খেদমতগারের নির্দেশনামা

শোনও প্রিয় দেশবাসীগণ, তোমরা সবাই
তোমাদের ফুয়েরারের নির্দেশগুলো কান পেতে,
মন দিয়ে শোনও। একটি শব্দও যেন
তোমাদের কান ফস্কে হাওয়ায় মিলিয়ে না যায়।

আমি যা যা বলবো কানে তো বটেই মনেও
নিশ্বাসী, ষোল-আনা নির্ভরযোগ্য সংবাদদাতার ধরনে
স্পষ্টাক্ষরে তুলে নেবে, যাতে একরত্তি
ভুলও না থাকে তোমাদের স্মৃতির পাতায়

প্রত্যহ আমার নির্দেশ মাফিক ভোরবেলা এই সময়ে
তোমরা সবাই ঘুম থেকে উঠবে, সবাই
একই মুহূর্তে প্রাতঃকৃত্য সারবে, ব্রেকফাস্টা করবে,
দ্বিপ্রাহরিক আহার, বৈকালিক নাশ্‌তা আর
নৈশ ভোজন সমাধা করবে। এতে ব্যত্যয় ঘটলে
নারী-পুরুষ নির্বিচারে প্রত্যেকের পিঠে পড়বে
একশো ক’রে বেত্রাঘাত। আমি
সবার কথা শুনবো, কিন্তু সবাইকে মানতে হবে আমারই হিতকথা।

শোনও প্রিয় দেশবাসী, যদি আমি বলি,
বাম দিকে নয়, পুরো ডান দিকে চলতে হবে, তা’হলে
মানতে হবে সেই নির্দেশ। যদি বলি, মাটিতে মাথা রেখে দু’পা
আকাশের দিকে তুলে হাঁটতে হবে বারো ঘণ্টা সেই হুকুম
চটজলদি পালন না করলে নাক ফুটো ক’রে
স্থুল সুতো দিয়ে ছয় ঘণ্টা বেঁধে রাখা হবে খুঁটিতে।
শোনও ভাইসব, বোনগণ, তোমরা তো
ভালো ক’রেই জানো, আমি আমার জিন্দেগি
উৎসর্গ করেছি তোমাদেরই উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্যে,
আমি দিনরাত এক ফোঁটা না ঘুমিয়ে, সামান্য বিশ্রাম
না নিয়েও খেদমত ক’রে যাচ্ছি নির্বিশেষে
তোমাদের সবার। দেখছো তো আমার এই মহান
জনকল্যাণে কেউ বাধা দেয়ার বাসনা মনেমনে
ঠাঁই দিলেও তার কল্লা জল্লাদের খাঁড়ার এক কোপে
ধুলোয় লুটিয়ে দেয়া হয়। কেউ ষড়যন্ত্রের কথা মনে
পুশিদা কোণে ঠাঁই দিলেও, অথবা তিনমাথা
এক জোট হয়ে জমিনের সাত হাত নীচের
কোনও কুঠুরিতে ফিস্‌ফিসিয়ে আমার পথে বিষকাঁটা
বিছানোর প্রস্তাব করলেও রেহাই নেই জালিমদের।

শোনও ভায়েরা, বোনেরা আমার, দেশের
উন্নয়নের এই জ্বলজ্বলে দশকের উদ্দেশে আমরা
আমাদের সবার টুপি খুলে নিই, নামিয়ে ফেলি
ঘোমটা, এসো আমার উন্নয়নের দশকের গুণ গাই,
প্রগতি ও কল্যাণ শোভিত জীবনের গান গাই,
এসো আমার জগৎ-কাঁপানো শাসনের প্রচারে
মুক্তবিহঙ্গ হয়ে নক্ষত্রলোকে অভাবিত মিছিল নিয়ে যাই,
এসো বিশ্বের সর্বোত্তম রাষ্ট্রের বাসিন্দা হিসেবে নৃত্য করি!
১৩-১১-২০০২