৫.০৪ নরেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার আগমন

পঞ্চম খণ্ড – চতুর্থ অধ্যায়: নরেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার আগমন

যথার্থ ঈশ্বর-প্রেমিক বলিয়া ধারণা করিয়াও দ্বিতীয়বার নরেন্দ্রের ঠাকুরের নিকটে আসিতে বিলম্ব করিবার কারণ

যথার্থ পুরুষকারসম্পন্ন স্থিরলক্ষ্যবিশিষ্ট পুরুষসকলে অপরের মহত্ত্বের পরিচয় পাইলে মুক্তকণ্ঠে উহা স্বীকারপূর্বক প্রাণে অপূর্ব উল্লাস অনুভব করিতে থাকেন। আবার সেই মহত্ত্ব যদি কখনও কাহারও মধ্যে অদৃষ্টপূর্ব অভাবনীয় রূপে প্রকাশিত দেখেন তবে তচ্চিন্তায় মগ্ন হইয়া তাঁহাদিগের মন কিছুকালের জন্য মুগ্ধ ও স্তম্ভিত হইয়া পড়ে। ঐরূপ হইলেও কিন্তু ঐ ঘটনা তাঁহাদিগকে নিজ গন্তব্যপথ হইতে বিচলিত করিয়া ঐ পুরুষের অনুকরণে কখনও প্রবৃত্ত করে না। অথবা বহুকালব্যাপী সঙ্গ, সাহচর্য ও প্রেমবন্ধন ব্যতীত তাঁহাদিগের জীবনের কার্যকলাপ ঐ পুরুষের বর্ণে সহসা রঞ্জিত হইয়া উঠে না। দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের প্রথম দর্শনলাভ করিয়া নরেন্দ্রনাথের ঠিক ঐরূপ অবস্থা হইয়াছিল। ঠাকুরের অপূর্ব ত্যাগ এবং মন ও মুখের একান্ত ঐক্যদর্শনে মুগ্ধ এবং আকৃষ্ট হইলেও নরেন্দ্রের হৃদয় জীবনের আদর্শরূপে তাঁহাকে গ্রহণ করিতে সহসা সম্মত হয় নাই। সুতরাং বাটীতে ফিরিবার পরে তাঁহার মনে ঠাকুরের অদৃষ্টপূর্ব চরিত্র ও আচরণ কয়েক দিন ধরিয়া পুনঃপুনঃ উদিত হইলেও নিজ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিতে তাঁহার নিকটে পুনরায় গমনের কথা তিনি দূর ভবিষ্যতের গর্ভে ঠেলিয়া রাখিয়া আপন কর্তব্যে মনোনিবেশ করিয়াছিলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ঠাকুরকে অর্ধোন্মাদ বলিয়া ধারণা করাই যে তাঁহাকে ঐ বিষয়ে অনেকটা সহায়তা করিয়াছিল, এ কথা বুঝিতে পারা যায়। আবার, ধ্যানাভ্যাস এবং কলেজে পাঠ ব্যতীত নরেন্দ্র তখন নিত্য সঙ্গীত ও ব্যায়াম-চর্চায় নিযুক্ত ছিলেন – তদুপরি বয়স্যবর্গের মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতিসাধনে তাঁহাদিগকে লইয়া ব্রাহ্মসমাজের অনুসরণে কলিকাতায় নানা স্থানে প্রার্থনা ও আলোচনা-সমিতিসকল গঠন করিতেছিলেন। সুতরাং সহস্র কর্মে রত নরেন্দ্রনাথের মনে দক্ষিণেশ্বরে যাইবার কথা কয়েক পক্ষ চাপা পড়িয়া থাকিবে, ইহাতে বিচিত্র কি? কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষা ও দৈনন্দিন কর্ম তাঁহাকে ঐরূপে ভুলাইয়া রাখিলেও তাঁহার স্মৃতি ও সত্যনিষ্ঠা অবসর পাইলেই তাঁহাকে দক্ষিণেশ্বরে একাকী গমনপূর্বক নিজ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিতে উত্তেজিত করিতেছিল। সেজন্যই প্রথম দর্শনের প্রায় মাসাবধিকাল পরে আমরা শ্রীযুত নরেন্দ্রকে এক দিবস একাকী পদব্রজে পুনরায় দক্ষিণেশ্বরাভিমুখে গমন করিতে দেখিতে পাইয়া থাকি। উক্ত দিবসের কথা তিনি পরে এক সময়ে আমাদিগকে যেভাবে বলিয়াছিলেন, আমরা সেইভাবেই উহা এখানে পাঠককে বলিতেছি –

নরেন্দ্রের দ্বিতীয়বার আগমন ও ঠাকুরের প্রভাবে সহসা অদ্ভুত প্রত্যক্ষানুভূতি

“দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি যে কলিকাতা হইতে এত অধিক দূরে তাহা ইতিপূর্বে গাড়ি করিয়া একবারমাত্র যাইয়া বুঝিতে পারি নাই। বরাহনগরে দাশরথি সান্যাল, সাতকড়ি লাহিড়ী প্রভৃতি বন্ধুদিগের নিকটে পূর্ব হইতে যাতায়াত ছিল। ভাবিয়াছিলাম রাসমণির বাগান তাহাদের বাটীর নিকটেই হইবে, কিন্তু যত যাই পথ যেন আর ফুরাইতে চাহে না! যাহা হউক, জিজ্ঞাসা করিতে করিতে কোনরূপে দক্ষিণেশ্বরে পৌঁছিলাম এবং একেবারে ঠাকুরের গৃহে উপস্থিত হইলাম। দেখিলাম, তিনি পূর্বের ন্যায় তাঁহার শয্যাপার্শ্বে অবস্থিত ছোট তক্তপোশখানির উপর একাকী আপন মনে বসিয়া আছেন – নিকটে কেহই নাই। আমাকে দেখিবামাত্র সাহ্লাদে নিকটে ডাকিয়া উহারই এক প্রান্তে বসাইলেন। বসিবার পরেই কিন্তু দেখিতে পাইলাম, তিনি যেন কেমন একপ্রকার ভাবে আবিষ্ট হইয়া পড়িয়াছেন এবং অস্পষ্টস্বরে আপনা-আপনি কি বলিতে বলিতে স্থির দৃষ্টিতে আমাকে লক্ষ্য করিয়া ধীরে ধীরে আমার দিকে সরিয়া আসিতেছেন। ভাবিলাম, পাগল বুঝি পূর্বদিনের ন্যায় আবার কোনরূপ পাগলামি করিবে। ঐরূপ ভাবিতে না ভাবিতে তিনি সহসা নিকটে আসিয়া নিজ দক্ষিণপদ আমার অঙ্গে সংস্থাপন করিলেন এবং উহার স্পর্শে মুহূর্তমধ্যে আমার এক অপূর্ব উপলব্ধি উপস্থিত হইল। চক্ষু চাহিয়া দেখিতে লাগিলাম, দেওয়ালগুলির সহিত গৃহের সমস্ত বস্তু বেগে ঘুরিতে ঘুরিতে কোথায় লীন হইয়া যাইতেছে এবং সমগ্র বিশ্বের সহিত আমার আমিত্ব যেন এক সর্বগ্রাসী মহাশূন্যে একাকার হইতে ছুটিয়া চলিয়াছে! তখন দারুণ আতঙ্কে অভিভূত হইয়া পড়িলাম, মনে হইল – আমিত্বের নাশেই মরণ, সেই মরণ সম্মুখে – অতি নিকটে! সামলাইতে না পারিয়া চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলাম, ‘ওগো, তুমি আমায় একি করলে, আমার যে বাপ-মা আছেন!’ অদ্ভুত পাগল আমার ঐ কথা শুনিয়া খলখল করিয়া হাসিয়া উঠিলেন, এবং হস্তদ্বারা আমার বক্ষ স্পর্শ করিতে করিতে বলিতে লাগিলেন, ‘তবে এখন থাক, একেবারে কাজ নাই, কালে হইবে!’ আশ্চর্যের বিষয়, তিনি ঐরূপে স্পর্শ করিয়া ঐ কথা বলিবামাত্র আমার সেই অপূর্ব প্রত্যক্ষ এককালে অপনীত হইল; প্রকৃতিস্থ হইলাম, এবং ঘরের ভিতরের ও বাহিরের পদার্থসকলকে পূর্বের ন্যায় অবস্থিত দেখিতে পাইলাম।”

ঐরূপ প্রত্যক্ষের কারণান্বেষণে ও ভবিষ্যতে পুনরায় ঐরূপে অভিভূত না হইয়া পড়িবার জন্য নরেন্দ্রের চেষ্টা

“বলিতে এত বিলম্ব হইলেও ঘটনাটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে হইয়া গেল এবং উহার দ্বারা মনে এক যুগান্তর উপস্থিত হইল। স্তব্ধ হইয়া ভাবিতে লাগিলাম, এটা কি হইল? দেখিলাম তো উহা এই অদ্ভুত পুরুষের প্রভাবে সহসা উপস্থিত হইয়া সহসা লয় হইল। পুস্তকে Mesmerism (মোহিনী ইচ্ছাশক্তিসঞ্চারণ) ও Hypnotism (সম্মোহনবিদ্যা) সম্বন্ধে পড়িয়াছিলাম। ভাবিতে লাগিলাম, উহা কি ঐরূপ কিছু একটা? কিন্তু ঐরূপ সিদ্ধান্তে প্রাণ সায় দিল না। কারণ, দুর্বল মনের উপরেই প্রভাব বিস্তার করিয়া প্রবল ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ ঐসকল অবস্থা আনয়ন করেন; কিন্তু আমি তো ঐরূপ নহি, বরং এতকাল পর্যন্ত বিশেষ বুদ্ধিমান ও মানসিকবলসম্পন্ন বলিয়া অহঙ্কার করিয়া আসিতেছি। বিশিষ্ট গুণশালী পুরুষের সঙ্গলাভপূর্বক ইতরসাধারণে যেমন মোহিত এবং তাঁহার হস্তের ক্রীড়াপুত্তলিস্বরূপ হইয়া পড়ে, আমি তো ইঁহাকে দেখিয়া সেইরূপ হই নাই; বরং প্রথম হইতেই ইঁহাকে অর্ধোন্মাদ বলিয়া নিশ্চয় করিয়াছি। তবে আমার সহসা ঐরূপ হইবার কারণ কি? ভাবিয়া চিন্তিয়া কিছুই স্থির করিতে পারিলাম না; প্রাণের ভিতর একটা বিষম গোল বাঁধিয়া রহিল। মহাকবির কথা মনে পড়িল – ‘পৃথিবীতে ও স্বর্গে এমন অনেক তত্ত্ব আছে, মানব-বুদ্ধি-প্রসূত দর্শনশাস্ত্র যাহাদিগের স্বপ্নেও রহস্যভেদের কল্পনা করিতে পারে না।’ মনে করিলাম, উহাও ঐরূপ একটা; ভাবিয়া চিন্তিয়া স্থির করিলাম, উহার কথা বুঝিতে পারা যাইবে না। সুতরাং দৃঢ় সংকল্প করিলাম, অদ্ভুত পাগল নিজ প্রভাব বিস্তার করিয়া আর যেন কখনও ভবিষ্যতে আমার মনের উপর আধিপত্য লাভপূর্বক ঐরূপ ভাবান্তর উপস্থিত করিতে না পারে।”

ঠাকুরের সম্বন্ধে নরেন্দ্রের নানা জল্পনা ও তাঁহাকে বুঝিবার সঙ্কল্প

“আবার ভাবিতে লাগিলাম, ইচ্ছামাত্রেই এই পুরুষ যদি আমার ন্যায় প্রবল ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন মনের দৃঢ়সংস্কারময় গঠন ঐরূপে ভাঙিয়া-চুরিয়া কাদার তালের মতো করিয়া উহাকে আপন ভাবে ভাবিত করিতে পারেন, তবে ইঁহাকে পাগলই বা বলি কিরূপে? কিন্তু প্রথম দর্শনকালে আমাকে একান্তে লইয়া যাইয়া যেরূপে সম্বোধন করিয়াছিলেন এবং যে-সকল কথা বলিয়াছিলেন সেই-সকলকে ইঁহার পাগলামির খেয়াল ভিন্ন সত্য বলিয়া কিরূপে মনে করিতে পারি? সুতরাং পূর্বোক্ত অদ্ভুত উপলব্ধির কারণ যেমন খুঁজিয়া পাইলাম না, শিশুর ন্যায় পবিত্র ও সরল এই পুরুষের সম্বন্ধেও কিছু একটা স্থিরনিশ্চয় করিতে পারিলাম না। বুদ্ধির উন্মেষ হওয়া পর্যন্ত দর্শন, অনুসন্ধান ও যুক্তিতর্কসহায়ে প্রত্যেক বস্তু ও ব্যক্তি সম্বন্ধে একটা মতামত স্থির না করিয়া কখনও নিশ্চিন্ত হইতে পারি নাই, অদ্য সেই স্বভাবে দারুণ আঘাত প্রাপ্ত হইয়া প্রাণে একটা যন্ত্রণা উপস্থিত হইল। ফলে, মনে পুনরায় প্রবল সঙ্কল্পের উদয় হইল, যেরূপে পারি এই অদ্ভুত পুরুষের স্বভাব ও শক্তির কথা যথাযথভাবে বুঝিতে হইবেই হইবে।”

নরেন্দ্রের সহিত ঠাকুরের পরিচিতের ন্যায় ব্যবহার

“ঐরূপে নানা চিন্তা ও সঙ্কল্পে সেদিন আমার সময় কাটিতে লাগিল। ঠাকুর কিন্তু পূর্বোক্ত ঘটনার পরে যেন এক ভিন্ন ব্যক্তি হইয়া গেলেন এবং পূর্ব দিবসের ন্যায় নানাভাবে আমাকে আদর-যত্ন করিয়া খাওয়াইতে ও সকল বিষয়ে বহুকালের পরিচিতের ন্যায় ব্যবহার করিতে লাগিলেন। অতি প্রিয় আত্মীয় বা সখাকে বহুকাল পরে নিকটে পাইলে লোকের যেরূপ হইয়া থাকে, আমার সহিত তিনি ঠিক সেইরূপ ব্যবহার করিয়াছিলেন। খাওয়াইয়া, কথা কহিয়া, আদর এবং রঙ্গ-পরিহাস করিয়া তাঁহার যেন আর আশ মিটিতেছিল না। তাঁহার ঐরূপ ভালবাসা ও ব্যবহারও আমার স্বল্প চিন্তার কারণ হয় নাই। ক্রমে অপরাহ্ণ অতীতপ্রায় দেখিয়া আমি তাঁহার নিকটে সেদিনকার মতো বিদায় যাচ্ঞা করিলাম। তিনি যেন তাহাতে বিশেষ ক্ষুণ্ণ হইয়া ‘আবার শীঘ্র আসিবে, বল’ বলিয়া পূর্বের ন্যায় ধরিয়া বসিলেন। সুতরাং সেদিনও আমাকে পূর্বের ন্যায় আসিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়া দক্ষিণেশ্বর হইতে বাটীতে ফিরিতে হইয়াছিল।”

নরেন্দ্রনাথের তৃতীয়বার আগমন

উহার কতদিন পরে নরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিকটে পুনরায় আগমন করিয়াছিলেন তাহা আমাদের জানা নাই। তবে ঠাকুরের ভিতরে পূর্বোক্তরূপ অদ্ভুত শক্তির পরিচয় পাইবার পরে, তাঁহাকে জানিবার বুঝিবার জন্য তাঁহার মনে প্রবল বাসনার উদয় দেখিয়া মনে হয়, এবার দক্ষিণেশ্বরে আসিতে তাঁহার বিলম্ব হয় নাই। উক্ত আগ্রহই তাঁহাকে যত শীঘ্র সম্ভব ঠাকুরের শ্রীপদপ্রান্তে উপস্থিত করিয়াছিল, তবে কলেজের অনুরোধে উহা সপ্তাহকাল বিলম্বে হওয়াই সম্ভবপর বলিয়া বোধ হয়। কোন বিষয় অনুসন্ধান করিবার প্রবৃত্তি মনে একবার জাগিয়া উঠিলে নরেন্দ্রনাথের আহার-বিহার ও বিশ্রামাদির দিকে লক্ষ্য থাকিত না এবং যতক্ষণ না ঐ বিষয় আয়ত্ত করিতে পারিতেন ততক্ষণ তাঁহার প্রাণে শান্তি হইত না। অতএব ঠাকুরকে জানিবার সম্বন্ধে তাঁহার মন যে এখন ঐরূপ হইবে, ইহা বুঝিতে পারা যায়। আবার পাছে তাঁহার পূর্বের ন্যায় ভাবান্তর আসিয়া উপস্থিত হয়, এই আশঙ্কায় শ্রীযুত নরেন্দ্র যে নিজ মনকে বিশেষভাবে দৃঢ় ও সতর্ক করিয়া তৃতীয় দিবসে ঠাকুরের নিকটে আগমন করিয়াছিলেন এ কথাও বুঝিতে বিলম্ব হয় না। ঘটনা কিন্তু তথাপি অভাবনীয় হইয়াছিল। ঠাকুরের ও শ্রীযুত নরেন্দ্রের নিকটে তৎসম্বন্ধে আমরা যাহা শুনিয়াছি, তাহাই এখন পাঠককে বলিতেছি।

সমাধিস্থ ঠাকুরের স্পর্শে নরেন্দ্রের বাহ্যসংজ্ঞার লোপ

দক্ষিণেশ্বরে সেদিন জনতা ছিল বলিয়াই হউক বা অন্য কোন কারণেই হউক, ঠাকুর ঐদিন নরেন্দ্রনাথকে তাঁহার সহিত শ্রীযুত যদুলাল মল্লিকের পার্শ্ববর্তী উদ্যানে বেড়াইতে যাইতে আহ্বান করিয়াছিলেন। যদুলালের মাতা ও তিনি স্বয়ং ঠাকুরের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা-ভক্তিসম্পন্ন ছিলেন এবং উদ্যানের প্রধান কর্মচারীর প্রতি তাঁহাদিগের আদেশ ছিল যে, তাঁহারা উপস্থিত না থাকিলেও ঠাকুর যখনই উদ্যানে বেড়াইতে আসিবেন তখনই গঙ্গার ধারের বৈঠকখানা-ঘর তাঁহার বসিবার নিমিত্ত খুলিয়া দিবে। ঐ দিবসেও ঠাকুর নরেন্দ্রের সহিত উদ্যানে ও গঙ্গাতীরে কিছুক্ষণ পরিভ্রমণ করিয়া নানা কথা কহিতে কহিতে ঐ ঘরে আসিয়া উপবেশন করিলেন এবং কিছুক্ষণ পরে সমাধিস্থ হইয়া পড়িলেন। নরেন্দ্র অনতিদূরে বসিয়া ঠাকুরের উক্ত অবস্থা স্থিরভাবে লক্ষ্য করিতেছিলেন, এমন সময় ঠাকুর পূর্বদিনের ন্যায় সহসা আসিয়া তাঁহাকে স্পর্শ করিলেন। নরেন্দ্র পূর্ব হইতে সতর্ক থাকিয়াও ঐ শক্তিপূর্ণ স্পর্শে এককালে অভিভূত হইয়া পড়িলেন। পূর্বদিনের মতো না হইয়া উহাতে তাঁহার বাহ্যসংজ্ঞা এককালে লুপ্ত হইল! কিছুক্ষণ পরে যখন তাঁহার পুনরায় চৈতন্য হইল তখন দেখিলেন, ঠাকুর তাঁহার বক্ষে হাত বুলাইয়া দিতেছেন এবং তাঁহাকে প্রকৃতিস্থ দেখিয়া মৃদুমধুর হাস্য করিতেছেন!

বাহ্যসংজ্ঞা লুপ্ত হইবার পরে শ্রীযুত নরেন্দ্রের ভিতরে সেদিন কিরূপ অনুভব উপস্থিত হইয়াছিল, তৎসম্বন্ধে তিনি আমাদিগকে কোন কথা বলেন নাই। আমরা ভাবিয়াছিলাম, বিশেষ রহস্যের কথা বলিয়া তিনি উহা আমাদিগের নিকটে প্রকাশ করেন নাই। কিন্তু কথাপ্রসঙ্গে ঠাকুর একদিবস ঐ ঘটনার উল্লেখ করিয়া আমাদিগকে যাহা বলিয়াছিলেন তাহা হইতে বুঝিতে পারিয়াছিলাম, নরেন্দ্রের উহা স্মরণ না থাকিবারই কথা। ঠাকুর বলিয়াছিলেন –

ঐরূপ অবস্থাপ্রাপ্ত নরেন্দ্রকে ঠাকুরের নানা প্রশ্ন

“বাহ্যসংজ্ঞার লোপ হইলে নরেন্দ্রকে সেদিন নানা কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম – কে সে, কোথা হইতে আসিয়াছে, কেন আসিয়াছে (জন্মগ্রহণ করিয়াছে), কতদিন এখানে (পৃথিবীতে) থাকিবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। সেও তদবস্থায় নিজের অন্তরে প্রবিষ্ট হইয়া ঐসকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়াছিল। তাহার সম্বন্ধে যাহা কিছু দেখিয়াছিলাম ও ভাবিয়াছিলাম তাহার ঐকালের উত্তর-সকল তাহাই সপ্রমাণ করিয়াছিল। সে-সকল কথা বলিতে নিষেধ আছে। উহা হইতেই কিন্তু জানিয়াছি, সে (নরেন্দ্র) যেদিন জানিতে পারিবে সে কে, সেদিন আর ইহলোকে থাকিবে না, দৃঢ়সঙ্কল্পসহায়ে যোগমার্গে তৎক্ষণাৎ শরীর পরিত্যাগ করিবে! নরেন্দ্র ধ্যানসিদ্ধ মহাপুরুষ।”

নরেন্দ্রনাথের সম্বন্ধে ঠাকুরের অদ্ভুত দর্শন

নরেন্দ্রনাথের সম্বন্ধে ঠাকুরের ইতঃপূর্বে যে-সকল দর্শন উপস্থিত হইয়াছিল তাহার কিছু কিছু তিনি পরে এক সময়ে আমাদিগকে বলিয়াছিলেন। পাঠকের সুবিধার জন্য উহা আমরা এখানেই বলিতেছি। কারণ, ঠাকুরের নিকট উক্ত দর্শনের কথা শুনিয়া মনে হইয়াছিল, নরেন্দ্রনাথের দক্ষিণেশ্বরে আগমনের পূর্বেই তাঁহার ঐ দর্শন উপস্থিত হইয়াছিল! ঠাকুর বলিয়াছিলেন –

“একদিন দেখিতেছি – মন সমাধিপথে জ্যোতির্ময় বর্ত্মে উচ্চে উঠিয়া যাইতেছে; চন্দ্র-সূর্য-তারকামণ্ডিত স্থূলজগৎ সহজে অতিক্রম করিয়া উহা প্রথমে সূক্ষ্ম ভাবজগতে প্রবিষ্ট হইল। ঐ রাজ্যের উচ্চ উচ্চতর স্তরসমূহে উহা যতই আরোহণ করিতে লাগিল, ততই নানা দেবদেবীর ভাবঘন বিচিত্র মূর্তিসমূহ পথের দুই পার্শ্বে অবস্থিত দেখিতে পাইলাম। ক্রমে উক্ত রাজ্যের চরম সীমায় উহা আসিয়া উপস্থিত হইল। সেখানে দেখিলাম এক জ্যোতির্ময় ব্যবধান (বেড়া) প্রসারিত থাকিয়া খণ্ড ও অখণ্ডের রাজ্যকে পৃথক করিয়া রাখিয়াছে। উক্ত ব্যবধান উল্লঙ্ঘন করিয়া মন ক্রমে অখণ্ডের রাজ্যে প্রবেশ করিল, দেখিলাম – সেখানে মূর্তিবিশিষ্ট কেহ বা কিছুই আর নাই, দিব্যদেহধারী দেবদেবীসকলে পর্যন্ত যেন এখানে প্রবেশ করিতে শঙ্কিত হইয়া বহুদূর নিম্নে নিজ নিজ অধিকার বিস্তৃত করিয়া রহিয়াছেন। কিন্তু পরক্ষণেই দেখিতে পাইলাম দিব্যজ্যোতিঃঘনতনু সাতজন প্রবীণ ঋষি সেখানে সমাধিস্থ হইয়া বসিয়া আছেন। বুঝিলাম, জ্ঞান ও পুণ্যে, ত্যাগ ও প্রেমে ইঁহারা মানব তো দূরের কথা দেবদেবীকে পর্যন্ত অতিক্রম করিয়াছেন। বিস্মিত হইয়া ইঁহাদিগের কথা ও মহত্ত্বের বিষয় চিন্তা করিতেছি, এমন সময়ে দেখি, সম্মুখে অবস্থিত অখণ্ডের ঘরের ভেদমাত্রবিরহিত, সমরস জ্যোতির্মণ্ডলের একাংশ ঘনীভূত হইয়া দিব্য শিশুর আকারে পরিণত হইল। ঐ দেব-শিশু ইঁহাদিগের অন্যতমের নিকটে অবতরণপূর্বক নিজ অপূর্ব সুললিত বাহুযুগলের দ্বারা তাঁহার কণ্ঠদেশ প্রেমে ধারণ করিল; পরে বীণানিন্দিত নিজ অমৃতময়ী বাণী দ্বারা সাদরে আহ্বানপূর্বক সমাধি হইতে তাঁহাকে প্রবুদ্ধ করিতে অশেষ প্রযত্ন করিতে লাগিল। সুকোমল প্রেমস্পর্শে ঋষি সমাধি হইতে ব্যুত্থিত হইলেন এবং অর্ধস্তিমিত নির্নিমেষ লোচনে সেই অপূর্ব বালককে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। তাঁহার মুখের প্রসন্নোজ্জ্বল ভাব দেখিয়া মনে হইল, বালক যেন তাঁহার বহুকালের পূর্বপরিচিত হৃদয়ের ধন। অদ্ভুত দেব-শিশু তখন অসীম আনন্দ প্রকাশপূর্বক তাঁহাকে বলিতে লাগিল, ‘আমি যাইতেছি, তোমাকে আমার সহিত যাইতে হইবে।’ ঋষি তাহার ঐরূপ অনুরোধে কোন কথা না বলিলেও তাঁহার প্রেমপূর্ণ নয়ন তাঁহার অন্তরের সম্মতি ব্যক্ত করিল। পরে ঐরূপ সপ্রেম দৃষ্টিতে বালককে কিছুক্ষণ দেখিতে দেখিতে তিনি পুনরায় সমাধিস্থ হইয়া পড়িলেন। তখন বিস্মিত হইয়া দেখি, তাঁহারই শরীর-মনের একাংশ উজ্জ্বল জ্যোতির আকারে পরিণত হইয়া বিলোমমার্গে ধরাধামে অবতরণ করিতেছে! নরেন্দ্রকে দেখিবামাত্র বুঝিয়াছিলাম, এ সেই ব্যক্তি!”1


1. ঠাকুর তাঁহার অপূর্ব সরল ভাষায় উক্ত দর্শনের কথা আমাদিগকে বলিয়াছিলেন। সেই ভাষার যথাযথ প্রয়োগ আমাদের পক্ষে অসম্ভব। অগত্যা তাঁহার ভাষা যথাসাধ্য রাখিয়া আমরা উহা এখানে সংক্ষেপে ব্যক্ত করিলাম। দর্শনোক্ত দেবশিশু-সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিয়া আমরা অন্য এক সময়ে জানিয়াছিলাম, ঠাকুর স্বয়ং ঐ শিশুর আকার ধারণ করিয়াছিলেন।

অদ্ভুত প্রত্যক্ষের ফলে নরেন্দ্রের ঠাকুরের সম্বন্ধে ধারণা

সে যাহা হউক, ঠাকুরের অলৌকিক শক্তিপ্রভাবে নরেন্দ্রের মনে দ্বিতীয়বার ঐরূপ ভাবান্তর উপস্থিত হওয়াতে তিনি যে এককালে স্তম্ভিত হইয়াছিলেন এ কথা বলা বাহুল্য। তিনি প্রাণে প্রাণে অনুভব করিয়াছিলেন, এই দুরতিক্রমণীয় দৈবশক্তির নিকটে তাঁহার মন ও বুদ্ধির শক্তি কতদূর অকিঞ্চিৎকর! ঠাকুরের সম্বন্ধে তাঁহার ইতঃপূর্বের অর্ধোন্মাদ বলিয়া ধারণা পরিবর্তিত হইল, কিন্তু দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের শ্রীপদপ্রান্তে প্রথম উপস্থিত হইবার দিবসে তিনি তাঁহাকে একান্তে যে-সকল কথা বলিয়াছিলেন, সে-সকলের অর্থ ও উদ্দেশ্য যে এই ঘটনায় তাঁহার হৃদয়ঙ্গম হইয়াছিল, তাহা বলিতে পারা যায় না। তিনি বুঝিয়াছিলেন, ঠাকুর দৈবশক্তিসম্পন্ন অলৌকিক মহাপুরুষ। ইচ্ছামাত্রেই তাঁহার ন্যায় মানবের মনকে ফিরাইয়া তিনি উচ্চপথে চালিত করিতে পারেন; তবে বোধ হয়, ভগবদিচ্ছার সহিত তাঁহার ইচ্ছা সম্পূর্ণ একীভূত হওয়াতেই সকলের সম্বন্ধে তাঁহার মনে ঐরূপ ইচ্ছার উদয় হয় না; এবং এই অলৌকিক পুরুষের ঐরূপ অযাচিত কৃপালাভ তাঁহার পক্ষে স্বল্প ভাগ্যের কথা নহে।

উহার ফলে নরেন্দ্রের গুরুবিষয়ক ধারণার পরিবর্তন

পূর্বোক্ত মীমাংসায় নরেন্দ্রনাথকে বাধ্য হইয়াই আসিতে হইয়াছিল এবং ইতঃপূর্বের অনেকগুলি ধারণাও তাঁহাকে উহার অনুসরণে পরিবর্তিত করিতে হইয়াছিল। আপনার ন্যায় দুর্বল, স্বল্প দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মানবকে অধ্যাত্মজগতের পথপ্রদর্শক বা শ্রীগুরুরূপে গ্রহণ করিতে এবং নির্বিচারে তাঁহার সকল কথা-অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইতে ইতঃপূর্বে তাঁহার একান্ত আপত্তি ছিল। ব্রাহ্মসমাজে প্রবিষ্ট হইয়া ঐ ধারণা সমধিক পুষ্টিলাভ করিয়াছিল, এ কথা বলিতে হইবে না। পূর্বোক্ত দুই দিবসের ঘটনার ফলে তাঁহার ঐ ধারণা বিষম আঘাতপ্রাপ্ত হইল। তিনি বুঝিলেন, বিরল হইলেও সত্য সত্যই এমন মহাপুরুষসকল সংসারে জন্মপরিগ্রহ করেন যাঁহাদিগের অলৌকিক ত্যাগ, তপস্যা, প্রেম ও পবিত্রতা সাধারণ মানবের ক্ষুদ্র মনবুদ্ধিপ্রসূত ঈশ্বরসম্বন্ধীয় ধারণাকে বহুদূরে অতিক্রম করিয়া থাকে, সুতরাং ইঁহাদিগকে গুরুরূপে গ্রহণ করিলে তাহাদিগের মঙ্গল সাধিত হয়। ফলতঃ, ঠাকুরকে গুরুরূপে গ্রহণ করিতে সম্মত হইলেও তিনি নির্বিচারে তাঁহার সকল কথা গ্রহণে এখনও সম্মত হয়েন নাই।

ঠাকুরের সংসর্গে নরেন্দ্রের ত্যাগ-বৈরাগ্যের ভাববৃদ্ধি

ত্যাগ ভিন্ন ঈশ্বরলাভ হয় না, পূর্বসংস্কারবশতঃ এই ধারণা নরেন্দ্রনাথের মনে বাল্যকাল হইতেই প্রবল ছিল। তজ্জন্য ব্রাহ্মসমাজে প্রবিষ্ট হইলেও তন্মধ্যগত দাম্পত্য-জীবনসংস্কার-সম্বন্ধীয় সভা-সমিতিতে যোগদানে তাঁহার প্রবৃত্তি হয় নাই। সর্বস্বত্যাগী ঠাকুরের পুণ্যদর্শন ও অপূর্ব শক্তির পরিচয়লাভে তাঁহাতে উক্ত ত্যাগের ভাব এখন হইতে বিশেষরূপে বাড়িয়া উঠিয়াছিল।

পরীক্ষা না করিয়া ঠাকুরের কোন কথা গ্রহণ না করিবার নরেন্দ্রের সঙ্কল্প

কিন্তু সর্বাপেক্ষা একটি বিষয় এখন হইতে শ্রীযুত নরেন্দ্রের চিন্তার বিষয় হইল। তিনি বুঝিয়াছিলেন, এরূপ শক্তিশালী মহাপুরুষের সংস্রবে আসিয়া মানব-মন অর্ধপরীক্ষা, অথবা পরীক্ষা না করিয়াই, তাঁহার সকল কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিয়া বসে। উহা হইতে আপনাকে বাঁচাইতে হইবে। সেজন্য পূর্বোক্ত দুই দিবসের ঘটনায় ঠাকুরের প্রতি তাঁহার মনে বিশেষ ভক্তি-শ্রদ্ধার উদয় হইলেও তিনি এখন হইতে দৃঢ়সঙ্কল্প করিয়াছিলেন যে, বিশেষ পরীক্ষাপূর্বক স্বয়ং অনুভব বা প্রত্যক্ষ না করিয়া তাঁহার অদ্ভুত দর্শন-সম্বন্ধীয় কোন কথা কখনও গ্রহণ করিবেন না, ইহাতে তাঁহার অপ্রিয়ভাজন হইতে হয় তাহাও স্বীকার। সুতরাং আধ্যাত্মিক জগতের অভিনব অদৃষ্টপূর্ব তত্ত্বসকল গ্রহণ করিবার জন্য মনকে সর্বদা প্রস্তুত রাখিতে একদিকে তিনি যেমন যত্নশীল হইয়াছিলেন, অপরদিকে তেমনি আবার ঠাকুরের প্রত্যেক অদ্ভুত দর্শন ও ব্যবহারের কঠোর বিচারে আপনাকে এখন হইতে নিযুক্ত করিয়াছিলেন।

নরেন্দ্রের অতঃপর অনুষ্ঠান

নরেন্দ্রনাথের সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধিতে ইহা সহজেই প্রতিভাত হইয়াছিল যে, প্রথম দিবসের যে-সকল কথার জন্য তিনি ঠাকুরকে অর্ধোন্মাদ বলিয়া ধারণা করিয়াছিলেন, তাঁহাকে অবতার বলিয়া স্বীকার করিলেই কেবলমাত্র সেই-সকল কথার অর্থবোধ হয়। কিন্তু তাঁহার সত্যানুসন্ধিৎসু যুক্তিপরায়ণ মন ঐ কথা সহসা স্বীকার করে কিরূপে? সুতরাং ঈশ্বর যদি কখনও তাঁহাকে ঐসকল কথা বুঝিবার সামর্থ্য প্রদান করেন তখন উহাদিগের সম্বন্ধে আলোচনা করিবেন, এইরূপ স্থির করিয়া তিনি উহাদিগের সম্বন্ধে একটা মতামত স্থির করিতে অগ্রসর না হইয়া, কেমন করিয়া ঈশ্বর-দর্শন করিয়া স্বয়ং কৃতকৃতার্থ হইবেন, এখন হইতে ঠাকুরের নিকট আগমন-পূর্বক তদ্বিষয় শিক্ষা ও আলোচনা করিতে নিযুক্ত হইয়াছিলেন।

নরেন্দ্রের বর্তমান মানসিক অবস্থা

তেজস্বী মন কোনরূপ নূতনত্ব-গ্রহণকালে নিজ পূর্বমতের পরিবর্তন করিতে আপনার ভিতরে একটা প্রবল বাধা অনুভব করিতে থাকে। নরেন্দ্রনাথেরও এখন ঠিক ঐরূপ অবস্থা উপস্থিত হইয়াছিল। তিনি ঠাকুরের অদ্ভুত শক্তির পরিচয় পাইয়াও তাঁহাকে সম্যক গ্রহণ করিতে পারিতেছিলেন না, এবং আকৃষ্ট অনুভব করিয়াও তাহা হইতে দূরে দাঁড়াইতে চেষ্টা করিতেছিলেন। তাঁহার ঐরূপ চেষ্টার ফলে কতদূর কি দাঁড়াইয়াছিল, তাহা আমরা পরে দেখিতে পাইব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *