ধন্য ধন্য রবে মুখরিত

মহাকালের মৃত্তিকায় স্বাক্ষর রেখে চলেছে
আমার মায়ের মুখের ভাষা,
যেমন তালপাতায় মহাকাব্য রচনা করেছেন
বাল্মীকি এবং ব্যাস।

কপোতাক্ষ নদের কিনারে পড়ন্ত বিকেলে
স্যুট-বুট পরা মাইকেল মধুসূদন
গা এলিয়ে আবৃত্তি করছেন নিল্টনের
‘প্যারাডাইস লস্ট’ কিংবা নিজের পঙ্‌ক্তিমালা।
শান্তিনিকেতনে ধ্যানমগ্ন রবীন্দ্রনাথ মানসে ধারণ
করছেন বিশ্বরূপ এবং অম্লান কাব্যধারা। লালন ফকির
পথেঘাটে বাজিয়ে চলেছেন একতারায়
মানবাত্মার উদার সঙ্গীত। নজরুল
অপরূপ ছন্দে নেচে চলেছেন মোহন বাবরি দুলিয়ে
জেলায় জেলায় আর তার সঙ্গে নাচছে
শাশ্বত বাংলা। এই তো দেখেছি,
ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে একান্ত
নিঃসঙ্গ দাঁড়ানো জীবনানন্দ দূরের আকাশের
নক্ষত্রমালাকে ছুঁয়ে ছেনে শুনে নিচ্ছেন জলপরীদের গান।

অনন্য এই কবিদের নির্মিত জ্যোতির্ময় পথগুলি
দেখতে দেখতে আমি স্বতন্ত্র পথ তৈরির সাধনায়
মগ্ন, যেখানে ক্লান্তির প্রহরে সবুজের সান্নিধ্যে
খানিক জিরিয়ে নেবেন পথিকগণ।

বিগত শতাব্দীর সীমা পেরিয়ে এই সামান্য অথচ
সৌভাগ্যবান আমি নবীনা একুশ শতকের থরথর
অধরে চুম্বন করছি জ্বলজ্বলে আবেগে। চতুর্দিকে
আনন্দধ্বনি। এই তো বিশ্ববাসী আমাদের আপন
একুশে ফেব্রুয়ারিকে, মানে আমাদের
মায়ের মুখের ভাষাকে বরণ করছে ফুলচন্দন দিয়ে
এবং ধন্য ধন্য রবে মুখরিত একুশ শতকের পূর্বলেখ।
৬.২.২০০০