2 of 3

কবিতা ও ফুটবল

কবিতা ও ফুটবল

ভণিতা

অ্যানন (Annon) সাহেবের লেখা একটি বহু প্রচলিত ইংরেজি কবিতার অনুবাদ করছিলেন এক অধখ্যাত বাঙালি কবি। তাঁর অনুবাদটি তেমন ভাল হয়নি, উল্লেখযোগ্য নয়, কিন্তু আমার এই নিতান্ত সত্যঘটনা অবলম্বনে রচিত সৎ উপাখ্যানে সেই অক্ষম বাংলা অনুবাদটি একটু স্মরণ করতে হচ্ছে।

সম্পূর্ণ অনুবাদটি পুনরুদ্ধার করা রুচিসুখকর হবে না, শুধু আমাদের এই প্রতিবেদনের জন্যে যেটুকু প্রয়োজন তাই উপস্থাপন করছি।

সেই অনুবাদ পদ্যটি এই মুহূর্তে আমার হাতের কাছে নেই। কিন্তু আমার স্মৃতিশক্তির প্রতি এখনও আমার আস্থা হারায়নি, সুতরাং মনে করা যাক,

যেখানে দুই ল্যাম্পপোস্টের মধ্য দিয়ে
লম্বা পেনাল্টি কিকে
কে যেন শূন্যে পাঠিয়ে দেয়
চাঁদের ফুটবল গ্যালারিতে অস্পষ্ট ছায়াচ্ছন্ন মানুষেরা
চেঁচিয়ে ওঠে, গোল, গোল,
গোল।

ভাগ্যিস এই কবিতাটি এই মোক্ষম মুহূর্তে সদ্য সদ্য মনে পড়ল, তা না হলে কবিতা ও ফুটবল একত্রে মেলানো আমার সাধ্যি ছিল না। গল্পের খাতিরে গল্পটা লিখতেই হচ্ছে, কিন্তু সব কিছুর তো একটা যুক্তি চাই।

বহুকাল আগে এক ভিন্নদেশি যুক্তিবাদী দার্শনিক তার আদর্শ সমাজ থেকে কবিদের নির্বাসন দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই স্বপ্নের সমাজ এখনও বহুদূরের ব্যাপার।

ফলে সমাজে এখনও যথেচ্ছভাবে কবিরা বিচরণ করছেন। হয়তো তাদের কারও কারও কাছে ফুটবলের গোলমালটা ভাল নাও লাগতে পারে।

কিন্তু আমার একটা ব্যক্তিগত সুবিধা আছে, আমি কোনও কবিকে এখন পর্যন্ত চিনি না। আমার জানাশোনা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে এমনও একজন নেই যাকে কবি বলা যেতে পারে বা কবি বলে ভাবা যেতে পারে। কোনওদিন কোনও কবিকে আমি স্বচক্ষে দেখিনি এ কথা বলা যাবে না, কিন্তু তারা কেউ আমাকে জানেন না আর আমিও তাদের সঙ্গে পরিচিত নই।

সুতরাং এই অপরিচয়ের সুযোগে একজন কবিকে নিয়ে একটু চপলতা করলাম। আশা করি তিনি এবং অন্য কবিরা কবিজনোচিতগুণে আমার এই অপরাধ ক্ষমা করবেন।

অবশ্য আমার হয়তো এত সাবধানতার প্রয়োজন নেই। ফুটবল বিষয়ক এরকম একটি স্কুল এবং মোটামুটি ভাবে হাস্যকর রচনা কস্মিনকালে কোনও কবি পড়বেন, এরকম ভুল আশা করাই আমার অন্যায়। আমার অন্তরাত্মা বলছে, এই লেখা কোনও কবি চোখ বুলিয়েও দেখবেন না, সরাসরি সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠাকয়টি দ্রুত উলটিয়ে যাবেন। ৩৭০

তবে একচক্ষু হরিণের মতো আমি তো এতক্ষণ অন্যদিকটা মোটেই ভাবিনি। যদি ফুটবলের কোনও লোক–ফ্যান, খেলোয়াড়, রেফারি বা সাংবাদিক কারও নজরে এ লেখা পড়ে, আমি রেহাই পাব তো?

কবির প্রতিভা

কবিতা ও ফুটবল এই দুই বিপজ্জনক পদার্থ একত্র করা উচিত হল কি না এবং পরিণামে সেটা কতটা বিস্ফোরক হতে পারে, সেই বিষয়ে এই গল্পের দুর্বল কাহিনিকার তারাপদ রায়ের নিজের মনেও দুশ্চিন্তা রয়েছে। ভণিতায় তা কিছুটা বলেছি।

তবে গল্প যখন লিখতে হবেই, উপায় কী? বিস্ফোরক যদি হয় হল, দ্বিধা না করে দ্রুত মূল কাহিনিতে প্রবেশ করছি।

রঞ্জন চক্রবর্তী একজন উদীয়মান তরুণ কবি। সম্প্রতি কিছুদিন হল তার বেশ নাম হয়েছে। চারদিকে পত্র-পত্রিকায় রঞ্জনবাবুর কবিতা অল্পবিস্তর প্রকাশিত হচ্ছে। সম্পাদকের এবং অনেক পাঠক-পাঠিকার সেসব কবিতা পড়ে বেশ ভাল লাগছে।

ফলে রঞ্জনবাবু ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছেন। সভাসমিতি থেকেও তাঁর ডাক আসছে মাঝে মধ্যেই। কবি হতে গেলে শুধু কবিতা লিখলে বা ছাপিয়েই শেষ হয় না, একালে চল হয়েছে কবিকে সভায়। বা কবিসম্মেলনে সেসব কবিতা নিজেকে পাঠ করে শোনাতে হবে শ্রোতাদের। শ্রোতারা কখনও কখনও হাততালি দিয়ে, চেয়ারের হাতল চাপড়িয়ে উৎসাহ দেন, আবার কখনও ওই একই কবিতা পাঠের মধ্যস্থলে হাততালি দিয়ে বা চেয়ার চাপড়িয়ে বসিয়ে দেন।

আজ রঞ্জন চক্রবর্তী উত্তর বারাসত রাইজিং স্টার ক্লাবের সভায় কবিতা পড়তে এসেছেন। রাইজিং স্টার ক্লাবের এবার রৌপ্য জয়ন্তী উৎসব হচ্ছে। রাইজিং স্টার আসলে একটি ফুটবল ক্লাব, তবে ওই জয়ন্তী বৎসর বলে এরা এবার বার্ষিক অনুষ্ঠানটি একটু ধুমধাম করে করছে। স্থানীয় কয়েকজন ফুটবল প্লেয়ারের সঙ্গে তারা একজন অভিনেত্রী, দুজন গায়ক এবং পাঁচজন কবিকেও সংবর্ধনা জানাচ্ছে।

ফুটবল প্লেয়ারদের বক্তৃতা, অভিনেত্রীর আবৃত্তি, গায়কদের গান ইত্যাদির শেষে কবিরাও কবিতা পাঠ করলেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার ছিল এসবের পর। একে একে সকলকে ক্লাবের তরফ থেকে একটি করে উপহার দেওয়া হল।

রঞ্জন চক্রবর্তীও একটি উপহার পেলেন। রঙিন কাগজে জড়ানো কী একটা জিনিস। সংকোচ-বশত সেটা আর খুলে দেখলেন না।

ফেরার পথে ট্রেনে বসে শেয়ালদার পথে অন্য কবিদের সঙ্গে রঞ্জনবাবুও প্যাকেটের রঙিন মোড়ক ছাড়িয়ে দেখলেন ভিতরে কী উপহার আছে। প্রত্যেক কবিই একটা করে প্যাকেট পেয়েছে। প্রত্যেকেরই প্যাকেটে একটা করে সুদৃশ্য ফুলদানি রয়েছে, সুন্দর রঙিন কাঁচের জিনিস। কিন্তু রঞ্জনবাবুর মোড়কের ভেতর থেকে যেটা বেরোল, সেটা একটু অন্যরকম। জিনিসটা ঠিক কাব্যময় নয়।

একটা কালো আবলুস রঙা কাঠের ওপর তামার তৈরি কয়েকজন ফুটবল খেলোয়াড়ের সাবলীল মূর্তি এবং তাদের পদপ্রান্তে একটি ফুটবল। অর্থাৎ, একটি সচল ফুটবল খেলার দৃশ্য। সাধারণ ছোটখাটো ম্যাচে বিজয়ীদের এই ধরনের শিল্ড দেয়া হয়।

অন্য দশজনের মতো বাল্যে ও কৈশোরে রঞ্জনবাবুও ফুটবল খেলেছেন। সে আহামরি কিছু নয়। আজ কবি হিসেবে এসে ফুটবলের শিল্ড পেয়ে তিনি একটু বিব্রত বোধ করলেন। সহযাত্রী কবি চারজনও ঠোঁট টিপে হাসলেন, একজন বক্রোক্তি করলেন, খুব ভাল খেলেছ রঞ্জন, একেবারে শিল্ড পেয়ে গেলে।

রঞ্জন চক্রবর্তী বুঝতে পারলেন, কোথাও একটা কিছু ভুল হয়েছে। কোনও খেলোয়াড়ের উপহারটা তার ভাগে এসে পড়েছে আর সেই খেলোয়াড় তাঁর কাঁচের ফুলদানিটা লাভ করেছে।

এই ঘটনা এখানে শেষ হলে এ গল্প লেখার দরকার হত না। আমাদের এই সামান্য কথিকা এর পরেই শুরু হচ্ছে। এরপরে, মানে কবি রঞ্জন চক্রবর্তী ফুটবলের শিল্ড পাওয়ার পরে।

রঞ্জনবাবুর বয়েস তিরিশের কাছাকাছি। এখন পাকাপাকিভাবে তার কোনও জীবিকা নেই। যাদবপুরের দিকে একটা বাড়ির দেড়তলায় গ্যারেজের উপরের ঘরে নিজের থাকার জায়গা করে নিয়েছেন। সেই ঘরে একটা ছোট র‍্যাকে ভরতি যত রাজ্যের কবিতার বই, তারই উপরের তাকে তিনি উত্তর বারাসাত থেকে পাওয়া ফুটবলের শিল্ডটি সাজিয়ে রেখেছেন।

এর মধ্যে একদিন একটা ঘটনা ঘটল। দেড়তলার ঘরে জানলার পাশে একটা চেয়ারে বসে এক সন্ধেবেলা রঞ্জনবাবু বাইরের দৃশ্য অবলোকন করছিলেন, এমন সময় রাস্তা দিয়ে হিপ হিপ হুররে চেঁচাতে চেঁচাতে একটা অল্পবয়েসি ছেলেদের প্রসেশন গেল। সেই মিছিলের সকলের আগে একজন যুবকের হাতে উঁচু করে ধরা রয়েছে একটা কালো কাঠের শিল্ড, রঞ্জনবাবুর ঘরে যেমন আছে। অনেকটা সেই রকম। কোনও পাড়ার টিম খেলায় জিতে শিল্ডটা নিয়ে এই মিছিল বার করেছে।

কিছুদিন আগে একদিন দুপুরবেলা রঞ্জনবাবু তার এক বন্ধুর সঙ্গে রবীন্দ্রসরোবরে বেড়াতে বেড়াতে দেখেছিলেন এখানে ওখানে রীতিমতো উত্তেজনাপ্রদ প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল ম্যাচ চলছে। রঞ্জনবাবুর তাঁর নিজের কৈশোরের কথা মনে পড়েছিল যখন তিনি নিজেও এরকম ম্যাচ দু-চারটে খেলেছেন।

আজ এই বিজয়োৎসবের মিছিল দেখে সেই সঙ্গে সেদিনের রবীন্দ্রসরোবরের ম্যাচগুলো মনে করে নানারকম ভাবলেন। নানারকমের ভাবনা করার কবিদের অবাধ অধিকার রয়েছে, তবে আমাদের রঞ্জনবাবু কবি হলেও নির্বোধ নন। এদিন সারা সন্ধ্যা রঞ্জনবাবুর মাথায় কবিতার বদলে ফুটবল বিষয়ে নানারকম চিন্তা খেলা করল।

পরদিন দুপুরবেলা তিনি কোনও প্রেমিকা ছাড়াই জীবনে প্রথমবার একা একা রবীন্দ্র সরোবরে গেলেন। দূরদূরান্তের পাঠকপাঠিকা যাঁরা রবীন্দ্রসরোবর সম্পর্কে ভাল জানেন না, তাঁদের জানাই এই রবীন্দ্রসরোবর আগে কলকাতার লেক বলে পরিচিত ছিল। পুরনো দক্ষিণ কলকাতার শেষপ্রান্তে কয়েকটি জলাশয়, ক্লাব, মাঠ এবং একটি স্টেডিয়াম নিয়ে এই সরোবর।

রঞ্জনবাবু সরোবরে প্রবেশ করতেই একটি ছেলে তার হাতে একটি লিফলেট ধরিয়ে দিল। একটি আপ্তবাক্য আছে, যে যেমন ভাবনা করে তার তেমন সিদ্ধি হয়। রঞ্জনবাবুর ক্ষেত্রেও তাই হল। প্রথম ধাপেই তিনি যা চাইছিলেন তার অনেকটা পেয়ে গেলেন। ছোট ছাপানো কাগজটিতে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের ঘোষণা।

শিবকালী মেমোরিয়াল কাপের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। লিফলেটটিতে। পাঁচ ফুট উচ্চতার এবং ষোলো বছরের কম বয়েসিদের যে-কোনও টিম এই ম্যাচে অংশ নিতে পারবে। প্রবেশ ফি দশটাকা মাত্র। উচ্চতা এবং বয়েসের ব্যাপারে শিথিলতার ব্যবস্থা আছে, তবে তার জন্য খেলোয়াড়-প্রতি প্রত্যেক ইঞ্চিতে আট টাকা এবং প্রত্যেক বছরের জন্য পাঁচ টাকা জরিমানা প্রদেয়।

লিফলেটটি পাঠ করে এবং তারপর রবীন্দ্র সরোবরের মধ্যে বিভিন্ন মাঠে ঘুরে ঘুরে ফুটবল ম্যাচ দেখে দেখে কবি রঞ্জন চক্রবর্তীর অন্তর্দৃষ্টি খুলে গেল। তিনি গোলপার্কের দিক থেকে রবীন্দ্রসরোবরে প্রবেশ করে হাঁটতে হাঁটতে খেলা দেখে দেখে এবং সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে টালিগঞ্জ ব্রিজের দিক দিয়ে বেরিয়ে এলেন।

সামনেই রসা রোডে একটা ছোট ছাপাখানা। সেখানে ঢুকে একটি বিজ্ঞপ্তি খসড়া করে ফেললেন ছাপার জন্যে। রঞ্জন চক্রবর্তী চ্যালেঞ্জ ফুটবল টুর্নামেন্ট। দক্ষিণ কলকাতায় কিশোরদের ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতার বিপুল আয়োজন। সোয়া পাঁচ ফুটের কম উচ্চতাবিশিষ্ট এবং পনেরো বছরের কমবয়স্ক কিশোরদের টুর্নামেন্ট। উপযুক্ত ক্ষেত্রে বয়েস এবং উচ্চতার সীমারেখা শিথিল করা হইবে। প্রবেশ মূল্য পঁচিশ টাকা।

পরের দিনই বিজ্ঞপ্তিটি ছেপে পাওয়া গেল। রঞ্জনবাবু নিজের হাতে লেকের চারধারে দেশপ্রিয় পার্কে, বিবেকানন্দ পার্কে টুর্নামেন্টের ঘোষণাপত্র বিলি করে বেড়ালেন।

রঞ্জন চক্রবর্তী চ্যালেঞ্জ ফুটবল কাপের প্রতি ছেলেদের উৎসাহ বৃদ্ধি করার জন্যে তিনি প্রথম দুটি ক্লাবকে বিনামূল্যে এবং তারপরে কয়েকটি ক্লাবকে অর্ধমূল্যে প্রতিযোগিতায় নিয়ে নিলেন। সকালবেলা বিবেকানন্দ পার্কের মাঠে খুব ভিড় হয় না, রঞ্জনবাবুর চ্যালেঞ্জ শিন্ডের খেলার সময় করা হল সকাল সাড়ে সাতটা, স্থান বিবেকানন্দ পার্ক।

ক্রমশ রঞ্জন চক্রবর্তী চ্যালেঞ্জ ফুটবল টুর্নামেন্ট দক্ষিণ কলকাতায় বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠল। রঞ্জনবাবু অতি বুদ্ধিমান লোক। তিনি অতি অল্পদিনের মধ্যে এই ফুটবল প্রতিযোগিতাই নিজের স্থায়ী জীবিকা করে তুললেন।

টুর্নামেন্ট একবার জনপ্রিয় হয়ে গেলে তখন আর প্রতিযোগী ক্লাবের অভাব হয় না। রঞ্জনবাবু এনট্রি ফি কুড়ি টাকায় নামিয়ে দিলেন, তা ছাড়া কোনও টিম কোনও রাউন্ডে হেরে গেলে আবার কুড়ি টাকা দিয়ে টুর্নামেন্টে অন্য নামে খেলতে পারবে। টুর্নামেন্টের ফার্স্ট রাউন্ড, সেকেন্ড রাউন্ড প্রায় আড়াই মাস তিন মাস চলে। এই সময় প্রতিদিন সকালে একটি করে খেলা, প্রায় দেড়শো টিমের কাছ থেকে রঞ্জনবাবুর তিন হাজার টাকা আয় হয়।–

 এ ছাড়া নানারকম উপরি আয়ের ফিকির আছে ফুটবল প্রতিযোগিতায়। ওই উচ্চতা আর বয়েসের ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি শুরু করলেন। তার আগে রঞ্জনবাবু একটি রঞ্জন টুর্নামেন্ট কমিটি তৈরি করলেন। তার সম্পাদক তিনি স্বয়ং। দুজন গোবেচারা ফুটবল-প্রেমিক পরিচিত ভদ্রলোককে টুর্নামেন্ট কমিটির মেম্বার করা হল। টাকাপয়সার ভাগ তারা পান না, মাঝে-মধ্যে দুএক কাপ চা রঞ্জনবাবু তাঁদের খাওয়ান।

বয়েসের সীমা ঠিক রাখার জন্যে রঞ্জনবাবু ইস্কুলের সার্টিফিকেট ছাড়া কাউকে খেলতে নামতে দেন না। তবে সার্টিফিকেট-মতে কারও বয়েস যদি দু-এক বছর বেশি হয়, একুশ বছর পর্যন্ত, প্রতি বছরে পাঁচ টাকা জরিমানা দিয়ে সে খেলোয়াড়কে নামানো যাবে। আবার উচ্চতার ব্যাপারে ইঞ্চি প্রতি দশটাকা সাড়ে পাঁচ ফুট পর্যন্ত ছাড়।

একটু লম্বা বা বয়েস বেশি প্লেয়ার হলেই রঞ্জনবাবুর সঙ্গে সঙ্গে আয়বৃদ্ধি। এ ছাড়া প্লেয়ারদের লেবু এবং চুয়িংগাম হাফটাইমে সরবরাহ করেও টুর্নামেন্ট কমিটি ওরফে রঞ্জনবাবুর মোটামুটি কিছু বাঁধা উপার্জন হতে লাগল। সেই সঙ্গে নিয়ম করা হল, দুই প্রতিযোগী টিম দুই হাফে খেলার বল দেবে। অনেক সময় কোনও কোনও দল বল না আনলে অথবা তাদের বল ফেটে গেলে, লিক হয়ে গেলে মাত্র বারো টাকা দিলেই টুর্নামেন্ট কমিটি বল সরবরাহ করে।

ইতিমধ্যে আরও দু-একটি নতুন উপসর্গ দেখা গেল। খেলার মাঠে রেফারির বিচারে সন্তুষ্ট না হয়ে বিভিন্ন টিম প্রতিবাদ জানিয়ে আবেদন করছে। রঞ্জনবাবু প্রটেস্ট ফি করে দিলেন পঁচিশ টাকা। এর পরে দেখা গেল যে অপর পক্ষও প্রটেস্টের বিপক্ষে আবেদন জানাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়। পক্ষের কাউন্টার প্রটেস্ট ফি ধার্য করা হল পঞ্চাশ টাকা।

এইরকম যখন চলছে তখন একদিন রঞ্জনবাবু দেখলেন যে একটা পকেটমার রাস্তায় ধরা পড়ে খুব মার খাচ্ছে। রঞ্জনবাবু হাজার হলেও কবি মানুষ, তার কী রকম মায়া হল, তিনি আর দু-চারজন ভাল লোকের সহযোগিতায় লোকটিকে গণধোলাই থেকে কোনওক্রমে উদ্ধার করে, দুটো ধমক দিয়ে ছেড়ে দিলেন। পকেটমারটি যাওয়ার সময় জানাল, হুজুর, আমার নাম লাল্লু, আপনি আমার প্রাণ বাঁচালেন।

কয়েকদিনের মধ্যে লাল্লুর সঙ্গে রঞ্জনবাবুর আবার দেখা হল। ময়দানে একটা বড় ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন, বেরিয়ে আসার মুখে দেখলেন লাল্লু কয়েকজনের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে খেলার কথা আলোচনা করছে।

 সেইদিন রাতে একটা নতুন চিন্তা এল কবি রঞ্জন চক্রবর্তীর মাথায়। না, কোনও নতুন আধুনিক কবিতা নয়। তার চেয়ে অনেক দামি, অনেক জরুরি, রঞ্জন টুর্নামেন্টের আয় বাড়ানোর একটা পাকা বন্দোবস্ত।

লাল্লু ফুটবল খেলাটা নিশ্চয় কিছু বোঝে। আর তা ছাড়া সে মার খেতেও ওস্তাদ। সুতরাং তাকে যদি একটা হুইসিল দিয়ে হাফপ্যান্ট পরিয়ে রেফারি করে দেয়া যায় আর সে যদি প্রতি খেলায় দু-চারটে গোলমেলে সিদ্ধান্ত যথা ভুল পেনাল্টি, গোল হয়ে যাওয়ার পরে অফসাইড, অথবা নির্বিচারে লাল কার্ড দেখায়, তবে ভুক্তভোগী দলের সমর্থকদের হাতে তার প্রহৃত হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য থাকবে। কিন্তু প্রটেস্ট-ফি, কাউন্টার প্রটেস্ট-ফি বাবদ যথেষ্ট আয় হবে।

 দু-চারদিনের মধ্যে ময়দানে গিয়ে লাল্লুকে পূর্বস্থানে ধরে ফেললেন রঞ্জনবাবু। সে ফুটবলে পরমোৎসাহী। রঞ্জনবাবু লাল্লুকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশে একটা বেঞ্চিতে বসে বিস্তারিত আলোচনা করলেন।

লাল্লু জাতে পকেটমার এবং অতি চতুর। সে কিছুক্ষণের কথাবার্তাতেই রঞ্জনবাবুর অভিসন্ধি ধরে ফেলল। রঞ্জনবাবু তাকে পাকা মাস-মাইনেয় রঞ্জন টুর্নামেন্টের রেফারি হিসেবে নিয়োগ করলেন। লাল্লু মাসে তিনশো টাকা পাবে, সকালে সাড়ে সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত ডিউটি। তাকে রেফারির ড্রেস এবং জুতো, সেইসঙ্গে হুইসিল কিনে দেওয়া হল। লাল কার্ড, হলুদ কার্ড ইত্যাদিও সংগ্রহ করে দেয়া হল।

 লাল্লুর প্রধান কাজ হল মার খাওয়া। প্রত্যেক খেলায় তাকে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত দিতে হবে, এতে মারামারি হয়ে খেলা ভেঙে যায় যাবে। তারপর প্রটেস্ট-ফি আর কাউন্টার প্রটেস্ট-ফি বাবদ নিশ্চয় পঁচাত্তর টাকা আয় হবে।

মার খাওয়া লাল্লুর যথেষ্ট অভ্যেস আছে। আর খেলার মাঠে গোলমাল বাধানোয় সে যাকে বলে এক্সপার্ট।

রঞ্জন টুর্নামেন্টের রমরমা শুরু হয়ে গেল। ফাউল, অফসাইড, এমনকী পেনাল্টি পর্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত দিতে লাগল লাল্লু, হরদম বাঁয়ে ডাইনে প্লেয়ারদের লাল কার্ড, হলুদ কার্ড দেখাতে লাগল সে।

গোলমাল, হইচই, মারপিট, অকহতব্য অবস্থা প্রতিদিন রঞ্জন টুর্নামেন্টের খেলায়, প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে প্রহৃত হতে লাগল লাল্লু। মার খাওয়ায় সে পোক্ত, দু-চার হাজার ঘুষি, লাথিতে তার কিছু হয় না, কিন্তু অভিনয় করে দুটো লাথির মাথাতেই সে কোঁক করে চোখ উলটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। লড়াকু জনতা তার এই অবস্থা দেখে সরে পড়ে।

তারপর প্রটেস্ট, কাউন্টার-প্রটেস্ট। রঞ্জন টুর্নামেন্টের তহবিল স্ফীত হতে লাগল, রঞ্জনবাবুও একলাফে তিনশো টাকা থেকে পাঁচশো টাকা করে দিলেন লাল্লুর মাসিক বেতন।

এক বাঙালি কবির বাণিজ্যপ্রতিভার এই কাহিনিটি এখানে শেষ করতে পারলেই ভাল হত, তাতে গল্প হয়তো তেমন জমত না কিন্তু সকলেরই মুখরক্ষা হত।

তদুপরি কাহিনিকারের পক্ষেও বিপদটা হয়তো অনেক কম হত। কিন্তু গল্পকে এখানে শেষ করা সম্ভব নয়। কারণ এর পরে যা ঘটেছে সেটা না লিখলে অন্যায় হবে এবং লাল্লুর প্রতি নিতান্ত অবিচার করা হবে।

অকবির প্রতিভা

রঞ্জন টুর্নামেন্টের প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যে তিন দফা হয়ে গেছে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সারা বছর ধরে জমজমাট খেলার আসর। দক্ষিণ কলকাতার ফুটবল প্রেমিক কিশোররা তো বটেই, এমনকী তাদের অভিভাবকদের কাছেও রঞ্জন টুর্নামেন্টের খ্যাতি যথেষ্ট প্রচারিত হয়েছে।

কবি রঞ্জন চক্রবর্তী আজকাল আর কবিতা লেখার বিশেষ সময় পান না, প্রয়োজনও বোধ করেন। না। একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট পরিচালনা করা যতটা অর্থকরী এবং উত্তেজনাপ্রদ, কবিতা লেখা তার ধারেকাছে আসে না।

তা ছাড়া ফুটবল মারফত তার যথেষ্ট সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিও হয়েছে। উত্তর টালিগঞ্জ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রঞ্জন চক্রবর্তী সভাপতি হয়ে রৌপ্যপদক বিজয়ীদের গলায় পরিয়ে দিলেন। আবার আন্তঃ বেহালা কাবাডি প্রতিযোগিতায় তিনি প্রধান অতিথি হয়ে দেড় ঘণ্টা কাবাডির ঐতিহ্য নিয়ে সুললিত বক্তৃতা করলেন।

মোট কথা, রঞ্জনবাবু এখন মহানগরীর দক্ষিণাঞ্চলের ক্রীড়াসংসারে রীতিমতো মান্যগণ্য ব্যক্তি। শোনা যাচ্ছে, কী সব সূত্রে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল, ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি সব কেউকেটা প্রতিষ্ঠানেও তিনি ঠাই করে নিতে চলেছেন।

আজকাল আর রঞ্জনবাবু যাদবপুরের সেই দেড়তলার ঘরে থাকেন না। কালীঘাটের একটা পুরনো বাড়ির দুটো একতলার ঘরে এখন তাঁর আবাস, সেই সঙ্গে সেটা রঞ্জন টুর্নামেন্টের হেড কোয়ার্টার্স। প্রত্যেকদিন সকালবেলা ক্রীড়ারসিক এবং নবীন খেলোয়াড়ের ভিড়ে গমগম করে। রঞ্জনবাবুর বাইরের ঘর।

রঞ্জনবাবুর জীবনযাত্রার ধারাও রীতিমতো পালটিয়ে গিয়েছে। তিনি একটু পুরনো একটা মোটরবাইক ক্রয় করেছেন। সেটা অবশ্য যাতায়াতের পথে একটু অস্বাভাবিক শব্দ করে, শব্দ শুনে। মনে হয় যেন কোনও আগ্নেয়গিরি অগ্নি উদগিরণের আগে গর্জন করছে।

কালীঘাট পাড়ার কুকুরদের কোনওকালেই মোটরবাইক জিনিসটা পছন্দ নয়। চিরকালই তারা রাস্তায় চলমান মোটরবাইকের পিছনে তাড়া করে আনন্দ পায়। রঞ্জনবাবুর গাড়িতে বীভৎস শব্দের ফলে তাঁর প্রতি কুকুরদের ক্রোধ আরও বেশি। বহু দূর থেকে রঞ্জনবাবুর গাড়ির আওয়াজ পেয়ে কুকুরেরা সম্মিলতভাবে তেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। প্রতিদিন রাতে রঞ্জনবাবু যতক্ষণ পর্যন্ত বাড়ি না ফেরেন, পাড়ার কুকুরেরা বিনিদ্র প্রতীক্ষা করে তাকে গর্জনমুখর সংবর্ধনা জানানোর জন্যে।

রঞ্জনবাবুর সঙ্গে বাইকের পিছনের সিটে প্রায় প্রতিদিন এক ব্যক্তি যাতায়াত করে। ব্যক্তিটি বেঁটে, কালো, তার চুল ছোট করে ছাটা, গায়ে চকরাবকরা রঙিন জামা, লাল প্যান্ট।

কুকুরেরা সাধারণত চেষ্টা করে পশ্চাতের এই ব্যক্তিটিকে কামড়ানোর। কিন্তু সে সুকৌশলে পা দুটো এমনভাবে গুটিয়ে রাখে যে কুকুরেরা চলন্ত অবস্থায় তাকে কিছু করতে পারে না। তবে মজার কথা এই যে মোটরবাইক থেমে গেলেই কুকুরেরা একদম চুপ, যে যার মতো মুখ ঘুরিয়ে যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গি করে কেটে পড়ে।

সে যা হোক, রঞ্জন চক্রবর্তীর বাইকের পিছনের ওই ব্যক্তিটি আর কেউ নয়, স্বনামধন্য লাল্লু।

স্বনামধন্য কথাটা যে এখানে ব্যবহার করলাম সেটা রসিকতা করে নয়। লাল্লুর আজকাল যথেষ্ট নামডাক। এখন আর সে লাল্লু নয়, ক্রীড়ামোদিরা তাকে মিস্টার লাল্লু অথবা লাল্লুসাহেব বলে ডাকে। ফুটবলের আলোচনায় অত্যন্ত সম্ভ্রমের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হয়।

ঘটনার যা গতিক তাতে এখন থেকে আমরাও তাকে লাল্লুসাহেব বলে বলব এবং আপনি বলে মর্যাদা দেব।

বিবেকানন্দ পার্কের মাঠে লাল্লুসাহেবের জীবনপণ, অসমসাহসী রেফারিয়ানা অতি অল্পদিনের মধ্যে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হাজার মার খেয়েও যে রেফারি দমিত হয় না, আত্মবিশ্বাস হারায় না, তাকে তো সবাই শ্রদ্ধা করবেই।

লাল্লুসাহেবের খেলা পরিচালনা যারাই দেখেছে একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেছে। ভুল দু-চারটে সব রেফারিই করে থাকেন, রেফারি তো আর ভগবান নন। অফসাইড, ফাউল, হ্যান্ডবল–এগুলো অনেক সময়েই খুব কাছে থেকেও সঠিক বিচার করা যায় না–সেটা বড় কথা নয়।

বড় কথা হল লাল্লুসাহেবের মার খাওয়ার ক্ষমতা। টু শব্দটি উচ্চারণ না করে ছাতা পেটা হওয়া, লাথি খাওয়া, কখনও কখনও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া–তারপর কয়েক মুহূর্তের মধ্যে লাফ দিয়ে উঠে আবার হুইসিল বাজিয়ে খেলা আরম্ভ করা–লাল্লুসাহেবের এই সব অসাধারণ যোগ্যতা ধীরে ধীরে চারিদিকে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল।

অবশ্য লাল্লুসাহেবের তরফ থেকে বলা যায় এসব মার তার কাছে তুচ্ছ, লোকে যাকে বলে নস্যি ঠিক তাই। তার প্রাক্তন পকেটমার জীবনে যেসব প্রহার তাঁকে খেতে হয়েছে, যেসব গণধোলাইয়ের তিনি বারংবার সম্মুখীন হয়েছেন, তার কাছে ফুটবল খেলার মাঠে রেফারি হয়ে মার খাওয়া ছেলেখেলা।

আজকাল সকালবেলা সাতটায় একবার আর সাড়ে আটটায় একবার এই দু দফা রঞ্জন টুর্নামেন্টের খেলা হয়। উভয় খেলারই পরিচালনার দায়িত্ব লাল্লুসাহেবের। অবশ্য একটার জায়গায় দৈনিক দুটো খেলা খেলানোর জন্যে রঞ্জনবাবু লাল্লুসাহেবের বেতন বাড়িয়ে এক হাজার টাকা পুরোপুরি করে দিয়েছেন। তা ছাড়া রাত্তিরে রঞ্জন টুর্নামেন্টের হেডকোয়ার্টারে অর্থাৎ রঞ্জনবাবুর বর্তমান বাড়ির বাইরের ঘরে একটা সোফা কাম বেডে তিনি শুতেও পান।

অসুবিধা হয়েছে অন্য জায়গায়। লাল্লুসাহেবেরা চার পুরুষের পকেটমার। তাঁর পূর্বপুরুষেরা সুদূর বিহারের আরা জেলার একটা গোহাটে বহুশতাব্দী প্রতিদ্বন্দ্বী গাঁটকাটা ছিলেন। শতাধিক বৎসর পূর্বে, সিপাহি যুদ্ধের কিছুদিন বাদে লাল্লুসাহেবের প্রপিতামহ দেহাত পরিত্যাগ করে এই কলকাতা শহরে জীবিকার অন্বেষণে আসেন। সেই কবে গ্যাসের আলোর রোমাঞ্চকর যুগে ঘোড়ার টানা ট্রামে তিনি হাতসাফাই আরম্ভ করেছিলেন, তারপর পুত্রপৌত্রাদিক্রমে ধীরে ধীরে বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গাঁটকাটা থেকে কাছাকাটা, কাছাকাটা থেকে জোব্বাকাটা, জোব্বাকাটা থেকে পিরানকাটা ইত্যাদি বহু বিচিত্র এবং জটিল স্তর পাড়ি দিয়ে অবশেষে লাল্লুসাহেব এসে পৌঁছেছে সেই পাইয়োনিয়ার পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকারে।

এবং সত্যি সত্যি লাল্লুসাহেবের হাতে এই উত্তরাধিকার মর্যাদা বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ হয়নি।

 কিন্তু রেফারি হিসেবে লাসাহেব যত বিখ্যাত এবং সুপরিচিত হতে লাগলেন ততই তার পকেটমার ব্যবসায় ভাটা পড়তে লাগল। হয়তো ট্রামে উঠে পাদানির এককালে ভিড়লগ্ন হয়ে তিনি গভীর অভিনিবেশ সহকারে সম্ভাব্য শিকারকে পর্যবেক্ষণ করছেন, শেষ মুহূর্ত হয়তো সমাগত, তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের মধ্যে আধলা ব্লেডের ভগ্নাংশ নিপুণ ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ধরে নির্বাচিত পকেটটির দিকে অত্যন্ত সতর্কভাবে এগোচ্ছেন–

সেই মুহূর্তে ভিড়ের মধ্য থেকে কে একজন বলল, গুড মর্নিং, লাল্লুসাহেব। আজ খেলা নেই?

সঙ্গে সঙ্গে ধ্যানভঙ্গ হল। এইরকম অবস্থায় আর যাই করা যাক, পকেটমার বা পকেটকাটা নিশ্চয়ই কারও পক্ষে সম্ভব নয়।

কিন্তু সদাসর্বদা হাত নিশপিশ করে লাল্লুসাহেবের। রেফারির জীবিকায় যথেষ্ট উত্তেজনা আছে, পয়সাও ভালই দিচ্ছেন রঞ্জন চক্রবর্তী, কিন্তু দিনে দু-একটা পকেট না কাটতে পারলে মনে হয়। জীবনটাই বরবাদ।

এই কবিতা লেখা কমে গিয়েছে কিন্তু রঞ্জনবাবু যথেষ্ট সংবেদনশীল এবং প্রকৃতই কবিপ্রাণ। তিনি লাল্লুসাহেবের মনোবেদনা যে বুঝতে পারেন না তা নয়। কিন্তু তিনি নিজেই লাল্লুসাহেবকে মানা করেছেন রাস্তাঘাটে, ট্রামেবাসে পকেট কাটতে। লোকে যদি ধরে ফেলে, লোকে যদি চিনে ফেলে এই সেই রঞ্জন টুর্নামেন্টের মৃত্যুঞ্জয় রেফারি মিস্টার লাল্লু, তা হলে সমূহ সর্বনাশ, একেবারে ধনে-প্রাণে বিনাশ হতে হবে।

লাল্লুসাহেব বোকা নন। এ সমস্যা বুঝতে তার মোটেই দেরি হয়নি। পকেটমার জীবনের উত্তেজনা আনন্দ যতই থাকুক, তিনি ধীরে ধীরে নিজের রেফারিজীবন উপভোগ করতে শিখেছেন। লোকেরা গালাগালি করুক, ছাতাপেটা করুক–সব ঠিক আছে, একটু দম খিচে শুধু সহ্য করতে হবে কিন্তু একটি সবুজ মাঠে, সহস্র দর্শকের চোখের সামনে বাইশজন চনচনে খেলোয়াড়কে অঙ্গুলিহেলনে শাসনে রাখা, প্রয়োজনে যে কোনও প্রতিবাদ, প্রতিরোধের সামনে উন্নতশির হয়ে উপস্থিত হওয়া, এর মধ্যে যে গৌরব যে মর্যাদা আছে লাল্লুসাহেবের ঊর্ধ্বতন গাঁটকাটা চোদ্দোপুরুষ তা কোনওদিন অনুভব করেননি। এমনকী খেলা পরিচালনা করতে গিয়ে প্রহৃত হওয়ার মধ্যেও যে রীতিমতো গৌরব ও মর্যাদার ব্যাপার আছে এবং সেটা যে পকেটমার হিসেবে মার খাওয়ার চেয়ে অনেক মহৎ ব্যাপার সেটাও লাল্লুসাহেব ভালই বোঝেন।

তবে লাল্লুসাহেব একটা কায়দা আবিষ্কার করেছেন, রেফারি হয়ে ইচ্ছাকৃত ভুল এবং গোলমেলে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ফলে যখন উত্তেজিত টিমের সমর্থকেরা তাঁর উপর মারমুখী হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন তিনি তার সহজাত প্রতিভাবলে আক্রমণকারীদের মধ্যে থেকে শাঁসালো ব্যক্তি নির্দিষ্ট করে ওই ভিড় ঠেলাঠেলির মধ্যে হাতসাফাই করেন। ঘড়ি, কলম, মানিব্যাগ যেদিন যেমন পারেন অনায়াস দক্ষতায় হস্তগত করে মাঠের উপরে ফেলে দেন, তারপর সেই অপহৃত দ্রব্যের উপরে নিজের শরীর চাপা দিয়ে কোঁ-কোঁ করতে করতে উলটিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তারপর শোয়া অবস্থায় সময়মতো অপহৃত দ্রব্যটি তুলে গেঞ্জির নীচে লুকিয়ে ফেলা একজন প্রাক্তন দক্ষ হাতসাফাইকারের পক্ষে এমন আর কঠিন কী?

অন্যদিকে যাদের জিনিস গেল তারা ঘৃণাক্ষরেও সন্দেহ করতে পারে না যে রেফারি সাহেবের এই কীর্তি। তারা ধরে নেয়, ধস্তাধস্তি হাতাহাতির সময় তাদের জিনিস কোথাও ছিটকিয়ে পড়ে হারিয়ে গেছে। যাকে তারা প্রহার করছিল সেই যে তাদের ঘড়ি, কলম বা মানিব্যাগ গণ্ডগোলের সুযোগে হাতিয়ে নিয়েছে এরকম কিছু চিন্তা করার অবকাশ কোথায়।

রেফারির কাজের সঙ্গে পকেটমার কাজ সংমিশ্রণ করতে পেরে লাল্লুসাহেব মোটামুটি আত্মতৃপ্ত ভাবেই দিন কাটাচ্ছিলেন। রাত্রিও ভালই কাটছিল রঞ্জনবাবুর বাইরের ঘরে।

অবসর এবং ইচ্ছামতো একটু-আধটু সাট্টা খেলা, সন্ধ্যার দিকে খালাসিটোলা বা বারদোয়ারিতে গিয়ে কিঞ্চিৎ বাংলা মদ্যপান অথবা আরও কোনও কুস্থান গমন। আবার একেকদিন রাতে রঞ্জনবাবুর সঙ্গে বসে থ্রি-এক্স রাম পান, সঙ্গে হাজরার মোড় থেকে কিনে আনা মাংসের রোল। কোনও কোনও দিন আরও কেউ থাকে, ফুটবল খেলার ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা, রঞ্জন টুর্নামেন্টের সমস্যা ও সাফল্য বিচার গবেষণা।

দিন ভালই যাচ্ছিল লাল্লুসাহেবের। রঞ্জনবাবুর হৃদয়ে তবু কিছু বেদনা ছিল তার অপূর্ণ কবিজীবন নিয়ে, কিন্তু লাল্লুসাহেব ক্রমশ বিগত পকেটকাটা জীবন সম্পর্কে উদাসীন হয়ে উঠলেন। জুতো, মোজা, হাফপ্যান্ট, রেফারির পোশাক, দামি হুইসিলে ফুঁ দিতে দিতে যখন টগবগ করে লাল্লুসাহেব মাঠে গিয়ে নামেন তখন তাঁর মনেই পড়ে না অনতিদূর অতীত জীবনের কথা।

আজকাল কেবলমাত্র রঞ্জন টুর্নামেন্টের খেলা নয়, কাছে দূরে বারাসাত, আরামবাগ কাকদ্বীপ থেকে ডাক আসতে শুরু করেছে লাল্লুসাহেবের। প্রচণ্ড গোলমালের মধ্যে এমন অসমসাহসী, স্থিতধী রেফারি আর দেখা যায় না। আর তা ছাড়া, সব জায়গায় তো আর রঞ্জন টুর্নামেন্টের মতো প্রটেস্ট-ফি এবং কাউন্টার-ফি-এর লোভে গোলমেলে সিদ্ধান্ত দিয়ে মারামারি বাধিয়ে দেয়া দরকার পড়ে না, ফলে রঞ্জন টুর্নামেন্টের বাইরে যদি কোনও খেলায় লাল্লুসাহেব যান মার খাওয়ার ভয় কম থাকে।

ধীরে ধীরে লোকমুখ থেকে খবরের কাগজের পৃষ্ঠায় লাগ্লসাহেবের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। খেলার কাগজগুলি প্রশংসামুখর হয়ে উঠল লাল্লুসাহেবের সুনিপুণ পরিচালনার একের পর এক বর্ণনায়।

রবীন্দ্রসরোবর স্টেডিয়ামে একটা জুনিয়ার ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ খেলায় গ্যালারি থেকে ছুটে আসা আধলা থানইটের আঘাতে মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল লাল্লুসাহেবের, তবু অদমিত, অকম্পিত লাল্লুসাহেব খেলা চালিয়ে যেতে লাগলেন।

ময়দানের এক খোলা মাঠের দুই কলেজ টিমের খেলায় চূড়ান্ত বোমাবাজির মধ্যে অবিচল লাল্লুসাহেব কলকাতার ফুটবল মাঠের অরাজক পটভূমিকায় নিজ সাহসে ভাস্বর হয়ে উঠলেন।

স্টেটসম্যানের মতো সাহেবি খবরের কাগজে শ্রীযুক্ত শ্যামসুন্দর ঘোষ মিস্টার লাল্লুকে ভ্যালিয়ান্ট স্মল ম্যান (Valiant small man) নামে অভিহিত করে সাহসের প্রতিমূর্তি বলে বর্ণনা করলেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় খ্যাতনামা ক্রীড়াসাংবাদিক মতি নন্দী মহোদয় লাল্লুসাহেবকে কলকাতার ময়দানের ঘনান্ধকার গগনে উজ্জ্বল রূপালি চমক বলে স্বাগত জানালেন। আর আজকাল কাগজে বিখ্যাত অশোক দাশগুপ্ত পাকা আড়াই কলম জীবনীও লেখার কথা ভেবেছিলেন কিন্তু সঙ্গত কারণেই কিছুটা জানার পরে পিছিয়ে গেলেন।

এর মধ্যে একদিন ডাক এল বার্নপুর স্টেডিয়াম থেকে। তারপরে জামসেদপুর, শিলিগুড়ি। শোনা যাচ্ছে আই এফ এ শিল্ড, ফেডারেশন কাপ, এমনকী এশিয়ান কাপ পর্যন্ত লাল্লুসাহেবের খ্যাতি পৌঁছে গেছে। শিগগিরই তার ডাক আসবে এইসব চমকপ্রদ খেলা পরিচালনা করার জন্যে।

লাল্লুসাহেব এখন মনেপ্রাণে প্রস্তুত যেকোনও ধরনের যত দামি, যত উঁচু খেলাই হোক তার রেফারিত্ব করতে। তিনি কলম্বো, এমনকী কুয়ালালামপুর বা কুয়োয়েতে গিয়ে খেলাতেও রাজি। আমন্ত্রণ আসতে এখন যেটুকু বাকি শুধু তারই অপেক্ষা।

রঞ্জনবাবু হাজার হলেও একদা কবি ছিলেন, তারই মানসপুত্র লাল্লুসাহেবের এই উন্নতিতে তিনি মোটেই ঈর্ষান্বিত নন। বরং নিজেকেও সঙ্গে সঙ্গে গৌরবান্বিত বোধ করেন। দু-একটা কাগজে মিস্টার লাল্লু সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদনে শ্রীযুক্ত রঞ্জন চক্রবর্তীর ছবিও ছাপা হয়েছে নবযুগের অকুতোভয়, লৌহশরীর মহৎ রেফারির আবিষ্কর্তা হিসেব।

রঞ্জনবাবুর মাথায় চিন্তা ঢুকেছিল যদি লাল্লুসাহেব সত্যি সত্যি কলকাতার বাইরে চলে যান তা হলে রঞ্জন টুর্নামেন্টের কী গতি হবে?

সে সমস্যা লাল্লুসাহেব স্বয়ং সমাধান করে দিয়েছেন। তারই এক পুরনো বন্ধু জগুকে নিয়ে। এসেছেন তিনি। জগু আরও বেঁটে, আরও কালো, আরও রোগা। দাতে দাঁত আটকিয়ে মার খেতে আরও ওস্তাদ। সেও ময়দানের এক বড় ক্লাবের ফুটবল ফ্যান, ফুটবল খেলার অ-আ ক-খ মোটামুটি জানে। তা ছাড়া বুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ইত্যাদির তার অভাব নেই। লাসাহেবের মতো সেও যথাস্থানে প্ররোচনামূলক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে যথেষ্ট গোলমাল বাধিয়ে দিতে পারবে, মার খেয়ে টু-শব্দটি করবে না। তাকে দিয়েও লাল্লুসাহেবের মতোই রঞ্জনবাবুর দুবারে দুটো খেলার প্রটেস্ট-ফি, কাউন্টার প্রটেস্ট-ফি বাবদ অনায়াসেই শ দেড়েক টাকা দৈনিক সকালে আসবে।

জগু প্রথমে একটু ইতস্তত করেছিল, তার বহু সাধের পুরনো পেশা ছেড়ে চলে আসতে। কিন্তু এক হাজার টাকা মাইনে এবং তৎসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধার কথা শুনে সে রাজি হয়েছে।

উপসংহার

এই কাহিনির উপসংহার বড় দুঃখজনক। লিখতে কলম সরছে না। তবু লিখতে তো হবেই।

লাল্লুসাহেবের কলম্বো বা কুয়ালালামপুর কোথাও যাওয়া হয়নি। তার প্রাক্তন পকেটমার জীবনে একটি হাতসাফাইয়ের মামলায় তিনি জামিনে খালাস ছিলেন এবং যথারীতি জামিন ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। কিন্তু অফিসক্লাবের একটি খেলায় তার মতো বুদ্ধিমান লোকের কিঞ্চিৎ মতিভ্রম হয়। তার সেই খেলাটি আদতে পরিচালনা করতে যাওয়াই উচিত হয়নি।

খেলাটি ছিল গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে আবগারি পুলিশের। গোয়েন্দা পুলিশ টিমের স্টপারকে প্রথম থেকেই লাল্লুসাহেবের কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। কিন্তু খেলাচলাকালীন উত্তেজনায় বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে লাল্লুসাহেব স্টপারটিকে লাল কার্ড দেখালেন। স্টপার ভদ্রলোকেরও অনেকক্ষণ ধরে রেফারিকে কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। হঠাৎ মোক্ষম মুহূর্তে তিনি চিনে ফেললেন। এই তো সেই হাওড়া ধর্মতলা ট্রামের লাল্লু ওস্তাদ, হুইসিল মুখে হাফপ্যান্টে জার্সিতে চেনাই যাচ্ছিল না। সর্বনাশ! জামিন পালিয়ে রেফারি হয়েছে!স্টপার ভদ্রলোক গোয়েন্দা দফতরের পকেটমার শাখার ছোট দারোগা। তিনি মাঠ থেকে বেরোনোর মুখে লাল্লুসাহেবের জামার কলার ধরে হিড়হিড় করে টেনে বাইরে অপেক্ষারত একটি পুলিশের গাড়িতে তুলে নিলেন।

লাল্লুসাহেব পুরনো দাগি আসামি, পুলিশের খাতায় তাঁর সাড়ে তিনপাতা রেকর্ড। তা ছাড়া জামিন টপকেছেন। মাননীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দুদফায় তার আড়াই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হল।

মধ্য থেকে বেকায়দায় পড়লেন রঞ্জনবাবু। তিনি জগুকে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু লাল্লুসাহেবের করুণ পরিণতি থেকে শিক্ষালাভ করে জগু আর ক্রীড়া-পরিচালনার লাইনে আসতে চাইল না।

এমতাবস্থায় রঞ্জনবাবুর আর কী-ই বা করণীয় ছিল? তিনি যা যুক্তিসঙ্গত তাই সিদ্ধান্ত নিলেন। লাল্লু যদি পারে আমি কেন পারব না, আমিও তো বিপ্লবী কবি। দু-চার ঘা মার খেলে আমার কী ক্ষতি হবে?

অতঃপর কবি রঞ্জন চক্রবর্তী হাফপ্যান্ট ইত্যাদি পরিধান করে মুখে হুইসিল নিয়ে নিজেই একদিন মাঠে নামলেন। তারপর যা হওয়া স্বাভাবিক তাই হল, প্রটেস্ট-ফি এবং কাউন্টার প্রটেস্ট-ফিয়ের লোভে খেলা আরম্ভের পনেরো মিনিটের মাথায় একটি অন্যায় পেনাল্টি দিলেন।

যে পক্ষের বিরুদ্ধে এই রায় দিলেন তাদের নামটা খেয়াল রাখলে তিনি এই মারাত্মক ভুল করতেন না।

সেই পক্ষ বা ক্লাবের নাম রক্তরাঙা শিবির। এর পরের ঘটনা না লেখাই ভাল। শ্ৰীযুক্ত রঞ্জন চক্রবর্তীর এই কাহিনি পাঠ করে যদি কোনও কোমলহৃদয়া পাঠিকার মনে সামান্য। অনুকম্পাও দেখা দেয় তিনি দয়া করে বাঙ্গুর হাসপাতালের সার্জিকাল ওয়ার্ডে দুশো বত্রিশ নম্বর বেডে তাঁকে দেখতে যাবেন। ভদ্রলোক আজ আড়াই মাস কোমর এবং ঘাড় ভেঙে শয্যাশায়ী হয়ে আছেন।

হিতোপদেশ

ক্ষুদ্র একটি ভ্রম নিরসনের জন্য এই শেষ পর্বটিতে হাত দিতে হল।

ভ্রমটি আর কিছুই নয়, এই সামান্য কাহিনির নাম কবিতা ও ফুটবল না দিয়ে আমার উচিত ছিল কাহিনিটির একটি সর্বজন গ্রাহ্য এবং পরিচ্ছন্ন নাম দেয়া।

স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় নাম কেমন হত কে জানে? কিন্তু শ্রেয় বানানে বিসর্গ দিতে হবে কি না ঠিক করতে না পেরে কবিতা ও ফুটবল নামই রাখতে হল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *