আরোগ্যনিকেতনে একা

ভাসমান মেঘে মেঘে উড়াল আমার,
সকল সময় নয়, প্রায়শই। সবুজ পাতার ঘ্রাণে বুঁদ
হয়ে থাকি কখনও কখনও; মাঝেমাঝে
নদীর গভীর অন্য গভীরতা খুঁজে বিয়াবান
চর ছুঁয়ে ফেলি, মৃত সারসের পুরনো পালক
ধরায় কেমন নেশা! অসুস্থতা ভর করে হঠাৎ কখন,
বোঝা দায়, অন্তর্গত ঝাঁঝ নিভে যেতে চায়,
হাড়-হিম-করা হুহু হাওয়ায় কী যেন ভেসে আসে অতিদূর
থেকে, অস্তিত্বের নড়বড়ে কাঠামো বেদিশা বড়, কেউ নেই
ধারেকাছে, শুশ্রূষায় প্রকৃত হাতের স্পর্শ নেই এতটুকু,
ধূ ধূ শূন্যতায় ঝুলে থাকি। অসীমের ফিসফিস চতুর্দিকে।

কেমন আবছা পদধ্বনি, না-দেখা মানব-মানবীর কিছু
একান্ত ঝাপসা কণ্ঠস্বর, অতি-ব্যবহৃত
রোগীর শয্যায়, রাত তিনটায় ওয়ার্ড নিঝুম অতিশয়,
আমি একা পড়ে আছি বেগানা শবের মতো শীতল, নির্ঘুম,
কপালে কাঙ্ক্ষিত কোনও কোমল হাতের স্পর্শ নেই,
বোবা অন্ধকারের মশারি
আমাকে রয়েছে ঘিরে, জানি না কেমন ভোর ছোবে
আমাকে আবার, না কি পাবো না কখনও আর রৌদ্রের চুম্বন।

অন্ধকারে বিষকাঁটা ক্রমশ গজাতে থাকে শরীরে আমার,
ইচ্ছে হয় ভীষণ চিৎকারে স্তব্ধতাকে
গুঁড়ো করি কাচের মতোই, রোগীদের
কথা ভেবে চুপচাপ বেডে পড়ে থাকি।

কী আমার ব্যাধি? কোন্‌ জীবাণু আমার রক্তে ক্রিয়াপরায়ণ
তোমরা কি বলে দেবে আমাকে এখন
এমন নিঃসঙ্গ প্রহরের ঠাণ্ডা, অন্ধ স্তব্ধতায়?
কেবলি বাড়ছে যন্ত্রণা, এ কেমন আরোগ্যনিকেতন?
২০.৫.২০০০
নোআজিএল (প্যারিস)