নয়না এবং আমি

নয়না, আমার পাঁচ বছরের পৌত্রী, বিকেলের
খেলা ছেড়ে এসে বলে, ‘আচ্ছা, দাদাভাই,
ঐ যে মেঘগুলো চলে যাচ্ছে বেশ দূরে,
বলো তো কোথায় যাচ্ছে? ওদের কি খেলাঘর আছে?
তোমার মতোই কোনও দাদাভাই আছে?
ওরাও কি ক্লাশে যায়, যেমন আমাকে যেতে হয়?’

নয়নাকে বলি,-
‘আকাশই ওদের খেলাঘর, সেখানে কোথাও দূরে
আমার চেয়েও ঢের ভালো এক দাদাভাই আছে
মেঘমণিদের, তার চুল শাদা নয়,
চোখে কালো চশ্‌মা নেই। তিনি পঙ্ক্ষিরাজ
ঘোড়া চড়ে রোজনা ছোটেন নানা দেশে। ‘তা হ’তেই
পারে না, তোমার চেয়ে ভালো জবাব শোনায়।
একদিন ভর সন্ধেবেলা মাগরের নামাজের কিছু আগে
পাড়ার ক’জন মানুষকে খাটে লাশ বয়ে নিয়ে
যেতে দেখে নয়না আমাকে
বিস্মিত জিগ্যেস করে, ‘আচ্ছা দাদাভাই
ওরা টগরের
বাপীকে এভাবে শাদা কাপড়ে পেঁচিয়ে
এখন কোথায় নিয়ে যাবে?’ নিরুত্তর
বিষণ্ন আমার দিকে নয়না তাকায়।

‘একদিন আমাকেও এভাবেই নিয়ে যাবে তোমার নিকট
থেকে বহুদূরে,
যেখানে শুইয়ে দেবে সেখানে জ্বলে না আলো অথবা বয় না
বাতাস কখনও, শুধু নিশ্চিহ্ন হওয়ার ধুলোপথে
আমাকে রাখবে ফেলে সবাই’, এ-কথা
নয়নাকে সেই ভর সন্ধ্যেবেলা বলতে গিয়েও বলা হয়নি
তখন।