২য় অধ্যায় – ধর্মানুষ্ঠান প্রকরণ

ধৰ্ম্মলক্ষণ

বিদ্বদ্ভিঃ সেবিতঃ সদ্ভিনিত্যমদ্বেষরাগিভিঃ ।
হৃদয়েনাভ্যনুজ্ঞাতে যে ধৰ্ম্মস্তন্নিবোধত ॥ ১ ॥

হে মহর্ষিগণ ! আপনাদের জিজ্ঞাসিত ধৰ্ম্মের মধ্যে প্রধান ধৰ্ম্ম আত্মজ্ঞান কথিত হইল, এক্ষণে তাহার অঙ্গস্বরূপ সংস্কারাদি ধৰ্ম্ম প্রতিপন্ন করিবার মানসে ভগবান মনু সামান্ততঃ যে ধর্শের লক্ষণ কহিয়াছেন, আপনার তাহ অবধান করুন। বেদপ্রতিপাদ্য অপবর্গাদি-শ্রেমসাধন কর্ণসমূহকে ধৰ্ম্ম বলা যায়, যে ধৰ্ম্ম রাগদ্বেষবিহীন সাধু বিধানের একান্তহৃদয়ে ধারণ করিয়া থাকেন। আর বেদপ্রতিপাদ্য পাপসাধন ক্রিয়াকলাপকে অধৰ্ম্ম বলা যায়। ১

কাম্য-কৰ্ম্মের নিন্দা

কামাত্মতা ন প্রশস্ত ন চৈবেহাস্ত্যকামত ।
কাম্যো হি বেদাধিগমঃ কৰ্ম্মযোগশ্চ বৈদিকঃ ॥ ২ ॥

এক্ষণে কাম্যকর্মের নিন্দা করিতেছেন। কৰ্ম্মমাত্রই কামনার বিষয়, স্বৰ্গাদি ফলাভিলাষ পূৰ্ব্বক কৰ্ম্মানুষ্ঠান অতি গৰ্হিত, কেন না, তদ্রুপে কৰ্ম্ম করিলে পুনরায় জন্মগ্রহণ করিতে হয়, কিন্তু আত্মজ্ঞান সহকারে বেদবোধিত নিত্য-নৈমিত্তিক কৰ্ম্ম করিলে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়। ২

সঙ্কল্প

সঙ্কল্পমূলঃ কামো বৈ যজ্ঞাঃ সঙ্কল্পসম্ভবাঃ ।
ব্রতা নিয়মধৰ্ম্মাশ্চ সৰ্ব্বে সঙ্কল্পজাঃ স্মৃতাঃ ॥ ৩ ॥

এইরূপ কৰ্ম্ম দ্বারা আমার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে, এইরূপ বুদ্ধিকে সঙ্কল্প বলা যায়, এই সঙ্কল্পের পর তাহাতে ইচ্ছা জন্মে, অনন্তর তাহার অনুষ্ঠান হয়, এইরূপে যজ্ঞসকল সঙ্কল্পসম্ভব হইয়া থাকে, আর ব্ৰহ্মচৰ্য্যাদি ব্রত ও গুরুপ্তশ্রুষাদি নিয়ম সকল সঙ্কল্পজন্ত হয় । ৩

কামনাই সকল কাৰ্য্যের মূল

অকামস্য ক্রিয় কাচিদ্দৃশ্যতে নেহ কহিচিৎ।
যদ্‌যদ্ধি কুরুতে কিঞ্চিৎ তত্তৎ কামস্য চেষ্টিতম্ ॥ ৪ ॥

ইহলোকে কি লৌকিক ভোজন-গমনাদি, কি বৈদিক জ্যোতিষ্টোমষাগাদি, সকলই ইচ্ছা পুৰ্ব্বক হয়। কামনাবিরহিত কাৰ্য্য প্রায় দেখিতে পাওয়া যায় না, কামনা ব্যতিরেকে কোন কাৰ্য্যেই প্রবৃত্তি হইতে পারে না। ৪

শাস্ত্রীয় কৰ্ম্ম দ্বারা মোক্ষপ্রাপ্তি

তেষু সম্যগ্বর্ত্তমানো গচ্ছত্যমরলোকতাম্।
যথাসঙ্কল্পিতাংশ্চেহ সৰ্ব্বান্‌ কামান্‌ সমশ্নুতে ॥ ৫

ফলাভিলাষশূন্য হইয়া শাস্ত্রীয় কৰ্ম্ম সকলের অনুষ্ঠান করিলে মোক্ষপ্রাপ্তি হয় এবং স্বভাবতই সকল অভিলাষ প্রাপ্ত হওয়া যায়। ৫

ধৰ্ম্মে প্রমাণ

বেদোহখিলো ধৰ্ম্মমূলং স্মৃতিশীলে চ তদ্বিদাম্।
আচারশ্চৈব সাধূনামাত্মনস্তুষ্টিরেব চ ॥ ৬ ॥

এক্ষণে ধৰ্ম্মে প্রমাণ কহিতেছেন। সমস্ত বেদ, বেদবেত্তা মন্বাদির স্মৃতি, তাঁহাদিগের ব্রহ্মন্যতা প্রভৃতি ত্রয়োদশ প্রকার শীল, সাধুদিগের সদাচার এবং আত্মতুষ্ট এই সমুদয় ধৰ্ম্মে প্রমাণ হয় । ৬

বেদোক্ত ধর্মই মনুকথিত ধর্ম

যঃ কশ্চিৎ কস্যচিদ্ধৰ্ম্মে মনুনা পরিকীৰ্ত্তিতঃ।
স সৰ্ব্বোহভিহিতো বেদে সৰ্ব্বজ্ঞানময়ো হি স: ॥ ৭ ॥

ভগবান মনু যে কোনও ব্যক্তির যে কোনও (যেমন, বর্ণধর্ম, আশ্রমধর্ম, সংস্কারধর্ম প্রভৃতি এবং ব্রাহ্মণাদি বিশেষ বিশেষ বর্ণের জন্য বিহিত বিশেষ বিশেষ ধর্ম) উপদেশ দিয়েছেন, সে সবগুলিই বেদে প্রতিপাদিত হয়েছে। কারণ, সেই বেদ হলো সকল প্রকার জ্ঞানের আকর (অর্থাৎ জ্ঞাপক কারণ)। (২/৭)।

ভগবান মনু যে কোন ব্যক্তির যে ধৰ্ম্ম কহিয়াছেন, অবিকল সেইরূপই বেদে প্রতিপাদিত আছে, যেহেতু, মনু সকল বেদই সম্যকরূপে অবগত আছেন । ৭

কৰ্ম্মানুষ্ঠান

সৰ্ব্বস্তু সমবেক্ষ্যেদং নিখিলং জ্ঞানচক্ষুষা।
শ্ৰুতিপ্রামাণ্যতে বিদ্বান্‌ স্বধৰ্ম্মে নিবিশেত বৈ ॥ ৮ ॥,

শাস্ত্র সকল জ্ঞানচক্ষুর্দ্বারা বিশেষরূপে পৰ্য্যালোচনা করিয়া বিদ্বানের বেদমূলক কর্ত্তব্য কর্ম্ম অবগত হইয়া তাহার অনুষ্ঠান করিবে। ৮

ধৰ্ম্মানুষ্ঠান

শ্ৰুতিস্মৃত্যুদিতং ধৰ্ম্মমনুতিষ্ঠন্‌ হি মানবঃ ।
ইহ কীৰ্ত্তিমবাপ্নোতি প্রেত্য চামুত্তমং সুখম্‌ ॥ ৯

যে মনুষ্য বেদোক্ত ও স্মৃতি-প্রতিপাদিত ধৰ্ম্মের অনুষ্ঠান করেন, তিনি ইহলোকে ধার্ম্মিকরূপে যশ ও পরলোকে স্বর্গাদি উৎকৃষ্ট ফল প্রাপ্ত হয়েন। ৯

ধৰ্ম্ম শ্রুতি ও স্মৃতিমূলক

শ্ৰুতিস্তু বেদো বিজ্ঞেয়ো ধৰ্ম্মশাস্ত্রস্তু বৈ স্মৃতিঃ ।
তে সৰ্ব্বার্থেষ্বমীমাংস্যে তাভ্যাং ধৰ্ম্মে হি নিৰ্ব্বভৌ ॥ ১০ ॥

বেদকে শ্রুতি ও ধৰ্ম্মশাস্ত্রকে স্মৃতি বলা যায়, ঐ শ্রুতি ও স্মৃতি বিরুদ্ধ তর্কের দ্বারা মীমাংসা করিবে না, যেহেতু, শ্রুতি ও স্মৃতি হইতেই ধৰ্ম্ম স্বয়ং প্রকাশ প্রাপ্ত হইয়াছে । ১০

শ্রুতি ও স্মৃতিনিন্দকের দণ্ড

যোহবমন্যেত তে মূলে হেতুশাস্ত্রাশ্রয়াদ্দ্বিজঃ ।
স সাধুভিৰ্বহিষ্কার্য্যো নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ ॥ ১১

যে ব্যক্তি প্রতিকুল তর্ক দ্বারা মূলস্বরূপ শ্রুতি ও স্মৃতিশাস্ত্রকে অবমাননা করে, সাধু লোকের সেই বেদনিন্দক নাস্তিককে দ্বিজের কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্ম অধ্যয়নাদি সকল অনুষ্ঠান হইতে বহিষ্কৃত করিবেন । ১১

ধর্ম্মের চারিটি প্রমাণ

বেদঃ স্মৃতিঃ সদাচারঃ স্বস্য চ প্রিয়মাত্মনঃ।
এতচ্চতুৰ্ব্বিধং প্রাহুঃ সাক্ষাদ্ধৰ্ম্মস্য লক্ষণম্ ॥ ১২ ৷

বেদ, স্মৃতি, শিষ্টাচার ও আত্মতুষ্টি এই চারিটি ধৰ্ম্মের সাক্ষাৎ প্রমাণ বলিয়া মন্বাদি-শাস্ত্ৰকৰ্ত্তারা নির্দ্দিষ্ট করিয়াছেন। ১২

কামনাশূন্যের প্রতিই ধর্ম্মোপদেশ

অর্থকামেষ্বসক্তানাং ধৰ্ম্মজ্ঞানং বিধীয়তে ।
ধৰ্ম্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রীতিঃ । ১৩

যাঁহারা অর্থকামনায় আসক্ত নহেন, তাঁহাদিগের প্রতিই এই ধৰ্ম্মোপদেশ এবং যাঁহারা জগতে খ্যাতি লাভ করিবার জন্য ধৰ্ম্মানুষ্ঠান করেন, তাহাদিগের সেই কৰ্ম্মের ফলপ্রাপ্তি হয় না । ধৰ্ম্মজিজ্ঞাসু ব্যক্তির প্রকৃষ্ট প্রমাণ বেদ, যেহেতু, বেদ ও স্মৃতির অনৈক্যে বেদের মতই গ্রাহ্য হয়। ১৩

শ্রুতির দুই প্রকার মত ও ধর্ম

শ্ৰুতিদ্বৈধন্তু যত্র স্যাত্তত্ৰ ধৰ্ম্মাবুভৌ স্মৃতৌ ।
উভাবপি হি তৌ ধর্ম্মৌ সম্যগুক্তৌ মনীষিভিঃ ॥ ১৪ ॥

যে স্থলে শ্রুতির মত দুই প্রকার, তথার উভয়কেই সম্যক্‌রূপে ধৰ্ম্ম বলিয়া মন্বাদিশাস্ত্ৰকৰ্ত্তারা বলিয়াছেন। ১৪

হোমের কাল

উদিতেহনুদিতে চৈব সময়াধ্যুষিতে তথা ।
সৰ্ব্বথা বর্ত্ততে যজ্ঞ ইতীয়ং বৈদিকী শ্রুতিঃ ॥ ১৫

উদয়কালে, অমুদয়কালে এবং সুর্য্যনক্ষত্ররহিতকালে হোম করিবে, এই সকল কাল পরস্পর বিরুদ্ধ হইলেও ইহার অন্তমত কালে অগ্নিহোত্রীয় হোমের বাধ করিবে না। ১৫

মানবশাস্ত্রে দ্বিজাতির অধিকার

নিষেকাদিশ্মশানান্তো মন্ত্রৈর্যস্যোদিতো বিধিঃ ।
তস্য শাস্ত্রেহধিকারোহস্মিন্‌ জ্ঞেয়ো নান্যস্য কস্যচিৎ ॥ ১৬ ॥

যাঁহাদিগের গর্ভাধান অবধি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পৰ্য্যন্ত ক্রিয়াকলাপ মন্ত্রের দ্বারা কথিত আছে, তাঁহাদিগের এই মানব-শাস্ত্রের অধ্যয়ন ও শ্রবণে অধিকার, অর্থাৎ দ্বিজাতির অধিকার, শূদ্রাদির অধিকার নাই। কিন্তু এই শাস্ত্রোক্ত কর্মের অনুষ্ঠানে তাহাদিগের বাধা নাই। ১৬

ব্ৰহ্মাবৰ্ত্ত দেশ 

সরস্বতীদৃষদ্বত্যোর্দে বনদ্যোৰ্যদন্তরম্‌।
তং দেবনিৰ্ম্মিতং দেশং ব্রহ্মাবৰ্ত্তং প্রচক্ষতে।। ১৭

সরস্বতী ও দৃষদ্বতী এই দুই প্রশস্ত দেবনদীর মধ্যস্থলে যে সকল দেবনির্মিত দেশ অর্থাৎ প্রশস্ত দেশ আছে, তাহাদিগকে ব্ৰহ্মাবৰ্ত্ত বলে। ১৭

ব্ৰহ্মাবৰ্ত্ত দেশের আচারই সদাচার

তস্মিন্‌ দেশে য আচারঃ পারম্পর্য্যক্রমাগতঃ।
বর্ণনাং সান্তরালানাং স সদাচার উচ্যতে।। ১৮।।

এই ব্ৰহ্মাবর্তদেশে পরম্পরাক্রমাগত ব্রাহ্মণাদির যে আচার-ব্যবহার প্রচলিত আছে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিম, বৈশ্য, শূদ্র ও সঙ্কীর্ণজাতি সকলে সেই আচারকেই সদাচার বলিয়া জানিবে। ১৮

ব্রহ্মর্ষি দেশ

কুরুক্ষেত্রঞ্চ মৎস্যাশ্চ পঞ্চালাঃ শূরসেনকাঃ।
এষ ব্রহ্মর্ষিদেশে বৈ ব্রহ্মাবৰ্ত্তাদনন্তরঃ।। ১৯।।
এতদ্দেশপ্রসূতস্য সকাশাদগ্রজন্মনঃ।
স্বং স্বং চরিত্রং শিক্ষেরন্‌ পৃথিব্যাং সৰ্ব্বমানবাঃ।। ২০।।

কুরুক্ষেত্র, মৎস্য, কান্যকুব্জ ও মথুরা এই কয়টি দেশকে ব্রহ্মর্ষিদেশ বলে, উক্ত দেশ ব্রহ্মাবৰ্ত্ত হইতে কিঞ্চিৎ হীন। ১৯

এই সমুদয় দেশসম্ভূত ব্রাহ্মণগণের নিকট হইতে পৃথিবীর যাবতীয় লোক স্বীয় স্বীয় আচারব্যবহার শিক্ষা করিবে। ২০

মনুসংহিতা
দ্বিতীয় অধ্যায়
ধর্মানুষ্ঠানপ্রকরণ

‘যঃ কশ্চিৎ কস্যচিদ্ধর্মো মনুনা পরিকীর্তিতঃ।
গ সর্বোহভিহিতো বেদে সর্বজ্ঞানময়ো হি সঃ।।’
ভগবান মনু যে কোনও ব্যক্তির যে কোনও (যেমন, বর্ণধর্ম, আশ্রমধর্ম, সংস্কারধর্ম প্রভৃতি এবং ব্রাহ্মণাদি বিশেষ বিশেষ বর্ণের জন্য বিহিত বিশেষ বিশেষ ধর্ম) উপদেশ দিয়েছেন, সে সবগুলিই বেদে প্রতিপাদিত হয়েছে। কারণ, সেই বেদ হলো সকল প্রকার জ্ঞানের আকর (অর্থাৎ জ্ঞাপক কারণ)। (২/৭)।

‘স্ত্রীণাং সুখোদ্যমক্রূরং বিস্পষ্টার্থং মনোহরম্।
মঙ্গল্যং দীর্ঘবর্ণান্তমাশীর্বাদাভিধানবৎ।।’
স্ত্রীলোকদের পক্ষে এমন নাম রাখতে হবে- যে নাম সুখে উচ্চারণ করতে পারা যায় অর্থাৎ স্ত্রীলোক ও বালকেরাও যে নাম অনায়াসে উচ্চারণ করতে পারে (যেমন যশোদাদেবী; এই নাম দুরুশ্চারণাক্ষরহীন হবে, যেমন ‘সুশ্লিষ্টাঙ্গী’ এই রকম নাম হবে না), সে নাম যেন ক্রূরার্থের প্রকাশক না হয় (অর্থাৎ ডাকিনী, পরুষা প্রভৃতি নাম হবে না), যে নাম বিস্পষ্টার্থ হবে (অর্থাৎ অনায়াসে যে নামের অর্থবোধ হয়; ‘কামনিধা’, ‘কারীষগন্ধী’ প্রভৃতি যে সব নামের অর্থ স্পষ্ট নয় এমন নাম হবে না), যে নাম হবে মনোহর অর্থাৎ চিত্তের আহ্লাদজনক (যেমন শ্রেয়সী; কিন্তু ‘কালাক্ষী’ জাতীয় নাম মনের সুখ উৎপাদন করে না), যে নাম মঙ্গলের বাচক হয় (যেমন চারুমতী, শর্মমতী; বিপরীত নাম যেমন ‘অভাগা’, ‘মন্দভাগ্যা’ প্রভৃতি হবে না), যে নামের শেষে দীর্ঘ স্বর থাকে (যেমন ‘ঈ’কার, আ-কার যুক্ত নাম), যে নামের উচ্চারণে আশীর্বাদ বোঝায় (যেমন ‘সপুত্রা’, ‘বহুপুত্রা’ প্রভৃতি)। (২/৩৩)।

‘অমন্ত্রিকা তু কার্যেয়ং স্ত্রীণামাবৃদশেষতঃ।
সংস্কারার্থং শরীরস্য যথাকালং যথাক্রমম্।।’
পুরুষের মতো স্ত্রীলোকদেরও শরীরসংস্কার বা দেহশুদ্ধির জন্য এই সমস্ত আবৃৎ (অর্থাৎ জাতকর্ম থেকে আরম্ভ করে সংস্কারগুলির আনুষ্ঠানিক কর্মসমূহ) যথা-নির্দিষ্ট কালে এবং যথানির্দিষ্ট ক্রমে সম্পন্ন করতে হয়; কিন্তু তাদের পক্ষে ঐ সমস্ত অনুষ্ঠানে কোনও মন্ত্রের প্রয়োগ থাকবে না। (২/৬৬)।

‘বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদিকঃ স্মৃতঃ।
পতিসেবা গুরৌ বাসো গৃহার্থোহগ্নিপরিষ্ক্রিয়া।।’
বিবাহ-সংস্কারই স্ত্রীলোকদের উপনয়নস্থানীয় বৈদিক সংস্কার (অর্থাৎ বিবাহের দ্বারাই স্ত্রীলোকদের উপনয়ন সংস্কার সিদ্ধ হয়); বিবাহের পর স্ত্রীলোকেরা যে তাদের পতিদের সেবা করে (শুশ্রূষা বা সন্তোষ বিধান করে), তা-ই তাদের গুরুগৃহে বাসস্বরূপ (গুরুগৃহে বাস করা অবস্থায় বেদাধ্যয়ন কর্তব্য, কিন্তু স্ত্রীলোক তো সত্য-সত্য গুরুগৃহে বাস করে না, তাই তাদের বেদাধ্যয়নের প্রসঙ্গ আসে না); স্বামীর গৃহস্থালীর কাজই হলো (যেমন, অন্নরন্ধন, পোষাকাদি সাজিয়ে রাখা, টাকাকড়ি গুণে ঠিকমতো রাখা ইত্যাদি) স্ত্রীলোকেদের পক্ষে গুরুগৃহে (সায়ং ও প্রাতঃকালীন হোমরূপ) অগ্নিপরিচর্যা [ব্রহ্মচারী গুরুগৃহে থেকে সায়ং-প্রাতঃকালীন যে সমিৎ সংগ্রহ করে, তা স্ত্রীলোকদের পক্ষে গৃহস্থালীর কাজের দ্বারা সম্পন্ন হয়। আর স্ত্রীলোকেরা গৃহস্থালীর কাজকর্ম অর্থাৎ অগ্নির দ্বারা নিষ্পাদনীয় রন্ধনাদি যে সব কাজ করে, তার দ্বারা ব্রহ্মচারীর করণীয় যতকিছু যম-নিয়ম প্রভৃতি সেগুলিও পদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়ে যায়। অতএব, এখানে স্ত্রীলোকদের অগ্নিপরিষ্ক্রিয়াটি পুরুষদের যম-নিয়মাদি কর্তব্যগুলির উপলক্ষণ]। (২/৬৭)।

‘নাভিব্যাহারয়েদ্ব্রহ্ম স্বধানিনয়নাদৃতে।
শূদ্রেণ হি সমস্তাবদ্ যাবদ্বেদে ন জায়তে।।’
মৌজ্ঞীবন্ধন অর্থাৎ উপনয়নের পূর্ব পর্যন্ত (অর্থাৎ যতক্ষণ না বেদজন্মরূপ উপনয়ন প্রাপ্ত হয় ততক্ষণ) স্বধা অর্থাৎ শ্রাদ্ধসম্বন্ধীয় বেদমন্ত্র ছাড়া অন্য বেদবাক্য উচ্চারণ করাবে না (এটি পিতার প্রতি উপদেশ)। যতক্ষণ না উপনীত হয়ে বেদাধ্যয়নদ্বারা দ্বিতীয় জন্ম গ্রহণ করবে, ততক্ষণ (ব্রাহ্মণাদি তিন বর্ণ) শূদ্রেরই সমান। (২/১৭২)।

‘স্বভাব এষ নারীণাং নরাণামিহ্ দূষণম্।
অতোহর্থান্ন প্রমাদ্যন্তি প্রমদাসু বিপশ্চিতঃ।।’
ইহলোকে (শৃঙ্গার চেষ্টার দ্বারা মোহিত করে) পুরুষদের দূষিত করাই নারীদের স্বভাব; এই কারণে পণ্ডিতেরা স্ত্রীলোকসম্বন্ধে কখনোই অনবধান হন না। (২/২১৩)।

‘অবিদ্বাংসমলং লোকে বিদ্বাংসমপি বা পুনঃ।
প্রমদা হ্যুৎপথং নেতুং কামক্রোধবশানুগম্।।’
ইহলোকে কোনও পুরুষ ‘আমি বিদ্বান্ জিতেন্দ্রিয়’ মনে করে স্ত্রীলোকের সন্নিধানে বাস করবেন না; কারণ, বিদ্বানই হোন বা অবিদ্বানই হোন, দেহধর্মবশতঃ কামক্রোধের বশীভূত পুরুষকে কামিনীরা অনায়াসে বিপথে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়। (২/২১৪)

‘মাত্রা স্বস্রা দুহিত্রা বা না বিবিক্তাসনো ভবেৎ।
বলবানিন্দ্রিয়গ্রামো বিদ্বাংসমপি কর্ষতি।।’
মাতা, ভগিনী বা কন্যার সাথে কোনও পুরুষ নির্জন গৃহাদিতে বাস করবে না, কারণ ইন্দ্রিয়সমূহ এতই বলবান্ (চঞ্চল) যে, এরা (শাস্ত্রালোচনার দ্বারা আত্মসংযম অভ্যাস করতে পেরেছেন এমন) বিদ্বান্ ব্যক্তিকেও আকর্ষণ করে (অর্থাৎ কামক্রোধাদির বশবর্তী করে তোলে)। (২/২১৫)।

‘শ্রদ্দধানঃ শুভাং বিদ্যামাদদীতাবরাদপি।
অন্ত্যাদপি পরং ধর্মং স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি।।’
শ্রদ্ধাযুক্ত ব্যক্তি শূদ্রাদিজাতীয় লোকের কাছ থেকেও গারুড়াদি বিদ্যা অর্থাৎ সর্পমন্ত্র প্রভৃতি শ্রেয়স্করী বিদ্যা গ্রহণ করবে; অন্ত্যজ চণ্ডালাদি জাতির (যারা পূর্বজন্মে যোগাভ্যাসযুক্ত ছিল) কাছ থেকেও শ্রেষ্ঠ ধর্ম (অর্থাৎ মোক্ষের উপায় আত্মজ্ঞানাদি) গ্রহণ করবে; এবং দুষ্কুলজাত অর্থাৎ নিজের থেকে নিকৃষ্ট কুল থেকেও উত্তমা স্ত্রীরত্ন গ্রহণ করবে। (২/২৩৮)।

‘স্ত্রিয়ো রত্নান্যথো বিদ্যা ধর্মঃ শৌচং সুভাষিতম্।
বিবিধানি চ শিল্পানি সমাদেয়ানি সর্বতঃ।।’
স্ত্রী, রত্ন (মণি-মাণিক্য), বিদ্যা, ধর্ম, শৌচ, হিতবাক্য এবং বিবিধ শিল্পকার্য সকলের কাছ থেকে সকলেই গ্রহণ করতে পারে। (২/২৪০)।

মধ্যদেশ

হিমবদ্বিন্ধ্যয়োর্ম ধ্যং যং প্রাগ্বিনশনাদপি।
প্রত্যগেব প্রয়াগাচ্চ মধ্যদেশঃ প্রকীৰ্ত্তিতঃ।। ২১।।

উত্তরে অবস্থিত হিমালয় এবং দক্ষিণে বিন্ধীগিরি, এই উভয় পৰ্ব্বতের মধ্যস্থান অথচ কুরুক্ষেত্রের পূর্ব এবং প্রয়াগের পশ্চিম যে দেশ, তাহাকে মধ্যদেশ কহিয়াছেন। ২১

আর্য্যাবর্ত্ত দেশ

আসমুদ্রাত্ত বৈ পূৰ্ব্বাদাসমুদ্রাত্ত পশ্চিমাৎ।
তয়োরেবান্তরং গির্য্যোরার্য্যাবর্তং বিদুৰ্ব্বধাঃ।। ২২।।

পূৰ্ব্বে সমুদ্র, পশ্চিমে সমুদ্র, উত্তরে হিমালয় ও দক্ষিণে বিন্ধ্যপৰ্ব্বত, ইহার মধ্যস্থানকে পণ্ডিতগণ আধ্যাবৰ্ত্ত বলেন। ২২

ম্লেচ্ছদেশ 

কৃষ্ণসারস্তু চরতি মৃগো যত্র স্বভাবতঃ।
স জ্ঞেয়ো যজ্ঞিয়ে দেশে ম্লেচ্ছদেশস্ত্বতঃ পরঃ।। ২৩।।

যে স্থানে কৃষ্ণসার মৃগ স্বাভাবিক বিচরণ করে, সেই দেশকে যজ্ঞিয় দেশ বলে, তদ্ভিন্ন স্থানকে ম্লেচ্ছদেশ বলা যায়। ২৩

বাসনিরূপণ

এতান্‌ দ্বিজাতয়ে দেশান্ত সংশ্রয়েরন্‌ প্রযত্নতঃ।
শূদ্ৰস্তু যস্মিন্‌ কস্মিন বা নিবসেদৃবৃত্তিকশিতঃ।। ২৪।।

দ্বিজাতিগণ অন্যদেশসম্ভূত হইলেও প্রযত্ন সহবারে এই সকল পবিত্র দেশ আশ্রয় করিবেন; কিন্তু শূদ্রেরা আপন জীবিকার জন্য যে কোন দেশে বসতি করিতে পারে। ২৪

ব্রহ্মণাদিবর্ণের পাঁচটি ধর্ম্ম 

এষ ধৰ্ম্মস্য বো যোনিঃ সমাসেন প্রকীৰ্ত্তিতা।
সম্ভবশ্চাস্য সৰ্ব্বস্য বর্ণধৰ্ম্মান্‌ নিবোধত।। ২৫।।

হে মহর্ষিগণ! আমি আপনাদিগের নিকট অতি সংক্ষেপে ধৰ্ম্মের কারণ, জগতের উৎপত্তি ও বসতিযোগ্য স্থানের মাহাত্ম্য বর্ণন করিলাম, এক্ষণে ব্রাহ্মণাদি বর্ণের ধৰ্ম্ম সকল কহিতেছি। উক্ত ধৰ্ম্ম পাচপ্রকার;–-বর্ণধৰ্ম্ম, আশ্ৰমধৰ্ম্ম, বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম, গুণধৰ্ম্ম ও নৈমিত্তিকধৰ্ম্ম। উপনয়নকে বর্ণধৰ্ম্ম বলে, উপনীত বর্ণের ভিক্ষাদগুদিধারণকে আশ্ৰমধৰ্ম্ম বলে, তাহাদিগের মুঞ্জময়ী মেখলাদি ধারণকে বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম বলা যায়, অভিষিক্ত রাজার প্রজাপলিনাদিকে গুণধৰ্ম্ম কহে ও পাপক্ষয়সাধন প্রায়শ্চিত্তকে নৈমিত্তিক ধৰ্ম্ম বলা যায়। ২৫

দ্বিজাতির সংস্কার

বৈদিকৈঃ কৰ্ম্মভিঃ পুণ্যৈনিষেকদিদ্বিজন্মনাম্।
কার্য্যঃ শরীরসংস্কারঃ পাবনঃ প্রেত্য চেহ চ।। ২৬।।

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, ইহাদিগের বেদোক্ত পবিত্র মন্ত্ৰোচ্চারণরূপ কৰ্ম্ম দ্বারা গর্ভাধানাদি শারীরিক সংস্কার করিবে, যাহাতে তাঁহারা ইহলোকে বেদাধ্যয়নাদি দ্বারা ও পরলোকে লভ্য যাগাদি ফল দ্বারা পবিত্র হইবে।। ২৬

সংসার দ্বারা বীজদোষ নাশ

গার্ভৈর্হোমৈর্জাতকৰ্ম্মচৌড়মৌঞ্জীনিবন্ধনৈঃ।
বৈজিকং গার্ভিকঞ্চৈনো দ্বিজানামপমৃজ্যতে।। ২৭।।

গর্ভাধান, জাতকৰ্ম্ম, জয়প্রাশন, চুড়াকরণ ও উপনয়নাদি সংস্কার দ্বারা দ্বিজাতির বীজদোষ ও গর্ভবাসজন্য পাপ হইতে মুক্তি হয়। ২৭

ব্ৰহ্মপ্রাপ্তির যোগ্যতা

স্বাধ্যায়েন ব্রতৈহেমৈস্ত্রৈবিদ্যেনেজ্যয়া সুতৈঃ।
মহাযজ্ঞৈশ্চ যজ্ঞৈশ্চ ব্রাহ্মীয়ং ক্রিয়তে তনুঃ।। ২৮

বেদাধ্যয়ন, মধুমাংসবর্জ্জনাদি ব্রষ্ঠ, সায়ং ও প্রাতঃকালে হোম, ত্রৈবিদ্য-নামক ব্রতবিশেষ, ব্রহ্মচর্য্যসময়ে দেব-ঋষি-পিতৃতর্পণ, গৃহস্থদশায় সন্তানোৎপাদনম, ব্রহ্মযজ্ঞাদি পঞ্চ মহাযজ্ঞ ও জ্যোতিষ্টোমাদি যজ্ঞ দ্বারা মনুষ্য এই দেহাবচ্ছিন্ন আত্মাকে ব্ৰহ্মপ্রাপ্তির যোগ্য করিবে। ২৮

জাতকর্ম্ম

প্রাঙাভিবৰ্দ্ধনাৎ পুংসো জাতকৰ্ম্ম বিধায়তে।
মন্ত্রবৎ প্রাশনঞ্চাস্য হিরণ্যমধুসর্পিষাম্‌।। ২৯।।

বালক জন্মিবামাত্র নাড়ীচ্ছেদের পূৰ্ব্বে তাহার জাতকৰ্ম্ম নামে সংস্কার করিবে ও সেই সময়ে মন্ত্রাচ্চারণপূর্বক তাহাকে সুবর্ণ, মধু ও ঘৃত ভোজন করাইবে। ২৯

নামকরণ

নামধেয়ং দশম্যান্ত দ্বাদশাং বাস্য করয়েৎ।
পুণ্যে তিথৌ মুহূর্ত্তে বা নক্ষত্রে বা গুণান্বিতে।। ৩০।।
মঙ্গল্যং ব্রাহ্মণস্য স্যাৎ ক্ষত্রিয়স্য বলান্বিতম্।
বৈশ্বস্য ধনসংযুক্তং শূদ্ৰস্য তু জুগুপ্সিলতম্।। ৩১।।
শৰ্ম্মবদ্‌ব্ৰাহ্মণস্য স্যাদ্রাজ্ঞো রক্ষাসমন্বিতম্।
বৈশ্যস্য পুষ্টিসংযুক্তং শূদ্ৰস্য প্ৰৈষ্যসংযুতম্।। ৩২।।
স্ত্ৰীণাং সুখোদ্যমক্রূরং বিস্পষ্টাৰ্থং মনোহুরম্।
মঙ্গল্যং দীর্ঘবৰ্ণান্তমাশীৰ্ব্বাদাভিধানবৎ।। ৩৩।।

একাদশ বা দ্বাদশ দিবসে জাতবালকের নামকরণ করিবে, এই নির্দিষ্ট সময়ে না পারিলে, জ্যোতিঃশাস্ত্রোক্ত প্রশস্ত তিথি, প্রশস্ত মুহূৰ্ত্ত ও প্রশস্ত নক্ষত্রে করিতে হইবে। ৩০

ব্রাহ্মণের মঙ্গলবাচক, ক্ষত্রিয়ের বলবাচক, বৈশ্যর ধনবাচক এবং শূদ্রের নিন্দাবাচক নাম রাখিবে। ৩১

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রাদির নাম যথাক্রমে শৰ্ম্ম, বৰ্ম্ম, ভূতি, দাসাদি, মঙ্গল, বল, সম্পত্তি ও সেবকসূচক উপপদ যুক্ত করিবে; যেমন শুভশর্ম্মা, বলবর্ম্মা, বসুভূতি, দীনদাস ইত্যাদি। ৩২

যে নাম মুখে উচ্চারণ করিতে পারা যায়, ক্রূরার্থের বাচক না হয়, অনায়াসে যে নামের অর্থবোধ হয়, যাহাতে মনের প্রীতি জন্মে, যে নাম মঙ্গলের বাচক হয়, যাহার অন্তে দীর্ঘস্বর থাকে, যাহা উচ্চারণে আশীৰ্ব্বাদ বুঝায়, স্ত্রীলোকের এই প্রকার নাম কৰ্ত্তব্য, যেমন যশোদা দেবী। ৩৩

নিষ্ক্রমণ

চতুর্থে মাসি কৰ্ত্তব্যং শিশোর্নিষ্ক্রমণং গৃহাৎ।
ষষ্ঠেহন্নপ্রাশনং মাসি যদ্বেষ্টং মঙ্গলং কুলে।। ৩৪

জাতশিশুর চতুর্থ মাসে সুৰ্য্যদর্শন করাইবার জন্য সূতিকাগৃহ হইতে নিষ্ক্রমণ নামে সংস্কার করিতে হয়, পরে ষষ্ঠমাসে অন্নপ্রাশন নামক সংস্কার করিতে হয়, অথবা আপনাদিগের কুলে যে সময়ে নিষ্ক্রমণাদি সংস্কার হইয়া থাকে, তাহা করিবে। ৩৪

চূড়াকর্ম্ম

চুড়াকৰ্ম্ম দ্বিজাতীনাং সৰ্ব্বেষামেব ধৰ্ম্মত।
প্রথমেহব্দে তৃতীয়ে বা কৰ্ত্তব্যং শ্রুতিচোদনাৎ।। ৩৫।।

শ্রুতির লিখনানুসারে সকল জাতিই কুলধৰ্ম্মানুসারে প্রথম বৎসরে অথবা তৃতীয় বৎসরাদিতে চুড়াকৰ্ম্ম করিবে। ৩৫

উপনয়ন

গর্ভাষ্টমেহব্দে কুর্ব্বীত ব্রাহ্মণস্যোপনায়নম্।
গর্ভাদেকাদশে রাজ্ঞো গর্ভাত্ত দ্বাদশে বিশঃ।। ৩৬।।
ব্ৰহ্মবর্চ্চসকামস্ত কাৰ্য্যং বিপ্রস্য পঞ্চমে।
রাজ্ঞো বলার্থিনঃ ষষ্ঠে বৈশ্যস্যেহার্থিনোহষ্টমে।। ৩৭।

গর্ভ হওয়াবধি অষ্টম বৎসরে অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হওয়াবধি ৬ বৎসর ৩ মাসের পর ৭ বৎসর ৩ মাস পর্য্যন্ত ব্রাহ্মণের উপনয়ন দেওয়া উচিত। গর্ভের সময় লইয়া একাদশ বৎসরে অর্থাৎ ভূমিঃ হওয়াবধি ৯ বৎসর ৩ মাসের পর ১০ বৎসর ৩ মাস পর্যন্ত ক্ষত্রিয়ের উপনয়ন ও দ্বাদশ বৎসরে অর্থাৎ ১০ বৎসর ৩ মাসের পর ১১ বৎসর ৩ মাস পর্যন্ত বৈশ্যের উপনয়ন দেওয়া বিধেয়। ৩৬

যে ব্রাহ্মণ ব্ৰহ্মবৰ্চ্চল অর্থাৎ বেদাধ্যয়ন ও তদৰ্থগ্রহণ-প্রকর্ষ কামনা করেন, তাঁহার গর্ভসহ পঞ্চম বৎসরে অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হওয়া অবধি ৩ বৎসর ৩ মাসের পর ৪ বৎসর ৩ মাস পর্যন্ত উপনয়ন দেওয়া উচিত। বিপুল হস্ত্যশ্বাদিবলপ্রার্থী ক্ষত্রিয়ের গর্ভসহ ষষ্ঠ বৎসরে অর্থাৎ ভূমিষ্ঠের পর ৪ বৎসর ৩ মাস হইতে ৫ বৎসর ৩ মাস পর্যন্ত ও বাণিজ্যাৰ্থ বৈশ্যের অষ্টম বৎসরে অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ৬ বৎসর ৩ মাস হইতে ৭ বৎসর ৩ মাস পর্যন্ত উপনয়ন দেওয়া বিধেয়। ৩৭

ব্রাত্য 

আ ষোড়শাদ্‌ব্ৰাহ্মণস্য সাবিত্রী নাতিবর্ততে।
আ দ্বাবিংশাৎ ক্ষত্রবন্ধোরা চতুবিংশতের্ব্বশঃ।। ৩৮।।
তাত উৰ্দ্ধং ক্রয়োহপ্যেতে যথাকালমসংস্কৃতাঃ।
সাবিত্ৰীপতিতা ব্রাত্যা ভবন্ত্যাৰ্য্যবিগর্হিতাঃ।। ৩৯।।
নৈতৈরপূতৈর্ব্বিধিবদাপদ্যপি হি কর্হিচিৎ।
ব্রাহ্মান্‌ যৌনাংশ্চ সম্বন্ধান্নাচরেদ্‌ব্রাহ্মণঃ সহ।। ৪০।।

ব্রাহ্মণের গর্ভাবধি ষোড়শবর্ষ পৰ্য্যন্ত অর্থাৎ ভূমিষ্ঠাবধি ১৪ বৎসর ৩ মাসের পর ১৫ বৎসর ৩ মাস পর্যন্ত, ক্ষত্রিয়ের দ্বাবিংশতিবর্ষ পর্যন্ত অর্থাৎ ভূমিষ্ঠের পর ২১ বৎসর ৩ মাস পর্যন্ত, বৈশ্যের চতুৰ্ব্বিংশতি বৎসর পর্য্যন্ত অর্থাৎ ভূমিষ্ঠের পর ২৩ বৎসর ৩ মাস পর্য্যস্ত উপনয়নকাল অতিক্রান্ত হয় না। ৩৮

এই তিন বর্ণ যদি এতাবৎকাল পর্য্যন্তও সংস্কৃত না হয়, তাহ হইলে ইহার গায়ত্রীভ্রষ্ট হইয়৷ মাননীয় মহাত্মাদিগের নিন্দনীয় হয় এবং তাহাদিগকে ব্রাত্য বলা যায়। ৩৯

ব্রাত্যের যথাশাস্ত্র প্রায়শ্চিত্ত না করিলে ব্রাহ্মণের বিপৎকালেও এই অপবিত্রদিগকে বেদ অধ্যয়ন করাইবেন না এবং তাহাদিগের সহিত কোনক্রমেই কন্যাদানাদি কোন সম্বন্ধনিবন্ধ করিবেন না। ৪০

পরিধেয় বিধি

কার্ষ্ণ রৌরববাস্তানি চৰ্ম্মাণি ব্রহ্মচারিণঃ।
বসীরমানুপূৰ্ব্বেণ শাণক্ষৌমাবিকানি চ।। ৪১।।

ব্রাহ্মণ-ব্রহ্মচারী কৃষ্ণসারচর্মের উত্তরীয় ও শণবস্ত্রের অধোবসন পরিধান করিবে, ক্ষত্রিয়-ব্রহ্মচারী রুক্ষনামক মৃগচৰ্ম্মের উত্তরীয় ও ক্ষৌমবসন এবং বৈশ্য-ব্রহ্মচারী ছাগচৰ্ম্মের উত্তরীয় ও মেষলোমের অধোবসন পরিধান করিবে। ৪১

মেখলার নিয়ম

মৌঞ্জী ত্রিবৃৎ সমা শ্লক্ষ্ণা কাৰ্য্যা বিপ্রস্য মেখলা।
ক্ষত্ৰিয়স্য তু মৌর্ব্বী জ্যা বৈশ্বস্য শণতান্তবী।। ৪২।
মুঞ্জালাভে তু কৰ্ত্তব্যাঃ কুশাশ্মান্তকবল্বজৈঃ।
ত্রিবৃতা গ্রন্থিনৈকেন ত্রিভিঃ পঞ্চভিরেব বা।। ৪৩।

ব্রাহ্মণদিগের সমান গুণত্রয়ে নিৰ্ম্মিত, সুখস্পৃশ্য, মুঞ্জময়ী মেখলা করিতে হয়, ক্ষত্রিয়দিগের মুর্ব্বাময়ী ধনুকের ছিলার ন্যায় ত্রিগুণিত এবং বৈশ্যের শণতন্তুনির্ম্মিত ত্রিগুণিত মেখলা করিয়ে হয়।

মুঞ্জাদির অপ্রাপ্তিপক্ষে ব্রাহ্মণেরা বুশের মেখলা করিবেন, ক্ষত্রিয়েরা অশ্মান্তক-নামক তৃণবিশেষের এবং বৈশ্যের বল্বজ তূণের মেখলা করিবে। ত্ৰিগুণ মেখলা স্বস্ব বংশের রীত্যনুসারে এক, তিন অথবা পঞ্চ গ্ৰন্থি দ্বারা বদ্ধ করবে। ৪৩

উপবীত

কার্পাসমুপবীতং স্যাদ্বিপ্রস্যোর্দ্ধবৃতং ত্রিবৃৎ।
শণসূত্রময়ং রাজ্ঞো বৈশ্যস্যাবিকসৌত্রিকম্।। ৪৪।

কার্পাসের তিনটি সূত্র দুই করতলমধ্যে ধারণ করত দক্ষিণকর উর্দ্ধে ও বামকর নিম্নে চালনা দ্বারা যে সূত্র প্রস্তুত হয়, তাহাকে ঐরূপ হস্তমধ্যে ধারণ পুৰ্ব্বক বামকর উর্দ্ধে ও দক্ষিণকর নিম্নে চালনা করিলে যে সূত্র হয়, তাহাকে তিনবার বেষ্টন করিয়া গ্রন্থিবন্ধন করিল যজ্ঞোপবীত সংজ্ঞা হয়। এই প্রকার যজ্ঞোপবীত ব্রাহ্মণেরা ধারণ করিবে, ক্ষত্রিয়েরা ঐ প্রকার শণ-সূত্রের উপবীত করিবে এবং বৈশ্যেরা ঐ রূপ মেষলোমের উপবীত করিবে। ৪৪

দণ্ডধারণ বিধি

ব্রাহ্মণো বৈল্বপালাশৌ ক্ষত্রিয়ো বাটখাদিরৌ।
পৈলদৌদুম্বরৌ বৈশ্যো দণ্ডানর্হন্তি ধৰ্ম্মতঃ।। ৪৫।।
কেশান্তিকো ব্রাহ্মণস্য দণ্ডঃ কাৰ্য্যঃ প্রমাণতঃ।
ললাটসম্মিতো রাজ্ঞঃ স্যাত্ত নাসান্তিকো বিশঃ।। ৪৬।।
ঋজবস্তে তু সৰ্ব্বে স্যুরব্রণাঃ সৌম্যদর্শনাঃ।
অমুদ্বেগকরা নৃণাং সত্বচোহনগ্নিদূষিতাঃ।। ৪৭।

ব্রাহ্মণ-ব্রহ্মচারী বিল্ব অথবা পলাশের দণ্ড, ক্ষত্রিয়-ব্রহ্মচারী বট অথবা খরিদের দণ্ড এবং বৈশ্য-ব্ৰহ্মচারী পীলু অথবা উড়ুম্বরের দণ্ড ধারণ করিবে। ৪৫

কেশ পর্য্যন্ত প্রমাণে ব্রাহ্মণের দণ্ড করিতে হয়, ক্ষত্রিয়দিগের ললাট পর্যন্ত এবং বৈশ্যদিগের নাসা পৰ্য্যন্ত প্রমাণে দণ্ড করিতে হয়। ৪৬

ব্রাহ্মণাদির দণ্ডগুলি সরল হইবে, কোন স্থানে কোন ক্ষতচিহ্ন থাকিবে না, ত্বকযুক্ত হইবে, অগ্নি দ্বারা দূষিত হইবে না, দেখিতে এমনই সুন্দর হইবে, যেন দর্শনমাত্র মনুষ্যদিগের মনে কোনরূপে ভয়ের উদয় না হয়। ৪৭

ভিক্ষাগ্রহণ-বিধি

প্রতিপৃহ্যেপ্সিতং দণ্ডমুপস্থায় চ ভাস্করম্।
প্রদক্ষিণং পরীত্যাগ্নিং চরেদ্ভৈক্ষং যথাবিধি।। ৪৮।।
ভবৎপূর্ব্বং চরেদ্ভৈক্ষমুপনীতো দ্বিজোত্তমঃ।
ভবন্মধ্যস্ত রাজস্যো বৈশ্যস্তু ভবদুত্তরম্।। ৪৯।।
মাতরং বা স্বসারং বা মাতুৰ্ব্বা ভগিনীং নিজাম্।
ভিক্ষেত ভিক্ষাং প্রথমং যা চৈনং নাবমানয়েৎ।। ৫০।।
সমাহৃত্য তু তদ্ভৈক্ষ্যং যাবদন্নমমায়য়া।
নিবেদ্য গুরবেহশ্নীয়াদাচম্য প্রাঙ্খ খঃ শুচি।।৫১।।

ইঁহারা মনোমত ঐ দণ্ড ধারণ করিয়া সূৰ্য্যদেবের উপস্থান করিবেন, পরে অগ্নি প্রদক্ষিণ করিয়া বিধানানুসারে ভিক্ষা করিবেন। ৪৮

ব্রাহ্মণ-ব্রহ্মচারী উপনীত হইয়া ভবৎ শব্দের উচ্চারণ পূৰ্ব্বক ভিক্ষা যাত্রা করিবে, অর্থাৎ “ভবতি ভিক্ষাং দেহি” এই কথা বলিবে। ক্ষত্রিয়ের ভবৎ শব্দ মধ্যে করিয়া ভিক্ষা করিবে, অর্থাৎ “ভিক্ষাং ভবতি দেহি” এই কথা বলিবে। বৈশ্যে্রা শেষে ভবৎ শব্দের প্রয়োগ করিবে, অর্থাৎ “ভিক্ষাং দেহি ভবতি” এই কথা বলিবে। ৪৯

ইহারা প্রথমে মাতা বা ভগিনী কিম্বা মাতার সহোদর অথবা যে স্ত্রী ব্রহ্মচারীকে প্রত্যাখ্যান দ্বারা অবমাননা না করেন, তাহাদিগের নিকট ভিক্ষা যাঞ্চা করিবে। ৫০

উপনীত ব্রাহ্মণাদি এইরূপে ভিক্ষা সংগ্ৰহ করিয়া যে পরিমাণ অন্নে তৃপ্তি হইতে পারে, ছলশূণ্য মনে ততগুলি অন্ন গুরুকে নিবেদন করিা আচমন পূর্বক পূৰ্ব্বমুখে শুদ্ধভাবে ভোজন করিবে।। ৫১।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *