০৬. যয়নব ও জানোয়ার: মুহাম্মদের সঙ্গে যয়নবের স্বর্গীয় বিবাহ এবং যায়িদের জীবন ধ্বংস

অধ্যায়-৬
যয়নব ও জানোয়ার: মুহাম্মদের সঙ্গে যয়নবের স্বর্গীয় বিবাহ এবং যায়িদের জীবন ধ্বংস
লেখক: মুমিন সালিহ

অনৈতিক যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্য কীভাবে আল্লাহ্‌ মুহাম্মদের পুত্রবধূ যয়নবের সঙ্গে তার বিবাহকে অনুমোদন দিয়েছিলেন; এই স্বর্গীয় বিধানের নাটকের মাধ্যমে কীভাবে এই বিবাহ ছিল যয়নবের প্রাক্তন স্বামী যায়িদের জন্য জীবন ধ্বংসকারী অভিজ্ঞতা; এবং কীভাবে মুহাম্মদ পৃথিবী থেকে যায়িদের দ্রুত প্রস্থানের ব্যবস্থা করেন।

যয়নব মুহামমদের অন্য স্ত্রীদেরকে বলেন, “তোমাদের বিবাহের ব্যবস্থা করেছিলেন তোমাদের পিতারা, কিন্তু আমার জন্য বিবাহ ঠিক করেছিলেন সাত আসমানের উপর থেকে আল্লাহ্‌।” উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা যয়নব অন্যান্য নারীর তুলনায় তার শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করেছেন। বস্তুত আল্লাহ্‌ তার বিবাহ ও পারিবারিক জীবন নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছিলেন অন্য কোন নারী সেই ধরনের সুযোগ পায় নাই। যয়নবের বিবাহের বিষয়টি ফলক এবং কুরআনে সযত্নে লিপিবদ্ধ করা আছে। যয়নবের স্বর্গীয় বিবাহ ব্যক্তিগত ব্যাপার মাত্র ছিল না। কারণ এটা এখন পর্যন্ত মুসলমানদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। মুহামমদের যৌন বাসনাকে পরিতৃপ্ত করার প্রয়োজনে আল্লাহ্‌কে দত্তক গ্রহণের অত্যন্ত উন্নত প্রথাকে নিষিদ্ধ করতে হয়েছিল এবং তার পরিবর্তে নৈতিকভাবে এমন একটি নিকৃষ্ট বিধান চালু করতে হয়েছিল যাতে করে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নারীর বক্ষদুগ্ধ পান করতে পারে। এই কাহিনীর আরেকটি ফল হচ্ছে মুসলমানরা এখন পর্যন্ত “পর্দা (হিজাব) আয়াত” সম্পর্কে হতবুদ্ধি এবং বিভক্ত, যেটা কিনা নারীদেরকে ইসলামের অন্ধকার গহ্বরে আবদ্ধ রেখেছে। কুরআন এবং নবীর বিখ্যাত জীবনীগুলিতে যে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি ভালভাবে লিপিবদ্ধ আছে এবং যেগুলির যথার্থতা সম্পর্কে কোন মুসলমান প্রশ্ন করতে পারে না এই নিবন্ধে সেগুলি উল্লেখ করা হবে। অবশ্য বিশ্লেষণটা আমার এবং এটা বিখ্যাত ইসলামী প্রেম অথবা আরও ভালভাবে বললে ইসলামী লালসার কাহিনীকে বোঝার চেষ্টা।যয়নব বিন্‌তু জাহ্‌শ তার মায়ের দিক থেকে মুহামমদের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। যয়নব মুহামমদের চাইতে তেইশ বৎসরের ছোট ছিলেন। মক্কা থাকাকালীন সময়ে মুহামমদ তাকে তার অল্প বয়স থেকেই অনেক বার দেখেছিলেন এবং তার সৌন্দর্য লক্ষ্য করেছিলেন। এ কারণেই মুহামমদ তাকে যায়িদের স্ত্রী হিসাবে পছন্দ করেছিলেন বলে মনে হয়।

যায়িদ ইব্‌ন হারিথা একজন আরব দাস ছিলেন, যাকে মুহামমদের প্রথম স্ত্রী খাদিজাকে উপহার হিসাবে দেওয়া হয়। খাদিজার মৃত্যুর পর মুহামমদ যায়িদকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেন এবং যেহেতু তিনি তাকে খুব পছন্দ করতেন সেহেতু তিনি যায়িদকে দত্তক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন।

দত্তক প্রথাকে আরবরা খুব সমমানের সঙ্গে দেখত। আরবের প্রথানুযায়ী দত্তক সন্তানরা পিতা-মাতার আপন সন্তানদের ন্যায় অধিকার ভোগ করত। যায়িদ তার প্রভুর প্রতি দৃষ্টান্তমূলক বাধ্যতা ও আনুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন এবং তার সেবায় অসাধারণভাবে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। বিনিময়ে মুহামমদও যায়িদের প্রতি সদয় ছিলেন, এবং এই সদয়তার পরিমাণ এত বেশী ছিল যে পরিণতিতে মুহামমদ তাকে তার পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন।

৬২৯ খ্রীষ্টাব্দের দিকে মদীনায় যায়িদ এবং যয়নবের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় মুহামমদ আরবের একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা কিছু সংখ্যক বক্তব্য অনুযায়ী দাবী করা হয় যে, যয়নব এবং তার ভাই যায়িদের তুলনায় যয়নবের শ্রেণীগত অবস্থানের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে যায়িদের সঙ্গে যয়নবের বিবাহে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এসব বক্তব্যে এও দাবী করা হয় যে, যয়নব প্রকৃতপক্ষে যায়িদের পরিবর্তে মুহামমদের সঙ্গে বিবাহে আগ্রহী ছিলেন। মদীনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে মুহামমদের সঙ্গে বিবাহের ব্যাপারে যয়নবের যে ইচ্ছা থাকতে পারে সেটা বোধগম্য। কিন্তু শ্রেণীগত বিষয়টি সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ আছে। কারণ দত্তক হবার সঙ্গে সঙ্গে যায়িদ আপনা আপনি তার পালক পিতার সামাজিক শ্রেণী মর্যাদা লাভ করেছিলেন। উপরন্তু যায়িদ আফ্রিকান দাস ছিলেন না, বরং ছিলেন একজন আরব যুদ্ধবন্দী।

যায়িদ ও যয়নবের বিবাহ সম্পন্ন হবার পর স্বামী-স্ত্রী মদীনায় তাদের নিজ বাসগৃহে বাস করতেন। একদিন যখন যায়িদ বাড়ীর বাইরে ছিলেন তখন অপ্রত্যাশিতভাবে মুহামমদ তাদের বাসগৃহে আসেন। মুহামমদ যখন দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন দরজার হাল্কা পর্দা বাতাসের দোলায় আন্দোলিত হয়ে ঘরের ভিতরে থাকা যয়নবের প্রায় নগ্ন দেহ দেখতে পান। মুহামমদ প্রায় উলঙ্গ সুন্দরী যয়নবের দেহসৌষ্ঠব দেখে হতচকিত হন এবং এই মন্তব্য করে চলে যান, “সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র, হৃদয় যেভাবে চায় তিনি সেভাবে বদলে দিতে পারেন।” মুহামমদ যখন যয়নবকে যায়িদকে বিবাহ করতে বলেছিলেন সেই সময়ের মুহামমদের অনুভব থেকে এই “প্রার্থনা”-এর অর্থ ভিন্ন। অন্য কথায় তিনি তার প্রতি অতীতে আকৃষ্ট ছিলেন না, কিন্তু এখন আকৃষ্ট। যয়নবের কী পরিবর্তন হয়েছিল যা মুহামমদকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল? সপষ্টতই মুহামমদ যখন যয়নবের দিকে উঁকি মেরেছিলেন তখন তিনি তার ব্যক্তিত্বে কোন পরিবর্তন দেখেন নাই। যেটা দেখেছিলেন সেটা হচ্ছে যৌন আবেদনময় দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী এক প্রায় নগ্ন নারীকে। যাবার সময় মুহামমদ যা বলেছিলেন সেটা সহ যে ঘটনা ঘটেছিল যয়নব সেটা তার স্বামীকে বলেছিলেন।

বেশীর ভাগ সংসারে একই পরিবারের নারী এবং পুরুষ সদস্যরা কখনো কখনো একে অন্যকে বিব্রতকর অবস্থা বা পরিস্থিতিতে দেখে ফেলে। যারা এ ধরনের ঘটনা দেখে তারা সেগুলিকে উপেক্ষা করে অথবা সম্পূর্ণরূপে ভুলে যাবার চেষ্টা করে যাতে এগুলির কোন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব তাদের জীবনে না পড়ে। যয়নবের দরজায় যে ঘটনাটি ঘটেছিল মুহামমদ ছাড়া অন্য কোন লোক হলে দূর প্রসারী কোন ফলাফল ছাড়াই সেটি শেষ হয়ে যেত।

উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলিতে এবং অন্যান্য কিছু সংখ্যক মুসলিম রাষ্ট্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে মেলামেশার পথ কঠোরভাবে বন্ধ করে রাখার ফলে কিছু সংখ্যক মুসলমান বন্য জানোয়ারের মত আচরণ করে। উদাহরণ স্বরূপ সৌদী আরবে একজন নারীর পা দেখে পুরুষরা যৌন উত্তেজনা বোধ করতে পারে। অস্ট্রেলীয় ইমাম তাজ আল-হিলালী সারা শরীর কাপড় দিয়ে না ঢাকা নারীদেরকে আবরণহীন মাংস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অন্য কথায় তারা হচ্ছে শিকারীর জন্য লোভনীয় খাদ্য। যাইহোক, এটা কল্পনা করা কষ্টকর যে পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন পুরুষ যার আছে বহুসংখ্যক স্ত্রী এবং যৌনদাসী, তিনি তার স্বল্প-বসনা পুত্রবধূকে দেখে যৌন দানবে পরিণত হতে পারেন।

নিজের পুত্রবধূকে দুর্ঘটনাবশত অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় দেখা একজন পুরুষের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়, এবং এতে যেহেতু কারো দোষ নাই সেহেতু যায়িদেরও এতে আতঙ্কিত হবার কিছু ছিল না। কিন্তু যায়িদ এমন কিছু জানতেন যা অন্য কেউ জানত না। যায়িদ সারা জীবন মুহামমদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন এবং মক্কায় যখন তিনি গুরুত্বহীন ব্যক্তি ছিলেন তখন থেকে আরবের এক দুর্দান্ত যুদ্ধবাজ নেতায় পরিণত হওয়া পর্যন্ত তাকে দেখে আসছিলেন, যিনি আল্লাহ্‌র সঙ্গে নিজের সংযোগের দাবী করতেন। যায়িদ মনোবিশ্লেষক ছিলেন না, তিনি এটাও জানতেন না যে, কেন আল্লাহ্‌ তার প্রভুকে রাসূল হিসাবে মনোনীত করেছিলেন। মুহামমদের সাফল্য যায়িদকে অবশ্যই অভিভূত করেছিল। মুহামমদের অস্বাভাবিক চরিত্র-বৈশিষ্ট্যগুলোকে কীভাবে মেলাতে হবে তা যায়িদ জানতেন না। যায়িদ সম্ভবত মনে করতেন মুহামমদের সকল বৈশিষ্ট্যই আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত। দাস হিসাবে এবং পুত্র হিসাবে মুহামমদকে দীর্ঘদিন সেবা করার মধ্য দিয়ে মুহামমদের চরিত্র সম্পর্কে যায়িদের যথেষ্ট ভাল ধারণা জন্মেছিল। তিনি জানতেন মুহামমদ কী পছন্দ করতেন এবং কীভাবে চিন্তা করতেন এবং মুহামমদের ব্যক্তিত্বের মধ্যে যে যৌন দানব নিহিত ছিল সে সম্পর্কেও তিনি জানতেন। যায়িদ এটা ভালভাবে জানতেন যে, মুহামমদ যখন একবার যয়নবের নগ্ন দেহসৌষ্ঠব দেখেছেন এবং ঐ কথাগুলি উচ্চারণ করেছেন তখন পৃথিবীর কোন শক্তির সাধ্য নাই যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা থেকে তাকে বিরত করতে পারে। যায়িদের জন্য পরিস্থিতিটা এমন ছিল যে , এই লড়াইয়ে তার পক্ষে যাওয়াই সম্ভব না।

যায়িদ মুহামমদের প্রকৃতি সম্পর্কে এতটাই ওয়াকিবহাল ছিলেন যে, আরবের সাধারণ মানুষের জন্য যেটা অচিন্তনীয় ছিল সে ধরনের কথা তিনি মুহামমদকে বলতে সাহস করেছিলেন। যায়িদ আতঙ্কিত হয়ে মুহামমদকে খুঁজে বের করেন। মুহামমদ তখনও যয়নবের কল্পনায় বিভোর। যায়িদ খোলাখুলি তার পালক-পিতাকে বললেন, “হয়ত আপনি যয়নবকে পছন্দ করেছেন। সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য আমি তাকে ত্যাগ করছি।” এ কথা শুনে মুহামমদ উত্তর দিলেন, “তুমি তোমার স্ত্রীকে রাখ।” অবশ্যই যায়িদ যয়নবকে মুহামমদ যে একজন ব্যক্তি হিসাবে পছন্দের পরিবর্তে যৌন সামগ্রী হিসাবে পছন্দ করেছিলেন সে কথা বুঝিয়েছিলেন।

কোন ঘটনা একটা মানুষকে আতঙ্কিত করতে এবং যেহেতু তার ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় দেখেছে সেহেতু তাকে তার নিকট সমর্পণের প্রস্তাব দিতে পারে? এ কথা ভেবে আমি বিস্ময়াভিভূত হই যে, কী পরিমাণ ভয় পেলে যায়িদের মত একজন তুচ্ছ মানুষ আল্লাহ্‌র নবী এবং মদীনার প্রধানের নিকট এই ধরনের অনৈতিক, আপত্তিকর ও অনুচিত প্রস্তাব দিবার সাহস সঞ্চয় করতে পারেন। যে কেউ এই আশা করবে যে, এই ধরনের অনৈতিকভাবে আপত্তিজনক প্রস্তাবে মুহামমদ ক্ষিপ্ত হবেন, কিন্তু তিনি এমনভাবে উত্তর দিলেন যেন তাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়েছিলঃ “তুমি তাকে রাখতে পার। (অবশ্য তুমি যদি চাপচাপি কর তবে আমি এটা নিব…)।”

যায়িদ এ কথা কেবলমাত্র অনুমান করেন নাই যে, সম্ভবত মুহামমদ যয়নবের দেহসৌষ্ঠব পছন্দ করেছিলেন, তিনি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত ছিলেন যে, মুহামমদ তার সুন্দর দেহসৌষ্ঠব দ্বারা মোহাচ্ছন্ন হয়েছিলেন। অন্যথায় যাহিদ মুহামমদের নিকট তার পুত্রবধূকে নিতে বলার সাহস পেতেন না। অনুরূপভাবে যয়নবের প্রতি মহামমদের লালসা কতখানি গড়ে উঠেছিল সে সম্পর্কে যায়িদ সুনিশ্চিত ছিলেন, তা না হলে তার স্ত্রীর সঙ্গে মুহামমদের যৌন সঙ্গমের পথ করে দিবার জন্য তার স্ত্রীকে তালাক দিবার প্রস্তাব দিতে সাহস করতেন না।

যায়িদ সম্পূর্ণরূপে সচেতন ছিলেন যে, মুহামমদ যে জিনিস চান সেটা পাবার পথে যে ব্যক্তি প্রবিন্ধক হবার সাহস করবে তাকে ধ্বংস করার মত সামর্থ্য মুহামমদের আছে। তা না হলে যাকে তার রক্ষা করার কথা তাকে কখনই তিনি হস্তান্তরের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারতেন না।যায়িদ নিশ্চিত ছিলেন যে, মুহামমদ তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবেনই। অন্যথায় তখন পর্যন্ত মুহামমদ আরবদের দ্বারা শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুসৃত দত্তক প্রথার যে আইনকে স্বীকৃতি দিতেন সেটাকে কলঙ্কিত করার প্রস্তাব দিবার সাহস যায়িদ করতেন না।

সেই মুহূর্ত থেকে যায়িদ জানতেন যে, যয়নবের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার জন্য যা প্রয়োজন তা-ই মুহামমদ করবেন। এটার জন্য আরবের সুপ্রতিষ্ঠিত আইন এবং ঐতিহ্য যদি ভাঙ্গতেও হয় তবে তাতেও মুহামমদ দ্বিধা করবেন না।

তিন দশকের অধিককাল যাবৎ মুহামমদের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে বাস করার ফলে যায়িদ মুহামমদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে নিজস্ব মনোবিশ্লেষণ গড়েছিলেন। মুহামমদের উদারতা এবং দয়া সব সময়ই একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিচালিত হত। যায়িদের ক্ষেত্রে মুহামমদের যে দয়া এবং উদারতা ছিল তার কারণ ছিল মুহামমদের প্রতি যায়িদের অসাধারণ নিবেদন এবং সর্বাত্মক আনুগত্য। যায়িদ জানতেন যে তিনি মুহামমদের দত্তক পুত্র হলেও সেটার উপর খুব বেশী নির্ভর করা যাবে না, কারণ ঐ সম্পর্কের বন্ধন দিয়ে যে যৌন দানব মুহামমদ ছিলেন তাকে সংযত করা যাবে না।

যয়নবের প্রতি মুহামমদের যৌনাকাঙ্ক্ষা হঠাৎ করে উদিত হয় নাই। মুহামমদ তখনও যয়নবকে নিয়ে তার কল্পনায় বিভোর ছিলেন। তিনি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হলেন যে, যয়নবকে পাওয়া যায়িদের জন্য খুব বেশী হয়ে যায়। অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য মুহামমদ যেমন আল্লাহ্‌কে ব্যবহার করেছেন এ ক্ষেত্রেও তাকে সে কাজ করতে হল।

একদিন বিকালে মুহামমদ আয়েশার ঘরে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময় কিছুক্ষণ তিনি চোখ বন্ধ করে রইলেন। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তিনি তখন যয়নবের দেহসৌষ্ঠবের কথা কল্পনা করছিলেন। অতঃপর একটি সমাধান উদ্ভাবন করে আকস্মিকভাবে চোখ খুললেন। চোখ খোলার পর মুখে হাসি এনে বললেন, “কে যয়নবের কাছে যাবে এবং তাকে সুসংবাদ দিবে? তাকে বিবাহ করার জন্য আল্লাহ্‌ আমাকে আদেশ করেছেন।”

এটাই হচ্ছে তা যা আল্লাহকে বলতে হয়েছেঃ(কুরআন- ৩৩ঃ৩৭) “স্মরণ কর, আল্লাহ্‌ যাহাকে অনুগ্রহ করিয়াছেন এবং তুমিও যাহার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছ, তুমি তাহাকে বলিতেছিলে, ’তুমি তোমার স্ত্রীর সহিত সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহ্‌কে ভয় কর।’ তুমি তোমার অন্তরে যাহা গোপন করিতেছ আল্লাহ্‌ তাহাকে প্রকাশ করিয়া দিতেছেন; তুমি লোকভয় করিতেছিলে, অথচ আল্লাহ্‌কেই ভয় করা তোমার পক্ষে অধিকতর সঙ্গত। অতঃপর যায়িদ যখন যয়নবের সহিত বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করিল, তখন আমি তাহাকে তোমার সহিত পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করিলাম, যাহাতে মুমিনদের পোষ্য পুত্রগণ নিজ স্ত্রীর সহিত বিবাহসূত্র ছিন্ন করিলে সেই সব রমণীকে বিবাহ করায় মুমিনদের কোন বিঘ্ন না হয়। আল্লাহ্‌র আদেশ কার্যকরী হইয়াই থাকে।”

কুরআনের মূল আরবী ভাষ্যের অমার্জিত রূপকে ঢাকবার জন্য সাধারণত গুরুতর এবং ইচ্ছাকৃত ভুল অনুবাদ করা হয়। উপরোক্ত অনুবাদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ইউসুফ আলী, পিকথাল এবং অন্য অনুবাদকরা আরবী শব্দ “ওয়াতারা” – এই শব্দের মধ্যেই তারা নিজেদেরকে নিবদ্ধ রেখেছিলেন যার অর্থ হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া, প্রয়োজন। “বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো” এবং “বিবাহ বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা” সম্পর্কে যে সব কথা লেখা হয় সেগুলি পড়ে আমি না হেসে পারি না। মুহামমদের সময় কী ধরনের আনুষ্ঠানিকতা জানা ছিল?

আরও নির্ভুল অনুবাদ হওয়া উচিত ছিল, “যখন যায়িদ তার কাছে যা চেয়েছিল তা পাওয়া শেষ করেছিল”। একটি মানুষের কাছে স্ত্রীর প্রয়োজন হয় সারা জীবনের জন্য। সফল বিবাহের জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নাই যে, সে তার স্ত্রীকে বলতে পারে, “তোমার কাছে যা পাওয়ার ছিল তা পাওয়া হয়েছে।” একমাত্র যৌন প্রয়োজন পূরণের পরে এ কথা বলা যেতে পারে। খুব সহজ ভাষায় উপরের আয়াতে বলা হচ্ছে, “যেহেতু যয়নবের কাছ থেকে যায়িদের যা পাওয়ার ছিল তা পেয়েছে সেহেতু এখন তোমার পালা।”

উপরের আয়াতে যেটা লক্ষণীয় সেটা হচ্ছে সমগ্র ঘটনার যে সবচেয়ে বড় বলি সেই যায়িদের প্রতি হৃদয়হীনভাবে মুহামমদের অতীতের অনুগ্রহকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। এই আয়াতে সাধারণভাবে নারী এবং বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতি সপষ্টভাবে শ্রদ্ধাহীনতা প্রকাশ পেয়েছে। কারণ এই আয়াতে যে কথাটি বলতে চাওয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে এই যে, যায়িদের সঙ্গে যয়নবের যে বিবাহ হয়েছিল তা ছিল কেবলমাত্র যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য। এই আয়াতের মধ্য দিয়ে যয়নব সম্পর্কে মুহামমদের মানসিকতা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তার অসততা ধরা পড়েছে এবং তিনি যেভাবে যয়নবকে কেবলমাত্র একটি যৌন সামগ্রী হিসাবে পেতে চেয়েছিলেন যয়নব যে সেটা ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন যায়িদের প্রেমময়ী স্ত্রী সেই বিষয়টি বুঝতেও মুহামমদের অক্ষমতা।

উপরোক্ত আয়াতে “তুমি লোকভয় করিতেছিলে, অথচ আল্লাহকে ভয় করাই তোমার পক্ষে অধিকতর সঙ্গত” ু এই কথাটি আরেকটি যৌক্তিক এবং বিব্রতকর প্রশ্নের উদ্রেক করে যার কোন যথাযথ উত্তর পাওয়া যায় না। আল্লাহ্‌র চেয়ে লোকজনকে বেশী ভয় করা মুসলমানদের জন্য পাপ। মুহামমদের ক্ষেত্রে এই পাপ দ্বারা “ইস্‌মা” অর্থাৎ নবী হিসাবে তার চরিত্রে কোন ত্রুটি নাই এই ধারণা প্রশ্নের সমমুখীন হয়। যাইহোক, মুসলমানরা যারা কুরআনে শুধুমাত্র অলৌকিকতা দেখতে পায় তারা এই প্রশ্নকে এইভাবে ব্যাখ্যা করে, “এই আয়াত এমন একটি অলৌকিক ঘটনা যা প্রমাণ করে কুরআন আল্লাহ্‌র নিকট থেকে এসেছে; কারণ মুহামমদ যদি কুরআন রচনা করতেন তবে তিনি সেখানে এমন কিছু লেখতেন না যা তাকে তার সঙ্গে জড়িত করে।” কুরআন যে মুহামমদের নিজের চিন্তার সোচ্চার প্রকাশ এই ধারণা মুসলমানরা গ্রহণ করে না। মানুষের নিকটি এটা স্বাভাবিক যে, যখন তারা বোঝে তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ভর্ৎসনা করে। জনমতের ভয়ে যয়নবকে নিজের জন্য পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করার জন্য মুহামমদ নিজে নিজেকে ভর্ৎসনা করেছিলেন।

যয়নবের বিষয়টি এমন একটি সপর্শকাতর ইসলামী বিষয় যা নিয়ে মুসলমানরা আলোচনা বা তর্ক করা তেমন একটা পছন্দ করে না। তারা নিজেদের বিশ্বাসের সমর্থনে এই যুক্তি উপস্থিত করে যে, এই ঘটনার তাৎপর্য হচ্ছে দত্তক পুত্রদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদেরকে বিবাহ করার ক্ষেত্রে আরবে যে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্য ছিল সেটার অবসান ঘটানো। এ প্রসঙ্গে আরবের একটি পুরানো প্রবাদ মনে পড়ছে আর তা হচ্ছে  “অপরাধের চেয়ে অজুহাত বেশী খারাপ।” মুসলমানরা নির্বাক হয়ে যায় যখন তাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে সমাজের জন্য ক্ষতিকর এ রকম একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা না ঘটিয়ে আল্লাহ্‌ নূতন বিধান প্রবর্তন করে ওহী নাজিল করতে পারতেন; অবশ্য আমরা যদি ধরে নিই যে পুরাতন বিধানটা খারাপ ছিল, যদিও বাস্তবে সেটা তা ছিল না।

মুহামমদ যতগুলি বিবাহ করেছিলেন সেগুলির মধ্যে একমাত্র এইটিকেই সবচেয়ে বেশী গুরুত্বের সঙ্গে উদযাপন করেছিলেন অথবা এইটিই ছিল একমাত্র বিবাহ যে বিবাহ উপলক্ষ্যে তিনি ভোজের আয়োজন করেন। এক বৃহৎ সংখ্যক অতিথি এই বিবাহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয় এবং বিবাহের ভোজন পর্বটি চলে কয়েক দিন ধরে। মুহামমদ তার এই উদারতার জন্য পরে হয়ত দুঃখ করেছিলেন, কারণ একদিন দেখলেন সকল অতিথি খেয়ে চলে গেলেও তিনজন অতিথি থেকে গিয়েছিল। মুহামমদ তার স্ত্রীদেরকে দেখতে অল্প সময়ের জন্য ঘরের ভিতর গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা তখনও গল্পে মত্ত আছে। মুহামমদ তখন যয়নবকে বিছানায় নিয়ে যাবার জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু কাণ্ডজ্ঞানহীন অতিথিরা তার মূল্যবান সময় নষ্ট করছিল। অতিথিরা কখন যাবে তার জন্য মুহামমদ যখন অধীরভাবে অপেক্ষা করছিলেন তখন মুহামমদ নিশ্চয় সেই দিনটির কথা স্মরণ করছিলেন যখন তিনি যয়নবকে অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় দেখেছিলেন। তিনি সেই মৃদুমন্দ বাতাসের দোলার কথা স্মরণ করলেন যার আঘাতে হালকা পর্দা সরে গিয়ে যয়নবের সুন্দর শরীর তার সামনে উন্মোচিত হয়েছিল, যার ফলে তিনি যয়নবের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। হঠাৎ এ কথা ভেবে মুহামমদ শঙ্কিত হয়ে পড়লেন যে, তার পরিবর্তে এই অতিথিদের ক্ষেত্রেও তো তা ঘটতে পারে! তারাও তো তার স্ত্রীদেরকে ঐ রকম স্বল্পবসনা অবস্থায় দেখে ফেলতে পারে! বাতাসের দোলায় উন্মুক্ত হবে না এমন ভারী পর্দা দ্বারা মুহামমদ যয়নব এবং তার অন্য স্ত্রীদেরকে ঢেকে রাখবার সিদ্ধান্ত নিলেন। শুধু সেই লোকগুলিকে বিদায় দিবার জন্যই নয় উপরন্তু তার কোন অনুসারীই যাতে করে তার ঘরের ভিতরে থাকা স্ত্রীদের প্রতি উঁকি দিতে না পারে এবং তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদেরকে যাতে কেউ বিবাহ করতে না পারে সেই জন্য তিনি ওহী চাইলেন। আল্লাহ্‌ও মুহামমদের আহ্বানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এবং তিনি মুসলিম নারী জাতির জন্য দূর প্রসারী ফলাফল সম্পন্ন ওহী নাজিল করলেন:

(কুরআনঃ ৩৩ঃ৫৩) – “হে মুমিনগণ! তোমাদিগকে অনুমতি দেওয়া না হইলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করিয়া ভোজনের জন্য নবী-গৃহে প্রবেশ করিও না। তবে তোমাদিগকে আহ্বান করিলে তোমরা প্রবেশ করিও এবং ভোজনশেষে তোমরা চলিয়া যাইও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হইয়া পড়িও না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদিগকে উঠাইয়া দিতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু আল্লাহ্‌ সত্য বলিতে সংকোচ বোধ করেন না। তোমরা তাহার পত্নীদের নিকট হইতে কিছু চাহিলে পর্দার অন্তরাল হইতে চাহিবে। এই বিধান তোমাদের ও তাহাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র। তোমাদের কাহারও পক্ষে আল্লাহ্‌র রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সঙ্গত নহে এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহার পত্নীদিগকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনও বৈধ নহে। আল্লাহর দৃষ্টিতে ইহা ঘোরতর অপরাধ।”

উপরোক্ত আয়াতটি হিজাব আয়াত হিসাবে খ্যাত। আরবী হিজাব অর্থ পর্দা। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এই আয়াতের সঙ্গে চুল অথবা মাথার স্কার্ফের কোন সম্পর্ক নাই। যে সব মুসলমান প্রতিদিন কুরআন পড়ে তাদের কয়জন এটা লক্ষ্য করেছে? আমি যতজনের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের কাউকেই এটা লক্ষ্য করতে দেখি নাই।

যায়িদের পরিণতি:এই ঘটনায় নৈতিকতা, আদর্শ, মূল্যবোধ এবং মানবিক সততা সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যায়িদ, কারণ তিনি তার প্রিয়তমা স্ত্রী এবং পারিবারিক জীবন হারিয়েছিলেন। মুহামমদ যয়নবকে যেভাবে শুধুমাত্র যৌন সামগ্রী হিসাবে দেখেছিলেন যায়িদ সেভাবে যয়নবকে দেখেন নাই। যয়নব ছিলেন যায়িদের একমাত্র স্ত্রী ও জীবন সঙ্গিনী। এবং যয়নবই ছিলেন যায়িদের পারিবারিক জীবনের সবকিছু। আল্লাহ্‌ যে তার পরিবারকে ভেঙ্গে ফেললেন, তার ভালবাসার স্ত্রীকে তার নিকট থেকে কেড়ে নিলেন এবং যে মুহামমদের ছিল বহুসংখ্যক স্ত্রী ও যৌন সঙ্গিনী সেই মুহামমদের নিকট যয়নবকে তুলে দিলেন এই  চিন্তা যায়িদের অন্তর্জগতে নিশ্চয় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং এটাকে সামলাবার জন্য তাকে নিশ্চয় নিজের ভিতরে নিজের সঙ্গে অনেকবার লড়াই করতে হয়েছিল। একজন মানুষের যতই ইচ্ছাশক্তি অথবা সহনশীলতা থাকুক না কেন এই ধরনের একটা ঘটনার ধাক্কা যে কোন মানুষকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আল্লাহ্‌ যায়িদকে এইটুকু ভয়ানক শাস্তি দিয়েই ক্ষান্ত হন নাই, উপরন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ পরবর্তী আয়াত হাজির করে যায়িদের উপর আর একটি ধ্বংসাত্মক আঘাত হানলেন:(কুরআন- ৩৩ঃ৪) -“… তোমাদের পোষ্যপুত্রদিগকে তিনি তোমাদের পুত্র করেন নাই…”

যায়িদ তার স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন, কিন্তু এরপরেও তিন দশক ধরে মুহামমদকে পিতা হিসাবে দেখার মধ্য দিয়ে যায়িদের সঙ্গে মুহামমদের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল উপরোক্ত আয়াত দ্বারা সেই সম্পর্কটিকেও চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করা হল। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা যায়িদ একজন পরিত্যক্ত ব্যক্তিতে পরিণত হলেন, যিনি শুধুমাত্র তার স্ত্রী এবং পিতাকেই হারান নাই বরং আরও হারিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ ও সামাজিক মর্যাদা। সম্পূর্ণরূপে ভগ্নহৃদয় এবং আল্লাহ্‌ এবং তার বার্তাবাহক দ্বারা পরিত্যক্ত যায়িদকে এই মিথ্যাকে মেনে নিয়ে সান্ত্বনা পেতে হল যে, তিনিও লাভবান কারণ পবিত্র কুরআনে তার নাম স্থান পেয়েছে। যায়িদের সামনে একটি মাত্র রাস্তা খোলা ছিল, আর তা হল এই সকল ঘটনার অন্তরালে যে ব্যক্তিটি ছিল তার ছায়ার মধ্যে বেঁচে থাকা, তার গুণগান করা এবং তিনি নিজেকে যত ভালবাসতেন তার চেয়েও বেশী তাকে ভালবাসা, যেটাকে আল্লাহ্‌ সকল মুসলমানের নিকট থেকে দাবী করেছেন:(কুরআন- ৩৩ঃ৬) “নবী মুমিনদের নিকট তাহাদের নিজেদের অপেক্ষা বেশী মূল্যবান…।”

মুহামমদ যা কিছু চেয়েছিলেন সে সব পেলেও তার সুখভোগের অনুভূতির ভিতরেও একটি সূক্ষ্ম কাঁটা বিঁধে থেকেছিল। সেটা হচ্ছে যায়িদের বিষণ্ন দৃষ্টি। যয়নবের সঙ্গে বিবাহের পর থেকে যায়িদের অস্তিত্ব ছিল মুহামমদের জন্য মনস্তাত্ত্বিকভাবে পীড়াদায়ক ও গ্লানিকর। এক সময় যে যায়িদ ছিলেন মুহামমদের প্রাণপ্রিয় দত্তক পুত্র তিনি এখন আল্লাহ্‌র নিখুঁত মানুষের পৃথিবীতে অবাঞ্ছিত। যায়িদকে বিদায় নিতে হবে।

৬২৯ খ্রীষ্টাব্দে মুহামমদ যয়িদকে তার শেষ যাত্রায় পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তাকে বর্তমান জর্দানের অন্তর্ভুক্ত মুতায় প্রায় তিন হাজার লোকের একটি ছোট, অপ্রস্তুত এবং সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে গঠিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাঠান। শুরু থেকেই এটা অবধারিত ছিল যে, অভিযানটি ব্যর্থ হবে; কারণ রোমান সেনাবাহিনী ছিল সংখ্যায় এবং অস্ত্রশস্ত্রে শ্রেষ্ঠ। মুহামমদ যায়িদকে পতাকা বহনের দায়িত্ব দেন, যেটা তাকে প্রথমেই শত্রুর লক্ষ্যবস্তু করার জন্য যথেষ্ট ছিল। এই যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীর অসমমানজনক পরাজয়ে অবাক হবার কোন কারণ ছিল না। একইভাবে যুদ্ধে নিহতদের প্রথম সারিতে যারা থাকবেন, যায়িদ যে তাদের একজন হবেন সেটাও অস্বাভাবিক ছিল না।  এখন থেকে মুহামমদ সুখে-শান্তিতে কালাতিপাত করতে থাকলেন।

( নিবন্ধটি মধ্যপ্রাচ্যের ইসলাম বিষয়ক পণ্ডিত, গবেষক ও লেখক Mumin Salih-এর লেখা Zaynab and the Beast: Zaynab’s Divine Marriage to Muhammad & Zaid’s Life-shattering Loss-এর বাংলায় ভাষান্তর। মূল ইংরাজী নিবন্ধটি ইসলাম ওয়াচ (www.islam-watch.org)-এ ১৩ আগস্ট, ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত হয়। নিবন্ধে উদ্ধৃত কুরআনের আয়াতগুলির একটি (৩৩ঃ৬) বাদে বাকীগুলির বাংলা অনুবাদ লেখকের ইংরাজী অনুবাদ থেকে না করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কৃত বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ “আল-কুরআনুল করীম” থেকে নেওয়া। লেখক মুমিন সালিহ্‌-এর ই-মেইল ঠিকানা:  [email protected] )

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *