১০ম অধ্যায় – সামাজিক-নীতিপ্রকরণ

মনুসংহিতা
দশম অধ্যায়
সামাজিক-নীতিপ্রকরণ

‘অধীয়ীরংস্ত্রয়ো বর্ণাঃ স্বকর্মস্থা দ্বিজাতয়ঃ।
প্রব্রূয়াদ্ ব্রাহ্মণস্ত্বেষাং নেতরাবিতি নিশ্চয়ঃ।।’
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য- এই তিনবর্ণের লোকেরা দ্বিজাতি; এঁরা নিজনিজ কর্তব্য কর্মে নিরত থেকে বেদ অধ্যয়ন করবেন। কিন্তু এঁদের মধ্যে কেবল ব্রাহ্মণেরাই অধ্যাপনা করবেন, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই দুই বর্ণের পক্ষে অধ্যাপনা করা উচিত নয়। -এটাই শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত। (১০/১)।

‘সর্ববর্ণেষু তুল্যাসু পত্নীষবক্ষতযোনিষু।
আনুলোম্যেন সম্ভূতা জাত্যা জ্ঞেয়াস্ত এব তে।।’
সকল বর্ণের পক্ষেই স্বপরিণীতা ও অক্ষতযোনি (অর্থাৎ প্রথমবিবাহিতা এবং যার সাথে আগে কোনও পুরুষের দৈহিক সম্পর্ক হয় নি) সবর্ণ বা সমান জাতির নারীর গর্ভে সবর্ণ পতিকর্তৃক উৎপাদিত সন্তান পিতামাতার জাতি থেকে অভিন্ন। অর্থাৎ ব্রাহ্মণীতে ব্রাহ্মণকর্তৃক উৎপাদিত সন্তান ‘ব্রাহ্মণ’হবে; ক্ষত্রিয়কর্তৃক এই রকম ক্ষত্রিয়া পত্নীর গর্ভে উৎপাদিত সন্তান ‘ক্ষত্রিয়’ হবে; বৈশ্যকর্তৃক স্বপরিণীতা ও অক্ষতযোনি বৈশ্যার গর্ভে উৎপাদিত সন্তান ‘বৈশ্য’ এবং শূদ্রকর্তৃক ঐ রকম শূদ্রার গর্ভে উৎপাদিত সন্তান ‘শূদ্র’ হবে। এসব ছাড়া অসবর্ণা স্ত্রীর গর্ভে উৎপন্ন সন্তান জনকের সাথে সবর্ণ হয় না, নিশ্চয়ই জাত্যন্তর হবে। (১০/৫)।

‘ব্রাহ্মণঃ ক্ষত্রিয়ো বৈশ্যস্ত্রয়ো বর্ণা দ্বিজাতয়ঃ।
চতুর্থ একজাতিস্তু শূদ্রো নাস্তি তু পঞ্চমঃ।।’
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিন বর্ণের পক্ষে উপনয়ন সংস্কারের বিধান থাকায় এরা ‘দ্বিজাতি’ নামে অভিহিত হয়। আর চতুর্থ বর্ণ শূদ্র উপনয়নসংস্কার বিহীন হওয়ায় দ্বিজাতি নয়, তারা হলো ‘একজাতি’। এছাড়া পঞ্চম কোনও বর্ণ নেই অর্থাৎ ঐ চারটি বর্ণের অতিরিক্ত যারা আছে তারা সকলেই সঙ্করজাতি। (১০/৪)।

‘আয়োগবশ্চ ক্ষত্তা চ চাণ্ডালশ্চাধমো নৃণাম্।
প্রাতিলোম্যেন জায়ন্তে শূদ্রাদপসদাস্ত্রয়ঃ।।’
শূদ্র পুরুষ থেকে প্রতিলোমক্রমে জাত অর্থাৎ শূদ্র পুরুষের ঔরসে বৈশ্যা স্ত্রীতে জাত আয়োগব, ক্ষত্রিয়া স্ত্রীতে জাত ক্ষত্তা এবং ব্রাহ্মণী স্ত্রীতে জাত চণ্ডাল- এই তিন জাতি পুত্রকাজ করার অযোগ্য। এই জন্য এরা অপসদ অর্থাৎ নরাধম বলে পরিগণিত হয়। এদের মধ্যে চণ্ডাল হলো অস্পৃশ্য। (১০/১৬)।

‘চণ্ডালশ্বপচানাং তু বহির্গ্রামাৎ প্রতিশ্রয়ঃ।
অপপাত্রাশ্চ কর্তব্যা ধনমেষাং শ্বগর্দভম্।।’
চণ্ডাল, শ্বপচ প্রভৃতি জাতির বাসস্থান হবে গ্রামের বাইরে। এইসব জাতিকে ‘অপপাত্র’ করে দিতে হয়; কুকুর এবং গাধা হবে তাদের ধনস্বরূপ। (অপপাত্র হলো যে পাত্রে ভোজন করলে তা আর সংস্কার দ্বারা শুদ্ধ করা চলবে না, তা পরিত্যাগই করতে হবে। অথবা তারা যে পাত্র স্পর্শ করে থাকবে তাতে অন্ন-শক্তু প্রভৃতি দেয়া চলবে না; কিন্তু পাত্রটি মাটির উপর রেখে দিলে কিংবা অন্য কোনও লোক তা হাতে করে ধরে থাকলে তার উপর ভাত-ছাতু প্রভৃতি দিয়ে মাটির উপর রেখে দিলে তারা ঐ খাদ্য গ্রহণ করবে। অন্য অর্থে ভাঙা পাত্রকে অপপাত্র বলে)। (১০/৫১)।

‘প্রজনার্থং স্ত্রিয়ঃ সৃষ্টাঃ সন্তানার্থঞ্চ মানবাঃ।’
গর্ভধারণের জন্য নারী এবং গর্ভাধানের জন্য পুরুষ সৃষ্টি হয়েছে। (১০/৯৬)।

‘শক্তেনাপি হি শূদ্রেণ ন কার্যো ধনসঞ্চয়ঃ।
শূদ্রো হি ধনমাসাদ্য ব্রাহ্মণানেব বাধতে।।’
‘ধন অর্জনে সমর্থ হলেও শূদ্রকে কিছুতেই ধন সঞ্চয় করতে দেওয়া চলবে না, কেননা ধন সঞ্চয় করলে ব্রাহ্মণদের কষ্ট হয়৷ শাস্ত্রজ্ঞানহীন শূদ্র ধনমদে মত্ত হয়ে ব্রাহ্মণদের পরিচর্যা না করে অবমাননা করতে পারে৷’(১০/১২৯)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *