শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – ৪. চতুর্থাঙ্ক

চতুর্থাঙ্ক

প্রথম গর্ভাঙ্ক

প্রতিষ্ঠানপুরী-রাজগৃহ।
(রাজা ও বিদূষকের প্রবেশ।)

বিদূ। বয়স্য! আপনি অদ্য এত বিরসবদন হয়েছেন কেন?

রাজা। (দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া) আর ভাই! সৰ্ব্বনাশ হয়েছে। হা বিধাতঃ, এ দুস্তর বিপদার্ণব হতে কিসে নিস্তার পাব?

বিদূ। সে কি মহারাজ! ব্যাপারটা কি, বলুন দেখি?

রাজা। আর ভাই বলবো কি? যেমন কোন পোতবণিক ঘোরতর অন্ধকারময় বিভাবরীতে ভয়ানক সমুদ্রমধ্যে পথ হারালে, ব্যাকুলচিত্তে কোন দিঙ্‌নির্ণায়ক নক্ষত্রের প্রতি সহায় বিবেচনায় মুহুর্মুহুঃ দৃষ্টিপাত করে, আমিও সেইরূপ এই অপার বিপদ-সাগরে পতিত হয়ে পরমকারুণিক পরমেশ্বরকে একমাত্র ভরসা জ্ঞানে সৰ্ব্বদা মানসে ধ্যান কর্চি! হে জগৎপিতঃ, এ বিপদে আমাকে রক্ষা করুন!

বিদূ। (স্বগত) এ ত কোন সামান্য ব্যাপার নয়! ত্রিভুবন-বিখ্যাত রাজচক্ৰবর্ত্তী যযাতি যে এতাদৃশ ত্রাসিত হয়েছেন, কারণটাই কি? (প্রকাশে) মহারাজ! ব্যাপারটা কি, বলুন দেখি?

রাজা। কি আর বলবো ভাই! এবার সর্বনাশ উপস্থিত; এত দিনের পর রাণী আমার প্রেয়সী শৰ্ম্মিষ্ঠার বিষয় সকলই অবগত হয়েছেন।

বিদূ। বলেন কি মহারাজ! তা এ যে অনিষ্ট ঘটনা, তার কোন সন্দেহ নাই; ভাল, রাজমহিষী কি প্রকারে এ সকল বিষয় জানতে পাল্যেন?

রাজা। সখে, সে কথা কেন জিজ্ঞাসা কর? বিধাতা বিমুখ হলে লোকের আর দুঃখের পরিসীমা থাকে না। মহিষী অদ্য সায়ংকালে অনেক যত্নপূর্ব্বক তার পরিচারিকাদিগের উদ্যানে ভ্রমণ করতে আমাকে আহ্বান করেছিলেন; আমিও তাতে অস্বীকার হতে পাল্যেম না। সুতরাং আমরা তথায় উভয়ে ভ্রমণ করতে করতে প্রেয়সী শৰ্ম্মিষ্ঠার গৃহের নিকটবৰ্ত্তী হলেম। ভাই হে, তৎকালে আমার অন্তঃকরণ যে কি প্রকার উদ্বিগ্ন হলো, তা বলা দুষ্কর।

বিদূ। বয়স্য। তার পর?

রাজা। আমাকে দেখে প্রিয়তমা প্রেয়সী শৰ্ম্মিষ্ঠার তিনটি পুত্র তাদের বাল্যক্রীড়া পরিত্যাগ করে প্রফুল্লবদনে ঊৰ্দ্ধশ্বাসে আমার নিকটে এলো এবং রাজমহিষীকে আমার সহিত দেখে চিত্রাপিতের ন্যায় স্তব্ধ হয়ে দণ্ডায়মান রইলো।

বিদূ। কি দুৰ্ব্বিপাক। তার পর?

রাজা। রাজ্ঞী তাদের স্তব্ধ দেখে মুহম্বরে বললেন, “হে বৎসগণ, তোমরা কিছুমাত্র শঙ্কা করো না।” এই কথা শুনে সৰ্ব্বকনিষ্ঠ পুরু সক্রোধে স্বীয়ু কোমল বাহু আস্ফালন করে বল্লে, “আমরা কাকেও শঙ্কা করি না। তুমি কে? তুমি যে আমাদের পিতার হাত ধরেছ? তুমি ত আমাদের জননী নও,—তিনি হলে আমাদের কত আদর কত্যেন।”

বিদূ। কি সৰ্ব্বনাশ! বয়স্য! তার পর কি হলো?

রাজা। সে কথার আর বলবো কি? তৎকালে আমার মস্তক কুলালচক্রের ন্যায় একবারে ঘূর্ণায়মান হতে লাগলো, আর মনে মনে চিন্তা করলেম, যদি এ সময়ে জগন্মাতা বসুন্ধরা দ্বিধা হন, তা হলে আমি তৎক্ষণাৎ তাঁতে প্রবেশ করি। (দীর্ঘনিশ্বাস।)

বিদূ। বয়স্য! আপনি যে একবারে নিস্তব্ধ হলেন?

রাজা। আর ভাই! করি কি বল! রাজমহিষী তৎকালে আমাকে আর প্রিয়তমা শৰ্ম্মিষ্ঠাকে যে কত অপমান, কত ভৎসিনা করলেন, তার আর সীমা নাই। অধিক কি বলবো, যদ্যপি তেমন কটুবাক্য স্বয়ং বাগ দেবীর মুখ হতে বহির্গত হতো, তা হলে আমি তাও সহ্য করতেম না, কিন্তু কি করি? রাজমহিষী ঋষিকন্যা, বিশেষতঃ প্রিয়া শৰ্ম্মিষ্ঠার সহিত তাঁর চির-বাদ। (দীর্ঘনিশ্বাস।)

বিদূ। বয়স্য! সে যথার্থ বটে; কিন্তু আপনি এ বিষয়ে অধিক চিন্তাকুল হবেন না। রাজমহিষীর কোপাগ্নি শীঘ্রই নিৰ্ব্বাণ হবে। দেখুন, আকাশমণ্ডল কিছু চিরকাল মেঘাচ্ছন্ন থাকে না, প্রবল ঝাটকা কিছু চিরকাল বয় না।

রাজা। সখে, তুমি মহিষীর প্রকৃতি প্রকৃতরূপে অবগত নও। তিনি অত্যন্ত অভিমানিনী।

বিদূ। বয়স্য! যে স্ত্রী প্রতিপ্রাণ, সে কি কখন আপনার প্রিয়তমকে কাতর দেখতে পারে?

রাজা। সখে, তুমি কি বিবেচনা কর, যে আমি রাজমহিষীর নিমিত্তেই এতাদৃশ ত্রাসিত হয়েছি? মৃগীর ভয়ে কি মৃগরাজ ভীত হয়? যে কোমল বাহু পৃপ-শরাসনে গুণযোজনায় ক্লান্ত হয়, এতাদৃশ বাহুকে কি কেউ ভয় করে?

বিদূ। তবে আপনার এতাদৃশ চিন্তাকুল হবার কারণ কি?

রাজা। সখে, যদ্যপি রাণী এ সকল বৃত্তান্ত পিতা মহর্ষি শুক্রাচাৰ্য্যকে অবগত করান, তবে সেই মহাতেজা তপস্বীর কোপাগ্নি হতে আমাকে কে উদ্ধার করবে? যে হুতাশন প্ৰজ্জ্বলিত হলে স্বয়ং ব্রহ্মাও কম্পায়মান হন, সে হুতাশন হতে আমি দুর্বল মানব কি প্রকারে পরিত্রাণ পাবো? (দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া) হায়! হায়। শৰ্ম্মিষ্ঠার পাণিগ্রহণ করে আমি কি কুকৰ্ম্মই করেছি! (চিন্তা করিয়া) হারে পাষণ্ড নিৰ্ব্বোধ অন্তঃকরণ! তুই সে নিরুপমা নারীকে কেমন করে নিন্দা করিস, যার সহিত তুই মৰ্ত্ত্যে স্বৰ্গভোগ করেছিল? হা নিষ্ঠুর! তুই যে এ পাপের যথোচিত দণ্ড পাবি, তার আর কোন সন্দেহ নাই। আহা, প্রেয়সি। যে ব্যক্তি তোমার নিমিত্তে প্রাণ পৰ্য্যন্ত পরিত্যাগ করতে উদ্যত, সেই কি তোমার দুঃখের মূল হলো! হা চারুহাসিনি! আমার অদৃষ্টে কি এই ছিল! হা প্রিয়ে! হা আমার হৃৎসরোবরের পদ্মিনী।

বিদূ। বয়স্য! এ বৃথা খেদোক্তি করেন কেন? চলুন, আমরা উভয়ে মহিষীর মন্দিরে যাই, তিনি অত্যন্ত দয়াশীল আর পতিপরায়ণা, তিনি আপনাকে এতাদৃশ কাতর দেখলে অবশ্যই ক্রোধ সংবরণ করবেন।

রাজা। সখে, তুমি কি বিবেচনা কচ্যে, যে মহিষী এ পর্য্যন্ত এ নগরীতে আছেন?

বিদূ। (সসন্ত্রমে) সে কি মহারাজ! তবে রাজমহিষী কোথায়?

রাজ। ভাই, তিনি সখী পূর্ণিকাকে সঙ্গে লয়ে যে কোথায় গিয়েছেন, তা কেউ বলতে পারে না।

বিদূ। (ত্রস্ত হইয়া) মহারাজ! এ কি সৰ্ব্বনাশের কথা! যদ্যপি রাজ্ঞী ক্রোধাবেশে দৈত্যদেশেই প্রবেশ করেন, তবেই ত সকল গেল! আপনি এ বিষয়ের কি উপায় করেছেন?

রাজা। আর কি করবো? আমি জ্ঞানশূন্য ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছি, ভাই!

বিদূ। কি সৰ্ব্বনাশ! মহারাজ, আর কি বিলম্ব করা উচিত? চলুন, চলুন, অতি ত্বরায় পবন-বেগশালী অশ্বান্ধঢ়গণকে মহিষীর অন্বেষণে পাঠান যাকৃগে। কি সৰ্ব্বনাশ! কি সৰ্ব্বনাশ!

[ উভয়ের প্রস্থান।


দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক

প্রতিষ্ঠানপুরীনিকটস্থ যমুনা-নদীতীরে অতিথিশালা।
(শুক্রাচার্য্য ও কপিলের প্রবেশ।)

শুক্র। আহা, কি রম্য স্থান! ভো কপিল! ঐ পরিদৃশুমানা নগরী কি মহাত্মা, মহাতেজাঃ, পরন্তপ চন্দ্রবংশীয় রাজচক্রবর্ত্তীগণের রাজধানী?

কপি। আজ্ঞা হাঁ।

শুক্র। আহা, কি মনোহর নগরী! বোধ হয়, যেন বিশ্বকৰ্ম্ম। ঐ সকল অট্টালিকা, পরিখাচয় আর তোরণ প্রভৃতি নানাবিধ সুদৃশ্য প্রতিকর বস্তু, কুবেরপুরী অলকা আর ইন্দ্রপুরী অমরাবতীকে লজ্জা দিবার নিমিত্তেই পৃথিবীতে নিৰ্ম্মাণ করেছেন।

কপি। ভগবন্‌, ঐ প্রতিষ্ঠানপুরী বাহুবলেন্দ্র রাজচক্ৰবৰ্ত্তী নহুষপুত্র যযাতির উপযুক্তই রাজধানী, কারণ, তার তুল্য বেদবেদাঙ্গপারগ, পরমধাৰ্ম্মিক, বীরশ্ৰেষ্ঠ রাজা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় নাই। তিনি মনুজেন্দ্ৰ সকলের মধ্যে দেবেন্দ্রের ন্যায় স্থিতি করেন।

শুক্র। আমার প্রাণাধিক প্রিয়তমা দেবযানীকে এতাদৃশ সুপাত্রে প্রদান করা উত্তম কৰ্ম্মই হয়েছে।

কপি। আজ্ঞা, তার সন্দেহ কি?

শুক্র। বৎস। বহুদিবলাবধি আমার পরম স্নেহপাত্রী দেবযানীর চন্দ্ৰানন দর্শন করি নাই, এবং তার যে সন্তানদ্বয় জন্মেছে তাদেরও দেখতে অত্যন্ত ইচ্ছা হয়। সেই জন্যেই ত আমি এ দেশে আগমন করেছি, কিন্তু অদ্য ভগবান্‌ আদিত্য প্রায় অস্তাচলে গমন কল্যেন; অতএব এ মুখ্য কালবেলার সময়; তা এই ক্ষণে রাজধানী প্রবেশ করা কোন ক্রমেই যুক্তিসিদ্ধ নহে। হে বৎস, অদ্য এই নিকটবৰ্ত্তী অতিথিশালায় বিশ্রামের আয়োজন কর।

কপি। প্রভো, যথা ইচ্ছা!

শুক্র। বৎস! তুমি এদেশের সমূদয় বিশেষরূপে অবগত আছ, কেন না, দেবযানীর পাণিগ্রহণকালে তুমিই রাজা যযাতিকে আহবানার্থে আগমন করেছিলে; অতএব তুমি কিঞ্চিৎ খাদ্য-দ্রব্যাদি আহরণ কর। দেখ, এক্ষণে ভগবান্‌ মার্ত্তণ্ড অস্তাচলচুড়াবলম্বী হলেন, আমি সায়ংকালের সন্ধ্যবিন্দনাদি সমাপন করি।

কপি। ভগবন্‌! আপনার যেমন অভিরুচি।

[ কপিলের প্রস্থান।

 শুক্র। (স্বগত) যে পৰ্য্যন্ত কপিল প্রত্যাগমন না করে, তদবধি আমি এই বৃক্ষমূলে উপবিষ্ট হয়ে দেবাদেব মহাদেবকে স্মরণ করি। (বৃক্ষমূলে উপবেশন।)

(দেবযানী এবং পূর্ণিকার ছদ্মবেশে প্রবেশ)

পূৰ্ণ। (দেবধানীর প্রতি) মহিষি! আপনার মুখে যে আর কথাটি নাই।

দেব। সখি! এই নির্জ্জন স্থান দেখে আমার অত্যন্ত ভয় হচ্যে। আমরা যে কি প্রকারে সেই দূরতর দৈত্যদেশে যাব, আর পথিমধ্যে যে কে আমাদিগকে রক্ষা করবে, তা ভাবলে আমার বক্ষঃস্থল শুখ্‌য়ে উঠে।

পুর্ণি। মহিষি! এ আমারও মনের কথা, কেবল আপনার ভয়ে এ পর্য্যন্ত প্রকাশ করতে পারি নাই। আমার বিবেচনায়, আমাদের রাজাস্তঃপুরে ফিরে যাওয়াই উচিত।

দেব। (সক্রোধে) তোমার যদি এমনই ইচ্ছা থাকে, তবে যাও না কেন? কে তোমাকে বারণ কচ্যে?

পুর্ণি। দেবি, ক্ষমা করুন, আমার অপরাধ হয়েছে। আমি আপনার নিতান্ত অনুগত, আপনি যেখানে যাবেন, আমিও সেখানে ছায়ার ন্যায় আপনার পশ্চাদ্‌গামিনী হব।

দেব। সখি, তুমি কি আমাকে ঐ পাপ নগরীতে ফিরে যেতে এখনও পরামর্শ দাও? এমন নরাধম, পাষণ্ড, পাপী কৃতঘ্ন পুরুষের মুখ কি আমার আর দেখা উচিত? সে দুরাচার তার প্রেয়সী শৰ্ম্মিষ্ঠাকে লয়ে সুখে রাজ্যভোগ করুক, সে শৰ্ম্মিষ্ঠাকে রাজমহিষীর পদে অভিষিক্তা করে তাকে লয়ে পরমসুখে কালযাপন করুক! তার সঙ্গে আমার আর কি সম্পর্ক? তবে আমার দুইটি শিশু সস্তান আছে, তাদের আমি আমার পিত্রাশ্রমে শীঘ্র আনাবো। তারা দরিদ্র ব্রাহ্মণের দৌহিত্র, তাদের রাজভোগে প্রয়োজন কি? শৰ্ম্মিষ্ঠার পুত্রেরা রাজ্য-ভোগে পরমানন্দে কালাতিপাত করুক। আহা! আমার কি কুলগ্নেই সেই দুরাচার দুঃশীল, দুষ্ট পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল! আমার আকৃত্রিম প্রণয়ের কি এই প্রতিফল? যাকে সুশীতল চন্দনবৃক্ষ ভেবে আশ্রয় কল্যেম, সে ভাগ্যক্রমে দুৰ্ব্বিপাক বিষবৃক্ষ হয়ে উঠলো! হায়! হায়! আমার এমন দুৰ্ম্মতি কেন উপস্থিত হয়েছিল? আমি আপন হস্তে খড়গ তুলে আপনার মস্তকচ্ছেদ করেছি! আহা, যাকে রত্ন ভেবে অতি যত্নে বক্ষঃস্থলে ধারণ কল্যেম, সেই আবার কালক্রমে প্রজ্বলিত অনল হয়ে বক্ষঃস্থল দাহন কল্যে! (রাদন) হায় রে বিধি! তোর কি এই উচিত? আমি এ দুরাচারের প্রতি অনুরক্ত হয়ে কি দুষ্কৰ্ম্মই করেছি। এমন পতি থাকা না থাকী দুই-ই তুল্য, তা যেমন কৰ্ম্ম, তেমনই ফলও পেলেম।

পূর্ণি। রাজ্ঞি! আপনি একে ত মহৰ্ষিকন্যা, তাতে আবার রাজগৃহিণী, আপনি এইটি বিবেচনা করুন দেখি, আপনার কি এমন অমঙ্গল কথা সধবা হয়ে মুখেও আনা উচিত—(অৰ্দ্ধোক্তি।)

দেব। সখি, আমাকে তুমি সধবা বল কেন? আমার কি স্বামী আছে? আমি আমার স্বামীকে শৰ্ম্মিষ্ঠারূপ কালভুজঙ্গিনীর কোলে সমৰ্পণ করে এসেছি! হা বিধাতঃ—(মূর্চ্ছাপ্রাপ্তি।)

পূর্ণি। এ কি! এ কি! রাজমহিষী যে অচৈতন্য হলেন। ওগো এখানে কে আছ, শীঘ্র একটু জল আন ত! শীঘ্র। শীঘ্র। হায়! হায়! হায়! আমি কি করবো? এ অপরিচিত স্থান; বোধ হয়, এখানে কেউ নাই। আমিই বা রাজমহিষীকে এমন স্থানে এ অবস্থায় এ লা রেখে যমুনায় কেমন করে জল আনতে যাই? কি হলো! কি হলো! হায় রে বিধাতা! তোর মনে কি এই ছিল? যার ইঙ্গিতে শত শত দাসদাসী করযোড়ে দণ্ডায়মান হতো, তিনি এখন ধূলায় গড়াগড়ি যাচ্যেন, তবুও এমন একটি লোক নাই, যে তার নিকটে একটু থাকে! আহা, এ দুঃখ কি প্রাণে সয়? (রোদন।)

শুক্র। (গাত্ৰোত্থান ও অগ্রসর হইয়া) কার যেন রোদনধ্বনি শ্রুতিগোচর হচ্যে না –(নিকটে আসিয়া পূণিকার প্রতি) কল্যাণি! তুমি কে? আর কি জন্যই বা এতাদৃশী কাতরা হয়ে নির্জ্জন স্থানে রোদন কচ্যে? আর এই যে নারী ভূতলে পতিত আছেন, ইনিই বা তোমার কে?

পূর্ণি। মহাশয়! এ পরিচয়ের সময় নয়। আপনি অনুগ্রহ করে কিঞ্চিংকাল এখানে অবস্থিতি করুন, আমি ঐ যমুনা হতে জল আনি।

[প্রস্থান।

শুক্র। (স্বগত) এও ত এক আশ্চৰ্য্য ব্যাপার বটে। এ স্ত্রীলোকেরা মায়াবিনী রাক্ষসী—কি যথার্থই মানবী, তাও ত কিছু নির্ণয় কত্যে পারি না।

দেব। (কিঞ্চিৎ সচেতন হইয়া) হা দুরাচার পাষণ্ড! হা নরাধম! ক্ষত্রিয় হয়ে ব্রাহ্মণকন্যাকে পেয়েছিলি, তথাপি তোর কিছুমাত্র জ্ঞান হয় নাই?

শুক্র। (স্বগত) কি চমৎকার! বোধ করি, এ স্ত্রীলোকটি কোন পুরুষকে ভর্ৎসনা করছে।

দেব। যাও যাও! তুমি অতি নির্লজ্জ, লম্পট পুরুষ, তুমি আমাকে স্পর্শ করো না; আমি কি শৰ্ম্মিষ্ঠা? চণ্ডালে চণ্ডালে মিলন হওয়া উচিত বটে। আমি তোমার কে? মধুরম্বর কোকিলা আর কর্কশকণ্ঠ কাক কি একত্রে বসতি করতে পারে? শৃগালের সহিত কি সিংহীর কখন মিত্রতা হয়? তুমি রাজচক্ৰর্ত্তী হলেই বা, তোমাতে আমাতে যে কত দূর বিভিন্নতা, তা কি তুমি কিছুই জান না? আমি দেব-দৈত্য-পূজিত মহর্ষি শুক্রাচার্য্যের কন্যা—(পুনর্মূৰ্ছিাপ্রাপ্তি।)

শুক্র। (স্বগত) এ কি! আমি কি নিদ্রিত হয়ে স্বপ্ন দেখতেছি? শিব! শিব! আর যে নিদ্রায় আবৃত আছি, তাই বা কি প্রকারে বলি? ঐ যে যমুনা কল্পোলিনীর স্রোতঃকলরব আমার শ্রুতিকুহরে প্রবেশ কচ্যে। এই যে নবপল্লবগণ মন্দমন্দ স্বগন্ধ গন্ধবহের সহিত কেলি করতেছে। তবে আমি এ কি কথা শুনলেম? ভাল, দেখা যাক দেখি, এই নারীটি কে? (অবগুণ্ঠন খুলিয়া) আহা! এ যে প্রাণাধিক বৎসা দেবযানী! যে অষ্টাদশ বর্ষাগ্রে শশিকলা ছিল, সে কালক্রমে পূর্ণচন্দ্রের শোভা প্রাপ্ত হয়েছে। তা এ দশায় এ স্থলে কি জন্যে? আমি যে কিছুই স্থির কত্যে পাচ্যি না, আমি যে জ্ঞানশূন্য—(অৰ্দ্ধোক্তি।)

(পূর্ণিকার পুনঃপ্রবেশ।)

পূর্ণি। মহাশয়, সরুন, সরুন, আমি জল এনেছি। (মুখে জল প্রদান।)

দেব। (সচেতন হইয়া) সখি পূর্ণিকে! রাত্রি কি প্রভাতা হয়েছে? প্ৰাণেশ্বর কি গাত্রোত্থান করে বহির্গমন করেছেন? (চতুর্দ্দিক অবলোকন করিয়া) অয়ি পুর্ণিকে! এ কোন্‌ স্থান?

পূর্ণি। প্রিয়সখি! প্রথমে গাত্রোত্থান করুন, পরে সকল বৃত্তান্ত বলা যাবে।

দেব। (গাত্রোত্থান ও শুক্রাচার্য্যকে অবলোকন করিয়া জনান্তিকে) অয়ি পূৰ্ণিকে! এ মহাত্মা মহাতেজাঃ ঋষিতুল্য ব্যক্তিটি কে?

শুক্র। বৎসে! আমাকে কি বিস্মৃত হয়েছে?

দেব। ভগবন্‌! আপনি কি আজ্ঞা কচ্যেন?

শুক্র। বৎসে! বলি, আমাকে কি বিস্মৃত হয়েছো?

দেব। (পুনরবলোকন করিয়া) আর্য্য! আপনি—হা পিতঃ! হা পিতঃ! (পদতলে পতন ও জানুগ্রহণ) পিতঃ, বিধাতাই দয়া করে এ সময়ে আপনাকে এখানে এনেছেন! (রোদন।)

শুক্র। কেন কেন? কি হয়েছে? আমি যে এর মৰ্ম্ম কিছুই বুঝতে পাচ্যি না! তোমার কুশল সংবাদ বল। (উত্থাপন ও শিরশ্চুম্বন।)

দেব। হে পিতঃ, আপনি আমাকে এ দুঃখানল হতে ত্রাণ করুন। (রোদন।)

শুক্র। বৎসে! ব্যাপারটা কি, বল দেখি? তুমি এত চঞ্চল হয়েছো কেন? এত যে ব্যস্তসমস্ত হয়ে তোমাকে দেখতে এলেম, তা তোমার সহিত এ স্থলে সাক্ষাৎ হওয়াতে আমার হরিষে বিষাদ উপস্থিত হলো, তুমি রাজগৃহিণী, তাতে আবার কুলবধূ, তোমার কি রাজান্তঃপুরের বহির্গামিনী হওয়া উচিত? তুমি এ স্থানে এ অবস্থায় কি নিমিত্তে?

দেব। হে পিতঃ, আপনার এ হতভাগিনী দুহিতার আর কি কুল মান আছে? (রোদন।)

শুক্র। সে কি! তুমি কি উন্মত্তা হয়েছো? (স্বগত) হা হতোহস্মি! এ কি দুর্দ্দৈব! (প্রকাশে) বংসে, মহারাজ ত কুশলে আছেন?

দেব। ভগবন্‌, আপনি দেব-দানব-পূজিত মহৰ্ষি। আপনি সে নরাধমের নাম ওষ্ঠাগ্রেও আনবেন না।

শুক্র। (সক্রোধে) রে দুষ্টে পাপীয়সি! তুই আমার সম্মুখে পতিনিন্দ৷ করিস?

দেব। (পদতলে পতন ও জানুগ্রহণ) হে পিতঃ! আপনি আমাকে দুর্জয় কোপাগ্নিতে দগ্ধ করুন, সেও বরঞ্চ ভাল; হে মাতঃ বসুন্ধরে। তুমি অনুগ্রহ করে আমাকে অন্তরে একটু স্থান দাও, আমি আর এ প্রাণ রাখবো না।

শুক্র। (বিষগ্বদনে) এ কি বিষম বিভ্ৰাট! বৃত্তান্তটাই কি বল না?

দেব। (নিরুত্তরে রোদন।)

শুক্র। অয়ি পুর্ণিকে! ভাল, তুমিই বল দেখি কি হয়েছে?

পুর্ণি। ভগবন্‌! আমি আর কি বলবো।

দেব! (গাত্রোত্থান করিয়া) পিতঃ! আমার দুঃখের কথা আর কি বলবো? আপনি যাকে পুরুষোত্তম বিবেচনা করে আমাকে প্রদান করেছিলেন, সে ব্যক্তি চণ্ডাল অপেক্ষাও অধম।

শুক্র। কি সৰ্ব্বনাশ! এ কি কথা?

দেব। তাত! সে দুশ্চারিণী দৈত্যকন্যা শৰ্ম্মিষ্ঠাকে গান্ধৰ্ববিধানে পরিণয় করে আমার যথেষ্ট অবমাননা করেছে।

শুক্র। আঃ! এরই নিমিত্তে এত? তাই কেন এতক্ষণ বল নাই? বৎসে! গান্ধৰ্ব্ব বিবাহ করা যে ক্ষত্রিয়কুলের কুলরীতি, তা কি তুমি জান না?

দেব। তবে কি আপনার দুহিতা চিরকাল সপত্নী-যন্ত্রণা ভোগ করবে?

শুক্র। ক্ষত্রিয় রাজার সহিত যখন তোমার পরিণয় হয়েছিল, তখনই আমি জানি যে এরূপ ঘটনা হবে, তা পূৰ্ব্বেই এ বিষয়ের বিবেচনা করা উচিত ছিল।

দেব। পিতঃ, আপনার চরণে ধরি, সে নরাধমকে অভিশাপ দ্বারা উচিত শাস্তি প্রদান করুন। (পদতলে পতন ও জানুগ্রহণ।)

শুক্র। (কর্ণে হস্ত দিয়া) নারায়ণ! নারায়ণ। বৎসে! আমি এ কৰ্ম্ম কি প্রকারে করি? রাজা যযাতি পরম ধৰ্ম্মশীল ও পরম দয়ালু পুরুষ।

দেব। তাত! তবে আমাকে আজ্ঞা করুন, আমি যমুনাসলিলে প্রাণত্যাগ করি।

শুক্র। (স্বগত) এও ত সামান্য বিপত্তি নয়! এখন কি করি? (প্রকাশে) তবে তোমার কি এই ইচ্ছা, যে আমি তোমার স্বামীকে অভিসম্পাতে ভস্ম করি?

দেব। না না, তাত! তা নয়, আপনি সে দুরাচারকে জরাগ্রস্ত করুন, যেন সে আর কোন কামিনীর মনোহরণ করতে না পারে।

শুক্র। (চিন্তা করিয়া) ভাল! তবে তুমি গাত্রোত্থান করে গৃহে পুনর্গমন কর, তোমার অভিলাষ সিদ্ধ হবে।

দেব। (গাত্রোত্থান করিয়া) পিতঃ, আমি ত আর সে দুরাচারের গৃহে প্রবেশ করবো না।

শুক্র। (ঈষৎ কোপে) তবে তোমার মনস্কামনাও সিদ্ধ হবে না।

দেব। তাত! আপনার আজ্ঞ। আমাকে প্রতিপালন কত্যেই হবে; কিন্তু আমার প্রার্থনাটি যেন সুসিদ্ধি হয় –সখি পূর্ণিকে, তবে চল চাই।

[ দেবযানী ও পূর্ণিকার প্রস্থান।

শুক্র। (স্বগত) অপত্যস্নেহের কি অদ্ভুত শক্তি -আবার তাও বলি, বিধাতার নির্বন্ধ কে খণ্ডন করতে পারে? যযাতির জন্মান্তরে কিঞ্চিৎ পাপসঞ্চার ছিল, নতুবা কেনই বা তার এ অনিষ্ট ঘটনা ঘটবে? তা যাই, একটু নিভৃত স্থানে বসে বিবেচনা করি, এইক্ষণে কিরূপ কৰ্ত্তব্য।

[ প্রস্থান।

 


তৃতীয় গর্ভাঙ্ক

প্রতিষ্ঠানপুরী–শৰ্ম্মিষ্ঠার গৃহসম্মুখস্থ উদ্যান।
(শৰ্ম্মিষ্ঠা ও দেবিকার প্রবেশ)

দেবি। রাজনন্দিনি, আর বৃথা আক্ষেপ কল্যে কি হবে?—আমি একটা আশ্চৰ্য্য দেখছি, যে কালে সকলই পরিবর্তন হয়, কিন্তু দেবযানীর স্বভাব চিরকাল সমান রৈল! এমন অসচ্চরিত্রা স্ত্রী কি আর দুটি আছে?

শৰ্ম্মি। সখি, তুমি কেন দেবযানীকে নিন্দা কর? তার এ বিষয়ে অপরাধ কি? যদ্যপি আমি কোন মহামূল্য রত্নকে পরম যত্ন করি, আর যদি সে রত্নকে কেউ অপহরণ করে, তবে অপহৰ্ত্তাকে কি আমি তিরস্কার করি না?

দেবি। তা করবে না কেন?

শৰ্ম্মি। তবে সখি, দেবযানীকে কি তোমার ভর্ৎসনা করা উচিত? পতিপরায়ণ স্ত্রীর পতি অপেক্ষা আর প্রিয়তন অমূল্য রত্ন কি আছে বল দেখি? (দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া) সখি, দেবযানী আমার অপমান করেছে বলে যে আমি রোদন কচ্যি, তা তুমি ভেবে না! দেখ সখি, আমার কি দূরদৃষ্ট। কি ছিলেম, কি হলেম। আবার যে কি কপালে আছে, তাই বা কে বলতে পারে। এই সকল ভাবনায় আমি একবারে জীবন্মত হয়ে রয়েছি। (দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া) প্ৰাণেশ্বরের সে চন্দ্রনন দর্শন না কল্যে আমি আর প্রাণধারণ কিরূপে করবো? সখি, যেমন মৃগী তৃষ্ণায় নিতান্ত পীড়িত হয়ে, সুশীতল জলাভাবে ব্যাকুলা হয়, প্রাণনাথ! বিরহে আমার প্রাণও সেইরূপ হয়েছে। (অধোবদনে রোদন।)

দেবি। রাজনন্দিনি! তুমি এত ব্যাকুল হইও না; মহারাজ অতি ত্বরায় তোমার নিকটে আসবেন।

শৰ্ম্মি। আর সখি! তুমিও যেমন, মিথ্যা প্রবোধ কি আর মন মানে? (রোদন।)

দেবি। প্রিয়সখি, তোমার কি কিছুমাত্র ধৈর্য্য নাই? দেখ দেখি, কুমুদিনী দিবাভাগে তার প্রাণনাথ নিশানাথের বিরহ সহ করে; চক্রবাকীও তার প্ৰাণেশ্বরের বিহনে একাকিনী সমস্ত যামিনী যাপন করে; তা তুমি কি আর, সখি, পতিবিচ্ছেদ ক্ষণকাল সহ্য করতে পার না?

শৰ্ম্মি। প্রিয়সখি, তুমি কি জান না, যে আমার হৃদয়াকাশের পূর্ণ শশধর চিরকালের নিমিত্তে অস্তে গিয়েছেন? হায়! হায়! আমার বিরহরজনী কি আর প্রভাতা হবে? (রোদন।)

দেবি। প্রিয়সখি, শান্ত হও, তোমার এরূপ দশা দেখে তোমার শিশু সন্তানগুলিও নিতান্ত ব্যাকুল হয়েছে, আর তোমার জন্যে উচ্চৈঃস্বরে সর্বদা রোদন কচ্যে।

শৰ্ম্মি। হা বিধাতঃ, (দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া) আমার কপালে কি এই ছিল? সখি, তুমি বরঞ্চ গৃহে যাও, আমার শিশুগুলিকে সান্ত্বনা করগে, আমি এই নির্জ্জন কাননে আরও একটু থেকে যাব।

দেবি। প্রিয়সখি, এই নির্জ্জন স্থানে একাকিনী ভ্রমণ করার প্রয়োজন কি?

শৰ্ম্মি। সখি, তুমি কি জান না, যখন কুরঙ্গিণী বাণাঘাতে ব্যথিত হয়, তখন কি সে আর অন্তান্ত হরিণীগণের সহিত আমোদ প্রমোদে কালযাপন করে থাকে? বরঞ্চ নির্জ্জন বনে প্রবেশ করে একাকিনী ব্যাকুল চিত্তে ক্ৰন্দন করে, এবং সৰ্ব্বব্যাপী অন্তর্যামী ভগবান্‌ ব্যতিরেকে তার অশ্রুজল আর কেহই দেখতে পান না। সখি, প্ৰাণেশ্বরের বিরহ বাণে আমারও হৃদয় সেইরূপ ব্যথিত হয়েছে, আমার কি আর বিষয়ান্তরে মন আছে?

(নেপথ্যে) অয়ি দেবিকে, রাজনন্দনী কোথায় গেলেন লা? এমন দূরন্ত ছেলেদের শাস্ত করা কি আমাদের সাধ্য?

শৰ্ম্মি। সখি, ঐ শুন, তুমি শীঘ্ৰ যাও।

দেবি। প্রিয়সখি, এ অবস্থায় তোমাকে একাকিনী রেখে আমি কেমন করেই বা যাই; কিন্তু কি করি, না গেলেও ত নয়।

[ প্রস্থান।

শৰ্ম্মি। (স্বগত) হে প্ৰাণেশ্বর, তোমার বিরহে আমার এ দগ্ধ হৃদয় যে কিরূপ চঞ্চল হয়েছে, তা আর কাকে বলবো? (দীর্ঘনিশ্বাস) হে প্রাণনাথ, তুমি কি এ অনাথাকে জন্মের মত পরিত্যাগ করলে? হে জীবিতনাথ, তোমাকে সকলে দয়াসিন্ধু বলে, কিন্তু এ হতভাগিনীর কপালগুণে কি তোমার সে নামে কলঙ্ক হলো? হে রাজন্‌, তুমি দরিদ্রকে অমূল্য রত্ন প্রদান করে, আবার তা অপহরণ করলে? অন্ধকার রাত্রে অতি পথশ্রান্ত পথিককে আলোক দর্শন করিয়ে তাকে ঘোরতর গহন কাননে এনে দীপ নিৰ্ব্বাণ করলে? (বৃক্ষতলে উপস্থিত হইয়া) হ৷ ভগবন্‌ অশোকবৃক্ষ, তুমি কত শত ক্লান্ত বিহঙ্গমচয়কে আশ্রয় দাও, কত শত জন্তু তপনতাপে তাপিত হয়ে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করলে সুশীতল ছায়া দ্বারা তাদের ক্লাস্তি দূর কর; তুমি পরম পরোপকারী; অতএব তুমি ধন্য! হে তরুবর, যেমন পিতা কন্যাকে বরপাত্রে প্রদান করে, তুমিও আমাকে প্ৰাণেশ্বরের হস্তে তদ্রূপ প্রদান করেছ, কেন না, তোমার এই সুস্নিগ্ধ ছায়ায় তিনি এ হতভাগিনীর পাণিগ্রহণ করেন। হে তাত, এক্ষণে এই অনাথা হতভাগিনীকে আশ্রয় দাও। (রোদন) আহা! এই বৃক্ষতলে প্রাণনাথের সহিত যে কত সুখভোগ করেছি, তা বলতে পারি না। (আকাশের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া) হায়। সে সকল দিন এখন কোথায় গেল? হে প্রভো নিশানাথ, হে নক্ষত্রমণ্ডল, হে মন্দ মলয়-সমীরণ, তোমার সম্মুখে আমি পূর্বে যে সকল সুখামুভব করেছি, তা কি আমার জন্মের মত শেষ হলো? (চিন্তা করিয়া) কি আশ্চর্য্য! গত সুখের কথা স্মরণ হলে দ্বিগুণ দুঃখবৃদ্ধি হয় বই ত নয়।

গীত
(ঝিঝোটি–তাল মধ্যমান)

এই তো সে কুসুম-কানন গো,
পাইয়েছিলেম যথা পুরুষ-রতন।
সেই পূর্ণ শশধরে, সেইরূপ শোভা ধরে,
সেইমত পিকবরে, স্বরে হরে মন!
সেই এই ফুলবনে মলয়ার সমীরণে,
সুখোদয় যার সনে, কোথা সেই জন?
প্রাণনাথে নাহি হেরি, নয়নে বরিষে বারি,
এত দুঃখে আর নারি ধরিতে জীবন ॥

আমরা এই স্থানে গানবাদ্যে যে কত সুখ লাভ করেছি, তার পরিসীমা নাই কিন্তু এক্ষণে সে সুখামুভব কোথায় গেল? আহা! কি চমৎকার ব্যাপার! সেই দেশ, সেই কাল, সেই আমি, কেবল প্ৰাণেশ্বর ব্যতিরেকে আমার সকলই অসুখ। বীণার তার ছিন্ন হলে তার যেমন দশা ঘটে, জীবিতেশ্বর বিহনে আমার অন্তঃকরণও অবিকল সেইরূপ হয়েছে। আর না হবেই বা কেন? জলধরের প্রসাদঅভাবে কি তরঙ্গিণী কলকল রবে প্রবাহিত হয়? হে প্রাণনাথ, তুমি কি এ অনাথ অধীনীকে একবারে বিস্মৃত হলে? যে যুথভ্রষ্টা কুরঙ্গিণী মহৎ গিরিবরের আশ্রয় পেয়ে কিঞ্চিৎ সুখী হয়েছিল, ভাগ্যক্রমে গিরিরাজ কি তাকে আশ্রয় দিতে একান্ত পরাঙ্মুখ হলেন! (অধোবদনে উপবেশন।)

(রাজার একান্তে প্রবেশ।)

রাজা। (স্বগত) আহা! নিশাকরের নিৰ্ম্মল কিরণে এ উপবনের কি অপরূপ শোভা হয়েছে। যেমন কোন পরমসুন্দরী নবযৌবনা কামিনী বিমল দর্পণে আপনার অনুপম লাবণ্য দর্শন করে পুলকিত হয়, আদ্য সেইরূপ প্রকৃতিও ঐ স্বচ্ছ সরোবর-সলিলে নিজ শোভা প্রতিবিম্বিত দেখে প্ৰফুল্পিত হয়েছে। নানাশব্দপূর্ণ ধরণী এ সময়ে যেন তপোমগ্ন তপস্বিনীর ন্যার মৌনব্রত অবলম্বন করেছেন। শত শত খাদ্যোতিকাগণ উজ্জ্বল রত্নরাজির ন্যায় দেদীপ্যমান হয়ে পল্লব হতে পল্লবান্তরে শোভিত হচ্যে। হে বিধাতঃ, তোমার এই বিপুল স্থষ্টিতে মনুষ্যজাতি ভিন্ন আর সকলেই সুখী! (চিন্তা করিয়া গমন) মহিষীর অন্বেষণে নানাদিকে রণী আর অশ্বারূঢ়গণকে ত প্রেরণ করা গিয়েছে, কিন্তু এ পর্য্যন্ত তাঁর কোন সংবাদ পাওয়া যায় নাই! তা বৃথা ভেবেই বা আর কি ফল? বিধাতার মনে যা আছে, তাই হবে। কিন্তু আমি প্ৰাণেশ্বরী শৰ্ম্মিষ্ঠাকে এ মুখ আর কি প্রকারে দেখাব? আহা! আমার নিমিত্তে প্রেয়সী যে কত অপমান সহ্য করেছেন, তা মনে হলে হৃদয় বিদীর্ণ হয়। (পরিক্রমণ) ঐ বৃক্ষতলে প্ৰাণেশ্বরীর পাণিগ্রহণ করেছিলাম! আহা, সে দিন কি শুভদিনই হয়েছিল।

শৰ্ম্মি। (গাত্রোত্থান করিয়া) দেবযানীর কোপে আমি বাল্যাবস্থাতেই রাজভোগে বঞ্চিত হই, এক্ষণে সেই কারণে আবার কি প্রিয়তম প্ৰাণেশ্বরকে হারালেম। হা বিধাতঃ, তুমি আমার সুখনাশার্থেই কি দেবযানীকে স্বাক্ট করেছে? (দীঘনিশ্বাস।)

রাজা। (শৰ্ম্মিষ্ঠাকে দেখিয়া সচকিতে) এ কি! এই যে আমার প্রাণাধিক প্রিয়তমা শৰ্ম্মিষ্ঠা এখানে রয়েছেন।

শৰ্ম্মি। (রাজাকে দেখিয়া ও রাজার নিকটবৰ্ত্তিনী হইয়া এবং হস্ত গ্রহণ করিয়া) প্রাণনাথ, আমি কি নিদ্রিত হয়ে স্বপ্ন দেখতেছিলেম, না কোন দৈবমায়ায় বিমুগ্ধা ছিলেম? নাথ, আমি যে আপনার চন্দ্ৰবদন আর এ জন্মে দর্শন করবো এ মন কোন প্রত্যাশা ছিল না।

রাজা। কান্তে, তোমার নিকটে আমার আসতে অতি লজ্জাবোধ হয়!

শৰ্ম্মি। সে কি নাথ?

রাজা। প্রিয়ে, আমার নিমিত্তে তুমি কি না সহ্য করেছো?

শৰ্ম্মি। জীবিতনাথ, দুঃখ ব্যতিরেকে কি সুখ হয়? কঠোর তপস্যা ন! কল্যে ত কখনও স্বৰ্গলাভ হয় না।

রাজা। আবার দেখ, মহিষী ক্রোধাম্বিত হয়ে—

শৰ্ম্মি। (অভিমান সহকারে রাজার হস্ত পরিত্যাগ করিয়া) মহারাজ! তবে আপনি অতিত্বরায় এ স্থান হতে গমন করুন, কি জানি, এখানে মহিষীর আগমনেরও সম্ভাবনা আছে!

রাজ্য। (শৰ্ম্মিষ্ঠার হস্ত গ্রহণ করিয়া) প্রিয়ে, তুমিও কি আমার প্রতি প্রতিকুল হলে? আর না হবেই বা কেন? বিধি বাম হলে সকলেই অনাদর করে।

শৰ্ম্মি। প্ৰাণেশ্বর! আপনি এমন কথা মুখে আন্‌বেন না। বিধাতা আপনার প্রতি কেন বিমুখ হবেন? আপনার আদিত্যতুল্য প্রতাপ, কুবেরতুল্য সম্পত্তি, কন্দপতুল্য রূপলাবণ্য—আর তায় আপনার মহিষীও দ্বিতীয় লক্ষ্মীস্বরূপা।

রাজা। প্রিয়ে, রাজমহিষীর কথা আর উল্লেখ করো না, তিনি প্রতিষ্ঠানপুরী, পরিত্যাগ করে কোন্‌ দেশে যে প্রস্থান করেছেন, এ পর্য্যন্ত তার কোন উদ্দেশই পাওয়া যায় নাই।

শৰ্ম্মি। সে আবার কি, মহারাজ?

রাজা। প্রিয়ে, বোধ হয়, তিনি রোষাবেশে পিত্রালয়ে গমন করে থাকবেন।

শৰ্ম্মি। এ কি সৰ্ব্বনাশের কথা! আপনি মুহূৰ্ত্তেই রথারোহণে দৈত্যদেশে গমন করুন, আপনি কি জানেন না, যে গুরু শুক্রাচার্য্য মহাতেজস্বী ব্রাহ্মণ। তার এতদূর ক্ষমতা আছে, যে তিনি কোপানলে এ ত্রিভুবনকেও ভস্ম করতে পারেন।

রাজা। প্রিয়ে, আমি সকলই জানি, কিন্তু তোমাকে একাকিনী রেখে দৈত্যদেশে ত কোন মতেই গমন কত্যে পারি না। ফণী কি শিরোমণি কোথাও রেখে দেশান্তরে যায়?

শৰ্ম্মি। প্রাণনাথ, আপনি এ দাসীর নিমিত্তে অধিক চিন্তা করবেন না; আমি বালকগুলিনকে লয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে উদরপোষণ করবো। আপনি কি গুরুকোপে এ বিপুল চন্দ্রবংশের সর্বনাশ কত্যে উদ্যত হয়েছেন?

রাজা। প্ৰাণেশ্বরি, তোমা অপেক্ষা চন্দ্রবংশ কি আমার প্রিয়তর হলো? তুমি আমার—( স্তব্ধ।)

শৰ্ম্মি। এ কি! প্রাণবল্লভ যে অকস্মাৎ নিস্তব্ধ হলেন! কেন, কেন, কি হলো?

রাজা। প্রিয়ে, যেমন রণভূমিতে বক্ষঃস্থলে শেলাঘাত হলে পৃথিবী একবারে অন্ধকারময় বোধ হয়, আমার সেইরূপ–(ভূমিতলে অচেতন হইয়া পতন।)

শৰ্ম্মি। (ক্রোড়ে ধারণ করিয়া) হা প্রাণনাথ! হা দয়িত! হা প্ৰাণেশ্বর! হা রাজচক্রবর্ত্তিন্‌! তুমি এ হতভাগিনীকে কি যথার্থই পরিত্যাগ করলে? (উচ্চৈঃস্বরে রোদন) হায়! হায়! বিধাতঃ, তোমার মনে কি এই ছিল? হা রাজকুলতিলক।

(দেবিকার পুনঃ প্রবেশ)

দেবি। প্রিয়সখি, তুমি কি নিমিত্তে—(রাজাকে অবলোকন করিয়া) হায়! হায়! হায়! এ কি সৰ্ব্বনাশ! এ পূর্ণ শশধর ধুলায় লুষ্ঠিত কেন? হায়! হায়! এ কি সৰ্ব্বনাশ!

রাজা। (কিঞ্চিৎ সচেতন হইয়া এবং মৃদুস্বরে) প্রেয়সি শৰ্ম্মিষ্ঠে! আমাকে জন্মের মত বিদায় দাও, আমার শরীর অবসন্ন হলো, আর আমার প্রাণ কেমন কচ্যে; অদ্যাবধি আমার জীবন-আশা শেষ হলো।

শৰ্ম্মি। (সজলনয়নে) হা প্ৰাণেশ্বর, এ অনাথাকে সঙ্গে কর! আমি মাতা, পিতা, বন্ধু-বান্ধব সকলই পরিত্যাগ করে কেবল আপনারই শ্রীচরণে শরণ লয়েছি। এ নিতান্ত অনুগত অধীনীকে পরিত্যাগ করা আপনার কখনই উচিত নয়।

দেবি। প্রিয়সখি, এ সময়ে এত চঞ্চল হলে হবে না! চল, আমরা মহারাজকে এখান থেকে লয়ে যাই।

শৰ্ম্মি। সখি, যাতে ভাল হয় কর, আমি জ্ঞানশূন্য হয়েছি।!

[ উভয়ে রাজাকে লইয়া প্রস্থান।

(বিদূষকের প্রবেশ।)

বিদূ। (কর্ণপাত করিয়া স্বগত) এ কি! রাজান্তঃপুরে যে সহসা এত ক্ৰন্দনধ্বনি আর হাহাকার শব্দ উঠলো, এর কারণ কি? প্রিয় বয়স্যেরও অনেকক্ষণ হলো দর্শন পাই নাই, ব্যাপারটা কি? দ্বারপালের নিকট শুনলেম, যে মহিষী পুর্ণিকার সহিত আপন মন্দিরে প্রবেশ করেছেন, তা তার নিমিত্তে ত আর কোন চিন্তা নাই—তবে এ কি?

(একজন পরিচারিকার প্রবেশ।)

পরি। হায়! হায়! কি সৰ্ব্বনাশ! হা রে পোড়া বিধি! তোর মনে কি এই ছিল? হায়! হায়! কি হলো!

বিদূ। (ব্যগ্রভাবে) কেন কেন? ব্যাপারটা কি?

পরি। তুমি কি শুন নি না কি? হায়! হায়! কি সৰ্ব্বনাশ! আমরা কোথায় যাবো? আমাদের কি হবে!

[ রোদন করিতে করিতে বেগে প্রস্থান।

বিদূ। (স্বগত) দূর মাগী লক্ষ্মীছাড়া! তুই ত কেঁদেই গেলি, এতে আমি কি বুঝলেম? (চিন্তা করিয়া) রাজপুরে যে কোন বিপদ উপস্থিত হয়েছে, তার আর সংশয় নাই, কিন্তু—

(মন্ত্রীর প্রবেশ।)

মহাশয়, ব্যাপারটা কি?

মন্ত্রী। (সজলনয়নে) আর কি বলবো? এ কালসৰ্প –(অৰ্দ্ধোক্তি।)

বিদূ। সে কি! মহারাজকে কি সৰ্পে দংশন করেছে ন কি?

মন্ত্রী। সর্পই বটে। মহারাজকে যে কালসৰ্পে দংশন করেছে, স্বয়ং ধন্বন্তরিও তার বিষ হতে রক্ষা করতে পারেন না; আর ধন্বন্তরিই বা কে? স্বয়ং নীলকণ্ঠ সে বিষ স্বকণ্ঠে ধারণ কত্যে ভীত হন! (দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ।)

বিদূ। মহাশয়, আমি ত কিছুই বুঝতে পাল্যেম না।

মন্ত্রী। আর বুঝবে কি? গুরু শুক্রাচার্য্য মহারাজকে অভিসম্পাত করেছেন।

বিদূ। কি সৰ্ব্বনাশ! তা মহর্ষি ভার্গব এখানকার বৃত্তান্ত এত ত্বরায় কি প্রকারে জানতে পাল্যেন?

মন্ত্রী। (দীর্ঘনিশ্বাস) এ সকল দৈবঘটনা। তিনি এত দিনের পর অদ্য সায়ংকালে এ নগরীতে স্বয়ং এসে উপস্থিত হয়েছেন।

বিদূ। তবে ত দৈবঘটনাই বটে! তা এখন আপনি কি স্থির কচ্যেন, বলুন দেখি?

মন্ত্রী। আমি ত প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়েছি, তা দেখি, রাজপুরোহিত কি পরামর্শ দেন।

বিদূ। চলুন, তবে আমিও আপনার সঙ্গে যাই। হায়! হায়! হায়! কি সৰ্ব্বনাশ। আর আমার জীবন থাকায় ফল কি? মহারাজ, আপনিও যেখানে, আমিও আপনার সঙ্গে; তা আমি আর প্রাণধারণ করবো না।

[উভয়ের প্রস্থান।

(রাজ্ঞী দেবযানী এবং পূর্ণিকার প্রবেশ।)

পূর্ণি। রাজমহিষি, আর বৃথা আক্ষেপ করেন কেন? যে কৰ্ম্ম হয়েছে,তার আর উপায় কি?

রাজ্ঞী । হায়! হায়! সখি, আমার মতন চণ্ডালিনী কি আর আছে? আমি আমার হৃদয়নিধি সাধ করে হারালেম, আমার জীবনসৰ্ব্বস্বধন হেলায় নষ্ট কল্যেম। পতিভক্তি হতেও কি আমার ক্রোধ বড় হলো? হায়! হায়! আমি স্বেচ্ছাক্রমে আপনার মন্মথকে ভস্ম কল্যেম! হে জগন্মাতঃ বসুন্ধরে! তুমি আমার মতন পাপীয়সী স্ত্রীর ভার যে এখনও সহ্য কচ্যো! হে প্রভো নিশানাথ! তোমার সুশীতল কিরণ যে এখনও আমাকে অগ্নি হয়ে দগ্ধ করচে না? সখি, শমনও কি আমাকে বিস্মৃত হলেন? হায়! হায়! হা আমার কন্দর্প! আমি কি যথার্থই তোমাকে ভস্ম কল্যেম? (রোদন।)

পূর্ণি। রাজমহিষি, রতিপতি ভস্ম হলে, রতি দেবী যা করেছিলেন আপনিও তাই করুন। যে মহেশ্বর কোপানলে আপনার কন্দপকে দগ্ধ করেছেন, আপনি তাঁরই শ্রীচরণে শরণাপন্ন হন।

রাজ্ঞী। সখি, আমি এ পোড়া মুখ আর ভগবান্‌ মহর্ষি জনককে কি বলে দেখাবো? হা প্রাণনাথ, হা রাজকুলতিলক! হা নরশ্রেষ্ঠ! হায়! হায়! হায়! আমি এ কি কল্যেম! (রোদন।)

পূর্ণি। দেবি, চলুন, আমরা পুনরায় মহৰ্ষির নিকটে যাই, তা হলেই এর একটা উপায় হবে।

রাজ্ঞী । সখি, আমার এ পাপ হৃদয় কি সামান্য কঠিন! এ যে এখনও বিদীর্ণ হলো না! হায়! হায়! প্রাণনাথ আমাকে বলেন, “প্রেয়সি! তুমি আমাকে বিদায় দাও, আমি বনবাসী হয়ে তপস্যায় এ জরাগ্রস্ত দেহভার পরিত্যাগ করি।” আহা! নাথের এ কথা শুনে আমার দেহে এখনো প্রাণ রইলো! (রোদন।)

পূর্ণি। মহিষি, চলুন, আমরা ভগবান্‌ তাতের নিকট যাই। তিনিই কেবল এ রোগের ঔষধ দিতে পারবেন। এখানে বৃথা আক্ষেপ কল্যে কি হবে?

[ রাজ্ঞীর হস্ত ধারণ করিয়া প্রস্থান।

ইতি চতুর্থাঙ্ক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *