কয়েকটি শকুনের হতাশা

লোকটা তৃষ্ণার্ত খুব, এদিক সেদিক হন্যে হয়ে
ঘুরছে, তাকাচ্ছে চারদিকে, যদি কোনো
জলাশয় চোখে পড়ে যায়। ধু-ধু, শুধু
ধু-ধু সব দিক; হায়, তৃষ্ণায় বিশুষ্ক বুক ফেটে যাবে না তো!

আচানক সেই লোক পড়ে যায় একটি গাছের
নিচে এসে, মুখের বিশুষ্ক কষ বেয়ে
কিছু ফেনা খানিক স্ফুরিত হয়, লোকটার চোখ
দুটো বোজা। মৃত্যু কি ভীষণ লোভে অতিদ্রুত
চেটে নিচ্ছে তার পরমায়ু? কয়েকটি লাল
পিঁপড়ে সারি বেঁধে মৃতপ্রায় লোকটির শরীরে উঠছে।

প্রাত্যহিক রীতি অনুসারে এই ব্যক্তি ভোরবেলা ঠিক
শয্যাত্যাগ করেছিলো, দাঁত মাজা, হাত-মুখ ধোওয়া,
কবোষ্ণ চায়ের পেয়ালায় মুখ রাখা, সংবাদপত্রের পাতা
ওল্টানো, খবরে ডুবে থাকা কিছুক্ষণ-সবই তার
চলছিলো প্রথামতো। তাকালো সে নীল আসমানে,
অতঃপর আচমকা কী-যে হলো, লোকটা বেরিয়ে গেলো একা।

যাত্রা ছিলো তার কোন দিকে, নিজেই সে
জানতো না, হেঁটে গেছে, হেঁটে গেছে শুধু
হেঁটে গেছে একাকীত্বে ডুবে-থাকা, বেপরোয়া কিংবা
সব কিছুকেই তুড়ি মেরে ওড়ানোপ্রবণ একজন,
নাকি ধ্বংসলীলা চেখে দেখার মতোই
একরোখা, বেয়াড়া পুরুষ।

সূর্য মধ্যাকাশ ছেড়ে নেমে আসতেই নড়ে ওঠে
লোকটার নিস্তেজ শরীর, কয়েকটি
শকুন কাছেই ছিলো বসে আহারের প্রতীক্ষায়। তবে
নিস্তেজ মানুষটির নড়াচড়া দেখে
কিয়দ্দূরে উড়ে গিয়ে গাছের শাখায় বসে, যেন
হতাশা ওদের কিছু ম্লান করেছিলো লোকটির মৃদু জাগরণে।
০৩-১১-২০০৩