2 of 3

এন-আর-আই

এন-আর-আই

ডক্টর উমাকুমার চক্রবর্তী একজন এন-আর-আই, অর্থাৎ নন রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান, অর্থাৎ অনাবাসী ভারতীয়। এন-আর-আই এই শব্দটির সঙ্গে এখন অনেকেই রীতিমতো পরিচিত। অনেক সৌভাগ্যবানের নিকট-আত্মীয় বা বন্ধুই হয়তো এন-আর-আই। তবু কেউ যাতে নন রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ানকে রেড ইন্ডিয়ান বা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান জাতীয় কিছু না ভাবেন, তাই প্রথমেই বলে রাখা ভাল এঁরা আমাদের মতো, আমাদেরই লোক। শুধু আমরা দেশে আছি, এঁরা বিদেশে আছেন।

এন-আর-আই-এর সংজ্ঞা সংক্রান্ত আইনের ঝামেলার মধ্যে না গিয়ে সরাসরি সোজা করে বলা চলে যে, মোটামুটি এন-আর-আই-রা হলেন সফল প্রবাসী ভারতীয়, এঁরা আর্থিকভাবে অত্যন্ত সচ্ছল, এঁদের অনেকেই বিদ্যায়-কীর্তিতে বিদেশে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন।

ডক্টর উমাকুমার চক্রবর্তীও তাই।

আমরা এই সামান্য কথিকায় প্রথমে তার পূর্ব জীবন যথাসম্ভব সংক্ষিপ্তাকারে স্মরণ করে নিচ্ছি।

উমাকুমারবাবু পুর্ববঙ্গীয় উদ্বাস্তু। তাদের পূর্বনিবাস বরিশাল জেলায়। এখন তার বয়েস সাতচল্লিশ। উনিশশো পঞ্চাশ সালে, সেই ভয়াবহ দাঙ্গার বছরে, বরিশাল শহরের কয়েক মাইল দূরে তাদের গ্রামের বাড়ি পুড়ে ছারখার হয় এবং তার দুই কাকা দাঙ্গাকারীদের হাতে নিহত হন।

উমাকুমারবাবুর বাবা থাকতেন কলকাতায় একটা মেসে, কাজ করতেন সেকালের ক্লাইভ স্ট্রিটের একটা সওদাগরি অফিসে। ঠিক এই সময়েই পরাজিত ক্লাইভ সাহেব ওই ঘিঞ্জি রাস্তাটা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসকে ছেড়ে দিয়ে পাশের গলিতে আশ্রয় নেন।

সে যা হোক উমাকুমারবাবুরা দাঙ্গার পরে সর্বস্বান্ত হয়ে যখন কলকাতায় এসে পৌঁছালেন, তাঁর বাবা মেস ছেড়ে দিয়ে দক্ষিণ কলকাতার শেষ সীমান্তে একটি নবগঠিত উদ্বাস্তু কলোনিতে কোনওরকমে একটা টিনের ঘর তৈরি করে নতুন জীবন শুরু করলেন।

উমাকুমারবাবুর পিতামহের বয়েস তখন প্রায় সত্তর। তবে তিনি বেশ শক্ত-সমর্থ ছিলেন। তিনি গ্রামে মাস্টারি করেননি, তবে নাতি-নাতনিদের খুব যত্ন করে পড়াতেন।

অল্প দিনের মধ্যেই উদ্বাস্তু কলোনির ভিতরে একটি স্কুল গড়ে ওঠে এবং সেখানে উমাকুমারবাবু ভরতি হন।

বলা বাহুল্য উমাকুমারবাবু মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং সেই সঙ্গে ছিল তাঁর পিতামহের সুনজর। শুধু ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষাগুলিতে তিনি ভাল করলেন তাই নয়, বিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষায় স্কুল ফাঁইন্যালে তার বছরে তিনি পঞ্চম স্থান অধিকার করলেন। একটি অখ্যাত উদ্বাস্তু পল্লির নগণ্য একটি নতুন স্কুলের নাম তার দৌলতে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় বেরোল।

এসব তথ্য অবশ্য আমাদের এই গল্পের পক্ষে মোটেই জরুরি নয়, বিশেষত হালকা গল্পে এসব তথ্য না দেওয়াই রীতি। কিন্তু এই আখ্যান পাঠান্তে কেউ যেন উমাকুমারবাবুকে হাসির পাত্র মনে না করেন, শুধু সেই জন্যে এতক্ষণ কিছু বাস্তব তথ্য জানানো হল।

এর পরের ইতিহাস একটু সংক্ষেপ করেই বলছি। উমাকুমারবাবু সসম্মানে এবং উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের সঙ্গে কলেজ ও ইউনিভার্সিটির স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষাগুলি উত্তীর্ণ হলেন। তার অধীত বিষয় ছিল উদ্ভিদবিদ্যা। উদ্ভিদবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্যে তিনি অবশেষে আমেরিকায় পৌঁছালেন।

কিছুদিনের মধ্যেই কয়েকটি ভারী ডিগ্রি অর্জন করে তিনি ওদেশেই অধ্যাপনা শুরু করলেন এবং এই পেশায় প্রচুর খ্যাতি ও অর্থ উপার্জন করলেন। উমাকুমারবাবু নিজে একজন শিক্ষকের পৌত্র, তিনি এর আগে কখনওই কল্পনা করতে পারেননি যে শিক্ষকতা করে এত অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

বছরের পর বছর দুহাতে লক্ষ লক্ষ ডলার উপার্জন করলেন ডক্টর উমাকুমার চক্রবর্তী। উদ্ভিদবিদ্যার উপান্তে পৌঁছে তার বিষয় হল পরিবেশ বিজ্ঞান। এই পরিবেশের ব্যাপারটা আজকের আধুনিক সভ্য পৃথিবী খুব খাচ্ছে, শুধু খাচ্ছে নয়, বলা চলে গোগ্রাসে গিলছে। উত্তর ক্যারোলিনের ফাঁচাচাও গাছের ফুল ফিকে হলুদ থেকে গাঢ় হলুদ হয়ে যাওয়ায় নিখিল বিশ্বের জীবজগৎ যে গভীর সংকটজনক অবস্থায় পড়ছে কিংবা নিম্নবাংলার বদ্বীপে সুন্দরবনের মোহনায় সুন্দরীগাছের পাতাগুলি যদি শীতের শুরুতে অন্তত একবার ঝরে যায় তাতে কুমিরের ডিম থেকে বাঘের বাচ্চা, এমনকী শেষ পর্যন্ত মানুষের শিশু কতটা লাভবান হবে, এসব বিষয়ে ডক্টর চক্রবর্তীর সাবলীল বিশ্লেষণে যেকোনও অনভিজ্ঞ ব্যক্তিও সব কিছু প্রাঞ্জল বুঝতে পারে।

খ্যাতি ও সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন দেশের নিয়মানুযায়ী ডক্টর চক্রবর্তীর নামটা ছোট হতে লাগল। প্রথমে অত কষ্টের ডক্টর ডিগ্রি বিসর্জন দিতে হল, তারপরে গেল তার কৌমার্য, অর্থাৎ নামের মধ্যপদ, তারপরে আরও ছোট হয়ে তিনি উমা চাকর হয়ে গেলেন। অবশ্য কোনও কোনও ভদ্রজন তাকে উমা চাকর না বলে ডক্টর চাকরও বলতে শুরু করলেন।

কিছুই আপত্তি করেননি আমাদের উমাকুমারবাবু। আপত্তির সময় নয় সেটা। সাফল্যের সোপান ধরে দ্রুত উঠতে উঠতে তিনি সম্মান ও অর্থের সঙ্গে এ সমস্তই নিতান্ত ন্যায্য পাওনা বলে ধরে লাগলেন, তিনি মোটেই কিছু মনে করলেন না।

আটাশ বছর বয়েসে বিদেশে গিয়েছিলেন উমাকুমার। প্রথমবার বছর পাঁচেক পরে দেশে ফিরতে পেরেছিলেন তিনি। এর পরের বার ব্যবধান হল প্রায় আট বছরের। ততদিনে দেশের প্রতি আকর্ষণ কমে গেছে। বাবা-মা দুজনেই মারা গেছেন। ঠাকুরদা অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। উদ্বাস্তু কলোনির সেই বাড়িও বেহাত হয়ে গিয়েছিল স্বাভাবিক নিয়মেই।

উমাকুমারের ব্যস্ত জীবনে বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। দেশে থাকতে বিয়ে করার সচ্ছলতা আসেনি। বিদেশে সে সুযোগ আসেনি। তবে তার ব্যস্ত সফল জীবনে নারী-সান্নিধ্যের তেমন অভাব ঘটেনি। ছাত্রী, সহকর্মিণী, বান্ধবী, বন্ধুপত্নী অধিকাংশই মেমসাহেব, ভারতীয় বা বাঙালিও কেউ কেউ ছিল।

অবশেষে যখন ছেচল্লিশ বছর বয়েসে এসে পৌঁছলেন উমাকুমার, তখন তার সব কিছুর উপর বিতৃষ্ণা এসে গেল। ঠিক করলেন আর নয়, এবার সব ছেড়ে-ছুঁড়ে দেশে চলে যাবেন। ইতিমধ্যে উমাকুমার পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভিন্ন উচ্চকুলশীল প্রতিষ্ঠানে এবং সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছেন।

বছরখানেক আগে মাসখানেকের জন্যে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন তিনি। তার কিছুটা কাটিয়েছিলেন কলকাতায়, বাকিটা দিল্লিতে। দিল্লিতে তাঁর একদম ভাল লাগেনি। সন্ত্রাসবাদীদের অত্যাচারে সর্বদা একটা তটস্থ ভাব। তিনি থাকতে থাকতেই দুজন সন্ত্রাসবাদী মোটর সাইকেলে চড়ে এক পাড়ার মধ্যে ঢুকে স্টেনগান চালিয়ে নির্বিচারে নিরীহ লোকদের হত্যা করে। নিউইয়র্কে কিংবা লস এঞ্জেলসে বসে এসব খবর শুনে উত্তেজিত হওয়া যায়, বিতর্ক করা যায়, কিন্তু একেবারে পাশের পাড়ায় এমন ঘটলে খুবই বিড়ম্বনা এবং আতঙ্কের ব্যাপার।

সেই তুলনায় বহু-নিন্দিত কলকাতা ভাল। কিন্তু তার যানবাহন, রাস্তাঘাট, কুখ্যাত লোডশেডিং আর সেই সঙ্গে ডক্টর উমাকুমার চক্রবর্তীর অনাবাসী ভারতীয় অভ্যেসসমূহ বাদ সেধেছিল।

কিন্তু তবুও উমাকুমার নানা দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রবাসে যে নিঃসঙ্গ জীবন তার চেয়ে কলকাতায় কষ্টে থাকা ভাল। সব চেয়ে বড় কথা, জনমদুখিনী মাতৃভূমির প্রতি কিছু কর্তব্য পালন করার জন্যে, যেমন এসব ক্ষেত্রে হয়, উমাকুমারবাবুর মনে আদর্শবোধ জাগ্রত হল। এই সঙ্গে আর একটা কথাও বিশেষ বিবেচ্য ছিল তার কাছে, সেটা হল যে পরিবেশের ব্যাপারে তৃতীয় পৃথিবীর এই অর্ধসভ্য দেশের লোকদের সচেতন করার দায়িত্বও তার যথেষ্ট রয়েছে। টরেন্টো, ওয়াশিংটন অথবা ব্রাসেলসের সাদা চামড়ার লোকদের পরিবেশ-বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তার নিজের দেশের লোকেদের ব্যাপারটা বোঝানো।

এই যে গাছের পর গাছ কাটা হচ্ছে, বছরের পর বছর খরা হচ্ছে, এই যে কুমিরেরা আর ডিম পাড়ছে না, ব্যাঙ আর বানর সাপ হয়ে যাচ্ছে, ধানখেতে পোকামাকড় নেই, এসবের কারণ ও ফলাফল, অনিবার্য মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিলেন উমাকুমার। তিনি ঠিক করলেন পাকাপাকিভাবে কলকাতায় এসে বাস করবেন আর গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-শহরে পরিবেশ নিয়ে বক্তৃতা করে এই হতভাগ্য দেশের মানুষদের পরিবেশপরায়ণ করে তুলবেন।

এন-আর-আই জীবনে রীতিমতো ঘেন্না ধরে গিয়েছিল উমাকুমারের। কিন্তু একটা অসুবিধে হয়েছে এই আঠারো বছর প্রায় এক নাগাড়ে বিদেশে থেকে, নানারকম খারাপ-ভাল অভ্যেস তৈরি হয়েছে তার। এখন গরম একদম সহ্য হয় না, মশা কামড়ালে চিৎকার করে কেঁদে উঠতে ইচ্ছে করে, সরষেবাটা সজনেড়াটা চচ্চড়ি চিবোতে বিরক্ত লাগে। রসগোল্লার রস হাতে লেগে থাকলে হাত চটপট করে।

এসব অসুবিধার কথা খুব একটা তোয়াক্কা না করে থিয়েটার রোডের পাশের একটা গলিতে এক বহুতল বাড়িতে একটা ভাল ফ্ল্যাট কিনে ফেললেন উমাকুমার। এয়ার কন্ডিশনার ইনভার্টার ইত্যাদি লাগিয়ে যতটা আরামদায়ক করা যায় বাসস্থান তা করলেন। টাকার অভাব নেই তার। বিদেশ ছেড়ে চলে আসার সময় ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি ছোট বাড়ি আর লাখখানেক ডলারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়া আর যা কিছু ছিল তার খানিকটা বেচে, কিছুটা দান করে বা উপহার দিয়েই সেই সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ নগদ টাকাপয়সা এবং তার নিজস্ব কিছু মার্কিনি গ্যাজেট, ফ্রিজ ইত্যাদি নিয়ে তিনি কলকাতায় চলে এলেন।

শুল্ক বিভাগের সঙ্গে প্রভূত লড়াই করে এবং বহু টাকা ডিউটি দিয়ে এসব দামি সাহেবি জিনিস বহুকষ্টে উদ্ধারও করলেন। এতে লাভক্ষতি যাই হোক, তিনি একসঙ্গে অনাবাসী বিলাস এবং আবাসী আনন্দ অর্জন করতে সমর্থ হলেন।

এসব তেমন কঠিন কঠিন ব্যাপার নয় শেষ পর্যন্ত। একটু লেগে থাকলে হয়ে যায়। সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার হল সেটা, যে-উদ্দেশ্যে তিনি এদেশে ফিরে এসেছেন। উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট, বক্তৃতা করা।

নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, পরিবেশ সম্পর্কে বক্তৃতা করা। কিন্তু ডক্টর উমাকুমার খেয়াল করেননি যে তাঁর মাতৃভূমিতে আর যা কিছুর অভাব থাক বক্তার কোনও অভাব নেই।

যেকোনও বিষয়ে যেকোনও স্থানে যেকোনও সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনর্গল বলে যেতে পারে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা এদেশে অগুন্তি। দেখে বোঝার উপায় নেই, সভামঞ্চের একপ্রান্তে নড়বড়ে। ফোলডিং চেয়ারে যে-বুড়ো আগাগোড়া ঝিমোচ্ছেন, সভাপতি তাঁর নাম ডাকামাত্র তিনি তোক করে লাফিয়ে উঠে অনায়াসে আড়াই ঘণ্টা বলে যেতে পারেন। আলোচ্য বিষয়ের মূলে না গিয়েও এই রকম মহতি সভায় বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়ে এই বৃদ্ধ যে ধন্য হয়েছেন এবং তিনি শ্রোতাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না এবং পূর্ববর্তী বক্তারা যা কিছু বলার সবই বলে দিয়েছেন, এই তিনটি পয়েন্টে তিনি একঘণ্টা করে তিন ঘণ্টা বলতে পারেন, শুধু তার অসুস্থ শরীর বলে আধঘণ্টা কমিয়ে আড়াই ঘণ্টা বলেন।

 সে যা হোক, উমাকুমারবাবুর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ধীরে ধীরে যোগাযোগ হতে লাগল। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সমিতি আছে যেগুলির শাখা বিভিন্ন জায়গায় ছোটবড় শহরে ছড়িয়ে আছে। এদের সভ্যবৃন্দ সপ্তাহে সপ্তাহে গুরুগম্ভীর সভা করে জ্ঞানীগুণীদের বক্তৃতা শুনতে ভালবাসেন। ক্রমশ চেনাজানা এর-ওর মাধ্যমে উমাকুমার এই জাতীয় দু-একটি সমিতিতে ভিড়ে গেলেন। দু-এক জায়গায় বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগও জুটে গেল।

বলা বাহুল্য, উমাকুমারের বক্তৃতার বিষয়গুলি যথেষ্টই আকর্ষণীয়। শ্যামবাজার ট্রামডিলোর মধ্যে বহুদিন আগে একটা কাঠবাদাম গাছ ছিল, এখন আর নেই। এ বিষয়ে উমাকুমারের মর্মস্পর্শী বক্তৃতা, শ্যামবাজারের শেষ বাদামগাছ যেকোনও শ্রোতার মনে কৌতূহল সৃষ্টি করতে বাধ্য।

কলকাতার চিরঅবহেলিত রাস্তার কুকুরদের সম্পর্কে তার মনোজ্ঞ আবেদন, নেড়ি কুকুরদেরও দরকার আছে অথবা অসামান্য কবিত্বময় তার উদ্ভিদ-চিন্তা পরের জন্ম যদি থাকে, সেই জন্মে যেন বনতুলসীর জঙ্গল হয়ে জন্মগ্রহণ করি–এই রকম সব বিষয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের যথেষ্টই প্রাণের টান আছে, উমাকুমারের এটা ধরতে বিশেষ দেরি হয়নি।

কিন্তু প্রথমদিকে সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী হয়েছিল উমাকুমারের যে আলোচনাটি, তার নামটি একটু দীর্ঘ, কিন্তু বড় ভাল– নিজের ঘরে নিজের জানলা, নিজের জানলায় নিজের টব, নিজের টবে নিজের গাছ, নিজের গাছে নিজের ফুল গন্ধরাজ, বেল কিংবা শেফালি, বকুল।

 ব্যাপারটা কিছুদিনের মধ্যেই বেশ জমে উঠল। লোকজন খবর নিতে লাগল, কে এই ডক্টর। উমাকুমার চক্রবর্তী? কম-বেশি নিমন্ত্রণ আসতে লাগল এদিক ওদিক, এ-শহর ও-শহর থেকে।

অতঃপর বক্তৃতাসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে উদ্যোগী হলেন ডক্টর চক্রবর্তী। ব্যাপারটাকে সম্মানজনক পর্যায়ে রাখতে হবে, এবং তার প্রথম ধাপ হল সুন্দরী, সুশ্রী, শিক্ষিতা ও বুদ্ধিমতী ব্যক্তিগত সহায়িকা বা পার্সোনাল অ্যাসিস্টান্ট নিয়োগ করা।

নিজের চিঠি নিজেই উত্তর দেওয়া, বাইরের কেউ এলে তার সঙ্গে নিজেই দেখা করা বা কথাবার্তা বলা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবীর পক্ষে মোটেই সম্মানজনক নয়। সুতরাং একজন পার্সোনাল অ্যাসিস্টান্ট চাই, সবচেয়ে ভাল হয় যদি তাকে বলা হয় প্রাইভেট সেক্রেটারি, তাতে আভিজাত্য আসে এবং সেই সঙ্গে সেই সেক্রেটারি যদি সুন্দরী বিদুষী হয়, তবে তো কথাই নেই।

ডক্টর চক্রবর্তী অনেক ভেবে-চিন্তে একটি খবরের কাগজে রবিবাসরীয় কলমে বিজ্ঞাপন দিলেন।

অনাবাসী বুদ্ধিজীবীর জন্য সপ্রতিভা, সুশিক্ষিতা সুন্দরী মহিলা আবশ্যক। বেতন যোগ্যতানুযায়ী। ফটোসহ আবেদন করুন।

বিজ্ঞাপনটি খবরের কাগজে পাঠিয়ে দিয়ে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন উমাকুমার। আজকাল রবিবারের পাতায় বিজ্ঞাপন ছাপা হতে বেশ সময় লাগে। সে হতেই পারে। কিন্তু কোনও এক রবিবার খুব সকালে হট্টগোলে, চিৎকার-চেঁচামেচিতে, বামাকণ্ঠের কলহে ও আর্তনাদে ঘুম থেকে ধড়মড় করে জেগে উঠলেন ডক্টর চক্রবর্তী। তাড়াতাড়ি জানলার পর্দা সরিয়ে তার পাঁচতলার ফ্ল্যাটের ওপর থেকে নীচে তাকিয়ে দেখলেন বিশাল ভিড়, সামনের রাস্তায় শুধু মহিলা আর মহিলা।

উমাকুমার বিজ্ঞাপনে নির্দেশ দিয়েছিলেন সপ্রতিভা, সুশিক্ষিতা, সুন্দরী, তিনি বিস্মিত হয়ে প্রচুর পরিমাণ সপ্রতিভা মহিলা দেখতে পেলেন, কিন্তু তারা সুশিক্ষিতা অথবা সুন্দরী কিনা এত উঁচু থেকে ধরতে পারলেন না। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই অনুধাবন করতে পারলেন, হয়তো, হয়তো কেন নিশ্চয়, এই মহিলারা তার সেই সরল বিজ্ঞাপন দেখেই এসেছেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আদিম আত্মরক্ষার প্রেরণায় উমাকুমার ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে তার আগে যত দ্রুত সম্ভব প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে পেছনের লিফট দিয়ে নেমে সোজা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আপাতত ঘূর্ণায়মতী কালোপরীর ছায়ায় আশ্রয় নিলেন।

 ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাঠের মধ্যেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে সামান্য চা-জলখাবার খেয়ে দশটা নাগাদ ফ্ল্যাটের দিকে ফিরে এসে দেখলেন ভিড় একটু হালকা হয়ে এসেছে। তবে তখনও মহিলার সংখ্যা যথেষ্ট। এবং তাদের কারও কারও চেহারা দেখে সুন্দরী বা সপ্রতিভা মনে না হলেও যথেষ্টই বিপজ্জনক মনে হচ্ছে। সুখের কথা, এঁরা কেউই তাঁকে চেনেন না এবং সেই সুযোগে অবস্থাটা একটু বুঝে উঠেই ফ্ল্যাটের মধ্যে না গিয়ে উমাকুমার আবার গা-ঢাকা দিলেন।

দুপুরে হোটেলে খেয়ে, বিকেলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বার কয়েক চক্কর দিয়ে অবশেষে নাইট শোয়ে সিনেমা দেখে খুব সন্তর্পণে বাড়ি ফিরলেন উমাকুমার। অত রাত পর্যন্ত কারও অপেক্ষা করার কথা নয়, তবু খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি।

সে যা হোক, লিফটের কাছে নিজের ডাকবাক্সে দেখলেন গাদা গাদা দরখাস্ত পড়ে রয়েছে। তার অনেকগুলির সঙ্গেই সাটিফিকেট এবং ফটো যুক্ত। পাঁচতলায় ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন সেখানেও দরজার ফাঁক দিয়ে বহু সচিত্র এবং স-সার্টিফিকেট আবেদনপত্র গাদা করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মোটামুটি গোনাগুনতি করে মনে হল, অন্তত দুশো-আড়াইশো দরখাস্ত নিশ্চয়ই হবে। এর মধ্যে যেগুলির সঙ্গে ছবি আছে সেগুলি আলাদা করে বাছাই করলেন উমাকুমার। তারও সংখ্যা প্রায় ষাটটা হবে।

সেদিন বিনিদ্র রজনী যাপন করলেন কুমার উমাকুমার। অনেক রকম দেখেশুনে বিবেচনা করে অবশেষে ভোর চারটে নাগাদ মোটমাট সাতজনকে বাছাই করলেন তিনি, যাদের লেখাপড়া ভাল, দেখতে ভাল, তা ছাড়া ছবি দেখে স্মার্ট মনে হয়, বাংলায় যাকে বলে সপ্রতিভা। তবে এর পর এই সাতজনের নাম-ঠিকানা, কাছে থাকে না দূরে থাকে, জাতধর্ম কী ইত্যাদি বিবেচনা করতে গিয়ে শুধুমাত্র একটা দরখাস্তেই আবদ্ধ হয়ে গেলেন উমাকুমার। কারণ আর কিছুই নয়, দরখাস্তকারিণীর তারই নামে নাম, শ্রীমতী উমা চক্রবর্তী।

তখন প্রভাত-সূর্যের রঙিন রশ্মিীমালা পাঁচতলার পূর্বমুখী ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে ডক্টর উমাকুমার চক্রবর্তীর পড়ার টেবিলে এসে পড়েছে। তারপর ভোরের সোনালি আলোয় শ্রীমতী উমা চক্রবর্তীর ছবিটা ভাল করে দেখতে লাগলেন। লোকে যাকে কনে-দেখানো-আলো বলে এটা ঠিক সেরকম আলো নয়, কিন্তু অনেকটা তার কাছাকাছি। শুধু কাছাকাছি নয় বরং বলা চলে আরও মনোরম।

শ্রীমতী উমার চেহারা ভাল, লেখাপড়া ভাল। শ্রীমতী উমাকেই উমাকুমারের পছন্দ হল। তবে নিজের মনে পছন্দ শব্দটা নিয়ে উমাকুমার কিঞ্চিৎ বিব্রত ও লজ্জিত বোধ করলেন। লোকে পাত্রী পছন্দ করে, প্রাইভেট সেক্রেটারি সম্পর্কে এ শব্দটা খাটে না, এ বিষয়ে কী একটা শব্দ আছে, উমাকুমারের কিছুতেই মনে এল না।

সে যা হোক, শেষ পর্যন্ত স্বনামধারিণীকেই নিয়োগপত্র পাঠালেন তিনি। যথাসময়ে মেয়েটি এল এবং তাকে দেখে, ফটো দেখে যতটা মুগ্ধ হয়েছিলেন ততটাই চমকিত হলেন তিনি।

ছবির সঙ্গে কিছুই মিলছে না। সেই ডাগর-ডোগর আঁখি, পাতলা ঠোঁট, উড়ুউড়ু চুল কিছুই মিলছে না। প্রথম দর্শনেই এ কথা উমাকে জানালেন উমাকুমার, আরও বললেন, এটা জোচ্চুরি, রীতিমতো জোচ্চুরি।

ফটোর চেহারার মতো দেখতে না হলেও ঊনপঁচিশ, কালো চোখের ঝকঝকে মণি, মোটা ঠোঁট, শ্যামলা রঙের এই মেয়েটিও তুচ্ছ নয়। সে চোখ নাচিয়ে বলল, জোচ্চুরি আবার কী, আমি তো ইয়ার্কি করেছি, আপনি বুঝতে পারেননি?

উমাকুমার বিব্রত বোধ করলেন, বললেন, কীসের ইয়ার্কি? কী বুঝতে পারব?

উমা বলল, ও ছবিটা কার? ভাল করে দেখুন? সন্ত্রস্তভাবে ভাল করে দেখেও উমাকুমার কিছু বুঝতে পারলেন না। তখন মেয়েটিও খুব ঘাবড়িয়ে গেল, বলল, সত্যি আপনি এই ছবি আগে দেখেননি!

যখন উমাকুমার অকপটে স্বীকার করলেন সত্যিই তিনি এই ছবিরানিকে চেনেন না, উমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে, তারপর বলল, স্যার, পায়ের ধুলো দিন।

দীর্ঘদিন মার্কিন দেশে বসবাস করে পায়ের ধুলোর ব্যাপারটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন উমাকুমার, ফলে আজ এই ফাজিল মেয়েটির অনুরোধ রক্ষা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হল না।

আসলে এই মেয়েটি নিজের ফটো না পাঠিয়ে সিনেমার কাগজ থেকে এক নায়িকার পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি কেটে নিজের দরখাস্তের সঙ্গে লাগিয়ে পাঠিয়েছিল। সে নিতান্তই খেলাচ্ছলে দরখাস্তটি পাঠায়, ধরেই নিয়েছিল চাকরি হবে না, তা না হোক, এই অনাবাসীর সঙ্গে একটু ইয়ার্কি করতে দোষ কী? দোষ নেই কিছু, কিন্তু এই অনাবাসী যে সিনেমা তারকার হৃদয়স্পন্দনকারী ফটো দেখেও ঠাট্টাটা ধরতে পারবেন না, তার কারণ তিনি দীর্ঘ দশ বছর কোনও দিশি ছবি দেখেননি, এটা শ্ৰীমতী উমা বুঝে উঠতে পারেনি। তার মুখে বিস্তৃত ব্যাখ্যা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। উমাকুমার।

এবার মেয়েটি উঠল, উঠে হাসিমুখে বলল, সরি! সত্যিই আমি দুঃখিত। আমি যাচ্ছি। আপনার অসুবিধে করার জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি।

মেয়েটির চলে যাওয়া দেখে, কী ভেবে উমাকুমার বললেন, কোথায় যাচ্ছ? তোমাকে তো আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছি?

উমা হাসিমুখে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, অ্যাপয়েন্টমেন্ট! আমার চাকরি এখনও আছে?

উমাকুমার বললেন, অবশ্যই আছে।

কাজে বহাল হয়ে গেল উমা। উমাকুমারের টেলিফোন ধরে, চিঠির উত্তর টাইপ করে, বক্তৃতার বয়ান লেখে। প্রয়োজনে রান্নাঘরে ঢুকে দু পেয়ালা চা বানিয়ে নিয়ে এক পেয়ালা খায়, এক পেয়ালা উমাকুমারকে দেয়। উমাকুমার যখন কোথাও বক্তৃতা করতে যান, সেও তার সঙ্গে যায়। উমাকুমার গাড়ি চালায়, সে পাশের সিটে বসে থাকে। উমাকুমার যখন বক্তৃতা করেন, উমা সামনে বসে নোট রাখে।

এরই মধ্যে একদিন একটা গণ্ডগোল হল। কলকাতার কাছাকাছি একটা অভিজাত সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান থেকে একটা বক্তৃতার আমন্ত্রণ এল উমাকুমারের কাছে, বিষয়, আজকাল বাঁশগাছ আর তত লম্বা হচ্ছে না কেন? বিষয়টি মোটেই নতুন নয়, বরং বেশ পুরনো। কিন্তু বিষয়টি উমাকুমারের খুব প্রিয়। আমেরিকায় ওকবৃক্ষের ক্রমহ্রাস্বত্ব-প্রাপ্তি বিষয়ে তাঁর বক্তব্য গত বছরেই সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তা ছাড়া ঠিক এই একই বিষয়ে তিনি এখন একজন প্রায় স্পেশালিস্ট, ইতিমধ্যে অন্তত আরও দশ জায়গায় বাঁশগাছের এই অধধাগতি বিষয়ে তিনি বক্তৃতা করে এসেছেন। এ বিষয়ে এ দেশেও তার খ্যাতি বেশ ছড়িয়ে পড়েছে।

কিন্তু মুশকিল হয়েছে অন্যখানে। এবারের নিমন্ত্রণ একটা অন্য ধরনের গণ্ডগোল। বক্তৃতানুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা একটি মারাত্মক ভুল করেছেন। তাঁরা চিঠিতে ডক্টর উমাকুমার চক্রবর্তীকে শ্রীমতী উমা চক্রবর্তী বলে সম্বোধন করেছেন। কী রকম যেন খটকা লাগল ডক্টরের, তিনি উমাকে বললেন, শ্রীমতী বলে লিখেছেন, মনে হচ্ছে এটা তোমাকেই বক্তৃতা করতে ডেকেছে। আমাকে নয়।

উমা বলল, তা হতে পারে না। আমাকে কেন বক্তৃতা করতে ডাকবে? ওরা আপনাকেই ডেকেছে। ভুল করে আপনাকে মহিলা ভেবেছে।তারপর একটু থেমে থেকে বলল, তবে আপনার এই বাঁশগাছের বক্তৃতাটা এতবার শুনেছি আর নোট নিয়েছি যে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আপনি যদি বলেন আমিও গিয়ে বক্তৃতাটি করে আসতে পারি।

সামান্য ভাবলেন উমাকুমার, তারপর ঠিক করলেন, ঠিক আছে, একটু মজা করাই যাক না, আর মেয়েটা কেমন বলে সেটাও দেখা যাবে।

 নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট স্থানে উমাকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলেন। উমা গটগট করে নেমে মঞ্চেও উঠে একঘণ্টা ঝড়ের মতো বলে গেল পরিবেশ দূষণের ফলে কী করে বাঁশগাছ ছোট হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ, এতে কী ক্ষতি হচ্ছে পৃথিবীর, মানবসমাজের, জীবজগতের এবং এর প্রতিকারই বা কী?

শ্রোতারা, শুধু শ্রোতারাই বা কেন, ডক্টর উমাকুমার চক্রবর্তীও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন সেই বক্তৃতা। এরপর যখন সভাকক্ষ থেকে পণ্ডিত শ্রোতারা একে একে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নানা প্রশ্ন করতে লাগলেন শ্রীমতী বক্তাকে, উমাকুমার একটু চিন্তিত হলেন, এসব কঠিন প্রশ্নের উত্তর কী করে দেবে মেয়েটা?

কিন্তু উমাকে তখনও তার সঠিক পরিমাপ করা হয়নি। প্রশ্নগুলো শোনামাত্র উমা মঞ্চ থেকে নামতে নামতে বলল, এসব অতি সাধারণ প্রশ্নের আমি আর কী উত্তর দেব? আমার ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করুন সেই সব বলতে পারবে, বলে সে ইঙ্গিতে উমাকুমারকে দেখিয়ে দিল। আইনস্টাইনকে জড়িয়ে এ ধরনের একটা গল্প উমাকুমার আগে কোথায় যেন পড়েছিলেন, এখন উমার কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলেন।

এ গল্প আর বেশি টেনে নিয়ে লাভ নেই। যাঁরা যা বোঝার, সবাই বুঝতে পেরেছেন। শুধু শুধু কালি কাগজ অপচয় করে কী হবে?

শুধু একটা কথা, এদেশের হাওয়া, ভেজাল সরষের তেল, রোদ, মশা ডক্টর উমাকুমারের আর সহ্য হচ্ছে না। তিনি আমেরিকায় ফিরে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে তার সুযোগ্য সহকারিণী শ্রীমতী উমা চক্রবর্তীও যাচ্ছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *