1 of 2

০৭. প্ৰকাশ্যে প্রচারের নির্দেশ

প্ৰকাশ্যে প্রচারের নির্দেশ

সাধারণ-অসাধারণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি রিসালাতের বাণী পৌছানো, ধৈর্য ধারণ ও স্থিরতা অবলম্বন। মূখ, সত্যুদ্রোহী ও সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট সকল দলীল প্রমাণাদি পৌঁছার পরও তাদের অবাধ্যতার প্রবণতাকে উপেক্ষা করার জন্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ এবং কাফির-মুশরিকদের নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল প্রেরণ আর তাদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও তাঁর সাহাবীগণ যে সকল জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেছেন তার বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো।

আল্লাহ তা’আলা বলেন?

আপনার নিকট-আত্মীয়দেরকেও সতর্ক করুন। আর যারা আপনার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি আপনি বিনয়ী হোন। ওরা যদি আপনার অবাধ্য হয়, তবে তাদেরকে বলুন যে, তোমরা যা করা তার জন্যে আমি দায়ী নই। আপনি নির্ভর করুন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর

উপর—যিনি আপনাকে দেখেন যখন আপনি দণ্ডায়মান থাকেন নামাযের জন্যে এবং দেখেন সিজদাকারীদের সঙ্গে আপনার উঠাবসা। তিনি তো সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ (২৬ : ২১৪-২২০)।

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :

و انهٔ لذگر لالت ولقوامل وسوف تسننتالونকুরআন তো আপনার ও আপনার সম্প্রদায়ের জন্যে সম্মানের বস্তু, তোমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। (৪৩ : :৪)।

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন?

ان الذی فرض عليك القرأن الرائك الی معاد যিনি আপনার জন্যে কুরআনের বিধান দিয়েছেন তিনি আপনাকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন-স্থলে

ফিরিয়ে আনবেন (২৮ : ৮৫)। অর্থাৎ যে মহান প্ৰভু কুরআনের প্রচার ও প্রসার ঘটানো আপনার জন্যে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন তিনি আপনাকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন-স্থল আখিরাতে

নিয়ে যাবেন। এরপর এ বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা।

বলেছেন :

فوجد ربك لتسالتهم أجمعين عما كانوا يعملون فاصندغ بما تؤمر وأعرض

عن المشركين – “সুতরাং আপনার প্রতিপালকের শপথ আমি ওদের সকলকে প্রশ্ন করবই সে বিষয়ে যা তারা করে। অতএব আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছিল তা প্ৰকাশ্যে প্রচার করুন এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা করুন (১০ : ৯২-৯৪)।

এ মর্মে কুরআন১ মজীদের বহু আয়াত এবং বহু হাদীছ রয়েছে। তাফসীর গ্রন্থে সূরা শুআরা-এর ৩.০-৯১) এ16_-_2, . ১১:16, আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা এ বিষয়ে সুবিস্তৃত আলোচনা করেছি। ওখানে বহু হাদীছও আমরা সন্নিবেশিত করেছি। তার মধ্য থেকে কতক হাদীছ এখানে উদ্ধৃত করছি।

ইমাম আহমদ বলেন, আবদুল্লাহ ইবন নুমায়ার ……. ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা যখন ৩,১৭১। এj… .. ‘, ‘$1’,-আপনার নিকট আত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন) আয়াত নাযিল করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) সাফা পাহাড়ের উপরে আরোহণ করে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, “ইয়া সাবাহা৷” প্রভাতকালীন বিপদ। তারা ডাক শুনে সবাই তার নিকট উপস্থিত হয়। কেউ কেউ নিজেরাই হাযির হয়। আর কেউ কেউ প্রতিনিধি পাঠায়। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ, হে ফিহরের বংশধরগণ! হে কাআব-এর বংশধরগণ! আমি যদি বলি, এই পাহাড়ের অপর দিকে শত্রুপক্ষ রয়েছে তারা তোমাদের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত। তোমরা কি আমার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করবে? সকলে বলল, হঁ্যা অবশ্যই বিশ্বাস করব। তখন তিনি বললেন, “আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি আসন্ন কঠিন শাস্তির ব্যাপারে।”

আবু লাহাব (আল্লাহ তার প্রতি লা’নত বৰ্ষিত করুন) বলে উঠল, সারা দিন ধরে তোমার জন্যে ধ্বংস আর দুর্ভোগ নেমে আসুক, আমাদেরকে কি এ জন্যেই ডেকে এনেছ? এ প্রেক্ষিতে ۹۹)T&T।| ۹।| 62 65ه (تبت یاد آبی لهاب) ۴۹۶ آSIIgits 5।| SIIST Tif۹۶ দু’হাত……. (১১১ : ১-৫) ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) আমাশ সূত্রে অনুরূপ উল্লেখ

করেছেন।

ইমাম আহমদ বলেন, মুআবিয়া ইবন আমর…….আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন ৬,১৭১। এ14………. ‘, ‘$1, আয়াত যখন নাযিল হল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) কুরায়শ বংশের সাধারণ-অসাধারণ নির্বিশেষে সকলকে ডাকলেন। তারপর বললেন, “হে কুরায়শ সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর।”

১. শেষাক্ত আয়াতখানা মূল কিতাবে উদ্ধৃত হয়নি।–সম্পাদকদ্বয়

হে কাআবের বংশধরগণ। তোমরা জাহান্নাম থেকে নিজেদেরকে রক্ষা কর। হে হাশিমের বংশ-ধরগণ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর! হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। হে মুহাম্মাদ (সা)-এর কন্যা ফাতিমা! তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে তোমাদের সাথে আমার আত্মীয়তা রয়েছে। আমি ওই আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবো।”

ইমাম মুসলিম (র) আবদুল মালিক ইবন উমায়র সূত্রে এ হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম বুখারী ও মুসলিম উভয়ে তাদের সহীহ গ্রন্থদ্বয়ে যুহরী আবু হুরায়রা সূত্রে এটি উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা) থেকে অন্য সনদেও এই হাদীছখানা বর্ণিত হয়েছে। মুসনাদে-আহমদ ও অন্যান্য গ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম আহমদ (র) আরো বলেন, “ওয়াকী ইবন হিশাম তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আইশা (রা) বলেছেন যে, এ14…… .. ‘, ‘$1’, ৬,৩৯১। আয়াত যখন নাযিল হল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে মুহাম্মাদ (সা)-এর কন্যা ফাতিমা! হে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা সাফিয়্যাহ, হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ! আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার ধন-সম্পদ থেকে তোমরা যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। ইমাম মুসলিমও এ হাদীছখানা উদ্ধৃত করেছেন।

হাফিয আবু বকর বায়হাকী (র) তাঁর ‘দালাইল” গ্রন্থে বলেছেন, মুহাম্মদ ইবন আবদুল হাফিয….আলী ইবন আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন : وأنذر عشيرتك الاقربين – وخفض جناحك لمن اتبعك من

المؤمنينআয়াতটি যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি নাযিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আমি ওদেরকে এ কথা বললে কী অগ্ৰীতিকর আচরণ আমি তাদের পক্ষ থেকে পাব, তা আমার সম্যক জানা ছিল। তাই আমি নীরব থাকি। এরপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট আসলেন এবং বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন আপনি তা যদি না করেন, তবে আপনাকে আগুনের শাস্তি দিবেন। হযরত আলী (রা) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে ডেকে বললেন “হে আলী! আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমার নিকটাত্মীয়দেরকে আমি যেন সতর্ক করি। সুতরাং হে আলী! তুমি এক সা”১ খাদ্যের সাথে একটি বকরী রান্না কর আর একটি পাত্ৰ ভর্তি দুধের ব্যবস্থা কর। তারপর আবদুল মুত্তালিবের বংশধরদেরকে আমার নিকট সমবেত কর। আমি তাই করলাম। ওরা সবাই সেদিন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তারা সংখ্যায় ছিলেন নৃত্যুনাধিক :০ জন। উপস্থিত লোকদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর চাচাগণ তথা আবু তালিব, হামযা, আব্বাস এবং

১. সা’ হচ্ছে সোয়া তিন কে.জি. পরিমাণ!–সম্পাদকদ্বয়

খবীছ কাফির আবু লাহাবও ছিল। খাদ্যের গামলাটি আমি তাদের সম্মুখে উপস্থিত করি। রাসূলুল্লাহ্ (সা) এক টুকরা গোশত নিয়ে দাঁতে কামড়িয়ে ছিড়ে তাই পাত্রের চারিপাশ্বে ছিটিয়ে দিলেন এবং সবাইকে বললেন, বিসমিল্লাহ বলে এবার খাওয়া শুরু করুন। সবাই খেয়ে নিলেন। এবং হাসিমুখে ওখান থেকে উঠে চলে গেলেন। তখন পাত্রে আমরা তাদের আঙ্গুলের চিহ্নগুলো দেখতে পেলাম। আল্লাহর কসম, যে পরিমাণ খাদ্য প্রথমে ছিল তাদের একজনেই তা খেয়ে শেষ করতে পারত। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আলী! ওদেরকে দুধ পান করাও। আমি দুধের পাত্ৰ উপস্থিত করলাম। সবাই তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করলেন। আল্লাহর কসম, ওদের একজনেই ওই পরিমাণ দুধ খেয়ে ফেলতে পারতো। এবার রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাদের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য পেশ করার ইচ্ছা করলেন। তার আগেই অভিশপ্ত আবু লাহাব কথা বলা শুরু করল। সে বলল, তোমাদের এ লোক যে জাদু দেখিয়েছে, তা অত্যন্ত শক্তিশালী বটে। এ কথার পর সবাই চলে গেল। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর বক্তব্য পেশ করার অবকাশই পেলেন না। পরের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন হে আলী! গতকাল যেরূপ খাদ্য-পানীয় প্রস্তুত করেছিলে আজও তেমন তৈরী কর। আমি কথা বলার আগে ওই লোক কী বলে গেল তাতে তুমি শুনেছ। আমি খাদ্য-পানীয় তৈরী করলাম এবং ওদের সবাইকে একত্রিত করলাম। পূর্বের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) যা করেছিলেন এ দিনও তাই করলেন। তারা সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া শেষ করে হাসিমুখে উঠল। আল্লাহর কসম, ওদের একজন লোকেই ওই পরিমাণ খাদ্য খেয়ে ফেলতে পারতো। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আলী! ওদেরকে দুধ পান করাও। আমি দুধের পাত্র নিয়ে এলাম। তারা সবাই তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করে হাসিমুখে উঠে দাঁড়ালেন। আল্লাহর কসম, ওদের একজনেই ওই পরিমাণ দুধ পান করে ফেলতে পারতো।

এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) ওদের সাথে কথা বলতে উদ্যত হলেন। তার পূর্বেই অভিশপ্ত আবু লাহাব কথা বলে উঠল। সে বলল, তোমাদের এ লোক যে জাদুর ব্যবস্থা করেছে তা প্ৰচণ্ড শক্তিশালী বটে। এ কথা শুনে সবাই চলে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা) এবারও তাদের সাথে কথা বলতে পারলেন না। পরের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আলী! পূর্বের দিনের ন্যায় খাদ্য-পানীয় প্রস্তুত করে দাও। আমি কথা কলার পূর্বে ওই লোক কী বলেছে তাতো তুমি শুনেছই। আমি অনুরূপ খাদ্য-পানীয় প্রস্তুত করে ওদের সবাইকে সমবেত করলাম। করি। পূর্বের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) যা করেছিলেন। এদিনও তা করলেন। তারা খাওয়া শেষে হাসিমুখে উঠে দাঁড়াল। এরপর আমি তাদেরকে দুধ পান করালাম। আল্লাহর কসম, ওদের একজনেই ওই পরিমাণ দুধ পান করে ফেলতে পারতো। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ! আমি আপনাদের নিকট যা নিয়ে এসেছি কোন আরব যুবক তার সম্প্রদায়ের নিকট তার চাইবে কিছু নিয়ে এসেছে বলে আমার জানা নেই। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকর বিষয় আমি আপনাদের নিকট নিয়ে এসেছি।–:

বায়হাকী (র) ইউনুস…… আবদুল্লাহ ইবন হারিছ সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবু জাফর ইবন জারীর (র) মুহাম্মদ ইবন হুমায়দ রায়ী … হযরত আলী (রা) সূত্রে অনুরূপ

বর্ণনা করেছেন। তবে এ বর্ণনায় “আমি আপনাদের নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিয়ে এসেছি।” এরপর এতটুক অতিরিক্ত রয়েছে। “আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আপনাদেরকে তার প্রতি আহবান করি।”

সুতরাং এ বিষয়ে আপনাদের মধ্যকার কে আমাকে সাহায্য করবেন? তাহলে ঐ ব্যক্তি আমার ভাই হিসেবে গণ্য হবে। তিনি এ ভাবে আরও কিছু কথা বললেন। তাঁর বক্তব্য শুনে কেউই কোন উত্তর দিল না। আমি সেখানে সবার চাইতে বয়ঃকনিষ্ঠ ছিলাম। চোখ দিয়ে পানি পড়তো পেট ছিল বড় এবং পায়ের গোছা দুটো চিকন। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি হব। আপনার সাহায্যকারী! তখন তিনি আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, “এই আমার ভাই, আপনারা তার কথা শুনবেন, তার নির্দেশ মানবেন।” এরপর লোকজন হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল। আর আবু তালিবকে বলতে লাগল, “সে তো আপনাকে নির্দেশ দিল আপনার পুত্রের কথা শুনতে আর তার নির্দেশ পালন করতে।” অবশ্য এ অতিরিক্ত বর্ণনাটুকু এককভাবে আবদুল গাফফার ইবন কাসিম আবু মািরয়ামের। এ ব্যক্তি মিথ্যাচারী এবং শিয়াপান্থী লোক। আলী ইবন মাদীনী প্রমুখ তাকে জাল হাদীছ রটনার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। অবশিষ্ট হাদীছ পরীক্ষকগণ তাকে দুর্বল বর্ণনাকারীরূপে আখ্যায়িত করেছেন।

ইবন আবী হাতিম তার তাফসীর গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবন হারিছ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি

বলেছেন যে, হযুরত আলী (রা) বলেছেন :

আয়াত যখন নাযিল হল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাকে বললেন, এক সা” খাদ্যের মধ্যে একটি বকরীর পা রান্না কর। আর এক পাত্র দুধের ব্যবস্থা কর এবং হাশিম গোত্রের লোকজন সবাইকে আমার নিকট ডেকে নিয়ে আসা। আমি তাদের সবাইকে ডেকে আনলাম। তাদের সংখ্যা ছিল ৩৯ কিংবা :১ জন। এরপর পূর্বোক্ত হাদীছে বর্ণিত ঘটনার ন্যায় বর্ণনা করলেন। তবে শেষে এতটুকু অতিরিক্ত যোগ করলেন যে, এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর তাদের সাথে আলাপের সূচনা করলেন এবং বললেন, আপনাদের মধ্যে কে আছেন যে আমার ঋণগুলো পরিশোধ করে দিবেন এবং আমার পরিবারে আমার প্রতিনিধি হবেন। উপস্থিত কেউই কোন কথা বললেন না। ঋণ পরিশোধে নিজের সব সম্পদ শেষ হয়ে যাবে এ আশংকায় হযরত আব্বাসও কিছু বললেন না। হযরত আলী (রা) বলেন, হযরত আব্বাস (রা) বয়সে প্রবীণ হওয়ার কারণে তাঁর সম্মানার্থে আমিও চুপ থাকলাম।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর সে আহবানের পুনরাবৃত্তি করলেন। এবারও হযরত আব্বাস নীরব রইলেন। এ অবস্থা দেখে আমি বললাম, “আমি আপনার এ দায়িত্ব নেবো ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তুমিই, হযরত আলী বলেন, তখন আমার অবস্থা সবার চেয়ে শোচনীয় ছিল। আমার দু-চক্ষু বেয়ে পানি পড়ত, পেট ছিল ফোলা, পায়ের গোছা দুটো চিকন।

এ হাদীছটি পূর্ববতী হাদীছের সমর্থক। তবে ওই হাদীছের সনদে ইবন আব্বাসের উল্লেখ নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইমাম আহমদ (র) তাঁর মুসনােদ গ্রন্থে আব্বাস ইবন আবদুল্লাহ আসাদী ও রাবীআ ইবন নাজ্যি সূত্রে হযরত আলী (রা) থেকে উপরোক্ত হাদীছের সমর্থক হাদীছ উল্লেখ করেছেন।

হাদীছের ভাষ্য “আপনাদের মধ্যে কে আছে যে আমার ঋণগুলো পরিশোধ করবে এবং আমার পরিবারে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে।” দ্বারা তিনি একথা বুঝিয়েছেন যে, আমার যদি মৃত্যু হয়, তখন এ দায়িত্ব পালন করবে। এমন কে আছে? রাসূলুল্লাহ্ (সা) যেন এ আশংকা করেছিলেন যে, আরবের মুশরিদের নিকট রিসালাতের বাণী পৌছাতে গেলে তারা তাকে হত্যা করতে পারে। তাই তার অবর্তমানে তার পরিবারের দেখাশোনা করার জন্যে এবং তার ঋণ পরিশোধ করার জন্যে আস্থাভাজন লোকের খোজ করেছিলেন। অবশ্য ওই ধরনের অঘটন। থেকে আল্লাহ তা’আলা তাকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা তাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন

-হে রাসূল। আপনার প্রতিপালকের নিকট থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা

প্রচার করুন। যদি তা না করেন, তবে তো আপনি তার বার্তা প্রচার করলেন না। আল্লাহ আপনাকে লোকজন থেকে রক্ষা করবেন (৫ : ৬৭)।

মোদ্দাকথা, রাসূলুল্লাহ্ (সা) রাতে-দিনে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা সর্বপ্রকারে মানুষকে আল্লাহর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। কোন বাধা প্রদানকারী তাকে তা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তিনি মাহফিলে, মজলিসে, সমাবেশে মেলার মওসুমে এবং হজ্জের কার্যাদি সম্পাদনের স্থানসমূহে সমবেত লোকদের নিকট গিয়েছেন আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার জন্যে। ধনী-নিধন, স্বাধীন-অধীন, এবং সবল-দুর্বল যার সাথেই তার সাক্ষাত হয়েছে, তাকেই তিনি দাওয়াত দিয়েছেন। দাওয়াতের ব্যাপারে তিনি কোনরূপ ভেদাভেদ করেননি। কুরায়শের সবল ও শক্তিমান লোকেরা নানা প্রকারের অত্যাচার ও নির্যাতন সহকারে তার উপর ও তার অনুসারী দুর্বল ব্যক্তিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাঁর প্রতি সর্বাধিক কঠিন ও কঠোর আচরণকারী ছিল তার চাচা আবু লাহাব ও তার স্ত্রী উম্মু জামীল আরওয়া বিনত হারব ইবন উমাইয়া। আবু লাহাবের মূল নাম আবদুল উষযা ইবন আবদুল মুত্তালিব। তার স্ত্রী উন্মু জমীল ছিল আবু সুফিয়ানের বোন। চাচা আবু তালিব ইবন আবদুল মুত্তালিব কিন্তু এ ব্যাপারে তার বিরোধী ছিলেন। বস্তৃত রাসূলুল্লাহ্ (সা) তার চাচা আবু তালিবের প্রিয়তম মানুষ ছিলেন। তার ভরণ-পোষণে তিনি অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন এবং তিনি তার প্রতি অত্যন্ত সদয় আচরণ করতেন। অন্যদের জুলুম-নির্যাতন ও কটাক্ষ থেকে তিনি তাকে রক্ষা করতেন। তিনি নিজে কুরায়শী ধর্মমতের অনুসরণকারী হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে তিনি ওদের বিরোধিতা করতেন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি সহজাত ভালবাসা দিয়েছিলেন, শরীআতভিত্তিক ভালবাসা নয়।

আবু তালিব একদিকে তাঁর পূর্বপুরুষের ধর্মমতে অবিচল থেকেছিল, আর অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জান-প্ৰাণ দিয়ে রক্ষা করেছিল। এ দ্বিমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলার হিকমত রয়েছে। কারণ, আবু তালিব যদি ইসলাম গ্রহণ করতেন, তবে কুরায়শ বংশীয় মুশরিকদের নিকট তার কোন প্রভাব ও গুরুত্ব থাকত না। তাদের উপর বড় কথা বলার

মত অবস্থা তাঁর থাকত না। তখন তাঁরা তাঁকে ভয়ও পেত না, তাকে সমীহও করত না। উপরন্তু তাঁর বিরুদ্ধাচরণের দুঃসাহস দেখাত এবং মুখে ও কাজে তাঁর প্রতি অসদাচরণের চেষ্টা করত। আল্লাহ তা’আলা তো বলেই দিয়েছেন যে, আপনার প্রতিপালক যা ইচ্ছা করেন এবং যা পসন্দ করেন, তাই করেন।

বস্তৃত আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সৃষ্টি জগতকে বিভিন্ন শ্রেণী ও প্রজাতিতে বিভক্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর এই দুই চাচা আবু তালিব ও আবু লাহাব। অথচ এই চাচা অৰ্থাৎ আবু তালিব আখিরাতে থাকবে জাহান্নামের কূপের উপরের প্রান্তে আর ওই চাচা অৰ্থাৎ আবু লাহাব থাকবে জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে। তার দুর্ভোগের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে একটি সূরা নাযিল করেছেন। এ সূরা মিম্বরে মিম্বরে পাঠ করা হয়, ওয়ায-নসীহতে উল্লেখ করা হয়। এ সূরার মর্ম এই যে, ওই আবু লাহাব অবিলম্বে প্রবেশ করবে। শিখাময় অগ্নিতে। তার স্ত্রী কাঠ বহনকারিণীও সেখানে প্রবেশ করবে।

ইমাম আহমদ (র) বলেন, ইবরাহীম ইবন আবুল আব্বাস বনু দায়ল গোত্রের রাবীআ ইবন আব্বাস নামের এক লোক থেকে বর্ণনা করেন। উক্ত বৰ্ণনাকারী জাহিলী যুগে অমুসলিম ছিল, পরে তিনি ইসলাম গ্ৰহণ করেন। তিনি বলেন যে, আমি জাহেলী যুগে একদিন যুলমােজায বাজারে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে দেখতে পাই-তিনি বলছিলেন :

يأيها الناس قولوا لأ الله الأ اللّه تُفلحوا– “হে লোক সকল! তোমরা বল আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই। তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।” আমি দেখেছি যে, লোকজন তার নিকট সমবেত হয়েছে। তার পেছনে দেখতে পেলাম। একজন লোক, লোকটির মুখমণ্ডল উজ্জ্বল, গৌরবর্ণ, চক্ষু টেরা এবং তার দুটো বঁটি ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলছিল, “এই লোকটি ধর্মত্যাগী ও মিথ্যাবাদী।” রাসূলুল্লাহ্ (সা) যেখানে যাচ্ছিলেন লোকটিও তাঁর পেছনে পেছনে সেখানে যাচ্ছিল। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে লোকজন বলল, সে তো তারই চাচা আবু লাহাব।

ইমাম আহমদ ও বায়হাকী (র) আবদুর রহমান ইবন আবু যানাদ থেকে অনুরূপ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইমাম বায়হাকী আরো উল্লেখ করেছেন যে, আবু তাহির ফকীহ-রাবী-আদ দায়লী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে যুলমাজায বাজারে দেখতে পেয়েছিলাম যে, তিনি মানুষের অবস্থানস্থলসমূহে যাচ্ছিলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর প্রতি আহবান জানাচ্ছিলেন। তাঁর পেছনে ছিল টেরা চক্ষু বিশিষ্ট একজন লোক। লোকটির দু’গাল চকচক করছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ইঙ্গিত করে সে বলছিল, “হে লোক সকল! এ ব্যক্তিটি যেন তোমাদেরকে নিজেদের ধর্মমত এবং তোমাদের পূর্বপুরুষের ধর্মমতের ব্যাপারে প্রতারণা করতে না পারে। আমি ওই লোকটির পরিচয় জানতে চাইলাম। আমাকে জানানাে হল যে, সে হচ্ছে। আবু লাহাব।

ইমাম বায়হাকী (র) শু’বা……. কিনানা বংশের এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন। সে ব্যক্তি বলেছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে যুলমাজায বাজারে দেখেছিলাম, তিনি বলছিলেন

“হে লোক সকল! তোমরা বল, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।” আমি তার পেছনে অপর এক লোককে দেখতে পেলাম যে, সে তার প্রতি মাটি নিক্ষেপ করছে। সে ছিল আবু জাহল। সে বলছিল, “হে লোক সকল! এ ব্যক্তি যেন তোমাদেরকে তোমাদের ধর্মমতের ব্যাপারে প্রতারিত করতে না পারে। সে তো চায় যে, তোমরা লাত ও উষযার উপাসনা ত্যাগ কর।” এ বর্ণনায় লোকটি আবু জাহল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, ওই লোকটি ছিল আবু লাহাব। আবু লাহাবের জীবনীর অবশিষ্টাংশ আমরা তার মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করার সময় উল্লেখ করব। তার মৃত্যু হয়েছিল বদর যুদ্ধের পর।

পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ছিল চাচা আবু তালিবের পরম স্নেহ মমতা ও মানবিক ভালবাসা। তার কাজ-কর্ম, স্বভাব-চরিত্র এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও তার সাহাবীদেরকে রক্ষা করার জন্যে তার মরণপণ প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তালিবের নিকট এসে বলেছিল, আপনার এই ভাতিজাটি আমাদের সভা-সমাবেশে, মাহফিলো-মজলিসে এবং উপাসনালয়ে গিয়ে আমাদেরকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। আপনি আমাদের নিকট আসা থেকে তাকে বারণ করে দিন! তখন আবু তালিব বললেন, হে আকীল! তুমি যাও তো, মুহাম্মাদকে ডেকে নিয়ে আসা। আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং ছোট্ট একটি কুটির থেকে বের করে ভর দুপুরে তাকে নিয়ে এলাম। তখন প্রচণ্ড গরম পড়ছিল। তাদের নিকট উপস্থিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উদ্দেশ্যে আবু তালিব বললেন, এই যে তোমার জ্ঞাতি ভাইয়েরা, এরা বলছে যে, তুমি ওদেরকে সভা-সমাবেশে এবং উপাসনালয়ে গিয়ে কষ্ট দিচ্ছি। ওদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে তুমি বিরত থেকে!

এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা কি ওই সূৰ্যটা দেখছেন? ওরা বলল, হ্যা, দেখছিই তো! তিনি বললেন, আপনারা যদি সূর্যের একটা শিখাও আমার হাতে তুলে দেন, তবু ওই দাওয়াতের কাজ থেকে আমি বিরত থাকতে পারব না। আবু তালিব বললেন, আল্লাহর কসম, “আমার ভাতিজা কখনো মিথ্যা কথা বলে না, তোমরা চলে যাও।” এ হাদীছটি ইমাম বুখারী (র) তারিখ গ্রন্থে ইউনুস ইবন বুকােয়র সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম বায়হাকী (র) ইউনুস….. মুগীরা ইবন আখনাস সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, কুরায়শগণ যখন আবু তালিবকে ওই কথা বলল, তখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে ডেকে এনে বললেন, হে ভাতিজা! তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার নিকট এসেছিল এবং এসব কথা জানিয়ে গেল। সুতরাং তুমি নিজেও বাচ, আমাকেও বাঁচতে দাও! এমন কোন সমস্যা আমার উপর চাপিয়ে দিও না, যা বহন করার সামর্থ আমারও নেই, তোমারও নেই। সুতরাং তোমার যে কথাটি তারা অপসন্দ করে, সে কথা তুমি বলে না। এতে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ধারণা করলেন যে, তার সম্পর্কে তার চাচার মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছে এবং তিনি তাঁকে

ওদের হাতে সোপর্দ করতে যাচ্ছেন এবং তাকে রক্ষায় তিনি অক্ষম হয়ে পড়েছেন, তখন তিনি বললেন, চাচা! যদি আমার ডান হাতে সূৰ্য আর বাম হাতে চন্দ্র দেয়া হয় তবু এ কাজ আমি ত্যাগ করতে পারব না। এ কাজ আমি অবিরাম চালিয়ে যাব যতক্ষণ না আল্লাহ এ দীনকে বিজয়ী করেন কিংবা এই দীন প্রতিষ্ঠায় আমার মৃত্যু হয়। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে এবং তিনি কেঁদে ফেলেন। এ অবস্থা দেখে আবু তালিব বললেন, ভাতিজা! তোমার কাজে তুমি এগিয়ে যাও! তোমার কর্মতৎপরতা তুমি চালিয়ে যাও এবং তুমি যা ভাল মনে কর তা করতে থাক। আল্লাহর কসম, কোন কিছুর বিনিময়েই আমি তোমাকে ওদের হাতে তুলে দেবো না।

ইবন ইসহাক বলেন, এরপর আবু তালিব নিম্নের কবিতাটি পাঠ করেন :

মিলেও তোমার নিকটে আসতে পারবে না।

فامضى لأمرك ما عليك غضاضة – أبشر وقر بذالك منك عيونا তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও, কোন অপমান-লাঞ্ছনা তোমার প্রতি আসবে না। তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং এতদ্বারা তোমার চোখ জুড়াও।

তুমি আমাকে সত্যের দাওয়াত দিয়েছ। আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি আমার কল্যাণকামী, তুমি সত্য বলেছ, তুমি তো পূর্ব থেকেই আল-আমীন ও বিশ্বাসী বলে খ্যাত।

তুমি আমার নিকট একটি দীন পেশ করেছ, আমি নিশ্চিত জানি যে, ওই দীন হল সৃষ্টি জগতের জন্যে শ্রেষ্ঠ দীন।

لولا الملامة أو حذارى سبية – لوجدتنى سمحا بذالك مبيتاযদি সমালোচনার আশংকা এবং আমার যুগ-সচেতনতা না থাকত, তবে তুমি আমাকে ওই দীনের সুস্পষ্ট অনুসরণকারী ও অনুগামী দেখতে পেতে।

এরপর বায়হাকী (র) বলেছেন যে, ইবন ইসহাক এ প্রসংগে আবু তালিবের আরো কতক পংক্তি উল্লেখ করেছেন। উপরোক্ত ঘটনাবলী প্রমাণ করে যে, চাচা আবু তালিব দীন ও ধর্ম-মতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বিপরীত অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও তাঁরই মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা তাকে হিফাযত করেছেন, নিরাপদ রেখেছেন। অবশ্য যেখানে তার চাচার উপস্থিতি ছিল না। সেখানে আল্লাহ তা’আলা তার ইচ্ছা অনুযায়ী অন্যান্য উপায়ে তাকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ তা’আলার বিধান পরিবর্তনের ক্ষমতা কারো নেই।

ইউনুস ইবন বুকায়ার বলেন, মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক…… ইবন আব্বাস (রা) থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও মক্কার মুশরিকদের মাঝে অনুষ্ঠিত বিতর্ক সভা বিষয়ক একটি দীর্ঘ হাদীছে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) যখন তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করলেন, তখন আবু জাহল ইবন হিশাম বলল, “হে কুরায়শ সম্প্রদায়! এই মুহাম্মাদ কি কাজ করে যাচ্ছে তা কি তোমরা লক্ষ্য করছে? সে আমাদের ধর্মের দোষত্রুটি বর্ণনা করছে, আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে গালমন্দ করছে, আমাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মূর্খতার অপবাদ দিচ্ছে এবং আমাদের উপাস্যদেরকে গালমন্দ করছে। আমি আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করে বলছি যে, আগামীকাল ভোরে আমি একটি পাথর নিয়ে বসে থাকব। সে যখন সিজদায় যাবে ওই পাথর মেরে আমি তার মাথা ফাটিয়ে দেব। এরপর আবদ মানাফ গোত্রের লোকেরা আমাকে যা করতে পারে করবে। পরের দিন প্ৰত্যুষে আবু জাহল (তার প্রতি আল্লাহর লা’নত) সত্যি সত্যি একটি পাথর হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে বসে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা) যথারীতি ফজরের নামাযের জন্যে বেরিয়ে আসেন। তখন তাঁর কিবলা ছিল সিরিয়া অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে। ফলে, তিনি যখন হাজারে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতেন, তখন তাঁর মাঝে এবং তাঁর কিবলার স্থান সিরিয়ার মাঝে থাকত কা’বাগৃহ। সেদিন রাসূলুল্লাহ (সা) নামাযের জন্যে দাঁড়ালেন। কুরায়শের লোকেরা সেদিন সকালে ক’বাগৃহে এসে নিজ নিজ স্থানে আসন গ্ৰহণ করে। আবু জাহলের কার্যকলাপ দেখার জন্যে তারা অপেক্ষা করছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সা) সিজদায় গেলেন। আবু জাহল তখনই পাথরটি তুলে নিয়ে তাঁর প্রতি অগ্রসর হয়। সে তাঁর খুব কাছাকাছি পৌছে যায়। এরপর হঠাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এবং চেহারার ফ্যাকাশে রং নিয়ে সে পেছনে সরে আসে। পাথরের উপর তার হাত দুটো নিস্তেজ হয়ে যায় এবং হাত থেকে পাথর পড়ে যায়। তার এ শোচনীয় অবস্থা দেখে কুরায়শের লোকজন তার নিকট ছুটে আসে। তারা বললো, হে আবুল হাকাম! আপনার কী হয়েছে? সে বলল, গতরাতে আমি তোমাদেরকে যা বলেছিলাম তা কার্যকর করার জন্যে আমি তার প্রতি অগ্রসর হয়েছিলাম। আমি তার কাছাকাছি পৌঁছতেই তার পেছনে আমার সম্মুখে দেখতে পাই এক বিশাল উট, ওই উটের মাথা, ঘাড় ও দাঁত এত বিশাল ও ভয়ংকর যে, কোন উটের মধ্যে আমি তেমনটি দেখিনি। ওই উটি আমাকে খেয়ে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল।

ইবন ইসহাক বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন :

ذلك جبريل ولو دنا منهٔ لاخذه–ওই উট মূলত জিবরাঈল (আ) ছিলেন। আবু জাহল যদি ওটির কাছে যেত, তবে নিশ্চয়ই সেটি তাকে আক্রমণ করত।

বায়হাকী (র) বলেন, আবু আবদুল্লাহ হাফিয…… আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মসজিদে ছিলাম। সেখানে অভিশপ্ত আবু জাহল এল। সে বলল, আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করে বলছি, আমি যদি মুহাম্মদকে সিজদারত দেখি, তবে আমি তার ঘাড় পদদলিত করে দিব। এ কথা শুনে আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট গেলাম এবং আবু জাহলের উক্তি সম্পর্কে তাঁকে অবগত করলাম। এদিকে আবু জাহল ক্রুদ্ধ অবস্থায়

মসজিদের দিকে যাত্রা করে। দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রাচীরের সাথে জোরে ঠোকর খায়। আমি মনে মনে বললাম, আজ বরাতে দুৰ্গতি আছে। আমি জামা-কাপড় পরে তার পেছন পেছন যাত্রা করি। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা) মসজিদে প্রবেশ করেন এবং এ, .L 1। معر سمت به مصر الذى خلق خلق الانسان من علقر

পাঠ করতে থাকেন। পাঠ করতে করতে তিনি যখন আবু জাহল সম্পর্কিত আয়াত :

کلاً ان الانسان لیطفی آن راه استغنا

মানুষ তো সীমালংঘন করেই থাকে। কারণ, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে (৯৬ : ৬-৭)। পর্যন্ত পৌঁছিলেন, তখন এক ব্যক্তি আবু জাহলকে সম্বোধন করে বলল, হে আবুল হাকাম, এ তো মুহাম্মাদ, যে এমন কথা বলছে। আবু জাহল বলল, আমি যা দেখছি তা কি তোমরা দেখছি না? আল্লাহর কসম, আমার সম্মুখে তো আদিগন্ত প্রাচীর সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) এ সূরা শেষ করে সিজদা করলেন।

ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবদুর রাযযাক……. ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বলেছেন, আবু জাহল বলেছিল, আমি যদি মুহাম্মাদ (সা)-কে কাবার নিকট নামায আদায় করতে দেখি, তবে আমি তার ঘাড় পায়ে চেপে দলিত-মথিত করে দেব। এ কথা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কানে গেল। তিনি বললেন, সে যদি তা করে, তবে ফেরেশতাগণ প্রকাশ্যে তাকে পাকড়াও করবেন। এ হাদীছ ইমাম বুখারী ইয়াহইয়া থেকে এবং তিনি আবদুর রাযযাক থেকে বর্ণনা করেছেন।

দাউদ ইবন আবু হিন্দ…….. ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সা) নামায আদায় করছিলেন। আবু জাহল সে পথে যাচ্ছিল। সে বলল, হে মুহাম্মদ! আমি কি তোমাকে নামায আদায়ে নিষেধ করিনি? তুমি তো জান এই মক্কা ভূমিতে আমার চেয়ে অধিক জনবল সম্পন্ন আর কেউ নেই। এ প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাকে ধমক দিলেন। তখন জিবরাঈল নিম্নলিখিত আয়াত নিয়ে আসলেন; “সে তার সঙ্গী-সাখীদেরকে ডাকুক, আমরা ডাকব আযাবের ফেরেশতাগণকে” (৯৬ : ১৭-১৮)। আল্লাহর কসম, সে যদি তার সঙ্গী-সাখীদেরকে ডাকত, তবে আযাব প্রদানে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ তাকে অবশ্যই পাকড়াও করতেন। ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিয়ী এ হাদীছখানা রিওয়ায়াত করেছেন। হাদীছটি সহীহ ও বিশুদ্ধ বলে ইমাম নাসাঈ মন্তব্য করেছেন।

ইমাম আহমদও অনুরূপ মর্মের হাদীছ বৰ্ণনা করেছেন।

ইবন জারীর বলেন, ইবন হুমায়দ. ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আবু জাহুল বলেছিল, মুহাম্মাদ যদি পুনরায় “মাকামে ইবরাহীম”-এর নিকট নামায আদায় করে, তবে আমি অবশ্যই তাকে খুন করে ফেলব। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল

পর্যন্ত (৯৬ : ১-১৮) এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) নামায আদায় করতে গেলেন। আবু জাহল তার কোন ক্ষতিই করতে পারছিল না দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, আপনাকে বাধা দিচ্ছে

কিসে? সে বলল, বিরাট সৈন্য সমাবেশের কারণে আমার আর মুহাম্মাদের মাঝে কালো প্রাচীর তৈরী হয়ে গিয়েছে। হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আল্লাহর কসম, সে যদি নড়াচড়া করত।

এবং সম্মুখে অগ্রসর হত, তবে ফেরেশতাগণ তাকে পাকড়াও করতেন। লোকজন তা প্রকাশ্যে দেখতে পেত।

ইবন জারীর (র) বলেন, ইবন আবদুল আলা…… আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবু জাহল বলেছিল, মুহাম্মাদ কি তোমাদের সম্মুখে মাটিতে কপাল ঘষে? ওরা বলল, হ্যা তাই তো। তখন আবু জাহল বলল, লাত ও উষযার কসম, আমি যদি তাকে এ ভাবে নামায আদায় করতে দেখি, তবে তার ঘাড় পায়ে মাড়িয়ে দিব এবং মুখে মাটি মেখে দিব। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) নামায আদায় করছিলেন এমন সময় সে তার নিকট এল তার ঘাড় পদদলিত করার জন্যে। কিন্তু লোকজন আশ্চর্য হয়ে দেখতে লাগল যে, সে পেছনের দিকে সরে আসছে এবং দু’হাতে যেন নিজেকে রক্ষা করছে। লোকজন তাকে বলল, ব্যাপার কি? সে বলল, আমি দেখলাম, আমার এবং তার মাঝে আগুনের একটি গহবর এবং দেখলাম ভয়ংকর বস্তু ও কতগুলো ডানা বিশিষ্ট জীব। এ প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যদি সে আমার নিকটে ঘোষতো, তবে ফেরেশতাগণ তার এক একটি করে অঙ্গ ছোঁ। মেরে নিয়ে যেত। এ

ংগে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন :

সূরার শেষ পর্যন্ত। অর্থাৎ বস্তৃত, মানুষ তো সীমালংঘন করেই থাকে। কারণ, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। আপনার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত। আপনি কি তাকে দেখেছেন যে বাধা দেয় এক বান্দাকে যখন সে নামায আদায় করে? আপনি লক্ষ্য করেছেন কি যদি সে সৎপথে থাকে অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়! আপনি লক্ষ্য করেছেন কি, যদি সে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন? সাবধান, সে যদি বিরত না হয়, তবে আমি তাকে অবশ্যই হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাব মস্তকের সম্মুখ ভাগের কেশগুচ্ছ ধরে। মিথ্যাচারী পাপিষ্ঠের কেশগুচ্ছ। অতএব সে তার পার্শ্বচরদেরকে আহবান করুক, আমিও আহবান করব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে। সাবধান!! আপনি ওর অনুসরণ করবেন না। আপনি সিজদা করুন ও আমার নিকটবতী হোন (৯৬ : ১৫-১৮)।

এ হাদীছটি ইমাম আহমদ, মুসলিম, নাসাঈ, ইবন আবী হাতিম এবং বায়হাকী (র) প্রমুখ মু’তামির ইবন সুলায়মান তায়মী। উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ (র) বলেন, ওয়াহাব ইবন জারীর…… আবদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন মাত্র একটি দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে কুরায়শদের বিরুদ্ধে বন্দ দুআ করতে দেখিনি। যে দিন বদদুআ করেছিলেন, সেদিনের ঘটনা এই তিনি নামায আদায় করছিলেন। পাশে বসা ছিল কুরায়শের কতক লোক। নিকটে ছিল উটের নাড়িভুড়ি। তারা বলল, ওই নাড়িতুড়ি নিয়ে মুহাম্মদ (সা)-এর পিঠে চাপিয়ে আসতে পারবে কে? উকবা ইবন আবী মুআয়ত বলল, আমি পারব। এরপর ওই নাড়িতুড়ি নিয়ে সে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পিঠে ফেলে আসে। নাড়িতুড়ির চাপে তিনি সিজদা থেকে উটতে পারছিলেন না, বরং

সিজদাতেই থেকে গেলেন। অবশেষে হযরত ফাতিমা (রা) এসে সেটি তাঁর পিট থেকে সরিয়ে ফেললেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) এ বলে তাদের বিরুদ্ধে বদ-দুআ করলেন : হে আল্লাহ! কুরায়শের নেতৃস্থানীয় এই লোকগুলোকে আপনি শান্তি দিন হে আল্লাহ! উতবা ইবন রাবী আকে শাস্তি দিন, হে আল্লাহ শায়বা ইবন রাবী আকে শাস্তি দিন! হে আল্লাহ! আবু জাহল ইবন হিশামকে শাস্তি দিন। হে আল্লাহ উকবা ইবন আবী মুআইতাকে শাস্তি দিন! হে আল্লাহ উবাই ইবন খালফকে শাস্তি দিন! বৰ্ণনাকারী শু’বা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) উবাই ইবন খালফের জন্যে বদ-দুআ করেছেন, নাকি উমাইয়া ইবন খালফের কথা বলেছেন। এ ব্যাপার রাবীর সন্দেহ আছে। আবদুল্লাহ বলেন, আমি বদরের যুদ্ধে দেখেছি যে, ওরা সবাই সে দিন নিহত হয়েছে। এরপর উবাই ইবন খালফ মতান্তরে উমাইয়া ইবন খালফ ব্যতীত অন্য সবাইকে টেনে নিয়ে কুয়োর মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল। উবাই ইবন খালফ মোটাসোটা লোক ছিল। তাই তাকে কেটে কেটে খণ্ড খণ্ড করা হয়। ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থের একাধিক স্থানে এবং ইমাম মুসলিম (র) তাঁর কিতাবে একাধিক স্থানে ইবন ইসহাক থেকে উক্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন। বর্ণনায় উমাইয়া ইবন খালফ হওয়াটাই বিশুদ্ধ। কারণ, বদর দিবসে সে-ই নিহত হয়েছিল। তার ভাই উবাই ইবন খালফ নিহত হয়েছে উহুদ দিবসে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ অবিলম্বে আসবে। সহীহ গ্রন্থে বর্ণিত কোন কোন হাদীছের বিষয়বস্তু এই যে, তারা যখন এ অপকর্ম করল, তখন তারা হাসতে হাসতে একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়ছিল।

উক্ত বৰ্ণনায় আরও এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উপর থেকে নাড়িজুড়ি ফেলে দিয়ে হযরত ফাতিমা (রা) ওদের নিকট গেলেন এবং তিনি তাদেরকে গালমন্দ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) নামায শেষ করে দু’হাত তুলে তাদের বিরুদ্ধে বদ-দুআ করলেন। তা’ দেখে তাদের হাসি থেমে যায় এবং তার বদ-দু’আর প্রেক্ষিতে তারা শংকিত হয়ে পড়ে। তিনি সামগ্রিক ভাবে দলের সবার জন্যে এবং নির্দিষ্টভাবে সাত জনের নাম উল্লেখ করে বদ-দু’আ করেছিলেন। অধিকাংশ বর্ণনায়, ওই সাত জনের মধ্যে ছয় জনের নাম পাওয়া যায়। তারা হল, উতবা ইবন রাবীআ,

এবং উমাইয়া ইবন খালফা। ইবন ইসহাক বলেন, সপ্তম ব্যক্তির নাম আমি ভুলে গিয়েছি। আমি বলি, ওই সপ্তম ব্যক্তি হল। আম্মারা ইবন ওয়ালীদ, সহীহ বুখারীতে তার নাম উল্লিখিত হয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *