1 of 2

০৪. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে?

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে?

হযরত জিবরাঈল (আঃ) প্রথমবার কোন অবস্থায় এসেছিলেন তা ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয়বার কেমন অবস্থায় এসেছিলেন তাও আলোচনা করা হয়েছে। মালিক (র) হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হারিছ ইবন হিশাম, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নিকট ওহী আসে কেমন করে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, কখনো আসে। ঘন্টাধ্বনির ন্যায়। এটি আমার জন্যে খুবই কষ্টকর হয়। এরপর ওই পরিস্থিতি কেটে যায়। আর যা নাযিল হল আমি তা সংরক্ষণ করি। কখনো কখনো ওই ফেরেশতা

আমার নিকট আসেন মানুষের রূপ ধরে। তিনি সরাসরি আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন, আমি তা সংরক্ষণ করি। হযরত আইশা (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে দেখেছি যখন তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হত প্রচণ্ড ঠাণ্ডার দিনেও ওহী নাযিল হওয়ার পর তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত। বর্ণনাটি বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর। ইমাম আহমদ (র) আমির ইবন সালিহ সূত্রে অনুরূপ উদ্ধৃত করেছেন। অনুরূপ আবদা ইবন সুলায়মান এবং আনাস ইবন ইয়ায এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

আইয়ুব সুখতিয়ানী হারিছ ইবন হিশাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আপনার নিকট কীভাবে ওহী আসে? এরপর তিনি পূর্বোক্ত হাদীছের ন্যায়ই বর্ণনা করেছেন। তবে ওই সনদে হযরত আইশ (রা)-এর নাম উল্লেখ নেই।

হযরত আইশা (রা)-এর প্রতি অপবাদ সংক্রান্ত হাদীছে রয়েছে যে, তিনি বলেছিলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) ওই ঘর থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করেননি। আর অন্য কেউও বের হয়নি। এমতাবস্থায় তার প্রতি ওহী নাযিল হতে শুরু করে। ওহী নাযিলকালীন অবস্থার মত তখন তার চোখ-মুখ কঠিন ও স্থির হয়ে উঠে। এরপর তাঁর মুখমণ্ডল থেকে মুক্তাবিন্দুর ন্যায় ঘাম ঝরে পড়তে থাকে। তখন ছিল শীতকাল। ওহী নাযিলের গুরুভারের কারণে এমনটি হয়েছিল।

ইমাম আহমদ— উমর ইবন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত, তখন তার মুখমণ্ডলের নিকট মৌমাছির গুঞ্জরনের ন্যায় গুঞ্জন শোনা যেত।। ৬১%-%2, 11–1 ,, আয়াতের শানে নুযুল বর্ণনা প্রসংগে এ হাদীছ বিস্তারিত ভাবে উল্লিখিত হয়েছে। ইমাম তিরমিয়ী ও নাসাঈ (র) হাদীছটি আবদুর রাযযাক সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এরপর ইমাম নাসাঈ মন্তব্য করেছেন যে, বর্ণনাটি অগ্রহণযোগ্য। ইউনুস ইবন সুলায়ম ব্যতীত অন্য কেউ এটি বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। আর তিনি একজন। অজ্ঞাত পরিচয় রাবী।

সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থে আছে যে, হাসান উবাদাহ ইবন সামিত (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত, তখন তা তাঁর নিকট অত্যন্ত কষ্টকর হত এবং তার মুখমণ্ডল ঘর্মাক্তি হয়ে যেত। এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি তখন দু’চোখ বন্ধ করে রাখতেন। তাঁর এ অবস্থার সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে যায়দ ইবন ছাবিত (রা) থেকে বর্ণিত যে, ৩, … LA ৷ এও৭.১ ৬. … …..। ৬-৭ আয়াত নাযিল হওয়ার পর ইবন উম্মে মাকতুম তাঁর অন্ধত্বের বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট ব্যক্ত করলেন। এ প্রেক্ষিতে ৩.৯।| 1,,, (অর্থাৎ যাদের কোন ওযর নেই) আয়াতাংশ (৪ : ৯৫) নাযিল হয়। যায়দ ইবন ছবিত (রা) বলেন যে, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উরু মুবারক আমার জানুর উপর ছিল। আমি তখন ওহী লিখছিলাম। ওহী যখন নাযিল হচ্ছিল, তখন তার উরুর চাপে আমার উরু, যেতলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

সহীহ মুসলিমে হিশাম ইবন ইয়াহিয়া ইয়ালা ইবন উমাইয়া সূত্রে বর্ণনা করেন তিনি

বলেছেন, হযরত উমর (রা) আমাকে বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ওহী নাযিল হওয়ার সময় তাঁর অবস্থা দেখার কােন আগ্রহ তোমার আছে কি? একথা বলে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর

খমণ্ডলের পর্দা ফাক করে দিলেন। তখন তার প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল। তার মুখমণ্ডল ছিল Iাল টকটকে। তখন তিনি গোঙাচ্ছিলেন। এ ঘটনা ঘটেছিল জিইররানা নামক স্থানে।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। পর্দার আয়াত নাযিল ওয়ার অব্যবহিত পূর্বে একরাতে হযরত সাওদা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে গয়েছিলেন। তাকে দেখে হযরত উমর (রা) বললেন, হে সাওদা! আমি আপনাকে চিনে ফলেছি। হযরত সাওদা ঘরে পৌছে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট অনুযোগ করলেন। {াসূলুল্লাহ (সা) তখন বসে বসে রাতের খাবার গ্রহণ করছিলেন। তার হাতে ছিল একটি হাড়। তখনি আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি ওহী নাযিল করলেন। ওই হাড় তখনও তার হাতে ছিল।

এরপর তিনি মাথা তুলে বললেন, “প্রয়োজন সমাধা করার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে।” এতে প্রমাণিত হয় যে, ওহী নাযিল হওয়ার সময় তার অনুভূতি নম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হত না। কারণ, হাদীছে রয়েছে যে, তিনি বসা ছিলেন এবং তার হাত থেকে হাড়টি পড়ে যায়নি।

আবু দাউদ তায়ালিসী বলেন, আব্বাদ ইবন মানসূর। হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ওহী নাযিল হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দেহ মুবারক ও মুখমণ্ডল ঘৰ্মাক্ত হয়ে যেত। তিনি তখন সাহাবীদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকতেন। তাদের কেউ তখন তাঁর সাথে কথাবার্তা বলতেন না। মুসনাদে আহমদ প্রভৃতি গন্থে ইবন লাহইয়া আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওহী নাযিল হওয়ার বিষয়টি কি আপনি অনুভব করতে পারেন? তিনি বললেন, হ্যা, আমি তখন ঘণ্টাধ্বনির ন্যায় আওয়াজ শুনতে পাই আর তখন আমি স্থির হয়ে থাকি। যখন আমার প্রতি ওহী নাযিল হতে থাকে, তখন আমার আশংকা হয় যে, এর কারণে আমার প্রাণ বেরিয়ে যাবে।

আবু ইয়ালা মুসিলী বলেন, ইবরাহীম ইবন হাজ্জাজ আলইয়াস ইবন আসিম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ছিলাম। তখন তার প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল। তার প্রতি যখন ওহী নাযিল হত, তখন তাঁর দৃষ্টি স্থির হয়ে যেত, চক্ষুদ্বয় থাকত খোলা। তাঁর শ্রবণেন্দ্ৰিয় ও অন্তর আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নাযিল হচ্ছে তা সংরক্ষণের জন্যে

প্ৰস্তৃত থাকত।

আবু নুআয়ম হযরত আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত, তখন তার মাথা ধরে যেত এবং তিনি মেহদী দ্বারা মাথায় প্ৰলেপ দিতেন। হাদী ছটি অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের।

ইমাম আহমদ বলেন, আবু নাসির আসমা বিনত ইয়ামীদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিনের ঘটনা। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর “আযবা” নামক উস্ত্রীর লাগাম ধরে দাড়িয়ে ছিলাম। তখন সূরা মায়িদা পুরোটাই তাঁর প্রতি নাযিল হল। ওহীর ভরে উক্টর পার্শ্বদেশ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ হাদীছটি আবু নুআয়মও বৰ্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ হাসান আবদুল্লাহ ইবন আমরা সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সওয়ারীর পৃষ্ঠে ছিলেন এ অবস্থায় সূরা মায়িদা নাযিল হতে থাকে। সওয়ারী ওহীর ভার সইতে অক্ষম হয়ে পড়ে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) সেটি থেকে নেমে পড়েন।

ইবন মারদারিয়্যাহ উন্মে আমরের চাচা সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে সফরে ছিলেন। তখন তাঁর প্রতি সূরা মায়িদা নাযিল হয়। ওহীর ভারে সংশ্লিষ্ট সওয়ারীর ঘাড় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ সনদে হাদীছটি গরীব পর্যায়ের।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, হুদায়বিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি সূরা ফাত্হ নাযিল হয়। তখনও তিনি সওয়ারীর পিঠে ছিলেন। অবস্থা ভেদে সেটি একবার এদিক, একবার ওদিক নড়াচড়া করছিল।

সহীহ বুখারীর ভাষ্য গ্রন্থের প্রথম দিকে আমরা ওহীর প্রকারভেদ আলোচনা করেছি। হালীমী প্রমুখ ইমামগণ যা মন্তব্য করেছেন তাও আমরা সেখানে উল্লেখ করেছি।

পরিচ্ছেদ আল্লাহ তা’আলা বলেন, :

لاثحرکت به لسانالت لتغجل به ان علینا جمعهٔ وقترانهٔ فاذا قرأناه فاتبع

قرانهٔ ثم ان علینا بیانهٔ“তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্যে আপনি আপনার জিহবা সেটির সাথে সঞ্চালন করবেন। না। এটি সংরক্ষণ ও পাঠ করানাের দায়িত্ব আমারই। সুতরাং আমি যখন সেটি পাঠ করি আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর সেটির বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই” (৭৫ :। (هالا-مالا

মহান আল্লাহ আরো বলেন :

“আপনার প্রতি আল্লাহর ওহী সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কুরআন পাঠে আপনি ত্রা করবেন না। এবং বলুন হে আমার প্রতিপালক!” আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন (২০ : ১১৪)। ওহী নাযিলের সূচনাকালে পরিস্থিতি এরূপ ছিল। আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) ওহী নিয়ে আসলে ফেরেশতা থেকে তা গ্রহণ করার প্রচণ্ড আগ্রহ হেতু রাসূলুল্লাহ্ (সা) হযরত জিবরাঈলের তিলাওয়াতের সাথে সাথে তিলাওয়াত করতেন।

এরপর আল্লাহ তা’আলা তাকে এ নির্দেশ দিলেন যে, ওহী নাযিল শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি যেন চুপ থাকেন। ওই ওহী রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বক্ষে সংরক্ষণ করা, সেটির তিলাওয়াত ও তাবলীগ সহজ করে দেয়া, সেটির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং সেটির মর্ম অনুধাবন করিয়ে দেয়ার

Գ

যিম্মাদারী মহান আল্লাহ নিজেই নিয়ে নিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তা’আলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন :

ت

তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্যে সেটির সাথে আপনি জিহবা সঞ্চালন করবেন না। সেটির সংরক্ষণ করা অর্থাৎ আপনার বক্ষে স্থায়ী রাখা * এ’ম, এবং সেটি পাঠ করানাে অর্থাৎ আপনাকে তা পাঠ করানাের দায়িত্ব আমারই। ১L41, 14 অতএব আমি যখন তা পাঠ করি অর্থাৎ ফেরেশতা যখন তা আপনার নিকট পাঠ করেন, ঋ, এ, এL; তখন আপনি তার পাঠের অনুসরণ করুন। অর্থাৎ আপনি তা মনোযোগ সহকারে শুনুন ও তার প্রতি মনোনিবেশ করুন। رب زدنی علما ifbهٔ i۹۶۹ if f۹۹||۲۹||۹||۹|| If Rs SITNIRی ثم ان علیا بیانهٔ এর অনুরূপ মর্ম-জ্ঞাপক। مسج

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, মূসা ইবন আবী আইশ হযরত ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করো। তিনি বলেন, কুরআন নাযিল হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ্ (সা) তা আয়ত্ত করতে অত্যন্ত যত্মবান হতেন। তখন তিনি তার ওষ্ঠ্যদ্বয় সঞ্চালন করতেন। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন :

لأتحرك به لسانات التغجل به ان علینا جمعهٔ و قرآنهٔ এর ব্যাখ্যায় ইবন আব্বাস বলেছেন যে, ওই কুরআন আপনার বক্ষে সংরক্ষিত রাখা এবং তারপর আপনাকে দিয়ে তা পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই।

فاذ اقر آناه فاتبع قرانهٔ অর্থাৎ আমি যখন পাঠ করি, তখন আপনি মনোযোগ সহকারে তা শুনবেন এবং চুপ থাকবেন।

W ثم ان علینا بیانهٔ এরপর সেটির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দায়িত্ব আমারই। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সা) জিবরাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে আসলে নত মস্তকে চুপ করে থাকতেন। জিবরাঈল (আ) চলে গেলে তিনি নাযিলকৃত ওহী পাঠ করতেন। যেমনটি মহান আল্লাহ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পরিচ্ছেদ

ইবন ইসহাক বলেন, এরপর থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি নিয়মিত ওহী নাযিল হতে থাকে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা আসত তা পুরোপুরি এবং যথাযথ ভাবেই তিনি প্রত্যায়ন ও সর্বন্তঃকরণে বরণ করতেন। সাধারণ মানুষ তাতে সন্তুষ্ট কি অসন্তুষ্ট তিনি তার তোয়াক্কা মাত্র না। করে তা সহ্য করে গেছেন। নবুওয়াতী দায়িত্ব পালন উপলক্ষে তিনি অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন। প্রচণ্ড শক্তিমান ও সুদৃঢ় রাসূলগণ ব্যতীত অন্য কেউ তা সহ্য করতে পারে না।

আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে আনীত বিষয় প্রচার করতে গিয়ে ওই নবী-রাসূলগণ জনসাধারণের পক্ষ থেকে যে অগ্ৰীতিকর আচরণের সম্মুখীন হন এবং ওরা তাদের উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চালায় তার মুকাবিলায় মহান আল্লাহর সাহায্য ও দয়ায় তারা দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন। এ ভাবেই আপনি সম্প্রদায়ের বিরোধিতা ও নির্যাতনের মুখে রাসূলুল্লাহ্ (সা) নিয়মিতভাবে আল্লাহর নির্দেশ পালন করে গিয়েছেন।

ইবন ইসহাক বলেন, হযরত খাদীজা বিনত খুওয়ায়ালিদ ঈমান আনয়ন করলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বিষয় সত্য বলে গ্রহণ করলেন এবং স্বীয় দায়িত্ব পালনে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সাহায্য করেন। তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা এসেছে তা সত্য বলে গ্রহণ করেছেন। তার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দুঃখ-কষ্ট লাঘব করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকৃতি ইত্যাকার যত দুঃখজনক আচরণের মুখোমুখি হয়ে শোকে-দুঃখে জর্জরিত হয়ে যখন হযরত খাদীজা (রা)-এর নিকট ফিরে আসতেন, তখন হযরত খাদীজার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা তার সকল দুঃখের উপশম ঘটাতেন।

হযরত খাদীজা (রা) তাকে অটল থাকতে বলতেন। তিনি তার গুরুদায়িত্ব পালন সহজ করে তুলতেন। সকল কাজে তাঁর সত্যায়ন করতেন এবং শক্ৰদের শত্রুতামূলক আচরণকে সহনীয় করে তুলতেন। আল্লাহ হযরত খাদীজার প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাকে সন্তুষ্ট করুন।

ইবন ইসহাক বলেন, হিশাম ইবন উরওয়া তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি আবদুল্লাহ ইবন জাফর থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন খাদীজাকে জান্নাতে মুক্তার তৈরি একটি ঘরের সুসংবাদ দিই— যেখানে না আছে কোন কোলাহল, আর না আছে কোন দুঃখ-কষ্ট। এ হাদীছ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হিশাম (র) থেকে উদ্ধৃত আছে।।

ইবন ইসহাক বলেন, আল্লাহ তা’আলা প্রিয়নবী (সা)-কে নবুওয়াত প্রদানের মাধ্যমে তার প্রতি এবং সকল বান্দার প্রতি যে নিআমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করেছেন প্রিয়নবী (সা) তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠজনকে একান্তে সেগুলো জানাতেন।

মূসা ইবন উকবা যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত খাদীজা (রা) সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছেন এবং রাসূলকে সত্য বলে গ্রহণ করেছেন। নামায ফরয হওয়ার পূর্বেই তিনি ঈমান আনেন।

উক্ত বর্ণনার ব্যাখ্যায় আমি বলি যে, এখানে মি’রাজের রাতে পাঁচ ওয়াকত নামায ফরয হওয়ার পূর্বের কথা বলা হয়েছে। নতুবা মূলত নামায ফরয হয়েছে। হযরত খাদীজা (রা)-এর জীবদ্দশায়। এ বিষয়ে আমরা একটু পরে আলোচনা করব।

ইবন ইসহাক বলেন, হযরত খাদীজা (রা)-ই প্রথম লোক, যিনি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) যা এনেছেন, তা সত্য বলে গ্রহণ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উপর নামায ফরয হওয়ার পরের একদিনের ঘটনা। হযরত জিবরাঈল (আ) এলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট। নিজের পায়ের গোড়ালি দ্বারা তিনি মাঠের এক প্রান্তে

মাটিতে আঘাত করলেন। তার ফলে যম যম কুপের সাথে সংযোগ সম্পন্ন একটি ঝর্ণার সৃষ্টি হয়। হযরত জিবরাঈল (আ.) ও প্রিয়নবী (সা) দু’জনে ওই পানিতে উযু করেন। তারপর জিবরাঈল (আ) চার সিজদায় দুরাকাআত নামায আদায় করেন। তার নয়ন জুড়ালো ও হৃদয় প্রশান্ত হলো। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (সা) আপন ঘরে ফিরে এলেন। আল্লাহর নিকট থেকে তাই এলো যা তিনি পসন্দ করতেন। ঘরে ফিরে গিয়ে তিনি হযরত খাদীজার হাত ধরে তাকে নিয়ে ওই ঝর্ণাধারার নিকট আসলেন। তারপর জিবরাঈল (আ.) যেমনটি উযু করেছিলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-ও তেমনটি উযু করলেন। তারপর চার সিজদাসহ দুরাকাআত নামায আদায় করলেন। এরপর থেকে তারা দু’জনে গোপনে নিয়মিত নামায আদায় করতেন।

আমি বলি, হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর এই নামায তাঁর বায়তুল্লাহ শরীফের সম্মুখে দু’বার আদায় করা নামায থেকে পৃথক একটি নামায। বায়তুল্লাহ্ শরীফের সম্মুখে দু’বার আদায়কৃত নামাযে তিনি পাঁচ ওয়াকত নামায্যের প্রথম ও শেষ ওয়াকত সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন এবং ওই শিক্ষামূলক নামায ছিল মি’রাজ রাতে পাঁচ ওয়াকত নামায ফরয হওয়ার পরের ঘটনা। এ বিষয়ে আলোচনা পরবতীতে আসবে ইনশাআল্লাহ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *