০৩. হযরত আল-য়াসা (আ)-এর বিবরণ

হযরত আল-য়াসা (আ)-এর বিবরণ

আল্লাহ তাআলা আল-য়াসাআ-এর নাম অন্যান্য নবীর নামের সাথে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। সূরা আনআমে বলা হয়েছেঃ

আরও সৎ। পথে পরিচালিত করেছিলাম ইসমাঈল, আল-য়াসাআ, ইউনুস ও লুতকে; এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম বিশ্ব জগতের উপর প্রত্যেককে (আনআম : ৮৬)।

সূরা সাদ এ বলা হয়েছে :

স্মরণ কর, ইসমাঈল, আল-য়াসাআ ও যুল-কিফুলের কথা, এরা প্রত্যেকেই ছিল সজ্জন। (৩৮ সাদ : ৪৮)।

ইসহাক ইব্‌ন বিশর আবু হুযায়ফা…..হাসান (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইলিয়াস (আ)-এর পরে আল-য়াসাআ ছিলেন বনী ইসরাঈলের নবী। তিনি আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদের মধ্যে অবস্থান করেন। বনী ইসরাঈলকে তিনি আল্লাহর আনুগত্য করার ও ইলিয়াসের শরীআতের অনুবতী হওয়ার আহবান জানান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন যান। তার ইনতিকালের পর আগত বনী ইসরাঈলের বহু প্ৰজন্ম এ পৃথিবীতে আগমন করে। তাদের মধ্যে ব্যাপক হারে বিভিন্ন প্রকার বিদআত ও পাপাচার সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময়ে বহু অত্যাচারী বাদশাহর আবির্ভাব ঘটে। তারা আল্লাহর নবীগণকে নির্বিচারের হত্যা করে। এদের মধ্যে একজন ছিল অত্যন্ত অহংকারী ও সীমালংঘনকারী। কথিত আছে, হযরত যুল-কিফল (আঃ) এই অহংকারী বাদশাহ সম্পর্কে বলেছিলেন যে, সে যদি তওবা করে ও অন্যায় কাজ ত্যাগ করে তবে আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার। এ কারণেই তিনি যুল-কিফল বা যিম্মাদার অভিধায় অভিহিত হন।

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেছেন, আল-য়াসাআ ছিলেন আখতুবের পুত্র। কিন্তু হাফিজ আবুল কাসিম ইব্‌ন আসাকির তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থে ইয়া (L) হরফের অধীনে লিখেছেন, আল-য়াসাআর নাম আসবাত এবং পিতার নাম আদী; বংশ তালিকা নিম্নরূপ : আল-য়াসাআ আসবাত ইব্‌ন আদী ইব্‌ন শূতালিম (1=, -2) ইব্‌ন আফরাঈম (,,,! —al) ইব্‌ন ইউসুফ ইব্‌ন ইয়াকুব ইব্‌ন ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)। কেউ কেউ বলেন, তিনি ছিলেন। হযরত ইলিয়াস (আ)-এর চাচাত ভাই। কথিত আছে, হযরত আল-য়াসাআ হযরত  ইলিয়াসের সাথে কাসিয়ুন (৩৫,.L) নামক পর্বতে বালা-বাক্কা বাদশাহর ভয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। পরে উভয়ে সেখান থেকে আপনি সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর ইলিয়াস (আ) ইনতিকাল করলে আল-য়াসাআ (আ) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন এবং আল্লাহ তাকে নবুওত দান করেন। আবদুল মুনইম ইব্‌ন ইদরীস তাঁর পিতার সূত্রে ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ। থেকে এই তথ্য প্রদান করেছেন। অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেছেন যে, তিনি বানিয়াসে (CAL qu) বসবাস করতেন। ইব্‌ন আসাকির আল-য়াসাআ শব্দের বানান সম্পর্কে লিখেছেন, এ শব্দটি তিন প্রকারে উচ্চারিত হয়ে থাকে যথাঃ আল-য়াসাআ (c. JI) আল-য়াসা আল-য়াস (c.11 ) এবং আল- লায়াসাআ (e.,1)। এটা হচ্ছে একটা নবীর নামের বিভিন্নরূপ। গ্ৰন্থকার বলেন, আমরা হযরত আইয়ুব (আ)-এর আলোচনার পরে যুল-কিফল সম্পর্কে আলোচনা করে এসেছি। কারণ কথিত আছে, তিনি ছিলেন হযরত আইয়ুব (আ)-এর পুত্র।

পরিচ্ছেদ

ইব্‌ন জারীর ও অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, উপরোক্ত ঘটনার পর বনী-ইসরাঈলের মধ্যে অনেক গুরুতর ঘটনা ঘটে এবং অপরাধ সংঘটিত হয়। এমনকি বহু নবীকে তারা হত্যা করে। আল্লাহ তখন নবীগণের পরিবর্তে অত্যাচারী রাজা-বাদশাদেরকে তাদের উপর চাপিয়ে দেন। যারা তাদের উপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালার এবং নির্বিচারে তাদেরকে হত্যা করে। এছাড়া আল্লাহ তাদেরকে শক্ৰদের পদানত করে দেন। ইতিপূর্বে বনী ইসরাঈল যখন কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হত তখন তাদের ঐতিহাসিক সিন্দুকটি ( তাবৃতি) কাছে রাখত এবং যুদ্ধের ময়দানে একটি তাবুর মধ্যে তা সংরক্ষণ করত। এই সিন্দুকের বরকতে আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করতেন। এ ছিল তাদের সেই পবিত্র সিন্দুক যাতে ছিল হযরত মুসা ও হারূন (আ)-এর উত্তরসূরীদের পরিত্যক্ত বরকতময় সম্পদ ও শান্তিদায়ক বস্তু সমূহ। কিন্তু বনী ইসরাঈলের এই বিপর্যয়কালে গাজা ও আসকালান এলাকার অধিবাসীদের* সাথে তাদের এক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বনী ইসরাঈলরা পরাজয় বরণ করে। শত্রুরা বনী ইসরাঈলদের উপর নিষ্পেষণ চালিয়ে তাদের থেকে সিন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বনী ইসরাঈলের তৎকালীন বাদশাহ্র নিকট এ সংবাদ পৌছলে তার ঘাড় বেঁকে যায় এবং দুঃখে-ক্ষোভে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় বনী ইসরাঈলের অবস্থা দাঁড়ায় রাখাল বিহীন মেষপালের মত। বিচ্ছিন্নবিক্ষিপ্ত হয়ে তারা যাযাবরের ন্যায় জীবন কাটাতে থাকে। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকার পর আল্লাহ শামুয়েল (U৫-৬ এ) নবীকে তাদের মধ্যে প্রেরণ করেন। এবার তারা শক্রর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে একজন বাদশাহ নিযুক্ত করার জন্যে নবীর নিকট প্রার্থনা করে। এর পরের ঘটনা আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন; আমরা পরে তা আলোচনা করব। ইব্‌ন জারীর বলেন, ইউশা ইব্‌ন নুনের ইনতিকালের ৪৬০ বছর পর আল্লাহ শামুয়েল ইব্‌ন বালীকে নবীরূপে প্রেরণ করেন। ইব্‌ন জারীর বনী-ইসরাঈলের এই সময়কার বিস্তারিত আলোচনা প্রসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সকল বাদশাহর বিবরণ দিয়েছেন। আমরা সে আলোচনা থেকে

ইচ্ছাকৃতভাবেই বিরত রইলাম।

১. এখানে আমালিকাদেরকে বুঝানো হয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *