৮ম অধ্যায় – রাষ্ট্রনীতিপ্রকরণ

মনুসংহিতা
অষ্টম অধ্যায়
রাষ্ট্রনীতিপ্রকরণ

‘অন্যাং চেদ্ দর্শয়িত্বান্যা বোঢ়ুঃ কন্যা প্রদীয়ক্তে।
উভে তে একশুল্কেন বহেদিত্যব্রবীন্মনুঃ।।’
বরের নিকট থেকে পণ নেওয়ার সময়ে একটি কন্যাকে দেখিয়ে বিবাহের সময়ে যদি তাকে (বরকে) অন্য একটি মেয়েকে দেওয়া হয়, তা হলে সেই বরটি ঐ একই শুল্কে দুইটি কন্যাকেই পাবে, মনু নিজেই একথা বলেছেন। (৮/২০৪)।

‘নোন্মত্তায়া ন কুষ্ঠিন্যা ন চ যা স্পৃষ্ঠমৈথুনা।
পূর্বং দোষানভিখ্যাপ্য প্রদাতা দণ্ডমর্হতি।।’
মেয়েটি উন্মত্তা কিংবা কুষ্ঠরোগগ্রস্তা কিংবা অন্যপুরুষের দ্বারা উপভুক্তা,- কন্যার এসব দোষ বিবাহের আগেই বলে দিলে অর্থাৎ শুল্ক নেবার আগেই তা কথায় প্রকাশ করে দিলে আর সেই কন্যাদানকারী দণ্ডনীয় হবে না। (৮/২০৫)।

‘ভার্যা পুত্রশ্চ দাসশ্চ শিষ্যো ভ্রাতা চ সোদরঃ
প্রাপ্তাপরাধাস্তাড্যাঃ স্যূ রজ্জ্বা বেণুলেন বা।।’
স্ত্রী, পুত্র, ভৃত্য, শিষ্য এবং কনিষ্ঠ সহোদরভ্রাতা অপরাধ করলে সূক্ষ দড়ির দ্বারা কিংবা বেতের দ্বারা শাসনের জন্য প্রহার করবে। (৮/২৯৯)।

‘উত্তমাং সেবমানস্তু জঘন্যো বধমর্হতি।
শুল্কং দদ্যাৎ সেবমানঃ সমামিচ্ছেৎ পিতা যদি।।’
কোনও হীনজাতীয় পুরুষ যদি কোনও উচ্চবর্ণের কন্যাকে তার ইচ্ছা অনুসারেও সম্ভোগ করতে থাকে, তাহলে সেই পুরুষের বধদণ্ড হবে। কিন্তু নিজের সমানজাতীয়া কন্যার সাথে ঐরকম করলে সে ঐ কন্যার পিতাকে শুল্ক দেবে, যদি তার পিতা ঐ শুল্ক নিতে ইচ্ছুক হয়। (৮/৩৬৩)।

‘শূদ্রো গুপ্তমগুপ্তং বা দ্বৈজাতং বর্ণমাবসন্।
অগুপ্তমঙ্গসর্বস্বৈর্গুপ্তং সর্বেণ হীয়তে।।’
কোনও দ্বিজাতি-নারী স্বামীর দ্বারা রতি হোক্ বা না-ই হোক, কোনও শূদ্র যদি তার সাথে মৈথুন ক্রিয়ার দ্বারা উপগত হয়, তাহলে অরক্ষিতা নারীর সাথে সঙ্গমের শাস্তিস্বরূপ তার সর্বস্ব হরণ এবং লিঙ্গচ্ছেদনরূপ দণ্ড হবে; আর যদি স্বামীর দ্বারা অরক্ষিতা নারীর সাথে সম্ভোগ করে তাহলে ঐ শূদ্রের সর্বস্বহরণ এবং মারণদণ্ড হবে। (৮/৩৭৪)।

‘শূদ্রং তু কারয়েদ্ দাস্যং ক্রীতমক্রীতমেব বা।
দাস্যায়ৈব হি সৃষ্টোহসৌ ব্রাহ্মণস্য স্বয়ম্ভুবা।।’
ক্রীত অর্থাৎ অন্নাদির দ্বারা প্রতিপালিত হোক্ বা অক্রীতই হোক্ শূদ্রের দ্বারা ব্রাহ্মণ দাসত্বের কাজ করিয়ে নেবেন। যেহেতু, বিধাতা শূদ্রকে ব্রাহ্মণের দাসত্বের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। (৮/৪১৩)।

‘ন স্বামিনা নিসৃষ্টোহপি শূদ্রো দাস্যাদ্বিমুচ্যতে।
নিসর্গজং হি তত্তস্য কস্তস্মাত্তদপোহতি।।’
প্রভু শূদ্রকে দাসত্ব থেকে অব্যাহতি দিলেও শূদ্র দাসত্ব কর্ম থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না। দাসত্বকর্ম তার স্বভাবসিদ্ধ কর্ম (অর্থাৎ জন্মের সাথে আগত)। তাই ঐ শূদ্রের কাছ থেকে কে দাসত্ব কর্ম সরিয়ে নিতে পারে ? (৮/৪১৪)।

‘ভার্যা পুত্রশ্চ দাসশ্চ ত্রয় এবাধনাঃ স্মৃতাঃ।
যত্তে সমধিগচ্ছন্তি যস্য তে তস্য তদ্ ধনম্।।’
স্মৃতিকারগণের মতে, ভার্যা, পুত্র ও দাস- এরা তিনজনই অধম (বিকল্পপাঠ- অধন); এরা তিনজনেই যা কিছু অর্থ উপার্জন করবে, তাতে এদের কোনও স্বাতন্ত্র্য থাকবে না, পরন্তু এরা যার অধীন ঐ ধন তারই হবে। (৮/৪১৬)।

‘বিস্রব্ধং ব্রাহ্মণঃ শূদ্রাদ্ দ্রব্যো দাদানমাচরেৎ।
ন হি তস্যাস্তি কিঞ্চিৎ স্বং ভর্তৃহার্যধনো হি সঃ।।’
ব্রাহ্মণ নিঃসঙ্কোচে শূদ্রের জিনিস গ্রহণ করবেন; কারণ তার অর্থাৎ শূদ্রের নিজের বলতে কোন ধনও নেই, সেও প্রভুরই জন্য দ্রব্য আহরণ করে; সে স্বয়ং ধনহীন। (৮/৪১৭)।

‘বৈশ্যশূদ্রৌ প্রযত্নেন স্বানি কর্মাণি কারয়েৎ।
তৌ হি চ্যুতৌ স্বকর্মভ্যঃ ক্ষোভয়েতামিদং জগৎ।।’
রাজা বিশেষ যত্ন সহকারে বৈশ্য এবং শূদ্রকে দিয়ে তাদের কাজ অর্থাৎ কৃষিবাণিজ্যাদি করিয়ে নেবেন। কারণ, তারা নিজ নিজ কাজ ত্যাগ করলে এই পৃথিবীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলবে। (৮/৪১৮)।

1 Comment
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *