২৬. যায়দ ইব্‌নে আমর ইব্‌ন নুফায়ল (রা)

যায়দ ইব্‌নে আমর ইব্‌ন নুফায়ল (রা)

ইব্‌নে রিযাহ ইব্‌ন আব্দী ইব্‌ন কাব ইব্‌নে লুওয়াই আল-কুরাশী আল- আন্দাবী। উমর (রা)-এর পিতা খাত্তাব ছিল তার চাচা ও বৈপেক্রিয় ভাই। কারণ পিতার মৃত্যুর পর আমর ইব্‌নে

ভাই খাত্তাবের জন্ম হয়েছিল। যুবোয়র ইব্‌ন বাক্কার ও মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক এরূপ বলেছেন :

যায়দ ইব্‌নে আমরা শুরু জীবনেই মূর্তিপূজা ত্যাগ ও পৌত্তলিক ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। এক আল্লাহর নাম নিয়ে যবাহ করা পশু ব্যতীত কোনো পশু তিনি খেতেন না। আসমা বিনতে আবু বকর বলেন, আমি একদিন যায়দ ইব্‌নে আমরকে কাবার দেয়ালে হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় বলতে শুনেছি যে, হে কুরাইশ গোত্র! যার হাতে যায়েদের জীবন, আমি তার শপথ করে বলছি, বর্তমানে আমি ব্যতীত তোমাদের আর কেউ ইবরাহীমের দীনের উপর বহাল নেই। অতঃপর তিনি বলেন, হে আল্লাহ। তোমাকে পাওয়ার এর চেয়ে উত্তম পন্থা আছে বলে যদি আমি জানতাম, তবে তা-ই করতাম। কিন্তু অন্য কোনো পন্থা আমার জানা নেই। এরূপ বলে তিনি বাহনের উপরই সিজদায় চলে যেতেন। অন্য বর্ণনায় আছে যে, তিনি কাবার দিকে মুখ করে নামায পড়তেন এবং বলতেন, ইবরাহীমের যিনি ইলাহ, তিনিই আমার ইলাহ। ইবরাহীমের দীন যা, আমার দীনও তা- ই। জীবন্ত কবর দেয়া মেয়েদের তিনি তাদের জীবন বঁাচাতেন। কেউ নিজের কন্যা সন্তানকে হত্যা করতে চাইলে তিনি বলতেন, খুন না করে একে তুমি আমার কাছে দিয়ে দাও। আমি একে লালন-পালন করব। বড় হলে ইচ্ছা করলে তুমি একে নিয়েও নিতে পারবে। আবার আমার কাছেই রেখেও দিতে পারবে। নাসাঈ এ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন।

লাইছ হিশাম ইব্‌নে উরওয়া সূত্রে এবং ইউনুস ইব্‌নে বুকোয়র মুহাম্মদ ইব্‌নে ইসহাক সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, কুরাইশের তাওহীদবাদী বেশ কয়েকজন ছিলেন তারা হচ্ছেন : যায়দ ইব্‌নে আমর ইব্‌ন নুফায়ল, ওয়ারাক ইব্‌নে নওফল ইব্‌নে আসাদ ইব্‌নে আব্দুল ওযয উছমান ইব্‌ন হুয়ায়রিছ। ইব্‌নে আসাদ ইব্‌ন আব্দুল ওযযা ও আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জাহাশ, আব্দুল মুত্তালিবের কন্যা উমাইয়া ছিলেন তার মা। উন্মুল মুমিনীন যায়নাব বিনতে জাহশ হলেন তার বোন।

একদা মক্কার কুরাইশরা তাদের একটি প্রতিমার নিকট সমবেত হয়। যে কোন উৎসবে তারা ঐ প্রতিমার কাছে পশু বলি দিত। এক পর্যায়ে তাদের কেউ কেউ বলাবলি করতে শুরু করে যে, তোমরা পরস্পর সত্য কথা বলবে। মনের কথা গোপন রাখবে না। একজন বলল, তোমরা তো অবশ্যই জান যে, তোমাদের জাতি সত্য পথে নেই। সরল-সঠিক দীনে ইবরাহীম ভুলে গিয়ে এখন তারা প্রতিমা পূজা করছে। মূর্তিপূজা করার কী যুক্তি আছে? ওরা তো করে। উপকার-অপকার কিছুই করতে পারে না। অতএব, তোমরা সঠিক পথের সন্ধান কর। ফলে তারা সঠিক পথের সন্ধানে বের হলো। ইহুদী, নাসারা এবং অন্যান্য ধর্মের পণ্ডিতদের শরণাপন্ন হলো। সেকালে ইব্রাহীমী দীন হানীফিয়া। ওয়ারােকা ইব্‌ন নওফল মনে-প্ৰাণে খৃষ্টান হয়ে যান এবং প্রধান খৃষ্টানদের নিকট থেকে ধমীয় গ্রন্থ সংগ্রহ করে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন।

এঁদের মধ্যে যিনি হানীফিয়তের নীতিতে অটল থাকলেন, তিনি হলেন যায়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফায়ল। প্রতিমা পূজা ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্ম সবকিছু হতে তিনি নিজেকে মুক্ত রেখে দীনে ইবরাহীমের উপর অটল থাকেন এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করলেন। নিজ সম্প্রদায়ের যাবাই করা পশুও তিনি আহার করতেন না। এ কারণে সমাজের মানুষ তাকে একঘরে করে রেখেছিল।

বর্ণনাকারী বলেন, খাত্তাব যায়দ ইব্‌ন আমর-এৰ উপর সীমাহীন নির্যাতন চালায়। খাত্তাবের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে তিনি লোকালয় ত্যাগ করে মক্কার উচু অঞ্চলের দিকে চলে যান। খাত্তাব এলাকার বখাটে যুবকদেরকে তার পেছনে লেলিয়ে দেয় এবং বলে দেয়, ও যেন এলাকায় আর ঢুকতে না পারে। ফলে তিনি একান্ত গোপনে ব্যতীত এলাকায় ঢুকতেন না। একদিন অতি গোপনে এলাকায় প্রবেশ করলে লোকেরা টের পেয়ে যায় এবং পাছে এলাকার লোকদের উপর কোন প্রভাব ফেলে বসে এই ভয়ে নির্যাতন করে তাকে এলাকা থেকে বের করে। দয়া।

মূসা ইব্‌ন উকবা বলেন, আমি বিশ্বস্ত সূত্রে শুনেছি যে, যোয়দ ইব্‌ন আমরা নুফায়াল কুরাইশদের যাবাই করা পশুর সমালোচনা করে বলতেন, বকরী আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই এদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং মাটি থেকে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। তোমরা এদেরকে কেন যবাই করে?

ইউনুস (র) ইব্‌ন ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন যে, দীনে ইবরাহীমের সন্ধানে যায়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফ্যােয়ল একদিন মক্কা থেকে বেরোতে মনস্থ করেন। তার স্ত্রী আফিয়্যা বিনতে হাযরামীর অভ্যাস ছিল যে, তার স্বামী যায়দ কোথাও যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে সে খাত্তাব ইব্‌ন নুফায়লকে তা বলে দিত। যায়দ সিরিয়া গিয়ে আহলে কিতাবদের মধ্যে দীনে ইবরাহীম সন্ধান করতে শুরু করলেন। সুসেল জাষীরা সব চষে ফিরে এবার সিরিয়ার বালকা নামক স্থানের একটি গীর্জার এমন এক যাজকের কাছে আসলেন, যিনি খৃষ্টীয় মতবাদে শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিতরূপে প্ৰসিদ্ধ ছিলেন। যায়দ তাকে দীনে ইবরাহীম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তুমি এমন একটি দীন সম্পর্কে জানতে চেয়েছ, যার সন্ধান দেওয়ার মত কাউকে তুমি পাবে না। যারা এর সন্ধান দিতে পারত, তারা সকলেই এ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। তবে একজন নবীর আগমনে আসন্ন। এটাই তাঁর যুগ। ইতিমধ্যেই যায়দ ইহুদী এবং খৃষ্ট ধর্মকে যাচাই করে অপছন্দ করেছিলেন। পাদ্রীর এসব কথা শুনে তিনি দ্রুত সেখানে থেকে বের হয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। লখিমীদের এলাকায় পৌছার পর দুৰ্বত্তরা তাঁর উপর চড়াও হয় এবং তাকে হত্যা করে।

ওয়ারাক ইব্‌ন নওফল তাঁর শোকগাথায় বলেছিলেন :

—হে ইব্‌ন আমর! তুমি সুপথ পেয়েছ ও কল্যাণ প্রাপ্ত হয়েছ। আর এক অনুপম রবের

প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও প্রতিমা পূর্জ বর্জন করার ফলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করেছ, বছরের পর বছর মাটির নীচে অবস্থান করলেও আল্লাহর রহমত মানুষের কাছে পৌছবেই।

মুহাম্মদ ইব্‌ন উসমান ইব্‌ন আবু শায়াবা বর্ণনা করেন যে, যায়েদ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফায়ল জাহিলী যুগে সত্য দীন অনুসন্ধান করে বেড়াতেন। একদা এক ইহুদীর নিকট গিয়ে বললেন, আমাকে তোমার ধর্মে দীক্ষা দান কর! ইহুদীটি বলল, আমি তোমাকে আমার ধর্মে দীক্ষিত করবো না, কেননা তাতে তুমি আল্লাহর রোষে পতিত হবে। একথা শুনে তিনি বললেন তা হলে আমি আল্লাহর রোষ থেকে পালাই। অতঃপর তিনি এক খৃষ্টানের নিকট গিয়ে বললেন, আমি চাই যে, আমাকে তুমি তোমার ধর্মে দীক্ষিত কর। খৃষ্টান বলল না, আমি তাতে রাজি নই। কেননা তাতে তুমি ভ্ৰান্তির শিকারে পরিণত হবে। জবাবে তিনি বললেন, তা হলে ভ্ৰান্তি থেকে পালাই। এবার খৃষ্টান লোকটি তাকে বলল, তবে আমি তোমাকে এমন একটি দীনের – সন্ধান দিতে পারি, তুমি তার অনুসরণ করলে হিদায়াত পেয়ে যাবে। যায়দ জিজ্ঞেস করলেন, কোন সে দীন? খৃষ্টান বলল, তাহলে ইবরাহীমের দীন। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে যায়দ বললেন, হে আল্লাহ! আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি ইবরাহীমের দীনের অনুসারী। এ নিয়ে আমার জীবন এবং এ নিয়েই আমার মরণ। বৰ্ণনাকারী বলেন, যায়দের এসব ঘটনা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন : যায়দ ইব্‌ন আমরা কিয়ামতের দিন একাই একটি উম্মতের মর্যাদা পাবে।

মুসা ইব্‌ন উকবা (র) ইব্‌ন উমর (রা) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

মুহাম্মদ ইব্‌ন সাদ (র) আব্দুর রহমান (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, যোয়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফায়াল বলেছেন, আমি ইহুদী খৃষ্টান উভয় ধর্মকে যাচাই করে দেখেছি একটিও আমার মনঃপূত হয়নি। অতঃপর সিরিয়া গিয়ে সেখানকার এক গীর্জার পাদ্রীর সঙ্গে দেখা করলাম এবং আমার সমাজ ত্যাগ করে আসা, মূর্তিপূজা, ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের প্রতি অনীহার কথা জানালাম। আমার সব বৃত্তান্ত শুনে পাদ্রী বললেন, তুমি তো দেখছি, ইবরাহীমের দীন অনুসন্ধান করছ হে মক্কার ভাই! তুমি এমন একটি দীনের সন্ধান করছি। বর্তমানে যার অনুসরণ করার মত একজন মানুষও পাওয়া যাবে না। তা হলো তোমার পিতা ইবরাহীমের দীন। তিনি সরল সঠিক পথের অনুসারী ছিলেন। ইহুদী বা খৃষ্টান ছিলেন না। তিনি নামায পড়তেন এবং তোমার শহরে অবস্থিত সেই ঘরটির প্রতি মুখ করে সিজদা করতেন। তুমি তোমার শহরে চলে যাও, ওখানেই অবস্থান কর। আল্লাহ তোমার দেশে তোমার সম্প্রদায় থেকে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি সরল সঠিক দীনে ইবরাহীম নিয়ে আত্মপ্ৰকাশ করবেন। আল্লাহর নিকট তিনি হবেন সৃষ্টির সেরা মানুষ।

ইউনুস ইব্‌ন ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যায়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফায়াল এর বংশের জনৈক ব্যক্তি বলেছেন যে, যায়দ ইব্‌ন আমরা যখনই কাবায় প্রবশ করতেন, তখন বলতেন, আমি হাজির, আমি সত্যের অনুসারী, আমি এক আল্লাহর দাসত্ত্বে বিশ্বাসী। আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেমন আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন ইবরাহীম (আ) এই স্থানে প্রার্থনা করেছিলেন। হে আল্লাহ! আমার নাক তোমার জন্য ধূলামলিন হোক, তুমি আমাকে যখন যেমন বোঝা বহন করতে বলবে, আমি তা-ই বহন করব। পুণ্যই আমি কামনা করি।

আবু দাউদ তায়ালিসী (র) সাঈদ ইব্‌ন যায়দ ইব্‌ন আমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইব্‌ন আমার এবং ওরাকা। ইব্‌ন নওফল দীনের সন্ধানে বের হন। মওসেল নামক স্থানে জনৈক পাদ্রীর সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাত হয়। পাদ্রী যায়দ ইব্‌ন আমরকে জিজ্ঞেস করল, হে উষ্ট্রারোহী! তুমি কোথা থেকে এসেছি? যায়দ বললেন, আমি ইবরাহীম (আ)-এর এলাকা থেকে এসেছি। পাদ্রী বলল, তা এখানে এসেছ কিসের সন্ধানে? যায়ীদ বললেন, এসেছি দীনের সন্ধানে। পাদ্ৰীটি বলল, তা হলে তুমি ফিরে যাও! তুমি যে দীনের সন্ধান করছ, তা তোমার অঞ্চলে আত্মপ্রকাশ করার সম্ভাবনাই বেশী। অবশেষে খৃষ্টান হতে চাইলে তিনি আমাকে বারণ করেন। তখন যায়দ Ln – {a-২ এ। বলতে বলতে ফিরে আসেন।

বর্ণনাকারী বলেন, যায়দের পুত্র সাঈদ, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজনের একজন লোক ছিলেন, তা তো আপনি দেখেছেন ও শুনেছেন। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন! রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, হ্যাঁ, করব। তিনি তো কিয়ামতের দিন একা একটি উন্মতরূপে উত্থিত হবেন।

একদিন যায়দ ইব্‌ন আমার রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন যায়দ ইব্‌ন হারিছাকে সঙ্গে নিয়ে একটি খাঞ্চিা থেকে আহার করছিলেন। যায়দ ইব্‌ন আমরকে খেতে আহবান করা হলে তিনি বললেন, ভাতিজা! আমি দেবতার নামে বলি দেওয়া পশু খাই না।১

মুহাম্মদ ইব্‌ন সাদ হিজর ইব্‌ন আবু ইহাব থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হিজর বলেন, যায়দ ইব্‌ন আমরা সিরিয়া থেকে ফিরে আসার পর একদিন আমি দেখতে পেলাম যে, তিনি সূর্যের

  • দিকে লক্ষ্য রাখছেন। আমি তখন বুওয়ানা মূর্তির কাছে দাঁড়িয়ে। সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে কিবলার দিকে মুখ করে তিনি দুসিজদায় এক রাকাত নামায আদায় করেন। তারপর বলেন : এই হলো ইবরাহীম ও ইসমাঈলের কিবলা। আমি পাথরের পূজাও করি না এবং পাথরের উদ্দেশ্যে নামাযও পড়ি না। মূর্তির নামে বলি দেওয়া পশু খাই না, লটারীর মাধ্যমে ভাগ্য নির্ণয় করি না। মরণ পর্যন্ত আমি এই ঘরের দিকে মুখ করে নামায পড়ে যাব।

১. সম্ভবত রসূলুল্লাহ (সাঃ)-যে দেবতার নামে যাবাইকৃত পশু গোশত আহার করতেন না, তা তাঁর জানা ছিল না।

যায়দ ইব্‌ন আমরা হজ করতেন এবং আরাফায় অবস্থান করতেন। তিনি তালবিয়া পড়তেন এবং তাতে বলতেন, তোমার দরবারে আমি হাজির ৷ তোমার কোনো অংশীদার নেই। নেই কোন সমকক্ষ। অতঃপর লাকবাইক বলতে বলতে পায়ে হেঁটে আরাফ থেকে ফিরে আসতেন।

ওয়াকিদী আমির ইব্‌ন রবীয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি যায়দ ইব্‌ন আমরকে বলতে শুনেছি যে আমি ইসমাঈল ও আব্দুল মুত্তালিবের বংশ থেকে আগমনকারী একজন নবীর অপেক্ষায় আছি। তবে তাকে পেয়ে আমি তার প্রতি ঈমান আনতে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাকে নবী বলে সাক্ষ্য দিতে পারব বলে মনে হয় না। যদি তুমি ততদিন পর্যন্ত বেঁচে থাক এবং তার সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হও, তাহলে তাকে আমার সালাম জানাবে। তিনি কেমন হবেন, আমি তোমাকে তা বলে দেব, যার ফলে তাকে চিনতে তোমার মোটেই বেগ থেকে হবে না। আমি বললাম, তবে তা বলুন! তিনি বললেন, তিনি না অধিক লম্বা না বেশী খাট। মাথার চুল বেশীও নয় কমও না। লালিমা তার চোখের অবিচ্ছেদ্য অংশ, দুই কাঁধের মাঝে থাকবে নবুওতের মহর। নাম হবে আহমদ। এই নগরী তার জন্মস্থান এবং এখনেই তিনি নবুওত লাভ করবেন। পরে তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে জন্মভূমি থেকে বের করে দিবে। এবং তার দীনের বিরুদ্ধাচরণ করবে। ফলে তিনি ইয়াসরিবে হিজরত করবেন। ওখানেই তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করবেন। সাবধান! তুমি যেন তাঁর ব্যাপারে প্রতারিত না হও। আমি ইবরাহীমের দীনের সন্ধানে দেশময় ঘুরে বেরিয়েছি। ইহুদী খৃষ্টান মজুসী। যাকেই এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি, প্রত্যেকেই বলেছে যে, অচিরেই এ দীন আত্মপ্ৰকাশ করবে। সেই নবী সম্পর্কে আমি তোমাকে যে বিবরণ দিলাম, তারা সকলেই আমাকে এরূপই বলেছে। তারা আরো বলেছে যে, তিনি ব্যতীত আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না।

আমির ইব্‌ন রবীয়া বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে যায়দ ইব্‌ন আমরের এসব কথা জানিয়েছি। এবং তাঁর আমানতও পৌছিয়েছি। নবী করীম (সা) তাঁর সালামের জবাব দেন এবং তার জন্য রহমতের দোয়া করেন এবং বলেন, আমি তাকে জান্নাতে কেশ শান-শওকতে বিচরণ করতে দেখেছি।

ইমাম বুখারী (র) আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, ইব্‌ন উমর (রা) বলেন, ওহী অবতরণ শুরু হওয়ার আগে একদিন বালন্দাহ-এর নিম্নাঞ্চলে যায়দ ইব্‌ন আমর-এর সঙ্গে নবী করীম (সা)-এর সাক্ষাত হয়। আমি তাঁর সামনে খােঞ্চা এগিয়ে দিই। কিন্তু তিনি তা খেতে অস্বীকার করেন। তখন যায়ীদ বলে উঠলেন : আমিও তোমাদের দেবতার মামে বলি দেওয়া পশু খাই না এবং সে পশুও আমি মুখে দেই না, যা তোমরা গাইরুল্লাহর নামে যবাই কর। উল্লেখ্য যে, যোয়দ ইব্‌ন আমরা যাবাইর ব্যাপারে কুরাইশদের সমালোচনা করে বলতেন : বকরী সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। আল্লাহই আকাশ থেকে পানি অবতারণ করে ঘাস উৎপন্ন করে এর খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। আর কুরাইশের লোকেরা কিনা তা যাবাই করে গাইরুল্লাহর নামে!

মূসা ইব্‌ন উকবা বর্ণনা করেন যে, যোয়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফােয়ল একবার দীনের সন্ধানে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথে এক ইহুদী আলিমের সাক্ষাত পেয়ে তাকে তাদের দীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং বলেন, আমি আপনাদের দীন গ্ৰহণ করতে আগ্ৰহী। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। জবাবে তিনি বললেন, আমাদের দীনে আসতে হলে তোমাকে আল্লাহর গযবের ভার মাথায় নিয়ে আসতে হবে। এ কথা শুনে যায়দা বললেন, আমি তো আল্লাহর গযব থেকেই পালিয়ে এসেছি আল্লাহর গযবের সীমান্যও আমি বহন করতে পারব না, সে সাধ্যও আমার নেই। সম্ভব হলে আমাকে অন্য কোন দীনের সন্ধান দিন। ইহুদী আলিম বললেন, আমার বিবেচনায় তুমি হানীফ হতে পার। যায়দ জিজ্ঞাসা করলেন, হানীফ, আবার কি? তিনি বললেন, হানীফ হলো ইবরাহীম (আ)-এর দীন, যিনি ইহুদীও ছিলেন না, খৃষ্টানও ছিলেন না। তিনি আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করতেন না। ইহুদী পণ্ডিতের বক্তব্য শুনে যায়দ বেরিয়ে এলেন। তারপর দুহাত উপরে তুলে বলে উঠেন, আল্লাহ! তুমি সাক্ষী, আমি ইবরাহীমের দীন গ্ৰহণ করলাম।

লায়ছ বলেন, আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বলেছেন আমি একদিন দেখলাম যে, যায়দ কাবার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলছেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে একমাত্র আমিই ইবরাহীমের দীনের অনুসারী।

যায়ীদ শিশু কন্যাদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া থেকে রক্ষা করতেন। কাউকে নিজ কন্যা সন্তান জীবন্ত কবর দিতে দেখলে তিনি বলতেন, একে হত্যা করো না, আমাকে দিয়ে দাও, আমি এর ব্যয় ভার বহন করব। লালন-পালন করার পর বড় হলে কন্যার পিতাকে বলতেন, ইচ্ছে হলে তোমার সন্তানকে এবার তুমি নিয়ে যেতে পোর, আর যদি বল, এখনও আমি এর ভরণ-পোষণ বহন করতে পারি। এ বর্ণনাটি বুখারীর। ইব্‌ন আসাকির ভিন্ন সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

আব্দুর রহমান ইব্‌ন আবু যিনাদ বর্ণনা করেন যে, আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বলেছেন, আমি দেখেছি যে, যায়েদ ইব্‌ন আমার কাবার সঙ্গে হেলান দিয়ে বলছেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাক। ব্যভিচার দারিদ্র্য ডেকে আনে ৷

মুহাম্মদ ইব্‌ন উছমান ইব্‌ন আবু শায়বা জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে যায়দ ইব্‌ন আমরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, জাহিলী যুগে তো। তিনি কিবলার দিকে মুখ করে বলতেন, ইবরাহীমের যিনি ইলাহ, আমার ইলাহও তিনি। ইবরাহীমের দীনই আমার দীন। আবার তিনি সিজদাও করতেন। তার কী হবে? জবাবে নবী করীম (সা) বললেন, আমার ও ঈসার মাঝখানে একা তাকে একটি উন্মত হিসাবে উথিত করা হবে। এ বর্ণনাটির সনদ উত্তম ও হাসান পর্যায়ের।

ওয়াকিদী . খারিজা ইব্‌ন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি যায়দ ইব্‌ন আমরা সম্পর্কে সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যিাব (রা)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি ওহী অবতরণের পাঁচ বছর আগে যায়দ ইব্‌ন আমরা যখন মারা যান, তখন কুরাইশরা কাবা ঘর পুনঃনির্মাণ করছিল। মৃত্যুর আগে প্রায়ই তিনি বলতেন, আমি ইবরাহীমের দীনের অনুসারী। তাঁর ছেলে সাঈদ ইব্‌ন যায়দ ইসলাম গ্ৰহণ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অনুসারী হন। উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা) ও সাঈদ ইব্‌ন যায়ীদ (রা) একদিন।

রাসুলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এসে যায়দ ইব্‌ন আমরা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ও তার প্রতি রহম করেছেন। কারণ তিনি ইবরাহীমের দীনের উপর ইন্তিকাল করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেই থেকে কোন মুসলমান ক্ষমা ও রহমতের দোয়া ছাড়া তার নাম উচ্চারণ করেন না। এ বর্ণনাটির উল্লেখের পর সাঈদ ইব্‌ন

মুসায়্যিাব বলতেন :

মুহাম্মদ ইব্‌ন সাদ বৰ্ণনা করেন যে, ইয়াহয়া সাদী বলেছেন, যোয়দ ইব্‌ন আমর মক্কায় মারা যান এবং হেরার পাদদেশে সমাহিত হন। তবে আগে আমরা বলে এসেছি যে, সিরিয়ার

বালকা অঞ্চলের মায়কাআ নামক স্থানে বনু লাখমের একদল দুৰ্বত্তের আক্রমণে তিনি নিহত হন। আল্লাহই সম্যক অবগত।

বাগিনদী . আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন আমি জান্নতে প্ৰবেশ করে যায়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌নে নুফায়লের দুটি অট্টালিকা দেখতে পেয়েছি। এ সনদটি উত্তম, তবে কোন কিতাবে এর উল্লেখ পাওয়া যায় না।

যায়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফায়লের কিছু কবিতা আমরা সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়ে উল্লেখ করে এসেছি। তার দুটি পংক্তি নিম্নরূপঃ

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত যিনি রাজাধিরাজ, যার উপর কোন ইলাহ নেই এবং এমন কোন রবও নেই, যে তার সমকক্ষ হতে পারে।

তবে কারও কারও মতে এ পংক্তি দুটো উমাইয়া ইব্‌নে আবুস সালত এর।

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক এবং যুবোয়র ইব্‌ন বাক্কার প্রমুখ বর্ণিত যায়দ ইব্‌ন আমর-এর তাওহীদ সংক্রান্ত কয়েকটি কবিতা নিম্নরূপঃ

—আমি নিজেকে সঁপে দিলাম সেই মহান সত্তার হাতে, যার কাছে মাথা নত করে ভারী

পাথর বহনকারী পৃথিবী। যাকে বিস্তৃত করার পর যখন তা সমতল হয় তখন পাহাড় চাপা। দিয়ে তিনি তাকে প্রোথিত করেন।

আমি আত্মসমর্পণ করলাম, সেই সত্তার কাছে, সুমিষ্ট পানি বহনকারী মেঘমালা যার অনুগত, যে মেঘের পানি দ্বারা সিক্ত গােটা পৃথিবী।

আমি আত্মসমপর্ণ করলাম সেই সত্তার কাছে, যার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বায়ু, যে বায়ু এক সময় এক একভাবে প্রবাহিত হয়।

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক হিশাম, ইব্‌ন উরওয়া (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমার আব্বা বলেছেন, যায়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফায়াল কাব্যাকারে বলেছিলেন :

এক রবের আনুগত্য করব নাকি হাজার রবের? যদিও বিষয় বিভিন্ন। আমি লাত- উযযা সব ত্যাগ করেছি। ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু লোকেরা এমনই করে থাকে।

আমি উদ্যযাকে মানি না, মানি না তার দুই কন্যাকেও। বনু আমার ও বনু আযওর এর দুই প্ৰতিমাকেও না।

গুনমকেও আমি মানি না। আমি বুদ্ধিতে যখন অপরিপক্ক তখন থেকেই আমার রব একজন। আমি বিস্মিত হয়েছি। বস্তৃত রাত্রিকালে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে থাকে। আর বিচক্ষণ লোকেরা দিনের বেলা সেসব উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। বহু পাপাচারীকে আল্লাহ ংস করে দিয়েছেন আর সমাজের কিছু সাধু লোকদের রেখে দিয়েছেন, যাদের ছোট শিশুরা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে।

মানুষ যখন হোচট খায়, তখন একদিন তওবা করে যেমন সবুজ ডাল-পালা এক সময় পল্লবিত হয়।

আমি আমার রব রহমানের ইবাদত করি। এই আশায় যে, ক্ষমাশীল রব আমার সব পাপ

মাফ করে দেবেন।

তোমরা তোমাদের রব। আল্লাহর প্রতি তাকওয়া সংরক্ষণ কর। যতক্ষণ তোমরা তা করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস হবে না।

পুন্যবানদের আবাস হবে জান্নাত। আর কাফিরদের ঠিকানা জাহান্নাম। পার্থিব জীবনে তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনা। আর মৃত্যুর পরে যা পাবে, তাতে তাদের হৃদয় সংকুচিতই হবে।

আবুল কাসিম বাগবী আসমা বিনতে আবু বকর (রা) থেকে ভিন্ন সূত্রে উক্ত পংক্তিগুলো ঈষৎ পরিবর্তন সহ বর্ণনা করেছেন।

জিনদেরকে আমি আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু লোকেরা এমনই করে থাকে। আমি উদ্যযাকে মানি না, তার দুই কন্যাকেও না। বন তস্ম-এর প্রতিমার প্রতিও আমার আস্থা নেই।

আমি গুনাম এর আনুগত্য করি না। শৈশব থেকেই আমি এক রবের অনুসারী। বিষয় নানাবিধ হলেও আমি কি এক রব ছেড়ে হাজার রবের আনুগত্য করব?

তোমার কি জানা নেই যে, আল্লাহ এমন বহু লোককে ধ্বংস করেছেন, যারা ছিল পাপিষ্ঠ? আর অবশিষ্ট রেখেছেন সাধু লোকদের, যাদের ছোট্ট শিশুরা এখন বড় হচ্ছে?

আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বলেন, এসব শুনে ওয়ারােকা ইব্‌ন নওফল বলেছিলেন :

সুপথ পেয়ে গিয়েছ ও নিয়ামত লাভ করেছ হে ইব্‌নে আমার এবং উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে

তুমি বেঁচে গিয়েছ। এক অনুপম রবের আনুগত্য করে এবং পাহাড়ের জিনদের বর্জন করে অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়ে তুমি আলোর পথের সন্ধান পেয়েছ।

উপর বিজয়ী করো না। তুমি আমার রব, তুমিই আমার আশা-ভরসা, হে আমার রব?

আল্লাহর রহমত মানুষের নাগাল পাবেই। যদিও তারা সত্তর স্তর মাটির নীচে অবস্থান করে।

আমি এমন রবকে মান্য করি, যিনি ডাকে সাড়া দেন। জীবনভর ডাকলেও যার সাড়া-শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে আমি মানি না। যে কোনো উপাসনালয়ে ইবাদতকালে আমি বলি, তুমি মহান, তোমাকেই আমি পুনঃপুনঃ আহবান করি।

পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যোয়দ ইব্‌ন আমার দীনের সন্ধানে সিরিয়া গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ওয়ারাক ইব্‌ন নওফল, উছমান ইব্‌ন হুয়াইরিছ ও উবাইদুল্লাহ ইব্‌ন জাহশ। যায়দ ব্যতীত অন্য তিনজন খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। যোয়দ নতুন করে কোন ধর্ম অবলম্বন না করে এক লা-শারীক। আল্লাহর ইবাদতের উপরই অটল থেকে স্বভাবজাতভাবেই যতটুকু সম্ভব ইবরাহীমের দীনের উপর থাকার চেষ্টা করেন। ওয়ারােকা ইব্‌ন নওফলের বৃত্তান্ত পরে আসছে। উছমান ইব্‌ন হুয়াইরিছ। সিরিয়ায় বসবাস করেন এবং কায়সারের নৈকট্যে অবস্থান করে সে দেশেই মারা যান, তার একটি বিস্ময়কর ঘটনা উমুবী বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। সংক্ষেপে ঘটনাটি এরূপ :

কায়সারের নিকট গিয়ে উছমান নিজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অনুযোগ করেন। তা শুনে কায়সার সিরিয়ার আরব আধুষিত অঞ্চলের শাসক ইব্‌ন জাফনাকে কুরাইশের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য সৈন্য প্রেরণের আদেশ দেন। শাসক সে মতে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তখন সেখানকার আরবরা তা থেকে বারণ করে। যুক্তি হিসাবে মক্কা শরীফের মাহাত্ম্য এবং আসহাবে ফীলের সঙ্গে আল্লাহ যে আচরণ করেন, তার কথা তারা উল্লেখ করে। ইব্‌ন জাফনা উছমান ইব্‌ন হুয়াইরিছকে বিষ মাখা একটি রঙিন পোশাক পরিয়ে দেয়, যার বিষক্রিয়ায় সে মারা যায়। যায়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফ্যােয়ল তার মৃত্যুর শোক প্রকাশ করে কয়েকটি পংক্তি রচনা করেন। উমুবী পংক্তিগুলো উল্লেখ করেছেন। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় আমরা তা উল্লেখ করলাম না। উছমান ইব্‌ন হুয়াইরিছের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছিল রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুওত প্রাপ্তির কমবেশী তিন বছর আগে। আল্লাহই সম্যক অবগত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *