একজন ঈগলের কথা

বয়সের ভারে জব্দ একজন প্রবীণ ঈগল
গাছের চূড়ায় ব’সে ঝিমোতে ঝিমোতে মাঝে মাঝে
বড় কষ্টে আকাশের নীলে আলগোছে
তাকাচ্ছিলো। কয়েকটি শঙ্খচিল পাখায় ছড়িয়ে
আনন্দ সেখানে উড়ছিলো কাছে ধারে;
মনে হলো, কোথাও অজানা দূরে পৌঁছুনোর সাধ
জন্মেনি ওদের মনে কস্মিনকালেও। এভাবেই
প্রথামতো কাটছিলো দিনরাত পাখির সমাজে।

বয়সী, অসুস্থ ঈগলের মনে অকস্মাৎ কী-যে
ঢেউ খেলে গেলো,
সে তার দুর্বল দু’টি পাখাকে ঝাঁকুনি দিয়ে নীল
আকাশের দিকে মেলে ধরে
এবং মেঘের স্তরে স্তরে ভেসে যেতে থাকে, যেন
গুণীর কণ্ঠের সুললিত তান কোনো মশগুল দরবারে।

ক্রমাগত বেলা বাড়ে, রোদ্দুরের তাপে
ঈগলের ডানা
কেমন ঝলসে যেতে থাকে যেন, তবু পাখিটির
নিজ আস্তানায় ফিরে যাওয়ার তাগিদ
কাঁটা হয়ে বিঁধছে না ওকে। ওড়ার নেশায় তার
ডানা দু’টি বেজায় চঞ্চল, বড় বেশি উড্ডয়নপ্রিয় আজ।
আচানক কী-যে হলো, বুড়ো সেই উড়ন্ত ঈগল ঘুরে ঘুরে
প্রবীণ গাছের নীচে পড়ে যায়। বেশ কিছু পরে
নিষ্প্রাণ ঈগলটিকে পশু, পাখি পিঁপড়ে
ঠুকড়ে ঠুকড়ে, খুঁটে খুঁটে কী দ্রুত সাবাড় করে ফেলে।

সন্ধ্যায় প্রাচীন গাছে শোকের কুয়াশা জমে ওঠে
ব’লে মনে হয়, পক্ষীসমাজ নিস্তব্ধ অতিশয়,
এমনকি বুড়োসুড়ো গাছটি নুয়ে
পড়েছে নিষাদে যেন। বাতাসে কান্নার ছায়া দোলে।

কেন যেন মনে হলো কোত্থেকে প্রবীণ একজন
ঈগল উৎসুক ডানা দু’টি ঝাপটাতে ঝাপটাতে
জ্যোৎস্নাময় মেঘদলে অনুপম ছন্দে ঘুরে ঘুরে
একলা উড়তে থাকে। ওকে যেন খুব চেনা মনে হয়।
৯-৯-২০০৩