০৩. নাবালক ও অভিভাবক – তৃতীয় অধ্যায়

নাবালক ও অভিভাবক – তৃতীয় অধ্যায়

সাবালক বিষয়ক আইনের (১৮৭৫ সালের ৯ আইন) ৩ ধারায় এই বিধান আছে যে কোন ব্যক্তির বয়স ১৮ বৎসর পূর্ণ হইলেই সে সাবালক বলিয়া গণ্য হইবে, তবে যদি তাহার সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডসের তত্ত্বাবধানে থাকে কিংবা আদালত কর্তৃক তাহার জন্য অভিভাবক নিযুক্ত হইয়া থাকে তাহা হইলে তাহার বয়স ২১ বৎসর পূর্ণ হইলে তবে সে সাবালক হইবে।

কিন্তু উক্ত আইনের ২ ধারায় এই বিধান আছে যে, হিন্দু আইনের বিবাহ ও দত্তকগ্রহণ সম্বন্ধে কোনও বিধানের উপর সাবালক বিযয়ক আইন হস্তক্ষেপ করিবে না, অর্থাৎ বিবাহ ও দত্তকগ্রহণ এই দুই ব্যাপারে সাবালক হওয়ার বয়সসম্বন্ধে হিন্দুআইনের যে বিধান আছে, সেই বিধানই প্রবল থাকিবে, উহাতে সাবালক বিষয়ক আইন প্রযোজ্য হইবে না।

বিবাহ ও দত্তকগ্রহণ বিষয়ে হিন্দু আইনের বিধান অনুসারে কোনও ব্যক্তির বয়স ১৫ বৎসর পূর্ণ হইলেই সে সাবালক বলিয়া গণ্য হয়। সুতরাং ১৫ বৎসর পূর্ণ হইলেই কোন হিন্দু ব্যক্তি দত্তকগ্রহণ করিতে ক্ষমতাপন্ন হন, এবং বিবাহ সম্বন্ধে সাবালক হন, তখন আর তাঁহার অভিভাবকের সম্মতির প্রয়োজন হয় না। এই স্বত্রে আর একটী কথা জানিয়া রাখা প্রয়োজন যে, কোনও বিধবা যদি স্বামীর অনুমতি অনুসারে দত্তকগ্রহণ করেন, তাহা হইলে তাহার বয়স ১৫ বৎসরের কম হইলেও তিনি ঐ কাৰ্য্য করিতে ক্ষমতপয় হইবেন; কারণ তিনি তাহার স্বামীর জন্য এবং স্বামীর প্রতিনিধিস্বরূপে ঐ কাৰ্য্য করিতেছেন, সুতরাং এস্থলে তাহার নিজের বয়স সম্বন্ধে কোনও প্রশ্ন উঠিবে না (মন্দাকিনী বঃ আদিনাথ, ১৮ কলিকাতা ৬৯)।

কিন্তু দত্তকগ্রহণ ও বিবাহ ব্যতীত আর সমস্ত ব্যাপারেই উপরোক্ত সাবালক বিষয়ক আইনের বিধান প্রযোজ্য হইবে। কোন হিন্দু ব্যক্তির বয়স ১৮ বৎসর পূর্ণ না হইলে সে উইল করিতে বা কোনও সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে বা ধৰ্ম্মার্থে দান করিতে পারিবে না। উইল সম্বন্ধে আর একটী কথা জানিয়া রাখা কৰ্ত্তব্য যে, ১৮ বৎসরের কম বয়স্ক কোনও হিন্দু ব্যক্তি সম্পত্তি সম্বন্ধে উইল করিতে পারে না বটে, কিন্তু তাঙ্গার বয়স ১৫ বৎসর পূর্ণ হইয়া থাকিলে সে দত্তকগ্রহণ করিবার জন্য তাহার স্ত্রীকে উইল দ্বারা অকুমতি দিয়া যাইতে পারে।

হিন্দু আইন অনুসারে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ নাবালকের অভিভাবক হুইবার জন্য পর পর ক্ষমতাপন্ন :–

(১) পিতা। পিতাই নাবালক পুত্রের স্বাভাবিক অভিভাবক। পিতা ইচ্ছা করিলে নাবলিক পুত্রের জন্য উইলদ্বারা অভিভাবক নিযুক্ত করিয়! যাইতে পারেন (৩১ বোম্বাই ৪১৩)। কিন্তু পিতা যদি নাবালক পুত্রকে দত্তকরূপে দান করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি অবশ্য আর ঐ পুত্রের অভিভাবক থাকিতে পারেন না; দত্তক গ্রহীতা পিতামাতাই অভিভাবক হইবেন। জন্মদাতা পিতা অপেক্ষা দত্তকগ্রহীতা মাতাই অভিভাবকরূপে অগ্রগণ্য (গঙ্গাপ্রসাদ বঃ হরকান্ত, ১৫ কলি: উইক্‌লিনোট ৫৫৮)। এমন কি, জন্মদাতা পিতা অপেক্ষা দত্তকগ্রহীতা পিতার মাতা অগ্রগণ্য অভিভাবক বলিয়া স্থির হইয়াছে (৪ পাটনা ১০৯)। কিন্তু দত্তকগ্রহীতা পিতার বা মাতার মৃত্যুর পর তাহাদের নিকটাত্মীয় না থাকিলে জন্মদাতা পিতাই পুনরায় ঐ বালকের অভিভাবক হইবেন (১৫ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৫৫৮)।

(২) মাতা। পিতার পর মাতাই স্বাভাবিক অভিভাবক। তবে যদি পিতা উইল দ্বারা অন্ত কাহাকেও অভিভাবক নিযুক্ত করিয়া থাকেন, তাহা হইলে স্বতন্ত্র কথা। মাতা যদি নিজে নাবালক হন, তাহা হইলেও তিনি তাহার নাবালকপুত্রের অভিভাবক হইতে পারিবেন। ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিলে বা পুনরায় বিবাহ করিলে তিনি আর পুত্রের অভিভাবক থাকিতে পরিবেন না।

নাবালকের পিতামহ অপেক্ষা বা ভ্রাতা অপেক্ষা মাতাই অগ্রগণ্য অভিভাবক (২৮ এলাহাবাদ ২৩৩; বীরেশ্বর ব: অম্বিক, ৪৫ কলিকাতা ৬৩০)। মিথিলা আইনে পিতা অপেক্ষা মাতাই নাবালকের শরীর ও সম্পত্তি সম্বন্ধে অগ্রগণ্য অভিভাবক (যশোদা বঃ নিত্যলাল, ৫ কলিকাতা ৪৩)।

বহুপত্নীবিশিষ্ট কুলীন ব্রাহ্মণের সন্তানগণ সম্বন্ধে পিতা অপেক্ষা মাতাই ষোগ্যতর অভিভাবক হইবেন, কারণ কবে কোথায় কোন পত্নীর গর্তে তাঁহার সন্তান জন্মিয়াছে, পিতা হয়তো তাহা অবগতই নহেন, তিনি তাহার সন্তান সম্বন্ধে কোন সন্ধানও হয়তো রাখেন না (৩ উইক্‌লি রিপোর্টার ১৯৪)।

বিমাতা কখনও সপত্নীপুত্রের অভিভাবক হইতে পারে না। কিন্তু যে স্থলে নাবালকের অন্য কোনও আত্মীয়-স্বজন নাই সেক্ষেত্রে একজন অপরিচিত ব্যক্তি অপেক্ষা বিমাতাকে আদালত অভিভাবকরূপে নিযুক্ত করিবেন (সুন্দরমণি ব: গোকুলানন্দ, ১৮ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ১৬০)।

মাতাই জারজ সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক। কিন্তু মাতা যদি ঐ সন্তানকে তাহার পিতা কর্তৃক প্রতিপালিত হইবার জন্য ছাড়িয়া দিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি আর ঐ সন্তানকে পাইতে পারেন না; কারণ সে স্থলে ঐ সন্তানকে মাতার নিকট দিলে তাহার উপকার না হইয়া অপকার হইবারই সম্ভাবনা।

(৩) পিতা ও মাতার অভাবে ভ্রাতা অভিভাবক হইবেন।

(৪) তদভাবে পিতৃকুলের আত্মীয়; যথা পিতামহ, পিতৃব্য, প্রপিতামহ ইত্যাদি। বিমাতা অপেক্ষা পিতামহী অভিভাবকরূপে নিযুক্ত হইবেন (৭ উইক্‌লি রিপোর্টার ৩২০)।

(৫) তদভাবে মাতৃকুলের আত্মীয়:—যথা, মাহামহ, মাতুল। উপরোক্ত ব্যক্তিগণ নাবালক কন্যারও অভিভাবক। কিন্তু কন্যার বিবাহ হইয়া গেলে, স্বামীই নাবালক স্ত্রীর অভিভাবক। স্ত্রীর দ্বিতীয় সংস্কার না হইয়া থাকিলেও বা পিতৃগৃহে থাকিলেও স্বামীই অভিভাবক হইবেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর নাবালক বিধবার শ্বশুর, ভাসুর, দেবর প্রভৃতি স্বামীকুলের জ্ঞাতিগণই অভিভাবক হইবেন। তাহাদের অভাবে পিতা, মাতা, ভ্রাতা প্রভৃতি অভিভাবক হইতে পারেন (ক্ষুদিরাম বঃ বনোয়ারী, ১৬ কলিকাতা ৫৮৪; সতীশ বঃ কালিদাস, ৩৪ কলিকাতা ল জাৰ্ণাল ৫২৯)। যথা, বিধবার ভ্রাতা অপেক্ষা স্বামীর ভাগিনেয়কে আদালত অভিভাবকরূপে নিযুক্ত করিবেন (১৬ কলিঃ ৫৮৪)। যদি ঐ বিধবা অল্পবয়স্ক (১২ কি ১৩ বৎসর বয়স্ক) বালিকা হয় তাহা হইলে তাহার স্বামীকুলের দূরজ্ঞাতি অপেক্ষা পিতাই অভিভাবক থাকা বাঞ্ছনীয় (৩৩ এলাহাবাদ ২২২)।

পূৰ্ব্বেই লিখিত হইয়াছে যে পিতাই তাঁহার সন্তানগণের স্বাভাবিক অভিভাবক। অবিবাহিত কন্যার পক্ষে মাতা অপেক্ষা পিতাই অগ্রগণ্য অভিভাবক (প্রাণকৃষ্ণ, ৮ কলিকাতা ৯৬৯)। আদালত তাহাকে সহজে বা সামান্য কারণে অভিভাবকত্ব হইতে দূরীভূত করিতে পারেন না। তিনি যদি তাহার স্ত্রীর নিকট হইতে পৃথকভাবে বাস করেন, তাহা হইলেও তিনি সন্তানগণকে নিজের কাছে রাখিতে পারিবেন (৪৪ এলাহাবাদ ৫৮৭)। তিনি অসচ্চরিত্র হইলেও তাহার সন্তানগণের অভিভাবক থাকিতে পরিবেন। তিনি যদি তাহার সন্তানকে কোনও আত্মীয়ের নিকট কিছুদিন রাখিয়া দেন তাহা হইলেও পরে ইচ্ছা করিলে তাহাকে পুনরায় নিজের কাছে আনিতে পারেন (৪৬ এলাহাবাদ ৭০৬)। তিনি ইচ্ছা করিলে তাহার নাবালক সন্তানের বিদ্যাশিক্ষার ভার অপর ব্যক্তির প্রতি অর্পণ করিতে পারেন, কিন্তু এরূপ করিলেও তাহার অভিভাবকত্ব লোপ পাইবে না, এবং তিনি ইচ্ছা করিলে পরে ঐ সন্তানের বিদ্যাশিক্ষার ভার নিজে গ্রহণ করিতে পারেন। কিন্তু যদি তিনি তাহার পুত্রকে বিদ্যাশিক্ষা দিবার জন্য অপর ব্যক্তির হস্তে অর্পণ করেন এবং ঐ ব্যক্তি তাহার উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রভূত অর্থব্যয় করেন, এবং সেই সময়ে যদি পুত্রের পিতা তাহার পুত্রকে নিজের নিকট ফিরাইয়া আনিতে চাহেন তাহা হইলে আদালত বিবেচনা করিয়া দেখিবেন যে এরূপ কাৰ্য্য দ্বারা ঐ বালকের উপকার অথবা অপকার হইবে কি না; যদি আদালত দেখেন যে উচ্চশিক্ষা সম্বন্ধে ঐ পুত্রের যথেষ্ট আগ্রহ আছে, এবং তাঁহাকে তাহার পিতার নিকট ফিরাইয়া দিলে তাহার উচ্চশিক্ষার ব্যাঘাত হইবে ও তাহার ভবিষ্যতের উন্নতির আশা বিফল হইয়া যাইবে, তাহা হইলে আদালত আর উহাকে তাহার পিতার নিকট ফিরাইয়া দিবেন না (আনি বেসাস্ত ব: নারায়ণিয়া, ৩৮ মাদ্রাজ ৮০৭, প্রিভি কৌন্সিল)।

পিতা যদি ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করেন তাহা হইলেও তাহার নাবালক পুত্রকে তিনি নিজ কর্তৃত্বাধীনে রাখিতে স্বত্ববান হইবেন। কিন্তু তিনি ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিবার সময় যদি তাহার পুত্রকে তাহার হিন্দু আত্মীয়ের তত্ত্বাবধানে রাখিয়া দেন, এবং তাহার পর কয়েক বৎসর ধরিয়া তাহার কোন খোঁজখবর না লন, তাহা হইলে পরে তিনি ঐ পুত্রকে পাইবার দাবী করিলে, আদালত সমস্ত অবস্থা বিবেচনা করিয়া ও নাবালকের মঙ্গলের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া যাহার কর্তৃত্বাধীনে নাবালককে দেওয়া উচিত স্থির করিবেন তাহার নিকট দিবেন। যদি আদালত দেখেন যে ঐ বালক তাহার হিন্দু আত্মীয়গণের নিকট স্বখে স্বচ্ছন্দে আছে এবং তাহার বিধৰ্ম্মী পিতার নিকট ফিরিয়া যাইতে অসম্মত, তাহা হইলে পিতা আর তাহার পুত্রকে নিজের কাছে লইয়া যাইতে পারিবেন না (মুকুন্দ বঃ নবদ্বীপ, ২৫ কলিকাতা ৮৮১)।

নাবালক পুত্র ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিয়া চলিয়া গেলেও পিতা আদালত অবলম্বন করিয়া তাহাকে পাইতে পারেন। কিন্তু সাবালক পুত্ৰ চলিয়া গেলে পিতা কিছুই করিতে পারে না।

নাবালকের সম্পত্তি রক্ষার জন্য এবং তাহার উপকারের নিমিত্ত অভিভাবক সকল কাৰ্য্যই করিতে পারেন। তিনি আইনসঙ্গত প্রয়োজন থাকিলে কোনও সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে, বা ঋণ করিতে বা ঋণ স্বীকার করিতে পারেন; এবং নাবালক ত দ্বারা বাধ্য থাকিবেন। নাবালকের ভরণপোষণ, বিদ্যাশিক্ষা, চিকিৎসাব্যয়, তাহার মাতা পিতামহী ও ভগ্নীগণের ভরণপোষণ, তাহার অবিবাহিত ভগ্নীগণেব বিবাহ, বি গ্রহ সেব। —এইগুলি আইনসঙ্গত প্রয়োজনের দৃষ্টান্ত। এই প্রয়োজনগুলি থাকিলে অভিভাবক সম্পত্তি বিক্রয় করিতে বা বন্ধক দিতে পারেন। কিন্তু এস্থলে খরিদদারের বা বন্ধকগ্রহীতারও একটী কৰ্ত্তব্য আছে। অভিভাবক যখন কোনও আইনসঙ্গত প্রয়োজন হেতু কোন ও সম্পত্তি বিক্রয় করিতে বা বন্ধক দিতে উদ্যত হন, তখন খরিদদার বা বন্ধকগ্রহীতা তদন্ত করিয়া দেখিবেন যে বাস্তবিকই ঐ প্রয়োজন আছে কি না। যদি তিনি তদস্ত করিয়া না দেখেন তাহা হইলে ভবিষ্যতে নাবালক সাবালক হইয়া ঐ হস্তান্তর অসিদ্ধ করিয়া দিতে পরিবেন। ষদি তিনি তদন্ত করিয়া দেখেন যে বাস্তবিকই আইনসঙ্গত প্রয়োজন আছে, এবং তজন্তই অভিভাবক,সম্পত্তি হস্তান্তর করিতেছেন, তাহা হইলে আর তাঁহার কোনও দায়িত্ব থাকে না। এমন কি, যদি অভিভাবক ঐ সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া বিক্রয়লব্ধ অর্থ উক্ত প্রয়োজনে ব্যয় না করেন,তাহা হইলেও খরিদদারের কোনও দায়িত্ব নাই। অভিভাবক যদি বলেন যে নাবালকের ভগ্নীর বিবাহের জন্য সম্পত্তি বিক্রয় করা প্রয়োজন, এবং ক্রেতা যদি তদন্ত করিয়া দেখেন যে নাবালকের এক অবিবাহিতা ভগ্নী আছে, এবং তাহার বিবাহ দিবার কথা হইতেছে, তাহা হইলেই তিনি নিরাপদ; তাহার পর সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া অভিভাবক ঐ টাকা নাবালকের ভগ্নীর বিবাহে ব্যয় করিতেছেন কি না তাহা দেখিতে খরিদদার বাধ্য নহেন; এবং অভিভাবক যদি উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেন, বা অন্য কোন কার্ধ্যে ব্যয় করেন, তাহা হইলেও খরিদদারের আর কোন দায়িত্ব থাকিবে না (হকুমান প্রসাদ পাণ্ডে বঃ বাবুই, ৬ মুরস ইণ্ডিয়ান আপীলস্ ৩৯৩)।

অভিভাবক যদি এই সকল আইনসঙ্গত প্রয়োজন ব্যতীত উক্তরূপ হস্তান্তর বা ঋণ করেন, তাহা হইলে নাবালক সাবালক হইয়া ঐ হস্তান্তর কাৰ্য্য রহিত করিতে পরিবেন। অভিভাবককৃত কোনও হস্তান্তর রহিত করিতে হইলে সাবালক হওয়ার পর তিন বৎসরের মধ্যে নালিশ করিতে হইবে (তামাদি আইন, ৪৪ দফা)।

উপযুক্ত কারণ থাকিলে অভিভাবক আদালত কর্তৃক বিতাড়িত হইতে পারেন।

মিতাক্ষরা আইন অনুসারে কেহ নাবালকের সম্পত্তির অভিভাবক হইতে পারে না। কারণ, উক্ত আইনমতে পারিবারিক সম্পত্তিতে কাহারও কোন নিদিষ্ট অংশ নাই; যতদিন পর্য্যন্ত বিভাগ না হয়, ততদিন সমস্ত সম্পত্তিটাই সকলেই যৌথরূপে ভোগ করিয়া থাকেন, কেহ বলিতে পারেন না যে, আমার অমুক অংশ আছে। সুতরাং নাবালকের কোন পৃথক সম্পত্তি নাই, এবং সেজন্য তাহার কোন অভিভাবকও থাকিতে পারে না (গুাম কুয়ার ব: মহানন্দ, ১৯ কলিকাতা ৩-১ গেীরা বঃ গজাধর, ৫ কলিঃ ২১৯)। মিতাক্ষরার বিধানমতে, পরিবারের মধ্যে যিনি কর্ত্তা হন, তিনিই প্রকৃতপক্ষে নাবালকদেরও অভিভাবক, অপর কোন অভিভাবক নিযুক্ত করা যাইতে পারে না (১৯ কলিঃ ৩০১)। কিন্তু যদি পরিবারের সকল মেম্বরগণই নাবালক হন, সেস্থলে আদালত সকলের জন্য অভিভাবক নিযুক্ত করিতে পারেন (৩০ বোম্বাই ১৫২; ৩৫ এলাহাবাদ ১৫০); তাহার পর যখন নাবালকদের মধ্যে একজন সাবালক হইবে, তখন সেই ব্যক্তিই কৰ্ত্তাস্বরূপ অন্যান্য নাবালকগণের অভিভাবক বলিয়া গণ্য হইবে, এবং আদালত যাহাকে অভিভাবক নিযুক্ত করিয়াছেন, তিনি কৰ্ম্মচ্যুত হইবেন (৩২ বোম্বাই ২৫৯)

মিতাক্ষরা পরিবারের কোন নাবালক মেম্বরগণের শরীররক্ষার জন্য অভিভাবক নিযুক্ত হইতে পারিবে, তাহাতে কোন বাধা নাই (২০ এলাহাবাদ ৪০০)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *