অর্ফিয়ুস হওয়ার জন্যে

এখন ঘন ঘন আমার চারপাশে আজরাইলের
চিরতরে দু’চোখ-বোজানো কৃষ্ণ ডানা
ঝলসে উঠছে। একে একে অন্তর্হিত হচ্ছেন
আমার চেনাজানা অনেকেই। তাদের
কেউ কেউ খুবই ঘনিষ্ঠজন। এই তো সেদিন সেই
কৃষ্ণ ডানা আমাকেও ঝাপ্‌টা মারতে চেয়েছিল। এবার
ফাঁড়া কেটেছে, আবার কবে ডানা ছড়িয়ে
হাজির হয় আজরাইল, কে জানে!

মিস্টার ডেথ, জনাব মওত সম্প্রতি
আমার কথাবার্তায় এবং লেখায়
ঘুরে ফিরে আসছেন বলে আমার মনোনীতা
বেশ রুষ্ট, অভিমান-ক্ষুব্ধ। আমার এই মনোভাব
তাকে আহত করে, তখনও বা করে বিষণ্ন। সে আমার
কণ্ঠ, কলমে তার জীবনের গান, প্রাণে
আনন্দধ্বনি শুনতে আগ্রহী। জীবনের বন্দনা
আমার ভেতর অনিন্দ্য সুর হয়ে বেজে উঠুক,
এ তার একান্ত কামনা। তার আপন কবির কবিতায়
মর্গ অথবা কবরের গন্ধ পেতে চায় না।

তার এই মনোভঙ্গি আমাকে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে
ফিরিয়ে এনেছে কঙ্কাল, অমাবস্যাময় রাতের
গোরস্তান এবং আজরাইলের রক্তহিম-করা
তুষারাবৃত দৃষ্টি থেকে। আমি এখন
দরাজ গলায় জীবনের দীপ্তি-ঝরানো গান গাইবার
সংকল্প গ্রহণ করেছি। আমার সময়
উৎসর্গ করব মানবের মহামিলনের বন্দনার প্রতি এবং
পুতিগন্ধময় নালাকে রূপান্তরিত করবো
খরস্রোতা নদীতে। একালের অর্ফিয়ুস হওয়ার
সাধনা আমার চেতনায় নক্ষত্রের মতো দেদীপ্যমান।
৪.১.২০০০