০২. সাধনপাদ (সাধন পাদ)

সাধনপাদ – পাতঞ্জল দর্শন

তপস্যা, স্বাধ্যায়(১) এবং ঈশ্বর প্রণিধানকেই(২) ক্রিয়াযোগ বলা যায়।।১।।

ঐ ক্রিয়াযোগের অন্তর্গত তপস্যা, স্বাধ্যায় এবং ঈশ্বরপ্রণিধান অভ্যাস করিতে করিতে নানা প্রকার ক্লেশের ক্ষয় হইতে থাকে এবং তৎসঙ্গে সঙ্গে সমাধির অনুকূলশক্তিও বৃদ্ধি হইতে থাকে।।২।।

অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ এবং অভিনিবেশই পঞ্চপ্রকার ক্লেশের পঞ্চনাম।।৩।।

অবিদ্যা হইতেই অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ এবং অভিনিবেশ উৎপন্ন হয়। উহারা সকল সময়ে একভাবে থাকিয়া কখন প্রসুপ্ত (=অব্যক্ত), কখন সূক্ষ্ম, কখন বিচ্ছিন্ন (=বিচ্ছেদবিশিষ্ট), এবং কখন বা উদারভাবে (=উদার ভাব অর্থে ক্রিয়মান ভাব) চিত্তে বিরাজিত রহে।।৪।।

অনিত্যকে নিত্য, অশুচিকে শুচি, দুঃখকে সুখ এবং অনাত্মাকে আত্মাবোধ করাই অবিদ্যা।।৫।।

দৃকশক্তির (=দৃকশক্তি অর্থে আত্মা) সহিত দর্শনশক্তি (=বুদ্ধিতত্ত্বকেই দর্শনশক্তি বলা যায়) অভেদ নয়, অথচ উভয়ে অভেদ বলিয়া যে বোধ হয়, সেই বোধের নামই অস্মিতা।।৬।।

পূর্বানুভুত সুখস্মৃতি অনুসারে, সেইরূপ সুখভোগের পুনরেচ্ছাই রাগ।।৭।।

অনুভূত দুঃখ স্মরণ পূর্ব্বক পুনর্ব্বার আর তাহা ভোগ না করিতে হয়, এরূপ বীতরাগের সহিত তন্নিবারণের যে আন্তরিক চেষ্টা, তাহারই নাম দ্বেষঃ।।৮।।

পুনঃপুনঃ মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করায়, বিদ্বান অবিদ্বান সমস্ত জীবের মনোমধ্যেই সেই সকল মৃত্যুযন্ত্রণা সম্বন্ধীয় রাশি রাশি সংস্কাররূপে স্মৃতি হইতে যে মরিবার অনিচ্ছা স্ফরিত হয়, তাহাকেই অভিনিবেশ বলা যাইতে পারে।।৯।।

ক্রিয়াযোগ প্রভাবে ঐ পঞ্চপ্রকার ক্লেশই নিস্তেজ হইতে থাকে। তৎপরে সমাধি হইলে নিস্তেজ ক্লেশগুলিও অন্তর্হিত হয়।।১০।।

কেবল ধ্যানের দ্বারা ঐ সকল ক্লেশের সুখ, দুঃখ, মোহ প্রভৃতি বৃত্তিগুলি ক্ষীণ হইতে পারে।।১১।।

ক্লেশই দৃষ্টাদৃষ্টজন্মবেদনীয় কর্ম্ম প্রবৃত্তির কারণ। যে সকল ধর্ম্মাধর্ম্ম কর্ম্ম জীবের বর্ত্তমান জন্মে বেদনার কারণ হয়, তাহারাই দৃষ্টজন্মবেদনীয়। আর যাহারা ভবিষ্যত কোন জন্মে বেদনার কারণ হয়, তাহারাই অদৃষ্টজন্মবেদনীয়।।১২।।

ক্লেশ থাকিলেই ক্লেশ হইতে উৎপন্ন কর্ম্মাশয়ের জন্ম, মরণ, জাতি প্রভৃতি বিবিধ ফল ও থাকিবে।।১৩।।

সুখ দুঃখই জাতি এবং জন্ম মরন প্রভৃতির ফল। কারণ উহারা পুণ্যাপুণ্যরূপ কর্ম্মাশয়নামক কারণ হইতে প্রাদুর্ভূত হয়।।১৪।।

বর্ত্তমান পতিতাপরূপ দুঃখ ভবিষ্যত সংস্কাররূপ দুঃখে পরিণত হয় দেখিয়া, ত্রিগুণের পরস্পর বিরোধ ভাব দেখিয়া সুখের পরিণাম দুঃখ এবং দুঃখের পরিণাম সুখ দেখিয়া বিবেকী মহাপুরুষেরা সমস্তই দুঃখ এবং দুঃখের কারণ বলিয়া বিবেচনা করেন। কিন্তু নিদারুণ মোহবশতঃ অবিবেকী ব্যক্তিদিগের ঐ প্রকার ধারণা হয় না।।১৫।।

ভবিষ্যতে আর না দুঃখ হয়, এরূপ চেষ্টা করা কর্ত্তব্য।।১৬।।

আত্মার সহিত বুদ্ধির সংযোগই দুঃখের কারণ।।১৭।।

প্রকারশীল সত্ত্ব, ক্রিয়াশীল রজঃ এবং স্থিতিশীল তমঃ- গুণাত্মক প্রকৃতি এবং সেই প্রকৃতি হইতে উৎপন্ন পঞ্চভূত এবং ইন্দ্রিয়গণ দৃশ্য এবং তাহারা সকলেই দ্রষ্টা পুরুষের ভোগ ও মোক্ষের কারণ হইয়া থাকে।।১৮।।

ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতি বিশেষ অবশেষ, লিঙ্গ এবং অলিঙ্গনামক চতুর্ব্বিধ অবস্থাক্রমে বিকাশিত হন। পঞ্চভূত এবং ইন্দ্রিয়গণই প্রকৃতির বিশেষ অবস্থার অন্তর্গত। অবিশেষ অবস্থার অন্তর্গত সূক্ষ্মতম ভূত সকল এবং অহঙ্কার। প্রকৃতির আদি কার্য্য মহতত্ত্বই লিঙ্গ। শক্তি সমষ্টিস্বরূপ অবিকৃত মূল প্রকৃতিই অলিঙ্গ নামে অবিহিত হন।।১৯।।

বুদ্ধির সহিত একীভূত হইলে অদ্রষ্টা শুদ্ধাত্মাকে দ্রষ্টা বলা হয়। বাস্তবিক তিনি জ্ঞানাদিধর্ম্ম বর্জ্জিত, শুদ্ধ চিন্মাত্রপুরুষ। তাঁহার কোন প্রকার অন্যথা ভাব নাই। কেবল বুদ্ধি সংযোগেই নামা প্রকার পরিণাম ও বিকৃতি সংঘটিত হয়।।২০।।

চতুর্ব্বিধ অবস্থাসম্পন্ন প্রকৃতি নানারূপে পরিণত হইয়া, বুদ্ধি সমন্বিত চিদাত্মার ভোগ্য হইতেছেন। কিন্তু যিনি প্রকৃতির পরিণাম তত্ত্ব অবগত হইয়া সাবধান হইয়াছেন, তাঁহাকে আর প্রকৃতিতে রত হইতে হয় না। তাঁহার পক্ষে প্রকৃতি অদৃশ্য।।২১।।

প্রকৃতিবত্বজ্ঞ বিবেকজ্ঞান সম্পন্ন চিদাত্মার পক্ষে প্রকৃতি অদৃশ্য এবং নষ্ট প্রায় হইলেও অবিবেকী অমুক্ত পুরুষের সম্বন্ধে তিনি অদৃশ্য অথবা নষ্ট প্রায় নন। ঐ প্রকার অবিবেকী অমুক্ত পুরুষকে সম্পূর্ণ অধীনে রাখেন।।২।।

পুরুষ প্রকৃতির পরস্পর সংযোগই উভয়ের স্বরূপ উপলব্ধির কারণ।।২৩।।

অবিদ্যার অভাব হইলে, পুরুষের সঙ্গে প্রকৃতির সংযোগেরও অভাব হয়। সংযোগের অভাব হইলে পুরুষ কেবল শুদ্ধ চিদাত্মা হন, তখন তাঁহার কৈবল্য হয়। কৈবল্যই প্রকৃত মুক্তি।।২৫।।

সত্যজ্ঞান প্রদায়িনী বিবেক প্রসূত প্রজ্ঞাই অবিদ্যা ত্যাগের প্রধান উপায়।।২৬।।

সেই প্রজ্ঞার সাত প্রকার অবস্থা।।২৭।।

কয়েকটি যোগাঙ্গের অনুষ্ঠান প্রভাবে মনোমালিণ্য ক্ষয় হইলে, জ্ঞানদীপ্তিময়ী বিবেকপ্রসূত প্রজ্ঞার আবির্ভাব হয়।।২৮।।

যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান এবং সমাধি, এই অষ্ট প্রকার যোগাঙ্গ।।২৯।।

অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য্য ও অপরিগ্রহকেই যম বলা যায়।।৩০।।

উক্ত পঞ্চ প্রকার যম যদ্যপি জাতি, দেশ, কাল ও সময় কর্ত্তৃক বিচ্ছিন্ন না হইয়া, সর্ব্বাবস্থায় সমানভাবে আচরিত হয়, তাহা হইলে উহাদের এক একটিকে মহাব্রত বলা যাইতে পারে।।৩১।।

শৌচ, সন্তোষ, তপস্যা সাধ্যায় এবং ঈশ্বর প্রণিধান। এই পঞ্চপ্রকার অনুষ্ঠানকেই নিয়ম বলা যায়।।৩২।।

যোগবিঘ্ন হিংসা প্রভৃতি বিতর্ক নিবারণ করিতে হইলে, যোগের অনুকূল অবিতর্ক অহিংসা প্রভৃতির যাহাতে স্ফূরণ হয়, তাহারই চেষ্টা করিতে হয়।।৩৩।।

লোভ, মোহ এবং ক্রোধ বশতঃই নিজ ইচ্ছাক্রমে অপর কাহারো অনুরোধে অথবা নিজ অনুমোদনের দ্বারা হিংসা প্রভৃতি বিবিধ বিতর্ক সম্পাদন করা হইয়া থাকে। ঐ লোভ মোহ এবং ক্রোধ, মৃদু, মধ্য অথবা উগ্রভাবে উৎপন্ন হয়। মৃদুভাবে লোভ, মোহ কিম্বা ক্রোধের উদয় হইলে, হিংসা প্রভৃতি বিতর্কও মৃদু হয়। ঐ সকল মধ্যভাবে উদিত হইলে, হিংসা প্রভৃতি বিতর্কও মধ্য হয়। উহারা উগ্রভাবে উদিত হইলে, হিংসা প্রভৃতি বিতর্কও উগ্র হয়। হিংসা প্রভৃতি বিতর্কবৃত্তি যে কোন প্রকারেই স্ফূরিত হউক না কেন, তাহারা দুঃখ অজ্ঞান এবং ঐ উভয়ের অনন্ত ফল উৎপন্ন করে, এই ভাবে ভাবনার নামই প্রতিপক্ষভাবনা। এই প্রতিপক্ষভাবনাবলে, হিংসাদি বিতর্কনিচয়ের দোষ অনুসন্ধানে ঐ সকল হইতে যে দুঃখ হয়, তাহাদের আলোচনায় সমস্ত বিতর্কেরই নিবৃত্তি হয়।।৩৪।।

যে মহাপুরুষ সম্পূর্ণ হিংসাশূন্য হইয়াছেন, তাঁহার নিকটে হিংস্র বন্য জন্তুরাও হিংসা পরিত্যাগ করে, তিনি হিংস্র জন্তুদিগের সহবাসেও নিরাপদে অবস্থান করিতে পারেন।।৩৫।।

সত্যে প্রতিষ্ঠা জন্মিলে, সত্য ভিন্ন মিথ্যা কথা না কহিলে, বাকসিদ্ধ হয়। কেহ যদ্যপি কখন ভক্তি হইবার কোন অনুষ্ঠান না করিয়া থাকেন, অথচ কোন বাকসিদ্ধ পুরুষ যদি তাঁহার ভক্তি হইবে বলেন, তাহা হইলে সেই ভক্তি প্রাপ্তির অনুকূল কার্য্য সকল না করিয়াও সেই সকল কার্য্যের ফল ভক্তি লাভ করেন।।৩৬।।

সম্পূর্ণরূপে চৌয্য ত্যাগ হইলে, সমস্ত রত্নই প্রাপ্ত হওয়া যায়।।৩৭।।

যিনি নিষ্কাম হইয়াছেন, যিনি জিতেন্দ্রিয় হইয়াছেন, যিনি সর্ব্বোতোভাবে ব্রহ্মচর্য্যে সিদ্ধি লাভ করিয়াছেন, তাঁহার অতুল বিক্রম, অদ্ভূত শক্তিলাভ হইয়াছে। যে শক্তি প্রভাবে কত অলৌকিক কার্য্য করিতে পারেন।।৩৮।।

দৃঢ়রূপে অপরিগ্রহ বৃত্তির স্ফূরএ যখন সর্ব্বত্যাগ হয়, যখন সকল প্রকার ভোগ বিলাশে বীতরাগ হয়, তখন নিজের সকল জন্মবৃত্তান্তই সুগোচর হয়।।৩৯।।

শৌচ সিদ্ধ হইলে, নিজ শরীর পর্য্যন্ত অশুচি বোধ হয়। সেই জন্য নিজ শরীরের প্রতি পর্য্যন্ত ঘৃণা ও বীতরাগ হয়। শৌচসিদ্ধের পর পরসঙ্গেচ্ছাও ত্যাগ হইয়া থাকে।।৪০।।

বাহ্যশৌচ সিদ্ধ হইয়া, পরে অন্তর শৌচ সিদ্ধ হইলে, সত্ত্বশুদ্ধি(৩) হয়। সত্ত্বশুদ্ধি হইতে সৌমনস্য(৪) হয়। সৌমনস্য হইতে একাগ্রতা (=স্থৈর্য্য) হয়। ইন্দ্রিয়জয় হইতে আত্মদর্শন শক্তি (আত্মজ্ঞান) হয়।।৪১।।

পূর্ণ সন্তোষ হইতে উত্তম সুখ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠসুখ লাভ হয়, সুখের অপর নাম দিব্যসুখ।।৪২।।

কঠোর তপস্যা দ্বারা শরীর ও ইন্দ্রিয়গণের অশুদ্ধি ক্ষয় হইলে, শরীর ও ইন্দ্রিয়গণ সম্বন্ধেও সিদ্ধ হওয়া যায়। তখন শরীর ও ইন্দ্রিয়গণকে নিজ বশে আনা যায়। নিজ ইচ্ছানুসারে শরীরকে অতি স্থূল কিম্বা অতি সূক্ষ্ম করা যাইতে পারে। ইন্দ্রিয়দিগকে সুদূরবর্ত্তি অতি সূক্ষ্ম ব্যবহিত পদার্থ নিচয়ে ও নিয়োগ করা যাইতে পারে।।৪৩।।

স্বাধ্যায় সিদ্ধ হইলে, ইষ্টদেবতা সন্দর্শন এবং তাঁহার সহিত সম্ভাষণ ঘটিয়া থাকে।।৪৪।।

ঈশ্বর প্রণিধান(৫) দ্বারা সমাধি হয়।।৪৫।।

যে উপবেশন পদ্ধতি নিশ্চল এবং উদ্বেগশূন্য এবং সুখজনক হয়, তাহাই প্রকৃত আসন।।৪৬।।

স্বভাবতঃ যে সকল পদ্ধতিক্রমে উপবেশন করা হয়, যোগশাস্ত্রীয় উপদেশক্রমে সে সকল পরিহার পূর্ব্বক যোগীদিগের পদ্ধতি অনুসারে আসন অভ্যাস করিতে করিতে অনন্তে মগ্ন হইতে পারিলে, অচৈতন্যবারক তদাত্ম্য (=তন্ময়তা) প্রাপ্তি হয়। তদাত্ম প্রাপ্ত হইলে আসন অভ্যাসে কোন কষ্টবোধই হয় না।।৪৭।।

আসন সিদ্ধি দ্বারা শীত গ্রীষ্মে অভিভূত হইতে হয় না। তদ্বারা ক্ষুৎপিপাসাও ব্যাকুল করিতে পারে না। তাহা প্রাণায়ামের বিশেষ অনুকূল।।৪৮।।

আসন সিদ্ধি বশে শ্বাস প্রশ্বাসের স্বাভাবিক গতির ব্যতিক্রম করিয়া যোগশাস্ত্রমতে রেচক, পূরক ও কুম্ভকের দ্বারা যাহা সমাধা করা যায়, তাহাই প্রাণায়াম।।৪৯।।

একই প্রাণায়াম তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগের নাম বাহ্যবৃত্তি(৬), দ্বিতীয় ভাগের নাম অভ্যন্তরবৃত্তি(৭), তৃতীয় ভাগের নাম স্তম্ভবৃত্তি(৮)। ঐ তিন আবার দীর্ঘ ও সূক্ষ্মরূপে দেশ কাল এবং সংখ্যার দ্বারা সাধিত হইয়া থাকে। রেচক প্রাণায়ামের দেশ বহির্ভাগে, রেচক প্রাণায়াম করিবার সময় বহির্ভাগে রেচিত বায়ু যদি অধিক দূর যায়, তাহা হইলে তাহার নাম দীর্ঘ, অল্পদূরে যাইতে তাহার নাম সূক্ষ্ম। অভ্যন্তরই পূরক ও কুম্ভকস্থান। পূরক ও কুম্ভক করিবার সময় শরীরের মধ্যে সর্ব্বত্রে বায়ু পূর্ণ হইলে, দীর্ঘ বলা যায়। তদ্বিপরীত হইলে সূক্ষ্ম মধ্যে পরিগণিত হয়। কালের দ্বারা ঐ তিন প্রাণায়ামের দীর্ঘতা অথবা সূক্ষ্মতা স্থির করিতে হইলে, ঐ তিনের স্থিতিকাল নির্ব্বাচন করিতে হয়। ঐ দিন অধিক স্থায়ী হইলে উহাদের দীর্ঘ বলা যায়। অল্প স্থায়ী হইলে সূক্ষ্ম। সংখ্যা অনুসারে মন্ত্র জপ দ্বারা ঐ তিনের দীর্ঘতা ও সূক্ষ্মতা নির্ণয় হইতে পারে। নির্দিষ্ট অধিক জপে যে সকল প্রাণায়াম শেষ হয়, সে গুলি দীর্ঘ প্রাণায়াম। অল্প সংখ্যক জপে শেষ হইলে সূক্ষ্ম প্রাণায়াম বলা যাইতে পারে।৫০।।

প্রাণায়াম কর্ত্তা যদ্যপি নিজ শরীরের অন্তর বাহ্য বিশেষ রূপে পর্য্যালোচনা করিয়া উক্ত ত্রিবিধ প্রাণায়ামের অনুষ্ঠান করেন, তাহা হইলে সেই অনুষ্ঠান চতুর্থ শ্রেণির প্রাণায়াম মধ্যে পরিগণিত হইতে পারে।।৫১।।

ঐ চতুর্ব্বিধ প্রাণায়াম অভ্যাস করিতে করিতে যখন সিদ্ধ হওয়া যায়, তখন সর্ব্বশক্তিসম্পন্ন সর্ব্ববস্তুপ্রকাশক বুদ্ধিসত্ত্বের প্রকাশ হয়। বুদ্ধিসত্ত্বের প্রকাশে মানোস্বরূপ অপ্রচ্ছন্ন হইলে, তাহার অদ্ভুত ক্ষমতা হয়। সেই ক্ষমতাবলে ধারণাশক্তি স্ফূরিত হয়।।৫২।।৫৩।।

যে সকল বিষয়ে, যে সকল বস্তুতে ইন্দ্রিয়গণ আসক্ত আছে, সেই সকল বিষয়, সেই সকল বস্তু হইতে তাহাদের বিরত করিয়া সম্যক প্রকারে বিকৃতিবিহীন করিয়া, নির্ব্বিকার চিত্ত স্বরূপের অধীন করার নামই প্রত্যাহার।।৫৪।।

ঐ প্রকার প্রত্যাহার প্রভাবে অবশীভূত ইন্দ্রিয়গণ সম্পূর্ণরূপে বশীভূত হয়।।৫৫।।

।।ইতি সাধন পাদ।।

—————————
১. ঈশ্বরবোধক নানা শব্দের জপ, অধ্যাত্মবিদ্যার অনুশীলন ও বেদাভ্যাসে রত হওয়াকেই স্বাধ্যায় বলি।
২. কামনাশূন্য হইয়া একাগ্রতার সহিত ঈশ্বরকে ভক্তি শ্রদ্ধা করার নামই ঈশ্বরপ্রণিধান।
৩. অপূর্ব্ব সুখপ্রকাশিনী সাত্তিকী বুদ্ধি শুদ্ধি।
৪. সৌমনস্য অর্থে খেদ সম্পর্ক বিহীনা মানসী প্রীতি।
৫. ঈশ্বর প্রণিধান অর্থে ভগবানে চিত্ত নিবেশ। ঈশ্বর প্রণিধানে শুদ্ধভক্তি আছে। সেই শুদ্ধভক্তি বলে ঈশ্বর প্রণিধাতার সমাধি হয়।
৬. যে বৃত্তি দ্বারা আভ্যন্তরিক বায়ু বহির্গত করা হয়, তাহাকেই বাহ্যবৃত্তি বলা যায়। বাহ্য বৃত্তিরই অপর নাম রেচক।
৭. যে বৃত্তি প্রভাবে বহির্বায়ু আকর্ষণ পূর্ব্বক দেহ মধ্যে পূরণ করা হয়, তাহারই নাম অভ্যন্তরবৃত্তি। এই অভ্যন্তরবৃত্তিকেই পূরক বলা যায়।
৮. স্তম্ভবৃত্তি দ্বারা পূরিত বায়ু অন্তরে রোধ করা যায়। ঐ স্তম্ভবৃত্তিরই এক নাম কুম্ভক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *