরাদির উপদ্রবরহিত পথ দিয়া) স্থলব্যবহার অর্থাৎ স্থলপথদ্বারা কৃত বিক্রয়া দিব্যাপার প্রযোজিত করিতে পারেন। এবং (তিনি) তাহাদের

আনুকূল্য লাভের আশায় তাদেশীয় অটবীপাল, অন্তপাল, পুরুমুখ্য ও রাষ্ট্রমুখ্যদিগের সহিত প্রতিসংসর্গ (সংগতি ও পরিচয়) স্থাপন করিবেন।

(পণ্যাধ্যক্ষের অধীন কোন নিজ দেশীয় বণিক বিদেশে ব্যাপার করিতে গিয়া) যদি কোন বিপদে পতিত হয়, তাহা হইলে তাহাকে নিজের (রত্নাদি) সার দ্রব্য ও নিজের শরীর রক্ষা করিতে হইবে। অথবা, পরদেশ হইতে নিজ দেশে না আসা পৰ্য্যন্ত, তাহাকে সে দেশের রাজার প্রাপ্য সর্ব প্রকার নিজেদের করাদি শোধ করিয়া বাণিজ্য-ব্যবহার করিতে হইবে।

(সেইরূপ কোন বণিক), জলপথে যাইয়া পরদেশে বাণিজ্য করিবার পূর্বে যানভাটক (অর্থাৎ নৌকাদি ভাড়া), পথ্যদান (পথে খাই-খরচ), নিজপণ্য ও পরপণ্যের মূল্যসম্বন্ধে (তারতম্য-) বিচার, যাত্রাকাল (পরদেশষানের উপযুক্ত কাল, অথবা, গতগতির কালের পরিমাণ), ভয়প্রতীকার (পথে চৌরাদি-ভয়ের প্রতিবিধান) ও পণ্যপত্তনচরিত্র (নিজপণ্য বিক্রয়ের জন্য যে পরপত্তনে যাইতে হইবে সে-দেশের আচার-ব্যবহার) এই সব বিষয় উত্তমভাবে জানিয়া লাইবে।

নদীপথে গেলেও, তৎ তৎ দেশের চরিত্র (আচার-ব্যবহার) অনুসরণ করিয়া বাণিজ্যবিষয় জানিয়া, তাহাকে যে-পথে গেলে লাভ বেশী হইবে, সে পথে যাইতে হইবে; এবং যো-পথে (জলপথাদিতে) গেলে অল্প লাভ বা অলাভ হইবে, সে-পথ তাহাকে বজন করিতে হইবে ॥ ১।৷

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষপ্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে পণ্যাধ্যক্ষ নামক ষোড়শ অধ্যায় (আদি হইতে ৩৭ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

সপ্তদশ অধ্যায়
৩৫শ প্রকরণ-কুপ্যা
ধ্যক্ষ

কুপ্যাধ্যক্ষ (অর্থাৎ যে প্রধান রাজকৰ্ম্মচারী কুপ্য বা সারদারু, বেণু, বল্পী, বঙ্ক প্রভৃতি পদার্থের সংগ্রহাদি কাৰ্য্যে ব্যাপৃত থাকেন) দ্রব্যবনের রক্ষিপুরুষগণদ্বারা কুপ্য আনাইবেন। (তিনি) দ্রব্যবনের দ্রব্যাদিদ্বারা (শকটাদিনিৰ্ম্মণার্থ) কারখানাও বসাইবেন। (তিনি) দ্রব্যবনে (বৃক্ষাদির শাখা, স্কন্ধ, মূল্যাদি৷) ছোদনকারী কৰ্ম্মকরগণের কাৰ্য্যের জন্য দেয় বেতনের ও (অননুজ্ঞাত বৃক্ষছেদনাদির জন্য)। তাহাদিগের উপর দণ্ডের ব্যবস্থা করিবেন; কিন্তু, কোনও বিপদ (যথা–শকটযুগভঙ্গাদি) উপস্থিত হইলে অননুজ্ঞাত বৃক্ষছেদনজন্য দণ্ড বিহিত হইবে না।

এখন কুপ্যবর্গের অন্তর্গত সারদারু প্রভৃতি অবান্তরবর্গের দ্রব্যাদির নাম নিরূপিত হইতেছে। সারদারুবৰ্গে (অর্থাৎ শক্ত বা মজবুত কাষ্ঠবর্গে) নিম্নলিখিত বৃক্ষসমূহ অন্তভুক্ত, যথা—শাক (সেগুণ-ধুক্ষাদি), তিনিশ (নেমী বা রথদ্রুি), ধন্বন (ধন্যবৃক্ষ, ধামনি বৃক্ষ), অর্জন, মধুক, তিলক, সাল, শিংশপ (শিশুবৃক্ষ), আরিমেদ (বিটুখাদির, গুইয়া বাবলা), রাজান্দন (ক্ষীরিক বৃক্ষ), শিরীষ, খন্দির, সরল, তাল, সৰ্জ, অশ্বকৰ্ণ (সৰ্জভেদ), সোমবন্ধ (শ্বেত খিদির, কটুফল), কশ (লোমশপুচ্ছক নকুলবৃক্ষভেদ), আম্র (মতান্তরে, “ক শাম্র’ একটি সমস্ত পদ), প্রিয়ক (গৌরসজ্জ, মতান্তরে, পীতশালক), ধব (খুরন্ধর বৃক্ষ) প্রভৃতি।

 বেণুবৰ্গে নিম্নোদ্ধত বৃক্ষসমূহ অন্তৰ্ভুক্ত, যথা—উটজ (এক প্রকার বেণু, যাহার মধ্যে রুড় সুষির বা ছিদ্র আছে, যাহার পৃষ্ঠ কর্কশ ও যাহার। তনুতে কণ্টক আছে), চিমিয় (সুষিরশূন্য মৃদু ছালবিশিষ্ট বেণুভেদ), চাপ (স্বল্পম্বাষির ও অত্যন্ত খরখরা বেণুভেদ), (বেণু নিষ্কণ্টক ও চাপযোগ্য), বংশ (বাঁশ), সান্তীন (ছোট বাঁশভেদ), কণ্টক (বেণুভেদ), ভাল্লুক (মোটা, দীর্ঘ ও নিষ্কণ্টক বেণুবিশেষ) ইত্যাদি।

বল্লীবর্গে নিম্নলিখিত লতাগুলি অন্তভুক্তি, যথা-বেত্র (বেত), শীকবল্পী (লতাবিশেষের নাম), বাশী (অৰ্জ্জুন-পুষ্পের মত পুষ্পবতী লতা), শ্যামলতা (প্রসিদ্ধ গোপবাল্পী বা শারিবা লতা), নাগলতা (অপর নাম নাগজিহ্বা, তাম্বুলী) প্রভৃতি।

মালতী (চামেলীবিশেষ), মূৰ্বী, অর্ক, শণ, গবেথুক (‘গবেথুকা’ পাঠ সঙ্গত প্রতিভাত হয়-ইহা এক প্রকার তৃণবিশেষ), অতসী প্রভৃতি বান্ধবর্গের অন্তৰ্গত।

মঞ্জু, বদ্রজ প্রভৃতি রাজুভাণ্ড (অর্থাৎ রজ্জু-নিৰ্ম্মাণের উপযোগী সাধন)–নামে পরিচিত। তালী ও ভূৰ্জ-ইহার লেখ্যোপযোগী পত্র বা কাগজের কাৰ্য্য সাধন করিতে পারে। কিংশুক, কুসুম্ভ ও কুস্কুমের পুষ্প (বস্ত্ৰাদি-রঞ্জনের সাধন)।

(সূরণাদি) কন্দ, (উশীরাদি) মূল, (আমলকাদি) ফল প্রভৃতি ওষধি বর্গের অন্তর্গত।

স্থাবর বিষবৰ্গ নিম্নলিখিত বৃষবৃক্ষাদির অন্তভুক্ত, যথা-কালকূট (অশ্বখপত্রের আরুতিবিশিষ্ট পত্রধারী বৃক্ষবিশেষ—ইহার নিৰ্য্যাস বিষযুক্ত হয়), বৎসনাভ (সিন্ধুবারপত্রসদৃশ পত্রযুক্ত বিষবৃক্ষবিশেষ), হালাহল (সূচীর ন্যায় পত্রবিশিষ্ট, নীলপল্লব ও গোস্তানাকৃতি-ফলশালী বিষবৃক্ষবিশেষ), মেষশৃঙ্গ (উৎপলের মুকুলের ন্যায় ফলবিশিষ্ট বৃক্ষভেদ), মূস্তা (দুই প্রকার, খণ্ডশর্করার মত ও শঙ্খের মত শ্বেত), কুষ্ঠ (বিষময় ওষধিবিশেষ), মহাবিষ (মাংসাবর্ণ স্তনের চুচুকাকার ফলবিশিষ্ট ওষধি; এই শব্দটি দ্বিমুখসর্পকেও বুঝায়, কিন্তু তখন ইহা জঙ্গম বিষের আন্তর্ভুক্ত হইতে পারে), বেল্লিতক (কৃষ্ণরাক্ত মূলজ ওষধিবিশেষ), গৌরার্ড (কৃষ্ণবৰ্ণ কন্দজ ওষধিবিশেষ), বালক (অপর নাম হীবের, পিপ্পলীর আকারবিশিষ্ট ওষধিবিশেষ), মাৰ্কট (বানরের বর্ণবিশিষ্ট এক প্রকার বিষৌষধি), হৈমন্বত (হিমালয়ে উৎপন্ন দীর্ঘপত্র বিষৌষধি-বিশেষ), কালিঙ্গক (কলিঙ্গদেশে উৎপন্ন, যাবারুতি ওষধিবিশেষ) দারদিক (দরদ দেশে উৎপন্ন বিষযুক্তপত্রবিশিষ্ট ওষধি), অঙ্কোলসারক (আকোড় বা ধলত্মাকুড়া বৃক্ষের সার বিষবস্তুবিশেষ) ষ্ট্রক (বিষবৃক্ষবিশেষ, প্ৰাচীন টীকার মতে উষ্টমেট্রের আকারবিশিষ্ট ফলযুক্ত বৃক্ষ বা ওষধিভেদ) প্রভৃতি।

জঙ্গমবিষপৰ্য্যায়ে সৰ্প ও (চিত্রভেকাদি) কীট বিষবৰ্গের অন্তৰ্গত (ইহারা স্বভাবস্থিত অবস্থায় অসংস্কৃত বিষ বলিয়া পরিজ্ঞাত)। কিন্তু, এই সর্প ও কীটগুলিই (ঔপনিষদপ্রকারণে উক্ত বিধানমতে) (ত্রিপুনিৰ্ম্মিত) কুম্ভাদিতে সংযোজিত হইলে অধিকতর বিষযুক্ত হইয়া সংস্কৃত হয়।

গোধা, সেরকা (শ্বেতত্রগ বিশিষ্ট গোধাবিশেষ), দ্বীপী (চিতা বাঘ), শিংশুমার (শুশুক নামক জলজন্তুভেদ), সিংহ, ব্যাদ্র, হাতি, মহিষ, চমর (মৃগভেদ), স্বমর (মৃগভেদ), খড়গ (গণ্ডার), গো, মুগা ও গবয়ের এবং অন্যান্য মৃগ, পশু, পক্ষী ও ব্যালের (হিংস্রজন্তুর) চৰ্ম্ম, অস্থি, পিত্ত, স্নায়ু (অতঃপর মূলে যে অস্থি শব্দ পঠিত দৃষ্ট হয়, তাহা দ্বিকক্তদোষদুষ্ট বলিয়া প্রতিভাত হয়), দন্ত, শৃঙ্গ, খুর ও পুচ্ছগুলি কুপ্যসংজ্ঞায় গৃহীত হইবার যোগ্য (এবং কুপ্যাধ্যক্ষ এগুলির সংগ্রহ করাইবেন)।

নিম্নলিখিত লোহ ধাতুসংজ্ঞক দ্রব্যগুলিও কুপ্যের অন্তভুক্ত (সেইজন্য এগুলি আকর্যকৰ্ম্মান্তপ্রকরণে উক্ত হইলেও এস্থলে পুনরুক্ত হইতেছে), যথাকালায়স, তাম্র, বৃত্ত (ধাতু বিশেষ? অথবা, “তাম্রবৃত্ত’ একশব্দ বলিয়া গৃহীত হইবে), কাংস্য (কঁাস), সীসা, ত্ৰিপুব বৈকুন্তুক (নীজবজ-নামক ধাতুবিশেষ?) ও আরকুট (পিত্তল)।

ভাণ্ড দুই প্রকার, যথা-(১) বিদািলময় (অর্থাৎ বংশবোত্রাদিনিৰ্ম্মিত) is (২) মুত্তিকাময় (কুলালনিৰ্ম্মিত জলকুন্তাদি)।

অঙ্গার, তুষ ও ভস্ম, এব” মুগবাট, পশুবাট, পক্ষিবাটি ও ব্যালবাট (অথাৎ তৎ তৎ জীবজন্তুর রক্ষণস্থল) এবং কাঠবাট ও তৃণবাট-এই সবও কুপ্যসংজ্ঞায় জ্ঞাপ্য।

(কুপ্যাধ্যক্ষ) কুপ্যদ্বারা যাহারা জীবিকা অর্জন করে তাহাদিগের সাহায্যে (রাজনগরাদির) বাহিরে ও মধ্যে সৰ্ব প্রকার ভাণ্ডসম্বন্ধী কৰ্ম্মান্ত (কারখানা। অপরস্পর সংশ্লিষ্টভাবে জীবিকাপ্রয়োজনে ও পুররক্ষাপ্রয়োজনে স্থাপিত করিবেন। ১।৷

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষ প্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে কৃপ্যাধ্যক্ষ নামক সপ্তদশ অধ্যায় (আদি হইতে ৩৮ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

অষ্টাদশ অধ্যায়
প্রকরণ-আয়ুধাগারাধ্যক্ষ

আয়ুধাগারের অধ্যক্ষ (অস্ত্রশস্ত্রশালার প্রধান অধিকারী পুরুষ। সংগ্রামকাৰ্য্যের জন্য প্রয়োজনীয়, দুর্গের (নিৰ্ম্মাণ-রক্ষণাদি) কৰ্ম্মের জন্য প্রযোজনীয়, ও শক্রনগরের অভিঘাত বা ধবংসকাৰ্য্যের জন্য প্রয়োজনীয় (সৰ্বতোভদ্ৰাদি) যন্ত্র, (শক্তিপ্রাসাদি) আয়ুধ, (পেটীচৰ্ম্মাদি) আবরণ ও (হিস্তিরথাদির অলঙ্কারাদি) উপকরণ তৎ তৎ কৰ্ম্মাভিজ্ঞ কারু (স্থূলকৰ্ম্মকারী) ও শিল্পী (সূক্ষ্মকৰ্ম্মকারী) লোকের সহায়তায় নিৰ্ম্মাণ করাইবেন; কিন্তু, (তিনি) এই সব কারু ও শিল্পীদিগের (দৈনন্দিন) কৰ্ম্মের পরিমাণ, কৰ্ম্মের সময়, কৰ্ম্মজনিত বেতন ও কৰ্ম্মের ফলরূপে নিম্পাদিত যন্ত্রাদির ইয়ত্তা পূর্বে নিৰ্দ্ধারিত করিয়া তাহাদিগকে কাৰ্য্যে নিযুক্ত করিবেন। (তিনি) নিম্পাদিত দ্রব্যসমূহ ইহাদিগের রক্ষণোপযোগী স্থানে (অথবা, নিজের আয়ত্ত-স্থানে) নিবেশিত রাখিবেন। (যন্ত্বপ্রভৃতির) বহু বার স্থান-পরিবর্তন (অর্থাৎ সেগুলিকে ঠিক রাখিবার জন্য একস্থান হইতে অন্যস্থানে নিবেশন) ও সেগুলিকে (যথাসময়ে) রৌদ্রে ও বাতাসে প্রদান করিতে হইবে। যে-সব দ্রব্য উন্মা, স্নেহ (স্বেদ) ও (ঘূণাদি) কৃমিদ্বারা নষ্ট হইতে পারে, সে-গুলির স্থাপনাদিবিষয়ে অন্য প্রকার ব্যবস্থা করিতে হইবে। (দ্রব্যগুলির) জাতি (শ্রেণীভুক্ততা), রূপ (বক্ৰাদি রূপ), লক্ষণ (শাস্ত্রোক্ত উত্তমাদি চিহ্ন), প্রমাণ (, দৈৰ্ঘ্যাদি-পরিচ্ছেদ), আগম (প্ৰাপ্তিস্থান), মূল্য ও নিক্ষেপ (একত্র করিয়া রক্ষণ)-সম্বন্ধে (আষুধােগারাধ্যক্ষ)। সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করিবেন।

নিম্নলিখিত দশটি যন্ত্রকে (স্থানে স্থিত অবস্থায় ব্যবহার করিতে হয় বলিয়া) স্থিত-যন্ত্র নাম দেওয়া হয়, যথা-(১) সৰ্বতোভদ্র (ইহা এক প্রকার শকটচক্রের আকার-বিশিষ্ট যন্ত্র, যাহা দুর্গাকুড্যে রক্ষিত হইয়া ঘুরিতে থাকিলে চতুর্দিকে পাষাণ নিক্ষেপ করিতে পারে), (২) জামদগ্ন্য। (এই যন্ত্রের মধ্য স্থানে রক্ষিত শরগুলি সহজে নিক্ষিপ্ত হইতে পারে), (৩) বহুমুখ (ইহা দুর্গপ্রাকারের উপর অবস্থিত আটালকবিশেষ, যেখানে বসিয়া ধনুধারী পুরুষের চতুদিকে বাণ নিক্ষেপ করিতে পারে), (৪) বিশ্বাসঘাতী (নগরের বাহিরে তিৰ্য্যগবস্থিত পরিঘ বিশেষ, যাহা স্পর্শমাত্রেই শক্রর উপর পতিত হইয়া তাহণের প্রাণনাশ করিতে পারে), (৫) সংঘাটী (ইহা দীর্ঘ কাষ্ঠে সংঘটিত অগ্নিযন্ত্রবিশেষ, যদ্বারা অট্টালিকাদি প্রদীপিত হইতে পারে), (৩) যানক (ইহা চক্রের উপর আরূঢ় দণ্ডের মত আয়ত যন্ত্রবিশেষ), (৭) পর্জন্যক (ইহা অগ্নির উপশান্তির জন্য বরুণাত্ম-বিশেষ; মতান্তরে, ইহা পঞ্চাশ হস্ত-পরিমিত প্ৰাকারের উপর অবস্থিত যন্ত্রবিশেষ, যাহা শক্র সমীপগত হইলে তদুপরি যন্ত্রবিশ্লেষণদ্বারা পাতিত করা যায়), (৮) বাহুযন্ত্র (ইহা পর্জন্যকের অৰ্দ্ধপ্রমাণবিশিষ্ট পরস্পরাভিমূখী স্তম্ভস্বয়ারূপ যন্ত্র, যাহা যন্ত্রবিশ্লেষণদ্বারা শত্রুর উপর পাতিত হইতে পারে), (৯) উৰ্দ্ধবাহু, (উৰ্দ্ধস্থিত পর্জন্যকপ্রমাণ মহাস্তম্ভ, যাহা যন্ত্রবিশ্লেষণদ্বারা শত্রুর উপর পাতিত হইতে পারে) ও (১০) অৰ্দ্ধবাহু (ইহা পূর্বোক্ত যন্ত্রের অৰ্দ্ধপ্রমাণ

নিম্নলিখিত সপ্তদশ যন্ত্রকে চলাযন্ত্ব-নামে পরিচিত করা হয়, যথা(১) পঞ্চালিকা (এই যন্ত্র তীক্ষ্মমুখবিশিষ্ট সারদারুনিৰ্ম্মিত এবং ইহা দুর্গপ্রাকারের বাহিরে শক্রর পথনিরোধের জন্য জলমধ্যে রক্ষিত হয়), (২) দেবদণ্ড (দুর্গের প্ৰাকারের উপর স্থাপিত কীলকরহিত মহাস্তম্ভ), (৩) সুকীরিকা (সুত্র ও চৰ্ম্মদ্বারা নিৰ্ম্মিত ভঞ্জাবিশেষ-ইহার মধ্যে কার্পাসাদি পুরিয়া রাখা হয় এবং ইহা বাহির হইতে পাষাণ-নিক্ষেপ রোধ করার জন্য প্রচ্ছাদনীহিসাবে ব্যবহৃত হয়; মতান্তরে, ইহা সূকরের আকারবিশিষ্ট চৰ্ম্মাবৃত বেণুময় প্রচ্ছাদনীবিশেষ এবং ইহা প্ৰাকারগ্রহণের নিবারণার্থ ব্যবহৃত হয়), (৪) মূষলষষ্টি (ইহা খদির কাষ্ঠীদ্বারা নিৰ্ম্মিত শূলাকৃতি যন্ত্রবিশেষ), (৫) হস্তিবারিক (ইহা হস্তিবারণার্থ নিৰ্ম্মিত দ্বিমুখ বা ত্রিমূখ দণ্ড বিশেষ; মতান্তরে, ইহা হস্তীকে আঘাত করার জন্য ব্যবহৃত পরিঘ বিশেষ), (৬) তালবৃন্ত (বাতাস-সঞ্চারার্থ ঘূর্ণ্যমান চক্রযন্ত্রবিশেষ), (৭) মুদগর, (৮) দ্রুঘণ (মুদগরাকার কাঠময় দণ্ডবিশেষ), (৯) গদা, (১০) স্পক্তলা (কণ্টকনিচিত গদাবিশেষ), (১১) কুদাল, (১২) আস্ফোটিম (শব্দোত্থানপূর্ব্বক মৃৎপাষণ ক্ষেপণের চৰ্ম্মময় যন্ত্রবিশেষ), (১৩) উদঘাটিম (মুদগরাকৃতি যন্ত্রবিশেষ); (১৪) উৎপাটিম (স্তম্ভাদি ঝাঁটতি উৎপাটিত করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রবিশেষ), (১৫) শতন্ত্রী (স্কুল ও দীর্ন কীলকাচিত মহাস্তম্ভ, যাহা শকটচক্রযুক্ত অবস্থায় দুর্গের প্রাকারের উপর রক্ষিত হয়), (১৬) ত্ৰিশূল ও (১৭) চক্র !

তীক্ষ্ণাগ্র বলিয়া নিম্নলিখিত আয়ুধগুলির নাম হলামুখ, যথা-শক্তি (চারিহাত-পরিমিত করবীর পত্রের আকারবিশিষ্ট মুখযুক্ত এবং গোস্তানাকার হাতলযুক্ত সৰ্ব্বলোহময় যন্ত্রবিশেষ), প্রাস (চতুর্বিংশতিঅঙ্গুল-পরিমিত দ্বিপীঠিযুক্ত কাষ্ঠগৰ্ভ সর্বলোহময় অস্ত্রবিশেষ), কুন্ত (৭-৬-৫ হস্তপরিমিত বল্লমবিশেষ), হাটক (কুন্ততুল্যপ্রমাণবিশিষ্ট ত্ৰিকণ্টকযুক্ত অস্ত্রবিশেষ), ভিণ্ডিপাল (মোটাফলকবিশিষ্ট কুন্তু), শূল (তীক্ষ্ম একমুখযুক্ত অস্ত্রবিশেষ—ইহার প্রমাণ অনিয়ত), তোমর (এই অস্ত্রের অগ্রভাগ বাণাকৃতি, ইহার প্রমাণ ৪।।/৫ হস্ত পৰ্য্যন্ত হইতে পারে), বরাহকৰ্ণ (ইহা বরাহের কর্ণারুতিমুখবিশিষ্ট প্ৰাস), কণয় (ইহ এক প্রকার লোহময় অস্ত্র এবং ইহা উভয়দিকেই ত্ৰিকণ্টকাকার মুখবিশিষ্ট এবং মধ্যমুষ্টি-ইহার প্রমাণ ২০-২২-২৪ অঙ্গুলি পৰ্য্যন্ত হইতে পারে), কৰ্পণ (তোমর তুল্য অস্ত্রবিশেষ, ইহা হস্তদ্দ্বারা ক্ষেপণীয় ও ইহা এক প্রকার পক্ষযুক্ত শরের ন্যায় হয়), ত্ৰাসিকা (ইহা চূড়াযুক্ত সর্বলোহময় প্ৰাসের ন্যায় অস্ত্রবিশেষ) ও অন্যান্য অস্ত্র।

কার্ম্মুক, কোদণ্ড ও দ্রণ, এই তিন নামে পরিচিত বিভিন্ন প্রকারের ধনুঃ তালময়, চাপময় (বেণুবিশেষের নাম চাপ), দারুময়, ও শৃঙ্গময় বা শৃঙ্গনিৰ্ম্মিত হইতে পারে।

জ্যা বা ধনুঃতে ব্যবহৃত গুণ, মূৰ্বী, অর্ক, শণ, গবেথু, বেণু ও স্বায়ু-এই সব দ্রব্য হইতে নিৰ্ম্মাণ করা যায়।

ইষু, বা বাণ বিভিন্ন প্রকারের হইতে পারে, যথা-বেণু, শর, শলাকা (সারদারু হইতে প্রস্তুত শলাকা), দণ্ডাসিন (অৰ্দ্ধনারাচি) ও নারাচ (সৰ্বলোহময় বাণ)। এই ইয়ু বা বাণগুলির মুখ বা অগ্রভাগ ছেদন, ভেদন (সশোণিত অভিঘাতপ্রদান) ও তাড়ন (অশোণিত প্রহারদান) কাৰ্য্য করিয়া থাকে এবং সে-গুলি লৌহ অস্থি ও দারুনিৰ্ম্মিত হইতে পারে।

খড়গ (তরবারী তিন প্রকার যথা—নিস্ট্রিংশ (যে তরবারীর অগ্রভাগ বক্র), মণ্ডলাগ্র (যে তরবারীর অগ্রভাগ মণ্ডল বা বৃত্তাকার), ও আসিযষ্টি (যে তরবারীর আকার পাতল ও লম্বা)। ৎসরু বা খড়গমৃষ্টি খড়গ (গণ্ডার) ও মহিষের বিষাণ (শৃঙ্গ) এবং হস্তীর বিষাণ (দন্ত)-দ্বারা নিৰ্ম্মিত এবং দারু ও বেণুমূলদ্বারাও নিৰ্ম্মিত হইতে পারে।

পরশু (২৪ অঙ্গল-পরিমিত সর্বলোহময় ক্ষুর যন্ত্রবিশেষ), কুঠার, পট্টস (উভয়দিকে ত্রিশূলযুক্ত যন্ত্রবিশেষ), খনিত্র, কুদাল, ক্রকচ (কিরাপত্র বা করাত) ও কাণ্ডছেদন—এই যন্ত্রগুলি ক্ষুরের ন্যায় তীক্ষ্ম বলিয়া ক্ষুরকল্প-নামে আখ্যাত হইয়া থাকে।

যন্ত্রপাষাণ (যে পাষাণ যন্ত্রদ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়), গোষ্পণপাষাণ (যে পাষাণ গোষ্পণ-নামক যষ্টি হইতে বিক্ষিপ্ত হয়) ও মুষ্টিপাষাণ (যে পাষাণ হস্তমুষ্টি হইতে বিক্ষিপ্ত হয়), এবং রোচীণী (দালনের যন্ত্রশিলা) ও দৃষদ (বড় বড় শিলাখণ্ড) প্রভৃতিও আয়ুধ নামে পরিচিত।

নিম্নলিখিত আবরণ দ্রব্যাদি বৰ্ম্ম-নামে আখ্যাত হয়, যথা-লোহজাল (মস্তকসহিত সর্বাঙ্গের জন্য লোহময় আবরণ-বিশেষ), লোহজালিকা (মুণ্ডিত মস্তকের জন্য লোহময় আবরণ-বিশেষ), লোহপাট্ট (বাহু ব্যতীত সর্বাঙ্গের জন্য লোহময় আবরণ-বিশেষ) ও লোহাকবচ (বক্ষঃস্থল ও পৃষ্ঠের জন্য লোহময় আবরণ-বিশেষ), সুত্রকঙ্কট (কার্পাসাদি সুত্রদ্বারা নিৰ্ম্মিত সন্নাহ)। এবং শিশুমারক, খড়গী (গণ্ডার), ধেনুক (গবয়), হস্তী ও গো (বৃষভ)-এই পশুগুলির চৰ্ম্ম, খুর ও শৃঙ্গদ্বারা শিল্লিঘটিত আবরণও বৰ্ম্মনামে অভিহিত হইতে পারে। শিরস্ত্ৰাণ (মস্তক রক্ষাকারী আবরণ), কণ্ঠত্ৰাণ (কণ্ঠমাত্রের জন্য আবরণ), কৃপাস (অৰ্দ্ধবাহুর আবরণ), কাঞ্চুক (জানুপৰ্য্যন্ত বিস্তৃত আবরণ), বারবাণ (গুলফপৰ্য্যন্ত বিস্তৃত আবরণ), পট (বাহু ব্যতীত অঙ্গের জন্য নিৰ্ম্মিত আলোহময় আবরণ) ও নাগোদরিকা (করাঙ্গুলিত্ৰাণ; মতান্তরে, উরাস্ত্ৰাণ) এইগুলি দেহের জন্য আবরণভেদ। পেটী (বল্লীময় খেটক বা ঢাল), চৰ্ম্ম (চৰ্ম্মনিৰ্ম্মিত ঢাল), হস্তিকৰ্ণ (মুখ ঢাকিবার ফলক), তালমূল (কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত ঢাল) ধমনিকা (সুত্রময়ী পেটী), কবাট (কাষ্ঠময় ফলকভেদ), কিটিকা (চৰ্ম্ম, বেণু বা বিদলময়ী পেটী), অপ্রতিহত (সম্পূর্ণ হস্তরক্ষার জন্য নিৰ্ম্মিত আবরণ) ও বলাহীকান্ত (অপ্রতিহত নামক আবরণের পর্য্যন্তে যে লোহপট বদ্ধ থাকে) এগুলিও আবরণবিশেষের নাম।

হস্তী, রথ ও অশ্বের শিক্ষার্থ যে-সব (অস্কুশাদি) ভাণ্ড ব্যবহৃত হয় এবং ইহাদের ভুষণার্থ (পতাকাদি) অলঙ্কার ও (বৰ্ম্মাদি) সন্নাহরচনাদি উপকরণ শব্দদ্বারা বাচ্য।

ঐন্দ্রজালিক (মায়ানিৰ্ম্মিত) কৰ্ম্ম ও ঔপনিষদিক (ঔপনিষদক-নামক অধিকরণে উক্ত বিষাদির প্রতীকার লক্ষণ) কৰ্ম্মও এই উপকরণ-সংজ্ঞায় অভিহিত হয়।

আয়ুধেশ্বর (অর্থাৎ আয়ুধাধ্যক্ষ) (গত অধ্যায় ও বর্তমান অধ্যায়ে উক্ত) কুপ্যgব্য সম্বন্ধীয় কারখানাগুলির বিষয়ে (রাজার বা রাজশাসকদিগের) ইচ্ছা বা অভিপ্ৰায়, কৰ্ম্মারম্ভ ও কৰ্ম্মসিদ্ধি, উপযোগ, দোষ, লাভ, ক্ষয় ও ব্যয় বিশেষভাবে উপলব্ধি করিবেন। ১।৷

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষ প্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে আয়ুধাগারাধ্যক্ষ নামক, অষ্টাদশ অধ্যায় (আদি হইতে ৩৯ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

উনবিংশ অধ্যায়
৩৭শ প্রকরণ—তুলা ও মানের (বাটের) সংশোধন

পৌতবাধ্যক্ষ (তুলা ও মানভাণ্ডের সংশোধন-জন্য নিযুক্ত প্রধান অধিকারী) পৌতবের জন্য (অর্থাৎ তুলা ও প্রতিমান বা বাট তৈয়ার করার জন্য)। কারখানা স্থাপিত করিবেন।

भिति ধান্যের মাষের (বা দানার) ওজনদ্বারা একটি সুবৰ্ণমাষক কল্পিত হয়। অথবা, পাঁচটি গুঞ্জাফলদ্বারাও ১ মাষক সংজ্ঞা বিহিত হয়। এইরূপ ১৬টি মাষকদ্বারা এক সুবৰ্ণ বা কর্ষ নিরূপিত হয়। আবার ৪ কর্ষে এক পল ওজন ধরা যায়। [ অর্থাৎ সুবর্ণ ওজনের জন্য নিম্নলিখিত রীতি আৰ্য্যারূপে নির্দ্দিষ্ট হইতে পারে, যথা

১০ ধান্য মাষ = ১ সুবর্ণমাষক
অথবা, ৫ গুঞ্জা = ১ সুবর্ণমাষক
১৬ মাষক = ১ সুবৰ্ণ বা কর্ষ
৪ কর্ষ = ১ পল ]

 (সম্প্রতি রূপ্যের প্রতিমান বা ওজন-বাট বলা হইতেছে)। ৮৮টি গৌর বা সাদা সর্ষপের ওজনদ্বারা একটি রূপ্যমাষক কল্পিত হয়। এইরূপ ১৬টি রূপ্যমাষক দ্বারা ১ ধরণ-নামক প্রতিমান ধরা হয়। অথবা, ২০টি শৈস্ব বা শিস্কিফলদ্বারা ১ ধরণ নিৰ্দ্ধারিত হয়। [ অর্থাৎ রূপ্য ওজনের জন্য নিম্নলিখিত রীতি আৰ্য্যারূপে গৃহীত হইতে পারে, যথা–

৮৮ গৌর সর্ষপ = ১ রূপ্যমাষক
১৬ রূপ্যমাষক = ১ ধারণ
অথবা, ২০ শৈম্ব = ১ ধারণ ]

২০টি (মধ্যম ও অখণ্ড)। তণ্ডুলের প্রমাণ বা ওজনদ্বারা এক বজধারণ অর্থাৎ হীরকের ১ ধরণ নিৰ্দ্ধারিত হয়।

(উক্ত বর্ণিত সুবর্ণাদি ওজন করার জন্য) নিম্নলিখিত চতুৰ্দশ প্রকারের প্রতিমান বা বাট ব্যবহৃত হইতে পারে, যথা-(১) অৰ্দ্ধমাষক, (২) মাষক, (৩) দুই-মাষক, (৪) চারি মাষক, (৫) আট মাষক, (ঙ) সুবর্ণ (= ১৬ মাষক), (৭) দুই সুবৰ্ণ, (৮) চারি সুবৰ্ণ, (৯) আট সুবৰ্ণ, (১০) দশ সুবৰ্ণ (অর্থাৎ তদানীন্তন ১০ ভরির বাট), (১১) কুড়ি সুবর্ণ (১২) ত্রিশ সুবৰ্ণ, (১৩) চল্লিশ সুবর্ণ ও (১৪) শত সুবর্ণ।

সুবৰ্ণ মাপিবার জন্য যে-সমস্ত সুবর্ণাদি-নামক প্রতিমানের বা বাটের কথা বলা হইল তন্দ্বারা রূপ্য মাপিবার জন্য ধারণাদি-নামক প্রতিমানও ব্যাখ্যাত হইল বলিয়া ধরিতে হইবে (অর্থাৎ অৰ্দ্ধমাষকের বাট হইতে ১০০ ধরণের বাট পৰ্য্যন্ত ১৪ প্রকার প্রতিমান থাকা বুঝিতে হইবে)।

তোল বা ওজন করার জন্য নির্দ্দিষ্ট প্রতিমান বা বাটগুলি লৌহদ্বারা নিৰ্ম্মিত হইতে পারে; কিংবা, মগধ ও মেকল দেশে উদ্ভূত শিলাদ্বারা নিৰ্ম্মিত হইতে পারে; অথবা, (শঙ্খাদি) এমন দ্রব্যদ্বারা নিৰ্ম্মিত হইবে যাহা জলদারা আদ্রীকৃত হইলে বা কোন মললেপদ্বারা প্রলিপ্ত হইলে (ওজনে) বৃদ্ধি পাইবে না, কিংবা যাহা উষ্ণদ্বারা (অগ্নিপ্রভৃতির তাপদ্বারা) হ্রাস বা নূ্যনত প্ৰাপ্ত হইবে না।

(সুবর্ণ ও রূপ্য তোল করার জন্য) দশ প্রকার তুলা (পৌতবাধ্যক্ষ) নিৰ্ম্মাণ করাইবেন। প্রথম তুলার আয়াম ৬ অঙ্গুল-পরিমিত হইবে এবং দ্বিতীয়াদি তুলাতে আয়াম ক্রমশঃ ৮ অঙ্গুল করিয়া বাড়িতে থাকিবে (অর্থাৎ দ্বিতীয় তুলাতে আয়াম থাকিবে ১৪ অঙ্গুল, তৃতীয়ে ২২ অঙ্গুল, চতুর্থে ৩০ অঙ্গুল ইত্যাদিক্রমে দশম তুলাতে আয়াম থাকিবে ৭৮ অঙ্গল) এবং প্রথম তুলার লোহময় অংশের ওজন থাকিবে ১ পল এবং দ্বিতীয়াদির ওজন ক্রমশঃ এক এক পল পৰ্য্যন্ত বাড়িয়া দশম তুলাতে অর্থাৎ উক্ত ১৪ অঙ্গুল-পরিমিত তুলাতে ১০ পল ওজন লোহাংশ থাকিতে পারিবে। এই সব তুলাযন্ত্রের উভয় পার্থে (মেয়দ্রব্য ও প্রতিমানের যুগপৎ ধারণজন্য), অথবা, এক পার্থে (মেয় ও মানকে পৰ্য্যায়ক্রমে ধারণজন্য) শিক্য বা শিক্য (সূত্রময় বাটী) থাকিবে।

(সুবর্ণ ও রূপ্য ব্যতীত অন্যান্য পদার্থ মাপিবার জন্য অন্য প্রকার তুলার নিরূপণ করা হইতেছে।) ৩৫ পল-পরিমিত লোহদ্বারা নিৰ্ম্মিত ও ৭২ অঙ্গুল (অর্থাৎ ৩ হস্ত)-পরিমিত আয়ামবিশিষ্ট সমবৃত্তা-নামে এক তুলা প্রস্তুত করা যায়। সেই তুলার মধ্যে পাঁচ পল-পরিমিত একটি মণ্ডল বা আংটী বাঁধিয়া (তিনি) সমকরণ (অর্থাৎ ঠিক মাঝামাঝি অংশে চিহ্নদান) করাইবেন। সেই সমচিহ্নের পর এক এক কাৰ্যক্রমে এক পল পৰ্য্যন্ত (অর্থাৎ ১ কর্ষ, ২ কর্ষ, ৩ কর্ষ ও ৪। কর্ষ বা ১ পল পৰ্য্যন্ত) মাপের চিহ্ন বসাইয়া যাইতে হইবে, তৎপর এক এক পলক্রমে দশ পল পৰ্য্যন্ত (অর্থাৎ ১ পল, ২, পল ইত্যাদিক্রমে দশ পল পৰ্য্যন্ত) মাপের চিহ্ন (তুলাতে) বসাইতে হইবে, (তৎপর)। ১২ পল, ১৫ পল ও ২০ পল পৰ্য্যন্ত মাপের চিহ্ন (অর্থাৎ এইভাবে ১৬টি চিহ্ন বা দাগ) (তুলাতে) বসাইতে হইবে, তৎপর। (অর্থাৎ ২০ পলের দাগের পর) দশ দশ পলক্রমে ১০০ পল পৰ্য্যন্ত (অর্থাৎ ৩০ পল, ৪০ পল ইত্যাদিক্রমে ১০০ পল পৰ্য্যন্ত) মাপের চিহ্ন বসাইতে হইবে। প্রত্যেক অক্ষে অর্থাৎ পঞ্চম, দশম, পঞ্চদশ প্রভৃতি দাগে নদ্ধবন্ধ (এক প্রকার রজ্জুর রেখাচিহ্ন; পাঠান্তরে, নান্দীবন্ধ অর্থাৎ স্বস্তিকাচিহ্ন } বসাইতে হইবে।

সমবৃত্তা তুলার দ্বিগুণ-পরিমিত (অর্থাৎ ৭০ পল-পরিমিত) লোহদ্বারা নিৰ্ম্মিত ও ৯৬ অঙ্গুল (অর্থাৎ ৪ হস্ত)-পরিমিত আয়ামবিশিষ্ট পরিমাণী-নামক তুলা প্রস্তুত করা যায়। ইহাতে সমবৃত্তা তুলাতে আব্দশিত রীতিতে ১০০ পল মাপের দাগের পর ২০ পল (অর্থাৎ ১২০ পল), ৫০ পল (অর্থাৎ ১৫০ পল) ও ১০০ পল (অর্থাৎ ২০০ পল) মাপের চিহ্ন বসাইতে হইবে।

(১০০ পলে এক তুলা ওজন হয়-এই রূপ) ২০ তুলাতে ১ ভার পরিমাণ মাপ বলিয়া ধৃত হয়।

(সুবৰ্ণ-রূপ্যাদির অতিরিক্ত দ্রব্য মাপিবার জন্য অন্য এক প্রকার পলবিশেষের বাটের কথা বলা হইতেছে, যথা-) পূর্বোক্ত ধরণের দশটিতে এক পলবিশেষ ধরা হয়। সেই দশধরণাত্মক পলের ১০০ টিতে এক আয়মানী তুলা পরিাগণিত হয় (ইহা রাজকীয় আয়ের মাপ করে বলিয়া এই সংজ্ঞাবিশিষ্ট)।

উক্ত আয়মানী তুলা হইতে ক্রমশঃ ৫ পল করিয়া কম পরিমাণে তুলার নাম যথাক্রমে ব্যবহারিকী তুলা (যাহা ক্রয়-বিক্রয়ের উপযোগিনী), ভজনী তুল৷ (ভৃত্যদিগকে দেয় দ্রব্যাদির মাপে ব্যবহার্ভাব্য) ও অন্তঃপুৰ্ব্বভাজনী তুলা (রাজমহিষী ও রাজপুত্রদিগকে দেয় দ্রব্যের মাপ-জন্য ব্যবহোর্তব্য), অর্থাৎ ইহার প্রথমটি ৯৫ পলাত্মক, দ্বিতীয়টি ৯০ পলাত্মক ও তৃতীয়টি °৮৫ পলাত্মক তুলাবিশেষ।

উক্ত ব্যবহারিকী প্রভৃতি তিন তুলার প্রত্যেক পলে উত্তরোত্তর আধ আধ ধরণ কম থাকিবে, অর্থাৎ আয়মানী তুলতে ১০ ধরণে এক পল হয়, কিন্তু, ব্যবহারিকী তুলাতে ৯২ ধরণে এক পল, ভজনী তুলাতে ৯ ধরণে এক পল ও অন্তঃপুরাভাজনী তুলাতে ৮২ ধরণে এক পল হয়। ইহাদিগের প্রত্যেক তুলাতে উত্তরোত্তর দুই দুই পরিমাণে লোহ কম থাকিবে, অর্থাৎ আয়মানীতে যদি ৩৫ পল লোহ থাকে, তাহা হইলে ব্যবহারিকীতে ৩৩ পল, ভাজনীতে ৩১° পল ও অন্তঃপুরাভাজনীতে ২৯ পল-পরিমিত লোহ থাকিবে। এবং ইহাদিগের প্রত্যেক তুলাতে উত্তরোত্তর ৬ অঙ্গুল-পরিমাণে আয়াম কম থাকিবে, অর্থাৎ আয়মানীতে যদি ৭২ অঙ্গুল আয়াম থাকে, তাহা হইলে ব্যবহারিকীতে ৬৬ অঙ্গুল, ভজনীতে ৬০। অঙ্গুল ও আন্তঃপুরাভাজনীতে ৫৪ অঙ্গুল আয়াম থাকিবে।

প্রথম দুইটি তুলাতে (অৰ্থাৎ সমবৃত্তা ও পরিমাণী তুলাতে) মাংস, লোহ, লবণ ও মণি ব্যাতিরিক্ত অন্য দ্রব্যের মাপ-সময়ে (শতপলে) ৫ পল পরিমাণে অধিক মাপা যায় এবং এই অতিরিক্ত পাঁচ পল প্রব্যাম-নামে খ্যাত হয়। কাষ্ঠভুল (অর্থাৎ সারদারু-নিৰ্ম্মিত তুলা) নিৰ্ম্মিত হইলে ইহার আয়াম ৮ হস্ত-পরিমিত হইবে, ইহাতে এক-দুইক্রমে পদ বা চিহ্ন প্রদৰ্শিত হইবে, ইহার জন্য প্রতিমান বা পাষাণাদিময় বাট থাকিবে, এবং ইহার”অধিষ্ঠান বা আধার ময়ুরপদাকার স্তম্ভ হইবে।

একপ্রস্থ-পরিমিত তণ্ডুলের পাকসাধনে ২৫ পল কাষ্ঠ বা ইন্ধন লাগে। এই নিয়মই বহু বা অল্পদ্রব্যাদির পরিমাপে ব্যবস্থিত থাকিবে। এই পৰ্য্যন্ত তুলা ও প্রতিমান (বা বাটের) বিষয় ব্যাখ্যাত হইল।

(সম্প্রতি ধান্যাদি মাপিবার জন্য দ্রোণ, আঢ়ক প্রভৃতির নিরূপণ কর হইতেছে।) ধান্য মাষ্যদ্বারা পূরণীয় ২০০ পল পরিমাণের নাম এক আয়মান দ্রোণ। সেইরূপ ১৮৭.৫ পল পরিমাণের নাম এক ব্যবহারিক দ্ৰোণ। আবার তেমন ১৭৫ পল পরিমাণের নাম এক ভাজনীয় দ্রোনি, এবং ১৬২.৫ পল পরিমাণের নাম এক অন্তঃপুরভাজনীয় দ্ৰোণ।

উক্ত চারি প্রকার দ্রোণের উত্তরোত্তর ১/৪ অংশ ভাগ কম হইতে থাকিলে ইহাদের আঢ়কাদি নাম হইবে, অর্থাৎ ১ দ্রোণের ১/৪ অংশের নাম আঢ়িক, ১ অঢ়িকের ই অংশের নাম প্রস্থ ও ১ প্রস্থের ১/৪ অংশের নাম কুড়ব।

ষোল দ্রোণে ১ খারী, কুড়ি দ্রোণে ১ কুন্তু ও দশ কুম্ভে ১ বহ হয়।

(ধান্যাদি মাপিবার জন্য) যে মান প্রস্তুত করিতে হইবে তাহা শুষ্ক দারুময় হইবে, ইহার (মূল ও অগ্রভাগ) সমান হইবে, এবং ইহার শিখাতে মেয়দ্রব্যের ই অংশ যেন ধরিতে পারা যায়-তেমন ভাবে নিৰ্ম্মাণ করিতে হইবে। অথবা, এই মানের শিখা ভিতরেও প্রবিষ্ট রাখা যাইতে পারে, অর্থাৎ মেয়দ্রব্য এই মানের মুখ পৰ্য্যন্ত মাপা যাইতে পারে। কিন্তু, (ঘৃততৈলাদি) রসদ্রব্যের মাপে আন্তঃশিখ মানই ব্যবহর্তব্য।

সুরা, পুষ্প, ফল, তুষ, অঙ্গার ও সুধা (চুণ)—এই সব দ্রব্য মাপিবার জন্য যে মান ব্যবহার করিতে হইবে তাহাও শিখামান হইতে পারে, কিন্তু, ইহা (ধান্যাদি মাপার শিখামানের মত) চতুৰ্ভাগাত্মক না হইয়া, ইহা দ্বিগুণাত্মক হইয়া বদ্ধিত হইবে।

এক দ্ৰোণ-পরিমিত দ্রব্য মাপিবার জন্য ব্যবহৃত মানভাণ্ডের মূল্য সওয়া পণ (১.২৫ পণ) নিৰ্দ্ধারিত হইবে। এক আঢ়ক-নামক মানভাণ্ডের মূল্য ৩/৪ পণ। এক প্রন্থ-নামক মানভাণ্ডের মূল্য ৬ মাষ ও কুড় ব-নামক মানভাণ্ডের মূল্য ১ মাষ হইবে।

রসাদি দ্রব্য মাপিবার জন্য ব্যবহৃত মানভাণ্ডের মূল্য উক্ত মূল্যের দ্বিগুণ হইবে, অর্থাৎ ১ দ্রোণের মূল্য ২.৫ পণ, ১ আঢ়কের মূল্য ১.৫ পণ, ১ প্রন্থের মূল্য ১.৫ মাষ ও ১ কুড়ুবের মূল্য ২ মাষ বুঝিতে হইবে।

উক্ত চতুৰ্দশ প্রকারের প্রতিমান সমূদয়ের (অর্থাৎ এক প্রস্থ বাটের) মূল্য ২০ পণ হইবে। এবং তুলাদণ্ডের মূল্য ইহার তৃতীয়াংশ ৬.৬৬ পণ হইবে।

(পৌতবাধ্যক্ষ)। প্রত্যেক চারিমাসে একবার তুলা ও মানের পরিশোধনকাৰ্য্য করাইবেন। যে ব্যক্তি যথাসময়ে পরিশোধন না করাইবে তাহাকে ২৭ষ্ট পণ দণ্ড দিতে হইবে। (তুলা ও মানব্যবহারী ব্যাপারীরা) তুলা ও বাট পরিশোধনের জন্য প্রত্যেক দিনে ১ কাকণিক হিসাবে কর পৌতবাধ্যক্ষকে দিবে অর্থাৎ প্রত্যেক চারিমাসে ১২০ কাকশিক কর পরিশোধনকালে তাঁহাকে দিবে।

(তপ) সুত খরিদ করার সময়ে, ইহার ১/৩২ অংশ তপ্তবয়াজী-নামে ব্যাজী অধিক লাইতে হইবে এবং (তপ্ত) তৈল খরিদ করার সময়ে ইহার ১/৬৪ অংশ তপ্তব্যাজী অধিক লাইতে হইবে। অন্যান্য দ্রব পদার্থের খরিদ-সময়ে ১/৫০ অংশ মানস্রাব-নামক ব্যাজী অধিক লাইতে হইবে।

(এক প্রস্থের চতুর্ভাগের নাম এক কুড়ুব বলা হইয়াছে) ইহার মানসম্মান ১ কুড়ুব, ১/২ কুড়ুব, ১/৪ কুড়ুব ও ১/৮ কুড়ুব হইতে পারে, অর্থাৎ এই চার প্রকার ছোট বাট ও ব্যবহৃত হইতে পারিবে।

৮৪ কুড়ুব ঘৃত মাপা হইলে ইহা বারিক-সংজ্ঞায় পরিচিত হয় এবং ৬৪ কুড়ব তৈল মাপা হইলেও ইহা বারিক-সংজ্ঞায় আখ্যাত হয়। এই ঘৃত-বারিক ও তৈলবারকের চতুর্ভাগ (অর্থাৎ যথাক্রমে ২১ কুড়ুব ও ১৬ কুড় ব) ঘটিকা (অর্থাৎ স্থতঘটিকা ও তৈলঘটিকা)-নামে আখ্যাত হয়। ১।৷

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষ প্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে তুলামানপৌতব-নামক উনবিংশ অধ্যায় (আদি হইতে ৪০ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

বিংশ অধ্যায়
৩৮শ প্রকরণ-দেশ ও কালের মান

মানাধ্যক্ষ (পৌতবাধ্যক্ষ)। দেশ (ভূমি ও তদ্বিকার প্রকারাদি) ও কালের মান জানিয়া লইবেন।

৮ পরমাণু (অতীন্দ্ৰিয় অণু) সংহত হইয়া রথচক্রদ্বারা উত্থাপিত (চক্ষুর্গ্রাহ্য) এক বিপ্রশ্নটি বা রজঃকণাতে পরিণত হয়। ৮ বিপ্রুট-বা ধূলিকণাতে ১ লিক্ষা হয়। ৮ লিক্ষাতে ১ যকীমধ্য হয়। ৮ ঘূকমধ্যদ্বারা ১ ব্যবমধ্য হয়। ৮ যবমধ্যদ্বারা ১ অঙ্গুল হয়।

অথবা, মধ্যম আকারবিশিষ্ট পুরুষের (হাতের) মধ্যম অঙ্গুলির মধ্যপ্রদেশের পৃথুত্রকে এক অঙ্গুলের পরিমাণ ধরা যাইতে পারে।

[ উক্ত মানগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে সংক্ষেপে নিবদ্ধ করা যায় যথা :

৮ পরমাণু= ১ বিপ্রুট (ধূলিকণা)
৮ বিপ্রুট = ১ লিক্ষা
৮ লিক্ষা = ১ যূকামধ্য
৮ যূকামধ্য = ১ যবমধ্য
৮ যবমধ্য = ১ অঙ্গুল ]

৪ অঙ্গুলদ্বারা ধনুর্গ্রহ হয়। ৮ অঙ্গুলদ্বারা ১ ঘনুর্মুষ্টি হয়।

১২ মঙ্গুলে ১ বিভক্তি বা ১ ছায়াপৌরুষ (শঙ্কুপ্রমাণ) হয়। ১৪ অঙ্গুলে ১ শম বা শল বা পরিরয় বা পদ হয় (এস্থলে সংজ্ঞা চারিটি) ২ বিতস্তিতে বা ২৪ অঙ্গুলে ১ অরজি বা প্ৰাজাপত্য (প্রজাপতি বা বিশ্বকৰ্ম্মার সম্মত) হস্ত।

[সংক্ষিপ্ত সূত্র এইরূপ হইতে পারে, যথা :

৪ অঙ্গুল = ১ ধনুর্গ্রহ
৮ অঙ্গুল বা ২ ধনুর্গ্রহ= ১ ধনুর্মুষ্টি
১২ অঙ্গুল = ১ বিতস্তি বা ছায়াপৌরুষ
১৪ অঙ্গুল = ১ শম বা শল বা পরিরায় বা পদ
২৪ অঙ্গুল বা ২ বিতক্তি= ১ অরস্থি (বা প্রাজাপত্য ১ হস্ত]

১ প্রাজাপত্য হন্তের (অর্থাৎ ২৪ অঙ্গুলের) সহিত ১ ধনুর্গ্রহ বা ৪ অঙ্গুল মিলিত হইলে যে (২৮ অঙ্গুলের) হস্তমান হইবে তাহা পৌতব (কাষ্ঠ তুলাদি) ও বিবীতের (পশুচারণক্ষেত্ৰাদির), মানকাৰ্য্যে ব্যবহৃত হয় এবং ১ প্ৰাজাপত্য হস্তের (অর্থাৎ ২৪ অঙ্গুলের) সহিত ১ ধনুমুষ্টি বা ৮ অঙ্গুল মিলিত হইলে যে (৩২ অঙ্গুলের) হস্তমান হইবে ইহার সংজ্ঞা কিষ্ণু বা কংস।

[ সংক্ষিপ্ত সূত্র এইরূপ হইতে পারে, যথা :

২৮ অঙ্গুল = ১ হস্ত (পৌতব ও বিবীত-মানে ব্যবহৃত)
৩২ অঙ্গুল = ১ কিছু বা কংস। ]

তক্ষা বা সূত্রধরের (ছুতারের) কাৰ্য্যের জন্য ৪২ অঙ্গুল-পরিমিত হস্ত ধরা যাইতে পারে। ক্রাকচ বা করপত্রের (করাতের) কৰ্ম্মের উপযোগী কিছু (অর্থাৎ ৩২ অঙ্গুল-পরিমিত) ব্যবহৃত হইতে পারে। উক্ত মানদ্রয় স্কন্ধাবার, দুর্গ ও রাজকুল বা রাজবাড়ীতে ব্যবহৃত হইতে পারে। কুপ্যদ্রব্যের বনে ব্যবহোর্তব্য মান ৫৪ অঙ্গুল-পরিমিত হস্ত ধরা যাইতে পারে।

৮৪ অঙ্গুলের ১ হস্তের নাম ব্যাম-ইহা রজজুর মান হইতে পারে এবং ইহ। (কুপাদি) খাতের পুরুষমানরূপে ব্যবহৃত হইতে পারে।

[ সংক্ষিপ্ত সূত্র এইরূপ হইতে পারে, যথা :

৪২ অঙ্গুল = ১ হস্ত (ভক্ষণের কাৰ্য্যে ব্যবহৃত)
৩২ অঙ্গুল = ১ হস্ত (কিরাপত্রকৰ্ম্মের কাৰ্য্যে ব্যবহৃত)
৫৪ অঙ্গুল = ১ হস্ত (কুপ্যবনের কাৰ্য্যে ব্যবহৃত)
৮৪ অঙ্গুল = ১ হস্ত (রজ্জুও খাতাদির মাপের কাৰ্য্যে ব্যবহৃত)]

৪ অরত্নিতে ১ ডণ্ড হয় (অর্থাৎ ৯৬ অঙ্গুলে ১ দণ্ড)। দণ্ডের অপর তিন সংজ্ঞা-ধনুঞ্জ, নালিকা ও পৌরুষ।

১০৮। অঙ্গুলো গাৰ্হাপত্য-ধনুঃ নামে এক মান হয়; ইহা পথ ও (দুর্গাদির) প্রাকারের মাপে ব্যবহৃত হয়। আবার সেই ১০৮। অঙ্গুলে ১ পৌরুষও হয়; ইহা যজ্ঞাদিতে) অগ্নির চয়নবিশেষে ব্যবহৃত মান। [ সংক্ষিপ্ত সূত্র এইরূপ হইতে পারে, যথা :

৪ অরত্নি বা ৯৬ অঙ্গুল = ১ দণ্ড, ধনুঃ, নালিকা বা পৌরুষ
১০৮ অঙ্গুল = ১ গাৰ্হপত্য ধনুঃ (পথ ও প্রাকারের মান)
১০৮ অঙ্গল = পৌরুষ (অগ্নিচিত্যের মান) ]

 ৬ কংসে অর্থাৎ ৮ হস্তে বা ১৯২ অঙ্গুলেও ১ দণ্ড হইতে পারে; ইহা ব্রহ্মদেয় ও অতিথির জন্য বিসৃষ্ট ভূমিপ্রভৃতির মান হইতে পারে। (৪ হস্তপরিমিত) দণ্ডের দশটিতে অর্থাৎ ৪০ হস্তে ১ রাজ্জু হয়। এইরূপ ২ রজ্জু বা ৮০ হস্তে ১ পরিদেশ হয়। এবং ৩ রজ্জু বা ১২০ হস্তে ১ নিবৰ্ত্তন।

[ সংক্ষিপ্ত সুত্র এইরূপ হইতে পারে, যথা :

৬ কংস বা ১৯২ অঙ্গুল বা ৮ হস্ত = ১ দণ্ড
(ব্রহ্মদেয় ও আতিথ্যের ভূম্যাদি মান)
১০ দণ্ড বা ৪০ হস্ত = ১ রজ্জু
২ রজ্জু বা ৮০ হস্ত = ১ পরিদেশ
৩ রজ্জু বা ১২০ হস্ত = ১ নিবৰ্ত্তন ]

(৩০ দণ্ডে যে ১ নিবৰ্ত্তন হয় তাহার) এক দিকে ২ দণ্ড বাড়াইয়া ধরিলে (এবং অন্যান্য দিকে ৩০ দণ্ডই রহিলে) যে মানবিশেষ দাড়াইবে, ইহার সংজ্ঞা বাহু। ২০০০ ধনুঃদ্বারা ১ গোরুত (বা ক্রোশ) হয়। ৪ গোরুতে ১ যোজন হয়। এই পৰ্য্যন্ত দেশমান নিরূপিত হইল।

[ সম্পূর্ণ দেশমানের সংক্ষিপ্ত সূত্র এইরূপ হইতে পারে, যথা :

৮ পরমাণু = ১ বিপ্রুট বা ধূলিকণা
৮ বিপ্রুট = ১ লিক্ষা
৮ লিক্ষা = ১ যুকামধ্য
৮ যুকামধ্য = ১ যবমধ্য
৮ যবমধ্য = ১ অঙ্গুল
৪ অঙ্গুল = ১ ধনুর্গ্রহ
২ ধনুর্গ্রহ = ১ ধবুমুষ্টি
১.৫ ধনুর্মুষ্টি = ১ বিতস্তি
২ বিতস্তি = ১ অরত্নি বা হস্ত
৪ অরত্নি = ১ দণ্ড
১০ দণ্ড = ১ রজ্জু
২ রাজু = ১ পরিদেশ
১.৫ পরিদেশ = ১ নিবৰ্ত্তন
৬৬.৫ নিবৰ্তন বা ২০০০ দণ্ড = ১ গোরুত বা ক্রোশ
৪ গোরুত = ১ যোজন ]

অতঃপর কালের মান ব্যাখ্যাত হইবে। তুট, লব, নিমেষ, কাষ্ঠা , কলা, নালিকা, মুহূৰ্ত্ত, (দিনের) পূৰ্ব্বভাগ, (দিনের) পরভাগ, দিবস, রাত্রি, পক্ষ, মাস, ঋতু, অয়ন, সংবৎসর ও যুগ–কালের এইরূপ সপ্তদশ ভাগ কল্পিত হয়।

এক নিমিষের (চক্ষুর পক্ষ্মপাতন-সময়ের) চতুর্থ অংশের নাম তুট (ইহাই যেন কালের পরমাণুভূত)। ২ তুটে ১ লব হয়; ২ লবে ১ নিমেষ হয়; ৫ নিমেষে ১ কাষ্ঠা হয়; ৩০ কাষ্ঠাতে ১ কলা হয়; ৪০ কলাতে ১ নালিকা হয়। (নালিকা শব্দের প্রকারান্তর উক্ত হইতেছে, যথা)-৪ সুবর্ণমাষ-পরিমাণ প্রস্থ ও ৪ অঙ্গুল দীর্ঘ একটি জলকুম্ভে ছিদ্র দিয়া তৎকুম্ভস্থিত ১ আঢ়ক জল যতটা সময়ে নিৰ্গত হয়-সেই পরিমাণ সময়ের সংজ্ঞাও নালিকা হইতে পারে।

২ নালিকায় ১ মুহূৰ্ত্ত হয়। ১৫ মুহূৰ্ত্তে ১ দিবস ও ১৫ মুহূৰ্ত্তে ১ রাত্ৰিও হয়; কিন্তু এই দুই পরিমাণ চৈত্র ও আশ্বিন মাসে ঘটে (কারণ, এই দুই মাসেই দিবস ও রাত্রি সমপ্রমাণ থাকে)। ইহার পরে ৬ মাস পৰ্য্যন্ত দিবস ও রাত্রির অন্যতরটি যথাক্রমে বাড়ে ও কমে (অর্থাৎ ৬ মাস দিবস বাড়ে ও রাত্রি কমে, আবার পরবর্তী ৬ মাসে দিবস কমে ও রাত্ৰি বাড়ে)। (চৈত্রবিষুবের পর দিবসের বৃদ্ধি ও রাত্রির হ্রাস, এবং আশ্বিনবিষুবের পর রাত্রির বৃদ্ধি ও দিবসের হ্রাস ঘটিতে থাকে)।

(সম্প্রতি ছায়াদ্বারা কালমানের নিরূপণ করা হইতেছে।) যখন ছায়া ৮ পৌরুষ অর্থাৎ ৯৬ অঙ্গুল দীর্ঘ প্রতিভাত হইবে, তখন সম্পূর্ণ দিনের ৮ ভাগ গত হইয়াছে। আবার ছায়া ৬ পৌরুষ (= ৭২ অঙ্গুল) দীর্ঘ প্রতীয়মান হইলে দিনের ১/১৪ অংশ গত হইয়াছে বুঝা যাইবে। ছায় ৪ পৌরুষ (= ৪৮ অঙ্গুল) দীর্ঘ হইলে ১/৮ অংশ, ২ পৌরুষ (= ২৪ অঙ্গুল) দীর্ঘ হইলে দিনের ১/৬ অংশ, ১ পৌরুষ (= ১২ অঙ্গুল) দীর্ঘ হইলে দিনের ১/৪ অংশ, ৮ জুলপরিমাণে দীর্ঘ হইলে দিনের ৩/১০ অংশ, ৪ অঙ্গুল-পরিমাণে দীর্ঘ হইলে দিনের ৩/৮ অংশ গত হইয়াছে বুঝিতে হইবে। যখন কোন ছায়া দৃষ্ট হইবে না (অর্থাৎ যখন ছায়া শঙ্কুতে প্রবিষ্ট হইবে।) তখন মধ্যাহ্ন সময় উপস্থিত জানিতে হইবে।

দিবসের মধ্যাহ্ন সময় পার হইলে—উক্তভাবেই (বিপরীতক্রমে) অবশিষ্ট দিবস-ভাগ গণনা করিতে হইবে।

আষাঢ় মাসের (অন্তে মধ্যাহ্ন কালে ছায়া দেখা যায় না। তারপর শ্রাবণাদি ছয় মাসে (পৌষ মাসের শেষ পৰ্য্যন্ত) ছায়া ২ অঙ্গুল-ক্রমে বাড়িতে থাকে এবং মাঘাদি ছয় মাসে (আষাঢ় মাসের শেষ পৰ্য্যন্ত) ইহা (ছায়া) ২ অঙ্গুল-ক্রমে কমিতে থাকে।

১৫ অহোরাত্ৰিতে ১ পক্ষ হয়। যে পক্ষে সোম (চন্দ্র) বাড়িতে থাকে, তাহার সংজ্ঞা শুক্লপক্ষ এবং যে পক্ষে চন্দ্র কমিতে থাকে, তাহার সংজ্ঞা বহুলপক্ষ (বা কৃষ্ণপক্ষ)।

উক্ত শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষদ্রয় মিলিয়া ১ মাস (সাবন মাস) হয়। ৩০ অহোরাত্র ধরিয়া ১ প্রকৰ্ম্মমাস (অর্থাৎ কৰ্ম্মকরদিগের ভূতি-গণনার মাস) হয়। অৰ্দ্ধ অহোরাত্র সহিত ৩০ অহোরাত্রে (অর্থাৎ ৩০ই দিনে) ১ সৌরমাস (সূৰ্য্যের গতির অনুসরূপে গণনীয় মাস) হয়। আবার অৰ্দ্ধ অহোরাত্র নূ্যন ৩০ অহোরাত্রে (অর্থাৎ ২৯ই দিনে”) ১ চান্দ্রমাস (চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধি অনুসারে গণনীয় মাস) হয়। আবার অর্দ্ধ অহোরাত্র ন্যূন ৩০ অহোরাত্রে এক মলমাস হয়। অশ্বপ্রবাহণ-কাৰ্য্যে নিযুক্ত কৰ্ম্মচারীদিগের বেতন-মাস ৩৫ অহোরাত্রে মাস ধরিয়া নিরূপিত হইবে। এবং হস্তিপ্রবাহণ কাৰ্য্যে নিযুক্ত কৰ্ম্মচারীদিগের বেতন-মাস ৪০ অহোরাত্রে মাস ধরিয়া নিরূপিত হয়।

২ মাসে ১ ঋতু হয়। শ্রাবণ ও প্রোষ্ঠপদ (ভাদ্র) এই দুই মাস বর্ষা ঋতু। আশ্বিন ও কাৰ্ত্তিক—এই দুই মাস শরৎ ঋতু। মাৰ্গশীর্ষ (বা অগ্রহায়ণ) ও পৌষ-এই দুই মাস হেমন্ত ঋতু। মাঘ ও ফাল্গুন–এই দুই মাস শিশির (বা শীত) ঋতু। চৈত্র ও বৈশাখ-এই দুই মাস বসন্ত ঋতু। জ্যেষ্ঠমূলীয় (জ্যৈষ্ঠ) ও আষাঢ়-এই দুই মাস গ্রীষ্ম ঋতু।

শিশিরাদি ৩ ঋতু (অর্থাৎ শিশির, বসন্ত ও গ্রীষ্ম ঋতুর) নাম উত্তরায়ণ। বর্ষাদি ৩ ঋতুর (অর্থাৎ বর্ষা, শরৎ ও হেমন্ত ঋতুর) নাম দক্ষিণায়ন। উক্ত ২ আয়নে (অর্থাৎ উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন মিলিত ধরিয়া) ১ সংবৎসর হয়। ৫ সংবৎসরে ১ যুগ হয়। এই পৰ্যন্ত (ব্যবহারিক কালমান নিরূপিত হইল)

[সম্পূর্ণ কালমানের সংক্ষিপ্ত সূত্র বা আৰ্য্যা এইরূপ হইতে পারে, যথা :
২ তুট = ১ লব
২ লব = ১ নিমেষ
৫ নিমেষ = ১ কাষ্ঠা
।৩০ কাষ্ঠা = ১ কলা
৪০ কলা = ১ নালিকা
২ নালিকা = ১ মুহূর্ত
১৫ মুহূৰ্ত্ত= ১ অহোরাত্র
১৫ অহোরাত্র = ১ পক্ষ
২ পক্ষ = ১ মাস
২ মাস = ১ ঋতু
৩ ঋতু = ১ অয়ন
২ অয়ন = ১ সংবৎসর
৫ সংবৎসর = ১ যুগ। ]

(সম্প্রতি দুইটি শ্লোকদ্বারা অধিমাস বা মলমাসের তত্ত্ব নিরূপিত হইতেছে।) সূৰ্য্য প্রতিদিন দিবসের ১/৬০ ভাগ ছেদ করিয়া লয়; এই কারণে (সূৰ্য্য) এক ঋতুতে (অৰ্থাৎ ৬০ অহোরাত্রে) এক দিন অধিক উৎপাদন করে (সুতরাং ২২ বৎসরে ১৫ দিন বাডাইয়া দেয়), এই প্রকারে চন্দ্র ও (সুৰ্য্যের মত) প্রতিদিন দিবসের ১/৬০ ভাগ কম করিয়া লয়, সুতরাং এক ঋতুতে এক দিন ছেদ করিয়া দেয় (সুতরা ২.৫ বৎসরে ১৫ দিন কমাইয়া দেয়)। এই ভাবে আড়াই বৎসরে (অর্থাৎ মাঘ প্রভৃতি ৩০ মাসে) গ্রীষ্ম ঋতুতে প্রথম অধিমাস বা মলমাস ও পাঁচ বৎসরে (অর্থাৎ অতঃপর আড়াই বৎসরে শ্রাবণ প্রভৃতি ৩০ মাসে) দ্বিতীয় অধিমাস বা মলমাস (সুৰ্য্যা ও চন্দ্র) উৎপাদন করে ॥ ১-২ ॥

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষ প্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে দেশ ও কালের মান-নামক বিংশ অধ্যায় (আদি হইতে ৪১ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

একবিংশ অধ্যায়
৩৯শ প্রকরণ-শুল্কাধ্যক্ষ

শুল্কাধ্যক্ষ শুল্কশালা নিৰ্ম্মাণ করাইবেন এবং সেই শালার পূর্ব্ব ও উত্তর দিকের প্রধান দ্বারাসমীপে এক ধ্বজ (শুল্কশালার চিহ্নরূপে) নিবেশিত করাইবেন।

(শুল্কাধ্যক্ষকত্ত্বক নিযুক্ত)। শুষ্ক-আদায়কারী চারি বা পাঁচজন কৰ্ম্মচারী (শুল্কশালাতে ভাণ্ডসহিত সমাগত বণিকদিগের সম্বন্ধে নিম্নলিখিতভাবে নিবন্ধপুস্তকে বার্তা লিখিবে, যথা—“নৈগম বা ব্যাপারীরা কে (অর্থাৎ তাহাদের নাম ও জাতি কি), কোথা হইতে তাহারা আসিয়াছে (অর্থাৎ তাহাদের নিবাস কোথায়), তাহারা কে কত পরিমাণ পণ্য বা বিক্ৰেয় বস্তু আনিয়াছে, এবং তাহারা কোথায় (অর্থাৎ কোন অন্তপালের নিকট হইতে) পণ্যবিশেষের পরিচয়বিষয়ক মুদ্রা বা বিজ্ঞপ্তিপত্র পাইয়াছে (অর্থাৎ কি কি মাল মুদ্রাযুক্ত হইয়া আসিয়াছে)।

যে ব্যাপারীরা মুদ্রারহিত পণ্য আনিয়াছে, তাহাদিগকে (অন্তপালের নিকট) দেয় (বর্তনী-নামক) শুল্কের দ্বিগুণ দণ্ড দিতে হইবে।

যে বণিকেরা কূট বা কপট মূদ্রাদ্বারা পণ্য মুদ্রিত করিয়া আনিবে, তাহাদিগকে দেয় শুল্কের আটগুণ দণ্ডকাপে দিতে হইবে।

যে বণিকেরা মুদ্রা পাইয়াও ইহা নষ্ট করিয়াছে, তাহাদিকে (অন্যান্য বণিকের দৃশ্য শুল্কশালার) কোন এক স্থানে ঘটিকাত্রয়কাল পৰ্য্যন্ত অবস্থানরূপ (আটক থাকারূপ) দণ্ড ভোগ করিতে হইবে।

যে পণ্যবাহী ব্যাপারী রাজমুদ্রার পরিবর্তন ঘটাইবে বা পণ্যবস্তুর নামের পরিবর্তন ঘটাইবে, তাহাকে (শুল্কাধ্যক্ষ) ১ষ্ট পণ (প্রত্যেক পুরুষবাহ্য দ্রব্যের জন্য দণ্ডরূপে) দেওয়াইবেন।

শুল্কশালাতে অবস্থিত ধ্ববাজার মূলদেশে উপস্থিত পণ্যদ্রব্যের পরিমাণ ও অর্ণ বা মূল্যের হার বৈদেহক বা বণিকেরাই এই ভাবে ঘোষণা কবিবে, যথা-“এই পণ্যের পরিমাণ এতখানি এবং ইহার অর্ঘ বা মূল্য এতখানি-ইহা কে ক্রয করিতে চাহেন?” তিনবার এই প্রকারে উদঘোষিত মাল যাহারা ক্রয়ার্থী (খরিদদার), তাহাদিগকে দিতে হইবে। খরিদসম্পর্কে ক্রেতা দিগের মধ্যে সংঘর্ষ (অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধির হেতৃভূত পরস্পর স্পৰ্দ্ধার সম্ভাবনা) উপস্থিত হইলে, পণ্যের মূল্য যতখানি বদ্ধিত হইবে (অর্থাৎ বণিকের পূর্ব্বনির্দ্দিষ্ট মালোব অপেক্ষায় যতখানি অধিক মল্য পাণ্ডুয়া যাইবে), তাহা (সেই নির্দ্দিষ্ট মূল্যের অতিরিক্ত মূল্য) শুদ্ধসহিত রাজকোশে প্রবেশ করিবে।

যদি (অধিক) শুল্কদানের ভয়ে কোন পণ্যবাহী বণিক পণ্যোব পরিমাণ (ইয়ত্তা) কিংবা ইহার মূল্য কম করিয়া বলে, তাহা হইলে ততক্ত পরিমাণ ও মূল্যের অতিরিক্ত যে পরিমাণ ও মূল্য পাওয়া যাইবে তাহা রাজা হরণ করিবেন। অথবা, সেই বণিককে (এই অপরাধের জন্য)। আটগুণ শুল্ক দিতে হইবে।

যে ব্যাপারী (উত্তম) পণ্যদ্বারা পূরিত ভাণ্ডের মালসঙ্গন্ধে হীন বা নিরুষ্ট প্রতিবর্ণক বা নমুনা দেখাইয়া (অধিক শুল্কভয়ে) মালের মূল্য পাতিত করিবে, কিংবা সারভাণ্ড (উত্তম দ্রব্যসমূহ) ফল্গুভাণ্ডদ্বারা (নিকৃষ্ট দ্রব্যদ্দারা) প্রতিচ্ছাদিত করিয়া (ঢাকিয়া) রাখিবে তাহাকেও পুর্বোক্ত আটগুণ শুল্করূপ দণ্ড দিতে হইবে।

পণ্যের প্রতিক্রিয়কারীর ভয়ে কোন ক্রেতা যদি পণ্যের নির্দ্দিষ্ট মূল্যের উপরও মূল্য বাড়াইয়া (পণ্য) খরিদ করিতে চাহে, তাহা হইলে সেই মূল্যের বদ্ধিতাংশ রাজা হরণ করিবেন। অথবা, তাহাকে দ্বিগুণ শুল্ক দিতে হইবে।

(বন্ধুত্র বা উৎকোচের জন্য)। যদি কোন শুল্কাধ্যক্ষ কোন বৈদেহক বা ব্যাপারীর দোষ গোপন করেন, তাহা হইলে তাঁহাকে বৈদেহকদিগের উপর তৎ তৎ অপরাধের জন্য ধাৰ্য্য দণ্ডের আটগুণ দণ্ড দিতে হইবে।

অতএব, (তোলনীয়, পরিমেয় ও গণনীয়) পণ্যের বিক্রয়, তুলাতে তোলিত, (প্রস্থাদিদ্বারা) পরিমিত ও (সংখ্যা দ্বারা) গণিত করিয়া, সম্পন্ন করিতে হইবে (যাহাতে অসত্য ব্যবহার না ঘটিতে পারে।)। (অঙ্গারাদি) ফন্ধভাণ্ড ও শুল্কমুক্তি বা স্বল্পশুদ্ধরূপ অনুগ্রহপ্ৰাপ্ত (লবণাদি) পণ্যের সম্বন্ধে মান ও অর্ঘ তর্কাত্মক (সম্ভাবনাত্মক) বলিয়া ধরা যাইতে পারে (অর্থাৎ মোটামুটি বিচারদ্বারা ইহা ধাৰ্য্য হইতে পারে।)।

শুল্কদানের ব্যবস্থা না করিয়া (যে-সব ব্যাপারী শুল্কশালার) ধ্বজামূল অতিক্রম করিয়া পলাইয়া যাইবে, তাহাদিগের উপর দেয় শুল্কের আটগুণ দণ্ড প্রদত্ত হইবে। (রাজার চররাপে নিযুক্ত হইয়া) বাণিজ্যের ছলে পথচারী ও (তৃণকাষ্ট্যাদি-হারক ও পশুপাল প্রভৃতি) উৎপথচারী (অর্থাৎ রাজাদেশে সর্বজনচাৰ্য্য রাস্ত ব্যতীত অন্যান্য আরণ্য রাস্ত দিয়া যাতায়াতকারী) পুরুষেরা তাহা (অর্থাৎ অরুতগুল্ক বণিকদিগের শুল্কশাল অতিক্রম করিয়া পলায়ন) জানিয়া লইবে (যেন অভিযোগ উপস্থিত হইলে তাহারা সাক্ষী হইতে পারে।)।

(নিম্নলিখিত দ্রব্যসমূহের উপর শুষ্ক ধাৰ্য্য হইবে না।) যে ভাণ্ড বা পণ্যদ্রব্য বিবাহের কাৰ্য্যে লাগিবে, যাহা (নুতন বধু পতিগৃহে) যাওয়ার স্বময়ে (পিতৃগৃহ হইতে) সঙ্গে নিয়া যায়, (অন্নসত্ৰাদির জন্য)। যাহা উপায়নীরূপে প্রদত্ত হয়, (দধি-দুগ্ধাদি) যাহা যজ্ঞকাৰ্য্যের জন্য ও (ঔষধাদি) যাহা প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় এবং দেবতার ইজ্যা বা নিত্যনৈমিত্তিক পূজাদি ক্রিয়া, চৌল, উপনয়ন, গোদান, ব্রত-দীক্ষাদি নানাপ্রকার সংস্কার ও ধৰ্ম্মকাৰ্য্যে যে-সব দ্রব্য আবশ্যক হয়-সে-সব দ্রব্য বিনা শুঙ্কে (নগরাদিতে) প্রবেশ করান যাইতে পারে। উক্ত বিষয়সম্বন্ধে কেহ অন্যথা বলিয়া (অর্থাৎ অবৈবাহিক ভাণ্ডকে বৈবাহিক ভাণ্ড ইত্যাদি বলিয়া) মাল নিতে চাহিলে তাহাকে চোরাদণ্ডে দণ্ডিত হইতে হইবে।

ষে মালের উপর শুষ্ক দেওয়া হইয়াছে (সেই মালের বাসনে বা বস্তাদিতে) সেই মালের সঙ্গে অদত্তশুষ্ক মাল নিস্ক্রমণ করিলে, এবং এক প্রকার মালের জন্য মুদ্রা প্রদৰ্শন করিয়া (তত্ত ল্যরূপ) দ্বিতীয় প্রকারের মাল নিৰ্বাহিত বা নিশ্রুমিত করিলে, এবং পুট বা পণ্যবাসন ভাঙ্গিয়া তন্মধ্যস্থিত মালের সঙ্গে অদত্তশুদ্ধ মাল ভরিয়া নিলে, অপরাধী বৈদেহক বা বণিককে সেই নিশ্রুমিত মাল ও (আর এক প্রস্থ) তৎপরিমিত মাল দণ্ডরূপে দিতে হইবে।

যে ব্যাপারী শুল্কস্থান হইতে গোময় ও পলাল (ধন্যস্তম্ব) অর্থাৎ নিঃসার দ্রব্য (ছলপূর্ব্বক) প্রমাণ করিয়া (সারদ্রব্য) নিস্ফীমিত করিয়া নিবে, তাহার প্রতি উত্তম সাহস দণ্ড বিহিত হইবে।

কেহ যদি (রাজা দ্বারা) অনিৰ্বাহ! (অর্থাৎ স্বদেশ হইতে অনির্বাহিত হওয়ার যোগ্য বলিয়া প্রখ্যাপিত) শস্ত্র, বৰ্ম্ম, কবচ, লোহ, রথ, রত্ন, ধান্য ও পশুর মধ্যে যে কোন দ্রব্য নির্বাহিত বা নিশ্রুমিত করে, তাহা হইলে তাহাকে রাজা দ্বারা প্রখ্যাপিতরূপ দণ্ড দিতে হইবে এবং তাহার নির্বাহমান শস্ত্ৰাদি পণ্যও নষ্ট করা হইবে।

আবার কেহ উক্ত শস্ত্ৰাদি পণ্যের যে কোনটিকে বাহির হইতে (নগরাভ্যন্তরে) আনিতে ইচ্ছা করিলে, তাহার সেই পণ্য (দুৰ্গাদির) বাহ্যদেশেই বিনা শুল্কে বিক্রীত হইতে পারিবে। অন্তপাল পণ্যাদির বহন (শকটাদির) জন্য ১.২৫ পণ (মার্গরক্ষানিমিত্তক) বৰ্ত্তনী-নামক শুল্ক লইবেন, এবং (অশ্ব প্রভৃতি) একক্ষরবিশিষ্ট জন্তুর জন্য ১ পণ, (গবাদি) পশুর জন্য ১/২ পণ, (মেষাদি) ক্ষুদ্র পশুর জন্য ১/৪ পণ ও স্কন্ধে (মাল-) বহনকারী পুরুষের জন্য ১ মাষ শুল্ক লইবেন। (মার্গমধ্যে) কাহারও কোন মাল হারাইয়া গেলে বা চোরে চুরি করিয়া নিলে, অন্তপালকে ইহার প্রতিবিধান করিতে হইবে (অর্থাৎ অনুসন্ধানদ্বারা সেই মাল পাওয়াইতে হইবে–নচেৎ তাঁহাকে তাহা নিজে পূরণ করিয়া দিতে হইবে)।

(অন্তপাল) বিদেশ হইতে আগত সাৰ্থ বা বণিকৃসংঘের সারভাণ্ড ও ফন্তুভাণ্ডের ইয়াত্তা অনুসন্ধান করিয়া এবং তাহাতে নিজের অভিজ্ঞান (স্বহস্তেলেখের চিহ্ন) ও মুদ্রা (পণ্যপুটের উপর করণীয় শিলমোহর) অৰ্পণ করিয়া, সেই সার্থকে শুস্কাধ্যক্ষের নিকট পাঠাইয়া দিবেন।) যেন শুল্কাধ্যক্ষ কিছু হরণ না করিতে পারেন)।

অথবা, (রাজনিযুক্ত) বৈদেহকের বেশধারী গূঢ়পুরুষ সাৰ্থ বা বণিকসংঘের প্রমাণ (অর্থাৎ পণ্য বহুনাদির সংখ্যা) রাজাকে (গোপনে) নিবেদন করিবে। (গূঢ়পুরুষের) সেই (গুপ্ত) উপদেশানুসারে রাজা নিজের সর্বজ্ঞত্র খ্যাপনের জন্য শুদ্ধাধ্যক্ষের নিকট সার্থের বা বণিকৃসংঘের প্রমাণ জানাইয়া দিবেন। তৎ পর শুল্কাধ্যক্ষ সার্থের নিকট উপস্থিত হইয়া বলিবেন—“অমুক অমুক (বণিকের) এতখানি সারভাণ্ড ও এতখানি ফন্তুভাণ্ড সঙ্গে আছে-তোমরা ইহা লুকাইতে পারিবে না। এইরূপ (পরোক্ষ দ্রব্যজাতের ইয়ত্ত-নির্ণয়) আমাদের রাজার (সৰ্বজ্ঞতার) প্রভাবেই ঘটিয়া থাকে”।

(এইভাবে উক্ত হইয়াও) যে বণিক নিজের (কার্পাসাদি) ফন্থভাণ্ড লুকাইবে, তাহাকে সেই মালের উপর দেয় শুল্কের আট গুণ শুল্ক দিতে হইবে; এবং যে নিজের (‘রত্নাদি) সারভাণ্ড লুকাইবে, তাহাকে সম্পূর্ণ মাল (রাজসরকারে) ছাড়িয়া দিতে হইবে অর্থাৎ তাহার সব মাল অপহৃত হইবে)।

যে ভাণ্ড (বা বিষম্যাদি বিক্রেয় দ্রব্য)। রাষ্ট্রের পীড়া বা অনিষ্ট উৎপাদন করে, কিংবা যে ভাণ্ড অফল বা অল্প ফলবিশিষ্ট, রাজা তাহার (আমদানী) বন্ধ করিবেন বা তাহা নষ্ট করিবেন। কিন্তু, লোকের মহোপকারসাধক (নিজ রাষ্ট্রে) দুর্লভ (ব্রীহি প্রভৃতি ধান্যের) বীজ অশুদ্ধ করিয়া দিবেন। (অর্থাৎ ইহা বিনাশুল্কে রাজ্যে প্রবেশ করিতে দিবেন)। ১।৷

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষপ্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে শুল্কাধ্যক্ষ-নামক একবিংশ অধ্যায় (আদি হইতে ৪২ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

দ্বাবিংশ অধ্যায়
৩৯শ প্রকরণ-শুল্কাধ্যক্ষ; শুল্ক ব্যবহার বা শুল্কব্যবস্থা

শুল্ক ব্যবহার (অর্থাৎ কোন পণ্যের উপর কতখানি শুল্ক দিতে হইবে ইহার ব্যবস্থা) নিরূপিত হইতেছে। শুল্ক তিন প্রকার হইতে পারে, যথা(১) বাহ্যশুল্ক (অর্থাৎ জনপদে উৎপন্ন পণ্যসম্বন্ধে যাহা ধাৰ্য্য হয়), (১) আভ্যন্তর শুল্ক (অর্থাৎ দুর্গ ও নগরাদিতে উৎপন্ন পণ্যসম্বন্ধে যাহা ধাৰ্য্য হয়) ও (৩) আতিথ্য শুল্ক (অর্থাৎ বিদেশ হইতে আগত পণ্যসম্বন্ধে যাহা ধাৰ্য্য হয়)। উক্ত প্রত্যেক প্রকার শুল্ক আবার দুই ভাগে বিভক্ত হইতে পারে, যথা-(১) নিষ্ক্রাম্য শুল্ক (অর্থাৎ এক দেশ হইতে নিম্ৰাম্য পণ্যের নিষ্ক্রামণ নিমিত্তক শুল্ক) ও (২) প্রবেশ্য শুল্ক (অর্থাৎ অন্য দেশ হইতে প্রবেশনীয় পণ্যের প্রবেশ-নিমিত্তক শুল্ক)।

পরদেশ হইতে আগত পণ্যের উপর ইহার মূল্যের ১/৫ অংশ শুল্করূপে ধাৰ্য্য হইবে (ইহা সামান্য বিধান)। (কিন্তু,) পুষ্প, ফল, শাক, মূল, (সুরণাদি) কন্দ, (কুন্মাণ্ডাদি) বাল্লিক্য, (ধান্যাদি) বীজ, শুল্ক মৎস্য ও শুল্ক মাংস-এই দ্রব্যগুলির মূল্যের ১/৬ ভাগ শুল্করূপে (শুল্কাধ্যক্ষ)। গ্রহণ করিবেন।

(তিনি) শঙ্খ, বজ (হীরক), মণি, মুক্ত প্রবাল ও হারের সম্বন্ধে শুল্কনিরূপণ করাইবেন তৎ তৎ দ্রব্যের লক্ষণ-বিচক্ষণ পুরুষদিগের সহায়তায় কারণ, তাহারা সেই সেই দ্রব্যের (নিৰ্ম্মাণ–) কৰ্ম্ম, পরিমাণ, (নিৰ্ম্মাণের) কাল, বেতন ও ফলনিস্পত্তি (অৰ্থাৎ পণ্যের পূর্ণ উদ্ভব বা নিৰ্ম্মাণ) অবগত থাকে (সুতরাং দ্রব্যগুলির মূল্য তাহারা জানে বলিয়া শুল্কের সমুচিত নির্ণয় করিয়া দিতে সমর্থ হইবে)।

ক্ষৌম (স্থূল বল্কজ রেশমের বস্ত্র), দুকুল (সূক্ষ্ম বল্কজ রেশমের বস্ত্র), ক্রিমিতান (কৃমিকোশ হইতে প্ৰাপ্ত রেশমের চীনপটাদি), কঙ্কট (, সুত্রজাত কবচাদি), হরিতাল, মনঃশিল, হিজুলুক, লোহ ও বর্ণধাতু (গৈরিকাদি), এবং চন্দন, অগুরু, (পিপ্পলাদি) কটুক, কিশ্ববর (মদ্যবীজ প্রভৃতি তৈলজাতীয় দ্রব্যজাত), এবং সুরা, দন্ত (গজদন্তাদি), অজিন (কৃষ্ণচৰ্ম্ম), ক্ষৌম ও দুকূল নিৰ্ম্মাণের তন্তুসমূহ, (গালিচ্যাদি) আস্তরণ, (শয্যার জন্য) প্রাবরণ ও কৃমিজাত (কৌশেয় দ্রব্যাদি), এবং অজ (ছাগ) ও এড়কের (মেষের) লোমিদ্বারা প্রস্তুত বস্ত্রাদির উপর (মূল্যের) ১/১০ ভাগ কিংবা ১/১৫ ভাগ শুল্করূপে নিৰ্দ্ধারিত হইবে।

বস্ত্র, চতুষ্পদ ও দ্বিপদ জন্তু, সূত্র, কার্পাস, গন্ধদ্রব্য, ভৈষজ্য (ওষধি), কাষ্ঠ, বেণু, বল্কল, চৰ্ম্ম ও মৃগ্নিৰ্ম্মিত ভাণ্ডের (কলশাদি দ্রব্যের) এবং ধান্য, (ঘৃতাদি) স্নেহদ্রব্য, ক্ষার, লবণ, মদ্য, ও পঙ্ক অন্ন প্রভৃতির উপর (মূল্যের) ১/২০ কিংবা ১/২৫ ভাগ শুল্করূপে নিৰ্দ্ধারিত হইবে।।

(নগরের প্রধান দ্বারাধ্যক্ষ)। প্রত্যেক পণ্যের জন্য নিৰ্দ্ধারিত শুল্কের টু ভাগ দ্বারা দেয় শুল্ক বলিয়া সংগ্রহ করিবেন। (এই দ্বারা দেয় শুল্ক ও) অন্যান্য যে শুল্ক রাজার অনুগ্রহবশতঃ আনীত পণ্যের উপর ধাৰ্য্য হয় তাহা স্বদেশের উপকারের উপর দৃষ্টি রাখিয়া (শুল্কাধ্যক্ষ) স্থাপিত করিবেন।

যে যে ভূমিতে যে যে পণ্য উৎপন্ন হয়, তাহা সেই ভূমিতে বিক্রয় করিতে পারা যাইবে না।

খনি হইতে উৎপন্ন ধাতু ও তদ্ধাতুদ্বারা নিৰ্ম্মিত পণ্যসমূহের গ্রহণে গ্রহণকারীর (ও তদ্বিক্রয়কারীর) উপর ৬০০ পণ দণ্ড ধাৰ্য্য হইবে।

পুষ্পবাট ও ফলবাট হইতে পুষ্প ও ফল গ্রহণ করিলে, গ্রহণকারীর (ও তদ্বিক্রয়কারীর) উপর ৫৪ পণ দণ্ড ধাৰ্য্য হইবে।

ষণ্ড (বা শাকাদি উদ্ভিজ্জ দ্রব্যের ক্ষেত্র) হইতে শাক, মূল ও কন্দ গ্রহণ করিলে। গ্রহণকারীর (ও তদ্বিক্রয়কারীর) উপর ৫১.৭৫ পণ দণ্ড ধাৰ্য্য হইবে।

(ধান্যাদির) ক্ষেত্র হইতে সর্বপ্রকার শস্য গ্রহণ করিলে, গ্রহণকারীর (ও তদ্বিক্রয়কারীর) উপর ৫৩ পণ দণ্ড ধাৰ্য্য হইবে।

ইহার অতিরিক্ত প্রত্যেক ক্ষেত্রজ দ্রব্যের (ক্রয়জন্য)। ১ পণ ও (বিক্রয়জন্য)। ১.৫ পণ সীতাত্যয় বা কৃষিজাত দ্রব্যসম্বন্ধী দণ্ড বলিয়া ধাৰ্য্য হইবে।

অতএব, নূতন ও পুরাতন পণ্যের উপর বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন জাতির আচারানুসারে শুল্ক নিৰ্দ্ধারিত হইবে এবং (দেশে) সেই সব পণ্যজনিত কোন অপকার সম্ভাবিত হইলে তজ্জন্য অত্যয় বা দণ্ডের ও ব্যবস্থা করিতে হইবে ॥ ১।৷

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষপ্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে শুল্কাধ্যক্ষপ্রকারণোক্ত শুল্কব্যবহার-নামক দ্বাবিংশ অধ্যায় (আদি হইতে ৪৩ অধ্যায়) সমাপ্ত।

.

ত্রয়োবিংশ অধ্যায়
৪০শ প্রকরণ – সূত্রাধ্যক্ষ

সূত্ৰাধ্যক্ষ সূত্রশিল্পিকুলে জাত সূত্রকৰ্ম্মকুশল পুরুষদ্বারা সূত্র, বৰ্ম্ম (কবচ), বস্ত্র ও রজ্জুর (কৰ্ত্তন ও বানাদি কাৰ্য্যরূপ) ব্যবহার বা নিৰ্ম্মাণাদি কৰ্ম্ম করাইবেন।

বিধবা স্ত্রী, অঙ্গবিকল স্ত্রী, (অবিবাহিতা) কন্যা, প্রব্রজিতা (সন্ন্যাসিনী) ও দণ্ড প্রতিকারিণীর (অর্থাৎ যে স্ত্রীলোককে দণ্ডের নিশ্রুয়রূপে কৰ্ম্ম করিতে হয়, সে স্ত্রীলোকের) সহায়তায়, এবং গণিকামাতৃকা (বেশ্যাদিগের ধাত্রী), বৃদ্ধ রাজদাসী (রাজপরিচারিকা) ও (নৃত্যগীতাদিদ্বারা) দেবতার উপস্থান বা পূজাকাৰ্য্য হইতে যাহারা অযোগ্য বলিয়া নিবৃত্ত হইয়াছে সে সব দেবদাসীগণদ্বারা, উৰ্ণ (মেষাদির লোম), বন্ধ (মূর্বাদির ত্রসর), কার্পাস, তুলা (শাল্মল্যাদি), শণ ও ক্ষৌম হইতে প্ৰাপ্ত তন্তুদ্বারা (সূত্র) কাটাইবেন।

(সুত্ৰাধ্যক্ষ) সূত্রের শ্লক্ষ্ণতা (চাকচিক্য), স্থূলতা ও মধ্যতাসম্বন্ধে উত্তমরূপে জানিয়া (সুত্রকৰ্ত্তনের) বেতন নিৰ্দ্ধারিত করিবেন। এবং (তিনি এক সময়ে কৰ্ত্তনের বহুত্র ও অল্পত্ত্ব জানিয়াও (বেতন নিৰ্দ্ধারণ করিবেন, অর্থাৎ কাৰ্য্যের অধিকতা ও নৃত্যুনতা বিবেচনা করিয়া তাহা করিবেন)। সূত্রের প্রমাণ (ওজন ও লম্বতা প্রভৃতি) জানিয়া (তিনি) তাহাদিগের (বিধবা প্রভৃতির) গুণ বিবেচনা করিয়া তাহাদিগকে (তাহাদের প্রীতি ও অন্যের প্ৰোৎসাহনের জন্য তাহাদিগের ব্যবহারার্থ) তৈল, আমলক ও অন্যান্য উদ্বাৰ্ত্তন৷দ্বারা (অর্থাৎ শরীরের মলাপকর্ষনার্থ অন্যান্য পিষ্টকাদিদ্বারা) অনুগৃহীত করিবেন।

(পার্বণাদি) তিথিসমূহেও (অর্থাৎ যেগুলি কৰ্ম্মদিবস নহে, সেই সব দিনেও) দান ও মানদ্বারা (তাহাদিগের দ্বারা) কৰ্ম্ম করাইতে হইবে। দ্রব্যসার (অর্থাৎ দ্রব্যের মূল্যাদি) অপেক্ষা করিয়া (তিনি) সূত্রহ্লাসের জন্য (অর্থাৎ সূত্রের ন্যায্য প্রমাণের নূ্যনতার জন্য) বেতনহাস বিধান করিতে পারিবেন।

(তিনি) যে-সব তন্তুবায় প্রভৃতি কারুগণ কাৰ্য্যের প্রমাণ, সময়, বেতন ও ফলনিস্পত্তি (অর্থাৎ নিম্পন্ন বস্ত্ৰাদিরূপ ফল) সম্বন্ধে চুক্তিতে আবদ্ধ হইবে তাহাদিগের দ্বারাও (, সুত্রকৰ্ত্তন ও বানাদি) কৰ্ম্ম করাইয়া লইবেন, এবং তাহাদিগের ছলপ্রয়োগাদির অবগতির জন্য তিনি তাহাদিগের সহিত সখ্যসূত্রে মিশিয়া চলিবেন।

তিনি ক্ষৌম, দুকুল, ক্রিমিতান (রেশম), রাঙ্কব (রঙ্কু-নামক মৃগের লোমজ) ও কার্পাসের সুত্রকৰ্ত্তন ও সুত্রবানের (বস্ত্রনিৰ্ম্মাণের) জন্য কৰ্ম্মান্ত বা কারখানা স্থাপন করিয়া গন্ধ ও মাল্যদানদ্বারা ও অন্য প্রকার আনুকুল্য-বিধায়ক পারিতোষিকাদিম্বারা (শিল্পী দিগকে) প্রসন্ন রাখিবেন। (এবং তাহাদিগের দ্বারা তিনি) নানাপ্রকার বস্ত্র আস্তরণ ও প্ৰাবরণ নিৰ্ম্মাণ করাইবেন।

তৎ তৎ কাৰ্য্যে নিপুণ কারু ও শিল্পিগণদ্বারা তিনি কঙ্কটের (অর্থাৎ সূত্রময় কবচাদির) কৰ্ম্মান্ত বা কারখানাও স্থাপিত করিবেন। যে-সব স্ত্রীলোক স্বামীর প্রবাসনিমিত্ত বিযুক্তস্বামিকা, যে-সব বিকলাঙ্গী স্ত্রীলোক ও (অবিবাহিতা) কন্যা বাড়ীর বাহিরে নিক্সক্ৰান্ত হয় না, অথচ যাহারা স্বপরিশ্রমদ্বারা অজিত গ্ৰাসাচ্ছাদনের উপরই দেহযাত্রা নির্ভর করে, (সূত্ৰাধ্যক্ষ) নিজের দাসীগণদ্বারা তাহাদিগকে অনুবর্তিত করিয়া, প্ৰীতিসৎকারপূর্ব্বক তাহাদিগের দ্বারা (সুত্রকৰ্ত্তন ও বানাদি) কৰ্ম্ম করাইবেন।

যে-সব স্ত্রীলোক নিজেরাই অতি প্রত্যুষে স্বত্বশালাতে আগমন করিবে, তাহাদিগের সম্বন্ধে তিনি তাহাদের নিকট হইতে সুত্ৰাদি ভাণ্ড (অর্থাৎ নিৰ্ম্মিত সূত্ৰাদি দ্রব্য) লইয়া ইহার বিনিময়ে তাহাদিগের প্রাপ্য বেতন দেওয়ার বন্দোবস্ত করিবেন এবং সেই সময়ে সূত্রাদির গুণ পরীক্ষার জন্য প্রদীপের প্রয়োজন হইলে (অধ্যক্ষকে) ততখানি প্রকাশযুক্ত প্রদীপের ব্যবস্থা করিতে হইবে যদ্বারা সেই পরীক্ষাকাৰ্য্যই কেবল চলিতে পারে (অর্থাৎ আগত স্ত্রীলোকদিগের মুখাদিদর্শন যেন অধিক দীপপ্রকাশে না ঘটিতে পারে)।

(এই অবস্থায় অধ্যক্ষ) যদি উপস্থিত কোন স্ত্রীলোকের মুখ দর্শন করেন, কিংবা প্রকৃত কাৰ্য্যের অতিরিক্ত কোন বিষয়ে তাহার সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তা বলেন, তাহা হইলে তাঁহার উপর উত্তম সাহস দণ্ড বিহিত হইবে। বেতনপ্ৰাপ্তির নিৰ্দ্ধারিত সময় অতিক্রম করিলে (তাহাকে) মধ্যম সাহস দণ্ড ভোগ করিতে হইবে এবং (উৎকোচাদি লাভের আশায়) অকৃত কৰ্ম্মের জন্য (কাহাকেও) বেতন দিলেও (তিনি) সেই মধ্যম সাহস দণ্ড ভোগ করিবেন। যে স্ত্রীলোক বেতন লইয়াও কৰ্ম্ম করিবে না। তাহার উপর অঙ্গুষ্ঠচ্ছেদ রূপ দণ্ড (সুত্ৰাধ্যক্ষ) দেওয়াইতে পারিবেন এবং এই দণ্ড তাহাদিগের উপরও পতিত হইতে পারিবে যাহারা (সুদ্রাদি দ্রব্য) ভক্ষণ (অর্থাৎ আত্মসাৎ) করিবে, বা অপরিহণ করিবে, কিংবা তাহা লইয়া পলাইয়া যাইবে। (দেহদণ্ড ছাড়াও) কৰ্ম্মকরগণের অপরাধ বিবেচনা করিয়াই তাহাদিগের প্রতি বেতন-কৰ্ত্তনরূপ দণ্ড বিহিত হইতে পারিবে।

রজ্জুবর্তন ও চৰ্ম্মময় উপকরণাদি নিৰ্ম্মাণ করিয়া যাহারা জীবিকা উপাৰ্জন করে তাহাদিগের সহিত (সূত্ৰাধ্যক্ষ)। স্বয়ং সংসৰ্গ বা সখ্য রাখিবো। বরাত্ৰাদি (অর্থাৎ গবাশ্বাদির বন্ধনী প্রভৃতি) ভাণ্ড (উপকরণদ্রব্যও)। তিনি নিৰ্ম্মাণ করাইবেন।

(কার্পাসাদি) সূত্র ও (শণাদি)বল্ক হইতে নিৰ্ম্মাতব্য রজ্জু এবং বেত্র ও বেণু হইতে নিৰ্ম্মাতব্য বরত্রা (গবাশ্বাদির বন্ধনী), যাহা সন্নাহ (কবচাদি যুদ্ধোপকরণ) ও (রথাদি) যান এবং (অশ্বাদি) যুগ্যের বন্ধনের উপযোগী হইবে।-সে-সব বস্তু (আবশ্যকতানুসারে অধ্যক্ষ) নিৰ্ম্মাণ করাইবেন। ১।৷

কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্ৰে অধ্যক্ষ প্রচার-নামক দ্বিতীয় অধিকরণে সূত্ৰাধ্যক্ষ-নামক ত্রয়োবিংশ অধ্যায় (আদি হইতে ৪৪ অধ্যায়) সমাপ্ত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *