1 of 2

চিলেকোঠার সেপাই – ৪০

চিলেকোঠার সেপাই – ৪০

আনোয়ারদের বাড়িতে লোকজন নাই বললেই চলে। গতকাল দুপুরে বড়োচাচা সপরিবাবে চলে গেছে পদুমশহর। সেখানে তার শালীর শ্বশুর-বাড়িতে রাত্রিকাটিয়ে চলে যাবে বগুড়া। বাড়ির পেছনদিক দিয়ে গেছে, মেয়েদের জন্য গোরুর গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। মন্টুটা পর্যন্ত পালিয়েছে। এতোগুলো ঘর ফাকা। মাঝখানের মস্ত শোবার ঘরে খয়বার গাজী, ঘরের ২টো দরজায় আলিবক্সের দলের লোকজন। বারান্দায় বান্দু শেখ ও পচা। আনোয়ারের ঘরের ভেতর দিককার দরজা খোলা, দরজার পাশে বারান্দায় লোহার থামে সুতা বেঁধে জাল বোনে নবেজউদ্দিন। দেওয়ালে হেলান দিয়ে পোড়া পা মেঝেতে কোনোরকম রেখে কোকায় করমালি। করমালির গায়ে জ্বর। এই পোড়া পায়ের যে কি হবে! আনোয়ার তো ওষুধপত্রের কোনো ব্যবস্থাই করতে পারলো না।
দলের ১টি ছেলের সঙ্গে নিচুস্বরে কথা বলতে আলিবক্স বেরিয়ে আসছিলো, আনোয়ারের ঘরে ঢুকে বলে, ‘আনোয়ার ভাই, আপনে গাজীর ঘরে যান। রাত্রে ঐ ঘরেতে থাকবেন।
‘আপনে?
‘আমার যাওয়া লাগবো।’
‘কোথায়? এতো রাত্রে?’
আলিবক্স তাকে টেনে বারান্দার এক প্রান্তে নিয়ে যায়, ছাইহাটার খবর ভালো না।
কি?
‘এই চ্যাংড়া খবর নিয়া আসছে। আমাগোরে চ্যাংড়ো।’
আলিবক্সের দলের ছেলেটি খবর নিয়ে এসেছে যে সন্ধ্যা থেকে ছাইহাটায় খুব গোলমাল। কাল দুপুরে প্রাইমারি স্কুলের মাঠে গণ-আদালত বসবে, ছাইহাটার চেয়ারম্যানের বিচারের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কিন্তু আজ বিকাল থেকে দলের ১টি ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামের লোকজন খেপে গিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ি চড়াও হয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ওদিকে যে ছেলেরা আজ বৈরাগীর ভিটার সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে গেলো তারা প্রাইমারি স্কুলের মাঠ দখল করে স্কুলের দেওয়ালে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙিয়ে দিয়েছে। তাদের দাবী এই যে আগামীকাল গণ-আদালত বসানো চলবে না, বসলে ওদের চন্দনদহের ঐতিহাসিক আলিবক্সদের পরবর্তী প্রোগ্রাম নষ্ট হতে পারে। আলিবক্স আজ ওখানে সব ঠিক করে ভোর হওয়ার আগেই ফিরে আসবে।
বারান্দা থেকে কয়েক ধাপ নিচে উঠান, পাতলা কুয়াশা জড়ানো শীত সেখানে শিরশির করে। আগুনের ১টি বিন্দুকে উঠানে জ্বলতে দেখে আনোয়ার চমকে ওঠে, কে?
মুখ থেকে বিড়ি নামিয়ে এগিয়ে আসে চেংটু। হঠাৎ চমকে ওঠায় আনোয়ার বিব্রত হয়, আলিবক্স, ভোরে আসতে পারবেন তো?
পারবো। না পারলেও অসুবিধা হবে না। দুইটার মধ্যেই বৈরাগী ভিটাত কাম শ্যাষ করা আবার ছাইহাটা মুখে মেলা করা লাগবো।
চেংটু বলে, ‘ভাইজান না আসবার পারলে হামরা আছি না?
খয়বার গাজী শুয়ে রয়েছে বড়োচাচাদের বিশাল সেকেলে পালঙে। গদিমোড়া ইঞ্জি চেয়ার বসতে বসতে আনোয়ার আড়চোখে তার দিকে তাকায়। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আয়ুব অধিকারী লোকটা কম্পমান চোখে তার চারপাশের জগৎ শেষবারের মতো অনুভব করে নিচ্ছে। জীবনে কতোগুলো খুনজখম করেছে, কতো মানুষের সর্বনাশ করেছে—তাই ভেবে কি সে অস্বস্তি বোধ করে? তার মাথায় কি কেয়ামতের ভয়? আখেরাতের ভাবনায় কি সে কাতর নিজের বিশ্বাস কি সংস্কার অনুসারে নামাজ পড়ে মৃত্যুর আগে তওবা করতে পারলে লোকটা একটু শান্তি পায়। এই অনুতাপ মৃত্যুর আগের মুহূর্তে তাকে হয়তো ১টি মানুষে পরিণত করবে।
বাবা! বাবা আনোয়ার খয়বারের ডাকে আনোয়ার ইজি চেয়ার থেকে উঠে তার কাছকাছি দাঁড়ায়’, কিছু বলবেন?
খয়বারের চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। আনোয়ার বলে, ‘জয়নামাজ এনে দেবো? নামাজ পড়বেন?
খয়বার ভাঙাচোরা গলায় বিড়বিড় করে বৈঠকখানার সবটাই পুড়ছে, না? আনোয়ার জবাব দেওয়ার আগেই সে স্বগতোক্তি করে এতো দিনের বাড়ি চাষাভূষার হাতে লুটপাঠ হলো। কতো জিনিসপাতি, বাসনকোসন, সোনা-দানা, কাপড়চোপড় কাশ্মিরী শালই আছে বারো চোদখান! বাপজানের আমলের চিনামাটির বাসন, দাদীর আমলের গয়নাপাতি।’
আনোয়ার অবাক হয়ে লোকটার বিলাপ শোনে।
বৈঠকখানার পেছনে ধানের গোলা, ওটাতেও আগুন দিছে বাবা?
ধানের গোলা? আপনি যাদের গোরু চুরি করেছিলেন ধানের গোলা এখন তাদের দখলে।
আনোয়ারের ঘৃণা হয়, সম্পত্তির লোভ লোকটার এতোটুকু কমেনি।
তোমরা আমাক ধর‍্যা আগুনের মধ্যে ফালায়া দিবার পারলা না? আমার দলিলপত্র হিসাব নিকাস সব থাকলো পুব দুয়ারি দালানের মধ্যে। আমার ছেলেরা সব চাকরি বাকরি করে, সয়সম্পত্তির হিসাব কিছু বোঝে না। বলতে বলতে খয়বার কাঁদে, কাঁদতে, কাঁদতে ফের বলে, রোকেয়ার ব্যাটার নামে কিছু লেখা দিবার পারলাম না। সৎ মায়ের সাথে থাকে, বাপ যতো ভালো মানুষ হোক, কদিন তার ভালোমানুষ থাকবে? মৃত কন্যার একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যতের ভাবনায় খয়বার গাজী উদ্বিগ্ন। তবে এর চেয়েও বড়ো উদ্বেগ তাকে অস্থির করে, সাথে পরামর্শ করা হলো না। ঐ জমির দশা যে কি হয়?’
আনোয়ার ভাবে চেংটুর কুড়াল চেয়ে নিয়ে এক কোপে শালাকে শেষ করে দিই। মৃত্যুর আগের মুহুর্তে সম্পত্তির জন্য ব্যাটার এরকম খাইখাই ভাব;–এর চিকিৎসা আর কি হতে পারে?
বাবা, আনোয়ার, এক বদনা পানি দিবার কও তো। অজু করা জায়নামাজে বসি। আল্লা! ও আল্লা!
বারান্দায় বসে খয়বার গাজী অজু করে। জাল বোনা বন্ধ রেখে নবেজউদ্দিন এবার টুল, একবার গামছা এগিয়ে দেয়। ঘরের ভেতর খয়বার নামাজ পড়তে বসলে নবেজউদ্দিন দাঁড়িয়ে থাকে তার পেছনে। বারান্দায় পায়ের যন্ত্রণায় গোঙায় করমালি। উঠান থেকে আলিবক্সের দলের ১টি ছেলে এগিয়ে আসে। ছাইহাটা থেকে খবর এসেছে, তাদের দলের নিখোজ ছেলেটির লাশ পাওয়া গেছে ইউনিয়ন কাউন্সিলের অফিসের পেছনে। গ্রামের লোক ঐ অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। চেয়ারম্যান বোধহয় পালিয়ে গেছে, তার ভাইকে ধরা হয়েছে।
ঘরে রাকাতের পর রাকাত নামাজ পড়ে চলেছে খয়বার গাজী। এই করতে করতে সকাল হয়। আনোয়ারের চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। চেংটু এসে খবর দেয, আলিবক্সের ফিরতে দুপুর হতে পারে।
আনোয়ারের ঘুম মাথায় ওঠে, তাহলে এখানকার কাজ?
হামরা আছি কিসক? জুম্মার নামাজ বাদে কাম করা হবো?
৮টা সাড়ে ৮টার দিকে ১টি ছেলে এসে জানায় যে আলিবক্স রওয়ানা হয়েছে। আনোয়ার এক গ্লাস পানি খাবার জন্যে পাশের ঘরে ঢুকেছে, এমন সময একটু দূর থেকে সমবেত কণ্ঠের ধ্বনি কানে আসে। তাহলে আলিবক্স কি মিছিল নিয়ে আসছে?
না। এ মিছিল আলিবক্সের নয়। তোমার আমার ঠিকানা—পদ্মা মেঘনা যমুনা’; তোমার নেতা আমার নেতা’-শেখ মুজিব শেখ মুজিব—এইসব শ্লোগান থেকে বোঝা যায় চন্দনদহের জনসভায় উদ্যোক্তারা গ্রাম প্রদক্ষিণে বেরিয়েছে। দেখতে দেখতে মিছিল বাড়ির সামনে এসে পড়ে এবং মিছিলের কয়েকজন ঢুকে পড়ে বাড়ির ভেতর। কেউ কেউ বলে,
আসেন ভাই, আপনারা সবাই আসেন।
বাঙালির জাতীয় নেতা আজ কারাগারের অন্তরালে। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের হাত থেকে তাকে ছিনিয়ে আনার জন্যে ঢাকার হাজার হাজার মানুষ আজ বুক পেতে দিচ্ছে বুলেটের সামনে। সামান্য গ্রাম্য কোন্দল নিয়ে আপনারা বাঙালির ঐক্য নষ্ট করবেন না।’ ১ তরুণ নবেজউদিনের হাত ধরে, আসেন ভাই। হাত ছাড়িয়ে নিলে ছেলেটি ধরে বান্দু শেখের হাত এবং তার হাতে গুঁজে দেয় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি আঁকা পোস্টার। বান্দু শেখ ওদের সঙ্গে ভিড়ে গেলে চেংটু চটে যায়, আপনেরা কি আরম্ভ করছেন? হামাগোরে মানুষ নিয়া টানেন কিসক?
তোমাদের মানুষ আমাদের মানুষ কি ভাই? আমরা সবাই বাঙালি চেংটু তার ডান হাতে কুড়াল নেয়, সোহাগের কথা থোন হামরা বলে জানে মরি, শালা মাকুচোষা শয়তানগুলা হামাগোরে ছেচ্যাপিষ্যা শাষ করলো-
মিছিলের আরো কয়েকটা ছেলে এবার হৈ হৈ করতে করতে ঘরে ঢুকলে আনোয়ার বাধা দেয়, ঘরের ভেতর ঢুকছেন কেন? বাইরে যান।’
আপনার কথায়? ১টি ছেলে ঘুরে দাঁড়ায়, এটা আমার খালার বাড়ি, জানেন? আপনারা বেআইনী দখলদার।’
আমাদের সঙ্গে গোলমাল করবেন না। ভালোভাবে বলছি সবাই মিছিলে আসেন। চশমাওয়ালা ছিপছিপে ছেলেটির জবাবে আনোয়ার জোরে ধমক দেয়, গোলমাল তো করছেন আপনারা। বেরিয়ে যান। আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের থ্রেট করার সাহস পান কোথায়?’
তার কথা শেষ হতে না হতে চেংটু এসে দাঁড়ায় তাকে আড়াল করে, আপনেরা যান। দুপুরবেলা হামাগোরে কাম সমাধা হলে আপনাগোরে সভাত যাওয়া হবো।
চশমাওয়ালা রুখে দাঁড়ায়, আমাদের ভয় দ্যাখাও, না? তার সঙ্গীরা চিৎকার করে, ‘এতো বড়ো কথা! ভয় দ্যাখায়?’
সংঘর্ষের সম্ভাবনায় আনোয়ার চঞ্চল হয়ে ওঠে। আলিবক্স কি তাকে বিপদে ফেলে কেটে পড়লো? হঠাৎ দ্যাখে হাতের কুড়াল ওপরে তুলে চেংটু সবাইকে তাড়া করছে। চেংটুর সঙ্গে নবেজউদ্দিন হাতের দা ঘোরানো শুরু করে। মিছিলের ছেলেরা দৌড়ে বাইরে চলে যায়। চেংটু ও নবেজউদিনের সঙ্গে আনোয়ারও বাইরে ছোটে। মিছিলের ছেলেরা রাস্তা ধরে চন্দনদেহের দিকে উধাও হলো। বাড়ির বাইরে কাঁঠালতলায় দাঁড়িয়ে নবেজউদ্দিন কাপে, বড়োমানষের ব্যাটাগোরে কওয়াই হলো, তোমাগোরে সভাত যাওয়া হবো তা শালাগোরে প্যাগনা কতো!—’
এইভাবে কথাবার্তা চলছে, চেংটু হঠাৎ প্রায় দৌড়ে ভেতরের দিকে চলে যায়। আনোয়ার তার পেছনে।
ঘরে চেংটু একা। আনোয়ার বারান্দায় পা দিতেই চেন্টু হাঁপায়, গাজী কোটে?
নাই।’ কথা না বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠানে নেমে চেন্টু দৌড়াতে শুরু করে কলাপাড়ের দিকে। পায়খানা গেছে বোধহয়! কাঁপতে কাঁপতে দৌড়ায় আনোয়ার।
কলতলা থেকে হলুদ বনের ভেতর দিয়ে গেলে বাড়ির শেষ সীমায় পায়খানা। পায়খানা খোলা দরজায় উকি দিয়ে চেন্টু চিৎকার করে, বদনা আছে।
শুধু বদনাই আছে? ‘হু! মানুষ নাই!’ পায়খানার পেছনে শটিবন। এরপর নিচু জায়গা, বর্ষার পানি নামলে এখানে মাগুর শিঙির ছড়াছড়ি, এখন বাশপাতার পাজা। এরপর উঁচু জায়গায় ঘন ও বড়ো বাঁশঝাড়। খুঁজতে খুঁজতে সবাই বাশঝাড় পেরিয়ে দাঁড়ায় ফসলের মাঠে। আদিগন্ত মাঠ। মাঠের ওপার পদুমশহর গ্রাম লী লী করে। এতো তাড়াতাড়ি খয়বার গাজী এই মাঠ পার হবে কি করে? আনোয়ার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপায়! সবাই মিলে বাড়ির ভেতর ও আশেপাশে খোঁজাখুঁজি চালায়। রান্নাঘরে সিলিঙে ঝোলানো পাটখড়ির বেঁচেকা। সেখানে হাতড়াতে গেলে ডান হাতে বিছার কামড় খায় নবেজউদ্দিন। আলিবক্সের দলের ১টা ছেলে চুলার ভেতর পর্যন্ত খোঁচায়। আলিবক্স ফিরে এলে আরেক দফা অনুসন্ধান চললো। দলের কর্মীদের আলিবক্স চাপা ও কঠিন গলায় একটু বকে, নিজের ঘরের মধ্যে থাকবার পারলা না? মানষেক এতো বিশ্বাস করো কিসক?
এই অবিশ্বাসী মানুষটি কি আনোয়ার? কাঁটা কাঁটা ঢোঁক গিলতে গিলতে আনোয়ার প্রস্তাব করে, পদুমশহর গেলে হয় না?
আলিবক্স হাসে, পদুমশহর ইস্কুলের মাঠে ঐ মিছিলআলাগো সভা চলতিছে। বড়োলোকের গাঁও, সোগলি গাজীগোরে ইষ্টিকুটুম। ঐ গাঁয়ের মেলা মানুষ ঢাকাত থাকে, বগুড়াতে থাকে। ছেলেপেলে সব কলেজ ইউনিভারসিটিত পড়ে। চন্দনদহের মিটিং করে সব তারাই। ঐ গাঁওত আজ ঢোকাই যাবো না।
বারান্দায় এক কোণে বসে লাল রঙের চোখ মেলে চেংটু দেখছিলো উঠানের কালো মাটি। করমালির বিরতিহীন গোঙানিতে বিরক্ত হয়, মাগীমানষের লাকান নালাস কিসক? তারপর মাটির দিকে মুখ রেখেই সে বিড়বিড় করে, শালা তামাম আত ধর্যা নামাজ পড়ে, কতো বড়ো মুসল্লি পুরু ও ফাটা ঠোঁটে ছোট্রো ১টি হাসির টুকরাকে চেন্টু চটকায়, ভাইজান, কওয়া যায় না, জুম্মার নামাজের ওকতো হলে আজান শুন্যা বৈরাগীর ভিটাত অ্যাসা খাড়া হবার পারে। মুসল্লি মানুষের জবানা-বরখেলাপ করবার পারে?
আনোয়ার চুপচাপ শোনে। চটকানো তেতো হাসি গিলে ফেললে চেংটুর কথা আরো তেতো হয়ে ওঠে, বড়োনোকের মাথাত কতো ফন্দিই বারায়! আলিবক্স ছাইহাটা যাবার প্রস্তুতি নেয়, আমরা যাই ভাইজান, যদি কোনো সোস্বাদ পান তো নবেজউদ্দিনকে পাঠায়া দিবেন।
কিন্তু নবেজউদ্দিন থাকবে না। ছাইহাটার নামকরা সিধেল চোর জুলু ধরা পড়েছে, গণআদালতে তার বিচার হবে। জুলু চোর একবার নবেজউদিনের ঘরে সিধ কেটে একটা কাঁথা আর সের ২চাল নিয়ে গিয়েছিলো, লোকটাকে সে নিজ হাতে ২টো চড় মারতে চায়। নবেজউদ্দিন আবার আনোয়ারকেও যেতে বলে। কিন্তু চেংটুর নির্বিকার নীরবতায় আনোয়ার ইতস্তত করে, এখানে করমালি একেবারে একা থাকবে। পায়ের যা অবস্থা।’
তা আপনে কি করবেন?
চেন্টুর কথায় আনোয়ার বিরক্ত হবার সুযোগ পেয়ে একটু চাঙা হয়ে ওঠে, থাকা দরকার। ফোস্কা গলে গেলে বিপদ হবে!’
সবাই চলে গেলে হঠাৎ ঝপ করে সন্ধ্যা হয়ে যায়। করমালির পাশে দাঁড়িয়ে উঠানের ওপারে পূর্ব-পশ্চিম লম্বা নোন-ধরা দেওয়াল তার লোমভরা গতর নিয়ে যেন নড়াচড়া করে। সন্ধ্যার পর লণ্ঠন হাতে আনোয়ার বড়োচাচার ঘরে যায়, লন্ঠনের শিখা বাড়িয়ে খাটের নিচে উকি দেয়। খুনী, গোরু-চোর, আইয়ুব-মোনামের গুপ্তপাণ্ডাদের সেবাদাস খয়বার গাজী এখানে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে নাই তো? নির্জনতার সুযোগে ব্যাটা আবার অতর্কিতে লাফিয়ে পড়বে না তো আনোয়ারের ওপর? রাত বাড়ে। ভেতরের বারান্দা থেকে করমালিকে সাবধানে ঘরে এনে মেঝেতে তার শোবার বন্দোবস্ত করে আনোয়ার। করমালির একটানা গোঙানি একজন সঙ্গীর উপস্থিতিকে নিশ্চিত করলে আনোয়ার শুয়ে পড়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *