২৮. ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীম (আ)

ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীম (আ)

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম (আ)-এর একশ’ বছর বয়সকালে এবং ইসমাঈল (আ)-এর জন্মের চৌদ্দ বছর পর ইসহাক (আ)-এর জন্ম হয়। তাঁর মাতা সারাহকে যখন পুত্ৰ হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তাঁর বয়স ছিল নব্বই বছর। আল্লাহ বলেন :

আমি ইবরাহীমকে ইসহাকের সু-সংবাদ দিয়েছিলাম- সে ছিল একজন নবী ও সৎকর্ম পরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত। আমি ইম্বারাহীমের প্রতি ও ইসহাকের প্রতি বরকত দান করেছিলাম। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মশীল এবং কতক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী। (o* 3 SSR-SSo)

আল্লাহ কুরআনের অনেক আয়াতে ইসহাক (আ)-এর প্রশংসা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত এ মর্মের হাদীসে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : একজন সম্মানিত ব্যক্তি, যার পিতাও ছিলেন সম্মানিত, তাঁর পিতাও ছিলেন সন্মামিত এবং তাঁর পিতাও ছিলেন সম্মানিত। তিনি হলেন ইউসুফ ইব্‌ন ইয়াকুব ইব্‌ন ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীম। আহলি কিতাবগণ বলেন, ইসহাক (আ) তাঁর চল্লিশ বছর বয়সে পিতার জীবদ্দশায় রুফাকা বিনত বাৎওয়াইলকে বিবাহ করেন। রুফাকা ছিলেন বন্ধ্যা। তাই ইসহাক (আ) সন্তানের জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করেন। এরপর স্ত্রী সম্ভান-সম্ভবা হন এবং তিনি জময দুই পুত্ৰ সন্তান প্রসব করেন। তাদের প্রথমজনের নাম রাখা হয় ‘ঈসূ যাকে আরবরা ‘ঈস’ বলে তাকে। এই ঈস হচ্ছেন রূমের পিতা। দ্বিতীয় সস্তান ভূমিষ্ঠ হবার সময় থাকে তার ভাইয়ের পায়ের গোড়ালি আঁকড়ে থাকতে দেখা যায়। এই কারণে তার নাম রাখা হয়। ইয়াকুব। কেননা এ শব্দটির মূল ধাতু ( এম.A.) অর্থ গোড়ালি বা পশ্চাতে আগমনকারী। তাঁর অপর নাম ইসরাঈল, যার নামে বনী-ইসরাঈল বংশের নামকরণ করা হয়েছে।

কিতাবীগণ ৰলেন, হযরত ইসহাক (আ) ইয়াকুবের তুলনায় ঈসূকে অধিকতর ভালবাসতেন; কারণ তিনি ছিলেন প্রথম সন্তান। পক্ষাত্তরে তাদের মা রুফাকা ইয়াকুবকে বেশি ভালবাসতেন; কেননা, তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ। ইসহাক (আ) যখন বয়ােবৃদ্ধ হন এবং তাঁর দৃষ্টি-শক্তি হাস পায়, তখন তিনি পুত্র ঈসের নিকট একটি উত্তম আহাৰ্য চান। তিনি একটি পশু শিকার করে রান্না করে আনার জন্যে ঈসাকে নির্দেশ দেন। যা আহার করে তিমি তার জন্যে বরকত ও কল্যাণের দু’আ করবেন। ঈসা শিকার কাজে পারদশী ছিলেন। তাই তিনি শিকারে বেরিয়ে পড়লেন। এদিকে রুফাকা তার প্রিয় পুত্ৰ ইয়াকুবকে পিতার দু’আ লাভের জন্যে পিতার

চাহিদা অনুযায়ী দু’টি উৎকৃষ্ট ছাগল ছানা যবোহ করে খাদ্য প্রস্তুত করে ভাইয়ের পূর্বেই পিতার সম্মুখে পেশ করার আদেশ দেন। খাদ্য তৈরি হবার পর মা রুফাকা ইয়াকুবকে ঈসের পোশাক পরিয়ে দেন এবং উভয় হাতে ও কাঁধের উপরে ছাগলের চামড়া জড়িয়ে দেন। কারণ ঈসের শরীরে বেশি পরিমাণ লোম ছিল, ইয়াকুবের শরীরে সেরূপ লোম ছিল না। তারপর যখন খাদ্য নিয়ে ইয়াকুব পিতার কাছে হাযির হলেন তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কে? উত্তরে তিনি বললেন ৪ আপনার ছেলে। তখন পিতা তাকে কাছে টেনে নেন ও আলিঙ্গন করেন। তবে তিনি মুখে ব্যক্ত করলেন যে, কণ্ঠস্বর তো ইয়াকুবের মত কিন্তু শরীর ও পোশাক ঈসের বলে মনে হয়। আহার শেষে তিনি দু’আ করলেন যে, ভাইদের মধ্যে তিনি যেন অধিকতর ভাগ্যবান হন, ভাইদের উপরে ও পরবর্তী বংশধরদের উপরে যেন তার নির্দেশ ও প্রভাব কার্যকরী হয় এবং তিনি অধিক পরিমাণ জীবিকা ও সন্তানের অধিকারী হন।

পিতার নিকট থেকে ইয়াকুব চলে আসার পর তাঁর ভাই ঈস সেই খাদ্য নিয়ে পিতার কাছে হাযির হন যা খাওয়ানোর জন্যে তিনি তাকে আদেশ করেছিলেন। পিতা জিজ্ঞেস করলেন, বৎস! এ আবার তুমি কি নিয়ে এসেছ? ঈস বললেন, : এতো সেই খাদ্য যা আপনি খেতে চেয়েছিলেন। পিতা বললেন, এই কিছুক্ষণ পূর্বে কি তুমি খাদ্য নিয়ে আসনি এবং তা আহার করে কি তোমার জন্যে আমি দুআ করিনি? ঈস বললেন, : আল্লাহর কসম, আমি আসিনি। তিনি তখন বুঝতে পারলেন যে, ইয়াকুবই আমার আগে এসে এ কাজ করে গেছে। তিনি ইয়াকুবের উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন। কিতাবীদের বর্ণনা মতে, এমনকি পিতার মৃত্যুর পর তাকে হত্যা করার হুমকিও দেন। তারপর পিতার নিকট দু’আ চাইলে পিতা তার জন্যে ভিন্ন দুআ করেন। তিনি দু’আ করলেন যেন ঈসের সন্তানরা শক্ত যমীনের অধিকারী হয়, তাদের জীবিকা ও ফল-ফলাদি যেন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ইয়াকুব (আ)-এর প্রতি ঈসের হুমকির কথা তাদের মার শ্রুতিগোচর হলে তিনি ইয়াকুব (আ)-কে তাঁর ভাই অর্থাৎ ইয়াকুবের মামা লাবানের কাছে চলে যেতে নির্দেশ দেন। লাবান হারানে বসবাস করতেন। ঈসের ক্ৰোধ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার জন্যে তিনি তাকে পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তিনি লাবানের কন্যাকে বিয়ে করতেও তাঁকে বলে দেন। এরপর তিনি তার স্বামী ইসহাক (আ)-কে এ ব্যাপারে অনুমতি ও প্রয়োজনীয় উপদেশ দান এবং তার জন্য দু’আ করতে বলেন। হযরত ইসহাক তাই করলেন। ইয়াকুব (আ) ঐ দিন বিকেলেই তাদের কাছ থেকে বিদায় নেন। তারপর যেখানে পৌছলে সন্ধ্যা হয় সেখানে একটি পাথর মাথার নিচে রেখে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখেন, যমীন থেকে আসমান পর্যন্ত একটি সিঁড়ি স্থাপিত রয়েছে। ফেরেশতাগণ সেই সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করছেন। আর আল্লাহ তাকে ডেকে বলছেন : আমি তোমাকে বরকতে পরিপূর্ণ করব, তোমার সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করব, তােমাকে ও তােমার বংশধরদেরকে এই যমীনের অধিকারী বানাব। ঘুম থেকে জেগে এরূপ একটি স্বপ্নের জন্যে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং মানত করেন যে, আল্লাহ। যদি আমাকে নিরাপদে পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেন তাহলে এই স্থানে আল্লাহর উদ্দেশে একটি ইবাদতখানা নির্মাণ করব; যা কিছু রিফিক পাব তার এক-দশমাংশ আল্লাহর রাহে দান করব। তারপর সেই পাথরটি চেনার

সুবিধার্থে তার উপর কিছু তেল ঢেলে দেন। তিনি এই স্থানের নাম রাখেন। বায়তুঈল অর্থাৎ বায়তুল্লাহ। এটাই বর্তমান কালের বায়তুল মুকাদ্দাস যা হযরত ইয়াকুব (আ) পরবর্তীকালে নির্মাণ করেছিলেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পরে আসবে।

আহলি কিতাবগণ আরো বলেন যে, হযরত ইয়াকুব (আ) হারানে পৌঁছে মামার কাছে উপস্থিত হন। মামা লাবানের ছিল দুই কন্যা। বড়জনের নাম লায়্যা এবং ছোটজনের নাম রাহীল। রূপ-লাবণ্যে ছোটজনই শ্রেষ্ঠ। তাই ইয়াকুব মামার কাছে ছোটজনকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। মামা এই শর্তে বিবাহ দিতে রায়ী হন যে, সাত বছর পর্যন্ত তার মেষ পালের দেখাশোনা করতে হবে। সাত বছর অতীত হবার পর লাবান বিবাহের আয়োজন করেন। লোকজনকে দাওয়াত দেন এবং আপ্যায়িত করেন এবং রাতে জ্যেষ্ঠ কন্যা লায়্যাকে ইয়াকুবের নিকট বাসরঘরে প্রেরণ করেন। লায়্যা দেখতে কুৎসিত ও ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি-সম্পন্না ছিলেন। সকাল বেলা ইয়াকুব তার কাছে লায়্যাকে দেখতে পেয়ে মামার নিকট অভিযোগ করলেন যে, আপনি কেন আমার সাথে প্রতারণা করলেন? আমি তো আপনার কাছে রাহীলের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। উত্তরে মামা বললেন, এটা আমাদের সামাজিক রীতি নয় যে, জ্যেষ্ঠা কন্যাকে রেখে কনিষ্ঠা কন্যাকে বিয়ে দেব। এখন যদি তুমি এর বোনকে বিয়ে করতে চাও তবে আরও সাত বছর কাজ কর, তাহলে তাকেও তোমার সাথে বিয়ে দেব। সুতরাং ইয়াকুব (আঃ) আরও সাত বছর কাজ করলেন। তারপর তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যার সাথে কনিষ্ঠ কন্যাকেও ইয়াকুব (আ)-এর কাছে বিয়ে দেন। এরূপ দুই কন্যাকে একই ব্যক্তির সাথে বিবাহ দেওয়া তাদের শরীআতে বৈধ ছিল। পরবর্তীকালে তাওরাতের মাধ্যমে এ বিধান রহিত হয়ে যায়। এই একটি দলীলই রহিত হবার জন্যে যথেষ্ট। কেননা, হযরত ইয়াকুব (আ)-এর কর্মই এটা বৈধ ও মুবাহ হওয়ার প্রমাণবাহ। কারণ, তিনি ছিলেন মাসুম বা নিষ্পাপ। লাবান তাঁর উভয় কন্যার সাথে একটি করে দাসী দিয়েছিলেন। লায়্যার দাসীর নাম ছিল। যুলফা এবং রাহীলের দাসীর নাম ছিল বালহা। লায়্যার যে ঘাটতি ছিল আল্লাহ তাকে কয়েকটি সন্তান দান করে সে ঘাটতি পূরণ করেন। সুতরাং লায়্যার গর্ভে ইয়াকুব (আ)-এর প্রথম সন্তান রূবীল দ্বিতীয় সন্তান শামউন, তৃতীয় সন্তান লাব্বী এবং চতুর্থ সন্তান য়াহ্যা। রাহীলের কোন সন্তান হত না, তাই তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লেন এবং নিজের দাসী বালহাকে ইয়াকুব (আ)-এর কাছে সমৰ্পণ করলেন। ইয়াকুব (আ) দাসীর সাথে মিলিত হলে এক পুত্ৰ সন্তান জন্ম হয়। নাম রাখা হয় দান। বালহা দ্বিতীয়বার গর্ভ ধারণ করে এবং দ্বিতীয়বারও পুত্ৰ সন্তান জন্ম হয়। এর নাম রাখা হয় নায়ফতালী। এবার লায়্যাও তার দাসী যুলাফাকে ইয়াকুব (আ)-এর কাছে সমৰ্পণ করেন। যুলফার গর্ভেও দুই পুত্ৰ সন্তানের জন্ম হয়; একজনের নাম হাদ এবং অপরজনের নাম আশীর। তারপর লায়্যা নিজেও সন্তান-সম্ভবা হন এবং পঞ্চম পুত্রের মা হন। এ পুত্রের নাম রাখা হয় আয়সাখার। পুনরায় লায়্যা গর্ভবতী হলে ষষ্ঠ পুত্রের জন্ম হয় যার নাম রাখা হয় যাবিলুন। এরপর তিনি সপ্তম সন্তানরূপে এক কন্যা সন্তান প্রসব করেন যার নাম রাখা হয় দিনা। এভাবে লায়্যার গর্ভে ইয়াকুব (আ)-এর সাত সন্তানের জন্ম হয়। তারপর স্ত্রী রাহীল একটি পুত্ৰ সন্তানের জন্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করেন। আল্লাহ তাঁর প্রার্থীনা কবুল করেন। ফলে আল্লাহর নবী ইয়াকুব (আ)-এর ঔরসে তাঁর গর্ভে এক সুন্দর সুশ্ৰী মহান পুত্ৰ সন্তান জন্মলাভ করেন যার নাম রাখা হয় ইউসুফ।

8VDVՆ

এ পরিবারের সকলেই হারানে বসবাস করতে থাকেন। ইয়াকুব (আ) মামার উভয় কন্যাকে বিবাহ করার পর আরও ছয় বছর পর্যন্ত তার মেষ চরান। অর্থাৎ সর্বমোট বিশ বছর তিনি মামার কাছে অবস্থান করেন। তখন হযরত ইয়াকুব (আ) নিজ পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্যে মামার কাছে অনুমতি চান। মামা তাকে বললেন, তোমার কারণে আমার ধন-সম্পদে অনেক বরকত হয়েছে। অতএব, আমার সম্পদের যে পরিমাণ ইচ্ছে, তুমি আমার কাছে চেয়ে নাও। ইয়াকুব (আ) বললেন, তাহলে এই বছরে আপনার বকরীর যতগুলো বাচ্চা হবে তা থেকে যেগুলোর রং হবে সাদা-কালো ফোটা বিশিষ্ট, সাদা-কালো মিশ্ৰিত, কালো অংশ বেশি ও সাদা অংশ কম কিংবা মাথার দু’দিকে টাকপড়া সাদা এ জাতীয় বাচ্চাগুলো আমাকে দিন। মামা তার দাবি মেনে নেন। সে মতে মামার ছেলেরা পিতার মেষ-পাল থেকে এ জাতীয় বকরীগুলো বেছে বেছে আলাদা করে নিলেন এবং সেগুলোকে পিতার মেষ-পাল থেকে তিন দিনের দূরত্বে নিয়ে যান। যাতে করে ঐ জাতীয় বাচ্চা জন্ম হতে না পারে। এ দেখে ইয়াকুব (আ) সাদা রং-এর তাজা বাদাম ও দালাব নামক ঘাস সংগ্ৰহ করলেন এবং সেগুলো ছিড়ে ঐসব বকরীর খাওয়ার পানিতে ফেললেন। উদ্দেশ্য এই যে, বকরী ঐ দিকে তাকালে ভীত হবে এবং পেটের মধ্যের বাচ্চা নড়াচড়া করবে। ফলে সে সব বাচ্চা উপরোক্ত রং-বিশিষ্ট হয়ে জন্মাবে বস্তৃত এটা ছিল একটি অলৌকিক ব্যাপার এবং ইয়াকুব নবীর অন্যতম মু’জিযা। এভাবে নবী ইয়াকুব (আ) প্রচুর সংখ্যক বকরী, পশু ও দাস-দাসীর মালিক হন এবং এ কারণে তাঁর মামার ও মামার ছেলেদের চেহারা বিবৰ্ণ হয়ে যায়, যেন ইয়াকুব (আ)-এর কারণে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

আল্লাহ ওহীযোগে ইয়াকুব (আ)-কে নির্দেশ দেন যে, তুমি তোমার জন্মভূমিতে নিজ জাতির কাছে চলে যাও। এ সময় আল্লাহ তাকে সাহায্যের আশ্বাস প্ৰদান করেন। অতঃপর ইয়াকৃর্ব (আ) নিজ স্ত্রী-পুত্র-পরিজনের কাছে বিষয়টি পেশ করেন। তারা স্বতঃস্ফৰ্তভাবে তাঁর আনুগত্যের পক্ষে সাড়া দেন। সুতরাং ইয়াকুব (আ) তাঁর পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদ সাথে নিয়ে রওয়ানা হয়ে পড়েন। আসার সময় স্ত্রী রাহীল তার পিতার মূৰ্তিসমূহ লুকিয়ে নিয়ে আসেন। তারা যখন ঐ এলাকা অতিক্রম করেন তখন লাবান (রাহীলের পিতা) ও তাঁর সম্প্রদায় তাদের কাছে এসে উপস্থিত হন। লাবানকে না জানিয়ে আসার জন্যে তিনি ইয়াকুব (আ)-কে মৃদু ভৎসনা করে বললেন, আমাকে জানিয়ে আসলে ধুমধামের সাথে কন্যাদের ও তাদের সন্তানদের বিদায় সম্বর্ধনা জানাতে পারতাম। ঢোল-তবলা ও বাদ্য-যন্ত্র বাজিয়ে আমোদ-ফুর্তি করে বিদায় দিতাম। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার মূর্তি কেন নিয়ে এসেছ? মূর্তির ব্যাপারে ইয়াকুব (আ) কিছুই জানতেন না। তাই তিনি অস্বীকার করে বললেন, আমরা তো মূর্তি আনিনি। লাবান তাঁর কন্যা ও দাসীদের অবস্থান স্থল ও জিনিসপত্র তল্লাশি করলেন। কিন্তু কিছুই পেলেন না। রাহীল ঐ মূর্তিটি নিজ বাহনের পৃষ্ঠদেশে বসার স্থানে গদির নীচে রেখে দিয়েছিলেন। তিনি সে স্থান থেকে উঠলেন না এবং ওযর পেশ করে জানালেন যে, তিনি ঋতুবতী। সুতরাং তিনি তা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলেন।

অবশেষে শ্বশুর-জামাতা উভয়ে তথায় অবস্থিত জালআদি নামক একটি টিলার কাছে পরস্পরে এ মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন যে, ইয়াকুব (আ) লাবানের কন্যাদেরকে ত্যাগ করবেন না

8ՖԳ

এবং তাদের বর্তমানে অন্য কাউকে বিয়ে করবেন না এবং এই টিলা অতিক্রম করে লাবান ও ইয়াকুব কেউই অন্যের দেশে যাবেন না। অতঃপর খাবার পাক হল। উভয় পক্ষ একত্রে আহার করলেন এবং একে অপরকে বিদায় জানিয়ে প্রত্যেকে স্ব-স্ব দেশের পানে যাত্রা করলেন। ইয়াকুব (আ) সাঈর এলাকা পর্যন্ত পৌছলে ফেরেশতাগণ এসে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। ইয়াকুব (আ) সেখান থেকে একজন দূতকে তার ভাই ঈসের নিকট প্রেরণ করেন, যাতে ভাই তাঁর প্রতি সদয় হন এবং কোমল আচরণ করেন। দূত ফিরে এসে ইয়াকুব (আ)-কে এই সংবাদ দিল যে, ঈস চারশ’ পদাতিক সৈন্যসহ আপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ সংবাদ পেয়ে ইয়াকুব (আ) ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। আল্লাহর কাছে দু’আ করেন, সালাত আদায় করেন, কাকুতি-মিনতি জানান এবং ইতিপূর্বে প্রদত্ত সাহায্যের প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করেন এবং ঈসের অনিষ্ট থেকে তার কাছে আশ্রয় প্রার্থীনা করেন। এছাড়া তিনি তার ভাইকে দেয়ার জন্যে বিপুল পরিমাণ উপটৌকন তৈরি রাখলেন। উপঢৌকনের মধ্যে ছিল দু’শ’ ছাগী, বিশটা ছাগল, দু’শ’ ভেড়ী, বিশটা ভেড়া, ত্ৰিশটা দুধেল উটনী, চল্লিশটা গাই, দশটি ষাড়, বিশটি গান্ধী ও দশটা গাধা। তারপর তিনি এ পশুগুলোর প্রত্যেক শ্রেণীকে আলাদা আলাদাভাবে হাকিয়ে নেওয়ার জন্যে রাখালদেরকে নির্দেশ দেন এবং এর এক-একটি শ্রেণী থেকে আর একটি শ্রেণীর মাঝে দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এরপর তাদেরকে বলে দেন যে, ঈসের সাথে প্রথমে যার সাক্ষাৎ হবে এবং ঈস বলবেন, তুমি কার লোক এবং এ পশুগুলো কার? তখন উত্তর দিবে, আপনার দাস ইয়াকুবের। মনিব-ঈসের জন্যে তিনি এগুলো হাদিয়াস্বরূপ পাঠিয়েছেন। এরপর যার সাথে দেখা হবে এবং তার পরে যার সাথে সাক্ষাৎ হবে সবাই ঐ একই উত্তর দিবে। আর তোমরা প্রত্যেকেই এ কথা বলবে যে, তিনি আমাদের পেছনে আসছেন।

সবাইকে বিদায় করার দুইদিন পর ইয়াকুব (আ)-সহ তাঁর দুই স্ত্রী, দুই দাসী এবং এগার পুত্র যাত্রা শুরু করেন। তিনি রাত্রিকালে পথ চলতেন এবং দিনের বেলা বিশ্রাম নিতেন। যাত্রার দ্বিতীয় দিন প্রভাতকালে ইয়াকুব (আঃ)-এর সম্মুখে জনৈক ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে দেখা দেন। ইয়াকুব (আ) তাঁকে একজন পুরুষ মানুষ বলে ধারণা করেন। ইয়াকুব (আ) তাকে পরাস্ত করার জন্যে অগ্রসর হন এবং ধস্তাধস্তির মাধ্যমে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ইয়াকুব (আ) জয়ী হন। তবে ফেরেশতার দ্বারা ইয়াকুব (আ) তার উরুতে আঘাত প্রাপ্ত হন। তখন তিনি খোড়াতে থাকেন। প্ৰভাতের আলো ফুটে উঠলে ফেরেশতা ইয়াকুব (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নাম কি? উত্তরে তিনি বললেন, আমার নাম ইয়াকুব (আ)। ফেরেশতা বললেন, এখন থেকে আপনার নাম হবে ইসরাঈল। ইয়াকুব (আ) জিজ্ঞেস করলেন, আপনার পরিচয় কি এবং আপনার নাম কি? প্রশ্ন করার সাথেই ফেরেশতা অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তখন ইয়াকুব (আ) বুঝতে পারলেন যে, ইনি ফেরেশতা। পায়ে আঘাত পেয়ে ইয়াকুব (আ) খোড়া হয়ে আছেন। বনী-ইসরাঈলগণ এ কারণে উরু-হাঁটুর মাংসপেশী খান না।

তারপর ইয়াকুব (আ) দেখতে পান যে, তার ভাই ঈস চারশ’ লোকের এক বাহিনী নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তিনি পরিবারবর্গকে পেছনে রেখে সম্মুখে যান। ঈস সম্মুখে উপস্থিত হলে তাকে দেখেই ইয়াকুব (আ) সাতবার তাকে সিজদা করেন। এই সিজদা ছিল সে যুগে সাক্ষাৎকালের সালাম বা অভিবাদন (সম্মান সূচক) এবং তাদের শরীআতে এ সিজদা বৈধ ছিল।

8voby

যেমন ফেরেশতারা হযরত আদম (আ)-কে সম্মানসূচক সিজদা করেছিলেন এবং হযরত ইউসুফ (আ)-কে তার পিতা-মাতা ও ভাইয়েরা সিজদা করেছিলেন। এ সম্পর্কে আলোচনা সামনে আসবে। ইয়াকুব (আ)-এর এ আচরণ দেখে ঈস তার কাছে গেলেন এবং তাঁকে আলিঙ্গন করে চুমো খেলেন এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তারপর চোখ তুলে তাকাতেই নারী ও বালকদেরকে দেখে ঈস ইয়াকুব (আ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, এদেরকে তুমি কোথায় পেলে? ইয়াকুব (আ) বললেন, আল্লাহই আপনার দাসকে এসব দান করেছেন। এ সময় দাসীদ্বয় ও তাদের সন্তানরা ঈসকে সিজদা করল। এরপর লায়্যা ও তার সন্তানরা সিজদা করে এবং শেষে রাহীল ও তার পুত্র ইউসুফ এসে ঈসকে সিজদা করেন। এরপর ইয়াকুব (আ) তাঁর ভাইকে দেয়া হাদিয়াগুলো গ্ৰহণ করার জন্য বারবার অনুরোধ জানালে ঈস তা গ্ৰহণ করেন। এরপর ঈস সেখান থেকে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন, তখন তিনি আগে-আগে ছিলেন এবং ইয়াকুব ও তার পরিবার-পরিজন, দাস-দাসী ও পশু সম্পদসহ তার পিছে পিছে সাঈর পর্বতের উদ্দেশে যাত্ৰা

कद्भक्तान्।

সাহ্র নামক স্থান অতিক্রমকালে তিনি সেখানে একটি ঘর নির্মাণ করেন এবং পশুগুলোর জন্যে ছাউনি তৈরি করেন। এরপর শাখীম এলাকার উর-শালীম (L৯৩৬) নামক গ্রামের সন্নিকটে অবতরণ করেন এবং শাখীম ইব্‌ন জামুর-এর এক খণ্ড জমি একশ’ ভেড়ার বিনিময়ে ক্রিয় করেন। সেই জমিতে তিনি তাঁবু স্থাপন করেন এবং একটি কুরবানীগাহ তৈরি করেন। তিনি এর নাম রাখেন ‘ঈল-ইলাহে ইসরাঈল’। এই কুরবানীগাহটি আল্লাহ তার মাহাত্ম্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। এটাই বর্তমান কালের বায়তুল মুকাদাস। পরবর্তীকালে সুলায়মান ইব্‌ন দাউদ (আঃ) এ ঘরের সংস্কার করেন। এটাই সেই চিহ্নিত পাথরের জায়গা যার উপর তিনি ইতিপূর্বে তেল রেখেছিলেন—যার আলোচনা পূর্বে করা

QG32

আহলি কিতাবগণ এখানে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, যা ইয়াকুব (আ)-এর স্ত্রী লায়্যার পক্ষের কন্যা দীনা সম্পর্কিত। ঘটনা এই যে, শাখীম ইব্‌ন জামুর দীনাকে জোরপূর্বক তার বাড়িতে ধরে নিয়ে যায়। তারপর দীনার পিতা ও ভাইদের কাছে তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। দীনার ভাইয়েরা জানাল যে, তোমরা যদি সকলে খ্যাতনা করাও তাহলে আমাদের সাথে তোমাদের বৈবাহিক সম্পর্ক হতে পারে। কেননা, খাতুনাবিহীন লোকদের সাথে আমরা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করি না। শাখীমের সম্প্রদায়ের সবাই সে আহবানে সাড়া দিয়ে খ্যাতনা করাল। খাতুন্না করাবার পর তৃতীয় দিবসে তাদের ভীষণ যন্ত্রণা শুরু হয়। এই সুযোগে ইয়াকুব (আ)-এর সন্তানগণ তাদের উপর হামলা করে। শাখীম ও তার পিতা জামূরসহ সকলকে হত্যা করে ফেলে। হত্যার কারণ ছিল তাদের অসদাচরণ, তদুপরি তারা ছিল মূর্তিপূজারী, কাফির। এ কারণে ইয়াকুব (এ)-এর সন্তানরা তাদেরকে হত্যা করে এবং তাদের ধন-সম্পদ গনীমত হিসেবে নিয়ে নেয়।

এরপর ইয়াকুব (আ)-এর কনিষ্ঠ স্ত্রী রাহীল পুনরায় সন্তান-সম্ভবা হন এবং পুত্র বিন-য়ামীন জন্মগ্রহণ করেন। রাহীল বিন-য়ামীন প্রসব করতে গিয়ে খুবই কষ্ট পান। ফলে সন্তান ভূমিষ্ঠ

8Օ5

হওয়ার অব্যবহিত পরে রাহীলের ইনতিকাল হয়। ইয়াকুব (আ) আফরাছ অর্থাৎ বায়তু-লাহমে (বেথেলহামে) তাকে দাফন করেন। তিনিই তার কবরের উপর একটি পাথর রেখে দিয়েছিলেন যা আজও বিদ্যমান আছে। হযরত ইয়াকুব (আ)-এর সন্তানের মধ্যে বারজন পুত্র। এদের মধ্যে লায়্যার গর্ভে র্যাদের জন্ম হয় তাঁরা হচ্ছেন (১) রূীবীল, (২) শাম’উন, (৩) লাবী, (৪) য়াহ্যা, (৫) আয়াখার ও (৬) যায়িলুন। রাহীলের গর্ভে জন্ম হয়। (৭) ইউসুফ ও (৮) বিন-য়ামীনের। রাহীলের দাসীর গর্ভে জন্ম হয় (৯) দান ও (১০) নোয়ফতালী-এর। লায়্যা দাসীর গর্ভে জন্ম হয় (১১) হাদ ও (১২) আশীর-এর। অতঃপর হযরত ইয়াকুব (আ) কানআনের হিবরূন গ্রামে চলে আসেন এবং তথায় পিতার সান্নিধ্যে থাকেন। হযরত ইবরাহীম (আ)-ও এখানেই বসবাস করতেন। রোগাক্রান্ত হয়ে হযরত ইসহাক (আ) একশ’ আশি বছর বয়সে ইনতিকাল করেন। তাঁর পুত্রদ্বয় ঈস ও ইয়াকুব (আ) তাঁকে তার পিতার পূর্বোল্লেখিত তাদের কেনা জমিতে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর কবরের পাশে সমাহিত করেন।

ইসরাঈলের জীবনে সংঘটিত আশ্চৰ্য ঘটনাবলী

ইসরাঈলের জীবনে যে সব আশ্চর্য ঘটনা সংঘটিত হয় তন্মধ্যে ইউসুফ ইব্‌ন রাহীলের ঘটনা অন্যতম। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল করেছেন, যাতে মানুষ এর থেকে গবেষণা করে উপদেশ, শিষ্টাচার ও সূক্ষ্ম তত্ত্ব লাভ করতে পারে।

আলিফ-লাম-রা : এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত। আমি এটি অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুরআন যাতে তোমরা বুঝতে পার। আমি তোমার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি, ওহীর মাধ্যমে তোমার নিকট কুরআন প্রেরণ করে; যদিও এর পূর্বে তুমি ছিলে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত। (১২ সূরা ইউসুফ : ১-৩)

হরূফে মুকাত্তাআত সম্পর্কে আমরা সূরা বাকারার তাফসীরের শুরুতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে কেউ জানতে চাইলে সেখানে দেখে নিতে পারেন। তারপর এ সূরা সম্পর্কে তাফসীরের মধ্যে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করেছি। তার কিছুটা আমরা এখানে অতি

সংক্ষেপে আলোচনা করব।

তার সংক্ষিপ্ত-সার হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাঁর বান্দা ও রাসূলের উপর উচ্চাংগ আরবী ভাষায় যে মহান কিতাব নাযিল করেছেন তার প্রশংসা করছেন। এর পাঠ ও বক্তব্য এতই সুস্পষ্ট, যে কোন বুদ্ধিমান ধী-শক্তিসম্পন্ন লোক সহজেই তা অনুধাবন করতে পারে। সুতরাং আসমানী

কিতাবসমূহের মধ্যে এ কিতাবই শ্রেষ্ঠ। ফেরেশতাকুলের শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা। এটি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানবের উপর সর্বোত্তম সময়ে ও সর্বোৎকৃষ্ট স্থানে নাযিল করেছেন।

88 Օ

الخلق فی اشرف زمان و مکان . যে ভাষায় তা নাযিল হয়েছে তা অতি প্ৰাঞ্জল এবং তার বক্তব্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আহসানুল কাসাস বা উত্তম বর্ণনার সম্পর্ক যদি অতীত কিংবা ভবিষ্যতের ঘটনার সাথে হয়, তবে তার অর্থ হবে মানুষ সে বিষয়ে যে মতভেদ করছে। তন্মধ্যে সঠিক পন্থা কি স্পষ্টভাবে বলে দেয়া এবং ভুল ও বাতিল মতের খণ্ডন করা। আর যদি তার সম্পর্ক আদেশ ও নিষেধের সাথে হয় তাহলে তার অর্থ হবে ভারসাম্যপূর্ণ শরীআত ও বিধান, উত্তম পৃদ্ধতি এবং পেষ্ট ও ন্যায়ানুগ ফয়সালা। অন্য আয়াতে এর দৃষ্টান্ত নিম্নরূপ : ‘$1{Z3 (44 464_A্যর্থ ঐ…….। সত্য ও ন্যায়ের দিক থেকে তােমার প্রতিপালকের বাণী সম্পূর্ণ। (৬): ১১৫)

অর্থাৎ সংবাদ ও তথ্য দানের ক্ষেত্রে এটা সত্য আর আদেশ ও নিষেধের ক্ষেত্রে এটা ন্যায়নিষ্ঠ। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন :

আমি তোমার কাছে উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি। ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে। এ কুরআন প্রেরণ করেছি। যদিও এর আগে তুমি ছিলে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত। (১২ : ৩)

অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমার কাছে ওহী প্রেরিত হচ্ছে সে বিষয়ে অনবহিত ছিলে।

অনুরূপভাবে আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন :

এ ভাবে আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি। রূহ তথা আমার নির্দেশ। তুমি তো জানতে না কিতাব কি এবং ঈমান কি? বরং আমি একে করেছি আলো-যা দিয়ে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। তুমি তো প্রদর্শন কর কেবল সরল পথ। সে আল্লাহর পথ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার মালিক। জেনে রেখ, সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (৪২ : ৫২-৫৩)

আল্লাহ বলেন :

এ ভাবেই আমি তোমার কাছে সেই সব ঘটনার সংবাদ দেই, যা পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল। আর আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে উপদেশ দান করেছি। যে এর থেকে বিমুখ হবে সে কিয়ামতের দিন মহাভার বহন করবে। সেখানে তারা স্থায়ী হয়ে থাকবে। কিয়ামতের দিন এই বোঝা তাদের জন্যে কতই না মন্দ! (২০ : ৯৯-১০১)

অর্থাৎ এই কুরআন বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি অন্য কিতাবের অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তিই এ সতর্কবাণীর যোগ্য হবে। মুসনাদে আহমদ ও তিরমিয়ী শরীফে হযরত আলী (রা) থেকে মারফ’ ও মওকুফ উভয়ভাবে বর্ণিত হাদীসে এ কথাই বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি কুরআন বাদে অন্য কিছুতে হিদায়ত অন্বেষণ করবে তাকে আল্লাহ পথভ্ৰষ্ট করবেন। ইমাম আহমদ (র) জাবির (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, একদা হযরত উমর (রা) আহলি কিতাবদের থেকে প্রাপ্ত একখানি কিতাব নিয়ে রাসূল (সা)-এর কাছে আসেন এবং তা তাঁকে পড়ে শোনান। রাসূলুল্লাহ (সা) ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে বললেন, ‘ওহে ইবনুল-খাত্তাব! কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা না করেই কি তোমরা এতে নিমগ্ন হয়ে পড়েছি? সেই সত্তার কসম করে বলছি, যার হাতের মুঠোয় আমার জীবন। আমি তোমাদের কাছে এক উজ্জ্বল আলোকদীপ্ত পরিচ্ছন্ন দীন নিয়ে এসেছি। আহলি কিতাবদের কাছে যদি কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস কর এবং তারা কোন কিছুকে হক বলে। তবে তোমরা তা মিথ্যা জানবে কিংবা তারা যদি কোন কিছুকে বাতিল বলে, তবে তোমরা তা সত্য বলে জানবে। সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন, যদি মূসা (আ) জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার আনুগত্য না করে তারও উপায় থাকতো না।’

এ হাদীছ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমদ (র) ভিন্ন এক সূত্রে এ হাদীসটি হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন :

যে সত্তার হাতে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম, তোমাদের মাঝে যদি নবী মূসা বর্তমানে থাকতেন। আর আমাকে বাদ দিয়ে তোমরা তার অনুসরণ করতে, তবে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হতে। তোমরা আমারই উম্মত আর আমিই তোমাদের নবী |

এই হাদীসের সনদ ও মতন সূরা ইউসুফের তাফসীরে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদীসটির কোন কোন বর্ণনায় এরূপ এসেছে যে, রসূলুল্লাহ (সা) একদা জনসমক্ষে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, হে জনমণ্ডলী! আমাকে সংক্ষিপ্ত বাক্যে ব্যাপক কথা বলার শক্তি দান করা হয়েছে, চূড়ান্ত কথা বলার শক্তি দেওয়া হয়েছে, অতি সংক্ষেপ করার ক্ষমতা আমাকে প্ৰদান করা হয়েছে। একটি সুস্পষ্ট উজ্জ্বল জীবন ব্যবস্থা আমাকে দেওয়া হয়েছে। অতএব, না বুঝে-শুনে নির্বোধের ন্যায় অন্য কিছুতে প্রবিষ্ট হয়ে না। নির্বোধি লোকদের কর্মকাণ্ড যেন তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে। অতঃপর তিনি সেই লিপিটি আনতে বলেন এবং একটি একটি করে এর প্রতিটি অক্ষর মুছে ফেলা হয়।

 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *