রেস্তোরাঁর ওরা ক’জন

একজন বুড়োসুড়ো ভদ্রলোক হরহামেশা
শহরের হৃৎপিণ্ডে-দাঁড়ানো একটি মাঝারি রেস্তোরাঁয় প্রত্যহ
সন্ধেবেলা এক কোণে ব’সে থাকেন একা। বলেন না
কোনও কথা কারও সঙ্গে, ইশারায় ডাকেন
কালেভদ্রে বেয়ারাকে, বাঁধা ফরমাশ রয়েছে রঙ চা-এর
কখনও সখনও দু’তিনটি টোস্টের।

অদূরে অন্য এক টেবিলে ক’জন যুবক যখন
হৈ-হুল্লোড় সমেত জোটে, নরক
গুলজার হয় বটে নিমেষেই। অনেকে
বিরক্তির চুলকুনিতে ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকেন,
অথচ ভয়ে মুখে কুলুপ আঁটাই থাকে সবার;
হয়তো গা-সওয়া হয়ে গেছে শব্দের দাপট।

রেস্তোরাঁয় ওরা ক’জন যুবক প্রায়শ অশ্লীল আলাপে
নরক গুলজার করে, কোথায়
কোন্‌ পাড়ায় মাস্তানি করার
অপরাধে গুরুজনদের ঝাঁঝালো বকুনি ঢের শুনতে
হয়েছে। কারও কানপট্রি কিংবা মাথা ফাটানোর দরুন
মায়ের চোখে প্রতিবাদী পানি দেখে মন ঈষৎ খারাপ হয়েছে।

রেস্তোরাঁর এক কোণে নীরব বসে-থাকা প্রবীণ
খুঁটিয়ে দেখেন সেই তুমুল ঝোড়ো যুবাদের;
কখনও সখনও প্রবীণের ঠোঁটে হাসি খেলে যায়,
সেই হাসিতে ফোটে প্রশ্রয়ের শেফালি, যদিও অন্যদের
দেহ-মনে বিরক্তির স্ফুলিঙ্গ
জ্বলতে থাকে নিয়মিত। এমনই সেই রেস্তোরাঁর সংসার!
ফুঁসতে ফুঁসতে হঠাৎ একদিন সারা দেশ তুমুল
আগুন-ঝরানো আন্দোলনে বোমার
ধরনে ফেটে পড়ে। রেস্তোরাঁয় সেই প্রবীণ
আর অন্যেরা আসেন মাঝে মাঝে; কেবল
সেই উচ্ছল, উদ্দাম যুবারা গরহাজির
কিছুদিন থেকে। প্রবীণ ব্যক্তিটি ওদের সন্ধানে ক’দিন
ঘোরাফেরা ক’রে জানতে পারলেন-প্রতিবাদী মিছিলে
যোগ দিয়ে, জনসভায় জালিম সরকার-বিরোধী
সভায় আগুন-ঝরানো বক্তৃতা দিয়ে ওদের দু’জন
পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন, ওদের লাশ জনগণের মাথার ওপর শোভিত হয়েছে, এবং রেস্তোরাঁর
অন্য বন্ধুরা আলোর প্রহর গুনছেন কারাগারের আন্ধারে।
৩১-৩-২০০৩