নিঝুম ভেতরে

কয়েক হাজার বছরের রৌদ্রজ্যোৎস্না আর গাঢ়
অন্ধকার তার
নিঝুম ভেতরে খেলা করে সাবলীল। কখনও সে
এই সত্য ভুলে থাকে, কখনও আবার
ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে ওঠে কিংবা কোনও গোধূলিবেলায়
আকাশের দিকে খুব বিমুগ্ধ তাকিয়ে
অকস্মাৎ এ সত্যের শাঁস করে অনুভব রক্তের ভিতর
এবং কেমন স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে যায় লহমায়।

এত্তেলা না দিয়ে তার ঘরের ভেতর
প্রবেশ করেন এক দীপ্তিমান, সুকান্ত পুরুষ। কণ্ঠস্বর
তার বেজে ওঠে স্তব্ধতার বুক চিরে-
‘দ্যাখো তো আমাকে তুমি চিনতে পারো কি?
হাজার বছর আগে কাব্য রচনার প্রতিযোগিতায় আমি
তোমাকেই বারবার পরাস্ত করেছি,
যদিও নিশ্চিত জানতাম, প্রকৃত তোমারই প্রাপ্য সকল শিরোপা।
তার প্রস্থানের পর ঘরময় চন্দনের ঘ্রাণ ঝুলে থাকে।

মধরাতে বয়েসী লোকটা বিছানায় এপাশ করে
কিছুক্ষণ, অকস্মাৎ অন্ধকার ঘর আলো করে একজন
সুন্দরী দাঁড়ায় শয্যা ঘেঁষে, কণ্ঠে বীণাবাদনের
সুর এনে বলে,
‘দ্যাখো তো আমাকে তুমি চিনতে পারো কি?
হাজার বছর আগে তুমি আর আমি
ভাসিয়ে ছিলাম তরী প্রণয়ের উত্তাল সাগরে,
আমাদের দু’জনকে ঢেকে ফেলেছিল
হিংসুটে করাল মেঘ। ভালোবাসার অপরাধে
হয়েছিল শিরশ্ছেদ তোমার,’ বলেই
অপরূপ সেই নারী হাওয়ায় ছড়িয়ে
লোধ্ররেণু কুরুবক-ঘ্রাণ হাজার বছরে নম্র মিশে যায়।

কয়েক হাজার বছরের রৌদ্রজ্যোৎস্না আর গাঢ়
অন্ধকার তার
নিঝুম ভেতরে খেলা করে। অতীতের ছায়াতরী
ভেড়ে ঘাটে বারবার অবচেতনের স্তরে স্তরে। কোন্‌ নীল
স্বপ্নময়তায় তার বর্তমান অতীতের অন্তর্গত এবং অতীত
বর্তমানে রাজহাঁসরূপে গ্রীবা তোলে-
তার কিছু বোঝে আর কিছু বোধতীত থেকে যায়।