এক জুলাই, শুক্রবার
আজ শুক্রবার। ঝ আপিসে যাবেন না। ঝ আপিসে না গেলেই যে এ ঘরে এসে দীর্ঘক্ষণ কাটাতে পারেন, তা নয়। তবু ঝ বাড়িতে থাকলে আমার স্বস্তি হয়। স্বস্তি এই জন্য নয় যে দুবেলা খাবার জুটবে আমার। স্বস্তি এই জন্য যে বাড়িতে অচেনা আততায়ী ঢুকতে নিলে ঝ বাধা দেবেন। ঝর কাছে পিস্তল থাকে আত্মরক্ষার জন্য। ঝ আদৌ গুলি চালাতে পারবেন কি না, একদল সশস্ত্র লোক ঢুকে গেলে ঝর পক্ষে সম্ভব হবে কি না থামানো সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েও মনে হয় বাড়িটি এখন নিরাপদ। ঝর পিস্তল যদি কাজই না করে, অন্তত ঝ তো আগেভাগে বিপদের খবর পেয়ে আমাকে ওই খোপটিতে ঢুকিয়ে রাখতে পারবেন।
মৌলবাদীরা জয়ধ্বনি করছে সারা দেশে। জনগণকে তারা অভিনন্দন জানাচ্ছে হরতাল সফল করার জন্য। হরতাল সফল। তাদের বিজয় অনিবার্য। তসলিমার ফাঁসি হবে। ব্লাসফেমি আইন হবে। নতুন কর্মসূচি দিয়ে দিয়েছে, আজ বিকেলে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামাতে ইসলামীর সমাবেশ আর বিক্ষোভ মিছিল, আজ থেকে ১৫ই জুলাই পর্যন্ত গণসংযোগ, ১৬ থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত থানায় থানায় ইমাম ওলেমা সম্মেলন, এই সময় পর্যন্ত দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। জামাতে ইসলামীর সভায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু কোরান ও আল্লাহ রসুলের অবমাননা সহ্য করবে না। বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তসলিমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, অথচ ১২ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার বিষয়ে কিছুই বলেননি। শায়খুল হাদীস বলেছেন যে দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঘরে ফিরবেন না।
সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছাত্র সমাজও মাসব্যাপী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে। আরেকটি সুখবর ছাপা হয়েছে পত্রিকায়, নয়াদিল্লি থেকে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসেছেন বাংলাদেশে, আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কথা বলতে।
খবরটি দেখে ঝ বললেন, নরওয়ে শুনেছি অনেক টাকা বাংলাদেশকে সাহায্য দেয়। খালেদা জিয়া উল্টো পাল্টা করলে বিপদ আছে। তার ওপর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট স্বয়ং বিল ক্লিনটন বলেছেন তোমার নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ভাবছেন।
–তাহলে কি জামিন হবে আমার? সরকার আমাকে নিরাপত্তা দেবে? মামলা তুলে নেবে? কিন্তু তা করলে তো মৌলবাদীরা সরকারকে খেয়ে ফেলবে।
খেয়ে ফেলা শব্দদুটো ঝ কে হাসায়। তিনি মাথা ঝাঁকিয়ে বলতে থাকেন, হাল ছেড়ো না, দেখ কি হয়। ওয়েট এণ্ড ওয়াচ।
আজ ইনকিলাবের পুরো পাতার সবটা জুড়ে খবর।
আল কোরানের মর্র্যাাদা সমুন্নুন্নত রাখতে সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালিত।
গতকাল গোটা বাংলাদেশ ছিল তৌহিদী জনতার দখলেঃ নাস্তিক মুরতাদ ইসলাম বিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি মুসলমানের রায়
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল অভূতপূর্ব এক হরতালের দিন। গোটা বাংলাদেশ ছিল তৌহিদী জনতার দখলে। রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি শহর বন্দর থেকে শুরু করে ৬৮ হাজার গ্রামে নাস্তিক মুরতাদ, ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হরতাল পালিত হয়। কিসের জন্য এই হরতাল? ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য তথা আল কোরানের মর্যাদা সমুন্নত রাখাই ছিল এই হরতালের লক্ষ্য। হরতালের দাবি ছিল– মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতদানকারী ও ইসলামকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় লিপ্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তথাকথিত মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে ফ্রি স্টাইল পন্থীদের দুষ্টবুদ্ধিপ্রসূত আক্রমণ থেকে ধর্মের ও ধর্মীয় মহাপুরুষের মর্যাদা সংরক্ষণের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে ব্লাসফেমি আইন প্রবর্তন করতে হবে। ধর্মদ্রোহী পত্রপত্রিকা বাতিল করতে হবে। সেবার নামে একশ্রেণীর এনজিওর তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং আল কোরানের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে গতকাল যা ঘটলো এমনটি আর কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন তীব্র স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল আর কখনো হয়নি। মূলত গতকাল বাংলাদেশের রাজপথ ছিল আলেম ও ইসলামপন্থী জনতার দখলে। মঙ্গলবার ঢাকায় ঘাদানিকভূক্ত এক নেতা জনসভায় বক্তৃতাকালে চিৎকার করে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ধর্মদ্রোহিতার বিচারের দাবিতে হরতাল আহবানকারীদের তারা ৩০ জুন মাঠে নামতে দিবেন না। তার ভাষায় ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা হচ্ছে রাজাকার ও পাকিস্তানের দালাল। কিন্তু গতকাল ঐ নেতা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদেরই মাঠে দেখা যায়নি। ধর্মদ্রোহিতার বিচার দাবিকারী আলেম ও ইসলামপন্থীরাই গতকাল সারাদিন রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশের ময়দানে বিচার করছিলেন। শুধুমাত্র ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে বড়জোর শদুয়েক ঘাদানি পুলিশের ছত্রছায়ায় ছিল। এছাড়া আর কোথাও ঘাদানির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। জানা যায়, ভোর চারটায়, তসলিমা সমর্থক এসব ঘাদানি প্রেস ক্লাবের সামনে তোপখানা রোডে আসে এবং পুলিশকে বলে কয়ে সেখানে উপস্থিতি বজায় রাখার ব্যবস্থা করে। নইলে নাকি মান ইজ্জত একেবারেই যায়। এদের ছাড়া ঢাকা বা সমগ্র বাংলাদেশের আর কোথাও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত য়েচ্ছ!য় ধর্মদ্রোহিতার পক্ষ অবলম্বনকারী এসব ঘাদানি চক্রের টিকিটির সন্ধানও মিলেনি। এতেই প্রমাণিত হয় যে এই দেশ মুসলমানদের — এ দেশ পবিত্র কোরানের অনুসারিদের– প্রমাণ হয়েছে –ফতোয়াবাজ সাম্প্রদায়িক রাজাকার ইত্যাদি ধুম্রজাল সৃষ্টি করে গালিগালাজ করে মূল বিষয়কে ধামাচাপা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখা যায় না। গতকাল ফজরের নামাজের পর থেকেই রাজপথে তৌহিদী জনতার ঢল নামে। হাজারো, লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয়– নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার, আমাদের উৎস কি? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তোমার নেতা আমার নেতা– বিশ্ব নবী মোস্তফা। ধর্মপ্রাণ অযুত কণ্ঠের এ স্লোগানে জনপদ, রাজপথ মুখরিত হয়। বিভিন্ন স্থানে ধর্মদ্রোহী ও মুরতাদ চক্রের চোরাগোপ্তা হামলায় আল্লাহর এ বান্দাদের রক্ত ঝরেছে, কিন্তু তাদের অগ্রযাত্রা স্তব্ধ করা যায়নি। ফলে গতকালের ঘাদানি মুক্ত বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের রায় ঘোষিত হয়েছে–এ দেশে ধর্ম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না। এ দেশে ধর্মদ্রোহী ও তাদের মদদদাতা ও দোসরদের স্থান নেই। তসলিমা, আহমদ শরীফ গংসহ সকল ধর্মদ্রোহীকে শাস্তি দিতে হবে। ধর্মদ্রোহিতার চিরঅবসানকল্পে অনতিবিলম্বে ব্লাসফেমি ধরনের আইন প্রবর্তন করতে হবে। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টাব্যাপী গোটা বাংলাদেশের জনতার ময়দানে প্রতিফলিত ও প্রতিবিম্বিত এ ঐতিহাসিক গণরায় আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অবশ্যই একটি মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে। বেশ কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বাংলাদেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদের পদলেহী এই সব লোক তাদের বেতনভুক এজেন্ট ছাড়া আর কিছু নয়। তসলিমা-আহমদ শরীফ গং এবং এই গংভুক্ত এসব লোকের কুৎসিত কার্যকলাপের প্রতিবাদে ৩০ জুন হরতালের ডাক দেওয়া হলে ভারতীয় দালালরা এই হরতাল প্রতিরোধের হুমকি দিল। কিন্তু যখন তারা জানলো যে এই হরতাল প্রতিরোধ করা যাবে না তখন তারা এই ৩০ তারিখেই পাল্টা হরতাল করে কিছু একটা হাসিলের মতলব এঁটেছিল অথচ হাসিল তো দূরের কথা বেচারা ঘাদানি চক্র মাঠেই নামতে পারেনি। ওলামা সমাজ গতকাল একটি মরণ পণ করে মাঠে নেমেছিলেন। তা হল, শির দেগা, নাহি দেগা আমামা..। রাজনৈতিক মহলের মতে গতকাল বাংলাদেশে ওলামা ও ইসলামপন্থীদের নেতৃত্বে পরিচালিত নজিরবিহীন এই হরতাল ইসলামী আন্দোলনের ধারায় এক নতুন পথ নির্দেশ করছে, নতুন দিগন্তের উন্মোচন করছে। এই প্রেক্ষাপটে স্মরণে থাকে জাতীয় কবি নজরুলের বিখ্যাত কবিতার এই লাইনটি — বাজিছে দামামা বাঁধ রে আমামা শির উঁচু করি মুসলমান, দাওয়াত এসেছে নয়া জমানার, ভাঙা কেল্লায় উড়ে নিশান।
আরও খবর। যুব কমাণ্ড ও দালাল প্রতিরোধ কমিটির সমাবেশে বক্তাবৃন্দ বলেছেন–তসলিমা গংদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। গতকাল দৈনিক বাংলার মোড়ে জাতীয় যুব কমাণ্ড ও ভারতীয় দালাল প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে পৃথক পৃথক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জনাব বি এম নাজমুল হক এবং জনাব গোলাম নাসেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুটি সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এনডিও সেক্রেটারি আনোয়ার জাহিদ বলেন, আজকের ঐতিহাসিক হরতালের মাধ্যমে জনতা যে স্বতঃস্ফূর্ত রায় দিয়েছে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সরকারকে তসলিমা গংদের শাস্তি ও জনকণ্ঠ পত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষণার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সরকার যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে যা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। .. এই ঐতিহাসিক হরতালের মাধ্যমে লড়াইএর শুরু হল। লড়াই করতে হবে জান, স্বাধীনতা ও ধর্ম বাঁচানোর জন্য। তিনি বলেন, এ দেশের মাটিতে ধর্ম পালন করতে হলে দেশকে বাঁচাতে হবে এবং নাস্তিকদের প্রতিহত করতে হবে। আজকের দিন আমাদের বিজয়ের দিন, কোরানের বিজয়ের দিন এবং স্বাধীনতার বিজয়ের দিন। আজ সময় এসেছে প্রতিটি মুসলমানের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং আলেম ওলামা জাতীয়তাবাদী দলসমূহের নেতৃবৃন্দকে একই মঞ্চে সমবেত হওয়ার। এনজিওদের পয়সায় যেসব পত্রিকা চলে তারা মৌলবাদের ধোয়া তুলছে এনজিওদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে, স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলার কারণে। ইসলাম, কোরান ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা মুসলমান নয়। তারা জানে এদেশ থেকে মুসলমানদের হঠাতে পারলে এদেশকে করদ রাজ্যে পরিণত করা যাবে। আজকের হরতাল তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। তাই সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার– এদেশে হয় তারা থাকবে নতুবা তৌহিদী জনতা থাকবে।
মেজর বজলুল হুদা বলেছেন, আজকে যারা হরতালকে প্রতিহত করতে মাঠে নেমেছে তারা গণতন্ত্রের পিঠে ছুরিকাঘাত করেছে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় চেতনাকে রক্ষা করার জন্য আমরা বহু রক্ত দিয়েছি। এবার আর রক্ত দেব না, এখন থেকে আমরাই রক্ত নেব। আমরা ৭১এ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম পিণ্ডির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে একথা ঠিক কিন্তু এদেশকে দিল্লির গোলামে পরিণত করার জন্য নয়।
প্রিন্সিপাল সিরাজুল হক গোরা বলেছেন, আজকে আমাদেরকে দেশ ও ধর্মদ্রোহীদেরকে চিরদিনের জন্য নির্মূল করার শপথ নিতে হবে।
খন্দকার আবদুল মান্নান বলেছেন, সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিকে একই মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে এই হরতালের মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব। আবদুল্লাহিল মাসুদের বক্তব্য, দেশদ্রোহী ঘাতক দালালদের এদেশ থেকে না তাড়ানো পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।
বাকিরা একই রকম কথাই বলেছেন, দেশদ্রোহীরা বলেছিল দেশপ্রেমিকদের রাজপথে থাকতে দেবে না কিন্তু আজ প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে দেশ ও ধর্মদ্রোহীদের জায়গা নেই, এই দেশে দেশপ্রেমিকরাই থাকবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
মাওলানা নিজামী ভাষণ দিয়েছেন বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে তো আর ভাষণ দেননি তিনি। রাস্তা বন্ধ করে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয় এসব রাজনৈতিক সভার জন্য। জামাতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন, স্বতঃস্ফূর্ত এ হরতালের মাধ্যমে প্রমাণিত হল যে ইসলাম ও কোরান অবমাননাকারীদের স্থান এদেশে নেই। যারা কোরান, আলেমা ওলামাদের সাথে বেয়াদবি করেছে, এ হরতালের পর তাদের তওবা করা উচিত। ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানী তাগিদেই এই স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। এ হরতালের সময় কোনও পুলিশ নামানোর দরকার ছিল না। সরকার ঘাদানি কমিটিকে রক্ষার জন্যই গতকাল পুলিশ নামিয়েছে। গত কদিনের ঘটনা প্রমাণ করে যে ঘাদানিকএর সাথে সরকারের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। ঘাদানিকএর মত নষ্টা ভ্রষ্টা লেখিকার সাথেও সরকারের যোগাযোগ রয়েছে।
নষ্টা ভ্রষ্টা লেখিকা সম্পর্কে এরপর নিজামী বিস্তর কথা বললেন।
ইসলামী ছাত্র শিবির রাগ করেছে, বলেছে, সরকার মুরতাদদের পক্ষ অবলম্বন করেছে।
ভোরের কাগজের খবর, সারা দেশে হরতাল পালিত, সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ শতাধিক। সিলেটে এনজিও অফিস ক্লিনিক জ্বালিয়ে দিয়েছে মৌলবাদীরা। হরতাল সম্পর্কে সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি। ঢাকার ঘটনায় ১৭ পুলিশসহ শতাধিক আহত। হরতাল চলাকালে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রোশ।
এনজিও অফিস জ্বালিয়ে দিল? হ্যাঁ জ্বালিয়ে দিল। মৌলবাদী ফতোয়াবাজরা গতকাল সিলেটের জকিগঞ্জ থানার আটগ্রামে এনজিও সংগঠন গ্রাম উন্নয়ন এফআইডিডিবি অফিস ও কোয়ালিশন মেডিকেল ক্লিনিক জ্বালিয়ে দিয়েছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কয়েকশ মারমুখী মৌলবাদী কর্মী জকিগঞ্জের আটগ্রামস্থ এফআইডিডিবি অফিসে হামলা চালায়। ব্যাপক ভাঙচুরের পর এফআইডিডিবির কর্মকর্তাকে অফিসের ভেতর আটকে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে অবস্থানকারী মাত্র সাতজন পুলিশ কোনও রকমে অফিস ঘরে আটক চারজন কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে। অফিসটি জ্বালিয়ে দেবার পর মৌলবাদীরা আটগ্রামস্থ কোয়ালিশন মেডিকেল ক্লিনিকে আগুন দেয়। আগুন নেভাতে স্থানীয় লোকজন আসতে চাইলে তারা বাধা দেয়। অফিস ও ক্লিনিক সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তারা প্রায় এক কোটি টাকার সম্পদ পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার সময় দুজন পুলিশ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা তিনটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার পর সিলেট থেকে রিজার্ভ পুলিশসহ একজন এএসপি ও এডিএম জকিগঞ্জে গিয়েছেন। এদিকে গতকাল সকাল থেকেই কতিপয় মৌলবাদী কর্মী সিলেট শহরের হকার পয়েণ্টে হামলা চালিয়ে ইনকিলাব ও সংগ্রাম ছাড়া ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, আজকের কাগজসহ অন্যান্য পত্রিকা ছিনিয়ে নেয়। তারা ইনকিলাব ও সংগ্রাম ছাড়া অন্য সব পত্রিকা বিক্রি বন্ধ রাখতে হকারদের বাধ্য করে। ফলে শতাধিক পত্রিকা-হকার মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
হরতাল সম্পর্কে চিরকাল সরকার পক্ষ যেরকম বিবৃতি দিয়ে আসছে, সেরকমই এবারের বিবৃতি। জ্ঞবিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আহবানে হরতাল পাল্টা হরতালে ঢাকায় বাস-গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে সারা দেশে ট্রেন লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক ছিল।’ তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরী কম করে হলেও কিছু আহত নিহত সংখ্যা উল্লেখ করেন। সংঘর্ষ কোথায় কোথায় ঘটলো, ককটেল কোথায় কোথায় ফাটলো, তারও খানিকটা ফিরিস্তি আছে। তবে পুলিশ কেন কিশোরগঞ্জের একটি তরুণকে গুলি ছুঁড়ল সে সম্পর্কে বলেছেন, ‘কিশোরগঞ্জে একদল লোক ট্রেন আটক করলে পুলিশ গিয়ে ট্রেনটি উদ্ধার করে। এরপর মিছিলকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করে এবং অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন অস্ত্র ও আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। এরমধ্যে আরমান নামের একজন নিহত হয়, তার পিতার নাম আনোয়ার হোসেন। আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে, তার নাম আশরাফ।’ গতকাল শুক্রবার সকাল সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ, বোমাবাজি, হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। হরতাল আহবানকারী পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তিন শতাধিক লোকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ….
মাওলানা নিজামী বলেছেন, এ হরতালে প্রমাণিত হল ইসলাম ও কোরান অবমাননাকারীদের স্থান এ দেশে নেই। যারা কোরান ও আলেম ওলামাদের সাথে বেয়াদবি করেছে, এ হরতালের পর তাদের তওবা করা উচিত। মাওলানা নিজামী আরও অনেক কথা বলেছেন, এত কথা আমার আর ভাল লাগে না পড়তে। আমার ভয় হয়। আমার দেশে আমার স্থান নেই, এ কথা আমার আর শুনতে ইচ্ছে করে না।
Leave a Reply