জানবে না কেউ

লোকটাকে, সকল সময় নয়, কখনও সখনও
দেখি, বেশি দেখি দূর থেকে, কাছে
কালেভদ্রে দেখা পাই তার আর, কি অবাক কাণ্ড,
যখন দূরত্ব ঢের বেশি থাকে, তখন অনেক
নিবিড়, গহন চেনা লাগে,
নৈকট্য অচেনা করে দেয় অতিশয়।

পাজামা-পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়া পরেন
প্রায়শই; মাঝেসাঝে শার্ট আর ট্রাউজার দিব্যি
শোভা পায় ক্ষয়িষ্ণু শরীরে তার। লোকে বলে রোদ্দুরে ভেজেন
তিনি আর তুমুল বৃষ্টিতে খটখটে।

লোকটা গভীর রাতে, কোনও অতি-কৌতূহলী
প্রতিবেশী বলে, খুব পুরনো একটি খাতা খুলে
আবিষ্কারকের মতো কী যেন খোঁজেন ঘুমটুম
বেজায় হারাম করে। কোনও কোনও রাতে কতিপয় প্রতিবেশী
কান পেতে শোনে ফিসফিসে কথা বিভিন্ন কণ্ঠের। কারা তারা?
কী ভাষায় বলে কোন কথা? লোকটা নিজেই
বোঝেন না বহু কিছু-এতটুকু বোঝে
প্রতিবেশীগণ তার মুখভঙ্গি দেখে।

রাত্রির তিমির মুছে গেলে কাঁচা রোদের চুমোয়
লোকটার ঘরে কয়েকটি চিত্রকল্প খুব অন্তরঙ্গতায়
এদিক ওদিক ঘোরে, কোনও কোনও পঙ্‌ক্তির ছন্দিত
ছায়া কাঁপে আলোকলতার মতো একটি লুকানো
অনেক প্রাচীন এক খাতার পাতায়। এইসব
পুশিদা অস্পষ্ট টুকরো ছবি কারা রেখে যায়
যেগুলো ফুটিয়ে তোলা লোকটার দায় হয়ে পড়ে?
সঞ্চয় কেবলি বাড়ে, কিন্তু কীভাবে নিজেই জানেন না কিছু।

কিছুকাল পরে এক মধ্যরাতে লোকটা হঠাৎ ঈর্ষাতুর,
জুয়াড়ি মৃত্যুর ছলনায় কাঁচা মাটির গভীরে
চলে যান সীমিত শোকের জলে ভেসে। ক্রমে তার
কবরে সবুজ ঘাস, কিছু জংলি ফুল ফোটে। ইতস্তত
কয়েকটি প্রজাপতি ওড়ে আর কখনও পাখির গান জাগে
ওরা সব লোকটার না-লেখা কবিতাবলি জানবে না কেউ।
৫.৪.২০০০