০৪. এজমালী সম্পত্তি ও বিভাগ (দায়ভাগ) – চতুর্থ অধ্যায়

এজমালী সম্পত্তি ও বিভাগ (দায়ভাগ) – চতুর্থ অধ্যায়

এজমালী সম্পত্তি

কোনও এজমালী পরিবারের কর্তাস্বরূপ পিতার যে সম্পত্তি থাকে–তাহা তাহার পৈতৃক সম্পত্তিই হউক বা ম্বোপার্জিত হউক—তাহার উপর তাহার জীবিতকালে তাহার পুত্ৰগণের কোনও দাবী চলিতে পারে না। অনেকের এইরূপ ধারণা আছে যে, কেহ যদি কোনও পৈতৃক সম্পত্তি প্রাপ্ত হন তাহা হইলে তিনি তাহা ইচ্ছামত হস্তান্তর বা উইল করিয়া তাহার পুত্রগণকে বঞ্চিত করিতে পারেন না। কিন্তু ইহা ভূল। দায়ভাগমতে, কোন হিন্দু তাহার পৈতৃক সম্পত্তি হউক, বা মনু কাহারও নিকট হইতে দান, উইল বা উত্তরাধিকারসূত্রে বা অন্য কোনরূপে প্রাপ্ত সম্পত্তি হউক, তিনি নিজ ইচ্ছামত যাহাকে ইচ্ছা দিতে পারেন, বা বিক্রয় করিতে পারেন, বা যেরূপ ভাবে ইচ্ছা (অর্থাৎ পুত্রগণকে না দিয়া বা তুল্য অংশে না দিয়া বা অন্য কাহাকেও দান করিয়া) উইল করিতে পারেন, তাহাতে পুত্রগণ কোনও আপত্তি করিতে পারেন না। পিতার জীবিতকালে ঐ সম্পত্তিতে পুত্ৰগণের কোনই স্বত্ব নাই। পিতার নিকট হইতে পুত্ৰগণ ঐ সম্পত্তির বিভাগের দাবি করিতে কিংবা ঐ সম্পত্তির হিসাব বা জমা খরচ চাহিতে পারেন না।

পুত্র যদি নিজে সম্পত্তি উপার্জন করিয়া তাহা পিতার হস্তে না দেন–নিজে পৃথক রাখেন—তাহা হইলে সেই সম্পত্তিতে অবশ্য তাহারই স্বত্ব হইবে—তাঁহার পিতার বা ভ্রাতার হইবে না। কিন্তু পিতা বর্তমানে যদি পুত্র পৈতৃক বাটতে কোনও বুদ্ধি বা উন্নতি সাধন করেন, তাহা হইলেও ঐ উন্নতিতে পিতারই স্বত্ব হইবে, পুত্রের কোনও স্বত্ব হইবে না, এবং পিতা ইচ্ছা করিলে পুত্রকে ঐ বাটী হইতে তাড়াইয়া দিতে পারেন, তাহাতেও পুত্র পিতার নিকট হইতে কোন ক্ষতিপূরণ আদায় করিতে পরিবেন না (ধৰ্ম্মদাস বঃ অমূল্যধন, ৩৩ কালকাতা ১১১৯; বিজয় বঃ আশুতোষ, ১৩ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৩৯৬)।

পিতার মৃত্যুর পর পুত্ৰগণ পিতৃত্যক্ত সম্পত্তি এজমালীতে প্রাপ্ত হইয়া নিজ নিজ অংশ পৃথক করিয়া লইতে পারেন। তাঁহার নিজ অংশ ইচ্ছামত হস্তান্তরও করিতে পারেন; এবং বিভাগের পূৰ্ব্বে কোনও ভ্রাতার মৃত্যু হইলে তাহার অংশ তাহার ওয়ারিসে বৰ্ত্তিবে।

যে স্থলে কয়েক ব্যক্তি মিলিয়া সম্পত্তি এজমালীতে ভোগ করেন, সে স্থলে প্রায় একব্যক্তি কর্ত্তা বা ম্যানেজারস্বরূপ সমস্ত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করিয়া থাকেন। সম্পত্তি সম্বন্ধে উক্ত কৰ্ত্তার ক্ষমতা খুব বেশী। তিনি যে কাৰ্য্য করিবেন, তাহা দ্বারা অন্য ব্যক্তিগণ বাধ্য থাকিবেন। তিনি ইচ্ছা করিলে সম্পত্তির সমস্ত আয়ই পারিবারিক প্রয়োজনের জন্য খরচ করিতে পারেন। তিনি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য কোনও পারিশ্রমিক বা সম্পত্তির কিছু অতিরিক্ত অংশ পাইবেন না। তিনি যদি সম্পত্তি হইতে কিছু আত্মসাৎ করেন, কিংবা পারিবারিক প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোনও কার্য্যে কোন ব্যয় করেন, তাহা হইলে তজ্জন্য তিনি দায়ী হইবেন। এজমালী পরিবারের কন্যাগণের বিবাহ, বালকদের উপনয়নও বিদ্যাশিক্ষা, পরিবারবর্গের ভরণপোষণ, পৈতৃক ঋণ পরিশোধ, পূজা, ধৰ্ম্মকাৰ্য্য, বিগ্রহসেবা, শ্ৰাদ্ধ, প্রয়োজনীয় মামলা মোকদ্দমা চালান, রাজস্বদান—এই সকল কাৰ্য্যকে পারিবারিক প্রয়োজন বলা হয়, এবং এই কাৰ্য্যগুলির জন্য উক্ত কর্ত্তা এজমালী সম্পত্তির আয় হইতে অর্থব্যয় করিতে ক্ষমতাপন্ন, এমন কি সম্পত্তির আয় হইতে সঙ্কুলান না হইলে ঋণ করিতেও পারেন; কিন্তু এই সকল পারিবারিক প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোনও কার্য্যে অর্থব্যয় করিতে পারিবেন না, করিলেও তিনি তজ্জন্য নিজে দায়ী হইবেন।

বিভাগ

স্থাবর এবং অস্থাবর উভয় প্রকার এজমালী সম্পত্তিরই বিভাগ হইতে পারে। তবে কতকগুলি সম্পত্তি আছে, যাহা বিভাগ করা অসম্ভব, যথা পুষ্করিণী, মন্দির, কোন শিল্পদ্রব্য (বহুমূল্য চিত্র ইত্যাদি) গাড়ি, ঘোড়া, মণিমাণিক্য, পারিবারিক বিগ্রহ, সম্পত্তির দলিল ইত্যাদি; এইগুলির মধ্যে পুষ্করিণী এজমালীতে ভোগ করা ভিন্ন উপায় নাই; বিগ্রহসেবা পালা করিয়া চলিতে পারে; আর অপর দ্রব্যগুলি একজন লইয়া তিনি অপর ব্যক্তিগণকে ক্ষতিপূরণস্বরূপ কিছু অর্থ দিতে পারেন।

বৰ্দ্ধমান রাজ, দ্বারবঙ্গ রাজ, প্রভৃতি রাজসম্পত্তিগুলিবিভাগ করা চলে না; এই সকল অবিভাজ্য এষ্টেট সম্বন্ধে পরে লিখিত হইয়াছে।

সম্পত্তি ভাগ করিবার পূৰ্ব্বে, পারিবারিক ঋণ থাকিলে তাহা পরিশোধ করিবার জন্য যথেষ্ট টাকা পৃথক করিয়া রাখা উচিত; পরিবারের মধ্যে অবিবাহিতা কন্যা থাকিলে তাহার বিবাহের ব্যয়ের জন্যও যথেষ্ট অর্থ বা সম্পত্তি পৃথক্ রাখা উচিত; পারিবারিক সম্পত্তির উপর কাহারও ভরণপোষণের দাবী থাকিলে তজ্জন্যও পৃথক সম্পত্তি রাখা উচিত। এরূপ ভাবে সম্পত্তি পৃথক রাখিলে ভবিষ্যতে কোনও গোলমালের সম্ভাবনা থাকে না। অনেক স্থলে সম্পত্তি পৃথক না রাখিয়া মেম্বরগণ এরূপ চুক্তি করিয়া লন যে অমুক অমুক ব্যয়ভারগুলি অমুক অমুক ব্যক্তি বহন করিবেন। ইহা করিলেও চলে।

যাহা হউক, এই সকল ব্যবস্থা করিয়া তাহার পর সম্পত্তি বিভাগ হইবে। বিভাগ হইলে যাঁহারা যাঁহারা যেরূপ অংশ পাইবেন, তাহা নিম্নে বিস্তৃতরূপে লিখিত হইল :–

পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র

পিতা বর্তমানে তাঁহার সম্পত্তিতে পুত্ৰগণের কোনও স্বত্ব নাই এবং পুত্ৰগণ ঐ সম্পত্তির বিভাগের দাবি করিতেও পারেন না। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর পুত্ৰগণের মধ্যে এজমালী সম্পত্তির বিভাগ হইতে পারে। তাহদের মধ্যে এক ভ্রাতা যদি পুত্র রাখিয়া পূৰ্ব্বেই পরলোকগমন করিয়া থাকেন, তাহা হইলে ঐ ভ্রাতার অংশ তাঁহার পুত্রে বৰ্ত্তিবে। এইরূপে সপিণ্ডগণ পৰ্য্যন্ত অর্থাৎ মূলব্যক্তি হইতে গণনা করিয়া চারি পুরুষ পৰ্য্যন্ত ওয়ারিসের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ হইবে। যথা :–

  • আনন্দ
    • বলরাম
    • চন্দ্র (মৃত)
      • ঈশান
      • ফণী
    • দয়াল (মৃত)
      • গঙ্গাধর (মৃত)
        • হরি
        • ইন্দ
        • যদু
      • কালীনাথ (মৃত)
        • লক্ষ্মীকান্ত (মৃত)
          • মহেন্দ্র (মৃত)
            • নরেন্দ্র

যদি আনন্দের মৃত্যুকালে তাঁহার প্রথম পুত্র বলরাম থাকেন, এবং চন্দ্র নামক দ্বিতীয় মৃত পুত্রের দুই পুত্র ঈশান ও ফণী থাকেন, এবং দয়াল নামক তৃতীয় মৃত পুত্রের গঙ্গাধর নামক এক মৃত পুত্রের তিন পুত্ৰ হরি, ইন্দ্র এবং যদু থাকেন, এবং কালীনাথ নামক চতুর্থ মৃত পুত্রের লক্ষ্মীকাণ্ড নামক মৃত পুত্রের মহেন্দ্র নামক মৃত পুত্রের নরেন্দ্র নামক এক পুত্র থাকেন, তাহা হইলে এই শেষোক্ত নরেন্স তাহার বৃদ্ধ প্রপিতামহ আনন্দের কোনই সম্পত্তির অংশ পাইবেন না, কারণ তিনি আনন্দ হইতে চারি পুরুষের মধ্যে নহেন। আনন্দের সম্পত্তি উক্ত স্থলে তিন অংশে বিভক্ত হইয়া এক তৃতীয়াংশ তাহার প্রথম পুত্র বলরাম পাইবেন; অপর এক তৃতীয়াংশ মৃত পুত্র চন্দ্রের পুত্রদ্বয় ঈশান ও ফণী তুল্যাংশে (প্রত্যেকে ১/৬) পাইবেন, এবং তৃতীয় অংশ মৃত পৌত্র গঙ্গাধরের তিন পুত্র হরি, ইন্দ্র এবং যদু তুল্যাংশে (প্রত্যেকে ১/৯) পাইবেন।

পিতার মৃত্যুর পর পুত্ৰগণ সম্পত্তি ভাগ করিবার সময়ে যদি তাহাদের মাতা গর্ভবতী থাকেন, তাহা হইলে যতদিন পৰ্যন্ত গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ না হয়, ততদিন বিভাগ স্থগিত রাখা কৰ্ত্তব্য। কারণ যদি ঐ গর্ভে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তাহা হইলে সে এক অংশ পাইতে স্বত্ববান হইবে, এবং তাহাকে এক অংশ দিতেই হইবে। সুতরাং যদি ঐ পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হইবার পূৰ্ব্বেই অন্য পুত্ৰগণ সম্পত্তি ভাগ করিয়া লয়, তাহা হইলে ঐ পুত্র সন্তান জন্মিবার পরে আবার সমস্ত বিভাগটা রহিত করিয়া ফেলিয়া নূতন করিয়া বিভাগ করিতে হইবে। সেই জন্তই, গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পৰ্য্যন্ত ঐ কয়েক মাস অপেক্ষা করা উচিত।

সহোদর ও বৈমাত্র ভ্রাতায় কোনও প্রভেদ নাই, সকলেই তুল্যাংশে পাইবেন। অনেকের এইরূপ ভুল ধারণা আছে ষে যদি এক পত্নীর গৰ্ত্তজাত এক পুত্র থাকে, এবং আর এক পত্নীর গর্ভজাত দুই পুত্র থাকে, তাহা হইলে সম্পত্তি দুই ভাগে বিভক্ত হইবে এবং অৰ্দ্ধাংশ প্রথম পত্নীর গর্ভজাত পুত্র পাইবে, অপর অৰ্দ্ধাংশ দ্বিতীয় পত্নীর গর্ভজাত পুত্রদ্বয় পাইবে। কিন্তু ইহা সম্পূর্ণ ভুল; সম্পত্তি তিন ভাগে বিভক্ত হইয়া প্রত্যেকে একতৃতীয়াংশ পাইবে।

মাতা, বিমাতা

মনু প্রভৃতি শাস্ত্রকারগণ মাতার জীবদ্দশায় পুত্রগণকে সম্পত্তি বিভাগ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কিন্তু টীকাকারগণ বলিয়াছেন যে উহ সামান্য নিষেধ মাত্র, শাস্ত্রের আদেশবাক্য নহে। যাহা হউক, মূল শাস্ত্রকারগণ অপেক্ষা টীকাকারগণের মতই অধিক প্রবল, সুতরাং মাতার জীবিতকালে পুত্ৰগণ সম্পত্তি বিভাগ করিলে তাহা অসিদ্ধ হয় না।

পুত্ৰগণের মধ্যে বিভাগের সময় মাতা প্রত্যেক পুত্রের সমান এক অংশ পাইবেন (অমৃতলাল ব: মাণিকলাল, ২৭ কলিকাতা ৫৫১)। মাতা ও চারি পুত্র থাকিলে সম্পত্তি পাঁচ ভাগে বিভক্ত হইবে, এবং মাতা এক পঞ্চমাংশ পাইবেন। কিন্তু এ স্থলে ইহা বিশেষরূপে স্মরণ রাখা উচিত যে, একাধিক পুত্ৰ থাকিলেই তবে মাতা এক অংশ পাইয়া থাকেন। যদি মাতা ও একটীমাত্র পুত্র থাকে, তাহা হইলে মা ভা ও পুত্রে বিভাগ হইয়া প্রত্যেকে অৰ্দ্ধাংশ পাইবেন না; পুত্রই সমস্ত সম্পত্তি পাইবে, এবং মাতা ঐ সম্পত্তি হইতে কেবলমাত্র ভরণপোষণ পাইবেন। একাধিক পুত্ৰ থাকিলে যতদিন পৰ্য্যন্ত বিভাগ না হয়, ততদিন মাতা কোনও অংশ পান না, কেবলমাত্র ভরণপোষণ পাইয়া থাকেন; পুত্ৰগণের মধ্যে বিভাগ হইলেই মাতা এক অংশ প্রাপ্ত হন। আর পুত্ৰগণ যতদিন এজমালীতে থাকে, ততদিন মাতা সম্পত্তি বিভাগের দাবী করিতেও পারেন না (চৌধুরী গণেশ বঃ জীব(চ ঠাকুরাণী, ৩১ কলিকাতা ২৬২ প্রিভি কৌন্সিল)।

মাত-যে সম্পত্তি প্রাপ্ত হন তাহাতে তাঁহার নিবুঢ়ি স্বত্ব জন্মায় না, বা উহ। তাহার স্ত্রীধন সম্পত্তি বলিয়া গণ্য হয় না; তিনি ঐ সম্পত্তি ভরণপোষণবাবদ পাইয়া থাকেন, সুতরাং উহাতে তাঁহার মাত্র জীবনস্বত্ব থাকে; এবং তাহার মৃত্যুর পর ঐ সম্পত্তি তাহার পুত্ৰগণে বর্তিবে।

বিধবা যদি তাঁহার স্বামীর নিকট হইতে পৃথকরূপে কিছু স্ত্রীধন সম্পত্তি পাইয়া থাকেন এবং ঐ সম্পত্তি তাঁহার ভরণপোষণের ব্যয়নির্বাহপক্ষে যথেষ্ট হয়, তাহা হইলে আর তিনি তাঁহার পুত্ৰগণের মধ্যে বিভাগ হইবার সময়ে কোনও অংশ পাইবেন না। কিন্তু তিনি যদি তাহার নিজের পিতার নিকট হইতে উত্তরাধিকারসূত্রে কোনও সম্পত্তি পাইয়া থাকেন, তাহা হইলেও তিনি পুত্ৰগণের নিকট হইতে অংশ পাইতে বঞ্চিত হইবেন না (জগবন্ধু বঃ রাজেন্দ্র, ৩৪ কলিকাতা ল জার্ণাল ২৯)। সেইরূপ, তিনি যদি তাহার কোন মৃত পুত্রের ওয়ারিশস্বরূপ তাহার অংশ পাইয়া থাকেন, তাহা হইলেও পরে অপর পুত্ৰগণের মধ্যে বিভাগ হইবার সময়ে এক অংশ পাইবেন (স্বরেন্দ্র ব: হেমাঙ্গিনী, ৩৬ কলিকাতা ৭৫)।

পিতা যদি উইল দ্বারা তাহার সম্পত্তি পুত্রগণকে দিয়া গিয়া থাকেন, এবং পুত্ৰগণ ঐ সম্পত্তি বিভাগ করে, তাহা হইলে মাতা ঐ সম্পত্তি হইতে কোন অংশ পাইবেন না, কেবলমাত্র ভরণপোষণ পাইবেন (দেবেন্দ্র ব: ব্ৰজেন্দ্র, ১৭ কলিকাতা ৮৮৬)।

মাতার অংশ সম্বন্ধে আর একটী কথা জানিয়া রাখা বিশেষ আবশ্যক। স্বামীর সম্পত্তিবিভাগেই বিধবা অংশ পাইয়া থাকেন; পুত্ৰগণের স্বোপার্জিত সম্পত্তির বিভাগে মাতা কোন অংশ প্রাপ্ত হন না। যদি তিন ভ্রাতা এজমালীতে কোনও সম্পত্তি উপার্জন করে, এবং পরে ঐ সম্পত্তি বিভাগে প্রবৃত্ত হয়, তাহা হইলে তাহদের বিধবা মাতা পুত্ৰগণের ঐ স্কোপার্জিত সম্পত্তিতে কোনও অংশ পাইবেন না। যদি ঐ সম্পত্তি তাহাদের পৈতৃক সম্পত্তি হইত তাহা হইলে সেই সম্পত্তি বিভাগে তাহদের মাতা অংশ পাইতেন, কারণসেম্বলে উহা ঐ বিধবার স্বামীর সম্পত্তি হইত।

বিমাতা তাহার সপত্নীর গর্ভজাত পুত্ৰগণের নিকট হইতে সম্পত্তির এক অংশও পাইবেন না, কেবলমাত্র ভরণপোষণই পাইবেন। তবে যদি তাহার নিজ গর্ভজাত পুত্র থাকে তাহা হইলে তিনি অবশ্যই মাতাস্বরূপ তাহাদের নিকট হইতে এক অংশ পাইতে পারিবেন। কেহ যদি এক বিধবা পত্নী রাখিয়া যান, এবং অপর মৃত পত্নীর গভর্জাত তিন পুত্র রাখিয়া যান, তাহা হইলে সম্পত্তি মাত্র তিন ভাগে বিভক্ত হইবে এবং পুত্ৰগণ প্রত্যেকে এক তৃতীয়াংশ পাইবেন; কিন্তু তাহাদের বিমাতা এক অংশও পাইবেন না, কেবলমাত্র ভরণপোষণই পাহবেন। যদি কেহ দুইটী বিধবা পত্নী রাখিয়া যান, এবং প্রত্যেক পত্নীর গভজাত একটী করিয়া পুত্র থাকে তাহা হইলে সম্পত্তি দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া প্রত্যেক পুত্র অৰ্দ্ধাংশ পাইবে; কিন্তু তাহাদের মাতাদ্বয় কিছুই পাইবেন না, কারণ প্রত্যেকের একটীমাত্র পুত্র রহিয়াছে, একমাত্র পুলের নিকট হইতে মাতা কিছুই অংশ পাইবেন না। যদি কেহ দুইটী বিধবা পত্নী রাখিয়া যান এবং প্রথম পত্নীর গভে এক পুত্র ও দ্বিতীয় পত্নীর গর্তে তিন পুত্র থাকে তাহা হইলে সম্পত্তি প্রথমে চারি ভাগে বিভক্ত হইয়া ঐ প্রথম পত্নীর গভজাত এক পুত্র চতুর্থাংশ অর্থাৎ চারি আন অংশ পাইবে বাকী বার আন অংশ চারি ভাগে বিভক্ত হইয়া ঐ দ্বিতীয় বিধবা এবং তাহার গভজাত তিন পুত্ৰ—এই চারিজন প্রত্যেকে তিন আনা করিয়া পাইবেন (হেমাঙ্গিনী বঃ কেদার, ১৬ কলিকাতা ৭৫৮)। কিন্তু যদি ঐ পত্নীর গভে দুই পুত্র থাকিত তাহা হইলে সম্পত্তি সাত ভাগে বিভক্ত হইয়া ঐ দুই বিধবা এবং পাঁচ পুত্র এই সাতজনের প্রত্যেকে এক এক অংশ (১/৭) পাইতেন।

পিতামহী

পৌত্রগণের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগ হইলে পিতামহীও পৌত্ৰগণের সমান এক অংশ পাইয়া থাকেন। চার পৌত্র ও তাহদের পিতামহী থাকিলে সম্পত্তি পাঁচ ভাগে বিভক্ত হইয়া পিতামহী এক পঞ্চমাংশ পাইবেন। একাধিক পৌত্র থাকিলে এবং তাহাদের মধ্যে বিভাগ হইলেই পিতামহী অংশ পান; কিন্তু যদি শুধু একটী মাত্র পৌত্র থাকে, তাহা হইলে সম্পত্তি বিভাগ হইবে না, পৌত্রই সমস্ত সম্পত্তি পাইবে, আর পিতামহী শুধু ভরণপোষণ পাইবেন। একটী পৌত্র, তাহার মাতা ও পিতামহী থাকিলেও ঐরূপ; পৌত্রই সম্পত্তি পাইবে আর মাতা ও পিতামহী শুধু ভরণপোষণ পাইবেন।

পৌত্ৰগণ যদি পিতামহীর এক পুত্রের পুত্র হয়, তাহা হইলে পিতামহীর অংশ নির্দিষ্ট করা কিছু কঠিন হয় না, যথা :–

  • সিদ্ধ্বেশ্বরী
    • অভয় (মৃত)
      • বলরাম
      • চন্দ্র
      • দয়াল

এস্থলে সিদ্ধেশ্বরীর অভয় নামে একটীমাত্র পুত্র ছিল, তাহার পরলোক গমনের পর তাহার তিন পুত্র সম্পত্তি বিভাগ করিতেছে। এখানে সম্পত্তি চারিভাগে বিভক্ত হইবে, এবং সিদ্ধেশ্বরী ও তাঁহার তিন পৌত্র প্রত্যেকে চারি আনা অংশ পাইবেন।

কিন্তু যদি পৌত্রগণ ভিন্ন ভিন্ন পুত্রের পুত্র হয়, তাহা হইলে পিতামহীর অংশ স্থির করা একটু কঠিন হয়। যথা:–

  • সিদ্ধ্বেশ্বরী
    • অভয় (মৃত)
      • দুই পুত্র
    • বলরাম (মৃত)
      • এক পুত্র
    • আশুতোষ (মৃত)
      • দুই পুত্র
    • চন্দ্রনাথ (মৃত)
      • তিন পুত্র

এখানে পৌত্ৰগণ সিদ্ধেশ্বরীর এক পুত্রের পুত্র নহে, চারি জন ভিন্ন ভিন্ন পুত্রের পুত্র। আর ঐ পৌত্ৰগণ সকলে সমান অংশ পাইবে না; অভয়ের প্রত্যেক পুত্র যাহা পাইবে, চন্দ্রনাথের প্রত্যেক পুত্র তাহা পাইবে না, আর চন্দ্রনাথের প্রত্যেক পুত্ৰ যাহা পাইবে বলরামের পুত্র তাহা পাইবে না; সকলেরই অংশ অসমান। এদিকে নিয়ম কর। হইয়াছে যে, পিতামহী পৌত্ৰগণের সমান অংশ পাইবে; কিন্তু সিদ্ধেশ্বরী কোন পৌত্রের সমান অংশ পাইবে? সকলের অংশ তো সমান নয়। এস্থলে নিয়ম এই যে, প্রথমতঃ পিতামহীকে একজন পৌত্রস্বরূপ গণন করিতে হইবে; তাহা হইলে সিদ্ধেশ্বরী+২+১+২+৩-৯ জন হইল; সম্পত্তি ৯ ভাগে বিভক্ত করিতে হইবে, এবং সিদ্ধেশ্বরীকে ভাগ দেওয়া হইবে; তাহার পর বাকী ৮/৯ অংশ সিদ্ধেশ্বরীর যতগুলি পুত্র ছিল ততগুলি ভাগ হইবে; অর্থাৎ ৮/৯ অংশ চারিভাগে বিভক্ত হইবে; তাহা হইলে প্রত্যেক ভাগ হইল ২/৯; এখন ঐ ২/৯ অংশ অভয়ের পুত্রদ্বয় (প্রত্যেকে ১/৯ করিয়া) লইবে; ২/৯ অংশ বলরামের পুত্ৰ লইবে; ২/৯ অংশ আশুতোযের পুত্রদ্বয় (প্রত্যেকে ১/৯ হিসাবে) লইবে; এবং ২/৯ অংশ চন্দ্রনাথের তিন পুত্র (প্রত্যেকে ২/২৭ অংশ) লইবে।

পুত্র এবং পৌত্ৰগণের মধ্যে বিভাগ হইলে, পিতামহী তাঁহার পুত্রদের সমান অংশ পাইবেন, পৌত্রদের সমান অংশ পাইবেন না। যথা—

  • আনন্দ (মৃত) = সিদ্ধেশ্বরী
    • বলরাম
    • চন্দ্র (মৃত)
    • দয়াল
    • ঈশান
    • ফণী

আনন্দ নামে এক ব্যক্তি তাঁহার বিধবা পত্নী সিদ্ধেশ্বরীকে রাখিয়া এবং বলরাম, চন্দ্র ও দয়াল নামে তিন পুত্র রাখিয়া পরলোকগমন করেন; পরে চন্দ্র নামক পুত্রটা ঈশান ও ফণী নামক দুই পুত্রকে রাখিয়া পরলোকগমন করিলেন। তখন ঈশান ও ফণী তাঁহাদের কাকা ও জ্যেঠার নিকট হইতে সম্পত্তি পৃথক করিয়া বিভাগ করিয়া লইলেন। এস্থলে সিদ্ধেশ্বরী, বলরাম বা দয়ালের সমান এক অংশ পাইবেন, ঈশান বা ফণীর সমান অংশ পাইবেন না। সিদ্ধেশ্বরীর তিন পুত্রের মধ্যে যেন সম্পত্তি বিভাগ হইতেছে এইরূপ ভাবে তিনি অংশ পাইবেন। অর্থাৎ ঐ সম্পত্তি চারি ভাগে বিভক্ত হইয়া সিদ্ধেশ্বরী, বলরাম ও দয়াল প্রত্যেকে চারি আন অংশ, এবং ঈশান ও ফণী প্রত্যেকে দুই আনা অংশ পাইবেন।

যদি বিভাগের সময়ে পিতামহী, পৌত্রগণ ও পৌত্ৰগণের মাতা থাকে তাহা হইলে সকলের অংশ নিম্নলিখিতরূপে স্থির করিতে হইবে :–

  • আনন্দ (মৃত) = সিদ্ধেশ্বরী
    • বলরাম (মৃত) = রাজলক্ষ্মী
      • চন্দ্রনাথ
      • দয়াল

এই উদাহরণে আনন্দের জীবিতকালেই বলরামের মৃত্যু হইয়াছিল। এস্থলে চন্দ্রনাথ ও দয়ালের মধ্যে বিভাগের সময়ে সিদ্ধেশ্বরী তাহাদের এক অংশ পাইবেন, অর্থাৎ সম্পত্তি প্রথমে তিন অংশে বিভক্ত হইয়া সিদ্ধেশ্বরী একতৃতীয়াংশ পাইবেন। তাহার পর বাকী ২/৩ অংশ তিন ভাগে বিভক্ত হইয়া রাজলক্ষ্মী, চন্দ্রনাথ ও দয়াল প্রত্যেকে তাহার একতৃতীয়াংশ পাইবেন; অর্থাৎ এই তিন জন প্রত্যেকে সম্পত্তির ২/৯ অংশ পাইবেন। (পূৰ্ণচন্দ্র বঃ সরোজিনী, ৩১ কলিকাতা ১০৬৫)।

পৌত্রগণ এজমালীতে থাকিলে পিতামহী সম্পত্তি বিভাগের দাবী করিতে পারেন না।

পিতার বিমাতা সপত্নীপৌত্রের নিকট হইতে কোনও অংশ প্রাপ্ত হন ন, শুধু ভরণপোষণ পাইয়া থাকেন।

মাতার অংশ আলোচনা করিবার সময়ে লিখিত হইয়াছে যে, স্বামীর সম্পত্তি বিভাগেই বিধবা অংশ পাইয়া থাকেন, পুত্ৰগণের স্কোপার্জিত সম্পত্তির বিভাগে মাতা তাহাতে অংশ প্রাপ্ত হন না। পিতামহী সম্বন্ধেও ঐ নিয়ম প্রয়োজ্য হয়। পৌত্রগণের স্বোপার্জিত সম্পত্তির বিভাগে পিতামহী অংশ পাইতে পারেন না। যদি আনন্দ নিজে সম্পত্তি অর্জন করিয়া মাতা, পত্নী, এবং চন্দ্র ও বলরাম নামে দুই পুত্র রাখিয়া পরলোক গমন করেন, তাহা হইলে ঐ পুত্রদ্বয়ের মধ্যে সম্পত্তির বিভাগ হইলে তাহদের মাতা অর্থাৎ আনন্দের বিধবা পত্নী অংশ পাইবেন, কিন্তু তাহাদের পিতামহী অর্থাৎ আনন্দের মাতা অংশ পাইবেন না। যদি সম্পত্তি আনন্দের পৈতৃক সম্পত্তি হইত তাহা হইলে আনন্দের মাতা অবশ্যই অংশ পাইতেন। বলরাম ও চন্দ্র যদি নিজেবা সম্পত্তি উপাৰ্জ্জন করিয়া বিভাগ করেন, তবে তাহাতে তাঁহাদের মাতা অথবা পিতামহী কেহই কোন অংশ পাইবে না।

প্রপিতামহী

যদি শুধু প্রপিতামহী এবং প্রপৌত্রগণ থাকে, এবং মাঝে পুত্র বা পৌত্র না থাকে, তাহা হইলে প্রপৌত্ৰগণের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগ হইলে প্রপিতামহী কোনও অংশ প্রাপ্ত হন না, কেবলমাত্র ভরণপোষণ পাইয়া থাকেন। তবে যদি মাঝে পুত্র বা পৌত্ৰগণ থাকে, তাহা হইলে প্রপিতাকা তাহার পুত্র বা পৌত্ৰগণের নিকট হইতে অংশ পাইবেন।

অবিবাহিত ভগ্নী

ভ্রাতাগণের মধ্যে বিভাগের সময়ে অবিবাহিতা ভগ্নী থাকিলে, সে সম্পত্তির কোনও অংশ পাইবে না; সে শুধু বিবাহ পৰ্য্যন্ত হিন্দু আইন ভরণ পোষণ পাইবে, আর তাহার বিবাহের ব্যয় ঐ সম্পত্তি হইতে নির্বাহ হইবে।

সম্পত্তি বিভাগের দাবী

যাঁহারা যাঁহার এজমালীতে সম্পত্তি দখল করিতেছেন, তাহাদের মধ্যে যে কোনও ব্যক্তি (স্ত্রীলোকই হউন, বা পুরুষই হউন) সম্পত্তি বিভাগের জন্য দাবী করিতে এবং নালিস করিতে পারেন। যথা :–

  • আনন্দ
    • বলরাম
    • চন্দ্র–স্ত্রী
    • দয়াল
      • কন্যা
    • গঙ্গারাম
      • কন্যা (মৃত)
        • পুত্র

 

আনন্দের মৃত্যুর পর তাঁহার চারি পুত্র বলরাম, চন্দ্র, দয়াল ও গঙ্গারাম পৈতৃক সম্পত্তি এজমালীতে দখল করিতে লাগিলেন। এখন ঐ চারি ভ্রাতার মধ্যে যে কেহ ঐ সম্পত্তি বিভাগের জন্য দাবী করিতে পারেন। কিন্তু তাহারা যদি বিভাগ না করেন, এবং পরে চন্দ্র অপুত্রক অবস্থায় এক পত্নী রাখিয়া পরলোক গমন করেন, পরে দয়াল এক কন্যা রাখিয়া এবং গঙ্গারাম এক দৌহিত্র রাখিয়া পরলোকগমন করেন, তাহা হইলে বলরাম, চন্দ্রের বিধবা পত্নী, দয়ালের কন্যা এবং গঙ্গারামের দৌহিত্র এই চারিজনে মিলিয়া ঐ সম্পত্তি এজমালীতে দখল করিবেন, এবং এই চারিজনের মধ্যে যে কোনও ব্যক্তি বিভাগের জন্য দাবী করিতেও পরিবেন।

পূৰ্ব্বেই লিখিত হইয়াছে যে, মাতা ও পিতামহী স্থল বিশেষে সম্পত্তি বিভাগে অংশ পাইয়া থাকেন বটে, কিন্তু তাঁহারা বিভাগের জন্য দাবী করিতে পারেন না।

নাবালকও সম্পত্তি বিভাগের জন্য দাবী করিতে পারেন। আরও, সম্পত্তি বিভাগের সময় কোনও অংশ যদি নাবালক থাকেন, এবং ঐ নাবালক যদি সাবালক হইয়া দেখাইতে পারেন যে বিভাগের সময়ে প্রতারণা ক্রমে অথবা অমনোযোগিতা বশত: অন্যান্য অংশীগণ তাঁহাকে কম অংশ দিয়াছেন বা তাহার স্বার্থের হানি করিয়াছেন, তাহা হইলে ঐ বিভাগ রহিত হইয়া পুনরায় ভাল করিয়া বিভাগ হইবে (১৯ বোম্বাই ৫৯৩)।

এজমালী পরিবারের কোনও মেম্বর ঘদি বিভাগের পূৰ্ব্বে তাঁহার অবিভক্ত অংশ কোনও ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করিয়া থাকেন, তাহা হইলে ঐ খরিদদারও বিভাগ সম্বন্ধে উক্ত মেম্বরের সমান স্বত্ব পাইবেন, অর্থাৎ তিনি তাঁহার অংশ পৃথক করিয়া লইবার জন্য বিভাগের দাবী করিতে এবং নালিস করিতে পারিবেন।

কিন্তু মাতা ও পিতামহী সম্পত্তি বিভাগের পূৰ্ব্বে কোনও অংশ পাইতে পারেন না, বিভাগ হইলেই তবে অংশ পাইয়া থাকেন; সুতরাং যদি কোনও পরিবারে মাতা এবং তিন পুত্র থাকে, এবং বিভাগের পূৰ্ব্বে মাতা যদি একচতুর্থাংশ সম্পত্তি কোনও আইনসঙ্গত আবশ্যকতা দেখাইয়া হস্তান্তর করেন, তাহা হহলে ঐ হস্তান্তর অসিদ্ধ হইবে, এবং খারদার কোনও স্বত্ব পাইবেন না, বা বিভাগের জন্যও দাবী কারতে পারিবেন না।

অন্যান্য কথা

এজমালী পরিবারের কোনও মেম্বর জন্মান্ধ বা উন্মাদগ্ৰস্ত বা কুষ্ঠগ্রস্ত হইলে তিনি সম্পত্তি বিভাগের সময়ে কোনও অংশ পাইতে পারেন না। এরূপ অবস্থায়, তিনি যেন মৃত এইরূপ গণ্য হইবে, এবং তাহার অংশ তাহার ওয়ারিশকে দেওয়া হইবে। যথা, যদি চারি ভ্রাতা থাকে এবং তন্মধ্যে এক ভ্রাতা জন্মান্ধ হন, তাহা হইলে জন্মান্ধ ভ্রাতা কোনও অংশ পাইবেন না, কিন্তু যদি সে সময়ে তাঁহার পুত্র থাকে, তাহা হইলে ঐ পুত্রই এক চতুর্থাংশ পাইবে। কিন্তু বিভাগের সময়েই ওয়ারিস থাকিলে, তাহাকে দেওয়া হইবে, বিভাগের পরে ওয়ারিস জন্মিলে দেওয়া হইবে না। যদি এইরূপ হয় যে, সম্পত্তিবিভাগের সময়ে জন্মান্ধ ভ্রাতা অবিবাহিত আছেন, তাহা হইলে অপর তিন ভ্রাতাই সম্পত্তি তিনভাগে বিভক্ত করিয়া লইবেন; এবং বিভাগের পর যদি তাহার বিবাহ হইয় পুত্র জন্মায়, তাহা হইলে ঐ পুত্র আর কোনও অংশ পাইবেন, কারণ সে জন্মিবার পূৰ্ব্বেই বিভাগ হইয়া গিয়াছে। বিভাগের সময়ে যদি জন্মান্ধ ভ্রাতার শুধু স্ত্রী থাকিত, পুত্র না থাকিত, তাহা হইলে ঐ স্ত্রীকে এক চতুর্থাংশ দেওয়া হইত।

স্থল বিশেষে এই বিষয়টা আরও জটিল হইয়া পড়ে। যথা—

  • আনন্দ
    • বলরাম
    • চন্দ্র (মৃত)
      • ঈশান
    • দয়াল (মৃত)
      • ফণী (মৃত)
        • হরি
      • কালীনাথ (মৃত)
        • গঙ্গাধর (মৃত)
          • ইন্দ্র (পাগল)
            • যদু

আনন্দের মৃত্যুর পর তাঁহার সম্পত্তিতে বলরাম এক অংশ পাইবেন; চন্দ্রের পুত্র ঈশান এক অংশ পাইবেন; দয়ালের পুত্র ফণী অন্ধ বলিয়া অংশ পাইবেন না, সুতরাং তাহার পুত্র হরি এক অংশ পাইবেন; আর ইন্দ্র উন্মাদগ্ৰস্ত বলিয়া অংশ পাইবেন না বটে, কিন্তু তাহা বলিয়া কি তাহার পুত্র ঐ অংশ পাইবেন? ঐদিকে নিয়ম আছে যে চারি পুরুষ পৰ্যন্ত ওয়ারিশের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ হইবে; যদু ঐ চারি পুরুষের বাহিরে, সুতরাং তিনি কোনও অংশ পাইতে পারেন না। ইন্দ্রের যদি স্ত্রী থাকে, তাহা হইলে সে স্ত্রীও পাইবেন না, সম্পত্তি পুত্রে নামিতে পারিল না বলিয়া স্ত্রীতে যে অর্শিবে, তাহা কখনও হইতে পারে না, কারণ পুত্র অপেক্ষা স্ত্রী অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারিণী নহেন।

এজমালী সম্পত্তি মাত্রেরই বিভাগ হইতে পারে। পিতা যদি উইলে লিখিয়া যান যে পুত্ৰগণ সম্পত্তি চিরকাল এজমালীতে ভোগ করিবে এবং কখনই বিভাগ করিতে পারিবে না, অথবা যদি এরূপ আদেশ করিয়া যান যে, সম্পত্তি ১০ বৎসর কি ২০ বৎসর মোটেই বিভাগ হইবে না, তাহা হইলে সে আদেশ অসিদ্ধ এবং পুত্ৰগণ পিতার মৃত্যুর পরই ভাগ করিতে ক্ষমতাপন্ন হইবে (২৩ উইক্‌লি রিপোর্টার ২৯৭; রাজেন্দ্র ব: শ্যামচাঁদ, ৬ কলিকাতা ১০৬; মুকুন্দ বঃ গণেশ, ১ কলিকাতা ১০৪)। তবে যাহারা সম্পত্তি এজমালীতে ভোগ করিতেছেন তাহারা পরস্পরের মধ্যে এরূপ চুক্তি করিতে পারেন যে কিছু কালের জন্য সম্পত্তি এজমালীতে থাকিবে (রাধানাথ ব: তারক নাথ, ৩ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ১২৬)। যথা ভ্রাতাগণ পরম্পরের মধ্যে চুক্তি করিতে পারিবেন যে যতদিন তাহাদের ভগ্নীর বিবাহ না হয় ততদিন সম্পত্তি এজমালীতে থাকিবে। কিন্তু তাহা বলিয়া তাহারা চিরকালের জন্য সম্পত্তি এজমালীতে রাখিবার চুক্তি করিতে পারেন না, করিলেও তাহা অসিদ্ধ হইবে, এবং মেম্বরগণ যখন ইচ্ছা তখন বিভাগ করিতে পারিবেন। আরও এক কথা, মেম্বরগণ যদি পরস্পরের মধ্যে চুক্তি করেন যে, কিছুকালের জন্য সম্পত্তি এজমালীতে থাকিবে, তাহা হইলেও ঐ চুক্তি শুধু তাহাদের উপরই বাধ্যকর থাকিবে (৬ কলিকাতা ১০৬); যদি তাঁহাদের মধ্যে কেহ পরলোক গমন করেন, বা নিজে অবিভক্ত অংশ বিক্রয় করেন, তাহা হইলে তাহার ওয়ারিস বা খরিদদার ঐ চুক্তি দ্বারা বাধ্য থাকিবেন না, তৎক্ষণাৎ বিভাগের জন্য দাবী করিতে পারিবেন (৩ বেঙ্গল ল রিপোর্ট ১৪; ৮ বেঙ্গল ল রিপোট ৬০)।

বিভাগের সময়ে কোনও মেম্বর যদি নাবালক থাকে, তাহা হইলেও বিভাগ হইতে পারিবে, এবং নাবালককে যদি তাহার হিসাবমত অংশ দেওয়া হয় এবং কোনও প্রবঞ্চনা করা না হয়, তাহা হুইলে সে সাবালক হইয়া বিভাগ রহিত করিতে পারিবে না (বালকিষেণ ব: রামনারায়ণ, ৩০ কলিকাতা ৭৩৮ প্রিভি কৌন্সিল)।

বিভাগের সময়ে যদি একজন মেম্বর দূরদেশে থাকেন, তাহা হইলেও বিভাগ হইতে পরিবে; ঐ মেম্বরের অংশ তাহার জন্য অবশ্য পৃথক করিয়া রাখিতে হইবে। তাহার স্ত্রী বা পুত্র যদি ঐ পরিবারের মধ্যে থাকে তাহা হইলে তাহাদের হস্তে তাঁহার অংশ সমর্পণ করিলেও চলিবে (শ্রীনাথ বঃ প্রবোধ, ১১ কলিকাতা ল জার্ণাল ৫৮০)।

সম্পত্তি বিভাগ করিবার সময়ে সকলকেই যে পৃথক হইতে হইবে, এমন কোনও কথা নাই। যদি তিন ভ্রাতা থাকেন, আর এক মৃত ভ্রাতার পুত্র থাকে, তাহা হইলে ভ্রাতুষ্পুত্র তাহার অংশ পৃথক করিয়া লইতে পারে, এবং উক্ত তিন ভ্রাতা এজমালিতে থাকিতে পারেন। যদি চারি ভ্রাতা থাকে, তাহা হইলে দুই ভ্রাতা পৃথক হইয়া সম্পত্তি ভাগ করিয়া লইলেও অপর দুই ভ্রাতা এজমালীতে থাকিতে পারেন।

সেইরূপ, মেম্বরগণ যখন পরস্পরের মধ্যে বিভাগ করিয়া লন, তখন তাহারা কতকগুলি সম্পত্তি বিভাগ করিয়া বাকীগুলি এজমালীতে রাথিতে পারেন (১০ কলিকাতা ল জার্ণাল ৫০৩)। কিন্তু যদি মোকদ্দমা দ্বারা সম্পত্তি বিভাগ হয়, তাহা হইলে সমস্ত সম্পত্তি বিভাগেরই দাবী করিতে হইবে; তখন কতকগুলি সম্পত্তি এজমালীতে রাখিয়া অবশিষ্ট সম্পত্তিগুলি বিভাগের দাবী করা চলে না (যোগেন্দ্র বঃ জগবন্ধু, ১৪ কলিকাতা ১২২; ২৪ বোম্বাই ১২৮; ১৬ মাত্রাজ ৯৮)। তবে বিশেষ স্থলে এরূপ দাবী করা চলিতেও পারে। যথা, কাকা এবং দুই ভ্রাতুষ্পপুত্রের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগের সময় ভদ্রাসন বাটীগুলি, বাগানগুলি ও অস্থাবর দ্রব্য সমস্তই ভ্রাতু-পুত্ৰগণ কাকার নিকট হইতে ভাগ করিয়া লইলেন, কিন্তু চাষের জমিগুলি এজমালীতে রঙ্গিল; ইহার পরে, ভ্রাতু-পুত্ৰগণের মধ্যে একজন অপরের বিরুদ্ধে বিভাগের জন্য নালিস করিবার সময়ে বাটী, বাগান ও অস্থাবর দ্রব্য বিভাগ করিয়া লইবার দাবী করিতে পারেন, কিন্তু চাষের জমী (যাহা তাহার কাকার সহিত এজমালীতে ভোগ করিতেছেন) বিভাগের দাবী না করিতেও পারেন (২৩ এলাহাবাদ ২১৬)।

বিভাগের জন্য নালিস করিতে হইলে এজমালী পরিবারের সকল মেম্বরগণকে পক্ষ করিতে হইবে। যাহারা বাদী হইতে ইচ্ছা না করেন, তাহাদিগকে বিবাদী করিতে হইবে, কিন্তু সকলকেই পক্ষভূক্ত করা আবশ্যক, নচেৎ পক্ষাভাবদোষে দাবী অচল হইবে।

বিভাগ করিতে হইলে কোনও দলিলের প্রয়োজন হয় না (১০ কলিকাতা। ল জার্ণাল ৫০৩; ২৫ কলিকাতা ২১০)। কিন্তু দলিল সম্পাদন করিলেই ভাল হয়। বিশেষতঃ যেখানে সম্পত্তি অংশমত (যথা। ০ অংশ,। । ০ অংশ) ভাগ না হইয়া এক একজনের ভাগে বিশেষ বিশেষ সম্পত্তি পড়ে, সেস্থলে দলিল সম্পাদন করা অবশ্ব কৰ্ত্তব্য। যদি এক ভ্রাতা পূৰ্ব্বদিকের খালি জমিট লন, অপর ভ্রাত পশ্চিম দিকের মাঠটা লন, এক ভ্রাতা বাড়ীখানি লন, আর এক ভ্রাতা জমী না লইয়া নগদ টীকা লন, তাহা হইলে বিভাগের একটী দলিল না থাকিলে ভবিষ্যতে অনেক গোলযোগ হইবার সম্ভাবনা।

 অবিভাজ্য সম্পত্তি

কতকগুলি সম্পত্তি মাছে তাহা মোটেই বিভাগ করা যায় না। পূৰ্ব্বে হয় তো সেগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজার রাজ্য ছিল, তাহার পর সেগুলি এখন জমীদারীতে পরিণত হইয়াছে; কতকগুলি বা বহুকাল ধরিয়া বিভাগ করা হয় নাই বলিয়া এখন অবিভাজ্যরূপে পরিগণিত হইয়াছে।

যে কারণেই হউক, ঐ সম্পত্তিগুলি ভাগ করা যাইতে পারে না, এবং এককালে একজনমাত্র উহা ভোগ করিবেন এবং সেই পরিবারের অন্যান্য মেম্বরগণ কেবলমাত্র ভরণপোষণ পাইবেন।

অবিভাজ্য সম্পত্তির মালিক উহা হস্তান্তর করিতে বা উইল দ্বারা দান করিয়া যাইতে পারেন। অবশ্য যে স্থলে প্রথানুসারে হস্তান্তর করা বা উইল দ্বারা দিয়া যাওয়া নিষেধ, সে স্থলে মালিক ঐ প্রথা মানিতে বাধ্য।

জ্যেষ্ঠ পুত্রই অবিভাজ্য সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হইয়া থাকেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র মৃত হইলে তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র পাইয়া থাকেন। জ্যেষ্ঠ পুত্রের বংশে কেহ না থাকিলে তৎপরবর্তী পুত্র পাইয়া থাকেন। এবিষয়ে আবার দুই প্রকার প্রথা আছে; নিম্নে উদাহরণ দ্বারা দুই প্রকার প্রথাই বুঝান যাইবে :–

  • আনন্দ
    • বলরাম
      • ঈশান
        • ফণী
      • চন্দ্র (মৃত)
        • গঙ্গাধর
      • দয়াল (মৃত)

আনন্দের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ পুত্র বলরাম পাইবেন, বলরামের মৃত্যুর পর তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র ঈশান পাইবেন, এবং ঈশানের পর ফণী পাইবেন। এই পৰ্য্যন্ত ছুই প্রথায় কোনও প্রভেদ নাই; কিন্তু ফণীর অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুর পর কে পাইবে? মৃত চন্দ্রের পুত্র গঙ্গাধর পাইবে? না আনন্দের কনিষ্ঠ পুত্র দয়াল পাইবে? এক স্থানের প্রথাস্থসারে, জ্যেষ্ঠ পুত্রের বংশ শেষ হইয়া গেলে তৎপরবর্তী পুত্রের বংশ পাইবে, অর্থাৎ এস্থলে গঙ্গাধর পাইবে; আবার আর এক স্থানের প্রথানুসারে, যাহার সঙ্গে সম্বন্ধ বেশী ঘনিষ্ঠ, সেই পাইবে, অর্থাৎ এস্থলে গঙ্গাধর অপেক্ষা দয়ালষ্ট ফণীর বেশী ঘনিষ্ঠ; সুতরাং দয়ালই পাইবে। যে বংশে যে প্রথা চলিয়া আসিতেছে, সেই বংশে সেই প্রথানুসারে উত্তরাধিকারী নির্ণয় করা হইবে।

জ্যেষ্ঠ পুত্র বলিতে গেলে সৰ্ব্বাপেক্ষা যে বয়োজ্যেষ্ঠ তাহাকেই বুঝাইবে; যদিও সে তাহার পিতার কনিষ্ঠ পত্নীর গভর্জাত হয়, তথাপি সে বয়োজ্যেষ্ঠ হইলেই উত্তরাধিকারী হইবে। আবার কোনও কোনও স্থানে এরূপ প্রথা আছে যে, জ্যেষ্ঠ পত্নীর গভর্জা পুত্রই উত্তরাধিকারী হইবে, এমন কি বয়ঃকনিষ্ঠ হইলেও হইবে।

অবিভাজ্য সম্পত্তির মালিক পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিগণকে প্রতিপালন করিতে বাধ্য। কোনও কোনও স্থানে তাহাদিগকে ভরণপোষণের জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয়, আবার কোনও রাজএষ্টেটের প্রথানুসারে তাঁহাদিগকে ভরণপোষণ স্বরূপ কিছু ভূসম্পত্তি দেওয়া হয়। কোন কোন স্থানে তাহারা ঐ ভূসম্পত্তি জীবনস্বত্বে পাইয়া থাকেন, আবার কোন কোন রাজএষ্ট্রেটের প্রথানুসারে তাহারা নির্ব্যুঢ়স্বত্বে পাইয়া থাকেন।

সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, অবিভাজ্য সম্পঞ্জির সকল বিষয়ই ভিন্ন ভিন্ন স্থানের ভিন্ন ভিন্ন প্রথার দ্বারা পরিচালিত হুইয়া থাকে; কোনও নির্দিষ্ট আইন সকল স্থানে প্রযোজ্য হয় না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *