০৫. হযরত দাউদ (আ)-এর বিবরণ

হযরত দাউদ (আ)-এর বিবরণ

তাঁর ফয়ীলত, কর্মকাণ্ড, নবুওতের দলীল-প্রমাণ ও ঘটনাপঞ্জি

নবী হযরত দাউদ (আ)-এর বংশতালিকা নিম্নরূপ : দাউদ ইব্‌ন ঈশা ইব্‌ন আবীদ (১০) ইব্‌ন আবির (u~) ইব্‌ন সালমুন ইব্‌ন নাহশূন ইব্‌ন আবীনাযিবা (৩৩১ + ১ -) ইব্‌ন ইরাম ইব্‌ন হাসীরূন ইব্‌ন ফারিয ইব্‌ন য়াহযা ইব্‌ন ইয়াকুব ইব্‌ন ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)। হযরত দাউদ (আ) ছিলেন আল্লাহর বান্দা তার নবী এবং বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকায় তার খলীফা। মুহাম্মাদ ইব্‌ন ইসহাক কতিপয় আলিমেয় সূত্রে ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ। থেকে বর্ণনা করেছেন : হযরত দাউদ (আ) ছিলেন বেঁটে, তার চক্ষুদ্বয় ছিল নীলাভ। তিনি ছিলেন স্বল্প কেশ বিশিষ্ট এবং পূত-পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত দাউদ (আ) জালুত বাদশাহকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে হত্যা করেন। ইব্‌ন আসাকিরের বর্ণনা মতে, এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল মারাজুস সাফার নামক এলাকার সন্নিকটে উন্মে হাকীমের প্রাসাদের কাছে। এর ফলে বনী ইসরাঈলের লোকজন দাউদ (আ)-এর প্রতি আকৃষ্ট এবং তাকে ভালবাসতে থাকে এবং তাকে শাসকরূপে পাওয়ার আকাজক্ষা প্রকাশ করতে থাকে। ফলে তালুত যে ভূমিকা গ্রহণ করেন, একটু আগেই তা উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্যের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব হযরত দাউদ (আ)-এর উপর ন্যস্ত হয়। এভাবে আল্লাহ তাআলা দাউদ (আ)-এর ক্ষেত্রে বাদশাহী ও নবুওত তথা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ একত্রিত করে দেন। ইতিপূর্বে বাদশাহী থাকত বনী-ইসরাঈলের এক শাখার হাতে আর নবুওত থাকত অন্য আর এক শাখার মধ্যে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এখন উভয়টিই হযরত দাউদ (আ)-এর মধ্যে একত্রিত করে দিলেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

দাউদ জালুতকে সংহার করল; আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও হিকমত দান করলেন; এবং যা তিনি ইচ্ছে করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ যাদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যন্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল। (২ বাকারা : ২৫১)

অর্থাৎ যদি শাসনকর্তা রূপে বাদশাহ নিযুক্তির ব্যবস্থা না থাকত তাহলে সমাজের শক্তিশালী লোকেরা দুর্বল লোকদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিত। এ জন্যে কোন কোন বর্ণনায় রছেছে ৭—১৯২৩ – t_1।। U_la gula 1.1 অর্থাৎ আল্লাহর যমীনে শাসনকর্তা তার ছায়া স্বরূপ। আমীরুল মুমিনীন হযরত উছমান ইব্‌ন আফফান (রা) বলেছেন :

আল্লাহ শাসনকর্তা দ্বারা এমন অনেক কিছু দমন করেন, যা কুরআন দ্বারা করেন না। ইব্‌ন জারীর তার ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখে করেন, বাদশাহ জালুত রণ. ক্ষেত্রে সৈন্য-বুঢ়াহ থেকে বেরিয়ে এসে মল্লযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্যে তালুতকে আহবান জানায়। কিন্তু তালুত নিজে ংশগ্রহণ না করে জালুতের মুকাবিলা করার জন্য আপন সৈন্যদের প্রতি আহবান জানায়। দাউদ (আ) সে আহবানে সাড়া দিয়ে জালুতকে হত্যা করেন। ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ বলেন, ফলে লোকজন দাউদের প্রতি বুকে পড়ে এমনকি শেষ পর্যন্ত তালুতের কথা কেউ মুখেই আনতো না। তারা তালুতকে পরিত্যাগ করে দাউদের নেতৃত্ব বরণ করে নেয়। কেউ কেউ বলেছেন, নেতৃত্বের এ পরিবর্তন শামুয়েল নবীর আমলে হয়েছিল। কারও কারও মতে জালুতের সাথে যুদ্ধের ঘটনার পূর্বেই শামুয়েল (আঃ) হযরত দাউদকে শাসক নিযুক্ত করেন। ইব্‌ন জারীর অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মত বর্ণনা করে লিখেছেন যে, জালুত বাদশাহ নিহত হওয়ার পরেই হযরত দাউদ (আ)-এর হাতে নেতৃত্ব আসে। ইব্‌ন আসাকির সাঈদ ইব্‌ন আবদুল আয়ীয সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত দাউদ (আ) কাসারে উম্পেয হাকীমের নিকট জালুতকে হত্যা করেছিলেন। ঐ স্থানে যে নদীটি অবস্থিত তার উল্লেখ স্বয়ং কুরআনের আয়াতেই বিদ্যমান আছে। দাউদ (আ) প্রসংগে কুরআনের অন্যত্র আল্লাহর বাণী :

আমি নিশ্চয় দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং আদেশ করেছিলাম, হে পর্বতমালা! তোমরা দাউদের সংগে আমার পবিত্ৰতা ঘোষণা কর এবং বিহংগকুলকেও, তার জন্যে নমনীয় করেছিলাম লোহা, যাতে তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করতে

পার এবং তোমরা সৎকর্ম কর। তোমরা যা কিছু কর, আমি তার সম্যক দ্রষ্টা (৩৪ সাবা ৪১০-১১)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন :

আমি পর্বত ও বিহংগকুলের জন্যে নিয়ম করে দিয়েছিলাম যেন তারা দাউদের সংগে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; এ সবের কর্তা আমিই ছিলাম। আমি তাকে তোমাদের জন্যে বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে; সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না? (২১ : আম্বিয়া : ৭৯-৮০)

যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্যে আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-কে লোহা দ্বারা বর্ম তৈরি করতে সাহায্য করেন এবং তাকে তা তৈরি করার নিয়ম-পদ্ধতিও শিক্ষা দেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন ১০-…।। 0 • • • • —এবং বুনন কাজে পরিমাণ রক্ষা কর —অর্থাৎ বুননটা এত সূক্ষ্ম হবে না যাতে ফাঁক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, আর এতটা মোটাও হবে না যাতে ভেঙ্গে যেতে পারে। মুজাহিদ, কাতাদা, হাকাম ও ইকরীমা এ তাফসীরই করেছেন।

হাসান বসরী, কাতাদা ও আমাশ বলেছেন, আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-এর জন্যে লোহাকে এমনভাবে নরম করে দিয়েছেন যে, তিনি হাত দ্বারা যেমন ইচ্ছা পেচাতে ও ভাঁজ করতে পারতেন; এ জন্যে তাঁর আগুন বা হাতুড়ির প্রয়োজন হত না। কাতাদা বলেন, হযরত দাউদ (আ)-এই প্রথম মানুষ, যিনি মাপজোক মত আংটা ব্যবহার করে লৌহ বৰ্ম নির্মাণ করেন। এর আগে লোহার পাত দ্বারা বর্মের কাজ চালান হত। ইব্‌ন শাওযাব বলেন, তিনি প্ৰতি দিন একটি করে বর্ম তৈরি করতেন এবং ছয় হাজার দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করতেন। হাদীসে এসেছে, মানুষের পবিত্রতম খাবার হল যা সে নিজে উপার্জন করে। GT) f60 S15) طن ts & R{55 Tة مع الجاك كاكا (ان اطيب ما اكل الرجل من كسبه) হাতে উপার্জিত খাদ্য দ্বারা জীবিকা নিবাহ করতেন। আল্লাহর বাণী :

এবং স্মরণ কর, আমার শক্তিশালী বান্দা দাউদের কথা; সে ছিল অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী। আমি নিয়োজিত করেছিলাম পর্বতমালাকে যেন এরা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, এবং সমবেত বিহংগকুলকেও; সকলেই ছিল তার অনুগত। আমি তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফয়সালাকারী दाडिी (७b जान 8 ०१-९०)।

ইব্‌ন আব্বাস (রা) ও মুজাহিদ (র) বলেন, আয়াতে উল্লেখিত এ১। অর্থ ইবাদত করার শক্তি। অর্থাৎ তিনি ছিলেন। ইবাদত ও অন্যান্য সৎকাজে অত্যন্ত শক্তিশালী। কাতাদা (র) বলেন, তাকে আল্লাহ ইবাদত করতে দিয়েছিলেন শক্তি এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে দিয়েছিলেন গভীর জ্ঞান। কাতাব্দী (র) আরও বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, দাউদ (আ) রাতের বেলা দাঁড়িয়ে ইবাদত করতেন এবং বছরের অর্ধেক সময় রোযা রাখতেন। বুখারী ও মুসলিমে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন : আল্লাহর নিকট ঐ রূপ নামায সবচেয়ে প্রিয় যেরূপ নামায হযরত দাউদ পড়তেন এবং আল্লাহর নিকট ঐ রূপ রোযা সবচেয়ে পছন্দনীয় যেরূপ রোযা, হযরত দাউদ (আ) রাখতেন। তিনি রাতের প্রথম অর্ধেক ঘুমাতেন, তারপরে এক তৃতীয়াংশ নামাযে কাটাতেন এবং শেষে এক ষষ্ঠাংশ পুনরায় ঘুমিয়ে কাটাতেন। তিনি এক দিন রোযা রাখতেন এবং একদিন রোযা থাকতেন না। আর শত্রুর মুকাবিলা হলে কখনও ভয়ে পালাতেন না। তাই আয়াতে বলা হয়েছে? আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করছিলাম যেন তারা সকাল-সন্ধ্যায়। তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হত। সবাই ছিল তার অনুগত। সূরা সাবায় যেমন বলা হয়েছে : …, … …. Ju… —হে পর্বতমাল! তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং বিহংগকুলকেও। অর্থাৎ তার সাথে তাসবীহ পাঠ করা। ইব্‌ন আব্বাস, মুজাহিদ প্রমুখ এ আয়াতের তাফসীর এভাবেই করেছেন। অর্থাৎ তারা দিনের সূচনা লগ্নে ও শেষ ভাগে তাসবীহ পাঠ করত। হযরত দাউদ (আ)-কে আল্লাহ এমন দরাজ কণ্ঠ ও সূর মাধুর্য দান করেছিলেন, যা পৃথিবীর অন্য কাউকে দান করেননি। তিনি যখন তার প্রতি অবতীর্ণ যাবুর কিতাব সুর দিয়ে পাঠ করতেন তখন আকাশে উডউীয়মান বিহংগকুল সুরের মূৰ্ছিনায় থমকে দীড়াত এবং দাউদের সুরের সাথে সুর মিলিয়ে আবৃত্তি করত ও তার সাথে তাসবীহ পাঠ করত। এভাবেই তিনি সকাল-সন্ধ্যায় যখন তাসবীহ পাঠ করতেন তখন পাহাড়পর্বত ও তার সাথে তাসবীহ পাঠে শরীক হত। আওযাঈ বলেছেন, হযরত দাউদ (আ)-কে এমন সুমধুর কণ্ঠস্বর দান করা হয়েছিল। যেমনটি আর কাউকে দান করা হয়নি। তিনি যখন আল্লাহর কিতাব পাঠ করতেন তখন আকাশের পাখী ও বনের পশু তার চার পাশে জড়ো হয়ে যেত। এমনকি প্রচণ্ড ক্ষুধায় ও তীব্র পিপাসায় তারা সে স্থানে মারা যেত। কিন্তু নড়াচড়া করত না। শুধু এরাই নয়, নদীর পানির প্রবাহ পর্যন্ত থেমে যেত। ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ বলেছেন, দাউদ (আঃ)-এর কণ্ঠস্বর যে-ই শুনত লাফিয়ে উঠত এবং কণ্ঠের তালে তালে নাচতে শুরু করত। তিনি যাবুর এমন অভূতপূর্ব কণ্ঠে পাঠ করতেন যা কোন দিন কেউ শুনেনি। সে সুর শুনে জিন, ইনসান, পক্ষী ও জীব-জন্তু আপনি-আপনি স্থানে দাঁড়িয়ে যেত। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে তাদের কেউ কেউ মারাও যেত।

আবু আওয়ানা বিভিন্ন সূত্রে … মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত দাউদ (আঃ) যাবুর পড়া আরম্ভ করলে কিশোরী মেয়েদের কুমারীত্ব ছিন্ন হয়ে যেত। তবে এ বর্ণনাটি সমর্থনযোগ্য নয়। আবদুল রাযযাক ইব্‌ন জুরায়জ। সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি গানের সুরে কিরাআত পড়া যাবে। কি না-এ সম্পর্কে আতা (রা)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন, এতে দোষ কি? অতঃপর তিনি বললেন, আমি শুনেছি, উবায়দ ইব্‌ন উমর বলেছেন, হযরত দাউদ (আঃ) বাজনা বাজাতেন ও তার তালে তালে কিরাআত পড়তেন। এতে সুরের মধ্যে লহর সৃষ্টি হত। ফলে সুরের মূৰ্ছিনায় তিনিও কাঁদতেন এবং শ্রোতাদেরকেও কাদাতেন। ইমাম আছমদ আবদুর রাযযাকের সূত্রে. আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদা আবু মূসা আশআরীর কিরাআত পড়া শুনে বলেছিলেন : আবু মূসাকে আলে দাউদের সুর লহরী দান করা হয়েছে।।

বুখারী ও মুসলিমের শর্তে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য এই সূত্রে এ হাদীস বুখারী মুসলিমে নেই। অন্যত্র ইমাম আহমদ হাসানের সূত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করছেন, রাসূল (সা) বলেছেন : আবু মূসাকে দাউদের বাদ্য প্রদান করা হযেছে। এ হাদীছটি মুসলিমের শর্তে বর্ণিত। আবু উছমান তিরমিয়ী (র) বলেন, বাদ্য ও বাঁশরী শুনেছি, কিন্তু আবু মূসা আশা আরীর কণ্ঠের চেয়ে তা অধিক শ্রুতি মধুর নয়। এ রকম মধুর সুর হওয়া সত্ত্বেও দাউদ (আ) অতি দ্রুত যাবুর পাঠ করতেন। এ সম্পর্কে ইমাম আহমদ … আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : তোমরা দাউদ অপেক্ষা ধীরে কিরাআত পড়। কেননা তিনি বাহনের উপর জিন লাগাবার আদেশ করে কুরআন (যাবুর) পড়তেন এবং জিন লাগান শেষ হবার আগেই তাঁর যাবুর পড়া শেষ হয়ে যেত। আর তিনি স্বহস্তে উপার্জন করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইমাম বুখারীও। … আবদুর রাযযাক সূত্রে এ হাদীস প্রায় অনুরূপ শব্দে বর্ণনা করেছেন। এরপর বুখারী (র) বলেছেন, এ হাদীস মূসা ইব্‌ন উকবা …… আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইব্‌ন আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে দাউদ (আঃ) -এর আলোচনায় বিভিন্ন সূত্রে এ হাদীছখানা বর্ণনা করছেন।

হাদীসে উল্লেখিত কুরআন অর্থ এখানে যাবুর যা হযরত দাউদ (আ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। এর বর্ণনাগুলো ছিল সংরক্ষিত। কেননা তিনি ছিলেন একজন বাদশাহ। তার ছিল বহু অনুসারী। তাই বাহনের উপর জিন লাগাতে যতটুকু সময় লাগে সে সময় পর্যন্ত তিনি যাবুর পাঠ করতেন। ভক্তিসহ নিবিষ্ট চিত্তে ও সুর প্রয়োগে পড়া সত্ত্বেও তার তিলাওয়াত ছিল অতান্ত দ্রুত। আল্লাহর বাণী : ০১১, 6, 16 17:41, —আমি দাউদকে যাবুর প্রদান করেছি। (১৭ ইসরা; ৫৫) এ আয়াতের তাফসীরে আমার তাফসীর গ্রন্থে ইমাম আহমদ ও অন্যান্যদের বর্ণিত হাদীস উদ্ধৃত করেছি যে, এ প্রসিদ্ধ আসমানী কিতাবখানা রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়। গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে যে, এতে বিভিন্ন উপদেশ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উক্তি রয়েছে। আল্লাহর বাণী :

আমি তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফয়সালাকারী বাগিতা (৩৮ সাদঃ ১৭) অর্থাৎ – তাকে আমি দিয়েছিলাম বিশাল রাজত্ব ও কার্যকর শাসন কৌশল। ইব্‌ন জারীর ও ইব্‌ন আবী হাতিম হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এক গাভী সংক্রান্ত বিচারে দুব্যক্তি দাউদ (আ)-এর শরণাপন্ন হয়। এদের একজন অপর জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে, সে তার গাভী জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বিবাদী অভিযোগ অস্বীকার করল। হযরত দাউদ (আঃ) তাদের ফয়সালা রাত পর্যন্ত স্থগিত রাখলেন। আল্লাহ ঐ রাতে ওহীর মাধ্যমে নবীকে নির্দেশ দিলেন যে, বাদীকে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। সকাল হলে নবী বাদীকে ডেকে আল্লাহর নির্দেশ জানিয়ে দেন এবং বলেন, আমি অবশ্যই তোমার উপর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করব। এখন বল, তোমার দাবীর মূলে আসল ঘটনা কি? বাদী বলল, হে আল্লাহর নবী! আমি কসম করে বলছি, আমার দাবী যথার্থ। তবে এ ঘটনার পূর্বে আমি বিবাদীর পিতাকে হত্যা করেছিলাম। তখন হযরত দাউদ (আঃ) তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং সাথে সাথে তা কার্যকর হয়। এ ঘটনার পরে বনী ইসরাঈলের মধ্যে দাউদ (আ)-এর মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর প্রতি তাদের আনুগত্য বৃদ্ধি পায়।

ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, এ কথাটাই … <12, 1484…., বাক্যাংশে ব্যক্ত করা হয়েছে। 65- وفصل الخطاب .,GHIS 13ة 8ة حكمة 85 ق T865 والتينَاهُ الحكمة শুরায়হ, শাবী, কাতাদাহ, আবু আবদুর রহমান প্রমুখের মতে ফাস্লাল খিতাব অর্থ সাক্ষী ও // শপথ অৰ্থাৎ বিচার কার্যের মূলনীতি হিসেবে বাদীর জন্যে সাক্ষী প্রমাণ আর বিবাদীর জন্যে।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।S, 5)}د ۹ آلما)।।।। ( البینة علی المدعی و الیمین علی من انکر) i }*** হযরত দাউদ (আ)-কে এই মূলনীতি দান করেছিলেন। মুজাহিদ ও সুদীর মতে, ফাস্লাল খিতাব অর্থ বিচার কাজের প্রজ্ঞা ও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। মুজাহিদ বলেন, বাক্য প্রয়োগ ও সিদ্ধান্ত দানে স্পষ্টবাদিতা ৷ ইব্‌ন জারীরও এই ব্যাখ্যাকে অগ্ৰাধিকার দিয়েছেন। আবু মূসা বলেছেন, ফসিলাল খিতাব হচ্ছে (হামদ ও সালাতের পরে) এ- L. বলা অর্থাৎ হযরত দাউদ-ই প্রথমে এ – L. I শব্দ ব্যবহার করেন, তার সাথে এ ব্যাখ্যার কোন বিরোধ নেই। ওহাব ইব্‌ন মুনাবিবহ লিখেছেন, বনী ইসরাঈল জাতির মধ্যে পাপাচাব ও মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে হযরত দাউদ (আ)-কে একটি ফয়সালাকারী শিকল দেওয়া হয়। এই শিকলটি আসমান থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসের পার্শ্বে রক্ষিত সাখরা পাথর খণ্ড পর্যন্ত बूलख छिल।

শিকলটি ছিল স্বর্ণের। ফয়সালা এভাবে হত যে, বিবদমান দুব্যক্তির মধ্যে যে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত সেই ঐ শিকলটি নাগাল পেতো! আর অপরজন তা পেতো না। দীর্ঘদিন যাবত এভাবে চলতে থাকে। অবশেষে এক ঘটনা ঘটে। এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির নিকট একটা মুক্তা গচ্ছিত রাখে। যখন সে তার মুক্তাটি ফিরিয়ে আনতে যায়। তখন ঐ ব্যক্তি তার দাবি প্রত্যাখ্যান করে। সে একটি লাঠি দিয়ে তার মধ্যে মুক্তাটি রেখে দেয়। অতঃপর তাদের বিবাদ মীমাংসার জন্যে সাখরা পাথরের কাছে উপস্থিত হলে বাদী শিকলটি নাগাল পায়। বিবাদীকে তা ধরতে বলা হলে সে উক্ত মুক্তা সম্বলিত লাঠিটি বাদীর কাছে দিয়ে দেয়। এরপর সে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলে, হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই অবগত আছেন যে, আমি তাকে তার মুক্তাটি প্রত্যাৰ্পণ করেছি। প্রার্থনার পর সে শিকলটি ধরতে সক্ষম হয়। এভাবে উক্ত শিকলটির দরুন বনী-ইসরাঈলরা মুশকিলে পড়ে যায়। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই শিকলটি উঠিয়ে নেয়া হয়। অনেক মুফাসসিরই এ ঘটনাটিই উল্লেখ করেছেন। ইসহাক ইব্‌ন বিশর ও ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ সূত্রে প্রায় এরূপেই বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর বাণী :

তোমার নিকট বিবদমান লোকদের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? যখন তারা প্রাচীর ডিংগিয়ে ইবাদত খানায় আসল এবং দাউদের নিকট পৌঁছল, তখন সে তাদের কারণে ভীত হয়ে পড়ল। তারা বলল, ভীত হবেন না, আমরা দুবিবদমান পক্ষ; আমাদের একে অপরের উপর জুলুম করেছে; অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করুন; অবিচার করবেন না এবং আমাদেরকে সঠিক পথ নির্দেশ করুন। এ আমার ভাই, এর আছে নিরানব্বইটা দুম্বা এবং আমার আছে মাত্র একটি দুম্বা; তবুও সে বলে, আমার যিম্মায় একটা দিয়ে দাও; এবং কথায় সে আমার প্রতি কঠোরতো প্রদর্শন করেছে। দাউদ বলল, তোমার দুম্বাটিকে তার দুম্বাগুলোর সংগে যুক্ত করার। দাবি করে সে তোমার প্রতি জুলুম করেছে। শরীকদের অনেকে একে অন্যের উপর অবিচার করে থাকে। করে না কেবল মুমিন ও সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ এবং তারা সংখ্যায় স্বল্প। দাউদ বুঝতে পারল, আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। আর সে তার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং নত হয়ে লুটিয়ে পড়ল ও তার অভিমুখী হল। তারপর আমি তার ত্রুটি ক্ষমা করলাম। আমার নিকট তার জন্যে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম। (৩৮ সাদ : ২১-২৫)

উপরোক্ত আয়াতে যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রাচীন ও আধুনিক বহু ংখ্যক মুফাসসির অনেক কিসসা-কাহিনীর অবতারণা করেছেন। কিন্তু তার অধিকাংশই ইসরাঈলী বৰ্ণনা এবং এর মধ্যে সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট বর্ণনাও রয়েছে। আমরা এখানে সে সবের কিছুই উল্লেখ করছি না; শুধু কুরআনে বর্ণিত ঘটনাটির উল্লেখ করাই যথেষ্ট বিবেচনা করছি। সূরা সাদ-এর সিজদার আয়াত সম্পর্কে ইমামগণের মধ্যে দ, ধরনের মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেছেন, এ সিজদা অপরিহার্য আবার অন্য কেউ কেউ বলেছেন, এটা অপরিহার্য নয়, বরং এটা শোকরানা সিজদা। এ প্রসংগে ইমাম বুখারী (র) মুজাহিদের সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি একদা ইব্‌ন আব্বাস (রা)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন : সূরা সাদা তিলাওয়াতকালে আপনি কেন সিজদা দেন? তিনি বললেন, তুমি কি কুরআনে পড় না?

দাউদ, সুলায়মান…আর আমি তাহাকে দান করিয়াছিলাম ইসহাক ও ইয়াকুব, ইহাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম; পূর্বে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম এবং তাহার বংশধর দাউদ, সুলায়মান ও আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকেও; আর এইভাবেই সৎকর্মপরায়ণদিগকে পুরস্কৃত করি; এবং যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম। ইহারা সকলে সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত; আরও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম ইসমাঈল, আল-য়াসাআ, ইউনুস ও লুতকে; এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছিলাম বিশ্বজগতের উপর প্রত্যেন্তকে- এবং ইহাদের পিতৃ-পুরুষ, বংশধর ও ভ্রাতৃবৃন্দের কতককে। আমি তাহাদিগকে মনোনীত করিয়াছিলাম এবং সরল পথে পরিচালিত করিয়াছিলাম। ইহা আল্লাহর হিদায়াত, স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তিনি ইহা দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। তাহারা যদি শিরক করিত তবে তাহাদের কৃতকর্ম নিস্ফল হইত। আমি উহাদিগকেই কিতাব, কর্তৃত্ব ও নুবুওয়াত দান করিয়াছি, অতঃপর যদি ইহার ৪১৭ এইগুলিকে প্রত্যাখ্যানও করে তবে আমি তো এমন এক সম্প্রদায়ের প্রতি এইগুলির ভার অর্পণ করিয়াছি। যাহারা এইগুলি প্রত্যাখ্যান করিবে না। উহাদিগকেই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন, সুতরাং তুমি তাহাদের পথের অনুসরণ করা। বল, আহির জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাহি না, ইহা তো শুধু বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ ৷ (৬ আনআম : ৮৪ ও ৯০)

এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, দাউদ (আ) নবীগণের অন্যতম যাদের অনুসরণ করার জন্য আমাদের নবী (সা)-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা সাদ-এর আয়াতে দাউদ (আ)-এর সিজদার কথা উল্লেখিত হয়েছে। সে অনুযায়ী রাসূল (স)-ও সিজদা করেছেন। ইমাম আহমদ . ইকরামার সূত্রে ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন: সূরা সাদ এর সিজদা আবশ্যিক সিজদার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এ সিজদা করতে দেখেছি। ইমাম বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিয়ী ও নাসাঈ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিয়ী একে হাসান ও সহীহ বলেছেন। ইমাম নাসাঈ (র).. সাঈদ ইব্‌ন জুবায়রের সূত্রে ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) সূরা সাদ এ সিজদা করেছেন তওবা স্বরূপ, আর আমরা সিজদা করব শোকরিয়া স্বরূপ। শেষের কথাটি কেবল আহমদের বর্ণনায় আছে। তবে এর রাবীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য ৷

আবু দাউদ… আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একবার মসজিদের মিম্বিরে বসে সূরা সাদা তিলাওয়াত করেন। সিজদার আয়াত পর্যন্ত পৌছে তিনি মিম্বর থেকে নেমে সিজদা আদায় করেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সাথে সিজদা আদায় করেন। অন্য এক দিন তিনি অনুরূপ মিম্বরে বসে সূরা সাদা পাঠ করেন। যখন সিজদার আয়াত পড়েন, তখন উপস্থিত লোকেরা সিজদা করতে উদ্যত হন। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এটা হচ্ছে জনৈক নবীর তওবা বিশেষ (সিজদার সাধারণ নির্দেশ নয়), তবে দেখছি তোমরা সিজদা করতে উদ্যত হয়েছ। তারপর তিনি মিম্বর থেকে নেমে সিজদা আদায় করেন। এ হাদীছখানা কেবল আবু দাউদই বৰ্ণনা করেছেন। তবে এর সনদ সহীহের শর্ত অনুযায়ী আছে। ইমাম আহমদ… আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি একদা স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি সূরা সাদ লিখছেন। সিজদার আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তিনি, দোয়াত, কলম ও অন্য যা কিছু সেখানে ছিল, সবই সিজদায় লুঠিয়ে পড়েছে দেখতে পান। এ ঘটনা তিনি নবী করীম (সা)-এর নিকট ব্যক্ত করেন। তারপর থেকে তিনি সর্বদা এ সূরার সিজদা আদায় করতেন। এ হাদীসখানা কেবল ইমাম আহমদই বৰ্ণনা করেছেন।

তিরমিয়ী ও ইব্‌ন মাজাহ মুহাম্মদ ইব্‌ন ইয়াখীদের সূত্রে … হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এসে বলল- ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষ যেমন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে, আমিও তেমনি সালাত আদায় করছি। সালাতে আমি সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করি এবং সিজদায় যাই। বৃক্ষটিও আমার সাথে সিজদা করে। আমি শুনলাম সে সিজদা অবস্থায় এরূপ দোয়া করছে : হে আল্লাহ! এর ওসীলায় আপনার নিকট আমার জন্যে পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন, আপনার নিকট আমার জন্যে এর ছওয়াব সঞ্চিত রাখুন, এর ওসীলায় আমার দোষ-ত্রুটি দূর করে দিন এবং আমার এ সিজদা আপনি কবুল করুন, যেমন কবুল করেছিলেন আপনার নেক বান্দা দাউদ (আ) থেকে। ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, আমার এ কথা শেষ হতেই দেখলাম, রাসূল (সা) সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদায় যান এবং লোকটি বৃক্ষের যে দোয়ার উল্লেখ করেছিল, শুনলাম। তিনি সিজদায় সেই দোয়াটিই পড়ছেন। ইমাম তিরমিয়ী এ হাদীস বর্ণনা করার পরে লিখেছেন যে, এটা গরীব পর্যায়ের হাদীস-এই একটি সূত্র ব্যতীত এর অন্য কোন সূত্র আমার জানা নেই।

কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, হযরত দাউদ (আঃ) তাঁর এ সিজদায় একটানা চল্লিশ দিন অতিবাহিত করেন। মুজাহিদ, হাসান প্রমুখ এ কথা উল্লেখ করেছেন। এ প্রসংগে একটি মারফু হাদীছও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এর বর্ণনাকরী ইয়ায়ীদ রুককাশী হাদীস বর্ণনায় দুর্বল ও পরিত্যক্ত। আল্লাহর বাণী :

فغفرنا له ذالك وان له عندنا الزلفلى وحُسن مأبي —আমি তার সে অপরাধ ক্ষমা করলাম। নিশ্চয় আমার কাছে তার জন্যে রয়েছে উচ্চ মর্তব্য ও সুন্দর বাসস্থান। (৩৮ সাদ : ২৫)। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তিনি আল্লাহর নিকট উচ্চ মর্যাদা পাবেন। এa1, অর্থ বিশেষ নৈকট্য; এবং তাহল ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে আল্লাহ দাউদ (আ)-কে এ নৈকট্য দান করবেন। এ ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :

যারা ন্যায় বিচার করে ও ন্যায়ের বিধান চালু করে, এবং তার পরিবারে ফয়সালায় এবং কর্তৃত্ব প্রয়োগে তারা মেহেরবান আল্লাহর দক্ষিণ হস্তের কাছে প্রতিষ্ঠিত নূরের মিম্বরের উপরে অধিষ্ঠিত থাকবে। আর আল্লাহর উভয় হস্তই দক্ষিণ হস্ত)। মুসনাদে ইমাম আহমদে. আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও নৈকট্যপ্ৰাপ্ত হল ন্যায় বিচারক শাসক; পক্ষান্তরে আল্লাহর নিকট কিয়ামতের দিন সবচেয়ে ঘৃণিত ও কঠিন শাস্তিযোগ্য ব্যক্তি হল জালিম বাদশাহ। তিরিমিয়ী অনুরূপ বর্ণনা করে বলেছেন, এই একটি সূত্র ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে এ হাদীছখানা সম্পূর্ণরূপে বৰ্ণিত হয়নি। ইব্‌ন আবী হাতিম… জাফর ইব্‌ন সুলায়মান থেকে বর্ণনা করেন। UR* أركة 1 SIRICS وان له عندنا لزلفلى وحسن مآب 166 nstiة 45ة fof Nif616 বলতে শুনেছেন যে, হযরত দাউদ (আ) কিয়ামতের দিন আঁরশে আয়ীমের স্তম্ভের কাছে দণ্ডায়মান থাকবেন, আল্লাহ তখন বলবেন, হে দাউদ! দুনিয়ায় তুমি যে মধুর সুরে আমার প্রশংসা ও মহত্ব প্রকাশ করতে, সেইরূপ মধুর সুরে আজ আমার প্রশংসা ও মহত্ব প্রকাশ কর। দাউদ (আ) বলবেন, হে আল্লাহ! আপনি তো তা আমার থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন, এখন কিরূপে তা করব? আল্লাহ বলবেন, আজ আমি তা তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। অতঃপর দাউদ (আঃ) এমন মধুর আওয়াজে আল্লাহর প্রশংসা গাইবেন, যার প্রতি সমস্ত জান্নাতবাসী আকৃষ্ট হয়ে পড়বে।

আল্লাহর বাণী :

—হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, কেননা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ হতে ভ্ৰষ্ট হয় তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি, কারণ তারা বিচার দিবসকে বিস্মৃত হয়ে আছে। (৩৮ সাদ : ২৬)।

আলোচ্য আয়াতে হযরত দাউদ (আ)-কে সম্বোধন করা হলেও এর দ্বারা শাসক ও বিচারক মণ্ডলীকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে এবং আল্লাহ তাদেরকে মানুষের মাঝে তার পক্ষ থেকে নির্দেশিত ন্যায় বিচার ও সত্যের অনুসরণ করার আদেশ করেছেন। নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। যারা সত্য পথ পরিত্যাগ করে নিজের খেয়াল-খুশীর পথ অনুসরণ করবে। তাদেরকে আল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছেন। সে যুগে হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, প্রচুর ইবাদত ও অন্যান্য নেক কাজের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় আদর্শ। কথিত আছে, রাত্র ও দিনের মধ্যে এমন একটি সময় অতিবাহিত হত না, যে সময় তাঁর পরিবারবর্গের কোন না কোন সদস্য। ইবাদতে মশগুল না থাকত। আল্লাহ বলেছেন :

—হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই কৃতজ্ঞ (; ৩৪ : সাবা : ১৩)। আবু বকর ইব্‌ন আবিদ দুনিয়া… আবুল জালন্দ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি দাউদ (আ)-এর ঘটনাবলী অধ্যয়ন করেছি। তাতে এ কথা পেয়েছি যে, তিনি আরজ করলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমি আপনার শুকরিয়া কিভাবে আদায় করব? আপনার নিয়ামত ব্যতীত তো আপনার শোকর আদায়ে আমি সামর্থ হব না। অতঃপর দাউদ (আ)-এর নিকট ওহী আসে : হে দাউদ! তুমি কি জান না যে, যে সব নিয়ামত তোমার কাছে রয়েছে, তা আমারই দেওয়া? জবাবে দাউদ (আঃ) বললেন, হ্যাঁ তাই, হে আমার রব! আল্লাহ বললেন, তোমার এ স্বীকারোক্তিতেই আমি সন্তুষ্ট। বায়হাকী… ইব্‌ন শিহাব থেকে বর্ণনা করেন, হযরত দাউদ SIGIJ &।।।।।।।।।।।।।।।।।।।تاس- الحمد لله کما اینبغی الکرم وجهه و عز جلاله آ6۶& SIT) < (۶ff) এমন যাবতীয় প্রশংসা নির্দিষ্ট, যেমন প্রশংসা তাঁর সত্ত্বা ও মহত্বের জন্যে উপযোগী। আল্লাহ বললেন, হে দাউদঃ তুমি তো হেফাজতকারী ফিরিশতাদের মতই দোয়া করলে। আবু বকর ইব্‌ন আবিদ দুনিয়া… সুফিয়ান ছাওরী থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুবারক তাঁর কিতাবুযে যুহদে… ওহাব ইব্‌ন মুনাববিহ থেকে বর্ণনা করেন : দাউদের বংশধরদের হিকমতের মধ্যে ছিল (১) কোন জ্ঞানী লোকের পক্ষে চারটি বিশেষ সময়ে গাফিল থাকা উচিত নয়, (ক) একটি সময় নির্দিষ্ট করবে, যে সময়ে সে একান্তে আল্লাহর ইবাদত করবে। (খ) একটি নির্দিষ্ট সময়ে আত্ম-সমালোচনায় প্রবৃত্ত হবে। (গ) একটি সময় নির্ধারণ করবে, যে সময়ে সে ঐ সব অন্তরংগ বন্ধুদের সাথে মিলিত হবে, যারা তাকে ভালবাসে এবং তার ত্রুটিবিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়। (ঘ) আর একটি সময় বেছে নিবে হালাল ও বৈধ বিনোদনের জন্যে। এই শেষোক্ত সময়টা তার অন্যান্য সময়ের কাজের সহায়ক হবে এবং অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করবে। (২) একজন জ্ঞানী লোকের উচিৎ সময় সম্পর্কে সচেতন থাকা, রসনাকে সংযত রাখা এবং আপন অবস্থাকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেওয়া 1 (৩) একজন জ্ঞানী লোকের কর্তব্য-তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি ছাড়া যেন সে কোথাও যাত্ৰা না করে পর্যুকালের পাথেয় সংগ্রহে, দুনিয়ার জীবন যাপনের উপাদান অন্বেষণে কিংবা বৈধ আনন্দ বিনোদনে।

ইব্‌ন আবিদ দুনিয়া ও ইব্‌ন আসাকির অন্য সূত্রে ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হাফিজ ইব্‌ন আসাকির হযরত দাউদ (আ)-এর কতগুলো শিক্ষামূলক উপদেশ বাণী তাঁর জীবনী আলোচনায় উল্লেখ করেছেন। তার কয়েকটি হল : (১) ইয়াতীমের সাথে দয়ালু পিতার মত আচরণ কর (১২১ ৷৷ ৩০১ (<!–L। ৬<) (২) স্মরণ রেখ, যেমন বীজ বুনবে,  > i تأمی (O) (و اعلم ان لنت کما تزرع کذالله تحصد)।। ۹ )RP1। II।।।। 5 6 পর্যায়ের মারফু হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত দাউদ (আঃ) বলেছিলেন : হে পাপের চাষকারী!! ফসল রূপে তুমি কেবল কাঁটা আর খোসাই পাবে। (১ -~~~~), এ, 1 এ০t_-_.J1 & 0।। ৩৮ [<.২৫ L৫<–…) (৪) কোন মজলিসের নির্বোিধ বক্তা হচ্ছে মৃতের শিয়রে গায়কের তুল্য। مثل الخطیب الاحمق فی نادی القوم کمثل المغنی عند ر آسی المیت (৫) ধনী থাকার পরে দরিদ্র হওয়ার মত দুৰ্ভাগ্য আর নেই। কিন্তু তার চেয়ে অধিক দুৰ্ভাগ্য হল ما اقب خم الفقو بعد الغنی و اقبح من ذالله GRIته 8 با ۶۹ اک) گیتا)।।।।।।।।।। 5।।۹।।1&] এ— 1 \ • ¢ _ ১L৯]। (৬) প্রকাশ্য সভায় তোমার সমালোচনা না হোক-এ যদি তোমার انظر ما تكره ان يذكر عن الك)। llة 165464 NG) لكن f دالي Fi Stibة في كR O6ع الةFiة, Ff5f S Tعقifع اچمه های مقامه f یا (۹) (نادی القوم فلا تفعله اذا خلوت যা তুমি পূর্ণ করতে পারবে না। কেননা এতে তোমার ও তার মধ্যে শক্ৰতা সৃষ্টি হবে। Nأ8ة (لا تعد أن اخاكم بما لا تنجزه له فان ذالك عداوة ما بينك وبينه) ইব্‌ন সাদ … আফরার মওলা উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন, ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর একাধিক সহধর্মিণী দেখে লোকজনকে বলল, তোমরা এ লোকটির প্রতি লক্ষ্য কর, সে আহারে পরিতৃপ্ত হয় না; আল্লাহর কসম সে নারী ছাড়া কিছু বুঝে না। সমাজে তাঁর একাধিক সহধর্মিণী থাকায় তারা তার প্রতি বিদ্বেষ প্ৰকাশ করে এবং তার প্রতি দোষারোপ করে। তাদের মন্তব্য হল, যদি ইনি নবী হতেন, তাহলে নারীদের প্রতি এতো লিন্স থাকতো না। এ কুৎসা রটনায় সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে হুয়াই ইব্‌ন আখতাব। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করেন এবং নবী করীম (সা)-এর প্রতি তাঁর দান ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ RR fielة 884) أم يحسدون الناس على ما أتاهم اللّه من فضله } 8645ة অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সে জন্যে কি তারা তাদেরকে হিংসা করে?) এখানে ৩০, ১ বা فقد اتینا ال ابراهیم الکتاب و الحکمة واتینا هم مالکا (۶۹) آNRSI۹۹P [… … —তাহলে ইবরাহীমের বংশধরকেও তো আমি কিতাবও হিকমত প্ৰদান করেছিলাম এবং তাদেররকে বিশাল রাজ্য দান করেছিলাম। (৪ নিসা : ৫৪) { ইবরাহীমের বংশধর বলতে এখানে হযরত সুলায়মান (আ)-কে বুঝানো হয়েছে। তার ছিলেন এক হাজার স্ত্রী, তাদের মধ্যে সাত শ স্বাধীন এবং তিন শ বঁাদী। আর হযরত দাউদ (আ)-এর ছিলেন একশ জন স্ত্রী, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। হযরত সুলায়মান (আ)-এর মা-যিনি ইতিপূর্বে উরিয়ার স্ত্রী ছিলেন। পরে তাকে বিবাহ করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর স্ত্রী সংখ্যার তুলনায় তাদের সংখ্যা অনেকগুণ বেশী। কালাবীও ঠিক এইরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাফিজ ইব্‌ন আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন : এক ব্যক্তি ইব্‌ন আব্বাস (রা)-কে (নফল) রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার নিকট সংরক্ষিত একটি হাদীস আছে। আপনি যদি শুনতে চান তবে আমি আপনাকে দাউদ (আ)-এর রোযা সম্পর্কে বলতে পারি। কেননা তিনি অত্যন্ত বেশী রোযা রাখতেন এবং নামায আদায় করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বীর পুরুষ; দুশমনের বিরুদ্ধে মুকাবিলা কালে তিনি কখনও পলায়ন করতেন না। তিনি একদিন অন্তর অন্তর রোযা রাখতেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম রোযা হল দাউদ (আ)-এর রোযা। তিনি সত্তরটি সুরে যাবুর তিলাওয়াত করতেন। এগুলো তার নিজেরই উদ্ভাবিত স্বর। রাত্রে যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন নিজেও কাঁদতেন এবং তাতে অন্য সবকিছুও কাঁদতো। তার মধুর সূরে সকল দুশ্চিন্তা ও ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। তুমি আরও শুনতে চাইলে আমি তাঁর পুত্র হযরত সুলায়মান (আ)-এর রোযা সম্পর্কে জানাতে পারি। কেননা, তিনি প্রতি মাসের প্রথম তিন দিন, মাঝের তিন দিন ও শেষের তিন দিন রোযা রাখতেন। এভাবে তার মাস শুরু হত রোযার মাধ্যমে। মধ্য-মাস অতিবাহিত হত রোযা রাখা অবস্থায় এবং মাস শেষ হত রোযা পালনের মাধ্যমে। তুমি যদি আরও শুনতে চাও তবে আমি তোমাকে মহিয়ষী কুমারী মাতা মরিয়ম (আ)-এর পুত্র হযরত ঈসা (আ)-এর রোযা সম্পর্কেও জানাতে পারি। তিনি সারা বছর ধরে রোযা রাখতেন, যবের ছাতু খেতেন, পশমী কাপড় পরতেন, যা পেতেন তাই খেতেন, যা পেতেন না, তা চাইতেন না। তার কোন পুত্র ছিল না যে, মারা যাবার আশংকা থাকবে কিংবা কোন ঘরবাড়ি ছিল না যে, নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকবে। যেখানেই রাত হত সেখানেই নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ভোর পর্যন্ত নামাযে রত থাকতেন। তিনি একজন ভাল তীব্রান্দায্য ছিলেন। কোন শিকারকে লক্ষ্য করে তীর ছুড়লে কখনও তা ব্যর্থ হত না। বনী ইসরাঈলের কোন সমাবেশ অতিক্রম করার সময় তাদের অভিযোগ শুনতেন ও প্রয়োজন পূরণ করে দিতেন। যদি তুমি আগ্রহী হও তবে আমি তোমাকে হযরত ঈসা (আ)-এর মা মারিয়াম বিনতে ইমরানের রোযা সম্পর্কেও জানাতে পারি। কেননা তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং দুই দিন বাদ দিতেন। তুমি যদি জানতে চাও তবে আমি তোমাকে নবী উক্ষ্মী আরাবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর রোযা সম্পর্কেও জানাতে পারি। তিনি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন এবং বলতেন, এটাই গোটা বছর রোযা রাখার শামিল। ইমাম আহমদ. আব্বাস (রা) থেকে হযরত দাউদ (আ)-এর রোযার বৃত্তান্ত মারফুরূপে বর্ণনা করেছেন।

হযরত দাউদ (আ)-এর ইনতিকাল

হযরত আদম (আ)-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা প্রসংগে পূর্বোল্লেখিত হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ যখন আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাঁর সন্তানদের বের করেন তখন হযরত আদম (আ) তাদের মধ্যে সকল নবীকে দেখতে পান। তাদের মধ্যে একজনকে অত্যন্ত উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট দেখে তিনি বলেন, হে আল্লাহ! ইনি কে? আল্লাহ জানালেন, এ তোমার সন্তান দাউদ। আদম (আ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার প্রতিপালক! তার আয়ু কত? আল্লাহ তাআলা। জানালেন, ষাট বছর। আদম (আ) বললেন, হে পরোয়ারদিগার! তার আয়ু বাড়িয়ে দিন। আল্লাহ জানালেন, বৃদ্ধি করা যাবে না; তবে তোমার নিজের আয়ু থেকে নিয়ে বাড়িয়ে দিতে পারি। হযরত আদমের নির্ধারিত আয়ু ছিল এক হাজার বছর। তা থেকে নিয়ে দাউদ (আ)-এর আয়ু আরও চল্লিশ বছর বাড়িয়ে দেয়া হল। যখন হযরত আদমের আয়ু শেষ হয়ে আসে তখন মৃত্যুর ফিরিশতা আসেন। আদম (আ) বললেন, আমার আয়ুর তো এখনও চল্লিশ বছর বাকী। দাউদ (আ)-কে দেয়া বয়সের কথা তিনি সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলেন। এভাবে আল্লাহ আদম (আ)-এর আয়ু এক হাজার বছর এবং দাউদ (আ)-এর আয়ু একশ পূর্ণ করে দেন। এ হাদীসটি ইমাম আহমদ… ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিয়ী, ইব্‌ন খুযায়মা, ইব্‌ন হিব্বান ও হাকিম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিরমিয়ী একে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন এবং হাকিম একে মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী আছে বলে উল্লেখ করেছেন। আদম (আ) -এর আলোচনা প্রসঙ্গে এ সম্পর্কে বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইব্‌ন জারীর লিখেছেন, কোন কোন আহলে কিতাবের মতে হযরত দাউদ (আ)-এর আয়ু ছিল সাতাত্তির বছর। কিন্তু এটা ভুল ও প্রত্যাখ্যাত। তাঁদের মতে হযরত দাউদের রাজত্বের মেয়াদ ছিল চল্লিশ বছর। তাঁদের এ মত গ্রহণযোগ্য। কেননা আমাদের কাছে এর পক্ষে বা বিপক্ষে কোন প্রমাণ নেই।

হযরত দাউদ (আ)-এর ইনতিকাল সম্পর্কে ইমাম আহমদ তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : দাউদ (আ) ছিলেন অত্যন্ত ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন। যখন তিনি বাইরে যেতেন তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে যেতেন, যাতে তিনি ফিরে আসা পর্যন্ত অন্য কেউ তার ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে একদিন তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। এ সময় তার স্ত্রী উকি দিয়ে দেখলেন যে, একজন পুরুষ লোক ঘরের মধ্যখানে দাড়িয়ে আছেন। তিনি প্রহরীকে জিজ্ঞেস করলেন : এ লোকটি কে? তালাবদ্ধ ঘরে কিভাবে প্রবেশ করল? কসম আল্লাহর! নবী দাউদ (আ)-এর কাছে আমরা লজ্জায় পড়ব! এমনি সময় হযরত দাউদ (আ) ফিরে এলেন এবং দেখলেন ঘরের মধ্যখানে একজন পুরুষ লোক দাঁড়িয়ে আছে। দাউদ (আ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে? লোকটি বলল, আমি সেইজন, যে কোন রাজা বাদশাহকে তোয়াক্কা করে না এবং কোন আড়ালই তাকে আটকাতে পারে না। দাউদ (আঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! তা হলে আপনি নিশ্চয়ই মালাকুল মওত? আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্যে আপনাকে স্বাগতম! এর অল্পীক্ষণ পরেই তার রূহ কবয করা হল। অতঃপর তাকে গোসল দেয়া হল ও কাফন পরান হলো। ইতিমধ্যে সূর্য উদিত হল। তখন সুলায়মান (আ) পাখীদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা দাউদ (আ)-এর উপর ছায়া করে রােখ। পাখীরা তাই করল। সন্ধ্যা হলে হযরত সুলায়মান (আ) পাখীদেরকে বললেন, তোমরা এখন পাখা সংকুচিত করে নাও। আবু হুরায়রা (রা) বলেন, পাখীরা কিভাবে তাদের পাখা মেলেছিল এবং কিভাবে বন্ধ করেছিল, তা তিনি নিজের হাত দিয়ে আমাদেরকে দেখাতে লাগলেন। দাউদ (আ)-এর উপর ঐদিন ছায়াদানে দীর্ঘ ডানা বিশিষ্ট বায পাখীর ভূমিকাই প্রধান ছিল। ইমাম আহমদ একাই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এর সনদ উত্তম এবং বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। সুদৃদী ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, দাউদ (আ) আকস্মিকভাবে ইনতিকাল করেন তার মৃত্যুর দিন ছিল শনিবার। পাখীরা তাঁর দেহের উপর ছায়া দান করে।

ইসহাক ইব্‌ন বিশর . হাসান থেকে বর্ণনা করেন যে, দাউদ (আ) একশ বছর বয়সে হঠাৎ এক বুধবারে ইনতিকাল করেন। আবুস সাকান আল-হাজারী বলেছেন, হযরত ইবরাহীম খলীল, হযরত দাউদ ও তদীয় পুত্র হযরত সুলায়মান (আঃ) তিন জনেরই মৃত্যু আকস্মিক ভাবে হয়েছিল। এ বর্ণনাটি ইব্‌ন আসাকিরের। কারো কারো বর্ণনায় আছে যে, একদা হযরত দাউদ (আ) মিহরাব থেকে নীচে অবতরণ করছিলেন, এমন সময় মৃত্যুর ফিরিশতা তাঁর সম্মুখে এসে উপস্থিত হন। হযরত দাউদ (আঃ) তাকে বললেন, আমাকে নীচে নামতে বা উপরে উঠতে দিন! তখন ফিরিশতা বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার জন্যে নির্ধারিত বছর, মাস, দিন ও রিযিক শেষ হয়ে গিয়েছে। এ কথা শুনেই দাউদ (আঃ) সেখানেই একটি সিঁড়ির উপরে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন এবং সিজদারত অবস্থায়ই তাঁর রূহ কবয করা হয়। ইসহাক ইব্‌ন বিশর ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ সূত্রে বর্ণনা করেন, গ্ৰীষ্মকালে রৌদ্রতাপের মধ্যে লোকজন হযরত দাউদ (আ)-এর জানাযায় শরীক হয়। সে দিন তার জানাযায় এত বেশী লোক সমাগম হয় যে, সাধারণ লোক ছাড়া কেবল যাজকদের সংখ্যাই ছিল চল্লিশ হাজার। এরা সবাই ছিল লম্বােটুপী (বুরনুস টুপী) পরিহিত। মূসা ও হারূন (আ)-এর পরে বনী ইসরাঈলের মধ্যে কারো জন্যে দাউদ (আ)-এর জন্যে যে শোক-তাপ প্রকাশ করা হয়, তা আর কারো জন্যে করা হয়নি। জানাযায় উপস্থিত লোকজন রৌদ্র তাপে কষ্ট পাচ্ছিল। তাই রৌদ্র থেকে বঁাচার জন্যে তারা সুলায়মান (আ)-কে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায়। সুলায়মান (আ) বের হয়ে পক্ষীকুলকে আহবান করেন।

দেন। ফলে পক্ষীকুল পরস্পর মিলিত হয়ে পাখা মেলে চারদিকে এমনভাবে ঘিরে দাঁড়াল যে, সে স্থানে বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি লোকজন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়। তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের জন্যে চিৎকার করে সুলায়মান (আঃ)-কে ফরিয়াদ জানাল। সুলায়মান (আ) বের হয়ে পাখীদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা সূর্যের তাপ যে দিক থেকে আসছে সে দিকে ছায়া দাও, আর যে দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে সে দিক থেকে সরে যাও। পাখীরা তাই করল। তখন লোকজন এক দিকে ছায়ার নীচে থাকে এবং অন্য দিকে তাদের উপর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। এটাকেই মানুষ সুলায়মান (আ)-এর কর্তৃত্বের প্রথম নিদর্শন হিসেবে দেখতে পায়। হাফিজ আবু ইয়ালা. আবুদ দারদা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-কে তাঁর সংগীদের মোঝ থেকে তুলে নেন, তারা কোন ফিৎনায় পতিত হয়নি এবং দাউদের দীনকেও পরিবর্তন করেনি। আর মাসীহর শিষ্যরা তার বিধান ও প্ৰদৰ্শিত পথের উপর দুশ বছর বহাল ছিল। এ হাদীস গরীব পর্যায়ের। এটা মারফু কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহ আছে। এর সনদে ওয়াদীন ইব্‌ন আতা হাদীস বর্ণনায় দুর্বল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *