২৫. হযরত ইবরাহীম খলীল (আ)-এর প্রশংসায় আল্লাহ ও তার রাসূল (সা)

হযরত ইবরাহীম খলীল ()-এর প্রশংসায় আল্লাহ ও তার রাসূল (সা)

এ প্রসংগে আল্লাহ বলেন? – وإنرابُتُلى إثر هيمَ رَيّة بكلمايت فائتهنَّ قَالَ إِنَّى جَاعلك للكأس إمامًا.

قال ومن ذرّئتى قال لأيضًال عهدى الظالمين. স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল। আল্লাহ বললেন, আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করছি, সে বলল, আমার বংশধরগণের মধ্য হতেও? আল্লাহ বললেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের প্রতি

প্রযোজ্য নয়। (সূরা বাকারা : ১২৪)

আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-কে যেসব কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিলেন, তিনি সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আল্লাহ তাকে মানব জাতির নেতৃত্ব দান করেন। যাতে তারা তাঁর অনুকরণ ও অনুসরণ করতে পারে। ইবরাহীম (আ) এই নিয়ামত তার পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে অব্যাহত রাখার জন্যে আল্লাহর নিকট দু’আ করেন। আল্লাহ তার প্রার্থীনা শুনেন এবং জানিয়ে দেন যে, তাকে যে নেতৃত্ব দেয়া হল তা জালিমরা লাভ করতে পারবে না, এটা কেবল তার সন্তানদের মধ্যে আলিম ও সৎকর্মশীলদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

যেমন আল্লাহ বলেছেন :

আমি ইবরাহীমকে দান করলাম। ইসহাক ও ইয়াকুব এবং তার বংশধরদের জন্যে স্থির করলাম নবুওত ও কিতাব, আমি তাকে দুনিয়ায় পুরস্কৃত করেছিলাম। আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম হবে। (২৯ আন-কাবৃত : ২৭)

এবং তাকে দান করেছিলাম। ইসহাক ও ইয়াকুব ও ওদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম, পূর্বে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকেও; আর এভাবেই সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি এবং যাকারিয়া, য়াহয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম, এরা সকলে সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত। আরও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম ইসমাঈল, আল-য়াসা’আ, ইউনুস ও লুতকে; এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম বিশ্ব জগতের উপর প্রত্যেককে এবং এদের পিতৃ-পুরুষ, বংশধর এবং ভ্রাতৃবৃন্দের কতককে; তাদেরকে মনোনীত করেছিলাম এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলাম। (সূরা আনআম : ৮৪-৮৭)

প্ৰসিদ্ধ মতে, و من كزيته (তাঁর বংশধরদের) বলতে এখানে হযরত ইবরাহীম (আ)-কে

ーフ বুঝান হয়েছে। হযরত লুত (আ) যদিও হযরত ইবরাহীম (আ)-এর ভাতিজা। তবুও অন্যদের প্রাধান্য হেতু তাকেও বংশধর হিসাবে বলা হয়েছে। অপর একদল আলিমের মতে, ‘তার’ বলতে হযরত নূহ (আ)-কে বুঝান হয়েছে। পূর্বে আমরা নূহ (আ)-এর আলোচনায় এ বিষয়ের উল্লেখ করেছি। আল্লাহই সৰ্বজ্ঞ। আল্লাহর বাণী :

আমি নূহ এবং ইবরাহীমকে রাসূল রূপে প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদের বংশধরগণের জন্যে স্থির করেছিলাম নবুওত ও কিতাব। (সূরা হাদীদ : ২৬)

হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পরে আসমান থেকে যত কিতাব যত নবীর উপর নাযিল হয়েছে, তারা সকলেই নিশ্চিতভাবে তাঁর বংশধরদের অন্তর্ভুক্ত। এটা এমন একটা সম্মান যার কোন তুলনা হয় না। এমন একটা সুমহান মর্যাদা যার তুল্য আর কিছুই নেই। কারণ, হযরত ইবরাহীম (আ)-এর ঔরসে দুই মহান পুত্ৰ-সন্তানের জন্ম হয়। হাজেরার গর্ভে ইসমাঈল এবং সারােহর গর্ভে ইসহাক। ইসহাকের পুত্ৰ ইয়াকুব তাঁর অপর নাম ছিল ইসরাঈল। পরবর্তী বংশধরগণ এই ইসরাঈলের নামেই বনী ইসরাঈল নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই ইসরাঈলী বংশে এতো বিপুল সংখ্যক নবীর আগমন ঘটে, যাদের সঠিক সংখ্যা তাদেরকে প্রেরণকারী আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই জানেন না। অব্যাহতভাবে এই বংশেই নবী-রাসূলগণ আসতে থাকেন এবং হযরত ঈসা ইব্‌ন মারিয়াম (আ.) পর্যন্ত পৌঁছে সে ধারার সমাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ ঈসা। ইব্‌ন মারিয়াম (আ) ইসরাঈল বংশের শেষ নবী। অপরদিকে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর সন্তানগণ আরবের বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে আরব ভূমিতেই বসবাস করতে থাকেন। তাঁর সন্তানদের মধ্যে সর্বশেষ নবী খাতামুল আম্বিয়া, বনী আদমের শ্রেষ্ঠ সন্তান, দুনিয়া ও আখিরাতের গৌরব রবি মুহাম্মদ ইব্‌ন আবদুল্লাহ ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিব ইব্‌ন হাশিম আল কুরায়শী আল-মক্কী ওয়াল মাদানী ব্যতীত অন্য কোন নবীর আগমন ঘটেনি। ইনিই হলেন সেই মহামানব যার দ্বারা সমগ্র মানব জাতি গৌরবান্বিত। আদি-অন্ত সকল মানুষের ঈর্ষার পাত্র।

V9ԳՆ

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :

অর্থাৎ—’আমি এমন এক মর্যাদাপূর্ণ স্থানে প্রতিষ্ঠিত হৰ যে, আমার কাছে পৌছার জন্যে প্রত্যেকেই লালায়িত হবে; এমনকি ইবরাহীম (আ)-ও।’ এই বাক্যের দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা) প্রকারান্তরে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়

যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পরে অন্য সব মানুষের মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাতে হযরত ইবরাহীম (আ)-ই শ্ৰেষ্ঠ মানুষ ও সম্মানিত পুরুষ।

ইমাম বুখারী (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) হাসান (রা)-কে কোলে নিয়ে বলতেন, আমি তোমাদের দুই ভাইয়ের জন্যে সেরূপ আশ্রয় চাই, যেরূপ আশ্রয় চেয়েছিলেন তোমাদের আদি পিতা ইবরাহীম (আ) ইসমাঈল ও ইসহাকের জন্যে। আমি আশ্রয় চাই আল্লাহ্র পরিপূর্ণ কালেমাহ দ্বারা প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত সরীসৃপ থেকে এবং প্রত্যেক ক্ষতিকর চােখের দৃষ্টি থেকে। সুন্নান হাদীসের গ্রন্থকারগণও মানসূর (র) সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন :

. যখন ইবরাহীম বলল, হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর আমাকে দেখাও। তিনি বললেন, ‘তবে কি তুমি বিশ্বাস করনি? সে বলল, কেন করব না, তবে এটি কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্যে। তিনি বললেন, তবে চারটি পাখি লও এবং সেগুলোকে তোমার বশীভূত করে লও। তারপর তাদের এক এক অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন কর। তারপর তাদেরকে ডাক দাও ওরা দ্রুতগতিতে তোমার নিকট আসবে। জেনে রেখো, আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাকারা : ২৬০)

আল্লাহর নিকট হযরত ইবরাহীম (আ)-এর এই প্রশ্ন সম্পর্কে মুফাসসিরগণ বহু কথা লিখেছেন, আমরা তাফসীর গ্রন্থে সে সবের বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সারকথা এই যে, ইবরাহীম (আ)-এর প্রার্থীনা আল্লাহ। কবুল করেন। আল্লাহ তাঁকে চার প্রকার পাখি সংগ্ৰহ করার নির্দেশ দেন। এই চার প্রকার পাখি কি কি ছিল সে বিষয়ে মুফাসসিরগণের মতভেদ আছে। যাই হোক, উক্ত পাখিগুলোকে কেটে তাদের মাংস ও পাখা ইত্যাদি খণ্ড-বিখণ্ড করে সবগুলো মিলিয়ে মিশিয়ে চারটি ভাগে বিভক্ত করে এবং এক এক ভাগ এক এক পাহাড়ে রাখতে বলেন। তারপর প্রত্যেকটি পাখির নাম ধরে আল্লাহর নামে ডাকতে বলেন। ইবরাহীম (আঃ) যখন একটি একটি করে পাখির নাম ধরে ডাকেন, তখন প্রত্যেক পাহাড় থেকে ঐ পাখির খণ্ডিত মাংস ও পাখা উড়ে এসে একত্রিত হতে থাকে এবং পূর্বে যেরূপ ছিল সেরূপ পূর্ণাঙ্গ পাখিতে পরিণত হতে থাকে। আর ইবরাহীম (আ) সেই মহান সত্তার কুদরত ও ক্ষমতা প্ৰত্যক্ষ করেন, যিনি কোন কিছুকে হও

C)이

(কুন) বললে সাথে সাথেই তা হয়ে যায়। ইবরাহীম (আ)-এর ডাকের সাথে ঐ পাখিগুলো তার দিকে দৌড়িয়ে আসতে থাকে। উড়ে আসার চেয়ে দৌড়ে আসার মধ্যে আল্লাহর কুদরত অধিক সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ইবরাহীম (আ) পাখিগুলোর মাথা কেটে নিজের হাতে রেখে দিয়েছিলেন। বাকি অংশ পাহাড় থেকে উড়ে আসলে তিনি মাথা ফেলে দিতেন। ফলে মাথাগুলো সংশ্লিষ্ট পাখির দেহের সাথে গিয়ে লেগে যেত। অতএব, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহ মৃতকে জীবিত করতে পারেন এ ব্যাপারে ইবরাহীম (আ)-এর ইলমে ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস) ছিল। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি তা খোলা চোখে দেখতে চেয়েছিলেন মাত্র। যাতে ইলমে ইয়াকীন’ ‘আয়নুল ইয়াকীনে’ উন্নীত

হয়। আল্লাহ তাঁর প্রার্থীনা মঞ্জুর করেন ও আশা পূরণ করেন। আল্লাহর বাণী :

হে কিতাবিগণ! ইবরাহীম সম্বন্ধে কেন তোমরা তর্ক কর, অথচ তাওরাত ও ইনজীলি তো তার পরেই অবতীর্ণ হয়েছিল? তোমরা কি বুঝি না? দেখ, যে বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞান আছে তোমরাই তো সে বিষয়ে তর্ক করেছ, তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোনই জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কেন তর্ক করছ? আল্লাহ জ্ঞাত আছেন এবং তোমরা জ্ঞাত নাও। ইবরাহীম ইহুদীও ছিল না, খৃস্টানও ছিল না; সে ছিল একনিষ্ঠ, আত্মসমৰ্পণকারী এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। যারা ইবরাহীমের অনুসরণ করেছিল তারা এবং এই নবী ও যারা ঈমান এনেছে মানুষের মধ্যে তারা ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠতম। আল্লাহ মু’মিনদের অভিভাবক। (সূরা আল-ইমরান VG-b)

ইয়াহুদ ও নাসারা প্রত্যেকেই দাবি করত যে, ইবরাহীম (আ) তাদেরই লোক। আল্লাহ তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইবরাহীম (আ)-কে তাদের দলভুক্ত হওয়ার অপবাদ থেকে মুক্ত করেন। তিনি তাদের চরম মূর্খতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা এই বলে প্রকাশ করে দেন যে, তাওরাত ও

ইনজীল তো তার যুগের পরেই নাযিল হয়েছে।

میں

অর্থাৎ— তিনি কিভাবে তোমাদের ধর্মের লোক হবেন, যখন দুনিয়া থেকে তার বিদায়ের বহু যুগ পরে তাওরাত ইনজীল নাযিল হয়েছে আঁর্থাৎ তোমাদের শরীয়ত এসেছে। এ কারণেই

আল্লাহ বলেছেন : 6318 = ১ টা তােমরা কি এ সামান্য বিষয়টিও বুঝি না?  (১ম খণ্ড) ৪৮—

‘ইবরাহীম ইহুদীও ছিল না, নাসারাও ছিল না, বরং সে ছিল একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণকারী। সে মুশরিকও ছিল না।’ আল্লাহ এখানে স্পষ্ট বলেছেন যে, ইবরাহীম ছিলেন দীনে হানীফের উপর প্রতিষ্ঠিত। দীনে হানীফ বলা হয় স্বেচ্ছায় বাতিলকে পরিত্যাগ করে হককে গ্ৰহণ করা এবং আন্তরিকভাবে তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। এই দীনে হানীফ ইহুদী, খৃস্টান ও মুশরিকদের ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। আল্লাহ বলেনঃ

যে নিজেকে নির্বোধ করেছে সে ব্যতীত ইবরাহীমের ধর্মদর্শ হতে আর কে বিমুখ হবে! পৃথিবীতে তাকে আমি মনোনীত করেছি; পরকালেও সে সৎ কর্মপরায়ণগণের অন্যতম। তার প্রতিপালক যখন তাকে বলেছিলেন, ‘আত্মসমৰ্পণ কর’, সে বলেছিল, ‘জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমপণ করলাম।’ এবং ইবরাহীম ও ইয়াকুব এ সম্বন্ধে তাদের পুত্ৰগণকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, ‘হে পুত্ৰগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্যে এ দীনকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং আত্মসমৰ্পণকারী না হয়ে তোমরা কখনও মৃত্যুবরণ করিও না।’ ইয়াকুবের নিকট যখন মৃত্যু এসেছিল তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলো? সে যখন পুত্ৰগণকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমার পরে তোমরা কিসের ইবাদত করবো?’ তারা তখন বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহ্-এর ও আপনার পিতৃ-পুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহ-এরই ইবাদত করব। তিনি একমাত্র ইলাহ এবং আমরা তাঁর নিকট আত্মসমৰ্পণকারী।’ সেই উম্মত অতীত হয়েছে- ওরা যা অর্জন করেছে তা ওদের, তোমরা যা অর্জন কর তা তোমাদের। তারা যা করত। সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে কোন প্রশ্ন করা হবে না। তারা বলে, ‘ইহুদী বা খৃস্টান হও, ঠিক পথ পাবে।’ বল, বরং একনিষ্ঠ হয়ে আমরা ইবরাহীমের ধর্মদর্শ অনুসরণ করব এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।’ তোমরা বল, আমরা আল্লাহতে ঈমান রাখি এবং যা আমাদের প্রতি এবং ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং আমরা তার নিকট আত্মসমৰ্পণকারী। তোমরা যাতে ঈমান এনেছ তারা যদি সেরূপ ঈমান আনে। তবে নিশ্চয় তারা সৎপথ পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা নিশ্চয়ই বিরুদ্ধভাবাপন্ন। তাদের বিরুদ্ধে তোমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আমরা গ্ৰহণ করলাম আল্লাহর রং, রঙে আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিকতর সুন্দর? এবং আমরা তারই ইবাদতকারী। বল, আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা কি আমাদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও? যখন তিনি আমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক! আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের এবং আমরা তার প্রতি অকপট | তোমরা কি বল যে, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণ ইহুদী কিংবা খৃস্টান ছিল?

বল, ‘তোমরা বেশি জান, না। আল্লাহ?’ আল্লাহর নিকট হতে তার কাছে যে প্রমাণ আছে তা যে গোপন করে তার অপেক্ষা অধিকতর জালিম আর কে হতে পারে? তোমরা যা করা আল্লাহ। সে সম্বন্ধে অনবহিত নন। (২ : ১৩০-১৪০)

আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-কে ইহুদী বা খৃস্টান হওয়ার অপবাদ থেকে মুক্ত করে সুস্পষ্টভাবে বলে দেন যে, তিনি একনিষ্ঠ মুল্লমান ছিলেন এবং তিনি মুশরিকও ছিলেন না। এ ان اولی الکا پس بابرهيم الذين آتوها. و RR08 sligR Si ‘SRT R681085ة

মানুষের মধ্যে ইবরাহীম (আ)-এর ঘনিষ্ঠতম তারা, যারা তাঁকে অনুসরণ, র।’ তার সময়ে যারা তাঁর অনুসারী ছিল এবং তার পরে যারা তাঁর দীন গ্রহণ করেছে। 2,701 14 }, (এবং এই নবী) অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা)। কেননা যেই দীনে-হানীফকে আল্লাহ ইবরাহীম (আ)-এর জন্যে মনোনীত করেছিলেন সেই দীনে-হানিফকেই তিনি মুহাম্মদ (সা)-এর জন্য মনোনীত করেছেন। তদুপরি মুহাম্মদ (সা)-এর দীনকে তিনি পূর্ণতা দান করেছেন এবং তাকে এমন সব নিয়ামত দান করেছেন যা অন্য কোন নবী বা রাসূলকে ইতিপূর্বে দান করেননি।

বল, আমার প্রতিপালক আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। এটাই সু-প্রতিষ্ঠিত দীন ইবরাহীমের ধর্মদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বল, আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই। উদ্দেশে। তার কোন শরীক নেই এবং আমি এরূপই আদিষ্ট হয়েছি, এবং আত্মসমৰ্পণকারীদের NCKT VOITfR SPRIN I (V 8. SVS-SIVO)

আল্লাহ আরো বলেন :

না। সে ছিল আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন। আমি তাকে দুনিয়ায় দিয়েছিলাম মঙ্গল এবং আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম। এখন আমি তোমার প্রতি প্ৰত্যাদেশ করলাম, তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (১৬ : SSo-SSN)

ইমান বুখারী (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কা’বা ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখে তাতে প্ৰবেশ করেননি। অতঃপর তার হুকুমে সেগুলো মুছে ফেলা হয়। তিনি কা’বাঘরে হযরত ইবরাহীম (আ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর মূর্তির হাতে জুয়ার তীর দেখতে পান। এ দেখে তিনি বলেন, যারা এরূপ বানিয়েছে তাদেরকে আল্লাহ নিপাত করুক। আল্লাহর কসম, তারা দু’জনের কেউই জুয়ার তীর বের করেন নি। আয়াতে উল্লিখিত উন্মাত (a_1) অর্থ নেতা ও পথপ্রদর্শক। য়িনি। মঙ্গলের দিকে মানুষকে আহবান করেন এবং সে ব্যাপারে তাঁকে অনুসরণ করা হয়। এ11 (, ) (৭ এর অর্থ সর্বাবস্থায়-চলাফেরার প্রতি মূহুর্তে আল্লাহকে ভয় করে চলা (*** অর্থ অন্তদৃষ্টির সাথে আন্তরিক হওয়া।

কর্তর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। যথা অন্তর, জিহ্বা ও কর্ম ইত্যাদির মাধ্যমে। … ২) অর্থ

ՕԵ Ֆ

আল্লাহ তাকে নিজের জন্যে মনোনীত করেন। রিসালাতের দায়িত্ব দেয়ার জন্যে বাছাই করেন।

নিজের বন্ধুরূপে গ্ৰহণ করেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ তাকে দান করেন।

আল্লাহর বাণী :

দীনের ব্যাপারে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমৰ্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করে। আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। (৪ : ১২৫)

এখানে আল্লাহ হযরত ইবরাহীমের ধর্মদর্শ অনুসরণ করার জন্যে উৎসাহিত করেছেন। কেননা, তিনি ছিলেন মজবুত দীন ও সরল পথের উপর সু-প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তাকে যা যা

তাঁর প্রশংসায় বলেছেন ‘%2»j! €2.1% (এবং ইবরাহীমের কিতাবে, সে পালন করেছিল তার দায়িত্ব (৫৩ : ৩৭)। এ কারণেই আল্লাহ তাঁকে খলীল রূপে গ্ৰহণ করেন। খলীল বলা হয় সেই বন্ধুকে যার প্রতি প্ৰগাঢ় ভালবাসা থাকে। যেমন কোন কবি বলেছেন :

قد تخلت مسلك الروح منى – وبذا سمى الخليل خليلا অর্থাৎ—আমার অন্তরকে সে ভালবাসা দিয়ে জয় করে নিয়েছে আর এ কারণেই অন্তরঙ্গ বন্ধুকে খলীল বলা হয়। অনুরূপভাবে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-ও আল্লাহর খলীল হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছিলেন। সহীহ বুখারী, মুসলিম ইত্যাদি গ্রন্থে জুনদুব আল-বাজালী, আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমরা ও ইব্‌ন মাসউদ (রা) থেকে বৰ্ণিত।

রাসূল (সা) বলেছেন : হে জনমণ্ডলী! জেনে রেখো আল্লাহ আমাকে তার খলীলরাপে গ্ৰহণ করেছেন, যেভাবে তিনি ইবরাহীমকে খলীল রূপে গ্ৰহণ করেছিলেন :

জীবনের শেষ ভাষণে রাসূল (সা) বলেছিলেন : ایه

. ‘হে জনগণ! পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে কাউকে যদি আমি খলীল হিসাবে গ্রহণ করতাম, তবে অবশ্যই আবু বকর (রা)-কে আমার খলীল বানোতাম। কিন্তু তোমাদের এই সাখী। আল্লাহর খলীল।’

এ হাদীস বুখারী ও মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী (রা) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তা ছাড়া আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবোয়র (রা), ইব্‌ন আব্বাস (রা) ও ইব্‌ন মাসউদ (রা) সূত্রে এ হাদীসখানা অন্যান্য কিতাবেও বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারীতে আমর ইব্‌ন মায়মুন (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত মুআয (রা) ইয়ামানে গমন করেন। তখন সবাইকে নিয়ে ফজরের সালাত

V9ԵrՀ

আদায় করেন এবং কিরাআতে এ আয়াতে তিলাওয়াত করেনঃ ১LL২ – ৯.৮, ৫ L|| ১১ এ1,

(আল্লাহ ইবরাহীমকে খলীলরুপে গ্ৰহণ করেন)। তখন উপস্থিত একজন বললেন, ইবরাহীমের মায়ের চােখ কতই না। শীতল হয়েছিল। ইব্‌ন মারদুয়েহ (র) … ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, একদা রাসূল (সা)-এর কতিপয় সাহাবা তাঁর জন্য অপেক্ষমাণ দিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বের হয়ে আসেন। কাছাকাছি এলে তিনি শুনতে পান-এরা যেন কিছু একটা বলাবলি করছেন। তখন সেখানে থেমে গিয়ে তিনি তাদের থেকে শুনতে পান যে, কেউ একজন বলছেন, কী আশ্চর্য। আল্লাহ তাঁরই সৃষ্টি মানুষের মধ্য থেকে ‘খলীল বানিয়েছেন—ইবরাহীম তাঁর খলীল। আর একজন বলছেন, কী আশ্চর্য! আল্লাহ। মূসার সাথে কথাবার্তা বলেছেন। অপরজন বলছেন, ঈসা তো আল্লাহর রূহ ও কালিমাহ। অন্য আর একজন বলছেন, আদম (আ)-কে আল্লাহ বাছাই করে নিয়েছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের সম্মুখে আসেন এবং বলেন, আমি তোমাদের কথাবার্তা ও বিস্মিত হওয়ার কথা শুনতে পেয়েছি। ইবরাহীম (আ) আল্লাহর খলীল, তিনি তা-ই ছিলেন, মূসা (আঃ) আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন তিনিও তা-ই ছিলেন, ঈসা। (আ) আল্লাহর রূহ ও কালিমাহ তিনি ঠিক তা-ই ছিলেন। আদম (আ)-কে আল্লাহ বাছাই করেছিলেন, এবং তিনি তেমনই ছিলেন। জেনে রেখ, আমি আল্লাহর হাবীব (পরম বন্ধ) এতে আমার কোন অহংকার নেই। জেনে রেখ, আমিই প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই প্রথম শোনা হবে, এতে আমার কোন অহংকার নেই। আমিই সে ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজার কড়া নাড়বে। অতঃপর তা খুলে আমাকে ভিতরে প্রবেশ করানো হবে। তখন আমার সাথে থাকবে দরিদ্র মুমিনগণ; কিয়ামতের দিন প্রাথমিক যুগের ও শেষ যুগের সকল মানুষের মধ্যে সবচাইতে সম্মানিত আমিই, এতে আমার কোন অহংকার নেই। এই সনদে হাদীসটি ‘গরীব’ পর্যায়ের বটে। তবে অন্যান্য সনদে এর সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

হাকিম (র) তাঁর ‘মুসতাদরাকে’ ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর উক্তি উল্লেখ করেছেন। ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেছেন : তোমরা কি অস্বীকার করতে পারবে যে, খলীল হওয়ার সৌভাগ্য হযরত ইবরাহীম (আ)-এর। আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হযরত মূসা (আ)-এর এবং আল্লাহর দীদার লাভের সৌভাগ্য মুহাম্মদ (সা)-এর। ইব্‌ন আবু হাতিম (র) ইসহাক ইব্‌ন বাশ্মশার (র) সূত্রে বর্ণনা করেন, আল্লাহ যখন ইবরাহীম (আ)-কে খলীলরাপে বরণ করে নেন, তখন তার অন্তরের মধ্যে ভীতি গেড়ে বসে, এমনকি পাখি। যেমন আকাশে ওড়ার সময় ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ হয় তেমনি তাঁর অন্তর থেকে উৎপন্ন ভীতির আওয়াজ দূর থেকে শোনা যেত। উবায়দ ইব্‌ন উমােয়র (রা) বলেন, ইবরাহীম (আ) সর্বদাই অতিথি আপ্যায়ন করতেন। একদিন তিনি অতিথির সন্ধানে ঘর থেকে বের হলেন। কিন্তু কোন অতিথি পেলেন না। অবশেষে ঘরে ফিরে এসে দেখেন একজন মানুষ ঘরের মধ্যে দাড়িয়ে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ওহে আল্লাহর বান্দা! আমার বিনা অনুমতিতে কে তোমাকে আমার ঘরে প্রবেশ করাল? লোকটি বলল, এ ঘরের মালিকের অনুমতিক্রমেই আমি এতে প্রবেশ করেছি। ইবরাহীম (আ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পরিচয় কী? সে বলল, আমি রূহ কবজকারী মালাকুল মওত। আমাকে আমার প্রতিপালক তাঁর এক বান্দার নিকট এই সু-সংবাদ দিয়ে প্রেরণ করেছেন যে, তাঁকে আল্লাহ খলীল রূপে গ্ৰহণ করেছেন। ইবরাহীম (আঃ) বললেন, সেই বান্দাটি কে? আল্লাহর কসম, এ সংবাদটি যদি আমাকে দিতে! তিনি কোন দূরতম এলাকায় অবস্থান করলেও আমি

VOԵrD

তাঁর নিকট যেতাম এবং আমৃত্যু সেখানেই অবস্থান করতাম। মালাকুল মওত বললেন— আপনিই হচ্ছেন সেই বান্দা। ইবরাহীম (আঃ) বললেন, আমি? তিনি বললেন, হ্যা, আপনিই। ইবরাহীম (আ) বললেন, আল্লাহ আমাকে কি কারণে তার খলীলরুপে গ্ৰহণ করলেন? তিনি জবাব দিলেন, কারণ এই যে, আপনি মানুষকে দান করেন, তাদের কাছে কিছু চান না। ইব্‌ন আবু হাতিম (র) এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর এই গুণের কথা উল্লেখ করে কুরআনের বহু স্থানে তাঁর প্ৰশংসা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, কুরআনের পয়ত্ৰিশ জায়গায় এর উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে কেবল সূরা বাকারায় পনের জায়গায় তার উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ) সেই পাঁচজন উলুল-’আযম (দৃঢ় প্রতিজ্ঞ) নবীর অন্যতম, নবীগণের মধ্যে র্যাদের নাম আল্লাহ তা’আলা কুরআনের দুইটি সূরায় অর্থাৎ সূরা আহাযাব ও সূরা শূরায় বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। আয়াত দু’টি হলো :

স্মরণ কর, যখন আমি নবীদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমার নিকট থেকেও এবং নূহ, ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসা ইব্‌ন মািরয়ামের নিকট থেকে। আমি তাদের নিকট থেকে গ্ৰহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার। (সূরা আহাযাব : ৭)

আল্লাহর বাণী :

আল্লাহ তোমাদের জন্যে বিধিবদ্ধ করেছেন সেই দীন যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে, আর যা ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছি তোমার নিকট এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এ কথা বলে যে, তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে মতভেদ কর না। (সূরা (סיצ 3 i}}}*

উক্ত পাঁচজন উলুল আযম নবীদের মধ্যে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর পরেই হযরত ইবরাহীম (আ)-এর স্থান। (মি’রাজ রজনীতে) তিনি হযরত ইবরাহীম (আ)-কে সপ্তম আকাশের উপরে বায়তুল মামুরে হেলান দেয়া অবস্থায় দেখেছিলেন। যেখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদত করার জন্যে প্ৰবেশ করেন এবং আর কখনও দ্বিতীয়বার সেখানে প্রবেশের সুযোগ তাদের আসে না। আর শূরায়ক ইব্‌ন আবু নুমােয়র হযরত আনাস (রা) সূত্রে মি’রাজ সম্পর্কের হাদীসে যে বর্ণনা করেছেন, ইবরাহীম (আ) ষষ্ঠ আকাশে এবং মূসা (আ) সপ্তম আকাশে ছিলেন, উক্ত হাদীসে রাবী শূরায়ক-এর ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ সমালোচনা করেছেন। সুতরাং প্রথম হাদীসই সঠিক ও বিশুদ্ধ।

DԵ8

ইমাম আহমদ (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :

একজন সম্মানিত পুত্র যার পিতাও ছিল সম্মানিত। তার পিতাও ছিল সম্মানিত এবং তার পিতাও ছিল সম্মানিত। এরা হল ইউসুফ, তার পিতা ইয়াকুব। তার পিতা ইসহাক এবং তার পিতা ইবরাহীম খলীল (আ)। ইমাম আহমদ (র) এ হাদীসটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।

হযরত মূসা (আ) থেকে হযরত ইবরাহীম (আ) যে শ্রেষ্ঠ এ বিষয়টি নিম্নোক্ত হাদীসের দ্বারা প্রতীয়মান হয়। যেখানে বলা হয়েছেঃ

অর্থাৎ তৃতীয় যে বৈশিষ্ট্যটি আমাকে দান করা হয়েছে তা সেইদিন দেয়া হবে, যেই দিন সমস্ত মানুষ আমার প্রতি আকৃষ্ট হবে, এমনকি ইবরাহীমও।’

এ হাদীস ইমাম মুসলিম উবাই ইব্‌ন কা’ব (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আর তাহল ‘মাকামে মাহমূদ’। রাসূল (সা) পূর্বেই তা জানিয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, ‘কিয়ামতের দিন আমি হব বনী আদমের সর্দার এবং এতে আমার অহংকার নেই।’ ঐ হাদীসে এর পর বলা হয়েছে যে, মানুষ সুপারিশ পাওয়ার জন্যে আদম (আ)-এর কাছে যাবে, তারপর নূহ, তারপরে ইবরাহীম, তারপরে মূসা ও তারপরে ঈসা (আ)-এর কাছে যাবে। প্রত্যেকেই সুপারিশ করতে অস্বীকার করবেন। সবশেষে মুহাম্মদ (সা)-এর কাছে যাবে। তখন তিনি বলবেন, ‘আমিই এর যোগ্য। এটা আমারই কাজ।’ বুখারী শরীফে বিভিন্ন জায়গায় এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুসলিম ও নাসাঈ ইব্‌ন উমর আল আমরী সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অধিক সম্মানিত মানুষ কে? রসূলুল্লাহ (সা) বললেন, : অধিকতর মুত্তাকী ব্যক্তি। তারা বললেন, : আমরা আপনাকে এ কথা জিজ্ঞেস করি নাই। পরে তিনি বললেন, তা হলে ইউসুফ; যিনি আল্লাহর নবী, তাঁর পিতাও আল্লাহর নবী, তাঁর পিতাও আল্লাহর নবী এবং তাঁর পিতা আল্লাহর খলীল। সাহাবাগণ বললেন, : আমরা এটাও জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বললেন, তা হলে কি তোমরা আরবদের উৎসসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ? তবে শোন : জাহিলী যুগে যারা উত্তম ছিল, ইসলামী যুগেও তারাই উত্তম, যদি তারা বুৎপত্তিসম্পন্ন হয়। বুখারী, নাসাঈ ও আহমদ (র) বিভিন্ন সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : হাশরের ময়দানে মানুষকে নগ্ন পায়ে, উলঙ্গ ও খাতুনাবিহীন অবস্থায় উঠান হবে। সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আ)-কে কাপড়

পরান হবে। এরপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করেন : ১৫:531 131 1614 (<

‘যে অবস্থায় আমি প্রথমে সৃষ্টি করেছি। ঐ অবস্থায়ই পুনরায় উঠাব।’ (২১ আম্বিয়া : ১০৪) ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) উভয়েই এ হাদীসটি ভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবরাহীম (আ)-এর এই বিশেষ ফয়ীলতা ও সম্মানের কারণে তিনি ‘মাকামে মাহমুদের

আল-বিদায়ণ ওয়ান নিহয়া ԶԵ (:

অধিকারীর’ তুলনায় অধিক সম্মানিত হয়ে যাননি। যে মাকামে মাহমুদের জন্যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই ঈর্ষাষিত হবেন।

ইমাম আহমদ (র) আনাস ইব্‌ন মালিক (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন : এক ব্যক্তি রাসূল (সা)-কে সম্বোধন করে বলল, বা ১০। ৩২ – (হে সৃষ্টিকুলের সেরা!!) রাসূল (সা) বললেন, তিনি হলেন হযরত ইবরাহীম (আ)। ইমাম মুসলিমও এ হাদীসটি বিভিন্ন মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। তিরমিয়ী (র) একে সহীহ ও হাসান বলেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) এ কথাটি আপন পিতৃ-পুরুষ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সম্মানার্থে বিনয় প্রকাশ স্বরূপ বলেছেন। যেমন তিনি বলেছেন : অন্য নবীদের উপরে তোমরা আমাকে প্রাধান্য দিও না। L এ ওL৯ a৭১) ( • u • ১১। তিনি আরও বলেছেন : তােমরা আমাকে মূসার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করো না। কারণ, কিয়ামতের দিন সকল মানুষ বেহুশ হয়ে পড়ে থাকবে। অতঃপর সর্বপ্রথম আমার ইশ ফিরে আসবে। কিন্তু আমি উঠে দেখতে পাব মূসা (আঃ) আল্লাহর আরশের স্তম্ভ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না, মূসা (আ) কি আমার পূর্বেই ইশপ্রাপ্ত হবেন, না কি তৃর পাহাড়ে বেইশ হওয়ার বদলাম্বরূপ এ রকম করা হবে? এই সব বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও মুহাম্মদ (সা)-এর কিয়ামতের দিন বনী আদমের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও সর্দার হওয়াতে কোন ব্যত্যয় ঘটবে না। কেননা, মুতাওয়াতির সূত্রে একথা প্রমাণিত যে, কিয়ামতের দিন তিনিই হবেন (১l J.,,, … তথা মানবকুল শ্ৰেষ্ঠ।

অনুরূপভাবে মুসলিম শরীফে উবাই ইব্‌ন কা’ব সূত্রে বর্ণিত হাদীস-’আমাকে যে তিনটি

আকৃষ্ট হবে। এমনকি ইবরাহীমও।’ এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর শ্রেষ্ঠত্বই প্রমাণিত হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর পরেই হযরত ইবরাহীম (আ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও উলুল-আযাম রাসূল প্রমাণিত হবার কারণে সালাতের মধ্যে তাশাহহুদে ইবরাহীম (আ)-এর উল্লেখ করতে মুসল্পীদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন বুখারী ও মুসলিমে ক’ব ইব্‌ন আজুরা (রা) প্রমুখ। থেকে বর্ণিত হয়েছে। কা’ব বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার প্রতি

সালাম তো আমরা জানি, কিন্তু আপনার প্রতি সালাত কীভাবে? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমরা বলবে :

(হে আল্লাহ! মুহাম্মদের প্রতি ও তাঁর পরিবার বর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন যেমনি

আপনি ইবরাহীমের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপরে রহমত বর্ষণ করেছিলেন। আর

মুহাম্মদের প্রতি এবং তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি বরকত দান করুন। যেমনি আপনি ইবরাহীমের

উপর ও তার পরিবারবর্গের প্রতি বরকত দান করেছিলেন। আপনি অত্যধিক প্ৰশংসিত ও

সম্মানিত)।

(১ম খণ্ড) ৪৯

আল্লাহর বাণী : ১৯৬৫’৫১%, ‘আর ইবরাহীম তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছিল।

অর্থাৎ তাকে যত প্রকার হুকুম করা হয়েছিল তিনি তার সবগুলোই পালন করেছিলেন। ঈমানের সমস্ত গুণাগুণ ও সকল শাখা-প্ৰশাখা। তিনি আয়ত্ত করেছিলেন। কোন বড় ও জটিল সমস্যাই তাঁকে কোন ছোট হুকুম পালনেও বাধা দিতে পারেনি এবং বড় ধরনের হুকুম পালনের ক্লান্তি তাকে ছোট ধরনের হুকুন্তু তৃত্যু ত্রিত রাখুন,তৃবৃন্দু ব্র্যাক () ইব্‌ন আব্বাস (রা) ۴۹۰ ۹۹*) ولز را بنگلال الملجم به بیگلم کاتتر فاثیهن. if RGR۹ SITHTs){ ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা নিলে তিনি সবগুলোেহঁপূরণ করেন)-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন : আল্লাহ ইবরাহীমকে মাথা সংক্রান্ত পাচ প্রকার, পবিত্রতা এবং দেহের অবশিষ্ট অংশ সংক্রান্ত পাঁচ প্রকার পবিত্রতার হুকুম দ্বারা পরীক্ষা করেছেন। মাথার পঁাচ প্রকার এই : (১) গোফ কাটা (২) কুলি করা (৩) মিসওয়াক করা (৪) পানি দ্বারা নাক পরিষ্কার করা (৫) মাথার চুলের সিঁথি কাটা। অবশিষ্ট শরীরের পাঁচ প্রকার হল (১) নখ কাটা (২) নাভীর নীচের পশম মুণ্ডন (৩) খ্যাতনা করা (৪) বগলের পশম উঠান (৫) পেশাব-পায়খানার পর পানি দ্বারা শৌচ করা। ইব্‌ন আবু হাতিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবদুর রাযযাক বলেন, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিাব, মুজাহিদ, শা’বী, নখঈ, আবু সালিহ ও আবুল জলদও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : মানুষের স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা পাঁচটি (১) খাতুনা করা (২) ক্ষেীর কর্ম করা (৩) গোফ কাটা (৪) নখ কাটা (৫) বগলের পশম উঠান। সহীহ মুসলিম ও সুন্নান গ্রন্থাদিতে আয়েশা (রা) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা দশটি (১) গোফ ছাঁটা (২) দাড়ি লম্বা হতে দেয়া (৩) মিসওয়াক করা (৪) পানি দ্বারা নাক পরিষ্কার করা (৫) নখ কাটা (৬) দেহের গ্ৰন্থি পানি দ্বারা ধোয়া (৭) বগলের পশম উঠান (৮) নাভীর নীচের অংশে ক্ষেীর করা। (৯) পানি দ্বারা ইসতিনজা করা (১০) খাতুনা করা। খাতানার সময়ে তার (ইবরাহীম (আ)-এর) বয়স সম্পর্কে আলোচনা পরে আসছে। যাই হোক নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও একাগ্রতার সাথে

. ইবাদত-বন্দেগী হযরত ইবরাহীম (আ)-কে শরীরের যত্ব নেয়া, প্রত্যেক অংগ-প্রত্যংগের হক

আদায় করা, সৌন্দর্য রক্ষা করা এবং যে জিনিসগুলো ক্ষতিকর ছিল যথা : অধিক পরিমাণ চুল, বড় নখ, দীতের ময়লা ও দাগ দূর করা থেকে শূন্যযোগ করে রাখত না। সুতরাং এ বিষয়গুলোও আল্লাহ কর্তৃক ইবরাহীমের প্রশংসা (৬%&’) && }৫১%) (ইবরাহীম তার কর্তব্য বাস্তবায়ন করেছে)-এর অন্তর্ভুক্ত। ሥ ‘ ` ሥ

জান্নাতে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর প্রাসাদ

হাফিজ আবু বকর আল বাযযার (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : জান্নাতের মধ্যে মনি-মুক্তা দ্বারা নির্মিত একটি অতি মনোরম প্রাসাদ রয়েছে। কোন ভাংগাচুরা বা ফাটল তাতে নেই। আল্লাহ তার খলীলের জন্যে এটি তৈরি করেছেন। আল্লাহর মেহমান হিসেবে তিনি তাতে থাকবেন। বাযযার (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বাযযার (র) বলেন, এই হাদীসের বর্ণনাকারী হামমাদ ইব্‌ন সালামা

ԶԵ Գ

থেকে কেবল য়ায়ীদ ইব্‌ন হারুন ও নযর ইব্‌ন শুমায়লী মারফু হিসেবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ঐ দু’জন বাদে অন্য সবাই মওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই ক্ৰটি না থাকলে হাদীসটি সহীহ-এর শর্তে উত্তীর্ণ হতো, কিন্তু ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) এটি বর্ণনা করেননি।

ইবরাহীম (আ)-এর আকৃতি-অবয়ব

ইমাম আহমদ (র) জাবির (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : আমার সম্মুখে পয়গম্বরগণকে পেশ করা হয়। তন্মধ্যে মূসা (আঃ) শানুয়া গোত্রের লোকদের অনুরূপ দেখতে পাই। ঈসা ইব্‌ন মারিয়াম (আ)-কে অনেকটা উরওয়া ইব্‌ন মাসউদের মত এবং ইবরাহীম (আ)-কে অনেকটা দাহয়া কালাবীর মত দেখতে পাই। এ সনদে ও এ পাঠে ইমাম আহমদ (র) একাই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ (র) আসওয়াদ ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : আমি ঈসা ইব্‌ন মািরয়াম, মূসা ও ইবরাহীম (আ)-কে দেখেছি। তন্মধ্যে ঈসা (আ) ছিলেন গৌরবর্ণ, চুল ঘন কাল, বক্ষদেশ প্রশস্ত। আর মূসা (আ) ছিলেন ধূসরবর্ণ ও বলিষ্ঠ দেহী। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন : আর ইবরাহীম (আ)? রাসূলুল্লাহ (স) বললেন, তোমাদের সাখীর দিকে তাকাও অর্থাৎ তার নিজের দিকে ইঙ্গিত করেন। ইমাম বুখারী মুজাহিদ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে শুনেছেন যে, লোকজন তাঁর সম্মুখে দাজালের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করছিল এবং বলছিল, দাজালের চক্ষুদ্বয়ের মধ্যখানে লিখিত থাকবে কাফির (১-৪-এj)। ইব্‌ন আব্বাস (রা) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স)-এর কাছে। এ কথা শুনি নাই। বরং তিনি বলেছেন : ইবরাহীম (আ)-কে যদি দেখতে চাও, তবে তোমাদের সাখীর প্রতি তাকাও। আর মূসা (আ) হলেন, ঘনচুল, ধূসর রং বিশিষ্ট। তিনি একটি লাল উটের উপর উপবিষ্ট—যার নাকের রশি খেজুর গাছের ছালের তৈরি। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি। তিনি এ অবস্থায় উপত্যকার দিকে নেমে আসছেন। বুখারী ও মুসলিম (র) এ হাদীসটি ভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (র) ‘কিতাবুল হজ্জ’ ও ‘কিতাবুল লিবাসে’ এবং মুসলিম (র)ও আবদুল্লাহ ইব্‌ন আওন সূত্রে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

হযরত ইবরাহীম (আ)-এর ইনতিকাল ও তাঁর বয়স প্রসঙ্গ

ইব্‌ন জারীর (র) তার ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন, হযরত ইবরাহীম (আ) নমরূদ (ইব্‌ন কিনআন)-এর যুগে জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে যে, এই নমরূদই ছিল প্ৰসিদ্ধ বাদশাহ যাহহাক। সে দীর্ঘ এক হাজার বছর যাবত বাদশাহী করেছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে।–তার শাসন আমল ছিল জুলুম-অত্যাচারে পরিপূর্ণ। কোন কোন ইতিহাসবিদের মতে, এই নমরূদ ছিল বনু রাসিব গোত্রের লোক। এই গোত্রেই হযরত নূহ (আ) প্রেরিত হয়েছিলেন। নিমরূদ ঐ সময় সমগ্র দুনিয়ার বাদশাহ ছিল। ইতিহাসবিদগণ উল্লেখ করেছেন, একদা আকাশে একটি নক্ষত্র উদিত হয়। তার জ্যোতির সম্মুখে সূর্য ও চন্দ্ৰ নিম্প্রভ হয়ে যায়। এ অবস্থায় লোকজন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। নমরূদ বিচলিত হয়ে দেশের সব গণক ও জ্যোতির্বিদদের একত্র করে

V©brbr

এর কারণ জিজ্ঞেস করে। তারা জানাল, আপনার রাজত্বের মধ্যে এমন এক শিশুর জন্ম হবে যার হাতে আপনার বাদশাহীর পতন ঘটবে। নিমরূদ তখন রাজ্যব্যাপী ঘোষণা দিল, এখন থেকে কোন পুরুষ স্ত্রীর কাছে যেতে পারবে না এবং এখন থেকে কোন শিশুর জন্ম হলে তাকে হত্যা করা হবে। এতদসত্ত্বেও হযরত ইবরাহীম (আ) ঐ সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহ তাকে হিফাজত করেন ও পাপিষ্ঠদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেন। তিনি তাকে উত্তমভাবে লালন-পালনের ব্যবস্থা করেন। ক্রমশ বড় হয়ে তিনি যৌবনে পদার্পণ করেন, যা পূর্বেই বৰ্ণিত হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ)-এর জন্মভূমি ছিল ‘সূস’ কারও মতে বাবেল, কারও মতে কুছায়১-এর পার্শ্ববতী সাওয়াদ নামক এক গ্রাম। ইতিপূর্বে হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর একটি বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ) দামেশকের পূর্ব পার্শ্বে বারব্যাহ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর হাতে নমরূদের পতন ঘটাবার পর তিনি প্ৰথমে হারানে এবং পরে সেখান থেকে শাম দেশে হিজরত করেন এবং সেখান থেকে ঈলিয়ায় গিয়ে বসবাস করেন। অতঃপর ইসমাঈল ও ইসহাক (আ)-এর জন্ম হয়। তারপর কিনআনের অন্তৰ্গত হিবরন নামক স্থানে সারাহর ইনতিকাল হয়। আহলে কিতাবগণ উল্লেখ করেছেন, মৃত্যুকালে সারাহর বয়স হয়েছিল একশ’ সাতাশ বছর। ইবরাহীম (আ) সারােহর মৃত্যুতে অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। বনু হায়ছ গোত্রের আফিরূন ইব্‌ন সাখার নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে চারশ’ মিছকালের বিনিময়ে তিনি একটি জায়গা ক্রিয় করেন এবং সারাহকে সেখানে দাফন করেন। এরপর ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র ইসহাককে রুফাকা বিনত বাতৃঈল ইব্‌ন নাহর ইব্‌ন তারাহ-এর সাথে বিবাহ করান। পুত্রবধুকে আনার জন্যে তিনি নিজের ভৃত্যকে পাঠিয়ে দেন। সে রুফাকা ও তার দুধ-মা ও দাসীদেরকে উটের উপর সওয়ার করে নিয়ে আসে।

আহলি কিতাবদের বর্ণনা : হযরত ইবরাহীম (আ) অতঃপর কানতুরা নামী এক মহিলাকে বিবাহ করেন এবং তাঁর গর্ভে যামরান, ইয়াকশান, মাদান, মাদয়ান, শায়াক ও শূহ-এর জন্ম হয়। এদের প্রত্যেকের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কেও বিবরণ রয়েছে।

ইব্‌ন আসাকির বিভিন্ন প্রাচীন পণ্ডিতদের বরাতে ইবরাহীম (আ)-এর কাছে মালাকুল মওতের আগমন সম্পর্কে আহলে কিতাবদের উপাখ্যানসমূহ বৰ্ণনা করেছেন। সঠিক অবস্থা আল্লাহই ভাল জানেন। কেউ কেউ বলেছেন, হযরত দাউদ (আ.) ও হযরত সুলায়মান (আ.)-এর মত হযরত ইবরাহীম (আ)-ও আকস্মিকভাবে ইনতিকাল করেন। কিন্তু আহলে কিতাব ও অন্যদের বর্ণনা এর বিপরীত। তারা বলেছেন, ইবরাহীম (আ) পীড়িত হয়ে একশ’ পচাত্তর বছর মতান্তরে একশ’ নব্বই বছর বয়সে ইনতিকাল করেন এবং আফরান হায়হীর সেই জমিতে তার সহধর্মিনী সারাহর কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়। ইসমাঈল (আ.) ও ইসহাক (আ)

(১) মুজামুল বুলদান কিতাবে এর নাম লেখা হয়েছে ‘কুছা’_aux এর উপর পেশ, 51, সাকিন, L এর উপর যাবর ও শেষে আলিফে মাকসূরা • u • সহ লেখা হয়ে থাকে। যেহেতু এটা চার অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ। কুছায় নামে তিনটি জায়গা আছে (১) সাওয়াদুল ইরাকে (২) বাবেলে। (৩) মক্কায়। ইরাকের কুছায় দুটি (১) কুছায় তারােক (২) কুছায় রীবী। এটাই ইবরাহীম (আ)-এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান এবং এখানেই তাঁর জন্ম হয়। এ দুটি স্থানই বাবেলে অবস্থিত। এখানেই ইবরাহীম (আ)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। উক্ত দুটি কৃচ্ছায় বাবেলের দুই প্রান্তে অবস্থিত।

ՓԵՀ)

উভয়ে দাফনকাৰ্য সম্পাদন করেন। ইবনুল-কালিবী বলেছেন, ইবরাহীম (আ) দু’শ বছর বয়সে ইনতিকাল করেন। আবু হাতিমা ইব্‌ন হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে মুফায্যল… আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত ইবরাহীম (আ) বাটালীর সাহায্যে খাতুনা করান। তখন তাঁর বয়স ছিল একশ’ বিশ বছর। এরপর তিনি আশি বছর কাল জীবিত থাকেন। হাফিজ ইব্‌ন আসাকির (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে এ হাদীসখানা মওকুফ’ভাবে বর্ণনা করেছেন।

তারপর ইব্‌ন হিব্বান (র) এ হাদীস যারা মারফু’ভাবে বর্ণনা করেছেন তাদের বর্ণনাকে বাতিল বলে অভিহিত করেছেন, যেমন মুহাম্মদ ইব্‌ন আবদুল্লাহ (র) আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) যখন একশ’ বিশ বছর বয়সে উপনীত হন, তখন খ্যাতনা করান এবং এরপর আশি বছর জীবিত থাকেন। আর তিনি কাদুম (ছুতারের বাইস) দ্বারা খাতুনা করিয়েছিলেন। হাফিজ ইব্‌ন আসাকির (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) বলেছেন : ইবরাহীম (আঃ) যখন খাতুনা করান তখন তাঁর বয়স ছিল আশি বছর। ইব্‌ন হিব্বান আবদুর রাযযাক থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কাদূম একটা গ্রামের নাম। আমার জানা মতে ‘সহীহ গ্রন্থে যা এসেছে তা এই যে, ইবরাহীম (আঃ) যখন খ্যাতনা করান। তখন তিনি আশি বছর বয়সে পৌঁছেন। অন্য বর্ণনায় তার বয়স ছিল আশি বছর। এ দু’টি বর্ণনার কোনটিতেই এ কথা নেই যে, তিনি পরে কত দিন জীবিত ছিলেন। আল্লাহই সম্যক অবগত। মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসমাঈল তাফসীরে ওকী’র মধ্যে ‘যিয়াদাত’ থেকে উদ্ধৃত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন : ইবরাহীম (আ) সর্বপ্রথম পায়জামা পরিধান করেন, সর্বপ্রথম মাথার চুলে সিঁথি কাটেন, সর্বপ্রথম ক্ষেীর কর্ম করেন, সর্বপ্রথম খাতুন্না করান কাদূমের সাহায্যে। তখন তাঁর বয়স ছিল একশ’ বিশ বছর এবং তারপরে আশি বছর জীবিত থাকেন। তিনিই সর্বপ্রথম অতিথিকে আহার করান, সর্বপ্রথম প্রৌঢ়ত্বে উপূনীত হন। এ মওকুফ হাদীসটি মারফু’ হাদীসেরই অনুরূপ। ইব্‌ন হিব্বান (র) এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন।

ইমাম মালিক (র) সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিাব (রা) থেকে বর্ণনা করেন। ইবরাহীম (আ)-ই প্রথম ব্যক্তি যিনি অতিথিকে আহার করান এবং প্রথম মানুষ যিনি খাতুনা করান, সর্বপ্রথম তিনিই গোফ ছাঁটেন, সর্বপ্রথম তিনিই প্রৌঢ়ত্বের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করেন। ইবরাহীম (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! এটা কী? আল্লাহ বললেন, এ হল মর্যাদা। ইবরাহীম (আ) বললেন, হে প্রতিপালক! তা হলে আমায় মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করে দিন। ইয়াহয়া ও সাঈদ ব্যতীত অন্য সবাই আরও কিছু বাড়িয়ে বলেছেন যেমন : তিনিই সর্বপ্রথম লোক যিনি গোফ ছোট করেন, সর্বপ্রথম ক্ষৌরকর্ম করেন, সর্বপ্রথম পায়জামা পরিধান করেন। হযরত ইবরাহীম (আ)-এর কবর, তাঁর পুত্র ইসহাক (আ)-এর কবর ও তাঁর পৌত্র ইয়াকুব (আঃ)-এর কবর ‘মুরাব্বা’ নামক গোরস্তানে যা হযরত সুলায়মান ইব্‌ন দাউদ (আ) হিবরূন (Hebron) শহরে তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে এর নাম বালাদুল খলীল (খলীলের শহর)।*।। বনী ইসরাঈলের যুগ থেকে আমাদের এই যুগ পর্যন্ত বংশ ও জাতি পরম্পরায় ধারাবাহিকভাবে এ কথাই চলে আসছে যে, হযরত ইবরাহীম (আ)-এর কবর মুরাব্বাতে অবস্থিত। সুতরাং কথাটা যে সঠিক, তা নিশ্চিতভাবে বলা চলে। তবে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রে তাঁর কবর কোনটি তা নির্ণিত হয়নি।

  1. সম্প্রতিকালে শহরটি খলিলীয়া নামে পরিচিতি।

Do

সুতরাং ঐ স্থানটির যত্ন করা এবং তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা সকলের কর্তব্য, এ স্থানটি পদদলিত করা উচিত নয়। কেননা, হতে পারে যে স্থানটি পদদলিত করা হচ্ছে তারই নিচে হযরত ইবরাহীম খলীল বা তার কোন পুত্রের কবর রয়েছে। ইব্‌ন আসাকির ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ সূত্রে বলেছেন, হযরত ইবরাহীম (আ)-এর কবরের কাছে একটি প্রাচীন শিলা পাওয়া গিয়েছে, যার উপর নিম্নলিখিত কবিতা লেখা রয়েছে :

অর্থ : হে আল্লাহ! যে ব্যক্তির নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসে তার সমস্ত আশা-আকাজক্ষা জলাঞ্জলি দিয়ে মৃত্যুর কাছে সে আত্মসমর্পণ করে। মৃত্যু যার দুয়ারে এসে যায় তাকে কোন কলাকৌশল আর বঁচিয়ে রাখতে পারে না। পূর্বের লোকই যখন গত হয়ে গেছে, তখন আর শেষের লোক টিকে থাকে কোন উপায়ে। মানুষ তার কবরের সাখী নিজের আমল

ভিন্ন কাউকেই পাবে না। … .’

হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সন্তান-সন্ততি প্ৰসঙ্গ

হযরত ইবরাহীম (আ)-এর প্রথম সন্তান ইসমাঈল (আ)। যিনি মিসরের কিবতী বংশীয়া হাজেরার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর ইবরাহীম (আ)-এর স্ত্রী তার চাচাত বোন সারাহর গর্ভের দ্বিতীয় পুত্র ইসহাক (আ) জন্মগ্রহণ করেন। তারপর হযরত ইবরাহীম (আ) কিনআনের কানুতুরা বিনত ইয়াকতানকে বিবাহ করেন। তাঁর গর্ভে ছয়টি পুত্ৰ সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা হলেন (১) মাদিয়ান (২) যামরান (৩) সারাজ (৪) য়াকশান (৫) নাশুক (৬) এনামটি অজ্ঞাত। এরপর হযরত ইবরাহীম (আ) হাজুন বিনত আমীনকে বিবাহ করেন। এই পক্ষে পাঁচটি পুত্ৰ সন্তান জন্মগ্রহণ করেন : (১) কায়সান (২) সুরাজ (৩) উমায়াস (৪) লুতান (৫) লাফিস। আবুল কাসিম সুহায়লী তার ‘আত-তা’রীফ ওয়াল আ’লাম’ গ্রন্থে এরূপ উল্লেখ

করেছেন।

হযরত ইবরাহীম (আ)-এর জীবদ্দশায় যে সব বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তন্মধ্যে লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা ও তাদের উপর আল্লাহর আযাবের ঘটনা অন্যতম। ঘটনাটি নিম্নরূপ : হযরত লুত (আ) ছিলেন হারান ইব্‌ন তারাহ-এর পুত্র। এই তারাহকেই আযরাও বলা হত। যা পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে। হযরত লুত ছিলেন ইবরাহীম খলীল (আ.)-এর ভাতিজা। ইবরাহীম, হারান ও নাজুর এরা ছিলেন তিন ভাই যা পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে। হারানের বংশধরকে বনু হারান বলা হয়। কিন্তু আহলে কিতাবদের ইতিহাস এ মত সমর্থন করে না। হযরত লুত (আ) চাচা ইবরাহীম খলীল (আ.)-এর নির্দেশক্রমে গাওর যাগার অঞ্চলে সাদ্দুম শহরে চলে যান। এটা ছিল ঐ অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র। অনেক গ্রাম, মহল্লা ও ক্ষেত-খামার এবং

VSD dS

ব্যবসায়কেন্দ্র এ শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ছিল। এখানকার অধিবাসীরা ছিল দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, পাপাসক্ত, দুশ্চরিত্র, সংকীর্ণমনা ও জঘন্য কাফির। তারা দসু্যুবৃত্তি করতো। প্ৰকাশ্য মজলিসে অশ্লীল ও বেহায়াপনা প্ৰদৰ্শন করত। কোন পাপের কাজ থেকেই তারা বিরত থাকত না। অতিশয় জঘন্য ছিল তাদের কাজ-কারবার। তারা এমন একটি অশ্লীল কাজের জন্ম দেয় যা ইতিপূর্বে কোন আদম সন্তান করেনি। তাহল, নারীদেরকে ত্যাগ করে তারা সমকামিতায় লিপ্ত হয়। হযরত লুত (আ) তাদেরকে এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান জানান এবং এসব ঘূণিত অভ্যাস, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা বর্জন করতে বলেন। কিন্তু তারা তাদের ভ্রান্তি, বিদ্রোহ, পাপ ও কুফরের প্রতি অবিচল থাকে। ফলে, আল্লাহ তাদের উপর এমন কঠিন আযাব নাযিল করলেন যা ফেরাবার সাধ্য কারোরই নেই, এ ছিল তাদের ধারণাতীত ও কল্পনাতীত শাস্তি। আল্লাহ তাদেরকে সমূলে বিনাশ করে দিলেন। বিশ্বের বিবেকবানদের জন্যে তা একটি শিক্ষাপ্রদ ঘটনা হয়ে থাকল। এ কারণেই আল্লাহ তার মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনার উল্লেখ করেছেন। সূরা আ’রাফে আল্লাহ বলেন :

এবং লুতকে পাঠিয়েছিলাম। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা এমন কুকর্মী করছ, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি; তােমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্যে নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে গমন কর, তোমরা তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’ উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, ‘এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’ তারপর তাকে ও তার স্ত্রী ব্যতীত তার পরিজনবৰ্গকে উদ্ধার করেছিলাম, তার স্ত্রী ছিল পেছনে রয়ে থাকা লোকদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। সুতরাং অপরাধীদের পরিণাম কি হয়েছিল তা লক্ষ্য কর! (৭ : ৮০-৮৪)

আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদসহ ইবরাহীমের নিকট আসল। তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম’, সে অবিলম্বে এক কাবাব করা বাছুর আনল। সে যখন দেখল, তাদের হাত ঐটির দিকে প্রসারিত হচ্ছে না। তখন তাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করল এবং তাদের সম্বন্ধে তার মনে ভীতি সঞ্চার হল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, আমরা লুতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’ তখন তার স্ত্রী দাড়িয়েছিল এবং সে হাসল। তারপর আমি তাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম। সে বলল, ‘কি আশ্চর্য! সন্তানের মা হব আমি যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী বৃদ্ধ!! এটা অবশ্যই এক অদ্ভুত ব্যাপার। তারা বলল, ‘আল্লাহর কাজে তুমি বিস্ময় বোধ করছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি প্ৰশংসাৰ্থ ও সম্মানাহঁ।’

তারপর যখন ইবরাহীমের ভীতি দূরীভূত হল এবং তার নিকট সুসংবাদ আসল তখন সে লুতের সম্প্রদায়ের সম্বন্ধে আমার সাথে বাদানুবাদ করতে লাগল। ইবরাহীম তো অবশ্যই সহনশীল। কোমল-হৃদয়, সতত আল্লাহ অভিমুখী। হে ইবরাহীম! এ থেকে বিরত হও। তোমার প্রতিপালকের বিধান এসে পড়েছে। ওদের প্রতি তো আসবে শান্তি যা অনিবাৰ্য এবং যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের নিকট আসল তখন তাদের আগমনে সে বিষন্ন হল এবং নিজেকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করল এবং বলল, ‘এটি নিদারুণ দিন’! তার সম্প্রদায় তার নিকট উদভ্ৰান্ত হয়ে ছুটে আসল এবং পূর্ব থেকে তারা কু-কর্মে লিপ্ত ছিল।

সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! এরা আমার কন্যা, তোমাদের জন্যে এরা পবিত্র। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে আমাকে হেয় করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই?’ তারা বলল, ‘তুমি তো জান, তোমার কন্যাদেরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই; আমরা কি চাই তা তো তুমি জানাই।’ সে বলল, তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকত অথবা যদি আমি নিতে পারতাম কোন শক্তিশালী আশ্রয়! তারা বলল, হে লুত!! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত ফেরেশতা। ওরা কখনই তোমার নিকট পৌছতে পারবে না। সুতরাং তুমি রাতের কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তোমাদের মধ্যে কেউ পেছন দিকে তাকাবে না, তোমার স্ত্রী ব্যতীত। ওদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। প্ৰভাত ওদের জন্যে নির্ধারিত কাল। প্ৰভাত কি নিকটবতী নয়? ত

|ারপর যখন আমার আদেশ আসল তখন আমি জনপদকে উল্টিয়ে দিলাম এবং তাদের উপর

ক্ৰমাগত বর্ষণ করলাম পাথর-কংকর যা তোমার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নিত ছিল। এটি জালিমদের থেকে দূরে নয়। (১১ : ৬৯-৮৩)

সূরা হিজরে আল্লাহ বলেন :

এবং ওদেরকে বল, ইবরাহীমের অতিথিদের কথা, যখন ওরা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’, তখন সে বলেছিল, ‘আমরা তোমাদের আগমনে আতংকিত।’ ওরা বলল, ‘ভয় করো না, আমরা তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের শুভ সংবাদ দিচ্ছি।’ সে বলল, তোমরা কি আমাকে শুভ সংবাদ দিচ্ছি। আমি বার্ধক্যগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও? তোমরা কী বিষয়ে শুভ সংবাদ দিচ্ছ? ওরা বলল, ‘আমরা সত্য সংবাদ দিচ্ছি, সুতরাং তুমি হতাশ হয়ে না।’ সে বলল, যারা পথভ্ৰষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে হতাশ হয়? সে বলল, ‘হে প্রেরিতগণ! তোমাদের আর বিশেষ কি কাজ আছে?’ ওরা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে লুতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই ওদের সকলকে রক্ষা করব। কিন্তু তার স্ত্রীকে নয়। আমরা স্থির করেছি যে, ‘সে অবশ্যই পেছনে রয়ে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত।’

ফেরেশতাগণ যখন লুত পরিবারের কাছে আসল, তখন লুত বলল, তোমরা তো অপরিচিত লোক। তারা বলল, ‘না। ওরা সে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল, আমরা তোমার নিকট তাই নিয়ে এসেছি; ‘আমরা তোমার কাছে সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী, সুতরাং তুমি রাতের কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তুমি তাদের পশ্চাদানুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পেছন দিকে না তাকায়; তোমাদেরকে যেখানে যেতে বলা হচ্ছে তোমরা সেখানে চলে যাও। আমি তাকে এ বিষয়ে প্রত্যাদেশ দিলাম যে, প্রত্যুষে ওদেরকে সমূলে বিনাশ করা হবে।

নগরবাসিগণ উল্লসিত হয়ে উপস্থিত হল। সে বলল, ‘ওরা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বে-ইজত করো না। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে হেয় করো না।’ তারা বলল, ‘আমরা কি দুনিয়াশুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনি?’ লুত বলল, ‘একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তবে আমার এই কন্যাগণ রয়েছে। তোমার জীবনের শপথ, ওরা তো মত্ততায় বিমূঢ় হয়েছে। তারপর সূর্যোদয়ের সময়ে মহানাদ তাদেরকে আঘাত করল; এবং আমি জনপদকে উল্টিয়ে উপর নিচ করে দিলাম এবং ওদের উপর প্রস্তর-কংকর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যে। তা লোক চলাচলের পথের পাশে এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে মুমিনদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন। (১৫ : ৫১-৭৭)

সূরা শু’আরায় আল্লাহ বলেন :

লুতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল, যখন ওদের ভাই লুত ওদেরকে বলল, তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তো তোমাদের জন্যে এক বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি এর জন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের কাছেই আছে। ‘সৃষ্টির মধ্যে তোমরা তো কেবল পুরুষের সাথেই উপগত হও এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীলোক সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে তোমরা বর্জন করে থাক। তোমরা তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’ ওরা বলল, ‘ হে লুত! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও, তবে অবশ্যই তুমি নির্বাসিত হবে।’

লুত বলল, ‘আমি তোমাদের এ কাজকে ঘূণা করি।’ হে আমার প্রতিপালক! ‘আমাকে এবং আমার পরিবার-পরিজনকে, ওরা যা করে তা থেকে রক্ষা কর।’ অতঃপর আমি তাকে এবং তার পরিবার-পরিজন সকলকে রক্ষা করলাম। এক বৃদ্ধ ব্যতীত, যে ছিল পেছনে রয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর অপর সকলকে ধ্বংস করলাম। তাদের উপর শান্তিমূলক বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল, তাদের জন্যে এই বৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ট! এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু ওদের অধিকাংশই মুমিন নয়। তোমার প্রতিপালক, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (২৬ : ১৬০-১৭৫)

সূরা নামলে আল্লাহ বলেনঃ

স্মরণ কর, লুতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা জেনেশুনে কেন অশ্লীল কাজ করছ? তোমরা কি কাম-তৃপ্তির জন্যে নারীকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, লুত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা পবিত্ৰ সাজতে চায়। তারপর তাকে ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম, তার স্ত্রী ব্যতীত; তাকে করেছিলাম ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপর ভয়ংকর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম; যাদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল তাদের জন্য এই বর্ষণ ছিল কত মারাত্মক! (২৭ : ৫৪-৫৮)

সূরা আনুকাবুতে আল্লাহ বলেন :

স্মরণ করা লুতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘ তোমরা তো এমন অশ্লীল কাজ করছ; যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরাই তো পুরুষে উপগত হচ্ছি। তোমরাই তো। রাহাজানি করে থাক এবং তোমরাই তাে নিজেদের মজলিসে প্রকাশ্যে ঘূণ্য কাজ করে থাক।’ উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু এই বলল, ‘আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নিয়ে এসো যদি তুমি সত্যবাদী হও।’ সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর।’ যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদসহ ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলেছিল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। এর অধিবাসীরা তো জালিম। ইবরাহীম বলল, এই জনপদে তো লুত রয়েছে। তারা বলল, ‘সেখানে কারা আছে তা আমরা ভাল জানি; আমরা তো লুতকে ও তার পরিবার-পরিজনবৰ্গকে রক্ষা করবই; তার স্ত্রী ব্যতীত; সে তো পেছনে রয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত।’

এবং যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের কাছে আসল, তখন তাদের জন্যে সে বিষন্ন হয়ে পড়ল এবং নিজকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করল। তারা বলল, ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমরা তোমাকে ও তোমার পরিজনবৰ্গকে রক্ষা করব, তোমার স্ত্রী ব্যতীত; সে তো পেছনে রয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। আমরা এই জনপদবাসীদের উপর আকাশ থেকে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা পাপাচার করেছিল। আমি বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখেছি। (২৯ : ২৮-৩৫)

সূরা সাফফাতে আল্লাহ বলেন :

লুতও ছিল রাসূলগণের একজন। আমি তাকে ও তার পরিবারের সকলকে উদ্ধার করেছিলাম-এক বৃদ্ধা ব্যতীত, সে ছিল পেছনে রয়ে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর

V95 Գ

অবশিষ্টদেরকে আমি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছিলাম। তোমরা তো ওদের ধ্বংসাবশেষগুলো অতিক্রম করে থাক সকালে ও সন্ধ্যায়, তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (৩৭ :

সূরা যারিয়াতে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর মেহমান ও পুত্রের সুসংবাদের ঘটনা উল্লেখ করার পর আল্লাহ তা’আলা বলেন, :

ইবরাহীম বলল, ‘হে ফেরেশতাগণ! তোমাদের বিশেষ কাজ কী? ওরা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে। ওদের উপর নিক্ষেপ করার জন্যে মাটির শক্ত ঢেলা, যা সীমালংঘনকারীদের জন্যে চিহ্নিত, তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে। সেখানে যে সব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম এবং সেখামে একটি পরিবার ব্যতীত কোন আত্মসমৰ্পণকারী আমি পাইনি। যারা মর্মতুদি শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্যে তাতে একটি নিদর্শন রেখেছি। (৫১ : ৩১-৩৭)

সূরা ইনশিকাফে আল্লাহ বলেনঃ

লুত সম্প্রদায় প্রত্যাখ্যান করেছিল সতর্ককারীদেরকে, আমি ওদের উপর পাঠিয়ে পাথরবাহী প্রচণ্ড ঝড়। কিন্তু লুত পরিবারের উপর নয়। তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম রাতের শেষাংশে আমার বিশেষ অনুগ্রহ স্বরূপ, যারা কৃতজ্ঞ আমি তাদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। লুত ওদেরকে সতর্ক করেছিল আমার কঠোর শাস্তি সম্পর্কে; কিন্তু ওরা সতর্কবাণী সম্বন্ধে বিতণ্ডা শুরু করল। ওরা লুতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে দাবি করল, তখন আমি ওদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং আমি ৰললাম, ‘আস্বাদন কর, আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম। ভোরে বিরামহীন শাস্তি তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি বললাম, আস্বাদন কর, আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম।’ আমি কুরআন সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্যে; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (৫৪ : ৩৩-৪০)

তাফসীর গ্রন্থে এ সব সূরার যথাস্থানে আমরা এই ঘটনার বিশদ আলোচনা করেছি। আল্লাহ হযরত লুত (আ) ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। আমরা ইতিপূর্বে কওমে নূহ, কওমে আদি ও কাওমে ছামুদ-এর আলোচনায় সেসব উল্লেখ করেছি।

এখন আমরা সে সব কথার সার-সংক্ষেপ বর্ণনা করব, যা তাদের কর্মনীতি ও পরিণতি সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। তাহল, হযরত লুত (আ) তাঁর সম্প্রদায়কে এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান জানান। সেইসব অশ্লীল কাজ করতে নিষেধ করেন যার উল্লেখ স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। করেছেন। কিন্তু একজন লোকও তার আহবানে সাড়া দেয়নি এবং তার উপর ঈমান আনেনি। নিষেধকৃত কর্ম থেকে কেউ বিরত থাকেনি। বরং তারা তাদের অবস্থার উপর অটল অবিচল হয়ে থাকে এবং নিজেদের ভ্ৰষ্টতা ও মূর্থিতা থেকে বিরত থাকেনি। এমনকি তারা তাদের রাসূলকে তাদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

রাসূল যখন তাদেরকে উদ্দেশ করে উপদেশ দেন, তখন তারা বিবেক না খাটিয়ে এই এক উত্তরই দিতে থাকে যে, লুত পরিবারকে তোমরা তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। কেননা, তারা এমন মানুষ যারা পাক-পবিত্ৰ সাজতে চায়। এ কথার মধ্য দিয়ে তারা লুত পরিবারের নিন্দা করতে গিয়ে তাদের চরম প্ৰশংসাই করেছে। আবার -এটাকেই তারা বহিষ্কারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। চরম শক্রতা ও ঘূণা থাকার কারণেই তারা লুতকে এ কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ হযরত লুত (আ)-কে ও তাঁর পরিবারবর্গকে পবিত্র রাখলেন এবং সম্মানের সঙ্গে সেখান থেকে তাদেরকে বের করে আনলেন, তবে তার স্ত্রীকে নয়। আর তার সম্প্রদায়ের সবাইকে আপনি বাসভূমিতে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে দিলেন। তবে সে থাকা ছিল দুৰ্গন্ধময় সমুদ্র তরংগের আঘাতে লীন হয়ে। যা ছিল প্রকৃতপক্ষে উত্তপ্ত আগুন ও তাপ প্রবাহ এবং তার পানি তিক্ত ও লবণাক্ত।

তারা নবীকে এরূপ উত্তর তখনই দিয়েছে, যখন তিনি তাদেরকে জঘন্য পাপ ও চরম অশ্লীলতা যা ইতিপূর্বে বিশ্বের কোন লোক করেনি, তা থেকে নিবৃত্ত থাকতে বলেছেন। এ কারণেই তারা বিশ্ববাসীর জন্যে উদাহরণ ও শিক্ষাপ্রদ হয়ে রয়ে গিয়েছে। এ পাপকর্ম ছাড়াও তারা ছিনতাই, রাহাজানি করত, পথের সাখীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করত। প্রকাশ্য মজলিসে বিভিন্ন রকম নির্লজ্জ কথা বলতো এবং লজ্জাজনক কাজে লিপ্ত হতো। যেমন সশব্দে বায়ু ত্যাগ করত। এতে কোন লজ্জা বোধ করত না। অনেক সময় বড় বড় জঘন্য কাজও করত। কোন উপদেশদানকারীর উপদেশ ও জ্ঞানী লোকের পরামর্শের প্রতি বিন্দুমাত্ৰ ভ্ৰক্ষেপ করতো না। এ জাতীয় কাজের মাধ্যমে তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত বরং তার চাইতেও অধম ও বিভ্রান্ত বলে পরিচয় দিত। তারা তাদের বর্তমান কাজ থেকে বিরত থাকেনি, বিগত পাপ থেকে অনুশোচনা করেনি এবং ভবিষ্যতে আত্মসংশোধনের ইচ্ছাও করেনি। অতএব, আল্লাহ তাদেরকে শক্ত হাতে পাকড়াও করলেন। তারা হযরত লুত (আ)-কে বলেছিল :,

(তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে আল্লাহর আযাব আমাদের জন্যে নিয়ে এস) অর্থাৎ নবী তাদের

যে কঠিন আযাৰোঁর ভয় দেখাচ্ছিলেন তারা সেই আযাৰ কামনা করছিল এবং ভয়াবহ শাস্তির

రిసాన్

আবেদন জানাচ্ছিল। এই সময় দয়ালু। নবী তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান। তিনি বিশ্ব প্ৰভু ও রাসূলগণের ইলাহ-এর নিকট অনাচারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য প্রার্থীনা করেন। ফলে নবীর মর্যাদা হানিতে আল্লাহর ক্ৰোধের উদ্রেক হয়, নবীর ক্ৰোধের জন্যে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন। নবীর প্রার্থীনা কবুল করেন এবং তাঁর প্রার্থিত বস্তু দান করেন। আপনি দূত ও ফেরেশতাগণকে প্রেরণ করেন। তারা আল্লাহর খলীল ইবরাহীম (আ)-এর কাছে আগমন

করেন। তাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দেন এবং তারা যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে এসেছেন সে বিষয়টিও তাকে জানান।

is ইবরাহীম বলল, হে ফেরেশতাগণ! আপনাদের আগমনের উদ্দেশ্য কী? তারা বলল, আমরা এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। যাতে তাদের উপর শক্ত ঢেলা নিক্ষেপ করি, যা সীমালংঘনকারীদের শাস্তি দেয়ার জন্যে আপনার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নিত রয়েছে।

আল্লাহ বলেন, :

আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে আসল, তখন তারা বলেছিল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের ধ্বংস করব। কারণ এর অধিবাসীরা জালিম। ইবরাহীম বলল, এই জনপদে তো লুতও আছে। তারা বলল, ওখানে কারা আছে সে সম্পর্কে আমরা ভালভাবে অবগত আছি। আমরা তাকে ও তার পরিবারবর্গকে অবশ্যই রক্ষা করব, তবে তার স্ত্রীকে নয়। সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। (২৯ : ৩৯)

আল্লাহ বলেন :

(যখন ইবরাহীমের ভীতি দূর হল ও সুসংবাদ জানান হল, তখন সে লুতের প্রসঙ্গ নিয়ে আমার সাথে বিতর্ক করা আরম্ভ করল) কেননা, ইবরাহীম (আ) আশা করেছিলেন যে, তারা খারাপ পথ পরিহার করে ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।

তাই আল্লাহ বলেন :

(নিশ্চয়ই ইবরাহীম বড়ই ধৈর্যশীল, কোমল হৃদয় ও একনিষ্ঠ ইবাদতকারী। হে ইবরাহীম! এ জাতীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাক। তোমার পালনকর্তার নির্দেশ এসে গেছে এবং তাদের উপর সে আযাব অবশ্যই পতিত হবে)। অর্থাৎ এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বল। কেননা, তাদের ধ্বংস ও নির্মূল করার আদেশ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তোমার পালনকর্তার নির্দেশ এসে গেছে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়ে গেছে। তাঁর এ নির্দেশ ও শাস্তি ফেরাবার ও প্রতিহত করার সাধ্য কারও নেই। এ নির্দেশ অপ্রতিরোধ্যভাবে আসবেই। (সূরা হ্রদ : ৭৪-৭৫)

সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র, সুদী, কাতাদা ও মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক (র) উল্লেখ করেছেন যে, হযরত ইবরাহীম (আ) ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন ৪ আপনারা কি এমন কোন জনপদ ধ্বংস করবেন যেখানে তিনশ’ মুমিন রয়েছে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, যদি দুশ’ থাকে? তারা বললেন না। ইবরাহীম বললেন, যদি চল্লিশ জন মুমিন থাকে? তারা বললেন না। তিনি বললেন, যদি চৌদ্দজন মুমিন থাকে? তারা বললেন তবুও না। ইব্‌ন ইসহাক লিখেছেন : ইবরাহীম (আ) এ কথাও বলেছিলেন যে, যদি একজন মাত্র মুমিন থাকে তবে সেই জনপদ ধ্বংস করার ব্যাপারে আপনাদের মত কি? জবাবে তারা বললেন, : তবুও ধ্বংস করা হবে না।, তখন তিনি বললেন, সেখানে তো লুত রয়েছে। 42121ة (914) قالوا كخيك أعلم بمن فيها ‘সেখানে কে আছে তা আমাদের ভালভাবেই জানা আছে।’ */

আহলি কিতাবদের বর্ণনায় এসেছে যে, ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন, হে আল্লাহ! লুত সম্প্রদায়ের মধ্যে পঞ্চাশজন সৎকর্মশীল লোক থাকলেও কি আপনি তাদেরকে ধ্বংস করবেন? এভাবে উভয়ের কথোপকথন দশজন পর্যন্ত নেমে আসে। আল্লাহ বলেন, তাদের মধ্যে দশজন সৎকর্মশীল লোক থাকলেও আমি তাদেরকে ধ্বংস করব না।

আল্লাহর বাণী :

আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের কাছে আগমন করল তখন তাদের আগমনে সে দুশ্চিন্তাগ্ৰস্ত হল এবং বলতে লাগল, আজ অত্যন্ত কঠিন দিন। (সূরা হুদ : ৭৭)

মুফাসসিরগণ বলেছেন। এই ফেরেশতাগণ ছিলেন। হযরত জিবরাঈল (আ), মীকাঈল (আ) ও ইসরাফীল (আ)। তাঁরা ইবরাহীম (আ)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসেন এবং সাদৃম শহরে এসে উপস্থিত হন। লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের পরীক্ষাস্বরূপ এবং তাদের শাস্তিযোগ্য হওয়ার চূড়ান্ত প্রমাণস্বরূপ তাঁরা সুদৰ্শন তরুণ বেশে হাযির হন। হযরত লুত (আ)-এর বাড়িতে তাঁরা অতিথি হিসাবে ওঠেন। তখন ছিল সূর্য ডোবার সময়। হযরত লুত (আ) তাদের দেখে ভীত হলেন। মনে মনে ভাবলেন, যদি তিনি আতিথ্য প্ৰদান না করেন, তবে অন্য কেউ তা করবে। তিনি তাদেরকে মানুষই ভাবলেন। দুশ্চিন্তা তাঁকে ঘিরে ধরল। তিনি বললেন, আজ একটা বড় কঠিন দিন।

8の〉

ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে মুজাহিদ, কাতাদা ও মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক (র) হযরত লুত (আ)-এর এ কঠিন পরীক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন। হযরত লুত (আ) অন্যান্য সময়ে তার সম্প্রদায়কে নিজের মেহমানদের কাছে ঘেঁষতে নিষেধ করতেন। এ কারণে তারা লুত (আ)-এর উপর শর্ত আরোপ করেছিল যে, তিনি নিজের বাড়িতে কাউকে মেহমান হিসেবে রাখবেন না। কিন্তু সেদিন তিনি এমন লোকদেরকেই মেহমানরূপে দেখতে পেলেন যাদেরকে সরিয়ে দেয়ার ऐ°ाश७ शिष्ठ्ल न्षी।

কাতাদা (র) বলেন, হযরত লুত (আ) নিজের ক্ষেতে কাজ করছিলেন, এমন সময় মেহমানগণ তার কাছে উপস্থিত হন এবং তাঁর বাড়িতে মেহমান হওয়ার আবেদন জানান। তিনি তা প্ৰত্যাখ্যান করতে লজাবোধ করেন এবং সেখান থেকে তাদেরকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হন এবং তাদের আগে আগে হাঁটতে থাকেন। তাঁদের সাথে তিনি এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে থাকেন, যাতে তাঁরা এ জনপদ ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান। হযরত লুত (আ) তাদেরকে বললেন, হে ভাইয়েরা! এই জনপদের লোকের চেয়ে নিকৃষ্ট ও দুশ্চরিত্র লোক ধরা পৃষ্ঠে আর আছে কিনা আমার জানা নেই। কিছুদূর অগ্রসর হয়ে তিনি আবার এ কথা উল্লেখ করেন। এভাবে চারবার তাদেরকে কথাটি বলেন। কাতাদা (র) বলেন, ফেরেশতাগণ এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলেন যে, যতক্ষণ নবী তাঁর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যেন

তাদেরকে ধ্বংস না করেন।

সুন্দদী (র) বলেন, ফেরেশতাগণ ইবরাহীম (আ)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লুতের সম্প্রদায়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন। দুপুর বেলা তাঁরা সেখানে পৌঁছেন। সাদৃদূম নদীর তীরে উপস্থিত হলে হযরত লুত (আ)-এর এক মেয়ের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। বাড়িতে পানি নেয়ার জন্যে সে এখানে এসেছিল। লুত (আ)-এর ছিলেন দুই কন্যা। বড়জনের নাম রায়ছা এবং ছোট জনের নাম যারাতা। মেয়েটিকে তারা বললেন, : ওহে! এখানে মেহমান হওয়া যায় এমন কারও বাড়ি আছে কি? মেয়েটি বললেন, আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত জনপদে প্ৰবেশ করবেন না। নিজের সম্প্রদায়ের ব্যাপারে মেয়েটির অন্তরে লোকগুলোর প্রতি করুণার উদ্রেক হয়। বাড়ি এসে মেয়েটি পিতাকে সম্বোধন করে বললেন : পিতা নগর তোরণে কয়েকজন তরুণ আপনার অপেক্ষায় আছেন। তাদের মত সুদর্শন লোক আমি কখনও দেখিনি। আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদেরকে না লাঞ্ছিত করে! ইতিপূর্বে সম্প্রদায়ের লোকজন হযরত লুত (আ)-কে কোন পুরুষ লোককে মেহমান রাখতে নিষেধ করে দিয়েছিল। যা হোক, হযরত লুত (আ) তাদেরকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং নিজের পরিবারবর্গের লোকজন ছাড়া আর কেউ বিষয়টি জানতে পারেনি। কিন্তু লুতের স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে জনপদের লোকদের কাছে খবরটি পৌঁছিয়ে দেয়। সে জানিয়ে দেয় যে, লুতের বাড়িতে এমন কতিপয় সুশ্ৰী তরুণ এসেছে যাদের ন্যায় সুন্দর লোক আর হয় না। তখন লোকজন খুশীতে লুত (আ)-এর বাড়ির দিকে ছুটে আসে।

আল্লাহর বাণী :

(ইতিপূর্বে তারা বিভিন্ন রকম পাপকর্মে লিপ্ত ছিল) অর্থাৎ বহু বড় বড় গুনাহর সাথে এই জঘন্য পাপ কাজও তারা চালিয়ে যেতো।

লুত বলল, হে আমার সম্প্রদায়! এই যে আমার কন্যারা আছে যারা তোমাদের জন্যে পবিত্রতম।

এ কথা দ্বারা হযরত লুত (আ) তাঁর ধর্মীয় ও দীনী কন্যাদের অর্থাৎ তাদের স্ত্রীদের প্রতি ইংগিত করেছেন। কেননা, নবীগণ তাদের উম্মতের জন্যে পিতৃতুল্য। হাদীস ও কুরআনে এরূপই বলা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, :,

নবী মুমিনদের জন্যে তাদের নিজেদের চাইতেও ঘনিষ্ঠতর। আর তাঁর স্ত্রীগণ মু’মিনদের মা। (৩৩ : ৬)। কোন কোন সাহাবা ও প্রাচীন আলিমগণের মতে নবী মু’মিনদের পিতা।

উপরোক্ত আয়াতের অনুরূপ আর একটি আয়াত এই :

তোমরা বিশ্বের পুরুষদের কাছে গমন করছি। আর তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীকুল সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে পরিত্যাগ করছ; বরং তোমরা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। (২৬ : ১৬৫)

মুজাহিদ, সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র, রাবী ইব্‌ন আনাস, কাতাদা, সুদী ও মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক (র) আয়াতের উক্তরূপ ব্যাখ্যা করেছেন এবং এ ব্যাখ্যাই সঠিক। দ্বিতীয় মতটি অর্থাৎ তার নিজের কন্যাগণ হওয়া ভুল। এটা আহলি কিতাবদের থেকে গৃহীত এবং তাদের কিতাবে অনেক বিকৃতি ঘটেছে। তাদের আর একটি ভুল উক্তি এই যে, ফেরেশতারা সংখ্যায় ছিলেন দুইজন এবং রাত্রে তাঁরা লুত (আ)-এর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেন। এছাড়া আহলি কিতাবগণ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক অদ্ভুত মিথ্যা উপাখ্যান সৃষ্টি করেছে।

আল্লাহর বাণী :

অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে আমাকে হেয় কর না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই? (১১ : ৭৮)

এ আয়াতে হযরত লুত (আ) নিজ জাতিকে অশ্লীল কাজ থেকে বারণ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এ কথারও সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তাদের সমাজের একজন লোকও সুস্থ রুচির বা ভাল স্বভাবের ছিল না; বরং সমাজের সমস্ত লোকই ছিল নির্বোধি, জঘন্য পাপাসক্ত ও নিরেট কাফির! ফেরেশতাগণও এটাই চাচ্ছিলেন যে, সম্প্রদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই নবীর

কাছ থেকে তাদের সম্পর্কে তাঁরা কিছু শুনবেন। কিন্তু সম্প্রদায়ের অভিশপ্ত লোকেরা নবীর উত্তম কথার উত্তরে বলল ৪

আপনি ভাল করেই জানেন, আপনার কন্যাদের দিয়ে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আপনি এও জানেন যে, আমরা কি চাচ্ছি। (১১ : ৭৯)

তারা বলছে, হে লুত! আপনি অবগত আছেন যে, স্ত্রীদের প্রতি আমাদের কোন আকর্ষণ নেই। আমাদের উদ্দেশ্য কি, তা আপনি ভাল করেই জানেন। নবীকে উদ্দেশ করে তারা এরূপ কুৎসিৎ ভাষা ব্যবহার করতে আল্লাহকে একটুও ভয় পায়নি। যিনি কঠিন শাস্তিদাতা। এ কারণে

( হযরত লূত (আ) বলেছিলেন : – 3, … তুই

হায়, তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকত অথবা যদি আমি নিতে পারতাম কোন

শক্তিশালী আশ্রয়। (১১ : ৮০)

অর্থাৎ তিনি কামনা করেছিলেন সম্প্রদায়কে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যদি হযরত লুতের থাকত, অথবা তাকে সাহায্যকারী ধনবল বা জনবল যদি থাকত তা হলে তাদের অন্যায় দাবির উপযুক্ত শাস্তি তিনি দিতে পারতেন।

যুহরী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে মারফুরূপে হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : সন্দেহ প্ৰকাশের ব্যাপারে আমরা ইবরাহীম (আ)-এর চাইতে বেশি হকদার। আল্লাহ লুত (আ)-এর উপর রহম করুন। কেননা, তিনি শক্তিশালী অবলম্বনের আশ্রয় প্রার্থীনা করেছিলেন। আমি যদি সেই দীর্ঘকাল জেলখানায় অবস্থান করতাম। যেমনি ইউসুফ (আ) করেছিলেন। তবে আমি অবশ্যই আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিতাম। এ হাদীস আবুয যিনাদ ভিন্ন সূত্রেও বর্ণনা করেছেন এবং মুহাম্মদ ইব্‌ন আমর (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, আল্লাহ লুত (আ)-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন। কেননা, তিনি শক্তিশালী অবলম্বন অর্থাৎ আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করেছিলেন। এরপর থেকে আব্দুল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন তাদেরকে নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর বাণী :

لهؤلأربشاتى إن كنتُمْ فَاعلين. নগরবাসীরা উল্লসিত হয়ে উপস্থিত হলো। সে বলল, ওরা আমার মেহমান, সুতরাং তোমরা আমাকে বে-ইজ্জত করো না। আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে হেয় করো না। তারা বলল, হে লুতা! আমরা কি ‘তোমাকে দুনিয়া শুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে নিষেধ করিনি? লুত বলল,

তোমাদের একান্তই যদি কিছু করতে হয় তাহলে আমার এই কন্যাগণ রয়েছে। (১৫ : ৬৭)

হযরত লুত (আ) সম্প্রদায়ের লোকজনকে তাদের স্ত্রীদের কাছে যেতে আদেশ দেন এবং তাদের কু-অভ্যাসের উপর অবিচল থাকার মন্দ পরিণতির কথা জানিয়ে দেন যা অচিরেই তাদের

8Օ8

উপর পতিত হবে। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা নিবৃত্ত হল না। বরং নবী যতই তাদেরকে উপদেশ দেন, তারা ততই উত্তেজিত হয়ে মেহমানদের কাছে পৌছার চেষ্টা করে। কিন্তু রাতের শেষে তকদীর তাদেরকে কোথায় পৌঁছিয়ে দেবে তা তাদের আন্দীে জানা ছিল না। এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবনের কসম করে বলেন :

WW . / 2 / ./ ۸/ )بر / / لعمرك التهم لفى سكرتهم يغمهون . তোমার জীবনের শপথ! ওরা তো মত্ততায় বিমূঢ় হয়েছে। (১৫ : ৭২) আল্লাহর বাণী :

مسبقر লুত ওদেরকে আমার কঠোর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। কিন্তু ওরা সতর্কবাণী সম্বন্ধে বিতণ্ডা শুরু করল। তারা লুতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে দাবি করল। তখন আমি ওদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং আমি বললাম, আস্বাদন কর আমার শাস্তি ও সতর্কবাণীর পরিণাম। প্ৰত্যুষে বিরামহীন শান্তি তাদেরকে আঘাত করল। (৫৪ : ৩৬-৩৮)

মুফাসসির ও অন্যান্য আলিম বলেছেন, হযরত লুত (আ) তাঁর সম্প্রদায়কে তাঁর ঘরে প্ৰবেশ করতে নিষেধ করেন এবং তাদেরকে বাধা দেন। ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তারা তা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে উদ্যত হলো। আর হযরত লুত (আ) দরজার বাইরে থেকে তাদেরকে উপদেশ দিতে এবং ভিতরে যেতে বারণ করতে থাকেন। উভয় পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ চলতে থাকে। অবস্থা যখন সঙ্গীন হয়ে আসল এবং ঘটনা লুত (আ)-এর নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হল; তখন তিনি বললেন, তোমাদের প্রতিহত করার শক্তি যদি আমার থাকত অথবা কােন শক্তিশালী অবলম্বনের আশ্রয় নিতে পারতাম। তবে তােমাদেরকে উপযুক্ত, শাস্তি প্রদান করতাম। এ সময় ফেরেশতাগণ বললেন, . … 137.631 696.246 811.57 6 ‘হে লুত!! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত ফেরেশতা। ওরা কখনই তোমার কাছে পেঁৗছতে পারবে না।’ (১১ : ৮১)

মুফাসসিরগণ উল্লেখ করেন, জিবরাঈল (আ) ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের সম্মুখে আসেন এবং নিজ ডানার এক প্রান্ত দ্বারা হালকাভাবে তাদের চেহারায় আঘাত করেন। ফলে তাদের দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়ে যায়। কেউ কেউ বলেছেন, তাদের চােখ সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। এমনকি চেহারায় চোখের কোন চিহ্নই অবশিষ্ট রইলো না। তারপর তারা দেয়াল হাতড়িয়ে কোন মতে সেখান থেকে ফিরে যায়। আল্লাহর নবী লুত (আ)-কে ধমক দিতে দিতে বলতে থাকে-কাল সকালে আমাদের ও তার মধ্যে বোঝাপড়া হবে।

আল্লাহ বলেন ৪

ওরা লুতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে দাবি করল। তখন আমি তাদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং আমি বললাম : এখন আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণীর পরিণাম আস্বাদন কর। প্রত্যুষে বিরামহীন শাস্তি ও তাদের উপর আঘাত হানল। (৫৪ : ৩৭-৩৮)

ফেরেশতাগণ হযরত লুত (আ)-এর কাছে দুটি প্রস্তাব পেশ করেন (১) পরিবার-পরিজন নিয়ে রাতের শেষে রওয়ানা হয়ে যাবেন (২) কেউ পেছনের দিকে ফিরে তাকাবেন না। অর্থাৎ সম্প্রদায়ের উপর যখন আযাব পতিত হবে এবং আযাবের শব্দ শোনা যাবে তখন কেউ যেন পশ্চাতে ফিরে না তাকায়। ফেরেশতাগণ আরও জানান যে, তিনি যেন সকলের পেছনে থেকে সবাইকে পরিচালনা করেন। এ।(৭০ – ১। এই বাক্যাংশের দু’টি অর্থ হতে পারে (১) যাওয়ার সময় তোমার স্ত্রীকে সাথে নেবে না। এ অবস্থায় ১=1-এ। এর উপর যাবর দিয়ে পড়তে হবে এবং এLL৯L ও-.L৯ থেকে সে ব্যতিক্রম হবে। (২) যাওয়ার পথে দলের কেউ পেছনের দিকে তাকাবে না। কিন্তু কেবল তোমার স্ত্রীই এ নির্দেশ অমান্য করে পেছনের দিকে তাকাবে; ফুলে সম্প্রদায়ের উপর যে আযাব আসবে ঐ আযাবে সেও গ্রেফতার হবে। এ অবস্থায় ১.১-৫। % у / м – / *. / /., … এ.371 86থেকে মুস্তাসূনা (ব্যতিক্রম) হবে। পেশ যুক্ত পাঠ (এ161 – ) এ অর্থকে সমর্থন করে। কিন্তু প্ৰথম অর্থই অধিকতর স্পষ্ট।

সুহায়লী বলেন, লুত (আ)-এর স্ত্রীর নাম ওয়ালিহা এবং নূহ (আ.)-এর স্ত্রীর নাম ওয়ালিগা। আগন্তুক ফেরেশতাগণ ঐসব বিদ্রোহী পাপিষ্ঠ, সীমালংঘনকারী নির্বোধি অভিশপ্ত সম্প্রদায়কে ংস করা হবে এ সুসংবাদ লুত (আ)-কে শোনান, যারা পরবর্তী যুগের লোকদের জন্যে দৃষ্টান্ত शनाः इ0श८छ्।

আল্লাহর বাণী :

তাদের প্রতিশ্রুত সময় প্রভাত কাল। আর প্রভাত কাল খুব নিকটে নয় কি?

হযরত লুত (আ) নিজ পরিবারবর্গ নিয়ে বের হয়ে আসেন। পরিবারবর্গ বলতে তার দু’টি কন্যাই মাত্র ছিল। সম্প্রদায়ের অন্য কোন একটি লোকও তার সাথে আসেনি। কেউ কেউ বলেছেন, তার স্ত্রীও একই সাথে বের হয়েছিল। কিন্তু সঠিক খবর আল্লাহই ভাল জানেন। তারা যখন সে এলাকা অতিক্রম করে চলে আসেন এবং সূর্য উদিত হয়, তখন আল্লাহর অলংঘনীয় নির্দেশ ও অপ্রতিরোধ্য আযাব তাদের উপর নেমে আসে। আহলি কিতাবদের মতে, ফেরেশতাগণ হযরত লুত (আ)-কে তথায় অবস্থিত একটি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে বলেন। কিন্তু হযরত লুত (আ)-এর নিকট তা অত্যন্ত দুঃসাধ্য ঠেকে। তাই তিনি নিকটবতী কোন গ্রামে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ফেরেশতাগণ বললেন, তাই করুন। গ্রামে পৌঁছে সেখানে স্থিত হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো এবং তারপরই আমরা আযাব অবতীর্ণ করব। আহলি কিতাবগণ বলেন, সে মতে হযরত লুত (আ) গিওরযাগর নামক একটি ক্ষুদ্র গ্রামে চলে যান এবং সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তাদের উপর আল্লাহর আযাব নেমে আসে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, :

তারপর যখন আমার আদেশ আসল তখন আমি জনপদকে উল্টিয়ে দিলাম এবং ওদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পাথর, কংকর যা তোমার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নিত ছিল। এটি জালিমদের থেকে দূরে নয়। (১১ : ৮২)

মুফাসসিরগণ বলেন, হযরত জিবরাঈল (আঃ) আপন ডানার এক প্রান্ত দিয়ে লুত সম্প্রদায়ের আবাসভূমি গভীর নিচু থেকে উপড়িয়ে নেন। মোট সাতটি নগরে তারা বসবাস করত। কারও মতে তাদের সংখ্যা চারশ’, কারও মতে চার হাজার। সে এলাকার সমস্ত মানুষ, জীব-জন্তু, ঘরবাড়ি ও ধন-সম্পদ যা কিছু ছিল সবকিছুসহ উঠিয়ে নেয়া হয়। উপরে আকাশের সীমানা পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়। আসমানের এত কাছে নিয়ে যাওয়া হয় যে, সেখানকার ফেরেশতাগণ মোরগের ডাক ও কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ পর্যন্ত শুনতে পান। তারপর সেখান থেকে উল্টিয়ে নিচে নিক্ষেপ করা হয। মুজাহিদ (র) বলেন, সর্বপ্রথম যা নিচে এসে

وامطزئا عليهم ججارة من بريجثلر. اs GafsRPNRق fe 9 83 61 871 S1014* (তাদের উপর পাথর কঙ্কর বর্ষণ করলাম) * x – ফাঁসী শব্দ, একে আরবীকরণ করা হয়েছে। অর্থ : অত্যধিক শক্ত ও কঠিন। ১৫%A4% অর্থ ক্রমাগত। অর্থাৎ আকাশ থেকে একের পর এক যা তাদের উপর আসতে থাকে (ব-৩.– অর্থ চিহ্নিত। প্রতিটি পাথরের গায়ে সেই ব্যক্তির নাম লেখা ছিল যার উপর তা পতিত হবার জন্যে নির্ধারিত ছিল। যেমন আল্লাহ বলেছেন : H هاج651N4 8f52f151683 fa R6 f5f) ملكشكومة عند ريك ثم مسيرفيين সীমালংঘনকারীদের জন্যে নির্ধারিত।)

তাদের উপর শান্তিমূলক বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল তাদের জন্যে এ বৃষ্টি কতই না নিকৃষ্ট! (২৬ : ১৭৩)

উৎপাটিত আবাসভূমিকে উল্টিয়ে নিক্ষেপ করেছিলেন। তারপর তা আচ্ছন্ন করে ফেলল কী সৰ্ব্বগ্রাসী শাস্তি! (৫৩ ৪ ৫৩)

অর্থাৎ আল্লাহ সেই জনপদের ভূখণ্ডকে উপরে তুলে নিচের অংশকে উপরে ও উপরের ংশকে নিচে করে উল্টিয়ে দেন। তারপর শক্ত পাথর-কংকর বর্ষণ করেন অবিরামভাবে- যা তাদের সবাইকে ছেয়ে ফেলে। প্রতিটি পাথরের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম লেখা ছিল। এ পাথরগুলো ঐ জনপদে উপস্থিত সকলের উপর পতিত হয়। অনুরূপ যারা তখন সেখানে অনুপস্থিত ছিল অর্থাৎ মুসাফির, পথিক ও দূরে অবস্থানকারী সকলের উপরই তা পতিত হয়। কথিত আছে যে, হযরত লুত (আ)-এর স্ত্রী তার সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে থেকে যায়। অপর মতে বলা হয়েছে যে, সে তার স্বামী ও দুই কন্যার সাথে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন সে আযাব ও শহর ধ্বংস হওয়ার শব্দ শুনতে পায়, তখন সে পেছনে সম্প্রদায়ের দিকে ফিরে তাকায় এবং আগের পরের আল্লাহর সকল নির্দেশ অমান্য করে। ‘হায় আমার সম্প্রদায়’! বলে সে বিলাপ করতে থাকে। তখন উপর থেকে একটি পাথর এসে তার মাথায় পড়ে এবং তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে। এভাবে সে নিজ সম্প্রদায়ের ভাগ্যের সাথে একীভূত হয়ে যায়। কারণ, সে ছিল

8 Օ Գ

তার সম্প্রদায়ের ধর্মে বিশ্বাসী। তাদের সংবাদ সরবরাহকারিণী; হযরত লুত (আ)-এর বাড়িতে মেহমান আসলে সম্প্রদায়ের লােকদের কাছে সে সংবাদ পৌঁছিয়ে দিত। আল্লাহ বলেন : ضرب الله مثلاً لِلذِّينَ كَفَرُوا أمراًك ثوج واشراك لوط . كائدًا تُشك عَبْدًين من عباركا صنالخينِ فَأَخَاتُنَاهُمَا فَلَمْ يُغنيًا عنهما منَ الكوشيئا …,,,, / ۸ … سی وقيل ادخلا النار مع الدّاخلين . আল্লাহ কাফিরদের জন্যে নূহ ও লুতের স্ত্রীকে দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছেন। ওরা ছিল আমার বান্দাগণের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু ওরা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে, নূহ ও লুত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারল না। তাই ওদেরকে বলা হল, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও ওতে প্ৰবেশ কর। ( o ۵ 8 واما)

অর্থাৎ তারা নবীদের সাথে দীনের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, নবীর দীন গ্ৰহণ করেনি। এখানে এ অর্থ কিছুতেই নেয়া যাবে না যে, তারা প্ৰকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কোনভাবে অশ্লীল কাজে জড়িত ছিল। কেননা, আল্লাহ কোন ব্যভিচারিণীকে কোন নবীর স্ত্রী হিসেবে নির্ধারণ করেননি। হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা)-সহ অন্যান্য প্রাচীন ও পরবর্তীকালের ইমাম ও মুফাসসিরগণ এ কথাই বলেছেন। তারা বলেছেন, কোন নবীর কোন স্ত্রী কখনও ব্যভিচার করেননি। যারা এর বিপরীত মত ব্যক্ত করেছেন, তারা বিরাট ভুল করেছেন। ‘ইফকের ঘটনায় কতিপয় ব্যক্তি হযরত আয়েশা (রা)-এর প্রতি অপবাদ দিলে আল্লাহ তা’আলা আয়েশা (রা)-এর পবিত্ৰতা ঘোষণা করে যে আয়াত নাযিল করেন, তাতে ঐসব মু’মিন লোকদেরকে কঠোরভাবে সতর্ক করেন। আল্লাহর বাণী :

যখন তোমরা মুখে মুখে এ কথা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা একে তুচ্ছ জ্ঞান করছিলো। যদিও আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর এবং তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না- এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ পবিত্ৰ মহান। এতো এক গুরুতর অপবাদ। (২৪ : ১৫-১৬)

অর্থাৎ হে আল্লাহ। আপনার নবীর স্ত্রী এ দােষে জড়িত হবে এ থেকে আপনি পবিত্র। আল্লাহ বাণী : . 3, 4, 64, Juk// 6 /* 1.5% (আর এটা জালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়) অর্থাৎ এই শাস্তি বেশি দূরে নয়। সেইসব লোকদের থেকে যারা লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ন্যায় কুকর্মে লিপ্ত হবে। এই কারণে কোন কোন আলিম বলেছেন, পুরুষের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত ব্যক্তিকে ‘রাজম’ বা পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে, চাই সে বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত। ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমদ, ইব্‌ন হাম্বল (র) প্রমুখ ইমাম এই মত পোষণ

8 ՕԵr

করেন। তাঁরা বর্ণিত সেই হাদীস থেকেও দলীল গ্রহণ করেছেন যা ইব্‌ন আব্বাস (রা) কর্তৃক মুসনাদে আহমদে ও সুনান গ্ৰন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, এমন কোন লোক যদি তোমরা পাও, যে লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের অনুরূপ পাপ কাজে লিপ্ত, তখন সংশ্লিষ্ট উভয় ব্যক্তিকেই হত্যা কর। ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, পুরুষের সাথে সমকামীকে পাহাড়ের উপর থেকে নীচে ফেলে দিয়ে তার উপর পাথর নিক্ষেপ করতে হবে; যেভাবে লুতের সম্প্রদায়ের সাথে করা হয়েছিল। তিনি দলীলরুদ্ধপে নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করেছেন :

/

y:…, ‘Juk/16° » © % (এটা জালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়) আল্লাহ তা’আলা লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের গোটা এলাকাকে একটি দুৰ্গন্ধময় সমুদ্রে পরিণত করেন। ঐ সমুদ্রের পানি ও সমুদ্রের পার্শ্ববতী এলাকার মাটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এভাবে স্মরণীয় বিধ্বস্ত এলাকাটি পরবর্তীকালের সেইসব মানুষের জন্যে শিক্ষণীয় ও উপদেশ গ্রহণের বস্তুতে পরিণত হয়েছে, যারা আল্লাহর অবাধ্য হয়, রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও আপন মনিবের নাফরমানী করে। এ ঘটনা সে বিষয়েও প্রমাণ বহন করে যে, আল্লাহ তার মু’মিন বান্দাদেরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আল্লাহর বাণী :

الرجيم. নিশ্চয় তাতে আছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মু’মিন নয়। তোমার প্রতিপালক তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (২৬ : ৮-৯)

আল্লাহর বাণী :

তারপর সূর্যোদয়ের সময়ে এক মহানাদ তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি জনপদকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পাথর-কংকর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নির্দশন রয়েছে পর্যবেক্ষণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের জন্যে। লোক চলাচলের পথের পাশে তা এখনও বিদ্যমান। এতে অবশ্যই রয়েছে মুমিনদের জন্যে নির্দশন। (১৫, ৪ ৭৩-৭৭)

/ м در / ) ( 64… — বলা হয় সেসব লােকদেরকে যারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকে। এখানে

দূরদৃষ্টির অর্থ হল এই বিষয়ে চিন্তা করা যে, এ জনপদটি ও তার বাসিন্দারা আবাদ হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে আল্লাহ তা ধ্বংস ও বিধ্বস্ত করে দিলেন। তিরমিয়ী ইত্যাদি কিতাবে মারফু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন :

সমীহ করবে, কেননা সে আল্লাহপ্রদত্ত নূরের সাহায্যে দেখতে পায়। একথা বলে রাসূল (সা)

و RSTS SIRT5 f8fieRTS R65F মুমিনদের জন্যে এতে নিদর্শন রয়েছে)। আল্লাহর বাণী : 184144.5 (4%), (পথের পাশে তা’ এখনও বিদ্যমান)। অর্থাৎ যাতায়াতের চালু পথে ঐ জনপদের ধ্বংসাবশেষ এখনও

বিদ্যমান রয়েছে। যেমন অপর আয়াতে বলা হয়েছে?

(তোমরা তো তাদের ধ্বংসাবশেষগুলো সকাল-সন্ধ্যায় অতিক্রম করে থাক। তবুও কি তোমরা অনুধাবন

করবে না? (৩৭ : ১৩৭-৩৮)। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন :

قوچکيُعقلون এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখেছি। (২৯ : ৩৫)

আল্লাহর বাণী :

من المُشيمينَ . وتُرَكُنا فيها اية الّذين يخافونَ الْعَذاب الأليم. সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম এবং সেখানে একটি পরিবার ব্যতীত আর কোন মুসলিম গৃহ আমি পাইনি। যারা মর্মতুদি শাস্তিকে ভয় করে আমি তাদের জন্যে এর মধ্যে একটি নির্দশন রেখেছি। (৫১ : ৩৫-৩৭)

অর্থাৎ লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের জনপদটিকে আমি শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের জন্যে রেখে দিয়েছি সেইসব লোকের জন্যে যারা আখিরাতের আযাবকে ভয় করে। না দেখেই আল্লাহকে ভয় করে, মহান প্রতিপালকের সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়ার ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে, প্রবৃত্তি পরায়ণতা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিস থেকে দূরে থাকে। তাঁর নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকে এবং লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের মত হওয়ার ব্যাপারে অন্তরে ভয় রাখে (^& • ৩৫-৪, ৩a = <!– …’, ৬-৭৩) যে ব্যক্তি কোন জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে। সে তাদের দলভুক্ত। সকল ব্যাপারে পূর্ণ সাদৃশ্য হতে হবে এমন কোন কথা নেই; বরং কোন কোন ব্যাপারে সাদৃশ্য থাকলেই হয়। যেমন কেউ কেউ বলেছেন, তােমরা যদি সম্পূর্ণরূপে কওমে লুত না হয়ে থাক, তবে কওমে লুত তোমাদের থেকে খুব বেশি পৃথক নয়। অতএব, যে লোক জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও আল্লাহ-ভীরু, সে আল্লাহর যাবতীয় নির্দেশ মেনে চলবে এবং রাসূলের আদর্শকে অনুসরণ করবে, সে অবশ্যই হালাল স্ত্রী ও যুদ্ধবন্দী দাসী ভোগ করবে। শয়তানের পথে চলতে সে ভয় পাবে। অন্যথায় সে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হবে এবং নিম্নোক্ত আয়াতের ऊ७उ ५८।। و ماهي بن الظالمثن پابعثر (জালিমদের থেকে তা বেশি দূরে नश।)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *