০৭. উত্তরাধিকার (দায়ভাগ) – সপ্তম অধ্যায়

উত্তরাধিকার (দায়ভাগ) – সপ্তম অধ্যায়

হিন্দু আইন অনুসারে পিণ্ডদানের ক্ষমতার উপর উত্তরাধিকারের নিয়ম প্রতিষ্ঠিত। যাহারা সাক্ষাৎ ভাবে বা পরোক্ষভাবে মৃত ব্যক্তির পিণ্ডদান করিতে পারেন, তাহারাই উত্তরাধিকারী হইতে সক্ষম। এইজন্য স্ত্রীলোকগণকে সাধারণতঃ বাদ দেওয়া হইয়াছে, কারণ তাঁহারা পিণ্ডদান করিতে অক্ষম। এমন কি ভগ্নী, পৌত্রী, দৌহিত্রী প্রভৃতি নিকট সম্পৰ্কীয় স্ত্রীলোকগণও উত্তরাধিকারী হইতে অক্ষম; ইহাদের অপেক্ষা দূরসম্পৰ্কীয় পুরুষব্যক্তি উত্তরাধিকারী হইতে পারিবেন, অথচ ইহার হইতে পারিবে না। কতকগুলি স্ত্রীলোককে উত্তরাধিকারের ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে, কারণ তাঁহারা সাক্ষাৎভাবে বা পরোক্ষভাবে পিণ্ডদান করিতে সক্ষম। যথা, স্ত্রী উত্তরাধিকারিণী হইতে পারেন, কারণ পুত্র, পৌত্র ও প্রপৌত্র না থাকিলে স্ত্রী শ্ৰাদ্ধক্রিয়া করিতে পারেন; কন্যা উত্তরাধিকারিণী হইতে পারে, কারণ যদিও সে নিজে পিণ্ডদান করিতে পারে না বটে, কিন্তু তাহার গভে যে পুত্র জন্মিবে সে তাহার মাতামহকে পিণ্ডদান করিতে পারিবে। এইজন্য পুত্ৰহীন বিধবা কন্যা উত্তরাধিকারিণী হইতে পারে না। মাতা উত্তরাধিকারিণী হন, কারণ মাতা যদিও পুত্রের পিণ্ডদান করিতে পারেন না বটে, তথাপি তাহার গর্ভের অন্য পুত্ৰগণ (অর্থাৎ ভ্রাতাগণ) মৃত পুত্রের পিণ্ডদান করিবে। এইরূপে স্ত্রীলোক ও পুরুষ উত্তরাধিকারী সম্বন্ধে পিণ্ডদানের নিয়ম প্রয়োগ করা হইয়াছে।

উত্তরাধিকার সম্বন্ধে আলোচনা করিতে হইলে”সপিণ্ড” ও”সকুল্য” এই দুইটী কথার অর্থ জানিয়া রাখা আবশ্যক।

‘সপিণ্ড’ অর্থে মৃত্যুর পর যাহারা পিণ্ডের সমভাগী হইবেন তাহাদিগকে বুঝায়। অর্থাৎ নিম্নলিখিত চতুর্থ পুরুষ পৰ্য্যন্ত জ্ঞাতি দৌহিত্র ও মাতৃকুলের ব্যক্তিগণ সপিণ্ড বলিয়া গণ্য :–(ক) পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র; পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ; ভ্রাতা, ভ্রাতার পুত্র ও পৌত্র; পিতার ভ্রাতা, পিতার ভ্রাতার পুত্র ও পৌত্র; পিতামহের ভ্রাতা, পিতামহের ভ্রাতার পুত্র ও পৌত্র;

(খ) দৌহিত্র; পিতার দৌহিত্র, পিতামহের এবং প্রপিতামহের দৌহিত্র; পুত্রের দৌহিত্র, পৌত্রের দৌহিত্র; ভ্রাতার ও ভ্রাতু-পুত্রের দৌহিত্র; পিতার ভ্রাতার দৌহিত্র, পিতার ভ্রাতু-পুত্রের দৌহিত্র, পিতামহের ভ্রাতার দৌহিত্র, পিতামহের ভ্রাতুষ্পত্রের দৌহিত্র।

(গ) মাতামহ, প্রমাতামহ; বৃদ্ধপ্রমাতামহ; ইহাদের পৌত্র প্রপৌত্র ও দৌহিত্র; মাতামহের পুত্রের ও পৌত্রের দৌহিত্র; প্রমাতামহের পুত্রের ও পৌত্রের দৌহিত্র; বৃদ্ধপ্রমাতামহের পুত্রের ও পৌত্রের দৌহিত্র।

সকুল্য অর্থে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পুরুষ পৰ্য্যন্ত জ্ঞাতিবর্গকে বুঝায়।

উত্তরাধিকারীগণের মধ্যে অগ্রগণ্যতাসম্বন্ধে কতকগুলি নিয়ম জানিয়া রাখা উচিত; সেইগুলি জানা থাকিলে কে কাহার অপেক্ষা অগ্রগণ্য ওয়ারিস হইবেন তাহা সহজেই নির্ণয় করা যাইবে। সেই নিয়মগুলি এই—

প্রথমতঃ, সকুল্যগণ অপেক্ষা সপিণ্ডগণ অগ্রগণ্য হইবেন; এবং

সমানোদকগণ (৮ম হইতে ১৪শ পুরুষ পৰ্য্যন্ত জ্ঞাতি) অপেক্ষা সকুল্যগণ অগ্রগণ্য হইবেন। যৎ ভ্রাতার প্রপৌত্র অপেক্ষা ভ্রাতার পুত্রের দৌহিত্র অগ্রগণ্য হইবে, কারণ ভ্রাতার পুত্রের দৌহিত্র একজন সপিণ্ড (মূল পিতা হইতে গণনা করিলে পিতা ১, ভ্রাতা ২, ভ্রাতার পুত্র ৩, তাহার দৌহিত্র ৪, সুতরাং চারি পুরুষের মধ্যে) এবং ভ্রাতার প্রপৌত্র একজন সকুল্য (মূল পিতা হইতে গণনা করিয়া পিতা ১, ভ্রাতা ২, ভ্রাতার পুত্র ৩, ভ্রাতার পৌত্র ৪, এবং ভ্রাতার প্রপৌত্র ৫ পুরুষ হইল)। দিগম্বর বঃ মতিলাল, ৯ কলিকাতা ৫৬৩ (ফুলবেঞ্চ)।

দ্বিতীয়তঃ, সপিণ্ডগণের মধ্যে যদি একজনকে স্ত্রীলোকের ভিতর দিয়া গণনা করিতে হয়, এবং অপর ব্যক্তিকে শুধু পুরুষের মধ্য দিয়া গণনা করিতে হয়, তাহা হইলে প্রথমোক্ত ব্যক্তি অপেক্ষা দ্বিতীয়োক্ত ব্যক্তি অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারী হইবেন। যথা, ভ্রাতার দৌহিত্র অপেক্ষা পিতামহের প্রপৌত্র অগ্রগণ্য ওয়ারিস হইবেন; কারণ ভ্রাতার দৌহিত্রকে একজন স্ত্রীলোকের (ভ্রাতার কন্যার) ভিতর দিয়া গণনা করিতে হইতেছে; কিন্তু পিতামহের প্রপৌত্রকে গণনা করিতে হইলে মাঝে কোনও স্ত্রীলোক আসে না।

তৃতীয়তঃ, যাহারা মৃত ব্যক্তির মাতৃকুলের পুরুষগণকে পিণ্ডদান করে তাহাদের অপেক্ষা যাহারা মৃতব্যক্তির পিতৃকুলের পুরুষগণকে পিণ্ডদান করে তাহারা অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারী হয়; যথা মাতুল অপেক্ষা ভ্রাতার পৌত্র অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারী, কারণ মাতুল মৃতব্যক্তির মাতামহকে (মাতৃকুল) পিণ্ডদান করিবে, কিন্তু ভ্রাতার পৌত্র মৃতব্যক্তির পিতা ও পিতামহকে (পিতৃকুল) পিণ্ডদান করিবে। সেইরূপ, মাতুলপুত্র অপেক্ষা পিতৃব্যের দৌহিত্র অগ্রগণ্য হইবে (ব্রজলাল বং জীবনকৃষ্ণ, ২৬ কলিকাতা ২৩৫); মাতুল অপেক্ষা প্রপিতামহের পুত্রের দৌহিত্র অগ্রগণ্য ওয়ারিস হইবে (কৈলাস চন্দ্র বা করুণ, ১৮ কলিকাতা উইক্‌লি নোটল, ৪৭৭)।

চতুর্থত, যাহারা মৃতব্যক্তির কেবলমাত্র পিতৃকুলের ব্যক্তিগণকে পিণ্ড দান করেন, তাঁহাদের অপেক্ষা যাঁহারা মৃত ব্যক্তির পিতৃ ও মাতৃ এই উভয় কুলের ব্যক্তিগণকে পিণ্ডদান করেন তাঁহারা অগ্রগণ্য হইবেন; যথা, বৈমাত্র ভ্রাতা অপেক্ষা সহোদর ভ্রাতা বা সহোদর ভ্রাতার পুত্র ও পৌত্র অগ্রগণ্য ওয়ারিস হইবে; বৈমাত্র ভ্রাতার পুত্র অপেক্ষা সহোদর ভ্রাতার পুত্র অগ্রগণ্য ওয়ারিস হইবে।

পঞ্চমতঃ, যাহারা মৃতব্যক্তির দূরবর্তী পূৰ্ব্বপুরুষকে পিণ্ডদান করে তাহাদের অপেক্ষা যাহারা মৃতব্যক্তির নিকটবৰ্ত্তী পূৰ্ব্বপুরুষকে পিণ্ডদান করে তাহারা অগ্রগণ্য ওয়ারিস হইবে; যথা, পিতৃব্যের পুত্র অপেক্ষা ভ্রাতার দৌহিত্র অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারী, কারণ পিতৃব্যপুত্র মৃতব্যক্তির পিতামহকে পিণ্ডদান করিবে, কিন্তু ভ্রাতার দৌহিত্র মৃতব্যক্তির পিতাকে পিণ্ডদান করিবে। সেইরূপ, পিতামহের ভাগিনেয় অপেক্ষা পিতার ভাগিনেয় অগ্রগণ্য ওয়ারিস; পিতৃব্যের দৌহিত্র অপেক্ষা ভ্রাতার পুত্রের দৌহিত্র অগ্রগণ্য হইবে। (প্রাণনাথ বঃ শরৎচন্দ্র, ৮ কলিকাতা ৪৬০)।

ষষ্টতঃ, যে ব্যক্তি মুতব্যক্তির পিণ্ড গ্রহণ করে তাহা অপেক্ষা যে ব্যক্তি মৃতব্যক্তিকে পিণ্ডদান করে সে অগ্রগণ্য; এবং যাহারা মৃত ব্যক্তির পিতা পিতামহ প্রভূতিকে পিণ্ডদান করে তদপেক্ষ যাহারা মৃতব্যক্তিকেই পিণ্ডদান করে তাহারা অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারী হইবে। যথা, মৃতব্যক্তির পিতা অপেক্ষা পুত্র বা পৌত্র অগ্রগণ্য, কারণ পুত্র পৌত্র প্রভৃতি মৃতব্যক্তিকে পিও দান করে, কিন্তু পিতা পিণ্ড গ্রহণ করে। শ্রণতা অপেক্ষা দৌহিত্র অগ্রগণ্য, কারণ দৌহিত্র মৃত ব্যক্তিকেই পিণ্ডদান করে, কিন্তু ভ্রাতা মৃতব্যক্তির পিতাকে পিণ্ডদান করিবে, মৃতব্যক্তিকে নহে।

এই নিয়মগুলি স্বরণ রাখিলেই মৃতব্যক্তির কে ওয়ারিস হইবেন তাহা সহজেই নির্ণয় করিতে পার। যাইবে।

কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ পর পর (অর্থাৎ একের অভাবে পরবর্তী) তাঁহার সম্পত্তি উত্তরাধিকারী হইবে :–

(১) পুত্র

(২) পৌত্র

(৩) প্রপৌত্র

(৪) বিধবা স্ত্রী

(৫) কন্যা

(৬) দৌহিত্র

(৭) পিতা

(৮) মাতা

(৯) ভ্রাতা

(১০) ভ্রাতার পুত্র

(১১) ভ্রাতার পৌত্র

(১২) ভাগিনেয়

ইহাদের অভাবে কে উত্তরাধিকারী হইবেন তাহা পরে লিখিত হইবে। এখন ইহাদের সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করা-যাইতেছে —

১-৩।  পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র

কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাহার পুত্র তাহার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। পুত্র না থাকিলে পৌত্র, পৌত্র না থাকিলে প্রপৌত্র উত্তরাধিকারী হয়। পুত্ৰগণের মধ্যে যদি কোনও এক পুত্র পূৰ্ব্বেই পরলোক গমন, করিয়া থাকে, তাহা হইলে অপর পুত্ৰগণ এবং ঐ মতপুত্রের পুত্র একসঙ্গে পাইবে; সেইরূপ, পৌত্ৰগণের মধ্যে যদি একজন পূর্বেই পরলোক গমন করিয়া থাকে তাহা হইলে পৌত্র ও মৃত পৌত্রের পুত্র একসঙ্গে পাইবে। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তি তাঁহার পুত্র, মৃত পুত্রের পুত্র, এবং মৃত পুত্রের মৃত পুত্রের পুত্র একসঙ্গে পাইয়া থাকে। যথা :

  • মূলব্যক্তি
    • আনন্দ
      • বলরাম
    • চন্দ্র (মৃত)
      • দয়াল
      • ঈশান
    • ফণী (মৃত)
      • গঙ্গারাম (মৃত)
        • হরি
        • ইন্দ্র
        • যাদব (মৃত)
          • কালীনাথ

মূলব্যক্তির মৃত্যুকালে তাঁহার পুত্র আনন্দ, ও আনন্দের পুত্র বলরাম, এবং মূলব্যক্তির মৃত পুত্র চন্দ্রের দুই পুত্র দয়াল ও ঈশান, এবং মুলব্যক্তির আর এক মৃত পুত্র ফণীর মৃত পুত্র গঙ্গারামের পুত্র হরি ও ইন্দ্র এবং গঙ্গারামের এক মৃত পুত্র ষাদবের পুত্ৰ কালীনাথ থাকেন। এইরূপ অবস্থায় মূলব্যক্তির বিষয় তিন অংশে বিভক্ত হইয়া এক অংশ আনন্দ পাইবেন; আনন্দ জীবিত আছেন বলিয়া তাহার পুত্র বলরাম কোনও অংশ পাইবেন না। এক অংশ দয়াল ও ঈশান (প্রত্যেকে ১/৬) পাইবেন। আর তৃতীয় অংশ হরি ও ইন্দ্র (প্রত্যেকে ১/৬) পাইবেন। কালীনাথ কিছুই পাইবেন না, কারণ তিনি মূলব্যক্তির প্রপৌত্রের পুত্র। কালীনাথের পিতা যাদব যদি মূলব্যক্তির মৃত্যুকালে জীবিত থাকিতেন তাহা হইলে সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ, হরি, ইন্দ্র ও যাদব তিনজনে (প্রত্যেকে ১/৯) পাইতেন। পরে যাদবের মৃত্যুর পর যাদবের অংশ তাহার পুত্র কালীনাথ পাইতেন।

একাধিক পত্নীর গর্ভে যদি পুত্ৰগণ জন্মিয় থাকে, তাহা হইলে সকল পুত্রই তুল্যাংশে পাইবে। অনেকের এইরূপ ধারণা আছে যে যদি একবাক্তির প্রথম স্ত্রীর গর্ভে এক পুত্র ও দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে দুই পুত্র জন্সিয়া থাকে তাহা হইলে ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সম্পত্তি দুইভাগ হইবে, এবং প্রথম পত্নীর গর্ভজাত পুত্র অর্থাৎশ, এবং দ্বিতীয় পত্নীর গর্ভজাত পুত্রদ্বয় একত্রে অৰ্দ্ধাংশ (প্রত্যেকে ঐ অংশ) পাইবে। কিন্তু তাহা সম্পূর্ণ ভুল সম্পত্তি তিনভাগ হইয়া প্রত্যেকে ১/৩ অংশ পাইবে; সহোদর ও বৈমাত্র ভ্রাতায় কোন প্রভেদ হইবে না।

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈপ্তের যদি উপপত্নীর গর্ভজাত পুত্র থাকে, তাহা হইলে সে পুত্র উত্তরাধিকারী হইতে পারে না। কিন্তু শূদ্র ব্যক্তির উপপত্নীর গর্ভজাত পুত্র উত্তরাধিকারী হইতে পারে; সুজাত পুত্ৰগণের সহিত সে একসঙ্গে সম্পত্তি ভোগ করিতে পারে এবং সুজাতপুত্রের অৰ্দ্ধাংশ পায়; অর্থাৎ সে স্বজাত পুত্র হইলে যাহা পাইতে পারিত তাহার অৰ্দ্ধাংশ পাইবে। যথা, কোনও শূদ্র ব্যক্তির দুই স্বজাত পুত্র, এবং এক উপপত্নীজাত পুত্র রহিয়াছে; এস্থলে শেষোক্ত পুত্র যদি সুজাত হইত তাহা হইলে সে এক তৃতীয়াংশ পাইত; কিন্তু সে উপপত্নীজাত বলিয়া এক যষ্ঠাংশ পাইবে বাকী ৫/৬ অংশ অন্য পুত্রদ্বয় পাইবে।  যদি উপপত্নীর গর্ভজাত পুত্র ভিন্ন স্বজাত পুত্র না থাকে, তাহা হইলে সে সমস্ত সম্পত্তি পাইতে পারে, যদি মৃত ব্যক্তির পত্নী বা কন্যা বা দৌহিত্র না থাকে। যথা উপপত্নীজাত পুত্র এবং দৌহিত্র থাকিলে ঐ পুত্র অৰ্দ্ধাংশ পাইবে, বাকী অৰ্দ্ধাংশ দৌহিত্র পাঠবে। উপপত্নীজাত পুত্র এবং এক ভ্রাতু-পুত্ৰ থাকিলে, ঐ পুত্রই সমস্ত পাইবে, ভ্রাতু-পুত্র কিছুই পাইবে না।

কিন্তু যে কোনও উপপত্নীর গর্ভজাত পুত্র হইলে চলিবে না; যে উপপত্নীর সহিত মৃত ব্যক্তি বহুকাল ধরিয়া সহবাস করিয়াছে, এবং ঐ মৃত ব্যক্তি ভিন্ন যাহার আর কোনও উপপতি ছিল না, এরূপ উপপত্নীর গর্ভজাত পুত্রই উত্তরাধিকারী হইতে পারে।

বিধবা স্ত্রী

পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র না থাকিলে বিধবা স্ত্রী স্বামীত্যক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হন। একাধিক পত্নী থাকিলে সকলে এজমালী স্বত্বে তুল্যাংশে পাইয়া থাকেন। পরে একজনের মৃত্যু হইলে অবশিষ্ট সপত্নীগণ এজমালীতে ভোগ করেন। এইরূপে শেষ একজন জীবিত থাকিলে তিনিই সমস্ত সম্পত্তি প্রাপ্ত হন।

একাধিক পত্নী থাকিলে তাহারা স্থবিধার জন্য নিজেদের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগ করিয়া লইয়া পৃথকভাবে ভোগ করিতে পারেন। কিন্তু এই বিভাগ তাহদের জীবিতকাল পৰ্যন্তই চলিবে, তাহদের মৃত্যুর পর পৃথক অংশগুলি সমস্তই এক হইয়া যাইবে।

বিধবা স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি জীবনন্বত্বে পাইয়া থাকেন; অর্থাৎ তিনি যতদিন জীবিত থাকিবেন ততদিন ঐ সম্পত্তি ভোগ করিবেন; তাহার মৃত্যুর পর তাহার স্বামীর পরবর্তী উত্তরাধিকারী ঐ সম্পত্তি পাইবেন। বিধবা পত্নী সাধারণতঃ স্বামীর সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে পারেন না। তবে অবস্থাবিশেষে হস্তাস্তর করিলেও সিদ্ধ হয়; তাঙ্গ পরবর্তী অধ্যায়ে লিথিত হইবে।

স্বামী জীবিত থাকিতে যদি স্ত্রী অসতী হন তাহা হইলে তিনি স্বামীর সুম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হইতে পরিবেন না— স্বামীর যিনি পরবর্তী উত্তরাধিকারী থাকেন তিনিই সম্পত্তি পাইবেন। কিন্তু স্ট্রী যদি স্বামীর জীবিতকালে সতী থাকিয়া স্বামীর মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তি প্রাপ্ত হইয়া পরে (অর্থাৎ বিধবা হইয়া) অসতী হন, তাহা হইলে সেই সম্পত্তি হইতে তিনি বঞ্চিত হইবেন না (মণিরাম কলিতা বঃ কেরী কলিতানী, ৫ কলিকাতা ৭৭৬ প্রিভিকৌন্সিল)।

স্ত্রী প্রকৃতপক্ষে অসতী হইলেই তবে উত্তরাধিকার হইতে বঞ্চিত হন; কিন্তু তিনি যদি স্বামীর কথার অবাধ্য হইয়া থাকেন, বা স্বামীকে অবহেলা করিয়া থাকেন, বা স্বামী দ্বিতীয়বার বিবাহ করার জন্য তাঁহার নিকট হইতে পৃথকভাবে বাস করিয়া থাকেন, তজ্জন্য তিনি স্বামীর মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হইতে বঞ্চিত হইবেন না (ক্ষেত্রমণি বা কাদম্বিনী, ১৬ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৯৬৪)।

বিধবা পত্নী পুনরায় বিবাহ করিলে আর তিনি স্বামীত্যক্ত সম্পত্তি ভোগ করিতে পারিবেন না; ঐ সম্পত্তি হইতে তৎক্ষণাৎ তিনি বঞ্চিত হইবেন, এবং তাহার স্বামীর পরবর্তী উত্তরাধিকারী উহা পাইবেন। অর্থাৎ বিধবা পুনরায় বিবাহ করিলে তিনি যেনতাঁহার প্রথম স্বামীর পরিবারে মৃত হইয়াছেন এইরূপ গণ্য হইবে (বিধবার পুনৰ্ব্বিবাহ আইন, ২ ধারা)। কিন্তু বিধবা পত্নী ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিলে তিনি স্বামীর সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন না; কারণ ১৮৫০ সালের ২১ আইন (ধৰ্ম্মসম্বন্ধে স্বাধীনতা আইন) অনুসারে কোনও ব্যক্তি ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ হেতু কোনও সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হন না। কিন্তু হিন্দু বিধবা যদি ধৰ্ম্মাস্তুর গ্রহণ করেন এবং পুনরায় বিবাহ করেন, তাহা হইলে বিধবার পুনৰ্ব্বিবাহ আইনের ২ ধারা অনুসারে তিনি পূৰ্ব্ব স্বামীত্যক্ত সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন (মাতঙ্গিনী বঃ রামরতন, ১৯ কলিকাতা ২৮৯ ফুলবেঞ্চ)। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্ট এইরূপ একটী মোকদ্দমায় বড়ই রহস্ত করিয়াছেন। এই মোকদ্দমায়, এক হিন্দু বিধবা স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হওয়ার পর মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং এক মুসলমানকে বিবাহ করিয়াছিলেন। এরূপ অবস্থায় তিনি প্রথম স্বামীর সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন কিনা এবিষয়ে প্রশ্ন উঠিল। এলাহাবাদ হাইকোর্ট স্থির করিলেন যে তিনি বঞ্চিত হইবেন না! তাহার কারণ, প্রথমতঃ মুসলমান ধৰ্মগ্রহণ হেতু তিনি বঞ্চিত হইতে পারেন না, কারণ এবিষয়ে ১৮৫০ সালের ২১ আইন তাহার স্বপক্ষে রহিয়াছে; তাহার পর, হিন্দুবিধবার পুনৰ্ব্বিবাহ আইন অনুসারে বিধবা পুনৰ্ব্বিবাহ করিলে বঞ্চিত হন বটে; কিন্তু ঐ আইন এস্থলে প্রযোজ্য হইতে পারে না, কারণ ঐ আইন হিন্দু বিধবার পক্ষে খাটিবে, কিন্তু এস্থলে হিন্দু বিধবা যখন মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছেন তখন আর তাহাকে ‘হিন্দু বিধবা বলা যাইতে পারে না (৩৫ এলাহাবাদ ৪৬৬)। এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই নিষ্পত্তির ফল এইরূপ দাড়ায় যে কোনও হিন্দু বিধবা যদি হিন্দু থাকিয়া পুনরায় বিবাহ করেন তাহা হইলে তিনি হিন্দুবিধবার পুনৰ্ব্বিবাহ আইন অনুসারে স্বামীর সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন; কিন্তু তিনি যদি মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া পুনরায় বিবাহ করেন তাহা হইলে ঐ সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন না। আইনের রহস্য বটে; যাহা হউক, এই নজীরটী বঙ্গদেশে প্রযোজ্য হইবে না; কারণ এ বিষয়ে কলিকাতা হাইকোর্ট পূৰ্ব্বোক্ত ১৯ কলিকাতা ২৮৯ নজীরে সঙ্গতমতেই স্থির করিয়াছেন যে এরূপ অবস্থায় বিধবা তাঁহার প্রথম স্বামীর সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন।

কন্যা

বিধবা স্ত্রীর অভাবে কিংবা বিধবা স্ত্রীর মৃত্যুর পর কন্যা সম্পত্তি পাইবেন।

কন্যাগণকে চারিশ্ৰেণীতে বিভক্ত করা যায় :–(ক) অবিবাহিত কন্যা; (খ) বিবাহিত কন্য; (পুত্রবতী হউক বা পুত্রহীন হউক); (গ) পুত্রবর্তী বিধবা কন্যা; (ঘ) পুত্রহীনা বিধবা কন্যা।

(ক)। অবিবাহিত কস্ত থাকিলে তিনিই পিতার সমস্ত সম্পত্তি পাইবেন, অপর কন্যাগণ পাইবেন না। তাঁহার বিবাহ হইয়া গেলেও তিনি একাকী ঐ সম্পত্তি ভোগ করিতে থাকিবেন। তাহার মৃত্যুর পর (খ) ও (গ) শ্রেণীর কস্তাগণ একত্রে পাইবেন; যদি তাহারা না থাকেন তাহা হইলে দৌহিত্রে সম্পত্তি অর্শিবে। একাধিক কুমারী কন্যা থাকিলে তাহারা সকলে মিলিয়া এজমালীতে ভোগ করিবেন, এবং একের মৃত্যুতে অবশিষ্ট সকলে মিলিয়া ভোগ করিতে থাকিবেন। এইরূপ শেষ কষ্কার মৃত্যুর পর (খ) ও (গ) শ্রেণীর কন্যাগণ একত্রে পাইবেন; তাহার না থাকিলে সম্পভিটী দৌহিত্রগণের হস্তে যাইবে।

(খ) ও (গ)। অবিবাহিত কন্যা না থাকিলে বা অবিবাহিত কন্যা জীবনস্বত্বে সম্পত্তি ভোগ করিয়া পরলোকগমন করিলে উপরোক্ত (খ) ও (গ) শ্রেণীর কস্তাগণ পাইবেন। এই দুই শ্রেণীর কন্যাগণ একত্রে ভোগ করিতে পারিবেন; অর্থাৎ যদি দুইটী সধবা কন্যা এবং একটী পুত্রবতী বিধবা কন্যা থাকেন, তাহা হইলে তিনজনেই একত্রে সম্পত্তি পাইবেন।

পুত্রহীন সধবা কন্যা সম্বন্ধে কয়েকট কথা জানিয়া বাখা আবশ্যক; সধবা কন্যার যদি পুত্র না থাকে শুধু কন্যা জন্মিয়া থাকে, তাহা হইলেও সে উত্তরাধিকারিণী হইয়া থাকে। কারণ যদিও তাহার এখনও পুত্র জন্মায় নাই, তাহা হইলেও ভবিষ্যতে হয়তো জন্মাইতে পারে। কিন্তু যদি সে বন্ধ্যা হয় তাহা হইলে প্রশ্ন একটু কঠিন হইয়া পড়ে; কারণ অনেক স্ত্রীলোক বন্ধ্যা বলিয়া প্রতিপন্ন হওয়ার পরও অধিক বয়সে সন্তান প্রসব করিয়া থাকেন। সুতরাং বন্ধ্যা কস্তাও উত্তরাধিকাৰিণী হইতে পারেন; কিন্তু যদি তাহার সন্তান প্রসব করিবার বয়স উৰ্ত্তীর্ণ হইয়া গিয়া থাকে, তাহা হইলে সে উত্তরাধিকারিণী হইতে পারে না। কিছুকাল পূর্বে কলিকাতা হাইকোর্টে এক মোকদ্দমায় এইরূপ প্রশ্ন উঠিয়াছিল; এক সধবা কন্যার বয়স ৬৩ বৎসর; সে ৪৩ বৎসর ধরিয়া তাহার স্বামীর নিকট রহিয়াছে, কিন্তু কোনও সন্তান জন্মে নাই; হাইকোর্ট স্থির করিলেন যে এরূপ অবস্থায় সে বন্ধ্যা বলিয়াই গণ্য হইবে, এবং পিতৃসম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হইতে পরিবে না। (ইচ্ছাময়ী বঃ নীলমণি, ১৫ ইণ্ডিয়ান কেসেস, ১৬৯)। সেইরূপ, যে সধবা কন্যার মোটেই পুত্র হয় নাই, শুধু কন্যা জন্মিয়াছে, এবং প্রসব করিবাব বয়সও উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে, তিনিও উত্তরাধিকারিণী হইতে পারেন না;

(ঘ)। পুত্রহীন বিধবা কন্যা উত্তরাধিকারিণী হইতে পারেন না। কিন্তু তিনি যদি স্বামীর অনুমতি অনুসারে দত্তক গ্ৰহণ করেন তা হইলে তিনি পুত্রবতী কন্যা বলিয়া গণ্য হইবেন, এবং উত্তরাধিকারিণী হইতে পারিবেন।

কন্যাগণ জীবনস্বত্বে সম্পত্তি পাইয়া থাকেন। তাঁহারা ইচ্ছা করিলে নিজেদের সুবিধার জন্য পরস্পরের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগ করিয়ু লইতে পারেন, কিন্তু ঐ বিভাগ তাহাদের জীবিতকাল পর্য্যন্ত কার্য্যকর থাকিবে, তাঁহাদের মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পত্তি এক হইয়া যাইবে।

কন্যা যদি সম্পত্তিতে উত্তবাধিকারিণী হইবার সময় অসতী থাকেন তাহা হইলে তিনি ঐ সম্পত্তি পাইবেন না, কিন্তু সম্পত্তি পঠিয় পরে অসতী হইলে তিনি সেই সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন না। রামানন্দ ব: রাইকিশোরী, ২২ কলিকাতা ৩৪৭)।  কন্যা যদি হিন্দু ধৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়া মুসলমান ধৰ্ম্মগ্রহণ করে এবং তাহার হিন্দুস্বামীর জীবিতাবস্থাতেই একজন মুসলমানকে বিবাহ করে, তাহা হইলে সে অসতী কন্যা বলিয়া গণ্য হইবে এবং পিতৃসম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হইতে পারিবে না (স্থনরী বঃ পীতাম্বরী, ৩২ কলিকাতা ৮৭১);

দৌহিত্র

কন্যার অভাবে অথবা, সমস্ত কন্যার মৃত্যুর পর দৌহিত্রগণ সম্পত্তি পাইবেন, কিন্তু যতক্ষণ পৰ্য্যন্ত একজন কন্যাও জীবিত থাকিবেন, ততক্ষণ সম্পত্তি দৌহিত্রে অর্শিবে না। দৌহিত্রগণ সকলে তুল্যাংশে পাইবেন। এক কন্যার যদি এক পুত্র থাকে, আর এক কন্যার যদি চারি পুত্র থাকে এবং তৃতীয়া কন্যার যদি পাঁচ পুত্র থাকে, তাহা হইলে সম্পত্তি দশ ভাগে বিভক্ত হুইয়া এক এক ভাগ এক এক দৌহিত্র পাইবে।

দৌহিত্র নির্বাঢ় স্বত্বে সম্পত্তি পাইয়া থাকেন; এবং তাহার মৃত্যুর পর ঐ সম্পত্তি তাঁহারই পুত্রপৌত্রাদিতে অর্শিবে। কিন্তু দৌহিত্র যদি তাহার মাতার বা কোনও মাসীর জীবিতকালে (অর্থাৎ নিজে সম্পত্তি পাইবার পূৰ্ব্বে) পুত্র রাখিয় পরলোক গমন করেন, তাহা হইলে ঐ মাতা বা মাসীর মৃত্যুর পর ঐ পুত্র কোনও অংশ পাইবে না। (৮ এলাহাবাদ ৬১৪)।

৭-৮পিতা, মাতা

দৌহিত্র না থাকিলে পিতা ওয়ারিস হইবেন। পিতা না থাকিলে মাতা ওয়ারিস হইবেন।

অসতী মাতা পুত্রের ওয়ারিস হইতে পারেন না; কিন্তু ওয়ারিস হইয়া পরে অসতী হইলে তিনি সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন না (ত্ৰৈলোক্য ব: রাধামুন্দরী, ৩ কলিকাতা ল জার্ণল ২৩৫; ৪ কলিকাতা ৫৫০)।

বিধবা মাতা যদি পুত্রের স্বোপার্জিত সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হন, তাহা হইলে সম্পত্তি পাইবাব পর পুনরায় বিবাহ করিলে তিনি উহ। হইতে বঞ্চিত হইবেন না (২৯ বোম্বাই ৯১; ২৮ মাদ্রাজ ৪২৫)। কিন্তু যদি এইরূপ হয় যে ঐ সম্পত্তি পূৰ্ব্বে তাহার স্বামীর ছিল পরে পুত্রে অশিয়াছে, এবং পুত্রের ওয়ারিস স্বরূপ তিনি পাইয়াছেন, তাহা হইলে তিনি সম্পত্তি পাইয়া পুনরায় বিবাহ করিলে ঐ সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন। ২২ বোম্বাই ৩২১); কিন্তু এস্থলে ঐ পুত্রের মৃত্যুর পূৰ্ব্বেষ্ট যদি বিধবা মাতা পুনরায় বিবাহ করিয়া থাকেন তাহা হইলে পুত্রের মৃত্যুর পর তিনি ঐ সম্পত্তিতে ওয়ারিস হইতে পরিবেন (১১ উইক্‌লি রিপোটার ৮২)।

অন্যান্য স্ত্রীলোকের ন্যায় মাতা জীবনস্বত্বে শাইয়া থাকেন। বিমাতা সপত্নীপুত্রের ওয়ারিস হইতে পারেন না।

ভ্রাতা

মাতার অভাবে কিংবা মাতার মৃত্যুর পর ভ্রাতা ওয়ারিস হইবেন। সহোদর ভ্রাতা থাকিলে তিনিই সম্পত্তি পাইবেন, তদভাবে বৈমাত্র ভ্ৰাতায় সম্পত্তি অর্শিবে।

কিন্তু যদি বৈমাত্র ভ্রাতা মৃত ব্যক্তির সঠিত একান্নভুক্ত, এবং সহোদর ভ্রাতা পৃথগল্পভুক্ত হন, তাহা হইলে বৈমাত্র ও সহোদর ভ্রাতৃগণ তুল্যাংশে পাইবেন।

সহোদর ভ্রাতৃগণের মধ্যে যিনি বা যাহার। মুত ব্যক্তির সহিত একান্নভূক্ত ছিলেন তিনি বা তাহারাই ওয়ারিস হইবেন। তদ্রুপ, সহোদর ভ্রাত না থাকিলে বৈমাত্র ভ্রাতৃগণের মধ্যে যিনি বা যাঁহার একান্নভূক্ত ছিলেন তিনি বা তাহারাই সম্পত্তি পাইবেন। (অক্ষয় বঃ হরিদাস, ৩৫ কলিকাতা ৭২১)।

১০ভ্রাতার পুত্র

সহোদর অথবা বৈমাত্র ভ্রাতা না থাকিলে ভ্রাতুষ্পপুত্র ওয়ারিস হইবেন : যদি মৃত ব্যক্তির দুষ্ট ভ্রাতা ও অপর এক মুত ভ্রাতার পুত্র থাকেন, তাহা হইলে ঐ দুষ্ট ভ্রাতাই সমস্ত, সম্পত্তি পাইবেন, উক্ত ভ্রাতুষ্পপুত্র কিছুই পাইবেন না।

যত জন ভ্রাতুষ্পুত্র থাক্লিবেন সম্পত্তি তত ভাগ হইয় প্রত্যেকে এক এক অংশ পাইবেন। মৃত ব্যক্তির এক মৃত ভ্রাতার যদি দুই পুত্র এবং অপর মৃত ভ্রাতার চারি পুত্র থাকেন, তাহা হইলে এই ছয়জন ভ্রাতু-পুত্র প্রত্যেকে সম্পত্তির এক ষষ্ঠাংশ করিয়া পাইবেন। ভ্রাতার ঔরসজাত এবং দত্তকপুত্রের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই; উভয়েরই একইরূপ স্বত্ব হইবে।

ভ্রাতুপুত্ৰগণ সম্পত্তি পাইবার পর যদি আর একজন ভ্রাতুষ্পুত্র জন্মগ্রহণ করেন, অর্থাৎ সম্পত্তি পাইবার সময়ে যদি কোন মুক্ত ভ্রাতাব পত্নী গর্ভবতী থাকেন ও তাহার গর্ভে পরে যদি পুত্রের জন্ম হয়, তাহা হইলে সেই পুত্র কিছুই পাইবে না।

সহোদর এবং বৈমাত্র ভ্রাতা সম্বন্ধে যেরূপ নিয়ম, সহোদর ভ্রাতার এবং বৈমাত্র ভ্রাতার পুত্ৰগণের সম্বন্ধেও অগ্রগণ্যতার সেইরূপই নিয়ম। অর্থাৎ সহোদর ভ্রাতার পুত্র থাকিতে বৈমাত্র ভ্রাতার পুত্র সম্পত্তি পাইবেন না; কিন্তু যদি এরূপ হয় যে সহোদর ভ্রাতা মৃত ব্যক্তির সঠিত পৃথগন্নভূক্ত ছিলেন, এবং বৈমাত্র ভ্রাতা মৃত ব্যক্তির সহিত একান্নভূক্ত ছিলেন, তাহা হইলে সহোদর ভ্রাতার এবং বৈমাত্র ভ্রাতার পুত্ৰগণ সকলে একত্রে উত্তরাধিকারী হইবেন।

১১ভ্রাতার পৌত্র

ভ্রাতুষ্পুত্র না থাকিলে ভ্রাতার পৌত্র উত্তরাধিকারী হইবেন।

১২ভাগিনেয়

ভ্রাতার পৌত্র না থাকিলে ভাগিনেয় উত্তরাধিকারী হইবেন। ভাগিনেয়গণ সকলেই তুল্যাংশে পাইয়া থাকেন। যদি এক ভগ্নীর দুই পুত্র এবং আর এক ভগ্নীর তিন পুত্র থাকে, তাহা হইলে সম্পত্তি পাঁচভাগে বিভক্ত হইয়া প্রত্যেকে এক পঞ্চমাংশ পাইবেন। সহোদর ভীর এবং বৈমাত্র ভগ্নীর পুত্ৰগণে কোনও প্রভেদ নাই, তাহারা সকলেই একত্রে পাইবেন।

পরবর্তী উত্তরাধিকারীগণ

ভাগিনেয়ের অভাবে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ (একের অভাবে পরবর্তী। উত্তরাধিকারী হইবেন :–

(১৩) পিতামহ; (১৪) পিতামহী; (১৫) পিতামহের পুত্র; (১৬) পিতামহের পৌত্র; (১৭) পিতামহের প্রপৌত্র; (১৮) পিতামহের দৌহিত্র; (১৯) প্রপিতামহ; (২০) প্রপিতামহী; (২১) প্রপিতামহের পুত্র; ২২) প্রপিতামহের পৌত্র; (২৩) প্রপিতামহের প্রপৌত্র; ২৪) প্রপিতামহের দৌহিত্র’ (২৫; পুত্রের দৌহিত্র; (২৬ পৌত্রের দৌহিত্র; (২৭) ভ্রাতার দৌহিত্র; (২৮) ভ্রাতার পুত্রের দৌহিত্র; (২৯) পিতামহের পুত্রের দৌহিত্র; (৩০) পিতামহের পৌত্রের দৌহিত্র; (৩১) প্রপিতামহের পুত্রের দৌহিত্র; (৩২) প্রপিতামহের পৌত্রের দৌহিত্র; (৩৩) মাতামহ, (৩৪) মাতুল; (৩৫) মাতুলের পুত্ৰ; (৩৬) মাতুলের পৌত্র; ৩৭) মাতামহের দৌহিত্র; (৩৮) প্রমাতামত অর্থাৎ মাতামহের পিতা; (৩৯) প্রমাতামহের পুত্র; (৪৭) প্রমাতামহের পৌত্র; (৪১) প্রমাতামহের প্রপৌত্র; (৪২) প্রমাতামহের দৌহিত্র; (৪৩) বৃদ্ধপ্রমাতামহ; (৪৪) বৃদ্ধপ্রমাতামহের পুত্ৰ; (৪৫) বৃদ্ধপ্রমাতামহের পৌত্র; (৪৬) বৃদ্ধপ্রমাতামহের প্রপৌত্র; (৪৭) বুদ্ধপ্রমাতামহের দৌহিত্র; (৪৮) মাতুলের দৌহিত্র; (৪৯) মাতামহের পৌত্রের দৌহিত্র; (৫০) প্রমাতামহের পুত্রের দৌহিত্র; (৫১) প্রমাতামহের পৌত্রের দৌহিত্র; (৫২) বুদ্ধপ্রমাতামহের পুত্রের দৌহিত্র; (৫৩) বৃদ্ধপ্রমাতামহের পৌত্রের দৌহিত্র।

তদভাবে সকুল্যগণ (অর্থাৎ পঞ্চম হইতে সপ্তম পুরুষ পৰ্য্যন্ত জ্ঞাতিগণ) সম্বন্ধের নৈকট্য অনুসাবুে ওয়ারিস হইবেন।

তদভাবে সমানোদকগণ (অর্থাৎ অষ্টম হইতে চতুর্দশ পুরুষ পৰ্য্যন্ত জ্ঞাতিগণ) সম্বন্ধের নৈকট্য অনুসারে ওয়ারিস হইবেন।

তদভাবে গুরু, শিন্য, পুরোহিত, স্বজাতিবর্গ, গ্রামের ব্রাহ্মণগণ; তদভাবে রাজা অর্থাৎ গবর্ণমেণ্ট ওয়ারিস হইবেন।

কোন কোন ব্যক্তি উত্তরাধিকারী হইতে অক্ষম

উপরে উত্তরাধিকারীগণের বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করিবার সময়ে লিখিত হইয়াছে যে কোনও কোনও ব্যক্তি অবস্থাবিশেষে উত্তরাধিকারী হইতে পারে না। যথা, বিধবা পত্নী বা মাতা অসতী হইলে উত্তরধিকারিণী হইতে পারেন না; বিধবা মাতা পুনরায় বিবাহ করিলে উত্তরাধিকারিণী হইতে পারেন না; পুত্রচীনা বিধবা কন্য। উত্তরাধিকারিণী হইতে পারেন না; ইত্যাদি।

এতদ্ভিন্ন, আরও কতকগুলি ব্যক্তি উত্তরাধিকারী হইতে পারে না, তাহাদের সম্বন্ধে শাস্ত্রে এইরূপ লিখিত আছে, যথা—মনু বলিয়াছেন, “অনংশো ক্লীব পতিতো জাত্যন্ধবধিরস্তথা। উন্মত্তজড়মুকাশ্চ যে চ কেচিৎ নিরিক্রিয়াঃ ॥” অর্থাৎ ক্লীব, জাতিভ্রষ্ট, জন্মান্ধ, জন্মবধির, উন্মাদগ্রস্ত, জড়বুদ্ধি, মূক এবং কোন অঙ্গহীন ব্যক্তি সম্পত্তির কোনও অংশ পাইবে না। যাজ্ঞবল্ক্য বলিয়াছেন—“পতিতস্তৎসুতঃ ক্লীবঃ পঙ্গুরুন্মত্তকো জড়ঃ। অন্ধোইচিকিৎসরোগাৰ্ত্তা ভৰ্ত্তব্যাস্তে নিরংশকাঃ ॥” অর্থাৎ জাতিভ্ৰষ্ট ব্যক্তি ও তাহার পুত্র, এবং ক্লাব, পঙ্গু, উন্মাদগ্ৰস্ত, জড়বুদ্ধি, অন্ধ ও তুরারোগ্য রোগগ্রস্ত ব্যক্তি সম্পত্তির কোনও অংশ পাইবে না, কেবলমাত্র ভরণপোষণ পাইবে।।

এই শ্লোক দুইটীতে দেখা যাইতেছে যে ‘পতিত’ ব্যক্তি অর্থাৎ জাতিভ্রষ্ট বা ধৰ্ম্মত্যাগী ব্যক্তি হিন্দু-শাস্ত্রানুসারে উত্তরাধিকারী হইতে পারিত না; কিন্তু ইংরাজগণ এ দেশে আসার পর অনেকে খ্ৰীষ্টানধৰ্ম্ম গ্রহণ করিত, তাহাদিগকে রক্ষা করিবার জন্য গবৰ্ণমেণ্ট ১৮৫০ সালের ২১ আইন দ্বারা এই বিধান করিলেন যে ধৰ্ম্মত্যাগ করার জন্য কোনও ব্যক্তি কোনও সম্পত্তির উত্তরাধিকার হইতে বঞ্চিত হইবেন না। সুতরাং এখন কেহ বিধৰ্ম্মী হইলেও উত্তরাধিকারী হইতে পরিবে।

নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ, পুরুষই হউন বা স্ত্রীলোকই হউন, কোনও সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হইতে পারেন না :–

(১) জন্মান্ধ; জন্মাবধি অন্ধ হুইলেই সে সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হয়। সম্পত্তি পাওয়ার পর অন্ধ হইলে বঞ্চিত হয় না, গুঞ্জেশ্বর বঃ তুর্গাপ্রস{ঞ্জ, ৪৫ কলিকাতা ১৭ প্রিভিকৌন্সিল;

(২) জন্মবধির (জন্মাবধি কাল!); (৩) জন্মমৃক (জন্মাবধি বোবা); (৪) উন্মাদগ্ৰস্ত ব্যক্তি; কোনও ব্যক্তি জন্মাবধি উন্মাদগ্ৰস্ত না থাকিলেও যদি উত্তরাধিকারের সময়ে উন্মাদগ্ৰস্ত থাকেন তাহা হইলে তিনি আর উত্তরাধিকারী হইতে পারিবেন না (১০ কলকাত ৬৩৯);

(৫) অনারোগ্য গলিত কুষ্ঠগ্রস্ত ব্যক্তি, ইহার সম্বন্ধেশু উন্মাদ গ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় নিয়ম; অর্থাৎ জন্মাবধি কুষ্ঠগ্রস্ত না হইয়াও উত্তরাধিকার ক্রমে সম্পত্তি পাইবার সময়ে যদি কেহ ঐরূপ কুষ্ঠ গ্রস্ত থাপে না তহে! হইলে তিনি উত্তরাধিকারী হইবেন না (১ বোম্বাই ৫৫৪),

(৬) জন্মাবধি খঞ্জ; কোনও ব্যক্তি জন্মকালে যদি খঞ্জ না হয়, তাই হইলে পরে কোনও কারণবশতঃ খঞ্জ হইলে সে উত্তরাধিকারী হইতে অক্ষম হয় না (২৬ মাদ্রাজ ১৩৩);

(৭) জন্মাবধি জড়বুদ্ধি; অর্থাৎ শুধু যে নিৰ্ব্বোধ তাহী নহে, এরূপ জড়বুদ্ধি যে ভালমন্দ বিচার করিবার ক্ষমতা তাহার নাই (১২ এলাহাবাদ ৫৩০);

(৮) ক্লীব;

(৯) সন্ন্যাসী; কাত্যায়ন বলিয়াছেন যে “প্ৰব্ৰজ্যাবসিত” ব্যক্তি উত্তরাধিকারী হইতে পারিবেন না; অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী হইলেই তবে তিনি উত্তরাধিকারী হইতে অক্ষম হন, সৌখিন সন্ন্যাসী বা বৈরাগী হইলে অক্ষম হন না (তিলক বঃ হামা, ১ উইক্‌লি রিপোর্টার ২০৯)।

হিন্দুশাস্ত্রানুসারে কোনও শূদ্র ব্যক্তি সন্ন্যাসধৰ্ম্ম অবলম্বন করিতে পারে না; সুতরাং কোনও শূদ্র ব্যক্তি যদি সংসারত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হয়, তাহা হইলেও সে উত্তরাধিকারী হইতে পারিবে (হরিশ্চন্দ্র বঃ সেখ আতির, ৪০ কলিকাতা ৫৪৫)।

(১০) গুরুতর পাপী ব্যক্তি, বিশেষতঃ হত্যাকারী ব্যক্তি; কেহ যদি কাহাকে হত্যা করে তাহা হইলে হত্যাকারী ব্যক্তি হত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হইতে পারিবে না (৩১ মাদ্রাজ ১০০)। পুত্র যদি পিতাকে হত্যা করে, তবে সে পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হইতে পারিবে না (নীলমাধব ব: যতীন্দ্র, ১৭ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস, ৭৪১)। নারদ বলিয়াছেন যে পিতৃদ্বিট্‌ অর্থাৎ যে পুত্র পিতার প্রতি সৰ্ব্বদাই নিষ্ঠুর আচরণ করে বা শক্রতা করে সে উত্তরাধিকারী হইতে অক্ষম হইবে।

এই সকল ব্যক্তি সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হইতে পারে না বটে, কিন্তু আজীবন ভরণপোষণ পাইতে স্বত্ববান হইবে। [ মিতাক্ষরা আইনমতে সম্প্রতি বিধান হইয়াছে যে জন্মান্ধ, জন্মবধির প্রভৃতি ব্যক্তিগণ উত্তরাধিকারী হইতে পারিবে। পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য। ]

সম্পত্তির উত্তরাধিকার সম্বন্ধে বিচার করিবার সময়ে ঐ সকল ব্যক্তিকে মুত ব্যক্তি বলিয়া গণ্য করা হইবে, এবং তদনুসারে উত্তরাধিকারী স্থির করা হইবে। অর্থাৎ ঐ অক্ষম ব্যক্তি স্লীবিত না থাকিলে যিনি উত্তরাধিকারী হইতেন তিনিই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইবেন। যদি কোন ব্যক্তির মৃত্যুকালে তাহার এক উন্মাদগ্ৰস্ত পুত্র থাকেন এবং এক কস্ত থাকেন, তাহা হইলে তাহার সম্পত্তি ঐ কন্যা পাইবেন। যদি কেহ এক উন্মাদগ্ৰস্ত কন্যা ও তাঁহার গর্ভজাত এক পুত্র রাখিয়া পরলোক গমন করেন, তাহা হইলে তাহার সম্পত্তি ঐ দৌহিত্র পাহবেন।

পূৰ্ব্বোক্ত ব্যক্তিগণের উত্তরাধিকারের অক্ষমতা ব্যক্তিগত মাত্ৰ; অর্থাৎ তাহারাই শুধু ওয়ারিস হইতে অক্ষম হইবেন; কিন্তু যদি তাহাদের পুত্র বা স্ত্রী বা কন্যাদি নিজ স্বত্বে ওয়ারস হন তবে তাহাদের স্বত্ব লোপ হইবে না। এক ব্যক্তির মৃত্যুকালে যদি তিন পুত্র থাকে এবং তাছাদের মধ্যে একজন যদি উন্মাণগ্রস্ত থাকে এবং উন্মাদগ্ৰস্ত ব্যক্তির এক পুত্র থাকে, তাহা হইলে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তিন ভাগ হইয়া দুই ভাগ দুই পুত্র এবং এক ভাগ ঐ উন্মাদগ্ৰস্ত পুত্রের পুত্র অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পৌত্র পাইবেন। কিন্তু এক ব্যক্তির মৃত্যুকালে যদি ভ্রাত ও অপর এক জন্মাদ্ধ ভ্রাতা ও ঐ জন্মান্ধ ভ্রাতার এক পুত্র থাকেন, তাহা হইলে ঐ প্রথমোক্ত ভ্ৰাতাই সমস্ত সম্পত্তি পাইবেন, জন্মান্ধ ভ্রাতার পুত্র কিছুই পাইবেন না, কারণ জন্মান্ধের পুত্র অর্থাৎ মৃত ধ্যক্তির ভ্রাতু-পুত্র এস্থলে নিজ স্বত্ত্বে উত্তরাধিকারী হইতে পারেন না, যেহেতু ভ্ৰাত৷ বৰ্ত্তমানে ভ্রাতু-পুত্র (এমন কি অন্য এক ভ্রাতার পুত্র) ওয়ারিস নহেন। তদ্রুপ, যদি এক ব্যক্তি তাহার এক জন্মান্ধ ভাগিনেয় ও সেই ভাগিনেয়ের এক পুত্র রাখিয়া পরলোক গমন করেন, তাহা হইলে ঐ জন্মান্ধ ভাগিনেয়ের পুত্র সম্পত্তি পাইবে না, কারণ ভাগিনেয় ওয়ারিস বটেন, কিন্তু ভাগিনেয়ের পুত্র কোনও কালেই ওয়ারিস হয় না।

কাহারও মৃত্যুকালে যদি দুই পুত্র থাকেন কিন্তু তাহাদের মধ্যে একজন জন্মান্ধ হন ও ঐ জন্মান্ধের স্ত্রী তৎকালে গভবতী থাকেন ও পরে পুত্র প্রসব করেন, তাহ,হইলে জন্মান্ধের পিতার সম্পত্তি দুই অংশ হইয়া একাংশ জন্মান্ধের ভ্রাতা ও অপরাংশ তাহার পুত্ৰ পাইবেন; কিন্তু জন্মান্ধের পিতার মৃত্যুর পর যদি জন্মান্ধের স্ত্রীর গর্ত হইয়া পুত্র সন্তান হয় তাহা হইলে সেই পুত্র কোনও অংশ পাইবে না।

পরিশেষে, আর একটী প্রয়োজনীয় কথা জানিয়া রাখা উচিত যে, এই সকল অক্ষম ব্যক্তি যদি দত্তকগ্রহণ করেন, তাহা হইলে দত্তকপুত্র কেবলমাত্র ভরণপোষণ পাইবে, কিন্তু কিছুতেই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইতে পারিবে না। যদি কোনও ব্যক্তির একটী মাত্র জন্মান্ধ পুত্র থাকে এবং সেই জন্মান্ধ পুত্রট যদি দত্তক গ্রহণ করে, তাহা হইলে প্রথমোক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর ঐ জন্মান্ধ পুত্র তো উত্তরাধিকারী হইতে পারবেই না, এবং ঐ দত্তক পুত্রও উত্তরাধিকারী হইতে পরিবে না; যদিও ঐ দত্তকপুত্র মৃত ব্যক্তির পৌত্ররূপে গণ্য এবং নিজ স্বত্বে উত্তরাধিকারী, তথাপি সে জন্মান্ধ ব্যক্তির দত্তকপুত্র বলিয়া সম্পত্তি পাইতে অক্ষম; সে শুধু ভরণ পোষণ পাইবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *