জনৈক বন্ধুর প্রতি

বন্ধু, তুমি মেঘের সঙ্গে, গাছের পাতা, পানির সঙ্গে
অনেক সময় কথা বলো। পাশের বাড়ির লাল দেয়ালে
না-লেখার সব লেখা পড়ো এবং সাঁঝের উড়ে-যাওয়া
আবছা পাখির ডানা থেকে পদ্য-ছোঁয়া পঙ্‌ক্তি আনো।

বন্ধু, তোমার পায়ে অনেক পথের ধুলো, কাঁটার খোঁচার
চিহ্ন দেখে বুঝতে পারি, অনেক হেঁটে অনেক বাধার
প্রহার সয়ে এখানে আজ ঈষৎ উঁচু আসন পেলে।
তোমার প্রতি লোকের প্রীতি শেষে তোমার কাল হয়েছে।

কোনও কোনও কামেল পুরুষ তোমার নামে কেচ্ছা রটান,
কারও হাতের পাথর তোমার বুকে কিছু জখম বানায়;
যাদের তুমি কোনওকালে স্বজন বলে জেনেছিলে,
তারাই দিব্যি শক্র হয়ে গলিজ বাক্য বমন করে।

বন্ধু, তুমি খেদ করো না, এমনি ধারা সর্বকালেই
সচল জেনো। বিরূপতায় পিষ্ট হয়ে কেউবা হারায়
রুটিরুজি, বাস্তুভিটা, কেউ নিমেষে স্বদেশত্যাগী।
সইতে হবে সকালসন্ধ্যা হিংস্র পাথর, কাদার গোলা।

বন্ধু, তোমার ভয় কী বলো? আঁধারঘেরা পথে তোমার
পড়বে আলো যথারীতি। রবিঠাকুর, লালন ফকির
এবং আরও মহামানব তোমায় নিত্য ছায়া দেবেন
উপরন্তু নরনারীর ভালোবাসা হবে তোমার রক্ষাকবচ।

না-ই বা হলো কালজয়ী খ্যাতি তোমার, যায় যদি যাক
মুছে তোমার নামের রেখা কালের পটের ক্ষেত্র থেকে
দুঃখ কিসের? ঘটছে অমন হরহামেশা নানা যুগে;
যে-সাধনে রইলে সেটাই অটুট থাকুক জীবন জুড়ে।